পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

হারামের বাইরে মুহরিম ছাড়া অন্যদের জন্য শিকার করা হালাল। আর ভক্ষণযোগ্য প্রাণী কেবল শিকারীর জন্য শিকার করা বৈধ। আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তা’আলা বলেন: (وَإِذَا حَلَلْتُمْ فَاصْطَادُوا) ’’...যখন তোমরা ইহরাম মুক্ত হবে তখন শিকার করতে পার...’’- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫ : ২)। আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন, (وَحُرِّمَ عَلَيْكُمْ صَيْدُ الْبَرِّ مَا دُمْتُمْ حُرُمًا) ’’...তোমরা যতক্ষণ ইহরামে থাকবে ততক্ষণ স্থলে শিকার তোমাদের জন্য হারাম...’’- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫ : ৯৬)।

এখানে আমর বা নির্দেশসূচক শব্দ দ্বারা মুস্তাহাব উদ্দেশ্য, কেননা তা (শিকার করা একটি উপার্জন এবং এর দ্বারা সৃষ্টিকুলের উপকার হয়, অতএব তা) বৈধ। আসলে এখানে মূল বিষয় হলো আল্লাহ তা’আলার কথা: (وَمَا عَلَّمْتُمْ مِنَ الْجَوَارِحِ مُكَلِّبِينَ تُعَلِّمُونَهُنَّ مِمَّا عَلَّمَكُمُ اللهُ) ’’...শিকারী পশু-পাখি যাদেরকে তোমরা শিকার শিখিয়েছ আল্লাহ তোমাদেরকে যা শিখিয়েছেন তা থেকে তোমরা তাদেরকে শিখিয়ে থাক...’’- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫ : ৪)। অর্থাৎ তোমরা যে সকল প্রাণীকে শিকার করার উপর প্রশিক্ষণ দিয়েছ যথাক্রমে কোন হিংস্র প্রাণী, পাখি, কুকুর, চিতাবাঘ, বাজ পাখিসহ অন্যান্য প্রাণী যদি শিকার করে তোমাদের জন্য বহন করে নিয়ে আসে তবে তা থেকে তোমরা খেতে পার। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


৪০৬৪-[১] ’আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ যখন তুমি তোমার কুকুরকে (শিকারের প্রতি) লেলিয়ে দেবে, তখন আল্লাহর নাম নেবে। যদি সে শিকার ধরে তোমার জন্য রেখে দেয়, আর তুমিও শিকারকৃত জানোয়ারটিকে জীবিত অবস্থায় পেয়ে যাও, তাহলে তুমি তাকে যাবাহ করে দাও। আর যদি তুমি তাকে এমন অবস্থায় পাও যে, সে তাকে মেরে ফেলেছে, কিন্তু সে তার কোন অংশ খায়নি, তখন তুমি তা খেতে পার। আর যদি সে কিছু খেয়ে থাকে, তবে তুমি তা’ খাবে না। কেননা (তখন এটাই বুঝতে হবে যে,) সে এটা নিজের জন্য শিকার করেছে। আর যদি তুমি তোমার নিজের কুকুরের সঙ্গে অন্যের কুকুর দেখতে পাও যে, তারা শিকার ধরে তাকে মেরে ফেলেছে, তখন তা খেতে পারবে না। কেননা তুমি অবগত নও যে, তাদের উভয়ের মধ্যে কে শিকার ধরেছে বা মেরেছে। আর যখন তুমি তোমার তীর নিক্ষেপ করবে তখন আল্লাহর নাম নেবে, অতঃপর যদি (উক্ত শিকার) ন্যূনতম একদিন তোমার নিকট অদৃশ্য থাকে (এবং তুমি তাকে মৃত অবস্থায় পাও) এবং তার গায়ে একমাত্র তোমার তীরের চিহ্ন ব্যতীত অন্য কিছুর আঘাত না পাও, তখন ইচ্ছা করলে তাকে খেতে পার। কিন্তু যদি তুমি তাকে পানিতে ডুবন্ত অবস্থায় পেয়ে থাকো, তখন তাকে আর খেতে পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْأَوَّلُ

عَن عدِيِّ بنِ حاتِمٍ قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أَرْسَلْتَ كَلْبَكَ فَاذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ فَإِنْ أَمْسَكَ عَلَيْكَ فَأَدْرَكْتَهُ حَيًّا فَاذْبَحْهُ وَإِنْ أَدْرَكْتَهُ قَدْ قَتَلَ وَلَمْ يَأْكُلْ مِنْهُ فَكُلْهُ وَإِنْ أَكَلَ فَلَا تَأْكُلْ فَإِنَّمَا أَمْسَكَ عَلَى نَفْسِهِ فَإِنْ وَجَدْتَ مَعَ كَلْبِكَ كَلْبًا غَيْرَهُ وَقَدْ قَتَلَ فَلَا تَأْكُلْ فَإِنَّكَ لَا تَدْرِي أَيُّهُمَا قَتَلَ. وَإِذَا رَمَيْتَ بِسَهْمِكَ فَاذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ فَإِنْ غَابَ عَنْكَ يَوْمًا فَلَمْ تَجِدْ فِيهِ إِلَّا أَثَرَ سَهْمِكَ فَكُلْ إِنْ شِئْتَ وَإِنْ وَجَدْتَهُ غَرِيقًا فِي الْمَاءِ فَلَا تأكُلْ»

عن عدي بن حاتم قال: قال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اذا ارسلت كلبك فاذكر اسم الله فان امسك عليك فادركته حيا فاذبحه وان ادركته قد قتل ولم ياكل منه فكله وان اكل فلا تاكل فانما امسك على نفسه فان وجدت مع كلبك كلبا غيره وقد قتل فلا تاكل فانك لا تدري ايهما قتل. واذا رميت بسهمك فاذكر اسم الله فان غاب عنك يوما فلم تجد فيه الا اثر سهمك فكل ان شىت وان وجدته غريقا في الماء فلا تاكل»

ব্যাখ্যাঃ তিরমিযী, নাসায়ী ও ত্বহাবীতে সা‘ঈদ ইবনু জুবায়র (রহিমাহুল্লাহ)-এর সূত্রে ‘আদী ইবনু হাতিম  হতে বর্ণিত রয়েছে যে, যখন শিকারকৃত প্রাণী তীর দ্বারা আঘাত পাবে ও অন্য কোন হিংস্র প্রাণীর যদি চিহ্ন না পাও। আর এ মর্মে নিশ্চিত হবে যে, তোমার ছোঁড়া তীর দ্বারাই প্রাণীটি হত্যা হয়েছে, তবে তা খেতে পারবে। অন্যথায় তা খাবে না। আর জখমকৃত প্রাণী যদি পানিতে পরে যায় তবে তা খাবে না, কারণ তখন সন্দেহের সৃষ্টি হবে প্রাণীটি তীরের আঘাতে মারা গেছে, নাকি পানিতে ডোবার কারণে মারা গেছে। যদি এ মর্মে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, উক্ত প্রাণী তীরের আঘাতে জখম (রক্তক্ষরণ) হয়েছে এবং মারা গেছে, অতঃপর পানিতে পরেছে, তাহলে উক্ত প্রাণী খাওয়া হালাল।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ যখন শিকারকৃত প্রাণী পানিতে ডুবন্ত অবস্থায় পাওয়া যাবে তখন তা খাওয়া সর্বসম্মতিক্রমে হারাম হবে। আর উল্লেখিত হাদীসে শিকারীর কুকুর পাঠানোর সময় ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলার নির্দেশ সম্পর্কে ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ শিকারীর জন্য কোন প্রাণী প্রেরণ করার সময়, পশু যাবাহ করার সময় এবং কুরবানী করার সময় ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলতে হবে। ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলা ওয়াজিব না সুন্নাত- এ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। ইমাম শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ)-সহ একদল ‘উলামার মতে ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলা সুন্নাত, স্বেচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বর্জন করলে যাবাহকৃত ও শিকারকৃত প্রাণী হালাল হবে। আর এটাই ইমাম মালিক ও আহমাদ (রহিমাহুমাল্লাহ)-এর বর্ণনা। আহলুয্ যাহিরী বলেনঃ স্বেচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বর্জন করলে উক্ত প্রাণীর গোশত খাওয়া বৈধ নয়। এটা ইবনু সীরীন ও আবূ সাওর-এর বর্ণনা। ইমাম আবূ হানীফাহ্, মালিক, সুফ্ইয়ান সাওরী ও জামহূর ‘উলামা বলেনঃ ভুলবশতঃ ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বর্জন করলে উক্ত প্রাণী ভক্ষণ বৈধ আর ইচ্ছাকৃতভাবে ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বর্জন করলে বৈধ নয়। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫৪৮৪; শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ [১৯২৯]-২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আদী ইবনু হাতিম (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৪০৬৫-[২] উক্ত রাবী [’আদী ইবনু হাতিম (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমরা প্রশিক্ষিত কুকুর (শিকারের প্রতি) ছেড়ে থাকি। (এ ব্যাপারে কি বিধান?) তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি কুকুর শিকার ধরে তোমার জন্য রেখে দেয়, তবে তা খেতে পার। আমি জিজ্ঞেস করলাম, যদি তারা শিকারকে মেরে ফেলে। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, আমরা তো (কখনো কখনো তীর-বর্শার ফলক নিক্ষেপ করেও শিকার) করি। (তার বিধান কি?) তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যা তীরের ধারে ক্ষত করে সেটা খাও। আর যা তীরের চোট লেগে মরে যায় তা খাবে না। কেননা তা প্রহারে মৃত। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْهُ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا نُرْسِلُ الْكِلَابَ الْمُعَلَّمَةَ قَالَ: «كُلْ مَا أَمْسَكْنَ عَلَيْكَ» قُلْتُ: وَإِنْ قَتَلْنَ؟ قَالَ: «وَإِنْ قَتَلْنَ» قُلْتُ: إِنَّا نَرْمِي بِالْمِعْرَاضِ. قَالَ: «كُلُّ مَا خزق وَمَا أصَاب بعرضه فَقتله فَإِنَّهُ وقيذ فَلَا تَأْكُل»

وعنه قال: قلت: يا رسول الله انا نرسل الكلاب المعلمة قال: «كل ما امسكن عليك» قلت: وان قتلن؟ قال: «وان قتلن» قلت: انا نرمي بالمعراض. قال: «كل ما خزق وما اصاب بعرضه فقتله فانه وقيذ فلا تاكل»

ব্যাখ্যাঃ (معراض) হলো ভারি কাঠ কিংবা লাঠি যার প্রান্তে থাকে লোহা, এটা কখনও লোহা ছাড়া অন্য কিছুও হয়ে থাকে। আর এটাই তার সঠিক ব্যাখ্যা। কারো মতে এটি এমন কাঠ, যার দুই পার্শ্ব পাতলা বা ধারালো এবং মাঝ বরাবর মোটা, যখন শিকারের জন্য নিক্ষেপ করা হয় তখন সোজা ছুটে যায়। ইমাম শাফি‘ঈ, মালিক, আবূ হানীফাহ্ ও আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ)-সহ জামহূর ‘উলামার মতে পালকহীন তীরের ধারালো অংশের আঘাতে শিকারীর প্রাণী যদি মারা যায় তবে তা ভক্ষণ করা হালাল, আর যদি মোটা অংশের আঘাতে মারা যায় তবে উক্ত প্রাণী ভক্ষণ করা হালাল নয়। তবে মাকহূল, আওযা‘ঈসহ সিরিয়ার ফকীহদের মতে উক্ত প্রাণীর গোশত সর্বাবস্থায় হালাল। আর অধিকাংশ ‘উলামাসহ ইবনু আবী লায়লা (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে বন্দুকের গুলিতে মারা যাওয়া প্রাণী ভক্ষণ হালাল। সা‘ঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহিমাহুল্লাহ) হতেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘উলামার মতে বন্দুকের গুলির আঘাতে মারা যাওয়া প্রাণী (‘বিসমিল্লা-হ’র সাথে যাবাহ করা ছাড়া) কোনক্রমেই হালাল নয়।

আর শিকারীর জন্য প্রেরণকৃত প্রাণী যদি তার শিকারকৃত প্রাণীর কিছু অংশ খেয়ে ফেলে তাহলে অবশিষ্ট অংশ ভক্ষণ করা হারাম। আর এটাই অধিকাংশ ‘উলামার মত। তাদের মধ্যে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস, আবূ হুরায়রা, ‘আত্বা, সা‘ঈদ ইবনুয্ যুবায়র, হাসান বাসরী, শা‘বী, নাখ‘ঈ, ‘ইকরামাহ্, কতাদাহ্সহ ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) ও তার অনুসারীগণ, আহমাদ, ইসহকব, সাওর (রহিমাহুল্লাহ) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অপরদিকে সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস, সালমান আল ফারিসী, ইবনু ‘উমার (রাঃ) ও মালিক (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে উক্ত প্রাণীর গোশত হালাল, তবে ইমাম শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে এ কথাটি অত্যন্ত দুর্বল। (শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ [১৯২৯]-২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আদী ইবনু হাতিম (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৪০৬৬-[৩] আবূ সা’লাবাহ্ আল খুশানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর নবী! আমরা আহলে কিতাবের (অর্থাৎ- ইয়াহূদী-নাসারাদের) এলাকায় বাস করি। সুতরাং আমরা কি তাদের পাত্রে খেতে পারি এবং এমন ভূমিতে বাস করি যেখানে শিকার পাওয়া যায়। আমি আমার তীর-ধনুক দ্বারা এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও অপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর দ্বারাও শিকার করি। অতএব আমার জন্যে কোনটি (খাওয়া) সঠিক হবে? তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আহলে কিতাবের পাত্র সম্পর্কে তুমি যা বললে, যদি তোমরা তাদের পাত্র ছাড়া অন্য পাত্র পাও, তখন আর তাতে খেয়ো না। আর যদি না পাও, তখন তাকে ধুয়ে নাও, তারপর তাতে খাও। আর তুমি তীর-ধনুক দ্বারা যা শিকার করবে, যদি ছাড়ার সময় ’’বিসমিল্লা-হ’’ পড়ে থাকো, তবে তা খেতে পার। আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর দ্বারা যা শিকার করবে, যদি ’’বিসমিল্লা-হ’’ পড়ে ছেড়ে থাক তবে তা খাও। কিন্তু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয় এমন কুকুর দ্বারা যা শিকার করবে, যদি যাবাহ করার সুযোগ পাও, তখন তাকে (যাবাহ করে) খাও। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَن أبي ثَعْلَبَة الْخُشَنِي قَالَ: قُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ إِنَّا بِأَرْضِ قوم أهل كتاب أَفَنَأْكَلُ فِي آنِيَتِهِمْ وَبِأَرْضِ صَيْدٍ أَصِيدُ بِقَوْسِي وَبِكَلْبِي الَّذِي لَيْسَ بِمُعَلَّمٍ وَبِكَلْبِي الْمُعَلَّمِ فَمَا يصلح؟ قَالَ: «أما ذَكَرْتَ مِنْ آنِيَةِ أَهْلِ الْكِتَابِ فَإِنْ وَجَدْتُمْ غَيْرَهَا فَلَا تَأْكُلُوا فِيهَا وَإِنْ لَمْ تَجِدُوا فاغسلوها وَكُلُوا فِيهَا وَمَا صِدْتَ بِقَوْسِكَ فَذَكَرْتَ اسْمَ اللَّهِ فَكُلْ وَمَا صِدْتَ بِكَلْبِكَ الْمُعَلَّمِ فَذَكَرْتَ اسْمَ اللَّهِ فَكُلْ وَمَا صِدْتَ بِكَلْبِكَ غَيْرِ معلم فأدركت ذَكَاته فَكل»

وعن ابي ثعلبة الخشني قال: قلت: يا نبي الله انا بارض قوم اهل كتاب افناكل في انيتهم وبارض صيد اصيد بقوسي وبكلبي الذي ليس بمعلم وبكلبي المعلم فما يصلح؟ قال: «اما ذكرت من انية اهل الكتاب فان وجدتم غيرها فلا تاكلوا فيها وان لم تجدوا فاغسلوها وكلوا فيها وما صدت بقوسك فذكرت اسم الله فكل وما صدت بكلبك المعلم فذكرت اسم الله فكل وما صدت بكلبك غير معلم فادركت ذكاته فكل»

ব্যাখ্যাঃ ‘আল্লামা নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ সা‘লাবাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে উল্লেখিত পাত্র দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যে পাত্রে শুকরের গোশত পাকানো হয় এবং মদ প্রস্তুত করা হয়।

যেমন আবূ দাঊদ-এর বর্ণনায় রয়েছে, আমরা আহলে কিতাবদের মাঝে থাকি আর তারা তাদের পাতিলে শুকরের গোশত রান্না করত এবং তাদের পাত্রে মদ তৈরি করত। ‘আল্লামা ইবনু হাযম (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ দু’টি শর্ত ছাড়া আহলে কিতাবদের পাত্র ব্যবহার করা বৈধ নয়।

১. তাদের পাত্র ছাড়া অন্য কোনও পাত্র না পাওয়া। ২. পাত্র ধৌত করা।

এ দু’টি শর্ত পালনের সাথে আহলে কিতাবদের পাত্র ব্যবহার করা যাবে।

কেউ কেউ বলেছেন উল্লেখিত হাদীসটি ফকীহদের বক্তব্যের বিপরীত। তাদের বক্তব্য হলো : মুশরিকদের পাত্র ধৌত করার পর তা ব্যবহার করা বৈধ, এতে কোন অপছন্দনীয়তার কিছু নেই, উক্ত পাত্র ছাড়া অন্য কোন পাত্র থাকুক বা না থাকুক। পক্ষান্তরে এ হাদীসটি মুশরিকদের পাত্র ব্যতীত অন্য পাত্র পাওয়া গেলে মুশরিকদের পাত্র ব্যবহার করাটা মাকরূহ প্রমাণ করে এবং এ অপছন্দনীয়তা দূর করার জন্য পাত্র ধৌত করাও যথেষ্ট নয়। তাদের পাত্র ধৌত করে ব্যবহার করা তখনই বৈধ হবে যখন অন্য কোন পাত্র না পাওয়া যাবে। এখানে ফিকাহবিদদের কথার উদ্দেশ্য হলো কাফিরদের ব্যবহৃত সেই পাত্র যা কোন নাপাকীর কাজে ব্যবহার হয়নি, এমন পাত্র ধৌত করার পূর্বে ব্যবহার করা মাকরূহ। যদি ধৌত করে ব্যবহার করা হয় তাতে অপছন্দনীয়তার কিছুই থাকবে না। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫৪৭৮; শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ [১৯৩০]-৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৪০৬৭-[৪] উক্ত রাবী [আবূ সা’লাবাহ্ আল খুশানী (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি তুমি শিকারের প্রতি তোমার তীর নিক্ষেপ করো এবং তা তোমার দৃষ্টির অগোচর হয়ে যায়, আর পরে তাকে পাও, তখন তাতে দুর্গন্ধ না হওয়া পর্যন্ত খেতে পার। (মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا رَمَيْتَ بِسَهْمِكَ فَغَابَ عَنْكَ فَأَدْرَكْتَهُ فَكُلْ مَا لَمْ يُنْتِنْ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اذا رميت بسهمك فغاب عنك فادركته فكل ما لم ينتن» . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ এখানে দুর্গন্ধযুক্ত প্রাণী বা পচন ধরা শিকারীর গোশত খাওয়া নিষেধ দ্বারা হারাম উদ্দেশ্য নয়। তবে যদি ক্ষতির আশঙ্কা প্রকট থাকে তবে তা হারাম হতে পারে। আমাদের কিছু কিছু ‘উলামা বলেন, পচন ধরা দুর্গন্ধযুক্ত গোশত খাওয়া সর্বাস্থায় হারাম, এ মতটি অত্যন্ত দুর্বল। (শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৯৩১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৪০৬৮-[৫] উক্ত রাবী [আবূ সা’লাবাহ্ আল খুশানী (রাঃ)] হতে বর্ণিত যে, যে ব্যক্তি তিনদিন পর তার শিকার পায়, সে ব্যক্তি সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তা দুর্গন্ধময় না হওয়া পর্যন্ত খেতে পারে। (মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي الَّذِي يُدْرِكُ صَيْدَهُ بَعْدَ ثَلَاثٍ: «فكله مَا لم ينتن» . رَوَاهُ مُسلم

وعنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال في الذي يدرك صيده بعد ثلاث: «فكله ما لم ينتن» . رواه مسلم

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৪০৬৯-[৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! এখানে এমন কিছুসংখ্যক লোক বাস করে যারা শির্কের নিকটবর্তী, তারা অনেক সময় আমাদের কাছে মাংস নিয়ে আসে। কিন্তু আমরা জানি না, তারা তাতে ’বিসমিল্লা-হ’ পড়ে (যাবাহ করে) কি-না। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এমতাবস্থায় তোমরা নিজেরা আল্লাহর নাম নাও এবং খাও। (বুখারী)[1]

الْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَن عَائِشَة قَالَت: قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ هُنَا أَقْوَامًا حَدِيثٌ عَهْدُهُمْ بِشِرْكٍ يَأْتُونَنَا بِلُحْمَانٍ لَا نَدْرِي أَيَذْكُرُونَ اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهَا أَمْ لَا؟ قَالَ: «اذْكُرُوا أَنْتُم اسمَ اللَّهِ وكلوا» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن عاىشة قالت: قالوا: يا رسول الله ان هنا اقواما حديث عهدهم بشرك ياتوننا بلحمان لا ندري ايذكرون اسم الله عليها ام لا؟ قال: «اذكروا انتم اسم الله وكلوا» . رواه البخاري

ব্যাখ্যাঃ ‘আল্লামা ইবনুত্ তীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যাবাহ করতে ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ যদি অজান্তে ছাড়া পড়ে যায় তাহলে এ ব্যাপারে কোন জবাবদিহিতা নেই। এর বিপরীত যদি হয় তবে যাবাহ বিশুদ্ধ হবে না। আর কোন প্রাণী যাবাহ করার সময় ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলা হয়েছে কিনা এমন সন্দেহ থাকলেও উক্ত প্রাণীর গোশত খাওয়া বৈধতারই চাহিদা রাখে। কারণ যাবাহকারী ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলে যাবাহ করে তখন তার যাবাহ করাটা বিশুদ্ধ হয়। আর মুসলিমদের বাজারে যাবাহকৃত যে গোশত পাওয়া যায় তা থেকে উপকার গ্রহণ করা যাবে। ‘আরবের মুসলিমরা যা যাবাহ করে থাকে তার হুকুমও অনুরূপ। কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলে থাকে। ইবনু হায্ম (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ মুসলিম যা যাবাহ করে তা ভক্ষণ করা যাবে এবং এ ধারণাই পোষণ করতে হবে যে, সে ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলেছে। কারণ নেতিবাচক কিছু প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত মুসলিমদের ব্যাপারে উত্তম ধারণা পোষণ করতে হবে। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, ৭২৬ পৃষ্ঠা)

হাদীসে বলা হয়েছে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেনঃ জাহিলী যুগের লোকেরা আমাদের নিকট কিছু গোশত নিয়ে আসত, আমরা জানি না যাবাহ করার সময় ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলেছে কিনা? আমরা কি তা খাব? তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, سموا الله وكلوا তোমরা ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বল ও খাও।

ইমাম ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ কথার অর্থ এই নয় যে, তোমাদের এখন (খাওয়ার সময়) ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলা, যাবাহকারীর ‘‘বিসমিল্লা-হ’’র বলার স্থলাভিষিক্ত হয়ে যাবে, বরং উক্ত হাদীসে খাওয়ার সময় ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলা মুস্তাহাব বা উত্তম। এটাই বর্ণনা করা হয়েছে। আর যাবাহ করার সময় আল্লাহর নাম উল্লেখ করা হয়েছে কিনা এটা জানা না যায়, তবুও উক্ত খাদ্য খাওয়া শুদ্ধ হবে যখন যাবাহকারী এমন ব্যক্তি হবে যাদের যাবাহকৃত জন্তু খাওয়া সঠিক। আর এ বিষয়টি মুসলিমদের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে হবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৮২৬)

ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসটি এটাই দলীল বহন করে যে, কোন প্রাণী যাবাহ করার সময় ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলা ওয়াজিব নয়। ইমাম মুনযিরী অনুরূপ ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বলেনঃ যাবাহ করার সময় ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলা ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে লোকেরা মতভেদ করেছেন।

১. ইমাম শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে : তাসমিয়া বা ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলা মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। তা ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃতভাবে ছাড়ুক যাবাহ হালাল হয়ে যাবে। আর এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন ইমাম মালিক ও আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহিমাহুল্লাহ)।

২. সুফ্ইয়ান সাওরী, ইসহক ইবনু রহওয়াইহ ও আসহাবে রায় (রহিমাহুল্লাহ)-গণের মতে, যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলা ছেড়ে দেয় তাহলে যাবাহ হালাল। আর যদি ইচ্ছাকৃতভাবে তা ত্যাগ করে তাহলে হালাল হবে না।

৩. ইবনু সাওর ও দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ) এর মতে, ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক, ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ ছাড়া প্রত্যেক যাবাহই হালাল নয়। একই অর্থে বর্ণনা করেছেন ইমাম ইবনু সীরীন ও শা‘বী (রহিমাহুল্লাহ)।

ইমাম মুনযিরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ইমাম বুখারী এবং ইবনু মাজাহ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আরো অনেকে বলেছেনঃ এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যাবাহ করার সময় ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলা ওয়াজিব নয়। এটা এজন্য যে, যেহেতু চতুষ্পদ প্রাণী মূলত হারাম যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিভাবে যাবাহ না করা হয় বা রক্ত প্রবাহিত না করা হয়। আর সন্দেহযুক্ত বিষয় কখনো বৈধ হয় না। অতঃপর ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলা যদি যাবাহ করার শর্ত হত, তাহলে অন্যত্র থেকে যাবাহকৃত পশুর গোশত সুধারণা করে খাওয়া বৈধ হওয়ার জন্য যথেষ্ট হত না। যেমনটি যথেষ্ট হত না যদি যাবাহকৃত জন্তুর যাবাহের উপর সন্দেহ পোষণ করা হয়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫খন্ড, হাঃ ২৮২৬)

মিরক্বাতুল মাফাতীহ গ্রন্থকার বলেছেনঃ শারহুস্ সুন্নাহ্ নামক গ্রন্থে এসেছে যে, যারা ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলা শর্ত মনে করেন না, তারা এ হাদীসটি দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন। কেননা ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলা যদি খাবার বৈধ হওয়ার শর্ত হত, তাহলে মৌলিকভাবে মূল খাবারের উপর সন্দেহ হতো, আর এ কারণে উক্ত খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ হত। যেমন যাবাহ করার ক্ষেত্রে ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ না বলার সন্দেহের কারণে উক্ত খাবার নিষিদ্ধ হয়।

অনুরূপভাবে যারা ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলা শর্ত মনে করেন, তারা আল্লাহ তা‘আলার এই বাণী দ্বারা দলীল গ্রহণ করেন, وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ অর্থাৎ ‘‘যে জন্তুর ওপর আল্লাহর নাম নেয়া হয়নি, তোমরা তা ভক্ষণ করো না’’- (সূরাহ্ আল আন্‘আম ৬ : ১২১)। আর এ আয়াতে কারীমার পরবর্তী অংশে বলা হচ্ছে وَإِنَّه لَفِسْقٌ অর্থাৎ নিশ্চয় এটা (‘‘বিসমিল্লা-হ’’ ছাড়া যাবাহ করা জন্তু খাওয়া) গুনাহ বা গর্হিত কাজ।

কিন্তু যারা খাওয়ার সময় ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলা শর্তযুক্ত মনে করেন না, তারা উল্লেখিত সূরাহ্ আন্‘আম-এর ১২১ নং আয়াতের ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে, উক্ত আয়াতে কারীমা দ্বারা বুঝানো হচ্ছে যে, যে সমস্ত জন্তু আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কিছুর তথা ‘‘গায়রুল্লাহর’’ নামে যাবাহ করা হয়েছে।

তারা তাদের এই মতামতের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে সূরাহ্ আন্‘আম-এর ১৪৫ নং আয়াত উপস্থাপন করেছেন, যেখানে বলা হচ্ছে, أَوْ فِسْقًا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِه অর্থাৎ যা কিছু গায়রুল্লাহর নামে যাবাহ করা হয় তা গুনাহ বা পাপাচারী কাজ।

উল্লেখ্য অত্র আয়াতে কারীমাতে গায়রুল্লাহর নামে যাবাহ করাকেই فسق বা পাপাচারিতা বুঝানো হচ্ছে।

অতএব পরিশেষে, উক্ত আয়াত দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ পরিত্যাগ করা হারাম। আর হাদীস দ্বারা ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ উচ্চারণ করতে ভুলে যাওয়া বিশেষভাবে বুঝানো হয়েছে।

আর দীনদার ব্যক্তির ওপর কর্তব্য হলো, যে জন্তুর ওপর আল্লাহর নাম নেয়া হয়নি, সেটা ভক্ষণ না করা। কেননা কুরআন মাজীদে এ ব্যাপারে মহা কঠিনতা আরোপ করা হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলা আল কুরআনুল মাজীদের সূরাহ্ আন্‘আম-এর ১২১ নং আয়াতে ঘোষণা করেন যে,

وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ

অর্থাৎ যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর তবে তোমরা মুশরিক হয়ে যাবে।

যদিও আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে মৃত জন্তুর ব্যাপারে তথাপি العبرة بِعُمُومِ اللَّفْظِ لَا بِخُصُوصِ السَّبَبِ অর্থাৎ অবতীর্ণের বিশেষত্বে নয় বরং শাব্দিক অর্থের ব্যাপকতার ভিত্তিতেই উপদেশ গৃহীত হবে। এই উসূল বা নিয়মের ভিত্তিতে এ আয়াতটি এখানে প্রযোজ্য।

‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলার নিয়ম বা পদ্ধতি :

‘‘বিসমিল্লা-হ’’ অবশ্যই মুখে উচ্চারণ করে পড়তে হবে। মনে মনে পড়লে হবে না বা শারী‘আতসম্মত নয়। কেননা শারী‘আতের প্রত্যেকটি ‘ইবাদাত জিকর, চাই তা ওয়াজিব হোক বা নফল হোক, তা ততক্ষণ গ্রহণযোগ্য হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা মুখ থেকে স্পষ্টরূপে উচ্চারিত না হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

একজন মুসলিম মু’মিন ব্যক্তির জন্য অধিক সতর্কতা ও সাবধানতার কাজ হলো সে অবশ্যই যাবাহ ও খাওয়ার সময় ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ উচ্চারণ করবে। (আল্লাহ তা‘আলাই সর্ববিষয়ে সর্বাধিকজ্ঞাত) [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৪০৭০-[৭] আবুত্ব তুফায়ল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ’আলী -কে জিজ্ঞেস করা হলো, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাদেরকে (অর্থাৎ- আহলে বায়তকে) স্বতন্ত্রভাবে কিছু বলেছেন কি? উত্তরে তিনি বললেনঃ তিনি (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমন কোন বিষয়ে আমাদেরকে স্বতন্ত্র রাখেননি, যাতে অন্য লোক অন্তরভুক্ত হয়নি। তবে আমার তলোয়ারের এ খাপের ভিতরে যা আছে। অতঃপর তিনি খাপের ভিতর হতে এক খন্ড লিখিত কাগজ বের করলেন তাতে লিখা ছিল, সে ব্যক্তির ওপর আল্লাহর লা’নাত যে গায়রুল্লাহর নামে যাবাহ করে। আর সে ব্যক্তির ওপরও আল্লাহর লা’নাত যে জমিনের সীমানা পরিবর্তন করে। আল্লাহর লা’নাত ঐ ব্যক্তির ওপর, যে নিজের পিতাকে অভিসম্পাত দেয় এবং আল্লাহর লা’নাত সে ব্যক্তির ওপর, যে কোন বিদ্’আতীকে আশ্রয় দেয়। (মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَن أبي الطُّفَيْل قَالَ: سُئِلَ عَليّ: هَلْ خَصَّكُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشَيْءٍ؟ فَقَالَ: مَا خَصَّنَا بِشَيْءٍ لَمْ يَعُمَّ بِهِ النَّاسَ إِلَّا مَا فِي قِرَابِ سَيْفِي هَذَا فَأَخْرَجَ صَحِيفَةً فِيهَا: «لَعَنَ اللَّهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللَّهِ وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ سَرَقَ مَنَارَ الْأَرْضِ وَفِي رِوَايَةٍ مَنْ غَيَّرَ مَنَارَ الْأَرْضِ وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَهُ وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ آوَى مُحْدِثًا» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وعن ابي الطفيل قال: سىل علي: هل خصكم رسول الله صلى الله عليه وسلم بشيء؟ فقال: ما خصنا بشيء لم يعم به الناس الا ما في قراب سيفي هذا فاخرج صحيفة فيها: «لعن الله من ذبح لغير الله ولعن الله من سرق منار الارض وفي رواية من غير منار الارض ولعن الله من لعن والده ولعن الله من اوى محدثا» . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন বিখ্যাত সাহাবী আবুত্ব তুফায়ল (রাঃ)। এটি তাঁর কুনিয়াতি নাম, তার মূল নাম عامر بن وائلة الليسي (‘আমির ইবনু ওয়ায়িলাহ্ আল লায়সী)। যিনি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সকল সাহাবীদের মধ্যে সর্বশেষ মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশাতে তাঁকে আট বছর পেয়েছিলেন। তিনি ১০২ বছর বয়সে মক্কাতে মৃত্যুবরণ করেন।

আলোচ্য হাদীসে আবুত্ব তুফায়ল (রাঃ) বলেন যে, ‘আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাদের তথা আহলে বায়তেরা রসূলের (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবারের) জন্য কোন কিছু বিশেষভাবে রেখে গেছেন? বা কোন বিশেষ নিদর্শন বা সুন্নাত রেখে গেছেন?

তিনি [‘আলী (রাঃ)] বললেনঃ না, আমাদের জন্য তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিশেষভাবে কিছু রেখে যাননি বরং সকলের জন্য ব্যাপকভাবে যা রেখেছেন আমাদের জন্যও তাই রেখেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

তবে যা কিছু তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রেখেছেন قراب سيفيى (ক্বিরাবু সাইফিয়্যি) এর মাঝে। এখানে قراب سيفيى (ক্বিরাবু সাইফিয়্যি) এর ব্যাখ্যায় শারহুন নাবাবী এর লেখক বলেছেন,

قِرَابُ سَيْفِي هُوَ بِكَسْرِ الْقَافِ وَهُوَ وِعَاءٌ مِنْ جِلْدٍ أَلْطَفُ مِنَ الْجِرَابِ يَدْخُلُ فِيهِ السَّيْفُ بِغِمْدِه وَمَا خَفَّ مِنَ الْآلَةِ

অর্থাৎ قراب سيفى হলো, চামড়ার তৈরি একটি পাত্র যা মোজার চেয়ে পাতলা, যার মধ্যে কোষবদ্ধ তরবারি ও হালকা পাতলা কোন যন্ত্রপাতি রাখা হয়। (শারহুন নাবাবী, ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৯৭৮)

মিরক্বাত গ্রন্থকার বলেনঃ সম্ভবত উক্ত তরবারিটি ذو الفقار ‘‘জুলফিকার’’ নামক তরবারি, যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলী (রাঃ)-কে প্রদান করেছিলেন।

অতঃপর ‘আলী (রাঃ) উক্ত কোষবদ্ধ তরবারি রাখার খাপ থেকে একটি صحيفة সহীফাহ্ বা পত্র বের করলেন, যাতে লেখা ছিল,

لَعَنَ اللهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللهِ، وَلَعَنَ اللهُ مَنْ سَرَقَ مَنَارَ الْأَرْضِ

অর্থাৎ ঐ ব্যক্তির ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত যে গায়রুল্লাহর (আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো) নামে পশু যাবাহ করে। আল্লাহর অভিসম্পাত ঐ ব্যক্তির ওপর নিপতিত হোক যে জমিনের উঁচু স্তম্ভসমূহ (আইল) চুরি করে।

অত্র হাদীসে উল্লেখিত منار (মানার) শব্দটা منارة (মানারাহ্) শব্দের বহুবচন; যার অর্থ হলো বিভিন্ন জমির মাঝে উঁচু উঁচু ঐ চিহ্নসমূহ যা দ্বারা জমিনের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। [সম্পাদক]

ইমাম ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অর্থাৎ যে ব্যক্তি প্রতিবেশীর অধিকারভুক্ত জমিনের দখলদারিত্ব নিতে চায়।

ইমাম তূরিবিশতী ও অন্যান্যগণ বলেনঃ ‘মানার’ হলো জমিনের মাঝে একটি নিশানা বা একটি সীমানা। আর এটা এজন্য যে, এটা দ্বারা নিজ মালিকানা বা রাস্তার সীমানা বরাবর বা পরিবর্তন করার জন্য অন্যায়ভাবে দখল করা। কেননা অন্য একটি বর্ণনায় আছে, مَنْ غَيَّرَ مَنَارَ الْأَرْضِ অর্থাৎ যে ব্যক্তি জমিনের সীমানা পরিবর্তন করল। অর্থাৎ সীমানার চিহ্ন উঠিয়ে ফেলল এবং তা নিজের জায়গাতে স্থাপন করল অথবা নিজের স্থান থেকে উঠিয়ে অন্য স্থানে স্থাপন করল। উদ্দেশ্য হলো : যাতে একজন প্রতিবেশী অন্য প্রতিবেশীর জায়গা থেকে কিছু অংশ কর্তন করে না নিতে পারে।

উপরোল্লিখিত হাদীসের পরবর্তী অংশে বলা হচ্ছে وَلَعَنَ اللهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَهٗ আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর অভিসম্পাত করেন, যে তার পিতার ওপর অভিসম্পাত করে।

পিতাকে অভিসম্পাত করা দু’ রকমভাবে হয়ে থাকে, ১. স্পষ্টভাবে অভিশাপ করা, ২. কারণগতভাবে। আর এটা এ রকম যে, কেউ অন্য কারো বাবাকে গালি দিল, অতঃপর সেও তার বাবাকে গালি দিল বা অভিশাপ দিল। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ

وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللهِ فَيَسُبُّوا اللهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ

‘‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের তারা ডাকে বা আরাধনা করে তাদের তোমরা মন্দ বলো না বা গালি দিও না। তাহলে তারাও ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকে মন্দ বলবে বা গালি দিবে।’’ (সূরাহ্ আল আন্‘আম ৬ : ১০৮)

সুতরাং অন্যদের থেকে গাল-মন্দ পাওয়া থেকে বাঁচার জন্য সাবধানতাবশত তার কারণগুলো সংঘটিত করা হতে নিষেধ করা হচ্ছে।

অত্র হাদীসের শেষাংশে বলা হচ্ছে, (وَلَعَنَ اللهُ مَنْ آوَى مُحْدِثًا) অর্থাৎ আল্লাহ তার ওপর অভিসম্পাত করুন, যে কোন অন্যায় সম্পাদনকারী বা অনিষ্টতাকারীকে আশ্রয় প্রদান করল। উল্লেখিত হাদীসে محدثا (মুহদিসান) শব্দের ব্যাখ্যা হলো যে ব্যক্তি কারো ওপর বড় ধরনের কোন অনিষ্টতা বা অপরাধ সংঘটিত করে, অথবা ইসলামের মধ্যে কোন বিদ্‘আত বা নতুন কিছু আবিষ্কার করে।

أوى তথা তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অর্থ হলো, তাকে তার বিরোধী প্রতিপক্ষ বা যাদের ওপর অন্যায় করেছে তাদের থেকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া। আর প্রতিপক্ষর বিচারের সম্মুখীন হওয়া থেকে তাকে সহায়তা বা পৃষ্ঠপোষকতা করা এবং তার ও প্রতিপক্ষর মাঝে বিচার করা, ক্বিসাস নেয়া বা শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করা।

অনুরূপভাবে যারা ইসলাম ধ্বংসাত্মক কাজ করবে এবং এদের যারা শাস্তির সম্মুখীন হওয়া থেকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে বা রক্ষা করবে, তার এই নিকৃষ্ট স্বভাব পরিবর্তন করার নিমিত্তে তাকে পাকড়াও থেকে বিরত রাখার ক্ষেত্রে যে তাকে সহায়তা করবে সেও বর্ণিত অভিশপ্তের অন্তর্ভুক্ত হবে- (হাদীসটি মুসলিম, আহমাদ ও নাসায়ীতে বর্ণিত হয়েছে)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবুত্ব তুফায়ল (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৪০৭১-[৮] রাফি’ ’ইবনু খদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! আগামীকাল আমরা শত্রুর মোকাবিলা করব অথচ আমাদের সাথে কোন ছুরি নেই। এমতাবস্থায় আমরা কি বাঁশের ছিলকা দ্বারা যাবাহ করতে পারব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যে জিনিস রক্ত প্রবাহিত করে এবং যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে, তা খেতে পার। তবে দাঁত ও নখ দ্বারা যাবাহ করবে না। এ সম্পর্কে আমি তোমাকে অবহিত করছি। বস্ত্ততঃ দাঁত হলো হাড়বিশেষ (তাতে ধার নেই), আর নখ হলো হাবশীদের ছুরি (অর্থাৎ- তারা নখ দ্বারা যাবাহ করে)।

বর্ণনাকারী বলেন, এক সময় গনীমাতের মালে কিছুসংখ্যক উট ও বকরি আমাদের হাতে আসে এবং তা হতে একটি উট পালিয়ে যায়। এমতাবস্থায় জনৈক ব্যক্তি তার প্রতি তীর নিক্ষেপ করে, তাকে আটকে ফেলল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিশ্চয় এ উটটির মধ্যে বন্য পশুর পালানোর স্বভাবের মতো স্বভাব রয়েছে। সুতরাং যখন এদের কোন একটি তোমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন তার সাথে এরূপ আচরণই করবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَن رَافع بن خديج قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا لَاقُوا الْعَدُوَّ غَدًا وَلَيْسَتْ مَعَنَا مُدًى أَفَنَذْبَحُ بِالْقَصَبِ؟ قَالَ: مَا أَنْهَرَ الدَّمَ وَذُكِرَ اسْمُ اللَّهِ فَكُلْ لَيْسَ السِّنَّ وَالظُّفُرَ وَسَأُحَدِّثُكَ عَنْهُ: أَمَّا السِّنُّ فَعَظْمٌ وَأَمَّا الظُّفُرُ فَمُدَى الْحَبَشِ وَأَصَبْنَا نَهْبَ إِبِلٍ وَغَنَمٍ فَنَدَّ مِنْهَا بِعِيرٌ فَرَمَاهُ رَجُلٌ بِسَهْمٍ فَحَبَسَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ لِهَذِهِ الْإِبِلِ أَوَابِدَ كَأَوَابِدِ الْوَحْشِ فَإِذَا غَلَبَكُمْ مِنْهَا شَيْءٌ فَافْعَلُوا بِهِ هَكَذَا»

وعن رافع بن خديج قال: قلت: يا رسول الله انا لاقوا العدو غدا وليست معنا مدى افنذبح بالقصب؟ قال: ما انهر الدم وذكر اسم الله فكل ليس السن والظفر وساحدثك عنه: اما السن فعظم واما الظفر فمدى الحبش واصبنا نهب ابل وغنم فند منها بعير فرماه رجل بسهم فحبسه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان لهذه الابل اوابد كاوابد الوحش فاذا غلبكم منها شيء فافعلوا به هكذا»

ব্যাখ্যাঃ হাদীসে বর্ণিত (إِنَّا لَاقُوا الْعَدُوَّ غَدًا) এর মর্মার্থ হলো- আমরা আগামীকাল বা ভবিষ্যতে কাফির শত্রুদের সাথে মুখোমুখি হব।

(أَفَنَذْبَحُ بِالْقَصَبِ) নিহায়াহ্ গ্রন্থকার বলেনঃ প্রত্যেক চওড়া বিশিষ্ট হাড়কে কসব বলা হয়।

(مَا أَنْهَرَ الدَّمَ) ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর উদ্দেশ্য হলো, যা প্রচুর পরিমাণে রক্ত প্রবাহিত করে, যা উপমীয় নদীতে পানি প্রবাহিত হওয়ার মতো।

(لَيْسَ السِّنَّ وَالظُّفُرَ) অধিকাংশ ব্যাখ্যাকারগণ এর মর্মার্থ এভাবে উল্লেখ করেছেন যে, নখ ও দাঁত ব্যতীত। কেননা উভয়টি দ্বারা যাবাহ করা সম্ভব নয়।

আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিষেধের কারণ হলো যে, সেটা জীনদের খাবার।

ইমাম সুয়ূত্বী ও ইমাম নাবাবী (রহিমাহুমাল্লাহ) এ মতামত দিয়েছেন।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) সহীহ মুসলিম-এর ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেনঃ আমাদের অনুসারীরা বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী (أَمَّا السِّنُّ فَعَظْمٌ) দ্বারা বুঝতে পেরেছি হাড্ডি দ্বারা যাবাহ করা অবৈধ।

ইমাম শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) ও তাঁর অনুসারীরা এই মতের পক্ষ। জামহূর ‘উলামাও এই মতের পক্ষ গিয়েছেন।

ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ দাঁত ও হাড্ডি দ্বারা একত্রে যাবাহ বৈধ নয় বরং আলাদা আলাদা বৈধ আছে।

ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ)-এর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ মত হলো- হাড্ডি দ্বারা বৈধ, দাঁত দ্বারা নয়।

(وَأَمَّا الظُّفُرُ فَمُدَى الْحَبَشِ) এর তাৎপর্য হলো- হাবশীরা তাদের নখকে ছুরির সমতুল্য মনে করে, নখ দ্বারা যাবাহ করত। তাই আমাদের তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা যাবে না, যেহেতু তারা অমুসলিম ছিল। আর আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।

আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী (إِنَّ لِهٰذِهِ الْإِبِلِ أَوَابِدَ) ‘‘নিশ্চয় এ উটটির মধ্যে বন্য পশুর স্বভাব রয়েছে।’’

ইমাম তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ পলায়নের স্বভাব সকল উটেরই রয়েছে। আর ইমাম ত্বীবী বলেনঃ কিছু সংখ্যক উটের এই স্বভাব রয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

‘উলামাগণ বলেনঃ অত্র হাদীসে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, যাবাহ করার ক্ষেত্রে যা কর্তন করে ও রক্ত প্রবাহিত করে তা শর্ত করা হয়েছে। আর রক্ত প্রবাহিত ব্যতীত শুধু থেতলে দিয়ে মস্তিষ্কে আঘাত করাই যথেষ্ট হবে না।

কতিপয় ‘আলিমগণ বলেনঃ যাবাহ করা ও রক্ত প্রবাহিতকে শর্তকরণের রহস্য হলো, হালাল গোশত ও চর্বিকে পৃথককরণ উভয়টির হারাম হতে। আর এটাও অবহিত করা যে, মৃত প্রাণী রক্ত প্রবাহিত না হওয়ার কারণে হারাম।

অত্র হাদীসের মাধ্যমে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, প্রত্যেক ধারালো বস্তু যা কর্তন করে তা দ্বারা যাবাহ করা বৈধ। তবে নখ, দাঁত ও সমস্ত হাড্ডি ব্যতীত। ধারালো বস্তুর অন্তর্ভুক্ত হলো- তরবারি, ছুরি, বল্লমের অগ্রভাগ, পাথর, কাঠ, কাঁচ, বাঁশের ছিলকা, চিনামাটির পাত্র, তামা, পিতল ইত্যাদি। এগুলো দ্বারা যাবাহ করা বৈধ। আর হাদীসে বর্ণিত নখ বলতে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর নখ হতে পারে, চাই তা একত্রে হোক বা পৃথক হোক তা দ্বারা যাবাহ করা অবৈধ।

অপরপক্ষ হাদীসে বর্ণিত দাঁত বলতে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী হতে পারে, চায় তা একত্রে হোক অথবা পৃথক হোক পবিত্র হোক বা অপবিত্র হোক তা দ্বারা যাবাহ করা সম্পূর্ণ অবৈধ। (শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৯৬৮)

(أَمَّا السِّنُّ فَعَظْمٌ) অর্থাৎ প্রত্যেক হাড্ডি দ্বারা যাবাহ করা অবৈধ। তবে দাঁত হলো হাড্ডি।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আল্লাহর নবী বলেছেন যে, তোমরা হাড্ডি দ্বারা যাবাহ করবে না, কেননা সেটা রক্ত দ্বারা অপবিত্র হয়। আর আমি তোমাদেরকে হাড্ডি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করতে নিষেধ করেছি যাতে তা অপবিত্র না হয়, যেহেতু এটা জীনদের খাবার।

অত্র হাদীসের মাধ্যমে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, কোনভাবেই দাঁত ও নখ দ্বারা যাবাহ করা যাবে না।

এ হাদীসে এটাও বুঝা যাচ্ছে যে, হাড্ডি দ্বারাও যাবাহ করা যাবে না। সুতরাং যে কোন হাড্ডি দ্বারা যাবাহ করা হারাম, নাজায়িয।

(وَأَمَّا الظُّفُرُ فَمُدَى الْحَبَشِ) ইবনু সলাহ বলেনঃ হাবশীরা কাফির, তাই আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। ইমাম নাবাবীও অনুরূপ মত প্রকাশ করেছেন।

কেউ কেউ বলেনঃ উভয়টি দ্বারা যাবাহ নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হলো, তা দ্বারা প্রাণীর কষ্ট হয় এবং প্রাণীকে শুধু শ্বাসরুদ্ধ করা হয়, যা যাবাহ করার কোন পদ্ধতিতে পড়ে না।

অত্র হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, প্রত্যেক ধারালো বস্তু যা রক্ত প্রবাহিত করে তা দ্বারা যাবাহ করা বৈধ। আর ধারালো বস্তুর অন্তর্ভুক্ত হলো ছুরি, পাথর, কাঠ, কাঁচ, বাঁশের ছিলকা ইত্যাদি।

আর এটাও প্রমাণিত হলো যে, গৃহপালিত প্রাণী যখন পলায়ন করবে ও জংলী মনোভাব প্রকাশ করবে, যার কারণে তাকে যাবাহ করা সম্ভব হচ্ছে না, তখন তার পূর্ণ শরীর যাবাহের হুকুমে পড়ে যাবে। যেমনটি শিকারী প্রাণীর ক্ষেত্রে করা হয়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৮১৮)

‘আবদুর রহমান মুবারকপূরী ‘‘শারহুস্ সুন্নাহ্’’য় বলেনঃ অত্র হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, গৃহপালিত প্রাণী যখন জংলী ভাব প্রকাশ করবে ও পলায়ন করবে। যার কারণে তার যাবাহ করার জায়গায় কর্তন সম্ভব হচ্ছে না, তখন তার পূর্ণ শরীর যাবাহ করার স্থান হিসেবে পরিগণিত হবে, ঐ শিকারীর মতো, যাকে যাবাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

অনুরূপভাবে যদি কোন কূপে কোন উট উল্টে পড়ে যায়, যার গলায় যাবাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তখন তার শরীরের যে কোন জায়গায় আঘাত করার দ্বারা মারা গেলে তা হালাল হিসেবে গণ্য হবে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪৯২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৪০৭২-[৯] কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তার এক পাল বকরী ছিল, যা সাল্’ই পাহাড়ী এলাকায় চরত। এক সময় আমাদের এক দাসী দেখতে পেল যে, আমাদের পালের একটি বকরী মরণাপন্ন হয়ে পড়েছে। তখন সে একখন্ড পাথর ভেঙ্গে নিলো এবং তার দ্বারা বকরীটিকে যাবাহ করে দিলো। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে তা খাওয়ার অনুমতি দিলেন। (বুখারী)[1]

الْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَن كعبِ بنِ مَالك أَنه كانَ لَهُ غَنَمٌ تُرْعَى بِسَلْعٍ فَأَبْصَرَتْ جَارِيَةٌ لَنَا بِشَاةٍ مِنْ غَنَمِنَا مَوْتًا فَكَسَرَتْ حَجَرًا فَذَبَحَتْهَا بِهِ فَسَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأمره بأكلها. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن كعب بن مالك انه كان له غنم ترعى بسلع فابصرت جارية لنا بشاة من غنمنا موتا فكسرت حجرا فذبحتها به فسال النبي صلى الله عليه وسلم فامره باكلها. رواه البخاري

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৪০৭৩-[১০] শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক জিনিসের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং যখন তোমরা কোন ব্যক্তিকে (ক্বিসাস ইত্যাদিতে) হত্যা করবে, তখন তাকে উত্তম পদ্ধতিতে হত্যা করবে। আর যখন কোন প্রাণীকে যাবাহ করবে, তখন তাকে উত্তমরূপেই যাবাহ করবে। তোমরা অবশ্যই ছুরি ধার দিয়ে নেবে এবং যাবাহকৃত পশুকে শান্তি দেবে। (মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى كَتَبَ الْإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الذَّبْحَ وَلْيُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهُ وَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَهُ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن شداد بن اوس عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «ان الله تبارك وتعالى كتب الاحسان على كل شيء فاذا قتلتم فاحسنوا القتلة واذا ذبحتم فاحسنوا الذبح وليحد احدكم شفرته وليرح ذبيحته» . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ (إِنَّ اللهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى كَتَبَ الْإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ) ব্যাখ্যাকার বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের ওপর প্রত্যেক বস্তুর ক্ষেত্রে অনুগ্রহ করা আবশ্যক করেছেন। চায় তা জীবিত বা মৃত মানুষ ও প্রাণী হোক।

এ বাক্য দ্বারা এই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ। আর চরিত্রকে পূর্ণাঙ্গতা দেয়ার জন্য তাকে প্রেরণ করা হয়েছে এবং তার উম্মাতের জন্য তার অনুসরণের মাধ্যমে এই গুণের একটি অংশ রয়েছে।

ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অত্র হাদীসে নির্দেশসূচক বাক্য ব্যবহার করে ইহসান তথা দয়া ও অনুগ্রহ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হলেও এখানে দয়া ও অনুগ্রহ করা মুস্তাহাব।

আর اِحْسَانٌ অর্থ অনুগ্রহ করা। অনুগ্রহ করা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- পশুকে আরাম ও শান্তি দেয়া। ধারালো ছুরি দ্বারা ও দ্রুত ছুরি চালানোর মাধ্যমে যাবাহ করা।

(وَلْيُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهٗ) অর্থাৎ তোমরা অবশ্যই ছুরি ধার করে নিবে। যাবাহকৃত পশুর সামনে ছুরি ধার না করা মুস্তাহাব বা কাম্য এবং কোন পশুকে অপর কোন পশুর সামনে যাবাহ না করাই ভালো এবং পশুকে কসাইখানায় না নিয়ে যাওয়াই ভালো।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অত্র হাদীসটি ব্যাপক অর্থবোধক তথা দয়া ও অনুগ্রহ যে কোন পশু যাবাহ করার ক্ষেত্রে হতে পারে এবং মানুষকে ক্বিসাস ও শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রেও হতে পারে।

আমাদের ‘আলিমগণ বলেনঃ পশুর জান বের হওয়ার পূর্বে চামড়া ছাড়ানো অপছন্দনীয় কাজ। কেননা অত্র হাদীস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, সব ধরনের কষ্ট প্রদানে ও শাস্তিদানে কোন উপকার নেই। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(وَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَهٗ) এবং যাবাহকৃত পশুকে শান্তি দিবে। ইবনুল মালিক বলেনঃ যাবাহকৃত পশুকে আত্মা বের না হওয়া পর্যন্ত রেখে দিবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৮১১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৪০৭৪-[১১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন জানোয়ার বা অন্য কোন প্রাণীকে হত্যা করার জন্য আবদ্ধ করে রাখতে নিষেধ করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْهَى أَنْ تُصْبَرَ بهيمةٌ أَو غيرُها للْقَتْل

وعن ابن عمر قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم ينهى ان تصبر بهيمة او غيرها للقتل

ব্যাখ্যাঃ ‘‘শারহুস্ সুন্নাহ্’’তে বলা হয়েছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথার দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন যে, কোন প্রাণীকে আটকিয়ে রেখে তীর নিক্ষেপ করা যাতে সে মারা যায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৪০৭৫-[১২] উক্ত রাবী [’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন ব্যক্তির ওপর লা’নাত করেছেন, যে কোন জিবন্ত প্রাণীকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَعَنَ مَنِ اتَّخَذَ شَيْئًا فِيهِ الرُّوحُ غَرَضًا

وعنه ان النبي صلى الله عليه وسلم لعن من اتخذ شيىا فيه الروح غرضا

ব্যাখ্যাঃ ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী لَعَنَ اللهُ مَنْ فَعَلَ هٰذَا অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন প্রাণীকে নিশানা বানিয়ে হত্যা করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর অভিশাপ করেছেন। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, অত্র হাদীসে নিষেধটি হারামের অন্তর্ভুক্ত। কেননা এভাবে প্রাণীর কষ্ট হয়। তার আত্মার বিনাশ সাধন হয়, সম্পদের ক্ষতি হয়, আর যদি যাবাহযোগ্য প্রাণী হয় তাহলে যাবাহ করা হাতছাড়া হয়ে যায়। আর যদি যাবাহযোগ্য প্রাণী না হয়, তাহলে তার উপকার হাতছাড়া হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৪০৭৬-[১৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে জিনিসের মধ্যে প্রাণ আছে, তোমরা তাকে লক্ষ্যবস্তু করো না। (মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تَتَّخِذُوا شَيْئًا فِيهِ الرُّوحُ غَرَضًا» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابن عباس ان النبي صلى الله عليه وسلم قال: «لا تتخذوا شيىا فيه الروح غرضا» . رواه مسلم

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৪০৭৭-[১৪] জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কোন পশুর) মুখমণ্ডল ে আঘাত করতে এবং চেহারায় দাগ দিতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الضَّرْبِ فِي الْوَجْهِ وَعَنِ الْوَسْمِ فِي الْوَجْه. رَوَاهُ مُسلم

وعن جابر قال: نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الضرب في الوجه وعن الوسم في الوجه. رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ চেহারায় আঘাত করা প্রত্যেক মর্যাদাবান প্রাণীর ক্ষেত্রে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন- মানুষ, গাধা, ঘোড়া, উট, খচ্চর, বকরী ইত্যাদি। তবে মানুষের ক্ষেত্রে আরো কঠিন। কেননা চেহারা সকল সৌন্দর্যের মিলনস্থল। পাশপাশি তা কোমল ও হালকা। যেখানে আঘাতের দাগ প্রকাশিত হয়। এমনকি কখনো চেহারাকে বিকৃত করে দেয় আবার কখনো কতিপয় ইন্দ্রিয়কে ক্ষতি করে ফেলে। তিনি বলেন, অপরপক্ষ চেহারায় দাগ দেয়া সর্বসম্মতিক্রমে নিষিদ্ধ। আর মানুষ ছাড়া কোন প্রাণীর চেহারা ব্যতীত যে কোন স্থানে দাগ দেয়া শাফি‘ঈ মাযহাবের নিকট কোন মতভেদ ছাড়া জায়িয। তবে যাকাত ও জিয্ইয়ার উটের ক্ষেত্রে মুস্তাহাব। এ ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে মুস্তাহাবও নয় এবং নিষেধও নয়। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৭১০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৪০৭৮-[১৫] উক্ত রাবী [জাবির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে দিয়ে একটি গাধা অতিক্রম করছিল। তিনি দেখলেন, তার মুখমণ্ডল ে দাগ দেয়া রয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ সে ব্যক্তির ওপর আল্লাহর লা’নাত যে তার মুখমণ্ডল ে দাগ দিয়েছে। (মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ عَلَيْهِ حِمَارٌ وَقَدْ وُسِمَ فِي وَجْهِهِ قَالَ: «لَعَنَ اللَّهُ الَّذِي وَسَمَهُ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وعنه ان النبي صلى الله عليه وسلم مر عليه حمار وقد وسم في وجهه قال: «لعن الله الذي وسمه» . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ চেহারায় দাগ দেয়া সর্বসম্মতিক্রমে নিষিদ্ধ। যা হাদীস থেকে প্রমাণিত। আর মানুষকে দাগ দেয়া হারাম তার মর্যাদার কারণে। কেননা তাকে দাগ দেয়া নিস্প্রয়োজন। সুতরাং এভাবে তাকে কষ্ট প্রদান করা বৈধ নয়।

ইমাম বাগাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ দাগ দেয়া স্পষ্টভাবে হারাম। কেননা আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাগ প্রদানকারীকে অভিশাপ দিয়েছেন। আর অভিশাপের দাবী হলো হারাম। আর মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রাণীর চেহারা ব্যতীত যে কোন স্থানে দাগ দেয়া শাফি‘ঈ মাযহাবের নিকটে কোন মতভেদ ছাড়া জায়িয। তবে যাকাত ও জিয্ইয়ার উটের ক্ষেত্রে মুস্তাহাব। এছাড়া অন্য ক্ষেত্রে মুস্তাহাবও নয় এবং নিষেধও নয়। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২১১৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৪০৭৯-[১৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ভোরে আমি ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ত্বলহাহ্-কে মিষ্টিমুখ করানোর জন্য রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে নিয়ে এলাম। তখন আমি তাঁকে এমন অবস্থায় পেলাম যে, তাঁর হাতে ছিল একখানা দাগ লাগানোর যন্ত্র। তা দ্বারা তিনি সাদাকা-যাকাতের উটগুলো দাগাচ্ছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَن أنس قَالَ: غَدَوْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ لِيُحَنِّكَهُ فَوَافَيْتُهُ فِي يَدِهِ الْمِيسَمُ يَسِمُ إِبِلَ الصَّدَقَة

وعن انس قال: غدوت الى رسول الله صلى الله عليه وسلم بعبد الله بن ابي طلحة ليحنكه فوافيته في يده الميسم يسم ابل الصدقة

ব্যাখ্যাঃ মুহাল্লিব (রহিমাহুল্লাহ) ও অন্যান্যরা বলেনঃ অত্র হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, রাষ্ট্রপ্রধান কেবলমাত্র দাগ দেয়ার যন্ত্রটি ধরতে পারবে অন্য কোন মানুষ তার মতো ধরতে পারবে না এবং সেটা আংটি বা সিল মোহরের ন্যায়।

এটা প্রমাণিত যে, রাষ্ট্রপ্রধান যাকাতের মালগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখবে এবং নিজেও দেখাশুনার দায়িত্ব নিবে। এছাড়াও মুসলিমদের সার্বিক বিষয়েও খেয়াল রাখবে।

আর এটাও প্রমাণিত যে, প্রয়োজনে প্রাণীকে ব্যথা বা কষ্ট দেয়া বৈধ।

এবং এটাও প্রমাণিত যে, নবজাতক শিশুকে বারাকাত হাসিলের জন্য সৎ ব্যক্তিদের নিকটে নিয়ে যাওয়া।

এবং এটাও প্রমাণিত যে, বণ্টনের ক্ষেত্রে বিলম্ব করা জায়িয। কেননা যদি বণ্টন দ্রুত করা হয় তাহলে প্রাণীগুলো দাগ দেয়া থেকে অমুখাপেক্ষী হয়ে যাচ্ছে।

এবং এটাও প্রমাণিত যে, পেশাগত কাজ সরাসরি নিজেই করা অন্যকে দিয়ে না করা, অধিক সাওয়াবের আশায় এবং অহংকার-অহমিকা দূর করতে। (ফাতহুল বারী ৩য় খন্ড, হাঃ ১৫০২)

ব্যাখ্যাকার বলেনঃ মানুষকে দাগ দেয়া হারাম।

পক্ষান্তরে মানুষ ব্যতীত অন্য প্রাণীর ক্ষেত্রে চেহারায় দাগ দেয়া নিষেধ। আর যাকাত ও জিয্ইয়ার উটের ক্ষেত্রে চেহারা ব্যতীত দাগ দেয়া মুস্তাহাব। আর অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে জায়িয।

যদি দাগ দিতে হয় তাহলে বকরীর কানে দাগ দেয়া মুস্তাহাব। আর উট ও গরুর উরুর মূলে, কেননা সেটি শক্ত জায়গা। তাই সেখানে কষ্ট কম হবে এবং চুল হালকা থাকে। আর দাগ প্রকাশ পাবে।

* দাগ দেয়ার উপকারিতা : কতিপয় প্রাণীকে কতিপয় প্রাণী থেকে পার্থক্য করা।

আর জিয্ইয়ার প্রাণীর ক্ষেত্রে جِزْيَةٌ (জিয্ইয়াহ্) অথবা صَغَارٌ (অপমান) লেখা মুস্তাহাব। আর যাকাতের প্রাণীর ক্ষেত্রে زَكَاةٌ (যাকাত) অথবা صَدَقَةٌ (সাদাকা) লেখা মুস্তাহাব।

ইমাম শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) ও তার অনুসারীরা বলেনঃ বকরীর দাগ দেয়ার যন্ত্রটি গরুর দাগ দেয়ার যন্ত্রটির চেয়ে হালকা হওয়া মুস্তাহাব। আর গরুর দাগ দেয়ার যন্ত্রটি উটের দাগ দেয়ার যন্ত্রটির চেয়ে হালকা হওয়া মুস্তাহাব। (শারহুন নাবাবী ১৪ খন্ড, হাঃ ২১১৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৪০৮০-[১৭] হিশাম ইবনু যায়দ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলাম, তখন তিনি পশুর আস্তাবলে ছিলেন। আমি তাঁকে দেখলাম, তিনি ছাগল-বকরীগুলোকে দাগ দিচ্ছেন। (হিশাম বলেন,) আমার ধারণা, আনাস বলেছেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ পশুগুলোর কানের মধ্যেই দাগ দিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ هِشَامِ بْنِ زَيْدٍ عَنْ أَنَسٍ قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ فِي مِرْبَدٍ فَرَأَيْتُهُ يَسِمُ شَاءَ حسبته قَالَ: فِي آذانها

وعن هشام بن زيد عن انس قال: دخلت على النبي صلى الله عليه وسلم وهو في مربد فرايته يسم شاء حسبته قال: في اذانها

ব্যাখ্যাঃ হাদীসে উল্লেখিত শব্দ (مِرْبَدٍ) সম্পর্কে ইবনু মালিক বলেনঃ এর অর্থ হলো এমন স্থান যেখানে উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি আটকে রাখা হয়। ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ (مِرْبَدٍ) হলো এমন স্থান যেখানে উট আটকে রাখা হয়। আর তা মেষপালের খোয়াড়ের মতো। অন্যদিকে (شَاءَ) শব্দটি বকরি, খাশি তথা মাদী ছাগল ও নর ছাগল উভয়কেই বুঝায়। তাই হাদীসে উল্লেখিত শব্দ (شَاءَ) দ্বারা বকরী বা খাশি যে কোনটিই উদ্দেশ্য হতে পারে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

হাদীসে (في اذانها) শব্দ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চেহারায় দাগ দেননি। বরং কানে দাগ দিয়েছেন। আর এর থেকে এটাও বুঝা যায় যে, কান চেহারার অন্তর্ভুক্ত নয়।

এ হাদীসকেই জামহূর ‘উলামা দলীল হিসেবে গ্রহণ করে বলেছেন যে, চতুষ্পদ জন্তুকে দাগ দেয়া বৈধ। কিন্তু আহনাফগণ এ ব্যাপারে মতানৈক্য করেছেন আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়া হতে নিষেধ করার হাদীসকে কেন্দ্র করে। তারা বলেন, এ হাদীসটির হুকুম ব্যাপক। অর্থাৎ কোন প্রাণীকেই আগুন দিয়ে শাস্তি বা কষ্ট দেয়া বৈধ না। অতএব পশুকে দাগ দেয়া যাবে না। আবার তাদের কেউ কেউ দাবী করেছেন যে, আগুন দিয়ে পশুকে দাগ দেয়ার হাদীস মানসুখ হয়েছে। কিন্তু জামহূরগণ চতুষ্পদ জন্তুকে দাগ দেয়া বৈধ বলেছেন এ হাদীসকে খাস হিসেবে ধরে নিয়ে। অর্থাৎ কোন কিছুই আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়া বা কষ্ট দেয়া বৈধ না। তবে প্রয়োজনে চতুষ্পদ জন্তুকে লোহা বা এ জাতীয় কিছু দ্বারা দাগ দেয়া বৈধ। والله أعلم (আল্লাহই ভালো জানেন)। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫৫৪২)

এ দাগ দেয়া প্রসঙ্গে আরেকটি হাদীস গত হয়েছে। তাতে রয়েছে, মানুষকে দাগ দেয়া হারাম। আর মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীকে দাগ দেয়া বৈধ। তবে চেহারায় দাগ দেয়া বৈধ নয়। আর যাকাত এবং ট্যাক্সের পশুতে মুখে ছাড়া অন্য জায়গায় দাগ দেয়া মুস্তাহাব। যদি দাগ দেয়ার প্রয়োজনই হয় তাহলে মেষপাল বা এ জাতীয় প্রাণীর কানে দাগ দেয়া মুস্তাহাব। পক্ষান্তরে প্রয়োজনে উট, গরু এগুলোর রানের মাঝে দাগ দেয়া মুস্তাহাব। কারণ এটা শক্ত জায়গা। তাতে ব্যথা কম হয়। লোম কম থাকে এবং তাতে দাগও ভালোভাবে দেখা যায়। এসব পশুকে দাগ দেয়ার উপকারিতা হলো একটি পশুকে আরেকটি পশু থেকে যাতে পার্থক্য করা যায়। আর মুস্তাহাব হলো ট্যাক্সের পশুর সাথে ট্যাক্স আর যাকাতের পশুর সাথে যাকাত বা সাদাকা লেখা।

ইমাম শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) ও তার অনুসারীগণ বলেনঃ মুস্তাহাব হলো যেন মেষপালের দাগ দেয়ার যন্ত্রটি গরুকে দাগ দেয়ার যন্ত্রের থেকে হালকা হয়। আর গরুটি যেন উটের থেকে হালকা হয়। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যাকাত ও ট্যাক্সের পশুকে দাগ দেয়া মুস্তাহাব। এটা আমাদের মত এবং সকল সাহাবী ও জামহূর ‘আলিমদের মত। ইবনু সাববাগ ও অন্যান্যরা এ বিষয়টিকে সাহাবীদের ইজমা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ১১১)

খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসই দলীল যে, কান চেহারার অন্তর্ভুক্ত না। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য হাদীসে চেহারায় দাগ দিতে ও তাতে প্রহার করতে নিষেধ করেছেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৬০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৭ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে