পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا
অর্থাৎ, হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং ধৈর্য ধারণে প্রতিযোগিতা কর। (সূরা আলে ইমরান ২০০)
তিনি আরও বলেন,
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْـخَوْفِ وَالْـجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা এবং কিছু ধনপ্রাণ এবং ফলের (ফসলের) নোকসান দ্বারা পরীক্ষা করব; আর তুমি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দাও। (সূরা বাকারাহ ১৫৫)
তিনি আরও বলেন,
إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
অর্থাৎ, ধৈর্যশীলদেরকে তো অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে। (সূরা যুমার ১০)
তিনি অন্যত্র বলেন,
وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذٰلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُوْرِ
অর্থাৎ, অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ। (সূরা শুরা ৪৩)
اِسْتَعِيْنُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
অর্থাৎ, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন। (সূরা বাকারাহ ১৫৩)
তিনি আরো বলেন,
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتّٰـى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِيْنَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِيْنَ
অর্থাৎ, আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব যতক্ষণ না আমি তোমাদের মধ্যে মুজাহিদ ও ধৈর্যশীলদেরকে জেনে নিই এবং আমি তোমাদের অবস্থা পরীক্ষা করি। (সূরা মুহাম্মাদ ৩১)
যে আয়াতসমূহে ধৈর্যের আদেশ এবং তার মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে তার সংখ্যা অনেক ও প্রসিদ্ধ।
(৩৫১৪) আবূ মালিক হারেস ইবনে আ’সেম আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পবিত্রতা অর্ধেক ঈমান। আর ’আলহামদু লিল্লাহ’ (কিয়ামতে নেকীর) দাঁড়িপাল্লাকে ভরে দেবে এবং ’সুবহানাল্লাহ’ ও ’আলহামদু লিল্লাহ’ আসমান ও যমীনের মধ্যস্থিত শূন্যতা পূর্ণ ক’রে দেয়। নামায হচ্ছে জ্যোতি। সাদকাহ হচ্ছে প্রমাণ। ধৈর্য হল আলো। আর কুরআন তোমার স্বপক্ষে অথবা বিপক্ষে দলীল। প্রত্যেক ব্যক্তি সকাল সকাল স্বকর্মে বের হয় এবং তার আত্মার ব্যবসা করে। অতঃপর সে তাকে (শাস্তি থেকে) মুক্ত করে অথবা তাকে (আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে) বিনাশ করে।
وَعَنْ أَبِي مَالِكٍ الحَارِثِ بنِ عَاصِمٍ الأشعريِّ قَالَ : قَالَ رسولُ الله ﷺالطُّهُورُ شَطْرُ الإِيمان والحَمدُ لله تَمْلأُ الميزَانَ وَسُبْحَانَ الله والحَمدُ لله تَملآن أَوْ تَمْلأُ - مَا بَينَ السَّماوَاتِ وَالأَرْضِ، والصَّلاةُ نُورٌ والصَّدقةُ بُرهَانٌ والصَّبْرُ ضِياءٌ والقُرْآنُ حُجةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَائعٌ نَفسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُها رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
(৩৫১৫) আবূ সাঈদ সা’দ ইবনে মালিক ইবনে সিনান খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে কিছু আনসারী আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কিছু চাইলেন। তিনি তাদেরকে দিলেন। পুনরায় তারা দাবী করল। ফলে তিনি (আবার) তাদেরকে দিলেন। এমনকি যা কিছু তাঁর কাছে ছিল তা সব নিঃশেষ হয়ে গেল। অতঃপর যখন তিনি সমস্ত জিনিস নিজ হাতে দান করে দিলেন, তখন তিনি বললেন, আমার কাছে যা কিছু (মাল) আসে তা আমি তোমাদেরকে না দিয়ে কখনই জমা ক’রে রাখব না। (কিন্তু তোমরা একটি কথা মনে রাখবে,) যে ব্যক্তি চাওয়া থেকে পবিত্র থাকার চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখবেন। আর যে ব্যক্তি (চাওয়া থেকে) অমুখাপেক্ষিতা অবলম্বন করবে, আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী করবেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করার চেষ্টা করবে আল্লাহ, তাকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা প্রদান করবেন। আর কোন ব্যক্তিকে এমন কোন দান দেওয়া হয়নি, যা ধৈর্য অপেক্ষা উত্তম ও বিস্তর হতে পারে।
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ سَعدِ بنِ مَالِكِ بنِ سِنَانٍ الخُدرِي رَضِيَ الله عَنهُمَا : أَنَّ نَاساً مِنَ الأَنْصَارِ سَألُوا رسولَ الله ﷺ فَأعْطَاهُمْ ثُمَّ سَألوهُ فَأعْطَاهُمْ حَتّٰـى نَفِدَ مَا عِندَهُ فَقَالَ لَهُمْ حِينَ أنْفْقَ كُلَّ شَيءٍ بِيَدِهِ مَا يَكُنْ عِنْدي مِنْ خَيْرٍ فَلَنْ أدَّخِرَهُ عَنْكُمْ وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفهُ اللهُ وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللهُ وَمَنْ يَتَصَبَّرْ يُصَبِّرْهُ اللهُ وَمَا أُعْطِيَ أَحَدٌ عَطَاءً خَيْراً وَأوْسَعَ مِنَ الصَّبْر مُتَّفَقٌ عليه
পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
(৩৫১৬) আবূ ইয়াহয়া সুহাইব ইবনে সিনান (রাঃ) হতে বর্ণিত আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ’’মুমিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক। তার প্রতিটি কাজে তার জন্য মঙ্গল রয়েছে। এটা মু’মিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য নয়। সুতরাং তার সুখ এলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ফলে এটা তার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর দুঃখ পৌঁছলে সে ধৈর্য ধারণ করে। ফলে এটাও তার জন্য মঙ্গলময় হয়।’’ (মুসলিম ৭৬৯২)
وَعَنْ أَبِي يَحيَى صُهَيبِ بنِ سِنَانٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ الله ﷺعَجَباً لأََمْرِ المُؤمنِ إنَّ أمْرَهُ كُلَّهُ لَهُ خيرٌ ولَيسَ ذلِكَ لأَحَدٍ إلاَّ لِلْمُؤْمِن : إنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكانَ خَيراً لَهُ وإنْ أصَابَتْهُ ضرَاءُ صَبَرَ فَكانَ خَيْراً لَـهُ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
(৩৫১৭) কা’ব বিন মালিক (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মু’মিনের উদাহরণ হল নরম ফসলের মত, বাতাস তা হিলাতে-দুলাতে থাকে। মু’মিন বিপদগ্রস্ত হয় (আবার উঠে দাঁড়ায়)। পক্ষান্তরে (কাফের) মুনাফিকের উদাহরণ হল ’আরযা’ (বিশাল সীডার) গাছের মত। তা বাতাসে হিলে না। কিন্তু (ঝড়ে) ভেঙ্গে ধ্বংস হয়ে যায়।
عَنْكَعْبٍ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَثَلُ الْمُؤْمِنِ كَمَثَلِ الْخَامَةِ مِنَ الزَّرْعِ تُفِيئُهَا الرِّيَاحُ تَصْرَعُهَا مَرَّةً وَتَعْدِلُهَا حَتّٰـى يَأْتِيَهُ أَجَلُهُ وَمَثَلُ الْمُنَافِقِ مَثَلُ الأَرْزَةِ الْمُجْذِيَةِ الَّتِى لاَ يُصِيبُهَا شَىْءٌ حَتّٰـى يَكُونَ انْجِعَافُهَا مَرَّةً وَاحِدَةً
পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
(৩৫১৮) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশী অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং তাকে কষ্ট ঘিরে ফেলল, তখন (তাঁর কন্যা) ফাতিমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বললেন, ’হায়! আববাজানের কষ্ট!’ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা শুনে বললেন, ’’আজকের দিনের পর তোমার পিতার কোন কষ্ট হবে না।’’ অতঃপর যখন তিনি দেহত্যাগ করলেন, তখন ফাতিমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বললেন, ’হায় আববাজান! প্রভু যখন তাঁকে আহবান করলেন, তখন তিনি তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন। হায় আববাজান! জান্নাতুল ফিরদাউস তাঁর বাসস্থান। হায় আববাজান! আমরা জিবরীলকে আপনার মৃত্যু-সংবাদ দেব।’ অতঃপর যখন তাঁকে সমাধিস্থ করা হল, তখন ফাতিমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) (সাহাবাদেরকে) বললেন, ’আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর মাটি ফেলতে কি তোমাদেরকে ভাল লাগল?’
وعن أنَسٍ قَالَ : لَمَّا ثَقُلَ النَّبيُّ ﷺ جَعلَ يَتَغَشَّاهُ الكَرْبُ فَقَالَتْ فَاطِمَةُ رَضِيَ الله عَنهَا : وَاكَربَ أَبَتَاهُ فقَالَ لَيْسَ عَلَى أَبيكِ كَرْبٌ بَعْدَ اليَوْمِ فَلَمَّا مَاتَ قَالَتْ : يَا أَبَتَاهُ أَجَابَ رَبّاً دَعَاهُ يَا أَبتَاهُ جَنَّةُ الفِردَوسِ مَأْوَاهُ يَا أَبَتَاهُ إِلَى جبْريلَ نَنْعَاهُ فَلَمَّا دُفِنَ قَالَتْ فَاطِمَةُ رَضي الله عنها : أَطَابَتْ أنْفُسُكُمْ أنْ تَحْثُوا عَلَى رَسُول الله ﷺ التُّرَابَ رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
(৩৫১৯) আবূ যায়েদ উসামাহ ইবনে যাইদ ইবনে হারেসাহ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্বাধীনকৃত দাস এবং তাঁর প্রিয়পাত্র তথা প্রিয়পাত্রের পুত্র (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা তাঁর নিকট সংবাদ পাঠালেন যে, ’আমার ছেলের মর মর অবস্থা, তাই আপনি আমাদের এখানে আসুন।’ তিনি সালাম দিয়ে সংবাদ পাঠালেন যে, ’’আল্লাহ তাআলা যা নিয়েছেন, তা তাঁরই এবং যা দিয়েছেন তাও তাঁরই। আর তাঁর কাছে প্রতিটি জিনিসের এক নির্দিষ্ট সময় আছে। অতএব সে যেন ধৈর্য ধারণ করে এবং সওয়াবের আশা রাখে।’’ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা পুনরায় কসম দিয়ে বলে পাঠালেন যে, তিনি যেন অবশ্যই আসেন।
ফলে তিনি সা’দ ইবনে উবাদাহ, মুআয ইবনে জাবাল, উবাই ইবনে কা’ব, যাইদ ইবনে সাবেত (রাঃ) এবং আরো কিছু লোকের সঙ্গে সেখানে গেলেন। শিশুটিকে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তুলে দেওয়া হল। তিনি তাকে নিজ কোলে বসালেন। সে সময় তার প্রাণ ধুক্ধুক্ করছিল। (তার এই অবস্থা দেখে) তাঁর চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল। সা’দ (রাঃ) বললেন, ’হে আল্লাহর রসূল! একি?’ তিনি বললেন, এ হচ্ছে দয়া, যা আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের অন্তরে রেখে দিয়েছেন। অন্য একটি বর্ণনায় আছে, যে সব বান্দার অন্তরে তিনি চান তাদের অন্তরে রেখে দিয়েছেন। আর আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে কেবল মাত্র দয়ালুদের প্রতিই দয়া করেন।
وعَنْ أَبِي زَيدٍ أُسَامَةَ بنِ زيدِ بنِ حارثةَ مَوْلَى رسولِ الله ﷺ وحِبِّه وابنِ حبِّه رَضِيَ اللهُ عنهما قَالَ: أرْسَلَتْ بنْتُ النَّبيِّ ﷺ إنَّ ابْني قَد احْتُضِرَ فَاشْهَدنَا فَأَرْسَلَ يُقْرئُ السَّلامَ ويقُولُ إنَّ للهِ مَا أخَذَ وَلَهُ مَا أعطَى وَكُلُّ شَيءٍ عِندَهُ بِأجَلٍ مُسَمًّى فَلتَصْبِرْ وَلْتَحْتَسِبْ فَأَرسَلَتْ إِلَيْهِ تُقْسِمُ عَلَيهِ لَيَأتِينَّهَا فَقَامَ وَمَعَهُ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ وَمُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ وَأُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ وَزَيْدُ بْنُ ثَابتٍ، وَرِجَالٌ، فَرُفعَ إِلَى رَسُولِ الله ﷺ الصَّبيُّ فَأقْعَدَهُ في حِجْرِهِ وَنَفْسُهُ تَقَعْقَعُ فَفَاضَتْ عَينَاهُ فَقالَ سَعدٌ : يَا رسولَ الله مَا هَذَا ؟ فَقالَ هذِهِ رَحمَةٌ جَعَلَها اللهُ تَعَالٰـى في قُلُوبِ عِبَادِهِ وفي رواية فِي قُلُوبِ مَنْ شَاءَ مِنْ عِبَادِهِ وَإِنَّما يَرْحَمُ اللهُ مِنْ عِبادِهِ الرُّحَماءَ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
(৩৫২০) সুহাইব (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’তোমাদের পূর্ব যুগে একজন বাদশাহ ছিল এবং তাঁর (উপদেষ্টা) এক যাদুকর ছিল। যাদুকর বার্ধক্যে উপনীত হলে বাদশাহকে বলল যে, ’আমি বৃদ্ধ হয়ে গেলাম তাই আপনি আমার নিকট একটি বালক পাঠিয়ে দিন, যাতে আমি তাকে যাদু-বিদ্যা শিক্ষা দিতে পারি।’ ফলে বাদশাহ তার কাছে একটি বালক পাঠাতে আরম্ভ করল, যাকে সে যাদু শিক্ষা দিত। তার যাতায়াত পথে এক পাদরী বাস করত। যখনই বালকটি যাদুকরের কাছে যেত, তখনই পাদরীর নিকটে কিছুক্ষণের জন্য বসত, তাঁর কথা শুনে তাকে ভাল লাগত। সুতরাং যখনই সে যাদুকরের নিকট যেত, তখনই যাওয়ার সময় সে তাঁর কাছে বসত। যখন সে পাদরীর কাছে আসত, যাদুকর তাকে (তার বিলম্বের কারণে) মারত। ফলে সে পাদরীর নিকটে এর অভিযোগ করল। পাদরী বলল, ’যখন তোমার ভয় হবে যে, যাদুকর তোমাকে মারধর করবে, তখন তুমি বলবে, আমার বাড়ির লোক আমাকে (কোন কাজে) আটকে দিয়েছিল। আর যখন বাড়ির লোকে মারবে বলে আশঙ্কা হবে, তখন তুমি বলবে যে, যাদুকর আমাকে (কোন কাজে) আটকে দিয়েছিল।’
সুতরাং সে এভাবেই দিনপাত করতে থাকল। একদিন বালকটি তার চলার পথে একটি বিরাট (হিংস্র) জন্তুদেখতে পেল। ঐ (জন্তু)টি লোকের পথ অবরোধ ক’রে রেখেছিল। বালকটি (মনে মনে) বলল, ’আজ আমি জানতে পারব যে, যাদুকর শ্রেষ্ঠ না পাদরী?’ অতঃপর সে একটি পাথর নিয়ে বলল, ’হে আল্লাহ! যদি পাদরীর বিষয়টি তোমার নিকটে যাদুকরের বিষয় থেকে পছন্দনীয় হয়, তাহলে তুমি এই পাথর দ্বারা এই জন্তুটিকে মেরে ফেল। যাতে (রাস্তা নিরাপদ হয়) এবং লোকেরা চলাফিরা করতে পারে।’ (এই দু’আ করে) সে জন্তুটাকে পাথর ছুঁড়ল এবং তাকে হত্যা ক’রে দিল। এর পর লোকেরা চলাফিরা করতে লাগল। বালকটি পাদরীর নিকটে এসে ঘটনাটি বর্ণনা করল। পাদরী তাকে বলল, ’বৎস! তুমি আজ আমার চেয়ে উত্তম। তোমার (ঈমান ও একীনের) ব্যাপার দেখে আমি অনুভব করছি যে, শীঘ্রই তোমাকে পরীক্ষায় ফেলা হবে। সুতরাং যখন তুমি পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, তখন তুমি আমার রহস্য প্রকাশ ক’রে দিও না।’
আর বালকটি (আল্লাহর ইচ্ছায়) জন্মান্ধত্ব ও কু’রোগ ভাল করত এবং অন্যান্য সমস্ত রোগের চিকিৎসা করত। (এমতাবস্থায়) বাদশাহর জনৈক দরবারী অন্ধ হয়ে গেল। যখন সে বালকটির কথা শুনল, তখন প্রচুর উপঢৌকন নিয়ে তার কাছে এল এবং তাকে বলল যে, ’তুমি যদি আমাকে ভাল করতে পার, তাহলে এ সমস্ত উপঢৌকন তোমার।’ সে বলল, ’আমি তো কাউকে আরোগ্য দিতে পারি না, আল্লাহ তাআলাই আরোগ্য দান ক’রে থাকেন। যদি তুমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন কর, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দু’আ করব, ফলে তিনি তোমাকে অন্ধত্বমুক্ত করবেন।’ সুতরাং সে তার প্রতি ঈমান আনল। ফলে আল্লাহ তাআলা তাকে আরোগ্য দান করলেন। তারপর সে পূর্বেকার অভ্যাস অনুযায়ী বাদশাহর কাছে গিয়ে বসল। বাদশাহ তাকে বলল, ’কে তোমাকে চোখ ফিরিয়ে দিল?’ সে বলল, ’আমার প্রভু!’ সে বলল, ’আমি ব্যতীত তোমার অন্য কেউ প্রভু আছে?’ সে বলল, ’আমার প্রভু ও আপনার প্রভু হচ্ছেন আল্লাহ।’ বাদশাহ তাকে গ্রেপ্তার করল এবং তাকে ততক্ষণ পর্যন্ত শাস্তি দিতে থাকল, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ঐ (চিকিৎসক) বালকের কথা বলে দিল। অতএব তাকে (বাদশার দরবারে) নিয়ে আসা হল। বাদশাহ তাকে বলল, ’বৎস! তোমার কৃতিত্ব ঐ সীমা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে যে, তুমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য দান করছ এবং আরো অনেক কিছু করছ।’ বালকটি বলল, ’আমি কাউকে আরোগ্য দান করি না, আরোগ্য দানকারী হচ্ছেন একমাত্র মহান আল্লাহ।’ বাদশাহ তাকেও গ্রেপ্তার ক’রে ততক্ষণ পর্যন্ত শাস্তি দিতে থাকল, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ঐ পাদরীর কথা বলে দিল।
অতঃপর পাদরীকেও (তার কাছে) নিয়ে আসা হল। পাদরীকে বলা হল যে, ’তুমি নিজের ধর্ম থেকে ফিরে যাও।’ কিন্তু সে অস্বীকার করল। ফলে তার মাথার সিঁথিতে করাত রাখা হল। করাতটি তাকে (চিরে) দ্বিখণ্ডিত ক’রে দিল; এমনকি তার দুই ধার (মাটিতে) পড়ে গেল। তারপর বাদশাহর দরবারীকে নিয়ে আসা হল এবং তাকে বলা হল যে, ’তোমার ধর্ম পরিত্যাগ কর।’ কিন্তু সে ও (বাদশার কথা) প্রত্যাখান করল। ফলে তার মাথার সিঁথিতে করাত রাখা হল। তা দিয়ে তাকে (চিরে) দ্বিখণ্ডিত ক’রে দিল; এমনকি তার দুই ধার (মাটিতে) পড়ে গেল। তারপর বালকটিকে নিয়ে আসা হল। অতঃপর তাকে বলা হল যে, ’তুমি ধর্ম থেকে ফিরে এস।’ কিন্তু সে ও অসম্মতি জানাল। সুতরাং বাদশাহ তাকে তার কিছু বিশেষ লোকের হাতে সঁপে দিয়ে বলল যে, ’একে অমুক পাহাড়ে নিয়ে যাও, তার উপরে তাকে আরোহণ করাও। অতঃপর যখন তোমরা তার চূড়ায় পৌঁছবে (তখন তাকে ধর্ম-ত্যাগের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা কর) যদি সে নিজের ধর্ম থেকে ফিরে যায়, তাহলে ভাল। নচেৎ তাকে ওখান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দাও।’ সুতরাং তারা তাকে নিয়ে গিয়ে পাহাড়ের উপর আরোহণ করল। বালকটি আল্লাহর কাছে দু’আ করল, ’হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য তাদের মুকাবেলায় যে ভাবেই চাও যথেষ্ট হয়ে যাও।’ সুতরাং পাহাড় কেঁপে উঠল এবং তারা সকলেই নীচে পড়ে গেল।
বালকটি হেঁটে বাদশার কাছে উপস্থিত হল। বাদশাহ তাকে জিজ্ঞাসা করল, ’তোমার সঙ্গীদের কী হল?’ বালকটি বলল, ’আল্লাহ তাআলা তাদের মোকাবেলায় আমার জন্য যথেষ্ট হয়েছেন।’
বাদশাহ আবার তাকে তার কিছু বিশেষ লোকের হাতে সঁপে দিয়ে বলল যে, ’একে নিয়ে তোমরা নৌকায় চড় এবং সমুদ্রের মধ্যস্থলে গিয়ে তাকে ধর্মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা কর! যদি সে স্বধর্ম থেকে ফিরে আসে, তাহলে ঠিক আছে। নচেৎ তাকে সমুদ্রে নিক্ষেপ কর।’ সুতরাং তারা তাকে নিয়ে গেল। অতঃপর বালকটি (নৌকায় চড়ে) দু’আ করল, ’হে আল্লাহ! তুমি এদের মোকাবেলায় যেভাবে চাও আমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাও।’ সুতরাং নৌকা উল্টে গেল এবং তারা সকলেই পানিতে ডুবে গেল।
তারপর বালকটি হেঁটে বাদশাহর কাছে এল। বাদশাহ বলল, ’তোমার সঙ্গীদের কী হল?’ বালকটি বলল, ’আল্লাহ তাআলা তাদের মোকাবেলায় আমার জন্য যথেষ্ট হয়ে গেছেন।’ পুনরায় বালকটি বাদশাহকে বলল যে, ’আপনি আমাকে সে পর্যন্ত হত্যা করতে পারবেন না, যে পর্যন্ত না আপনি আমার নির্দেশিত পদ্ধতি অবলম্বন করবেন।’ বাদশাহ বলল, ’তা কি?’ সে বলল, ’আপনি একটি মাঠে লোকজন একত্রিত করুন এবং গাছের গুঁড়িতে আমাকে ঝুলিয়ে দিন। অতঃপর আমার তূণ থেকে একটি তীর নিয়ে তা ধনুকের মাঝে রাখুন, তারপর বলুন, ’’বিসমিল্লাহি রাব্বিল গুলাম!’’ (অর্থাৎ, এই বালকের প্রতিপালক আল্লাহর নামে মারছি।) অতঃপর আমাকে তীর মারুন। এইভাবে করলে আপনি আমাকে হত্যা করতে সফল হবেন।’
সুতরাং (বালকটির নির্দেশানুযায়ী) বাদশাহ একটি মাঠে লোকজন একত্রিত করল এবং গাছের গুঁড়িতে তাকে ঝুলিয়ে দিল। অতঃপর তার তূণ থেকে একটি তীর নিয়ে তা ধনুকের মাঝে রেখে বলল, ’বিসমিল্লাহি রাব্বিল গুলাম!’ (অর্থাৎ, এই বালকের প্রতিপালক আল্লাহর নামে মারছি।) অতঃপর তাকে তীর মারল। তীরটি তার কান ও মাথার মধ্যবর্তী স্থানে (কানমুতোয়) লাগল। বালকটি তার কানমুতোয় হাত রেখে মারা গেল। অতঃপর লোকেরা (বালকটির অলৌকিকতা দেখে) বলল যে, ’আমরা এই বালকটির প্রভুর উপর ঈমান আনলাম।’ বাদশার কাছে এসে বলা হল যে, ’আপনি যার ভয় করছিলেন তাই ঘটে গেছে, লোকেরা (আল্লাহর প্রতি) ঈমান এনেছে।’ সুতরাং সে পথের দুয়ারে গর্ত খুঁড়ার আদেশ দিল। ফলে তা খুঁড়া হল এবং তাতে আগুন জ্বালানো হল। বাদশাহ আদেশ করল যে, ’যে দ্বীন থেকে না ফিরবে তাকে এই আগুনে নিক্ষেপ কর’ অথবা তাকে বলা হল যে, ’তুমি আগুনে প্রবেশ কর।’ তারা তাই করল। শেষ পর্যন্ত একটি স্ত্রীলোক এল। তার সঙ্গে তার একটি শিশু ছিল। সে তাতে পতিত হতে কুণ্ঠিত হলে তার বালকটি বলল, ’আম্মা! তুমি সবর কর। কেননা, তুমি সত্যের উপরে আছ।
وَعَن صُهَيبٍ أنَّ رَسُوْلَ الله ﷺ قَالَ كَانَ مَلِكٌ فيمَنْ كَانَ قَبلَكمْ وَكَانَ لَهُ سَاحِرٌ فَلَمَّا كَبِرَ قَالَ للمَلِكِ : إنِّي قَدْ كَبِرْتُ فَابْعَثْ إلَيَّ غُلاماً أُعَلِّمْهُ السِّحْرَ ؛ فَبَعثَ إِلَيْهِ غُلاماً يُعَلِّمُهُ وَكانَ في طرِيقِهِ إِذَا سَلَكَ رَاهِبٌ فَقَعدَ إِلَيْه وسَمِعَ كَلامَهُ فَأعْجَبَهُ وَكانَ إِذَا أتَى السَّاحِرَ مَرَّ بالرَّاهبِ وَقَعَدَ إِلَيْه فَإذَا أَتَى السَّاحِرَ ضَرَبَهُ فَشَكَا ذلِكَ إِلَى الرَّاهِب فَقَالَ : إِذَا خَشيتَ السَّاحِرَ فَقُلْ : حَبَسَنِي أَهْلِي وَإذَا خَشِيتَ أهلَكَ فَقُلْ : حَبَسَنِي السَّاحِرُ فَبَيْنَما هُوَ عَلَى ذلِكَ إِذْ أَتَى عَلَى دَابَّةٍ عَظِيمَةٍ قَدْ حَبَسَتِ النَّاسَ فَقَالَ : اليَوْمَ أعْلَمُ السَّاحرُ أفْضَلُ أم الرَّاهبُ أفْضَلُ ؟ فَأخَذَ حَجَراً، فَقَالَ : اللَّهُمَّ إنْ كَانَ أمْرُ الرَّاهِبِ أَحَبَّ إِلَيْكَ مِنْ أمْرِ السَّاحِرِ فَاقْتُلْ هذِهِ الدّابَّةَ حَتّٰـى يَمضِيَ النَّاسُ فَرَمَاهَا فَقَتَلَها ومَضَى النَّاسُ فَأتَى الرَّاهبَ فَأَخبَرَهُ فَقَالَ لَهُ الرَّاهبُ : أَيْ بُنَيَّ أَنْتَ اليَومَ أفْضَل منِّي قَدْ بَلَغَ مِنْ أَمْرِكَ مَا أَرَى وَإنَّكَ سَتُبْتَلَى فَإن ابْتُلِيتَ فَلاَ تَدُلَّ عَلَيَّ ؛ وَكانَ الغُلامُ يُبْرىءُ الأكْمَهَ وَالأَبْرصَ ويداوي النَّاسَ مِنْ سَائِرِ الأَدْوَاء فَسَمِعَ جَليسٌ لِلملِكِ كَانَ قَدْ عَمِيَ فأتاه بَهَدَايا كَثيرَةٍ فَقَالَ : مَا ها هُنَا لَكَ أَجْمعُ إنْ أنتَ شَفَيتَنِي فَقَالَ : إنّي لا أشْفِي أحَداً إِنَّمَا يَشفِي اللهُ تَعَالٰـى فَإنْ آمَنْتَ بالله تَعَالٰـى دَعَوتُ اللهَ فَشفَاكَ فَآمَنَ بالله تَعَالٰـى فَشفَاهُ اللهُ تَعَالٰـى فَأَتَى المَلِكَ فَجَلسَ إِلَيْهِ كَما كَانَ يَجلِسُ فَقَالَ لَهُ المَلِكُ : مَنْ رَدّ عَلَيْكَ بَصَرَكَ ؟ قَالَ : رَبِّي قَالَ : وَلَكَ رَبٌّ غَيري ؟ قَالَ : رَبِّي وَرَبُّكَ اللهُ فَأَخَذَهُ فَلَمْ يَزَلْ يُعَذِّبُهُ حَتّٰـى دَلَّ عَلَى الغُلامِ فَجيء بالغُلاَمِ فَقَالَ لَهُ المَلِكُ : أيْ بُنَيَّ قَدْ بَلَغَ مِنْ سِحْرِكَ مَا تُبْرِئُ الأَكْمَهَ وَالأَبْرَصَ وتَفْعَلُ وتَفْعَلُ فَقَالَ : إنِّي لا أَشْفي أحَداً إِنَّمَا يَشفِي الله تَعَالٰـى فَأَخَذَهُ فَلَمْ يَزَلْ يُعَذِّبُهُ حَتّٰـى دَلَّ عَلَى الرَّاهبِ ؛ فَجِيء بالرَّاهبِ فَقيلَ لَهُ : ارجِعْ عَنْ دِينكَ فَأَبَى فَدَعَا بِالمِنْشَارِ فَوُضِعَ المِنْشَارُ في مَفْرق رَأسِهِ فَشَقَّهُ حَتّٰـى وَقَعَ شِقَّاهُ ثُمَّ جِيءَ بِجَليسِ المَلِكِ فقيل لَهُ : ارْجِعْ عَنْ دِينِكَ، فَأَبَى فَوضِعَ المِنْشَارُ في مَفْرِق رَأسِهِ فَشَقَّهُ بِهِ حَتّٰـى وَقَعَ شِقَّاهُ ثُمَّ جِيءَ بالغُلاَمِ فقيلَ لَهُ: ارْجِعْ عَنْ دِينكَ فَأَبَى فَدَفَعَهُ إِلَى نَفَرٍ مِنْ أصْحَابهِ فَقَالَ : اذْهَبُوا بِهِ إِلَى جَبَلِ كَذَا وَكَذَا فَاصْعَدُوا بِهِ الجَبَل فَإِذَا بَلَغْتُمْ ذِرْوَتَهُ فَإِنْ رَجَعَ عَنْ دِينِهِ وَإلاَّ فَاطْرَحُوهُ فَذَهَبُوا بِهِ فَصَعِدُوا بِهِ الجَبَلَ فَقَالَ : اللَّهُمَّ أكْفنيهمْ بِمَا شِئْتَ فَرَجَفَ بهِمُ الجَبلُ فَسَقَطُوا، وَجاءَ يَمشي إِلَى المَلِكِ فَقَالَ لَهُ المَلِكُ : مَا فَعَلَ أصْحَابُكَ ؟ فَقَالَ : كَفَانِيهمُ الله تَعَالٰـى فَدَفَعَهُ إِلَى نَفَرٍ مِنْ أَصْحَابِهِ فَقَالَ: اذْهَبُوا بِهِ فاحْمِلُوهُ في قُرْقُورٍ وتَوَسَّطُوا بِهِ البَحْرَ فَإنْ رَجعَ عَنْ دِينِهِ وإِلاَّ فَاقْذِفُوهُ فَذَهَبُوا بِهِ فَقَالَ : اللَّهُمَّ أكْفِنيهمْ بمَا شِئْتَ فانْكَفَأَتْ بِهمُ السَّفينةُ فَغَرِقُوا وَجَاء يَمْشي إِلَى المَلِكِ فَقَالَ لَهُ المَلِكُ : مَا فعلَ أصْحَابُكَ ؟ فَقَالَ : كَفَانِيهمُ الله تَعَالٰـى فَقَالَ لِلمَلِكِ : إنَّكَ لَسْتَ بِقَاتِلِي حَتّٰـى تَفْعَلَ مَا آمُرُكَ بِهِ قَالَ : مَا هُوَ ؟ قَالَ : تَجْمَعُ النَّاسَ في صَعيدٍ وَاحدٍ وتَصْلُبُني عَلَى جِذْعٍ ثُمَّ خُذْ سَهْماً مِنْ كِنَانَتي ثُمَّ ضَعِ السَّهْمَ في كَبدِ القَوْسِ ثُمَّ قُلْ : بسْم الله ربِّ الغُلاَمِ، ثُمَّ ارْمِني، فَإنَّكَ إِذَا فَعَلْتَ ذلِكَ قَتَلتَني، فَجَمَعَ النَّاسَ في صَعيدٍ واحدٍ وَصَلَبَهُ عَلَى جِذْعٍ ثُمَّ أَخَذَ سَهْماً مِنْ كِنَانَتِهِ ثُمَّ وَضَعَ السَّهْمَ في كَبِدِ القَوْسِ ثُمَّ قَالَ : بِسمِ اللهِ رَبِّ الغُلامِ ثُمَّ رَمَاهُ فَوقَعَ في صُدْغِهِ، فَوَضَعَ يَدَهُ في صُدْغِهِ فَمَاتَ فَقَالَ النَّاسُ : آمَنَّا بِرَبِّ الغُلامِ فَأُتِيَ المَلِكُ فقيلَ لَهُ : أَرَأَيْتَ مَا كُنْتَ تَحْذَرُ قَدْ والله نَزَلَ بكَ حَذَرُكَ قَدْ آمَنَ النَّاسُ فَأَمَرَ بِالأُخْدُودِ بأفْواهِ السِّكَكِ فَخُدَّتْ وأُضْرِمَ فيهَا النِّيرانُ وَقَالَ : مَنْ لَمْ يَرْجعْ عَنْ دِينهِ فَأقْحموهُ فيهَا أَوْ قيلَ لَهُ: اقتَحِمْ فَفَعَلُوا حَتّٰـى جَاءت امْرَأةٌ وَمَعَهَا صَبيٌّ لَهَا فَتَقَاعَسَتْ أنْ تَقَعَ فيهَا، فَقَالَ لَهَا الغُلامُ : يَا أُمَّهْ اصْبِري فَإِنَّكِ عَلَى الحَقِّ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
(৩৫২১) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি মহিলার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। সে একটি কবরের পাশে বসে কাঁদছিল। তিনি বললেন, তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ কর। সে বলল, ’আপনি আমার নিকট হতে দূরে সরে যান। কারণ, আমি যে বিপদে পড়েছি আপনি তাতে পড়েননি।’ সে তাঁকে চিনতে পারেনি (তাই সে চরম শোকে তাঁকে অসঙ্গত কথা বলে ফেলল)। অতঃপর তাকে বলা হল যে, ’তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন।’ সুতরাং (এ কথা শুনে) সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুয়ারের কাছে এল। সেখানে সে দারোয়ানদেরকে পেল না। অতঃপর সে (সরাসরি প্রবেশ করে) বলল, ’আমি আপনাকে চিনতে পারিনি।’ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), আঘাতের শুরুতে সবর করাটাই হল প্রকৃত সবর।
মুসলিমের একটি বর্ণনায় আছে, সে (মহিলাটি) তার মৃত শিশুর জন্য কাঁদছিল।
وَعَن أَنَسٍ قَالَ : مَرَّ النَّبيُّ ﷺ بِامرَأةٍ تَبكِي عِنْدَ قَبْرٍ فَقَالَ اتّقِي الله واصْبِري فَقَالَتْ : إِليْكَ عَنِّي ؛ فإِنَّكَ لَمْ تُصَبْ بِمُصِيبَتي وَلَمْ تَعرِفْهُ فَقيلَ لَهَا : إنَّه النَّبيُّ ﷺ فَأَتَتْ بَابَ النَّبيِّ ﷺ فَلَمْ تَجِدْ عِنْدَهُ بَوَّابينَ فقالتْ : لَمْ أعْرِفكَ فَقَالَ إنَّمَا الصَّبْرُ عِنْدَ الصَّدْمَةِ الأُولى مُتَّفَقٌ عَلَيهِ وفي رواية لمسلم تَبكِي عَلَى صَبيٍّ لَهَا
পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
(৩৫২২) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ’আমার মু’মিন বান্দার জন্য আমার নিকট জান্নাত ব্যতীত অন্য কোন পুরস্কার নেই, যখন আমি তার দুনিয়ার প্রিয়তম কাউকে কেড়ে নিই এবং সে সওয়াবের নিয়তে সবর করে।
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أنَّ رسولَ الله ﷺ قَالَ يَقُولُ اللهُ تَعَالٰـى : مَا لعَبدِي المُؤْمِنِ عِنْدِي جَزَاءٌ إِذَا قَبَضْتُ صَفِيَّهُ مِنْ أهْلِ الدُّنْيَا ثُمَّ احْتَسَبَهُ إلاَّ الجَنَّةَ رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
(৩৫২৩) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহ আনহা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি তাঁকে বললেন যে, এটা আযাব; আল্লাহ তাআলা যার প্রতি ইচ্ছা করেন এটা প্রেরণ করেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা একে মু’মিনদের জন্য রহমত বানিয়ে দিলেন। ফলে (এখন) যে ব্যক্তি প্লেগ রোগে আক্রান্ত হবে এবং সে নিজ দেশে ধৈর্য সহকারে নেকীর নিয়তে অবস্থান করবে, সে জানবে যে, তাকে তাইই পৌঁছবে যা আল্লাহ তাআলা তার জন্য লিখে দিয়েছেন, তাহলে সে ব্যক্তির জন্য শহীদের মত পুরস্কার রয়েছে।
وَعَنْ عَائِشَةَ رضيَ الله عَنْهَا: أَنَّهَا سَألَتْ رَسُوْلَ الله ﷺ عَنِ الطّاعُونِ، فَأَخْبَرَهَا أنَّهُ كَانَ عَذَاباً يَبْعَثُهُ اللهُ تَعَالٰـى عَلَى مَنْ يَشَاءُ فَجَعَلَهُ اللهُ تعالى رَحْمَةً للْمُؤْمِنينَ فَلَيْسَ مِنْ عَبْدٍ يَقَعُ في الطَّاعُونِ فَيَمكُثُ فِي بَلدِهِ صَابِرًا مُحْتَسِباً يَعْلَمُ أنَّهُ لاَ يُصِيبُهُ إلاَّ مَا كَتَبَ اللهُ لَهُ إلاَّ كَانَ لَهُ مِثْلُ أجْرِ الشّهيدِ رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
(৩৫২৪) আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, যখন আমি আমার বান্দাকে তার প্রিয়তম জিনিস দ্বারা (অর্থাৎ চক্ষু থেকে বঞ্চিত করে) পরীক্ষা করি এবং সে সবর করে আমি তাকে এ দু’টির বিনিময়ে জান্নাত প্রদান করব।
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَالَ : إِذَا ابْتَلَيْتُ عَبْدِي بِحَبِيْبَتَيْهِ فَصَبَرَ عَوَّضتُهُ مِنْهُمَا الجَنَّةَ يُرِيْدُ عَيْنَيْهِ رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
(৩৫২৫) আত্বা ইবনে আবী রাবাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা ইবনে আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেন, ’আমি কি তোমাকে একটি জান্নাতী মহিলা দেখাব না!’ আমি বললাম, ’হ্যাঁ!’ তিনি বললেন, ’এই কৃষ্ণকায় মহিলাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে এসে বলল যে, আমার মৃগী রোগ আছে, আর সে কারণে আমার দেহ থেকে কাপড় সরে যায়। সুতরাং আপনি আমার জন্য দু’আ করুন।’ তিনি বললেন, ’’তুমি যদি চাও তাহলে সবর কর; এর বিনিময়ে তোমার জন্য জান্নাত রয়েছে।আর যদি চাও তাহলে আমি তোমার রোগ নিরাময়ের জন্য আল্লাহ তাআলার নিকটে দু’আ করব।’’ স্ত্রীলোকটি বলল, ’আমি সবর করব।’ অতঃপর সে বলল, ’(রোগ উঠার সময়) আমার দেহ থেকে কাপড় সরে যায়, সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, যেন আমার দেহ থেকে কাপড় সরে না যায়।’ ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দু’আ করলেন।
وَعَنْ عَطَاءٍ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ قَالَ : قَالَ لِي اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا : أَلاَ أُرِيْكَ امْرَأةً مِنْ أَهْلِ الجَنَّة؟ فَقُلْتُ: بَلَى قَالَ : هَذِهِ المَرْأةُ السَّودَاءُ أتَتِ النَّبيَّ ﷺ فَقَالَتْ : إنّي أُصْرَعُ، وإِنِّي أتَكَشَّفُ فادْعُ الله تَعَالٰـى لِي قَالَ إِنْ شئْتِ صَبَرْتِ وَلَكِ الْجَنَّةُ وَإِنْ شِئْتِ دَعَوْتُ اللهَ تَعَالٰـى أنْ يُعَافِيْكِ فَقَالَتْ : أَصْبِرُ فَقَالَتْ : إنِّي أتَكَشَّفُ فَادْعُ اللهَ أنْ لَا أَتَكَشَّف فَدَعَا لَهَا مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
(৩৫২৬) ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ’আমি যেন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নবীদের মধ্যে কোন এক নবীর ঘটনা বর্ণনা করতে দেখছি; (আলাইহিমুস স্বালাতু অসসালাম) যাঁকে তাঁর স্বজাতি প্রহার ক’রে রক্তাক্ত ক’রে দিয়েছে। আর তিনি নিজ চেহারা থেকে রক্ত পরিষ্কার করছেন আর বলছেন, ’’হে আল্লাহ! তুমি আমার জাতিকে ক্ষমা ক’রে দাও। কেননা, তারা জ্ঞানহীন।
وَعَنْ أَبِي عَبدِ الرَّحمَانِ عَبدِ اللهِ بنِ مَسعُودٍ قَالَ : كَأَنِّي أنْظُرُ إِلَى رَسُولِ الله ﷺ يَحْكِي نَبِيّاً مِنَ الأَنْبِياءِ صَلَواتُ الله وَسَلامُهُ عَلَيْهمْ ضَرَبه قَوْمُهُ فَأدْمَوهُ وَهُوَ يَمْسَحُ الدَّمَ عَنْ وَجْهِهِ يَقُولُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِقَومي فَإِنَّهُمْ لا يَعْلَمونَ مُتَّفَقٌ علَيهِ
পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
(৩৫২৭) আবূ সাঈদ (রাঃ) ও আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলিমকে যে কোন ক্লান্তি, অসুখ, চিন্তা, শোক এমন কি (তার পায়ে) কাঁটাও লাগে, আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে তার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।
وعَنْ أَبِي سعيدٍ وأبي هريرةَ رضيَ الله عنهما عن النَّبيِّ ﷺ قَالَ مَا يُصيبُ المُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ، وَلاَ وَصَبٍ، وَلاَ هَمٍّ وَلاَ حَزَنٍ وَلاَ أذَىً وَلاَ غَمٍّ حَتّٰـى الشَّوكَةُ يُشَاكُهَا إلاَّ كَفَّرَ اللهُ بِهَا مِنْ خَطَاياهُ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
(৩৫২৮) ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে উপস্থিত হলাম। সে সময় তিনি জ্বর ভুগছিলেন। আমি বললাম, ’হে আল্লাহর রসূল! আপনার যে প্রচণ্ড জ্বর!’ তিনি বললেন, হ্যাঁ! তোমাদের দু’জনের সমান আমার জ্বর আসে। আমি বললাম, ’তার জন্যই কি আপনার পুরস্কারও দ্বিগুণ?’ তিনি বললেন, ’’হ্যাঁ! ব্যাপার তা-ই। (অনুরূপ) যে কোন মুসলিমকে কোন কষ্ট পৌঁছে, কাঁটা লাগে অথবা তার চেয়েও কঠিন কষ্ট হয়, আল্লাহ তাআলা এর কারণে তার পাপসমূহকে মোচন ক’রে দেন এবং তার পাপসমূহকে এইভাবে ঝরিয়ে দেওয়া হয়; যেভাবে গাছ তার পাতা ঝরিয়ে দেয়।
وَعَنِ ابنِ مَسعودٍ قَالَ : دخلتُ عَلَى النَّبيِّ ﷺ وَهُوَ يُوعَكُ فقلت : يَا رَسُوْلَ الله إنَّكَ تُوْعَكُ وَعْكاً شَدِيداً قَالَ أجَلْ إنِّي أُوعَكُ كَمَا يُوعَكُ رَجُلانِ مِنكُمْ قلْتُ: ذلِكَ أن لَكَ أجْرينِ ؟ قَالَ أَجَلْ ذلِكَ كَذلِكَ مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصيبُهُ أذىً شَوْكَةٌ فَمَا فَوقَهَا إلاَّ كَفَّرَ اللهُ بهَا سَيِّئَاتِهِ وَحُطَّتْ عَنْهُ ذُنُوبُهُ كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
(৩৫২৯) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে দুঃখকষ্টে ফেলেন।
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ الله ﷺ مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْراً يُصِبْ مِنْهُ رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
(৩৫৩০) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কোন বিপদে পড়ার কারণে যেন মরার আকাঙ্ক্ষা না করে। আর যদি তা করতেই হয়, তাহলে সে যেন বলে, ’হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জীবিত রাখ; যে পর্যন্ত জীবিত থাকাটা আমার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর আমাকে মরণ দাও; যদি মরণ আমার জন্য মঙ্গলময় হয়।
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لاَ يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ المَوتَ لضُرٍّ أَصَابَهُ، فَإِنْ كَانَ لاَ بُدَّ فاعلاً فَليَقُلْ : اللَّهُمَّ أحْيني مَا كَانَتِ الحَيَاةُ خَيراً لِي، وَتَوفّنِي إِذَا كَانَتِ الوَفَاةُ خَيراً لي مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
(৩৫৩১) খাব্বাব ইবনে আরাত্ত্ (রাঃ) বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে অভিযোগ করলাম (এমতাবস্থায়) যে, তিনি কা’বা ঘরের ছায়ায় একটি চাদরে ঠেস দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমরা বললাম যে, ’আপনি কি আমাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) সাহায্য চাইবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য দু’আ করবেন না?’ তিনি বললেন, (তোমাদের জানা উচিত যে,) তোমাদের পূর্বেকার (মু’মিন) লোকেদের এই অবস্থা ছিল যে, একটি মানুষকে ধরে আনা হত, তার জন্য গর্ত খুঁড়ে তাকে তার মধ্যে (পুঁতে) রাখা হত। অতঃপর তার মাথার উপর করাত চালিয়ে তাকে দু’খণ্ড করে দেওয়া হত এবং দেহের মাংসের নিচে হাড় পর্যন্ত লোহার চিরুনী চালিয়ে শাস্তি দেওয়া হত। কিন্তু এই (কঠোর পরীক্ষা) তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না। আল্লাহর কসম! আল্লাহ নিশ্চয় এই ব্যাপারটিকে (দ্বীন ইসলামকে) এমন সুসম্পন্ন করবেন যে, একজন আরোহী সানআ’ থেকে হাযরামাউত একাই সফর করবে; কিন্তু সে (রাস্তায়) আল্লাহ এবং নিজ ছাগলের উপর নেকড়ের আক্রমণ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করবে না। কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়ো করছ। (বুখারী ৩৬১২)
একটি বর্ণনায় আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাদরকে বালিশ বানিয়ে বিশ্রাম করছিলেন এবং আমরা মুশরিকদের দিক থেকে নানা যাতনা পেয়েছিলাম। (৩৮৫২ নং)
وَعَنْ أَبِي عَبدِ اللهِ خَبَّابِ بنِ الأَرتِّ قَالَ : شَكَوْنَا إِلَى رسولِ الله ﷺ وَهُوَ متَوَسِّدٌ بُرْدَةً لَهُ في ظلِّ الكَعْبَةِ فقُلْنَا : أَلاَ تَسْتَنْصِرُ لَنَا ألاَ تَدْعُو لَنا ؟ فَقَالَ قَدْ كَانَ مَنْ قَبْلَكُمْ يُؤْخَذُ الرَّجُلُ فَيُحْفَرُ لَهُ في الأرضِ فَيُجْعَلُ فِيهَا ثُمَّ يُؤْتَى بِالمِنْشَارِ فَيُوضَعُ عَلَى رَأسِهِ فَيُجْعَلُ نصفَينِ وَيُمْشَطُ بأمْشَاطِ الحَديدِ مَا دُونَ لَحْمِه وَعَظْمِهِ مَا يَصُدُّهُ ذلِكَ عَنْ دِينِهِ وَاللهِ لَيُتِمَّنَّ الله هَذَا الأَمْر حَتّٰـى يَسيرَ الرَّاكبُ مِنْ صَنْعَاءَ إِلَى حَضْرَموتَ لاَ يَخَافُ إلاَّ اللهَ والذِّئْبَ عَلَى غَنَمِهِ ولكنكم تَسْتَعجِلُونَ رواه البخاري، وفي رواية وَهُوَ مُتَوَسِّدٌ بُرْدَةً وَقَدْ لَقِينا مِنَ المُشْرِكِينَ شدَّةً
পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
(৩৫৩২) ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, হুনাইন যুদ্ধের গনিমতের মাল বন্টনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু লোককে (তাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য) প্রাধান্য দিলেন (অর্থাৎ, অন্য লোকের তুলনায় তাদেরকে বেশী মাল দিলেন)। সুতরাং তিনি আক্বরা’ ইবনে হাবেসকে একশত উঁট দিলেন এবং উয়াইনা ইবনে হিস্নকেও তারই মত দিলেন। অনুরূপ আরবের আরো কিছু সম্ভ্রান্ত মানুষকেও সেদিন (মাল) বন্টনে প্রাধান্য দিলেন। (এ দেখে) একটি লোক বলল, ’আল্লাহর কসম! এই বন্টনে ইনসাফ করা হয়নি এবং এতে আল্লাহর সন্তোষ লাভের ইচ্ছা রাখা হয়নি!’ আমি (ইবনে মাসউদ) বললাম, ’আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আমি এই সংবাদ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেব।’ অতএব আমি তাঁর কাছে এসে সেই সংবাদ দিলাম যা সে বলল। ফলে তাঁর চেহারা পরিবর্তিত হয়ে এমনকি লালবর্ণ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি বললেন, ’’যদি আল্লাহ ও তাঁর রসূল ইনসাফ না করেন, তাহলে আর কে ইনসাফ করবে?’’ অতঃপর তিনি বললেন, আল্লাহ মূসাকে রহম করুন, তাঁকে এর চেয়ে বেশী কষ্ট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি ধৈর্য ধারণ করেছিলেন। অবশেষে আমি (মনে মনে) বললাম যে, ’আমি এর পরে কোন কথা তাঁর কাছে পৌঁছাব না।’
وَعَنْ اِبْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ : لَمَّا كَانَ يَومُ حُنَينٍ آثَرَ رَسُوْلُ الله ﷺ نَاساً في القِسْمَةِ فَأعْطَى الأقْرَعَ بْنَ حَابسٍ مئَةً مِنَ الإِبِلِ وَأَعْطَى عُيَيْنَة بْنَ حصن مِثْلَ ذلِكَ وَأَعطَى نَاساً مِنْ أشْرافِ العَرَبِ وآثَرَهُمْ يَوْمَئِذٍ في القِسْمَةِ فَقَالَ رَجُلٌ : واللهِ إنَّ هذِهِ قِسْمَةٌ مَا عُدِلَ فِيهَا وَمَا أُريدَ فيهَا وَجْهُ اللهِ فَقُلْتُ : وَاللهِ لأُخْبِرَنَّ رسولَ الله ﷺ فَأَتَيْتُهُ فَأخْبَرتُهُ بمَا قَالَ فَتَغَيَّرَ وَجْهُهُ حَتّٰـى كَانَ كالصِّرْفِ ثُمَّ قَالَ فَمَنْ يَعْدِلُ إِذَا لم يَعْدِلِ اللهُ وَرسولُهُ ثُمَّ قَالَ يَرْحَمُ اللهُ مُوسَى قَدْ أُوذِيَ بأكْثَرَ مِنْ هَذَا فَصَبر فَقُلْتُ : لاَ جَرَمَ لاَ أرْفَعُ إِلَيْه بَعدَهَا حَدِيثاً مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
(৩৫৩৩) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন আল্লাহ তাঁর বান্দার মঙ্গল চান, তখন তিনি তাকে তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে (পাপের) শাস্তি দিয়ে দেন। আর যখন আল্লাহ তাঁর বান্দার অমঙ্গল চান, তখন তিনি তাকে (শাস্তিদানে) বিরত থাকেন। পরিশেষে কিয়ামতের দিন তাকে পুরোপুরি শাস্তি দেবেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, বড় পরীক্ষার বড় প্রতিদান রয়েছে। আল্লাহ তাআলা যখন কোন জাতিকে ভালবাসেন, তখন তার পরীক্ষা নেন। ফলে তাতে যে সন্তুষ্ট (ধৈর্য) প্রকাশ করবে, তার জন্য (আল্লাহর) সন্তুষ্টি রয়েছে। আর যে (আল্লাহর পরীক্ষায়) অসন্তুষ্ট হবে, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ : قَالَ رَسُول الله ﷺ إِذَا أَرَادَ الله بعَبْدِهِ الخَيرَ عَجَّلَ لَهُ العُقُوبَةَ في الدُّنْيا وَإِذَا أَرَادَ اللهُ بِعَبدِهِ الشَّرَّ أمْسَكَ عَنْهُ بذَنْبِهِ حَتّٰـى يُوَافِيَ بِهِ يومَ القِيَامَةِ وَقالَ النَّبيُّ ﷺ إنَّ عِظَمَ الجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ البَلاَءِ وَإنَّ اللهَ تَعَالٰـى إِذَا أَحَبَّ قَوْماً ابْتَلاَهُمْ فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السُّخْطُ رواه الترمذي وَقالَ حديث حسن