৩২৪৯

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত

৩২৪৯-[১২] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করলেন, যদিও বহু লোক তাঁর দরজায় বসে ছিল, কিন্তু তাদের প্রবেশানুমতি দেয়া হয়নি। [রাবী বলেন,] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ)-কে অনুমতি দিলেন এবং তিনি প্রবেশ করলেন। অতঃপর পরে ’উমার(রাঃ) এসে অনুমতি চাইলে তাঁকেও অনুমতি দেয়া হলো এবং তিনিও প্রবেশ করলেন। কিন্তু প্রবেশ করে দেখতে পেলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিমর্ষ ও নীরব অবস্থায় বসে থাকতে এবং আশপাশে তাঁর সহধর্মিণীগণও বসে রয়েছে। এমতাবস্থায় ’উমার(রাঃ) মনে মনে চিন্তা করলেন যে, এমন কোনো কথা বলা যায় যাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে হেসে দেন। তাই বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি যদি দেখতেন বিনতু খারিজাহ্ আমার নিকট (সামর্থ্যের অতিরিক্ত) ভরণ-পোষণের খরচ চাইত, তবে আমি উঠে তার ঘাড় চেপে ধরতাম। এটা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন এবং বললেন, এই যে আমার চারপাশ ঘিরে আছে দেখছেন, এরা আমার নিকটও (বেশি পরিমাণ) খোরপোষ চাচ্ছে।

এতে আবূ বকর(রাঃ) উঠে গিয়ে (তার কন্যা) ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর ঘাড় চেপে ধরলেন। অনুরূপভাবে ’উমার (তার কন্যা) হাফসাহ্ (রাঃ)-এর ঘাড় চেপে ধরলেন এবং উভয়ে (আপন আপন কন্যাকে) বলতে লাগলেন, তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এমনটি চাচ্ছ যা তার কাছে নেই। তখন সকলেই বলে উঠল, আল্লাহর কসম! আমরা কক্ষনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এমনটি প্রত্যাশা করব না যা তাঁর কাছে নেই। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একমাস অথবা ঊনত্রিশ দিন তাদের হতে পৃথক রইলেন। অতঃপর এ আয়াত নাযিল হয়, অর্থাৎ- ’’হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদের বলে দাও- তোমরা যদি পার্থিব জীবন আর তার শোভাসৌন্দর্য কামনা কর, তাহলে এসো, তোমাদেরকে ভোগসামগ্রী দিয়ে দেই এবং উত্তম পন্থায় তোমাদেরকে বিদায় দেই। আর তোমরা যদি আল্লাহ, তাঁর রসূল ও পরকালের গৃহ কামনা কর, তবে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীল তাদের জন্য আল্লাহ মহা পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন’’- (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ২৮-২৯)।

রাবী বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে দিয়ে আরম্ভ করে বললেন, হে ’আয়িশাহ্! আমি তোমার কাছে এমন এক বিষয় বলতে চাই, যে বিষয়ে তোমার বাবা-মায়ের সাথে পরামর্শ ব্যতীত তাড়াতাড়ি করে কোনো মতামত দিবে না। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, কি সে বিষয়? হে আল্লাহর রসূল! অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে আয়াত তিলাওয়াত করে শুনালেন। তা শুনে ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, আপনার সম্পর্কে আমি পিতামাতার সাথে কি পরামর্শ করব? বরং আমি আল্লাহ, তাঁর রসূল ও আখিরাতের জীবন গ্রহণ করলাম; অতঃপর বললেন, আমি যা বললাম অনুগ্রহ করে তা আপনার অপর স্ত্রীগণের কাউকেও বলবেন না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে স্ত্রীগণের মধ্যে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, তখন তাকে বলতেই হবে। কেননা আল্লাহ তা’আলা আমার দ্বারা কাউকে কষ্ট দেয়া এবং কাউকে অসুবিধায় ফেলার কামনাকারী হিসেবে পাঠাননি; বরং আমাকে শিক্ষাদাতারূপে এবং সহজকারীরূপে (সহযোগীরূপে) পাঠিয়েছেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ عِشْرَةِ النِّسَاءِ وَمَا لِكُلِّ وَاحِدَةِ مِّنَ الْحُقُوْقِ

وَعَن جَابر قَالَ: دخل أَبُو بكر رَضِي الله عَنهُ يَسْتَأْذِنُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَجَدَ النَّاسَ جُلُوسًا بِبَابِهِ لَمْ يُؤْذَنْ لِأَحَدٍ مِنْهُمْ قَالَ: فَأُذِنَ لِأَبِي بَكْرٍ فَدَخَلَ ثُمَّ أَقْبَلَ عُمَرُ فَاسْتَأْذَنَ فَأُذِنَ لَهُ فَوَجَدَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسًا حَوْلَهُ نِسَائِهِ وَاجِمًا سَاكِتًا قَالَ فَقُلْتُ: لَأَقُولَنَّ شَيْئًا أُضْحِكُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ لَوْ رَأَيْتَ بِنْتَ خَارِجَةَ سَأَلَتْنِي النَّفَقَةَ فَقُمْتُ إِلَيْهَا فَوَجَأْتُ عُنُقَهَا فَضَحِكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ: «هُنَّ حَوْلِي كَمَا تَرَى يَسْأَلْنَنِي النَّفَقَةَ» . فَقَامَ أَبُو بكر إِلَى عَائِشَةَ يَجَأُ عُنُقَهَا وَقَامَ عُمَرُ إِلَى حَفْصَةَ يَجَأُ عُنُقَهَا كِلَاهُمَا يَقُولُ: تَسْأَلِينَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا لَيْسَ عِنْدَهُ؟ فَقُلْنَ: وَاللَّهِ لَا نَسْأَلُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا أبدا لَيْسَ عِنْدَهُ ثُمَّ اعْتَزَلَهُنَّ شَهْرًا أَوْ تِسْعًا وَعشْرين ثمَّ نزلت هَذِه الْآيَة: (يَا أَيهَا النَّبِي قل لِأَزْوَاجِك) حَتَّى بلغ (للمحسنات مِنْكُن أجرا عَظِيما) قَالَ: فَبَدَأَ بعائشة فَقَالَ: «يَا عَائِشَةُ إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أَعْرِضَ عَلَيْكِ أَمْرًا أُحِبُّ أَنْ لَا تَعْجَلِي فِيهِ حَتَّى تَسْتَشِيرِي أَبَوَيْكِ» . قَالَتْ: وَمَا هُوَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ فَتَلَا عَلَيْهَا الْآيَةَ قَالَتْ: أَفِيكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَسْتَشِيرُ أَبَوَيَّ؟ بَلْ أَخْتَارُ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالدَّارَ الْآخِرَةَ وَأَسْأَلُكَ أَنْ لَا تُخْبِرَ امْرَأَةً مِنْ نِسَائِكَ بِالَّذِي قُلْتُ: قَالَ: «لَا تَسْأَلُنِي امْرَأَةٌ مِنْهُنَّ إِلَّا أَخْبَرْتُهَا إِنَّ اللَّهَ لَمْ يَبْعَثْنِي مُعَنِّتًا وَلَا مُتَعَنِّتًا وَلَكِنْ بَعَثَنِي معلما ميسرًا» . رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা: খায়বার যুদ্ধ থেকে গনীমাতের মাল সম্পদ আসলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ তাদের খোর পোষের খরচ বাড়িয়ে দেয়ার দাবী জানালেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে রাযী হলেন না। এতে তাদের মন খারাপ হয়ে গেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও মনোকষ্টে পড়ে যান। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আবূ বাকর খবর পেয়ে দৌড়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাড়িতে যান, গিয়ে দেখেন বাড়ির সামনে অনেক লোক বসা কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকেই বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করেননি। কিন্তু আবূ বাকর উপস্থিত হলে তিনি তাকে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করলেন। অতঃপর ‘উমার আসলে তাকেও অনুমতি দেয়া হলো। তিনি গিয়ে দেখেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে আছেন আর তাঁর স্ত্রীগণ বিষণ্ণ মনে নির্বাক হয়ে তার চারপাশেই উপবিষ্ট রয়েছেন। সম্ভবতঃ এটা পর্দার আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বের ঘটনা।

হাদীসে وَاجِمًا - سَاكِتًا দু’টি শব্দ এসেছে وَاجِمًا এর অর্থ حَزِيْنًا مُهْتَمًّا ভীষণ চিন্তাগ্রস্ত ও শোকাকুল অবস্থা হওয়া। নিহায়াহ্ গ্রন্থে এসেছে, (الْوَاجِمُ مَنْ أَسْكَتَهُ الْهَمُّ) নির্বাক ব্যক্তি, দুঃশ্চিন্তা তাকে নীরব নিস্তব্ধ করে ফেলেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারার মধ্যেও ছিল বিষণ্ণতা, তাই ‘উমার মনে মনে ভাবলেন, আমি এমন একটা কৌতুকপূর্ণ কথা বলবো যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মনোকষ্ট দূর হয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠে। অতঃপর তিনি তাকে আনন্দ দেয়ার জন্য বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি যদি খারিজার কন্যা (স্বীয় পত্নী)-কে এ রকম বেশি বেশি খরচ দাবী করতে দেখতাম তাহলে দৌড়ে গিয়ে তার গলা টিপে ধরতাম। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে ফেললেন। উদ্দেশ্য ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একটু আনন্দ দান এবং তাকে উজ্জীবিত করা, আর কৌতুককে কদর্যমুক্ত করা।

হাদীসের শব্দঃ (فَضَحِكَ) অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন, কোনো বর্ণনায় (اَضْحَكَ) (‘উমার ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হাসালেন। এর ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (রহঃ) মুসলিমের শারাহ (ভাষ্য) গ্রন্থে বলেছেন, এটা প্রমাণ করে যে, কেউ যদি তার সাথীকে চিন্তাগ্রস্ত দেখে তবে তাকে এমন কথা বলা অথবা এমন কাজের দিকে মনোযোগী করা মুস্তাহাব, যাতে তার চিন্তা দূর হয় এবং মুখে হাসি ফুটে। এতে যেন তার মন প্রাণ ও হৃদয় পরিচ্ছন্ন এবং সুন্দর হয়ে যায়। ‘আলী থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও চিন্তাগ্রস্ত লোককে (কোনো কথা বলে) একটু আনন্দ দিতেন।

হাদীসের শব্দ, وَجْأ এর অর্থ করতে গিয়ে মিরকাতুল মাফাতীহ গ্রন্থকার বলেন, الْوَجْأ হলো الضَّرْبُ بِالْيَد হাত দ্বারা মারা, কামূস অভিধানে, الْوَجْأ এর অর্থ الضَّرْب দ্বারা করা হয়েছে। ‘আরবেরা ضرب প্রহার শব্দকে পরিবর্তন করে তদস্থলে الْوَجْأ শব্দ ব্যবহার করে থাকে। অবশ্য এটা ছড়ি বা লাঠি দিয়ে নয় বরং নিছক হাত দিয়ে গলা ধরার মতো কিছু করা, যেমন আবূ বাকর এবং ‘উমার স্বীয় কন্যাদের ধরেছিলেন।

আবূ বাকর ও ‘উমার (রাঃ) যখন নিজ নিজ কন্যাকে বললেন, তোমরা এমন সব খরচের আবদার করছো যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নেই? অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যা দেয়ার সামর্থ্য নেই? তাই তোমরা চাচ্ছো? উত্তরে তারা দু’জনে অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সকল স্ত্রীই বললেন, আমরা শপথ করে বলছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নেই এমন জিনিস কখনো আমরা চাইবো না। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একমাস কিংবা ঊনত্রিশ দিন তাদের অর্থাৎ স্ত্রীদের স্বীয় বিছানা এবং সঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখেন। অতঃপর এ আয়াত নাযিল হয় : (অর্থ) ‘‘হে নাবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের বলে দিন, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার বিলাসিতা কামনা করো, তবে আসো, আমি তোমাদের ভোগের ব্যবস্থা করে দেই এবং উত্তম পন্থায় তোমাদেরকে বিদায় দেই। পক্ষান্তরে যদি তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূল এবং পরকাল কামনা করো, তবে তোমাদের মুহসিন বা সৎকর্মপরায়ণদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত করে রেখেছেন মহাপুরস্কার।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ২৮-২৯)

জাবির (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার এ প্রস্তাব ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে দ্বারা শুরু করলেন, স্ত্রীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অধিক বুদ্ধিমতী এবং শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারিণী। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করে এবং এককভাবে চিন্তা না করে, বরং ধীরস্থিরভাবে পিতা-মাতার সাথে পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রস্তাব পেশ করেন। যাতে বয়সের স্বল্পতাজনিত কারণে এবং দুনিয়ার চাকচিক্যের প্রতি তার (চাহিদার) দৃষ্টি অন্যদিকে না গিয়ে পড়ে। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বভাবতই জানতেন যে, তার পিতা-মাতা কখনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তার বিচ্ছেদকে নির্দেশ করবেন না। তাই তিনি পিতা-মাতার সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রস্তাব পেশ করেন।

‘আল্লামা নববী (রহঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে বলেন, ‘‘তুমি তাড়াহুড়া করো না’’, অর্থাৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করো না; এটা ছিল তাঁর প্রতি এবং তার পিতা-মাতার প্রতি অধিক ভালোবাসা এবং মুহাববাতের কারণে। আর তাকে তার স্ত্রীদের মর্যাদায় অক্ষুণ্ণ রেখে পরিবারিক কল্যাণ সাধনের নিমিত্বে। স্বল্প বয়স এবং ক্ষীণ অভিজ্ঞতার করণে তিনি যদি আল্লাহর রসূলকে গ্রহণ না করে দুনিয়াকেই গ্রহণ করে বসেন তাহলে তিনি যেমন ক্ষতির মুখে পড়ে যাবেন, তার পরিবারও অপরিমিত ক্ষতির মুখে পড়বেন, সাথে সাথে অন্যান্য স্ত্রীরাও তার অনুসরণে নানামুখী ক্ষতির মুখে পড়ে যাবেন।

আল্লাহর রসূলের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) যে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিলেন ইতিহাসের স্বর্ণ অক্ষরে কিয়ামত পর্যন্ত তা লিপিবদ্ধ থাকবে এবং যুগ যুগ কাল ধরে মুসলিম নর-নারীরা তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতেই থাকবে। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) উত্তর দিলেন, আপনার সম্পর্কে আমি পিতা-মাতার সাথে কি পরামর্শ করবো, আমি আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে গ্রহণ করেছি এবং আখিরাতের জীবন বেছে নিয়েছি। আর আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে গ্রহণ করতে কারো পরামর্শ, সম্মতি ইত্যাদির প্রয়োজন হয় না।

‘আল্লামা কারী (রহঃ) বলেনঃ এ বাক্যে ইশারা পাওয়া যায় যে, দুনিয়ার চাকচিক্যের প্রতি ভালোবাসা বা আকাঙক্ষী হওয়া এবং আখিরাতের সুখ সন্ধান একই সাথে পূর্ণভাবে সম্ভব নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দুনিয়াকে ভালোবাসে আখিরাতে সে হয় ক্ষতিগ্রস্ত, আর যে আখিরাতকে ভালোবাসে সে দুনিয়াতে হয় ক্ষতিগ্রস্ত, সুতরাং হে কল্যাণ প্রত্যাশীরা! তোমরা চিরস্থায়ী বস্তুকে ধ্বংসশীল বস্তুর উপর প্রাধান্য দাও।

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নিজের পছন্দের কথা অন্যান্য স্ত্রীদের নিকট ব্যক্ত না করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, স্ত্রীদের যে কেউই জিজ্ঞেস করলে এ ভালো কথাটুকু আমি বলে দিবো, কেননা আমি তো মানুষের জন্য সহজকারী শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি, কষ্টদানকারী নয়।

অন্য হাদীসে এসেছে, আমি মানুষকে জান্নাতের (চিরস্থায়ী সুখ ও নি‘আমাতের) সুসংবাদদানকারী হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে গ্রহণ করবে, পরকালের জীবনকেই দুনিয়ার জীবনের উপর প্রাধান্য দিবে তার জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৭৮; মিরকাতুল মাফাতীহ)