২৩৪৪

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৪৪-[২২] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শয়তান (আল্লাহ তা’আলার কাছে) বলল, হে মহান প্রতিপালক, তোমার ইজ্জতের কসম! আমি তোমার বান্দাদেরকে প্রতিনিয়ত গুমরাহ করতে থাকব, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দেহে রূহ থাকবে। তখন আল্লাহ তা’আলা বললেন, আমার ইজ্জত, আমার মর্যাদা ও আমার সুউচ্চ অবস্থানের কসম! আমার বান্দা আমার কাছে যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে থাকবে, আমি সর্বদা তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকব। (আহমদ)[1]

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ الشَّيْطَانَ قَالَ: وَعِزَّتِكَ يَا رَبِّ لَا أَبْرَحُ أُغْوِي عِبَادَكَ مَا دَامَتْ أَرْوَاحُهُمْ فِي أَجْسَادِهِمْ فَقَالَ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ: وَعِزَّتِي وَجَلَالِي وَارْتِفَاعِ مَكَانِي لَا أَزَالُ أَغْفِرُ لَهُمْ مَا اسْتَغْفَرُونِي رَوَاهُ أَحْمَدُ

ব্যাখ্যা: (إِنَّ الشَّيْطَانَ قَالَ: وَعِزَّتِكَ يَا رَبِّ) অর্থাৎ- আপনার শক্তি, ক্ষমতার শপথ। আমি আপনার এমন ক্ষমতার শপথ করছি যার আশা করা যায় না।

আহমাদ-এর অপর বর্ণনাতে আছে, নিশ্চয়ই ইবলীস তার পালনকর্তাকে বলল, তোমার ইজ্জত এবং তোমার জালাল তথা মর্যাদার শপথ।

‘আল্লামা কারী বলেন, এতে ইঙ্গিত আছে ঐ দিকে যে, ইবলীস পথভ্রষ্টতার প্রধান এবং সম্মান প্রকাশকারী, যেমনিভাবে আমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনোযোগ ও সৌন্দর্য প্রকাশকারী পথপ্রদর্শন ও পূর্ণতার নেতা। (عبادك) আহমাদের এক বর্ণনাতে আছে, (بنى ادم) অর্থাৎ- আদম সন্তান, সর্বদাই আমি আদম সন্তানদের পথভ্রষ্ট করতে থাকব তবে তাদের থেকে যারা নিষ্ঠাবান তারা ছাড়া। বর্ণনাটি ব্যাপকতারও সম্ভাবনা রাখে।

(فَقَالَ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ: وَعِزَّتِىْ وَجَلَالِىْ) কারী বলেন, সম্ভবত পারস্পরিক সাদৃশ্যতার জন্য উভয় শব্দকে উল্লেখ করেছেন অন্যথায় বৈপরীত্যের দাবী হল, رحمتى এবং جمالى বলা। (وارتفاع مكانى) আবূ সা‘ঈদ-এর মুসনাদে ইমাম আহমাদে এ শব্দ পাইনি। জাযারী একে ‘হিসন’ গ্রন্থে মুনযিরী একে ‘তারগীব’ গ্রন্থে ‘আলী আল মুত্তাক্বী ‘কানয’ গ্রন্থে উল্লেখ করেননি। তবে এটি ইমাম বাগাবীর ‘শারহুস্ সুন্নাহ’ গ্রন্থে আছে। আর এ অতিরিক্ত অংশটুকু মুনকার হাদীস।

(أَغْفِرُ لَهُمْ مَا اسْتَغْفَرُونِىْ) অর্থাৎ- স্বেচ্ছাধীন সময়ে ক্ষমা অনুসন্ধানের মুহূর্তে। হাদীসটিতে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে যে, শয়তানের পথভ্রষ্টতা, পাপকর্মকে চাকচিক্য করার কারণে যে সকল গুনাহ সংঘটিত হয় ক্ষমা প্রার্থনা তা প্রতিহত করতে পারে। আর ক্ষমা প্রার্থনা যতক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকবে ক্ষমা প্রদর্শনও ততক্ষণ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, কেউ যদি বলে এ হাদীস এবং আল্লাহর বাণী (অর্থাৎ- ‘‘অবশ্যই আমি তাদের সকলকে পথভ্রষ্ট করব তবে তাদের থেকে তোমার নিষ্ঠাবান বান্দারা ছাড়া তিনি বলেন, তবে এটাই সত্য, আর আমি সত্যই বলি। অব্যশই আমি তোমাকে দিয়ে এবং তাদের থেকে যারা তোমার অনুসরণ করবে তাদের সকলকে দিয়ে জাহান্নাম পূর্ণ করব’’- সূরা সোয়াদ ৩৮ : ৮৫) এ উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য কিভাবে? উত্তরে বলা হবে, নিশ্চয়ই আয়াতটি এ কথার উপর প্রমণ বহন করছে যে, নিষ্ঠাবানরাই কেবল মুক্তি পাবে, পক্ষান্তরে হাদীসটি ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, যারা নিষ্ঠাবান না তারাও মুক্তি পাবে।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেনঃ আমি বলব, আল্লাহ (ممن تبعك) এ বাণীর গন্ডিবদ্ধতা ঐ সমস্ত ব্যক্তিদেরকে আজমা‘ঈন এর আওতাভুক্ত হওয়া থেকে বের করে দিয়েছে যারা পাপ করার পর ক্ষমা প্রার্থনা করে। কেননা আয়াতে تبعك এর অর্থ হল যারা শয়তানের অনুসরণ করার পর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে না বরং অবিরাম শয়তানের অনুসরণ করতে থাকে।