পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ

২৯৪৪-[৭] সা’ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পতিত ভূমি চাষাবাদের উপযোগী করে সেটা তার (হক)। অন্যায় দলখকারীর মেহনতের কোনো হক নেই। (আহমাদ, তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

عَن سعيد بْنِ زَيْدٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «من أحيى أَرْضًا مَيْتَةً فَهِيَ لَهُ وَلَيْسَ لِعِرْقٍ ظَالِمٍ حق» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد

عن سعيد بن زيد عن النبي صلى الله عليه وسلم انه قال: «من احيى ارضا ميتة فهي له وليس لعرق ظالم حق» . رواه احمد والترمذي وابو داود

ব্যাখ্যা: (مَنْ أَحْيٰى أَرْضًا مَيْتَةً) মৃত জমিন বলতে ঐ জমিন যা আবাদ করা হয়নি, জমিন আবাদ করাকে জীবিতের সাথে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে এবং আবাদ না করে জমিন শূন্য রাখাকে মৃতের সাথে সাদৃশ্য দেয়া হচ্ছে।

‘ইরাক্বী বলেনঃ الموات، الميتة এবং الموتان অর্থাৎ- ঐ জমিনকে বলা হয় যা আবাদ করা হয়নি, অনাবাদী জমিনকে এ নামে নামকরণ করা হয়েছে মৃতের সাথে এর সাদৃশ্য থাকার কারণে, আর তা হলো মৃতের মাধ্যমে যেমন উপকৃত হওয়া যায় না, তেমনি জমিতে শস্য রোপণ, নির্মাণ অথবা অনুরূপ কিছু বর্জনের মাধ্যমে উপকৃত হওয়া যায় না।

(فَهِىَ لَه) অর্থাৎ- ঐ জমিন ঐ ব্যক্তির মালিকানায় পরিণত হবে চাই সে জমিন বসতির নিকটবর্তী থাকুক অথবা দূরত্বে থাকুক, চাই ইমাম ঐ ব্যাপারে অনুমতি দিক অথবা অনুমতি না দিক এটা জুমহূরের উক্তি।

আর আবূ হানীফার মতে মুতলাকভাবে ইমামের অনুমতি আবশ্যক। আর মালিক (রহঃ)-এর মতে যার বসতির নিকটে হবে সে জমির ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে। আর নিকটবর্তীতার আরও সীমা হলো বসতির অধিকারীরা যা দেখা-শোনা করার মুখাপেক্ষী। আর ত্বহাবী সমুদ্র ও নদীর পানির উপর এবং পাখি ও প্রাণী হতে যা শিকার করা হয় তার উপর ক্বিয়াস করার মাধ্যমে এ অধ্যায়ের হাদীস দ্বারা জুমহূরের পক্ষ সমর্থন করেছেন। কেননা তারা ঐ কথার উপর একমত হয়েছেন যে, যে তা গ্রহণ করবে অথবা শিকার করবে সেই তার মালিক হবে চাই নিকটে থাকুক অথবা দূরে থাকুক, চাই ইমাম অনুমতি দিক অথবা অনুমতি না দিক, ফাত্হুল বারীতেও অনুরূপ আছে। আমি বলব, আবূ হানীফার দু’ সাথী জুমহূরের উক্তির মাধ্যমে আবূ হানীফার বিরোধিতা করেছেন। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৩৭৮)

খত্ত্বাবী বলেনঃ মৃত ভূখণ্ডকে জীবিত করা, অর্থাৎ জমিন খনন করা, তাকে ফসলীতে পরিণত করা, সেখানে পানি প্রবাহিত করা এবং আবাদের ধরণসমূহ থেকে অনুরূপ কিছু করা। যে এ ধরনের কাজ করবে, সে এর মাধ্যমে জমিনের মালিক হয়ে যাবে। চাই তা বাদশাহর অনুমতিতে হোক অথবা অনুমতি ছাড়া হোক আর তা এ কারণে যে, এটা শর্ত ও জাযার ব্যাখ্যা, এটা কোনো ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে কোনো ব্যক্তির ওপর কোনো সময়কে বাদ দিয়ে কোনো সময়ের উপর সীমাবদ্ধ নয়। অধিকাংশ বিদ্বানগণ এ দিকে গিয়েছেন।

(لَيْسَ لِعِرْقٍ ظَالِمٍ حَقٌّ) খত্ত্বাবী বলেনঃ ব্যক্তি নিজ জমিন ছাড়া অন্যের জমিনে মালিকের অনুমতি ছাড়া কোনো কিছু রোপণ করা অথবা মালিকের অনুমতি ছাড়া অন্যের জমিতে কোনো কিছু নির্মাণ করা, এমন ক্ষেত্রে রোপণকারী বা নির্মাণকারীকে তা উপড়িয়ে ফেলার ব্যাপারে নির্দেশ করা হবে। তবে জমির মালিক তা বর্জনের ব্যাপারে সন্তুষ্ট থাকলে আলাদা কথা।

নিহায়াহ্ গ্রন্থে আছে- কোনো ব্যক্তির এমন কোনো জমিনে আসা যে জমিনকে তার পূর্বে অন্য কোনো লোক জীবিত করেছে আবাদ করেছে, অতঃপর সে জমিন নিজের জন্য সাব্যস্ত করতে দখল স্বরূপ তাতে কোনো কিছু রোপণ করা। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ৩০৭১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সাঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ

২৯৪৫-[৮] হাদীসটি ইমাম মালিক (রহঃ) ’উরওয়াহ্ (রহঃ) হতে মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, এটা হাসান গরীব।[1]

وَرَوَاهُ مَالِكٌ عَنْ عُرْوَةَ مُرْسَلًا. وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ

ورواه مالك عن عروة مرسلا. وقال الترمذي: هذا حديث حسن غريب

হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ

২৯৪৬-[৯] আবূ হুররাহ্ আর্ রক্কাশী (রহঃ) তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! কারো ওপর জুলুম করবে না। সাবধান! কারো মাল তার মনোতুষ্টি ছাড়া কারো জন্য হালাল নয়। (বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান, দারাকুত্বনী- মুজ্তাবা)[1]

وَعَن أبي حرَّة الرقاشِي عَن عَمه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «أَلا تَظْلِمُوا أَلَا لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسٍ مِنْهُ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَان وَالدَّارَقُطْنِيّ فِي الْمُجْتَبى

وعن ابي حرة الرقاشي عن عمه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الا تظلموا الا لا يحل مال امرى الا بطيب نفس منه» . رواه البيهقي في شعب الايمان والدارقطني في المجتبى

ব্যাখ্যা: (لا تَظْلِمُوا) ‘‘তোমরা জুলুম করবে না’’ অর্থাৎ- তোমাদের কতক কতকের প্রতি যেন অবিচার না করে। এভাবে বলা হয়েছে- তবে সর্বাধিক প্রকাশমান অর্থ হলো ‘‘তোমরা তোমাদের নিজেদের প্রতি অবিচার করো না।’’ এ বাক্যাংশটুকু নিজের ওপর জুলুম করা এবং অন্যের ওপর জুলুম করা উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করছে। হাদীসে বারংবার সতর্ক করা হয়েছে তার কারণ এই যে, হাদীসে উভয় বাক্য স্বয়ংসম্পূর্ণ হুকুম রাখে, এমতাবস্থায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। আর দ্বিতীয় বাক্যটি যার সাথে বান্দার অধিকার সম্পর্ক রাখে, এদিকে ইশারা করাই সর্বাধিক উপযুক্ত।

(لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ) বাক্যাংশটিতে ব্যক্তি বলতে মুসলিম এবং যিম্মী ব্যক্তি উদ্দেশ্য। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ

২৯৪৭-[১০] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইসলামে ’জালাব’ এবং ’জানাব’ ও ’শিগার’ নেই। আর যে ব্যক্তি কোনো প্রকার লুণ্ঠন করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (তিরমিযী)[1]

وَعَن عمرَان ابْن حُصَيْنٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «لَا جَلَبَ وَلَا جَنَبَ وَلَا شِغَارَ فِي الْإِسْلَامِ وَمَنِ انْتَهَبَ نُهْبَةً فَلَيْسَ مِنَّا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن عمران ابن حصين عن النبي صلى الله عليه وسلم انه قال: «لا جلب ولا جنب ولا شغار في الاسلام ومن انتهب نهبة فليس منا» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: (لَا جَلَبَ وَلَا جَنَبَ وَلَا شِغَارَ فِى الْإِسْلَامِ) কাযী বলেনঃ দৌড় প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে ‘জালাব’ বলতে বুঝায়, ব্যক্তি তার ঘোড়ার পেছনে লোক নিয়োগ করা যে ব্যক্তি তার প্রথম ব্যক্তির পেছনে আরো একটি ঘোড়া নিয়ে আসবে এবং প্রথম ব্যক্তির ঘোড়াকে শিস দিবে। আর ‘জানাব’ বলতে তার ঘোড়ার পাশে অন্য একটি খালি ঘোড়া রাখা যখন আরোহণের ঘোড়াটি দুর্বল হয়ে যাবে তখন ব্যক্তি খালি ঘোড়াতে চড়বে। আর সাদাকার ক্ষেত্রে ‘জালাব’, ‘জানাব’-এর ব্যাখ্যা যাকাত পর্বে অতিবাহিত হয়েছে। আর ‘শিগার’ হলো কোনো ব্যক্তির অপর ব্যক্তির সাথে নিজ বোনকে বিবাহ দেয়া এ শর্তে যে, অপর ব্যক্তি তার বোনকে প্রথম ব্যক্তির সাথে বিবাহ দিবে এবং উভয়ের মাঝে কোনো মোহর সাব্যস্ত না করা। শহর যখন মানুষমুক্ত হয় তখন বলা হয়। (شَغَرَ الْبَلَدُ) শব্দ থেকেই (شِغَار) শব্দের উৎপত্তি, কেননা তা মোহরমুক্ত বন্ধন। হাদীসটি এ ধরনের বন্ধন বিশুদ্ধ না হওয়ার প্রমাণ বহন করছে, কেননা এ ধরনের বন্ধন যদি বিশুদ্ধ হত, তাহলে অবশ্যই ইসলামের মাঝে তা থাকত আর এটাই অধিকাংশ বিদ্বানদের উক্তি। আবূ হানীফাহ্ এবং সাওরী বলেন, বন্ধন বিশুদ্ধ হবে এবং প্রত্যেকের জন্য মোহরে মিসাল আবশ্যক হবে। মোহরে মিসাল বলা হয় কোনো নারীর বংশের মেয়েদের যে মোহর নির্ধারণ করা হয় তার সমপরিমাণ মোহর ধার্য করা।

(فَلَيْسَ مِنَّا) অর্থাৎ- আমাদের দলভুক্ত নয় এবং আমাদের পথের উপর নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

তুহফাতুল আহওয়াযীর ভাষ্যকার (شِغَار) সম্পর্কে বলেনঃ ‘নিহায়াহ্’ গ্রন্থে আছে, ‘‘শিগার’’ জাহিলী যুগের একটি সুপরিচিত বিবাহ পদ্ধতি, এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বলত, তুমি আমার সাথে শিগার কর, অর্থাৎ- তুমি তোমার বোনকে অথবা কন্যাকে অথবা তুমি যার বিষয়ের কর্তৃত্ব কর তাকে আমার কাছে বিবাহ দাও। পরিশেষে আমি আমার বোনকে অথবা আমার কন্যাকে অথবা আমার কাছে যার কর্তৃত্ব আছে তাকে তোমার কাছে বিবাহ দিব। বিবাহে দু’য়ের মাঝে মোহর ধার্য করা হত না, এদের প্রত্যেকের লজ্জাস্থান অন্যের লজ্জাস্থানের বিনিময়ে হত। আর একে শিগার বলা হয়েছে উভয় বিবাহের মাঝে মোহর উঠিয়ে নেয়ার কারণে। কুকুর যখন প্রস্রাবের উদ্দেশে তার দু’পায়ের এক পা উঁচু করে তখন ‘আরবরা বলে থাকে شَغَرَ الْكَلْبُ আর এখান থেকে এ শব্দের উৎপত্তি।

একমতে বলা হয়েছে, الشَّغْر অর্থ দূরত্ব। অন্য মতে বলা হয়েছে, الِاتِّسَاع বা অবকাশ। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৩য় খন্ড, হাঃ ১১২৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ

২৯৪৮-[১১] সায়িব ইবনু ইয়াযীদ তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের লাঠি হাসি-কৌতুকচ্ছলে রেখে দেয়ার উদ্দেশে কেড়ে না নেয়। যদি কেউ তার ভাইয়ের লাঠি কেড়ে নেয়, তবে সে যেন তা তাকে ফেরত দেয়। (তিরমিযী; আর আবূ দাঊদে ’রেখে দেয়ার জন্য’ পর্যন্ত)[1]

يزِيد عَنْ أَبِيهِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَأْخُذُ أَحَدُكُمْ عَصَا أَخِيهِ لَاعِبًا جَادًّا فَمَنْ أَخَذَ عَصَا أَخِيهِ فَلْيَرُدَّهَا إِلَيْهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَرِوَايَتُهُ إِلَى قَوْله: «جادا»

يزيد عن ابيه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «لا ياخذ احدكم عصا اخيه لاعبا جادا فمن اخذ عصا اخيه فليردها اليه» . رواه الترمذي وابو داود وروايته الى قوله: «جادا»

ব্যাখ্যা: খত্ত্বাবী বলেনঃ (لَاعِبًا جَادًّا) এর অর্থ হলো ঠাট্টাচ্ছলে গ্রহণ করার পর তা পুনরায় ফিরিয়ে না দেয়া। এতে তা স্বেচ্ছায় গ্রহণের পর্যায়ে চলে যায়। ইচ্ছাকৃতভাবে (لَاعِبًا جَادًّا) গ্রহণ করার কারণ হলো সেটা চুরি। খেলাচ্ছলে গ্রহণ করতে নিষেধ করার কারণ হলো, তাতে কোনো উপকার নেই, বরং আমুদে সঙ্গীর উপর ক্রোধ ও কষ্ট দেয়ার কারণ হবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৯৫)

শারহুস্ সুন্নাহ্তে আবূ ‘উবায়দ থেকে আছে- এর অর্থ হলো ব্যক্তির পণ্য সামগ্রীকে গ্রহণ করবে চুরির উদ্দেশে নয় বরং তাকে রাগান্বিত করতে। সুতরাং চুরি করার ক্ষেত্রে খেলাচ্ছলে তা করে আর প্রকৃতপক্ষে তাকে কষ্ট দেয়া ও রাগান্বিত করার কাজটা ইচ্ছা করেই করে। প্রথমটিকে (فَمَنْ أَخَذَ عَصَا أَخِيهِ فَلْيَرُدَّهَا إِلَيْهِ) অর্থাৎ- ‘‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের লাঠি নিয়েছে সে যেন তা তার কাছে ফেরত দেয়’’ এ উক্তিটুকু সমর্থন করছে।

তূরিবিশতী (রহঃ) বলেনঃ কেবল লাঠি দ্বারা উপমা উপস্থাপন করা হয়েছে। কেননা তা তুচ্ছ জিনিসের অন্তর্ভুক্ত যার কারণে মালিকের বড় ধরনের ক্ষতি সাধন হয় না। তথাপিও তা দ্বারা উপমা উপস্থাপন করার কারণ ঐ কথা বুঝিয়ে দেয়া যে, কারো কাছ থেকে ছোট বস্তু নেয়ার পর তা ফিরিয়ে দেয়া আবশ্যক হলে তার অপেক্ষা বড় বস্তু ফিরিয়ে দেয়ার আরও বেশি প্রাধান্য পাবে এবং তা আরও উল্লেখযোগ্য। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ

২৯৪৯-[১২] সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার মালামাল হুবহু কারো কাছে পায়, সে তার অধিক হকদার। ক্রেতা তাকে ধরবে (অনুসরণ করবে), যে তার কাছে বিক্রি করেছে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]

وَعَن سَمُرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ وَجَدَ عَيْنَ مَالِهِ عِنْدَ رَجُلٍ فَهُوَ أَحَقُّ بِهِ وَيَتَّبِعُ الْبَيِّعُ مَنْ بَاعَهُ» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ

وعن سمرة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «من وجد عين ماله عند رجل فهو احق به ويتبع البيع من باعه» . رواه احمد وابو داود والنساىي

ব্যাখ্যা: (مَنْ وَجَدَ عَيْنَ مَالِه) তূরিবিশতী বলেনঃ এ থেকে উদ্দেশ্য হলো- সম্পদ হতে তা লুণ্ঠন করা হয়েছে অথবা চুরি হয়েছে অথবা নষ্ট হয়ে গেছে।

(مَنْ بَاعَه) অর্থাৎ- তার থেকে মূল্য গ্রহণ করা হবে। খত্ত্বাবী বলেনঃ এটা ছিনতাই করা এবং অনুরূপ ক্ষেত্রে যখন তার লুণ্ঠিত হওয়া সম্পদ অথবা চুরি হওয়া সম্পদ কোনো লোকের কাছে পাওয়া যাবে তখন সে তার অধিকারী হবে। যার কাছে মাল পাওয়া গেল সে যদি ঐ মাল কারো কাছ থেকে ক্রয় করে থাকে তবে বিক্রেতার নিকট থেকে ক্রেতা ঐ মালের মূল্য নিয়ে নিবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৫২৮)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ

২৯৫০-[১৩] উক্ত রাবী [সামুরাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যা বুঝে নিয়েছে সে তার জন্য দায়ী হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তা সে প্রাপককে বুঝিয়ে দিবে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «عَلَى الْيَدِ مَا أَخَذَتْ حَتَّى تُؤَدِّيَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه

وعنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «على اليد ما اخذت حتى تودي» . رواه الترمذي وابو داود وابن ماجه

ব্যাখ্যা: (عَلَى الْيَدِ مَا أَخَذَتْ) অর্থাৎ- হাতের উপর আবশ্যক সে যা গ্রহণ করেছে তা ফেরত দেয়া। ত্বীবী বলেন, অর্থাৎ- হাত যা গ্রহণ করেছে তা হাতওয়ালার উপর যিম্মাদারী স্বরূপ। অধিকতার দিকে লক্ষ্য করে বিষয়টিকে হাতের দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে, কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রে হাত দ্বারাই সম্পদ লেন-দেন হয়ে থাকে।

(حَتّٰى تُؤَدِّىَ) অর্থাৎ- হাত যতক্ষণ পর্যন্ত সে সম্পদ তার মালিকের কাছে ফেরত না দিবে, সুতরাং ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তির সম্পদ ব্যক্তিকে ফেরত দেয়া আবশ্যক, যদিও ব্যক্তি তার সম্পদ তার কাছ থেকে অনুসন্ধান না করে। আর আরিয়ার ক্ষেত্রে কোনো ফলদার বৃক্ষ নির্দিষ্ট সময় ফেরত দেয়া যখন তার নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়ে যায় যদিও তার মালিক তার কাছ থেকে তা অনুসন্ধান না করে। আর আমানত রাখা সম্পদের ক্ষেত্রে একমাত্র ঐ সময় তা ফেরত দেয়া আবশ্যক হবে যখন মালিক তা অনুসন্ধান করবে। এ মত ইবনুল মালিক বর্ণনা করেন। কারী বলেনঃ এটা একটি সুন্দর বিশ্লেষণ, অর্থাৎ- যে ব্যক্তি কারো সম্পদ ছিনতাই, আরিয়া আমানত হিসেবে গ্রহণ করবে, ঐ ব্যক্তির তা ফেরত দেয়া আবশ্যক হয়ে যাবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

নায়নুল আওত্বারের লেখক বলেনঃ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ), আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ), ‘আত্বা, শাফি‘ঈ, আহমাদ ও ইসহক বলেন, আর ফাত্হ-এর ভাষ্যকার একে জুমহূরের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন, ধারে নেয়া বস্তু যখন ধারগ্রহণকারীর হাতে ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন সে তার জন্য দায়ী থাকবে। তারা সামুরার উল্লেখিত হাদীস দ্বারা ও আল্লাহ তা‘আলার অর্থাৎ- إِنَّ اللّٰهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلٰى أَهْلِهَا ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ আমানতকে তার হকদারের কাছে আদায় করে দিতে তোমাদেরকে নির্দেশ দেন’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৫৮) এ বাণীর মাধ্যমে দলীল উপস্থাপন করেন। আর এটা অজানা নয় যে, আমানত রাখা বস্তু যখন আমানতদারের হাতে ধ্বংস হয়ে যাবে তখন সে তার জন্য দায়ী হবে না। (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবী এবং অন্যান্যদের থেকে কতিপয় বিদ্বান বলেন, আরিয়া গ্রহণকারীর ওপর যিম্মাদারিত্ব আবশ্যক নয়, তবে মালিকের অনুমোদনহীন কাজে ব্যবহার করে থাকলে আলাদা কথা। এটা সাওরী ও কুফাবাসীর উক্তি, ইসহকও এ মত পোষণ করেন।) তারা ‘আমর বিন শু‘আয়ব-এর হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছে, তিনি তার পিতা হতে, তাঁর পিতা তার দাদা হতে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (لا ضَمَانَ عَلٰى مُؤْتَمَنٍ) অর্থাৎ- আমানতদারের ওপর কোনো যিম্মাদারিত্ব নেই।

শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বর্ণিত উক্তিতে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ আছে যে, যে ব্যক্তি কোনো বস্তুর ব্যাপারে আমানত গ্রহণ করবে তার ওপর কোনো যিম্মাদারী নেই; যেমন সংরক্ষণকারী, আরিয়া গ্রহণকারী, তবে সংরক্ষণকারীর কোনো যিম্মাদারী লাগবে না। এটা সকলের ঐকমত্যে বলা হয়েছে- তবে বস্তু সংরক্ষণের ব্যাপারে অবহেলা করার অপরাধ ঘটে থাকলে আলাদা কথা। অপরাধের কারণে তার যিম্মাদারিত্বের দিক হলো- অপরাধের কারণে ব্যক্তি খিয়ানাতকারীতে পরিণত হয়। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (وَلَا عَلَى الْمُسْتَوْدَعِ غَيْرِ الْمُغِلِّ ضَمَانٌ) অর্থাৎ- ‘‘সংরক্ষণকারী আত্মসাৎকারী না হলে তার ওপর যিম্মাদারিত্ব নেই’’- এ উক্তির কারণে খিয়ানাতকারী যিম্মাদার, আর আত্মসাৎকারী খিয়ানাতকারী। এভাবে বস্তু সংরক্ষণকারী হতে যখন বস্তু সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি সৃষ্টি হবে তখন সে দায়ী থাকবে। কেননা এটা খিয়ানাতের একটি ধরণ। পক্ষান্তরে ধার নেয়ার ক্ষেত্রে হানাফী এবং মালিকীগণ ঐ দিকে গিয়েছেন যে, তা ধারগ্রহণকারীর ওপর দায়িত্ব বর্তাবে না, আর এটা ঐ সময় যখন ধারগ্রহণকারী হতে ত্রুটি-বিচ্যুতি প্রকাশ না পাবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ১২৬৬)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ

২৯৫১-[১৪] হারাম ইবনু সা’দ ইবনু মুহায়্যিসাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ)-এর একটি উট কারো বাগানে ঢুকে ক্ষয়-ক্ষতি করে দিল। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফায়সালা করলেন, দিনে বাগান হিফাযাত করার দায়িত্ব বাগানের মালিকের, আর রাতে পশু যা ক্ষয়-ক্ষতি করবে তার জন্য দায়ী পশুর মালিক। (মালিক, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَن حَرَامِ بْنِ سَعْدِ بْنِ مُحَيِّصَةَ: أَنَّ نَاقَةً لِلْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ دَخَلَتْ حَائِطًا فَأَفْسَدَتْ فَقَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَن أَهْلِ الْحَوَائِطِ حِفْظَهَا بِالنَّهَارِ وَأَنَّ مَا أَفْسَدَتِ الْمَوَاشِي بِاللَّيْلِ ضَامِنٌ عَلَى أَهْلِهَا. رَوَاهُ مَالِكٌ وَأَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه

وعن حرام بن سعد بن محيصة: ان ناقة للبراء بن عازب دخلت حاىطا فافسدت فقضى رسول الله صلى الله عليه وسلم ان اهل الحواىط حفظها بالنهار وان ما افسدت المواشي بالليل ضامن على اهلها. رواه مالك وابو داود وابن ماجه

ব্যাখ্যা: ‘নিহায়াহ্’ গ্রন্থে আছে (حَائِطًا) বলতে বাগান, যখন বাগানের উপর দেয়াল থাকে তখন তাকে (حَائِطًا) বলে। ‘শারহুস্ সুন্নাহ্’তে আছে- বিদ্বানগণ ঐ দিকে গিয়েছেন যে, চতুসম্পদ জন্তু অন্যের সম্পদ হতে দিনের বেলাতে যা ধ্বংস করবে তাতে চতুস্পদ জন্তুর মালিক দায়ী থাকবে না আর রাতে যা নষ্ট করবে তাতে পশুর মালিক দায়ী থাকবে। কেননা সাধারণ প্রথানুযায়ী বাগানের মালিকেরা তাদের বাগান দিনের বেলাতে সংরক্ষণ করে আর চতুস্পদ জন্তুর মালিকেরা রাতে তাদের পশু বেঁধে রাখে। সুতরাং যে অভ্যাসের বিপরীত করবে সে সংরক্ষণের নিয়ম হতে বেরিয়ে যাবে, এটা ঐ সময় যখন প্রাণীর সাথে প্রাণীর মালিক থাকবে না, আর প্রাণীর সাথে যখন তার মালিক থাকবে তখন প্রাণী যা ক্ষতি সাধন করবে তার দায় প্রাণীর মালিকের ওপর বর্তাবে, চাই মালিক তার ওপর আরোহণ করে থাকুক অথবা তাকে পরিচালনা করুক অথবা বেঁধে রাখুক অথবা প্রাণীটি দাঁড়িয়ে থাকুক এবং চাই প্রাণীটি তার হাত দ্বারা অথবা পা দ্বারা অথবা মুখ দ্বারা ক্ষতি সাধন করুক। এ মতের দিকে গিয়েছেন ইমাম মালিক ও শাফি‘ঈ। আর আবূ হানীফার সাথীবর্গ ঐ দিকে গিয়েছেন যে, মালিক প্রাণীর সাথে না থাকলে মালিকের ওপর যিম্মাদারী নেই, রাতে হোক অথবা দিনে হোক। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৫৬৬; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ

২৯৫২-[১৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পা দণ্ডহীন এবং আগুন দণ্ডহীন। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الرجل جَبَّار وَالنَّار جَبَّار» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن ابي هريرة ان النبي صلى الله عليه وسلم قال: «الرجل جبار والنار جبار» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: (الرِّجْلُ جُبَارٌ) অর্থাৎ- চতুস্পদ জন্তু পথে তার পা দ্বারা যা মাড়িয়ে থাকে, যাকে আঘাত করে তার কারণে কোনো দণ্ড নেই। ইবনুল মালিক বলেনঃ অর্থাৎ- প্রাণীর আরোহীকে যখন প্রাণী ফেলে দিবে অথবা প্রাণী তার পা দ্বারা যখন কোনো মানুষকে আঘাত করবে তখন তা দণ্ডহীন, আর যদি তাকে হাত দিয়ে (সামনের পা) আঘাত করে তাহলে তা দণ্ডনীয়। আর তা এ কারণে যে, আরোহী তার সামনের দিক নিয়ন্ত্রণ করতে ক্ষমতা রাখে, পেছনের দিক না। শাফি‘ঈ বলেনঃ হাত এবং পা উভয়টি যিম্মাদারীর ক্ষেত্রে সমান। (النَّار جُبَارٌ) প্রয়োজনে ত্রুটি ছাড়াই আগুন জ্বালানোর কারণে বিনা শত্রুতায় অগ্নিস্ফুলিঙ্গ যা জ্বালিয়ে দিয়েছে তার কারণে দণ্ড নেই। শারহুস্ সুন্নাহ্’তে আছে- কোনো ব্যক্তি যখন তার অধিকারের মাঝে আগুন জ্বালায়, অতঃপর বাতাস তাকে অন্যের সম্পদের দিকে এমনভাবে নিয়ে যায় যে, তাকে প্রতিহত করার ক্ষমতা রাখে না, তা দণ্ডহীন। আর এটা ঐ সময় যখন বাতাস শান্ত থাকার সময় আগুন জ্বালানো হয়, অতঃপর বাতাস প্রবাহিত হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ

২৯৫৩-[১৬] হাসান বসরী (রহঃ) সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তি যখন কোনো পশুপালের কাছে (ক্ষুধার্ত অবস্থায়) পৌঁছে; তখন সেখানে যদি তাদের মালিক থাকে, তবে সে যেন তার নিকট হতে অনুমতি নেয়। আর যদি সেখানে মালিক না থাকে, সেক্ষেত্রে সে যেন তিনবার শব্দ করে। যদি কেউ তাতে সাড়া দেয়, তবে তার নিকট হতে যেন অনুমতি নেয়। আর যদি কেউ সাড়া না দেয়, সেক্ষেত্রে সে দুধ দোহন করে পান করবে, আর সাথে করে যেন নিয়ে না যায়। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن الْحسن عَن سَمُرَة أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا أَتَى أَحَدُكُمْ عَلَى مَاشِيَةٍ فَإِنْ كَانَ فِيهَا صَاحِبُهَا فَلْيَسْتَأْذِنْهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهَا فَلْيُصَوِّتْ ثَلَاثًا فَإِنْ أَجَابَهُ أَحَدٌ فَلْيَسْتَأْذِنْهُ وَإِنْ لَمْ يُجِبْهُ أَحَدٌ فَلْيَحْتَلِبْ وَلْيَشْرَبْ وَلَا يَحْمِلْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن الحسن عن سمرة ان النبي صلى الله عليه وسلم قال: «اذا اتى احدكم على ماشية فان كان فيها صاحبها فليستاذنه وان لم يكن فيها فليصوت ثلاثا فان اجابه احد فليستاذنه وان لم يجبه احد فليحتلب وليشرب ولا يحمل» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: খত্ত্বাবী বলেনঃ এ অনুমতি ঐ দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যে খাদ্য পায় না। এমতাবস্থায় সে নিজের ব্যাপারে ধ্বংসের আশংকা করে, সুতরাং যখন এরূপ হবে তখন তার জন্য এরূপ কাজ করা বৈধা হবে। কতক হাদীসবিশারদ ঐ দিকে গিয়েছেন, এটা এমন বিষয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এর মালিক করে দিয়েছেন। সুতরাং তা তার জন্য বৈধ। এতে তার জন্য মূল্য আবশ্যক হবে না। অধিকাংশ ফিকহবিদগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, তার জন্য মূল্য আবশ্যক। যখন মূল্য পরিশোধ করতে সক্ষম হবে তখন তা মালিককে প্রদান করবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (لَا يَحِلّ مَالُ امْرِئٍ مُسْلِم إِلَّا بِطِيبَةٍ مِنْ نَفْسه) কোনো মুসলিম ব্যক্তির সম্পদ তার সন্তুষ্টি ছাড়া বৈধ হবে না।

হাফিয শামসুদ্দীন ইবনুল কইয়িম (রহঃ) বলেনঃ বায়হাক্বী ইয়াযীদ বিন হারূন-এর হাদীস হতে বর্ণনা করেন, তিনি সা‘ঈদ আল জারীরী থেকে, তিনি আবূ নাযরাহ্ হতে, তিনি আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী হতে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

فَلْيَحْلُبْ وَلْيَشْرَبْ وَلَا يَحْمِلَنَّ وَإِذَا أَتٰى أَحَدكُمْ عَلٰى حَائِط فَلْيُنَادِ ثَلَاثًا يَا صَاحِب الْحَائِط فَإِنْ أَجَابَه وَإِلَّا فَلْيَأْكُلْ وَلَا يَحْمِلَنَّ وَهٰذَا الْإِسْنَاد عَلٰى شَرْط مُسْلِم

অর্থাৎ- তোমাদের কেউ যখন রাখালের কাছে আসবে তখন সে যেন আহবান করে, হে উটের রাখাল! তিনবার, অতঃপর রাখাল যদি তার ডাকে সাড়া দেয়, তাহলে তাকে যা বলার বলবে আর যদি সাড়া না দেয় তাহলে সে যেন উটের দুধ দোহন করে এবং পান করে, সঙ্গে যেন বহন না করে। আর তোমাদের কেউ যখন কোনো বাগানের কাছে আসবে তখন সে যেন আহবান করে, তিনবার- হে বাগানের মালিক! অতঃপর বাগানের মালিক যদি তার ডাকে সাড়া দেয় তাহলে তাকে যা বলার তা তাকে বলবে আর সাড়া না দিলে খাবে। এমতাবস্থায় সঙ্গে নিয়ে যাবে না। এ সূত্রটি মুসলিম-এর শর্তে। এর সানাদে সা‘ঈদ আল জারীরী একক হওয়ার কারণে কেবল বায়হাক্বী একে ত্রুটিযুক্ত সাব্যস্ত করেছেন, আর তার শেষ বয়সে ব্রেইনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, আর তার থেকে ইয়াযীদ বিন হারূন-এর শ্রবণ শেষ বয়সে। আর সামুরার হাদীসকে ত্রুটিযুক্ত সাব্যস্ত করেছেন সামুরাহ্ হতে হাসান-এর হাদীস শ্রবণে মতানৈক্যের কারণে। রাবীদ্বয়ের বিশুদ্ধতার পর এ দু’টি ত্রুটি হাদীসদ্বয়কে হাসান-এর স্তর হতে বের করে দিতে পারবে না। জুমহূরের নিকট হুকুম-আহকামের ক্ষেত্রে যে হাসানের মাধ্যমে দলীল গ্রহণ করা হয়। ইমাম আহমাদ-এর দু’ মতের মধ্যে এক মতানুযায়ী এ হাদীসদ্বয়ের উপর ‘আমল করার কথা বলেছেন।

ইমাম শাফি‘ঈ বলেনঃ নিঃসন্দেহে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি বাগানের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে সে যেন খায় এবং সাথে যেন নিয়ে না যায়। এ ক্ষেত্রে একটি হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে, যদি আমাদের কাছে তা প্রমাণিত হয়, তাহলে তার বিরোধিতা করব না। কুরআন এবং হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, অনুমতি ছাড়া কারো সম্পদ ভক্ষণ করা বৈধ না। আর যে হাদীসটির দিকে ইমাম শাফি‘ঈ ইঙ্গিত করেছেন তা হলো, ইমাম তিরমিযী ইয়াহ্ইয়া বিন সুলায়ম হতে বর্ণনা করেন, তিনি ‘উবায়দুল্লাহ বিন ‘উমার হতে, তিনি নাফি‘ হতে, তিনি ‘আবদুল্লাহ বিন ‘উমার হতে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (مَنْ دَخَلَ حَائِطًا لِيَأْكُلغَيْر مُتَّخِذ خُبْنَة) অর্থাৎ- ‘‘যে ব্যক্তি বাগানে প্রবেশ করবে সে যেন খায় এবং সাথে যেন নিয়ে না যায়।’’ এ হাদীসটি গরীব, এ হাদীসটি আমি ইয়াহ্ইয়া বিন সুলায়ম-এর সানাদ ছাড়া অন্য কারো সানাদে জানি না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২২৫৪)

ইয়াহ্ইয়া বিন সুলায়ম বলেন, কুতায়বাহ্ আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন, তিনি বলেন, লায়স আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন, তিনি ইবনু আযলান হতে, তিনি ‘আমর বিন শু‘আয়ব হতে, তিনি তার পিতা হতে, তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঝুলন্ত ফল সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো, জওয়াবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, অর্থাৎ- যে ব্যক্তি নিরুপায় হয়ে তা থেকে কিছু খায় এবং সাথে না নিয়ে যায়, তার ওপর কোনো অভিযোগ নেই। (তিরমিযী হাঃ ১২৮৯ : হাসান) অতঃপর তিনি বলেছেন, এটি একটি হাসান হাদীস, এ হাদীসগুলো গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বিদ্বানগণ মতানৈক্য করেছেন।

একদল ঐ দিকে গিয়েছেন যে, এগুলোর হুকুম কার্যকর, প্রয়োজন এবং প্রয়োজন ছাড়া ফল খাওয়া এবং দুধ পান করা বৈধ হবে এবং এতে তার ওপর যিম্মাদারিত্ব থাকবে না, এটা ইমাম আহমাদ-এর প্রসিদ্ধ মত। একদল বলেন, এ হতে কোনো কিছুই তার জন্য বৈধ নয়, তবে প্রয়োজনে খেতে ও পান করতে পারবে কিন্তু তার মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এটা মালিক, শাফি‘ঈ ও আবূ হানীফাহ্ হতে বর্ণিত, এ মতের স্বপক্ষে তারা অনেক দলীল উপস্থাপন করেছেন সেগুলোর একটি হলো- মহান আল্লাহর বাণীঃ يٰاَيُّهَا الَّذِينَ اٰمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ অর্থাৎ- ‘‘হে মু’মিনগণ! যারা ঈমান এনেছো তোমরা অন্যায়ভাবে তোমাদের পরস্পরের মাঝে তোমাদের সম্পদসমূহ খেয়ে ফেলো না, তবে তোমাদের সন্তুষ্টচিত্তে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ২৯)। আর উপরে বর্ণিত পদ্ধতিতে পারস্পরিক সন্তুষ্টি অনুপস্থিত।

দ্বিতীয় : বাগান এবং চতুস্পদ জন্তু যদি কোনো ইয়াতীমের হয়ে থাকে, আর কোনো ব্যক্তি যদি তাত্থেকে খায়, তাহলে সে অন্যায়ভাবে ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ করল। সুতরাং সে শাস্তিযোগ্য বলে গণ্য হবে।

তৃতীয় : ইমাম বুখারী ও মুসলিম তাদের বিশুদ্ধ কিতাবদ্বয়ে আবূ বাকরাহ্ হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে/হজ্জে তাঁর ভাষণে বলেছেনঃ (إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ حَرَامٌ عَلَيْكُمْ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هٰذَا فِي شَهْرِكُمْ هٰذَا) অর্থাৎ- নিশ্চয় তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ, তোমাদের সম্মান তোমাদের ওপর হারাম তোমাদের এ মাসে, তোমাদের এ শহরে, তোমাদের এ দিনের হারামের মতো এবং সহীহ মুসলিমে জাবির হতে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (শারহে মুসলিম- ইমাম নববী, হাঃ ১৪৫-[১২১৭])

চতুর্থ : যা সহীহাতে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُه وَمَا لُه وَعِرْضُه) অর্থাৎ- প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও তার সম্মান অপর মুসলিমের ওপর হারাম। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬০৪২)

পঞ্চম : বায়হাক্বী বিশুদ্ধ সানাদে ইবনু ‘আব্বাস থেকে যে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে/হজ্জে ভাষণ দিলেন- আর তাতে আছে : ولا يحل لامرىء مِنْ مَالِ أَخِيهِ إِلَّا مَا أَعْطَاهُ عَنْ طِيب نَفْسٍ অর্থাৎ- কোনো ব্যক্তির জন্য তার ভাইয়ের সম্পদ হতে কিছুই বৈধ হবে না, তিনি তাকে সন্তুষ্টিচিত্তে যা দান করবেন তা ছাড়া।

ষষ্ঠ : মুসলিম যা তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, ‘আবদুল্লাহ বিন ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, যা তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে বললেন, (لَا يَحْلُبَنَّ أَحَدٌ مَاشِيَةَ امْرِئٍ بِغَيْرِ إِذْنِه أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يُؤْتى مَشْرَبَتَهَ فَتَكْسَرَ خَزَانَتُه) অর্থাৎ- তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া তার ভাইয়ের চতুস্পদ জন্তুর দুধ দোহন না করে, তোমাদের কেউ কি তার পানপাত্রে এসে, অতঃপর তার সংরক্ষনাগারের দরজা ভেঙ্গে ফেলাকে পছন্দ করে?... আল হাদীস।

সপ্তম : নিশ্চয় এটা মুসলিম ব্যক্তির সম্পদ, সুতরাং তা তার সমস্ত সম্পদের মতো হারাম।

পূর্ববর্তীরা বলেন, তোমরা যা উল্লেখ করেছ তাতে এমন কিছু নেই যা বৈধতার হাদীসগুলোর বিরোধিতা করবে, তবে একমাত্র ইবনু ‘উমার-এর হাদীস যা বাহ্যিক দৃষ্টিতে সামুরার হাদীসের বিরোধী। তবে এদের মাঝে সমন্বয় সাধনের সুযোগ আছে। আর মহান আল্লাহর لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ২৯) এ বাণী বিরোধের স্থানকে শামিল করছে না, কেননা এটা শারী‘আত প্রণেতার বৈধতার মাধ্যমে খাওয়া। সুতরাং কিভাবে অবৈধ হবে? আর এটা কোনো বিষয়ে ‘আমকে খাসকরণের বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত না, বরং এ ধরণটি আয়াতের মাঝে প্রবেশ করেনি। যেমনিভাবে আয়াতের মাঝে সন্তানের সম্পদ পিতার খাওয়া নিষেধ করেনি। অধিকন্তু আল্লাহর এ বাণী কেবল অন্যায়ভাবে সম্পদ ভক্ষণের উপর প্রমাণ বহন করছে, যে সম্পদ ভক্ষণের ব্যাপারে শারী‘আত প্রণেতা ও সম্পদের মালিক অনুমতি দেয়নি। সুতরাং যখন শারী‘আত অনুমতি অথবা মালিকের তরফ হতে অনুমতি পাওয়া যাবে তখন বাতিল হবে না। আর জ্ঞাতব্য যে, শারী‘আতের অনুমতি সম্পদের মালিকের অনুমতি অপেক্ষা শক্তিশালী। সুতরাং যে সম্পদে মালিক অনুমতি দিবে সে সম্পদ অপেক্ষা ঐ সম্পদ অধিক হালাল হবে যে সম্পদে শারী‘আত অনুমতি দিবে। আর এ কারণেই গনীমাতের সম্পদ সর্বাধিক হালাল ও উত্তম, উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত এবং পিতার দিকে সম্বন্ধ করে সন্তানের সম্পদ সর্বাধিক উত্তম সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬১৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ হাসান বাসরী (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ

২৯৫৪-[১৭] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো বাগানে ঢুকে সে যেন তা হতে খায়, তবে যেন কাপড় ভর্তি করে কিছু না নিয়ে যায়। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ; কিন্তু ইমাম তিরমিযী [রহঃ] বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ دَخَلَ حَائِطًا فَلْيَأْكُلْ وَلَا يَتَّخِذْ خُبْنَةً» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ هَذَا حَدِيث غَرِيب

وعن ابن عمر عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «من دخل حاىطا فلياكل ولا يتخذ خبنة» . رواه الترمذي وابن ماجه وقال الترمذي هذا حديث غريب

ব্যাখ্যা : আবূ ‘ঈসা (তিরমিযী) বলেনঃ ইবনু ‘উমার-এর হাদীস গরীব হাদীস। এ সানাদ ছাড়া অন্য কোনো সানাদে হাদীসটি আমি জানতে পারিনি। কতিপয় বিদ্বান মালিকের অনুমতি ছাড়াই মুসাফির ব্যক্তিকে ফল খাওয়ার ব্যাপারে অবকাশ দিয়েছেন, আর কতিপয় মূল্য ছাড়া তা খাওয়াকে অপছন্দ করেছেন।

ইমাম নববী শারহুল মুহাযযাবে বলেনঃ যে ব্যক্তি বাগান, শস্য ক্ষেত অথবা চতুস্পদ জন্তুর পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে এমন ব্যক্তির মাসআলার ক্ষেত্রে বিদ্বানগণ মতানৈক্য করেছেন। জুমহূর বলেন, ব্যক্তির তা হতে গ্রহণ করা বৈধ হবে না, তবে একান্ত প্রয়োজনাবস্থায় ব্যক্তি তা হতে গ্রহণ করবে এবং জরিমানা দিবে, এটা শাফি‘ঈ এবং জুমহূরের মত।

কতিপয় সালাফ বলেন, তার জন্য কিছুই আবশ্যক হবে না। আহমাদ বলেন, যখন বাগানের উপর কোনো দেয়াল থাকবে না, তখন বাগানোর টাটকা ফল খাওয়া তার জন্য বৈধ হবে। ইমাম আহমাদ-এর দু’টি বর্ণনার মাঝে সর্বাধিক বিশুদ্ধ মতে বিনা প্রয়োজনেও তা বৈধ। অন্যমতে যখন সে তার মুখাপেক্ষী হবে তখন বাগানের দেয়াল থাক আর না থাক কোনো অবস্থাতে তার ওপর জরিমানা বর্তাবে না। শাফি‘ঈ মতটিকে তার সাথে সম্পর্কিত করেছেন হাদীসের বিশুদ্ধতার উপরে। বায়হাক্বী বলেন, ইবনু ‘উমার-এর হাদীস মারফূ‘।

(حَائِطًا فَلْيَأْكُلْ وَلَا يَتَّخِذْ خُبْنَةً) অর্থাৎ- যখন তোমাদের কেউ কোনো বাগানের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে, তখন সে যেন ঐ বাগান হতে খায় এবং কাপড়ে যেন না নেয়। তিরমিযী একে সংকলন করেছেন এবং একে গরীব বলেছেন। এমনিভাবে ফাতহুল বারীতে আছে, তুহফাতুল আহওয়াযীর ভাষ্যকার বলেনঃ আমি বলব, বায়হাক্বী এ হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন। অতঃপর বলেছেন, হাদীসটি বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হয়নি এবং বিভিন্ন সানাদে এটি দুর্বল সাব্যস্ত হয়েছে। হাফিয বলেন, সঠিক কথা হলো- এ সানাদগুলো মিলে সহীহ-এর স্থল হতে নীচে আসবে না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১২৮৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ

২৯৫৫-[১৮] উমাইয়্যাহ্ ইবনু সফ্ওয়ান (রহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হুনায়ন যুদ্ধের দিনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর লৌহবর্মসমূহ ধারে নিলেন। তখন সফ্ওয়ান বললেন, হে মুহাম্মাদ! জোর-জবরদস্তি করে নিলে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না; বরং ধারে নিলাম, ফেরত দেয়া হবে। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن أُميَّة بن صَفْوَان عَنْ أَبِيهِ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَعَارَ مِنْهُ أَدْرَاعَهُ يَوْمَ حُنَيْنٍ فَقَالَ: أَغَصْبًا يَا مُحَمَّدَ؟ قَالَ: «بَلْ عَارِيَةً مَضْمُونَةً» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن امية بن صفوان عن ابيه: ان النبي صلى الله عليه وسلم استعار منه ادراعه يوم حنين فقال: اغصبا يا محمد؟ قال: «بل عارية مضمونة» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: (أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ اسْتَعَارَ مِنْهُ أَدْرَاعَه يَوْمَ حُنَيْنٍ) ইবনুল মালিক বলেনঃ বর্মের মালিক কাফির ছিল। অর্থাৎ- সফ্ওয়ান পরবর্তীতে হুনায়ন যুদ্ধের পর ইসলাম গ্রহণ করে। দিনের হুকুম-আহকাম জানতে, কুরআন ও হাদীস শ্রবণ করতে আল্লাহর রসূলের অনুমতি নিয়ে মদীনাতে প্রবেশ করেছিল এ শর্তে যে, ইসলাম ধর্ম যদি পছন্দ হয় তাহলে ইসলাম গ্রহণ করবে, অন্যথায় মুসলিমদের তরফ থেকে কোনো কষ্টের সম্মুখীন না হয়ে নিজের দেশে ফিরে যাবে। অতঃপর সে ধারণা করল যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ম নিচ্ছে, এমতাবস্থায় তা ফেরত দিবে না। তাই সে বলল, হে মুহাম্মাদ! এটা কি জবরদস্তি স্বরূপ?

(فَقَالَ : أَغَصْبًا يَا مُحَمَّدَ؟) বলা হয়েছে, এ আহবান মু’মিন হতে প্রকাশ পেতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ لَا تَجْعَلُوا دُعَاءَ الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا অর্থাৎ- ‘‘রসূলের আহবানকে তোমরা তোমাদের মাঝে কতককে তোমাদের কতকের আহবানের মতো মনে করো না’’- (সূরা আন্ নূর ২৪ : ৬৩)। আর ত্বীবী আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার বাণী হতে যা উল্লেখ করেন তা হলো- وَلَا تَجْهَرُوا لَهٗ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْض অর্থাৎ- ‘‘তোমাদের কর্তৃক কতকের কাছে কথা প্রকাশ করার মতো তাঁর কাছে (উচ্চৈঃস্বরে) কথা প্রকাশ করো না’’- (সূরা আল হুজুরাত ৪৯ : ২)। এটা স্থানের প্রতিকূল, উদ্দেশের অনুপযোগী। তূরিবিশতী বলেনঃ নিশ্চয় সেদিন সে মুশরিক ছিল, তার অন্তরের মিলনস্থলে জাহিলী গোড়ামী গ্রাস করেছিল।

(مَضْمُونَةً) অর্থাৎ- ফেরতযোগ্য, অর্থাৎ- নিশ্চয় আমি তা ধার নিচ্ছি এবং তা ফেরত দিব, অতঃপর ফেরত দেয়ার অর্থটি জোরদার করার জন্য যিম্মাদারী শব্দ প্রয়োগ করেছেন। কি করে আমি তা ফেরত দিব না, যা আমার যিম্মায় রয়েছে।

ত্বীবী (রহঃ) এভাবে এর বিশ্লেষণ করেছেন। ইবনুল মালিক বলেনঃ (مَضْمُونَةً)-এর ব্যাখ্যা হলো ফেরত দেয়াটা তার যিম্মায়, অর্থাৎ- মালিকের কাছে খাদ্য রসদ ফেরত দেয়া আরিয়া গ্রহণকারীর ওপর আবশ্যক হবে। এতে ‘আরিয়ার বিদ্যমানতার সময় হুবহু তা ফেরত দেয়া আবশ্যক হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করেছে।

কাযী বলেনঃ এ হাদীসটি ঐ ব্যাপারে দলীল স্বরূপ যে, ‘আরিয়াহ্ গ্রহণকারীর ওপর ‘আরিয়াহ্ যিম্মাদারী স্বরূপ। সুতরাং তার হাতে যদি তা ধ্বংস হয়ে যায় অবশ্যই তাকে যিম্মাদারী বহন করতে হবে- এ ব্যাপারে মত পেশ করেছেন ইবনু ‘আব্বাস। আর আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এ দিকেই গিয়েছেন। অতঃপর ‘আত্বা, শাফি‘ঈ ও আহমাদ। আর শুরাইহ, হাসান, নাখ‘ঈ, আবূ হানীফাহ্ এবং সাওরী গিয়েছেন ঐদিকে, যে আরিয়া ব্যক্তির হাতে আমানত স্বরূপ, বাড়াবাড়ী না করলে যিম্মাদারিত্ব বহন করতে হবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ

২৯৫৬-[১৯] আবূ উমামাহ্ আল বাহিলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ঋণের জিনিস ফেরত দিতে হবে। উপকারের স্বার্থে প্রাপ্ত জিনিস ফেরত দিতে হবে (অর্থাৎ- তিনি ঋণী)। ঋণ শোধ করতে হবে এবং জামিনদারকে দণ্ড দিতে হবে। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «الْعَارِيَةُ مُؤَدَّاةٌ وَالْمِنْحَةٌ مَرْدُودَةٌ وَالدَّيْنُ مَقْضِيٌّ وَالزَّعِيمُ غَارِمٌ» . رَوَاهُ النرمذي وَأَبُو دَاوُد

وعن ابي امامة قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «العارية موداة والمنحة مردودة والدين مقضي والزعيم غارم» . رواه النرمذي وابو داود

ব্যাখ্যা: (الْعَارِيَةُ مُؤَدَّاةٌ) তূরিবিশতী বলেনঃ অর্থাৎ- ‘আরিয়াহ্ (ধারে নেয়া বস্তু) তার মালিকের কাছে পৌঁছিয়ে দিতে হবে। ব্যাখ্যাকারগণ যিম্মাদারিত্বের ক্ষেত্রে তাদের মতানৈক্য অনুযায়ী এর ব্যাখ্যাকরণেও তারা মতানৈক্য করেছেন। যারা ‘আরিয়াহ্-এর বস্তু ধারগ্রহণকারী তার যিম্মাদার তারা বলেন, বস্তু বিদ্যমান থাকলে হুবহু তা আদায় করবে, আর বিনষ্ট হয়ে গেলে মূল্য আদায় করবে। যে এর বিপরীত মনে করে তার কাছে আদায় করার উপকারিতা হলো মালিকের নিকট সামগ্রী ফিরিয়ে দেয়ার ব্যয়ভার ‘আরিয়াহ্ গ্রহণকারীর ওপর আবশ্যক করে দেয়া।

(الْمِنْحَةُ) ‘মিন্হাহ্’ অর্থাৎ- ব্যক্তি তার সাথীকে যা দান করে, অর্থাৎ- দুধ পান করার জন্য দুগ্ধবর্তী প্রাণী হতে অথবা ফল খাওয়ার জন্য বৃক্ষ হতে অথবা ফসল ফলানোর জন্য জমিন হতে তাকে যা দান করে। (مَرْدُودَةٌ) ‘মারদূদাহ্’ দ্বারা উপকার লাভের মালিক হয়, বস্তুর মালিক হয় না, তাই তা ফেরত দিতে হবে। (غَارِمٌ) ‘আ-রিম’ অর্থাৎ- সে যার যিম্মাদারী গ্রহণ করেছে তা তার নিজের ওপর আবশ্যক করে নিয়েছে। অর্থাৎ- যিম্মাদার যে ঋণের যিম্মাদারী গ্রহণ করেছে তা আদায় করা তার জন্য আবশ্যক।
(তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২১২০; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ

২৯৫৭-[২০] রাফি’ ইবনু ’আমর আল গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বাচ্চা ছিলাম। আনসারদের খেজুর গাছে ঢিল ছুঁড়তাম। একবার আমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ধরে আনা হলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, হে বাচ্চা! তুমি কেন খেজুর গাছে ঢিল ছোঁড়? আমি বললাম, খেতে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ঢিল ছুঁড়ো না, গাছের নীচে যা পড়ে থাকে তা খেয়ো। (রাবী বলেন) অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার মাথার উপর হাত বুলিয়ে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি তার পেটকে ভরে দাও। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَن رَافع بن عَمْرو الْغِفَارِيّ قَالَ: كُنْتُ غُلَامًا أَرْمِي نَخْلَ الْأَنْصَارِ فَأُتِيَ بِيَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «يَا غُلَامُ لِمَ تَرْمِي النَّخْلَ؟» قُلْتُ: آكُلُ قَالَ: «فَلَا تَرْمِ وَكُلْ مِمَّا سَقَطَ فِي أَسْفَلِهَا» ثُمَّ مَسَحَ رَأْسَهُ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ أَشْبِعْ بَطْنَهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
وَسَنَذْكُرُ حَدِيثَ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ فِي «بَابِ اللّقطَة» إِن شَاءَ الله تَعَالَى

وعن رافع بن عمرو الغفاري قال: كنت غلاما ارمي نخل الانصار فاتي بي النبي صلى الله عليه وسلم فقال: «يا غلام لم ترمي النخل؟» قلت: اكل قال: «فلا ترم وكل مما سقط في اسفلها» ثم مسح راسه فقال: «اللهم اشبع بطنه» . رواه الترمذي وابو داود وابن ماجه وسنذكر حديث عمرو بن شعيب في «باب اللقطة» ان شاء الله تعالى

ব্যাখ্যা: হাদীসটিতে প্রমাণ রয়েছে, লেখক (রহঃ) যা দিয়ে অধ্যায় বেঁধেছেন তার। অধ্যায়টি হলো- (بَاب مَنْ قَالَ إِنَّه يَأْكُلُ مِمَّا سَقَطَ) অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয় বৃক্ষ হতে নীচে যা পড়ে তা সে খাবে’’। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬১৯)

(وَكُلْ مِمَّا سَقَطَ فِى اسْفَلِهَا) অর্থাৎ- নীচে যা পতিত হয় তা হতে খাও। কেননা সাধারণ নিয়ম এই যে, অধিকাংশ সময় আহরকের জন্য পতিত জিনিসের প্রতি উদারতা প্রদর্শন করা হয়। বিশেষ করে ফলের প্রতি ঝোঁকপ্রবণ শিশুদের ক্ষেত্রে। মুযহির বলেনঃ নিরুপায় ব্যক্তির ক্ষেত্রে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য পতিত খেজুর খাওয়া বৈধ করেছিলেন, অন্যথায় পতিত বস্তু খাওয়াও তার জন্য বৈধ হবে না। কেননা তা অন্যের সম্পদ, অনুমতি ব্যতীত তা অন্যের জন্য বৈধ নয়, যেমন গাছে থাকা খেজুর অন্যের জন্য অবৈধ।

ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ ছোট ছেলেটি যদি নিরুপায় হত তাহলে জমিনের উপর কিছু না থাকলে তার জন্য বৃক্ষ হতে ঢিল ছুঁড়ে আহরণ করা খেজুর খাওয়া বৈধ করতেন।

(ثُمَّ مَسَحَ رَأْسَه فَقَالَ : اللّٰهُمَّ أَشْبِعْ بَطْنَه) একমতে বলা হয়েছে, এটা ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, ছোট ছেলেটি নিরুপায় ছিল না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৪ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে