পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব

৫০৭৬-[৯] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাকে নম্রতার অংশ প্রদান করা হয়েছে, তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ প্রদান করা হয়েছে। আর যাকে নম্রতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أُعْطِيَ حَظَّهُ مِنَ الرِّفْقِ أُعْطِي حَظَّهُ مِنْ خَيْرِ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمَنْ حُرِمَ حَظَّهُ مِنَ الرِّفْقِ حُرِمَ حَظَّهُ مِنْ خَيْرِ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ» . رَوَاهُ فِي «شرح السّنة»

عن عاىشة رضي الله عنها قالت: قال النبي صلى الله عليه وسلم: «من اعطي حظه من الرفق اعطي حظه من خير الدنيا والاخرة ومن حرم حظه من الرفق حرم حظه من خير الدنيا والاخرة» . رواه في «شرح السنة»

ব্যাখ্যাঃ الرِّفْقِ : مِنَ الرِّفْقِ শব্দের অর্থ- নম্রতা, কোমলতা। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর পারিভাষিক অর্থ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, কোন কাজকে সুন্দর-সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সহকর্মী বন্ধু-বান্ধবদের সাথে নরম, কোমল ও ভদ্রতাসুলভ আচরণ করার নামই হলো-‘‘রিফ্ক্ব’’, এটা মানুষের মানবিক একটা বিশেষ গুণ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব

৫০৭৭-[১০] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লজ্জা ঈমানের একটি অংশ, আর ঈমানদার জান্নাতে যাবে। লজ্জাহীনতা অত্যন্ত মন্দ কাজ, আর মন্দ লোক জাহান্নামে যাবে। (আহমাদ ও তিরমিযী)[1]

وَعَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْحَيَاءُ مِنَ الْإِيمَانِ وَالْإِيمَانُ فِي الْجَنَّةِ. وَالْبَذَاءُ مِنَ الْجَفَاءِ وَالْجَفَاءُ فِي النَّار» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الحياء من الايمان والايمان في الجنة. والبذاء من الجفاء والجفاء في النار» . رواه احمد والترمذي

ব্যাখ্যাঃ (الْإِيمَانُ فِي الْجَنَّةِ) অর্থাৎ ঈমানদার ব্যক্তি জান্নাতে যাবে।

আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ঈমানদার ব্যক্তিকে ‘ঈমান’ বলে সম্বোধন করার কারণ হলো, তার মাঝে কিছু বৈশিষ্ট্য এমনভাবে স্থান পেয়েছে যা তাকে অন্যদের ওপর প্রাধান্য দিয়েছে।

(وَالْجَفَاءُ) অর্থাৎ ওয়া‘দা পূরণ না করে ভঙ্গকারীগণ যারা সবসময় কঠোর স্বভাব ও কঠোর অন্তরের উপর অটল থাকে।

(فِي النَّار) বলতে হতে পারে সামরিক অথবা চিরস্থায়ী। কারণ তা পূর্ণ ঈমানের বিপরীত অথবা কঠোর হৃদয়ের মানুষ কুফরীর মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়ে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০০৯; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব

৫০৭৮-[১১] মুযায়নাহ্ গোত্রের জনৈক ব্যক্তি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! উত্তম কোন্ জিনিসটি যা মানব জাতিকে দেয়া হয়েছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ’’উত্তম স্বভাব’’। [ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) ’’শু’আবুল ঈমানে’’ বর্ণনা করেছেন][1]

وَعَنْ رَجُلٍ
مِنْ مُزَيْنَةَ قَالَ: قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا خَيْرُ مَا أُعْطِيَ الْإِنْسَانُ؟ قَالَ: «الْخُلُقُ الْحَسَنُ» رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَان»

وعن رجل من مزينة قال: قالوا: يا رسول الله ما خير ما اعطي الانسان؟ قال: «الخلق الحسن» رواه البيهقي في «شعب الايمان»

ব্যাখ্যাঃ الْخُلُقُ الْحَسَنُ বা উত্তম স্বভাব, যা মানুষকে সমাজের মানুষের কাছে সম্মানিত ও গ্রহণীয় করে তোলে। কেউ যতই শিক্ষেত বা সম্পদশালী হোক না কেন তার স্বভাব-চরিত্র যদি ভালো না হয় তবে সে সমাজের কাছে একজন ঘৃণিত ব্যক্তি। পক্ষান্তরে পরকালে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দিবেন। এজন্য দুনিয়াতে চরিত্রকে ঠিক রাখার জন্য মহান আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করে ভালো চরিত্র গঠনে মনোযোগী হওয়া ও আপ্রাণ চেষ্টা করা সকলের জন্য আবশ্যক। [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব

৫০৭৯-[১২] আর উসামাহ্ ইবনু শরীক (রাঃ) হতে শারহুস্ সুন্নাহ্-তে বর্ণিত হয়েছে।[1]

وَفِي
شَرْحِ السُّنَّةِ
عَنْ أُسَامَةَ بْنِ شَرِيكٍ

وفي شرح السنة عن اسامة بن شريك

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব

৫০৮০-[১৩] হারিসাহ্ ইবনু ওয়াহ্ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুশ্চরিত্র, মন্দ স্বভাব ও কঠোর ভাষা ব্যবহারকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

রাবী বলেন, الْجَوَّاظُ অর্থ- দুশ্চরিত্র, মন্দ স্বভাব। এ হাদীসটি আবূ দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর ’’সুনান’’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন। আর বায়হাক্বী ’’শু’আবুল ঈমান’’-এ বর্ণনা করেন এবং জামি’উল উসূল প্রণেতা এতে হারিসাহ্ হতে বর্ণনা করেন। অনুরূপ শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থে হারিসাহ্ হতে বর্ণিত ভাষ্যটি নিম্নরূপ- لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ الْجَوَّاظُ الْجَعْظَرِيُّ. يُقَالُ : الْجَعْظَرِيُّ : الْفَظُّ الْغَلِيْظُ. আর মাসাবীহ গ্রন্থে এ হাদীসটি ’ইকরিমাহ্ ইবনু ওয়াহ্ব হতে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে এগুলো উল্লেখ করা হয়েছে যে, الْجَوَّاظُ সে ব্যক্তিকে বলা হয়, যে লোক ধন-সম্পদ সঞ্চয় করে; কিন্তু সেটা থেকে কাউকে দান করে না এবং الْجَعْظَرِيُّ শব্দের অর্থ হচ্ছে কঠোর ও রুক্ষ ভাষা ব্যবহারকারী।[1]

وَعَنْ حَارِثَةَ
بْنِ وَهْبٌ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ الْجَوَّاظُ وَلَا الْجَعْظَرِيُّ» قَالَ: وَالْجَوَّاظُ: الْغَلِيظُ الْفَظُّ رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ فِي «سُنَنِهِ» . وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ وَصَاحِبُ» جَامِعِ الْأُصُولِ «فِيهِ عَنْ حَارِثَةَ. وَكَذَا فِي» شَرْحِ السُّنَّةِ عَنْهُ وَلَفْظُهُ قَالَ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ الْجَوَّاظُ الْجَعْظَرِيُّ» . يُقَالُ: الْجَعْظَرِيُّ: الْفَظُّ الْغَلِيظُ
وَفِي نُسَخِ «الْمَصَابِيحِ» عَنْ عِكْرِمَةَ بْنِ وَهْبٍ وَلَفْظُهُ قَالَ: وَالْجَوَّاظُ: الَّذِي جَمَعَ وَمَنَعَ. وَالْجَعْظَرِيُّ: الغليظ الْفظ

وعن حارثة بن وهب قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا يدخل الجنة الجواظ ولا الجعظري» قال: والجواظ: الغليظ الفظ رواه ابو داود في «سننه» . والبيهقي في «شعب الايمان وصاحب» جامع الاصول «فيه عن حارثة. وكذا في» شرح السنة عنه ولفظه قال: «لا يدخل الجنة الجواظ الجعظري» . يقال: الجعظري: الفظ الغليظ وفي نسخ «المصابيح» عن عكرمة بن وهب ولفظه قال: والجواظ: الذي جمع ومنع. والجعظري: الغليظ الفظ

ব্যাখ্যাঃ (الْجَوَّاظُ وَلَا الْجَعْظَرِيُّ) الْجَوَّاظُ শব্দের অর্থ سيء الْخُلُقِ বা দুশ্চরিত্র, মন্দ স্বভাব।

(الْجَعْظَرِيُّ) ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যে ধন-সম্পদ জমা করে এবং সেটা কাউকে দান করে না। অর্থাৎ চরম কৃপণ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(الْجَوَّاظُ) অর্থ রুক্ষ বা কঠোরভাষী ও অহংকারী বলা হয়, যে তার মাথাকে কারো নিকট নত করে না। এও বলা হয় যে, কোন ব্যক্তির মাঝে যে গুণাবলী নেই সেই গুণের প্রশংসা ও সুনাম-সুখ্যাতি অন্যের নিকট থেকে যে শুনতে চায় তাকে جَعْظَرِيُّ বলে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৯৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব

৫০৮১-[১৪] আবুদ্ দারদা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন মু’মিনদের পাল্লায় ভারী যে বস্তুটি রাখা হবে, তা হলো উত্তম চরিত্র। আল্লাহ তা’আলা অশ্লীলভাষী ও বাচালকে ঘৃণা করেন। (তিরমিযী;[1] আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহীহ। ইমাম আবূ দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ)-এর প্রথমাংশ বর্ণনা করেন।

وَعَنْ أَبِي
الدَّرْدَاءَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ أَثْقَلَ شَيْءٍ يُوضَعُ فِي ميزانِ الْمُؤمن يومَ الْقِيَامَة خُلُقٌ حسنٌ وَإِنَّ اللَّهَ يُبْغِضُ الْفَاحِشَ الْبَذِيءَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: حَدِيث حسن صَحِيح. وروى أَبُو دَاوُد الفصلَ الأول

وعن ابي الدرداء عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «ان اثقل شيء يوضع في ميزان المومن يوم القيامة خلق حسن وان الله يبغض الفاحش البذيء» . رواه الترمذي وقال: حديث حسن صحيح. وروى ابو داود الفصل الاول

ব্যাখ্যাঃ (من خلق حسن) এর কারণ হলো, নিশ্চয় মহান আল্লাহ সৎকর্মশীল ব্যক্তিকে ভালোবাসেন এবং তিনি তার প্রতি সন্তুষ্ট।

(الْفَاحِشَ) যে ব্যক্তি কটু কথা বলে, অথবা যে ব্যক্তির জিহ্বা অনুচিত কথা বলে তাকে الْفَاحِشَ বলে।

(الْبَذِيءَ) ‘আল্লামা মুনযিরী (রহিমাহুল্লাহ) ‘আত্ তারগীব’ এর মধ্যে বলেন, الْبَذِيءَ বলা হয়, যে ব্যক্তি কথা-বার্তা বলার সময় ফাহিশা কথা বলে।

‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যে কথা ও কাজ মহান আল্লাহকে রাগান্বিত করে তার কোন ওযন ও পরিমাণ নেই। যেমন যে কাজ তিনি ভালোবাসেন তার জন্য তার নিকট বিরাট মর্যাদা আছে। মহান আল্লাহ কাফিরদের ব্যাপারে বলেন, فَلَا نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا ‘‘আর আমি কিয়ামতের দিন  তাদের জন্য দাঁড়িপাল্লা (ওজন) কায়িম করব না’’- (সূরাহ্ আল কাহ্ফ ১৮ : ১০৫)। প্রসিদ্ধ হাদীসে আছে,

كَلِمَتَانِ خَفِيفَتَانِ عَلَى اللِّسَانِ ثَقِيلَتَانِ فِي الْمِيزَانِ حَبِيبَتَانِ إِلَى الرَّحْمٰنِ سُبْحَانَ الله وبحمده سبحان الله العظيم

অর্থ : দু’টি কালিমাহ্ আছে, যেগুলো দয়াময়ের কাছে অতি প্রিয়, মুখে উচ্চারণ করা খুবই সহজ, দাঁড়িপাল্লায় অত্যন্ত ভারী। (বাণী দু‘টো হল) ‘‘সুব্হা-নাল্ল-হি ওয়া বিহামদিহী সুবহা-নাল্ল-হিল ‘আযীম’’ (আমরা আল্লাহর প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করছি, মহান আল্লাহ [যাবতীয় ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে] অতি পবিত্র)- (সহীহুল বুখারী ৬৪০৬, মুসলিম ২৬৯৪)। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০০২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবুদ দারদা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব

৫০৮২-[১৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, মু’মিনগণ তাদের উত্তম চরিত্র দ্বারা রাতে ’ইবাদাতকারীর ও দিনে সায়িমের (রোযাদারের) মর্যাদা লাভ করে থাকবে। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ
عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ الْمُؤْمِنَ لَيُدْرِكُ بِحُسْنِ خُلُقِهِ دَرَجَةَ قَائِمِ اللَّيْل وصائم النَّهَار» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن عاىشة رضي الله عنها قالت: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «ان المومن ليدرك بحسن خلقه درجة قاىم الليل وصاىم النهار» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যাঃ دَرَجَةَ الصَّائِمِ الْقَائِمِ অর্থাৎ আনুগত্যের সাথে রাতে তাহাজ্জুদের সালাত আদায়কারীর মতো মর্যাদা দেয়া হবে। এই মর্যাদা কেবল উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিকে দেয়া হবে। কারণ সিয়াম পালনকারী ব্যক্তি ও মুসল্লী ব্যক্তি তাহাজ্জুদের সালাত আদায়কালে উভয়ে নিজের নাফসের সাথে সংগ্রাম করে উভয়ের অংশের ক্ষেত্রে। আর যে ব্যক্তি বিভিন্ন স্বভাব চরিত্রের বিপরীতে মানুষের সাথে উত্তম চরিত্রের কারণে সদাচরণ করে, সে ব্যক্তিও পরোক্ষভাবে বহু আত্মার সাথে সংগ্রাম করে। তাই সে ব্যক্তির মর্যাদা সিয়াম পালনকারীর ও রাতে তাহাজ্জুদ আদায়কারীর সমান; কখনো তাদের চেয়েও বেশি। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৯০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব

৫০৮৩-[১৬] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ তুমি যখন যেভাবে থাকবে, আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করবে। মন্দ কাজ হয়ে গেলে সাথে সাথেই ভালো কাজ করবে। কারণ ভালো কাজ মন্দকে মুছে ফেলে। আর মানুষের সাথে সদাচরণ করবে। (আহমাদ, তিরমিযী ও দারিমী)[1]

وَعَنْ
أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اتَّقِ اللَّهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ والدارمي

وعن ابي ذر قال: قال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اتق الله حيثما كنت واتبع السيىة الحسنة تمحها وخالق الناس بخلق حسن» . رواه احمد والترمذي والدارمي

ব্যাখ্যাঃ (اتَّقِ اللهَ) অর্থাৎ যাবতীয় ওয়াজিব কাজ (আল্লাহ যা করার নির্দেশ দিয়েছেন তা) পালন করা এবং যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকাকে তাকওয়া বলা হয়। কেননা তাকওয়া হলো দীনের মূল ভিত্তি। আর এরই দ্বারা বিশ্বাসের স্তর উন্নীত হয়।

(حَيْثُ مَا كُنْتَ) অর্থাৎ তুমি নির্জনে থাক বা নি‘আমাতের মাঝে থাক অথবা বিপদাপদে থাক সর্বদা তাকওয়া অবলম্বন করবে। কেননা মহান আল্লাহ তোমার গোপন বিষয় সম্পর্কে অবহিত যেরূপ তোমার প্রকাশ্য বিষয় তিনি অবহিত। সুতরাং তার আদেশ ও যে সব কাজ তাকে সন্তুষ্ট করে তা সংরক্ষণ করা তোমার একান্ত দায়িত্ব। পাশাপাশি তার রাগের ও অসন্তুষ্টির বিষয় হতেও বিরত থাকা কর্তব্য।

মহান আল্লাহ বলেনঃ وَاتَّقُوا اللهَ الَّذِىْ تَسَاءَلُونَ بِه وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا

‘‘তোমরা সেই আল্লাহকে ভয় করো যার নামে তোমরা পরস্পর পরস্পরের কাছে চাও ও আত্মীয়তার বন্ধন গড়ে তোলো, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের সকল বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন।’’ (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ১)

(أَتْبِعِ السَّيِّئَةَ) অর্থাৎ তোমার থেকে সগীরাহ্ গুনাহ হয়ে যায়, অনুরূপভাবে কাবীরাহ্ গুনাহও। ‘আম বা সাধারণভাবে এটা বুঝা যায়। আর এ মতটি সাধারণ কতিপয় ‘উলামা বলেছেন। তবে জামহূর ‘উলামার মত হলো, কেবলমাত্র সগীরাহ্ বা ছোট গুনাহগুলো ক্ষমা হয়ে যাবে।

(الْحَسَنَةَ) হাদীসে হাসানাহ্ বলতে সালাত, সাদাকা অথবা ইস্তিগফার ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে।

(وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ) এখানে خُلُقْ শব্দটি المخالقة মাসদার থেকে আমর এর সীগাহ। اسم فاعل নয়। যার অর্থ হলো মানুষের সাথে মিলিত হও বা তাদের সাথে সদাচরণ কর। আর (خُلُقٍ حَسَنٍ) হলো সহাস্যমুখে মানুষের সাথে মিলিত হওয়া। লজ্জার ক্ষেত্রে লজ্জাশীলতা প্রদর্শন করা। দানক্ষেত্রে দান করা ও দুঃখ-কষ্ট সহ্য করা। কারণ এ সকল কাজ যে করে সে দুনিয়াতে সফলতা লাভ করতে পারে এবং পরকালে মুক্তি লাভ করে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৮৭)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব

৫০৮৪-[১৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাদেরকে সে লোকের কথা বলে দেব না? যার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম হবে, যাকে জাহান্নামের আগুন পরিত্যাগ করবে। সে ঐ লোক, যার মেজাজ নরম, স্বভাব কোমল ও আচরণ নম্র। [আহমাদ ও তিরমিযী; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসটি গরীব।)[1]

وَعَنْ عَبْدِ
اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِلَّا أُخْبِرُكُمْ بِمَنْ يَحْرُمُ عَلَى النَّارِ وَبِمَنْ تَحْرُمُ النَّارُ عَلَيْهِ؟ عَلَى كُلِّ هَيِّنٍ لَيِّنٍ قَرِيبٍ سَهْلٍ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيب

وعن عبد الله بن مسعود قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الا اخبركم بمن يحرم على النار وبمن تحرم النار عليه؟ على كل هين لين قريب سهل» . رواه احمد والترمذي وقال: هذا حديث حسن غريب

ব্যাখ্যাঃ (عَلٰى كُلِّ هَيِّنٍ لَيِّنٍ) অর্থাৎ জাহান্নাম ঐ ব্যক্তির জন্য হারাম যার আচরণ নম্র, হাসি মুখে মানুষের সাথে কথা বলে, সহনশীল ও যার স্বভাব কোমল। (قَرِيبٍ) অর্থাৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মানুষের সাথে একত্রিত হওয়া ও অত্যন্ত হৃদ্যতার সাথে মানুষের সাথে মেলামেশা করা। (سَهْلٍ) অর্থাৎ শক্তি ও সাধ্যানুযায়ী অন্যের প্রয়োজন মেটাতে সচেষ্ট হওয়া, ক্রয়বিক্রয় ইত্যাদির মধ্যে উদারতা ও সহনশীলতা প্রদর্শন করা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব

৫০৮৫-[১৮] আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ পুণ্যবান লোকেরা আত্মভোলো ও দয়ালু হয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে পাপী লোকেরা ধূর্ত, দুশ্চরিত্র ও কৃপণ হয়ে থাকে। (আহমাদ, তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْمُؤْمِنُ غِرٌّ كَرِيمٌ وَالْفَاجِرُ خَبٌّ لَئِيمٌ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ

وعن ابي هريرة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «المومن غر كريم والفاجر خب لىيم» . رواه احمد والترمذي وابو داود

ব্যাখ্যাঃ (الْمُؤْمِنُ غِرٌّ كَرِيمٌ) অর্থাৎ এখানে মু’মিনকে দু’টি গুণে গুণান্বিত করা হয়েছে। তারা কখনো অসৎকাজের শিকার হয়ে পড়লেও এটা তাদের মূর্খতার কারণে হয় না; বরং তাদের সভ্যতা, নম্রতা ও সৎচরিত্রের জন্য হয়ে থাকে। এটা তাদের সরল আত্মঃকরণ ও মানুষের প্রতি সৎ ধারণার কারণে হয়ে থাকে।

(الْفَاجِرُ خَبٌّ لَئِيمٌ) অর্থাৎ কৃপণ তার মাঝে অসৎ চরিত্রের প্রভাব থাকার কারণে। একজন মু’মিন ব্যক্তি কোন চক্রান্তমূলক কাজে জড়িত হয় না। সে তার কোমলতা ও সরলতার জন্য এ ফিতনা ছড়ানোর ভয়াবহতা সম্পর্কে তার জ্ঞান থাকার কারণে সে এরূপ কাজ থেকে বিরত থাকে। সে যে অজ্ঞতার কারণে বিষয়টি এমন নয়। কিন্তু এরূপ কাজ থেকে বিরত থাকল, সে বিরত থাকল তার উত্তম চরিত্রের কারণে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৬৪; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব

৫০৮৬-[১৯] মাকহূল (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিন লোক ঐ উটের মতো ধীরস্থির ও নরম স্বভাবের হয়ে থাকে, যার নাকের মধ্যে রশি লাগানো হয়েছে। যখন সেটাকে টেনে নেয়া হয়, সে টেনে চলে এবং পাথরের উপর বসতে চাইলে সে পাথরের উপরেই বসে পড়ে। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) এ হাদীসটি ’’মুরসাল’’ হিসেবে বর্ণনা করেন।][1]

وَعَنْ مَكْحُولٍ
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمُؤْمِنُونَ هَيِّنُونَ لَيِّنُونَ كَالْجَمَلِ الْآنِفِ إِنْ قِيدَ انْقَادَ وَإِنْ أُنِيخَ عَلَى صخرةٍ استَناخَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ مُرْسلا

وعن مكحول قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «المومنون هينون لينون كالجمل الانف ان قيد انقاد وان انيخ على صخرة استناخ» . رواه الترمذي مرسلا

ব্যাখ্যাঃ (الْمُؤْمِنُونَ هَيِّنُونَ لَيِّنُونَ كَالْجَمَلِ...) হাদীসটি সম্পর্কে ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ প্রত্যেক মু’মিন ব্যক্তি আল্লাহর পূর্ণ আনুগত্যের সাথে জীবন-যাপন করে। আর তারা সকলে চেষ্টা করে তাদের রবের সন্তুষ্টি অর্জন করার। যেমনিভাবে একটা উট যখন তার নাকে রশি বাধা থাকে তখন তার মালিককে খুশি করার জন্য যেখানে যা করা দরকার সেখানে তাই করে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ মাকহূল (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব

৫০৮৭-[২০] ইবনু ’উমার (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে মুসলিম মানুষের সাথে মিলেমিশে বাস করে এবং মুসলিমের জ্বালা-যন্ত্রণায় ধৈর্যধারণ করে, সে ঐ মুসলিমের চেয়ে উত্তম, যে মানুষের সাথে মিশে না এবং তাদের জ্বালা-যন্ত্রণা সহ্য করে না। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنِ
ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْمُسْلِمُ الَّذِي يُخَالِطُ النَّاسَ وَيَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ أَفْضَلُ مِنَ الَّذِي لَا يُخَالِطُهُمْ وَلَا يَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وابنُ مَاجَه

وعن ابن عمر عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «المسلم الذي يخالط الناس ويصبر على اذاهم افضل من الذي لا يخالطهم ولا يصبر على اذاهم» . رواه الترمذي وابن ماجه

ব্যাখ্যাঃ الَّذِي يُخَالِطُ النَّاسَ অত্র হাদীসের বর্ণনায় ‘সুবুলুস্ সালাম’ গ্রন্থে বলা হয়েছে : বলা হয়েছে, যে মু’মিন ব্যক্তি সমাজের মানুষের সাথে মিলিত হয় সে উত্তম ব্যক্তি। তার ফাযীলাতের কথা এ হাদীসে বলা হয়েছে। এর কারণ হলো সে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে বাধা দেয়ার মতো দু’টি ফরয কাজ সম্পাদন করতে পারে। এর পাশাপাশি সে তাদের সাথে সদাচরণের সুযোগ পায়। যে ব্যক্তি সমাজ জীবনে মানুষের সাথে লেনদেন এবং আচার অনুষ্ঠানে মেলামেশা করেনি তথা পার্থিব জীবনে দুঃখকষ্ট ও জ্বালা-যন্ত্রণায় পতিত হয়নি, এমন ব্যক্তির চেয়ে যে ব্যক্তি-এসব কিছুতে পতিত হয়ে ধৈর্যের সাথে সেটাকে অতিক্রম করে, সে অনেক উত্তম মু’মিন। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৫০৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব

৫০৮৮-[২১] সাহল ইবনু মু’আয (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার নিজের রাগকে সংযত করে রাখে এমন অবস্থায় যে, সে নিজের রাগ দ্বারা নিজের মনোবৃত্তিকে চরিতার্থ করতে পারে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে সৃষ্টিকুলের সম্মুখে ডাকবেন এবং যে হূরকে সে পছন্দ করে, তাকে সে হূরকেই বেছে নেয়ার জন্য অনুমতি দেয়া হবে। [তিরমিযী ও আবূ দাঊদ; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসটি গরীব।][1]

وَعَن سهلِ
بن معاذٍ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كَظَمَ غَيْظًا وَهُوَ يَقْدِرُ عَلَى أَنْ يُنفِّذَه دعاهُ اللَّهُ على رؤوسِ الْخَلَائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُخَيِّرَهُ فِي أَيِّ الْحُورِ شَاءَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيث غَرِيب

وعن سهل بن معاذ عن ابيه ان النبي صلى الله عليه وسلم قال: «من كظم غيظا وهو يقدر على ان ينفذه دعاه الله على رووس الخلاىق يوم القيامة حتى يخيره في اي الحور شاء» . رواه الترمذي وابو داود وقال الترمذي: هذا حديث غريب

ব্যাখ্যাঃ (فِي أَيِّ الْحُورِ شَاءَ) অর্থাৎ সে যে হূরকে গ্রহণ করতে চায় তাকে সেটা গ্রহণ করার ক্ষমতা দেয়া হবে। এটা মূলত জান্নাতে প্রবেশের প্রতি ইঙ্গিত করেছে। অর্থাৎ এ কাজটি করলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তার মর্যাদাও অনেক উঁচু হবে।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ মহান আল্লাহ এখানে নিয়ন্ত্রণ করার গুণকে প্রশংসা করেছেন। কেননা তা নাফ্সে আম্মারা-কে মন্দের দিকে ধাবিত করে। এ কারণে আল্লাহ তাদের প্রশংসায় বলেন, وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ ‘‘...এবং রাগ দমন করে ও মানুষকে ক্ষমা করে...’’- (সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ১৩৪)। আর যার আত্মাকে সে স্বীয় প্রবৃত্তি থেকে নিবৃত করতে সক্ষম হলো জান্নাত হবে তার থাকার জায়গা। আর চক্ষু শীতলকারী হূর হবে তার পুরস্কার। (তুহফাতুল আহওযায়ী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০২১)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব

৫০৮৯-[২২] ইমাম আবূ দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ)-এর এক রিওয়ায়াতে আছে, যা সুওয়াইদ ইবনু ওয়াহ্ব (রহিমাহুল্লাহ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীর সন্তান হতে বর্ণনা করেছেন। উক্ত ব্যক্তি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তির অন্তরকে ঈমান ও শান্তি দ্বারা ভরে দেবেন। আর সুওয়াইদ (রহিমাহুল্লাহ)-এর مَنْ تَرَكَ لِبْسَ ثَوْبِ جَمَالٍ হাদীসটি كِتَابُ اللِّبَاسِ-এ বর্ণিত হয়েছে।[1]

وَفِي رِوَايَةٍ
لِأَبِي دَاوُدَ عَنْ سُوَيْدِ بْنِ وَهْبٍ عَنْ رَجُلٍ مِنْ أَبْنَاءِ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: «مَلأ اللَّهُ قلبَه أمْناً وإِيماناً»
وَذُكِرَ حَدِيثُ سُوْيَدٍ: «مَنْ تَرَكَ لِبْسَ ثَوْبِ جما ل» فِي «كتاب اللبَاس»

وفي رواية لابي داود عن سويد بن وهب عن رجل من ابناء اصحاب النبي صلى الله عليه وسلم عن ابيه قال: «ملا الله قلبه امنا وايمانا» وذكر حديث سويد: «من ترك لبس ثوب جما ل» في «كتاب اللباس»

হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৪ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে