পরিচ্ছেদঃ সত্যবাদিতার গুরুত্ব
আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَـاۤ أَيُّـهَـا الَّـذِيْـنَ آمَـنُـوا اتَّـقُـوا اللهَ وَكُـوْنُـوْا مَـعَ الصَّـادِقِـيْـنَ
অর্থাৎ, হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও। (সূরা তওবা ১১৯)
তিনি অন্যত্র বলেন,
وَالصَّـادِقِـيْـنَ وَالصَّـادِقَـاتِ
অর্থাৎ, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদিনী নারী — এদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান রেখেছেন। (সূরা আহযাব ৩৫)
তিনি আরো বলেন,
فَـلَـوْ صَدَقُـوا اللهَ لَكَـانَ خَـيْـرًا لَّـهُـمْ
অর্থাৎ, সুতরাং যদি তারা আল্লাহর সাথে সত্য বলত, তাহলে তাদের জন্য এটা মঙ্গলজনক হত। (সূরা মুহাম্মাদ ২১)
(৩৫৪৮) ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় সত্য পুণ্যের পথ দেখায় এবং পুণ্য জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। একজন মানুষ (অবিরত) সত্য বলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে তাকে খুব সত্যবাদী বলে লিখা হয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা পাপের পথ দেখায় এবং পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। একজন মানুষ (সর্বদা) মিথ্যা বলতে থাকে, শেষ অবধি আল্লাহর নিকটে তাকে মহা মিথ্যাবাদী বলে লিপিবদ্ধ করা হয়।
عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ عَنِ النَّبيّ ﷺ قَالَ إِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِيْ إِلَى البرِّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِيْ إِلَى الْـجَنَّةِ وإنَّ الرَّجُلَ لَيَصدُقُ حَتّٰـى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيقًا وَإِنَّ الْكِذْبَ يَهْدِيْ إِلَى الْفُجُوْرِ وَإِنَّ الْفُجُوْرَ يَهدِيْ إِلَى النَّارِ وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَكْذِبُ حَتّٰـى يُكْتَبَ عِنْدَ الله كَذَّابًا مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ সত্যবাদিতার গুরুত্ব
(৩৫৪৯) আবূ মুহাম্মাদ হাসান ইবনে আলী ইবনে আবী ত্বালেব (রাঃ) বলেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই শব্দগুলি স্মরণ রেখেছি যে, তুমি ঐ জিনিস পরিত্যাগ কর, যে জিনিস তোমাকে সন্দেহে ফেলে এবং তা গ্রহণ কর যাতে তোমার সন্দেহ নেই। কেননা, সত্য প্রশান্তির কারণ এবং মিথ্যা সন্দেহের কারণ।
عَنْ أَبِـيْ مُـحَمَّدٍ الْحَسَنِ بنِ عَليِّ بنِ أَبِيْ طَالِبٍ رَضِيَ الله عَنهُما قَالَ : حَفظْتُ مِنْ رَسُول الله ﷺ دَعْ مَا يَرِيْبُكَ إِلَى مَا لاَ يَرِيبُكَ ؛ فإنَّ الصِّدقَ طُمَأنِينَةٌ وَالكَذِبَ رِيبَةٌ رواه الترمذي وَقالَ حديث صحيح
পরিচ্ছেদঃ সত্যবাদিতার গুরুত্ব
(৩৫৫০) আবূ সুফয়ান স্বাখর ইবনে হারব (রাঃ) ঐ দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন যাতে (রোমের বাদশাহ) হিরাক্লের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। হিরাক্ল আবূ সুফয়ানকে জিজ্ঞাসা করলেন (তখন তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি) ’তিনি—অর্থাৎ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে কোন্ কাজের আদেশ করছেন?’ আবূ সুফয়ান বলেন, আমি বললাম, ’তিনি বলছেন যে, তোমরা মাত্র এক আল্লাহর উপাসনা কর, তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার করো না এবং ঐসব কথা পরিহার কর, যা তোমাদের বাপ-দাদারা বলত (এবং করত)। আর তিনি আমাদেরকে নামায পড়া, সত্য কথা বলা, চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা করা এবং আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখার আদেশ দেন।’
عَنْ أَبِي سُفْيَانَ صَخرِ بنِ حَرْبٍ فِيْ حَدِيْثِهِ الطَّوِيْلِ في قِصَّةِ هِرَقْلَ، قَالَ هِرَقْلُ : فَمَاذَا يَأَمُرُكُمْ - يعني : النَّبيّ ﷺ قَالَ أبو سفيانَ : قُلْتُ : يقولُ اعْبُدُوا اللهَ وَحدَهُ لا تُشْرِكوُا بِهِ شَيئاً وَاتْرُكُوا مَا يَقُولُ آبَاؤُكُمْ ويَأْمُرُنَا بالصَلاةِ وَالصِّدْقِ والعَفَافِ وَالصِّلَةِ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ সত্যবাদিতার গুরুত্ব
(৩৫৫১) আবূ সাবেত, মতান্তরে আবূ সাঈদ বা আবুল অলীদ সাহল ইবনে হুনাইফ (রাঃ) হতে বর্ণিত, (আর তিনি বাদরী সাহাবী ছিলেন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সত্য অন্তর নিয়ে আল্লাহর নিকট শাহাদত প্রার্থনা করবে, তাকে আল্লাহ শহীদদের মর্যাদায় পৌঁছাবেন; যদিও তার মৃত্যু নিজ বিছানায় হয়।
عَنْ أَبِي ثَابِتٍ، وَقِيلَ: أبي سَعِيدٍ، وَقِيلَ : أبي الوليد سَهْلِ بن حُنَيْفٍ وَهُوَ بدريٌّ أنَّ النَّبيّ ﷺ قَالَ مَنْ سَأَلَ الله الشَّهَادَةَ بِصِدْقٍ بَلَّغَهُ الله مَنَازِلَ الشُّهَدَاءِ وَإِنْ مَاتَ عَلَى فِرَاشِهِ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ সত্যবাদিতার গুরুত্ব
(৩৫৫২) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নবীদের মধ্যে কোন এক নবী জিহাদের জন্য বের হওয়ার ইচ্ছা করলেন। সুতরাং তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, ’আমার সঙ্গে যেন ঐ ব্যক্তি না যায়, যে নতুন বিবাহ করেছে এবং সে তার সাথে বাসর করার কামনা রাখে; কিন্তু এখনো পর্যন্ত সে তা করেনি। আর সেও নয়, যে ঘর নির্মাণ করেছে; এখনো পর্যন্ত ছাদ ঢালেনি। আর সেও নয়, যে গর্ভবতী ভেড়া-ছাগল কিংবা উটনী কিনেছে এবং সে তাদের বাচ্চা হওয়ার অপেক্ষায় আছে।’ অতঃপর সেই নবী জিহাদের জন্য বেরিয়ে পড়লেন। তারপর তিনি আসরের নামাযের সময় অথবা ওর নিকটবর্তী সময়ে ঐ গ্রামে (যেখানে জিহাদ করবেন সেখানে) পৌঁছলেন। অতঃপর তিনি সূর্যকে (সম্বোধন করে) বললেন, ’তুমিও (আল্লাহর) আজ্ঞাবহ এবং আমিও (তাঁর) আজ্ঞাবহ। হে আল্লাহ! একে তুমি আটকে দাও (অর্থাৎ যুদ্ধের ফলাফল বের না হওয়া পর্যন্ত সূর্য যেন না ডোবে)।’ বস্তুতঃ সূর্যকে আটকে দেওয়া হল। এমনকি আল্লাহ তাআলা (ঐ জনপদটিকে) তাদের হাতে জয় করালেন।
অতঃপর তিনি গনীমতের মাল জমা করলেন। তারপর তা গ্রাস করার জন্য (আসমান থেকে) আগুন এল; কিন্তু সে তা খেল না (ভষ্ম করল না)। (এ দেখে) তিনি বললেন, ’নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে খিয়ানত আছে (অর্থাৎ তোমাদের কেউ গনীমতের মাল আত্মসাৎ করেছে)। সুতরাং প্রত্যেক গোত্রের মধ্য হতে একজন আমার হাতে ’বায়আত’ করুক।’ অতঃপর (বায়আত করতে করতে) একজনের হাত তাঁর হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন, ’তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে। সুতরাং তোমার গোত্রের লোক আমার হাতে ’বায়আত’ করুক।’ সুতরাং দুই অথবা তিনজনের হাত তাঁর হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন যে, ’তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে।’ সুতরাং তারা গাভীর মাথার মত একটি সোনার মাথা নিয়ে এল এবং তিনি তা গনীমতের সাথে রেখে দিলেন। তারপর আগুন এসে তা খেয়ে ফেলল। (শেষনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে,) আমাদের পূর্বে কারো জন্য গণীমতের মাল হালাল ছিল না। পরে আল্লাহ তাআলা যখন আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা দেখলেন, তখন আমাদের জন্য তা হালাল করে দিলেন।
عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ الله ﷺ غَزَا نبيٌّ مِنَ الأنْبِيَاءِ صَلَوَاتُ اللهِ وَسَلاَمُهُ عَلَيْهمْ فَقَالَ لِقَومهِ : لا يَتْبَعَنِّي رَجُلٌ مَلَكَ بُضْعَ امْرَأةٍ وَهُوَ يُريدُ أنْ يَبْنِي بِهَا وَلَمَّا يَبْنِ بِهَا وَلا أحَدٌ بَنَى بُيُوتاً لَمْ يَرْفَعْ سُقُوفَهَا وَلا أحَدٌ اشْتَرَى غَنَماً أَوْ خَلِفَاتٍ وَهُوَ يَنْتَظِرُ أَوْلادَها فَغَزا فَدَنَا مِنَ القَرْيَةِ صَلاةَ العَصْرِ أَوْ قَريباً مِنْ ذلِكَ فَقَالَ لِلشَّمْسِ : إِنَّكِ مَأمُورَةٌ وَأنَا مَأمُورٌ اللَّهُمَّ احْبِسْهَا عَلَيْنَا فَحُبِسَتْ حَتّٰـى فَتَحَ اللهُ عَلَيهِ فَجَمَعَ الغَنَائِمَ فَجَاءتْ - يعني النَّارَ – لِتَأكُلَهَا فَلَمْ تَطعَمْها فَقَالَ : إنَّ فِيكُمْ غُلُولاً، فَلْيُبايعْنِي مِنْ كُلِّ قَبيلةٍ رَجُلٌ فَلَزِقَتْ يَدُ رَجُلٍ بِيَدِهِ فَقَالَ : فِيكُمُ الغُلُولُ فَلْتُبَايِعْنِي قَبِيلَتُكَ فَلَزِقَتْ يَدُ رَجُلَينِ أَوْ ثَلاَثَةٍ بِيَدِهِ فَقَالَ : فِيكُمُ الْغُلُولُ فَجَاؤُوا بِرَأْسٍ مِثلِ رَأسِ بَقَرَةٍ مِنَ الذَّهَبِ فَوَضَعَهَا فَجاءت النَّارُ فَأكَلَتْها فَلَمْ تَحلَّ الغَنَائِمُ لأَحَدٍ قَبْلَنَا ثُمَّ أحَلَّ الله لَنَا الغَنَائِمَ لَمَّا رَأَى ضَعْفَنا وَعَجْزَنَا فَأحَلَّهَا لَنَا مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ সত্যবাদিতার গুরুত্ব
(৩৫৫৩) আবূ খালেদ হাকীম ইবনে হিযাম (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত (চুক্তি পাকা বা বাতিল করার স্বাধীনতা রয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা পৃথক (স্থানান্তরিত) না হবে। আর যদি তারা সত্য কথা বলে এবং (পণ্যদ্রব্যের প্রকৃতত্ব) খুলে বলে, (দোষ-ত্রুটি গোপন না রাখে,) তাহলে তাদের কেনাবেচার মধ্যে বরকত দেওয়া হয়। আর তারা যদি (দোষ-ত্রুটি) গোপন রাখে এবং মিথ্যা বলে, তাহলে তাদের দু’জনের কেনাবেচার বরকত রহিত করা হয়।
عَنْ أَبِي خَالِدٍ حَكِيمِ بنِ حِزَامٍ قَالَ : قَالَ رسولُ الله ﷺالبَيِّعَانِ بالخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا فَإنْ صَدَقا وَبيَّنَا بُوركَ لَهُمَا في بيعِهمَا وإنْ كَتَمَا وَكَذَبَا مُحِقَتْ بركَةُ بَيعِهِما مُتَّفَقٌ عَلَيهِ