পরিচ্ছেদঃ ১৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা

৫০৫০-[২৪] আবূ হুরায়রা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মারইয়াম-এর পুত্র ’ঈসা (আ.) এক ব্যক্তিকে চুরি করতে দেখলেন। ’ঈসা (আ.) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি চুরি করেছ? সে বলল : কখনো না। ঐ সত্তার কসম! যিনি ছাড়া কোন ’ইবাদাতের যোগ্য কোন ইলাহ নেই। ’ঈসা (আ.) বললেনঃ আমি আল্লাহ তা’আলার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করলাম এবং নিজেকে নিজে মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করলাম। (মুসলিম)[1]

عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم: رأى عِيسَى بن مَرْيَمَ رَجُلًا يَسْرِقُ فَقَالَ لَهُ عِيسَى: سَرَقْتَ؟ قَالَ: كَلَّا وَالَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ. فَقَالَ عِيسَى: آمَنْتُ بِاللَّهِ وَكَذَّبْتُ نَفْسِي . رَوَاهُ مُسلم

عن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: راى عيسى بن مريم رجلا يسرق فقال له عيسى: سرقت؟ قال: كلا والذي لا اله الا هو. فقال عيسى: امنت بالله وكذبت نفسي . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ (آمَنْتُ بِاللهِ) অর্থাৎ তোমার কসমের বাক্য থেকে মহান আল্লাহর যে একত্ববাদের কথা বুঝা যায় তার প্রতি আমি ঈমান এনেছি।

(وَكَذَّبْتُ نَفْسِي) অর্থাৎ তোমার শপথের উপর ভিত্তি করে গোপনে মাল নেয়ার সময় চুরির যে সম্ভাবনা ছিল সেটা আসলে চুরি হবে না। কারণ চুরির ক্ষেত্রে শারী‘আতের যে নির্ধারিত শর্ত আছে, তার একটি এখনও পাওয়া যায়নি।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমি তোমার এ শপথ ‘‘আল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা হুওয়া’’-এর ভিত্তিতে তোমাকে বিশ্বাস করলাম। আর তোমাকে দোষমুক্ত মনে করলাম, আর আমি তোমার ব্যাপারে যে ধারণা করেছিলাম তা থেকে ফিরে আসলাম আর আমি নিজেকে মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করলাম। মহান আল্লাহ বলেন, يٰاَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা বেশি ধারণা করা থেকে বেঁচে থাক, নিশ্চয় কতক ধারণা পাপ বা গুনাহের কাজ’’- (সূরাহ্ আল হুজুরাত ৪৯ : ১২)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা

৫০৫১-[২৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দারিদ্র্যতা যেন প্রায়ই কুফরীর সীমানা পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেবে, আর হিংসা বা উচ্চাশা যেন তাকদীরের উপর জয়লাভ করবে।[1]

وَعَنْ
أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَادَ الْفَقْرُ أَنْ يَكُونَ كفرا وكادَ الحسدُ أَن يغلب الْقدر»

وعن انس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «كاد الفقر ان يكون كفرا وكاد الحسد ان يغلب القدر»

ব্যাখ্যাঃ (كَادَ الْفَقْرُ أَنْ يَكُونَ كُفْرًا) মূলত ধনী হলো সেই ব্যক্তি, যার হৃদয়টা ধনী তথা অভাবমুক্ত। আর গরীব হলো সেই, যার হৃদয়টা অভাবে পরিপূর্ণ; এ গরীব হৃদয়ই হলো কুফরীর কারণ। তা কখনো আল্লাহর সর্বক্ষমতার উপর প্রশ্ন উত্থাপন করে, আবার কখনো তাঁর সিদ্ধান্তের উপর অনীহা সৃষ্টি করে অথবা কখনো এ দরিদ্রতাই সরাসরি কুফরীর মধ্যে লিপ্ত করে ফেলে। আর এটা এভাবে যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কাফির-মুশরিক-আল্লাহদ্রোহীরা পার্থিব ধন-ঐশ্বর্যের প্রাচুর্যতার মাঝে ডুবে আছে। পক্ষান্তরে বেশিরভাগ ইসলাম দরিদ্রতার নিচে বাস করে। স্বভাবত এটা দেখে অনেক মুসলিমই কুফরী করতে পারে। অথবা এমন মন্তব্য করে বসে যাতে সে কুফরী করে বসে। এজন্যই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘দরিদ্রতা যেন কুফরীর সীমা পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়।

(وَكَادَ الْحَسَدُ أَنْ يَّغْلِبَ الْقَدْرَ) আর হিংসা বা উচ্চাশা যেন তাকদীরের উপর জয়লাভ করবে। অর্থাৎ হিংসুক ব্যক্তি অন্যের নি‘আমাত দেখে তার ভিতরের সুপ্ত লালসাকে আরো বাড়িতে তোলে। সে অন্যের নি‘আমাত দূর হয়ে যাক এমন কামনা করে। আর নিজে সব নি‘আমাতের একক মালিক হোক- এমন কামনা করে। মহান আল্লাহ যে তাকদীর লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন এটা সে মনেই করে না। হিংসার প্রভাবে সকল নীতি-নৈতিকতা ভুলে যায়। সে মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তাকদীরকে যথাযথ সম্মান দেখাতে পারে না। [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা

৫০৫২-[২৬] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের কোন মুসলিম ভাইয়ের কাছে ওযর-আপত্তি করে এবং সে মুসলিম যদি তাকে অপারগ বা ওযরযোগ্য মনে না করে অথবা যদি তাকে ক্ষমা না করে, তবে যালীম তহসীলদারের মতো পাপী হবে। [বায়হাক্বী’র ’’শু’আবুল ঈমান’’;[1] আর ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ مَكَّاسٌ অর্থ- ওশর আদায়কারী বা তহসীলদার]

وَعَنْ
جَابِرٍ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنِ اعْتَذَرَ إِلَى أَخِيهِ فَلَمْ يَعْذِرْهُ أَوْ لَمْ يَقْبَلْ عُذْرَهُ كَانَ عَلَيْهِ مثلُ خَطِيئَة صَاحب المكس» . رَوَاهُمَا الْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ» وَقَالَ: الْمَكَّاسُ: الْعَشَّارُ

وعن جابر عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «من اعتذر الى اخيه فلم يعذره او لم يقبل عذره كان عليه مثل خطيىة صاحب المكس» . رواهما البيهقي في «شعب الايمان» وقال: المكاس: العشار

ব্যাখ্যাঃ (كَانَ عَلَيْهِ مِثْلُ خَطِيئَةِ صَاحِبِ الْمَكْسٍ) বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন ব্যক্তি যদি ওযর ও অক্ষমতা বা ক্ষমা প্রার্থনা করার পর যে ব্যক্তি তার ওযর গ্রহণ করল না বা তাকে ক্ষমা করল না, সে ব্যক্তি অত্যাচারী তহসীলদারের ন্যায় অপরাধী, এটা একটা মারাত্মক অপরাধ। অন্য একটি হাদীসে আবূ হুরায়রা  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

عِفُّوا عَنْ نِسَاءِ النَّاسِ تَعِفَّ نِسَاؤُكُمْ، وَبِرُّوا آبَاءَكُمْ يَبِرُّكُمْ أَبْنَاؤُكُمْ، وَمَنْ أَتَاهُ أَخُوهُ مُتَنَصِّلًا فَلْيَقْبَلْ ذٰلِكَ مُحِقًّا كَانَ أَوْ مُبْطِلًا، فَإِنْ لَمْ يَفْعَلْ لَمْ يَرِدْ عَلَى الْحَوْضِ

‘তোমরা মানুষের মহিলাদের সতীত্ব বজায় রাখ, তবে তোমাদের মহিলাদেরও সতীত্ব বজায় রাখবে। তোমরা তোমাদের বাপ-দাদাদের সাথে সদাচরণ কর, তবে তোমাদের সন্তানরাও তোমাদের সাথে সদাচরণ করবে। আর তোমাদের কারো কাছে যদি কোন ভাই কোন ওযর অক্ষমতা নিয়ে আসে আর যদি সে সত্য বলে বা মিথ্যা বলে তবুও সে যেন তার ওযর গ্রহণ করে। আর যদি সে সেটা না করে তবে সে যেন আমার হাওযের নিকট না যায়। ইমাম হাকিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এর সানাদ সহীহ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

অত্র হাদীসটি প্রমাণ করে ওযর-আপত্তি গ্রহণ না করলে সে যুলুমকারী তথা অত্যাচারির মতো। এর কারণ হলো, বিদ্‘আতকারী যেমন বিদ্‘আত করে নিজের প্রতি অত্যাচারের করার কারণে হাওযের কাছে আসতে পারবে না, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে তাড়িয়ে দিবেন, ঠিক তেমনি মানুষের ওযর অক্ষমতা অগ্রহণকারী বা প্রত্যাখ্যানকারী ব্যক্তিরও অবস্থা হবে। [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে