লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪০৭০-[৭] আবুত্ব তুফায়ল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ’আলী -কে জিজ্ঞেস করা হলো, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাদেরকে (অর্থাৎ- আহলে বায়তকে) স্বতন্ত্রভাবে কিছু বলেছেন কি? উত্তরে তিনি বললেনঃ তিনি (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমন কোন বিষয়ে আমাদেরকে স্বতন্ত্র রাখেননি, যাতে অন্য লোক অন্তরভুক্ত হয়নি। তবে আমার তলোয়ারের এ খাপের ভিতরে যা আছে। অতঃপর তিনি খাপের ভিতর হতে এক খন্ড লিখিত কাগজ বের করলেন তাতে লিখা ছিল, সে ব্যক্তির ওপর আল্লাহর লা’নাত যে গায়রুল্লাহর নামে যাবাহ করে। আর সে ব্যক্তির ওপরও আল্লাহর লা’নাত যে জমিনের সীমানা পরিবর্তন করে। আল্লাহর লা’নাত ঐ ব্যক্তির ওপর, যে নিজের পিতাকে অভিসম্পাত দেয় এবং আল্লাহর লা’নাত সে ব্যক্তির ওপর, যে কোন বিদ্’আতীকে আশ্রয় দেয়। (মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَن أبي الطُّفَيْل قَالَ: سُئِلَ عَليّ: هَلْ خَصَّكُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشَيْءٍ؟ فَقَالَ: مَا خَصَّنَا بِشَيْءٍ لَمْ يَعُمَّ بِهِ النَّاسَ إِلَّا مَا فِي قِرَابِ سَيْفِي هَذَا فَأَخْرَجَ صَحِيفَةً فِيهَا: «لَعَنَ اللَّهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللَّهِ وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ سَرَقَ مَنَارَ الْأَرْضِ وَفِي رِوَايَةٍ مَنْ غَيَّرَ مَنَارَ الْأَرْضِ وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَهُ وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ آوَى مُحْدِثًا» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন বিখ্যাত সাহাবী আবুত্ব তুফায়ল (রাঃ)। এটি তাঁর কুনিয়াতি নাম, তার মূল নাম عامر بن وائلة الليسي (‘আমির ইবনু ওয়ায়িলাহ্ আল লায়সী)। যিনি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সকল সাহাবীদের মধ্যে সর্বশেষ মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশাতে তাঁকে আট বছর পেয়েছিলেন। তিনি ১০২ বছর বয়সে মক্কাতে মৃত্যুবরণ করেন।
আলোচ্য হাদীসে আবুত্ব তুফায়ল (রাঃ) বলেন যে, ‘আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাদের তথা আহলে বায়তেরা রসূলের (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবারের) জন্য কোন কিছু বিশেষভাবে রেখে গেছেন? বা কোন বিশেষ নিদর্শন বা সুন্নাত রেখে গেছেন?
তিনি [‘আলী (রাঃ)] বললেনঃ না, আমাদের জন্য তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিশেষভাবে কিছু রেখে যাননি বরং সকলের জন্য ব্যাপকভাবে যা রেখেছেন আমাদের জন্যও তাই রেখেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
তবে যা কিছু তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রেখেছেন قراب سيفيى (ক্বিরাবু সাইফিয়্যি) এর মাঝে। এখানে قراب سيفيى (ক্বিরাবু সাইফিয়্যি) এর ব্যাখ্যায় শারহুন নাবাবী এর লেখক বলেছেন,
قِرَابُ سَيْفِي هُوَ بِكَسْرِ الْقَافِ وَهُوَ وِعَاءٌ مِنْ جِلْدٍ أَلْطَفُ مِنَ الْجِرَابِ يَدْخُلُ فِيهِ السَّيْفُ بِغِمْدِه وَمَا خَفَّ مِنَ الْآلَةِ
অর্থাৎ قراب سيفى হলো, চামড়ার তৈরি একটি পাত্র যা মোজার চেয়ে পাতলা, যার মধ্যে কোষবদ্ধ তরবারি ও হালকা পাতলা কোন যন্ত্রপাতি রাখা হয়। (শারহুন নাবাবী, ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৯৭৮)
মিরক্বাত গ্রন্থকার বলেনঃ সম্ভবত উক্ত তরবারিটি ذو الفقار ‘‘জুলফিকার’’ নামক তরবারি, যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলী (রাঃ)-কে প্রদান করেছিলেন।
অতঃপর ‘আলী (রাঃ) উক্ত কোষবদ্ধ তরবারি রাখার খাপ থেকে একটি صحيفة সহীফাহ্ বা পত্র বের করলেন, যাতে লেখা ছিল,
لَعَنَ اللهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللهِ، وَلَعَنَ اللهُ مَنْ سَرَقَ مَنَارَ الْأَرْضِ
অর্থাৎ ঐ ব্যক্তির ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত যে গায়রুল্লাহর (আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো) নামে পশু যাবাহ করে। আল্লাহর অভিসম্পাত ঐ ব্যক্তির ওপর নিপতিত হোক যে জমিনের উঁচু স্তম্ভসমূহ (আইল) চুরি করে।
অত্র হাদীসে উল্লেখিত منار (মানার) শব্দটা منارة (মানারাহ্) শব্দের বহুবচন; যার অর্থ হলো বিভিন্ন জমির মাঝে উঁচু উঁচু ঐ চিহ্নসমূহ যা দ্বারা জমিনের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। [সম্পাদক]
ইমাম ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অর্থাৎ যে ব্যক্তি প্রতিবেশীর অধিকারভুক্ত জমিনের দখলদারিত্ব নিতে চায়।
ইমাম তূরিবিশতী ও অন্যান্যগণ বলেনঃ ‘মানার’ হলো জমিনের মাঝে একটি নিশানা বা একটি সীমানা। আর এটা এজন্য যে, এটা দ্বারা নিজ মালিকানা বা রাস্তার সীমানা বরাবর বা পরিবর্তন করার জন্য অন্যায়ভাবে দখল করা। কেননা অন্য একটি বর্ণনায় আছে, مَنْ غَيَّرَ مَنَارَ الْأَرْضِ অর্থাৎ যে ব্যক্তি জমিনের সীমানা পরিবর্তন করল। অর্থাৎ সীমানার চিহ্ন উঠিয়ে ফেলল এবং তা নিজের জায়গাতে স্থাপন করল অথবা নিজের স্থান থেকে উঠিয়ে অন্য স্থানে স্থাপন করল। উদ্দেশ্য হলো : যাতে একজন প্রতিবেশী অন্য প্রতিবেশীর জায়গা থেকে কিছু অংশ কর্তন করে না নিতে পারে।
উপরোল্লিখিত হাদীসের পরবর্তী অংশে বলা হচ্ছে وَلَعَنَ اللهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَهٗ আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর অভিসম্পাত করেন, যে তার পিতার ওপর অভিসম্পাত করে।
পিতাকে অভিসম্পাত করা দু’ রকমভাবে হয়ে থাকে, ১. স্পষ্টভাবে অভিশাপ করা, ২. কারণগতভাবে। আর এটা এ রকম যে, কেউ অন্য কারো বাবাকে গালি দিল, অতঃপর সেও তার বাবাকে গালি দিল বা অভিশাপ দিল। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللهِ فَيَسُبُّوا اللهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ
‘‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের তারা ডাকে বা আরাধনা করে তাদের তোমরা মন্দ বলো না বা গালি দিও না। তাহলে তারাও ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকে মন্দ বলবে বা গালি দিবে।’’ (সূরাহ্ আল আন্‘আম ৬ : ১০৮)
সুতরাং অন্যদের থেকে গাল-মন্দ পাওয়া থেকে বাঁচার জন্য সাবধানতাবশত তার কারণগুলো সংঘটিত করা হতে নিষেধ করা হচ্ছে।
অত্র হাদীসের শেষাংশে বলা হচ্ছে, (وَلَعَنَ اللهُ مَنْ آوَى مُحْدِثًا) অর্থাৎ আল্লাহ তার ওপর অভিসম্পাত করুন, যে কোন অন্যায় সম্পাদনকারী বা অনিষ্টতাকারীকে আশ্রয় প্রদান করল। উল্লেখিত হাদীসে محدثا (মুহদিসান) শব্দের ব্যাখ্যা হলো যে ব্যক্তি কারো ওপর বড় ধরনের কোন অনিষ্টতা বা অপরাধ সংঘটিত করে, অথবা ইসলামের মধ্যে কোন বিদ্‘আত বা নতুন কিছু আবিষ্কার করে।
أوى তথা তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অর্থ হলো, তাকে তার বিরোধী প্রতিপক্ষ বা যাদের ওপর অন্যায় করেছে তাদের থেকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া। আর প্রতিপক্ষর বিচারের সম্মুখীন হওয়া থেকে তাকে সহায়তা বা পৃষ্ঠপোষকতা করা এবং তার ও প্রতিপক্ষর মাঝে বিচার করা, ক্বিসাস নেয়া বা শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করা।
অনুরূপভাবে যারা ইসলাম ধ্বংসাত্মক কাজ করবে এবং এদের যারা শাস্তির সম্মুখীন হওয়া থেকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে বা রক্ষা করবে, তার এই নিকৃষ্ট স্বভাব পরিবর্তন করার নিমিত্তে তাকে পাকড়াও থেকে বিরত রাখার ক্ষেত্রে যে তাকে সহায়তা করবে সেও বর্ণিত অভিশপ্তের অন্তর্ভুক্ত হবে- (হাদীসটি মুসলিম, আহমাদ ও নাসায়ীতে বর্ণিত হয়েছে)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)