পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৩৮-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা নারীদেরকে সদুপদেশ দিবে। কারণ তাদেরকে পাঁজরের বাঁকা হাড় হতে সৃষ্টি করা হয়েছে, পাঁজরের হাড়ের মধ্যে সবচেয়ে বাঁকা (হাড়) হলো উপরেরটি। অতঃপর তুমি যদি ঐ হাড়কে সোজা করতে চেষ্টা কর, তবে তা ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি রেখে দাও, তবে সর্বদা বাঁকাই থাকবে। সুতরাং (আমার নাসীহাত) তোমরা নারীদেরকে সদুপদেশ দিবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ عِشْرَةِ النِّسَاءِ وَمَا لِكُلِّ وَاحِدَةِ مِّنَ الْحُقُوْقِ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا فَإِنَّهُنَّ خُلِقْنَ مِنْ ضِلَعٍ وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلَاهُ فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسْرَتَهُ وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ»
ব্যাখ্যা : ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসে উল্লেখিত اِسْتَوْصُوْا শব্দের س (সীন) বর্ণ তলব বা অনুসন্ধানের অর্থ প্রদান করেছে। এখানে অর্থ হয়েছে তুমি স্ত্রীদের হাকের ব্যাপারে তোমার নিজের পক্ষ থেকে কল্যাণ অনুসন্ধান কর, অর্থাৎ কল্যাণের দিকটি বিবেচনা কর।
কাযী ‘ইয়ায (রহঃ) বলেনঃ اِسْتَوْصُوْا এর অর্থ হলো «أُوصِيكُمْ بِهِنَّ خَيْرًا فَاقْبَلُوا وَصِيَّتِي فِيهِنَّ...» ‘‘আমি তোমাদেরকে স্ত্রীদের ব্যাপারে কল্যাণের ওয়াসিয়্যাত করছি, সুতরাং তাদের ব্যাপারে আমার ওয়াসিয়্যাত কবুল কর।’’ উদ্দেশ্য হলো তাদের সাথে কোমল এবং সৌজন্যমূলক আচরণ কর; সৃষ্টিগতভাবে তাদের বক্রতার কারণে পূর্ণ দৃঢ় অবস্থান এবং তার ওপর স্থায়ী থাকা তাদের থেকে আশা করা যাবে না। প্রবাদ বাক্যে আছে, স্ত্রীর (বেহায়াপনা ও বক্রতা) থেকে ধৈর্য ধারণের চেয়ে স্ত্রী গ্রহণ না করে অবিবাহিত থেকে ধৈর্যধারণ অধিক সহজ। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘(বেহায়া, নির্লজ্জ, বক্র) নারীদেরকে বিয়ে না করে বিরত থেকে ধৈর্যধারণ করাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ২৫)।
ضِلَعٍ শব্দটির ض বর্ণে কাসরা বা যের যোগে পঠিত হয়। অর্থাৎ পাঁজরের সবচেয়ে উপরের হাড়, যা সাধারণত বক্র হয়ে থাকে। নারীদরেকে এই বক্র হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ঐতিহাসিক সৃষ্টি তত্ত্ব হলো এই যে, আদি মাতা হাওয়া (আঃ)-কে আদম (আঃ)-এর পাঁজরের বক্র হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতএব নারী সৃষ্টির মৌলতত্ত্ব হলো সে বক্র হাড়ের সৃষ্টি। তাই তাদের স্বভাব প্রকৃতিতে রয়েছে বক্রতা, এ বক্রতা কেউই সম্পূর্ণরূপে সোজা করতে পারবে না। বিধায় তাদের সাথে কোমল নরম ও সৌজন্যমূলক আচরণ করে তাদের থেকে কার্যসিদ্ধি করতে হবে। আর তাদের সাথে জীবন যাপনে গুনাহের সম্ভাবনা না থাকলে সৃষ্টিসুলভ বক্র আচরণে ধৈর্যধারণ করবে। এই বক্রতা জোর জবরদস্তি করে সোজা করতে চাইলে তা ভেঙ্গে যাবে। সুতরাং বেশী জোর জবরদস্তি করা যাবে না।
ইমাম নববী (রহঃ) বলেছেনঃ এ হাদীসে নারীদের প্রতি সহানুভূতি এবং ইহসানের জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে, আর সৃষ্টিগত বক্র স্বভাবের ও অপূর্ণ জ্ঞানের কারণে ধৈর্যধারণের উপদেশ প্রদান করা হয়েছে। আনুগত্যে দৃঢ় না থাকায় অথবা কারণ ছাড়াই তাদের তালাক দেয়াও অপছন্দনীয় কাজ, অতএব তা থেকে বিরত থাকবে। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৩৩১; শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৬৮; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৩৯-[২] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নারীকে পাঁজরের হাড় হতে সৃষ্টি করা হয়েছে, কক্ষনো সে তোমার জন্য সোজা হবার নয়। অতঃপর তুমি যদি তার নিকট হতে উপকার নিতে চাও, তবে ঐ বক্রাবস্থায় আদায় করতে হবে। তুমি যদি সোজা করতে যাও, তবে ভেঙ্গে ফেলতে পার। ’ভেঙ্গে ফেলা’ বলতে তাকে (উপায়-উপায়ন্তর না পেয়ে) তালাক প্রদান করা। (মুসলিম)[1]
بَابُ عِشْرَةِ النِّسَاءِ وَمَا لِكُلِّ وَاحِدَةِ مِّنَ الْحُقُوْقِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ لَنْ تَسْتَقِيمَ لَكَ عَلَى طَرِيقَةٍ فَإِنِ اسْتَمْتَعْتَ بِهَا اسْتَمْتَعْتَ بِهَا وَبِهَا عِوَجٌ وَإِنْ ذَهَبْتَ تقيمها كسرتها وَكسرهَا طَلاقهَا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এখানে নারী দ্বারা নারী জাতিকে বুঝানো হয়েছে অথবা নারী জাতির আদি সত্বা আদি মাতা হাওয়াকে বুঝানো হয়েছে। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল আদামের পাঁজরের উপরের বাঁকা হাড় থেকে। তুমি তাকে সর্ববিষয়ে এবং সর্বদাই সোজা রাখতে পারবে না বরং সে একেক সময় একেক অবস্থা ধারণ করবে। কখনো তোমার অবদানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে, কখনো বা কুফরী করবে, কখনো আনুগত্য করবে, কখনো অবাধ্যচারী হবে, কখনো হবে অল্পে তুষ্ট, কখনো হবে সীমালঙ্ঘনকারী স্বেচ্ছাচারী।
নারীর এ বক্রতার মধ্য দিয়েই তুমি তোমার ফায়দা হাসিল করে নিবে। আর যদি বেশী জোরাজুরি কর তাহলে তাকে সোজা তো করতেই পারবে না, বরং ভেঙ্গে ফেলবে, অর্থাৎ তালাক দিয়ে দিতে হবে। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীসে বাঁকা হাড় সোজা করা যে অসম্ভব তার ঘোষণা রয়েছে। অর্থাৎ সোজা করতে গিয়ে ভাঙ্গা ছাড়া যদি উপায়ই না থাকে তবে তা ভেঙ্গে ফেলবে বা তালাক প্রদান করবে। কিন্তু তালাক দেয়া তো কাম্য নয়। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৬৮; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৪০-[৩] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মু’মিন যেন মু’মিনাহ্-কে ঘৃণা না করে (বা তার প্রতি শত্রুতা পোষণ না করে); যদি তার কোনো আচরণে সে অসন্তোষ প্রকাশ করে, তবে অন্য আর এক আচার-ব্যবহারে সন্তুষ্টি লাভ করবে। (মুসলিম)[1]
بَابُ عِشْرَةِ النِّسَاءِ وَمَا لِكُلِّ وَاحِدَةِ مِّنَ الْحُقُوْقِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী : (لَا يَفْرَكْ) শেষ অক্ষর সাকীন বা জযম কিংবা পেশ উভয় যোগ পাঠ সিদ্ধ। (ر) বর্ণটি যবর যোগে পঠিত হয়; আভিধানিক অর্থ মর্দন করা, দলিত করা। মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেনঃ (فَرْكٌ) শব্দটি بُعْضٌ এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ ঘৃণা, অবজ্ঞা, অপছন্দ ইত্যাদি। হাদীসের অর্থ দাঁড়ায়, কোনো মু’মিন পুরুষ কোনো মু’মিনাহ্ নারীকে অর্থাৎ স্বামী তার স্ত্রীকে ঘৃণা করবে না। কোনো বিষয়েই ঘৃণা বা অবজ্ঞা করবে না, কারণ তার মধ্যে অন্য যে গুণটি রয়েছে তাতে সে খুশি হবে। একজন মানুষ হিসেবে সকল গুণ তার মধ্যে থাকতে পারে না।
কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ (لَا يَفْرَكْ) এটা নাফী বা না-বাচক কর্ম কিন্তু অর্থ প্রদান করেছে নাহী বা নিষেধাজ্ঞাবাচক কর্মের। এর অর্থ হয়েছে স্ত্রীর অপছন্দনীয় কিছু দেখে তাকে অবজ্ঞা অথবা ঘৃণা করা কোনো পুরুষের জন্য উচিত নয়। কেননা একটি বিষয় সে অপছন্দ করছে অন্যটি সে অবশ্যই পছন্দ করবে এবং তাতে খুশি হবে। এই ভালো গুণটি দিয়ে সে খারাপটির মোকাবেলা করবে। এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, দোষ ছাড়া কোনো মানুষই পাওয়া যায় না, কেউ যদি দোষ ছাড়া কোনো মানুষ খুঁজতে যায় তাহলে সে সাথিহীন একাই পড়ে থাকবে।
এতে আরো ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, সকল মানুষই বিশেষ করে মু’মিনের মধ্যে কতিপয় উত্তম ও প্রশংসিত স্বভাব বা গুণাবলী রয়েছে, এই উত্তম আচরণ ও গুণাবলীকে বিবেচনায় আনবে আর অন্য খারাপ স্বভাবগুলো ঢেকে রাখবে এবং এড়িয়ে চলবে। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৬৯; মুসনাদ আহমাদ ২য় খন্ড, ৩২৯ পৃঃ; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৪১-[৪] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বনী ইসরাঈল না হলে গোশ্ত/মাংস কক্ষনো নষ্ট হত (পঁচে যেত) না। আর (মা) হাওয়া না হলে কক্ষনো কোনো নারী স্বামীর খিয়ানাত (ক্ষতি সাধন) করত না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ عِشْرَةِ النِّسَاءِ وَمَا لِكُلِّ وَاحِدَةِ مِّنَ الْحُقُوْقِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْلَا بَنُو إِسْرَائِيلَ لَمْ يَخْنَزِ اللَّحْمُ وَلَوْلَا حَوَّاءُ لَمْ تَخُنْ أُنْثَى زَوجهَا الدَّهْر»
ব্যাখ্যা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ ‘‘বানী ইসরাঈল যদি না হতো তাহলে গোশত পচন ধরত না।’’ এটা মূসা (আঃ)-এর যামানায় ঘটেছিল। গোশত পচনের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তার নি‘আমাতের সাথে কুফরীর শাস্তি প্রদান করেছেন। মূসা (আঃ)-এর যামানায় বানী ইসরাঈলদের প্রতি আসমান থেকে সকাল-বিকাল খাদ্য (গোশত রুটি) অবতীর্ণ হতো, শর্ত ছিল তারা খাবে কিন্তু সঞ্চয় রাখতে পারবে না। কিন্তু তারা আল্লাহর প্রতি দৃঢ় আস্থা না থাকায় তার হুকুমকে অমান্য করে জমা করে রাখতে শুরু করল ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের ওপর শাস্তি হিসেবে গোশত পচন ধরা শুরু করল। সেই যে শুরু হলো অদ্যাবধি তা আর বন্ধই হলো না।
‘আল্লামা কাযী ‘ইয়ায (রহঃ) বলেনঃ হাওয়া (আঃ) যদি আদম (আঃ)-কে আল্লাহর আদেশ অমান্য করিয়ে গাছের ফল ভক্ষণে প্ররোচিত না করত তাহলে পৃথিবীর কোনো নারী তার স্বামীর খিয়ানাত করত না।
কেউ কেউ বলেনঃ হাওয়া (আঃ)-এর খিয়ানাতটা ছিল আদম (আঃ)-এর নিষেধ উপেক্ষা করে তার আগেই ফল ভক্ষণ করা।
আবার কেউ কেউ বলেনঃ আদম (আঃ) নিজেই হাওয়া (আঃ)-কে বৃক্ষ কর্তনের উদ্দেশে প্রেরণ করেন এবং তিনি (হাওয়া (আঃ)) উক্ত গাছের দু’টি শাস কর্তন করেন। আর এটিই হলো হাওয়া (আঃ)-এর খিয়ানাতের ধরণ প্রকৃতি। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৩৩০; শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৭০; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৪২-[৫] ’আব্দুল্লাহ ইবনু যাম্’আহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন ক্রীতদাসীর ন্যায় স্ত্রীকে না মারে (অত্যাচার না করা হয়), অথচ দিনের শেষেই তার সাথে সহবাস করে।
অপর বর্ণনায় আছে- তোমাদের কেউ যেন ইচ্ছা করে স্ত্রীকে ক্রীতদাসীর ন্যায় মারমুখো না হয়, হয়তো দিন শেষে তার সাথে সহবাস করতে চাইবে; আর এতে সে অনাগ্রহ প্রকাশ করবে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বায়ু নির্গত হওয়ায় হাসি-ঠাট্টাচ্ছলের কারণে উপদেশ করলেন, যে কাজ নিজে কর অন্যের সে কাজে তোমরা কেন হাসবে! (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ عِشْرَةِ النِّسَاءِ وَمَا لِكُلِّ وَاحِدَةِ مِّنَ الْحُقُوْقِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَمَعَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَجْلِدْ أَحَدُكُمُ امْرَأَتَهُ جَلْدَ الْعَبْدِ ثُمَّ يُجَامِعْهَا فِي آخِرِ الْيَوْمِ» وَفِي رِوَايَةٍ: «يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ فَيَجْلِدُ امْرَأَتَهُ جَلْدَ الْعَبْدِ فَلَعَلَّهُ يُضَاجِعُهَا فِي آخِرِ يَوْمِهِ» . ثُمَّ وَعَظَهُمْ فِي ضَحِكِهِمْ مِنَ الضَّرْطَةِ فَقَالَ: «لِمَ يَضْحَكُ أَحَدُكُمْ مِمَّا يفعل؟»
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ ‘‘তোমাদের কেউ স্ত্রীকে গোলামের ন্যায় প্রহার করবে না।’’ এর অর্থ প্রচণ্ড মার মারবে না, মানুষ যেভাবে দাস-দাসীকে প্রহার করে থাকে সেভাবে স্ত্রীকে প্রহার করা সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। যে স্ত্রী মধুর রাত্রি যাপনের একান্ত সাথী বা অঙ্কশায়িনী দিনে তাকে প্রহার করা এটা কতই না জ্ঞানের স্বল্পতা আর হীনমন্যতার পরিচায়ক। বলা হয়ে থাকে, স্ত্রীকে প্রহারের এ নিষেধাজ্ঞা প্রহারের অনুমতির আগের বিধান যা পরবর্তী বর্ণনায় আসছে। প্রকাশ থাকে যে, নিষেধের বিষয়টি হলো বিশেষ অবস্থার সাথে সম্পৃক্ত অর্থাৎ বেদম প্রহার নিষেধ যাকে হাদীসে দাস-দাসীদের প্রহারের সাথে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে। জাহিলী যুগে দাস-দাসীদের অমানসিকভাবে প্রহার করা হতো, এ জাতীয় প্রহার নিষেধ।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, দাস-দাসীকে শিষ্টাচার শিক্ষা দানের জন্য প্রহার করা বৈধ, তবে ক্ষমাটাই উত্তম। তিনি আরো বলেন, যে স্ত্রীকে দিবসে প্রহার করা হলো, সে স্ত্রীর সাথে রাত্রি যাপন করা, মধুর আলিঙ্গনে মিলিত হওয়া লজ্জাজনক নয় কি? তুমি রাতে তার সাথে যেহেতু মিলিত হবে দিনে তাকে প্রহার করো না। (ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৪২; শারহে মুসলিম ১৭/১৮ খন্ড, হাঃ ২৮৫৫; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৪৩-[৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার খেলার পুতুল নিয়ে সঙ্গী-সাথীদের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘরে খেলতাম (তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৯ বছর)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘরে প্রবেশ করতেন, তখন তারা আত্মগোপন করে থাকত। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে আমার নিকট (খেলতে) পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সাথে খেলা করত। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ عِشْرَةِ النِّسَاءِ وَمَا لِكُلِّ وَاحِدَةِ مِّنَ الْحُقُوْقِ
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كُنْتُ أَلْعَبُ بِالْبَنَاتِ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ لِي صَوَاحِبُ يَلْعَبْنَ مَعِي فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ ينقمعن فيسربهن إِلَيّ فيلعبن معي
ব্যাখ্যা: উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘরে যখন যান তখন তার বয়স ছিল মাত্র নয় বছর। তখনও তার মধ্যে শিশু বা কৈশরসুলভ স্বভাব ছিলই, তাই তিনি অন্যান্য কিশোরীদের সাথে খেলার সামগ্রী এমনকি পুতুল নিয়ে খেলা করতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করলে ঐ বালিকাগুলো লজ্জায় এখানে সেখানে আত্মগোপন করে থাকতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্বভাবসিদ্ধ নিয়মে শিশু-কিশোরদের প্রতি স্নেহ-বাৎসল্যতা প্রদর্শনপূর্বক তাদের ধরে এনে লজ্জা ভাঙ্গিয়ে দিলেন এবং পুনরায় ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর সাথে খেলায় জুড়ে দিলেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, এরপর তারা আমার সাথে খেলা শুরু করলো। তখন তারা যে পুতুল দিয়ে খেলা শুরু করতো তা বর্তমানের পুতুলের ন্যায় পুতুল নয় বরং খেলার সামগ্রী কাপড় বা তুলা দ্বারা তৈরি পুতুল সদৃশ এক প্রকার খেলনা ছিল মাত্র। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১৩০; শারহে মুসলিম ১৫ খন্ড, হাঃ ২৪৪০; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৪৪-[৭] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি, (ঈদের দিনে) হাবাশী যুবকরা যখন মসজিদের আঙিনায় বর্শা নিয়ে খেলা করছিল, তখন আমি তাঁর ঘাড় ও কানের ফাঁক দিয়ে তাদের খেলা দেখতে পারি সেজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাদর দিয়ে আমাকে ঢেকে রেখেছিলেন এবং (আমার মুহাববাতে) ততক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতেন যতক্ষণ না আমি স্বেচ্ছায় ফিরে আসতাম। অতএব এটাই অনুমেয় যে, একজন অল্পবয়স্কা মেয়ের খেলা দেখার প্রতি যে স্বাভাবিক মনোবাসনা, (কত দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে পারে) তা অনুমান করা যায়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ عِشْرَةِ النِّسَاءِ وَمَا لِكُلِّ وَاحِدَةِ مِّنَ الْحُقُوْقِ
وَعَنْهَا قَالَتْ: وَاللَّهِ لَقَدْ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُومُ عَلَى بَابِ حُجْرَتِي وَالْحَبَشَةُ يَلْعَبُونَ بِالْحِرَابِ فِي الْمَسْجِدَ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتُرُنِي بردائه لِأَنْظُرَ إِلَى لَعِبِهِمْ بَيْنَ أُذُنِهِ وَعَاتِقِهِ ثُمَّ يَقُومُ مِنْ أَجْلِي حَتَّى أَكُونَ أَنَا الَّتِي أَنْصَرِفُ فَاقْدُرُوا قَدْرَ الْجَارِيَةِ الْحَدِيثَةِ السِّنِّ الْحَرِيصَةِ على اللَّهْو
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে (يَقُوْمُ) শব্দটি ‘মাযী’ বা অতীতকালের হেকায়েতের হাল বা অবস্থা বর্ণনার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। (حُجْرَتِىْ) এর ইয়াফতটি লামে ইখতিসাস বা বিশেষত্ববাচক। এ লাম মিলকিয়াতের অর্থ প্রদান করার সম্ভাবনাও বিদ্যমান রয়েছে।
(وَالْحَبَشَةُ يَلْعَبُونَ) বাক্যটি জুমলাতু হালিয়া হয়েছে, তার অর্থ হলো : ‘‘আর হাবাশীরা (সেখানে) খেলাফরত ছিল।’’ (الْحِرَابِ) শব্দটি حربة-এর বহুবচন এর অর্থ ছোট বর্শা বা বল্লাম।
হাবাশীরা মসজিদ সংলগ্ন প্রশস্ত জায়গায় বর্শা পরিচালনার প্রশিক্ষণমূলক খেলায় লিপ্ত ছিল। কেউ বলেছেন, এ জায়গাটি ছিল মসজিদের বাইরে, কেউ বলেছেন ভিতরেই। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কামরা মসজিদ সংলগ্ন ছিল। তাই তিনি কামরার মধ্যে থেকেই তাদের খেলা দেখছিলেন। এজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং নিজেই দেখার সুব্যবস্থা করে দিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় চাদর দ্বারা পর্দা করে দাঁড়ালেন আর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে দাঁড়িয়ে কাঁধ ও কানের মাঝের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে তাদের খেলা উপভোগ করলেন। যুদ্ধ যেহেতু ‘ইবাদাত, সুতরাং যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষা করাও আবশ্যক।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘কাফিরদের সাথে (মোকাবেলার জন্য) তোমাদের সাধ্যানুযায়ী শক্তি (সংগ্রহ কর এবং) প্রস্তুত করো।’’ (সূরা আল আনফাল ৮ : ৬০)
সুতরাং মসজিদ প্রাঙ্গণে অথবা মসজিদের মধ্যে এ ধরনের খেলা শারী‘আতসম্মত। আর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর দেখার বিষয়টি ছিল পর্দার বিধান জারী হওয়ার পূর্বের ঘটনা। ‘আল্লামা তূরিবিশতীও এমনটিই বলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, মসজিদে খেলায়রত হাবাশীরা ছিল বয়সে অপ্রাপ্ত বয়স্ক। সুতরাং তাদের প্রতি তাকানো অবৈধ ছিল না।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) যতক্ষণ দাঁড়িয়ে খেলা দেখলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ততক্ষণ পর্যন্তই দাঁড়িয়ে তাকে খেলা উপভোগ করার সুযোগ দিলেন। এটা ছিল তার প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বোচ্চ ভালোবাসা এবং মনস্থাত্বিক দিক বিবেচনার চূড়ান্ত নমুনা। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিজস্ব বর্ণনাতেই বুঝা যায় যে, খেলা দেখার এ সময়টি ছিল দীর্ঘ, আর এই দীর্ঘ সময়ই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাঁড়িয়ে ছিলেন।
(ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫১৯০; শারহে মুসলিম ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৮৯২)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৪৫-[৮] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, (হে ’আয়িশাহ্!) তোমার মন যখন আমার প্রতি সন্তোষ থাকে এবং যখন অসন্তোষ হয়- তা আমি বুঝতে পারি। আমি [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] জিজ্ঞেস করলাম, কিভাবে তা বুঝতে পারেন? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যখন তোমার মন আমার প্রতি সন্তোষ থাকে (তখন কথা প্রসঙ্গে কসমের প্রয়োজনে) তুমি বল- ’’না, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রবে্র কসম!’’ অপরদিকে যখন তোমার মন আমার প্রতি অসন্তোষ থাকে তখন তুমি বল- ’’না, ইব্রাহীম (আঃ)-এর রবে্র কসম!’’ আমি [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] বললাম, জি, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! তবে আমি শুধু আপনার নামই পরিত্যাগ করি (কিন্তু হৃদয়ে আপনার প্রতি শ্রদ্ধা, প্রীতি-ভালোবাসা সর্বদা অটুট থাকে)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ عِشْرَةِ النِّسَاءِ وَمَا لِكُلِّ وَاحِدَةِ مِّنَ الْحُقُوْقِ
وَعَنْهَا قَالَتْ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي لأعْلم إِذا كنت عني راضية وَإِذا كنت عني غَضْبَى» فَقُلْتُ: مِنْ أَيْنَ تَعْرِفُ ذَلِكَ؟ فَقَالَ: إِذَا كُنْتِ عَنِّي رَاضِيَةً فَإِنَّكَ تَقُولِينَ: لَا وَرَبِّ مُحَمَّدٍ وَإِذَا كُنْتِ عَلَيَّ غَضْبَى قُلْتِ: لَا وَرَبِّ إِبْرَاهِيمَ . قَالَتْ: قُلْتُ: أَجَلْ وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا أَهْجُرُ إِلَّا اسْمَكَ
ব্যাখ্যা : স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা যত গভীরই হোক না কেন তবু কোনো কোনো সময় তার মধ্যে একটু ভাটা পরে, আর এটার বহিঃপ্রকাশ ঘটে অভিমান দিয়ে। এ অভিমান নিন্দনীয় নয়, বরং এতে তাদের ভালোবাসা আরো গভীর ও অটুট হয়। এটা যেন পরম প্রেমসম্পদকে আরো কাছে টানার আত্মজগতের এক অদৃশ্য প্রস্তাব।
মুসলিম নারীদের আদর্শ উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি অভিমানের ঘটনা এখানে প্রকাশিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন টের পেলেন তখন তা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে বলে ফেললেন যে, আমি কিন্তু তোমার এই কাজ বুঝতে পারি। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কিভাবে তা বুঝতে পারেন? ওয়াহীর মাধ্যমে বা কাশ্ফের মাধ্যমে, নাকি কোনো কিছুর আলামত আপনার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উত্তরে বললেন, তুমি যখন আমার প্রতি সন্তুষ্ট ও খুশি থাকো তখন কোনো কিছুর শপথ করতে বলে থাকো, ‘মুহাম্মাদ-এর রবের শপথ’ আর যখন তুমি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকো তখন এ জাতীয় শপথে বলে থাকো, ‘ইব্রাহীম-এর রবের শপথ’ আমার নামের পরিবর্তে তুমি ইব্রাহীম-এর নাম উচ্চারণ করে থাকো। এর প্রতি উত্তরে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল! হ্যাঁ, তবে এটা আমার মুখের কথাই মাত্র, আল্লাহর শপথ! আমি অভিমানের সময় শুধু মৌখিক আপনার নামটাই বাদ দেই কিন্তু আপনার মহববত এবং শ্রদ্ধা আমার হৃদয়ে গভীর ও স্থায়ীভাবে প্রোথিত।
ইবনুল মুনীর (রহঃ) বলেন, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম বাদ দিয়ে ইব্রাহীম (আঃ)-এর নাম উচ্চারণ করে দূর পথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মর্যাদা অক্ষুণ্ণই রেখেছেন। (শারহে মুসলিম ৯ম খন্ড, হাঃ ২৪৩৯; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৪৬-[৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বামী যখন তার স্ত্রীকে (সহবাসের উদ্দেশে) বিছানায় ডাকে আর স্ত্রী তার ডাক প্রত্যাখ্যান করে। এমতাবস্থায় স্বামী অসন্তোষ অবস্থায় রাত্রি যাপন করে, তখন এ স্ত্রী এভাবে রাত্রি যাপন করে যে, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তার ওপর অভিশাপ করতে থাকে রাত্রি শেষে ভোর অবধি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
বুখারী ও মুসলিম-এর অপর বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! কোনো পুরুষ যদি তার স্ত্রীকে বিছানায় (সহবাসের উদ্দেশে) ডাকে আর স্ত্রী তা প্রত্যাখ্যান করে, তবে আকাশমন্ডলীর অধিকারী তার প্রতি অসন্তোষ থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত তার স্বামী তার প্রতি সন্তোষ না হয়।
بَابُ عِشْرَةِ النِّسَاءِ وَمَا لِكُلِّ وَاحِدَةِ مِّنَ الْحُقُوْقِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ فَبَاتَ غَضْبَانَ لَعَنَتْهَا الْمَلَائِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ لَهُمَا قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا مِنْ رَجُلٍ يَدْعُو امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَتَأْبَى عَلَيْهِ إِلَّا كَانَ الَّذِي فِي السَّمَاءِ ساخطا عَلَيْهَا حَتَّى يرضى عَنْهَا»
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ (إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَه إِلٰى فِرَاشِه) ‘‘যখন কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বিছানার দিকে আহবান করে’’। এতে ইশারা রয়েছে একাধিক বিছানার বৈধতা এবং দু’জনের একত্রিত হওয়ার প্রতিও ইশারা রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘তারা তোমাদের পোষাক স্বরূপ তোমরাও তাদের পোষাক স্বরূপ।’’ (সূরা আল বাকারা ২ : ১৮৭)
স্ত্রী যদি আহবানে অস্বীকার করে অর্থাৎ শারী‘আত ওযর ছাড়া আহবানে সাড়া না দেয় বা নিকটে আসতে অস্বীকার করে, আর স্বামী তার প্রতি এ চাহিদা নিয়ে অসন্তুষ্ট মনে বা তার প্রতি রাগান্বিত অবস্থায় রাত কাটায়, তাহলে আল্লাহর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতামন্ডলী) সারা রাত ঐ নারীর ওপর লা‘নাত বর্ষণ করতে থাকেন। কেননা সে বিনা ওযরে তার স্বামীর প্রতি আনুগত্য নির্দেশ লঙ্ঘন করেছে, যে আনুগত্য কোনো পাপমূলক ছিল না।
অনেকেই বলেছেন, মাসিক ঋতুকালও ওযরের অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ মাসিক ঋতু অবস্থায়ও যদি স্বামী তাকে স্বীয় বিছানায় আহবান করে তবু তাকে তার সঙ্গ দিতে হবে। কেননা জুমহূর ‘উলামার মতে মাসিক অবস্থায় স্ত্রীর সাথে কেবল যৌনমিলন ছাড়া তার সকল কিছুই উপভোগ করতে পারবে এবং এটা তার অধিকার।
মালাকের (ফেরেশতার) লা‘নাত হবে সারা রাত্রি অর্থাৎ ফযর পর্যন্ত মালাক তার ওপর অভিসম্পাত করতে থাকবে। কেউ কেউ বলেছেনঃ এমনকি সারা দিনও এ অভিসম্পাত চলবে যতক্ষণ না তার চাহিদা থেকে অমুখাপেক্ষী হয়। পরিবর্তী বর্ণনায় তার প্রমাণ এসেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, স্বামী যদি তার স্ত্রীকে বিছানায় আহবান করে আর সে যদি তা অস্বীকার করে তাহলে আসমানের সত্বা অর্থাৎ মহান আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হন, যতক্ষণ স্বামী তার ওপর সন্তুষ্ট না হন।
এ হাদীস আরো প্রমাণ করে যে, আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ হলো স্বামীর অসন্তুষ্টি, অর্থাৎ স্বামী অসন্তুষ্ট হলে আল্লাহ তা‘আলাও অসন্তুষ্ট হন। [এটা তো স্বামীর একটা যৌন চাহিদা মিটানোর বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশ অমান্যের কারণে, আর যিনি আল্লাহর দীনের নির্দেশাবলী অমান্য করে চলছেন তার প্রতি আল্লাহর অসন্তুষ্টি কি রকম হতে পারে?] [সম্পাদক] (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খঃ হাঃ ৩২৩৭, মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৪৭-[১০] আসমা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈকা স্ত্রীলোক জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! আমার এক সতীন আছে। অতঃপর আমি যদি ঐ সতীনের নিকট আমার স্বামী যা আমাকে দেয়নি তা পেয়েছি বলে প্রকাশ করি, তাতে কি আমার গুনাহ হবে? তদুত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না পেয়েও পেয়েছি বলে প্রকাশ করা যেন দ্বিগুণ মিথ্যুক, সে যেন মিথ্যার দু’খানা পোশাক পরিধানকারী। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ عِشْرَةِ النِّسَاءِ وَمَا لِكُلِّ وَاحِدَةِ مِّنَ الْحُقُوْقِ
وَعَنْ أَسْمَاءَ أَنَّ امْرَأَةً قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لِي ضَرَّةً فَهَلْ عَلَيَّ جُنَاحٌ إِنْ تَشَبَّعْتُ مِنْ زَوْجِي غَيْرَ الَّذِي يُعْطِينِي؟ فَقَالَ: «الْمُتَشَبِّعُ بِمَا لَمْ يُعْطَ كَلَابِسِ ثَوْبَيْ زُورٍ»
ব্যাখ্যা: ‘আরবীতে ضَرَّةٌ এর অর্থ সতীন। ضَرَّةٌ আভিধানিক অর্থ ক্ষতি, অনিষ্ট, অপকারিতা ইত্যাদি। সতীন হলো স্বামীর অন্য স্ত্রী। একজন পুরুষের দু’জন স্ত্রী থাকলে স্ত্রীদ্বয় পরস্পর সতীন। একাধিক স্ত্রী পরস্পর একে অপরের জন্য ক্ষতির কারণ। সতীন হিংসা অথবা পরশ্রীকাতরতার কারণে অপরের ক্ষতি করে অথবা তাকে নিয়ে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, এজন্য ‘আরবেরা একাধিক স্ত্রীকে ضَرَّةٌ ‘ক্ষতি’ নামে নামাঙ্কিত করেছে, যার সহজ বাংলা রূপ হলো সতীন। অবশ্য মুবালাগাহ্ বা আধিক্য হিসেবে এটা বলা হয়েছে। ‘আরবেরা একে طَبَةٌ (ত্ববাহ্)-ও বলে থাকে যার অর্থ পারদর্শিতা। যেহেতু সতীন একজনের জন্য ক্ষতির ব্যাপারে পারদর্শী হয়ে থাকে বা তার থেকে ক্ষতির আশংকা থেকে থাকে, তাই তাকে বলা হয়। এটা এজন্য যে, সতীন সতীনের দোষ অনুসন্ধানে সচেতন, পারদর্শী ও বিচক্ষণও বটে।
মহিলাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে জানতে চাইলেন তার স্বামী তাকে যা প্রদান করে তার সতীনের কাছে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা বৈধ কিনা? এর উদ্দেশ্য হলো যাতে স্বামী তার নিজের কাছে অধিক প্রিয় হয় এবং সতীনের মধ্যে গোস্বা সৃষ্টি হয় ফলে এর দ্বারা সতীনের ক্ষতি হয় আর স্বামী তার প্রিয় হয়। এর উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন তা স্পষ্ট। তিনি বললেন, না পেয়ে পাওয়ার ভান করা বা মিথ্যা পরিতৃপ্ত হওয়ার আচ্ছাদন প্রদর্শন করার দৃষ্টান্ত হলো মিথ্যা দু’টি পোশাক পরিধান করা। এ পোশাক দু’টি হয় আমানত অথবা পরের কাছ থেকে ধার করা বা চেয়ে নেয়া পোশাক। মানুষ তাকে দেখে মনে করবে এই চাকচিক্য সুন্দর দৃষ্টি নন্দন পোশাকটি কতই না সুন্দর এ পোশাকটি হয় তো বা তার নিজের, কিন্তু মূলতঃ তার নয়। অথবা কোনো সাধারণ ব্যক্তি বড় কোনো আবিদ যাহিদ আল্লাহওয়ালার পরহেজগারীর আসকান, জুববা ইত্যাদি পরিধান করে নিজেকে মিছামিছি আল্লাহওয়ালা দরবেশ প্রমাণ করতে চাওয়া। এটা যেমন প্রতারণা এবং গুনাহের কাজ ঠিক তেমনি স্বামীর দেয়া কোনো কিছুকে বাড়িয়ে বলা ও প্রকাশ করাও প্রতারণা, বিশেষ করে অন্য সতীনের কাছে প্রকাশ করা গুনাহের কাজ। (ফাতহুল বারী ৯ম খঃ হাঃ ৫২১৯; শারহে মুসলিম ১৪শ খন্ড, হাঃ ২১৩০; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৪৮-[১১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিণীগণের সাথে এক মাসের ঈলা (পৃথক থাকার কসম) করেছিলেন। কেননা সওয়ারী হতে পড়ে গিয়ে যখন তাঁর (বাম) পা মচকে যায় তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উঁচু কোঠায় ঊনত্রিশ দিন অবস্থান করেছিলেন। অতঃপর নেমে আসলে লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি এক মাসের ঈলা করেছিলেন (অথচ ঊনত্রিশ দিনেই নীচে নেমে আসলেন)? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (চন্দ্র) মাস কখনও ঊনত্রিশ দিনেও হয়। (বুখারী)[1]
بَابُ عِشْرَةِ النِّسَاءِ وَمَا لِكُلِّ وَاحِدَةِ مِّنَ الْحُقُوْقِ
وَعَن أنس قَالَ: آلى رَسُول الله مِنْ نِسَائِهِ شَهْرًا وَكَانَتِ انْفَكَّتْ رِجْلُهُ فَأَقَامَ فِي مَشْرُبَةٍ تِسْعًا وَعِشْرِينَ لَيْلَةً ثُمَّ نَزَلَ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ آلَيْتَ شَهْرًا فَقَالَ: «إِنَّ الشَّهْرَ يَكُونُ تِسْعًا وَعِشْرِينَ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের সাথে ‘ঈলা’ করেছিলেন। ‘ঈলা’ শব্দটি ‘আরবী মাসদার বা শব্দমূল اِيْلَاءٌ থেকে اٰلٰى অতীতকালের ক্রিয়ারূপে ব্যবহৃত হয়েছে। ‘ঈলা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ শপথ করা, কসম করা। পরিভাষায় স্ত্রীর নিকট দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য বা সহবাস গমন না করার শপথ করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘোড়া কিংবা খচ্চরের পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে পায়ে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ আঘাতে তাঁর পায়ের জোড়া খুলে যায়। চলতে ফিরতে না পারায় তিনি একটি দ্বিতল ভবনে বিশ্রামের জন্য অবস্থান করেছিলেন। এই সময় তিনি তার স্ত্রীদের সাথে ঈলা করেছিলেন। কেউ কেউ বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রসিদ্ধ ঈলার ঘটনা এটি নয়।
রাবীর বর্ণনা (انْفَكَّتْ رِجْلُه) অর্থাৎ তার পায়ের জোড়া খুলে গিয়েছিল। এখানে انْفَكَّتْ এর অর্থ اِنْفَرَجَتْ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, অর্থাৎ পায়ের গিরার জোড়া থেকে হাড় খুলে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ انفكاك হলো অবষণ্ণতা ও দুর্বলতার একটি প্রকার, আর الخلع শব্দের অর্থ হলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের এক অংশ থেকে অন্য অংশ সরে যাওয়া, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ দ্বিতল কক্ষে ঊনত্রিশ দিন অবস্থানের পর যখন সেখান থেকে অবতরণ করেন, অর্থাৎ ঈলার মেয়াদ শেষ হলে তিনি স্ত্রীদের নিকট গমন করলেন। তখন লোকেরা তাকে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি তো ঈলা করেছিলেন এক মাসের জন্য? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উত্তরে বললেন, মাস কখনো কখনো ঊনত্রিশ দিনেও হয়। সম্ভবতঃ ঐ মাসটি ঊনত্রিশ দিনেই হয়েছিল, তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঊনত্রিশ দিনে তার ঈলার মেয়াদ সমাপ্ত করেছিলেন। শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থকার বলেন, যদি কেউ মাসের কথা উল্লেখ করে বলে আমি আল্লাহর ওয়াস্তে অমুক অমুক মাস সওম পালন করবো, এখন ঐ মাসগুলোর মধ্যে যদি ২৯ দিনের অপূর্ণাঙ্গ মাস এসে যায় তাহলে তার ৩০ পুরতে আরেকটি সিয়াম পালন করতে হবে না। কিন্তু সে যদি মাসের নাম নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না করে বলে আমি আল্লাহর ওয়াস্তে একমাস সিয়াম পালন করবো, তাহলে তাকে ত্রিশটি সিয়ামই পালন করতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘হে নাবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের বলে দিন।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ২৮)
এ আয়াতের প্রেক্ষিতে ‘আল্লামা বাগাভী (রহঃ) বলেনঃ নাবী পত্নীগণ দুনিয়ার আরাম-আয়েশের সামগ্রী এবং জীবন নির্বাহের উপরকরণাদির বরাদ্দ বাড়িয়ে দিতে আবেদন জানালেন। আর স্ত্রীদের কতিপয় কতিপয়ের উপর গায়রাত বা আত্মমর্যাদা প্রকাশ করে নাবীকে কষ্ট দিলেন, এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বর্জন করলেন এবং এক মাস তাদের নিকট গমন না করার শপথ করলেন, তিনি এ সময় তার সাহাবীদের নিকটও বের হননি। লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো, তার কি হয়েছে? তারা এও বলতে লাগলেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীদের তালাক দিয়েছেন। ‘উমার তখন বললেন, আমি অবশ্যই তার আসল ঘটনাটা তোমাদের জানাবো। তিনি বলেন, অতঃপর আমি তখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গমন করে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি আপনার স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি মুসলিমদের এই মাত্র মসজিদের মধ্যে বলতে শুনে আসলাম, তারা বলছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের তালাক দিয়েছেন। আপনি আমাকে অনুমতি দিন আমি তাদের বলে আসি যে, তিনি তাঁর স্ত্রীদের তালাক দেননি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, ইচ্ছা করলে যেতে পারো। ‘উমার বলেন, অতঃপর আমি গিয়ে মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা দিলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের তালাক দেননি। এ সময় আল্লাহ ‘খিয়ারাতের’ আয়াত নাযিল করেন। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৯১১; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৪৯-[১২] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করলেন, যদিও বহু লোক তাঁর দরজায় বসে ছিল, কিন্তু তাদের প্রবেশানুমতি দেয়া হয়নি। [রাবী বলেন,] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ)-কে অনুমতি দিলেন এবং তিনি প্রবেশ করলেন। অতঃপর পরে ’উমার(রাঃ) এসে অনুমতি চাইলে তাঁকেও অনুমতি দেয়া হলো এবং তিনিও প্রবেশ করলেন। কিন্তু প্রবেশ করে দেখতে পেলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিমর্ষ ও নীরব অবস্থায় বসে থাকতে এবং আশপাশে তাঁর সহধর্মিণীগণও বসে রয়েছে। এমতাবস্থায় ’উমার(রাঃ) মনে মনে চিন্তা করলেন যে, এমন কোনো কথা বলা যায় যাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে হেসে দেন। তাই বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি যদি দেখতেন বিনতু খারিজাহ্ আমার নিকট (সামর্থ্যের অতিরিক্ত) ভরণ-পোষণের খরচ চাইত, তবে আমি উঠে তার ঘাড় চেপে ধরতাম। এটা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন এবং বললেন, এই যে আমার চারপাশ ঘিরে আছে দেখছেন, এরা আমার নিকটও (বেশি পরিমাণ) খোরপোষ চাচ্ছে।
এতে আবূ বকর(রাঃ) উঠে গিয়ে (তার কন্যা) ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর ঘাড় চেপে ধরলেন। অনুরূপভাবে ’উমার (তার কন্যা) হাফসাহ্ (রাঃ)-এর ঘাড় চেপে ধরলেন এবং উভয়ে (আপন আপন কন্যাকে) বলতে লাগলেন, তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এমনটি চাচ্ছ যা তার কাছে নেই। তখন সকলেই বলে উঠল, আল্লাহর কসম! আমরা কক্ষনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এমনটি প্রত্যাশা করব না যা তাঁর কাছে নেই। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একমাস অথবা ঊনত্রিশ দিন তাদের হতে পৃথক রইলেন। অতঃপর এ আয়াত নাযিল হয়, অর্থাৎ- ’’হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদের বলে দাও- তোমরা যদি পার্থিব জীবন আর তার শোভাসৌন্দর্য কামনা কর, তাহলে এসো, তোমাদেরকে ভোগসামগ্রী দিয়ে দেই এবং উত্তম পন্থায় তোমাদেরকে বিদায় দেই। আর তোমরা যদি আল্লাহ, তাঁর রসূল ও পরকালের গৃহ কামনা কর, তবে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীল তাদের জন্য আল্লাহ মহা পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন’’- (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ২৮-২৯)।
রাবী বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে দিয়ে আরম্ভ করে বললেন, হে ’আয়িশাহ্! আমি তোমার কাছে এমন এক বিষয় বলতে চাই, যে বিষয়ে তোমার বাবা-মায়ের সাথে পরামর্শ ব্যতীত তাড়াতাড়ি করে কোনো মতামত দিবে না। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, কি সে বিষয়? হে আল্লাহর রসূল! অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে আয়াত তিলাওয়াত করে শুনালেন। তা শুনে ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, আপনার সম্পর্কে আমি পিতামাতার সাথে কি পরামর্শ করব? বরং আমি আল্লাহ, তাঁর রসূল ও আখিরাতের জীবন গ্রহণ করলাম; অতঃপর বললেন, আমি যা বললাম অনুগ্রহ করে তা আপনার অপর স্ত্রীগণের কাউকেও বলবেন না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে স্ত্রীগণের মধ্যে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, তখন তাকে বলতেই হবে। কেননা আল্লাহ তা’আলা আমার দ্বারা কাউকে কষ্ট দেয়া এবং কাউকে অসুবিধায় ফেলার কামনাকারী হিসেবে পাঠাননি; বরং আমাকে শিক্ষাদাতারূপে এবং সহজকারীরূপে (সহযোগীরূপে) পাঠিয়েছেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ عِشْرَةِ النِّسَاءِ وَمَا لِكُلِّ وَاحِدَةِ مِّنَ الْحُقُوْقِ
وَعَن جَابر قَالَ: دخل أَبُو بكر رَضِي الله عَنهُ يَسْتَأْذِنُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَجَدَ النَّاسَ جُلُوسًا بِبَابِهِ لَمْ يُؤْذَنْ لِأَحَدٍ مِنْهُمْ قَالَ: فَأُذِنَ لِأَبِي بَكْرٍ فَدَخَلَ ثُمَّ أَقْبَلَ عُمَرُ فَاسْتَأْذَنَ فَأُذِنَ لَهُ فَوَجَدَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسًا حَوْلَهُ نِسَائِهِ وَاجِمًا سَاكِتًا قَالَ فَقُلْتُ: لَأَقُولَنَّ شَيْئًا أُضْحِكُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ لَوْ رَأَيْتَ بِنْتَ خَارِجَةَ سَأَلَتْنِي النَّفَقَةَ فَقُمْتُ إِلَيْهَا فَوَجَأْتُ عُنُقَهَا فَضَحِكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ: «هُنَّ حَوْلِي كَمَا تَرَى يَسْأَلْنَنِي النَّفَقَةَ» . فَقَامَ أَبُو بكر إِلَى عَائِشَةَ يَجَأُ عُنُقَهَا وَقَامَ عُمَرُ إِلَى حَفْصَةَ يَجَأُ عُنُقَهَا كِلَاهُمَا يَقُولُ: تَسْأَلِينَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا لَيْسَ عِنْدَهُ؟ فَقُلْنَ: وَاللَّهِ لَا نَسْأَلُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا أبدا لَيْسَ عِنْدَهُ ثُمَّ اعْتَزَلَهُنَّ شَهْرًا أَوْ تِسْعًا وَعشْرين ثمَّ نزلت هَذِه الْآيَة: (يَا أَيهَا النَّبِي قل لِأَزْوَاجِك)
حَتَّى بلغ (للمحسنات مِنْكُن أجرا عَظِيما)
قَالَ: فَبَدَأَ بعائشة فَقَالَ: «يَا عَائِشَةُ إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أَعْرِضَ عَلَيْكِ أَمْرًا أُحِبُّ أَنْ لَا تَعْجَلِي فِيهِ حَتَّى تَسْتَشِيرِي أَبَوَيْكِ» . قَالَتْ: وَمَا هُوَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ فَتَلَا عَلَيْهَا الْآيَةَ قَالَتْ: أَفِيكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَسْتَشِيرُ أَبَوَيَّ؟ بَلْ أَخْتَارُ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالدَّارَ الْآخِرَةَ وَأَسْأَلُكَ أَنْ لَا تُخْبِرَ امْرَأَةً مِنْ نِسَائِكَ بِالَّذِي قُلْتُ: قَالَ: «لَا تَسْأَلُنِي امْرَأَةٌ مِنْهُنَّ إِلَّا أَخْبَرْتُهَا إِنَّ اللَّهَ لَمْ يَبْعَثْنِي مُعَنِّتًا وَلَا مُتَعَنِّتًا وَلَكِنْ بَعَثَنِي معلما ميسرًا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: খায়বার যুদ্ধ থেকে গনীমাতের মাল সম্পদ আসলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ তাদের খোর পোষের খরচ বাড়িয়ে দেয়ার দাবী জানালেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে রাযী হলেন না। এতে তাদের মন খারাপ হয়ে গেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও মনোকষ্টে পড়ে যান। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আবূ বাকর খবর পেয়ে দৌড়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাড়িতে যান, গিয়ে দেখেন বাড়ির সামনে অনেক লোক বসা কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকেই বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করেননি। কিন্তু আবূ বাকর উপস্থিত হলে তিনি তাকে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করলেন। অতঃপর ‘উমার আসলে তাকেও অনুমতি দেয়া হলো। তিনি গিয়ে দেখেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে আছেন আর তাঁর স্ত্রীগণ বিষণ্ণ মনে নির্বাক হয়ে তার চারপাশেই উপবিষ্ট রয়েছেন। সম্ভবতঃ এটা পর্দার আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বের ঘটনা।
হাদীসে وَاجِمًا - سَاكِتًا দু’টি শব্দ এসেছে وَاجِمًا এর অর্থ حَزِيْنًا مُهْتَمًّا ভীষণ চিন্তাগ্রস্ত ও শোকাকুল অবস্থা হওয়া। নিহায়াহ্ গ্রন্থে এসেছে, (الْوَاجِمُ مَنْ أَسْكَتَهُ الْهَمُّ) নির্বাক ব্যক্তি, দুঃশ্চিন্তা তাকে নীরব নিস্তব্ধ করে ফেলেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারার মধ্যেও ছিল বিষণ্ণতা, তাই ‘উমার মনে মনে ভাবলেন, আমি এমন একটা কৌতুকপূর্ণ কথা বলবো যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মনোকষ্ট দূর হয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠে। অতঃপর তিনি তাকে আনন্দ দেয়ার জন্য বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি যদি খারিজার কন্যা (স্বীয় পত্নী)-কে এ রকম বেশি বেশি খরচ দাবী করতে দেখতাম তাহলে দৌড়ে গিয়ে তার গলা টিপে ধরতাম। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে ফেললেন। উদ্দেশ্য ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একটু আনন্দ দান এবং তাকে উজ্জীবিত করা, আর কৌতুককে কদর্যমুক্ত করা।
হাদীসের শব্দঃ (فَضَحِكَ) অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন, কোনো বর্ণনায় (اَضْحَكَ) (‘উমার ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হাসালেন। এর ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (রহঃ) মুসলিমের শারাহ (ভাষ্য) গ্রন্থে বলেছেন, এটা প্রমাণ করে যে, কেউ যদি তার সাথীকে চিন্তাগ্রস্ত দেখে তবে তাকে এমন কথা বলা অথবা এমন কাজের দিকে মনোযোগী করা মুস্তাহাব, যাতে তার চিন্তা দূর হয় এবং মুখে হাসি ফুটে। এতে যেন তার মন প্রাণ ও হৃদয় পরিচ্ছন্ন এবং সুন্দর হয়ে যায়। ‘আলী থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও চিন্তাগ্রস্ত লোককে (কোনো কথা বলে) একটু আনন্দ দিতেন।
হাদীসের শব্দ, وَجْأ এর অর্থ করতে গিয়ে মিরকাতুল মাফাতীহ গ্রন্থকার বলেন, الْوَجْأ হলো الضَّرْبُ بِالْيَد হাত দ্বারা মারা, কামূস অভিধানে, الْوَجْأ এর অর্থ الضَّرْب দ্বারা করা হয়েছে। ‘আরবেরা ضرب প্রহার শব্দকে পরিবর্তন করে তদস্থলে الْوَجْأ শব্দ ব্যবহার করে থাকে। অবশ্য এটা ছড়ি বা লাঠি দিয়ে নয় বরং নিছক হাত দিয়ে গলা ধরার মতো কিছু করা, যেমন আবূ বাকর এবং ‘উমার স্বীয় কন্যাদের ধরেছিলেন।
আবূ বাকর ও ‘উমার (রাঃ) যখন নিজ নিজ কন্যাকে বললেন, তোমরা এমন সব খরচের আবদার করছো যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নেই? অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যা দেয়ার সামর্থ্য নেই? তাই তোমরা চাচ্ছো? উত্তরে তারা দু’জনে অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সকল স্ত্রীই বললেন, আমরা শপথ করে বলছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নেই এমন জিনিস কখনো আমরা চাইবো না। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একমাস কিংবা ঊনত্রিশ দিন তাদের অর্থাৎ স্ত্রীদের স্বীয় বিছানা এবং সঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখেন। অতঃপর এ আয়াত নাযিল হয় : (অর্থ) ‘‘হে নাবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের বলে দিন, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার বিলাসিতা কামনা করো, তবে আসো, আমি তোমাদের ভোগের ব্যবস্থা করে দেই এবং উত্তম পন্থায় তোমাদেরকে বিদায় দেই। পক্ষান্তরে যদি তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূল এবং পরকাল কামনা করো, তবে তোমাদের মুহসিন বা সৎকর্মপরায়ণদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত করে রেখেছেন মহাপুরস্কার।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ২৮-২৯)
জাবির (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার এ প্রস্তাব ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে দ্বারা শুরু করলেন, স্ত্রীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অধিক বুদ্ধিমতী এবং শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারিণী। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করে এবং এককভাবে চিন্তা না করে, বরং ধীরস্থিরভাবে পিতা-মাতার সাথে পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রস্তাব পেশ করেন। যাতে বয়সের স্বল্পতাজনিত কারণে এবং দুনিয়ার চাকচিক্যের প্রতি তার (চাহিদার) দৃষ্টি অন্যদিকে না গিয়ে পড়ে। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বভাবতই জানতেন যে, তার পিতা-মাতা কখনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তার বিচ্ছেদকে নির্দেশ করবেন না। তাই তিনি পিতা-মাতার সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রস্তাব পেশ করেন।
‘আল্লামা নববী (রহঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে বলেন, ‘‘তুমি তাড়াহুড়া করো না’’, অর্থাৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করো না; এটা ছিল তাঁর প্রতি এবং তার পিতা-মাতার প্রতি অধিক ভালোবাসা এবং মুহাববাতের কারণে। আর তাকে তার স্ত্রীদের মর্যাদায় অক্ষুণ্ণ রেখে পরিবারিক কল্যাণ সাধনের নিমিত্বে। স্বল্প বয়স এবং ক্ষীণ অভিজ্ঞতার করণে তিনি যদি আল্লাহর রসূলকে গ্রহণ না করে দুনিয়াকেই গ্রহণ করে বসেন তাহলে তিনি যেমন ক্ষতির মুখে পড়ে যাবেন, তার পরিবারও অপরিমিত ক্ষতির মুখে পড়বেন, সাথে সাথে অন্যান্য স্ত্রীরাও তার অনুসরণে নানামুখী ক্ষতির মুখে পড়ে যাবেন।
আল্লাহর রসূলের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) যে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিলেন ইতিহাসের স্বর্ণ অক্ষরে কিয়ামত পর্যন্ত তা লিপিবদ্ধ থাকবে এবং যুগ যুগ কাল ধরে মুসলিম নর-নারীরা তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতেই থাকবে। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) উত্তর দিলেন, আপনার সম্পর্কে আমি পিতা-মাতার সাথে কি পরামর্শ করবো, আমি আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে গ্রহণ করেছি এবং আখিরাতের জীবন বেছে নিয়েছি। আর আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে গ্রহণ করতে কারো পরামর্শ, সম্মতি ইত্যাদির প্রয়োজন হয় না।
‘আল্লামা কারী (রহঃ) বলেনঃ এ বাক্যে ইশারা পাওয়া যায় যে, দুনিয়ার চাকচিক্যের প্রতি ভালোবাসা বা আকাঙক্ষী হওয়া এবং আখিরাতের সুখ সন্ধান একই সাথে পূর্ণভাবে সম্ভব নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দুনিয়াকে ভালোবাসে আখিরাতে সে হয় ক্ষতিগ্রস্ত, আর যে আখিরাতকে ভালোবাসে সে দুনিয়াতে হয় ক্ষতিগ্রস্ত, সুতরাং হে কল্যাণ প্রত্যাশীরা! তোমরা চিরস্থায়ী বস্তুকে ধ্বংসশীল বস্তুর উপর প্রাধান্য দাও।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নিজের পছন্দের কথা অন্যান্য স্ত্রীদের নিকট ব্যক্ত না করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, স্ত্রীদের যে কেউই জিজ্ঞেস করলে এ ভালো কথাটুকু আমি বলে দিবো, কেননা আমি তো মানুষের জন্য সহজকারী শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি, কষ্টদানকারী নয়।
অন্য হাদীসে এসেছে, আমি মানুষকে জান্নাতের (চিরস্থায়ী সুখ ও নি‘আমাতের) সুসংবাদদানকারী হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে গ্রহণ করবে, পরকালের জীবনকেই দুনিয়ার জীবনের উপর প্রাধান্য দিবে তার জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৭৮; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৫০-[১৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে নারীরা স্বেচ্ছায় নিজেদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য উৎসর্গ করত (প্রকাশ করত), আমি তাদেরকে নিকৃষ্ট মনে করতাম এবং (মনে মনে) বলতাম, কোনো নারী কি এতটা নির্লজ্জ হতে পারে (কোনো পুরুষের নিকট স্বেচ্ছায় নিজেকে উৎসর্গ করবে)? অতঃপর যখন আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করলেন, অর্থাৎ- ’’তুমি তাদের যাকে ইচ্ছে সরিয়ে রাখতে পার, আর যাকে ইচ্ছে তোমার কাছে আশ্রয় দিতে পার। আর তুমি যাকে আলাদা ক’রে রেখেছ তাকে কামনা করলে তোমার কোনো অপরাধ নেই...’’- (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৫১)। তখন আমি তাঁকে বললাম- আমি তো দেখি আপনার প্রভু আপনার কামনা-বাসনা পূরণে সর্বদা তৎপর। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে ’মহিলাদের সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় কর’ বর্ধিতাকারে বিদায় হজে/হজ্জের ঘটনায় বর্ণনা করেন।
بَابُ عِشْرَةِ النِّسَاءِ وَمَا لِكُلِّ وَاحِدَةِ مِّنَ الْحُقُوْقِ
وَعَن عَائِشَة قَالَت: كنت أغار من اللَّاتِي وَهَبْنَ أَنْفُسَهُنَّ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: أَتَهَبُ الْمَرْأَةُ نَفْسَهَا؟ فَلَمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: (تُرْجِي مَنْ تَشَاءُ مِنْهُنَّ وَتُؤْوِي إِلَيْكَ مَنْ تَشَاءُ وَمَنِ ابْتَغَيْتَ مِمَّنْ عَزَلْتَ فَلَا جنَاح عَلَيْك)
قُلْتُ: مَا أَرَى رَبَّكَ إِلَّا يُسَارِعُ فِي هَوَاكَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَحَدِيثُ جَابِرٍ: «اتَّقُوا اللَّهَ فِي النِّسَاء» وَذكر فِي «قصَّة حجَّة الْوَدَاع»
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কথা (كُنْتُ أَغَارُ) এর অর্থ হলো أَعِيبُ عَلَيْهِنَّ ‘আমি তাদের দোষ মনে করতাম’, যাতে মহিলারা নিজেকে অপরের জন্য হেবা করে না দেয়। এটা নারী জাতির স্বভাবজাত একটা লজ্জাষ্কর বিষয় তবে এই হেবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য লজ্জাজনক নয় তো বটেই, বরং তা প্রশংসনীয়। কোনো মহিলা তার স্বীয় সত্তাকে নাবীর জন্য হেবা করে দিলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইচ্ছা করলে গ্রহণ করতে পারেন অথবা নাও করতে পারেন, এটা তার এখতিয়ার। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যখন এ আয়াত নাযিল করলেনঃ অর্থাৎ- ‘‘আপনি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা দূরে রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা কাছে রাখতে পারেন। আপনি যাকে দূরে রেখেছেন তাকে কামনা করলে তাতে আপনার কোনো দোষ নেই...।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৫১)
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি যা চান আল্লাহ তা দ্রুতই দিয়ে দেন।
ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ ঐ আয়াতের ভাবার্থ হলো, হে নাবী! অপরের জন্য যা সীমাবদ্ধ আপনার জন্য তা উন্মুক্ত এবং প্রশস্ত, এটাই আপনার জন্য কল্যাণ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য যে সকল নারী নিজকে হেবা বা উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন তারা হলেন : মায়মূনাহ্ (রাঃ); কেউ কেউ বলেছেন, উম্মু শরীক (রাঃ)। কেউ কেউ যায়নাব বিনতু খুযায়মাহ্ -এর নাম বলেছেন, কেউ খাওলাহ্ বিনতে হাকিম-এর নাম। এ হাদীসের দ্বারা যা প্রকাশ পায় তা হলো উৎসর্গের ঘটনা একদল স্ত্রী দ্বারাই সংঘটিত হয়েছিল। আর এটা সূরা আল আহযাব-এর ৫০ নং আয়াতে বর্ণিত আয়াতের পরিপন্থী নয়; আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ অর্থাৎ- ‘‘কোনো মু’মিনাহ্ নারী যদি নিজকে নাবীর জন্য হেবা করে দেয়.....।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৫০)
এখানে নাকিরা বা অনির্দিষ্ট শব্দ কখনো উমূম বা ব্যাপক অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। সুতরাং হেবাকারী কোনো একজন নির্দিষ্ট স্ত্রীই এমনটি নয় বরং একাধিক স্ত্রী হতে পারেন।
হাদীস শেষে জাবির -এর কথা- (اتَّقُوا اللّٰهَ فِى النِّسَاءِ) ‘‘নারী জাতির ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো’’, এর অর্থ হলোঃ তাদের অধিকার তাদের বিশেষত্বের প্রতি খেয়াল করবে এবং তাদের দুর্বলতা ও দায়বদ্ধতার বিষয়টিও খেয়াল রাখবে।’’ (ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৮৮; শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৬৪; মির্কবাতুল মাফাতীহ)