পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮২৩-[১২] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ চোগলখোর বা নিন্দাকারী জান্নাতে যাবে না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
মুসলিম-এর অপর বর্ণনায় قَتَّاتٌ-এর স্থলে نَمَّامٌ (একই অর্থ- চোগলখোর) শব্দ রয়েছে।
بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ
وَعَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةِ مُسْلِمٍ: «نَمَّامٌ»
ব্যাখ্যাঃ (قَتَّاتٌ) বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যে কারো গোপন বা সিক্রেট কথা অন্যমনস্কভাব নিয়ে বা আড়ালে থেকে সতর্কতার সাথে এবং অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে (কান লাগিয়ে) শোনে এবং সেটা অন্যের কাছে কিংবা ঐ লোকের প্রতিপক্ষর নিকট তা পৌঁছে দেয়। (نَمَّامٌ) বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যে প্রকাশ্যে থেকেই কারো কথা শুনে এবং তা অপরের কাছে পৌঁছে দেয়। এ উভয় কর্মই হারাম ও নিন্দনীয়, কেননা এতে উদ্দেশ্য থাকে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কলহ সৃষ্টি করা অথবা অনিবার্য কারণেই এতে পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া কলহ সৃষ্টি হয়ে যায়। এরূপ কর্ম সম্পূর্ণরূপে হারাম। ইবনুল মালিক বলেনঃ যদি পরস্পরের দ্বন্দ্ব-কলহ নিরসনের জন্য এরূপ কার্য সম্পাদন করা হয় তবে তা নিন্দনীয় এবং হারাম হতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘অধিকাংশ গুপ্ত পরামর্শে কোন কল্যাণ নিহিত থাকে না, হ্যাঁ তবে যে ব্যক্তি দান অথবা কোন নেক কাজ কিংবা জনগণের মধ্যে পরস্পর সন্ধি স্থাপনে উৎসাহিত করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এরূপ কাজ করবে আমি সত্বরই তাকে মহান পুরস্কার প্রদান করব।’’ (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ১১৪)
এ বিষয়ে ‘আল্লামা গাযালী (রহিমাহুল্লাহ)-এর বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য, যার সংক্ষিপ্ত সার হলো : যার কাছে গীবত বা পরের কথা নিয়ে কেউ উপস্থিত হবে তার উচিত হলো তাকে সত্য বলে না জানা এবং তার কথা বিশ্বাস না করা। আর যার সম্পর্কে যা কিছু বলেছে তা নিয়ে তত্ত্ব অনুসন্ধানে লিপ্ত না হওয়া এবং কথা বহনকারীকে এরূপ কর্মকাণ্ড থেকে বারণ করা। এরূপ কাজকে সে খারাপ জানবে এবং ঘৃণাও করবে, কখনও এরূপ কাজের প্রতি সন্তুষ্ট হবে না। ‘আল্লামা নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ একজনের (গোপন) কথা অপরকে বলার মধ্যে যদি দীনের কোন কল্যাণ নিহিত থাকে তাহলে তা নিষেধ বা হারাম তো নয়ই বরং প্রকাশ করাটাই মুস্তাহাব, এমনকি কখনো তা ওয়াজিবও হয়ে যেতে পারে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬০৫৬; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০২৬; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮৬৩)