পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্
২৩৫৪-[৩২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে তাঁর কোন নেক বান্দার মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। এ অবস্থা দেখে সে (নেক বান্দা) বলবে, হে আমার রব! আমার এ মর্যাদা কিভাবে বৃদ্ধি হলো? তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমার সন্তান-সন্ততি তোমার জন্য মাগফিরাত কামনা করার কারণে। (আহমাদ)[1]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ لَيَرْفَعُ الدَّرَجَةَ لِلْعَبْدِ الصَّالِحِ فِي الْجَنَّةِ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ أَنَّى لِي هَذِهِ؟ فَيَقُولُ: باستغفار ولدك لَك . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: (وَلَدِكَ لَكَ) শব্দটি ছেলে, মেয়ে উভয়ের উপর প্রয়োগ করা হয়। এখানে ولد দ্বারা মু’মিন সন্তান উদ্দেশ্য। আর এটি বিবাহের উপকারসমূহের একটি উপকার ও সর্বাপেক্ষা বড় উপকার এবং ঐ বস্ত্তসমূহের একটি যা পুণ্য এবং কর্ম থেকে মরণের পর মু’মিন ব্যক্তির সাথে মিলিত হয়। যেমন হাদীসে এসেছে। ইমাম ত্বীবী বলেন, পূর্বোক্ত হাদীসটি এ প্রমাণ বহন করছে যে, ক্ষমা প্রার্থনা দ্বারা বড় বড় গুনাহ মুছে যায়।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্
২৩৫৫-[৩৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই মৃত ব্যক্তি হলো পানিতে পড়া ব্যক্তির মতো সাহায্যপ্রার্থী। সে তার পিতা-মাতা, ভাই-বন্ধুর দু’আ পৌঁছার প্রতীক্ষায় থাকে। তার কাছে যখন দু’আ পৌঁছে, তখন তার কাছে সারা দুনিয়া ও দুনিয়ার সকল জিনিসের চেয়ে এ দু’আ বেশি প্রিয় হয়। আর আল্লাহ তা’আলা দুনিয়াবাসীদের দু’আয় কবরবাসীদেরকে পাহাড় পরিমাণ রহমত পৌঁছান এবং মৃত ব্যক্তিদের জন্য জীবিতদের পক্ষ থেকে হাদিয়্যাহ্ (উপহার) হলো তাদের জন্য ক্ষমা চাওয়া। (বায়হাক্বী- শু’আবূল ঈমান)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا الْمَيِّتُ فِي الْقَبْرِ إِلَّا كَالْغَرِيقِ الْمُتَغَوِّثِ يَنْتَظِرُ دَعْوَةً تَلْحَقُهُ مِنْ أَبٍ أَوْ أُمٍّ أَوْ أَخٍ أَوْ صَدِيقٍ فَإِذَا لَحِقَتْهُ كَانَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى لَيُدْخِلُ عَلَى أَهْلِ الْقُبُورِ مِنْ دُعَاءِ أَهْلِ الْأَرْضِ أَمْثَالَ الْجِبَالِ وَإِنَّ هَدِيَّةَ الْأَحْيَاءِ إِلَى الْأَمْوَاتِ الِاسْتِغْفَارُ لَهُمْ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان
ব্যাখ্যা: (الْمُتَغَوِّثِ) অর্থাৎ- সাহায্য প্রার্থনাকারী, মুক্তির আশায় সর্বোচ্চ আওয়াজে আহবানকারী।
(أَوْ صَدِيقٍ) আর এটা এমন কতিপয়ের সাথে নির্দিষ্ট যার কাছ থেকে সাহায্যের আশা করা যায় এবং অন্য অপেক্ষা যার কাছ থেকে অধিক দু‘আ ও ক্ষমা প্রার্থনার আশা করা যায়। অন্যথায় হুকুম ব্যাপক। যেমন হাদীসের শেষে বলেছেন। অন্যান্য হাদীসসমূহে ولد এর উল্লেখ থাকার কারণে এ হাদীসে তা উল্লেখ করা হয়নি।
(أَمْثَالَ الْجِبَالِ) অর্থাৎ- ঐ দু‘আকে যদি আকৃতি দেয়া হয় তাহলে তা দয়া ও ক্ষমার পাহাড়সদৃশ হবে।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্
২৩৫৬-[৩৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সৌভাগ্যবান হবে সে, যার ’আমলনামায় ইস্তিগফার বা ক্ষমা চাওয়া বেশি পাওয়া যাবে। (ইবনু মাজাহ। আর ইমাম নাসায়ী তাঁর ’আমলুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ্ ’’একদিন ও একরাতের ’আমল [কাজ]’’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন।)[1]
وَعَن عبد الله بن يسر قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «طُوبَى لِمَنْ وَجَدَ فِي صَحِيفَتِهِ اسْتِغْفَارًا كَثِيرًا» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَرَوَى النَّسَائِيُّ فِي «عملِ يَوْم وَلَيْلَة»
ব্যাখ্যা: (طُوبٰى) এটি الطيب থেকে একটি ক্রিয়া। আর তা জান্নাতের একটি নাম অথবা জান্নাতে একটি বৃক্ষ। একমতে বলা হয়েছে, আরাম এবং উত্তম জীবন-যাপন। কারী বলেন, طوبى অর্থাৎ- উত্তম অবস্থা, সন্তোষজনক জীবন-যাপন অথবা সুউচ্চ জান্নাতে প্রসিদ্ধ বৃক্ষ।
(اسْتِغْفَارًا كَثِيرًا) ত্বীবী বলেন, যদি বলা হয় (طوبى لمن استغفر كثيرا) অর্থাৎ- যে ব্যক্তি অধিক ক্ষমা প্রার্থনা করবে তার জন্য طوبى। কথাটি এভাবে কেন বলা হয়নি? আর এভাবে পরিবর্তন করে কেন বলা হল? আমি বলব, এটি ঐ ব্যাপারেই একটি ইঙ্গিতসূচক বিষয় ফলে তা দৃঢ়তা ও নিষ্ঠার সাথে অর্জন হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে। কেননা ক্ষমা প্রার্থনাকারী যখন তার ক্ষমা প্রার্থনার ক্ষেত্রে নিষ্ঠাবান না হবেন তখন তার ক্ষমা প্রার্থনা নিরর্থক হবে তখন সে তার ‘আমলনামাতে তার বিপক্ষে দলীল এবং তার প্রতিকূল হয় এমন বিষয় ছাড়া আর কিছুই পাবে না। ত্ববারানী আওসাত গ্রন্থে যুবায়র বিন ‘আও্ওয়াম থেকে মারফূ' সূত্রে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার ‘আমলনামা তাকে আনন্দ দিক সে যেন তার ‘আমলনামাতে ক্ষমা প্রার্থনাকে বৃদ্ধি করে। হায়সামী বলেন, এর সানাদের বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য বায়হাক্বীও একে বর্ণনা করেছেন। মুনযিরী বলেন, এর সানাদে কোন দোষ নেই।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্
২৩৫৭-[৩৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, হে আল্লাহ! আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করো যারা ভাল কাজ করে খুশী হয় ও মন্দ কাজ করে ক্ষমা চায়। (ইবনু মাজাহ, বায়হাক্বী- দা’ওয়াতুল কাবীর)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ الَّذِينَ إِذا أحْسَنوا استبشَروا وإِذا أساؤوا اسْتَغْفَرُوا» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي الدَّعَوَاتِ الْكَبِير
ব্যাখ্যা: (اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِىْ مِنَ الَّذِينَ إِذا أحْسَنُوْا) অর্থাৎ- ভাল বিদ্যা অর্জন করে ও ভাল ‘আমল করে।
(اِسْتَبْشَرُوْا) অর্থাৎ- ভাল বিদ্যা ও ভাল ‘আমলের তাওফীক পেয়ে তারা আনন্দিত হয়।
আল্লাহ বলেন, قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا
অর্থাৎ- ‘‘(হে নাবী!) বলুন, তারা যেন আল্লাহর রহমাতে তথা কুরআন ও তার অনুগ্রহের প্রতি আনন্দিত হয়।’’ (সূরা ইউনুস ১০ : ৫৮)
(وَإِذَا أَسَاؤُوْا) আর বিদ্যা ও ‘আমলে যখন ঘাটতি করে, অর্থাৎ- মন্দ বিদ্যা অর্জন ও মন্দ কাজ করে। (اِسْتَغْفَرُوْا) বাহ্যিকভাবে বিপরীতে যা বলা দরকার তা হল, (واذا اساؤا حزنوا) অর্থাৎ- যখন তারা মন্দ কর্ম করে চিন্তিত হয়। তা না বলে এ ধরনের বলার কারণ মূলত ঐ দিকে ইঙ্গিত করার জন্য যে, শুধুমাত্র চিন্তিত হওয়া কোন উপকারে আসে না। চিন্তা কেবল তখনই উপকারে আসে যখন পাপী ঐ পাপ হতে ক্ষমা প্রার্থনা করে যা গুনাহের উপর স্থায়ী হওয়াকে দূরীভূত করে। এভাবে মিরকাতে আছে।
ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, যখন তারা ভাল কাজ করে আনন্দিত হয়। অর্থাৎ- যখন তারা নিষ্ঠার সাথে কোন ভাল কাজ করে, অতঃপর সে কাজে তাকে বদলা দেয়া হয়, ফলে সে জান্নাত লাভ করে আনন্দিত হয়। যেমন আল্লাহ বলেন, وَأَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ অর্থাৎ- ঐ জান্নাতের ব্যাপারে তোমরা খুশি হও যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে’’- (সূরা ফুসসিলাত ৪১ : ৩০)। এটি ইঙ্গিতসূচক বাণী।
(وَإِذَا أَسَاؤُوْا اِسْتَغْفَرُوْا) অর্থাৎ- তাদেরকে ধীরে ধীরে পাকড়াওয়ের মাধ্যমে কষ্ট দিবেন না। পক্ষান্তরে যারা নিজেদের মন্দ কর্মকে ভাল মনে করে তারা এক সময় ধ্বংস হয়ে যায়। যেমন আল্লাহ বলেন, أَفَمَنْ زُيِّنَ لَهٗ سُوْءُ عَمَلِهٖ فَرَاٰهُ حَسَنًا فَإِنَّ اللّٰهَ يُضِلُّ مَنْ يَّشَآءُ অর্থাৎ- ‘‘যার কাছে তার মন্দ কর্মকে চাকচিক্য করে দেয়া হয়েছে, অতঃপর সে তা ভাল মনে করে তাহলে তার জানা উচিত আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন’’- (সূরা আর ফা-ত্বির ৩৫ : ৮)।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করতেন জাতিকে শিক্ষা দেয়ার্থে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করার আবশ্যকীয়তার দিকে দিক নির্দেশনা দেয়ার্থে। অন্যথায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল উত্তম ব্যক্তিদের অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্
২৩৫৮-[৩৬] হারিস ইবনু সুওয়াইদ (রহঃ) বলেন, ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) আমাকে দু’টো কথা বলেছেন- একটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে, আর অপরটি তাঁর নিজের পক্ষ থেকে। তিনি বলেছেন, মু’মিন নিজের গুনাহকে মনে করে সে যেন কোন পাহাড়ের নীচে বসে আছে, যা তার উপর ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করে। অপরদিকে গুনাহগার ব্যক্তি নিজের গুনাহকে দেখে একটি মাছির মতো, যা তার নাকের উপর বসল, আর তা সে হাত দিয়ে নাড়িয়ে তাড়িয়ে দিলো।
এরপর তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাঁর মু’মিন বান্দার তাওবায় সে লোকের চেয়ে বেশি আনন্দিত হন, যে লোক কোন ধ্বংসকারী মরুভূমিতে পৌঁছেছে, আর তার সাথে তার বাহন রয়েছে, যার উপর তার খাদ্য ও পানীয় রয়েছে। সেখানে সে জমিনে মাথা রাখল ও কিছুক্ষণ ঘুমাল। অতঃপর জেগে দেখল তার বাহন পালিয়ে গেছে। সে তা খুঁজতে শুরু করল। অবশেষে গরম ও তৃষ্ণা এবং অপরাপর দুঃখ-বেদনা যা আল্লাহর মর্জি তাকে দুর্বল করে ফেলল। তখন সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল, আমি যেখানে ছিলাম সেখানে গিয়ে (আমৃত্যু) শুয়ে থাকব। সুতরাং সে সেখানে গিয়ে নিজের বাহুর উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ল, যাতে সে মৃত্যুবরণ করে।
হঠাৎ এক সময় জেগে দেখে তার বাহন তার কাছে, বাহনের উপর তার খাদ্য-সামগ্রীও আছে। তখন সে তার বাহন ও খাদ্য-সামগ্রী ফেরত পাওয়ার আকস্মিকতায় যেরূপ খুশী হয়, আল্লাহ তাঁর মু’মিন বান্দার তাওবায় এর চেয়েও বেশি খুশী হয়। (ইমাম মুসলিম রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে শুধু মারফূ’ অংশ এবং ইমাম বুখারী ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) থেকে মাওকূফ ও মারফূ’ উভয় অংশ বর্ণনা করেছেন)[1]
وَعَن الْحَارِث بن سُويَدٍ قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ حَدِيثَيْنِ: أحدُهما عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْآخِرُ عَنْ نَفْسِهِ قَالَ: إِنَّ الْمُؤْمِنَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَأَنَّهُ قَاعِدٌ تَحْتَ جَبَلٍ يَخَافُ أَنْ يَقَعَ عَلَيْهِ وَإِنَّ الْفَاجِرَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَذُبَابٍ مَرَّ عَلَى أَنْفِهِ فَقَالَ بِهِ هَكَذَا أَيْ بِيَدِهِ فَذَبَّهُ عَنْهُ ثُمَّ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: لَلَّهُ أَفْرَحُ بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ الْمُؤْمِنِ مِنْ رَجُلٍ نَزَلَ فِي أَرْضٍ دَوِيَّةٍ مَهْلَكَةٍ مَعَهُ رَاحِلَتُهُ عَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَوَضَعَ رَأْسَهُ فَنَامَ نَوْمَةً فَاسْتَيْقَظَ وَقَدْ ذَهَبَتْ رَاحِلَتُهُ فَطَلَبَهَا حَتَّى إِذَا اشْتَدَّ عَلَيْهِ الْحَرُّ وَالْعَطَشُ أَوْ مَا شَاءَ اللَّهُ قَالَ: أَرْجِعُ إِلَى مَكَانِي الَّذِي كُنْتُ فِيهِ فَأَنَامُ حَتَّى أَمُوتَ فَوَضَعَ رَأْسَهُ عَلَى سَاعِدِهِ لِيَمُوتَ فَاسْتَيْقَظَ فَإِذَا رَاحِلَتُهُ عِنْدَهُ عَلَيْهَا زَادُهُ وَشَرَابُهُ فَاللَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ الْعَبْدِ الْمُؤْمِنِ مِنْ هَذَا بِرَاحِلَتِهِ وَزَادِهِ . رَوَى مُسْلِمٌ الْمَرْفُوع إِلَى رَسُول صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْهُ فَحَسْبُ وَرَوَى البُخَارِيّ الموقوفَ على ابنِ مَسْعُود أَيْضا
ব্যাখ্যা: (إِنَّ الْمُؤْمِنَ يَرٰى ذُنُوبَه) অর্থাৎ- মু’মিন ব্যক্তি তার গুনাহকে সে বড় ও ভারি মনে করে।
(كَأَنَّه قَاعِدٌ تَحْتَ جَبَلٍ يَخَافُ أَنْ يَقَعَ عَلَيْهِ) ‘‘যেন সে এমন এক পাহাড়ের নীচে যা তার উপর ভেঙ্গে পরার আশংকা করে’’। ইবনু আবী জামরাহ্ বলেন, ভয় করার কারণ হল, মু’মিন ব্যক্তির অন্তর আলোকিত। সুতরাং সে যখন তার নিজ থেকে এমন কিছু দেখতে পায় সে যার আশংকা করে যে আশংকার কারণে তার অন্তর আলোকিত হয় তখন সে বিষয়টি তার কাছে বড় মনে হয়। পাহাড়ের সাথে উপমা উপস্থাপনের ক্ষেত্রে হিকমাত হল, পাহাড় ছাড়া অন্যান্য ধ্বংসযজ্ঞ বিষয় থেকে কখনো মুক্তি লাভের উপায় অর্জন হয় কিন্তু পাহাড়ের ক্ষেত্রে তা হয় না। পাহাড় যখন কোন ব্যক্তির ওপর পতিত হয় তখন স্বভাবত ব্যক্তি তা থেকে মুক্তি পায় না। সারাংশ হল মু’মিন ব্যক্তি তার ঈমানী শক্তির কারণে তার ওপর ভয় প্রাধান্য পায়। ফলে শাস্তির আশংকা থেকে সে নিরাপদে থাকে না। আর এটি হল মু’মিন ব্যক্তির অবস্থা। সর্বদা সে ভীত থাকে ও সতর্ক দৃষ্টি রাখে। সে তার ভাল কর্মকে ছোট মনে করে এবং ছোট পাপ কর্মের কারণে ভয় করে। কারী বলেন, এটি এমন এক উপমা যার অবস্থাকে পাপের সাথে তুলনা করা হয়েছে। ব্যক্তি মনে করে যখন সে পাহাড়ের নিচে থাকবে তখন তার ধ্বংস আছে, পাহাড়ী ধ্বংসের ব্যাপারে সে ভয় করে। সুতরাং হাদীসটি ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, মু’মিন ব্যক্তি চূড়ান্ত ভয় এবং গুনাহ থেকে চূড়ান্ত সতর্কতার মাঝে অবস্থান করে।
(يَرٰى ذُنُوبَه كَذُبَابٍ) ইসমা‘ঈলী বর্ণনাতে আছে, (يرى ذنوبه كأنها ذباب)
(عَلَى انْفِه) অর্থাৎ- তার গুনাহ তার কাছে সহজ ব্যাপার, ফলে গুনাহের ব্যাপারে সে এ বিশ্বাসে পরোওয়া করে না যে, ঐ গুনাহের কারণে বড় ধরনের কোন ক্ষতি হতে পারে। যেমন মাছির ক্ষতি তার কাছে সহজ ব্যাপার।
(ثُمَّ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ) জামি‘উল উসূল এবং তারগীবে এভাবেই এসেছে। বুখারীতে ইবনু মাস্‘ঊদ-এর হাদীস মারফূ' হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু সংঘটিত হয়নি।
(اَللهُ أَفْرَحُ بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ) অর্থাৎ- বান্দা অবাধ্যতা থেকে আনুগত্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে আনন্দিত হন।
ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, পাপীর অবস্থার ধরনকে যখন চিন্তা করা হবে ঐ আংশিক ধরনের সাথে তখন তা ঐ দিকে ইঙ্গিত করবে যে, আশ্রয়স্থল হল তাওবাহ্ করা এবং আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা। অর্থাৎ- তখনই দু’ হাদীসে মারফূ ও মাওকুফ দু’ হাদীসের মাঝে সমন্বয় সাধন হবে। এটা বুখারীর শব্দ। মুসলিমে আছে, (لله اشد فرحا بتوبة عبده)।
(الْمُؤْمِنِ) এ শব্দটি মুসলিমের বৃদ্ধি, এটি বুখারীতে নেই। (نزل) এটা বুখারীর বৃদ্ধি, মুসলিমে নেই।
(فِى ارْضٍ دَوِيَّةٍ مَهْلَكَةٍ) অর্থাৎ- دوية তৃণলতামুক্ত মরুভূমি। ইবনুল আসীর বলেন, الدو অর্থ মরুভূমি। আর ياء সম্বন্ধ করার জন্য এসেছে।
(فَأَنَامُ حَتّٰى اَمُوْتَ) অর্থাৎ- অথবা যতক্ষণ পর্যন্ত আমার বাহন আমার কাছে ফিরে না আসে। আর জীবনের দিক অসম্ভব মনে করে এবং বাহন ফিরে আসা থেকে নিরাশ হয়ে ব্যক্তি যা উল্লেখ করেছে তা সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করেছে। الذى كنت فيه فأنام থেকে শুরু করে হাদীসের শেষ পর্যন্ত মুসলিমের শব্দ এবং قال ارجع إلى مكانى فرجع فنام نومه ثم رفع رأسه فإذا راحلته عنده এ অংশটুকু বুখারীর। আর তিরমিযীতে আছে,
قال ارجع إلى مكانى الذى اضللتها فيه فأموت فيه فرجع إلى مكانه فغلبته عينه فاستيقظ فاذا راحلته عند راسه، عليها طعامه و شرابه وما يصلحه.
অর্থাৎ- লোকটি বলল, আমি আমার ঐ স্থানে ফিরে যাব যেখানে আমি ঐ বাহনটিকে হারিয়েছি, অতঃপর সেখানে মৃত্যুবরণ করব। এরপর লোকটি তার ঐ স্থানে ফিরে গেলে তার চক্ষু তার ওপর বিজয় লাভ করল। এরপর ঘুম থেকে জেগে হঠাৎ তার কাছে তার বাহন উপস্থিত পেল যার উপর তার খাদ্য, পানি এবং যা তার কল্যাণে আসে এমন কিছু রয়েছে। আহমাদেও এভাবে এসেছে। আর হাদীসটিতে আল্লাহর এ বাণীর দিকে ইঙ্গিত আছে- إِنَّ اللّٰهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাহকারীদেরকে ভালবাসেন’’- (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ২২২)। আর নিশ্চয়ই তারা তাদের সম্মানিত, দয়াময়, করুণাশীল পালনকর্তার কাছে মহা স্থানে আছে।
সতর্কতাঃ মুসলিম বারা এর হাদীস থেকে এ হাদীসে মারফূ'- এর কারণস্বরূপ উল্লেখ করেছেন এবং তার হাদীসের শুরু হচ্ছে,
كيف تقولون فى رجل انفلتت عنه راحلته بأرض قفر ليس بها طعام ولا شراب وعليها له طعام وشراب فطلبها حتى شق عليه فذكر معناه.
অর্থাৎ- ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা কেমন বল? যাকে ছেড়ে তার বাহন তৃণলতাহীন ভূখণ্ডে পলায়ন করেছে। যেখানে কোন খাদ্য নেই, পানীয় বস্ত্ত নেই, এমতাবস্থায় সেই বাহনের উপর আছে তার খাদ্য, তার পানীয় বস্ত্ত। সুতরাং লোকটি তার বাহনের অনুসন্ধানে চলল। পরিশেষে লোকটির ওপর নিজ অবস্থা কঠিন আকার ধারণ করল, এরপর হাদীসটির বাকী অংশ অর্থগতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ইবনু হিব্বান এ হাদীসটিকে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে সংক্ষিপ্তভাবে সংকলন করেছেন। সাহাবীগণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে লোকটির আনন্দের কথা উল্লেখ করল, এমতাবস্থায় যে লোকটি তার হারানো বস্ত্ত খুঁজে পায়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (لله اشد فرحا) অবশ্যই আল্লাহ এর অপেক্ষাও বেশি আনন্দিত হন। (আল হাদীস) হাফেয একে ফাত্হ-এ উল্লেখ করেছেন।
(رَوٰى مُسْلِمٌ الْمَرْفُوْعَ) অর্থাৎ- হাদীসে মারফূ‘টি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
(وَرَوَى البُخَارِىُّ الْمَوْقُوْفَ عَلَى ابْنِ مَسْعُوْدٍ أَيْضًا) আর তা হল, ان المؤمن হাদীসটি শেষ পর্যন্ত।
সারাংশ নিশ্চয়ই মারফূ', হাদীসটি বুখারী, মুসলিমের ঐকমত্যে বর্ণিত হয়েছে। পক্ষান্তরে মাওকূফ হাদীসটি বুখারী এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্
২৩৫৯-[৩৭] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ওই মু’মিন বান্দাকে ভালবাসেন, যে গুনাহ করে তওবা্ করে।[1]
وَعَنْ عَلِيٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْعَبْدَ المؤمنَ المفتَّنَ التوَّابَ»
ব্যাখ্যা: (إِنَّ اللّٰهَ يُحِبُّ الْعَبْدَ الْمُؤْمِنَ الْمُفْتَّنَ التَّوَّابَ) অর্থাৎ- পাপে পরীক্ষিত ব্যক্তি।
(التَّوَّابَ) অর্থাৎ- অধিক তাওবাহকারী এবং আল্লাহ তাকে ভালবাসেন। আর তা কেবল তাওবার দৃষ্টিকোণ থেকে। নিহায়াহ্ গ্রন্থকার বলেন, ফিতনাতে পতিত পরীক্ষিত ব্যক্তিকে আল্লাহ গুনাহের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন, এরপর পাপী তাওবাহ্ করলে, আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করলে আল্লাহ তার তাওবাহ্ গ্রহণ করেন। মানাবী বলেন, এটা এ কারণে যে, তা আল্লাহর ইচ্ছা বাস্তবায়ন, তাঁর মহত্ত্বের প্রকাশ ও তাঁর রহমাতের প্রশস্ততার স্থান।
ইবনুল কইয়্যিম (রহঃ) বলেন, ফিতনায় পতিত অধিক তাওবাহকারী ঐ ব্যক্তি যে ব্যক্তি গুনাহের ফিতনাতে পতিত হওয়া মাত্রই তা থেকে তাওবাহ্ করে। কুরতুবী বলেন, এর অর্থ হল, যার থেকে বারংবার গুনাহ এবং তাওবাহ্ সংঘটিত হয়, যখনই সে গুনাহে পতিত হয় তখনই তাওবাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে। কারী বলেন, المفتن অর্থাৎ- পাপ, উদাসীনতা অথবা সার্বক্ষণিক আল্লাহর প্রতি অনুরাগী হওয়া থেকে ছিন্ন হওয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি অধিক হারে পরীক্ষিত হয়। এটা এ কারণে যে, যাতে সে অহংকার এবং প্রতারণার মাধ্যমে পরীক্ষিত না হয়। যা গুনাহসমূহের মাঝে সর্বাধিক গুনাহ এবং সর্বাধিক দোষ।
গুনাহে পুনরায় প্রত্যাবর্তন সংঘটিত হওয়া সত্ত্বেও তাওবাহ্ বিশুদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে হাদীসটি স্পষ্ট। যে ব্যক্তি তাওবাহ্ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য পূর্বোক্ত গুনাহের দিকে প্রত্যাবর্তন না করাকে শর্ত করেছে এবং বলেছে যদি ব্যক্তি পূর্বোক্ত গুনাহের দিকে ফিরে যায় তাহলে তার তাওবাহ্ বাতিল। এ হাদীসটিতে তাদের উক্ত শর্ত প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তাওবাহ্ বিশুদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে কি গুনাহের দিকে কখনো প্রত্যাবর্তন না করাকে শর্ত করা হবে? নাকি এটা কোন শর্ত না? অতঃপর বলেছেন, তাওবাহকারী যখন গুনাহের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে তখন স্পষ্ট হবে তার তাওবাহ্ বাতিল বিশুদ্ধ না। অধিকাংশগণ ঐ মতের উপরে যে, এটি কোন শর্ত না। তাওবার বিশুদ্ধতা কেবল গুনাহ থেকে সরে আসা, তার ব্যাপারে লজ্জিত হওয়া এবং বারংবার প্রত্যাবর্তন বর্জনের ব্যাপারে দৃঢ়তা প্রকাশ করার উপর নির্ভর করে। অতঃপর তাওবাহ্ যদি মানুষের অধিকারের ব্যাপারে হয় তাহলে কি সে অধিকারের ব্যাপারে দায়মুক্ত হতে হবে? এক্ষেত্রে বিশদ ব্যাখ্যা আছে। অচিরেই আল্লাহ চাহেতো তা উল্লেখ করব।
অতঃপর তাওবাহ্ করাবস্থায় পূর্বের গুনাহের দিকে প্রত্যাবর্তন না করার উপর দৃঢ়তা ব্যক্ত করা সত্ত্বেও যদি প্রত্যাবর্তন করে তাহলে সে ঠিক ঐ ব্যক্তির মতো যে নতুনভাবে অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়েছে এবং তার পূর্বোক্ত তাওবাহ্ বাতিল হবে না। আর মাস্আলাটি মৌলিকতার উপর নির্ভরশীল। আর তা হল, নিশ্চয়ই বান্দা যখন কোন গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করার পর ঐ গুনাহের দিকে আবারও প্রত্যাবর্তন করবে এমতাবস্থায় কি তার নিকট ঐ গুনাহের পাপ প্রত্যাবর্তন করবে যা থেকে সে তাওবাহ্ করেছিল? এরপর যদি সে ঐ গুনাহের দিকে প্রত্যাবর্তন করে তার উপর স্থির থেকে মারা যায় তাহলে কি সে প্রথম গুনাহ এবং পরবর্তী গুনাহের উপর উভয় গুনাহেরই শাস্তিযোগ্য হবে? নাকি পূর্বের গুনাহ পূর্ণাঙ্গভাবে বাতিল হয়ে যাবে । তাকে কেবল পরবর্তী গুনাহের শাস্তি দেয়া হবে? এ মৌলিকতার ক্ষেত্রে দু’টি উক্তি আছে। এরপর দু’টি উক্তিকে তিনি বিস্তারিতভাবে তার কিতাবের ১ম খণ্ডে ১৫২-১৫৬ পর্যন্ত বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। সুতরাং কেউ চাইলে তা অধ্যয়ন করতে পারে।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্
২৩৬০-[৩৮] সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ’’ইয়া- ’ইবা-দিয়াল্লাযীনা আসরফূ ’আলা- আনফুসিহিম, লা- তাকনাত্বূ ......’’ (অর্থাৎ- হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর অবিচার করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না’’- (সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩)। এ আয়াতের পরিবর্তে সারা দুনিয়া হাসিল হওয়াকেও আমি পছন্দ করি না। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, যে ব্যক্তি শির্ক করেছে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। অতঃপর তিনবার করে বললেন, যে ব্যক্তি শির্ক করেছে তার ব্যাপারেও।[1]
وَعَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَا أُحِبُّ أَنَّ لِي الدُّنْيَا بِهَذِهِ الْآيَةِ (يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرفُوا على أنْفُسِهم لَا تَقْنَطوا)
الْآيَةَ» فَقَالَ رَجُلٌ: فَمَنْ أَشْرَكَ؟ فَسَكَتَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ: «أَلا وَمن أشرَكَ» ثَلَاث مرَّاتٍ
ব্যাখ্যা: (مَا أُحِبُّ أَنَّ لِى الدُّنْيَا بِهٰذِهِ الْاٰيَةِ) ‘‘আমি পছন্দ করি না এ আয়াতের বিনিময়ে দুনিয়া আমার জন্য হাসিল হোক’’। অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘আলার বাণী- ‘‘হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর অবিচার করেছ তোমরা আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হয়ো না’’- (সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩) এ আয়াতের পরিবর্তে সমগ্র দুনিয়াতে যা কিছু আছে তা যদি আমার অর্জিত হয় আর আমি তা দান-খয়রাত করি অথবা তা আমি উপভোগ করি তবুও তা আমার নিকট পছন্দনীয় ও প্রিয় নয়। কেননা এ আয়াতে সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আর এজন্যই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষভাবে এ আয়াতের কথা উল্লেখ করেছেন। নতুবা কুরআনের সকল আয়াতই এ রকম, অর্থাৎ- তাঁর বিনিময়ে দুনিয়া নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়া যায় না।
ইমাম শাওকানী বলেনঃ কুরআন কারীমের এ আয়াতটি সর্বাধিক আশাপ্রদ আয়াত। কেননা এতে সর্বাধিক শুভসংবাদ রয়েছে। প্রথমত আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে তার নিজের দিকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ يَا عِبَادِىَ ‘‘হে আমার বান্দাগণ!’’ এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদেরকে মর্যাদাবান করেছেন। এরপর বলেছেন যে, যারা অধিক বাড়াবাড়ি করেছে এবং অধিক পরিমাণ গুনাহতে লিপ্ত হয়েছে তা সত্ত্বেও আল্লাহ তাদের তাঁর রহমাত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। অতএব যারা গুনাহ করেছে তবে বাড়াবাড়ি করেনি তাদের প্রতি নিরাশ না হওয়ার বাণী আরো অধিক কার্যকর।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সকল প্রকারের গুনাহ ক্ষমা করবেন’’- (সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩)। এতে বুঝা গেল যে, গুনাহের ধরন যাই হোক না কেন আল্লাহ তা ক্ষমা করেন। তবে আল্লাহর বাণীঃ ‘‘আল্লাহ তা‘আলা শির্ক গুনাহ ক্ষমা করেন না’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৪৮)। এ শির্ক গুনাহকারী ব্যক্তি যদি তাওবাহ্ করে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে ফিরে আসে তাহলে তিনি তাও ক্ষমা করেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ ‘‘নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু’’- (সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩)।
(فَقَالَ رَجُلٌ: فَمَنْ أَشْرَكَ؟) ‘‘এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, যে ব্যক্তি শির্ক করেছে তাকে কি ক্ষমা করা হবে?’’ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর বললেনঃ (أَلَا وَمَنْ أَشْرَكَ) ‘‘হ্যাঁ, যে শির্ক করেছে তাকেও তিনি ক্ষমা করবেন (যদি সে তাওবাহ্ করে)।
ইমাম ত্বীবী বলেনঃ শির্কে লিপ্ত ব্যক্তিও لَا تَقْنَطُوْا مِن رَّحْمَةِ اللّٰهِ ‘‘তোমরা আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হয়ো না’’- (সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩) এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্
২৩৬১-[৩৯] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা তার বান্দাকে ক্ষমা করে দেন, যতক্ষণ পর্যন্ত (আল্লাহ ও তার বান্দার মধ্যে) পর্দা না পড়ে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! পর্দা কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কোন ব্যক্তির মুশরিক হয়ে মৃত্যুবরণ করা।
উপরোক্ত তিনটি হাদীসই বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ, আর শেষ হাদীসটি ইমাম বায়হাক্বী বর্ণনা করেছেন ’’কিতাবিল বা’সি ওয়ান্ নুশূর’’-এ।[1]
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى لَيَغْفِرُ لِعَبْدِهِ مَا لَمْ يَقَعِ الْحِجَابُ» . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا الْحِجَابُ؟ قَالَ: «أَنْ تَمُوتَ النَّفْسُ وَهِيَ مُشْرِكَةٌ»
رَوَى الْأَحَادِيثَ الثَّلَاثَةَ أَحْمَدُ وَرَوَى الْبَيْهَقِيُّ الْأَخِيرَ فِي كِتَابِ الْبَعْثُ والنشور
ব্যাখ্যা: (مَا لَمْ يَقَعِ الْحِجَابُ) ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত পর্দা না পড়ে’’। অর্থাৎ- আল্লাহর রহমাত ও বান্দার মাঝে পর্দা না পড়ে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ ক্ষমা করতে থাকেন। পর্দা পড়ে গেলে আর ক্ষমা করেন না।
(وَمَا الْحِجَابُ؟) ‘‘পর্দা কি?’’ অর্থাৎ- আল্লাহর রহমাত ও বান্দার মাঝে কিভাবে পর্দা পতিত হয় যাতে তার গুনাহ ক্ষমা করা বন্ধ হয়ে যায়।
(قَالَ: أَنْ تَمُوتَ النَّفْسُ وَهِىَ مُشْرِكَةٌ) ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন ব্যক্তি যখন শির্কে লিপ্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে’’। অর্থাৎ- শির্ক গুনাহ করার পর তাওবাহ্ না করেই মারা যায় তখন তার মাঝে এবং আল্লাহর রহমাতের মাঝে পর্দা পড়ে যায়, ফলে আল্লাহ তা‘আলা তখন আর তার গুনাহ ক্ষমা করেন না। শির্কের অনুরূপ সকল প্রকার কুফরী গুনাহ, অর্থাৎ- বান্দা যদি কুফরীতে লিপ্ত হওয়ার পর তা থেকে তাওবাহ্ না করে মারা যায় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করবেন না।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্
২৩৬২-[৪০] উক্ত রাবী [আবূ যার (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কাউকেও আল্লাহর সমতুল্য মনে না করে মৃত্যুবরণ করবে, তার পাহাড় পরিমাণ গুনাহ থাকলেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন। (বায়হাক্বী ’’কিতাবিল বা’সি ওয়ান্ নুশূর’’-এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)[1]
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ لَقِيَ اللَّهَ لَا يَعْدِلُ بِهِ شَيْئًا فِي الدُّنْيَا ثُمَّ كَانَ عَلَيْهِ مِثْلَ جِبَالٍ ذُنُوبٌ غَفَرَ اللَّهُ لَهُ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي كتاب الْبَعْث والنشور
ব্যাখ্যা: (مَنْ لَقِىَ اللّٰهَ لَا يَعْدِلُ بِه شَيْئًا فِى الدُّنْيَا) ‘‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কোন কিছুকেই আল্লাহর সমতুল্য মনে না করে মৃত্যুবরণ করে’’। অর্থাৎ- দুনিয়াতে থাকাবস্থায় আল্লাহর সাথে শির্ক না করে মারা যায়। ঈমান আনা আর না আনা দুনিয়ার ব্যাপার। কেননা মৃত্যুর পরে বাস্তবতার সম্মুখীন হওয়ার পরে সকলেই আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, সে ঈমান কারো উপকারে আসবে না যদি সে দুনিয়াতে ঈমান না এনে থাকে।
(كَانَ عَلَيْهِ مِثْلَ جِبَالٍ ذُنُوبٌ غَفَرَ اللّٰهُ لَه) ‘‘তার ওপর পাহাড় পরিমাণ গুনাহ থাকলেও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন’’। অর্থাৎ- আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাঁর সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। যেমন- আল্লাহ বলেনঃ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَن يَّشَآءُ ‘‘শির্ক ব্যতীত অন্য গুনাহ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৪৮)।
ত্ববারানীতে বর্ণিত, নাহ্ওয়াস ইবনু সাম্‘আন (রাঃ) বর্ণিত হাদীসও অত্র হাদীসকে সমর্থন করে। তাতে আছে ‘‘যে ব্যক্তি শির্ক না করে মৃত্যুবরণ করবে তার জন্য আল্লাহর ক্ষমা বৈধ হয়ে যাবে’’।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্
২৩৬৩-[৪১] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গুনাহ হতে তওবাকারী ঐ ব্যক্তির মতো যার কোন গুনাহ নেই। (ইবনু মাজাহ।)
আর বায়হাক্বী শু’আবূল ঈমান-এ বলেন, নাহরানী এটা একাই বর্ণনা করেছেন, যদিও তিনি মাজহূল ব্যক্তি। আর শারহুস্ সুন্নাহ্’য় ইমাম বাগাবী এটাকে মাওকূফ [’আবদুল্লাহ-এর কথা] হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি [’আবদুল্লাহ] বলেছেন, ’’অনুশোচনাই হলো তওবা্, আর তওবাকারী হলো ঐ ব্যক্তির মতো যার কোন গুনাহ নেই’’।)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «التَّائِبَ مِنَ الذَّنْبِ كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ وَقَالَ تَفَرَّدَ بِهِ النَّهْرَانَيُّ وَهُوَ مَجْهُولٌ. وَفِي (شَرْحِ السُّنَّةِ)
رَوَى عَنْهُ مَوْقُوفًا قَالَ: النَّدَمُ تَوْبَةٌ والتَّائبُ كمن لَا ذَنْبَ لَهُ
ব্যাখ্যা: (اَلتَّائِبَ مِنَ الذَّنْبِ) অর্থাৎ- বিশুদ্ধ তাওবাহ্। আর গুনাহের ব্যাপকতার ব্যবহার সকল প্রকার গুনাহকে অন্তর্ভুক্ত করছে। সুতরাং হাদীসটি ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, তাওবাহ্ যে কোন গুনাহের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। আর হাদীসটির বাহ্যিকতা ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, তাওবাহ্ যখন তার সকল শর্তসহ বিশুদ্ধতা লাভ করবে তখন তা গৃহীত হবে।
(كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَه) অর্থাৎ- ক্ষতি সাধন না হওয়ার ক্ষেত্রে বেগুনাহ ব্যক্তির মতো। সিনদী বলেন, এর বাহ্যিক দিক হল গুনাহকে তওবাহকারীর ‘আমলনামা থেকে উঠিয়ে দেয়া হবে অথবা শাস্তি না হওয়ার ক্ষেত্রে গুনাহমুক্ত ব্যক্তির সাথে সাদৃশ্য। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ।
ইমাম ত্বীবী বলেন, এটা হল, আধিক্যতা স্বরূপ অপূর্ণাঙ্গকে পূর্ণাঙ্গের সাথে মিলিয়ে দেয়া অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। যেমন বলা হয়, যায়দ সিংহের মতো। কেননা কোন সন্দেহ নেই যে, তাওবাহকারী মুশরিক ব্যক্তি গুনাহমুক্ত নাবীর মতো না।
ইবনু হাজার আসকালানী এ কথার পেছনে ঐ কথা টেনেছেন যে, যার কোন গুনাহ নেই- এ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, যে ব্যক্তি গুনাহের সম্মুখীন হবে তবে গুনাহ থেকে তাকে সংরক্ষণ করা হবে। সুতরাং এ ধরনের তাশবীহ থেকে নাবী এবং মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) বের হয়ে গেছে, এ ধরনের তাশবীহ বা সাদৃশ্য দ্বারা তারা উদ্দেশ্য না।
কারী বলেন, সুতরাং মতানৈক্য শাব্দিক। যে ব্যক্তি গুনাহ করে তা থেকে তাওবাহ্ করবে এবং যে ব্যক্তি মূলত গুনাহ্ই করবে না এদের দু’জনের ক্ষেত্রে বিদ্বানগণ মতানৈক্য করেছেন যে, এদের দু’জনের মাঝে কে উত্তম? লাম্‘আত গ্রন্থকার বলেন, এর দৃষ্টিকোণ বিভিন্ন ধরনের।
ইবনুল কইয়্যিম মাদারিজুস্ সালিক্বীনের ১ম খণ্ডে ১৬৩ পৃষ্ঠাতে বলেন, অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়নি এমন আনুগত্যশীল ব্যক্তি কি ঐ অবাধ্য ব্যক্তি হতে উত্তম, যে আল্লাহর কাছে প্রকৃত তাওবাহ্ করেছে? মোটকথা এ তাওবাহকারী কি এ অবাধ্যতায় লিপ্ত না হওয়া ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম? এ ব্যাপারে মতানৈক্য করা হয়েছে। অতঃপর একদল অবাধ্যতায় লিপ্ত না হওয়া ব্যক্তিকে অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে বিশুদ্ধ তাওবাহকারী ব্যক্তির ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে তারা দলীল দিয়েছেন এরপর তা উল্লেখ করেছেন যার সীমা দশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এরপর ইবনুল কইয়্যিম বলেন, একদল তাওবাহকারীকে প্রাধান্য দিয়েছেন যদিও এ দল প্রথম ব্যক্তির অধিক পুণ্যের অধিকারী হওয়াকে অস্বীকার করেনি। তারাও এ ব্যাপারে বিভিন্ন প্রমাণ স্বরূপ তা উল্লেখ করেছেন যার পরিমাণও দশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। আলোচনা দীর্ঘ হয়ে যাবে বিধায় সে আলোচনা এখানে ছেড়ে দেয়া হল। মাস্আলাটি অতি সূক্ষ্ম ও মহৎ মাস্আলাহ্। সুতরাং ব্যক্তির উপর আবশ্যক মাদারিজ গ্রন্থটি অধ্যয়ন করা যাতে এ ব্যাপারে তার নিকটে অন্য একটি মাস্আলাহ্ স্পষ্ট হয়ে যায়। সে ব্যাপারেও মতানৈক্যকারীরা মতানৈক্য করেছেন। আর তা হল বান্দা যখন গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করবে তখন সে কি ঐ মর্যাদার দিকে প্রত্যাবর্তন করবে গুনাহের পূর্বে যে মর্যাদার উপর ছিল, যে মর্যাদা থেকে তার গুনাহ তাকে নামিয়ে দিয়েছে? নাকি প্রত্যাবর্তন করবে না?
ইবনুল কইয়্যিম মাদারিজুস্ সালিক্বীনে ১ম খণ্ড- ১৬১ পৃষ্ঠাতে বলেন, একদল বলেন, সে তার পূর্ব মর্যাদায় ফিরে যাবে। কেননা তাওবাহ্ তার গুনাহকে পূর্ণাঙ্গভাবে বাতিল করে দিবে এবং গুনাহকে এমন করে দিবে যেন গুনাহ ছিল না। মর্যাদার কারণে ব্যক্তির পূর্বের ঈমান ও সৎ ‘আমলকে দাবী করা হবে। সুতরাং ব্যক্তি তাওবার কারণে পূর্বের মর্যাদায় ফিরে আসবে। তারা বলেন, কেননা তাওবাহ্ একটি মহা পুণ্য এবং সৎ ‘আমল। সুতরাং ব্যক্তির গুনাহ যখন ব্যক্তিকে তার মর্যাদা থেকে নামিয়ে দিয়েছিল এখন তাওবার কারণে তার পুণ্য তাকে সে মর্যাদায় আরোহণ করাবে। আর এটা ঐ ব্যক্তির মতো যে ব্যক্তি কোন কূপে পতিত হল, এমতাবস্থায় তার একজন দয়ালু সাথী আছে সে তার কাছে একটি রশি ফেলল, ফলে কূপে পতিত ব্যক্তি সে রশি ধরে তার স্বস্থানে উঠে আসলো। এভাবে তাওবাহ্ হল সৎ ‘আমল যা এ সৎসাথী এবং দয়ালু ভাইয়ের মতো। একদল বলেন, সে তার পূর্বের অবস্থা ও মর্যাদায় ফিরে যেতে পারবে না, কেননা সে গুনাহতে থেমে ছিল না, সে গুনাহতে আরোহণ করছিল। সুতরাং গুনাহের কারণে সে নিম্নের দিকে যাবে।
অতঃপর বান্দা যখন তাওবাহ্ করবে তখন ঐ গুনাহের পরিমাণ কমে যাবে, যা তাকে উন্নতির দিকে আরোহণে প্রস্ত্তত করবে। তারা বলেন, এর উদাহারণ হল একটি পথে একই ভ্রমণে ভ্রমণকারী দু’ব্যক্তির ন্যায় যাদের একজনের সামনে এমন কিছু জিনিস উপস্থিত হল যা তাকে পেছনের দিকে ফিরিয়ে দিল অথবা তাকে থামিয়ে দিল এমতাবস্থায় তার সাথী অবিরাম চলছেই। অতঃপর যখন এ ব্যক্তি তার সাথীর প্রত্যাবর্তন ও বিরতি কামনা করল এবং তার সাথীর পেছনে চলল, কিন্তু কোন মতেই তার সাথীকে পেল না। কেননা যখনই সে একধাপ ভ্রমণ করে তখন তার সাথী আরো একধাপ এগিয়ে যায়। তারা বলেন, প্রথম ব্যক্তি সে তার ‘আমলসমূহ এবং ঈমানের শক্তিতে ভ্রমণ করে। যখন সে বেশি ভ্রমণ করে তখন তার শক্তিও বৃদ্ধি হয় এবং ঐ থামা ব্যক্তি যে ভ্রমণ থেকে বিরত ছিল তার থেমে থাকার কারণে তার ভ্রমণ ও ঈমানের শক্তি দুর্বল হয়ে যায়।
(تَوْبَةٌ) এর অর্থ হল, নিশ্চয়ই লজ্জিত হওয়া তাওবার একটি বড় অংশ এবং তাতে স্বভাবত তাওবার অবশিষ্ট অংশগুলোকে আবশ্যককারী। কেননা লজ্জিত ব্যক্তি স্বভাবত বর্তমানকালে গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে ভবিষ্যতে ঐ গুনাহতে প্রত্যাবর্তন না করার ব্যাপারে দৃঢ়তা ব্যক্ত করে আর এ অনুসারে তাওবাহ্ পূর্ণতা লাভ করে। তবে ঐ ফরযসমূহের ক্ষেত্রে ছাড়া যা পূরণ করা আবশ্যক। তখন ফরযসমূহের ক্ষেত্রে তাওবাহ্ ফরযসমূহ আদায় করার মুখাপেক্ষী হবে। অন্যথায় বান্দার অধিকারসমূহের ক্ষেত্রে তাওবাহকারী বান্দার অধিকারসমূহ ফেরত দেয়ার এবং লজ্জিত হওয়ার মুখাপেক্ষী হবে। এ উক্তিটি সিনদী করেছেন।
কারী বলেন, (النَّدَمُ تَوْبَةٌ) অর্থাৎ- তাওবার সর্বাধিক বড় রুকন হল লজ্জিত হওয়া। কেননা পাপ কাজ বর্জন করা এবং তার দিকে পুনরায় প্রত্যাবর্তন না করার ব্যাপারে দৃঢ়তা ব্যক্ত করার মাধ্যমে তাওবার অবশিষ্ট রুকনগুলোকে এর উপর ধার্য করা হয়। আর সম্ভব অনুযায়ী বান্দার অধিকারসমূহের ক্ষতিপূরণ দেয়া, ঠিক ঐ রুকন যেমন হাজ্জের রুকনসমূহের ক্ষেত্রে ‘আরাফায় অবস্থান করা তবে তা পূর্ণাঙ্গভাবে বিপরীত। আর অবাধ্য কাজের ব্যাপারে লজ্জিত হওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হল সেটি অবাধ্য কাজ, এ দৃষ্টিকোণ থেকে লজ্জিত হওয়া অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে না।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, বিদ্বানগণ তাওবার সংজ্ঞার ক্ষেত্রে মতানৈক্য করেছেন। অতঃপর তাদের কেউ বলেছেন, নিশ্চয়ই তা হল লজ্জিত হওয়া। কেউ বলেন, নিশ্চয়ই তা হল পুনরায় অবাধ্যতায় জড়িত না হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়তা ব্যক্ত করা। কেউ বলেন, তা হল গুনাহ থেকে সরে আসা। তাদের কেউ আবার তাওবাকে তিনটি বিষয়ের মাঝে একত্র করেন আর তা হল তাওবার মাঝে পূর্ণাঙ্গ তাওবাহ্। হাফেয এবং অন্য কেউ বলেন, তাওবার ক্ষেত্রে যথেষ্ট হবে গুনাহ সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে ব্যক্তি লজ্জিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া কেননা লজ্জা গুনাহ থেকে সরে আসা এবং পুনরায় সে গুনাহতে লিপ্ত না হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়তা ব্যক্তকে আবশ্যক করে- এ বিষয় দু’টি লজ্জা থেকেই সৃষ্টি হয়। এ দু’টি লজ্জার সাথে কোন মৌলিক বিষয় না। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই হাদীসে এসেছে, (النَّدَمُ تَوْبَةٌ) আর এটি ইবনু মাস্‘ঊদ-এর হাদীস কর্তৃক একটি হাসান হাদীস।
(والتَّائبُ كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَه) অর্থাৎ- বান্দা যখন বিশুদ্ধ তাওবাহ্ করবে তখন সে গুনাহ থেকে ঐ দিনের ন্যায় বের হয়ে যায় যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল। ইমাম হাকিম তার কিতাবের ৪র্থ খণ্ডে ২৪৩ পৃষ্ঠাতে সংক্ষিপ্তভাবে একে সংকলন করেছেন, অর্থাৎ- (والتَّائبُ كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَه) এ অংশটুকু ছাড়া।