পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮২৪-[১৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের সত্যানুসারী হওয়া উচিত। কেননা সত্যবাদিতা পুণ্যের দিকে পথপ্রদর্শন করে, আর পুণ্য জানণাতের দিকে পথপ্রদর্শন করে। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্য কথা বলে এবং সত্য বলতে চেষ্টা করে, আল্লাহ তা’আলার দরবারে তাকে সত্যবাদী বলে লেখা হয়। তোমরা মিথ্যাচার থেকে বেঁচে থাকো। মিথ্যা পাপাচারের পথ দেখায়, আর পাপ জাহান্নামের দিকে পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যা বলতে সচেষ্ট থাকে, আল্লাহ তা’আলার দরবারে তাকে বড় মিথ্যুক বলে লেখা হয়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
মুসলিম-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ সত্য বলা পুণ্যের কাজ, আর পুণ্য মানুষকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। মিথ্যা বলা পাপের কাজ, আর পাপ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যায়।
بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى الْبِرِّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَصْدُقُ وَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ صِدِّيقًا. وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ كَذَّابًا» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَة مُسلم قَالَ: «إِنَّ الصِّدْقَ بِرٌّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ. وَإِنَّ الْكَذِبَ فُجُورٌ وَإِنَّ الْفُجُورَ يهدي إِلَى النَّار»
ব্যাখ্যাঃ সত্যবাদিতা মানব চরিত্রের শ্রেষ্ঠ গুণ এবং মিথ্যাচারিতা নিকৃষ্ট মানবীয় দোষ। সত্য কথা বলা, সত্য বলার চেষ্টা এবং এর উপর অবিচল থাকার প্রত্যয় মু’মিন জীবনের জন্য একান্তই কাম্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী, (عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ) এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ الْزَمُوا الصِّدْقَ অর্থাৎ তোমরা সত্যবাদিতাকে নিজের জন্য ওয়াজিব করে নাও। সত্যবাদিতা মানুষকে পুণ্যের পথ ধরিয়ে জান্নাতে পৌঁছিয়ে থাকে। মানুষ যখন সত্যাশ্রয়ী হয়, সত্যই হয় জীবনের একমাত্র অবলম্বন, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে সিদ্দীক বা চরম সত্যবাদীরূপে লিখে নেন। আল্লাহর নিকট নবীগণের মর্যাদার পরই ‘সিদ্দীক্বীনদের’ মর্যাদা। সত্যবাদী সিদ্দীকানের মর্যাদা নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে মিথ্যা বলা বা মিথ্যাচারিতা স্খলিত চরিত্রের বিভৎসরূপ। মিথ্যাবাদী আল্লাহর নিকট ভীষণ অপছন্দনীয় ব্যক্তি। মিথ্যা মানুষকে পাপাচারিতার পথ ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে। কোন মানুষ যখন মিথ্যা বলে, মিথ্যা বলার চিন্তা ফিকর নিয়েই সর্বদা থাকে, তখন আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাকে মিথ্যুক হিসেবে লিখে নেয়া হয়।
‘আল্লামা নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী- يُكْتَبُ তাকে লিখা হয়, এখানে তার অর্থ হলো : তার ওপর ঐ গুণের হুকুম লাগানো হয়, ফলে সে ঐ গুণের অধিকারী হয়ে হয়তো সিদ্দীক্বীনদের পুরস্কার লাভ করে না হয় মিথ্যাবাদী হয়ে তার শাস্তি ভোগ করে।
..... মাখলূক বা সৃষ্টির কাছে এটা প্রকাশের উদ্দেশ্য হলো : হয় সে ভালো-মন্দ লেখক মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) হাতে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে আর না হয় আল্লাহর অপ্রিয় হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৬ খন্ড, হাঃ ২৬০৭/১০৩)