পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮০১-[২৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একাধারে দশ বছর নবী (সা.) -এর সেবা করেছি। কিন্তু তিনি কোন দিন ’উহ’ শব্দটি পর্যন্ত আমাকে বলেননি। এমনকি এ কাজটি কেন করেছ আর এটা কেন করনি? এমন কথাও কোন দিন বলেননি। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
عَنْ أَنَسٍ قَالَ: خَدَمْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرَ سِنِينَ فَمَا قَالَ لِي: أُفٍّ وَلَا: لِمَ صَنَعْتَ؟ وَلَا: أَلَّا صَنَعْتَ؟ مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6038) و مسلم (51 / 2309)، (6011) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: সহীহ মুসলিম-এর এক বর্ণনায় ৯ বছরের কথাও এসেছে। অত্র হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর খিদমাত করার প্রতি কত বেশি মনোযোগী ছিলেন। তিনি অত্যন্ত আদবের সাথে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর খিদমাত করতেন, যে কারণে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর প্রতি খুশি ছিলেন। আর তাকে কখনও তিনি ধমক দেননি বা তাঁর প্রতি তিনি কখনও বিরক্ত হননি। মূলত হাদীসটিতে আনাস (রাঃ)-এর প্রশংসা ফুটে উঠেছে। এ হাদীসে খিদমাতের আদব শিক্ষা দেয়া হয়েছে। একজন ছাত্র কিভাবে তার শিক্ষককে সম্মান জানাবে, সম্মানিত ব্যক্তিকে কিভাবে সম্মান করতে হবে তা অত্র হাদীসে ফুটে উঠেছে। হাদীসটি দ্বারা এটাও বুঝা যায় যে, নবী (সা.) -এর চরিত্র কত সুন্দর ছিল। তিনি কোনদিন কারো প্রতি যুলম করেননি। তাঁর আচরণে কেউ যেন মনে কষ্ট না পায় সেদিকে তিনি (সা.) খুবই খেয়াল রাখতেন। (সম্পাদকীয়)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮০২-[২৭] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সবচেয়ে উত্তম চরিত্রের মানুষ। একদিন তিনি (সা.) কোন এক কাজে আমাকে পাঠাতে চাইলেন। তখন আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! আমি যাব না। কিন্তু আমার মনের মাঝে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে যে কাজের জন্য আদেশ করেছেন, আমি সে কাজে অবশ্যই যাব। অতঃপর আমি বের হয়ে এমন কিছু বালকদের কাছে এসে পৌছলাম যারা বাজারের মধ্যে খেলাধুলা করছিল। এমন সময় হঠাৎ রাসূলুল্লাহ (সা.) গিয়ে পিছন হতে আমার ঘাড় চেপে ধরলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তিনি হাসছেন। তখন তিনি (সা.) স্নেহের সুরে বললেন, হে উনায়স! যে কাজের জন্য আমি তোমাকে আদেশ করেছিলাম সেখানে কি তুমি গিয়েছিলে? উত্তরে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এই তো আমি এক্ষুণি যাচ্ছি। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَنْهُ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَحْسَنِ النَّاسِ خُلُقًا فَأَرْسَلَنِي يَوْمًا لِحَاجَةٍ فَقُلْتُ: وَاللَّهِ لَا أَذْهَبُ وَفِي نَفْسِي أَنْ أَذْهَبَ لِمَا أَمَرَنِي بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَخَرَجْتُ حَتَّى أَمُرَّ عَلَى صِبْيَانٍ وَهُمْ يَلْعَبُونَ فِي السُّوقِ فَإِذَا بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ قَبَضَ بِقَفَايَ مِنْ وَرَائِي قَالَ: فَنَظَرْتُ إِلَيْهِ وَهُوَ يَضْحَكُ فَقَالَ: «يَا أُنَيْسُ ذَهَبْتَ حَيْثُ أَمَرْتُكَ؟» . قُلْتُ: نَعَمْ أَنَا أَذْهَبُ يَا رَسُول الله. رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (54 / 2310)، (6015) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর খিদমাত করার সময় তাঁর বয়স অল্প ছিল। তাই তিনি মৌখিকভাবে বলেন, আল্লাহর কসম! আমি এখন এ কাজটি করতে পারবো না, তিনি পরে করার ইচ্ছা রাখেন। আর এ কথা বুঝা যায় তাঁর কথা থেকে তা হলো “আর আমার মনে আছে” আমি যাব যে কাজের জন্য নবী (সা.) আমাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা পালন করার জন্য।
(أنيس) শব্দটি (أنس) শব্দের তাসগীর বা ক্ষুদ্রত্ববাচক। রাসূলুল্লাহ (সা.) আনাস (রাঃ)-কে তাঁর আসল নামে সম্ভোধন না করে এর পরিবর্তে এ নামের তাসগীর-এর মাধ্যমে সন্মোধন করেছেন, যা তাঁর জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্নেহ ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮০৩-[৩] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে পথ চলছিলাম। তাঁর দেহে ছিল মোটা পাড়ের একখানা নাজরানী চাদর, বেদুঈন চাদর ধরে জোরে টান দিল। টানের চোটে নবী (সা.) উক্ত বেদুইনের বক্ষের কাছে এসে পড়লেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাঁধের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে দেখলাম, সে জোরে টানার কারণে তার কাঁধে চাদরের ডোরার ছাপ পড়ে গেছে। অতঃপর বেদুঈনটি বলল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ তা’আলার যে সকল ধন-সম্পদ তোমার কাছে আছে, তা হতে আমাকে কিছু দেয়ার নির্দেশ দাও। এ সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) তার দিকে ফিরে তাকিয়ে হেসে ফেললেন। এরপর তাকে কিছু দেয়ার নির্দেশ দান করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَنْهُ قَالَ: كُنْتُ أَمْشِي مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَيْهِ بُرْدٌ نَجْرَانِيٌّ غَلِيظُ الْحَاشِيَةِ فَأَدْرَكَهُ أَعْرَابِيٌّ فجبذه جَبْذَةً شَدِيدَةً وَرَجَعَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي نَحْرِ الْأَعْرَابِيِّ حَتَّى نَظَرْتُ إِلَى صَفْحَةِ عَاتِقِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ أثرت بِهِ حَاشِيَةُ الْبُرْدِ مِنْ شِدَّةِ جَبْذَتِهِ ثُمَّ قَالَ: يَا مُحَمَّدُ مُرْ لِي مِنْ مَالِ اللَّهِ الَّذِي عنْدك فَالْتَفَتَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ ضَحِكَ ثُمَّ أَمَرَ لَهُ بِعَطَاءٍ. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3149) و مسلم (128 / 1057)، (2429) ۔
(صَحِيحٍ)
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীস হতে শিক্ষা পাওয়া যায় যে, জাহিলদের মুকাবালা না করে তাদেরকে এড়িয়ে যাওয়া ভালো। আর মন্দ কাজকে ভালো কাজ দ্বারা পরিবর্তন করতে হয়। আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করা হচ্ছে তাদেরকে দান করা। কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি যে তার শাস্তি সম্পর্কে অবহিত নয় তাকে ক্ষমা করে দেয়া। (শারহুন নাবাবী হা. ১৩০/১৩১)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮০৪-[8] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) লোকেদের মাঝে সকলের চেয়ে সুন্দরতম, সর্বাপেক্ষা দানশীল এবং সকলের চেয়ে বেশি সাহসী ছিলেন। একরাত্রে মদীনাবাসী (কোন শব্দ শুনে) ভীষণ ভয় পেয়েছিল। এতে লোকজন সেই আওয়াজের দিকে ছুটে চলল, তখন নবী (সা.) - কে তাদের সামনে পেল। সকলের আগে তিনি (সা.) সেই আওয়াজের দিকে পৌঁছে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি (সা.) বলতে লাগলেন, তোমরা ভয় করো না, তোমরা ভয় করো না। তখন তিনি (সা.) আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ)-এর একটি ঘোড়ার খালি পিঠে জিন-পোষ ছাড়াই আরোহণ করেছিলেন। তার গলায় ঝুলছিল একখানা তলোয়ার। এরপর তিনি (সা.) বললেন, আমি এ ঘোড়াটিকে দরিয়ার মতো পেয়েছি। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَنْهُ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحْسَنَ النَّاسِ وَأَجْوَدَ النَّاسِ وَأَشْجَعَ النَّاسِ وَلَقَدْ فَزِعَ أَهْلُ الْمَدِينَةِ ذَاتَ لَيْلَةٍ فَانْطَلَقَ النَّاسُ قِبَلَ الصَّوْتِ فَاسْتَقْبَلَهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ سَبَقَ النَّاس إِلَى الصَّوْت هُوَ يَقُولُ: «لَمْ تُرَاعُوا لَمْ تُرَاعُوا» وَهُوَ عَلَى فَرَسٍ لِأَبِي طَلْحَةَ عُرْيٍ مَا عَلَيْهِ سَرْجٌ وَفِي عُنُقِهِ سَيْفٌ. فَقَالَ: «لَقَدْ وَجَدْتُهُ بَحْرًا» . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6033) و مسلم (48 / 2307)، (6006) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) - সকলের চেয়ে সুন্দরতম ছিলেন অর্থাৎ সৃষ্টির ও চরিত্রের দিক থেকে, আকৃতির দিক থেকে ও জীবনীর দিক থেকে, বংশমর্যাদার দিক থেকে ও ব্যক্তিত্বের দিক থেকে, জীবনযাপনের দিক থেকে ও সাথী হওয়ার দিক থেকে। তিনি দানশীলতার দিক থেকেও সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। “আর তিনি ছিলেন সবচেয়ে বীর পুরুষ” অর্থাৎ তিনি শক্তি ও হৃদয়ের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। তাঁর ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন -
(فَقَاتِلۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ ۚ لَا تُکَلَّفُ اِلَّا نَفۡسَکَ وَ حَرِّضِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۚ) “অতএব তুমি আল্লাহর রাস্তায় লড়াই কর। তুমি শুধু তোমার নিজের ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং মু'মিনদেরকে উদ্বুদ্ধ কর”- (সূরা আন নিসা ৪: ৮৪)। অর্থাৎ মু'মিনদেরকে যুদ্ধের ব্যাপারে উৎসাহিত করুন। এ কারণেই তিনি (সা.) খচ্চরের উপর আরোহণ করেন। আর তার সাথে কেউ আক্রমণ করেনি। তিনি (সা.) একাই সেখানে গিয়েছিলেন। আর ফিরে এসে তার সাহাবীদেরকে এ সংবাদ প্রদান করেন যে, সেখানে ভীতিকর কিছু ঘটেনি। আমি সেখান থেকে মাত্র আসলাম। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮০৫-[৫] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে যখনই কোন জিনিস চাওয়া হয়েছে, তিনি কখনো না বলেননি। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: مَا سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا قَطُّ فَقَالَ: لَا. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6034) و مسلم (56 / 2311)، (6018) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: কেউ কোন কিছু চাইলে তিনি তাকে তা দিয়ে দিতেন, অথবা অন্য কোনভাবে তাকে বুঝিয়ে তার জন্য দু'আ করতেন অথবা তাকে দেয়ার জন্য অঙ্গীকার করতেন। যেমনটি মহান আল্লাহ বলেন -
(وَ اِمَّا تُعۡرِضَنَّ عَنۡهُمُ ابۡتِغَآءَ رَحۡمَۃٍ مِّنۡ رَّبِّکَ تَرۡجُوۡهَا فَقُلۡ لَّهُمۡ قَوۡلًا مَّیۡسُوۡرًا) “আর যদি তুমি তাদের থেকে বিমুখ থাকতেই চাও তোমার রবের পক্ষ থেকে রহমতের প্রত্যাশায় যা তুমি চাচ্ছ, তাহলে তাদের সাথে নম্র সহজ কথা বলবে।” (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭ : ২৮)
ইমাম বুখারী (রহিমাহুল্লাহ) ‘আল আদবুল মুফরাদ' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) - অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন। তাঁর কাছে যেই চাওয়ার জন্য আসত তিনি তাকে দেয়ার অঙ্গীকার করতেন। আর তার কাছে তা থাকলে তাকে পরিপূর্ণভাবে তা দিয়ে দিতেন। আর তিনি বলতেন, হে বিলাল! তুমি দান করো। আর এ ব্যাপারটা কথিত আছে যে, বিলাল! তুমি আরশের মালিকের কাছে নিঃস্ব হওয়ার ভয় করো না। আনাস (রাঃ) থেকে হাকিম বর্ণনা করেছেন- কোন ব্যক্তি তার কাছে কোন কিছু চাইলে তিনি (সা.) তাকে দিতেন না হলে চুপ থাকতেন।' (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮০৬-[৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক লোক নবী (সা.) -এর কাছে এতগুলো বকরি চাইল, যাতে দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী নিম্নভূমি পূর্ণ হয়ে যায়। তখন তিনি (সা.) তাকে সে পরিমাণ বকরিই দিয়ে দিলেন। অতঃপর লোকটি নিজ সম্প্রদায়ের কাছে এসে বলল, হে আমার সম্প্রদায়ের লোকসকল! তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। কেননা মুহাম্মাদ (সা.) এত বেশি পরিমাণে দান করেন যে, তিনি অভাবকে ভয় করেন না। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَن أنس إِنَّ رَجُلًا سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم غَنَمًا بَيْنَ جَبَلَيْنِ فَأَعْطَاهُ إِيَّاهُ فَأَتَى قَوْمَهُ فَقَالَ: أَي قوم أَسْلمُوا فو الله إِنَّ مُحَمَّدًا لَيُعْطِي عَطَاءً مَا يَخَافُ الْفَقْرَ. رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (58 / 2312)، (6021) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: যখন লোকটি এত ছাগল চাইল যাতে দুই পাহাড়ের মাঝের নিম্নভূমি ভরে যায়, তারপরও নবী (সা.) তাকে তার চাওয়া পরিমাণ দিলেন। এতে লোকটি আশ্চর্যান্বিত হলো রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর দান ও তার দুনিয়াবিমুখতা লক্ষ্য করে। তাই সে তার জাতির কাছে এসে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম কবুল কর, কারণ ইসলাম তোমাদেরকে সুন্দর চরিত্র শিক্ষা দিবে। আর তোমরা যদি ইসলাম কবুল কর তবে মুহাম্মাদ (সা.) তোমাদেরকে এমন দান করবেন যার পর তোমরা আর দরিদ্র হয়ে যাওয়ার ভয় করবে না। এখানে রাসূলুল্লাহ (সা.)! তাদেরকে দান করার হিকমাত হলো সাধারণত মানুষ দারিদ্রতার ভয় করে। আর শয়তান মানুষকে দারিদ্রতার ভয় দেখায়। সূরাহ্ আল বাকারার ২৬৮ নং আয়াতে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন, শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্রতার ভয় দেখায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮০৭-[৭] জুবায়র ইবনু মুত্ব’ইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। হুনায়নের যুদ্ধ হতে ফিরার সময় তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে সফর করছিলেন। এক সময় পথে কিছু সংখ্যক গ্রাম্য ’আরব বেদুঈন তাকে জড়িয়ে ধরল এবং তাদেরকে কিছু দেয়ার জন্য ’আবদার করতে থাকল। পরিশেষে তারা তাঁকে একটি বাবলা গাছের নীচে যেতে বাধ্য করল। এমনকি তার কাঁটা হতে চাদরখানা ছাড়িয়ে দাও। যদি এখন আমার কাছে এ কাটা-গাছগুলোর সমসংখ্যক উট ও দুম্বা থাকত, তাহলে আমি সেগুলো তোমাদের মধ্যে বণ্টন করে দিতাম। এরপর তোমরা বুঝতে পারতে যে, আমি কৃপণ বৈশিষ্ট্যের নই, মিথ্যাবাদী নই এবং কাপুরুষও নই। (বুখারী)।
الفصل الاول (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَنْ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ بَيْنَمَا هُوَ يَسِيرُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقْفَلَهُ مِنْ حُنَيْنٍ فَعَلِقَتِ الْأَعْرَابُ يَسْأَلُونَهُ حَتَّى اضْطَرُّوهُ إِلَى سَمُرَةٍ فَخَطَفَتْ رِدَاءَهُ فَوَقَفَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَعْطُونِي رِدَائِي لَوْ كَانَ لِي عَدَدَ هَذِهِ الْعِضَاهِ نَعَمٌ لَقَسَمْتُهُ بَيْنَكُمْ ثُمَّ لَا تَجِدُونِي بَخِيلًا وَلَا كذوباً وَلَا جَبَانًا» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (2821) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: যখন তারা রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল তখন তার গায়ের চাদরটি বাবলা গাছের সাথে জড়িয়ে গেলে তিনি তা ছাড়িয়ে তার কাছে দেয়ার জন্য সহযোগিতা চাইলেন। আর বললেন, যদি আমার কাছে এই গাছের কাঁটা-গাছগুলোর সমপরিমাণ উট ও ছাগল বিশেষ করে উট থাকত তবে আমি তা তোমাদেরকে দিয়ে দিতাম। মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা মহান আল্লাহর বাণীর দিকে ফিরে, তা হলো- মহান আল্লাহ বলেন, (مِّنَ الۡاَنۡعَامِ ثَمٰنِیَۃَ اَزۡوَاجٍ) “চতুষ্পদ জন্তু হতে আট প্রকারের”- (সূরাহ্ আয যুমার ৩৯ : ৬)। এখানে আট প্রকারের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো উট, গরু, ভেড়া ও ছাগল। আর এদের প্রত্যেক প্রকারের নারী ও পুরুষ।
(ثُمَّ لَا تَجِدُونِي بَخِيلًا) অর্থাৎ তোমরা আমাকে দানের ক্ষেত্রে কৃপণ পেতে না। আর তোমরা দেখতে পেতে যে অঙ্গীকার পূরণে আমার স্বভাব কেমন। আর কেমন আমার ভরসা আসমান জমিনের রবের প্রতি।
(وَلَا كذوباً وَلَا جَبَانًا) মুযহার (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ যখন তোমরা আমাকে কোন ঘটনাস্থলে পরীক্ষা করবে তখন আমার মাঝে কোন খারাপ স্বভাব পাবে না। আর এখান থেকে বুঝা যায় যে, যে ব্যক্তি পরিচয় হতে অজ্ঞাত, তার কাছে নিজের উত্তম গুণাবলি ও সঠিক পরিচিতি প্রকাশ করা শুধু বৈধ নয়; বরং ক্ষেত্রবিশেষ অপরিহার্য। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি ঐ দান করতে বাধ্য নই বরং আমি তা খুশি মনে প্রদান করি। আর আমি কোন মিথ্যা কথা তোমাদেরকে বলি না অর্থাৎ তোমাদেরকে কোন জিনিস দিতে চেয়ে দেব না; এমনি আমি করি না। আর আমি কাপুরুষ নই যে, কাউকে ভয় পাব। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮০৮-[৮] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন ফজরের সালাত আদায় করে অবসর হতেন, তখন মদীনাবাসীদের সেবকরা (দাস-দাসী) পানি ভরা পাত্র নিয়ে সেখানে উপস্থিত হত। তিনি (সা.) তাদের আনিত যে কোন পাত্রে স্বীয় হাত ডুবিয়ে দিতেন। তারা কখনো কখনো শীতকালে ভোরে আসত, তখন তিনি তাতে হাত ডুবিয়ে দিতেন। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى الْغَدَاةَ جَاءَ خَدَمُ الْمَدِينَةِ بِآنِيَتِهِمْ فِيهَا الْمَاءُ فَمَا يَأْتُونَ بإناءٍ إِلَّا غمسَ يدَه فِيهَا فرُبما جاؤوهُ بِالْغَدَاةِ الْبَارِدَةِ فَيَغْمِسُ يَدَهُ فِيهَا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
رواہ مسلم (74 / 2324)، (6042) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) ও যখন ফজরের সালাত শেষ করতেন তখন মদীনার দাস-দাসীরা তাদের পানির পাত্র নিয়ে আসত। অর্থাৎ তারা এ কাজ করত বারাকাতের আশায়, বৃদ্ধি পাওয়ার আশায়, আরোগ্য লাভের আশায় ও রোগ মুক্তির আশায়। তারা পানির পাত্র আনলে তিনি (সা.) তাতে হাত ডুবিয়ে দিতেন। অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ও তাদেরকে খুশি করার জন্য। কখনো কখনো তারা শীতকালেও খুব সকালে চলে আসত। তারপরও নবী (সা.) তাদের পাত্রে হাত ডুবিয়ে দিতেন। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ থেকে বুঝা যায় যে, তিনি মানুষকে খুশি করার জন্য নিজের কষ্টকে সহ্য করতেন। বিশেষ করে দাস-দাসী ও খাদিমদেরকে খুশি করার জন্য। তাদের পাত্রসমূহে তাঁর হাত মুবারক প্রবেশ করাকে তারা বরকত লাভের মাধ্যম মনে করত। এখান থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, তিনি দুর্বলদের প্রতি কেমন সদয় ছিলেন। তাদের প্রতি কত দয়াশীল ছিলেন। ইবনু আসাকির-এর বর্ণনায় এসেছে, আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, নবী (সা.) মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশি দয়াশীল ছিলেন ছোটদের ও দুর্বলদের প্রতি। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি (সা.) খাদিমদের বলতেন, তোমার কোন কিছু দরকার আছে কি? (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮০৯-[৯] উক্ত বর্ণনাকারী [আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদীনাবাসীদের বাঁদিদের মধ্যে এমন একটি বাদি ছিল, যে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাত ধরে যেথায় ইচ্ছা সেথায় নিয়ে যেত। (বুখারী)
الفصل الاول (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَنْهُ قَالَ: كَانَتْ أَمَةٌ مِنْ إِمَاءِ أَهْلِ الْمَدِينَةِ تَأْخُذُ بِيَدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَنْطَلِقُ بِهِ حَيْثُ شَاءَتْ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (6072) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: বলা হয়ে থাকে, এখানে হাত ধরা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তার সংস্পর্শে থাকতেন, তা হলো- তার সাথে তার বন্ধুত্ব। “সে তার সাথে যেখানে ইচ্ছা যেত” অর্থাৎ যখন নবী (সা.) মদীনার বাইরে যেতেন সেও মদীনার বাইরে যেতেন। এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, সৃষ্টির প্রতি নবী (সা.) -এর দয়া ও সহানুভুতি কত বেশি ছিল। তিনি (সা.) সকলের প্রতি ইনসাফ করেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮১০-[১০] উক্ত বর্ণনাকারী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। একদিন এমন একটি মহিলা- যার মাথায় কিছুটা সমস্যা ছিল, সে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার সাথে আমার একটু প্রয়োজন আছে। উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, হে অমুকের মা! যে গলিতেই তুমি আমাকে নিয়ে যেতে চাও, আমি তোমার কাজের জন্য সেথায় যেতে প্রস্তুত আছি। অতঃপর রাসূল (সা.) মহিলাটির সাথে কোন এক পথের পার্শ্বে নিরালায় কথাবার্তা বললেন, এমনকি সে তার প্রয়োজন সমাধা করে চলে গেল। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَنْهُ أَنَّ امْرَأَةً كَانَتْ فِي عَقْلِهَا شَيْءٌ فَقَالَت: يَا رَسُول الله إِنِّي لِي إِلَيْكَ حَاجَّةً فَقَالَ: «يَا أُمَّ فُلَانٍ انْظُرِي أَيَّ السِّكَكِ شِئْتِ حَتَّى أَقْضِيَ لَكِ حَاجَتَكِ» فَخَلَا مَعَهَا فِي بَعْضِ الطُّرُقِ حَتَّى فرغت من حَاجَتهَا. رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (76 / 2326)، (6044) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসটিও রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর উত্তম চরিত্রের প্রমাণ বহনকারী। যখন হালকা বুদ্ধির মহিলাটি এসে নবী (সা.) -এর সাথে নির্জনে কথা বলতে চাইল তখন নবী (সা.) তাকে বললেন, ঠিক আছে! তমি চিন্তা করে বল কোন জায়গায় তুমি তোমার কথা বললে তোমার প্রয়োজন পূর্ণ হবে। তখন সে মহিলা তাকে কোন গলি পথের দিকে নিয়ে গেল। এখানে এসে নবী (সা.) তার সাথে দাঁড়িয়ে কথা শুনলেন আর তার প্রশ্নের উত্তর দিলেন। আর এখান থেকে বুঝা যায় যে, কোন মহিলার সাথে কোন ঘরে নির্জনতা অবলম্বন করা আর কোন গলি রাস্তায় নির্জনতা অবলম্বন করা একই বিষয় নয়। আর এটারও সম্ভাবনা আছে যে, সুন্দর আদব পর্যবেক্ষণের জন্য সেখান থেকে দূরে কিছু সাহাবী দাঁড়িয়ে ছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮১১-[১১] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) অশালীন বাক্য উচ্চারণকারী, লা’নাতকারী এবং গালিগালাজকারী ছিলেন না। তিনি (সা.) যখন কারো প্রতি অসন্তুষ্ট হতেন, তখন কেবল এতটুকুই বলতেন যে, তার কি হলো? তার ললাট ভূলুণ্ঠিত, ধূলিময় হোক।’ (বুখারী)
الفصل الاول (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَنْهُ قَالَ: لَمْ يَكُنْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاحِشًا وَلَا لَعَّانًا وَلَا سَبَّابًا كَانَ يَقُولُ عِنْدَ الْمَعْتَبَةِ: «مَا لَهُ تربَ جَبينُه؟» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (6031) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: তিনি লা'নাতকারী ও গালি-গালাজকারী ছিলেন না। অর্থাৎ এ দু'টি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এ দু’টিকে অস্বীকার করা। সকল ধরনের অশালীন বাক্য এর অন্তর্ভুক্ত। এতে কেবল বেশি বেশি করাকে নিষেধ করা হয়নি। বাহ্যিকভাবে মনে হতে পারে বেশি বেশিকে মনে হয় নিষেধ করা হয়েছে আর কমকে নিষেধ করা হয়নি। বিষয়টি তা নয়। উদ্দেশ্য হলো সব অশালীন বাক্য নিষিদ্ধ হওয়া যা তার শেষ দিকটা লক্ষ্য করলে বুঝা যায়। মহান আল্লাহর বাণী- (وَ اَنَّ اللّٰهَ لَیۡسَ بِظَلَّامٍ لِّلۡعَبِیۡدِ) “আর আল্লাহ কোন বান্দার প্রতি যুলুমকারী নন”- (সূরাহ্ আ-লি ইমরান ৩: ১৮২)।
এখানে যেমন আল্লাহ কোন বান্দার প্রতি সামান্য পরিমাণেও যুলমকারী নন। ঠিক তেমনিভাবে নবী (সা.) -ও অশালীন বাক্য ব্যবহারকারী ছিলেন না। কোন কাফির বা ফাসিক বা পাপিষ্ঠ ব্যক্তি লা'নাত বা তিরষ্কারের উপযুক্ত না হলে তিনি (সা.) কখনও কাউকে লা'নাত বা তিরষ্কার করেননি। আর এটা বুঝা যায়, বর্ণনাকারীর শেষের বাক্যটির দ্বারা যখন তিনি কারো প্রতি রাগান্বিত হলে বলতেন। আর (تربَ جَبينُه) এটা ‘আরবদের কথার একটি বাগধারার মতো। এটা দ্বারা কাউকে লা'নাত বা বদদু'আর জন্য ব্যবহৃত হয় না। এটা দু'আর জন্য ব্যবহৃত হয়, অর্থাৎ তোমার চেহারা আল্লাহর জন্য সিজদায় নত হোক। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮১২-[১২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার [রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে] প্রস্তাব করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কাফির মুশরিকদের ওপর অভিসম্পাত করুন। উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, আমাকে অভিসম্পাতকারী হিসেবে পাঠানো হয়নি, বরং আমাকে রহমতস্বরূপ পাঠানো হয়েছে। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ عَلَى الْمُشْرِكِينَ. قَالَ: «إِنِّي لَمْ أُبْعَثْ لَعَّانًا وَإِنَّمَا بُعِثْتُ رَحْمَةً» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
رواہ مسلم (87 / 2599)، (6613) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: হাদীসটিতে বলা হয়েছে আমাকে অভিশাপকারী হিসাবে পাঠানো হয়নি। অর্থাৎ যদিও তা কোন নির্দিষ্ট কাফির দলের বিরুদ্ধেও হোক না কেন। মহান আল্লাহ বলেন, (لَیۡسَ لَکَ مِنَ الۡاَمۡرِ شَیۡءٌ اَوۡ یَتُوۡبَ عَلَیۡهِمۡ اَوۡ یُعَذِّبَهُمۡ)- “এ বিষয়ে তোমার কোন অধিকার নেই- হয়তো তিনি তাদেরকে ক্ষমা করবেন অথবা তিনি তাদেরকে ‘আযাব দেবেন”- (সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরান ৩: ১২৮)। আরো বলা হয়েছে, “আমাকে রহমতস্বরূপ প্রেরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের জন্য সাধারণভাবে আর মু'মিনদের জন্য বিশেষভাবে। তাকে দয়ালু গুণে গুণান্বিত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন- (وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا رَحۡمَۃً لِّلۡعٰلَمِیۡنَ) “আর আমরা আপনাকে পৃথিবীবাসীর জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি”- (সূরাহ আল আম্বিয়া- ২১: ১০৭)।
ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তিনি মু'মিনদের জন্য বাহ্যিকভাবে রহমতস্বরূপ। আর কাফিরদের জন্য দুনিয়াতে শাস্তি বন্ধের কারণস্বরূপ। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, “আপনি তাদের মাঝে থাকাবস্থায় আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করবেন না”- (সূরাহ্ আল আনফাল ৮: ৩৩)। বরং নবী (সা.) -এর আগমনের বরকতে কিয়ামত পর্যন্ত কোন ‘আযাবে উম্মত সমূলে ধ্বংস হবে না। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি প্রেরিত হয়েছি মানুষকে আল্লাহর ও তাঁর রহমতের নিকটবর্তী করার জন্য। তাদেরকে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য আমি প্রেরিত হয়নি। অভিশাপকেই তো নিষেধ করা হলো তাহলে অধিক অভিশাপ করবেন কিভাবে? (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮১৩-[১৩] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) কোন কিছু অপছন্দ করতেন, তখন তার চেহারায় আমরা তার পরিচয় পেতাম। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَشَدَّ حَيَاءً مِنَ الْعَذْرَاءِ فِي خِدْرِهَا فَإِذَا رَأَى شَيْئًا يَكْرَهُهُ عَرَفْنَاهُ فِي وَجْهِهِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6102) و مسلم (67 / 2320)، (6032) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: হাদীসের শেষাংশের অর্থ হলো, যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সামনে এমন কোন বিষয় ঘটে যা স্বভাবগতভাবে অপছন্দনীয় কিংবা শারী'আত পরিপন্থী হওয়ার কারণে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মেজাজবিরোধী হয় তাহলে উক্ত অপছন্দনীয়তার প্রভাবে চেহারায় তৎক্ষণাৎ পরিবর্তন হয়ে যেত আর আমরা সে পরিবর্তন লক্ষ করে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর অপছন্দনীয়তা সম্পর্কে অবগত হয়ে তার প্রতিকারের চেষ্টা করতাম, ফলে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চেহারা হতে অপছন্দনীয়তার প্রভাব বিলুপ্ত হত এবং এরূপ মনে হত যেন তিনি একেবারে রাগই করেননি। কিন্তু এ ব্যাপারটি ঐ ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হত যখন মেজাজবিরোধী ব্যাপারটির সম্পর্কে কোন স্বভাবগত বিষয় হত কিংবা কোন এমন শারঈ বিষয় হত যাতে লিপ্ত হওয়া হারাম ও নাজায়িয নয়; বরং মাকরূহ হত।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যে মেজাজবিরোধী বিষয় ঘটত অধিক লজ্জার কারণে রাসূলুল্লাহ (সা.) তার বিরূদ্ধে অপছন্দনীয়তার প্রকাশ মুখ দ্বারা করতেন না; বরং তার প্রভাব রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর চেহারায় প্রকাশ পেত। অতএব সাহাবায়ে কেরাম এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর চেহারার পরিবর্তন লক্ষ্য করে তার অপছন্দনীয়তা এ অসন্তুষ্টি জানতে পারতেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
এ হাদীসের মাধ্যমে কেবল লজ্জা-শরমের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পায় না; বরং এ শিক্ষাও পাওয়া যায় যে, এ গুণটি নিজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্জন করা উচিত যাতে করে শারঈ ও মানবীয় কোন বিধান পালনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয় এবং কোন প্রকারের ক্ষতি সাধনের আশঙ্কা না হয়।
(মাযাহিরে হাক শারহে মিশকাত ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৬২)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮১৪-[১৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সা.) -কে কখনো মুখ খুলে দাঁত বের করে এমনভাবে হাসতে দেখিনি যে, তাঁর কণ্ঠতালু অবধি দেখা যায়; বরং তিনি মুচকি হাসতেন। (বুখারী)
الفصل الاول (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُسْتَجْمِعًا قَطُّ ضَاحِكًا حَتَّى أَرَى مِنْهُ لَهَوَاتِهِ وَإِنَّمَا كَانَ يتبسم. رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (6092) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: হাদীসটির ব্যাখ্যায় ‘উলামাগণ বলেছেন, মা আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কথার অর্থ হলো আমি তাকে সম্পূর্ণ মুখ হা করে হাসতে দেখিনি। বরং তিনি (সা.) মুচকি হাসি দিতেন। যে হাসিটা অধিক হত না। মুখের কিছু অংশ দিয়ে হাসতেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮১৫-[১৫] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) অনবরত কথাবার্তা বলতেন না, যেরূপ তোমরা অনবরত বলতে থাক। বরং তিনি (সা.) যখন কথাবার্তা বলতেন, তখন ধীরে ধীরে থেমে থেমে কথা বলতেন, এমনকি যদি কোন লোক তা গুণতে চাইতে, তবে তা গুনতে পারত। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَنْهَا قَالَتْ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ يَسْرُدُ الْحَدِيثَ كَسَرْدِكُمْ كَانَ يُحَدِّثُ حَدِيثًا لَوْ عَدَّهُ الْعَادُّ لَأَحْصَاهُ. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3567 ۔ 3568) و مسلم (160 / 2493)، (6399) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) একটা বলার সাথে সাথেই আরেকটা কথা বলতেন না, তথা অনর্গল কথা বলতেন না। তোমরা যেমন লাগাতার বা অনর্গল কথা বল তেমন তিনি (সা.) বলতেন না; বরং স্পষ্টভাবে ভেঙ্গে ভেঙ্গে কথা বলতেন। যেমনটি স্পষ্টভাবে সকলে কথা বুঝতে পারে। তার কথা এতই স্পষ্ট ও পরিষ্কার ছিল যে, কোন ব্যক্তি তা গণনা করতে চাইলে সে তা গণনা করতে সক্ষম হত।
নবী (সা.) -এর কথা লাগাতার ছিল না যে, একটা কথা বলে সাথে সাথেই তিনি আরেকটা কথা বলছেন। এমন করলে অনেক সময় শ্রোতার কাছে প্যাচ লেগে যায়। বরং তিনি (সা.) কথার মাঝে পার্থক্য করতেন। যদি কোন শ্রোতা তার কথা গণনা করতে চাইতেন তবে সে তা গণনা করতে পারতেন। অতএব তিনি (সা.) অত্যন্ত স্পষ্ট ও সাবলীল ভাষায় কথা বলতেন যাতে সকলে তার কথা বুঝতে পারে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮১৬-[১৬] আসওয়াদ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, নবী (সা.) গৃহের ভিতরে কি কাজ করতেন? তিনি বললেন, তিনি (সা.) পারিবারিক কাজ করতেন। অর্থাৎ পরিবারের কাজ আঞ্জাম দিতেন। আর যখন সালাতের সময় হত তখন সালাতের উদ্দেশে বের হয়ে যেতেন। (বুখারী)
الفصل الاول (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَنِ الْأَسْوَدِ قَالَ: سَأَلْتُ عَائِشَةَ: مَا كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصْنَعُ فِي بَيْتِهِ؟ قَالَتْ: كَانَ يَكُونُ فِي مَهْنَةِ أَهْلِهِ - تَعْنِي خدمَة أَهله - فَإِذا حضرت الصَّلَاة خرج إِلَى الصَّلَاة. رَوَاهُ البُخَارِيّ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (676) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: নবী (সা.) -এর অভ্যাস ছিল যে তিনি সব সময় কাজে ব্যস্ত থাকতেন। যখন তিনি (সা.) বাসায় থাকতেন তখন তার পরিবারের লোকেদেরকে তাদের কাজে সাহায্য করতেন। যাদের কাজে তার সাহায্যের প্রয়োজন মনে করতেন। আর যখন আযান হয়ে যেত তখন তিনি (সা.) সকল কাজ ছেড়ে দিতেন, যেন তিনি পরিবারের কাউকে চেনেন না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮১৭-[১৭] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে যখনই দুটি ব্যাপারে ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে, তখন তিনি উভয়টির মধ্যে যেটি সহজতর সেটি গ্রহণ করেছেন। তবে এই শর্তে যে, সেটি যেন কোন প্রকারের গুনাহের কাজ না হয়। তবে যদি তা গুনাহের কাজ হত, তাহলে তিনি (সা.) তা হতে সকলের চেয়ে অনেক দূরে সরে থাকতেন। আর রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের কোন ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে কেউ যদি আল্লাহর নিষিদ্ধ কোন কাজ করে ফেলত, তখন আল্লাহর লক্ষ্যে (তার নিকট হতে) প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: مَا خُيِّرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ أَمْرَيْنِ قَطُّ إِلَّا أَخَذَ أَيْسَرَهُمَا مَا لَمْ يَكُنْ إِثْمًا فَإِنْ كَانَ إِثْمًا كَانَ أَبْعَدَ النَّاسِ مِنْهُ وَمَا انْتَقَمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِنَفْسِهِ فِي شَيْءٍ قَطُّ إِلَّا أَنْ يُنتهك حرمةُ الله فينتقم لله بهَا. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3560) و مسلم (77 / 2327)، (6045) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে দুটি কাজের ইখতিয়ার দেয়া হলে তিনি সহজ কাজটি গ্রহণ করতেন যদি সে কাজটি কোন গুনাহের কাজ না হত। আর যদি কোন পাপের কাজ হত তাহলে তা থেকে তিনি (সা.) মানুষকে বিরত থাকার দিক-নির্দেশনা প্রদান করতেন কাজটি যতই কঠিন হোক না কেন।
আর তিনি (সা.) ব্যক্তিগত কোন বিষয়ে কারো থেকে প্রতিশোধ নিতেন না। কেউ কোন শাস্তিযোগ্য অপরাধ করলে আল্লাহর বিধানে তার যে শাস্তি হয় তিনি (সা.) তাকে সে শাস্তি প্রদান করতেন। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, কেউ তার সাথে ব্যক্তিগতভাবে কোন অন্যায় করলে তিনি (সা.) তাকে শাস্তি দিতেন না। তবে কেউ আল্লাহর নিষিদ্ধ কোন হারাম কাজ করলে তিনি (সা.) তাঁর বিধানে যে শাস্তি আছে তা বাস্তবায়ন করতেন। যেমন- মহান আল্লাহর বাণী- “আর আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করতে যেয়ে তোমাদের অন্তরে যেন কোন মায়া না জন্মে”- (সূরা আন নূর ২৪: ০২)।
ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ হলো তিনি ব্যক্তিগত কোন প্রয়োজনে কারো থেকে কোন প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তাই তো তিনি উকবাহ্ ইবনু আবূ মু'ঈত্ব, ‘আবদুল্লাহ ইবনু খতুল ও অন্যান্য যারা তাকে কষ্ট দিয়েছিল তাদের হত্যার আদেশকে তিনি ফিরিয়ে নেননি। কারণ তারা এ অপরাধের পাশাপাশি আল্লাহর হারাম কাজেও জড়িয়ে পড়েছিল। কথিত আছে, তারা নবী (সা.) -কে গালি দেয়া ছাড়াও কুফরীতে জড়িয়ে পড়েছিল। যদিও কথিত আছে, বিষয়টি সম্পদের সাথে নির্দিষ্ট ছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮১৮-[১৮] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর পথে জিহাদরত অবস্থা ছাড়া কখনো কাউকেও স্বীয় হাতে প্রহার করেননি। নিজের স্ত্রীগণকেও না, সেবককে না। আর যদি তার দেহে বা অন্তরে কারো পক্ষ হতে কোন প্রকারের কষ্ট বা ব্যথা লাগত, তখন নিজের ব্যাপারে সেই লোক হতে কোন প্রকারের প্রতিশোধ নিতেন না। কিন্তু কেউ যদি আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ করে বসত, তখন আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে শাস্তি দিতেন। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَنْهَا قَالَتْ: مَا ضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لنَفسِهِ شَيْئًا قَطُّ بِيَدِهِ وَلَا امْرَأَةً وَلَا خَادِمًا إِلَّا أَنْ يُجَاهِدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَا نِيلَ مِنْهُ شَيْءٌ قَطُّ فَيَنْتَقِمُ مِنْ صَاحِبِهِ إِلَّا أَنْ يُنْتَهَكَ شَيْءٌ مِنْ مَحَارِمِ اللَّهِ فينتقم لله. رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (79 / 2328)، (6050) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: ‘নবী (সা.) কাউকেও মারতেন না’ বলতে তিনি কোন মানুষকে মারতেন না। তবে তিনি (সা.) কখনো কখনো তার বাহনকে মারতেন। যদিও কখনো মারা জায়িয তবুও তিনি তার স্ত্রী ও খাদিমদেরকে মারতেন না। মারা জায়িয হলেও না মারাটা উত্তম। উলামাগণ বলেন, তবে সন্তানের ব্যাপারটি ভিন্ন। তাদেরকে শিষ্টাচার শেখানোর জন্য মারা যায়। কল্যাণের জন্য তাদেরকে মারা যাবে।
(ا إِلَّا أَنْ يُجَاهِدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ) অর্থাৎ তিনি উবাই ইবনু খালফ-কে উহুদের যুদ্ধে হত্যা করেন। এখান থেকে কেবল যুদ্ধ ক্ষেত্রে কাফির শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করা উদ্দেশ্য নয়; বরং উদ্দেশ্য হলো শারী'আতের নির্ধারিত শাস্তি, আদব শিক্ষা দেয়ার জন্য শাস্তি ইত্যাদি। (মিরকাতুল মাফাতীহ)