পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে

জিহ্বার হিফাযাত বলতে অশ্লীল-অবাঞ্ছিত কথা-বার্তা ইত্যাদি থেকে জিহ্বাকে রক্ষা করা। গীবত বলা হয় তোমার মুসলিম ভাইয়ের মধ্যে বিদ্যমান কোন দোষ তার অসাক্ষাতে আলোচনা করা যা সে শুনলে তা অপছন্দ করবে। তার মধ্যে যদি দোষটি না থাকে তবে সেটা হবে বুহতান বা অপবাদ।

আরবীতে اَلشَّتَمُ বলা হয় গালি প্রদান করা, অভিসম্পাত করা। এতে জীবিত-মৃত, উপস্থিত-অনুপস্থিত সকলেই এর অন্তর্ভুক্ত।


৪৮১২-[১] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার কাছে তার দু’ চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্তুর এবং তার দু’ পায়ের মধ্যস্থিত বস্তুর জামিন হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হব। (বুখারী)[1]

بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أضمنْ لَهُ الجنَّةَ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

عن سهل بن سعد قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من يضمن لي ما بين لحييه وما بين رجليه اضمن له الجنة» . رواه البخاري

ব্যাখ্যাঃ مَنْ অব্যয়টি শরতিয়া হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। لَحْيَةٌ হলো দাঁতের উদগত স্থল, অর্থাৎ চোয়াল। দুই চোয়ালের মাঝের বস্তু দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জিহ্বা বা মুখের ভাষা। অর্থাৎ জিহ্বা এবং মুখকে যে অশ্লীল কথা-বার্তা এবং হারাম খাদ্য থেকে হিফাযাতের যিম্মাদারী নিবে, আর নিজের যৌনাঙ্গকে যিনা বা অনুরূপ কার্যক্রম থেকে হিফাযাতের গ্যারান্টি দিবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য প্রথম পর্বেই জান্নাতের উচ্চস্তরে প্রবেশের যিম্মাদারী গ্রহণ করবেন।

‘আল্লামা ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর অর্থ হলো যে, যে কথা বলা আবশ্যক সে কথা বলার মাধ্যমে এবং যে কথা বলা উচিত নয়, সে কথা থেকে বিরত বা চুপ থাকার মাধ্যমে মুখের হক আদায় করবে। অনুরূপ যৌনাঙ্গকে হালাল পন্থায় ব্যবহারের মাধ্যমে তার হক আদায় করা এবং হারাম পন্থা থেকে বিরত রাখা বা দূরে থাকা।

‘আল্লামা দাঊদী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসের ভাষা ‘দুই চোয়ালের মাঝের বস্তু’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মুখ। আর মুখের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- মুখের কথা, খানা-পিনা এবং মুখ দ্বারা সম্পাদিত যাবতীয় বিষয়।

দুই রানের মাঝের বস্তু দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যৌনাঙ্গ। যারা এ দু’টিকে হিফাযাত করতে পারবে তারা সকল খারাপ কাজ থেকে নিজকে হিফাযাত করতে পারবে।

‘কথা’ হলো যিনা বা ব্যভিচারের উপক্রমিকা, কেউ যদি কথা থেকে নিজকে রক্ষা করতে পারে তাহলে সে শুরুতেই রক্ষা পেয়ে গেল।

ইবনুল বাত্ত্বল (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সুতরাং মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো তার মুখের ভাষা, অতঃপর যৌনাঙ্গ।

যে ব্যক্তি এ দুয়ের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা পেল সে সবচেয়ে বড় অনিষ্টতা ও বিপদ থেকে রক্ষা পেল। আবূ হুরায়রা প্রমুখাৎ বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ যাকে দুই চোয়ালের মাঝের বস্তু অর্থাৎ জিহ্বার অনিষ্টতা এবং দুই পায়ের মাঝের বস্তু অর্থাৎ যৌনাঙ্গের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করবেন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; মুসনাদে আহমাদ ৪র্থ খন্ড, ৩৯৮ পৃঃ; ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৪৭৪; ইবনু হিব্বান হাঃ ৫০৮১, তিরমিযী হাঃ ২৪০৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সাহল বিন সা'দ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে

৪৮১৩-[২] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা কোন কোন সময় এমন কথা মুখ দিয়ে বলে, যাতে আল্লাহ তা’আলা সন্তুষ্ট হয়ে যান এবং এজন্যই তার পদমর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন, অথচ বান্দা এ বিষয়ে ওয়াকিফহাল থাকে না। পক্ষান্তরে বান্দা কোন কোন সময় এমন কথা বলে, যাতে আল্লাহ তা’আলা অসন্তুষ্ট হন। এ কথা তাকে জাহান্নামের দিকে নিক্ষেপ করে, অথচ বান্দা এ বিষয়ে ওয়াকিফহাল থাকে না। (বুখারী)[1]

বুখারী ও মুসলিম-এর এক বর্ণনায় আছে যে, এ কথা তাকে জাহান্নামের মধ্যে এতটা দূরত্বে নিক্ষেপ করে যতটা দূরত্ব পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে রয়েছে।

بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ رِضْوَانِ اللَّهِ لَا يُلْقِي لَهَا بَالًا يَرْفَعُ اللَّهُ بِهَا دَرَجَاتٍ وَإِنَّ الْعَبْدَ لِيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللَّهِ لَا يُلْقِي لَهَا بَالًا يَهْوِي بِهَا فِي جَهَنَّمَ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ. وَفِي رِوَايَةٍ لَهُمَا: «يَهْوِي بِهَا فِي النَّارِ أَبْعَدَ مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ»

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان العبد ليتكلم بالكلمة من رضوان الله لا يلقي لها بالا يرفع الله بها درجات وان العبد ليتكلم بالكلمة من سخط الله لا يلقي لها بالا يهوي بها في جهنم» . رواه البخاري. وفي رواية لهما: «يهوي بها في النار ابعد ما بين المشرق والمغرب»

ব্যাখ্যাঃ হাদীসের শব্দ (لَيَتَكَلَّمُ) আবূ যার-এর এক বর্ণনায় ‘লাম’ অক্ষরটি বিলোপ করে (يَتَكَلَّمُ) ব্যবহার হয়েছে।

মানুষ অনেক সময় মুখ দিয়ে এমন কথা বলে থাকে যা সে মনোযোগ দিয়ে কিংবা গুরুত্ব দিয়ে বলে না এবং সে জানে না আল্লাহর নিকট ঐ কথার কত দাম ও মর্যাদা। আল্লাহ তা‘আলার কাছে ঐ কথার যেহেতু অনেক দাম ও মর্যাদা, অতএব তিনি তাকে ঐ অনিচ্ছাজনিত কথারই যথাযথ মূল্যায়ন করে তার সম্মান ও মর্যাদা এমনভাবে বৃদ্ধি করে দেন যে সম্মান বা মর্যাদার কথা সে ভাবতেও পারেনি।

পক্ষান্তরে অনেক কথাই রয়েছে যা মানুষের দৃষ্টিতে খুব দোষণীয় বা বড় ধরনের পাপের নয়, কিন্তু আল্লাহর নিকট তা খুবই অপছন্দনীয় এবং অসন্তষ্টির কারণ। মানুষ এমন কথা গুরুত্ব না দিয়ে বা পরিণাম ও ভবিষ্যৎ চিন্তা না করেই বলে ফেলে, ফলে আল্লাহ তার প্রতি খুব অসন্তুষ্ট হন। পরিণামে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়। মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীস দ্বারা মানুষকে চিন্তা-ভাবনা করে কথা বলার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে

৪৮১৪-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমদের গালাগালি করা ফাসিক্বী এবং খুনাখুনি করা কুফরী। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

وعن عبد الله بن مسعود قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «سباب المسلم فسوق وقتاله كفر» . متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ (سِبَابُ الْمُسْلِمِ) ক্রিয়া বিশেষ্য বা মাসদার তার مفعول বা কর্মের দিকে ইফাযত হয়েছে। سِبَابُ শব্দের আভিধানিক অর্থ গালি দেয়া, মন্দ বলা।

ইবরাহীম আল হার্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ السباب أشد من السب অর্থাৎ السباب শব্দটি سَبٌّ গালি দেয়া থেকে আধিক্যতার ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। সেটা হলো কোন ব্যক্তির যা দোষ আছে তা সম্পর্কে এবং যা নেই তা সম্পর্কেও তাকে গালি দেয়া। এতে উদ্দেশ্য তাকে হেয় করা। কেউ কেউ বলেছেন, এখানে السباب শব্দটি القتال এর মত, অর্থ পরস্পর গালি-গালাজে অংশ নেয়া।

কোন মুসলিম অপর কোন মুসলিমকে গালি দিতে পারে না, নাহক গালি দেয়া হারাম।

الفسوق শব্দের আভিধানিক অর্থ الخروج বের হয়ে যাওয়া। আকমাল বলেনঃ الخروج زنة (সম্মানের) ওজন বা পরিমাপ থেকে বের হয়ে যাওয়া।

শারী‘আতের পরিভাষায় الخروج عن الطاعة আনুগত্য থেকে বের হয়ে যাওয়া। ‘আল্লামা ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ الخروج عن طاعة الله ورسوله আল্লাহ ও তার রসূলের আনুগত্য থেকে বের হয়ে যাওয়া। এটা চরম অবাধ্যচারিতা ও পাপাচারিতার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

قِتَالُهٗ এর অর্থ محاربته لأجل الإسلام প্রত্যেকেই একে অপরের (নিজ নিজ ধারণায়) ইসলামের জন্য যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে একজন তার অপর মুসলিম ভাইকে হত্যা করা। বাতিল চিন্তা ও উদ্দেশ্য নিয়ে এ কাজ তো সুস্পষ্ট কুফরী কর্ম। অবশ্য কেউ কেউ বলেছেন, এই কুফরী তাকীদান ও তামহীদান বা ধমকীস্বরূপ বলা হয়েছে। তবে এ কথা সত্য যে, কেউ যদি তার মুসলিম ভাইকে হত্যা বৈধ মনে করে করে তবে তা নিঃসন্দেহে কুফরী।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অত্র হাদীসের অর্থ ঐ (হাদীসের) দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়েছে, الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِه وَيَدِه মুসলিম ঐ ব্যক্তি যার জিহ্বা এবং হাত থেকে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে। এ কথা সুসাব্যস্ত যে, এখানে মুসলিম দ্বারা মুসলিমে কামিল। ঈমানের দাবী অনুপাতে ইসলামের হকসমূহ আদায় করা তার ওপর কর্তব্য, কিন্তু তার কতিপয়ের ঘাটতি বা কমতির দ্বারা সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে খাঁটি কাফির হয়ে যায় না বরং তার ঈমান কমে যায়।

শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থে রয়েছে, এতে মুরজিয়াদে যুক্তি খন্ডনের দলীল রয়েছে। তারা ‘ইবাদাত ও ‘আমলকে ঈমান বলে মনে করে না। তারা বলেন, ‘আমলের মাধ্যমে ঈমান বাড়ে না এবং পাপের কারণে ঈমান কমে না অর্থাৎ নেককার-গুনাহগার সকল মুসলিমের ঈমান সমান। আহলুস্ সুন্নাহ্ ওয়াল জামা‘আতের ‘আক্বীদাহ্ এর বিপরীত অর্থাৎ নেক ‘আমলের কারণে ঈমানের বৃদ্ধি ঘটে এবং পাপ কাজের কারণে ঈমান হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। (ফাতহুল বারী ১ম খন্ড, হাঃ ৬১০৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে

৪৮১৫-[৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইকে কাফির বলবে, তাদের দু’জনের একজন এর উপযুক্ত সাব্যস্ত হবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّمَا رَجُلٍ قَالَ لِأَخِيهِ كَافِرُ فَقَدْ بَاءَ بِهَا أَحدهمَا» . مُتَّفق عَلَيْهِ

وعن ابن عمر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ايما رجل قال لاخيه كافر فقد باء بها احدهما» . متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ কোন মুসলিম অপর কোন মুসলিমকে কাফির বলে সম্বোধন করতে পারে না। কেউ কাউকে কাফির বলে সম্বোধন করলেই (তো সত্য-মিথ্যা যাই হোক না কেন) কার্যকরীরূপে প্রতিফলিত হবে। যাকে এ সম্বোধন করা হলো সে যদি সত্যই কুফরী কর্ম করে থাকে তবে তার ওপর ঐ কথার হুকুম প্রযোজ্য হবে এবং সে সত্য সত্যই কাফির বলে বিবেচিত হবে। আর যদি সে সত্যিকার কোন কুফরী কর্ম না করে, তাকে অহেতুক কাফির বলে সম্বোধন করা হয় তাহলে তার ঐ কথাটি নিজের দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে, অর্থাৎ সেই কাফির বলে বিবেচিত হবে।

ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অহেতুক কাউকে কাফির বলে সম্বোধন করলে সে নিজে কুফরীর গুনাহ নিয়ে ফিরবে।

‘আল্লামা নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যে হাদীসগুলো ‘উলামাগণের নিকট খুব মুশকিল, এটি তার একটি। এর প্রকাশ্য বা বাহ্যিক অর্থ উদ্দেশ্য নয়। এটা এজন্য যে, একজন মুসলিমকে দীনের উপর অটুট বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও হত্যা কিংবা যিনার মতো কাবীরাহ্ গুনাহের কারণে কাফির বলা যায় না। এ কথা যখন সাব্যস্ত হলো যে, কাউকে কাফির বলা ঠিক নয় তখন অত্র হাদীসের আমরা কয়েকটি ব্যাখ্যা বা তাবীল করব। আর সেটি হলো এই যে,

প্রথমতঃ কেউ যখন কাউকে কাফির বলা হালাল বা বৈধ মনে করবে তখন তার ওপর (এই কাফির বলার অনভিপ্রেত বিরূপ প্রতিক্রিয়া হিসেবে) কুফরীর হুকুম বর্তাবে।

দ্বিতীয়টি হলো : তার ওপর গুনাহের বোঝা চেপে বসবে এবং ঈমানের ঘাটতি সংঘটিত হবে।

তৃতীয়টি হলো : এটা খারিজীদের ব্যাপারে প্রযোজ্য, কেননা তারা মু’মিনদের কাফির বলে থাকে, তাই সেটা ফিরে গিয়ে তাদের ওপর পতিত হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে

৪৮১৬-[৫] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ফাসিক বা পাপী বলে অপবাদ দেবে না এবং কাফির বলেও দুর্নাম করবে না। যদি উদ্দিষ্ট ব্যক্তি এরূপ না হয়, তবে তার প্রদত্ত অপবাদ তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করবে। (বুখারী)[1]

بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ

وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَرْمِي رَجُلٌ رَجُلًا بِالْفُسُوقِ وَلَا يَرْمِيهِ بِالْكُفْرِ إِلَّا ارْتَدَّتْ عَلَيْهِ إِنْ لَمْ يَكُنْ صَاحِبُهُ كَذَلِكَ» رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابي ذر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا يرمي رجل رجلا بالفسوق ولا يرميه بالكفر الا ارتدت عليه ان لم يكن صاحبه كذلك» رواه البخاري

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে

৪৮১৭-[৬] উক্ত রাবী [আবূ যার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কাউকে কাফির বলে ডাকে অথবা আল্লাহর দুশমন বলে, অথচ সে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষ এরূপ না হয়, তবে এ বাক্য তার দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ دَعَا رَجُلًا بِالْكُفْرِ أَوْ قَالَ: عَدُوَّ اللَّهِ وَلَيْسَ كَذَلِكَ إِلاَّ حارَ عليهِ . مُتَّفق عَلَيْهِ

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من دعا رجلا بالكفر او قال: عدو الله وليس كذلك الا حار عليه . متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ এ দু’টি (৪৮১৬ ও ৪৮১৭) হাদীসের ব্যাখ্যা ৪৮১৫ নং হাদীসের ব্যাখ্যানুরূপ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে

৪৮১৮-[৭] আনাস ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি দু’ ব্যক্তি পরস্পরকে গালি দেয়, তবে গালমন্দের পাপ সে ব্যক্তির হবে যে ব্যক্তি প্রথম গালি দিয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না অত্যাচারিত ব্যক্তি সীমা অতিরিক্ত করবে। (মুসলিম)[1]

بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ

وَعَن أنس وَأَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْمُسْتَبَّانِ مَا قَالَا فَعَلَى الْبَادِئِ مالم يعْتد الْمَظْلُوم» . رَوَاهُ مُسلم

وعن انس وابي هريرة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «المستبان ما قالا فعلى البادى مالم يعتد المظلوم» . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ (الْمُسْتَبَّانِ) শব্দটি কর্তৃবাচ্য দ্বিবচন হিসেবে باب افتعال থেকে এসে باب تفاعل এর خاصيت রূপে ব্যবহার হয়ে المتشائمان শব্দের অর্থ প্রদান করেছে। المتشائمان এর অর্থ হলো :

هُمَا اللَّذَانِ سَبَّ كُلٌّ مِنْهُمَا الْآخَرَ দু’জন পরস্পর একজন আরেকজনকে গালি দেয়া এবং পরস্পরের মধ্যে বিদ্যমান লুকায়িত গোপন দোষ-ত্রুটি তুলে ধরা।

পরস্পর গালিদানকারী দু’জনের একজন সূচনাকারী হয়, যে প্রথমে গালি দেয়ার সূচনা করে সে বেশী অপরাধী। তবে প্রথম গালিদানকারী গালি দেয়া শুরু করলে আরেকজন যদি ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারে এবং গালিদানের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন না করে তাহলে গাল-মন্দের যাবতীয় পাপ প্রথমজনই বহন করবে। কেননা ঝগড়ার সূত্রপাত সেই ঘটিয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, গালি-গালাজের সম্পূর্ণ গুনাহ সে বহন করবে না বটে, তবে অধিকাংশ গুনাহ সে বহন করবে। কিন্তু দ্বিতীয় ব্যক্তিও যদি ধৈর্যধারণ না করে গালি শুরু করে দেয় এবং সীমালঙ্ঘন করে ফেলে তবে উভয়ের সমান গুনাহ হবে। প্রথমজনের গুনাহের কারণ তো সর্বজনবিদিত, দ্বিতীয়জন গালি দেয়ার কারণে সেও গুনাহগার হবে।

(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ [২৫৮৭]-৬৮; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮৮৬; লুম্‘আত)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে

৪৮১৯-[৮] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন সিদ্দীকের পক্ষ অধিক অভিসম্পাতকারী হওয়া সমীচীন নয়। (মুসলিম)[1]

بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَنْبَغِي لِصِدِّيقٍ أنْ يكونَ لعَّاناً» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «لا ينبغي لصديق ان يكون لعانا» . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ (صِدِّيقٍ) শব্দ صادق এর মুবালাগাহ্, এর অর্থ অধিক সত্যবাদী। উদ্দেশ্য মু’মিন ব্যক্তি, কারণ প্রকৃত মু’মিন সর্বদাই সত্যবাদী হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ وَالَّذِينَ آمَنُوا بِاللهِ وَرُسُلِه# أُولٰئِكَ هُمُ الصِّدِّيقُونَ ‘‘যারা আল্লাহ ও তদীয় রসূলের প্রতি ঈমান এনেছে তারাই প্রকৃত সত্যবাদী’’- (সূরাহ্ আল হাদীদ ৫৭ : ১৯)। প্রকৃত মু’মিনের জন্য বৈধ নয় যে, সে অধিক লা‘নাতকারী বা অভিসম্পাতকারী হবে।

লা‘নাতের দ্বারা এখানে উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর রহমত থেকে দূর থাকার দু‘আ করা, যা বদ্দু‘আর অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। মু’মিনের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ মাত্রা কম হওয়ার কারণে বাক্যটিতে মুবালাগার সীগাহ্ ব্যবহার করা হয়েছে। ইবনু মালিক বলেনঃ মুবালাগার সীগাহ্ ব্যবহারের উদ্দেশ্য হলো অধিক লা‘নাত বুঝানো, কারো থেকে দু’একবার লা‘নাত প্রকাশিত হলে এই নিন্দা তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সিদ্দীকের জন্য এ নিন্দনীয় গুনটি যথার্থ নয়, কেননা সিদ্দীক হলো নুবুওয়াতের পরবর্তী স্তর। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘যারা আল্লাহ এবং তার রসূলের আনুগত্য করে তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে নি‘আমাতপ্রাপ্ত নবী, সিদ্দীক্বীন, শুহাদা এবং সলিহীনদের সাথেই থাকবেন’’- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ৬৯)। নবীগণ সৃষ্টির প্রতি রহমতস্বরূপ এবং আল্লাহর দয়া থেকে বিতাড়িত ও দূরে অবস্থানকারী বান্দাদের জন্য নৈকট্য সৃষ্টিকারীরূপে প্রেরিত হয়েছেন। আর অধিক অভিসম্পাতকারী নবীদের নৈকট্য থেকে দূরে অবস্থানকারী। অতএব এই অভিসম্পাত সিদ্দীক হওয়ায় জন্য অন্তরায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে

৪৮২০-[৯] আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ নিশ্চয় অধিক অভিসম্পাতকারীরা কিয়ামতের দিন সাক্ষ্যদাতা হবে না এবং সুপারিশকারীও হবে না। (মুসলিম)[1]

بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ

وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ اللَّعَّانِينَ لَا يَكُونُونَ شُهَدَاءَ وَلَا شُفَعَاء يَوْم الْقِيَامَة» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي الدرداء قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «ان اللعانين لا يكونون شهداء ولا شفعاء يوم القيامة» . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ পূর্বের হাদীসে আলোচিত হয়েছে মু’মিন ব্যক্তি অভিসম্পাতকারী হবে না। একজন মু’মিন আরেক মু’মিনকে অভিসম্পাত করা নীচ ও হীন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। এতে ব্যক্তির শরাফত-ভদ্রতা ও ন্যায়পরায়ণতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। তাই কিয়ামতের দিন সে মু’মিন হিসেবে পূর্ব জাতির জন্য সাক্ষ্যদানকারী। অথবা সুপারিশকারী হতে পারবে না।

স্মর্তব্য যে, কিয়ামতের দিন পূর্ববর্তীর নবীর উম্মাতেরা তাদের নবীদের রিসালাত ও দা‘ওয়াতকে অস্বীকার করে বলবে, ‘‘আমাদের কাছে কোন আহবানকারী আসেনি এবং তাওহীদের দা‘ওয়াতও পেশ করেনি’’। আল্লাহ তা‘আলা তখন ঐ সময়ের নবীদের ডেকে তাদের নিকট সাক্ষী তলব করবেন। তখন নবীগণ উম্মাতে মুহাম্মাদীকে সাক্ষী হিসেবে পেশ করবেন। উম্মাতে মুহাম্মাদী আল কুরআনে বর্ণিত পূর্ব জাতির ইতিহাস পাঠ করে তাদের কৃতকর্ম জানার কারণে নবীদের দা‘ওয়াতের সত্যতার সাক্ষী প্রদান করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ

(وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ) ‘‘আমি এভাবেই তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি, যাতে তোমরা মানবজাতির জন্য সাক্ষী হও’’- (সূরাহ্ আল বাকারাহ্ ২ : ১৪৩)।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অত্র আয়াতে উল্লেখিত الْوَسَط শব্দের অর্থ হলো الْعَدْل ন্যায়পরায়ণতা। অভিসম্পাত عَدَالَةِ বা ন্যায়পরায়ণতাকে বিলোপ করে, আর আদিল বা ন্যায়পরায়ণ নয় এমন ব্যক্তির সাক্ষী গ্রহণযোগ্য নয়।

ব্যাখ্যাকারগণ বলেছেনঃ তারা (লা‘নাত করার কারণে) ফাসিকে পরিণত হয়েছে। সুতরাং ফাসিকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। তাই কিয়ামতের দিন তারা কোন সাক্ষী হতে পারবেন না এবং সুপারিশের মর্যাদাও পাবে না। কিয়ামতের দিন সুপারিশের অধিকার বা মর্যাদা হলো নবীদের এবং শাহীদদের জন্য খাস, এই মর্যাদা আল্লাহ মু’মিনদেরও দিনে। মু’মিনদের যে মর্যাদা দিবেন লা‘নাত বা অভিসম্পাতের কারণে সেই মর্যাদা বিলোপ হয়ে যাওয়ায় কিন্তু (কিয়ামতের দিন) তাদের কোন সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না। এটা অবশ্য তাদের বেলায় যারা এ কাজে অভ্যস্ত, ঘটনাক্রমে দু‘এক বারের দ্বারা এই মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে না।

(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ [২৫৯৮]-৮৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবুদ দারদা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে

৪৮২১-[১০] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি বলে যে, মানুষ ধ্বংস হোক, তখন সে নিজেই সবচেয়ে বেশি ধ্বংসপ্রাপ্ত। (মুসলিম)[1]

بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ

وَعَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا قَالَ الرَّجُلُ: هَلَكَ النَّاسُ فَهُوَ أَهْلَكُهُمْ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اذا قال الرجل: هلك الناس فهو اهلكهم . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ কোন ব্যক্তির এই কথা বলা যে ‘মানুষের ধ্বংস হোক’ এর অর্থ হলো : অন্যদের খারাপ ‘আমলের কারণে জাহান্নামে যাওয়াকে আবশ্যক বলে মনে করা, এটিও একটি অভিসম্পাত। সুতরাং কারো জন্য বা কোন জাতির জন্য এরূপ অভিসম্পাত করা আদৌ বৈধ নয়।

হাদীসের শব্দ فَهُوَ أَهْلَكُهُمْ ‘সেই সর্বাধিক ধ্বংসপ্রাপ্ত, এর "كُ" বর্ণে পেশ এবং যবর উভয় চিহ্ন যোগে পাঠ সিদ্ধ। যবরযোগে পাঠ করলে তা فِعْلٌ مَاضٍ অতীতকালের ‘সীগাহ্’ বা শব্দ হিসেবে অর্থ প্রদান করবে। তখন এর অর্থ হয় সীমালঙ্ঘনকারী তারাই যারা মানুষকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করে থাকে এবং বলে থাকে, ‘মানুষ ধ্বংস হোক’। মানুষ যখন এ কথা বলেই ফেলে তখন আল্লাহ নয় বরং সে নিজে তার জন্য ধ্বংস আবশ্যক করে নেয়। "ك" বর্ণে পেশ যোগে পাঠ করলে এর অর্থ হয়, যে এ কথা বলবে সেই হবে অধিক ধ্বংসশীল। কেননা সে নিজেকে অপরের চেয়ে অধিক ভালো মনে করেছে আর আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে অন্যকে বঞ্চিত মনে করে নিজের জন্য কেবল নির্ধারণ করে নিয়েছে।

ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত আছে, যদি কেউ অন্যকে হেয় এবং তুচ্ছ মনে করে নিজেকে বেশী ভালো মনে করে এ কথা বলে থাকে, তবে নিঃসন্দেহে তা অপছন্দনীয় এবং নিষিদ্ধ। আর যদি অন্যকে তুচ্ছ জ্ঞান করে নয়, বরং অন্যের মধ্যে দীনের ত্রুটি লক্ষ্য করে তাদের শাসন হিসেবে এ কথা বলা হয়ে থাকে তাহলে তা দোষণীয় নয়, এটা জামহূরেরও মত।

কেউ কেউ বলেছেন, এটা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বিদ্‘আতী দল, যারা মানুষকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করে থাকে এবং (গুনাহের কারণে) চিরজাহান্নামী বলে মনে করে থাকে।

(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ [২৬২৩]-১৩৯; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৭৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে

৪৮২২-[১১] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কিয়ামতের দিন সবচেয়ে খারাপ লোক তাকে পাবে, যে দ্বিমুখী (কপট)। সে এক মুখ নিয়ে এদের কাছে যায় এবং অপর মুখ নিয়ে ওদের কাছে যায়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ

وَعَنْهُ: قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَجِدُونَ شَرَّ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ذَا الْوَجْهَيْنِ الَّذِي يَأْتِي هَؤُلَاءِ بوجهٍ وَهَؤُلَاء بوجهٍ» . مُتَّفق عَلَيْهِ

وعنه: قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «تجدون شر الناس يوم القيامة ذا الوجهين الذي ياتي هولاء بوجه وهولاء بوجه» . متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ দুই চেহারা বিশিষ্ট লোক হলো মুনাফিক। তারা একদলের কাছে বলে, আমরা তোমাদের সাথে; অন্যদের কাছে গিয়ে বলে, আমরা মূলত তোমাদের সাথে।

মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ফাসাদ সৃষ্টি। এরা হলো মুনাফিক সদৃশ লোক। ‘আল্লামা নাবাবী বলেনঃ এরা প্রত্যেক দলের কাছে গিয়ে নিজেদেরকে তাদের দলের লোক বলে পরিচয় দেয় এবং তাদের হিতাকাঙ্ক্ষী হিসেবে প্রচার করে থাকে। মূলত তাদের এ সকল কার্যক্রম হলো নিরেট প্রতারণা এবং ধোঁকা, যা দুই দলের গোপন তথ্যাদি প্রকাশে উৎসাহিত করে এবং ঝগড়া বাধিয়ে দেয়। এটা সম্পূর্ণ হারাম। কিন্তু কেউ যদি ব্বিদমান দু’টি দলের মধ্যে সন্ধি স্থাপন কিংবা মীমাংসার নিয়্যাতে এরূপ কাজ করে থাকে তবে তা নিন্দনীয় এবং হারাম নয় বরং প্রশংসনীয়। মুনাফিকের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে, আল্লাহ বলেনঃ ‘‘নিশ্চয় মুনাফিকেরা জাহান্নামের নিম্নস্তরে থাকবে’’- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ১৪৫)। হাদীসে এসেছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকবে দ্বিমুখী লোক অর্থাৎ মুনাফিকগণ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ [২৫২৬]-১৯৯; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০২৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে

৪৮২৩-[১২] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ চোগলখোর বা নিন্দাকারী জান্নাতে যাবে না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

মুসলিম-এর অপর বর্ণনায় قَتَّاتٌ-এর স্থলে نَمَّامٌ (একই অর্থ- চোগলখোর) শব্দ রয়েছে।

بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ

وَعَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةِ مُسْلِمٍ: «نَمَّامٌ»

وعن حذيفة قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «لا يدخل الجنة قتات» . متفق عليه. وفي رواية مسلم: «نمام»

ব্যাখ্যাঃ (قَتَّاتٌ) বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যে কারো গোপন বা সিক্রেট কথা অন্যমনস্কভাব নিয়ে বা আড়ালে থেকে সতর্কতার সাথে এবং অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে (কান লাগিয়ে) শোনে এবং সেটা অন্যের কাছে কিংবা ঐ লোকের প্রতিপক্ষর নিকট তা পৌঁছে দেয়। (نَمَّامٌ) বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যে প্রকাশ্যে থেকেই কারো কথা শুনে এবং তা অপরের কাছে পৌঁছে দেয়। এ উভয় কর্মই হারাম ও নিন্দনীয়, কেননা এতে উদ্দেশ্য থাকে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কলহ সৃষ্টি করা অথবা অনিবার্য কারণেই এতে পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া কলহ সৃষ্টি হয়ে যায়। এরূপ কর্ম সম্পূর্ণরূপে হারাম। ইবনুল মালিক বলেনঃ যদি পরস্পরের দ্বন্দ্ব-কলহ নিরসনের জন্য এরূপ কার্য সম্পাদন করা হয় তবে তা নিন্দনীয় এবং হারাম হতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘অধিকাংশ গুপ্ত পরামর্শে কোন কল্যাণ নিহিত থাকে না, হ্যাঁ তবে যে ব্যক্তি দান অথবা কোন নেক কাজ কিংবা জনগণের মধ্যে পরস্পর সন্ধি স্থাপনে উৎসাহিত করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এরূপ কাজ করবে আমি সত্বরই তাকে মহান পুরস্কার প্রদান করব।’’ (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ১১৪)

এ বিষয়ে ‘আল্লামা গাযালী (রহিমাহুল্লাহ)-এর বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য, যার সংক্ষিপ্ত সার হলো : যার কাছে গীবত বা পরের কথা নিয়ে কেউ উপস্থিত হবে তার উচিত হলো তাকে সত্য বলে না জানা এবং তার কথা বিশ্বাস না করা। আর যার সম্পর্কে যা কিছু বলেছে তা নিয়ে তত্ত্ব অনুসন্ধানে লিপ্ত না হওয়া এবং কথা বহনকারীকে এরূপ কর্মকাণ্ড থেকে বারণ করা। এরূপ কাজকে সে খারাপ জানবে এবং ঘৃণাও করবে, কখনও এরূপ কাজের প্রতি সন্তুষ্ট হবে না। ‘আল্লামা নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ একজনের (গোপন) কথা অপরকে বলার মধ্যে যদি দীনের কোন কল্যাণ নিহিত থাকে তাহলে তা নিষেধ বা হারাম তো নয়ই বরং প্রকাশ করাটাই মুস্তাহাব, এমনকি কখনো তা ওয়াজিবও হয়ে যেতে পারে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬০৫৬; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০২৬; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮৬৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে

৪৮২৪-[১৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের সত্যানুসারী হওয়া উচিত। কেননা সত্যবাদিতা পুণ্যের দিকে পথপ্রদর্শন করে, আর পুণ্য জানণাতের দিকে পথপ্রদর্শন করে। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্য কথা বলে এবং সত্য বলতে চেষ্টা করে, আল্লাহ তা’আলার দরবারে তাকে সত্যবাদী বলে লেখা হয়। তোমরা মিথ্যাচার থেকে বেঁচে থাকো। মিথ্যা পাপাচারের পথ দেখায়, আর পাপ জাহান্নামের দিকে পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যা বলতে সচেষ্ট থাকে, আল্লাহ তা’আলার দরবারে তাকে বড় মিথ্যুক বলে লেখা হয়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

মুসলিম-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ সত্য বলা পুণ্যের কাজ, আর পুণ্য মানুষকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। মিথ্যা বলা পাপের কাজ, আর পাপ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যায়।

بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى الْبِرِّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَصْدُقُ وَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ صِدِّيقًا. وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ كَذَّابًا» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَة مُسلم قَالَ: «إِنَّ الصِّدْقَ بِرٌّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ. وَإِنَّ الْكَذِبَ فُجُورٌ وَإِنَّ الْفُجُورَ يهدي إِلَى النَّار»

وعن عبد الله بن مسعود قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «عليكم بالصدق فان الصدق يهدي الى البر وان البر يهدي الى الجنة وما يزال الرجل يصدق ويتحرى الصدق حتى يكتب عند الله صديقا. واياكم والكذب فان الكذب يهدي الى الفجور وان الفجور يهدي الى النار وما يزال الرجل يكذب ويتحرى الكذب حتى يكتب عند الله كذابا» . متفق عليه. وفي رواية مسلم قال: «ان الصدق بر وان البر يهدي الى الجنة. وان الكذب فجور وان الفجور يهدي الى النار»

ব্যাখ্যাঃ সত্যবাদিতা মানব চরিত্রের শ্রেষ্ঠ গুণ এবং মিথ্যাচারিতা নিকৃষ্ট মানবীয় দোষ। সত্য কথা বলা, সত্য বলার চেষ্টা এবং এর উপর অবিচল থাকার প্রত্যয় মু’মিন জীবনের জন্য একান্তই কাম্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী, (عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ) এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ الْزَمُوا الصِّدْقَ অর্থাৎ তোমরা সত্যবাদিতাকে নিজের জন্য ওয়াজিব করে নাও। সত্যবাদিতা মানুষকে পুণ্যের পথ ধরিয়ে জান্নাতে পৌঁছিয়ে থাকে। মানুষ যখন সত্যাশ্রয়ী হয়, সত্যই হয় জীবনের একমাত্র অবলম্বন, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে সিদ্দীক বা চরম সত্যবাদীরূপে লিখে নেন। আল্লাহর নিকট নবীগণের মর্যাদার পরই ‘সিদ্দীক্বীনদের’ মর্যাদা। সত্যবাদী সিদ্দীকানের মর্যাদা নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে মিথ্যা বলা বা মিথ্যাচারিতা স্খলিত চরিত্রের বিভৎসরূপ। মিথ্যাবাদী আল্লাহর নিকট ভীষণ অপছন্দনীয় ব্যক্তি। মিথ্যা মানুষকে পাপাচারিতার পথ ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে। কোন মানুষ যখন মিথ্যা বলে, মিথ্যা বলার চিন্তা ফিকর নিয়েই সর্বদা থাকে, তখন আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাকে মিথ্যুক হিসেবে লিখে নেয়া হয়।

‘আল্লামা নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী- يُكْتَبُ তাকে লিখা হয়, এখানে তার অর্থ হলো : তার ওপর ঐ গুণের হুকুম লাগানো হয়, ফলে সে ঐ গুণের অধিকারী হয়ে হয়তো সিদ্দীক্বীনদের পুরস্কার লাভ করে না হয় মিথ্যাবাদী হয়ে তার শাস্তি ভোগ করে।

..... মাখলূক বা সৃষ্টির কাছে এটা প্রকাশের উদ্দেশ্য হলো : হয় সে ভালো-মন্দ লেখক মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) হাতে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে আর না হয় আল্লাহর অপ্রিয় হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৬ খন্ড, হাঃ ২৬০৭/১০৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে

৪৮২৫-[১৪] উম্মু কুলসূম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে ব্যক্তি মিথ্যুক নয়, যে লোকেদের মধ্যে মীমাংসা করে, ভালো কথা বলে এবং ভালো কথা আদান-প্রদান করে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ

وَعَنْ أُمِّ كُلْثُومٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «لَيْسَ الْكَذَّابُ الَّذِي يُصْلِحُ بَيْنَ النَّاسِ وَيَقُولُ خيرا وينمي خيرا» . مُتَّفق عَلَيْهِ

وعن ام كلثوم رضي الله عنها قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ليس الكذاب الذي يصلح بين الناس ويقول خيرا وينمي خيرا» . متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ মিথ্যা সর্বদাই নিন্দনীয় এবং মিথ্যুক ব্যক্তি আল্লাহর অপ্রিয় বান্দা। তবে মিথ্যা যদি মানুষের মধ্যকার পারস্পারিক দ্বন্দ্ব-কলহ নিরসনের নিমিত্তে হয় তখন তা নিন্দনীয় নয় এবং ঐ মিথ্যুক ব্যক্তি প্রকৃত মিথ্যাবাদী নয়। সে যদি বাহ্যিক দৃষ্টিতে মিথ্যা কথা বলেও থাকে। কিন্তু তার কথার অন্তর্নিহিত অর্থ হবে সত্য অথবা তার উদ্দেশ্য হবে মহৎ। যেমন যায়দ এবং ‘আমর-এর মধ্যকার দ্বন্দ্ব-কলহ নিরসনে কোন ব্যক্তি ‘আমরকে গিয়ে (মিথ্যাভাবে) বলল, ওহে ‘আমর! যায়দ তোমাকে সালাম জানিয়েছে। সে তোমার প্রশংসা করে বলল, আমি ‘আমরকে ভালোবাসি। অনুরূপ যায়দ-এর কাছে গিয়েও ‘আমর সম্পর্কে অনুরূপ কথা বলল, ফলে উভয় উভয়ের প্রতি শত্রুভাব এবং আত্মকলহ দূর হয়ে বন্ধুত্বের মানসিকতা সৃষ্টি হয়ে গেল। (মিরকাত; ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৯২; শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ ২৬০৫/১০১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে

৪৮২৬-[১৫] মিকদাদ ইবনু আসওয়াদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা প্রশংসায় বাড়াবাড়িকারীদের দেখবে, তখন তাদের মুখে মাটি নিক্ষেপ করবে। (মুসলিম)[1]

بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ

وَعَنِ
الْمِقْدَادِ بْنِ الْأَسْوَدِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا رَأَيْتُمُ الْمَدَّاحِينَ فَاحْثُوا فِي وُجُوهِهِمُ التُّرَاب» . رَوَاهُ مُسلم

وعن المقداد بن الاسود رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اذا رايتم المداحين فاحثوا في وجوههم التراب» . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ কারো প্রশংসায় যখন অতিরঞ্জন হবে অথবা অহেতুক হবে অথবা প্রশংসা হবে নিজেকে চাটুকারিতামূলক কিংবা কিছু খাওয়া পাওয়ার জন্য তখন এ হুকুম।

এ হাদীসে রয়েছে তার চেহারায় মাটি নিক্ষেপ কর। কোন কোন সংকলনে রয়েছে তার মুখে মাটি পুরে দাও। মুখে মাটি পুরে দেয়া অথবা ধূলা নিক্ষেপ করা হলো হাদীসের প্রকাশ্য বা বাহ্যিক অর্থ। কিন্তু কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ হলো তার চাহিদার মাল-সম্পদ তাকে দিয়ে দাও। কেননা দুনিয়ার মাল-সম্পদ ইযযত সম্মানের তুলনায় ধূলাবালির মতই তুচ্ছ বস্তু, সুতরাং সেই বস্তু তাকে দিয়ে তার মুখ বন্ধ করে ফেলো।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, তাকে সামান্য কিছু দিয়ে দাও, এই সামান্য কিছুকেই ধূলার সাথে সাদৃশ্য দিয়েছেন। (এছাড়াও আরো অনেকে অনেক ব্যাখ্যা করেছেন, বিস্তারিত মূল মিরক্বাতুল মাফাতীহ দ্রঃ)

মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সামনে প্রশংসাকারীকে তিরস্কার করা এবং এ কাজ থেকে বিরত থাকার প্রতি উৎসাহিত করা। কেননা কারো সামনে তার প্রশংসা তাকে দাম্ভিক-অহংকারী বানিয়ে ফেলে।

‘আল্লামা খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কিছু মানুষ আছে যারা স্বভাবগতভাবে মানুষের প্রশংসা করে তার নিকট থেকে কিছু খেতে বা পেতে চায়, নিশ্চয় এদের জন্য অত্র হাদীসের বিধান যথার্থ। কিন্তু যে ব্যক্তি সমাজের কল্যাণে প্রশংসনীয় কোন ভালো কাজ করল, অন্যদেরকেও এমন ভালো কাজে উৎসাহ দানের লক্ষ্যে এবং কল্যাণকর কাজে অনুপ্রাণিত করতে কারো প্রশংসা করল, সে ঐ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয়।

(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮৯৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে

৪৮২৭-[১৬] আবূ বকরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির খুব প্রশংসা করল। এটা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ’’হায় দুর্ভাগা! তুমি তোমার ভাইয়ের গলা কাটলে’’। এ বাক্য তিনবার বললেন। অতঃপর বললেনঃ যদি তোমরা কারো প্রশংসা করা প্রয়োজন মনে করো, তবে এরূপ বলবে, ’’আমি অমুক ব্যক্তি সম্পর্কে এ ধারণা পোষণ করি, প্রকৃত অবস্থার সঠিক হিসাব আল্লাহ তা’আলাই জানেন’’। আর এটা ঐ সময় বলবে, যখন সে ব্যক্তি সম্পর্কে সত্যি সত্যিই তুমি এ ধারণা পোষণ করবে। কাউকে পূত-পবিত্র আখ্যায়িত করতে আল্লাহ তা’আলার ওপর বাড়াবাড়ি করবে না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ

وَعَن أبي بكرَة قَالَ: أَثْنَى رَجُلٌ عَلَى رَجُلٌ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «وَيْلَكَ قَطَعْتَ عُنُقَ أَخِيكَ» ثَلَاثًا مَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَادِحًا لَا محَالة فَلْيقل: أَحسب فلَانا وَالله حسيبه إِنْ كَانَ يُرَى أَنَّهُ كَذَلِكَ وَلَا يُزَكِّي على الله أحدا . مُتَّفق عَلَيْهِ

وعن ابي بكرة قال: اثنى رجل على رجل عند النبي صلى الله عليه وسلم فقال: «ويلك قطعت عنق اخيك» ثلاثا من كان منكم مادحا لا محالة فليقل: احسب فلانا والله حسيبه ان كان يرى انه كذلك ولا يزكي على الله احدا . متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে যে লোকটি অন্য আরেকজন লোকের প্রশংসা করছিল এই প্রশংসা ছিল মাত্রাতিরিক্ত এবং প্রশংসার ক্ষেত্রে অতি বাড়াবাড়ি, ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ব্যাপারে বলেন (وَيْلَكَ) তোমার ধ্বংস হোক। (وَيْلَكَ) শব্দটি ‘আরবদের বর্ণনা বাগধারায় সতর্ক করণার্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। এর অর্থ (هَلَكْتَ هَلَاكًا) তুমি একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছ অথবা ধ্বংস করে ফেলেছ। অর্থাৎ প্রশংসার ক্ষেত্রে তুমি অতিরঞ্জন করে নিজেকে মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে ফেলেছ, অথবা যার অতিরিক্ত প্রশংসা করছ তাকে ভীষণ ক্ষতির মধ্যে ফেলেছ। এ শব্দটি নিখাদ বদ্দু‘আ অর্থে নয় বরং ধমকী কিংবা আফসোস ও পরিতাপ প্রকাশার্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। সুতরাং (وَيْلَكَ) অর্থ তোমার জন্য আফসোস ও পরিতাপ। কোন কোন সংকলনে (وَيْحَكَ) শব্দ ব্যবহার হয়েছে। এটাও ধমকী অর্থে ব্যবহার হয়, তবে এতে থাকে মুহববাত ও দয়াশীলতা।

প্রশংসাকারীকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা (قَطَعْتَ عُنُقَ أَخِيكَ) ‘‘তুমি তোমার ভাইয়ের গর্দান কেটে দিলে’’ এটা রূপকার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে ধ্বংস দ্বারা দীনের ক্ষতি বা ধ্বংস উদ্দেশ্য। কারো প্রশংসা করতে হলে, নিজের ধারণার কথাটুকু ব্যক্ত করবে মাত্র। সে এভাবে বলবে আমার ধারণা মতে অমুকে ভালো বা এমন। অথবা আমি তো তাকে ভালো বলেই মনে করি বা ধারণা করি। প্রকৃত ভালো কে সে তো আল্লাহ জানেন। অতএব আল্লাহর জ্ঞানের ও জানার উপর অতি প্রশংসাই আল্লাহর ওপর বাড়াবাড়ি করা, যা নিষিদ্ধ।

(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১৬২; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৯৭; শারহুন নাবাবী ১৮শ খন্ড, হাঃ ৩০০০/৬৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ বাকরা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে

৪৮২৮-[১৭] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি জান গীবত কাকে বলে? সাহাবীগণ বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূলই ভালো জানেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমার মুসলিম ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা তার কাছে খারাপ লাগবে। জিজ্ঞেস করা হলো, যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে সে ত্রুটি বিদ্যমান থাকে, তুমি যে দোষ-ত্রুটির কথা বললে, তার মধ্যে সে দোষ-ত্রুটি থাকলেই তো তুমি গীবত করলে। আর যদি দোষ-ত্রুটি বর্তমান না থাকে, তবে তুমি ’’বুহতান’’ (মিথ্যারোপ) করলে। (মুসলিম)[1]

অপর এক বর্ণনায় রয়েছে যে, যদি তুমি তোমার ভাইয়ের এমন দোষের কথা বলো, যা তার মধ্যে রয়েছে, তবে তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তার সম্পর্কে এমন দোষের কথা বলো, যা তার মধ্যে নেই, তবে তুমি তার প্রতি ’’বুহতান’’ (মিথ্যা অপবাদ) দিলে।

بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ

وَعَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَتُدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ . قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِي أَخِي مَا أَقُولُ؟ قَالَ: «إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ فَقَدِ اغْتَبْتَهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ مَا تَقُولُ فَقَدْ بَهَتَّهُ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ. وَفِي رِوَايَةٍ: «إِذَا قُلْتَ لِأَخِيكَ مَا فِيهِ فَقَدِ اغْتَبْتَهُ وَإِذَا قُلْتَ مَا لَيْسَ فِيهِ فقد بَهته»

وعن ابي هريرة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «اتدرون ما الغيبة؟» قالوا: الله ورسوله اعلم. قال: ذكرك اخاك بما يكره . قيل افرايت ان كان في اخي ما اقول؟ قال: «ان كان فيه ما تقول فقد اغتبته وان لم يكن فيه ما تقول فقد بهته» . رواه مسلم. وفي رواية: «اذا قلت لاخيك ما فيه فقد اغتبته واذا قلت ما ليس فيه فقد بهته»

ব্যাখ্যাঃ হাদীসটি আল কুরআনের এ আয়াতের ব্যাখ্যাঃ وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا ‘‘তোমাদের কেউ একে অপরের গীবত করবে না।’’ (সূরাহ্ আল হুজুরাত ৪৯ : ১২)

এ আয়াত নাযিল হলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলেন, (أَتَدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ؟) তোমরা কি জান গীবত কি? তারা তখন জওয়াব দিলেন আল্লাহ ও তার রসূলই ভালো জানেন। এভাবে প্রশ্ন-উত্তর পরম্পরায় বিষয়টির বিস্তারিত ব্যাখ্যা অত্র হাদীসে বিধৃত হয়েছে।

ইমাম নাবাবী বলেনঃ গীবত হলো জঘন্য অপরাধসমূহের একটি অপরাধ। এটা যখন মানব সমাজে ব্যাপকভাবে বিস্তার ঘটে তখন তা থেকে অল্প মানুষই ফিরে আসতে সক্ষম হয়।

গীবতের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهٗ) তোমার (দীনী) ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা যা সে অপছন্দ করে তাই গীবত।

এ বাক্যের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘আল্লামা নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তোমার ভাই সম্পর্কে তার অসাক্ষাতে কিছু বলার বিষয়টি ব্যাপক। তার শারীরিক কোন বিষয়েও হতে পারে, তার জান-মাল, চরিত্র এমনকি আর্থিক, পারিবারিক, সন্তান-সন্ততি কিংবা পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি সংক্রান্ত বিষয়েও হতে পারে। আর কারো সম্পর্কে গীবত যে শুধু মুখের ভাষায় হবে এমনটি নয়, কারো লিখনির মাধ্যমে, ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে, চোখ টিপের মাধ্যমে, হাত-মাথা বা অন্য কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমেও হতে পারে। মোটকথা যা দ্বারা অন্যের কাছে তোমার মুসলিম ভাইয়ের ত্রুটি বা তুচ্ছতা তুলে ধরবে এবং সে তা বুঝতে পেরে অপছন্দ করবে সেটাই গীবত, যা সম্পূর্ণরূপে হারাম। অনুরূপ খুড়িয়ে চলা, লাঠি, ভর দিয়ে চলা ইত্যাদি দ্বারা যদি কারো ত্রুটি বুঝানো উদ্দেশ্য হয় তবে সেটাও গীবতের অন্তর্ভুক্ত হবে। কারো মধ্যে কোন দোষ বিদ্যমান থাকলে সেটা অন্যের কাছে বর্ণনা করায় তা গীবত হয়। কিন্তু তার মধ্যে যদি ঐ দোষ না থাকে আর তা অন্যের কাছে প্রকাশ করা হয় তবে সেটা হয় ‘বুহতান’ বা অপবাদ তথা (কারো সম্পর্কে) মহা মিথ্যাচার।

(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ ২৫৮৯/৭০; ‘আওনুল মাবূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮৬৬; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৩৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে

৪৮২৯-[১৮] ’আয়িশাহ্ সিদ্দিকা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থনা করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)Adobe Systems-কে) বললেনঃ তাকে আসার অনুমতি দাও। সে নিজের গোত্রের খারাপ ব্যক্তি। যখন লোকটি তাঁর দরবারে এসে বসল, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রশস্ত ললাটে তার দিকে তাকালেন এবং মৃদু-হাস্যে তার সাথে কথা বললেন। যখন লোকটি চলে গেল, তখন ’আয়িশাহ্ সিদ্দিকা (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আপনি লোকটি সম্পর্কে এমন এমন বলেছেন, অতঃপর আপনিই তার সাথে প্রশস্ত ললাটে সাক্ষাৎ করলেন এবং মৃদু হেসে কথা বললেন। এটা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি আমাকে কখনো অশ্লীলভাষী পেয়েছ? কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে মানুষের মধ্যে মর্যাদার দিক দিয়ে সে-ই নিকৃষ্ট হবে, যাকে মানুষ তার অনিষ্টের ভয়ে ত্যাগ করে।

অপর এক বর্ণনায় আছে, যাকে মানুষ তার অশ্লীলতার ভয়ে পরিত্যাগ করবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ رَجُلًا اسْتَأْذَنَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَقَالَ: «ائْذَنُوا لَهُ فَبِئْسَ أَخُو الْعَشِيرَةِ» فَلَمَّا جَلَسَ تَطَلَّقَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي وَجْهِهِ وَانْبَسَطَ إِلَيْهِ. فَلَمَّا انْطَلَقَ الرَّجُلُ قَالَتْ عَائِشَةُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ قُلْتَ لَهُ: كَذَا وَكَذَا ثُمَّ تَطَلَّقْتَ فِي وَجْهِهِ وَانْبَسَطْتَ إِلَيْهِ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَتى عهدتني فحاشا؟ ؟ إِن شَرّ النَّاس مَنْزِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ تَرَكَهُ النَّاسُ اتِّقَاءَ شَرِّهِ» وَفِي رِوَايَةٍ: «اتِّقَاءَ فُحْشِهِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

وعن عاىشة رضي الله عنها ان رجلا استاذن على النبي صلى الله عليه وسلم. فقال: «اىذنوا له فبىس اخو العشيرة» فلما جلس تطلق النبي صلى الله عليه وسلم في وجهه وانبسط اليه. فلما انطلق الرجل قالت عاىشة: يا رسول الله قلت له: كذا وكذا ثم تطلقت في وجهه وانبسطت اليه. فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «متى عهدتني فحاشا؟ ؟ ان شر الناس منزلة يوم القيامة من تركه الناس اتقاء شره» وفي رواية: «اتقاء فحشه» . متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ যে লোকটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করেছিল তার নাম এখানে উল্লেখ নেই। কেউ বলেছেন, তার নাম ছিল ‘উয়াইনাহ্ আল ফাযারী। আবার কেউ বলেছেন, মাখরামাহ্ ইবনু নাওফাল। লোকটি প্রবেশের সময় তার সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মন্তব্য করলেন- সে গোত্রের কতই না নিকৃষ্ট লোক। সহীহুল বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, সে গোত্রের কতই না নিকৃষ্ট লোক এবং কতই না নিকৃষ্ট লোকের সন্তান। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে এমন কথা বলার কারণ হলো- সে তখনও ইসলাম গ্রহণ করেনি, কিন্তু জনসম্মুখে ভূয়াভাবে ইসলাম প্রকাশ করেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অবস্থা প্রকাশের জন্য এমন কথা বলেছেন যাতে কেউ তার কথায় ধোঁকায় না পরে এবং প্রতারিত না হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় দেখা করেন এবং মিষ্টি ও নরম কথা বলেন। এটা ছিল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বভাবজাত অভ্যাস, তিনি শত্রুর সাথেও নরম ও মিষ্টি কথা বলতেন। তাছাড়া ঐ লোকটির অন্তর জয় করাও ছিল একটি উদ্দেশ্য।

শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থকার এ হাদীসের ভিত্তিতে বলেন, ফাসিক ব্যক্তির ভিতরের অসৎ রূপ প্রকাশ করা বৈধ, যাতে জনগণ তার অনিষ্টতা থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে। এরূপ বলা বা করা গীবতের অন্তর্ভুক্ত হবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অন্তরের লুকায়িত কুফরী প্রকাশ করে স্বীয় নুবুওয়াতী মু‘জিযা প্রকাশ করেছেন, এটা গীবত হবে না।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যে নিজের পাপাচারী এবং বিদ্‘আত প্রকাশ করে বেড়ায় তার গীবত দোষণীয় নয়। এরূপ আটস্থলে গীবত করা বৈধ, বিস্তারিত দেখুন- রিয়াযুস্ সলিহীন, গীবত অধ্যায়।

(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬০৩২; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৮৩; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৯৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে

৪৮৩০-[১৯] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সকল উম্মাত ক্ষমাপ্রাপ্তদের মধ্যে আছে; কিন্তু যে ব্যক্তি নিজের অপরাধ প্রকাশকারী, সে ক্ষমাপ্রাপ্তদের মধ্যে নয়। এটা কতই না লজ্জাহীনতার কাজ যে, লোক রাতে খারাপ কাজ করে, আর আল্লাহ তা’আলা তার কুকর্ম গোপন করে রাখেন। অতঃপর সকাল হতেই লোকেদেরকে বলে ফেলে, হে অমুক! আমি রাতে এরূপ কাজ করেছি। আল্লাহ তা’আলা রাতে তার দোষ ঢেকে ছিলেন, কিন্তু সকাল হতেই সে আল্লাহ তা’আলার পর্দা উন্মুক্ত করে দিলো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

এ প্রসঙ্গে আবূ হুরায়রা কর্তৃক বর্ণিত হাদীস مَنْ كَانَ يُؤمِنُ بِاللهِ الخ যিয়াফাত অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে।

بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كُلُّ أُمَّتِي مُعَافًى إِلَّا الْمُجَاهِرُونَ وَإِنَّ مِنَ الْمَجَانَةِ أَنْ يَعْمَلَ الرَّجُلُ عَمَلًا بِاللَّيْلِ ثُمَّ يُصْبِحَ وَقَدْ سَتَرَهُ اللَّهُ. فَيَقُولَ: يَا فُلَانُ عَمِلْتُ الْبَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا وَقَدْ بَاتَ يَسْتُرُهُ رَبُّهُ وَيُصْبِحُ يَكْشِفُ سِتْرَ اللَّهِ عَنْهُ . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
وَذكر فِي حَدِيث أبي هُرَيْرَة: «من كَانَ يُؤمن بِاللَّه» فِي «بَاب الضِّيَافَة»

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: كل امتي معافى الا المجاهرون وان من المجانة ان يعمل الرجل عملا بالليل ثم يصبح وقد ستره الله. فيقول: يا فلان عملت البارحة كذا وكذا وقد بات يستره ربه ويصبح يكشف ستر الله عنه . متفق عليه وذكر في حديث ابي هريرة: «من كان يومن بالله» في «باب الضيافة»

ব্যাখ্যাঃ অনেক মানুষ এমন রয়েছে, যে রাতের অন্ধকারে গোপনে পাপ করে, তার এ পাপের কথা কেউ জানে না, আল্লাহ তা‘আলা তার পাপকে গোপন করে রাখেন, কিন্তু সে আল্লাহর সেই গোপনীয়তার পর্দা উন্মোচন করে দিয়ে দিনের বেলা নিজের গোপন পাপের কথা মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেয়। আল্লাহ এ কাজে ভীষণ অসন্তুষ্ট হন এবং তিনি আর তাকে ক্ষমা করেন না। গোপনীয় পাপ প্রকাশ না করলে কোন না কোনভাবে তা মাফ হয়ে যায়। হয়তো সে নিজেই অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ করে ক্ষমা প্রার্থনা করে, ফলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন, অথবা তিনি অন্য কোন নেক ‘আমল করেন যার কারণে তার ঐ গোপন পাপ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু যখন সে তা মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেয়ার ধৃষ্টতা দেখান তখন আল্লাহ তার ক্ষমার পথ বন্ধ করে দেন। কারণ এটা এক প্রকার অহংকার ও সীমালঙ্ঘন, আল্লাহ অহংকারী এবং সীমালঙ্ঘনকারীকে ভালোবাসেন না।

(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬০৬৯; শারহুন নাবাবী ১৮শ খন্ড, হাঃ ২৯৯০/৫২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৯ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে