পরিচ্ছেদঃ ৪৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - খুতবাহ্ ও সালাত
(بَاب الْخُطْبَة وَالصَّلَاة) জুমু’আর খুতবাহ্ ও সালাত এবং উভয়ের গুণাবলীর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়। যেমন- উভয়ের পূর্ণতা ও ওয়াক্তের বিবরণ। الْخُطْبَة শব্দটি মাসদার خَطَبَ يَخْطُبُ خِطَابَهً وَخُطْبَةً শাব্দিক অর্থঃ ওয়াজ করা বা নাসীহাত করা। পরিভাষায় খুতবাহ্ এমন একটি ইবারত বা বক্তব্য যা যিকর, তাশাহুদ, দরূদ ও নাসীহাতের উপর সম্পৃক্ত। ’উলামাগণের মাঝে এ মর্মে মতপার্থক্য রয়েছে যে, খুতবাহ্ জুমু’আর সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত নাকি সেটা জুমু’আর রুকনগুলোর কোন একটি রুকন? জমহূর ’উলামাগণ বলেছেন যে, নিশ্চয় সেটা (খুতবাহ্) শর্ত ও রুকন।
কতকগুলো বিদ্বানগণ বলেন যে, খুতবাহ্ ফরয নয়। ইমাম মালিক (রহঃ) জমহূর অনুসারীগণ বলেনঃ সেটা ফরয, কিন্তু তা অগ্নিপূজকদের ওপর নয়। মির্’আত প্রণেতা বলেনঃ আমি বলব যে, দাঊদ আয যাহিরী, ইবনু হাযম, হাসান আল বসরী এবং জাওবাসী (রহঃ) মত ব্যক্ত করেছেন যে, জুমু’আর খুতবাহ্ ফরয নয় বরং মুস্তাহাব এবং সেটাই সঠিক। কেননা জুমু’আর দিনের খুতবার আবশ্যকতার উপর কুরআন-সুন্নাহ থেকে কোন দলীল প্রমাণিত হয়নি এবং আল্লাহ তা’আলার কথাঃ فَاسْعَوْا إِلى ذِكْرِ اللّهِ ’’তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও’’- (সূরাহ্ আল জুমু’আহ্ ৬২: ৯)। এখানে সেটার উপর কোন দলীল নেই। কেননা আদিষ্টিত ’’যিকর’’ দ্বারা সালাতের দিকে দ্রুত যাওয়া উদ্দেশ্য।
১৪০১-[১] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে পড়লে জুমু’আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। (বুখারী)[1]
بَابُ الْخُطْبَةِ وَالصَّلَاةِ
عَنْ أَنَسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي الْجُمُعَةَ حِينَ تَمِيلُ الشَّمْسُ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে জমহূর ‘উলামাগণ যে মত ব্যক্ত করেছেন তার দলীল রয়েছে, নিশ্চয় জুমু‘আর সালাতের প্রথম ওয়াক্ত হলোঃ যখন সূর্য ঢলে পড়বে, যেমন যুহরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) এবং সূর্য ঢলা সালাত হবে না এবং সহীহ মুসলিম-এর বর্ণনায় সালামাহ্ ইবনু আকওয়াহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসও এটার উপর প্রমাণ করে।
তিনি বলেনঃ (كُنَّا نَجْمَعُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ - ﷺ - إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ، ثُمَّ نَرْجِعُ نَتَتَبَّعُ الْفَيْءَ)
অর্থাৎ আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জুমু‘আর সালাত আদায় করতাম, যখন সূর্য হেলে যেত। অতঃপর আমরা ছায়ার পিছে পিছে ফিরতাম।
আল্লামা নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ ইমাম মালিক, আবূ হানীফাহ্, শাফি‘ঈ এবং সাহাবী ও তাবি‘ঈনদের মধ্য হতে জমহূর ‘উলামাগণ এবং তাদের পরবর্তী মুহাক্কিকগণ বলেছেন যে, সূর্য না ঢলা পর্যন্ত জুমু‘আর সালাত বৈধ হবে না। এ বিষয়ে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল ও ইসহাক্ব (রহঃ) ব্যতীত কেউ দ্বিমত পোষণ করেননি, তারা জুমু‘আর সালাত সূর্য ঢলার পূর্বে আদায় করা বৈধ বলেছেন। তবে ইবনুল কুদামাহ্ (রহঃ) আল মুগনীর ২য় খন্ডর ৩৫৭ পৃষ্ঠায় বলেছেন যে, প্রথম মত উত্তম ও বিশুদ্ধ এবং তাদের মতে সূর্য ঢলা ব্যতীত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৪৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - খুতবাহ্ ও সালাত
১৪০২-[২] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জুমু’আর দিন জুমু’আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার পূর্বে খাবারও গ্রহণ করতাম না, বিশ্রামও করতাম না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْخُطْبَةِ وَالصَّلَاةِ
وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ: مَا كُنَّا نُقِيلُ وَلَا نَتَغَدَّى إِلَّا بَعْدَ الْجُمُعَة
ব্যাখ্যা: আন্ নিহায়াহ্ গ্রন্থে রয়েছে যে, ক্বায়লুলাহ্ হলো অর্ধ দিবসে বিশ্রাম গ্রহণ করা, যদিও তার সাথে ঘুম না থাকে।
(اَلْغَدَاء) ঐ খাদ্য, যা দিনের প্রথম ভাগে খাওয়া হয়। বুখারীর অপর বর্ণনায় রয়েছেঃ আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জুমু‘আহ্ আদায় করতাম, অতঃপর ক্বায়লুলাহ্ করতাম। এ হাদীস থেকে ইমাম আহমাদ দলীল গ্রহণ করেছেন যে, জুমু‘আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সূর্য ঢলার পূর্বে আদায় করা বৈধ, কেননা ক্বায়লুলাহ্ ও গাদা (সকালের খাবার/দুপুরের খাবার) উভয়ের স্থান হলো সূর্য ঢলার পূর্বে। তিনি ক্বাতাদাহ্ হতে বর্ণনা করেন, সূর্য ঢলার পর ক্বায়লুলাহ্ এবং গাদা অবশিষ্ট থাকে না। জবাবে ‘আমির আল ইয়ামানী (রহঃ) বলেনঃ সাহল (রাঃ) বর্ণিত হাদীস জুমু‘আর সালাত সূর্য ঢলার পূর্বে আদায়ের দলীল নয়। কেননা তারা (সাহাবায়ে কিরামগণ) মক্কা এবং মদীনায় যুহরের পর ছাড়া ক্বায়লুলাহ্ ও দুপুরের খাবার খেতেন না। যেমন- আল্লাহ তা‘আলার কথাঃ
وَحِيْنَ تَضَعُوْنَ ثِيَابَكُمْ مِنَ الظَّهِيرَةِ
‘‘দুপুরের যখন তোমরা বস্ত্র রেখে দাও (বিশ্রামের জন্য)।’’ (সূরাহ্ আন্ নূর ২৪ : ৫৮)
তবে হ্যাঁ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদাই সূর্য ঢলার প্রথম সময়ে জুমু‘আর সালাত আদায় করতেন, যা যুহরে করতেন না।
পরিচ্ছেদঃ ৪৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - খুতবাহ্ ও সালাত
১৪০৩-[৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচন্ড শীতের সময় জুমু’আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সকাল সকাল (প্রথম ওয়াক্তে) আদায় করতেন, আর প্রচন্ড গরমের সময় দেরী করে আদায় করতেন। (বুখারী)[1]
بَابُ الْخُطْبَةِ وَالصَّلَاةِ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا اشْتَدَّ الْبَرْدُ بَكَّرَ بِالصَّلَاةِ وَإِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ أَبْرَدَ بِالصَّلَاةِ. يَعْنِي الْجُمُعَةَ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে যা পাওয়া যায় তা হলোঃ নিশ্চয় এ বর্ণনাগুলো প্রমাণ করে যে, আনাস (রাঃ)-এর নিকট জুমু‘আর সালাতও বিলম্বে আদায় করা যায়। আর এটা যুহরের সালাতের উপর ক্বিয়াস বা অনুমান, এ ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ কোন নস বা দলীল নেই। কিন্তু অধিকাংশ হাদীস যুহর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) জুমু‘আহ্ থেকে ভিন্নতার উপর প্রমাণ করে এবং জুমু‘আর সালাত শীঘ্রই আদায় করার উপর প্রমাণ পাওয়া যায়।
ইবনু ক্বাতাদাহ্ আল মুগনীর (২য় খন্ড, ২৯৬ পৃঃ) উল্লেখ করেছেন যে, সূর্য ঢলার পর পরই গরমের তীব্রতা থাকা ও না থাকার মাঝে জুমু‘আর সালাত আদায় মুস্তাহাব হওয়ার ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই। সুতরাং যদি তারা গরমের তীব্রতা হ্রাসের জন্য অপেক্ষা করে, এটাই তাদের ওপর কষ্টকর হবে। এজন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই সূর্য ঢলে যেত তখনই জুমু‘আহ্ আদায় করতেন, শীত কিংবা গ্রীষ্মকালে তিনি একই সময়ে সালাত আদায় করতেন। আর তিনি (ইবনু কুদামাহ্) মুগনীর ১ম খন্ডের ৩৯০ পৃষ্ঠায় বলেছেনঃ সূর্য ঢলে পড়ার পর বিলম্ব না করে দ্রুততার সাথে জুমু‘আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করাটাই সুন্নাত। কেননা সালামাহ্ ইবনু আকওয়াহ্ (রাঃ) বলেনঃ আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জুমু‘আহ্ আদায় করেছি যখন সূর্য ঢলে যেত তখন। (বুখারী, মুসলিম)
পরিচ্ছেদঃ ৪৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - খুতবাহ্ ও সালাত
১৪০৪-[৪] সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবূ বকর (রাঃ) ও ’উমার (রাঃ)-এর খিলাফাতকালে জুমু’আর প্রথম আযান দেয়া হত ইমাম মিম্বারে বসলে। ’উসমান (রাঃ) খলীফা হবার পর, লোকের সংখ্যা বেড়ে গেলে তিনি যাওরা-এর উপর দ্বিতীয় আযান বাড়িয়ে দিলেন। (বুখারী)[1]
بَابُ الْخُطْبَةِ وَالصَّلَاةِ
وَعَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ: كَانَ النِّدَاءُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَوَّلُهُ إِذَا جَلَسَ الْإِمَامُ عَلَى الْمِنْبَرِ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ فَلَمَّا كَانَ عُثْمَانُ وَكَثُرَ النَّاسُ زَادَ النِّدَاءَ الثَّالِثَ عَلَى الزَّوْرَاء. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: যাওরা হলো মদীনার নিকটবর্তী একটি বাজার। ইমাম বুখারী তার জামিউস্ সহীহ-তে উল্লেখ করেছে। ইবনু খুয়ায়মাহ্ ও ইবনু মাজার বর্ণনায় রয়েছে,
زَادَ النِّدَاءَ الثَّالِثَ عَلى دَارٍ فِى السُّوْقِ يُقَالُ لَهَا الزَّوْرَاءُ.
অর্থাৎ তিনি তৃতীয় আযান বৃদ্ধি করলেন বাজারের প্রবেশ পথে, সেটাকে বলা হয় আয্ যাওরা, বুখারী ও অন্যান্য বর্ণনায় অনুরূপ রয়েছে। হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, বর্তমান মানুষ ‘উসমান (রাঃ)-এর কর্মই গ্রহণ করেছে সকল শহরে। কেননা এটি আনুগত্যশীল খলীফার কর্ম। কিন্তু আল ফা-কিহা-নী (রহঃ) উল্লেখ করেছেন যে, প্রথম আযান (জুমু‘আর দিনের ডাক আযান) মক্কায় আবিস্কার করেছেন হাজ্জাজ, এ বাসরাতে যিয়াদ ঢালু করেছেন। ইবনু আবী শায়বাহ্ ইবনু ‘উমারের সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি [ইবনু ‘উমার (রাঃ)] বলেনঃ জুমু‘আর দিনের প্রথম আযান (ডাক আযান) বিদ‘আত। হতে পারে এটা তিনি অনিহাবশতঃ বলেছেন এবং এমনও হতে পারে যে, তিনি উদ্দেশ্য করেছেন, নিশ্চয় সেটা (ডাক আযান) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় ছিল না। আর প্রত্যেক বিষয় যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় ছিল না তাই ‘বিদ‘আত।
সর্বোপরি কথা হলোঃ মির‘আত প্রণেতা বলেন, আজকের দিনে যখন কোন শহরে ‘উসমান (রাঃ)-এর চালুকৃত আযানের প্রয়োজন হবে, যেমন ‘উসমান (রাঃ)-এর সময় মদীনায় প্রয়োজন হয়েছিল তবে মসজিদের বাইরে কোন উঁচু স্থান যেমন মিনার কিংবা বাড়ীর ছাদ ইত্যাদিতে ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পূর্বেই আযান (ডাক আযান) দেয়ায় কোন দোষ নেই। যেমন ‘উসমান (রাঃ) দিয়েছিলেন। আর যদি কোন প্রয়োজন বা দরকার না থাকে তবে শুধু খুতবার আযানেই ক্ষ্যান্ত দিতে হবে। আর এ আযান খতীবের সামনে মিম্বারের নিকটে দেয়া সুন্নাহ সম্মত নয়। বরং মসজিদের দরজায় আযান দেয়াই সুন্নাত, যাতে যারা মসজিদে উপস্থিত হয়নি তারা উপকৃত হতে পারে। মসজিদের ভিতর মিম্বারের নিকট নয়। আবূ দাঊদের বর্ণনায় রয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মিম্বারে বসতেন তখন তার সামনে মসজিদের দরজার উপর আযান দেয়া হত।
পরিচ্ছেদঃ ৪৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - খুতবাহ্ ও সালাত
১৪০৫-[৫] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (জুমু’আর দিন) দু’টি খুতবাহ্ (ভাষণ) দিতেন। উভয় খুতবার মধ্যখানে তিনি কিছু সময় বসতেন। তিনি (খুতবায়) কিছু কুরআন তিলাওয়াত করতেন এবং লোকদেরকে উপদেশ শুনাতেন। সুতরাং তাঁর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ও খুতবাহ্ উভয়ই ছিল নাতিদীর্ঘ। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْخُطْبَةِ وَالصَّلَاةِ
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: كَانَتْ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خُطْبَتَانِ يَجْلِسُ بَيْنَهُمَا يقْرَأ الْقُرْآن وَيذكر النَّاس فَكَانَت صلَاته قصدا وخطبته قصدا. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে যিকর বলতে উপদেশ ও নাসীহাত উদ্দেশ্য। আর যা ভয়, আশা, উৎসাহ ও উদ্দীপনা আবশ্যক করে তাই যিকর। সেটার দ্বারা (আলোচ্য হাদীস) দলীল গ্রহণ করা যায় যে, খুতবায় উপদেশমূলক বক্তৃতা ও কুরআন তিলাওয়াত শারী‘আত সম্মত, এ ব্যাপারে কোন মতবিরোধ নেই, তবে আবশ্যকতা নিয়ে ‘উলামাগণের মাঝে মত-বিরোধ রয়েছে।
ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর মতে খুতবায় তিলাওয়াত ও ওয়াজ বা নাসীহাত শর্ত। আল্লামা নাবাবী (রহঃ) বলেন যে, ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেনঃ আল্লাহর প্রশংসা ও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ পাঠ এবং ওয়াজ বা নাসীহাত ছাড়া জুমু‘আর দু’ খুতবাহ্ বিশুদ্ধ হবে না। এ তিনটি জুমু‘আর দু’ খুতবার জন্য আবশ্যক এবং দু’য়ের একটিতে কুরআন তিলাওয়াত সর্বাধিক বিশুদ্ধ মতানুযায়ী আবশ্যক। আর দ্বিতীয় খুতবায় বিশ্ব মু’মিনদের জন্য দু‘আ করাও আবশ্যক। ইমাম মালিক, আবূ হানীফাহ্ ও জমহূরগণ বলেনঃ যতটুকু বিষয় খুতবাহ্ হিসেবে নামকরণ করা যায় তাই খুতবাহ্ হিসেবে যথেষ্ট হবে। আবূ হানীফাহ্, ইউসুফ ও মালিক (রহঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছেঃ হামদ, তাসবীহ ও তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ)-ই খুতবার জন্য যথেষ্ট। তবে এটা নিতান্তই দুর্বল মত। কেননা এটাকে খুতবাহ্ বলা যায় না এবং এর দ্বারা খুতবার চাহিদাও পূরণ হবে না।
তবে মির‘আত প্রণেতার মত অনুযায়ী অধিক বিশুদ্ধ মত হলো জুমু‘আর ক্ষেত্রে হামদ ও নাসীহাত ছাড়া কোন কিছুই ওয়াজিব নয়, কেননা সেটাকে খুতবাহ্ হিসেবে গণ্য করা যায় এবং খুতবার উদ্দেশ্য অর্জন হয়। এছাড়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পাঠ, কুরআন তিলাওয়াত ও মানুষদের জন্য দু‘আ করা খুতবার জন্য শর্ত ও ওয়াজিব কোনটি নয়।
কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবায় তিলাওয়াত করতেন, তা ওয়াজিব করেননি, কিন্তু তিলাওয়াত মুস্তাহাব হবে। যেমন উম্মু হিশাম (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ আমি সূরাহ্ আল ক্বাফ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখ থেকে (শ্রবণ করার মাধ্যমে) মুখস্থ করেছি। সেটার দ্বারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি জুমু‘আয় খুতবাহ্ দিতেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - খুতবাহ্ ও সালাত
১৪০৬-[৬] ’আম্মার (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তির দীর্ঘ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ও সংক্ষিপ্ত খুতবাহ্ (খুতবা) তার বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। তাই তোমরা সালাতকে লম্বা করবে, খুতবাকে খাটো করবে। নিশ্চয় কোন কোন ভাষণ যাদু স্বরূপ। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْخُطْبَةِ وَالصَّلَاةِ
وَعَنْ عَمَّارٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ طُولَ صَلَاةِ الرَّجُلِ وَقِصَرَ خُطْبَتِهِ مَئِنَّةٌ مِنْ فِقْهِهِ فَأَطِيلُوا الصَّلَاة واقصروا الْخطْبَة وَإِن من الْبَيَان سحرًا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (فَأَطِيْلُوا الصَّلَاة وَأَقْصِرُوا الْخُطْبَةَ) আল্লামা নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ أَقْصِرُوْا শব্দে হামযাহটি ওয়াসাল (যা বাক্যের মাঝে অনুচ্চারিত থাকে) এ হাদীসটি পূর্বে উল্লেখিত মাশহুর হাদীসগুলোর বিরোধী নয়, (সালাত সংক্ষেপকরণের ব্যাপারে আগত হাদীস) তার কথায় পূর্ণ বর্ণনায় রয়েছে।
কেননা ‘আম্মার (রাঃ) বর্ণিত হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলোঃ নিশ্চয় সালাত খুতবাহ্ অনুযায়ী দৈর্ঘ্য হবে (খুতবাহ্ দীর্ঘায়িত হলে সালাত সংক্ষিপ্ত ও খুতবাহ্ সংক্ষেপ হলে সালাত দীর্ঘায়িত) এমন দীর্ঘায়িত হবে না যাতে মুক্তাদীদের ওপর দুঃসাধ্য হয় এবং সেটা হবে মধ্যম পন্থা অবলম্বন (বেশী দীর্ঘ নয়, বেশী সংক্ষিপ্তও নয়)। ক্বারী (রহঃ) বলেনঃ উভয় হাদীসের মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই। কেননা জাবির (রাঃ)-এর হাদীস উভয়টির ব্যাপারে মধ্যম পন্থা অবলম্বনের উপর প্রমাণ করে। আর ‘আম্মার (রাঃ)-এর হাদীস দ্বিতীয়টি সংক্ষেপের উপর প্রমাণ করে। এরপর এ হাদীস মুসলিমে বর্ণিত আবূ যায়দ-এর বর্ণিত হাদীসের বিরোধী নয়। অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাথে ফাজ্রের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং মিম্বারে আরোহণ করলেন। অতঃপর তিনি যুহর পর্যন্ত খুতবাহ্ দিলেন, অতঃপর মিম্বার হতে নেমে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর মিম্বারে আরোহণ করে ‘আসর পর্যন্ত খুতবাহ্ দিলেন। এরপর নেমে সালাত আদায় করলেন তারপর আবার মিম্বারে আরোহণ করে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত খুতবাহ্ দিলেন। (আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন)
পরিচ্ছেদঃ ৪৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - খুতবাহ্ ও সালাত
১৪০৭-[৭] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুতবাহ্ (ভাষণ) দিতেন তাঁর দু’চোখ লাল হয়ে যেত, কণ্ঠস্বর হত সুউচ্চ, রাগ বেড়ে যেত। মনে হত তিনি কোন সামরিক বাহিনীকে এ বলে শত্রু হতে সতর্ক করে দিচ্ছেনঃ সকাল-সন্ধ্যায় তোমাদের ওপর শত্রু বাহিনী হানা দিতে পারে। তিনি খুতবায় বলতেন, আমাকে ও ক্বিয়ামাত (কিয়ামত)কে এভাবে পাঠানো হয়েছে। এ কথা বলে তিনি তাঁর তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলকে একত্র করে মিলিয়ে দেখালেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْخُطْبَةِ وَالصَّلَاةِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا خَطَبَ احْمَرَّتْ عَيْنَاهُ وَعَلَا صَوْتُهُ وَاشْتَدَّ غَضَبُهُ حَتَّى كَأَنَّهُ مُنْذِرُ جَيش يقولك: «صَبَّحَكُمْ وَمَسَّاكُمْ» وَيَقُولُ: «بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةُ كَهَاتَيْنِ» . وَيَقْرُنُ بَيْنَ إِصْبَعَيْهِ السَّبَابَةِ وَالْوُسْطَى. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা করতেন মানুষদের অন্তর থেকে উদাসীনতা দূর করার জন্য। যাতে তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) কথাগুলো যথাযথভাবে দৃঢ়তার সাথে ধারণ করতে পারে, অথবা নাসীহাতের দিকে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারে। আলোচ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণ পাওয়া যায় যে, খুতবার বিষয় সম্পর্কে মানুষকে সাবধান করা মুস্তাহাব এবং খুতবাহ্ বুলন্দ আওয়াজে দেয়া মুস্তাহাব।
(كَأَنَّه مُنْذِرُ جَيْشٍ) সে ব্যক্তি যে তার সম্প্রদায়কে আগত শত্রুর ভয় দেখায়, কিংবা যে তার সম্প্রদায়কে ভীতি প্রদর্শন করে যে, শত্রু অতি নিকটে এবং তারা আক্রমণের প্রস্ত্ততি নিচ্ছে। যেমন- একজন ভীতি প্রদর্শনকারী তার আওয়াজ উচ্চ করে, চক্ষু তার লাল হয়, স্বজাতির উদাসীনতায় প্রচন্ড রাগ করে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবস্থা ঠিক তেমনি, তার প্রত্যক্ষ দৃষ্টান্তঃ নিশ্চয় যখন وَأَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْأَقْرَبِيْنَ অর্থাৎ ‘‘আর তুমি সতর্ক কর তোমার নিকটাত্মীয় স্বজনদের’’- (সূরাহ্ আশ্ শু‘আরা ২৬ : ২১৪)- এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়, তখন তিনি সাফা পাহাড়ে আরোহণ করে তার স্বজাতির গোত্রদের নাম ধরে ডাকতে শুরু করলেনঃ হে ফিহর-এর বংশধর, হে ‘আদ-এর সন্তানেরা.....!
পরিচ্ছেদঃ ৪৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - খুতবাহ্ ও সালাত
১৪০৮-[৮] ইয়া’লা ইবনু উমাইয়্যাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বারে উঠে কুরআনের এ আয়াত পাঠ করতে শুনেছিঃ ’’জাহান্নামীরা (জাহান্নামের দারোগাকে) ডেকে বলবে, হে মালিক! (তুমি বলো) তোমার রব যেন আমাদের মৃত্যু ঘটিয়ে দেন’’- (সূরাহ্ আয্ যুখরুফ ৪৩: ৭৭)। অর্থাৎ তিনি খুতবায় জাহান্নামের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করতেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْخُطْبَةِ وَالصَّلَاةِ
وَعَنْ يَعْلَى بْنِ أُمَيَّةَ قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ عَلَى الْمِنْبَرِ: (وَنَادَوْا يَا مَالك ليَقْضِ علينا رَبك)
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে উল্লেখিত আয়াতে কারীমার অর্থ হলো কাফিররা জাহান্নামে দারোয়ানকে বলবে, তোমাদের প্রতিপালকের কাছে আমাদের ওপর নির্ধারিত ফায়সালা সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর, তারা বলবে এটা অধিক কষ্টের..... তাদের জবাবে বলা হবে, তোমরা চিরস্থায়ী। এখানে তাদের প্রতি এক ধরনের বিদ্রূপ প্রমাণ আলোচ্য হাদীসে প্রমাণিত হচ্ছে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - খুতবাহ্ ও সালাত
১৪০৯-[৯] উম্মু হিশাম বিনতু হারিসাহ্ ইবনুল নু’মান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কুরআন মাজীদের ’’সূরাহ্ ক্বাফ ওয়াল কুরআনিল মাজীদ’’ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখ থেকে শুনে শুনেই মুখস্থ করেছি। প্রত্যেক জুমু’আয় তিনি মিম্বারে উঠে খুতবার প্রাক্কালে এ সূরাহ্ পাঠ করতেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْخُطْبَةِ وَالصَّلَاةِ
وَعَنْ أُمِّ هِشَامٍ بِنْتِ حَارِثَةَ بْنِ النُّعْمَانِ قَالَتْ: مَا أَخَذْتُ (ق. وَالْقُرْآنِ الْمَجِيدِ)
إِلَّا عَنْ لِسَانِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَؤُهَا كُلَّ جُمُعَةٍ عَلَى الْمِنْبَرِ إِذَا خطب النَّاس. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে দলীল হলোঃ প্রতিটি জুমু‘আর খুতবায় সূরাহ্ ক্বাফ তিলাওয়াত করা শারী‘আত সম্মত। ‘উলামাগণ বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ সূরাহ্ খুতবায় তিলাওয়াতের জন্য পছন্দ করার কারণ হলোঃ এ সূরায় পুনরুত্থান, মৃত্যু, উপদেশ ও ধমক প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা রয়েছে এবং এখানে খুতবায় কুরআন তিলাওয়াতের প্রমাণ রয়েছে। তবে ইজমা রয়েছে যে, খুতবায় উল্লেখিত সূরাহ্ কিংবা তার কোন অংশ তিলাওয়াত করা ওয়াজিব নয়। তবে মুস্তাহাবের ক্ষেত্রে কোন বিতর্ক নেই।
পরিচ্ছেদঃ ৪৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - খুতবাহ্ ও সালাত
১৪১০-[১০] ’আমর ইবনু হুরায়স (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু’আর দিনে খুতবাহ্ দিলেন। তখন তাঁর মাথায় ছিল কালো পাগড়ী। পাগড়ীর দু’মাথা তাঁর দু’কাঁধের মাঝখানে ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْخُطْبَةِ وَالصَّلَاةِ
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ حُرَيْثٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطَبَ وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ سَوْدَاءُ قَدْ أَرْخَى طَرَفَيْهَا بَيْنَ كَتِفَيْهِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এখানে খুতবায় কালো পোশাক পরিধান করার বৈধতা রয়েছে, যদি সাদা পোশাক কালো পোশাক অপেক্ষা উত্তম। যেমন সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, তোমাদের উত্তম পোশাক হলো সাদা পোশাক। তবে খতীবগণ খুতবায় কালো পোশাক পরলে তা বৈধ। কিন্তু সাদা পোশাক উত্তম। যেমন আমরা উল্লেখ করেছি। এ হাদীসে কালো পাগড়ী পরিধানের বর্ণনাটি বৈধতার ক্ষেত্রে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - খুতবাহ্ ও সালাত
১৪১১-[১১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবাহ্ দেয়ার সময় বলেছেনঃ তোমাদের কেউ জুমু’আর দিন ইমামের খুতবাহ্ চলাকালে মসজিদে উপস্থিত হলে সে যেন সংক্ষেপে দু’ রাক্’আত (নফল) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে নেয়। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْخُطْبَةِ وَالصَّلَاةِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم وَهُوَ يخْطب: «إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ فليركع رَكْعَتَيْنِ وليتجوز فيهمَا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এখানে আদেশটি মুস্তাহাবের জন্য। এ হাদীসের দলীল হলো যে, জুমু‘আর দিনে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ শারী‘আত সম্মত এবং ইমামের খুতবাহ্ চলা অবস্থায়ও তা আদায় করা মুস্তাহাব এবং হাসান, ইবনু ‘উয়াইনাহ্, শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক্ব, মাকহূল, আবূ সাওর ও ইবনুল মুনযির (রহঃ) প্রমুখগণ এ মতই গ্রহণ করেছেন, ইমাম নাবাবী ফকীহ মুহাদ্দিসীনদের থেকে বর্ণনা করেছেন।
এখানে দলীল হলোঃ খুতবাহ্ চলা অবস্থায় তাহিয়্যাতুল মাসজিদ খুতবাহ্ শ্রবণের সাথে সংক্ষেপ হওয়া উচিত। তবে তা খুতবাহ্ চলা অবস্থায় আদায় করা যে শারী‘আত সম্মত এতে কোন দ্বিমত নেই। এ হাদীস ইমাম মালিক ও আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর বিরুদ্ধ দলীল; তাদের মত হলো খুতবাহ্ চলা অবস্থায় তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করা নিষিদ্ধ এবং তাদের অনুসারীগণ এ হাদীসের জবাবও দিয়েছেন যে,
আলোচ্য হাদীস আল্লাহ তা‘আলার কথার ‘‘যখন কুরআন তিলাওয়াত করা হয় তখন তোমরা তা শোন এবং নীরব থাকো’’- (সূরাহ্ আল আ‘রাফ ৭ : ২০৪) সাথে সাংঘর্ষিক এবং ত্ববারানীর বর্ণনায় ইবনু ‘উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত রয়েছে যে, ইমামের খুতবাহ্ চলা অবস্থায় যদি তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তবে ইমামের খুতবাহ্ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ও কথা বলা যাবে না।
তার জবাবে বলা যায় যে, প্রথমতঃ আয়াতের ক্ষেত্রেঃ সমস্ত খুতবাটি কুরআন নয়, তাতে যা রয়েছে তা কুরআনের কিছু অংশ, সুতরাং তার জবাব হাদীসের জবাবের অনুরূপ আর তা হলো মসজিদে প্রবেশের সাথে খাস। দ্বিতীয়তঃ হাদীসের ক্ষেত্রঃ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস য‘ঈফ, তাতে আইয়ূব ইবনু নাহীক তিনি মুনকার। তবে এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদীসগুলোর মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই। অনুরূপ বিবরণ ফাতহুল বারীতেও রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - খুতবাহ্ ও সালাত
১৪১২-[১২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইমামের সাথে সালাতের এক রাক্’আত পেল, সে যেন পূর্ণ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পেল। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْخُطْبَةِ وَالصَّلَاةِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الصَّلَاةِ مَعَ الإِمَام فقد أدْرك الصَّلَاة كلهَا
ব্যাখ্যা: (مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الصَّلَاةِ) ইবনু মালিক (রহঃ) বলেন, আলোচ্য হাদীসে উল্লেখিত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দ্বারা সালাতুল জুমু‘আহ্ উদ্দেশ্য। আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ এটি জুমু‘আর সাথে খাস এবং এ দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। আল বাগাবী (রহঃ) এবং এ দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচ্য হাদীস তিনি সালাতুল জুমু‘আহ্ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। তবে মা‘মার এর বর্ণনায় রয়েছে যে, আলোচ্য হাদীসের صلاة (সালাত) শব্দটি মুত্বলাক্ব, তাতে জুমু‘আহ্ ও অন্যান্য সালাত সম্পৃক্ত।
মির্‘আত প্রণেতা বলেনঃ হাকিম (রহঃ) আওযা‘ঈ এবং ‘উসামাহ্ ইবনু যায়দ আল লায়সী, মালিক ইবনু আনাস (রাঃ), সালিহ ইবনু আবিল আখযার থেকে, তারা প্রত্যেকে যুহরী থেকে জুমু‘আর সালাতের ব্যাপারে পূর্ণ নাস (বক্তব্য) হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে আলোচ্য হাদীসের মুত্বলাক্ব শব্দটি ‘‘সালাতুল জুমু‘আহ্’’-কেই নির্দেশ করছে যে, ইমামের সাথে জুমু‘আর এক রাক্‘আত পাওয়া পূর্ণ জুমু‘আহ্ পাওয়া। অতঃপর তা (বাকী অংশ) আদায় করা আবশ্যক এবং এটাই অধিকাংশ বিদ্বানদের মত যথাক্রমে ইবনু মাস‘ঊদ, ইবনু ‘উমার (রাঃ), আনাস (রাঃ), ইবনুল মুসাইয়্যাব, হাসান, যুহরী, নাখ্‘ঈ, মালিক, সাওরী, শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক্ব, আবী আস্ সাওর ও আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) প্রমুখগণ। তবে ‘আত্বা, তাউস, মুজাহিদ ও মাকহূল (রহঃ) বলেনঃ যে খুতবাহ্ না পাবে সে যুহরের চার রাক্‘আত আদায় করবে। কেননা জুমু‘আর জন্য খুতবাহ্ শর্ত। তবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা খুতবাহ্ শর্তের উপর কোন প্রমাণ নেই। ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ, মালিক ও মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেনঃ যে ইমামের সাথে পূর্ণ রাক্‘আত পাবে না বরং সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) কিংবা তাশাহুদ পাবে সে জুমু‘আহ্ পাবে না, তাকে চার রাক্‘আত যুহর আদায় করতে হবে। তিনি বলেনঃ ইমামের সালাম ফিরানোর পর যুহর আদায় করতে হবে এবং ইমামের পিছনে তার আনুগত্যের জন্য জুমু‘আর নিয়্যাত করতে হবে।
ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেনঃ আলোচ্য হাদীসটি মুত্বলাক্ব, যা সকল সালাতের হুকুমের ফায়দা দিবে। আর অন্য সকল সালাতের হুকুম হলোঃ ইমামের সাথে সালাতে কিছু অংশ যখন পাবে, এমনকি যদি তাশাহুদও পাওয়া যায় তবে ততটুকু ইমামের সাথে আদায় করতে হবে এবং অবশিষ্ট সালাত আদায় করে নিতে হবে।
মির‘আত প্রণেতা বলেন, প্রাধান্য ও গ্রহণযোগ্য মত হলোঃ আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতঃ যে ব্যক্তি ইমামের সাথে জুমু‘আর সালাতের কিছু অংশ পাবে, যদি তাশাহুদও পেয়ে থাকে তবে ইমামের সাথে তাই আদায় করতে হবে। বাকী সালাত সালামের পর আদায় করতে হবে, যুহর আদায় করা যাবে না। কেননা (তোমরা যতটুকু পাবে তা আদায় করে নাও, আর যা ছুটে যাবে তা পূর্ণ করে নাও) হাদীসটি মুত্বলাক্ব অর্থাৎ যতটুকু ইমামের সাথে পাওয়া যায় এমনকি যদি শুধু সালামও পাওয়া যায় তবুও জুমু‘আহ্ আদায় হবে।
আর ইমাম শাফি‘ঈ যে মত ব্যক্ত করেছেন সে ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস পাইনি, যা তার কথার উপর দলীল হয়।