পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪০৮১-[১৮] ’আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! যদি আমাদের কেউ শিকার করে খাওয়ার মতো কোন পশু পেয়ে যায় আর তার সঙ্গে ছুরি না থাকে, তখন সে হালকা ধরনের পাথর কিংবা ধারালো কোন কাঠ দ্বারা তাকে যাবাহ করতে পারবে কি? তিনি বললেন, ইচ্ছামত যে কোন জিনিস দ্বারাই রক্ত প্রবাহিত করে দাও এবং আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]

الْفَصْلُ الثَّانِي

عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ أَحَدُنَا أَصَابَ صَيْدًا وَلَيْسَ مَعَهُ سِكِّينٌ أَيَذْبَحُ بِالْمَرْوَةِ وَشِقَّةِ الْعَصَا؟ فَقَالَ: «أَمْرِرِ الدَّمَ بِمَ شِئْتَ وَاذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ

عن عدي بن حاتم قال: قلت يا رسول الله ارايت احدنا اصاب صيدا وليس معه سكين ايذبح بالمروة وشقة العصا؟ فقال: «امرر الدم بم شىت واذكر اسم الله» . رواه ابو داود والنساىي

ব্যাখ্যাঃ মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা উল্লেখ করেছেন যে, হাদীসে উল্লেখিত শব্দ (الْمَرْوَةِ) হলো, একেবারে পাতলা সাদা পাথর। যাকে ছুরির মতো বানানো যায় এবং তা দিয়ে যাবাহ করা যায়। (الدَّمَ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো প্রবহমান রক্ত। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ (الْمَرْوَةِ) হলো সাদা পাথর। আর (شِقَّةِ الْعَصَا) দ্বারা বুঝানো হয়েছে এমন জিনিসকে যা শক্ত এবং ধারালো হয়। অতএব পশুর শরীরে আঘাত করে রক্ত বের করা যায় এমন কোন জিনিস দিয়ে রক্ত বের করলে এবং আল্লাহর নাম নিলেই যথেষ্ট হবে। তখন তা খেতে কোন সমস্যা নেই। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৮২১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আদী ইবনু হাতিম (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪০৮২-[১৯] আবুল ’উশারা তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! গলা গ্রীবা ব্যতীত অন্য কোন স্থানে কি যাবাহ করা যায় না? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যদি তুমি তার উরুর মধ্যেও ক্ষত করে দাও তাও তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[1]

তবে ইমাম আবূ দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ এটা ঐ জানোয়ারের ব্যাপারে বলা হয়েছে, যা কোন খাদে পড়ে গিয়েছে। আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ এটা অস্বাভাবিক অবস্থায় জরুরী ভিত্তিতে যাবাহ করার বিধান।

الْفَصْلُ الثَّانِي

وَعَن أبي العُشَراءِ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَمَا تَكُونُ الذَّكَاةُ إِلَّا فِي الْحَلْقِ وَاللَّبَّةِ؟ فَقَالَ: «لَوْ طَعَنْتَ فِي فَخِذِهَا لَأَجْزَأَ عَنْكَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ أَبُو دَاوُدَ: وَهَذِهِ ذَكَاةُ الْمُتَرَدِّي وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا فِي الضَّرُورَة

وعن ابي العشراء عن ابيه انه قال: يا رسول الله اما تكون الذكاة الا في الحلق واللبة؟ فقال: «لو طعنت في فخذها لاجزا عنك» . رواه الترمذي وابو داود والنساىي وابن ماجه والدارمي وقال ابو داود: وهذه ذكاة المتردي وقال الترمذي: هذا في الضرورة

ব্যাখ্যাঃ উক্ত হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসাকারীর উত্তরে বলেছেনঃ যদি তুমি পশুর রানে আঘাত কর সেটিই তোমার জন্য যাবাহ হিসেবে যথেষ্ট হয়ে যাবে।

এ কথার প্রতিপাদ্য বিষয় হলো মারাত্মক প্রয়োজনের সময় শরীরের যে কোন জায়গায় জখম করলেই তা যাবাহ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় কণ্ঠনালীর মাঝে যাবাহ করতে হবে। আর স্বভাবিকভাবে যাবাহ করার ক্ষেত্রে গলার রগগুলো কাটতে হবে। কারণ সেটিই হলো জান বের হওয়ার স্থান। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

তুহফাতুল আহ্ওয়াযীতে বলা হয়েছে, হাদীস বিশারদগণ বলেনঃ বিশেষ প্রয়োজনে যখম করার দ্বারাই যাবাহ করা যথেষ্ট হয়ে যাবে। যেমন কোন পশু কূপে বা গর্তে পড়ে গেলে তাকে জখম করলেই যাবাহ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট হয়ে যাবে।

ইমাম আবূ দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেন, জখম করাটা যাবাহ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট হবে শুধুমাত্র কূপে বা গর্তে পড়া পশু অথবা পলায়নকারী পশু বা বন্য পশুর ব্যাপারে, অন্য ক্ষেত্রে তা সঠিক হবে না। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪৮১)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবুল ‘উশারা (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪০৮৩-[২০] ’আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কুকুর অথবা বাজপাখি-কে শিকার ধরার জন্য তুমি শিক্ষা দিয়েছ, অতঃপর তাকে ’বিসমিল্লাহ’ বলে ছেড়ে দিয়েছ, যদি সে শিকারটিকে তোমার জন্য ধরে রাখে, তবে তুমি তা খেতে পার। (রাবী বলেন,) আমি জিজ্ঞেস করলাম, যদি সে শিকারটিকে মেরে ফেলে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যখন সে শিকারটিকে মেরে ফেলেছে এবং তার কিছুই খায়নি (তখন তা খাওয়া যায়)। কেননা সে তা তোমার জন্যই শিকার করেছে। (আবূ দাঊদ)[1]

الْفَصْلُ الثَّانِي

وَعَن عدي بن حَاتِم أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا عَلَّمْتَ مِنْ كَلْبٍ أَوْ بَازٍ ثُمَّ أَرْسَلْتَهُ وَذَكَرْتَ اسْمَ اللَّهِ فَكُلْ مِمَّا أَمْسَكَ عَلَيْكَ» . قُلْتُ: وَإِنْ قَتَلَ؟ قَالَ: «إِذَا قَتَلَهُ وَلَمْ يَأْكُلْ مِنْهُ شَيْئًا فَإِنَّمَا أَمْسَكَهُ عَلَيْكَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن عدي بن حاتم ان النبي صلى الله عليه وسلم قال: «ما علمت من كلب او باز ثم ارسلته وذكرت اسم الله فكل مما امسك عليك» . قلت: وان قتل؟ قال: «اذا قتله ولم ياكل منه شيىا فانما امسكه عليك» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যাঃ মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসে শুধুমাত্র দু’টি প্রাণীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে উপমা হিসেবে অথবা অধিকাংশের বিবেচনায়। কেননা অধিকাংশ সময় সাধারণত এ দুই ধরনের প্রাণী দিয়েই শিকার করা হয়ে থাকে।

ইমাম আবূ দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ বাজ পাখি শিকার করে যদি সেই শিকারকৃত প্রাণী হতে কিছু খেয়ে ফেলে তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যদি কুকুর শিকারকৃত প্রাণী হতে কিছু খেয়ে ফেলে তাহলে সেই শিকারকৃত প্রাণী খাওয়া মাকরূহ। তবে যদি কুকুর শিকার করে রক্ত পান করে তাহলে তা খেতে কোন সমস্যা নেই। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৮৪৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আদী ইবনু হাতিম (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪০৮৪-[২১] উক্ত রাবী (’আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমি কোন শিকারের প্রতি তীর ছুঁড়ি এবং পরের দিন আমার তীরসহ শিকারটিকে পাই। (এমতাবস্থায় তার হুকুম কি?) তিনি বললেন, যদি তোমার এ দৃঢ় বিশ্বাস হয় যে, তোমার তীরই তাকে মেরেছে এবং অন্য কোন হিংস্র জানোয়ারের দ্বারা আঘাতের চিহ্ন তাতে না দেখো, তখন তুমি তা খেতে পারো। (আবূ দাঊদ)[1]

الْفَصْلُ الثَّانِي

وَعَنْهُ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرْمِي الصَّيْدَ فَأَجِدُ فِيهِ مِنَ الْغَدِ سَهْمِي قَالَ: «إِذَا عَلِمْتَ أَنَّ سَهْمَكَ قَتَلَهُ وَلَمْ تَرَ فِيهِ أَثَرَ سَبُعٍ فَكُلْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ

وعنه قال: قلت: يا رسول الله ارمي الصيد فاجد فيه من الغد سهمي قال: «اذا علمت ان سهمك قتله ولم تر فيه اثر سبع فكل» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যাঃ ইবনুল মালিক এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেনঃ যদি তুমি ঐ প্রাণীর মাঝে কোন হিংস্র প্রাণীর আক্রমণের চিহ্ন দেখতে পাও তাহলে সেটি খাবে না। কেননা তখন সেই প্রাণীকে হত্যা করার নিশ্চিত কারণ জানা যায় না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪৬৮; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম আবূ দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আবূ সা‘লাবাহ্ আল খুশানী থেকে আরো একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছে, আবূ সা‘লাবাহ্ বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আমার তীর ও ধনুক সম্পর্কে বলুন? (অর্থাৎ তীর ও ধনুক দিয়ে আমি যা শিকার করি তা খেতে পারব কিনা?) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার ধনুক তোমার জন্য যা শিকার করে তা তুমি খেয়ে নাও। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বললেনঃ তা যাবাহ করা হোক না হোক। সা‘লাবাহ্ বললেন, তীর লাগার পর সেই প্রাণী যদি আমার থেকে আড়াল হয়ে যায় (তাহলেও কি খেতে পারব)? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার থেকে আড়াল হয়ে গেলেও তুমি তা খেতে পার। যতক্ষণ না সেই শিকারকৃত প্রাণী থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। আর যতক্ষণ না তোমার তীর ব্যতীত অন্য কোন কিছুর আঘাত তাতে না পাওয়া যায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আদী ইবনু হাতিম (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪০৮৫-[২২] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে মাজূসীর কুকুরের শিকারকৃত জানোয়ার খেতে নিষেধ করা হয়েছে। (তিরমিযী)[1]

الْفَصْلُ الثَّانِي

وَعَن جابرٍ قَالَ: نُهِينَا عَنْ صَيْدِ كَلْبِ الْمَجُوسِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن جابر قال: نهينا عن صيد كلب المجوس. رواه الترمذي

ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসের মাঝে দলীল রয়েছে, কোন কাফির যদি কোন প্রাণী যাবাহ করে তাহলে তার যাবাহকৃত প্রাণী খাওয়া বৈধ না। অনুরূপভাবে যদি সে কোন প্রাণী পাঠিয়ে পশু শিকার করে তাহলেও তা খাওয়া বৈধ না।

শারহুস্ সুন্নাহয় আছে, যদি কোন মুসলিম অগ্নিপূজকের কুকুর নিয়ে শিকার করে তাহলে সেই শিকারকৃত প্রাণী খাওয়া বৈধ। কিন্তু যদি কোন অগ্নিপূজক মুসলিম ব্যক্তির কুকুর নিয়ে শিকার করে তাহলে সেই শিকারকৃত প্রাণী খাওয়া বৈধ হবে না। তবে যদি মুসলিম ব্যক্তি তা জীবিত অবস্থায় পায় তারপর তা যাবাহ করে তাহলে তা খাওয়া বৈধ। আর যদি কোন মুসলিম এবং অগ্নিপূজক উভয়ে অংশীদার হয়ে একটি কুকুর পাঠায় অথবা তীর নিক্ষেপ করে এবং সেই কুকুর বা তীর কোন প্রাণী শিকার করে এবং তাকে হত্যা করে ফেলে তাহলে তা খাওয়া হারাম।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যাবাহকারীর জন্য শর্ত হলো তাকে মুসলিম হতে হবে অথবা কিতাবী হতে হবে। যাবাহকৃত প্রাণীর গোশত ছাড়া অন্য যে কোন হালাল খাবার যে কোন কাফির থেকে খাওয়া যাবে। আর কিতাবধারীর যাবাহকৃত প্রাণী খাওয়ার জন্য শর্ত হলো তাকে অবশ্যই আল্লাহর নামে যাবাহ করতে হবে। এমনকি যদি তারা আল্লাহর নাম না নিয়ে মাসিহ (আ.) অথবা ‘উযায়র (আ.)-এর নামে যাবাহ করে তাও বৈধ হবে না।

আর কাফির বলতে বুঝানো হয়েছে যাদেরকে কোন কিতাব দেয়া হয়নি। যেমন- অগ্নিপূজক, মূর্তিপূজক ইত্যাদি। কারণ তাদের কোন তাওহীদ নেই। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪৬৬)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪০৮৬-[২৩] আবূ সা’লাবাহ্ আল খুশানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমরা ভ্রাম্যমাণ লোক। প্রায়শ ইয়াহূদী, নাসারা এবং মাজূসীদের অগ্নি জনপদ দিয়ে যেতে হয়, তখন আমরা তাদের বাসন-কোষণ ব্যতীত অন্য কিছু পাই না। তিনি বললেন, যদি তোমরা তাদের পাত্র ব্যতীত অন্য কোন পাত্র না পাও, তখন তা খুব উত্তমরূপে পানি দ্বারা ধৌত করে নাও। অতঃপর তাতে খাও এবং পান করো। (তিরমিযী)[1]

الْفَصْلُ الثَّانِي

وَعَن أبي ثَعْلَبَة الْخُشَنِي قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا أَهْلُ سفر تمر الْيَهُود وَالنَّصَارَى وَالْمَجُوسِ فَلَا نَجِدُ غَيْرَ آنِيَتِهِمْ قَالَ: «فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا غَيْرَهَا فَاغْسِلُوهَا بِالْمَاءِ ثُمَّ كلوا فِيهَا وَاشْرَبُوا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن ابي ثعلبة الخشني قال: قلت: يا رسول الله انا اهل سفر تمر اليهود والنصارى والمجوس فلا نجد غير انيتهم قال: «فان لم تجدوا غيرها فاغسلوها بالماء ثم كلوا فيها واشربوا» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বারমাবী বলেনঃ উল্লেখিত হাদীস থেকে বাহ্যিকভাবে বুঝা যায়, পাত্র ধৌত করার পরেও ব্যবহার করা যাবে না যদি তাদের পাত্র ছাড়া অন্য পাত্র পাওয়া যায়। আর ফকীহগণ বলেনঃ তাদের পাত্র ধৌত করার পর কোন ধরনের অপছন্দ ছাড়াই তা ব্যবহার করা জায়িয, চাই অন্য পাত্র পাওয়া যাক বা না পাওয়া যাক। সুতরাং তাদের মতে হাদীসে যে সব পাত্র ব্যবহার করার ব্যাপারে অপছন্দনীয়তা এসেছে তা হলো ঐসব পাত্র যেগুলোতে তারা শুকরের গোশত পাকায় এবং মদ পান করে। আর সেগুলো ধৌত করার আগে ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ স্বভাবতই তাতে ময়লা বা অপবিত্রতা লেগে থাকে।

আর ফকীহদের উদ্দেশ্য হলো তাদের সেসব পাত্র যেগুলো সাধারণত তারা অপবিত্রতার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে না।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ইমাম বুখারী ও মুসলিম কোন ধরনের পরিস্থিতি বা শর্ত উল্লেখ করা ছাড়াই এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ইমাম আবূ দাঊদ একটি পরিস্থিতি উল্লেখ করে শর্তসাপেক্ষে বর্ণনা করেছেন। আর তা হলো সাহাবী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, আমরা আহলে কিতাবীদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করি আর তারা তো তাদের পাত্রে শুকর পাকায়, মদ পান করে (তাহলে কি আমরা তা ব্যবহার করতে পারি)? তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তাদের পাত্র ভিন্ন অন্য পাত্র পাও তাহলে তাদের পাত্রে খেয়ো না। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪৬৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪০৮৭-[২৪] কবীসাহ্ ইবনু হুল্‌ব তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নাসারাদের খাদ্যদ্রব্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। অপর এক রিওয়ায়াত আছে, জনৈক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, এমন কিছু খাদ্য আছে যাতে আমি সংকোচবোধ করি। উত্তরে তিনি বললেন, খাদ্যের ব্যাপারে তোমার অন্তরে কোন প্রকারের দ্বিধা-সংকোচ থাকা উচিত নয়, অন্যথায় তুমি এতে নাসারাদের সদৃশ হয়ে যাবে। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

الْفَصْلُ الثَّانِي

وَعَنْ قَبِيصَةَ بْنِ هُلْبٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: سَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ طَعَامِ النَّصَارَى وَفِي رِوَايَةٍ: سَأَلَهُ رَجُلٌ فَقَالَ: إِنَّ مِنَ الطَّعَامِ طَعَامًا أَتَحَرَّجُ مِنْهُ فَقَالَ: «لَا يَتَخَلَّجَنَّ فِي صَدْرِكَ شَيْءٌ ضَارَعْتَ فِيهِ النَّصْرَانِيَّة» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد

وعن قبيصة بن هلب عن ابيه قال: سالت النبي صلى الله عليه وسلم عن طعام النصارى وفي رواية: ساله رجل فقال: ان من الطعام طعاما اتحرج منه فقال: «لا يتخلجن في صدرك شيء ضارعت فيه النصرانية» . رواه الترمذي وابو داود

ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসে (لَا يَتَخَلَّجَنَّ فِي صَدْرِكَ شَيْءٌ) এ বাক্যটির ব্যাপারে তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যেসব খাবারের ব্যাপারে আল্লাহ নিষেধ করেননি সেগুলোর ব্যাপারে তোমার অন্তরে যেন কোন সংশয় সৃষ্টি না হয়। কেননা যেগুলোর ব্যাপারে নিষেধ করা হয়নি সেগুলো হালাল।

(ضَارَعْتَ فِيهِ النَّصْرَانِيَّة) অর্থাৎ খাবারের ব্যাপারে সন্দেহ করার কারণে খৃষ্ট ধর্মের অনুসারীদের সাথে সাদৃশ্য রাখা হবে। কেননা তাদের কারো অন্তরে যদি কোন খাবারের ব্যাপারে সংশয় সৃষ্টি হত তাহলে তারা এটা হারাম অথবা মাকরূহ ইত্যাদি বলে হুকুম লাগাতো। এজন্যই এ হাদীসে খাবারের ব্যাপারে সন্দেহ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

খাবারের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন তিনি হলেন, ‘আদী ইবনু হাতিম। তিনি ইসলাম গ্রহণের আগে খৃষ্ট ধর্মের অনুসারী ছিলেন। আর এজন্যই তার অন্তরে এ ধরনের সংশয় সৃষ্টি হত।

ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তোমার অন্তরে যেন খাবারের ব্যাপারে কোন সংকীর্ণতা এবং সংশয় প্রবেশ করতে না পারে। কারণ তুমি একনিষ্ঠ সঠিক দীনের উপর রয়েছ। সুতরাং তুমি যদি খাবারের ব্যাপারে নিজেকে কাঠিন্যতায় ফেলে দাও তাহলে তুমি এ ক্ষেত্রে খ্রিষ্টানদের পাদ্রীর সাথে সাদৃশ্য রাখলে। কেননা এটাই তাদের চরিত্র ও অভ্যাস। যে বিষয়টি পবিত্র কুরআন খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছে। যেমন : وَرَهْبَانِيَّةً ابْتَدَعُوهَا مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ ‘‘আর বৈরাগ্যবাদ- তা তারা নিজেরাই নতুনভাবে চালু করেছে যে বিষয়ে আমরা তাদেরকে আদেশ করিনি’’- (সূরাহ্ আল হাদীদ ৫৭ : ২৭)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৫৬৫)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪০৮৮-[২৫] আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুজাসসামাহ্ খেতে নিষেধ করেছেন। আর তা হলো, পশু বা পাখিকে বেঁধে রেখে দূর হতে তীর নিক্ষেপ করে হত্যা করা। (তিরমিযী)[1]

الْفَصْلُ الثَّانِي

وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ أَكْلِ الْمُجَثَّمَةِ وهيَ الَّتِي تُصْبَرُ بالنَّبلِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن ابي الدرداء قال: نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن اكل المجثمة وهي التي تصبر بالنبل. رواه الترمذي

ব্যাখ্যাঃ হাদীসে উল্লেখিত শব্দ (الْمُجَثَّمَةِ) ‘মুজাসসামাহ্’ সম্পর্কে নিহায়াহ্ গ্রন্থে বলা হয়েছে, (الْمُجَثَّمَةِ) হলো এমন প্রাণী যাকে আটকিয়ে রেখে তীর মেরে হত্যা করা হয়। আর এটা পাখি, খরগোশ এ জাতীয় প্রাণীর ক্ষেত্রেই বেশিরভাগ হয়ে থাকে।

(وهيَ الَّتِي تُصْبَرُ بالنَّبلِ) এ বাক্যটি মূলত ব্যবহার করা হয়েছে (الْمُجَثَّمَةِ) শব্দের ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য। আর এ ব্যাখ্যা দিয়েছেন হাদীসের একজন রাবী। বাক্যটি দ্বারা তিনি বুঝিয়েছেন। (الْمُجَثَّمَةُ) হলো যাকে আটকিয়ে রেখে তীর মেরে হত্যা করা হয়। আর সেই প্রাণী মৃত্যুবরণ না করা পর্যন্ত সেভাবেই রেখে দেয়া হয়। এ ধরনের কাজ থেকেই হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা এভাবে হত্যা করাটা শারী‘আহ্গতভাবে কোন যাবাহ হয় না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪৭৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবুদ দারদা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪০৮৯-[২৬] ’ইরবায ইবনু সারিয়াহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের দিন সর্বপ্রকার তীক্ষ্ণ দন্তধারী হিংস্র জন্তু, নখ ও থাবা দ্বারা শিকারী পাখি, গৃহপালিত গাধার মাংস এবং মুজাস্সামাহ্ ও খলীসাহ্ খেতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি গর্ভবতী (দাসী)-এর সাথে তার গর্ভ খালাস হওয়া পর্যন্ত সঙ্গম করতেও নিষেধ করেছেন। মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহ্ইয়া বলেন : আবূ ’আসিমকে জিজ্ঞেস করা হলো, ’মুজাস্সামাহ্’ কি? তিনি বললেন, পাখি অথবা অন্য কোন প্রাণীকে বেঁধে তার প্রতি তীর নিক্ষেপ করা। আর খলীসাহ্ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, বাঘ অথবা হিংস্র পশু হতে যে ধৃত জন্তু কোন ব্যক্তি ছিনিয়ে নেয়; কিন্তু যাবাহ করার পূর্বেই তা তার হাতের মধ্যে মারা যায়। (তিরমিযী)[1]

الْفَصْلُ الثَّانِي

وَعَنِ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى يَوْمَ خَيْبَرَ عَنْ كُلِّ ذِي نَابٍ مِنَ السِّبَاعِ وَعَنْ كُلِّ ذِي مِخْلَبٍ مِنَ الطَّيْرِ وَعَنْ لُحُومِ الْحُمُرِ الْأَهْلِيَّةِ وَعَنِ الْمُجَثَّمَةِ وَعَنِ الْخَلِيسَةِ وَأَنْ تُوطَأَ الْحَبَالَى حَتَّى يَضَعْنَ مَا فِي بُطُونِهِنَّ قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى: سُئِلَ أَبُو عَاصِمٍ عَنِ الْمُجَثَّمَةِ فَقَالَ: أَنْ يُنْصَبَ الطَّيْرُ أَوِ الشَّيْءُ فَيُرْمَى وَسُئِلَ عَنِ الْخَلِيسَةِ فَقَالَ: الذِّئْبُ أَوِ السَّبُعُ يُدْرِكُهُ الرَّجُلُ فَيَأْخُذُ مِنْهُ فَيَمُوتُ فِي يَدِهِ قَبْلَ أَنْ يذكيها. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن العرباض بن سارية ان رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى يوم خيبر عن كل ذي ناب من السباع وعن كل ذي مخلب من الطير وعن لحوم الحمر الاهلية وعن المجثمة وعن الخليسة وان توطا الحبالى حتى يضعن ما في بطونهن قال محمد بن يحيى: سىل ابو عاصم عن المجثمة فقال: ان ينصب الطير او الشيء فيرمى وسىل عن الخليسة فقال: الذىب او السبع يدركه الرجل فياخذ منه فيموت في يده قبل ان يذكيها. رواه الترمذي

ব্যাখ্যাঃ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে (نَهٰى يَوْمَ خَيْبَرَ) অর্থাৎ খায়বারের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। খায়বারের দিন বলতে তিনটি উদ্দেশ্য হতে পারে,

১. যে বছর খায়বার বিজয় হয়েছে সেই বছর। ২. খায়বার বিজয় হওয়ার সময়। ৩. খায়বার যুদ্ধ চলাকালীন কোন একদিন।

(عَنْ كُلِّ ذِي نَابٍ مِنَ السِّبَاعِ) বলে চতুষ্পদ হিংস্র প্রাণী খাওয়া হতে নিষেধ করা হয়েছে। সেগুলো হলো যেমন, সিংহ, বাঘ, চিতাবাঘ, ভল্লুক, বানর, শুকর ইত্যাদি।

শারহুস্ সুন্নাহ গ্রন্থে বলা হয়েছে (ذِي نَابٍ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যেসব প্রাণীকে দাঁতওয়ালা হিসেবে গণ্য করা হয় এবং যেগুলো মানুষ ও তাদের ধন-সম্পদের উপর দাঁত দিয়ে আক্রমণ করতে পারে, যেমন- নেকড়ে বাঘ, কুকুর ইত্যাদি। আর (ذِي مِخْلَبٍ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যেসব প্রাণী নখ দিয়ে কেটে ছিড়ে খায়। যেমন- ঈগল, বাজপাখি, শুকর ইত্যাদি।

(الْخَلِيسَةِ) হলো হিংস্র প্রাণীর মুখ থেকে কেড়ে নেয়া শিকার। যেটা যাবাহ করার আগেই মারা যায়।

(أَنْ تُوطَأَ الْحَبَالَى حَتّٰى يَضَعْنَ مَا فِي بُطُونِهِنَّ) এ অংশের মাধ্যমে গর্ভবর্তী মহিলা গর্ভপাত না করা পর্যন্ত তার সাথে সহবাস করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। এর দ্বারা আপন স্ত্রী উদ্দেশ্য নয় বরং এর উদ্দেশ্য ভিন্ন। আর তা হলো যেমন কেউ গর্ভবতী দাসী পেল তাহলে সেই দাসী গর্ভপাত না করা পর্যন্ত তার সাথে সেই ব্যক্তি সহবাস করতে পারবে না। অনুরূপভাবে যদি কোন মহিলা যিনা করার কারণে গর্ভধারণ করে আর সেই গর্ভাবস্থায় যদি কোন ব্যক্তি তাকে বিবাহ করে তাহলে গর্ভপাত না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে সহবাস করতে পারবে না।

আহনাফের কতিপয় ‘আলিম বলেনঃ যদি কোন ব্যক্তি যুদ্ধে বন্দি হিসেবে গর্ভবতী দাসী পায় তাহলে তার জন্য সেই দাসীর সাথে সহবাস করা বৈধ হবে না। যতক্ষণ না সেই দাসী গর্ভপাত করে। আর যদি গর্ভবতী না হয় তাহলে সেই দাসীর হায়য হওয়ার পর যখন রক্ত বন্ধ হবে তখন থেকে তার সাথে সহবাস করতে পারবে। তিবি বলেন, (الْخَلِيسَةُ) হলো যে প্রাণীকে নেকড়ে অথবা কোন হিংস্র প্রাণীর মুখ থেকে নেয়া হয়েছে এবং তাকে যাবাহ করার আগেই মারা গেছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪৭৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪০৯০-[২৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শারীতবাতে শয়তান হতে নিষেধ করেছেন। (বর্ণনাকারী) ইবনু ’ঈসা অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, (তার অর্থ হলো,) কোন প্রাণীকে এমনভাবে যাবাহ করা যে, তার শুধু চামড়া কাটা হয়, কিন্তু তার রগ বা শিরা না কেটে এমনিই ফেলে রাখা হয়, অবশেষে এ অবস্থায় তা মরে যায়। (আবূ দাঊদ)[1]

الْفَصْلُ الثَّانِي

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ وَأَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ شَرِيطَةِ الشَّيْطَانِ. زَادَ ابْنُ عِيسَى: هِيَ الذَّبِيحَةُ يُقْطَعُ مِنْهَا الْجِلْدُ وَلَا تُفْرَى الْأَوْدَاجُ ثُمَّ تُتْرَكُ حَتَّى تَمُوتَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن ابن عباس وابي هريرة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى عن شريطة الشيطان. زاد ابن عيسى: هي الذبيحة يقطع منها الجلد ولا تفرى الاوداج ثم تترك حتى تموت. رواه ابو داود

ব্যাখ্যাঃ হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (شَرِيطَةِ الشَّيْطَانِ) থেকে নিষেধ করেছেন। নিহায়াহ্ গ্রন্থাকার (شَرِيطَةِ الشَّيْطَانِ) সম্পর্কে চমৎকার আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, (شَرِيطَةِ الشَّيْطَانِ) হলো, এমন পদ্ধতিতে যাবাহকৃত পশু যার রগ কাটা হয় না এবং ভালোভাবে যাবাহও করা হয় না। আর জাহিলী যুগের লোকেরা পশুর গলার কিছু অংশ কাটত এবং সেই প্রাণী না মারা যাওয়া পর্যন্ত এভাবেই রেখে দিত।

মিরক্বাতুল মাফাতীহ গ্রন্থকার বলেনঃ জাহিলী যুগের লোকেরা চতুষ্পদ জন্তুর গলার কিছু অংশ কাটত এবং তারা এটাকেই যাবাহ মনে করত।

এ ধরনের কাজকে (شَرِيطَةِ الشَّيْطَانِ) বলে শয়তানের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে এজন্য যে, এ ধরনের খারাপ কাজে শয়তানই তাদেরকে উৎসাহিত করেছিল।

(الْأَوْدَاجُ) হলো গলার রগসমূহ যেগুলো যাবাহ করার সময় কাটা হয়। অতএব, বিষয়টি হলো জাহিলী যুগের লোকেরা পশুর চামড়া কাটতো। কিন্তু রগ কাটতো না এ অবস্থায় সেই পশুর সব রক্ত বের হয়ে যেত। আর এ পদ্ধতিকেই তারা পশু যাবাহ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট মনে করত। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৮২৩)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪০৯১-[২৮] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মায়ের যাবাহ পেটের ভিতরের বাচ্চারও যাবাহ। (আবূ দাঊদ, দারিমী)[1]

الْفَصْلُ الثَّانِي

وَعَنْ جَابِرٌ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «ذَكَاةُ الْجَنِينِ ذَكَاةُ أُمِّهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد والدارمي

وعن جابر ان النبي صلى الله عليه وسلم قال: «ذكاة الجنين ذكاة امه» . رواه ابو داود والدارمي

ব্যাখ্যাঃ উক্ত হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, (ذَكَاةُ الْجَنِينِ ذَكَاةُ أُمِّه) অর্থাৎ ভ্রূণকে যাবাহ করা হলে, তার মাকে যাবাহ করা। তালখিস গ্রন্থে বলা হয়েছে, যে যাবাহ দ্বারা মা হালাল হয়ে যাবে সেই যাবাহ দ্বারাই তার ভ্রূণও হালাল হয়ে যাবে ভ্রূণ তার মায়ের অনুসারী হওয়ার কারণে। কেননা ভ্রূণ তার মায়ের একটি অংশ। সুতরাং তার মাকে যাবাহ করার দ্বারা তার পুরা অঙ্কন যাবাহ হয়ে যাবে।

ইবনুল মুনযির (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কোন সাহাবী অথবা কোন ‘আলিম এটা বলেননি যে, যাবাহ করা ছাড়া ভ্রূণ খাওয়া যাবে। তবে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আলাদাভাবে যাবাহ করার ছাড়া ভ্রূণ খাওয়া যাবে না।

মুনযিরী (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন যে, কিছু আহনাফের মতে, মাকে যাবাহ করাটা তার ভ্রুণের জন্য যথেষ্ট নয়। বরং ভ্রূণ বের হওয়ার পর তাকে নতুন করে আলাদাভাবে যাবাহ করতে হবে। তবে এ হাদীসের তাফসীরে ইমামদের থেকে যে উক্তিটি সংরক্ষিত তা হলো ভ্রূণ যাবাহ হয়ে যাবে তার মাকে যাবাহ করা দ্বারাই। অর্থাৎ আলাদাভাবে ভ্রূণকে আবার যাবাহ করার প্রয়োজন নেই।

ইবনুল মুনযির (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কোন সাহাবী, কোন তাবি‘ঈ অথবা কোন ‘আলিম থেকে এ মত বর্ণিত হয়নি যে, ভ্রূণ নতুন করে আলাদাভাবে যাবাহ করা ছাড়া খাওয়া যাবে না। তবে শুধুমাত্র ইমাম আবূ হানীফাহ্ বলেন, ভ্রূণকে আলাদাভাবে যাবাহ করতে হবে। ইবনুল মুনযির (রহিমাহুল্লাহ) আরো বলেনঃ ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ)-এর অনুসারীগণ তার এ কথার উপর একমত হয়েছেন বলে আমি মনে করি না।

এ বিষয়ে ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে একটি হাদীস বর্ণিত আছে, আর তা হলো (ذَكَاة الْجَنِين ذَكَاة أُمّه أَشْعَرَ أَوْ لَمْ يُشْعِر) অর্থাৎ ভ্রুণের মাকে যাবাহ করার দ্বারাই ভ্রুণের যাবাহ করা হয়ে যাবে। ইমাম দারাকুত্বনী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসের দু’টি ত্রুটি রয়েছে।

১. হাদীসটি মাওকূফ।

২. এ হাদীসটি ইসাম ইবনু ইউসুফ মুবারক ইবনু মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেছেন।

আর ইমাম বুখারী, মুবারক ইবনু মুজাহিদকে দুর্বল বলেছেন। কিন্তু ইমাম আবূ হাতিম আর্ রাজী বলেনঃ আমি তার এ হাদীসের ব্যাপারে কোন সমস্যা দেখছি না। অর্থাৎ সে দুর্বল হলেও তার এ হাদীস ঠিক আছে। আর তার হাদীসের কিছু শব্দ এই আছে যে, (فَإِنَّ ذَكَاته ذَكَاة أُمّه)। সুতরাং এ অংশটুকুই এ সকল লোকেদের এ ব্যাখ্যাকে বাতিল করে যারা বলে ভ্রূণকেও তার মায়ের মতো যাবাহ করতে হবে, এছাড়া খাওয়া যাবে না।

শায়খ শামসুদ্দীন ইবনুল কইয়্যূম (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তাদের এ ব্যাখ্যা (ভ্রূণকে তার মায়ের মতো যাবাহ করা ছাড়া খাওয়া যাবে না) বাতিল কয়েকটি কারণে,

১. হাদীসের পূর্বাপরের আলোচনা সেই ব্যাখ্যাকে প্রত্যাখ্যান করে। কেননা সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেছিল সেই ধরনের ভ্রূণ সম্পর্কে যা ছাগল বা এ জাতীয় প্রাণীর পেটে পাওয়া যায়। যদি পাওয়া যায় তাহলে তারা সেটা খাবে নাকি ফেলে দিবে? তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা খাওয়ার ব্যাপারে ফায়সালা দিলেন। ভ্রূণ মৃত হওয়ার কারণে তা খেতে তাদের যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল তা তিনি দূর করে দিলেন। কেননা তার মাকে যাবাহ করার দ্বারাই তার যাবাহ হয়ে গেছে। তা ছাড়াও ভ্রূণ তার মায়েরই একটি অংশ হাত, কলিজা ও মাথার ন্যায়। আর যাবাহকৃত প্রাণীর প্রতিটি অঙ্গ আলাদা আলাদাভাবে যাবাহ করার প্রয়োজন হয় না। সুতরাং ভ্রূণ যতক্ষণ তার মায়ের গর্ভে থাকবে ততক্ষণ সেটি তার অংশ হিসেবেই গণ্য হবে। যাবাহের ক্ষেত্রে ভ্রুণের জন্য আলাদা কোন হুকুম হবে না। অতএব, যখন মাকে যাবাহ করা হবে তখন সেই যাবাহ তার প্রতিটি অংশের জন্য যথেষ্ট হবে। আর তার অংশের মধ্যে ভ্রূণও রয়েছে।

তাই এটাই হলো স্পষ্ট ক্বিয়াস বা নীতিমালা যেহেতু এ মাসআলাহ্ সম্পর্কে স্পষ্ট কোন দলীল নেই।

২. উত্তর অবশ্যই প্রশ্ন অনুপাতে হতে হবে। সাহাবীগণ এক্ষেত্রে যাবাহ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেননি যে, তার উত্তরে বলা হবে ভ্রূণকে যাবাহ করতে হবে যেমনিভাবে মাকে যাবাহ করা হয়। বরং তারা জিজ্ঞেস করেছিলেন ভ্রূণ খাওয়া সম্পর্কে যা তারা যাবাহ করার পর কখনো কখনো পেটে পায়। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা হালাল হিসেবে খাওয়ার অনুমতি দিলেন এবং তার মায়ের যাবাহকেই তার ভ্রুণের যাবাহ হিসেবে গণ্য করলেন। তাই ভ্রূণকে আলাদা হিসেবে যাবাহ করার প্রয়োজন নেই।

৩. সকল মানুষদের মাঝে সাহাবীগণই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উদ্দেশ্য সবচেয়ে ভালো বুঝতেন। তারা এ হাদীস থেকে বুঝেছেন যে, মাকে যাবাহ করার দ্বারাই ভ্রুণের যাবাহ হয়ে যাবে। আলাদাভাবে তাকে যাবাহ করতে হবে না। বরং তা যাবাহ করা ছাড়াই খাওয়া যাবে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু কা‘ব ইবনু মালিক বলেনঃ সাহাবীগণ বলতেন, যদি গর্ভে থাকা ভ্রূণ সম্পর্কে জানা যায় তাহলে তার মাকে যাবাহ করার দ্বারাই তার ভ্রুণের যাবাহ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে সকলের মত এটাই ছিল।

ইবনুল মুনযির (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ভ্রূণ যাবাহ করা ছাড়া খাওয়াই লোকেরা বৈধ হিসেবে দেখত। আর এ ব্যাপারে কেউ ভিন্ন মত পোষণ করেছেন বলে আমরা জানি না। কিন্তু যখন নু‘মান ইবনু সাবিত (ইমাম আবূ হানীফাহ্) আসলেন তখন তিনি বললেনঃ ভ্রূণ আলাদাভাবে যাবাহ করা ছাড়া খাওয়া যাবে না। কারণ একটি প্রাণী যাবাহ করাটা দু’টি প্রাণী যাবাহ করার স্থলাভিষিক্ত হতে পারে না।

৪. শারী‘আতে এটা স্বীকৃত যে, বিভিন্ন পশুকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে যাবাহ করা হয়ে থাকে। যেমন শিকারী পশুকে যে কোন স্থানে আঘাত করে রক্ত বের করার মাধ্যমেও যাবাহ করা হয়ে যায়। আর এটা জানা কথা যে, মাকে যাবাহ করা ছাড়া তার ভ্রূণকে যাবাহ করা অসম্ভব। তাই এ ক্ষেত্রে মাকে যাবাহ করার দ্বারাই তার ভ্রূণও যাবাহ হয়ে যাবে। তার জন্য আলাদাভাবে যাবাহের প্রয়োজন নেই।

৫. হাদীসের বাক্য (ذَكَاة الْجَنِين ذَكَاة أُمّه) অর্থাৎ মাকে যাবাহ করার অর্থ তার ভ্রুনকে যাবাহ করা। এ বাক্যটি ঠিক এই বাক্যের মতো যেটা বলা হয় (غِذَاء الْجَنِين غِذَاء أُمّه) অর্থাৎ ভ্রুণের খাবার হলো তার মায়ের খাবার। সুতরাং এ বাক্য থেকে যেটা বুঝা যায় তা হলো, ভ্রুণের জন্য আলাদা খাবারের প্রয়োজন নেই। ঠিক (ذَكَاة الْجَنِين ذَكَاة أُمّه) বাক্য দ্বারা বুঝা যায় যে, ভ্রুণের জন্য আলাদাভাবে যাবাহের প্রয়োজন নেই।

৬. ভ্রূণকে তার মায়ের মতো যাবাহ করা হবে যদি তা জীবিত অবস্থায় বের হয়। আর তখন তাকে আলাদাভাবে যাবাহ করা ছাড়া খাওয়া যাবে না।

কিন্তু কথা হলো সাহাবীগণ তো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ জীবিত ভ্রূণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেননি এবং তাদেরকে সেই উত্তরও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেননি। আর তাদের প্রশ্ন থেকেও এটা বুঝা যায় না এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উত্তরটা সেই ধরনের জীবিত ভ্রূণ সম্পর্কেও না।

সাহাবীগণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলেছিলেন আমরা গরু, ছাগল যাবাহ করি। আর কখনো তাতে আমরা ভ্রূণ পাই। আমরা তা খাব নাকি ফেলে দিব? তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উত্তরে বললেন, যদি তোমাদের ইচ্ছা হয় তাহলে খেতে পার। কেননা তার যাবাহ করাটা হলো তার মাকে যাবাহ করাই। তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন তা খাওয়া সম্পর্কে যে, সেটা তাদের জন্য খাওয়া হালাল হবে কিনা?

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য তা খাওয়ার ফায়সালা দিলেন এবং ভ্রূণ মৃত হওয়ার কারণে তাদের মাঝে যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল তা তিনি দূর করে দিলেন। এ কথা বলার মাধ্যমে যে, ভ্রুণের যাবাহ হয়ে যাবে তার মাকে যাবাহ করার দ্বারাই।

আর এটা স্পষ্ট যে, যদি (ذَكَاة الْجَنِين ذَكَاة أُمّه) এর অর্থ করা হয় ‘‘তোমরা ভ্রূণকে যাবাহ কর যেভাবে তার মাকে যাবাহ করতে হয়।’’ তাহলে প্রশ্ন আর উত্তরের সাথে মিল থাকে না। সুতরাং যদি ভ্রূণকে আলাদাভাবে যাবাহ করার প্রয়োজন হত, তাহলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, যদি ভ্রূণ জীবিত বের হয় তাহলে তোমরা তা যাবাহ করে খেতে পার। আর তাকে যাবাহ করার পদ্ধতি হলো তার মাকে যাবাহ করার মতোই।

কিন্তু বর্ণিত হাদীস ভ্রূণকে আলাদাভাবে যাবাহ করার কথা প্রমাণ করে না। والله أعلم (আল্লাহ এ ব্যপারে অধিক অবগত) (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৮৬৫)

মিরকাতের লেখক বলেনঃ শারহুস্ সুন্নাহ গ্রন্থে রয়েছে, এ হাদীসেই প্রমাণ রয়েছে যে, যদি কেউ কোন প্রাণী যাবাহ করে আর তাতে কোন মৃত ভ্রূণ পাওয়া যায় তাহলে তা খাওয়া হালাল। আর এটা হলো অধিকাংশ বিদ্বান সাহাবীগণের মত এবং তাদের পরবর্তী ‘আলিমদের মতও।

ইমাম শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ)-ও এ মত পোষণ করেছেন। তবে তাদের কেউ কেউ ভ্রুণের মাঝে জীবন পাওয়াকে শর্ত করেছেন। যদি ভ্রূণ জীবিত অবস্থায় বের হয় তাহলে তাকে যাবাহ করতে হবে।

যায়নুল ‘আরব বলেনঃ যদি মাকে যাবাহ করার পরেই ভ্রূণ নাড়াচাড়া না করে তাহলে তা খাওয়া যাবে। কিন্তু যদি দীর্ঘ সময় নড়াচাড়া করার পর বন্ধ করে দেয় তাহলে তা খাওয়া হারাম। যদি ভ্রুণের কিছু অংশ বের হয়ে যায় আর সেই সময় তার মাকে যাবাহ করা হয় পরিপূর্ণভাবে ভ্রূণ বের হওয়ার আগেই তবুও তা খাওয়া বৈধ হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪০৯২-[২৯] আর তিরমিযী আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।

الْفَصْلُ الثَّانِي

وَرَوَاهُ التِّرْمِذِيّ عَن أبي سعيد

ورواه الترمذي عن ابي سعيد

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪০৯৩-[৩০] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা উষ্ট্রী, গাভী এবং বকরী যাবাহ করে কোন সময় তাদের পেটের ভেতর বাচ্চা পাই। এখন আমরা কি তাকে ফেলে দেব, নাকি খেতে পারব? তিনি বলেন, যদি ইচ্ছা হয় খেতে পার। কেননা তার যাবাহ মায়ের যাবাহের অনুরূপ। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

الْفَصْلُ الثَّانِي

وَعَن أبي سعيدٍ الخدريِّ قَالَ: قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ نَنْحَرُ النَّاقَةَ ونذبح الْبَقَرَة وَالشَّاة فنجد فِي بَطنهَا جَنِينا أَنُلْقِيهِ أَمْ نَأْكُلُهُ؟ قَالَ: «كُلُوهُ إِنْ شِئْتُمْ فَإِنَّ ذَكَاتَهُ ذَكَاةُ أُمِّهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْن مَاجَه

وعن ابي سعيد الخدري قال: قلنا: يا رسول الله ننحر الناقة ونذبح البقرة والشاة فنجد في بطنها جنينا انلقيه ام ناكله؟ قال: «كلوه ان شىتم فان ذكاته ذكاة امه» . رواه ابو داود وابن ماجه

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪০৯৪-[৩১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি না-হক চড়ুই কিংবা তদপেক্ষা ছোট পাখি হত্যা করবে, (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ তা’আলা তাকে তার হত্যার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন। জিজ্ঞেস করা হলো- হে আল্লাহর রসূল! তার হক কি? তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে যাবাহ করে খাবে এবং তার মাথা কেটে ফেলে দেবে না। (আহমাদ, নাসায়ী ও দারিমী)[1]

الْفَصْلُ الثَّانِي

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ قَتَلَ عُصْفُورًا فَمَا فَوْقَهَا بِغَيْرِ حَقِّهَا سَأَلَهُ اللَّهُ عَنْ قَتْلِهِ» قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا حَقُّهَا؟ قَالَ: «أَنْ يَذْبَحَهَا فَيَأْكُلَهَا وَلَا يَقْطَعَ رَأْسَهَا فَيَرْمِيَ بِهَا» . رَوَاهُ أَحْمد وَالنَّسَائِيّ والدرامي

وعن عبد الله بن عمرو بن العاص ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «من قتل عصفورا فما فوقها بغير حقها ساله الله عن قتله» قيل: يا رسول الله وما حقها؟ قال: «ان يذبحها فياكلها ولا يقطع راسها فيرمي بها» . رواه احمد والنساىي والدرامي

হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪০৯৫-[৩২] আবূ ওয়াক্বিদ আল লায়সী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করলেন। তখন মদীনাবাসীরা জীবিত উটের কুঁজ এবং দুম্বার পাছার বাড়তি মাংস কেটে খেত। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জীবিত জানোয়ার হতে যা কেটে নেয়া হয় তা মৃত, তা খাওয়া যাবে না। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

الْفَصْلُ الثَّانِي

عَن أبي وَافد اللَّيْثِيّ قَالَ: قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وَهُمْ يَجُبُّونَ أَسْنِمَةَ الْإِبِلِ وَيَقْطَعُونَ أَلْيَاتِ الْغَنَمِ فَقَالَ: «مَا يُقْطَعُ مِنَ الْبَهِيمَةِ وَهِيَ حَيَّةٌ فَهِيَ مَيْتَةٌ لَا تُؤْكَلُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد

عن ابي وافد الليثي قال: قدم النبي صلى الله عليه وسلم المدينة وهم يجبون اسنمة الابل ويقطعون اليات الغنم فقال: «ما يقطع من البهيمة وهي حية فهي ميتة لا توكل» . رواه الترمذي وابو داود

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে