৩২৩৮

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত

৩২৩৮-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা নারীদেরকে সদুপদেশ দিবে। কারণ তাদেরকে পাঁজরের বাঁকা হাড় হতে সৃষ্টি করা হয়েছে, পাঁজরের হাড়ের মধ্যে সবচেয়ে বাঁকা (হাড়) হলো উপরেরটি। অতঃপর তুমি যদি ঐ হাড়কে সোজা করতে চেষ্টা কর, তবে তা ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি রেখে দাও, তবে সর্বদা বাঁকাই থাকবে। সুতরাং (আমার নাসীহাত) তোমরা নারীদেরকে সদুপদেশ দিবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ عِشْرَةِ النِّسَاءِ وَمَا لِكُلِّ وَاحِدَةِ مِّنَ الْحُقُوْقِ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا فَإِنَّهُنَّ خُلِقْنَ مِنْ ضِلَعٍ وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلَاهُ فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسْرَتَهُ وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ»

عن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «استوصوا بالنساء خيرا فانهن خلقن من ضلع وان اعوج شيء في الضلع اعلاه فان ذهبت تقيمه كسرته وان تركته لم يزل اعوج فاستوصوا بالنساء»

ব্যাখ্যা : ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসে উল্লেখিত اِسْتَوْصُوْا শব্দের س (সীন) বর্ণ তলব বা অনুসন্ধানের অর্থ প্রদান করেছে। এখানে অর্থ হয়েছে তুমি স্ত্রীদের হাকের ব্যাপারে তোমার নিজের পক্ষ থেকে কল্যাণ অনুসন্ধান কর, অর্থাৎ কল্যাণের দিকটি বিবেচনা কর।

কাযী ‘ইয়ায (রহঃ) বলেনঃ اِسْتَوْصُوْا এর অর্থ হলো «أُوصِيكُمْ بِهِنَّ خَيْرًا فَاقْبَلُوا وَصِيَّتِي فِيهِنَّ...» ‘‘আমি তোমাদেরকে স্ত্রীদের ব্যাপারে কল্যাণের ওয়াসিয়্যাত করছি, সুতরাং তাদের ব্যাপারে আমার ওয়াসিয়্যাত কবুল কর।’’ উদ্দেশ্য হলো তাদের সাথে কোমল এবং সৌজন্যমূলক আচরণ কর; সৃষ্টিগতভাবে তাদের বক্রতার কারণে পূর্ণ দৃঢ় অবস্থান এবং তার ওপর স্থায়ী থাকা তাদের থেকে আশা করা যাবে না। প্রবাদ বাক্যে আছে, স্ত্রীর (বেহায়াপনা ও বক্রতা) থেকে ধৈর্য ধারণের চেয়ে স্ত্রী গ্রহণ না করে অবিবাহিত থেকে ধৈর্যধারণ অধিক সহজ। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘(বেহায়া, নির্লজ্জ, বক্র) নারীদেরকে বিয়ে না করে বিরত থেকে ধৈর্যধারণ করাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ২৫)।

ضِلَعٍ শব্দটির ض বর্ণে কাসরা বা যের যোগে পঠিত হয়। অর্থাৎ পাঁজরের সবচেয়ে উপরের হাড়, যা সাধারণত বক্র হয়ে থাকে। নারীদরেকে এই বক্র হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ঐতিহাসিক সৃষ্টি তত্ত্ব হলো এই যে, আদি মাতা হাওয়া (আঃ)-কে আদম (আঃ)-এর পাঁজরের বক্র হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতএব নারী সৃষ্টির মৌলতত্ত্ব হলো সে বক্র হাড়ের সৃষ্টি। তাই তাদের স্বভাব প্রকৃতিতে রয়েছে বক্রতা, এ বক্রতা কেউই সম্পূর্ণরূপে সোজা করতে পারবে না। বিধায় তাদের সাথে কোমল নরম ও সৌজন্যমূলক আচরণ করে তাদের থেকে কার্যসিদ্ধি করতে হবে। আর তাদের সাথে জীবন যাপনে গুনাহের সম্ভাবনা না থাকলে সৃষ্টিসুলভ বক্র আচরণে ধৈর্যধারণ করবে। এই বক্রতা জোর জবরদস্তি করে সোজা করতে চাইলে তা ভেঙ্গে যাবে। সুতরাং বেশী জোর জবরদস্তি করা যাবে না।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেছেনঃ এ হাদীসে নারীদের প্রতি সহানুভূতি এবং ইহসানের জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে, আর সৃষ্টিগত বক্র স্বভাবের ও অপূর্ণ জ্ঞানের কারণে ধৈর্যধারণের উপদেশ প্রদান করা হয়েছে। আনুগত্যে দৃঢ় না থাকায় অথবা কারণ ছাড়াই তাদের তালাক দেয়াও অপছন্দনীয় কাজ, অতএব তা থেকে বিরত থাকবে। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৩৩১; শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৬৮; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح)