লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮২৮-[১৭] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি জান গীবত কাকে বলে? সাহাবীগণ বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূলই ভালো জানেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমার মুসলিম ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা তার কাছে খারাপ লাগবে। জিজ্ঞেস করা হলো, যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে সে ত্রুটি বিদ্যমান থাকে, তুমি যে দোষ-ত্রুটির কথা বললে, তার মধ্যে সে দোষ-ত্রুটি থাকলেই তো তুমি গীবত করলে। আর যদি দোষ-ত্রুটি বর্তমান না থাকে, তবে তুমি ’’বুহতান’’ (মিথ্যারোপ) করলে। (মুসলিম)[1]
অপর এক বর্ণনায় রয়েছে যে, যদি তুমি তোমার ভাইয়ের এমন দোষের কথা বলো, যা তার মধ্যে রয়েছে, তবে তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তার সম্পর্কে এমন দোষের কথা বলো, যা তার মধ্যে নেই, তবে তুমি তার প্রতি ’’বুহতান’’ (মিথ্যা অপবাদ) দিলে।
بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَتُدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ . قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِي أَخِي مَا أَقُولُ؟ قَالَ: «إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ فَقَدِ اغْتَبْتَهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ مَا تَقُولُ فَقَدْ بَهَتَّهُ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ. وَفِي رِوَايَةٍ: «إِذَا قُلْتَ لِأَخِيكَ مَا فِيهِ فَقَدِ اغْتَبْتَهُ وَإِذَا قُلْتَ مَا لَيْسَ فِيهِ فقد بَهته»
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটি আল কুরআনের এ আয়াতের ব্যাখ্যাঃ وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا ‘‘তোমাদের কেউ একে অপরের গীবত করবে না।’’ (সূরাহ্ আল হুজুরাত ৪৯ : ১২)
এ আয়াত নাযিল হলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলেন, (أَتَدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ؟) তোমরা কি জান গীবত কি? তারা তখন জওয়াব দিলেন আল্লাহ ও তার রসূলই ভালো জানেন। এভাবে প্রশ্ন-উত্তর পরম্পরায় বিষয়টির বিস্তারিত ব্যাখ্যা অত্র হাদীসে বিধৃত হয়েছে।
ইমাম নাবাবী বলেনঃ গীবত হলো জঘন্য অপরাধসমূহের একটি অপরাধ। এটা যখন মানব সমাজে ব্যাপকভাবে বিস্তার ঘটে তখন তা থেকে অল্প মানুষই ফিরে আসতে সক্ষম হয়।
গীবতের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهٗ) তোমার (দীনী) ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা যা সে অপছন্দ করে তাই গীবত।
এ বাক্যের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘আল্লামা নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তোমার ভাই সম্পর্কে তার অসাক্ষাতে কিছু বলার বিষয়টি ব্যাপক। তার শারীরিক কোন বিষয়েও হতে পারে, তার জান-মাল, চরিত্র এমনকি আর্থিক, পারিবারিক, সন্তান-সন্ততি কিংবা পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি সংক্রান্ত বিষয়েও হতে পারে। আর কারো সম্পর্কে গীবত যে শুধু মুখের ভাষায় হবে এমনটি নয়, কারো লিখনির মাধ্যমে, ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে, চোখ টিপের মাধ্যমে, হাত-মাথা বা অন্য কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমেও হতে পারে। মোটকথা যা দ্বারা অন্যের কাছে তোমার মুসলিম ভাইয়ের ত্রুটি বা তুচ্ছতা তুলে ধরবে এবং সে তা বুঝতে পেরে অপছন্দ করবে সেটাই গীবত, যা সম্পূর্ণরূপে হারাম। অনুরূপ খুড়িয়ে চলা, লাঠি, ভর দিয়ে চলা ইত্যাদি দ্বারা যদি কারো ত্রুটি বুঝানো উদ্দেশ্য হয় তবে সেটাও গীবতের অন্তর্ভুক্ত হবে। কারো মধ্যে কোন দোষ বিদ্যমান থাকলে সেটা অন্যের কাছে বর্ণনা করায় তা গীবত হয়। কিন্তু তার মধ্যে যদি ঐ দোষ না থাকে আর তা অন্যের কাছে প্রকাশ করা হয় তবে সেটা হয় ‘বুহতান’ বা অপবাদ তথা (কারো সম্পর্কে) মহা মিথ্যাচার।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ ২৫৮৯/৭০; ‘আওনুল মাবূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮৬৬; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৩৪)