পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৩৬-[১৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে ডাকবে ও আমার নিকট ক্ষমার আশা পোষণ করবে, তোমার অবস্থা যা-ই হোক না কেন, আমি কারো পরোয়া করি না, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছে, আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব, আমি কারো পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবীসম গুনাহ নিয়েও আমার সাথে সাক্ষাৎ করো এবং আমার সাথে কাউকে শারীক না করে সাক্ষাৎ করো, আমি পৃথিবীসম ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে উপস্থিত হব। (তিরমিযী)[1]

عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ فِيكَ وَلَا أُبَالِي يَا ابنَ آدمَ إِنَّك لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ وَلَا أُبَالِي يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ لَقِيتَنِي بِقُرَابِ الْأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لَا تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مغْفرَة . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

عن انس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: قال الله تعالى: يا ابن ادم انك ما دعوتني ورجوتني غفرت لك على ما كان فيك ولا ابالي يا ابن ادم انك لو بلغت ذنوبك عنان السماء ثم استغفرتني غفرت لك ولا ابالي يا ابن ادم انك لو لقيتني بقراب الارض خطايا ثم لقيتني لا تشرك بي شيىا لاتيتك بقرابها مغفرة . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: (إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِىْ وَرَجَوْتَنِىْ) অর্থাৎ- তুমি আমাকে ডাকবে ও আমার কাছে আশা করবে। অর্থাৎ- তোমার দু‘আ করার সময়টুকু ও আশা করা সময়টুকুতে আমি তোমাকে ক্ষমা করব।

(عَلٰى مَا كَانَ فِيكَ) অর্থাৎ- যত বেশি গুনাহ তোমার মাঝে থাকুক।

(وَلَا أُبَالِىْ) অর্থাৎ- তোমার গুনাহের অধিকতার কারণে আমি পরোয়া করি না, তা আমার কাছে বড় মনে হয় না এবং তা আমি বেশি মনে করি না, অর্থাৎ- তোমাকে ক্ষমা করা আমার কাছে বড় মনে হয় না। যদিও তোমার বা বান্দার গুনাহ অনেক হয়ে থাকে। যদিও গুনাহ অনেক বা বড় হয়ে থাকুক না কেন? কেননা আল্লাহর ক্ষমা এর অপেক্ষাও বড়। তা বড় হলেও আল্লাহর ক্ষমার ক্ষেত্রে তা ছোট।

‘আল্লামা কারী বলেন, অবস্থা এমন যে, আমি তোমার ক্ষমার বিষয়টা আমার কাছে বড় মনে করি না যদিও তা বড় বা পরিমাণে বেশি হোক না কেন?

(لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ) অর্থাৎ- তোমার মাথা যখন আকাশের দিকে উঠাবে ও দৃষ্টি দিবে এবং তোমার দৃষ্টিসীমা আকাশের যে পর্যন্ত পৌঁছবে তোমার গুনাহের পরিমাণ যদি সে পর্যন্তও পৌঁছে যায়।

আর ত্বীবী বলেন, অর্থাৎ- তোমার গুনাহগুলোকে যদি দেহের আকার দেয়া হয় আর আধিক্যতা ও বড়ত্বের কারণে তা যদি জমিন ও শূন্যকে পূর্ণ করে নেয় এমনকি তা আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

(ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِىْ غَفَرْتُ لَكَ) এ বাক্যটি, অর্থাৎ- ‘‘আর যে ব্যক্তি মন্দ কর্ম করবে অথবা নিজের প্রতি অবিচার করবে, এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, সে আল্লাহকে অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু হিসেবে পাবে’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১১০) আল্লাহর এ বাণীর অনুরূপ।

(لَوْ لَقِيتَنِىْ) মিশকাতের বর্তমান সকল কপিতে এভাবে আছে আর তিরমিযীতে যা আছে, তা হল, (لو أتيتنى) এভাবে মাসাবীহ, তারগীব, হিসন, জামিউস্ সগীর, কানয এবং মাদারিযুস্ সালিকীন গ্রন্থে আছে। এ ধরনের বর্ণনা হতে যা প্রকাশ পাচ্ছে তা হল, নিশ্চয়ই মিশকাতে যা উল্লেখ হয়েছে তা কপি তৈরিকারীর পক্ষ থেকে ভুল।

(بِقُرَابِ الْأَرْضِ) অর্থাৎ- যা জমিন পরিপূর্ণ হওয়ার কাছাকাছি।

একমতে বলা হয়েছে, তা জমিনকে পূর্ণ করে দিবে আর এটি সর্বাধিক সামঞ্জস্যশীল। অর্থাৎ- এখানে তাই উদ্দেশ্য। কেননা আলোচনাটি আধিক্যতার বাচনভঙ্গিতে। আর আহমাদে আবূ যার-এর হাদীসের শেষে যা উল্লেখিত হয়েছে তা একে সমর্থন করেছে, তা হল قراب الأرض বলতে জমিন পরিপূর্ণ।

(لَا تُشْرِكُ بِىْ شَيْئًا) অর্থাৎ- আমার একত্ববাদে বিশ্বাসী এবং আমার রসূল-মুহাম্মাদ এবং তিনি যা নিয়ে এসেছেন তার প্রতি সমর্থন করাবস্থায়। আর তা হল ঈমান। ‘আল্লামা কারী বলেন, (لا تشرك بى شيئا) বাক্যটি আল্লাহর সামনে সাক্ষাতের সময় শির্ক না থাকার ব্যাপারে অতীত অবস্থার বর্ণনা বুঝানো হয়েছে।

(لَأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً) হাদীস থেকে উদ্দেশ্য হল, ক্ষমা প্রার্থনা এবং তাওবার ব্যাপারে উৎসাহ দান। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাহ্কারীর তাওবাহ্ গ্রহণ করেন এবং তাকে ক্ষমা করেন যদিও তার গুনাহ অধিক হয়।

ইবনু রজাব ‘‘শারহুল আরবা‘ঈন’’-এ বলেন, আনাস (রাঃ)-এর এ হাদীসটি ঐ কথাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে যে, এ তিনটি উপকরণের মাধ্যমে ক্ষমা অর্জন হয়। তিনটির একটি হল আশা-আকাঙ্খার সাথে দু‘আ করা। দ্বিতীয় ক্ষমা প্রার্থনা করা যদিও গুনাহ বড় এবং তার আধিক্যতা আকাশের মেঘমালা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তৃতীয় তাওহীদ আর এটাই হল সর্বাধিক বড় উপকরণ। সুতরাং যে এটিকে হারিয়ে ফেলবে সে ক্ষমা হারিয়ে ফেলবে, পক্ষান্তরে যে এটিকে সম্পন্ন করবে সে ক্ষমা প্রার্থনার সর্বাধিক বড় উপকরণকে সম্পন্ন করবে। আল্লাহ বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ শির্কের গুনাহ ক্ষমা করেন না এছাড়া আরো যত গুনাহ আছে তা যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১১৬)। সুতরাং যে ব্যক্তি তাওহীদের সাথে জমিন ভরপুর গুনাহ নিয়ে আসবে আল্লাহ তার সাথে জমিন ভরপুর ক্ষমা নিয়ে সাক্ষাত করবেন। তবে এটি আল্লাহর ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত। যদি তিনি চান তাকে ক্ষমা করবেন আর যদি চান তাকে তার গুনাহের দরুন পাকড়াও করবেন তার শাস্তি জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে না বরং জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসবে, অতঃপর সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

কেউ কেউ বলেন, একত্ববাদী বান্দাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে না। যেমন কাফিরকে নিক্ষেপ করা হবে এবং একত্ববাদী বান্দা জাহান্নামে প্রবেশ করলেও তাতে স্থায়ী হবে না। যেমন কাফিররা স্থায়ী হবে। সুতরাং বান্দা যদি তাওহীদ এবং তার মাঝে আল্লাহর প্রতি নিষ্ঠা পূর্ণতা লাভ করে এবং ঈমানের সকল শর্তগুলো অন্তর, জবান ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে অথবা মরণের মুহূর্তে অন্তর এবং জবান দিয়ে সম্পন্ন করে তাহলে তার এ ধরনের ‘আমল অতীতের সকল গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়াকে আবশ্যক করে দিবে। অথবা পূর্ণাঙ্গভাবে তাকে জাহান্নামে প্রবেশ থেকে বাধা দিবে। সুতরাং যার অন্তর তাওহীদের বাণী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত তার অন্তর থেকে আল্লাহ ছাড়া যত ভালবাসা আছে, সম্মান প্রদর্শন, ভয় করা, আশা-আকাঙ্খা করা, আশা করা ও ভরসা করা সকল কিছুকে বের করে দেয়া হবে এবং তখন তার সকল গুনাহসমূহ জ্বলে যাবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয় এবং কখনো এ তাওহীদী বাণী সে গুনাহসমূহকে পুণ্যে পরিণত করে দিবে, কেননা এ তাওহীদ হল সর্বাধিক বড় সঞ্জীবনী। সুতরাং এ তাওহীদের অনুপরিমাণ যদি গুনাহের পাহাড়ের উপর রাখা হয় অবশ্যই এ তাওহীদ সে গুনাহসমূহকে পুণ্যে পরিণত করবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৩৭-[১৫] আহমাদ ও দারিমী আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, হাদীসটি হাসান গরীব।[1]

وَرَوَاهُ أَحْمَدُ وَالدَّارِمِيُّ عَنْ أَبِي ذَرٍّ
وَقَالَ التِّرْمِذِيّ: هَذَا حَدِيث حسن غَرِيب

ورواه احمد والدارمي عن ابي ذر وقال الترمذي: هذا حديث حسن غريب

ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ তাঁর কিতাবের ৫ম খণ্ডে ১৬৭, ১৭২ পৃষ্ঠাতে বর্ণনা করেছেন, দারিমী রিকাক-এ (৩৭৫) পৃষ্ঠাতে বর্ণনা করেন, উভয়ে শাহর বিন হাওশাব-এর কাছ থেকে আর শাহর মা‘দীকারাব এর কাছ থেকে, মা‘দীকারাব আবূ যার (রাঃ) থেকে, আবূ যার (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পালনকর্তা থেকে বর্ণনা করেন। আর আহমাদ, দারিমী উভয়ে এ ক্ষেত্রে আনাস-এর হাদীসের অর্থ বর্ণনা করেছেন।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৩৮-[১৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, যে জানে আমি গুনাহ মাফ করে দেয়ার মালিক। আমি তাকে মাফ করে দেবো এবং আমি কারো পরোয়া করি না যতক্ষণ পর্যন্ত সে আমার সাথে কাউকে শারীক না করবে। (শারহুস্ সুন্নাহ)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: مَنْ عَلِمَ أَنِّي ذُو قُدْرَةٍ عَلَى مَغْفِرَةِ الذُّنُوبِ غَفَرْتُ لَهُ وَلَا أُبَالِي مَا لم تشرك بِي شَيْئا . رَوَاهُ فِي شرح السّنة

وعن ابن عباس رضي الله عنهما عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: قال الله تعالى: من علم اني ذو قدرة على مغفرة الذنوب غفرت له ولا ابالي ما لم تشرك بي شيىا . رواه في شرح السنة

ব্যাখ্যা: (عَلٰى مَغْفِرَةِ الذُّنُوبِ غَفَرْتُ لَه) ত্বীবী বলেন, এ হাদীসটি ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করছে যে, এ ব্যাপারে বান্দার স্বীকৃতি গুনাহ মাফের কারণ। আর তা আল্লাহর (أنا عند ظن عبدى بى) অর্থাৎ- ‘‘আমি আমার প্রতি আমার বান্দার ধারণার কাছে থাকি।’’ এ বাণীর দৃষ্টান্ত বা নযীর।

এ কথার বাহ্যিক দিক হল নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন যদিও সে ক্ষমা প্রার্থনা না করে থাকে। একমতে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি জানবে আমি গুনাহসমূহ ক্ষমা করার ব্যাপারে শক্তিশালী, অর্থাৎ- সে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, ইমাম শাওকানী (রহঃ) প্রথম মতের দিকে ঝুঁকেছেন যেমনটি এর উপর প্রমাণ বহন করে ‘তুহফাতুয্ যাকিরীন’-এ যা আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। বিগত হাদীস ব্যাখ্যার সময় শাওকানীর উক্তি। যেমন তিনি বলেন, বরং এমন হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করে যে, বান্দা যখন গুনাহ করবে অতঃপর জানবে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ যদি তাকে শাস্তি দেয়ার ইচ্ছা করেন তাহলে তাকে শাস্তি দিবেন পক্ষান্তরে যদি চান তাকে ক্ষমা করতে তাহলে তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর শুধু তার এটুকু বিশ্বাস আল্লাহর তরফ থেকে অনুগ্রহ, দয়া স্বরূপ ক্ষমা প্রদর্শনকে আবশ্যক করে দিবে যেমন ত্ববারানীর আওসাত গ্রন্থে আনাস (রাঃ)-এর হাদীসে আছে। নিশ্চয়ই তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি গুনাহ করল অতঃপর জানল আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিতে পারেন আবার ইচ্ছা করলে ক্ষমাও করতে পারেন তাহলে আল্লাহর ওপর হক হয়ে যায় তাকে ক্ষমা করা। এর সানাদে জাবির বিন মারফূক আল জাদ্দী আছে সে দুর্বল।

(وَلَا أُبَالِىْ) ‘আলকামাহ্ বলেন, অর্থাৎ- তোমার পাপের কারণে। কেননা আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা তিনি যা করেন সে ক্ষেত্রে তার কোন বাধাদানকারী নেই, তার ফায়সালার কোন সমালোচনাকারী নেই, তার দানের কোন বাধাদানকারী নেই।

(مَا لَمْ يُشْرِكْ بِىْ شَيْئًا) কেননা শির্কের গুনাহ তাওবাহ্ এবং ঈমান গ্রহণ ছাড়া ক্ষমা করা হবে না।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৩৯-[১৭] উক্ত রাবী [’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সবসময় ক্ষমা চায়, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য প্রত্যেক সংকীর্ণতা হতে বের হয়ে আসার পথ খুলে দেন এবং প্রত্যেক দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত করেন। আর তাকে এমন রিযক দান করেন, যা সে কক্ষনো ভাবতেও পারেনি। (আহমদ, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ لَزِمَ الِاسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ» . رَوَاهُ أحمدُ وَأَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من لزم الاستغفار جعل الله له من كل ضيق مخرجا ومن كل هم فرجا ورزقه من حيث لا يحتسب» . رواه احمد وابو داود وابن ماجه

ব্যাখ্যা: (مَنْ لَزِمَ الِاسْتِغْفَارَ) অর্থাৎ- যে অবাধ্যতা প্রকাশের মুহূর্তে ক্ষমা প্রার্থনা অবলম্বন করবে অথবা সর্বদা ক্ষমা প্রার্থনা করবে তাহলে সে ঐ ব্যক্তির মাঝে গণ্য হবে যে ক্ষমা প্রার্থনার মুখাপেক্ষী। এজন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঐ ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ যে তার ‘আমলনামাতে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা পাবে। অচিরেই এটি তৃতীয় অনুচ্ছেদে আসবে।

উল্লেখিত শব্দ আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ ও ইবনু হিব্বান-এর। ইমাম আহমাদ, নাসায়ী, ইবনুস্ সুন্নী এবং হাকিম একে (من أكثر من الاستغفار) অর্থাৎ- যে বেশি করে ক্ষমা প্রার্থনা করবে।) এ শব্দে বর্ণনা করেছেন। আর এটি দ্বিতীয় অর্থটিকে সমর্থন করছে।

(مَخْرَجًا) অর্থাৎ- এমন এক পথ যা ব্যক্তিকে অধিক হারে ক্ষমা প্রার্থনা করার দরুন সুপ্রশস্ততা ও উপকার লাভের দিকে বের করে আনবে।

(وَرَزَقَه) অর্থাৎ- পবিত্র হালাল বস্ত্ত তাকে দান করবেন।

(مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ) অর্থাৎ- এমন এক দিক থেকে যার ধারণা ও আশা সে করত না এবং তার অন্তরে তা জাগত না। জাযারী বলেন, অর্থাৎ- এমনভাবে তাকে রিযক দেয়া হবে যা সে জানতো না এবং তার হিসাবে তা ছিল না।

হাদীসটিতে আল্লাহর এ বাণীর দিকে ইঙ্গিত আছে, অর্থাৎ- ‘‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তার নিষ্কৃতির পথ বের করবেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিযক দান করবেন যার পরিকল্পনাও সে করত না আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করবে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট’’- (সূরা আত্ব ত্বলাক ৬৫ : ২-৩)। মুত্তাক্বী এবং অন্যান্যগণ যখন ত্রুটিমুক্ত নন যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, প্রত্যেক আদম সন্তান ভুলকারী আর ভুলকারী বা পাপীদের মাঝে সর্বোত্তম হল তাওবাহকারীগণ তখন এতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিশ্লেষণ তার দিকে ক্ষমা প্রার্থনা অবলম্বনের বিষয়টিকে ইঙ্গিত করেছেন। আরো ঐ দিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, অবাধ্য ব্যক্তি যখন ক্ষমা প্রার্থনা করে তখন মুত্তাক্বীতে পরিণত হয়। আর এটি মুত্তাকবী ব্যক্তির আবশ্যকীয় প্রতিদান।

ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি সর্বদা ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং ক্ষমা প্রার্থনার হক আদায় করবে সে মুত্তাক্বীতে পরিণত হবে। আর এটি মূলত আল্লাহ এ বাণীর দিকে লক্ষ্য করে, অর্থাৎ- ‘‘অতঃপর আমি বললাম তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তাহলে তিনি তোমাদের ওপর অজস্র ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদেরকে দান করবেন উদ্যানসমূহ আরো দান করবেন ঝরণাসমূহ’’- (সূরা নূহ ৭১ : ১০-১২) । আর এতে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে যে, ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে সবকিছু অর্জন হয়।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৪০-[১৮] আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দিনে সত্তরবার করে একই গুনাহ করার পরও আল্লাহর কাছে গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইবে, (ক্ষমা চাওয়ার কারণে) সে যেন প্রকৃতপক্ষে গুনাহ বার বার করেনি। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَصَرَّ مَنِ اسْتَغْفَرَ وَإِنْ عَادَ فِي الْيَوْمِ سَبْعِينَ مَرَّةً» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ

وعن ابي بكر الصديق رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ما اصر من استغفر وان عاد في اليوم سبعين مرة» . رواه الترمذي وابو داود

ব্যাখ্যা: (مَا أَصَرَّ مَنِ اسْتَغْفَرَ) অর্থাৎ- যে ব্যক্তি অবাধ্যতার কাজ করবে, অতঃপর ঐ ব্যাপারে লজ্জিত হবে এবং তা থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করবে সে অবাধ্যতার উপর স্থায়ী হওয়ার হুকুম থেকে বেরিয়ে আসবে, কেননা অবাধ্যতার উপর স্থায়ী ঐ ব্যক্তি যে ক্ষমা প্রার্থনা করেনি এবং পাপের ব্যাপারে লজ্জিত হয়নি।

নিহায়াহ্ গ্রন্থকার বলেন, اصر على الشر অর্থাৎ- সে মন্দকে আঁকড়িয়ে ধরেছে এবং তার ওপর স্থায়ী হয়েছে বলে গণ্য হবে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে اصرار শব্দটি অকল্যাণ এবং পাপের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, অর্থাৎ- যে ব্যক্তি তার গুনাহের পর ক্ষমা প্রার্থনা করে তার হুকুম হল, সে পাপের উপর স্থায়ী না যদিও সে পাপ তার থেকে বারংবার হয়ে থাকে।

(سَبْعِينَ مَرَّةً) নিশ্চয়ই এর মাধ্যমে আধিক্যতা, বারংবারতা এবং অতিরিক্ততা উদ্দেশ্য, সীমাবদ্ধতা তথ্য সংখ্যা উদ্দেশ্য নয়। استغفار দ্বারা استغفر الله উচ্চারণ করা উদ্দেশ্য নয়, বরং অবাধ্য কাজে লিপ্ত না হওয়া এবং পাপ কাজ না দোহরানোর ব্যাপারে দৃঢ়তা ব্যক্ত করা।

মানাবী এ হাদীসের ব্যাখ্যাতে বলেন, যে ব্যক্তি খাঁটি তাওবাহ্ করবে তার হুকুম গুনাহের উপর স্থায়ী না হওয়া যদিও সে দিনে সত্তরবার ঐ গুনাহের পুনরাবৃত্তি করে, কেননা আল্লাহর দয়ার শেষ নেই। সুতরাং আল্লাহর ক্ষমার কাছে সমস্ত বিশ্বের গুনাহসমূহ ধ্বংসশীল।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৪১-[১৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক আদম সন্তানই পাপী। আর উত্তম পাপী হলো সে ব্যক্তি যে (গুনাহ করে) তওবা্ করে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, দারিমী)[1]

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كُلُّ بَنِي آدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ الْخَطَّائِينَ التَّوَّابُونَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ والدارمي

وعن انس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «كل بني ادم خطاء وخير الخطاىين التوابون» . رواه الترمذي وابن ماجه والدارمي

ব্যাখ্যা: ইমাম সিন্দী (রহঃ) বলেন, الخطأ দ্বারা ইচ্ছাকৃত অবাধ্যতা উদ্দেশ্য এবং الخطأ যেহেতু الصواب তথা সঠিকতার বিপরীত সে হিসেবে সাধারণভাবে الخطأ দ্বারা অনিচ্ছাকৃত গুনাহ।

কারী বলেন, كل শব্দের দিকে দৃষ্টি দিয়ে خطاء শব্দটি একবচন নেয়া হয়েছে। এক বর্ণনাতে خطاؤن বহুবচন আছে সেখানে كل শব্দের অর্থের দিকে লক্ষ্য করে خطاؤن শব্দটি বহুবচন নেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নাবীদের বিষয়টি স্বতন্ত্র বা আলাদা অথবা তারা সগীরাহ্ গুনাহের অধিকারী তবে প্রথমটি উত্তম। অথবা নাবীদের বিষয়গুলোকে পদস্খলন বলা যেতে পারে, অর্থাৎ- যাতে তাদের কোন ইচ্ছা ছিল না। একমতে বলা হয়েছে, كل بنى ادم خطاء এর অর্থ হল তাদের অধিকাংশ অধিক ভুলকারী।

(وَخَيْرُ الْخَطَّائِينَ التَّوَّابُونَ) অর্থাৎ- যারা তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে অধিক প্রত্যাবর্তনশীল তথা অবাধ্যতা থেকে আনুগত্যের দিকে প্রত্যাবর্তনশীল। এর সমর্থনে আল্লাহর বাণী, অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অধিক তাওবাহকারীদের ভালবাসেন’’- (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ২২২)। অর্থাৎ- যারা সগীরাহ্ গুনাহে স্থায়ী হয় না, কেননা সগীরাহ্ গুনাহে স্থায়িত্ব সগীরাহ্ গুনাহকে কাবীরাহ্ গুনাহে পরিণত করে।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৪২-[২০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিন বান্দা যখন গুনাহ করে তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। এরপর সে ব্যক্তি তওবা্ করল ও ক্ষমা চাইল, তার অন্তর পরিষ্কার হয়ে গেল (কালিমুক্ত হলো), আর যদি গুনাহ বেশি হয় তাহলে কালো দাগও বেশি হয়। অবশেষে তা তার অন্তরকে ঢেকে ফেলে। এটা সেই মরিচা যার ব্যাপারে কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, ’’এটা কক্ষনো নয়, বরং তাদের অন্তরের উপর (গুনাহের) মরিচা লেগে গেছে, যা তারা প্রতিনিয়ত উপার্জন করেছে’’- (সূরা আল মুতাফফিফীন ৮৩ : ১৪)। (আহমদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنِ الْمُؤْمِنَ إِذَا أَذْنَبَ كَانَتْ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ فِي قَلْبِهِ فَإِنْ تَابَ وَاسْتَغْفَرَ صُقِلَ قَلْبُهُ وَإِنْ زَادَ زَادَتْ حَتَّى تَعْلُوَ قَلْبَهُ فَذَلِكُمُ الرَّانُ الَّذِي ذَكَرَ اللَّهُ تَعَالَى (كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يكسِبونَ)
رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيح

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ان المومن اذا اذنب كانت نكتة سوداء في قلبه فان تاب واستغفر صقل قلبه وان زاد زادت حتى تعلو قلبه فذلكم الران الذي ذكر الله تعالى (كلا بل ران على قلوبهم ما كانوا يكسبون) رواه احمد والترمذي وابن ماجه وقال الترمذي: هذا حديث حسن صحيح

ব্যাখ্যা: (فِىْ قَلْبِه) অর্থাৎ- তার অন্তরের মাঝে ঐ দাগের ন্যায় সমান প্রভাব পড়ে যা আয়না, তরবারি এবং অনুরূপ বস্ত্তর মতো উজ্জ্বলতার মাঝে পতিত ময়লার সাথে সাদৃশ্য রাখে।

কারী বলেন, অর্থাৎ- কালির ফোটার মতো যা কাগজে পতিত হয় এবং অবাধ্যতা ও তার পরিমাণ অনুপাতে তা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আর বিষয়টিকে উপমা এবং সাদৃশ্য উপস্থাপন অধ্যায়ের আওতাভুক্ত করা অপেক্ষা বাস্তবতার উপর চাপিয়ে দেয়া উত্তম। যেমন বলা হয়েছে, চূড়ান্ত স্বচ্ছতা ও শুভ্রতার ক্ষেত্রে কাপড়ের সাথে অন্তরকে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে এবং অবাধ্যতাকে ঐ চূড়ান্ত কালো বস্ত্তর সাথে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে যা ঐ সাদা কাপড়ে গেলে আটকে গেছে।

উল্লেখিত শব্দ আহমাদ, ইবনু মাজাহ এবং হাকিম-এর এবং তিরমিযীর শব্দ (إن العبد إذا أخطأ خطيئة نكتت فى قلبه نكتة سوداء)

(فَإِنْ تَابَ وَاسْتَغْفَرَ) অতঃপর যদি সে গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। এবং মুসনাদ, ইবনু মাজাহ ও মুসতাদরাক দ্বিতীয় খণ্ড ৫১৭ পৃষ্ঠাতে تاب শব্দের পর نزع শব্দ পতিত হয়েছে। একমতে বলা হয়েছে, استغفر অর্থাৎ- সে এখান থেকে উঠে এসেছে এবং তা ছেড়ে দিয়েছে। তিরমিযীর শব্দ فإذا هو نزع واستغفر و تاب বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝা যাচ্ছে মিশকাত গ্রন্থে نزع শব্দের বিলুপ্তি সাধন হয়েছে মাসাবীহ গ্রন্থের অনুসরণার্থে আর আল্লাহই সর্বাধিক ভাল জানেন।

(صُقِلَ قَلْبُه) অর্থাৎ- আল্লাহ তার অন্তর থেকে ঐ দাগ মুছে দেবেন। অর্থাৎ- আল্লাহ তার অন্তরের আয়নাকে পরিচ্ছন্ন করে দেবেন কেননা তাওবাহ্ পরিচ্ছন্ন করার স্থানে অবস্থান করছে যা বাহ্যিকভাবে বা রূপকভাবে অন্তরের ময়লাকে দূর করে দেয়। (وإن زاد زادت) অর্থাৎ- একই রূপ গুনাহের মাধ্যমে বা ভিন্ন ভিন্ন গুনাহের মাধ্যমে যদি গুনাহ বৃদ্ধি পায় তাহলে ঐ কালো দাগ বৃদ্ধি পায় অথবা প্রত্যেক গুনাহের জন্য দাগ প্রকাশ পায়।

(حَتّٰى تَعْلُوَ قَلْبَه) অর্থাৎ- পরিশেষে ঐ কালো দাগ তার অন্তরের উপর আবরণ স্বরূপ বিজয়লাভ করে এবং তার সমস্ত অন্তরকে ঢেকে নেয় এবং সমস্ত অন্তরকে অন্ধকারে পরিণত করে, ফলে সে অন্তর কল্যাণ অর্জন করতে পারে না এবং সৎ পথ দেখতে পায় না এবং সে অন্তরে কল্যাণ স্থির হয় না। তিরমিযীর বর্ণনাতে আছে, (وإن عاد زيد فيها ختى تعلو قلبه অর্থাৎ- যে পাপ সে কামাই করেছে সে পাপে যদি প্রত্যাবর্তন করে অথবা অন্য কোন পাপে প্রত্যাবর্তন করে। আর পাপ কালোর দাগের মাঝে অন্য দাগ বৃদ্ধি করে আর এভাবে ঐ দাগগুলো ব্যক্তির অন্তরের আলোকে নিভিয়ে দেয় এবং তার অন্তর্দৃষ্টিকে ঢেকে নেয়। (فذلكم) একমতে বলা হয়েছে, এটি সাহাবীগণকে সম্বোধন, অর্থাৎ- এটি হল প্রাধান্য পাওয়া মন্দ প্রভাব।

(الرَّانُ الَّذِىْ ذَكَرَ اللّٰهُ) আবূ ‘উবায়দ বলেন, প্রত্যেক ঐ বস্ত্ত যা তোমার ওপর প্রাধান্য পায় তা তোমার ওপর ময়লা বা মরিচা স্বরূপ।

مَا كَانُوا يَكْسِبُوْنَ অর্থাৎ- তারা যে সমস্ত গুনাহ কামিয়েছে।

ইমাম ত্বীবী বলেন, আয়াতটি কাফিরদের ব্যাপারে অবতীর্ণ, তবে মু’মিন ব্যক্তি গুনাহে জড়িত হওয়ার মাধ্যমে অন্তর কালো হওয়ার ক্ষেত্রে কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য রাখে এবং গুনাহ বৃদ্ধির কারণে সে দাগও বৃদ্ধি পায়।

ইমাম মালিক বলেন, এ আয়াতটি কাফিরদের জন্য উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’মিনদেরকে ভয় দেখানোর জন্য এ আয়াতটি উল্লেখ করেছেন যাতে অধিক গুনাহ করা থেকে তারা সতর্ক হয়, যাতে কাফিরদের কালো অন্তরের ন্যায় তাদের অন্তর কালো না হয়। এজন্য একমতে বলা হয়েছে, المعاصى দ্বারা কুফর উদ্দেশ্য, এভাবে মিরকাতে আছে।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৪৩-[২১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দার প্রাণ (রূহ) ওষ্ঠাগত না হওয়া পর্যন্ত অবশ্যই আল্লাহ তার তওবা্ কবূল করেন। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْن مَاجَه

وعن ابن عمر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان الله يقبل توبة العبد ما لم يغرغر» . رواه الترمذي وابن ماجه

ব্যাখ্যা: (إِنَّ اللّٰهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ) কারী বলেন, বাহ্যিক দৃষ্টিতে হাদীসাংশে তাওবাহ্ কবূলের ব্যাপারটি মুত্বলাক বা সাধারণভাবে, আর কতিপয় হানাফী একে কাফিরের সাথে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন।

আমাদের শায়খ বলেন, বাহ্যিকদৃষ্টিতে প্রথমটি নির্ভরযোগ্য।

(مَا لَمْ يُغَرْغِرْ) অর্থাৎ- যতক্ষণ পর্যন্ত তার আত্মা কণ্ঠনালীতে না পৌঁছবে, অতঃপর তা ঐ বস্ত্তর স্থানে পরিণত না হবে যার কারণে রুগী গড়গড় বা প্রতিধ্বনি করে থাকে। غر غرة বলা হয় পানীয় বস্ত্তকে মুখের মাঝে রাখা এবং কণ্ঠনালীর গোড়া পর্যন্ত পৌঁছানো এবং কণ্ঠনালীর ভিতরে না যাওয়া এবং ঐ বস্ত্ত যার কারণে প্রতিধ্বনি কারী প্রতিধ্বনি করে থাকে তাকে ‘আরবদের ভাষায় লাদূদ, লা‘ঊক এবং সা‘ঊত্ব বলা হয়। উদ্দেশ্য যতক্ষণ পর্যন্ত পরকালের অবস্থাসমূহ প্রত্যক্ষ না করবে।

‘আল্লামা কারী বলেন, অর্থাৎ- যতক্ষণ পর্যন্ত সে মৃত্যু সম্পর্কে সুনিশ্চিত না হবে। কেননা মৃত্যু সম্পর্কে সুনিশ্চিত হওয়ার পর ব্যক্তির তাওবাহকে তাওবাহ্ গণ্য করা হবে না।

এর সমর্থনে আল্লাহর বাণী, ‘‘আর যারা পাপ কর্ম করে এমনকি তাদের কাছে যখন মৃত্যু আগমন করে তখন বলে আমি এখন তাওবাহ্ করব তাদের কোন তাওবাহ্ নেই এবং কাফির অবস্থায় যারা মৃত্যুবরণ করে তাদের কোন তাওবাহ্ নেই।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৮)

তুরবিশতী বলেন, (مَا لَمْ يُغَرْغِرْ) এর অর্থ হল, যতক্ষণ পর্যন্ত তার কাছে মৃত্যু আগমন না করবে। কেননা ব্যক্তির কাছে যখন মৃত্যু আগমন করে তখন সে প্রতিধ্বনি করে থাকে। অতঃপর যখন সে মৃত্যু, জীবন অবসান সম্পর্কে জানতে পারে, সুনিশ্চিত হতে পারে তখন তার তাওবাহ্ গ্রহণীয় নয়। তিনি বলেন, যদিও আমরা মৃত্যু উপস্থিত হওয়া ব্যক্তির দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তন অসম্ভব সম্পর্কে নিশ্চিত এবং তার তাওবাহ্ কবূলের বিষয়টি অস্বীকার করি রহমাতের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এবং ব্যক্তি ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে তথাপিও আমরা আল্লাহর তরফ থেকে ঐ ব্যক্তির জন্য ক্ষমার আশা করব। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাথে শির্ক করার গুনাহ ক্ষমা করবেন না তবে শির্ক ছাড়া আরো যত গুনাহ আছে তা যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৪৮)। বুঝা গেল, স্বচক্ষে মৃত্যু দেখার সময় তাওবাহ্ উপকারে আসবে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আল্লাহর কাছে কেবল ঐ সমস্ত লোকেদের তাওবাহ্ গ্রহণ করা হবে যারা অজ্ঞতাবশত মন্দকর্ম করে, অতঃপর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল সুকৌশলী। আর ঐ সমস্ত লোকেদের তাওবাহ্ গ্রহণ করা হবে না যারা মন্দকর্ম করে এমনকি তাদের কাছে যখন মৃত্যু আগমন করে তখন বলে যে, আমি এখন তাওবাহ্ করব।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৭-১৮)

জমহূর মুফাসসিরীনদের নিকটে অনতিবিলম্বে তাওবাহ্ বলতে, স্বচক্ষে মৃত্যু দেখার পূর্বে তাওবাহ্ করা, অর্থাৎ- মৃত্যু উপস্থিত হওয়ার পূর্বে তাওবাহ্ করা। ‘ইকরিমাহ্ বলেন, মরণের পূর্বে। যাহহাক বলেন, মালাকুল মাওতকে স্বচক্ষে দেখার পূর্বে। এ হল অনতিবিলম্বে তাওবাহকারীর অবস্থা। পক্ষান্তরে মৃত্যু সংঘটিত হওয়াকালে যে ব্যক্তি বলবে, আমি এখন তাওবাহ্ করব তার তাওবাহ্ গ্রহণ করা হবে না। কেননা ওটা আবশ্যকীয় তাওবাহ্ স্বেচ্ছাধীন না। কেননা সেই তাওবাহ্ পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়ার পর, কিয়ামতের দিন এবং আল্লাহর শাস্তি স্বচক্ষে দেখার পর তাওবাহ্ করার মতো। একমতে বলা হয়েছে, অনতিবিলম্বে তাওবাহ্ করার অর্থ হল, গুনাহের উপর স্থির না হয়ে গুনাহের পরপরই তাওবাহ্ করা।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৪৪-[২২] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শয়তান (আল্লাহ তা’আলার কাছে) বলল, হে মহান প্রতিপালক, তোমার ইজ্জতের কসম! আমি তোমার বান্দাদেরকে প্রতিনিয়ত গুমরাহ করতে থাকব, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দেহে রূহ থাকবে। তখন আল্লাহ তা’আলা বললেন, আমার ইজ্জত, আমার মর্যাদা ও আমার সুউচ্চ অবস্থানের কসম! আমার বান্দা আমার কাছে যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে থাকবে, আমি সর্বদা তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকব। (আহমদ)[1]

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ الشَّيْطَانَ قَالَ: وَعِزَّتِكَ يَا رَبِّ لَا أَبْرَحُ أُغْوِي عِبَادَكَ مَا دَامَتْ أَرْوَاحُهُمْ فِي أَجْسَادِهِمْ فَقَالَ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ: وَعِزَّتِي وَجَلَالِي وَارْتِفَاعِ مَكَانِي لَا أَزَالُ أَغْفِرُ لَهُمْ مَا اسْتَغْفَرُونِي رَوَاهُ أَحْمَدُ

وعن ابي سعيد قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ان الشيطان قال: وعزتك يا رب لا ابرح اغوي عبادك ما دامت ارواحهم في اجسادهم فقال الرب عز وجل: وعزتي وجلالي وارتفاع مكاني لا ازال اغفر لهم ما استغفروني رواه احمد

ব্যাখ্যা: (إِنَّ الشَّيْطَانَ قَالَ: وَعِزَّتِكَ يَا رَبِّ) অর্থাৎ- আপনার শক্তি, ক্ষমতার শপথ। আমি আপনার এমন ক্ষমতার শপথ করছি যার আশা করা যায় না।

আহমাদ-এর অপর বর্ণনাতে আছে, নিশ্চয়ই ইবলীস তার পালনকর্তাকে বলল, তোমার ইজ্জত এবং তোমার জালাল তথা মর্যাদার শপথ।

‘আল্লামা কারী বলেন, এতে ইঙ্গিত আছে ঐ দিকে যে, ইবলীস পথভ্রষ্টতার প্রধান এবং সম্মান প্রকাশকারী, যেমনিভাবে আমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনোযোগ ও সৌন্দর্য প্রকাশকারী পথপ্রদর্শন ও পূর্ণতার নেতা। (عبادك) আহমাদের এক বর্ণনাতে আছে, (بنى ادم) অর্থাৎ- আদম সন্তান, সর্বদাই আমি আদম সন্তানদের পথভ্রষ্ট করতে থাকব তবে তাদের থেকে যারা নিষ্ঠাবান তারা ছাড়া। বর্ণনাটি ব্যাপকতারও সম্ভাবনা রাখে।

(فَقَالَ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ: وَعِزَّتِىْ وَجَلَالِىْ) কারী বলেন, সম্ভবত পারস্পরিক সাদৃশ্যতার জন্য উভয় শব্দকে উল্লেখ করেছেন অন্যথায় বৈপরীত্যের দাবী হল, رحمتى এবং جمالى বলা। (وارتفاع مكانى) আবূ সা‘ঈদ-এর মুসনাদে ইমাম আহমাদে এ শব্দ পাইনি। জাযারী একে ‘হিসন’ গ্রন্থে মুনযিরী একে ‘তারগীব’ গ্রন্থে ‘আলী আল মুত্তাক্বী ‘কানয’ গ্রন্থে উল্লেখ করেননি। তবে এটি ইমাম বাগাবীর ‘শারহুস্ সুন্নাহ’ গ্রন্থে আছে। আর এ অতিরিক্ত অংশটুকু মুনকার হাদীস।

(أَغْفِرُ لَهُمْ مَا اسْتَغْفَرُونِىْ) অর্থাৎ- স্বেচ্ছাধীন সময়ে ক্ষমা অনুসন্ধানের মুহূর্তে। হাদীসটিতে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে যে, শয়তানের পথভ্রষ্টতা, পাপকর্মকে চাকচিক্য করার কারণে যে সকল গুনাহ সংঘটিত হয় ক্ষমা প্রার্থনা তা প্রতিহত করতে পারে। আর ক্ষমা প্রার্থনা যতক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকবে ক্ষমা প্রদর্শনও ততক্ষণ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, কেউ যদি বলে এ হাদীস এবং আল্লাহর বাণী (অর্থাৎ- ‘‘অবশ্যই আমি তাদের সকলকে পথভ্রষ্ট করব তবে তাদের থেকে তোমার নিষ্ঠাবান বান্দারা ছাড়া তিনি বলেন, তবে এটাই সত্য, আর আমি সত্যই বলি। অব্যশই আমি তোমাকে দিয়ে এবং তাদের থেকে যারা তোমার অনুসরণ করবে তাদের সকলকে দিয়ে জাহান্নাম পূর্ণ করব’’- সূরা সোয়াদ ৩৮ : ৮৫) এ উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য কিভাবে? উত্তরে বলা হবে, নিশ্চয়ই আয়াতটি এ কথার উপর প্রমণ বহন করছে যে, নিষ্ঠাবানরাই কেবল মুক্তি পাবে, পক্ষান্তরে হাদীসটি ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, যারা নিষ্ঠাবান না তারাও মুক্তি পাবে।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেনঃ আমি বলব, আল্লাহ (ممن تبعك) এ বাণীর গন্ডিবদ্ধতা ঐ সমস্ত ব্যক্তিদেরকে আজমা‘ঈন এর আওতাভুক্ত হওয়া থেকে বের করে দিয়েছে যারা পাপ করার পর ক্ষমা প্রার্থনা করে। কেননা আয়াতে تبعك এর অর্থ হল যারা শয়তানের অনুসরণ করার পর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে না বরং অবিরাম শয়তানের অনুসরণ করতে থাকে।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৪৫-[২৩] সফ্ওয়ান ইবনু ’আসসাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা তওবা্ কবূলের জন্য পশ্চিম দিকে একটি দরজা খুলে রেখেছেন, যার প্রশস্ততা সত্তর বছরের পথ। সূর্য পশ্চিম দিকে উদয় না হওয়া পর্যন্ত এ দরজা বন্ধ করা হবে না। আর এটাই হলো আল্লাহ তা’আলার এ বাণীর ব্যাখ্যাঃ ’’যেদিন (কিয়ামতের পূর্বে) তোমার ’রবের’ কোন বিশেষ নিদর্শন এসে পৌঁছবে, সেদিন এ ঈমান তার কোন কাজে আসবে না। কেননা এ নিদর্শন আসার আগে ঈমান আনেনি’’- (সূরা আল আন্’আম ৬ : ১৫৮)। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَسَّالٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى جَعَلَ بِالْمَغْرِبِ بَابًا عَرْضُهُ مَسِيرَةُ سَبْعِينَ عَامًا لِلتَّوْبَةِ لَا يُغْلَقُ مَا لم تطلع عَلَيْهِ الشَّمْسُ مِنْ قِبَلِهِ وَذَلِكَ قَوْلُ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ: (يَوْمَ يَأْتِي بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ لَا يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قبل)
رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه

وعن صفوان بن عسال رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ان الله تعالى جعل بالمغرب بابا عرضه مسيرة سبعين عاما للتوبة لا يغلق ما لم تطلع عليه الشمس من قبله وذلك قول الله عز وجل: (يوم ياتي بعض ايات ربك لا ينفع نفسا ايمانها لم تكن امنت من قبل) رواه الترمذي وابن ماجه

ব্যাখ্যা: (إِنَّ اللّٰهَ تَعَالٰى جَعَلَ بِالْمَغْرِبِ بَابًا) ‘‘যার প্রশস্ততা সত্তর বছরের পথ’’। অর্থাৎ- অনুভবযোগ্য দরজা। একমতে বলা হয়েছে, আধ্যাত্মিক।

(عَرْضُه مَسِيرَةُ سَبْعِينَ عَامًا) অর্থাৎ- সুতরাং তার দৈর্ঘ্যতা কেমন? একমতে বলা হয়েছে, سبعين শব্দটি আধিক্যতার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে, সীমাবদ্ধতার জন্য নয়। লাম্‘আত গ্রন্থকার বলেন, একমতে বলা হয়েছে, سبعين দ্বারা তাওবার দরজা উন্মুক্ত থাকার ক্ষেত্রে আধিক্যতা এবং তাওবার ক্ষেত্রে মানুষ সুপ্রশস্ততার মাঝে থাকা উদ্দেশ্য। আর এটি হল অপব্যাখ্যা। তবে স্পষ্ট ঈমান হল, কোন অপব্যাখ্যা ছাড়াই এর প্রতি ঈমান আনা। প্রকৃত জ্ঞান আল্লাহর কাছে।

(لِلتَّوْبَةِ) ‘‘তাওবার জন্য’’, অর্থাৎ- দরজাটি তাওবাহ্কারীদের জন্য খোলা অথবা দরজা খোলা। তাওবাহ্ বিশুদ্ধ হওয়া ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার চিহ্ন।

(مَا لَمْ تَطْلُعِ الشَّمْسُ مِنْ قِبَلِه) ইবনুল মালিক বলেন, এটি প্রকৃত দরজা হওয়ার সম্ভাবনা আছে আর এটিই প্রকাশমান অর্থ। আর দরজা বন্ধ থাকার উপকারিতা হল, মালায়িকাহ্-কে (ফেরেশতাগণকে) তাওবার দরজা বন্ধ হওয়া সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া। দরজার বিষয়টি উদাহরণস্বরূপও হতে পারে।

ইমাম ত্বীবী বলেন, অর্থাৎ- নিশ্চয়ই তাওবার দরজা মানুষের জন্য খোলা এমতাবস্থায় তারা প্রশস্ততার মাঝে অবস্থান করছে যতক্ষণ পর্যন্ত পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত না হবে। অতঃপর যখন পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত হবে তখন তাওবার দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে তখন তাদের থেকে ঈমান, তাওবাহ্ কোন কিছু গ্রহণ করা হবে না। কেননা যখন তারা প্রত্যক্ষভাবে তা দেখবে, তখন ঈমান আনতে বাধ্য হয়ে যাবে এবং তাওবার প্রতি বাধ্য হয়ে যাবে তাই ঐ তাওবাহ, ঈমান কোন কাজে আসবে না যেমনিভাবে মৃত্যু উপস্থিত হওয়া ব্যক্তির তাওবাহ্, ঈমান কোন কাজে আসবে না। আর দরজা বন্ধের বিষয়টি যখন পশ্চিম দিকে তখন দরজা খোলার বিষয়টিও পশ্চিম দিকেই হবে।

(وَذٰلِكَ) অর্থাৎ- পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া তাওবাহ্ গ্রহণের জন্য প্রতিবন্ধক।

يَوْمَ يَأْتِىْ بَعْضُ اٰيَاتِ رَبِّكَ অর্থাৎ- কিয়ামতের ব্যাপারে প্রমাণ বহনকারী তার কতিপয় নিদর্শন। অথবা কিয়ামাত যখন নিকটবর্তী হবে তখন তোমার পালনকর্তা কতিপয় নিদর্শনাবলী প্রকাশ করবেন। আর তা হল, পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া।

لَمْ تَكُنْ اٰمَنَتْ مِنْ قَبْلُ ‘‘যে আত্মা ইতোপূর্বে ঈমান আনেনি’’। অর্থাৎ- তার কতিপয় নিদর্শন আসার পূর্বে। আর তা হল উল্লেখিত উদয় এবং নিদর্শনের পূর্ণতা। অথবা যদি সে তার ঈমানের ক্ষেত্রে কল্যাণ অর্জন করে না থাকে, অর্থাৎ- তার ঈমান গ্রহণের সুযোগ থাকাবস্থায় তাওবাহ্ করে না থাকে। আর এ নিরূপণের মাধ্যমে হাদীস এবং আয়াতের মাঝে পূর্ণ সামঞ্জস্যতা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং ঈমান ও তাওবাহ্ অর্জনের সময় ঈমান ও তাওবাহ্ উপকারে না আসার এবং সূর্য উদিত হওয়াকে স্বচক্ষে অবলোকন করা মৃত্যু উপস্থিত হওয়াকে স্বচক্ষে অবলোকন করার মতো- এ উক্তিটি কারীর।

ইমাম ত্বীবী বলেন, কোন নাফসের উপকারে আসবে না তার ঈমান আনয়ন করা যে নাফস্ ইতিপূর্বে ঈমান আনেনি। অথবা ঈমানের ক্ষেত্রে তার কোন কল্যাণ অর্জন করা কাজে আসবে না যদি ইতিপূর্বে ঈমান এনে না থাকে। অথবা ঈমানের ক্ষেত্রে কোন কল্যাণ অর্জন করে না থাকে।

সফ্ওয়ান থেকে যির কর্তৃক ইবনু মাজাহ্’র শব্দ। সফ্ওয়ান বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই সূর্য অস্তমিত হওয়ার দিকে একটি খোলা দরজা আছে যার প্রশস্ততা সত্তর বছর পথ অতিক্রমের সমান। সেই দরজা সর্বদা তাওবার জন্য খোলা থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত না হবে। আর যখন সূর্য পশ্চিমদিক থেকে উদিত হবে। তখন ঐ নাফসে্র জন্য ঈমান কোন কাজে আসবে না যদি ইতিপূর্বে ঈমান এনে না থাকে। অথবা তার ঈমানের ক্ষেত্রে কল্যাণ উপার্জন না করে থাকে।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৪৬-[২৪] মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হিজরতের ধারাবাহিকতা বন্ধ হবে না ততকক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ তাওবার দরজা বন্ধ না হয়। আর তাওবার দরজা বন্ধ হবে না, সূর্য পশ্চিমাকাশে উদয় না হওয়া পর্যন্ত। (আহমদ, আবূ দাঊদ ও দারিমী)[1]

وَعَنْ مُعَاوِيَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَنْقَطِعُ الْهِجْرَةُ حَتَّى يَنْقَطِع التَّوْبَةُ وَلَا تَنْقَطِعُ التَّوْبَةُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَالدَّارِمِيُّ

وعن معاوية قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا تنقطع الهجرة حتى ينقطع التوبة ولا تنقطع التوبة حتى تطلع الشمس من مغربها» . رواه احمد وابو داود والدارمي

ব্যাখ্যা: (لَا تَنْقَطِعُ الْهِجْرَةُ حَتّٰى يَنْقَطِعُ التَّوْبَةُ) হাদীসের এ অংশে হিজরত বন্ধ না হওয়ার ব্যাপারে দলীল। আর বুখারী ও মুসলিম-এ ইবনু ‘আব্বাস-এর একটি হাদীস আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন বলেছেনঃ মক্কা বিজয়ের পর কোন হিজরত নেই। অর্থাৎ- মক্কা বিজয়ের পর সে হিজরত শেষ হয়ে গেছে। উভয় হাদীসের মাঝে সামঞ্জস্য বিধানে মতানৈক্য রয়েছে। অতঃপর লাম্‘আত গ্রন্থকার বলেন, এখানে হিজরত দ্বারা উদ্দেশ্য হল, নাফস্, স্বভাবের দখল থেকে বের হয়ে পাপ-পঙ্কিলতা ও মন্দ চরিত্র ত্যাগ করা।

(حَتّٰى يَنْقَطِعُ التَّوْبَةُ) উক্তি দ্বারা উদ্দেশ্য, অর্থাৎ- তাওবাহ্ গ্রহণের ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম ও তার শারী‘আতের পরিসমাপ্তি ঘটা। আর তা পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উঠার সময় ঘটবে।

ইবনুল মালিক বলেন, এখানে হিজরত দ্বারা কুফর থেকে ঈমানের দিকে হিজরত করা উদ্দেশ্য এবং শিরক রাষ্ট্র থেকে ইসলামী রাষ্ট্রের দিকে, অবাধ্যতা থেকে তাওবার দিকে হিজরত করা উদ্দেশ্য। ইমাম ত্বীবী বলেন, এখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদীনার দিকে হিজরত করা উদ্দেশ্য করেননি। কেননা তা শেষ হয়ে গেছে। পাপ থেকে হিজরত করাও উদ্দেশ্য নয়। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, মুহাজির ঐ ব্যক্তি যে গুনাহ এবং পাপ কাজ ত্যাগ করেছে। কেননা এটি প্রকৃত তাওবাহ্। সুতরাং তা বারংবার তাকে আবশ্যক করছে। সুতরাং বিষয়টিকে এমন স্থান থেকে হিজরত করার উপর চাপিয়ে দেয়া আবশ্যক হবে যেখানে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করা, সৎকাজের আদেশ করা এবং অসৎকাজের নিষেধ করা সম্ভব নয়।

খাত্ত্বাবী বলেন, ইসলামের শুরুতে হিজরত ফরয ছিল, এরপর তা মুস্তাহাবে পরিণত হয়েছে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদীনাতে হিজরতের সময় মুসলিমদের ওপর তা ওয়াজিব হল এবং মুসলিমদেরকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হিজরত করতে নির্দেশ দেয়া হল যাতে যখন কোন বিপদ সংঘটিত হবে তখন যেন তারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করতে পারে এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথী হতে পারে। আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে তাদের দীনের বিষয় শিক্ষালাভ করতে পারে। আর ঐ যুগে বড় ভয় ছিল মক্কাবাসীর তরফ থেকে। অতঃপর যখন মক্কা নগরী বিজিত হল এবং আনুগত্যে নতি স্বীকার করল তখন ঐ উদ্দেশ্য রহিত হয়ে গেল, হিজরতের আবশ্যকতা উঠে গেল এবং হিজরতের ব্যাপারটি মুস্তাহাবের দিকে প্রত্যাবর্তন করল। সুতরাং বাতিল হয়ে যাওয়া হিজরত বলতে হিজরতের আবশ্যকতা বাতিল হয়ে গেছে এবং ইবুন ‘আব্বাস-এর হাদীসের সানাদ পরম্পরা ও বিশুদ্ধ হওয়ার উপর ভিত্তি করে হিজরত মুস্তাহাব হওয়ার হুকুম বাকী আছে।

(وَلَا تَنْقَطِعُ التَّوْبَةُ) অর্থাৎ- তাওবার বিশুদ্ধতা ও তার গ্রহণযোগ্যতা অথবা তাওবাহ্ গ্রহণের ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর শারী‘আত রহিত হয়নি।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৪৭-[২৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বনী ইসরাঈলের মধ্যে দু’ ব্যক্তি পরস্পর বন্ধু ছিল। তাদের একজন ছিল বড় ’আবিদ আর অন্যজন ছিল গুনাহগার। ’আবিদ তাকে বলত, তুমি যেসব (গুনাহের) কাজে লিপ্ত আছো তা হতে বিরত থাক। গুনাহগার বলত, আমাকে আমার ’রবের’ কাছে ছেড়ে দাও। পরিশেষে একদিন ’আবিদ গুনাহগার ব্যক্তিকে এমন একটি বড় গুনাহের কাজে লিপ্ত পেলো, যা তার কাছে খুবই গুরুতর বলে মনে হল এবং বলল, বিরত থাকো। সে বলল, আমাকে আমার ’রবের’ কাছে ছেড়ে দাও। তোমাকে কী আমার জন্য পাহারাদার করে পাঠানো হয়েছে? ’আবিদ ব্যক্তি বলল, আল্লাহর কসম! তোমাকে কক্ষনো আল্লাহ ক্ষমা করবেন না এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাদের কাছে একজন মালাক (ফেরেশতা) পাঠালেন। সে তাদের উভয়ের রূহ কবয করল। তারা উভয়েই আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হলো। তখন গুনাহগার ব্যক্তিকে আল্লাহ বললেন, আমার রহমতের মাধ্যমে তুমি জান্নাতে প্রবেশ করো। আর ’আবিদ ব্যক্তিকে বললেন, তুমি কি আমাকে আমার বান্দার প্রতি রহম করতে বাধা দিতে পারো? সে বলল, ’না, হে রব’। তখন আল্লাহ বললেন, একে জাহান্নামে প্রবেশ করাও। (আহমাদ)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ رَجُلَيْنِ كَانَا فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ مُتَحَابَّيْنِ أَحدهمَا مُجْتَهد لِلْعِبَادَةِ وَالْآخَرُ يَقُولُ: مُذْنِبٌ فَجَعَلَ يَقُولُ: أَقْصِرْ عَمَّا أَنْتَ فِيهِ فَيَقُولُ خَلِّنِي وَرَبِّي حَتَّى وَجَدَهُ يَوْمًا عَلَى ذَنْبٍ اسْتَعْظَمَهُ فَقَالَ: أَقْصِرْ فَقَالَ: خَلِّنِي وَرَبِّيَ أَبُعِثْتَ عَلَيَّ رَقِيبًا؟ فَقَالَ: وَاللَّهِ لَا يَغْفِرُ اللَّهُ لَكَ أَبَدًا وَلَا يُدْخِلُكَ الْجَنَّةَ فَبَعَثَ اللَّهُ إِلَيْهِمَا مَلَكًا فَقَبَضَ أَرْوَاحَهُمَا فَاجْتَمَعَا عِنْدَهُ فَقَالَ لِلْمُذْنِبِ: ادْخُلِ الْجَنَّةَ بِرَحْمَتِي وَقَالَ لِلْآخَرِ: أَتَسْتَطِيعُ أَنْ تَحْظِرَ عَلَى عَبْدِي رَحْمَتِي؟ فَقَالَ: لَا يَا رَبِّ قَالَ: اذْهَبُوا بِهِ إِلَى النَّار . رَوَاهُ أَحْمد

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ان رجلين كانا في بني اسراىيل متحابين احدهما مجتهد للعبادة والاخر يقول: مذنب فجعل يقول: اقصر عما انت فيه فيقول خلني وربي حتى وجده يوما على ذنب استعظمه فقال: اقصر فقال: خلني وربي ابعثت علي رقيبا؟ فقال: والله لا يغفر الله لك ابدا ولا يدخلك الجنة فبعث الله اليهما ملكا فقبض ارواحهما فاجتمعا عنده فقال للمذنب: ادخل الجنة برحمتي وقال للاخر: اتستطيع ان تحظر على عبدي رحمتي؟ فقال: لا يا رب قال: اذهبوا به الى النار . رواه احمد

ব্যাখ্যা: (مُتَحَابَّيْنِ) আবূ দাঊদ-এর বর্ণনাতে আছে, (متواخيين) অর্থাৎ- একে অপরের বন্ধু হওয়া, একে অপরের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা। একমতে বলা হয়েছে, ইচ্ছা এবং চেষ্টায় একে অন্যের বিপরীত ছিল। সুতরাং একজন কল্যাণের ইচ্ছাকারী ও চেষ্টাকারী, পক্ষান্তরে অন্যজন অকল্যাণের ইচ্ছাকারী ও চেষ্টাকারী।

(وَالْاٰخَرُ يَقُولُ: مُذْنِبٌ) অন্যের ব্যাপারে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে পাপী। ত্বীবী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি مُجْتَهِدٌ لِلْعِبَادَةِ এর সামঞ্জস্য হওয়ার্থে কথাটি এভাবে বলাও সম্ভব যে, والاخر منهمك فى الذنب অর্থাৎ- পক্ষান্তরে অন্য ব্যক্তি গুনাহে নিমজ্জিত। মাযহার বলেন, অন্যজন বলেন, انا مذنب অর্থাৎ- গুনাহের স্বীকারকারী। কারী এবং শায়খ দেহলবী বলেন, আমি বলব, হাদীসের বাচনভঙ্গি অনুপাতে এটিই স্পষ্ট। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, (فكان أحدهما يذنب والاخر مجتهد فى العبادة অতঃপর তাদের একজন পাপ করত অন্যজন ‘ইবাদাত চেষ্টাকারী।) এ অংশটুকু যা আবূ দাঊদে রয়েছে তা প্রথম মতটিকে সমর্থন করছে।

(فَجَعَلَ يَقُولُ: أَقْصِرْ) অর্থাৎ- ‘ইবাদাতে চেষ্টাকারী পাপীকে বলত তুমি পাপ কাজে হ্রাস কর, বর্জন করা। অর্থাৎ- মাজ্‘উল ইকসার গ্রন্থকার বলেন, الإقصار কোন জিনিসের উপর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা করা থেকে বিরত থাকা। পক্ষান্তরে যে জিনিস করার ব্যাপারে ব্যক্তি অক্ষম সে ক্ষেত্রে ব্যক্তি আলিফ ছাড়া قصرت শব্দ প্রয়োগ করে। আবূ দাঊদে আছে, অতঃপর ‘ইবাদাতে চেষ্টাকারী ব্যক্তি সর্বদা অপর ব্যক্তিকে পাপে লিপ্ত দেখে বলত তুমি তোমার পাপে হ্রাস কর, অর্থাৎ- বর্জন কর।

(أَبُعِثْتَ عَلَىَّ رَقِيبًا) অর্থাৎ- আল্লাহ কি তোমাকে আমার ওপর সংরক্ষণকারী হিসেবে পাঠিয়েছেন? লোকটি যেন যখন গুনাহ করত তখন তার প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করত ও ওযর পেশ করত। এ কারণে এই হাদীসটি ক্ষমা প্রার্থনা অধ্যায়ের সাথে সামঞ্জস্যশীল। হাদীসটির বাচনভঙ্গির বাহ্যিক দিক হল, লোকটিকে কেবল তার রবের অনুগ্রহ, দয়ার মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। সুতরাং এ হাদীসটিকে ঐ অধ্যায়ে উল্লেখ করাই সামঞ্জস্য হবে যা এ অধ্যায়ের কাছাকাছি অধ্যায়। কেননা তাতে উল্লেখিত হাদীসসমূহ আল্লাহ তা‘আলার রহমাতের প্রশস্ততার উপর প্রমাণ বহন করে। যেমন তা গোপন নয়। (فقال) অর্থাৎ- অতঃপর ‘ইবাদাতে চেষ্টাকারী ব্যক্তি তার সাথীর ‘আমলসমূহে আশ্চর্যান্বিত হয়ে এবং বড় অপরাধে জড়িত হওয়ার কারণে তার সাথীকে তুচ্ছ ভেবে বলল।

(وَلَا يُدْخِلُكَ الْجَنَّةَ) আবূ দাঊদের কপিতে আছে, (أولا يدخلك الله الجنة) অথবা আল্লাহ তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে না। এভাবে কানয গ্রন্থের চতুর্থ খণ্ডের ১৪২ পৃষ্ঠাতে উল্লেখিত সংঘটিত হয়েছে।

(فَقَالَ لِلْمُذْنِبِ: اُدْخُلِ الْجَنَّةَ بِرَحْمَتِىْ) অর্থাৎ- আমার প্রতি তোমার ভাল ধারণার বদলা স্বরূপ আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।

(وَقَالَ لِلْاٰخَرِ) উল্লেখিত অংশে মুজতাহিদ সম্পর্কে বিশ্লেষণ ত্যাগ করাতে দাগ রয়েছে যা গোপন নয়। আর তা হল, নিশ্চয়ই ‘ইবাদাতে তার চেষ্টা করা, তার অল্প ‘আমল, তার রবের গুণাবলী সম্পর্কে অল্প পরিচিতি, অপরাধীর ‘আমলের ব্যাপারে তার আশ্চর্যান্বিত হওয়া, তার কসম খাওয়া এবং আল্লাহর ওপর তার হুকুম দেয়া যে, তিনি অপরাধীকে ক্ষমা করবেন না- এ সকল কারণে তার ‘আমল নষ্ট হয়ে গেছে, ফলে তার বিষয়টি পরিবর্তিত হয়ে অন্যের জন্য হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে পাপী ব্যক্তি তার ভাল ‘আক্বীদাহ্ তার রব সম্পর্কে ভাল ধারণা, অবাধ্য কাজের মাধ্যমে কমতির ব্যাপারে তার স্বীকারোক্তির দ্বারা ‘ইবাদাতে চেষ্টাকারীর মর্যাদা দখল করেছে।

(عَلٰى عَبْدِىْ رَحْمَتِىْ) অর্থাৎ- যা দুনিয়াতে প্রতিটি বস্ত্তকে পরিব্যাপৃত করে নিয়েছে এবং পরকালে বিশেষভাবে মু’মিনদেরকে। (اذْهَبُوْا بِه) অর্থাৎ- জাহান্নামের ব্যাপারে নিয়োজিত মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)’কে (ফেরেশতাগণকে) বলা হবে।

(إِلَى النَّارِ) আমার ওপর তার দুঃসাহস দেখানো, তার কসম খাওয়া, আমার ওপর তার ফায়সালা করা যে, আমি অপরাধীকে ক্ষমা করব না, অপরাধীর ‘আমলের ব্যাপারে তার আশ্চর্য হওয়া এবং তার সাথীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কারণে বদলাস্বরূপ তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবার নির্দেশ দেয়া হল। ব্যক্তিটি জাহান্নামের চিরস্থায়ী হওয়ার জন্য ব্যক্তির কুফরের ব্যাপারে হাদীসে কোন দলীল নেই। আর আবূ দাঊদের শব্দ, অতঃপর তিনি ‘ইবাদাতে চেষ্টাকারীকে বললেন, তুমি কি আমার ব্যাপারে জানতে (যার কারণে তুমি শপথ করে কসম খেয়েছ যে, আমি তাকে ক্ষমা করব না এবং আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব না)। অর্থাৎ- আমার হাতে যা আছে সে ব্যাপারে তুমি কি আমার ওপর ক্ষমতাবান (ফলে তা থেকে তুমি আমাকে বাধা দিবে) এবং পাপীকে বললেন, তুমি যাও, আমার রহমাতের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ কর এবং অপর ব্যক্তি সম্পর্কে বললেন, তোমরা একে জাহান্নামে নিয়ে যাও। ইমাম আহমাদ একে বর্ণনা করেছেন, আবূ দাঊদও একে শিষ্টাচার পর্বের ব্যভিচার থেকে বিরত থাকা অধ্যায়ে সংকলন করেছেন যা ‘আলী বিন সাবিত আল জাযারী ‘ইকরিমাহ্ বিন ‘আম্মার  থেকে আর ‘ইকরিমাহ্ যমযম বিন জাওস থেকে আর যমযম আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, আর এ সানাদ সহীহ অথবা হাসান। আবূ দাঊদ এ ব্যাপারে চুপ থেকেছেন। ‘আলী বিন সাবিত আল জাযারী নির্ভরযোগ্য, সত্যবাদী। আযদী (রহঃ) একে বিনা প্রমাণে দুর্বল বলেছেন। ‘ইকরিমাহ্ বিন ‘আম্মার আল ‘আযলী সত্যবাদী, যমযম বিন জাওস আল হাফানী ইয়ামামী নির্ভরযোগ্য।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৪৮-[২৬] আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কুরআন মাজীদের এ আয়াত পড়তে শুনেছি, ’’ইয়া- ’ইবা-দিয়াল্লাযী আসরফূ ’আলা- আনফুসিহিম লা- তাকনাত্বূ মির্ রহমতিল্লা-হি, ইন্নাল্ল-হা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা জামী’আ-’’ (অর্থাৎ- ’’হে বান্দারা! যারা নিজেদের ওপর অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেন’’- সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩।)

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আর এ ব্যাপারে আল্লাহ কারো পরোয়া করেন না। (আহমদ, তিরমিযী; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান গারীব; আর শারহুস্ সুন্নাহ্’য় রয়েছে يَقْرَأ (পড়েছেন) এর পরিবর্তে يَقُولُ (বলেছেন)। [1]

وَعَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيدَ قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يقْرَأ: (يَا عبَادي الَّذِي أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا)
وَلَا يُبَالِي
رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ وَفِي شَرْحِ السُّنَّةِ يَقُولُ: بَدَلَ: يقْرَأ

وعن اسماء بنت يزيد قالت: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقرا: (يا عبادي الذي اسرفوا على انفسهم لا تقنطوا من رحمة الله ان الله يغفر الذنوب جميعا) ولا يبالي رواه احمد والترمذي وقال هذا حديث حسن غريب وفي شرح السنة يقول: بدل: يقرا

ব্যাখ্যা: الَّذِىْ أَسْرَفُوْا عَلَى انْفُسِهِمْ অর্থাৎ- যারা অবাধ্যতায় সীমালঙ্ঘনের মাধ্যমে অপরাধের ক্ষেত্রে নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছে। একমতে বলা হয়েছে, তারা কুফরী এবং অধিক পরিমাণে অবাধ্যতার মাধ্যমে নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছে। একমতে বলা হয়েছে, তারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছে এবং প্রত্যেক নিন্দনীয় কাজে সীমালঙ্ঘন করেছে। مِنْ رَّحْمَةِ اللّٰهِ অর্থাৎ- তার ক্ষমা থেকে।

يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا অর্থাৎ- তাওবার মাধ্যমে কাফিরদের গুনাহসমূহ এবং তাওবাহ্ অথবা স্বেচ্ছায় মুসলিমদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করেন। জানা দরকার ‘আলিম সম্প্রদায় মতানৈক্য করেছে এ আয়াতটি কি তাওবার সাথে শর্তযুক্ত যে, তাওবাহকারীদের গুনাহ ছাড়া কারো গুনাহ ক্ষমা করা হবে না, নাকি আয়াতটি মুত্বলাকব বা বাঁধনমুক্ত? তাফসীরকারদের একটি দল প্রথমটির দিকে গিয়েছেন।

হাফেয ইবনু কাসীর বলেন, এ আয়াতটি সমস্ত অবাধ্যদেরকে কুফর এবং অন্যান্য পাপ থেকে তাওবাহ্ প্রত্যাবর্তন এবং সংবাদ দেয়ার দিকে আহবান করছে যে, আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন যে ব্যক্তি গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করে এবং ফিরে আসে। সে গুনাহ যা-ই হোক না কেন, যতই বেশি হোক না কেন, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়ে থাকে। এ আয়াতটিকে তাওবাহ্ ছাড়া ‘আম্ অবস্থার উপর চাপিয়ে দেয়া বিশুদ্ধ হবে না। কেননা শির্ক এমন এক গুনাহ যে ব্যক্তি এর থেকে তাওবাহ্ করবে না তার গুনাহ ক্ষমা করা হবে না।

এরপর ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে যে, কিছু মুশরিক অধিক পরিমাণ হত্যা কাজ সংঘটিত করে অধিক পরিমাণ যিনা-ব্যভিচার করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলো। অতঃপর তারা বলল, নিশ্চয়ই আপনি যা বলছেন এবং যে দিকে আহবান করছেন তা অবশ্যই ভাল। আপনি যদি আমাদেরকে অবহিত করেন যে, আমরা যা ‘আমল করেছি তার কাফফারা আছে। তখন এ আয়াত (অর্থাৎ- ‘‘আর যারা আল্লাহর পথে অন্য উপাস্যকে আহবান করে না, হারাম পন্থায় কোন নাফসকে হত্যা করে না তবে ন্যায়সঙ্গত কারণে এবং ব্যভিচার করে না’’- সূরা আল ফুরকান ২৫ : ৬৮) এবং এ আয়াত (অর্থাৎ- ‘‘হে নাবী! আপনি বলুন, হে বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর অবিচার করেছ তোমরা আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হয়ো না’’- সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩) অবতীর্ণ হয়। বুখারী, মুসলিম, আবূ দাঊদ, নাসায়ী একে সংকলন করেছেন।

ইবনু কাসীর বলেন, প্রথম আয়াতটির উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর তা‘আলার বাণী (অর্থাৎ- ‘‘তবে যে ব্যক্তি তাওবাহ্ করবে ঈমান আনবে, সৎকর্ম করবে’’- সূরা আল ফুরকান ২৫ : ৭০)। এরপর তিনি তৃতীয় অনুচ্ছেদে আগত সাওবান-এর হাদীস এবং আসমা-এর হাদীস যার ব্যাখ্যাতে ইবনু কাসীর বলেনঃ এ সকল হাদীসসমূহ ঐ উদ্দেশের উপর প্রমাণ বহন করে যে, তিনি তাওবার মাধ্যমে সকল গুনাহ ক্ষমা করবেন। এমতাবস্থায় কোন বান্দা আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হতে পারে না যদিও তার গুনাহ বড় এবং অধিক হয়। কেননা রহমাত এবং তাওবার দরজা প্রশস্ত। অতঃপর ইবনু কাসীর ঐ সকল আয়াত ও হাদীসসমূহ উল্লেখ করেছেন যা ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং তাওবার দিকে উৎসাহ প্রদান করে। জামাল বলেন, (৭২৪ পৃষ্ঠা) এ আয়াতটি প্রত্যেক ঐ কাফির ব্যক্তির ব্যাপারে ব্যাপক যে তাওবাহ্ করে এবং ঐ অবাধ্য মু’মিন ব্যক্তির ব্যাপারে যে তাওবাহ্ করে, অতঃপর তার তাওবাহ্ তার গুনাহকে মুছে দেয়। এ থেকে উদ্দেশ্য হল, ঐ ব্যাপারে সতর্ক করা যে, পাপীর জন্য এ ধারণা করা উচিত হবে না যে, শাস্তি থেকে তার পরিত্রাণের কোন উপায় নেই। যে ব্যক্তি এ বিশ্বাস রাখবে সে আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ, কেননা যে কোন অবাধ্য ব্যক্তি যখনই তাওবাহ্ করবে তার শাস্তি দূর হয়ে যাবে এবং সে ক্ষমা ও দয়াপ্রাপ্তদের আওতাভুক্ত হবে। সুতরাং إِنَّ اللّٰهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا এ আয়াতের অর্থ হল যখন সে তাওবাহ্ করবে এবং তার তাওবাহ্ বিশুদ্ধ হবে তখন তার গুনাহসমূহ মুছে যাবে। আর যে ব্যক্তি তাওবার করার পূর্বে মারা যাবে সে এ ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে ন্যস্ত। তাকে তার গুনাহ পরিমাণ শাস্তি দিবেন এরপর নিজ কৃপা অনুযায়ী তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সুতরাং প্রত্যেকের ওপর আবশ্যক তাওবাহ্ করা। কেননা শাস্তির আশংকা বিদ্যমান। এরপর হতে পারে আল্লাহ তাকে শর্তহীনভাবে ক্ষমা করবেন আবার হতে পারে তাকে শাস্তি দেয়ার পর ক্ষমা করবেন।

আর ইবনুল কইয়্যিম সূরা আয্ যুমার-এর আয়াতটি তাওবার সাথে শর্তযুক্ত হওয়ার প্রতি মতামত ব্যক্ত করেছেন। যেমন তিনি ‘‘আল জাওয়াব আল কাফী’’ গ্রন্থের ১৬ পৃষ্ঠাতে বলেছেন। মাদারিজুস সালিক্বীন-এ (১ম খণ্ডে ৩৯৪ পৃষ্ঠাতে) নিশ্চয়ই এ আয়াতটি তাওবাহকারীদের ব্যাপারে এবং আল্লাহর বাণী إِنَّ اللّٰهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُّشْرَكَ بِه ‘‘নিশ্চয়ই শির্কের গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।’’ তাওবাহকারী ছাড়া অন্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কেউ ঐ দিকে গিয়েছেন যে, আয়াতটি মুত্বলাক বা বাঁধনমুক্ত। ‘আল্লামা আল কানূজী আল ভূপালী ফাতহুল বায়ানে (৮ম খণ্ডে ১৬৬ পৃষ্ঠাতে) বলেন, আর হক হল, আয়াতটি তাওবার সাথে শর্তযুক্ত নয়, বরং তা মুত্বলাক বা বাঁধনমুক্ত। ইমাম শাওকানীও এ মত ব্যক্ত করেছেন। যেমন তিনি ফাতহুল কাদীরে বলেন, (৪র্থ খণ্ড- ৪৫৬,৪৫৭ পৃষ্ঠা) ألف এবং لام বহুবচনে পরিণত হয়েছে। ألفلام যে ذنوب শব্দের উপর প্রবেশ করেছে মূলত তা ذنوب শব্দের জাত বুঝানোর জন্য, যা ذنوب শব্দের এককসমূহের পরিব্যাপ্তকে আবশ্যক করছে। সুতরাং ‘‘তা’’ নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক গুনাহ যা-ই হোক না কেন ক্ষমা করবেন- এ কথাকে শক্তিশালী করছে। তবে কুরআনী ভাষ্য যা বর্ণনা করছে তা ছাড়া। আর তা হল (অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাথে শির্ক করার গুনাহ ক্ষমা করেন না তবে এ ছাড়া অন্য যত গুনাহ আছে তা যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন’’- সূরা আন্ নিসা ৪ : ৪৮। এ আয়াতে উল্লেখিত শির্ক ক্ষমা করেন না। এর অর্থ হলো শির্ক গুনাহ তাওবাহ্ ছাড়া ক্ষমা করেন না। অতঃপর তিনি প্রত্যেক গুনাহ ক্ষমা করার ব্যাপারে বান্দাদেরকে যে সংবাদ দিয়েছেন তাতে যথেষ্ট হননি বরং একে তিনি তার جميعا উক্তি দ্বারা গুরুত্বারোপ করেছেন। শাওকানী বলেন, এ আয়াত এবং আল্লাহর إِنَّ اللّٰهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهٖ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ يَّشَآءُ এ বাণীর সমন্বয় বিধান হল, শির্ক ছাড়া যত গুনাহ আছে সকল গুনাহ আল্লাহ যাকে চান তাকে ক্ষমা করেন। আর তা নিশ্চয়ই আমাদেরকে আল্লাহর দেয়া সংবাদ যে, তিনি সকল গুনাহ ক্ষমা করবেন- এ সংবাদটুকু আল্লাহ সকল গুনাহ ক্ষমা করার ইচ্ছা করেন উপর প্রমাণ বহন করছে। এ কথা বলা এর সম্ভব হওয়ার উপর ভিত্তি করছে। আর এটি আবশ্যক করছে যে, আল্লাহ তিনি প্রত্যেক মুসলিম অপরাধীকে ক্ষমা করবেন। সুতরাং এ দৃষ্টিকোণ থেকে দু’ আয়াতের মাঝে মতবিরোধ অবশিষ্ট থাকল না। তিনি বলেন, যদি এই মহাশুভ সংবাদ তাওবার সাথে সংযুক্ত থাকত তাহলে তাওবার অধিক ক্ষেত্র থাকত না। কেননা মুসলিমদের ঐকমত্যে মুশরিক যে পরিমাণ শির্ক করে তা আল্লাহ তার তাওবাহ্ করার কারণে ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللّٰهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهٖ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ يَّشَآءُ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৪৮) সুতরাং ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে তাওবাহ্ করা যদি শর্তযুক্ত হত তাহলে শির্কের ব্যাপারে আলাদা ভাষ্য আনার কোন প্রয়োজনীয়তা বা উপকারিতা থাকত না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, নিশ্চয়ই আপনার প্রভু মানুষদেরকে তাদের অন্যায়ের ব্যাপারে ক্ষমাকারী।

ওয়াহিদী বলেন, তাফসীরকারকগণ বলেন, নিশ্চয়ই এ আয়াতটি এমন এক সম্প্রদায়ের ব্যাপারে যারা ভয় করেছিল যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তাদের ঐ সকল গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে না যা তারা শির্ক, মানুষ হত্যা এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শত্রুতা পোষণ করার মতো বড় বড় গুনাহ করেছে।

ওয়াহিদী আরো বলেন, আল্লাহর এ বাণী (অর্থাৎ- ‘‘আর তোমরা তোমাদের প্রভুর দিকে প্রত্যাবর্তন কর এবং তার কাছে আত্মসমর্পণ কর তোমাদের কাছে শাস্তি আসার পূর্বে, অতঃপর তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না’’- সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৪) এসেছে। এতে এমন কিছু নেই যা তাওবার মাধ্যমে প্রথম আয়াতের গন্ডিবদ্ধ হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করে। বরং এ আয়াতে যা আছে তার চূড়ান্ত পর্যায় হল, নিশ্চয়ই তিনি তাদেরকে ঐ মহা শুভসংবাদের মাধ্যমে শুভসংবাদ দিয়েছেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে কল্যাণের প্রতি এবং অকল্যাণকে ভয় করার প্রতি আহবান করেছেন।

مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ অর্থাৎ- দুনিয়ার শাস্তি। অর্থাৎ- হত্যা, বন্দী, কঠোরতা, ভয়, দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে শাস্তি। পরকালের শাস্তি উদ্দেশ্য নয়। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, আয়াতটি দু’টি উক্তির সম্ভাবনা রাখছে তবে আয়াতের বাচনভঙ্গি ইবনু কাসীর এবং তার সমর্থকগণ যা বলেছেন তাকে সমর্থন করে। পক্ষান্তরে ইমাম শাওকানী ঐ বাচনভঙ্গির অপব্যাখ্যাতে যা উল্লেখ করেছেন তাতে স্পষ্ট কৃত্রিমতা রয়েছে। তবে আমার কাছে প্রণিধানযোগ্য উক্তি হল মুসলিমদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করা তাওবার সাথে শর্তযুক্ত নয়, বরং তা তাওবাহ্ এবং স্বেচ্ছাধীন উভয়ভাবে ক্ষমা করা হবে।

(وَلَا يُبَالِىْ) অর্থাৎ- কাউকে তিনি পরোওয়া করেন না, কেননা আল্লাহর ওপর কোন কিছু আবশ্যক নয়। একমতে বলা হয়েছে, তিনি তার প্রশস্ততা করুণা থাকা এবং তার পরোওয়া না থাকার কারণে সকল গুনাহসমূহ ক্ষমা করতে তিনি কাউকে পরোওয়া করেন না। আহমাদ তার বর্ণনাতে একটু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন আর তা হল (إنه هو الغفور الرحيم) এ বর্ণনা থেকে যা স্পষ্ট হচ্ছে তা হল (ولا يبالى) উক্তি কুরআনের আওতাভুক্ত ছিল, এজন্য মাদারিক গ্রন্থকার এ আয়াতের অধীনে এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিরাআতে (يغفر الذنوب جميعا ولا يبالى) অংশটুকু বলেছেন। কারী বলেন, তা আরো সম্ভাবনা রাখছে যে, তা আয়াতের আওতাভুক্ত ছিল, অতঃপর তা রহিত করা হয়েছে এবং আয়াতের তাফসীরস্বরূপ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরফ থেকে অতিরিক্ত হওয়ারও সম্ভাবনা আছে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৪৯-[২৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) আল্লাহর কালামের এ বাণী, ’’ইল্লাল্লামামা’’ অর্থাৎ- ’’সগীরাহ্ গুনাহ ছাড়া’’। এক্ষেত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আল্লাহ! যদি তুমি ক্ষমা করো, ক্ষমা করো বড় গুনাহ। কেননা এমন কোন বান্দা আছে কি, যে সগীরাহ্ গুনাহ করেনি। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব)[1]

وَعَن ابْن عَبَّاس: فِي قَوْله تَعَالَى: (إِلَّا اللمم)
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
إِنْ تَغْفِرِ اللَّهُمَّ تَغْفِرْ جَمَّا وَأَيُّ عَبْدٍ لَكَ لَا أَلَمَّا
رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ. وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيب

وعن ابن عباس: في قوله تعالى: (الا اللمم) قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ان تغفر اللهم تغفر جما واي عبد لك لا الما رواه الترمذي. وقال: هذا حديث حسن صحيح غريب

ব্যাখ্যা: فِىْ قَوْلِه تَعَالٰى: (إِلَّا اللَّمَمَ) এ বাণীটি (সূরা আন্ নাজম ৫৩ : ৩২) الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ এ বাণীর তাফসীরস্বরূপ। কাবীরাহ্ গুনাহ প্রত্যেক এমন গুনাহকে বলা হয় যে ব্যাপারে আল্লাহ জাহান্নামের ভয় দেখিয়েছেন অথবা যার জন্য শাস্তি নির্ধারণ করেছেন অথবা যার কর্তার ব্যাপক দোষ বর্ণনা করা হয়েছে। আর কাবীরাহ্ গুনাহের বিশ্লেষণে বিদ্বানদের দীর্ঘ আলোচনা আছে। আর তারা যেমনিভাবে কাবীরাহ্ গুনাহের অর্থ এবং তার সারবস্ত্ত সম্পর্কে মতানৈক্য করেছেন তেমনিভাবে তারা তার সংখ্যা সম্পর্কে মতানৈক্য করেছেন আর فواحش বলতে কাবীরাহ্ গুনাহসমূহ থেকে যা অশ্লীল যেমন যিনা অনুরূপ। একমতে বলা হয়েছে, তা প্রত্যেক এমন গুনাহ যাতে হুমকি রয়েছে অথবা বিশেষ করে যিনা। (إلا اللمم) সগীরাহ্ গুনাহসমূহ, কেননা তারা সগীরাহ্ গুনাহ থেকে বাঁচতে অক্ষম। আভিধানিক অর্থে اللمم এর মূল হল যা কম এবং ছোট, আর এ কারণে (ألمم بالمكان) যার অর্থ : স্থানটিতে তার অবস্থান কম হয়েছে। ألمم بالطعام অর্থাৎ- খাদ্য থেকে তার খাওয়া কম হয়েছে। আরো বলা হয়ে থাকে অবাধ্যতায় আপতিত না হয়ে অবাধ্যতার কাছাকাছি হওয়া।

(قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ) অর্থাৎ- মু’মিন ব্যক্তি সগীরাহ্ গুনাহ থেকে মুক্ত না এর সমর্থন, (إِنْ تَغْفِرْ اَللّٰهُمَّ تَغْفِرْ جَمَّا) অর্থাৎ- অনেক বড় (وأى عبد لك لا ألما), অর্থাৎ- কোন বান্দা নিষ্পাপ নয়। পংতিটি উমাইয়্যাহ্ বিন আবিস্ সালত-এর জাহিলী যুগে যে ‘ইবাদাতগুজার ছিল, পুনরুত্থানে বিশ্বাসী ছিল ইসলামী যুগ পেয়েছিল তবে ইসলাম গ্রহণ করেনি। তার কবিতা বিভিন্ন উপদেশাবলী ও বাস্তবতাকে শামিল করার দরুন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কবিতাকে ভালবাসতেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কবিতাংশকে উচ্চারণ করার দরুন তা হাদীসে পরিণত হয়েছে। وَمَا عَلَّمْنَاهُ الشِّعْرَ وَمَا يَنْبَغِيْ لَه (সূরা ইয়াসীন ৩৬ : ৬৯) আল্লাহর এ বাণীতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কবিতার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞারোপ করা হয়েছে আর তা দ্বারা উদ্দেশ্য কবিতা তৈরি করা আবৃত্তি করা নয়। আর এটিই বিশুদ্ধ। অর্থাৎ- আপনার ব্যাপার হল বড়, অনেক গুনাহসমূহ ক্ষমা করা, উপরন্তু ছোট গুনাহসমূহ ক্ষমা করা। কেননা ছোট গুনাহসমূহ থেকে কেউ মুক্ত থাকতে পারে না। আর নিশ্চয়ই তা পুণ্য কর্মের মাধ্যমে মোচন হয়ে যায়।

ইমাম ত্বীবী বলেন, হে আল্লাহ! আপনার মর্যাদা হল বড় বড় গুনাহ থেকে অনেক গুনাহ ক্ষমা করা। পক্ষান্তরে ছোট অপরাধসমূহ আপনার দিকে সম্বন্ধ করা হয় না, কেননা তা থেকে কেউ মুক্ত নয়, নিশ্চয়ই তা কাবীরাহ্ গুনাহসমূহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে মোচন হয়ে যায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৫০-[২৮] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের সকলেই পথহারা, কিন্তু তারা ছাড়া যাদেরকে আমি পথ দেখিয়েছি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে পথের সন্ধান চাও, আমি তোমাদেরকে পথ দেখাব। তোমাদের সকলেই অভাবগ্রস্ত, তারা ছাড়া যাদেরকে আমি অভাবমুক্ত করেছি। অতএব তোমরা আমার কাছে চাও আমি তোমাদেরকে রিযক দান করব। তোমাদের সকলেই পাপী, তারা ছাড়া যাদেরকে আমি নিরাপদে রেখেছি। অতঃপর তোমাদের যে বিশ্বাস স্থাপন করে, আমি ক্ষমা করে দেয়ার শক্তি রাখি, সে যেন আমার কাছে ক্ষমা চায় আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো, আর (এ ব্যাপারে) আমি কারো পরোয়া করি না। যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ পর্যন্ত, তোমাদের জীবিত ও মৃত তোমাদের কাঁচা ও শুকনো (শিশু ও বৃদ্ধ) সকলেই আমার বান্দাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরহেজগার ব্যক্তির অন্তরের মতো অন্তর হয়ে যায়, তথাপিও তা আমার সাম্রাজ্যের একটি মাছির পালক পরিমাণও বাড়াতে পারবে না।

আর যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ, জীবিত ও মৃত, কাঁচা ও শুকনো সকলেই আমার বান্দাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হতভাগ্য ব্যক্তির অন্তরের মতো এক অন্তর হয়ে যায়, তাও আমার সাম্রাজ্যের একটি মাছির পালক পরিমাণও কমাতে পারবে না। তোমাদের প্রথম ও শেষ, জীবিত ও মৃত, কাঁচা ও শুকনো সকলেই যদি এক প্রান্তসীমায় জমা হয়, এরপর তোমাদের প্রত্যেকে তার ইচ্ছানুযায়ী আমার কাছে চায় (প্রার্থনা করে)। আর আমি তোমাদের প্রত্যেক প্রার্থনাকারীকে (প্রত্যাশা অনুযায়ী) দান করি, তা আমার সাম্রাজ্যে কিছুমাত্র কমাতে পারবে না। যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রের কাছে গিয়ে যদি ওতে একটি সুঁই ডুবিয়ে ওঠায়। এটা এ কারণে যে, আমি বড় দাতা, প্রশস্ত দাতা; আমি যা ইচ্ছা তাই করি। আমার দান হলো, আমার কালাম মাত্র। আমার শাস্তি হলো, আমার হুকুম মাত্র। আর আমি কোন কিছু করতে চাইলে শুধু বলি, ’হয়ে যাও’, তৎক্ষণাৎ তা হয়ে যায়। (আহমদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلَّا مَنْ هَدَيْتُ فَاسْأَلُونِي الْهُدَى أَهْدِكُمْ وَكُلُّكُمْ فُقَرَاءُ إِلَّا مَنْ أَغْنَيْتُ فَاسْأَلُونِي أُرْزَقْكُمْ وَكُلُّكُمْ مُذْنِبٌ إِلَّا مَنْ عَافَيْتُ فَمَنْ عَلِمَ مِنْكُمْ أَنِّي ذُو قُدْرَةٍ عَلَى الْمَغْفِرَةِ فَاسْتَغْفَرَنِي غَفَرْتُ لَهُ وَلَا أُبَالِي وَلَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَحَيَّكُمْ وَمَيِّتَكُمْ وَرَطْبَكُمْ وَيَابِسَكُمُ اجْتَمَعُوا عَلَى أَتْقَى قَلْبِ عَبْدٍ مِنْ عبَادي مَا زَاد فِي ملكي جنَاح بعوضةولو أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَحَيَّكُمْ وَمَيِّتَكُمْ وَرَطْبَكُمْ وَيَابِسَكُمُ اجْتَمَعُوا عَلَى أَشْقَى قَلْبِ عَبْدٍ مِنْ عِبَادِي مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِنْ مُلْكِي جَنَاحَ بَعُوضَةٍ. وَلَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَحَيَّكُمْ وَمَيِّتَكُمْ وَرَطْبَكُمْ وَيَابِسَكُمُ اجْتَمَعُوا فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ فَسَأَلَ كُلُّ إِنْسَانٍ مِنْكُمْ مَا بَلَغَتْ أُمْنِيَّتُهُ فَأَعْطَيْتُ كُلَّ سَائِلٍ مِنْكُمْ مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِنْ مُلْكِي إِلَّا كَمَا لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ مَرَّ بِالْبَحْرِ فَغَمَسَ فِيهِ إِبْرَةً ثُمَّ رَفَعَهَا ذَلِكَ بِأَنِّي جَوَادٌ مَاجِدٌ أَفْعَلُ مَا أُرِيدُ عَطَائِي كَلَامٌ وَعَذَابِي كَلَامٌ إِنَّمَا أَمْرِي لِشَيْءٍ إِذَا أَرَدْتُ أَنْ أَقُولَ لَهُ (كُنْ فَيَكُونُ)
رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه

وعن ابي ذر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يقول الله تعالى يا عبادي كلكم ضال الا من هديت فاسالوني الهدى اهدكم وكلكم فقراء الا من اغنيت فاسالوني ارزقكم وكلكم مذنب الا من عافيت فمن علم منكم اني ذو قدرة على المغفرة فاستغفرني غفرت له ولا ابالي ولو ان اولكم واخركم وحيكم وميتكم ورطبكم ويابسكم اجتمعوا على اتقى قلب عبد من عبادي ما زاد في ملكي جناح بعوضةولو ان اولكم واخركم وحيكم وميتكم ورطبكم ويابسكم اجتمعوا على اشقى قلب عبد من عبادي ما نقص ذلك من ملكي جناح بعوضة. ولو ان اولكم واخركم وحيكم وميتكم ورطبكم ويابسكم اجتمعوا في صعيد واحد فسال كل انسان منكم ما بلغت امنيته فاعطيت كل ساىل منكم ما نقص ذلك من ملكي الا كما لو ان احدكم مر بالبحر فغمس فيه ابرة ثم رفعها ذلك باني جواد ماجد افعل ما اريد عطاىي كلام وعذابي كلام انما امري لشيء اذا اردت ان اقول له (كن فيكون) رواه احمد والترمذي وابن ماجه

ব্যাখ্যা: (كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلَّا مَنْ هَدَيْتُ) অর্থাৎ- তোমাদের প্রত্যেকেই হিদায়াতমুক্ত, অস্তিত্বগতভাবেই তার কোন হিদায়াত নেই। বরং হিদায়াত বান্দার রবের তরফ থেকে দয়া। আর এটি ‘‘নিশ্চয়ই ভূমিষ্ঠ সন্তান পথভ্রষ্টতার কারণ মুক্ত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে’’- এ অর্থে প্রত্যেক ভূমিষ্ঠ সন্তান ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করে। এ হাদীসের পরিপন্থী নয়। আর হাদীসটিতে আছে, নিশ্চয়ই বান্দা প্রত্যেক বিষয়ে আল্লাহর মুখাপেক্ষী। আল্লাহকে বাদ দিয়ে কেউ কারো জন্য সামান্য কাজে আসবে না। সুতরাং বান্দার দায়িত্ব হল অন্যায়কে পরিত্যাগ করে আল্লাহর কাছে বিনয়ী হওয়া।

(إِلَّا مَنْ أَغْنَيْتُ) অর্থাৎ- আর ধনী ব্যক্তিও প্রত্যেক মুহূর্তে আবিষ্কার এবং সাহায্য দানের মুখাপেক্ষী হওয়ার দরুন মুহূর্তের জন্যও আল্লাহ থেকে অমুখাপেক্ষী হয় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আর আল্লাহ ধনী এবং তোমরা দরিদ্র।’’ (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ : ৩৮)

(إِلَّا مَنْ عَافَيْتُ) অর্থাৎ- নাবী এবং ওয়ালীদের মধ্য থেকে আমি যাকে রক্ষা করেছি সে ছাড়া। আর এটি ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, عافية বলতে গুনাহ থেকে নিরাপদে থাকা। আর গুনাহ থেকে নিরাপদে থাকা নিরাপত্তাসমূহের মাঝে সর্বাধিক পূর্ণাঙ্গ।

হাদীসটিতে কেবল ঐ ব্যাপারে সতর্ক করার জন্য عافيت বলা হয়েছে যে, গুনাহ অস্তিত্বগত রোগ এবং তার সুস্থতা হল, গুনাহ থেকে ব্যক্তিকে আল্লাহ রক্ষা করা। অথবা কর্মের মাধ্যমে তোমাদের প্রত্যেকেই পাপী আর প্রত্যেকের পাপ তার স্থান অনুপাতে তবে ক্ষমা, রহমাত এবং তাওবার মাধ্যমে আমি যাকে নিরাপত্তা দিয়েছি সে ছাড়া।

(وَرَطْبَكُمْ وَيَابِسَكُمُ) অর্থাৎ- তোমাদের যুবক এবং বৃদ্ধরা অথবা তোমাদের মাঝে জ্ঞানী এবং মূর্খ অথবা তোমাদের মাঝে আনুগত্যশীল এবং অবাধ্য। একমতে বলা হয়েছে, উল্লেখিত শব্দদ্বয় দ্বারা সমুদ্র এবং স্থল, অর্থাৎ- সমুদ্র এবং স্থলের অধিবাসী। অথবা সমুদ্র এবং স্থলে বৃক্ষ, পাথর, মাছ এবং সকল প্রাণী থেকে যা কিছু আছে সব যদি এক হয়ে যায়।

একমতে বলা হয়েছে, উল্লেখিত শব্দদ্বয় দ্বারা মানুষ এবং জিন উভয় উদ্দেশ্য হতে পারে আর তা ঐ অবস্থার উপর ভিত্তি করে যে, তিনি জিনকে আগুন থেকে এবং মানুষকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর প্রথম অনুচ্ছেদে আবূ যার (রাঃ)থেকে বর্ণিত হাদীসে যে جنكم وإنسكم বর্ণনা এসেছে তা একে সমর্থন করছে।

ইমাম ত্বীবী বলেন, উল্লেখিত শব্দদ্বয় পূর্ণাঙ্গ আয়ত্ব সম্পর্কে দু’টি্ ভাষ্য। যেমন (অর্থাৎ- ‘‘আর্দ্র, শুষ্ক সব কিছু আল্লাহর কিতাবে স্পষ্টভাবে লিখা আছে’’- সূরা আল আন্‘আম ৬ : ৫৯) আল্লাহর এ বাণীতে গন্ডিবদ্ধ।

(اجْتَمَعُوْا عَلٰى اَتْقٰى قَلْبِ عَبْدٍ مِنْ عِبَادِىْ) উল্লেখিত বাক্যাংশে أشقى বলতে অভিশপ্ত ইবলীস।

(بِأَنِّىْ جَوَادٌ) অনেক দানকারী। আর আহমাদের ৫ম খণ্ডে ১৭৭ পৃষ্ঠাতে এবং তিরমিযীতে এর পরে (واجد) আছে। আর واجد বলতে ঐ সত্তা যিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন, তিনি সাধারণ সর্বপ্রাপক কোন কিছু তার হাত ছাড়া হয় না।

(عَطَائِىْ كَلَامٌ وَعَذَابِىْ كَلَامٌ) অর্থাৎ- ‘‘আমার দান কথা বলা মাত্র, আমার শাস্তি কথা বলা মাত্র’’- এ বাণীর ব্যাখ্যা।

কাযী বলেন, অর্থাৎ- আমি শাস্তি অথবা দান হতে বান্দার নিকট যা পৌঁছাতে চাই সেক্ষেত্রে আমি ক্লান্তি এবং ‘আমল চর্চা করার মুখাপেক্ষী নই, বরং তা অর্জন ও পৌঁছানোর জন্য সে ব্যাপারে কেবল ইচ্ছা শক্তিই যথেষ্ট।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৫১-[২৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, একদিন তিনি (আল্লাহ তা’আলার) এ আয়াত পড়লেন, ’’হুওয়া আহলুত্ তাকওয়া- ওয়া আহলুল মাগফিরহ্’’ (অর্থাৎ- আল্লাহ হলেন ভয়ের অধিকারী ও মাগফিরাত করার মালিক)। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তোমাদের রব বলেন, আমি লোকের ভয় করার অধিকারী। তাই যে আমাকে ভয় করল, আমি তাকে মাফ করারও অধিকারী। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[1]

وَعَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَرَأَ (هُوَ أَهْلُ التَّقْوَى وَأَهْلُ الْمَغْفِرَة)
قَالَ:
قَالَ رَبُّكُمْ أَنَا أَهْلٌ أَنْ أُتَّقَى فَمَنِ اتَّقَانِي فَأَنَا أَهْلٌ أَنْ أَغْفِرَ لَهُ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه والدارمي

وعن انس عن النبي صلى الله عليه وسلم انه قرا (هو اهل التقوى واهل المغفرة) قال: قال ربكم انا اهل ان اتقى فمن اتقاني فانا اهل ان اغفر له . رواه الترمذي وابن ماجه والدارمي

ব্যাখ্যা: هُوَ أَهْلُ التَّقْوٰى অর্থাৎ- তার অবাধ্য হওয়া বর্জন এবং তার আনুগত্যের মাধ্যমে আল্লাহভীরুগণ তাকে ভয় করার ক্ষেত্রে তিনিই একমাত্র যোগ্য। وَأَهْلُ الْمَغْفِرَةِ অর্থাৎ- যে সকল গুনাহ মু’মিনদের থেকে ঘটেছে সে ব্যাপারে মু’মিনদেরকে ক্ষমাকরণে তিনিই একমাত্র যোগ্য এবং অবাধ্য তাওবাহকারীদের তাওবাহ্ গ্রহণেরও যোগ্য, আর তাদেরকে ক্ষমা করার যোগ্য একমাত্র তিনিই। এটি শাওকানীর উক্তি। আর ইমাম বায়যাবী বলেন, هُوَ أَهْلُ التَّقْوٰى অর্থাৎ- তার শাস্তিকে ভয় করার ক্ষেত্রে তিনিই উপযুক্ত। وَأَهْلُ الْمَغْفِرَةِ বান্দাদেরকে বিশেষ করে বান্দাদের থেকে যারা আল্লাহভীরু তাদেরকে ক্ষমা করণে তিনিই একমাত্র যোগ্য। কাতাদাহ্ বলেন, তাকে ভয় করার মতো আর যে তার কাছে তাওবাহ্ করে এবং প্রত্যাবর্তন করে তিনি তাকে ক্ষমা করার যোগ্য।

(أنا أهل أن اتقى) আহমাদ, ইবনু মাজাহ (فلا يجعل معى إلها أخر) এ অংশটুকু বৃদ্ধি করেছেন। ইবনু মাজাহ অপর বর্ণনাতে আছে, (أن اتبى فلا يشرك بى غيرى)।

(فَأَنَا أَهْلٌ أَنْ أَغْفِرَ لَه) অর্থাৎ- যে আমাকে ভয় করে চলবে তাকে। আহমাদ এবং ইবনু মাজাতে আছে, (فمن اتقى أن يجعل معى إلها أخر فأنا أهل أغفر له) ইবনু মাজার অপর বর্ণনাতে আছে, (وانا أهل لمن اتقى أن يشرك بى أن أغفر له) আর এটি আল্লাহর (إن الله لا يغفر أن يشرك به ويغفر ما دون ذلك لمن يشاء) এ বাণীকে শামিল করছে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৫২-[৩০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একই মাজলিসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইসতিগফার একশ’বার গণনা করতাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন, ’’রব্বিগফিরলী ওয়াতুব্ ’আলাইয়্যা ইন্‌নাকা আন্‌তাত্ তাও্ওয়া-বুল গফূর’’ (অর্থাৎ- হে রব! তুমি আমাকে ক্ষমা করো। আমার তওবা্ কবূল করো। কেননা তুমি তওবা্ কবূলকারী ও ক্ষমাকারী।)। (আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَن ابْن عمر قَالَ: إِنْ كُنَّا لَنَعُدُّ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَجْلِسِ يَقُولُ: «رَبِّ اغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُورُ» مِائَةَ مَرَّةٍ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ

وعن ابن عمر قال: ان كنا لنعد لرسول الله صلى الله عليه وسلم في المجلس يقول: «رب اغفر لي وتب علي انك انت التواب الغفور» ماىة مرة. رواه احمد والترمذي وابو داود وابن ماجه

ব্যাখ্যা: (رَبِّ اغْفِرْ لِىْ) এটি যেন আল্লাহর وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهٗ كَانَ تَوَّابًا অর্থাৎ- ‘‘আপনি তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন, নিশ্চয়ই তিনি তাওবাহ্ গ্রহণকারী’’- (সূরা আন্ নাসর ১১০ : ৩)। এ বাণীর প্রতি ‘আমল করণার্থে এবং আল্লাহর إِنَّ اللّٰهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাহ্কারীদের ভালবাসেন।’’ (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ২২২)

এ বাণী অবলম্বনার্থে বলছেন। হাদীসটি ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ষমা প্রার্থনা করা দু‘আ শব্দের মাধ্যমে ছিল। বিদ্বানগণ এটিকে (استغفر الله) উক্তিকারীর উক্তির উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। কেননা যদি সে ক্ষমা প্রার্থনার ক্ষেত্রে উদাসীন থাকে বা প্রস্ত্তত না থাকে তাহলে তার ক্ষমা প্রার্থনা মিথ্যায় পরিণত হবে যা দু‘আর বিপরীত। কেননা কখনো দু‘আতে সাড়া দেয়া হয় যখন তা সময়ের অনুকূলে হয় যদিও তা উদাসীনতার সাথে সম্পন্ন হয়। এভাবে বিদ্বানগণ উক্তি করেছেন। আর এটি ঐ অবস্থার উপর নির্ভর করছে যে, উক্তিকারীর উক্তি (استغفر الله) খবর বা সংবাদ এবং তা অনুসন্ধানমূলক হওয়াও জায়িয। আর বাহ্যিকভাবে তাই বুঝা যাচ্ছে। আর সহীহ হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি (أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ الَّذِىْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ) বর্ণিত হয়েছে। হ্যাঁ, এ উক্তিকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্যান্যদের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়া হবে। লাম্‘আহ্-তে এভাবে আছে।

(إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُورُ) উভয় শব্দের মধ্যে আধিক্যতার অর্থের সমাবেশ আছে আর এটি আহমাদ এবং তিরমিযীর শব্দ এবং আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ এবং ইবনুস্ সুন্নীতে الغفور এর পরিবর্তে الرحيم শব্দ আছে। নাসায়ী ও ইবনু হিব্বান-এর এক বর্ণনাতেও এভাবে এসেছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৫৩-[৩১] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুক্ত করা গোলাম বিলাল ইবনু ইয়াসার ইবনু যায়দ বলেন, আমার পিতা আমার দাদার মাধ্যমে বলেন, আমার দাদা যায়দ বলেছেন, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন। যে ব্যক্তি বলল,

"আস্‌তাগফিরুল্ল-হাল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলায়হি"

(অর্থাৎ- আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছে তওবা্ করি।)।

আল্লাহ তা’আলা তাকে ক্ষমা করবেন, যদিও সে যুদ্ধের ময়দান হতে পালিয়ে যেয়ে থাকে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ। তবে আবূ দাঊদ বলেন, বর্ণনাকারীর নাম হলো হিলাল ইবনু ইয়াসার। তিরমিযী বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]

وَعَن بِلَال بن يسَار بن زيدٍ مَوْلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: حَدَّثَنِي أَبِي عَنْ جَدِّي أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَنْ قَالَ: أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيَّ الْقَيُّومَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ غُفِرَ لَهُ وَإِنْ كَانَ قَدْ فَرَّ مِنَ الزَّحْفِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ لَكِنَّهُ عِنْدَ أَبِي دَاوُدَ هِلَالُ بْنُ يَسَارٍ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيب

وعن بلال بن يسار بن زيد مولى النبي صلى الله عليه وسلم قال: حدثني ابي عن جدي انه سمع رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: من قال: استغفر الله الذي لا اله الا هو الحي القيوم واتوب اليه غفر له وان كان قد فر من الزحف . رواه الترمذي وابو داود لكنه عند ابي داود هلال بن يسار وقال الترمذي: هذا حديث غريب

ব্যাখ্যা: (وَأَتُوبُ إِلَيْهِ) কারী বলেন, ব্যক্তির উচিত এ বাক্যটি এভাবে উচ্চারণ না করা তবে যখন সে এ বাক্যের ক্ষেত্রে সত্যবাদী হবে তখন উচ্চারণ করবে। আরো উচিত হবে আল্লাহর সামনে মিথ্যাবাদী না সাজা। আর এজন্য বর্ণণা করা হয়েছে গুনাহের উপর অটল থেকে গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনাকারী নিজ প্রভুর সাথে ঠাট্টাকারীর ন্যায়।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) কিতাবুল আযকার-এ রবী' বিন খয়সাম থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই রবী‘ বিন খায়সাম বলেন, তোমাদের কেউ যেন (استغفر الله) এবং (اتوب اليه) না বলে, কারণ যদি সে তা না করে তাহলে তা পাপের কাজ ও মিথ্যায় পরিণত হবে। বরং সে বলবে (اللهم اغفرلى وتب على) অর্থৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর এবং আমার ওপর তাওবাহ্ কবূল কর।

নাবাবী (রহঃ) বলেন, আর এটি যা তিনি তার (اللهم اغفرلى وتب على) উক্তি থেকে বলেছেন তা ভাল। পক্ষান্তরে (استغفر الله) অর্থাৎ- আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি- এ কথা বলার অপছন্দনীয়তা এবং তাকে মিথ্যা বলে আখ্যা দেয়ার ব্যাপারে আমরা একমত নই। কেননা (استغفر الله) এর অর্থ হল আমরা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি বা অনুসন্ধান করছি। এতে কোন মিথ্যার আশ্রয় নেই। এ ধরনের মত প্রত্যাখ্যানকরণে যে ব্যক্তি এ হাদীসটি বলবে, (استغفر الله الذى لا اله الا هو الخ ‘‘আমি ঐ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই যিনি ছাড়া সত্যিকার কোন উপাস্য নেই ..... শেষ পর্যন্ত’’) অর্থাৎ- বিলাল বিন ইয়াসার-এর ঐ হাদীস যার ব্যাখ্যাতে আমরা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করছি।

হাফেয বলেন, এ আলোচনা ছিল (استغفر الله الذى لا اله الا هو الحى القيوم) এ শব্দের ব্যাপারে। পক্ষান্তরে (اتوب اليه) এর ক্ষেত্রে তাই উদ্দেশ্য যা রবী‘আহ্ উদ্দেশ্য করেছেন; অর্থাৎ, নিশ্চয়ই সে মিথ্যা বলল আর তা এভাবে যে, ব্যক্তি যখন (اتوب اليه) বলবে অথচ পৃকতপক্ষে সে তাওবাহ্ করবে না। রবী‘আহ্-এর কথা প্রত্যাখ্যানকরণে রবী‘আহ্-এর বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করাতে দৃষ্টি দেয়ার আছে। আর তা এজন্য যে উক্তিকারী (اتوب اليه) থেকে তাওবাহ্ করা এবং তাওবার শর্তসমূহ সম্পন্ন করা উদ্দেশ্য নেয়াও জায়িয আছে। আরো সম্ভাবনা আছে, রবী‘আহ্ উভয় শব্দের সমষ্টিকে উদ্দেশ্য করেছেন বিশেষভাবে (استغفر الله)-কে উদ্দেশ্য করেননি। তখন তার সম্পূর্ণ কথা বিশুদ্ধ হবে। আল্লাহই সর্বজ্ঞাত। এরপর হাফেয হালাবিয়াত থেকে সুবকী-এর কথা উল্লেখ করেছেন আর তা ২৩৫৮ নং হাদীসের ব্যাখ্যাতে উল্লেখ করা হয়েছে (من الزحف), অর্থাৎ- জিহাদ এবং যুদ্ধে শত্রুর সাক্ষাৎ থেকে। যদিও সে কাবারীহ্ গুনাহে লিপ্ত হয়ে থাকে। কেননা যুদ্ধের ময়দান থেকে পালয়ন করা কাবীরাহ্ গুনাহ। এ ব্যাপারে আল্লাহ উল্লেখিত আয়াত দ্বারা ধমক দিয়েছেন- وَمَنْ يُوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهٗ إِلَّا مُتَحَرِّفًا لِقِتَالٍ أَوْ مُتَحَيِّزًا إِلٰى فِئَةٍ فَقَدْ بَاءَ بِغَضَبٍ مِنَ اللّٰهِ অর্থাৎ- ‘‘আর সেদিন যে ব্যক্তি পৃষ্ঠপদর্শন করে পলায়ন করবে যুদ্ধ কৌশল বা স্বীয় কেন্দ্রস্থলে স্থান করে নেয়া ব্যতীত সে আল্লাহর ক্রোধ অর্জন করবে’’- (সূরা আল আনফাল ৮ : ১৬)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৮ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে