পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্
২৩৪২-[২০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিন বান্দা যখন গুনাহ করে তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। এরপর সে ব্যক্তি তওবা্ করল ও ক্ষমা চাইল, তার অন্তর পরিষ্কার হয়ে গেল (কালিমুক্ত হলো), আর যদি গুনাহ বেশি হয় তাহলে কালো দাগও বেশি হয়। অবশেষে তা তার অন্তরকে ঢেকে ফেলে। এটা সেই মরিচা যার ব্যাপারে কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, ’’এটা কক্ষনো নয়, বরং তাদের অন্তরের উপর (গুনাহের) মরিচা লেগে গেছে, যা তারা প্রতিনিয়ত উপার্জন করেছে’’- (সূরা আল মুতাফফিফীন ৮৩ : ১৪)। (আহমদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنِ الْمُؤْمِنَ إِذَا أَذْنَبَ كَانَتْ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ فِي قَلْبِهِ فَإِنْ تَابَ وَاسْتَغْفَرَ صُقِلَ قَلْبُهُ وَإِنْ زَادَ زَادَتْ حَتَّى تَعْلُوَ قَلْبَهُ فَذَلِكُمُ الرَّانُ الَّذِي ذَكَرَ اللَّهُ تَعَالَى (كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يكسِبونَ) رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيح
ব্যাখ্যা: (فِىْ قَلْبِه) অর্থাৎ- তার অন্তরের মাঝে ঐ দাগের ন্যায় সমান প্রভাব পড়ে যা আয়না, তরবারি এবং অনুরূপ বস্ত্তর মতো উজ্জ্বলতার মাঝে পতিত ময়লার সাথে সাদৃশ্য রাখে।
কারী বলেন, অর্থাৎ- কালির ফোটার মতো যা কাগজে পতিত হয় এবং অবাধ্যতা ও তার পরিমাণ অনুপাতে তা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আর বিষয়টিকে উপমা এবং সাদৃশ্য উপস্থাপন অধ্যায়ের আওতাভুক্ত করা অপেক্ষা বাস্তবতার উপর চাপিয়ে দেয়া উত্তম। যেমন বলা হয়েছে, চূড়ান্ত স্বচ্ছতা ও শুভ্রতার ক্ষেত্রে কাপড়ের সাথে অন্তরকে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে এবং অবাধ্যতাকে ঐ চূড়ান্ত কালো বস্ত্তর সাথে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে যা ঐ সাদা কাপড়ে গেলে আটকে গেছে।
উল্লেখিত শব্দ আহমাদ, ইবনু মাজাহ এবং হাকিম-এর এবং তিরমিযীর শব্দ (إن العبد إذا أخطأ خطيئة نكتت فى قلبه نكتة سوداء)
(فَإِنْ تَابَ وَاسْتَغْفَرَ) অতঃপর যদি সে গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। এবং মুসনাদ, ইবনু মাজাহ ও মুসতাদরাক দ্বিতীয় খণ্ড ৫১৭ পৃষ্ঠাতে تاب শব্দের পর نزع শব্দ পতিত হয়েছে। একমতে বলা হয়েছে, استغفر অর্থাৎ- সে এখান থেকে উঠে এসেছে এবং তা ছেড়ে দিয়েছে। তিরমিযীর শব্দ فإذا هو نزع واستغفر و تاب বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝা যাচ্ছে মিশকাত গ্রন্থে نزع শব্দের বিলুপ্তি সাধন হয়েছে মাসাবীহ গ্রন্থের অনুসরণার্থে আর আল্লাহই সর্বাধিক ভাল জানেন।
(صُقِلَ قَلْبُه) অর্থাৎ- আল্লাহ তার অন্তর থেকে ঐ দাগ মুছে দেবেন। অর্থাৎ- আল্লাহ তার অন্তরের আয়নাকে পরিচ্ছন্ন করে দেবেন কেননা তাওবাহ্ পরিচ্ছন্ন করার স্থানে অবস্থান করছে যা বাহ্যিকভাবে বা রূপকভাবে অন্তরের ময়লাকে দূর করে দেয়। (وإن زاد زادت) অর্থাৎ- একই রূপ গুনাহের মাধ্যমে বা ভিন্ন ভিন্ন গুনাহের মাধ্যমে যদি গুনাহ বৃদ্ধি পায় তাহলে ঐ কালো দাগ বৃদ্ধি পায় অথবা প্রত্যেক গুনাহের জন্য দাগ প্রকাশ পায়।
(حَتّٰى تَعْلُوَ قَلْبَه) অর্থাৎ- পরিশেষে ঐ কালো দাগ তার অন্তরের উপর আবরণ স্বরূপ বিজয়লাভ করে এবং তার সমস্ত অন্তরকে ঢেকে নেয় এবং সমস্ত অন্তরকে অন্ধকারে পরিণত করে, ফলে সে অন্তর কল্যাণ অর্জন করতে পারে না এবং সৎ পথ দেখতে পায় না এবং সে অন্তরে কল্যাণ স্থির হয় না। তিরমিযীর বর্ণনাতে আছে, (وإن عاد زيد فيها ختى تعلو قلبه অর্থাৎ- যে পাপ সে কামাই করেছে সে পাপে যদি প্রত্যাবর্তন করে অথবা অন্য কোন পাপে প্রত্যাবর্তন করে। আর পাপ কালোর দাগের মাঝে অন্য দাগ বৃদ্ধি করে আর এভাবে ঐ দাগগুলো ব্যক্তির অন্তরের আলোকে নিভিয়ে দেয় এবং তার অন্তর্দৃষ্টিকে ঢেকে নেয়। (فذلكم) একমতে বলা হয়েছে, এটি সাহাবীগণকে সম্বোধন, অর্থাৎ- এটি হল প্রাধান্য পাওয়া মন্দ প্রভাব।
(الرَّانُ الَّذِىْ ذَكَرَ اللّٰهُ) আবূ ‘উবায়দ বলেন, প্রত্যেক ঐ বস্ত্ত যা তোমার ওপর প্রাধান্য পায় তা তোমার ওপর ময়লা বা মরিচা স্বরূপ।
مَا كَانُوا يَكْسِبُوْنَ অর্থাৎ- তারা যে সমস্ত গুনাহ কামিয়েছে।
ইমাম ত্বীবী বলেন, আয়াতটি কাফিরদের ব্যাপারে অবতীর্ণ, তবে মু’মিন ব্যক্তি গুনাহে জড়িত হওয়ার মাধ্যমে অন্তর কালো হওয়ার ক্ষেত্রে কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য রাখে এবং গুনাহ বৃদ্ধির কারণে সে দাগও বৃদ্ধি পায়।
ইমাম মালিক বলেন, এ আয়াতটি কাফিরদের জন্য উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’মিনদেরকে ভয় দেখানোর জন্য এ আয়াতটি উল্লেখ করেছেন যাতে অধিক গুনাহ করা থেকে তারা সতর্ক হয়, যাতে কাফিরদের কালো অন্তরের ন্যায় তাদের অন্তর কালো না হয়। এজন্য একমতে বলা হয়েছে, المعاصى দ্বারা কুফর উদ্দেশ্য, এভাবে মিরকাতে আছে।