পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ
২৯৩৮-[১] সা’ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কারো এক বিঘত পরিমাণ জমিন জোরজবরদস্তি দখল করেছে, কিয়ামত দিবসে তার গলায় সাত তবক হতে ঐ পরিমাণ জমিন বেড়িরূপে পরিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْغَصْبِ وَالْعَارِيَةِ
عَن سعيد بْنِ زَيْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَخَذَ شِبْرًا مِنَ الْأَرْضِ ظُلْمًا فَإِنَّهُ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ سبع أَرضين»
ব্যাখ্যা: অন্য বর্ণনাতে এসেছে, (مَنْ أَخَذَ شِبْرًا مِنَ الْأَرْضِ بِغَيْرِ حَقٍّ طَوَّقَهُ اللّٰهُ فِي سَبْعِ أَرَضِينَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ) অর্থাৎ- ‘‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে এক বিঘত জমি গ্রাস করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সাত তবক জমিনের মাঝে বেষ্টন করে ফেলবেন।’’ বিদ্বানগণ বলেন, এতে সুস্পষ্ট যে, জমিন সাত স্তর বিশিষ্ট। আর তা আল্লাহ তা‘আলার سَبْعَ سَمٰوٰتٍ وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ অর্থাৎ- ‘‘সাতটি আকাশ এবং সে পরিমাণে জমিন’’- (সূরা আত্ব তালাক ৬৫ : ১২) এ আয়াতের অনুকূলে। পক্ষান্তরে সাদৃশ্যকে সাতটি আকৃতির সাথে ব্যাখ্যা করা বাহ্যিকতার বিপরীত। অনুরূপভাবে ঐ ব্যক্তির কথা বাহ্যিকতার বিপরীত যে বলে, হাদীসে সাত জমিন দ্বারা সাত অঞ্চল উদ্দেশ্য। বিদ্বানগণ একে বাতিল করে দিয়েছেন, কেননা ব্যাপারটি যদি এমনই হত তাহলে এ অঞ্চলের এক বিঘতের কারণে অন্য অঞ্চলের সমান্যতম পরিমাণও অবিচারকারীর গলাবদ্ধ স্বরূপ করা হত না যা জমিনের স্তরসমূহের বিপরীত, কেননা তা মালিকানার ক্ষেত্রে এ বিঘত পরিমাণের অধীন। সুতরাং যে এ জমিনের কোনো অংশের মালিক হবে সে তার মালিক হবে এবং জমি স্তর হতে তার নীচে যা আছে তারও মালিক হবে।
কাযী বলেনঃ জমিনসমূহের পুরু, এদের স্তরসমূহে ও এদের মাঝে যা কিছু আছে সে সম্পর্কে যে হাদীস এসেছে তা সুদৃঢ় নয়, পক্ষান্তরে হাদীসে উল্লেখিত গলায় বেড়ি পরিয়ে দেয়া সম্পর্কে তারা বলেন, হাদীসের অর্থ এ হওয়ার সম্ভাবনা আছে যে, তাকে তা বহন করার দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হবে, আরও সম্ভাবনা রাখছে তার গর্দানে তা বেড়ির মতো করে দেয়া হবে। যেমন আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা বলেন, ‘‘যে সম্পদে তারা কৃপণতা অবলম্বন করেছে অচিরেই কিয়ামতের দিন তা তাদের গলায় বেড়ী স্বরূপ পরিয়ে দেয়া হবে।’’ (সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৮)
একমতে বলা হয়েছে, এর অর্থ হলো জমি আত্মসাতের যে পাপ তা তার পাপ গলায় বেড়ী স্বরূপ করে দেয়া হবে। (শারহে মুসলিম ১১/১২শ খন্ড, হাঃ ১৬১০)
ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ তৃতীয় হাদীসটি একে সমর্থন করছে, আল্লাহ তাকে ঐ জমিন খনন করতে দায়িত্ব চাপিয়ে দিবেন, পরিশেষে সে সাত জমিনের শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
শারহস্ সুন্নাহ্-তে আছে, বেড়ী স্বরূপ করার অর্থ হলো, আল্লাহ তা‘আলা তাকে অন্যায়ভাবে দখলকৃত জমিতে ধসিয়ে দিবেন, ফলে দখলকৃত জমি তার গলায় বেড়ী স্বরূপ হয়ে যাবে। একমতে বলা হয়েছে, কিয়ামতের দিন ঐ জমিন বহন করাকে বেড়ী স্বরূপ করা হবে। অর্থাৎ- তাকে চাপিয়ে দেয়া হবে, ফলে তা হবে কষ্টসাধ্যের বেড়ী, প্রথাগত বেড়ী না, সালিম তার পিতা হতে যা বর্ণনা করেছেন তার আলোকে এ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (مَنْ أَخَذَ مِنَ الْأَرْضِ شَيْئًا بِغَيْرِ حَقِّه خُسِفَ بِه يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلٰى سَبْعِ أَرَضِينَ) অর্থাৎ- ‘‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে জমিনের কোনো অংশ গ্রাস করবে তা সহ তাকে কিয়ামতের দিন সপ্তজমিন পর্যন্ত ধসিয়ে দেয়া হবে।’’ এটা আহমাদ হতে বুখারীর বর্ণনা। আর এভাবেও সমন্বয় করা যায় যে, অবিচারকারীর সাথে ঐ সকল ধরনের আচরণ করা হবে। অথবা নিযার্তনকারী ও নির্যাতিত ব্যক্তির বিভিন্নতার কারণে কঠোরতা ও দুর্বলতার দিক দিয়ে শাস্তিকেও বিভিন্ন রকম করা হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ
২৯৩৯-[২] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন বিনা অনুমতিতে কারো পশুর দুধ না দোহন করে। কারণ তোমাদের মধ্যে কেউ কি পছন্দ করে, কেউ তার কোঠায় আসুক এবং তার খাদ্য ভাণ্ডার (ভেঙ্গে তা) থেকে তার খাদ্যশস্য নিয়ে যাক। অবশ্যই পশুর স্তন তাদের জন্য খাদ্য সুরক্ষেত করে রাখে। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْغَصْبِ وَالْعَارِيَةِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَحْلُبَنَّ أَحَدٌ مَاشِيَةَ امْرِئٍ بِغَيْرِ إِذْنِهِ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يُؤْتى مشْربَته فتكسر خزانته فَينْتَقل طَعَامُهُ وَإِنَّمَا يَخْزُنُ لَهُمْ ضُرُوعُ مَوَاشِيهِمْ أَطَعِمَاتِهِمْ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (فَيُنْتَقَلَ طَعَامُه) ‘‘তার খাদ্য বের করা হবে এবং গ্রাস করা হবে।’’
(وَإِنَّمَا يَخْزُنُ لَهُمْ ضُرُوعُ مَوَاشِيهِمْ أَطْعِمَاتِهُمْ) অর্থাৎ- দুধ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তাদের চতুস্পদ জন্তুর ওলানসমূহ তোমাদের ঐ সকল ধনভাণ্ডারের স্থানে গণ্য যা তোমাদের খাদ্য সংরক্ষণ করে। সুতরাং যে তাদের চতুস্পদ জন্তুর দুধ দোহন করল সে যেন তাদের ধন-ভাণ্ডারগুলো ভেঙ্গে দিল এবং তাদের ধন-ভাণ্ডার হতে কিছু চুরি করল।
শারহুস্ সুন্নাহ্-তে আছে, অধিকাংশ বিদ্বানদের নিকট এর উপর ‘আমল করা, অর্থাৎ অনুমতি ছাড়া অন্যের প্রাণীর দুধ দোহন করা বৈধ নয়, তবে যে তীব্র ক্ষুধায় কাতর তার কথা আলাদা এবং সে ক্ষতিপূরণ দিবে।
একমতে বলা হয়েছে, তার ওপর ক্ষতি-পূরণ বর্তাবে না, কেননা শারী‘আত তার জন্য তা বৈধ করেছে। আহমাদ, ইসহক ও অন্যান্যগণ দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তি ছাড়াও অন্যের জন্য তা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে মত পেশ করেছেন আর তা ঐ সময় যখন মালিক উপস্থিত থাকবে না। কেননা মদীনার দিকে আল্লাহর রসূলের হিজরতের সময় আবূ বাকর আল্লাহর রসূলের জন্য এক কুরায়শ ব্যক্তির ছাগলের দুধ দোহন করেছিল। ঐ ব্যক্তির দাস ছাগলটিকে চড়াচ্ছিল কিন্তু সেখানে মালিক উপস্থিত ছিল না। তাছাড়া সামুরাহ্ বর্ণিত হাদীসে আছে, নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন চতুস্পদ জন্তুর নিকট আসবে তখন সেখানে যদি তার মালিক থাকে, তাহলে সে যেন তার মালিকের কাছে অনুমতি নেয়, আর সেখানে যদি কেউ না থাকে তাহলে সে যেন তিনবার আওয়াজ দেয়, অতঃপর কেউ যদি তার ডাকে সাড়া দেয় তাহলে তার কাছে যেন সে অনুমতি নেয় আর কেউ যদি সাড়া না দেয় তাহলে সে যেন দুধ দোহন করে পান করে এবং সাথে যেন বহন না করে।
কিছু বিদ্বান মুসাফির ব্যক্তিকে অন্যের বৃক্ষের ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে অবকাশ দিয়েছেন, যা ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে গরীব সানাদে বর্ণনা করা হয়েছে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি কারো বাগানে প্রবেশ করবে সে যেন কাপড়ে বহন না করে খায়, তাহলে তার কোনো জরিমানা নেই। অধিকাংশ বিদ্বানদের কাছে মালিকের অনুমতি ছাড়া তা বৈধ নয়, তবে ক্ষুধার প্রয়োজনে হলে তা আলাদা কথা।
তূরিবিশতী বলেনঃ বিদ্বানদের কতক এ হাদীসকে ক্ষুধা ও প্রয়োজনের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন, কেননা মুসলিম ব্যক্তির সম্পদ হারাম সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে যে হাদীসগুলো বর্ণিত হয়েছে তার মুকাবিলায় এ হাদীসগুলো প্রমাণ হিসেবে পেশ করার মতো নয়।
নববী (রহঃ) বলেনঃ দুর্দশাগ্রস্তহীন ব্যক্তির যখন খাদ্যের মালিকের প্রতি এভাবে সাহস থাকবে যে, সে জানছে অথবা ধারণা করছে যে, খাদ্য হতে মালিকের অনুমতি ছাড়া তা হতে সে খেলে মালিকের অন্তর এতে সন্তুষ্ট থাকবে তাহলে এ ব্যক্তির খাওয়ার সুযোগ আছে। দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তি যদি মৃত জন্তু এবং অন্যের খাদ্য পায়, তাহলে এক্ষেত্রে মতানৈক্য আছে। [মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেন] আহনাফদের মতে সর্বাধিক বিশুদ্ধ হলো, সে মৃত জন্তু খাবে তবু অন্যের ফল বিনানুমতিতে খাবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহঃ) তাঁর ‘নিহায়াহ্’ গ্রন্থে বলেনঃ (الماشية) শব্দটি উট, গরু এবং ছাগলের ওপর প্রয়োগ হয় তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছাগলের ওপর প্রয়োগ হয়। এমনিভাবে এতে (خَزَانَتُه) এর ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ঐ স্থান অথবা পাত্র যাতে উদ্দেশিত বস্তু সংরক্ষণ করা হয়। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৪৩৫)
শারহে মুসলিমে হাদীসটির অর্থের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, গুদামে সংরক্ষিত খাদ্য মালিকের অনুমতি ছাড়া গ্রহণ বৈধ না হওয়ার ক্ষেত্রে গুদামে সংরক্ষিত খাদ্যের সাথে ওলানে সংরক্ষিত দুধের সাথে সাদৃশ্য দিয়েছেন।
আলোচ্য হাদীসে কয়েকটি উপকারিতা রয়েছে তা হলোঃ অনুমতি ব্যতীত মানুষের সম্পদ গ্রহণ হারাম, তা হতে খাওয়া ও তা ব্যয় করা হারাম, এতে দুধ ও অন্যান্য জিনিসের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই, চাই অভাবী হোক বা অভাবী না হোক, তবে ঐ দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তি যে মৃত জন্তু পায় না, অন্যের খাদ্য পায় সে আবশ্যক হিসেবে খাদ্য খাবে এবং আমাদের নিকট ও জুমহূরের নিকট তার পরিবর্তে মালিককে কিছু দেয়া আবশ্যক হয়ে যাবে। কতিপয় সালাফ ও কতিপয় মুহাদ্দিস বলেন, তা আবশ্যক হবে না তবে এটা দুর্বল অভিমত। অতঃপর সে যদি মৃত জন্তু এবং অন্যের খাদ্য পায় তাহলে তাতে বিদ্বানদের প্রসিদ্ধ মতানৈক্য আছে, আমাদের (শাফি‘ঈদের) সর্বাধিক বিশুদ্ধ মতে মৃত জন্তু খাবে। (শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭২৬-[১৩])
পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ
২৯৪০-[৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জনৈকা সহধর্মিণীর ঘরে ছিলেন। তখন উম্মুল মু’মিনীনদের অপর একজন বড় পেয়ালায় করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য কিছু খাদ্য পাঠালেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাঁর ঘরে ছিলেন তিনি খাদিমের হাতে আঘাত করলে তা পড়ে ভেঙ্গে গেল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেয়ালার টুকরাগুলো একত্র করলেন এবং তাতে যে খাদ্য ছিল তা জমা করতে লাগলেন। আর বললেন, তোমাদের উম্মুল মু’মিনীন ঈর্ষান্বিত হয়েছেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খাদিমকে ঐ পর্যন্ত আটকে রাখলেন যে পর্যন্ত না যাঁর ঘরে ছিলেন তাঁর ঘর হতে একটি ভালো পেয়ালা আনা হলো। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যাঁর পেয়ালা ভাঙ্গা হয়েছিল তাঁকে ভালো পেয়ালাটি দিলেন এবং ভাঙ্গাটি তাঁর জন্য রাখলেন যিনি তা ভেঙ্গেছেন। (বুখারী)[1]
بَابُ الْغَصْبِ وَالْعَارِيَةِ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ بَعْضِ نِسَائِهِ فَأَرْسَلَتْ إِحْدَى أُمَّهَاتِ الْمُؤْمِنِينَ بِصَحْفَةٍ فِيهَا طَعَامٌ فَضَرَبَتِ الَّتِي النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَيْتِهَا يَدَ الْخَادِمِ فَسَقَطَتِ الصَّحْفَةُ فَانْفَلَقَتْ فَجَمَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِلَقَ الصَّحْفَةِ ثُمَّ جَعَلَ يَجْمَعُ فِيهَا الطَّعَامَ الَّذِي كَانَ فِي الصَّحْفَةِ وَيَقُولُ: «غَارَتْ أُمُّكُمْ» ثُمَّ حَبَسَ الْخَادِمَ حَتَّى أُتِيَ بِصَحْفَةٍ مِنْ عِنْدِ الَّتِي هُوَ فِي بَيْتُهَا فَدَفَعَ الصَّحْفَةَ الصَّحِيحَةَ إِلَى الَّتِي كُسِرَتْ صَحْفَتُهَا وَأَمْسَكَ الْمَكْسُورَةَ فِي بَيْتِ الَّتِي كَسَرَتْ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (غَارَتْ أُمُّكُمْ) যারা উপস্থিত ছিল তাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে, الأم তথা ‘‘মা’’ কথা দ্বারা ঐ নারী উদ্দেশ্য যিনি পেয়ালাটি ভেঙ্গে ছিলেন, আর তিনি হলেন মু’মিনদের মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)। দাঊদী বাড়াবাড়ী করে বলেন, (أمكم) উক্তি দ্বারা ‘‘সারাহ’’ উদ্দেশ্য, তাঁর নিকট কথাটির অর্থ এরূপ যে, অভিমান সংঘটিত হয়েছে তার দরুন তোমরা আশ্চর্যবোধ করো না, কেননা ইতিপূর্বে তোমাদের মা অভিমান করেছিল। পরিশেষে ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর ছেলে ইসমা‘ঈল (আঃ)-কে বাড়ী হতে বের করে দেন। এমতাবস্থায় ইসমা‘ঈল ছোট শিশু তাঁর মাতার সাথে শস্যহীন উপত্যকার দিকে ছুটে যান। যদিও এর কতিপয় দিক রয়েছে, কিন্তু উদ্দেশ্য এর বিপরীত। আর উদ্দেশ্য হলো, পেয়ালা ভাংচুরকারিণী। যারা এ হাদীসের ব্যাখ্যা করেছে তারা সকলে এ অর্থই করেছেন। আর তারা বলেছেন, আত্ম-সম্মানবোধের কারণে যা কিছু ঘটে তাতে তাকে দায়ী না করার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে, কেননা ঐ মুহূর্তে ক্রোধের কারণে জ্ঞান বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় বিবেক জাগিয়ে তোলা কঠিন।
আবূ ইয়া‘লা (لا بأس به) ‘নির্দোষ’ সূত্রে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে মারফূ‘ভাবে বর্ণনা করেন, ‘‘নিশ্চয় আত্ম-সম্মানবোধের কারণে রাগান্বিত ব্যক্তি উপত্যকার উপরাংশ অপেক্ষা নিম্নাংশের দিকে দৃষ্টি দেয় না।’’ এটা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোনো এক ঘটনায় বলেন।
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ নারীদের ওপর আত্ম-সম্মানবোধ আবশ্যক করে দিয়েছেন। সুতরাং তাদের মধ্যে যে ধৈর্য ধারণ করবে তার জন্য একজন শাহীদের সাওয়াব থাকবে।’’ বায্যার একে সংকলন করে একে বিশুদ্ধতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য তবে তাদের মাঝে ‘উবায়দ বিন সববাহ-এর ব্যাপারে মতানৈক্য করা হয়েছে। আর ‘‘সারাহ’’-এর ব্যাপারে দাঊদীর প্রয়োগ যে, ‘‘তিনি সম্বোধিতদের মা’’। এতে বিবেচনার বিষয় আছে, কেননা তারা যদি ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর বংশধর হয় তাহলে তাদের মা হবে হাজেরা, সারাহ্ নয়; পক্ষান্তরে তারা বানু ইসরাঈল বংশধরের হওয়া সুদূর পরাহত। অতএব সারাহ্ তাদের ‘‘মা’’ হওয়া ‘‘বিশুদ্ধতার মাপকাঠিতে অসম্ভব।’’ (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫২২৫)
পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ
২৯৪১-[৪] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করতে ও কারো নাক-কান কাটতে নিষেধ করছেন। (বুখারী)[1]
بَابُ الْغَصْبِ وَالْعَارِيَةِ
وَعَن عبد الله بن يزِيد عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّهُ نهى عَن النهبة والمثلة. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: مُثْلَةٌ (عَنِ النُّهْبَةِ وَالْمُثْلَةِ) বলা হয় জীবিতাবস্থায় প্রাণীর কোনো কোনো অংশ কেটে ফেলা। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৫১৬)
অতঃপর ইমাম বুখারী (لا يزني الزاني حين يزني وهو مؤمن) ‘‘যিনাকারী যখন যিনা করে তখন সে মু’মিন থাকে এমন না’’ এ হাদীস উল্লেখ করেছেন। আর এ হাদীসে আছে,
وَلَا ينتهب نهبة ترفع النَّاسُ إِلَيْهِ فِيهَا أَبْصَارَهُمْ অর্থাৎ- ‘‘ছিনতাইকারী যখন ছিনতাই করে, আর মানুষের দৃষ্টি তার দিকে উঠে থাকে, এমতাবস্থায় সে মু’মিন থাকতে পারে না।’’
এ থেকে অনুমতি নেয়ার শর্তারোপের উপকারিতা লাভ করা যাচ্ছে। কেননা ছিনতাইকারীর দিকে দৃষ্টি উঠানো স্বভাবত অনুমতি না নেয়ার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৪৭৪)
(نهبة) ব্যাখ্যাতে আছে- প্রকাশ্যে জোর করে কোনো কিছু ছিনিয়ে নেয়া। আহমাদে হুমাম-এর বর্ণনাতে এসেছে- দৃষ্টি উঠানো দ্বারা মূলত যাদের থেকে লুণ্ঠন করা হয় তাদের অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করেছেন, কেননা তাদের কাছ থেকে যারা লুণ্ঠন করে তাদের দিকে তারা তাকিয়ে থাকে এবং তাতে বাধা দিতে সক্ষম হয় না, যদিও তার কাছে তারা বিনয় প্রকাশ করে। এর দ্বারা আড়াল না হওয়া বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে, তখন এটা লুণ্ঠনের আবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্যে পরিণত হবে, এটা চুরি এবং ছোঁ মেরে নেয়ার বিপরীত। কেননা তা গোপনে হয়ে থাকে, ছিনতাই করা সর্বাধিক গুরুতর, কারণ এতে আছে অধিক জুলুম এবং পরোয়া না করা। (ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৭৭২)
পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ
২৯৪২-[৫] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে সূর্যগ্রহণ হলো, যেদিন তাঁর পুত্র ইব্রাহীম ইন্তেকাল করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদেরকে নিয়ে ছয় রুকূ’ ও চার সিজদা দিয়ে দুই রাক্’আত সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাত শেষ করলেন, আর সূর্য তার পূর্বাবস্থায় ফিরে গেল। এমতাবস্থায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমাদেরকে যেসব বিষয়ের ওয়া’দা দেয়া হয়, আমি আমার এই সালাতে তা প্রত্যক্ষ করেছি। এমন সময় আমার সামনে জাহান্নামকে আনা হয়েছিল। আর এটা তখনই হয়েছিল যখন তোমরা আমাকে দেখছিলে, তখন আগুনের ফুল্কি পৌঁছার ভয়ে আমি পিছনে হটেছিলাম। এমনকি বাঁকা মাথা লাঠিধারী [’আমর ইবনু লুহায়’আহ্]-কেও দেখেছি, সে তাতে আপন নাড়িভূঁড়ি টানা-হিঁচড়ে করছিল, সে বাঁকা মাথা লাঠি দিয়ে হাজীদের জিনিস চুরি করতো।
যদি লোকেরা টের পেত, তখন বলে উঠতো, আমার লাঠির মাথায় আটকে গেছে। আর যদি টের না পেত তবে তা নিয়ে যেত। এমনকি আমি জাহান্নামে বিড়ালধারীকেও দেখেছি, যে সেটি বেঁধে রেখেছিল। অথচ তাকে খাদ্য দিত না, আর ছেড়েও দিত না, যাতে তা মাটির জীব ধরে খেতে পারে। পরিশেষে তা ক্ষুধায় কাতর হয়ে মারা গেল। অতঃপর আমার কাছে জান্নাত আনা হলো, আর তা ঐ সময় হয়েছিল যখন তোমরা দেখলে আমি সামনে এগিয়ে গেলাম, এমনকি আমি আমার এ অবস্থানে দাঁড়ালাম। অবশ্যই তখন আমি এই ইচ্ছায় হাত বাড়িয়ে ছিলাম যে, আমি তার ফল নেই, যাতে তোমরা তা দেখতে পাও। অতঃপর আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠল যে, আমি যেন তা থেকে বিরত থাকি। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْغَصْبِ وَالْعَارِيَةِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: انْكَسَفَتِ الشَّمْسُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ مَاتَ إِبْرَاهِيمُ بْنُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى بِالنَّاسِ سِتَّ رَكَعَاتٍ بِأَرْبَعِ سَجَدَاتٍ فَانْصَرَفَ وَقَدْ آضَتِ الشَّمْسُ وَقَالَ: مَا مِنْ شَيْءٍ تُوعَدُونَهُ إِلَّا قَدْ رَأَيْتُهُ فِي صَلَاتِي هَذِهِ لَقَدْ جِيءَ بِالنَّارِ وَذَلِكَ حِينَ رَأَيْتُمُونِي تَأَخَّرْتُ مَخَافَةَ أَنْ يُصِيبَنِي مِنْ لَفْحِهَا وَحَتَّى رَأَيْتُ فِيهَا صَاحِبَ الْمِحْجَنِ يَجُرُّ قُصْبَهُ فِي النَّارِ وَكَانَ يسرق الْحَاج بمحجته فَإِن فطن لَهُ قَالَ: إِنَّمَا تعلق بمحجتي وَإِنْ غُفِلَ عَنْهُ ذَهَبَ بِهِ وَحَتَّى رَأَيْتُ فِيهَا صَاحِبَةَ الْهِرَّةِ الَّتِي رَبَطَتْهَا فَلَمْ تُطْعِمْهَا وَلَمْ تَدَعْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الْأَرْضِ حَتَّى مَاتَتْ جُوعًا ثُمَّ جِيءَ بِالْجَنَّةِ وَذَلِكَ حِينَ رَأَيْتُمُونِي تَقَدَّمْتُ حَتَّى قُمْتُ فِي مَقَامِي وَلَقَدْ مَدَدْتُ يَدِي وَأَنَا أُرِيدُ أَنْ أَتَنَاوَلَ مِنْ ثَمَرَتِهَا لِتَنْظُرُوا إِلَيْهِ ثُمَّ بَدَا لِي أَنْ لَا أفعل . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (بَدَا لِىْ أَنْ لَا أَفْعَلَ) ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ সম্ভবত জান্নাতের ফল তাদের কাছে প্রকাশ না পাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক মনে করা যাতে স্থির ঈমান অস্থিরতার দিকে পরিবর্তিত না হয় অথবা তিনি যদি তাদেরকে জান্নাতের ফল দেখান, তাহলে তাদেরকে জাহান্নামে পোড়ানো দেখানোও আবশ্যক হয়ে যেত। আর তখন আশার উপর ভয় প্রাধান্য পেত, ফলে তাদের জীবন পদ্ধতির বিষয়াবলী ধ্বংস হয়ে যেত। এজন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَبَكَيْتُمْ كَثِيرًا وَلَضَحِكْتُمْ قَلِيلًا) অর্থাৎ- ‘‘আমি যা জানি তোমারা যদি তা জানতে অবশ্যই তোমরা বেশি কাঁদতে এবং অল্প হাসতে।’’
নববী (রহঃ) বলেনঃ বিদ্বানগণ বলেন, সম্ভবত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাত, জাহান্নাম স্বচক্ষক্ষ দেখেছেন, আল্লাহ তা প্রকাশ করেছেন এবং নাবীর মাঝে ও এদের মাঝ থেকে পর্দা সরিয়ে দিয়েছেন যেভাবে মসজিদে আকসা এবং তাঁর মাঝের পর্দা সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। আর এ সম্ভাবনাও রয়েছে যে, এ দর্শন ছিল ‘ইলমী দর্শন। অর্থাৎ ইতিপূর্বে তিনি যা জানতে পারেননি ঐ সময় ওয়াহীর মাধ্যমে তাঁকে তা বিস্তারিতভাবে জানানো হয়েছে। অতঃপর এ থেকে তাঁর এমন ভয়-ভীতি অর্জন হয়েছে ইতোপূর্বে যা অর্জন হয়নি, প্রথম ব্যাখ্যাটি সর্বোত্তম এবং হাদীসের শব্দসমূহের সাথে সর্বাধিক সাদৃশ্যময়, যাতে আছে স্বচক্ষক্ষ দেখার উপর প্রমাণ বহনকারী বিষয়সমূহ আর এটা তার পেছানোর কারণে যাতে জ্বলন্ত আগুন তাঁর কাছে পৌঁছতে না পারে এবং আঙ্গুরের থোকা ছিঁড়ে আনতে আগানোর কারণে।
অত্র হাদীসের শিক্ষাঃ
(১) জান্নাত, জাহান্নাম সৃষ্ট, উপস্থিত এবং জান্নাতের ফল দুনিয়ার ফলের মতো দেখতে। আর এটা আহলুস্ সুন্নাহর মত,
(২) ধ্বংস ও শাস্তির স্থান থেকে পেছানো সুন্নাত,
(৩) অল্পকাজ সালাতকে বাতিল করে না,
(৪) কোনো কোনো মানুষকে বর্তমানে প্রকৃত জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হচ্ছে, বিড়ালটিকে বাঁধার কারণে ঐ মহিলাটিকে জাহান্নামে শাস্তি দেয়াতে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে যে, মহিলার কাজটি কবীরা গুনাহ ছিল। কেননা, বিড়ালকে বাধা এবং বিড়ালটির মৃত্যু পর্যন্ত মহিলার ঐ কাজে অটল থাকা সগীরাহ্ গুনাহের উপর স্থায়ী হওয়া, আর সগীরাহ্ গুনাহের উপর স্থায়ী হওয়া সগীরাহ্ গুনাহকে কবীরা গুনাহে পরিণত করে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ
২৯৪৩-[৬] কাতাদাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, একদিন মদীনায় (শত্রু আক্রমণের) চাঞ্চল্য দেখা দিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ ত্বলহাহ্ হতে একটি ঘোড়া ধার নিলেন, যার নাম ছিল ’মানদূব’ এবং অনুসন্ধানের জন্য তাতে আরোহণ করলেন। কিন্তু যখন ফিরে এলেন, তখন বললেন, আমি তো কিছু দেখলাম না; আর আমি এ ঘোড়াকে দ্রুতগামী হিসেবেই পেয়েছি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْغَصْبِ وَالْعَارِيَةِ
وَعَن قَتَادَة قَالَ: سَمِعْتُ أَنَسًا يَقُولُ: كَانَ فَزَعٌ بِالْمَدِينَةِ فَاسْتَعَارَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَسًا مِنْ أَبِي طَلْحَةَ يُقَالُ لَهُ: الْمَنْدُوبُ فَرَكِبَ فَلَمَّا رَجَعَ قَالَ: «مَا رَأَيْنَا مِنْ شَيْءٍ وَإِن وَجَدْنَاهُ لبحرا»
ব্যাখ্যা: (مَا رَأَيْنَا مِنْ شَىْءٍ) ‘‘কিছুই দেখলাম না’’ অর্থাৎ আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু দেখতে পেলাম না। অথবা এর দ্বারা উদ্দেশ্য ঘোড়াটিকে যে ধীরগতিসম্পন্ন বলা হয়ে থাকে আমি এর মধ্যে তার কিছু দেখতে পেলাম না।
হাদীসটি প্রমাণ বহন করছে যে, প্রাণী ধার করা বৈধ, কথায় বৃদ্ধি করা এবং কোনো একটি অর্থের কারণে একটি বস্তুকে আরেকটি বস্তুর সাথে সাদৃশ্য দেয়া বৈধ যদিও তার সকল গুণাগুণ পূর্ণভাবে পাওয়া না যায়। প্রাণীসমূহের নাম রাখা বৈধ, আর প্রাণীসমূহের নাম রাখা ছিল তাদের অভ্যাস। এমনিভাবে যুদ্ধের সরঞ্জাম দ্রুত উপস্থিত করা যখন তা অনুসন্ধান করা হবে, যখন ধ্বংসের আশংকা না করবে তখন শত্রু বাহিনীর সংবাদ উন্মোচনে একাই মানুষের আগে বেড়িয়ে যাওয়া বৈধ। ভয় চলে যাওয়ার পর মানুষকে শুভ সংবাদ দেয়া মুস্তাহাব। এতে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বীরত্ব ও তাঁর অন্তরের শক্তির প্রকাশ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
শারহে মুসলিম-এর বর্ণনাতে ২৩০৭ নং হাদীসে এসেছে, (وَكَانَ فَرَسًا يُبَطَّأ) অর্থাৎ- ঘোড়াটি পূর্বে ধীর-স্থিরে চলত। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহা বারাকাতে ও মু’জিযাতে ঘোড়াটি দ্রুত চলতে থাকে যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি (وَجَدْنَاهُ لَبَحْرًا) দ্বারা বুঝা যায়।