পরিচ্ছেদঃ ৯. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি
৪৮০৫-[২৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ)-এর জন্য মসজিদে মিম্বার স্থাপন করতেন। হাসসান(রাঃ) তার উপর দণ্ডায়মান হতেন এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে গর্বের কবিতা আবৃত্তি করতেন অথবা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ হতে বিদ্রূপাত্মক কবিতা পাঠ করতেন। আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন : আল্লাহ তা’আলা ’’রূহুল কুদস’’ অর্থাৎ- জিব্রীল (আ.)-এর দ্বারা হাসসানকে সাহায্য করছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে ভৎর্সনার প্রতিউত্তর দিতে থাকে বা সত্য গৌরব প্রকাশ করতে থাকে। (বুখারী)[1]
عَنْ
عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَضَعُ لِحَسَّانَ مِنْبَرًا فِي الْمَسْجِدِ يَقُومُ عَلَيْهِ قَائِمًا يُفَاخِرُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أوينافح. وَيَقُولُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ يُؤَيِّدُ حَسَّانَ بِرُوحِ الْقُدُسِ مَا نَافَحَ أَوْ فَاخَرَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
পরিচ্ছেদঃ ৯. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি
৪৮০৬-[২৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একজন উষ্ট্র চালক গায়ক ছিল। তাঁকে ’’আনজাশাহ্’’ বলা হত। তাঁর স্বর ছিল খুবই মধুর। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেনঃ হে আনজাশাহ্! উটকে ধীরে ধীরে চালাও, কাঁচের পাত্রগুলোকে ভেঙ্গো না। কতাদাহ্ (রহঃ) বলেনঃ ’’আয়না’’ বলতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুর্বল-নাজুক মহিলাদের বুঝিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
وَعَن أنسٍ قَالَ: كَانَ لِلنَّبِيِّ حَادٍ يُقَالُ لَهُ: أَنْجَشَةُ وَكَانَ حَسَنَ الصَّوْتِ. فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «رُوَيْدَكَ يَا أَنْجَشَةُ لَا تَكْسِرِ الْقَوَارِيرَ» . قَالَ قَتَادَةُ: يَعْنِي ضَعْفَةَ النِّسَاءِ. مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ (لَا تَكْسِرِ الْقَوَارِيرَ) তোমার সুমধুর কণ্ঠ দিয়ে দুর্বল হৃদয়ের মেয়েদের আকৃষ্ট করো না।
যখন উট তার আওয়াজ শুনে দ্রুত আসতে চাইবে এমতাবস্থায় উটের পিঠে কোন মহিলা থাকলে তার কষ্ট হবে। তাই একটু নিচু আওয়াজে ডাকতে বলেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
শেষের মতটিকে মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা পছন্দনীয় মত হিসেবে গণ্য করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৯. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি
৪৮০৭-[২৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কবিতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কবিতাও এক প্রকার কথা। ভালো কবিতা ভালো কথা এবং খারাপ কবিতা খারাপ কথা। (দারাকুত্বনী)[1]
وَعَنْ
عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: ذُكِرَ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الشِّعْرُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هُوَ كَلَامٌ فَحَسَنُهُ حَسَنٌ وَقَبِيحُهُ قَبِيحٌ» . رَوَاهُ الدَّارَقُطْنِيّ
পরিচ্ছেদঃ ৯. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি
৪৮০৮-[২৬] ইমাম শাফি’ঈ (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি ’উরওয়াহ্ হতে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
وروى الشَّافِعِي
عَن عُرْوَة مُرْسلا
পরিচ্ছেদঃ ৯. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি
৪৮০৯-[২৭] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ’আরয নামক এক গ্রামের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করছিলাম। এমন সময় একজন কবি কবিতা আবৃত্তি করতে করতে সামনে এসে উপস্থিত হলো। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ শয়তানকে ধরে ফেলো অথবা বলেছেনঃ এ শয়তানকে থামিয়ে দাও। কোন ব্যক্তির উদর কবিতা দ্বারা পরিপূর্ণ করার চেয়ে পুঁজ দ্বারা ভর্তি করা অনেক উত্তম। (মুসলিম)[1]
وَعَن
أبي سعيدٍ الخدريِّ قَالَ: بَيْنَا نَحْنُ نَسِيرُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بالعرج إِذْ عَرَضَ شَاعِرٌ يُنْشِدُ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خُذُوا الشَّيْطَانَ أَوْ أَمْسِكُوا الشَّيْطَانَ لِأَنْ يَمْتَلِئَ جَوْفُ رَجُلٍ قَيْحًا خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَمْتَلِئَ شِعْرًا» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যাঃ (عَرَضَ) এটা ইয়ামানের একটি শহর। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
লোকটিকে শয়তান বলার কারণ : হয়ত সে কাফির ছিল। তার কবিতাটা মন্দ ছিল।
(শারহুন নাবাবী ১৫শ খন্ড, হাঃ ২২৫৯)
পরিচ্ছেদঃ ৯. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি
৪৮১০-[২৮] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গান-বাজনা মানুষের অন্তরে কপটতা উৎপাদন করে, যেভাবে পানি শস্য উৎপাদন করে। [ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) ’’শু’আবুল ঈমান’’-এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।][1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে, ‘‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু আবী রওয়াদ’’ নামের বর্ণনাকারীর ব্যাপারে। আবূ হাতিম ও অন্যান্যরা বলেছেন, তার বর্ণিত হাদীসগুলো মুনকার। য‘ঈফাহ্ ৫/৪৫১, হাঃ ২৪৩০, আবূ দাঊদ ৪৯২৭, এর সকল বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত কেবল ‘সাল্লাম’ নামের বর্ণনাকারীর শায়খ ছাড়া, কারণ তিনি তার শায়খের নাম উল্লেখ করেননি। কাজেই সে একজন মাজহূল। দেখুন- য‘ঈফাহ্ ২৪৩, য‘ঈফুল জামি‘ ৩৯৩৭, আস্ সুনানুস্ সুগরা ৪৬৬৯, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১৫৩৬।
وَعَنْ
جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْغِنَاءُ يُنْبِتُ النِّفَاقَ فِي الْقَلْبِ كَمَا يُنْبِتُ الْمَاءُ الزَّرْعَ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي «شعب الْإِيمَان»
ব্যাখ্যাঃ গানের ব্যাপারে ইমামদের মতামত :
ইমাম শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যে ব্যক্তি সর্বদা গান শুনে এবং প্রকাশ্যে গান গায় তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয় আর যে ব্যক্তি কম শুনে তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ বাজনা ছাড়া খালি গলায় গান গাওয়া ও শুনা মাকরূহ (অপছন্দনীয়)। আর গীটার তবলা এবং ঢোল ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র দ্বারা গান গাওয়া ও শুনা হারাম। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৯. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি
৪৮১১-[২৯] নাফি’ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ)-এর সাথে পথ অতিক্রম করেছিলাম। তখন তিনি বাঁশির সুর শুনতে পেলেন এবং নিজের দু’ অঙ্গুলি দু’ কানের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিলেন এবং রাস্তা থেকে সরে অপরদিকে চলে গেলেন। অতঃপর যখন অনেক দূরে চলে গেলেন, তিনি আমাকে বললেনঃ হে নাফি’! তুমি কি কোনকিছু শুনতে পাও। আমি বললামঃ জ্বী না। তখন তিনি তাঁর দু’ অঙ্গুলি দু’ কান থেকে বের করলেন এবং বললেনঃ একবার আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাঁশির শব্দ শুনতে পেলেন এবং আমি যেরূপ করেছি তিনিও সেরূপ করেছেন। নাফি’ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমি সে সময় অনেক ছোট ছিলাম। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ
نَافِعٍ قَالَ: كُنْتُ مَعَ ابْنِ عُمَرَ فِي طَرِيقٍ فَسَمِعَ مِزْمَارًا فَوَضَعَ أُصْبُعَيْهِ فِي أُذُنَيْهِ وَنَاءَ عَنِ الطَّرِيقِ إِلَى الْجَانِبِ الْآخَرِ ثُمَّ قَالَ لِي بَعْدَ أَنْ بَعُدَ: يَا نَافِعُ هَلْ تسمعُ شَيْئا؟ قلتُ: لَا فرفعَ أصبعيهِ عَن أُذُنَيْهِ قَالَ: كُنْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَمِعَ صَوْتَ يَرَاعٍ فَصَنَعَ مِثْلَ مَا صَنَعْتُ. قَالَ نَافِعٌ: فَكُنْتُ إِذْ ذَاكَ صَغِيرًا. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যাঃ আর নাফি‘ (রহিমাহুল্লাহ) শুনেছিলেন কেন? কারণ তিনি তখনও ছোট ছিলেন বালেগ হননি। হাদীসের শেষাংশে সেদিকে ইঙ্গিত রয়েছে, (كُنْتُ إِذْ ذَاكَ صَغِيرًا) ‘‘আমি সে সময় অনেক ছোট ছিলাম।’’
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে অপর একটি বর্ণনায় আছে, তিনিও কানে আঙ্গুল দিয়েছিলেন, কারণ সে সময় তিনিও ছোট ছিলেন। আর এখান থেকেই তিনি মাসআলাটি গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ তার অবস্থা সম্পর্কে ভালো জানেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)