হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৪০৭১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৪০৭১-[৮] রাফি’ ’ইবনু খদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! আগামীকাল আমরা শত্রুর মোকাবিলা করব অথচ আমাদের সাথে কোন ছুরি নেই। এমতাবস্থায় আমরা কি বাঁশের ছিলকা দ্বারা যাবাহ করতে পারব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যে জিনিস রক্ত প্রবাহিত করে এবং যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে, তা খেতে পার। তবে দাঁত ও নখ দ্বারা যাবাহ করবে না। এ সম্পর্কে আমি তোমাকে অবহিত করছি। বস্ত্ততঃ দাঁত হলো হাড়বিশেষ (তাতে ধার নেই), আর নখ হলো হাবশীদের ছুরি (অর্থাৎ- তারা নখ দ্বারা যাবাহ করে)।

বর্ণনাকারী বলেন, এক সময় গনীমাতের মালে কিছুসংখ্যক উট ও বকরি আমাদের হাতে আসে এবং তা হতে একটি উট পালিয়ে যায়। এমতাবস্থায় জনৈক ব্যক্তি তার প্রতি তীর নিক্ষেপ করে, তাকে আটকে ফেলল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিশ্চয় এ উটটির মধ্যে বন্য পশুর পালানোর স্বভাবের মতো স্বভাব রয়েছে। সুতরাং যখন এদের কোন একটি তোমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন তার সাথে এরূপ আচরণই করবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَن رَافع بن خديج قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا لَاقُوا الْعَدُوَّ غَدًا وَلَيْسَتْ مَعَنَا مُدًى أَفَنَذْبَحُ بِالْقَصَبِ؟ قَالَ: مَا أَنْهَرَ الدَّمَ وَذُكِرَ اسْمُ اللَّهِ فَكُلْ لَيْسَ السِّنَّ وَالظُّفُرَ وَسَأُحَدِّثُكَ عَنْهُ: أَمَّا السِّنُّ فَعَظْمٌ وَأَمَّا الظُّفُرُ فَمُدَى الْحَبَشِ وَأَصَبْنَا نَهْبَ إِبِلٍ وَغَنَمٍ فَنَدَّ مِنْهَا بِعِيرٌ فَرَمَاهُ رَجُلٌ بِسَهْمٍ فَحَبَسَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ لِهَذِهِ الْإِبِلِ أَوَابِدَ كَأَوَابِدِ الْوَحْشِ فَإِذَا غَلَبَكُمْ مِنْهَا شَيْءٌ فَافْعَلُوا بِهِ هَكَذَا»

ব্যাখ্যাঃ হাদীসে বর্ণিত (إِنَّا لَاقُوا الْعَدُوَّ غَدًا) এর মর্মার্থ হলো- আমরা আগামীকাল বা ভবিষ্যতে কাফির শত্রুদের সাথে মুখোমুখি হব।

(أَفَنَذْبَحُ بِالْقَصَبِ) নিহায়াহ্ গ্রন্থকার বলেনঃ প্রত্যেক চওড়া বিশিষ্ট হাড়কে কসব বলা হয়।

(مَا أَنْهَرَ الدَّمَ) ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর উদ্দেশ্য হলো, যা প্রচুর পরিমাণে রক্ত প্রবাহিত করে, যা উপমীয় নদীতে পানি প্রবাহিত হওয়ার মতো।

(لَيْسَ السِّنَّ وَالظُّفُرَ) অধিকাংশ ব্যাখ্যাকারগণ এর মর্মার্থ এভাবে উল্লেখ করেছেন যে, নখ ও দাঁত ব্যতীত। কেননা উভয়টি দ্বারা যাবাহ করা সম্ভব নয়।

আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিষেধের কারণ হলো যে, সেটা জীনদের খাবার।

ইমাম সুয়ূত্বী ও ইমাম নাবাবী (রহিমাহুমাল্লাহ) এ মতামত দিয়েছেন।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) সহীহ মুসলিম-এর ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেনঃ আমাদের অনুসারীরা বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী (أَمَّا السِّنُّ فَعَظْمٌ) দ্বারা বুঝতে পেরেছি হাড্ডি দ্বারা যাবাহ করা অবৈধ।

ইমাম শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) ও তাঁর অনুসারীরা এই মতের পক্ষ। জামহূর ‘উলামাও এই মতের পক্ষ গিয়েছেন।

ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ দাঁত ও হাড্ডি দ্বারা একত্রে যাবাহ বৈধ নয় বরং আলাদা আলাদা বৈধ আছে।

ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ)-এর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ মত হলো- হাড্ডি দ্বারা বৈধ, দাঁত দ্বারা নয়।

(وَأَمَّا الظُّفُرُ فَمُدَى الْحَبَشِ) এর তাৎপর্য হলো- হাবশীরা তাদের নখকে ছুরির সমতুল্য মনে করে, নখ দ্বারা যাবাহ করত। তাই আমাদের তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা যাবে না, যেহেতু তারা অমুসলিম ছিল। আর আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।

আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী (إِنَّ لِهٰذِهِ الْإِبِلِ أَوَابِدَ) ‘‘নিশ্চয় এ উটটির মধ্যে বন্য পশুর স্বভাব রয়েছে।’’

ইমাম তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ পলায়নের স্বভাব সকল উটেরই রয়েছে। আর ইমাম ত্বীবী বলেনঃ কিছু সংখ্যক উটের এই স্বভাব রয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

‘উলামাগণ বলেনঃ অত্র হাদীসে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, যাবাহ করার ক্ষেত্রে যা কর্তন করে ও রক্ত প্রবাহিত করে তা শর্ত করা হয়েছে। আর রক্ত প্রবাহিত ব্যতীত শুধু থেতলে দিয়ে মস্তিষ্কে আঘাত করাই যথেষ্ট হবে না।

কতিপয় ‘আলিমগণ বলেনঃ যাবাহ করা ও রক্ত প্রবাহিতকে শর্তকরণের রহস্য হলো, হালাল গোশত ও চর্বিকে পৃথককরণ উভয়টির হারাম হতে। আর এটাও অবহিত করা যে, মৃত প্রাণী রক্ত প্রবাহিত না হওয়ার কারণে হারাম।

অত্র হাদীসের মাধ্যমে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, প্রত্যেক ধারালো বস্তু যা কর্তন করে তা দ্বারা যাবাহ করা বৈধ। তবে নখ, দাঁত ও সমস্ত হাড্ডি ব্যতীত। ধারালো বস্তুর অন্তর্ভুক্ত হলো- তরবারি, ছুরি, বল্লমের অগ্রভাগ, পাথর, কাঠ, কাঁচ, বাঁশের ছিলকা, চিনামাটির পাত্র, তামা, পিতল ইত্যাদি। এগুলো দ্বারা যাবাহ করা বৈধ। আর হাদীসে বর্ণিত নখ বলতে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর নখ হতে পারে, চাই তা একত্রে হোক বা পৃথক হোক তা দ্বারা যাবাহ করা অবৈধ।

অপরপক্ষ হাদীসে বর্ণিত দাঁত বলতে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী হতে পারে, চায় তা একত্রে হোক অথবা পৃথক হোক পবিত্র হোক বা অপবিত্র হোক তা দ্বারা যাবাহ করা সম্পূর্ণ অবৈধ। (শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৯৬৮)

(أَمَّا السِّنُّ فَعَظْمٌ) অর্থাৎ প্রত্যেক হাড্ডি দ্বারা যাবাহ করা অবৈধ। তবে দাঁত হলো হাড্ডি।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আল্লাহর নবী বলেছেন যে, তোমরা হাড্ডি দ্বারা যাবাহ করবে না, কেননা সেটা রক্ত দ্বারা অপবিত্র হয়। আর আমি তোমাদেরকে হাড্ডি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করতে নিষেধ করেছি যাতে তা অপবিত্র না হয়, যেহেতু এটা জীনদের খাবার।

অত্র হাদীসের মাধ্যমে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, কোনভাবেই দাঁত ও নখ দ্বারা যাবাহ করা যাবে না।

এ হাদীসে এটাও বুঝা যাচ্ছে যে, হাড্ডি দ্বারাও যাবাহ করা যাবে না। সুতরাং যে কোন হাড্ডি দ্বারা যাবাহ করা হারাম, নাজায়িয।

(وَأَمَّا الظُّفُرُ فَمُدَى الْحَبَشِ) ইবনু সলাহ বলেনঃ হাবশীরা কাফির, তাই আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। ইমাম নাবাবীও অনুরূপ মত প্রকাশ করেছেন।

কেউ কেউ বলেনঃ উভয়টি দ্বারা যাবাহ নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হলো, তা দ্বারা প্রাণীর কষ্ট হয় এবং প্রাণীকে শুধু শ্বাসরুদ্ধ করা হয়, যা যাবাহ করার কোন পদ্ধতিতে পড়ে না।

অত্র হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, প্রত্যেক ধারালো বস্তু যা রক্ত প্রবাহিত করে তা দ্বারা যাবাহ করা বৈধ। আর ধারালো বস্তুর অন্তর্ভুক্ত হলো ছুরি, পাথর, কাঠ, কাঁচ, বাঁশের ছিলকা ইত্যাদি।

আর এটাও প্রমাণিত হলো যে, গৃহপালিত প্রাণী যখন পলায়ন করবে ও জংলী মনোভাব প্রকাশ করবে, যার কারণে তাকে যাবাহ করা সম্ভব হচ্ছে না, তখন তার পূর্ণ শরীর যাবাহের হুকুমে পড়ে যাবে। যেমনটি শিকারী প্রাণীর ক্ষেত্রে করা হয়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৮১৮)

‘আবদুর রহমান মুবারকপূরী ‘‘শারহুস্ সুন্নাহ্’’য় বলেনঃ অত্র হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, গৃহপালিত প্রাণী যখন জংলী ভাব প্রকাশ করবে ও পলায়ন করবে। যার কারণে তার যাবাহ করার জায়গায় কর্তন সম্ভব হচ্ছে না, তখন তার পূর্ণ শরীর যাবাহ করার স্থান হিসেবে পরিগণিত হবে, ঐ শিকারীর মতো, যাকে যাবাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

অনুরূপভাবে যদি কোন কূপে কোন উট উল্টে পড়ে যায়, যার গলায় যাবাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তখন তার শরীরের যে কোন জায়গায় আঘাত করার দ্বারা মারা গেলে তা হালাল হিসেবে গণ্য হবে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪৯২)