পরিচ্ছেদঃ ১৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা

৫০২৭-[১] আবূ আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তিনদিনের বেশি সময় অপর কোন মুসলিম ভাইকে ত্যাগ করে। তারা কোথাও একে অপরের মুখোমুখি হলে একজন এদিকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং অপরজন ওদিকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাদের দু’জনের মধ্যে উত্তম সে ব্যক্তি, যে প্রথমে সালাম করে কথাবার্তা আরম্ভ করে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يُنْهٰى عَنْهُ مِنَ التَّهَاجِرُ وَالتَّقَاطُعِ وَاتِّبَاعِ الْعَوْرَاتِ

عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الْأَنْصَارِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَحِلُّ لِلرَّجُلِ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلَاثِ لَيَالٍ يَلْتَقِيَانِ فَيعرض هَذَا ويعرض هذاوخيرهما الَّذِي يبْدَأ بِالسَّلَامِ» . مُتَّفق عَلَيْهِ

عن ابي ايوب الانصاري قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا يحل للرجل ان يهجر اخاه فوق ثلاث ليال يلتقيان فيعرض هذا ويعرض هذاوخيرهما الذي يبدا بالسلام» . متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ (أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ) এই ভাই দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মুসলিম ভাই। আর এ ভাইয়ের সম্পর্ক আত্মীয়তার সূত্রে ভাই বা রক্ত সম্পর্কের ভাই বা সঙ্গী-সাথী যা ভাই এর চেয়ে ব্যাপক।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ ভাই দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ইসলামী ভাই তথা মুসলিম ভাই। আর এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, যদি কেউ এ ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ছিন্ন করে তবে তার সাথে তিনদিনের বেশি সময় কথা না বলা জায়িয। তখন তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা ওয়াজিব। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(فَوْقَ ثَلَاثِ) এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, তিনদিনের কম সময় ত্যাগ করা (কথা বন্ধ করা) বৈধ আছে। আর এ সময়ে যেন সে নমনীয় হতে পারে। কারণ মানুষের স্বভাব হলো রেগে যাওয়া এবং মন্দ চরিত্রের হওয়া ইত্যাদি। তবে রাগ যতই হোক না কেন তাকে তিনদিনের মধ্যে তা দূর করতে হবে। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬০৭৭)

(وخيرهما الَّذِىْ يبْدَأ بِالسَّلَامِ) বেশির ভাগ ‘উলামা বলেছেনঃ কেউ যদি তার ভাইকে সালাম দেয় ও সালামের জওয়াব নেয় তবে পরিত্যাগ করা দূর হয়ে যাবে।

ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ পরিত্যাগ করা হতে সে অত সময় মুক্ত হবে না যতক্ষণ না সে পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে আসে। তিনি আরো বলেনঃ তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে কথা বন্ধ করা যদি তাকে (সে ভাইকে) কষ্ট দেয় তবে শুধু সালাম দিলে পরিত্যাগকারী الهجرة দূর হবে না। ইবনুল কাসিমও এরূপ বলেছেন।

কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যখন সে কথা বলা থেকে দূরে থাকবে তখন আমাদের নিকট তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা যাবে না। যদিও সে তাকে সালাম দিক না কেন। অর্থাৎ তার কথাটি ইবনুল কাসিম (রহিমাহুল্লাহ)-এর কথাকে শক্তিশালী করেছে।

ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমি বলছি, তার সাক্ষ্য গ্রহণের ব্যাপারে মতপার্থক্য আছে। আর তার সাথে কথা বলা ছেড়ে দেয়াটা বুঝা যায় যে, তার মনে তার প্রতি কোন রাগ আছে। সুতরাং তার সাক্ষ্য কবুল হবে না। যদি সে তিনদিনের ভিতরে তার সাথে সালাম বিনিময় করে তবে পরিত্যাগ করাটা চলে যাবে। আর জামহূর ‘উলামা দলীল পেশ করেন, ‘ত্ববারানী’র যায়দ ইবনু ওয়াহ্ব-এর সূত্রে ইবনু মাস্‘ঊদ  হতে একটি মাওকূফ হাদীস। আর তাতে আছে, ورجوعه أن يأتي فيسلم عليه আর তার ফিরে আসা হলো সে এসে তাকে সালাম করবে। (ফাতহুল রাবী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬০৭৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা

৫০২৮-[২] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কোন বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে কুচিন্তা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা কুচিন্তা সবচেয়ে মিথ্যা। কারো খারাপ বা দোষের খবর জানার চেষ্টা করো না, গোয়েন্দাগিরি করো না, আর একজনের দরের উপর দিয়ে মাল দর করো না। পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা রেখ না, আর পরোক্ষ নিন্দাবাদে একে অপরের পিছনে লেগো না; বরং তোমরা সকলেই আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে থাকবে। অপর এক রিওয়ায়াতে আছে, পরস্পরে লোভ-লালসা করো না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يُنْهٰى عَنْهُ مِنَ التَّهَاجِرُ وَالتَّقَاطُعِ وَاتِّبَاعِ الْعَوْرَاتِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيثِ وَلَا تَحَسَّسُوا وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا تَنَاجَشُوا وَلَا تَحَاسَدُوا وَلَا تَبَاغَضُوا وَلَا تَدَابَرُوا وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا» . وَفِي رِوَايَة: «وَلَا تنافسوا» . مُتَّفق عَلَيْهِ

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اياكم والظن فان الظن اكذب الحديث ولا تحسسوا ولا تجسسوا ولا تناجشوا ولا تحاسدوا ولا تباغضوا ولا تدابروا وكونوا عباد الله اخوانا» . وفي رواية: «ولا تنافسوا» . متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ (إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ فَإِنَّ الظَّنَّ) অর্থাৎ তোমরা ধারণার অনুসরণ করা থেকে সাবধান থাক অথবা তোমরা কুচিন্তা থেকে সাবধান থাক। আর কুচিন্তা হলো একটি অপবাদ যা অন্তরে পতিত হয়, যার কোন দলীল থাকে না। এর দ্বারা উদ্দেশ্য এটা নয় যে, ধারণা করে সেই ‘আমল ছেড়ে দিবে যার দ্বারা বেশির ভাগেই হুকুম-আহকাম সাব্যস্ত হয়। বরং উদ্দেশ্য হলো সেই অবাস্তব কুচিন্তাকে ত্যাগ করবে, যা কুচিন্তাকারীর ক্ষতি করে।

(أَكْذَبُ الْحَدِيثِ) অর্থাৎ- এ মিথ্যা কথা হলো অন্তরের মিথ্যা কথা, কারণ এটা মানুষের অন্তরে শয়তানের জাগ্রত করার মাধ্যমে হয়ে থাকে। এখানে কুধারণাকে কথার সাথে সাদৃশ্য করা হয়েছে মাজায বা রূপকথা অর্থে, কারণ কুধারণা থেকেই তা উৎপত্তি হয়।

(وَلَا تَحَسَّسُوا) ইমাম মানবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অর্থাৎ কারো দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করো না। যেমন : কান পেতে কারো গোপন কথা শোনা, গোপনে কোন জিনিস দেখা। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯০৯)

(وَلَا تَنَاجَشُوا) বলা হয়ে থাকে : কোন পণ্য ক্রয় করার আগ্রহ ছাড়াই তার দাম বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্য থাকে, যাতে ক্রেতা ধোকায় পড়ে যায়। দালালী করার কারণে ক্রেতা চড়া দামে পণ্য কেনায় আগ্রহী হয়। এ অর্থটিই জামহূর ফুকাহাদের নিকট প্রসিদ্ধ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(وَلَا تَحَاسَدُوا) অর্থাৎ তোমাদের কেউ যেন কারো নি‘আমাত বা অনুগ্রহ দূর হয়ে যাওয়ার আকাঙক্ষা না করে। যেন মনে মনেও তা না করে আবার প্রকাশ্যভাবেও না করে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَلَا تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللهُ بِه بَعْضَكُمْ عَلٰى بَعْضٍ لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبُوا وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبْنَ وَاسْأَلُوا اللهَ مِنْ فَضْلِه

‘‘তোমরা তা কামনা করো না যদ্দ্বারা আল্লাহ তোমাদের কাউকে কারো ওপর মর্যাদা প্রদান করেছেন। পুরুষেরা তাদের কৃতকার্যের অংশ পাবে, নারীরাও তাদের কৃতকর্মের অংশ পাবে...’’- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ৩২)। অর্থাৎ আল্লাহ যে নি‘আমাত দিয়েছেন তা বা তার অনুরূপ নি‘আমাত যেন কামনা করে। আর এ প্রকার হিংসাকে বলা হয় গিবত্বাহ্। অর্থাৎ অন্যের নি‘আমাত দূর না হওয়ার আকাঙক্ষা করে তার অনুরূপ নি‘আমাত কামনা করা যেমন অন্য একটি হাদীস বলা হয়েছে - لَا حَسَدَ إِلَّا فِي اثْنَتَيْنِ ‘‘দু’টি জিনিস ব্যতীত কোন বিষয়ে হিংসা নেই।’’

(وَلَا تَبَاغَضُوا) অর্থাৎ প্রবৃত্তির ও বিভিন্ন মাযহাবের কারণে তোমরা দলে দলে ভাগ হবে না। কারণ দীনের মধ্যে বিদ্‘আত ও সরল সঠিক পথ থেকে ভ্রষ্টতা শত্রুতাকে ওয়াজিব বা আবশ্যক করে। অনুরূপ বলা হয়েছে, বাহ্যিক দিকল হলো পরস্পর শত্রুতা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেবল দীনের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ককে ঠিক রাখার জন্য। যদি দীনের সম্পর্ক ঠিক না থাকে তবে তার সাথে শত্রুতা রাখা জায়িয। কারণ আল্লাহর উদ্দেশ্য হলো জাতিকে এক করে রাখা। যেমন আল্লাহ বলেন, وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيعًا وَّلَا تَفَرَّقُوا ‘‘আল্লাহর রজ্জুকে সমবেতভাবে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’’- (সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ১০৩)। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, পরস্পরকে ভালোবাসা একতার কারণ, আর পরস্পরকে শত্রু মনে করা বিচ্ছিন্নতাকে আবশ্যক করে। এর অর্থ হলো তোমরা একে অন্যের সাথে শত্রুতা রাখবে না।

(وَلَا تَدَابَرُوا) অর্থাৎ একে অপরের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করো না। কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ- তোমরা একে অপরের গীবত বা পরোক্ষ নিন্দাবাদ করো না।

(وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا) এর অর্থ হলো : তোমরা আল্লাহর বান্দা হওয়ার দিক দিয়ে সবাই সমান। আর তোমাদের ধর্মও এক। পরস্পর পরস্পরের প্রতি হিংসা, শত্রুতা ও সম্পর্কছেদ করতে তোমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। অতএব তোমাদের কর্তব্য হলো ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ করা। ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপন করা, সৎ কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করা এবং প্রত্যেক ভালো কাজে কল্যাণ কামনা করা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা

৫০২৯-[৩] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজা খোলা হয় এবং প্রত্যেক বান্দাকে ক্ষমা করা হয় এ শর্তে যে, সে আল্লাহ তা’আলার সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করবে না। আর সে ব্যক্তি এ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত থেকে যায়, যে কোন মুসলিমের সাথে হিংসা ও শত্রুতা পোষণ করে। মালায়িকাহ্’কে (ফেরেশতাদেরকে) বলা হয় যে, এদের অবকাশ দাও, যেন তারা পরস্পর মীমাংসা করে নিতে পারে। (মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يُنْهٰى عَنْهُ مِنَ التَّهَاجِرُ وَالتَّقَاطُعِ وَاتِّبَاعِ الْعَوْرَاتِ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: تُفْتَحُ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَيَوْمَ الْخَمِيسِ فَيُغْفَرُ لِكُلِّ عَبْدٍ لَا يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا إِلَّا رجلا كَانَتْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءٌ فَيُقَالُ: انْظُرُوا هذَيْن حَتَّى يصطلحا . رَوَاهُ مُسلم

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: تفتح ابواب الجنة يوم الاثنين ويوم الخميس فيغفر لكل عبد لا يشرك بالله شيىا الا رجلا كانت بينه وبين اخيه شحناء فيقال: انظروا هذين حتى يصطلحا . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ (تُفْتَحُ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ) কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর অর্থ হলো, সোমবার ও বৃহস্পতিবার মহান আল্লাহ অধিক পরিমাণে ক্ষমা করে দেন এবং রহমত নাযিল করেন, মর্যাদা সমুন্নত করেন আর উত্তম প্রতিদান দেন। এ বাক্যটি স্বীয় প্রকাশ্য অর্থের উপরও প্রযোজ্য হতে পারে। আর জান্নাতের দরজা খোলা হলো তার আলামাত। (শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ ২৫৬৫)

(حَتّٰى يَصْطَلِحَا) অর্থাৎ দু’জনে সংশোধন করে নেয় আর তাদের মধ্যকার হিংসা-বিদ্বেষকে দূর করে নেয়। যদি তারা সুনাম ও লোকদেখানোর জন্য মীমাংসা করে তবে তা কোন উপকারে আসবে না। মূল কথা হলো খাটি অন্তরে প্রত্যেককে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। যাতে তার অন্তর থেকে হিংসা শত্রুতা দূর হয়, তার সাথী সংশোধন হোক বা না হোক সেটা দেখার বিষয় না। মহান আল্লাহ ভালো জানেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা

৫০৩০-[৪] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক সপ্তাহে দু’বার (অর্থাৎ- সোমবার ও বৃহস্পতিবার) বান্দার কার্যাবলী আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় এবং প্রত্যেক মু’মিন বান্দাকে ক্ষমা করা হয়; কিন্তু ঐ বান্দাকে ক্ষমা করা হয় না, যে নিজে কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে শত্রুতা পোষণ করে। তার সম্পর্কে বলে দেয়া হয় যে, তাদেরকে সময় দাও, যাতে তারা পরস্পর আপোষ হতে পারে। (মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يُنْهٰى عَنْهُ مِنَ التَّهَاجِرُ وَالتَّقَاطُعِ وَاتِّبَاعِ الْعَوْرَاتِ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: تُعْرَضُ أَعْمَالُ النَّاسِ فِي كُلِّ جُمُعَةٍ مَرَّتَيْنِ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَيَوْمَ الْخَمِيسِ فَيُغْفَرُ لِكُلِّ مُؤْمِنٍ إِلَّا عبدا بَينه بَين أَخِيهِ شَحْنَاءُ فَيُقَالُ: اتْرُكُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَفِيئَا . رَوَاهُ مُسلم

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: تعرض اعمال الناس في كل جمعة مرتين يوم الاثنين ويوم الخميس فيغفر لكل مومن الا عبدا بينه بين اخيه شحناء فيقال: اتركوا هذين حتى يفيىا . رواه مسلم

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা

৫০৩১-[৫] উম্মু কুলসূম বিনতু ’উকবাহ্ ইবনু আবূ মু’আয়ত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ঐ ব্যক্তি মিথ্যুক নয়, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে হলেও লোকেদের মধ্যে মীমাংসা করে, উভয় পক্ষকে ভালো কথা বলে, একের পক্ষ থেকে অপরকে ভালো কথা পৌঁছায়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

ইমাম মুসলিম (রহিমাহুল্লাহ) এক বর্ণনায় এ কথাগুলো বৃদ্ধি করেছেন, উম্মু কুলসূম (রাঃ) বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিনটি কাজ ব্যতীত কোন কাজে কখনো মিথ্যা বলার অনুমতি দিতে শুনিনি- ১. শত্রুর বিরুদ্ধে মুসলিমের যুদ্ধের সময়, ২. ব্বিদমান দু’ পক্ষর মীমাংসা করানোর সময় এবং ৩. স্বামী স্ত্রীর সাথে এবং স্ত্রী স্বামীর সাথে কথা বলার সময়।

بَابُ مَا يُنْهٰى عَنْهُ مِنَ التَّهَاجِرُ وَالتَّقَاطُعِ وَاتِّبَاعِ الْعَوْرَاتِ

وَعَنْ أُمُّ كُلْثُومٍ بِنْتُ عُقْبَةَ بْنِ أَبِي مَعِيطٍ قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَيْسَ الْكَذَّابُ الَّذِي يُصْلِحُ بَيْنَ النَّاسِ وَيَقُولُ خَيْرًا وَيَنْمِي خَيْرًا» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَزَادَ مُسْلِمٌ قَالَتْ: وَلَمْ أَسْمَعْهُ - تَعْنِي النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - يُرَخِّصُ فِي شَيْءٍ مِمَّا يَقُولُ النَّاسُ كَذِبٌ إِلَّا فِي ثَلَاثٍ: الْحَرْبُ وَالْإِصْلَاحُ بَيْنَ النَّاسِ وَحَدِيثُ الرَّجُلِ امْرَأَتَهُ وَحَدِيثُ الْمَرْأَةِ زَوْجَهَا

وعن ام كلثوم بنت عقبة بن ابي معيط قالت: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «ليس الكذاب الذي يصلح بين الناس ويقول خيرا وينمي خيرا» . متفق عليه. وزاد مسلم قالت: ولم اسمعه - تعني النبي صلى الله عليه وسلم - يرخص في شيء مما يقول الناس كذب الا في ثلاث: الحرب والاصلاح بين الناس وحديث الرجل امراته وحديث المراة زوجها

ব্যাখ্যাঃ (لَيْسَ الْكَذَّابُ الَّذِىْ يُصْلِحُ بَيْنَ النَّاسِ) ‘‘ঐ ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয়, যে মিথ্যা বলেও লোকেদের মধ্যে মীমাংসা করে।’’ এর অর্থ হলো ঐ ব্যক্তি নিন্দিত মিথ্যুক নয়, যে মানুষের মাঝে মীমাংসা করে। বরং সে ব্যক্তি একজন সৎলোক। (শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ ২৬০৫)

(وَيَنْمِي خَيْرًا) অর্থাৎ উভয়পক্ষকে ভালো কথা বলে, একপক্ষ থেকে অপরপক্ষকে ভালো কথা পৌঁছায়। অর্থাৎ যে ভালো কথা তাদের থেকে শোনেনি, তা অপরপক্ষর নিকট পৌঁছে দেয়। যেমন- সে বলে, অমুক ব্যক্তি আপনাকে সালাম প্রেরণ করেছেন, সে আপনাকে ভালোবাসে, সে আপনার ব্যাপারে ভালো বলেছে। অনুরূপ আরো অনেক কথা তার নিজের থেকে বলে। এর দ্বারা তার উদ্দেশ্য হলো উভয়ের মাঝে সৃষ্ট বিবাদ মীমাংসা করা। কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সে ভালো কথা যা শুনেছে তা বলবে আর খারাপ কথা পরিহার করবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা

৫০৩২-[৬] এ প্রসঙ্গে জাবির বর্ণিত হাদীস إِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ أَيِسَ ’’প্রতারণা’’ অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে।

بَابُ مَا يُنْهٰى عَنْهُ مِنَ التَّهَاجِرُ وَالتَّقَاطُعِ وَاتِّبَاعِ الْعَوْرَاتِ

وَذكر حَدِيث جَابر: «إِن الشَّيْطَان قد أيس» فِي «بَاب الوسوسة»

وذكر حديث جابر: «ان الشيطان قد ايس» في «باب الوسوسة»

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৬ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে