পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা
৫০৩৩-[৭] আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মিথ্যা বলা শুধু তিন জায়গায় জায়িয আছে- ১. নিজের স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য স্বামীর মিথ্যা কথা বলা, ২. যুদ্ধের সময় মিথ্যা বলা এবং ৩. মানুষের মধ্যে আপোষ-মীমাংসার উদ্দেশে মিথ্যা বলা। (আহমাদ ও তিরমিযী)[1]
عَن أَسمَاء بنت يزِيد قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يَحِلُّ الْكَذِبُ إِلَّا فِي ثَلَاثٍ: كَذِبُ الرَّجُلِ امْرَأَتَهُ لِيُرْضِيَهَا وَالْكَذِبُ فِي الْحَرْبِ وَالْكَذِبُ لِيُصْلِحَ بَيْنَ النَّاسِ . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ
ব্যাখ্যাঃ (امْرَأَتَهُ لِيُرْضِيَهَا) অর্থাৎ স্বামী তার স্ত্রীকে এবং স্ত্রী তার স্বামীকে এমন কিছু আবেগময় কথা প্রকাশ করা যাতে তাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়ে যায়। যে ভালোবাসায় তারা পরস্পরে সুখে শান্তিতে জীবন-যাপন করতে পারে। তাদের মধ্যে প্রেম জন্মে। অন্যথা এমনও হতে পারে যে, তাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা না জন্মে সেটা অন্যের প্রতি জন্মাতে পারে, ফলে তাদের মধ্যে অশান্তি বিরাজ করবে, এমনকি তাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটে যেতে পারে। [সম্পাদক]
(وَالْكَذِبُ فِى الْحَرْبِ) অর্থাৎ যুদ্ধের ময়দানে কাফিরদের ভয় ধরিয়ে দেয়ার জন্য বলা হয় যে, মুসলিম সৈন্য অনেক আছে এবং তাদের অনেক সাহায্যকারী লোক আছে। অথবা মুসলিম সৈন্যদেরকে বলা কাফিরদের সংখ্যা কম। তোমরা যুদ্ধ কর তোমাদের সাহায্যকারী আছে। অথবা কোন কাফিরকে বলা যে, দেখ তোমার পিছে কে তোমাকে হত্যা করার জন্য আসছে অথবা তুমি সাহায্যের জন্য তোমার সাথে কাকে নিয়ে এসেছ? ইত্যাদি মিথ্যা কথা বলা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা
৫০৩৪-[৮] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিমের পক্ষ এটা উচিত নয় যে, তিনদিনের বেশি সময় নিজের কোন মুসলিম ভাইয়ের ওপর রাগ হয়ে কথা বলা বন্ধ রাখবে। যখন তার সাথে সাক্ষাৎ হবে, তাকে তিনবার সালাম করবে। প্রত্যেকবারেই যদি জবাব না দেয়, তবে সে তার গুনাহ নিয়েই ফিরবে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلَاثٍ فَمِنْ هَجَرَ فَوْقَ ثَلَاثٍ مَرَّاتٍ كُلُّ ذَلِكَ لَا يَرُدُّ عَلَيْهِ فَقَدْ بَاء بإثمه» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (فَقَدْ بَاء بإثمه) ‘আল্লামা ত্বীযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যাদের মধ্যে তিনদিন পর্যন্ত কথাবার্তা বন্ধ, এ সময়ের পর পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ হলে রাগান্বিত ব্যক্তিকে পরস্পর তিনবার সালাম দিলে যদি সে একবারও সালামের উত্তর না দেয় তবে সে তার পাপ নিয়ে ফিরে যাবে। এখানে তার পাপ বলতে সম্ভবত যে সালামের উত্তর দেয় না তাকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আগে সালাম দিয়েছে সে মুসলিম তিনদিনের বেশি কথাবার্তা বর্জন রাখার পাপ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। আর যে মুসলিম সালামের উত্তর দেয়নি তার উপর পাপটা পতিত হবে। অর্থাৎ সে তিনদিনের বেশি কথাবার্তা বর্জন রাখার গুনাহ নিয়ে ফিরবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
হাদীসটির বাস্তবিক শিক্ষা : আমাদের সমাজে অনেক লোককে দেখা যায় একজন অন্যজনের সাথে কোন কারণবশতঃ বহুদিন কথা বন্ধ রাখে। একজন যদি একটু নমনীয় হয়ে অন্যজনকে সালাম দেয় তবে যাকে সালাম দিয়েছে তার দামটা সে বাড়িয়ে ফেলে। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। যেন শুনতেই পায়নি। অথচ সে স্পষ্টভাবে হাদীসটির বিরোধিতা করল।
হাদীসটির ভাষ্য অনুযায়ী সালামের উত্তর না দেয়ার কারণে সে পাপী থেকে গেল। একদিন হয়ত এমন সময় আসে যে, সালামের উত্তর নেয়নি তার আর সালাম দেয়ার সুযোগ হয়ে ওঠে না তার আগেই তাকে পরকালে পাড়ি জমাতে হয়। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা
৫০৩৫-[৯] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিমের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তিনদিনের বেশি সময় অপর কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে সাক্ষাৎ পরিত্যাগ করে। যে ব্যক্তি তিনদিনের বেশি সময় অপর ভাইকে ত্যাগ করল, আর এ সময় তার মৃত্যু হলো, তবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلَاثٍ فَمِنْ هَجَرَ فَوْقَ ثَلَاثٍ فَمَاتَ دَخَلَ النَّارَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (فَمَاتَ) অর্থাৎ ঐ অবস্থায় তাওবাহ্ না করেই মারা যায়।
(دَخَلَ النَّارَ) ‘আল্লামা তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অর্থাৎ তার জন্যে জাহান্নামে যাওয়া ওয়াজিব হয়ে যায়, এটা এভাবে যে, পাপে পতিত হওয়া যেন শাস্তিতে পতিত হওয়া। যদি আল্লাহ চান তবে তাকে শাস্তি দিতে পারেন। আর যদি তিনি চান তবে তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
আসলে এ হুকুমটি কঠোরতা প্রকাশার্থে বর্ণনা করা হয়েছে, যেন এ ধরনের কাজ করতে কেউ সাহস না করে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯০৬)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা
৫০৩৬-[১০] আবূ খিরাশ আস্ সুলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন : যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে এক বছর যাবৎ সম্পর্ক ছিন্ন রাখল, সে যেন তার রক্তপাত করল। (অর্থাৎ- তাকে হত্যার করল)। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن أبي خرَاش السُّلَميَّ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ هَجَرَ أَخَاهُ سَنَةً فَهُوَ كسفك دَمه» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (فَهُوَ كَسَفْكِ دَمِه) অর্থাৎ কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে একবছর সম্পর্কচ্ছেদ করা তাকে বর্জন করার শাস্তিকে আবশ্যক করে। যেমনিভাবে কাউকে হত্যা করলে শাস্তি আবশ্যক হয়ে যায়। হত্যা এবং কথা বর্জন এক পর্যায়ের নয়। গুনাহের দিক দিয়ে বাক্যটি তাকিদের জন্য নেয়া হয়েছে যেন কেউ এ পাপ কাজে জড়িয়ে না পড়ে। আবার কোন কোন সিফাত বা গুণ তাশবীহ বা সাদৃশ্যের ক্ষেত্রে সমান হয়। কতক হাদীসের ব্যাখ্যাকার হাদীসটির এরূপ ব্যাখ্যা করেছেন।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এখানে তাশবীহ বা সাদৃশ্যটা মুবালাগাহ্ বা আধিক্যতা বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে : زِيدٌ كَالْأَسَدِ তথা যায়দ বাঘের মতো। এখানে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে শক্তির দিক দিয়ে ও বীরত্বের দিক দিয়ে, আকৃতির দিক দিয়ে নয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ لَا يَحِلُّ لِمُؤْمِنٍ أَنْ يَهْجُرَ مُؤْمِنًا فَوْقَ ثَلَاثٍ কোন মু’মিনের জন্য কোন মু’মিনকে তিনদিনের বেশি পরিহার করা বৈধ নয়। এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, তিনদিনের বেশি পরিত্যাগ করা হারাম। এ পাপে জড়িত ব্যক্তি শাস্তিযোগ্য। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা
৫০৩৭-[১১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন মুসলিমের এটা বৈধ নয় যে, সে কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে তিনদিনের বেশি সময় সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকবে। তিনদিন উত্তীর্ণ হতেই সে যেন তার প্রতিপক্ষর সাথে সাক্ষাৎ করে এবং তাকে সালাম করে। যদি সে তার সালামের জবাব দেয়, তবে উভয়েই সাওয়াবের অংশীদার হবে। আর যদি সালামের জবাব না দেয়, তবে সে পাপী হবে এবং সালাম দানকারী মুসলিম সম্পর্কচ্ছেদজনিত পাপ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। (আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘হিলাল আল মাদানী’’ নামের বর্ণনাকারীর ব্যাপারে ইমাম যাহাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তাকে চেনা যায় না। রিয়াযুস্ সলিহীন ১৬০৫, ইরওয়া ২০২৯, হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৪৪৯ পৃঃ।
وَعَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَحِلُّ لِمُؤْمِنٍ أَنْ يَهْجُرَ مُؤْمِنًا فَوْقَ ثَلَاثٍ فَإِنْ مَرَّتْ بِهِ ثلاثُ فَلْيلقَهُ فليسلم عَلَيْهِ فَإِن ردَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ فَقَدِ اشْتَرَكَا فِي الْأَجْرِ وَإِنْ لَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ فَقَدْ بَاءَ بِالْإِثْمِ وَخَرَجَ المُسلِّمُ من الْهِجْرَة» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (فَقَدِ اشْتَرَكَا فِي الْأَجْرِ) অর্থাৎ যদি সে তার সালামের উত্তর দেয়, তবে উভয়েই সাওয়াবের অংশীদার হবে দু’ভাবে : ১. সালামের উত্তর দেয়ার কারণে ২. তিনদিনের বেশি কথাবার্তা বন্ধ না রেখে কথাবার্তা বলার কারণে।
(فَقَدْ بَاءَ بِالْإِثْمِ) যদি সে সালামের উত্তর না দেয়, তবে সে দু’ভাবে গুনাহগার হবে ১. সালামের উত্তর না দেয়ায় ২. তিনদিনের বেশি কথাবার্তা বর্জন রাখায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা
৫০৩৮-[১২] আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের এমন কাজ সম্পর্কে বলব না, যার সাওয়াবের মর্যাদা সিয়াম (রোযা), সাদাকা ও সালাতের চেয়েও বেশি? আবুদ্ দারদা(রাঃ) বলেন, তখন আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেনঃ সে কাজ হলো, দু’জন মুসলিমের মধ্যে আপোষ করানো। যে ব্যক্তি ঝগড়া ও বিপর্যয় সৃষ্টি করে, সে যেন মস্তক মুণ্ডনকারী। [আবূ দাঊদ ও তিরমিযী; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসটি সহীহ।][1]
وَعَنْ أَبِي
الدَّرْدَاءِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِأَفْضَلَ من درجةِ الصِّيامِ والصدقةِ وَالصَّلَاة؟» قُلْنَا: بَلَى. قَالَ: «إِصْلَاحُ ذَاتِ الْبَيْنِ وَفَسَادُ ذَاتِ الْبَيْنِ هِيَ الْحَالِقَةُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ صَحِيح
ব্যাখ্যাঃ (مِنْ دَرَجَةِ الصِّيَامِ وَالصَّدَقَةِ) আশরাফ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ ‘আমল দ্বারা উদ্দেশ্য নফল, ফরয না। অর্থাৎ দু‘জন মুসলিমের মাঝে আপোষ করানো নফল সিয়াম, সালাত ও সাদাকা হতে উত্তম। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(إِصْلَاحُ ذَاتِ الْبَيْنِ) অর্থাৎ ঐ সৎ গুণের অবতারণা, যা দ্বারা জাতির মধ্যে সম্প্রীতি, ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়। যেমন- মহান আল্লাহ বলেনঃ وَاللهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ ‘‘আর আল্লাহ অন্তরের সকল বিষয় সম্যক অবগত’’- (সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ১৫৪)। এটাও বলা হয়ে যাকে যে, (ذَاتِ الْبَيْنِ) (দু’জন মুসলিমের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা করানো )-এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দু’জনের মধ্যকার ঝগড়া বিবাদ এবং সম্পর্ক বিচ্ছেদের অবসান ঘটানো। (الْبَيْنِ) বলা হয় বিচ্ছিন্নতা ও দলাদলিকে।
(وَفَسَادُ ذَاتِ الْبَيْنِ هِيَ الْحَالِقَةُ) অর্থাৎ এটা এমন একটা গুণাবলী যা দীনকে মুণ্ডন করে এবং সমূলে উৎপাটন করে। যেমন খুর বা ব্লেড চুলকে মুণ্ডন করে। অত্র হাদীসে উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে দু’জনের মাঝে মীমাংসা করার ব্যাপারে আর উভয়ের মাঝে দ্বন্দ্ব লাগানোকে নিষেধ করা হয়েছে কারণ সংশোধন এর মাঝে আল্লাহর রজ্জুকে মজবুত করে ধরার উপায় আছে। এ কাজে মুসলিমের মাঝে বিচ্ছেদ হবে না। আর দু’জনের মাঝে বিশৃঙ্খলা লাগানো দীনের জন্য বিষফোড়া। অতএব যে ব্যক্তি উভয়ের মধ্যে সংশোধনের চেষ্টা করবে এবং বিশৃঙ্খলা দূর করবে, সে ঐ ব্যক্তির চেয়ে বেশি মর্যাদাবান হবে। যে কেবলমাত্র সিয়াম পালন করে ও গোপনে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯১১; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৫০৬)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা
৫০৩৯-[১৩] যুবায়র (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিগত উম্মাতের ব্যাধি তোমাদের মধ্যে বিস্তার লাভ করেছে। বিগত উম্মাতের ব্যাধি ছিল হিংসা ও ঘৃণা। এটা হলো মুণ্ডনকারী। আমি এ মুণ্ডন দ্বারা মাথা মুণ্ডনকে বুঝাইনি; বরং সেটা দ্বারা দীনের মুণ্ডন বা মূলোচ্ছেদ বুঝিয়েছি। (আহমাদ ও তিরমিযী)[1]
وَعَنِ الزُّبَيْرِ
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «دَبَّ إِلَيْكُمْ دَاءُ الْأُمَمِ قَبْلَكُمُ الْحَسَدُ وَالْبَغْضَاءُ هِيَ الْحَالِقَةُ لَا أَقُولُ تَحْلِقُ الشَّعْرَ ولكنْ تحلق الدّين» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ (الْحَسَدُ) এটি এমন একটি দুরারোগ্য ব্যাধি যা ইসলামী সমাজকে ভিতর থেকে ধ্বংস করে দেয়। হাসাদ অর্থ হিংসা। হিংসা অর্থ أن يحسد على ما انعم الله عليه به، وإن يتمتى زوال نعمته আল্লাহ অন্যকে যে নি‘আমাত দান করেছেন তাকে হিংসা করা এবং উক্ত নি‘আমাতের ধ্বংস কামনা করা। হিংসা হয়ে থাকে গোপনে।।
(وَالْبَغْضَاءُ) বিদ্বেষ বা শত্রুতা এটা হয়ে থাকে প্রকাশ্যে। এটিও অন্তরের রোগ।
(لَا أَقُولُ تَحْلِقُ الشَّعْرَ) অর্থাৎ আমি বলি না শরীরের বাহ্যিক কোনকিছু কাটে, কেননা এটা একটা সহন বিষয়।
(ولكنْ تحلق الدّين) এর ফলাফল বড় ভয়াবহ দুনিয়াতে এবং আখিরাতেও ।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ শত্রুতা দীনকে এমনভাবে ধ্বংস করে যেমন বেস্নড চুলকে ধ্বংস করে। ‘তাহলিক্বু’-এর যমীর আল বাগযা এর দিকে ফিরেছে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫১০)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা
৫০৪০-[১৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা হিংসা হতে বেঁচে থাকো। কেননা হিংসা সৎকর্মসমূহকে খেয়ে ফেলে, যেমনিভাবে কাষ্ঠখন্ডকে আগুন খায়। (আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদের বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত তবে ইব্রাহীমের দাদা/নানা (جد ابراهيم) ব্যতীত। তিনি মাজহূল বা অপরিচিত। কারণ, তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। দেখুন- য‘ঈফাহ্ ১৯০২।
وَعَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِيَّاكُمْ وَالْحَسَدَ فَإِنَّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (إِيَّاكُمْ وَالْحَسَدَ) অর্থাৎ তোমরা ধন-সম্পদ ও পার্থিব সম্মান-মর্যাদার বিষয়ে অন্যের প্রতি হিংসা করা থেকে বেঁচে থাক। কেননা এটা নিন্দনীয়। অবশ্য পরকালীন বিষয়ে গিবতাহ্ বা অন্যের মধ্যে যে বিশেষত্ব রয়েছে তা নিজের মধ্যে অর্জিত হওয়ার আগ্রহ করা দূষণীয় নয়।
(فَإِنَّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ) অর্থাৎ হিংসা-বিদ্বেষ হিংসুকের সৎকর্মগুলো বিনষ্ট করে দেয়।
(كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ) কারণ হিংসা হিংসুককে গীবত করার দিকে নিয়ে যায়। সুতরাং যার প্রতি হিংসা করা হয়েছে সে হিংসুকের সৎকর্মগুলো নিয়ে যাবে তার গীবত করার কারণে। সুতরাং যার প্রতি হিংসা করা হয়েছে তার নি‘আমাতের উপর নি‘আমাত বৃদ্ধি পায়। আর হিংসুক ব্যক্তির ক্ষতির উপর ক্ষতি। তার অবস্থার ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, خَسِرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ‘‘তার দুনিয়া ও আখিরাত ধ্বংস হলো’’- (সূরাহ্ আল হজ্জ ২২ : ১১)। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮৯৫)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা
৫০৪১-[১৫] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ দু’ ব্যক্তির মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি করা থেকে তোমরা নিজেকে রক্ষা করো। কেননা এ কাজ দীনকে ধ্বংসকারী। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْهُ
عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِيَّاكُمْ وَسُوءَ ذَاتِ الْبَيْنِ فَإِنَّهَا الْحَالِقَةُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ (إِيَّاكُمْ وَسُوءَ ذَاتِ الْبَيْنِ) অর্থাৎ দু’ ব্যক্তির মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি করা থেকে, তাদের মাঝে পারস্পরিক সম্প্রীতি নষ্ট করা এবং পারস্পারিক ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টির চেষ্টা করা থেকে বেঁচে থাকার জন্য বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবধান করেছেন। এর কারণ হলো, এটি অত্যন্ত গর্হিত একটি কাজ। এটি একটি মারাত্মক অপরাধ। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা
৫০৪২-[১৬] আবূ সিরমাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (কোন মুসলিমকে) কষ্ট দেবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে কষ্ট দেবেন এবং যে ব্যক্তি (কোন মুসলিমকে) বিপদে ফেলবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে বিপদে ফেলবেন। [ইবনু মাজাহ ও তিরমিযী; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসটি গরীব।][1]
وَعَن أبي
صرمة أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ ضَارَّ ضَارَّ اللَّهُ بِهِ وَمَنْ شَاقَّ شَاقَّ اللَّهُ عَلَيْهِ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيب
ব্যাখ্যাঃ (شَاقَّ اللهُ عَلَيْهِ) অর্থাৎ আল্লাহ তাকে শাস্তি দিবেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يُّشَاقِّ اللهَ فَإِنَّ اللهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ ‘‘আর যে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করেন তার জানা উচিত যে, আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা।’’ (সূরাহ্ আল হাশ্র ৫৯ : ৪)
شَاقَّ ও ضَارَّ এর মধ্যে পার্থক্য : অর্থের দিক দিয়ে شَاقَّ ও ضَارَّ শব্দ দু’টো প্রায় সমপর্যায়ের। অবশ্য এর মধ্যে কিছুটা পার্থক্য বিদ্যমান। ধন-সম্পদের বিনষ্ট সাধনকে ضرر বলে, আর শারীরিক ক্ষতি বা কষ্ট দেয়াকে مشقة বলে। অথবা ضَارَّ দ্বারা শারীরিক বুঝায়। আর مشقة এমন বিরুদ্ধারণ, যা কলহ-বিবাদ এবং যুদ্ধ ডেকে আনে। তবে প্রথম মতটাই গ্রহণযোগ্য। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৪০)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা
৫০৪৩-[১৭] আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেই ব্যক্তি অভিশপ্ত, যে কোন মুসলিমকে কষ্ট দেয় অথবা কোন মুসলিমের সাথে প্রবঞ্চনা করে। [তিরমিযী; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসটি গরীব।][1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘ফারকদ’’ নামের বর্ণনাকারী য‘ঈফ। বিস্তারিত দেখুন- য‘ঈফাহ্ ১৯০৩, বাযযার ৪৩, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৯৬, শু‘আবুল ঈমান ৮৫৭৭, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৯৩১২।
وَعَنْ أَبِي
بَكْرٍ الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَلْعُونٌ مَنْ ضَارَّ مُؤْمِنًا أَوْ مَكَرَ بِهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যাঃ (مَنْ ضَارَّ مُؤْمِنًا) যে কোন মু’মিনকে কষ্ট দেয়, অর্থাৎ বাহ্যিকভাবে বা প্রকাশ্যভাবে কোন মু’মিনকে ক্ষতি করে অথবা ক্ষতি করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়।
(أَوْ مَكَرَ بِه) সে তার সাথে প্রতারণা বা ধোঁকাবাজি করে। অর্থাৎ গোপনে তার ক্ষতি করে অথবা ক্ষতি করার জন্য নিরলস চেষ্টা করে যায়, তার ব্যাপারে বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেই ব্যক্তি মহান আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়িত হবে। (তুহফাতুল আহ্ওযায়ী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৪১)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা
৫০৪৪-[১৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারের উপর উঠলেন এবং উচ্চস্বরে ডেকে বললেনঃ ’’হে মুসলিমগণ! যারা মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছ এবং অন্তরে ইসলামের প্রভাব রাখোনি, তোমরা মুসলিমদেরকে কষ্ট দিয়ো না, তাদেরকে লজ্জা দিয়ো না এবং তাদের দোষ অন্বেষণ করো না। কেননা যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ অন্বেষণ করে, আল্লাহ তা’আলা তার দোষ অন্বেষণ করেন। আল্লাহ তা’আলা যার দোষ খুঁজবেন, তাকে অপমান করবেন, যদি সে নিজের ঘরের মধ্যেও থাকে। (তিরমিযী)[1]
وَعَن ابنِ
عمَرَ قَالَ: صَعِدَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمِنْبَرَ فَنَادَى بِصَوْتٍ رَفِيعٍ فَقَالَ: «يَا مَعْشَرَ مَنْ أَسْلَمَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يُفْضِ الْإِيمَانُ إِلَى قَلْبِهِ لَا تُؤْذُوا الْمُسْلِمِينَ وَلَا تُعَيِّرُوهُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ فَإِنَّهُ مَنْ يَتَّبِعْ عَوْرَةَ أَخِيهِ الْمُسْلِمِ يَتَّبِعِ اللَّهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ يَتَّبِعِ اللَّهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ وَلَوْ فِي جَوْفِ رَحْلِهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ (مَنْ أَسْلَمَ بِلِسَانِه) অর্থ যারা মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছ দ্বারা মু’মিন এবং মুনাফিকরা উভয় প্রকার লোককে বুঝানো হয়েছে। আর (وَلَمْ يُفْضِ الْإِيمَانُ إِلٰى قَلْبِه) অর্থ আর অন্তরে ঈমানের/ইসলামের প্রভাব রাখনি’ দ্বারা ফাসিককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সুতরাং বাক্যটির অর্থ হবে- একদিন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’মিন, মুনাফিক এবং ফাসিক সকলে সম্বোধন করে উপদেশ দিয়েছেন। (لَا تُؤْذُوا الْمُسْلِمِينَ) অর্থাৎ যারা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করেছে, আর তারা মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছে আর তাদের অন্তর দ্বারা ঈমান এনেছে।
(وَلَا تُعَيِّرُوهُمْ) অর্থ ‘আর তোমরা তাদেরকে লজ্জা দিয়ো না’। যদি লজ্জা দেয় তবে এটা তাদের জন্য ধমক ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে। কেউ কাউলে লজ্জা দিলে তাকে এ কাজ হতে তাওবাহ্ করতে হবে। আবার কখনও লজ্জা দেয়ার জন্য তাকে হাদ্দ বা শাস্তি অথবা তা‘বীর বা শিক্ষা দেয়ার জন্য শাস্তি দেয়া ওয়াজিব হবে। এটা হবে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের দিক থেকে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২০৩২)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা
৫০৪৫-[১৯] সা’ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ সবচেয়ে বড় সুদ হলো অন্যায়ভাবে কোন মুসলিমের মানহানি করা। (আবূ দাঊদ ও বায়হাক্বী ’’শু’আবুল ঈমানে’’ বর্ণনা করেছেন।)[1]
وَعَن سعيد
بْنِ زَيْدٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ مِنْ أَرْبَى الرِّبَا الِاسْتِطَالَةُ فِي عِرْضِ الْمُسْلِمِ بِغَيْرِ حَقٍّ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ»
ব্যাখ্যাঃ (إِنَّ مِنْ أَرْبَى الرِّبَا) অর্থ সবচেয়ে বড় সুদ অর্থাৎ ক্ষতির দিক দিয়ে মারাত্মক এবং হারামের দিক দিয়েও জঘন্যতম।
(الِاسْتِطَالَةُ فِي عِرْضِ الْمُسْلِمِ) এখানে الِاسْتِطَالَةُ শব্দের অর্থ- দীর্ঘায়িত করা, অতিরিক্ত করা ও বাড়াবাড়ি করা। এখানে অর্থ হচ্ছে, কোন মুসলিমের ইয্যত নষ্ট করার উদ্দেশে অহংকার ও গর্ব করে গালি দেয়া, গীবত ও মিথ্যা অপবাদ দেয়া। এটি সুদের চেয়েও মারাত্মক হারাম হওয়ার কারণ হলো, মুসলিমের মান-সম্মান ধন-সম্পদের চেয়ে অধিক মূল্যবান। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮৬৮)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা
৫০৪৬-[২০] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন আল্লাহ তা’আলা আমাকে উপরে নিয়ে গেলেন, আমি সেখানে এমন লোকেদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখ তামার তৈরি। সেসব নখ দ্বারা তারা তাদের মুখমণ্ডলে ও বক্ষ খোঁচাচ্ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে জিবরীল! এরা কারা? জিবরীল (আ.) বললেনঃ এরা সেসব লোক, যারা মানুষের মাংস খায় (পরোক্ষ নিন্দা করে) এবং মানুষের পিছনে লেগে থাকে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم: لما عرجَ بِي ربِّي مَرَرْتُ بِقَوْمٍ لَهُمْ أَظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمِشُونَ وجوهَهم وصدورهم فَقُلْتُ: مَنْ هَؤُلَاءِ يَا جِبْرِيلُ؟ قَالَ: هَؤُلَاءِ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ لُحُومَ النَّاسِ وَيَقَعُونَ فِي أَعْرَاضِهِمْ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (الَّذِينَ يَأْكُلُونَ لُحُومَ النَّاسِ) অর্থাৎ তারা মুসলিমদের গীবতে লিপ্ত থাকত।
(وَيَقَعُونَ فِي أَعْرَاضِهِمْ) ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মি‘রাজে গিয়ে দেখলেন জাহান্নামে কিছু লোক মুখ ও বক্ষ আঁচড়াতে রত। প্রকৃতপক্ষ মুখ ও বক্ষ আঁচড়ানো স্বভাবটা বিলাপ করে ক্রন্দনকারী মহিলাদের স্বভাব। অথচ যারা দুনিয়াতে গীবত করেছে এবং মুসলিমদের মান-সম্মান ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করেছে, এরা প্রকৃতপক্ষ পুরুষের গুনাগুণ সম্বলিত না। বরং তারা মহিলাদের মন্দ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়ায় তাদেরকে মহিলাদের মতো সাজা দেয়া হচ্ছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা
৫০৪৭-[২১] মুসতাওরিদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের পরোক্ষ নিন্দা করে বা মন্দ বলে এক গ্লাস খেলো, আল্লাহ তা’আলা তাকে সে পরিমাণ জাহান্নামের আগুন খাওয়াবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের অপদস্থ ও অপমানের বিনিময়ে কাপড় পরিধান করল, আল্লাহ তা’আলা সেটার বিনিময়ে তাকে সমপরিমাণ জাহান্নামের আগুনের পোশাক পরিধান করাবেন। আর যে ব্যক্তি কাউকে দাঁড় করায় বা নিজে দণ্ডায়মান হয়ে লোকেদেরকে নিজের বুজুর্গি শোনায় বা নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দেখায়, কিয়ামতের দিন স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা তার ত্রুটি-বিচ্যুতি ও দুর্বলতা শোনানোর জন্য এবং দেখানোর জন্য তাকে দাঁড় করাবেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن الْمُسْتَوْرد
عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ أَكَلَ بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ أُكْلَةً فَإِنَّ اللَّهَ يُطعِمُه مثلَها منْ جهنَّمَ ومَن كَسا ثَوْبًا بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ فَإِنَّ اللَّهَ يَكْسُوهُ مِثْلَهُ مِنْ جَهَنَّمَ وَمَنْ قَامَ بِرَجُلٍ مَقَامَ سُمْعَةٍ وَرِيَاءٍ فَإِنَّ اللَّهَ يَقُومُ لَهُ مَقَامَ سُمْعَةٍ ورياءِ يَوْم الْقِيَامَة» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (مَنْ أَكَلَ بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ) অর্থাৎ কোন মুসলিমের গীবত করার কারণে যে তার সাথে শত্রুতা রাখে তার কাছে এ মুসলিমের মান-সম্মান খাটো করার কারণে অথবা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে এক গস্নাস বা এক বেলা খাদ্য গ্রহণ করল, মহান আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে এ পরিমাণ খাওয়াবেন।
(بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ) এর ب (বা) টি তা‘দিয়্যাহ্ বা পৌঁছে দেয়া অর্থে অথবা কারণ দর্শাণোর অর্থে আসতে পারে। যদি সেটা তা‘দিয়্যাহ্ এর জন্য আসে তবে তার অর্থ হবে مَنْ أَقَامَ رَجُلًا مَقَامَ سُمْعَةٍ وَرِيَاءٍ অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে দিয়ে তাকওয়া ও বুজুর্গ প্রকাশ করল যাতে করে মানুষ তার ব্যাপারে সুধারণা বা উত্তম বিশ্বাস রাখে যে, সে একজন মুত্তাক্বী ব্যক্তি, তাকে সম্মানী করুক বা তাকে লোকেরা খিদমাত করুক, যেন সে এর কারণে টাকা-পয়সা বা সম্মান-মর্যাদা লাভ করতে পারে। তখন আল্লাহ তা‘আলা তার সুনাম ও লোক দেখানোর বিপরীতে একজন মালাক (ফেরেশতা) দাঁড় করিয়ে দেন যাতে সে প্রকাশ করতে পারে যে এ ব্যক্তি মিথ্যুক।
আর যদি সাবাবিয়্যাহ্ বা কারণ দর্শানোর জন্য আসে তবে এর অর্থ হবে : সে নিজে দ-য়ামান হয়ে লোকেদেরকে নিজের বুজুর্গি শোনায় বা নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দেখায় যাতে লোকেরা বিশ্বাস করে যে, লোকটি বিরাট মর্যাদার অধিকারী। অনেক সম্পদশালী, এটা দ্বারা তার উদ্দেশ্য হলো লোকেরা তাকে বেশি টাকা প্রদান করুক, তাকে সম্মান করুক তবে কিয়ামতের দিন স্বয়ং আল্লাহ তার ত্রুটি-বিচ্যুতি ও দুর্বলতা শোনানোর জন্য এবং দেখানোর জন্য দাঁড় করাবেন (একজন ফেরেশতাকে)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনূল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮৭৩)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা
৫০৪৮-[২২] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ভালো চিন্তা ও উত্তম ধারণা করাও ’ইবাদাত। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ এর সনদে ‘‘শুতায়র (شتير) বা সুমায়র (سمير) ইবনু নাহার (نهار)’’ নামে একজন বর্ণনাকারী আছে। ইমাম যাহাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ নুকরাহ্ (نكرة) বা তার মধ্যে অপছন্দ বিষয় আছে। দেখুন- হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৪৫৩ পৃঃ।
وَعَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «حُسْنُ الظَّنِّ مِنْ حسْنِ العِبادةِ» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (حُسْنُ الظَّنِّ) অর্থাৎ মহান আল্লাহ ও মুসলিমদের ব্যাপারে উত্তম ধারণা পোষণ করা।
(مِنْ حسْنِ العِبادةِ) অর্থাৎ এটা এক প্রকারের ‘ইবাদাত, যা মহান আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়।
হাদীসটির বাস্তবিক শিক্ষা : সুধারণা পোষণ করা এক প্রকার উত্তম ‘ইবাদাত। যেমনিভাবে মন্দ ধারণা পোষণ করা এক প্রকার পাপ।
এক ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ ‘‘নিশ্চয় কতক ধারণা পোষণ করলে পাপ হয়’’- (সূরাহ্ আল হুজুরা-ত ৪৯ : ১২)। অর্থাৎ কতক ধারণা ভালো, যা ‘ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত। ‘আস সিরাজুম মুনীর’ কিতাবে অনুরূপ বলা হয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৮৫)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা
৫০৪৯-[২৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী সফিয়্যাহ্ (রাঃ)-এর উটটি পীড়াগ্রস্ত হয়ে পড়ল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অপর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ)-এর কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত একটি সওয়ারী ছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবি যায়নাবকে বললেনঃ তাঁকে একটি উট দাও। তখন তিনি বললেনঃ আমি ঐ ইয়াহূদীনীকে উট দেবো? এতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনোক্ষুণ্ণ হলেন এবং যিলহজ্জ, মুহাররম ও সফর মাসের কিছুদিন তাঁর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছিলেন। (আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘সুমাইয়া’’ নামের বর্ণনাকারীকে চেনা যায় না। দেখুন- গয়াতুল মারাম ২৩৪ পৃঃ, হাঃ ৪১০।
وَعَن عائشةَ
قَالَتْ: اعْتَلَّ بَعِيرٌ لِصَفِيَّةَ وَعِنْدَ زَيْنَبَ فَضْلُ ظَهْرٍ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِزَيْنَبَ: «أَعْطِيهَا بَعِيرًا» . فَقَالَتْ: أَنَا أُعْطِي تِلْكَ الْيَهُودِيَّةَ؟ فَغَضِبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَهَجَرَهَا ذَا الْحُجَّةِ وَالْمُحَرَّمَ وَبَعْضَ صَفَرٍ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
وَذُكِرَ حَدِيثُ مُعَاذِ بْنِ أَنَسٍ: «مَنْ حَمَى مُؤْمِنًا» فِي «بَابِ الشَّفَقَة وَالرَّحْمَة»
ব্যাখ্যাঃ لِصَفِيَّةَ بِنْتِ حُيَيٍّ সফিয়্যাহ্ বিনতু হুয়াইয়ি (রাঃ) ছিলেন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী।
(وَعِنْدَ زَيْنَبَ) ইনি যায়নাব বিনতু জাহশ (রাঃ)-ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী ছিলেন।
(أَنَا أُعْطِي تِلْكَ الْيَهُودِيَّةَ؟) এর ব্যাখ্যাঃ সফিয়্যাহ্ (রাঃ) ছিলেন খায়বার এলাকার ইয়াহূদী সর্দার হুয়াই ইবনু আখতার-এর কন্যা। বংশ পরম্পরায় তিনি ছিলেন মূসা (আ.)-এর বড় ভাই হারূন (আ.)-এর বংশের মহিলা। সপ্তম হিজরীতে খায়বার বিজয়ের সময় সফিয়্যাহ্ (রাঃ) দাসী হিসেবে বন্দি হয়ে মুসলিমদের হাতে আসলে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মুক্ত করে দিয়ে নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। এ হিসেবে যায়নাব (রাঃ) তাকে ইয়াহূদিনী হিসেবে তিরস্কার করেছিলেন।
(فَهَجَرَهَا ذَا الْحُجَّةِ وَالْمُحَرَّمَ وَبَعْضَ صَفَرٍ) ‘‘যিলহজ্জ মুহার্রম ও সফর মাসের কিছুদিন তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছিলেন’’।
ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসের এ অংশ দ্বারা বুঝা গেল যে, মন্দ কাজের জন্য তিনদিনের বেশি সময় কথাবার্তা বন্ধ রাখা বৈধ আছে। অর্থাৎ ধমক দেয়া ও আদব শিক্ষা দেয়ার ইচ্ছায়; শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টির ইচ্ছায় না। এখান থেকে আমরা পূর্ববর্তী হাদীস তথা তিনদিনের বেশি কথাবার্তা বন্ধ রাখা জায়িয না হাদীসটি ও অত্র হাদীসটির মধ্যে সমন্বয় বুঝতে পারলাম। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৫৯১)