পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব
৫০৬৮-[১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা নিজে নম্র, তিনি নম্রতাকেই ভালোবাসেন। তিনি কঠোরতার উপর যা দান করেন না, তা নম্রতার জন্য দান করেন। নম্রতা ছাড়া অন্যকিছুতেই তা দান করেন না। (মুসলিম)[1]
মুসলিম-এর অপর বর্ণনায় আছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে বললেনঃ নম্রতাকে নিজের জন্য বাধ্যতামূলক করে নাও এবং কঠোরতা ও নির্লজ্জতা থেকে নিজেকে রক্ষা করো। কেননা যে জিনিসের মধ্যে নম্রতা আছে, সে নম্রতাই তার সৌন্দর্য বৃদ্ধির কারণ হয়। আর যে জিনিস থেকে নম্রতাকে প্রত্যাহার করা হয়, সেটা ত্রুটিপূর্ণ হয়ে যায়।
بَابُ الرِّفْقِ وَالْحَيَاءِ وَحُسْنِ الْخُلُقِ
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ وَيُعْطِي عَلَى الرِّفْقِ مَا لَا يُعْطِي عَلَى الْعُنْفِ وَمَا لَا يُعْطِي عَلَى مَا سِوَاهُ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ. وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ: قَالَ لِعَائِشَةَ: «عَلَيْكِ بِالرِّفْقِ وَإِيَّاكِ وَالْعُنْفَ وَالْفُحْشَ إِنَّ الرِّفْقَ لَا يَكُونُ فِي شَيْءٍ إِلَّا زَانَهُ وَلَا يُنْزَعُ مِنْ شَيْء إِلَّا شانه»
ব্যাখ্যাঃ (إِنَّ اللهَ تَعَالٰى رَفِيقٌ) অর্থাৎ নিশ্চয় মহান আল্লাহ তার বান্দার প্রতি দয়াশীল, তিনি তাদের প্রতি সহজ চান। কোন কাজ তাদের ওপর কঠিন হোক, এটা তিনি চান না। তিনি তাদের শক্তির চেয়ে কঠিন কোন দায়িত্ব অর্পণ করেন না।
(وَيُعْطِي عَلَى الرِّفْقِ) অর্থাৎ দুনিয়াতে কোমল ব্যবহার করার দরুন তিনি বান্দাকে সুন্দর জীবন-যাপন, কাজ-কর্ম সহজ করে দেন। আর পরকালে তিনি এর প্রতিদান স্বরূপ অফুরন্ত প্রতিদান প্রদান করবেন।
(مَا لَا يُعْطِي عَلَى الْعُنْفِ) এখানে الْعُنْفِ শব্দের অর্থ নির্দয়, নিষ্ঠুর ও কঠোরমনা হওয়া। এটা (الرِّفْقِ) তথা দয়া, অনুগ্রহ ও সহনশীল হওয়ার বিপরীত। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৯৯)
পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব
৫০৬৯-[২] জারীর (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যাকে নম্রতা থেকে বঞ্চিত করা হয়, যেন তাকে পুণ্য থেকে বঞ্চিত করা হয়। (মুসলিম)[1]
بَابُ الرِّفْقِ وَالْحَيَاءِ وَحُسْنِ الْخُلُقِ
وَعَنْ جَرِيرٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مِنْ يُحْرَمِ الرِّفْقَ يُحْرَمِ الْخَيْرَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যাঃ (مِنْ يُحْرَمِ الرِّفْقَ) অর্থাৎ আল্লাহ যাকে নম্রতা থেকে বঞ্চিত করেন, যার থেকে তা কেড়ে নেন। মূলত সে ব্যক্তি যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। কারণ কোমলতা, নম্রতা, ধীরস্থিরতা ও যাবতীয় কাজে তাড়াহুড়া পরিহার না করলে কল্যাণ সাধিত হয় না। (ইবনে মাজাহ্ ৩য় খন্ড, হাঃ ৩৬৮৭)
হাদীসটির বাস্তবিক শিক্ষা : নম্রতা মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত একটি মহৎ গুণ যা যাবতীয় কল্যাণের উৎস। তিনি যাকে যাবতীয় মেহেরবানীতে আবদ্ধ করতে চান, তাকে সেটা দান করেন। পক্ষান্তরে যাকে যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করতে চান, তাকে এ গুনটি থেকেও বঞ্চিত করা হয়, যেন তাকে সকল প্রকার পুণ্য থেকে বঞ্চিত করা হয়। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব
৫০৭০-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের এক ব্যক্তির নিকট দিয়ে গমন করছিলেন। সে আনসারী তখন তাঁর ভাইকে লজ্জা সম্পর্কে উপদেশ দিচ্ছিল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে ছেড়ে দাও। কেননা লজ্জা ঈমানের অংশ। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الرِّفْقِ وَالْحَيَاءِ وَحُسْنِ الْخُلُقِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ وَهُوَ يَعِظُ أَخَاهُ فِي الْحَيَاءِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «دَعْهُ فَإِنَّ الْحَيَاءَ مِنَ الْإِيمَانِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ (فَإِنَّ الْحَيَاءَ مِنَ الْإِيمَانِ) ইবনু কুতায়বাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ নিশ্চয় লজ্জা তার অধিকারী ব্যক্তিকে অর্থাৎ লজ্জাশীল ব্যক্তিকে অবাধ্য বা পাপের কাজ থেকে বিরত রাখে যেমন ঈমান বিরত রাখে। এজন্যই হাদীসে লজ্জাকে ঈমান বলা হয়েছে। যেভাবে কোন জিনিস অন্য জিনিসের স্থলাভিষিক্ত হলে তাকে সে জিনিসের নামেই নামকরণ করা হয়।
‘আল্লামা রাগিব (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ লজ্জা আত্মাকে মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। মানুষের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তার মনে যা চায় সে সব কাজ করে পশুর মতো হবে না। যে পাপ থেকে নিজেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবে, আর এ কারণেই লজ্জাশীল ব্যক্তি ফাসিক হয় না। এ কারণেই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় লজ্জা করা ঈমানের অঙ্গ। (ফাতহুল বারী ১ম খন্ড, হাঃ ৫০৭০)
হাদীসটির বাস্তবিক শিক্ষা : লজ্জাই মানুষকে নিষিদ্ধ ও পাপের কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে। ঈমান যেমন মহান আল্লাহকে না দেখে বিশ্বাস করার নাম, ঠিক তেমনিভাবে আল্লাহকে না দেখে তাকে লজ্জা করে হারাম ও অপছন্দনীয় কাজ থেকে বিরত থাকার নাম হায়া বা লজ্জা। মূলত লজ্জাই ঈমানের বহিঃপ্রকাশ। কাজেই যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ থেকে আল্লাহকে লজ্জা করে বিরত থাকাই হলো ঈমানের দাবী। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব
৫০৭১-[৪] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লজ্জাশীলতা পুণ্য বৈ কিছুই আনয়ন করে না। অপর এক বর্ণনায় আছে যে, লজ্জাশীলতার সব প্রকারই উত্তম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الرِّفْقِ وَالْحَيَاءِ وَحُسْنِ الْخُلُقِ
وَعَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْحَيَاءُ لَا يَأْتِي إِلَّا بِخَيْرٍ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «الْحيَاء خير كُله» مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ الْحَيَاءُ لَا يَأْتِي إِلَّا بِخَيْرٍ লজ্জা মানুষের কল্যাণই করে। লজ্জা মানুষকে ভয় প্রদর্শন করে, আর সেই কারণে সে তিরষ্কারমূলক কোন কাজে ও পাপের কাজে জড়িত হয় না। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কতক লোক এ হাদীসটির উপর ইশকাল বা প্রশ্ন উত্থাপন করে যে, লজ্জাশীল ব্যক্তি তো এমন মহান কাজে শরম করে, যে কাজে লোক তাকে বেশি মর্যাদা দিবে। আবার সে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা দিতেও ভয় পায়। এ কাজ করতে পারে না লজ্জার কারণে। অনেক সময় সে লজ্জার কারণে তার ওপর যাদের হক আছে তাও যথাযথভাবে পালন করতে পারে না, তাহলে লজ্জা কিভাবে সকল কাজে কল্যাণ নিয়ে আসে?
উত্তর : এ প্রশ্নের উত্তরে ‘উলামার একটি দল উত্তর দিয়েছেন, তাদের মধ্য থেকে শায়খ আবূ ‘আমর ইবনুস্ সলাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এখানে আমরা যে লজ্জার কথা বলেছি তা প্রকৃত লজ্জা নয়। বরং এটি হলো অপারগতা ও সীমালঙ্ঘন। এটাকে শাব্দিক দিক থেকে লজ্জা বলা হয়েছে। শারী‘আতের পরিভাষায় লজ্জার সংজ্ঞা হলো এটা এমন একটা চরিত্রকে বলা হয়, যা মন্দকে পরিহার করার কারণে গড়ে উঠে। আর যাকে যে হক দেয়া দরকার তাকে সে হক প্রদান করতে শেখায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব
৫০৭২-[৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অতীতের নবীদের বাণী থেকে মানুষ যা পেয়েছে তা এই যে, যখন তুমি লজ্জাকে তুলে রাখবে, তখন তোমার মনে যা চায় তা-ই করবে। (বুখারী)[1]
بَابُ الرِّفْقِ وَالْحَيَاءِ وَحُسْنِ الْخُلُقِ
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مِمَّا أَدْرَكَ النَّاسُ مِنْ كَلَامِ النُّبُوَّةِ الْأُولَى: إِذَا لَمْ تَسْتَحى فاصنعْ مَا شئْتَ رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যাঃ (مِنْ كَلَامِ النُّبُوَّةِ الْأُولٰى) ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর অর্থ হলো, লজ্জার বিধান সর্বযুগে প্রতিষ্ঠিত ছিল। আর এর ব্যবহার নুবুওয়াতের প্রথম যুগ থেকেই ওয়াজিব হিসেবে চালু ছিল। কেননা প্রত্যেক নবীই লজ্জার দিকে আহবান করেছেন এবং এরই উপর তাদেরকে প্রেরণ করা হয়েছিল। তাদের শারী‘আতের অন্যান্য বিধানের ন্যায় এ বিধানটি ব্যাহত হয়ে যায়নি। এর কারণ হলো, এটা এমন একটি বিষয় যার প্রতিদান তারা জানতেন। কাজেই সকলেই তার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।
(فاصنعْ مَا شئْتَ) শারহুস্ সুন্নাহ্তে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে কয়েকটি উক্তি আছে : প্রথমটি হলো, এখানে فاصنعْ শব্দটি খবর এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে, যদিও তা ‘আমর-এর শব্দ। যেন তিনি বলেছেন, যখন তোমার লজ্জা তোমাকে নিষেধ না করবে তখন তুমি তোমার অন্তর যে খারাপের দিকে ডাকে তা তুমি করতে পারবে। আর এই অর্থটি করেছেন আবূ ‘উবায়দাহ্। দ্বিতীয়টি হলো, এটি ধমক দেয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন, ﴿اعْمَلُوا مَا شِئْتُمْ﴾ অর্থাৎ ‘‘তোমার মন যা চায় তুমি তাই কর’’- (সূরাহ্ ফুস্সিলাত ৪১ : ৪০)। কেননা মহান আল্লাহ তোমাকে ছেড়ে দিয়েছেন; এ অর্থ করেছেন আবুল ‘আব্বাস। আবূ তৃতীয়টি হলো, ইসহক আল মাওয়ারদী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তুমি যে কাজটি করবে তা করার পূর্বে তোমাকে অপেক্ষা করা উচিত যদি তুমি সে কাজটি করতে লজ্জা না পাও তবে তা করে ফেল। আর যদি তুমি তা করতে লজ্জা পাও তবে তা করা থেকে বিরত থাক। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৮৯; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব
৫০৭৩-[৬] নাও্ওয়াস ইবনু সাম্’আন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পুণ্য ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ পুণ্য হলো উত্তম স্বভাব, আর পাপ হলো যা তোমার অন্তরে যাতনা সৃষ্টি করে এবং তুমি ঐ কাজ জনসমাজে প্রকাশ হওয়াকে খারাপ মনে করো। (মুসলিম)[1]
بَابُ الرِّفْقِ وَالْحَيَاءِ وَحُسْنِ الْخُلُقِ
وَعَن النَّواس بن سمْعَان قَالَ: سَأَلَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْبِرِّ وَالْإِثْمِ فَقَالَ: «الْبِرُّ حُسْنُ الْخُلُقِ وَالْإِثْمُ مَا حَاكَ فِي صَدْرِكَ وَكَرِهْتَ أَن يطلع عَلَيْهِ النَّاس» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ (الْبِرُّ حُسْنُ الْخُلُقِ) এখানে الْبِرُّ শব্দের বিভিন্ন তাফসীর করা হয়েছে। এক স্থানে তাফসীর করা হয়েছে যে, যেখানে আত্মা ও অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। অন্যস্থানে ঈমানের স্থানে তাফসীর করা হয়েছে। অন্যস্থানে যেটা আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয় আর এই দু’টিই হলো (حُسْنُ الْخُلُقِ) বা উত্তম চরিত্র। উত্তম চরিত্রের আরেকটি ব্যাখ্যা আছে তা হলো কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা, রাগ কমিয়ে ফেলা, হাসি-খুশি থাকা, ভালো কথা বলা, আর এ সবগুলো চরিত্রের মধ্যে শামিল।
ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ এখানে الْبِرُّ হলো সদাচরণ, দান করা, আনুগত্য করা যার সমষ্টি হয় (حُسْنُ الْخُلُقِ) বা উত্তম চরিত্র। কোন কোন মুহাক্কিক ‘আলিম বলেছেন, الْبِرُّ বলা হয়, এমন সমষ্টিগত নামকে যা সকল প্রকার আনুগত্য ও সকল প্রকার নৈকট্যমূলক কর্মকাণ্ডকে শামিল করে নেয়। আর এখান থেকেই বলা হয় بِرُّ الْوَالِدَيْنِ বা পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(حَاكَ فِي صَدْرِكَ) অর্থাৎ বুকে নাড়া দেয় ও সন্দিহান হয়। আর তার বক্ষ তাকে কাজটি করার অনুমোদন দেয় না, বরং তার অন্তরে সন্দেহের সৃষ্টি হয়, সে মনে মনে ভয় পায় যে, এ কাজটি করলে হয়ত তার পাপ হবে। (শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ ১৪/২৫৫৩)
(وَكَرِهْتَ أَن يطلع عَلَيْهِ النَّاس) অর্থাৎ তারা নিজেদের চোখ দিয়ে দেখুক বা অন্য কোন কিছু দিয়ে দেখুক (হয়ত বা সিসি ক্যামেরা)। এখানে النَّاس এর ‘আলিফ’ ‘লাম’ جنس (জিনস্) এর জন্য এসেছে। আর জিনস্ বা জাতি পরিপূর্ণতার দিকেই ফিরে। এর কারণ, মানুষের স্বভাব হলো তার মন চায় মানুষ তার ভালোটা লক্ষ্য করুক। আর যখন সে তার কোন কোন কাজ অন্য কেউ দেখুক এটা অপছন্দ করে তখন বুঝতে হবে এ কাজটি তাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করাবে না। অথবা এ কাজটি করার জন্য শারী‘আত তাকে অনুমোদন দেয়নি। বুঝতে হবে যে, এ কাজে তার কোন কল্যাণ নেই। এটা ভালো কাজ নয়। সুতরাং এ কাজটি পাপ ও অকল্যাণকর। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৩৮৯)
পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব
৫০৭৪-[৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি আমার কাছে খুব প্রিয়, যার চরিত্র ভালো। (বুখারী)[1]
بَابُ الرِّفْقِ وَالْحَيَاءِ وَحُسْنِ الْخُلُقِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِن مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَيَّ أَحْسَنَكُمْ أَخْلَاقًا» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
ব্যাখ্যাঃ (أَحْسَنَكُمْ أَخْلَاقًا) অর্থাৎ যার মধ্যে যাবতীয় ভালো-মন্দ শামিল থাকে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হক ও বান্দার হক যথাযথভাবে আদায় করে চলে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
হাদীসটির বাস্তবিক শিক্ষা : মুসলিম সমাজে অনেককে দেখা যায় যারা সত্য কথা বলে, দান-সাদাকা করে, বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করে। সকল মানুষ বিনয়ীর কারণে তাকে ভালোবাসে, ভালো বলে। কিন্তু সে সালাত আদায় করে না, গোপনে পাপ কাজে লিপ্ত হয়। এরূপ সকল ব্যক্তি সমাজের চোখে ভালো হলেও কিন্তু মহান আল্লাহর কাছে ভালো না, অপরাধী। কাজেই ভালো হতে হলে মানুষের হক ও আল্লাহর হক উভয়টিই আদায় করতে হবে। তাহলে উত্তম চরিত্রবান হওয়া যাবে। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব
৫০৭৫-[৮] উক্ত [’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি, যে চরিত্রের দিক দিয়ে উত্তম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الرِّفْقِ وَالْحَيَاءِ وَحُسْنِ الْخُلُقِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أحسنَكم أَخْلَاقًا» . مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أحسنَكم أَخْلَاقًا অত্র হাদীসটিতে সৎচরিত্রের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে এবং সৎচরিত্রবানের ফাযীলাত বর্ণনা করা হয়েছে। এটা আল্লাহর নবীগণের ও বন্ধুগণের গুণাবলী। হাসান বাসরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ উত্তম চরিত্রের স্বরূপ হলো ভালো কাজ করা, মন্দ প্রতিহত করা, হাসি মুখ রাখা। কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ উত্তম চরিত্র হলো মানুষের সাথে সুন্দর ও হাসি-খুশি চেহারা নিয়ে মিলিত হওয়া, তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা, তাদের প্রতি সদয় হওয়া, তাদের কষ্ট দূর করার চেষ্টা করা, তাদের প্রতি সহনশীল হওয়া, তাদের অপছন্দনীয় কাজের উপর ধৈর্য ধারণ করা, তাদের ওপর জোর-জবরদস্তি ও অহংকার পরিহার করা, তাদের ওপর ভুল ও রাগা-রাগি থেকে দূরে থাকা, তাদেরকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)