পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্
২৩৫০-[২৮] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের সকলেই পথহারা, কিন্তু তারা ছাড়া যাদেরকে আমি পথ দেখিয়েছি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে পথের সন্ধান চাও, আমি তোমাদেরকে পথ দেখাব। তোমাদের সকলেই অভাবগ্রস্ত, তারা ছাড়া যাদেরকে আমি অভাবমুক্ত করেছি। অতএব তোমরা আমার কাছে চাও আমি তোমাদেরকে রিযক দান করব। তোমাদের সকলেই পাপী, তারা ছাড়া যাদেরকে আমি নিরাপদে রেখেছি। অতঃপর তোমাদের যে বিশ্বাস স্থাপন করে, আমি ক্ষমা করে দেয়ার শক্তি রাখি, সে যেন আমার কাছে ক্ষমা চায় আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো, আর (এ ব্যাপারে) আমি কারো পরোয়া করি না। যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ পর্যন্ত, তোমাদের জীবিত ও মৃত তোমাদের কাঁচা ও শুকনো (শিশু ও বৃদ্ধ) সকলেই আমার বান্দাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরহেজগার ব্যক্তির অন্তরের মতো অন্তর হয়ে যায়, তথাপিও তা আমার সাম্রাজ্যের একটি মাছির পালক পরিমাণও বাড়াতে পারবে না।
আর যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ, জীবিত ও মৃত, কাঁচা ও শুকনো সকলেই আমার বান্দাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হতভাগ্য ব্যক্তির অন্তরের মতো এক অন্তর হয়ে যায়, তাও আমার সাম্রাজ্যের একটি মাছির পালক পরিমাণও কমাতে পারবে না। তোমাদের প্রথম ও শেষ, জীবিত ও মৃত, কাঁচা ও শুকনো সকলেই যদি এক প্রান্তসীমায় জমা হয়, এরপর তোমাদের প্রত্যেকে তার ইচ্ছানুযায়ী আমার কাছে চায় (প্রার্থনা করে)। আর আমি তোমাদের প্রত্যেক প্রার্থনাকারীকে (প্রত্যাশা অনুযায়ী) দান করি, তা আমার সাম্রাজ্যে কিছুমাত্র কমাতে পারবে না। যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রের কাছে গিয়ে যদি ওতে একটি সুঁই ডুবিয়ে ওঠায়। এটা এ কারণে যে, আমি বড় দাতা, প্রশস্ত দাতা; আমি যা ইচ্ছা তাই করি। আমার দান হলো, আমার কালাম মাত্র। আমার শাস্তি হলো, আমার হুকুম মাত্র। আর আমি কোন কিছু করতে চাইলে শুধু বলি, ’হয়ে যাও’, তৎক্ষণাৎ তা হয়ে যায়। (আহমদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلَّا مَنْ هَدَيْتُ فَاسْأَلُونِي الْهُدَى أَهْدِكُمْ وَكُلُّكُمْ فُقَرَاءُ إِلَّا مَنْ أَغْنَيْتُ فَاسْأَلُونِي أُرْزَقْكُمْ وَكُلُّكُمْ مُذْنِبٌ إِلَّا مَنْ عَافَيْتُ فَمَنْ عَلِمَ مِنْكُمْ أَنِّي ذُو قُدْرَةٍ عَلَى الْمَغْفِرَةِ فَاسْتَغْفَرَنِي غَفَرْتُ لَهُ وَلَا أُبَالِي وَلَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَحَيَّكُمْ وَمَيِّتَكُمْ وَرَطْبَكُمْ وَيَابِسَكُمُ اجْتَمَعُوا عَلَى أَتْقَى قَلْبِ عَبْدٍ مِنْ عبَادي مَا زَاد فِي ملكي جنَاح بعوضةولو أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَحَيَّكُمْ وَمَيِّتَكُمْ وَرَطْبَكُمْ وَيَابِسَكُمُ اجْتَمَعُوا عَلَى أَشْقَى قَلْبِ عَبْدٍ مِنْ عِبَادِي مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِنْ مُلْكِي جَنَاحَ بَعُوضَةٍ. وَلَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَحَيَّكُمْ وَمَيِّتَكُمْ وَرَطْبَكُمْ وَيَابِسَكُمُ اجْتَمَعُوا فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ فَسَأَلَ كُلُّ إِنْسَانٍ مِنْكُمْ مَا بَلَغَتْ أُمْنِيَّتُهُ فَأَعْطَيْتُ كُلَّ سَائِلٍ مِنْكُمْ مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِنْ مُلْكِي إِلَّا كَمَا لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ مَرَّ بِالْبَحْرِ فَغَمَسَ فِيهِ إِبْرَةً ثُمَّ رَفَعَهَا ذَلِكَ بِأَنِّي جَوَادٌ مَاجِدٌ أَفْعَلُ مَا أُرِيدُ عَطَائِي كَلَامٌ وَعَذَابِي كَلَامٌ إِنَّمَا أَمْرِي لِشَيْءٍ إِذَا أَرَدْتُ أَنْ أَقُولَ لَهُ (كُنْ فَيَكُونُ)
رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: (كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلَّا مَنْ هَدَيْتُ) অর্থাৎ- তোমাদের প্রত্যেকেই হিদায়াতমুক্ত, অস্তিত্বগতভাবেই তার কোন হিদায়াত নেই। বরং হিদায়াত বান্দার রবের তরফ থেকে দয়া। আর এটি ‘‘নিশ্চয়ই ভূমিষ্ঠ সন্তান পথভ্রষ্টতার কারণ মুক্ত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে’’- এ অর্থে প্রত্যেক ভূমিষ্ঠ সন্তান ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করে। এ হাদীসের পরিপন্থী নয়। আর হাদীসটিতে আছে, নিশ্চয়ই বান্দা প্রত্যেক বিষয়ে আল্লাহর মুখাপেক্ষী। আল্লাহকে বাদ দিয়ে কেউ কারো জন্য সামান্য কাজে আসবে না। সুতরাং বান্দার দায়িত্ব হল অন্যায়কে পরিত্যাগ করে আল্লাহর কাছে বিনয়ী হওয়া।
(إِلَّا مَنْ أَغْنَيْتُ) অর্থাৎ- আর ধনী ব্যক্তিও প্রত্যেক মুহূর্তে আবিষ্কার এবং সাহায্য দানের মুখাপেক্ষী হওয়ার দরুন মুহূর্তের জন্যও আল্লাহ থেকে অমুখাপেক্ষী হয় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আর আল্লাহ ধনী এবং তোমরা দরিদ্র।’’ (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ : ৩৮)
(إِلَّا مَنْ عَافَيْتُ) অর্থাৎ- নাবী এবং ওয়ালীদের মধ্য থেকে আমি যাকে রক্ষা করেছি সে ছাড়া। আর এটি ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, عافية বলতে গুনাহ থেকে নিরাপদে থাকা। আর গুনাহ থেকে নিরাপদে থাকা নিরাপত্তাসমূহের মাঝে সর্বাধিক পূর্ণাঙ্গ।
হাদীসটিতে কেবল ঐ ব্যাপারে সতর্ক করার জন্য عافيت বলা হয়েছে যে, গুনাহ অস্তিত্বগত রোগ এবং তার সুস্থতা হল, গুনাহ থেকে ব্যক্তিকে আল্লাহ রক্ষা করা। অথবা কর্মের মাধ্যমে তোমাদের প্রত্যেকেই পাপী আর প্রত্যেকের পাপ তার স্থান অনুপাতে তবে ক্ষমা, রহমাত এবং তাওবার মাধ্যমে আমি যাকে নিরাপত্তা দিয়েছি সে ছাড়া।
(وَرَطْبَكُمْ وَيَابِسَكُمُ) অর্থাৎ- তোমাদের যুবক এবং বৃদ্ধরা অথবা তোমাদের মাঝে জ্ঞানী এবং মূর্খ অথবা তোমাদের মাঝে আনুগত্যশীল এবং অবাধ্য। একমতে বলা হয়েছে, উল্লেখিত শব্দদ্বয় দ্বারা সমুদ্র এবং স্থল, অর্থাৎ- সমুদ্র এবং স্থলের অধিবাসী। অথবা সমুদ্র এবং স্থলে বৃক্ষ, পাথর, মাছ এবং সকল প্রাণী থেকে যা কিছু আছে সব যদি এক হয়ে যায়।
একমতে বলা হয়েছে, উল্লেখিত শব্দদ্বয় দ্বারা মানুষ এবং জিন উভয় উদ্দেশ্য হতে পারে আর তা ঐ অবস্থার উপর ভিত্তি করে যে, তিনি জিনকে আগুন থেকে এবং মানুষকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর প্রথম অনুচ্ছেদে আবূ যার (রাঃ)থেকে বর্ণিত হাদীসে যে جنكم وإنسكم বর্ণনা এসেছে তা একে সমর্থন করছে।
ইমাম ত্বীবী বলেন, উল্লেখিত শব্দদ্বয় পূর্ণাঙ্গ আয়ত্ব সম্পর্কে দু’টি্ ভাষ্য। যেমন (অর্থাৎ- ‘‘আর্দ্র, শুষ্ক সব কিছু আল্লাহর কিতাবে স্পষ্টভাবে লিখা আছে’’- সূরা আল আন্‘আম ৬ : ৫৯) আল্লাহর এ বাণীতে গন্ডিবদ্ধ।
(اجْتَمَعُوْا عَلٰى اَتْقٰى قَلْبِ عَبْدٍ مِنْ عِبَادِىْ) উল্লেখিত বাক্যাংশে أشقى বলতে অভিশপ্ত ইবলীস।
(بِأَنِّىْ جَوَادٌ) অনেক দানকারী। আর আহমাদের ৫ম খণ্ডে ১৭৭ পৃষ্ঠাতে এবং তিরমিযীতে এর পরে (واجد) আছে। আর واجد বলতে ঐ সত্তা যিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন, তিনি সাধারণ সর্বপ্রাপক কোন কিছু তার হাত ছাড়া হয় না।
(عَطَائِىْ كَلَامٌ وَعَذَابِىْ كَلَامٌ) অর্থাৎ- ‘‘আমার দান কথা বলা মাত্র, আমার শাস্তি কথা বলা মাত্র’’- এ বাণীর ব্যাখ্যা।
কাযী বলেন, অর্থাৎ- আমি শাস্তি অথবা দান হতে বান্দার নিকট যা পৌঁছাতে চাই সেক্ষেত্রে আমি ক্লান্তি এবং ‘আমল চর্চা করার মুখাপেক্ষী নই, বরং তা অর্জন ও পৌঁছানোর জন্য সে ব্যাপারে কেবল ইচ্ছা শক্তিই যথেষ্ট।