পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৫১-[১৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফরে ছিলেন। সেখানে আমি তাঁর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করে জয়ী হই। অতঃপর যখন আমার শরীর (মেদ) ভারী হয়ে গেল তখন পুনরায় দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম। এবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে পেছনে ফেলে জয়ী হলেন এবং বললেন, (পূর্বের দৌড় প্রতিযোগিতার) পরাজয়ের প্রতিশোধ হলো এই জয়। (আবূ দাঊদ)[1]
عَن عَائِشَة رَضِي الله عَنْهَا أَنَّهَا كَانَتْ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ قَالَتْ: فَسَابَقْتُهُ فَسَبَقْتُهُ عَلَى رِجْلَيَّ فَلَمَّا حَمَلْتُ اللَّحْمَ سَابَقْتُهُ فَسَبَقَنِي قَالَ: «هَذِهِ بِتِلْكَ السَّبْقَةِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: রসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন ছিল মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগের শ্রেষ্ঠ আদর্শের নমুনা। স্ত্রীদের মনোরঞ্জন বিধান, তাদের সাথে হাসি-কৌতুকের মতো একটি একান্ত বিষয়েও তিনি পবিত্র আদর্শের স্থপতি। সফরের ক্লান্ত শ্রান্ত অবষণ্ণ মনেও এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর সাথে দৌড়ের প্রতিযোগিতা করেন। এটি কোনো সওয়ারে আরহণ করে নয় বরং পায়ে হেঁটে অর্থাৎ খালি পায়ে দৌড়ের পাল্লা। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, দৌড়ে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পিছনে ফেলে বিজয়ী হয়ে গেলাম। পরবর্তী সময়ে আরেকবার এমনি প্রতিযোগিতা হলো, এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিজয়ী হলেন এবং ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) পিছনে পড়ে গেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বললেন, এটা তোমার গত প্রতিযোগিতা বিজয়ের প্রতিশোধ।
এটা স্ত্রীদের সাথে হুসনু মুআশারাত বা উত্তম আচরণের একট নমুনা। কাযী খান বলেনঃ চারটি বিষয়ে প্রতিযোগিতা করা বৈধ। ১. উটের দৌড় প্রতিযোগিতা, ২. ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা, ৩. তীরন্দাজী প্রতিযোগিতা ৪. এবং পদব্রজে দৌড় প্রতিযোগিতা। অনুরূপ কোনো প্রতিযোগিতার হারজিত যদি একদিক থেকে হয় তবে তা বৈধ, যেমন : একজন বললো যদি আমি তোমার আগে যেতে পারি তবে আমার জন্য এই পুরস্কার আর তুমি যদি আমার ওপর অগ্রগামী হও তবে তোমার জন্য কোনো পুরস্কার নেই।
পক্ষান্তরে যদি পুরস্কারের উভয় দিক থেকে করা হয় তবে তা হারাম, কেননা ওটা জুয়া-বাজী।
অনুরূপ কোনো আমির ‘উমারাহ্ যদি দু’জনের মধ্যে ঘোষণা দেয় যে, তোমাদের দু’জনের মধ্যে যে অগ্রগামী হবে তার জন্য এই এই বিনিময় তবে এটাও বৈধ। উপরে উল্লেখিত চারটি বিষয়ে প্রতিযোগিতা জায়িয বলা হয়েছে এজন্য এই বিষয়ে আসার রয়েছে, অন্যান্য প্রতিযোগিতায় আসার নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী হাঃ ২৫৭৫, ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৭৫)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৫২-[১৫] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম যে স্বীয় পরিবারের নিকট উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের নিকট সর্বোত্তম। আর যখন তোমাদের যে কেউ মারা যায়, তখন তার (নিন্দা করা) হতে বিরত থাক। (তিরমিযী, দারিমী)[1]
وَعَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي وَإِذَا مَاتَ صَاحِبُكُمْ فَدَعُوهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ. والدارمي
ব্যাখ্যা: হাদীসের উল্লেখিত «أهل» শব্দটি স্বামী-স্ত্রী, পরিবার-পরিজন এবং নিকটতম ব্যক্তির অর্থ বহন করে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী : ‘‘তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে তার আহলের কাছে অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীর কাছে, স্ত্রী স্বামীর কাছে উত্তম’’- এটা উত্তম আচরণ এবং উত্তম চরিত্রের পথ-নির্দেশক। আর এই উত্তম আচরণ এবং উত্তম চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ণয় হয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ (أَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِىْ) ‘‘আমি তোমাদের মধ্যে আমার পরিবারের জন্য শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি’’ এই শ্রেষ্ঠত্ব উত্তম আচরণ এবং উত্তম গুণাবলীর ভিত্তিতে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ আদর্শ এবং সর্বোত্তম গুণাবলীর অধিকারী।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ (وَإِذَا مَاتَ صَاحِبُكُمْ فَدَعُوهُ) ‘‘যখন তোমাদের সাথী (অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর কোনো একজন) মৃত্যুবরণ করবে, তাকে ত্যাগ করবে।’’ এর অর্থ হলো স্মামী-স্ত্রীর কেউ মারা গেলে তার দোষ এবং নিন্দনীয় গুণাবলী আলোচনা করা বা তার কোনো দোষ জনসম্মুখে তুলে ধরা ত্যাগ করবে। কিন্তু উত্তম গুণাবলী আলোচনা করা এবং তা জনসম্মুখে তুলে ধরা, এ নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ «اذْكُرُوا مَوْتَاكُمْ بِالْخَيْرِ» ‘‘তোমরা মৃতদের ভালো দিকগুলো আলোচনা করো।’’
কেউ কেউ বলেছেন, তোমাদের সাথী মৃত্যুবরণ করলে- তাকে ছেড়ে দিবে বা বর্জন করবে, এর অর্থ হলো তার মুহববাত ত্যাগ করবে এবং তার জন্য বিলাপ বা কান্নাকাটি ত্যাগ করবে। উত্তম হলো তাকে আল্লাহর রহমাতের দিকে ছেড়ে দিবে অর্থাৎ তার রহমাতের আশ্রয়ে সোপর্দ করবে। নেককারদের জন্য আল্লাহর নিকট হলো উত্তম আশ্রয়, আর সৃষ্টিকর্তার আশ্রয়ই তো শ্রেষ্ঠ এবং পূর্ণ আশ্রয়।
কেউ কেউ বলেছেন, এ বাক্য দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় সত্তাকেই বুঝিয়েছেন অর্থাৎ তোমরা আমার মৃত্যুর পর আমার জন্য আফসোস ও পরিতাপ করবে না।
কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ হলো তুমি মরে গেলে আমাকে ছেড়ে দিবে অর্থাৎ আমার আহ্ল-পরিবার ও সাহাবীদের কষ্ট দিবে না এবং আমার দীনের ইত্তেবা ছেড়ে দিবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৫৩-[১৬] আর ইবনু মাজাহ-তে ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন ’’আমার পরিবারের জন্য উত্তম’’ পর্যন্ত।[1]
وَرَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ إِلَى قَوْله: «لأهلي»
ব্যাখ্যা: ইবনু মাজাহ গ্রন্থে ইবনু ‘আব্বাস-এর সূত্রে (لِأَهْلِىْ) বর্ণিত হয়েছে। এতে প্রমাণিত দু’টি হাদীস স্বতন্ত্রভাবে আলাদা আলাদাভাবে) বর্ণিত হয়েছে। তাই উভয় হাদীসের মধ্যে মুনাসাবাত বা সম্পর্ক সন্ধানের প্রয়োজন নেই। এ কথার সহায়ক হলো ‘আল্লামা সুয়ূত্বীর কথা, তিনি এ পর্যন্তই উল্লেখ করেছেন, অতঃপর তিনি বলেন, তিরমিযী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, ইবনু মাজাহ, ইবনু ‘আব্বাস থেকে, ত্ববারানী মু‘আবিয়াহ্ থেকে এবং হাকিমে ইবনু ‘আব্বাস-এর সূত্রে «خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِلنِّسَاءِ» বাক্য ব্যবহার হয়েছে, ‘‘তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে স্ত্রীদের নিকট উত্তম।’’
মুসতাদরাক হাকিম গ্রন্থে আবূ হুরায়রাহ্ -এর বর্ণনায় «خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ» ‘‘আমার পর তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে আমার পরিবারের নিকট উত্তম!’’ উল্লেখ রয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৫৪-[১৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমাযানের সিয়াম পালন করে, গুপ্তাঙ্গের হিফাযাত করে, স্বামীর একান্ত অনুগত হয়। তার জন্য জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশের সুযোগ থাকবে। (আবূ নু’আয়ম হিল্ইয়াহ্ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)[1]
বিঃ দ্রঃ আলবানী (রহঃ) অনত্র হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুনঃ (هداية الرواة إلى تخريج أحاديث المصابيح والمشكاة)।
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمَرْأَةُ إِذَا صَلَّتْ خَمْسَهَا وَصَامَتْ شَهْرَهَا وَأَحْصَنَتْ فَرْجَهَا وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا فَلْتَدْخُلْ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شَاءَتْ» . رَوَاهُ أَبُو نعيم فِي الْحِلْية
ব্যাখ্যা: মহিলার পাঁচ ওয়াক্ত সালাত তার রজঃকাল ছাড়া পবিত্র কালের সালাত। আর একমাস সওম হলো রমাযানের ফরয সওম! তাই তা রমাযান মাসেই আদায়ের মাধ্যমে পালন করা হোক অথবা অসুস্থাজনিত কারণে পরবর্তীতে কাযা আদায়ের মাধ্যমে পালন করা হোক।
(وَأَحْصَنَتْ فَرْجَهَا) এর অর্থ হলো যদি নারী তার যৌনাঙ্গকে হিফাযাত করে, অর্থাৎ নিজের ইজ্জত সম্ভ্রম ও সতীত্বকে রক্ষা করে। ব্যাখ্যাকারকগণ নিজের নফস্ বা প্রবৃত্তিকে সকল প্রকার অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখার কথাও বলেছেন।
(وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا) ‘যদি সে স্বামীর ইত্বা‘আত বা আনুগত্য করে, স্বামীর আনুগত্য বলতে যা অবশ্য পালনীয় তা পালন করে। তাহলে সে জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে। এর অর্থ হলো আটটি জান্নাতের যে কোনোটি সে প্রবেশ করতে পারবে। এখানে ইশারা রয়েছে জান্নাতের কোনো একটিতে যেতে তার বাধা নেই এবং সে দ্রুত তা অর্জন করতে পারবে এবং তাতে পৌঁছতে পারবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৫৫-[১৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যদি কোনো মানবকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তবে স্ত্রীকে তার স্বামীর জন্য সিজদা করার নির্দেশ দিতাম। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «لَو كُنْتُ آمُرُ أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لَأَمَرْتُ الْمَرْأَة أَن تسْجد لزَوجهَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: ‘সিজদা’ হলো (انْقِيَادِ) বা বশ্যতা ও আত্মসমর্পণের চূড়ান্তরূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ ‘‘যদি আমি কোনো মানুষকে সিজদা করার নির্দেশ করতাম তবে অবশ্যই নারীকে নির্দেশ করতাম তার স্বামীকে সিজদা করতে।’’ কেননা স্ত্রীর ওপর স্বামীর অধিকার এবং হক এতই বেশি যে, সে তার কৃতজ্ঞতা কোনোভাবেই আদায় করতে সক্ষম হবে না।
সাজদার মতো একটি চূড়ান্ত কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কাজ যদি আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য বৈধ হতো তবে এর হকদার স্বামীই হতো; কিন্তু সিজদা যেহেতু একমাত্র আল্লাহর অধিকার, তিনিই একচ্ছত্রভাবে এ অধিকার ও হক সংরক্ষণ করেন। সুতরাং এই সাজদার প্রাপ্যতা পৃথিবীর আর কারো জন্যই অবশিষ্ট নেই।
স্বামীকে সাজদার কথা নিছক একটা উপমা হিসেবে বলা হয়েছে মাত্র।
অত্র হাদীসের প্রেক্ষাপট হলোঃ সাহাবী মু‘আয সিরিয়ায় গিয়ে দেখেন তারা তাদের বড়দের সিজদা করছে। তিনি মনে মনে নিয়্যাত করলেন আমি মদীনায় গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সিজদা করবো। ফিরে এসে তিনি তাই করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, মু‘আয! তুমি একি করছো? তিনি বললেন, আমি সিরিয়ায় গিয়ে দেখেছি সেখানে সর্বসাধারণ বড় বড় পাদ্রী ও রাজন্যবর্গকে সিজদা করছে। তাই অমি মনে মনে ভেবেছিলাম মদীনায় ফিরে গিয়ে আমি আপনাকে সিজদা দিবো। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেন। অনেকে বলে থাকেন সম্মান ও তা‘যীমের সিজদা বৈধ। যেমন (ফতোয়ায়ে) কাযী খান (গ্রন্থে) বলেছেন,
إِنْ سَجَدَ لِلسُّلْطَانِ إِنْ كَانَ قَصْدُهُ التَّعْظِيمَ وَالتَّحِيَّةَ دُونَ الْعِبَادَةِ لَا يَكُونُ ذٰلِكَ كُفْرًا وَأَصْلُه أَمْرُ الْمَلَائِكَةِ بِالسُّجُودِ لِاٰدَمَ وَسُجُودُ إِخْوَةِ يُوسُفَ - عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ
‘ইবাদাতের উদ্দেশ্য না করে যদি সম্মান এবং শ্রদ্ধার জন্য বাদশাহকে সিজদা করা হয় তাহলে এটা কুফরী হবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা মালায়িকার (ফেরেশতাদের) নির্দেশ করেছিলেন আদামকে সিজদা করতে। অনুরূপ ইউসুফ (আঃ)-এর ভাইয়েরা ইউসুফকে সিজদা করেছিলেন।
এই যুক্তির ভিত্তিতে অনেক পীর তার মুরীদ বা শিষ্যদের সিজদা গ্রহণ করে থাকেন। এরূপ সিজদা সম্পূর্ণ হারাম ও কবীরা গুনাহ। আদামকে সাজদার যে নির্দেশ ছিল তা মালায়িকার প্রতি, আদাম সন্তানের প্রতি (এ নির্দেশ) নয়। উপরোক্ত আদামের এ ঘটনা ঊর্ধ্ব জগতের বিষয় দুনিয়ার শারী‘আত ও তার বিধানে তা প্রযোজ্য নয়। সর্বোপরি ঐ সাজদার ধরণ ও প্রকৃতি কেমন ছিল তাও আমাদের কারোই জানা নেই; সুতরাং ওটাকে ভিত্তি করে কোনো মানুষ কোনো মানুষকে কোনো প্রকারের সিজদাই করা বৈধ নয়।
অনুরূপ সূরা ইউসুফ-এর আরেকটি আয়াত নিয়ে অনেকে ভ্রান্তিতে পতিত হয়েছেন। সেটা হলো ইউসুফ (আঃ)-এর আমন্ত্রণে তার ভাইয়েরা এবং পিতা-মাতা যখন মিসরে পৌঁছলেন তখন ইউসুফ (আঃ) পিতাকে যথাসম্মানে সিংহাসনে বসালেন। এ অকল্পনীয় ঘটনা দেখে তারা সবাই তার সামনে (আল্লাহর উদ্দেশে) সাজদায় লুটিয়ে পড়লেন। দেখুন সূরা ইউসুফ ১০০; এই সিজদা ইউসুফকে দেয়া হয়নি বরং ইউসুফের সামনে আল্লাহকে সিজদা দেয়া হয়েছিল।
বিশ্ব বিখ্যাত ফাকীহ ‘আল্লামা মুফতী শাফী (পাকিস্থান) স্বীয় গ্রন্থ তাফসীরে মা‘রিফুল কুরআনে এ আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে বলেনঃ
‘‘পিতা-মাতা ও ভ্রাতারা সবাই ইউসুফ (আঃ)-এর সামনে সিজদা করলেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস বলেন, এ কৃতজ্ঞতাসূচক সিজদা্টি ইউসুফ (আঃ)-এর জন্য নয় বরং আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশেই করা হয়েছিল।
কেউ কেউ বলেন, উপাসনামূলক সিজদা প্রত্যেক পয়গাম্বরের শারী‘আতেই হারাম ছিল, কিন্তু সম্মানসূচক সিজদা একে অপরকে দেয়া পূর্ববর্তী নাবীগণের শারী‘আতে বৈধ ছিল। ‘আল্লামা শাফী (রহঃ) বলেছেন, শির্কের সিঁড়ি হওয়ার কারণে ইসলামী শারী‘আতে তাও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৫৬-[১৯] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে রমণী নিজের স্বামীকে সন্তোষ রেখে মৃত্যুবরণ করে, নিশ্চয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّمَا امْرَأَةٍ مَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَنْهَا رَاضٍ دَخَلَتِ الْجَنَّةَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
ব্যাখ্যা: স্বামী যদি ‘আলিম এবং মুত্তাক্বী হয় আর তার স্ত্রী আল্লাহর হক এবং তার বান্দার হক যথাযথ পালন করে তবে তার জন্য এই ঘোষণা।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান গরীব বললেও মূলতঃ হাদীসটি য‘ঈফ। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১১৬১; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৫৭-[২০] ত্বলক্ব ইবনু ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো স্বামী নিজ প্রয়োজনে স্বীয় স্ত্রীকে ডাকলে, সে যেন তৎক্ষণাৎ তার ডাকে সাড়া দেয়, যদিও সে চুলার পাশে (গৃহকর্মীর কাজে) ব্যস্ত থাকে। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ طَلْقِ بْنِ عَلِيٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا الرَّجُلُ دَعَا زَوْجَتَهُ لِحَاجَتِهِ فَلْتَأْتِهِ وَإِنْ كَانَتْ عَلَى التَّنور» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: স্বামী তার স্ত্রীর পরিচালক এবং অভিভাবক, সে যে কোনো কাজে তাকে আহবান করে সে আহবানে তাকে সাড়া দেয়া আবশ্যক, বিশেষ করে তার জৈবিক চাহিদা পূরণের আহবানে তাকে অবশ্যই সাড়া দিতে হবে। অত্র হাদীস সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। সে যদি চুলায় রুটি তৈরিতেও লিপ্ত থাকে আর সে ছাড়া বিকল্প কোনো লোক না থাকে তবু তা মূলতবী রেখে স্বামীর আহবানে সাড়া দিবে। ইবনুল মালিক বলেন, এ রুটি যদি স্বামীর হয় তবেই এ হুকুম। কারণ স্বামী জানছে যে, সে রুটি তৈরিতে ব্যস্ত, এ সময় ডাকলে তার ক্ষতি হবে, তবু সে যখন ডাকছে, তখন তার ডাকে সাড়া দিতে হবে।
বাযযার কিতাবে যায়দ ইবনু আরকাম-এর সূত্রে হাদীসটি এভাবে এসেছে : কোনো ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীকে স্বীয় বিছানায় আহবান করে সে যেন (সাথে সাথে) তার ডাকে সাড়া দেয়, যদি সে জাঁতার খিলের উপরও বসা থাকে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১১৬০)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৫৮-[২১] মু’আয (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোনো স্ত্রী তার স্বামীকে দুনিয়াতে কষ্ট দেয় (অর্থাৎ- অশ্রদ্ধা, অবাধ্যতা ইত্যাদির মাধ্যমে)। তখন উক্ত স্বামীর জান্নাতের রমণীগণ (হূরেরা) বলতে থাকে, তুমি তাকে কষ্ট দিও না, (যদি কর) তবে আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করবেন। তিনি তোমার নিকট (কিছু সময়ের দিনের) মেহমান, শীঘ্রই তিনি তোমাকে ছেড়ে আমাদের নিকট চলে আসবে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]
وَعَنْ مُعَاذٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا تُؤْذِي امْرَأَةٌ زَوْجَهَا فِي الدُّنْيَا إِلَّا قَالَت زَوجته مِنَ الْحُورِ الْعِينِ: لَا تُؤْذِيهِ قَاتَلَكِ اللَّهُ فَإِنَّمَا هُوَ عِنْدَكِ دَخِيلٌ يُوشِكُ أَنْ يُفَارِقَكِ إِلَيْنَا . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيث غَرِيب
ব্যাখ্যা: মু’মিনদেরকে আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে ‘‘হূরি‘ঈন’’ বা আয়তনয়না হূর দিবেন। আল্লাহ বলেনঃ ‘‘আমি জান্নাতীদেরকে হূরি‘ঈনদের সাথে জোড়া মিলিয়ে দিবো’’- (সূরা আদ্ দুখান ৪৪ : ৫৪)। অর্থাৎ বিয়ে দিয়ে দিবো। হূরি‘ঈন হলো অতীব উজ্জ্বল সাদা কালো মিশ্রিত, প্রশস্ত ও আনতচক্ষু বিশিষ্ট বা (ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট) অত্যন্ত সুশ্রী, অন্যন্য সুন্দরী জান্নাতের নারী।
মু’মিন নেককার জান্নাতী বান্দাকে যদি তার দুনিয়ার স্ত্রী কষ্ট দেয় তখন তার জন্য নিযুক্ত জান্নাতের ঐ হূরী‘ঈন স্ত্রী তা জানতে পারে।
হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন। তুমি তাকে কষ্ট দিও না। এখানে (قَاتَلَكِ اللّٰهُ)-এর ব্যাখ্যা হলো : «لَعَنَكِ عَنْ رَحْمَتِه وَأَبْعَدَكِ عَنْ جَنَّتِه» আল্লাহ তোমাকে তাঁর রহমাত থেকে বঞ্চিত করুন। এবং তাঁর জান্নাত থেকে দূরে রাখুন। সে তো সামান্য কয়দিনের মেহমানস্বরূপ তোমার নিকট গিয়েছে মাত্র, এরপর আমাদের নিকট ফিরে আসবে। তুমি তো তার প্রকৃত সঙ্গী নও, আমরাই তার প্রকৃত সঙ্গী, সুতরাং তোমরা তাকে কষ্ট দিও না।
অত্র হাদীস ও অন্যান্য হাদীসে যেখানে স্বামীর অবাধ্যচারীদের প্রতি মালায়িকার (ফেরেশতাদের) লা‘নাতের কথা বলা হয়েছে। এ জাতীয় হাদীস প্রমাণ করে যে, ‘‘মালা-য়ি আ‘লা-’’ বা ঊর্ধ্ব জগতের কিছু মালাক (ফেরেশতা) দুনিয়াবাসীর কাজকর্মের খবর রাখেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১১৭৪)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৫৯-[২২] হাকীম ইবনু মু’আবিয়াহ্ আল কুশায়রী (রহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! স্ত্রীগণ আমাদের ওপর কি অধিকার রাখে? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি যখন খাও, তখন তাকেও খাওয়াও; তুমি পরলে তাকেও পরিধান করাও, (প্রয়োজনে মারতে হলে) মুখমণ্ডলে আঘাত করো না, তাকে গালি দিও না, (প্রয়োজনে তাকে ঘরে বিছানা পৃথক করতে পার), কিন্তু একাকিনী অবস্থায় রাখবে না। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ حَكِيمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ الْقُشَيْرِيِّ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا حَقُّ زَوْجَةِ أَحَدِنَا عَلَيْهِ؟ قَالَ: «أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ وَتَكْسُوَهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ وَلَا تَضْرِبِ الْوَجْهَ وَلَا تُقَبِّحْ وَلَا تَهْجُرْ إِلَّا فِي الْبَيْتِ» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: স্বামী-স্ত্রী পরস্পর একে অপরের প্রতি কতিপয় হক বা কর্তব্য রয়েছে। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অবশ্য পালনীয় কর্তব্য জানতে চাওয়ায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন, তুমি যখন খাবে তাকেও খাওয়াবে, তুমি যখন পরিধান করবে তাকেও পরিধান করাবে। অর্থাৎ প্রত্যেক স্বামীর জন্য ওয়াজিব হলো তার সাধ্যমতো স্ত্রীকে ভরণ-পোষণ করা। স্বামীর সাধ্যের বাইরে যেমন স্ত্রী উন্নত খাদ্য, উন্নত বস্ত্র পাবে না ঠিক তদ্রূপ স্বামীর সাধ্য থাকতে নিজে খেয়ে স্ত্রীকে উপোস রাখতে এবং বস্ত্রহীন করে রাখতে পারবে না। এমনকি ছিন্ন বস্ত্র অথবা খুব অল্প মূল্যের বস্ত্রও দিবে না। বরং সাধ্যের মধ্যে মানসম্পন্ন এবং ভারসাম্যপূর্ণ বস্ত্র তাকে দিবে।
স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবন একটি মধুময় জীবন। সুতরাং এই মধুময় সম্পর্কের কেউই চির ধরাবে না। স্বামী স্ত্রীকে অহেতুক মারধর করবে না। স্ত্রী শারী‘আতের কোনো বিধি-বিধান লঙ্ঘনের কারণে একান্তই যদি তার ওপর শাসনমূলক কোনো ব্যবস্থা নিতে হয় তাহলে আল্লাহর এ বাণী লক্ষ্য করবে :
‘‘আর যদি তোমরা (স্ত্রীদের নিকট থেকে) অবাধ্যতার আশঙ্কা করো তাহলে তাদের নাসীহাত করো, (তাতে যদি ফল না হয় তাহলে) তাদের বিছানা পৃথক করে দাও, (যাতে তোমার সঙ্গ না পেয়ে অনুতপ্ত হয়ে তোমার আনুগত্যে ফিরে আসতে পারে)। এতেও যদি সে সংশোধন না হয় তবে তাদের (হালকা) প্রহার করো।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৩৫)
এই প্রহারের ক্ষেত্রে নির্দেশনা হলোঃ তুমি তার মুখমণ্ডলে আঘাত করবে না। কেননা মুখমণ্ডল হলো মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং প্রকাশ্য অঙ্গ। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর মধ্যে মুখমণ্ডল হলো অধিক সম্মানিত এবং স্পর্শকাতর, তাই সেখানে আঘাত করা নিষেধ।
স্ত্রী ছাড়া অন্য কাউকেও প্রহার করার প্রয়োজন হলে তাকেও মুখমণ্ডলে প্রহার করা এ হাদীসের দ্বারাই নিষিদ্ধ প্রমাণিত; কেননা এ হাদীসে যে মুখমন্ডলীর কথা বলা হয়েছে তা শুধু স্ত্রীর মুখের কথা বলা হয়নি বরং ‘আম্ বা ব্যাপকার্থে সকলের মুখেই প্রহার নিষেধ করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো তার স্ত্রীদের মার-ধর করেননি। হাদীসে যে প্রহারের কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তা উপরে উল্লেখিত সূরা আন্ নিসা-এর ঐ আয়াতের ভিত্তিতেই বলেছেন। ফাকীহগণ ঐ প্রহারের একটি দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন যে, ঐ প্রহার হবে মিসওয়াক বা মিসওয়াক জাতীয় কাঠ দ্বারা আঘাত করা। মূলতঃ এটি প্রহার নয় বরং প্রতীকী প্রহার, যাতে স্ত্রী সংশোধিত হয়।
‘ফতোয়া’-এ কাযী খান চার কারণে স্ত্রীকে প্রহার বৈধ করেছেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তাকে গালি দিও না। অর্থাৎ তাকে অশ্লীল ও খারাপ ভাষায় গালি গালাজ করো না। অথবা ‘‘আল্লাহ তোমাকে খারাপ বানিয়ে দিক’’ এ জাতীয় কথাও বলো না। আর তাকে বাড়ি ছাড়া করে তাকে অন্যত্রও ফেলে রাখবে না যাতে সে নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে যায়। বরং আল কুরআনের নির্দেশ মতো ভিন্ন বিছানায় রাখবে যাতে সে তোমার বিরহ বেদনায় বিনীত হয়ে তোমার আনুগত্যে ফিরে আসে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২১৪২; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৬০-[২৩] লাক্বীত্ব ইবনু সবিরাহ্ হতে (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার স্ত্রী অত্যন্ত মুখরিতা (বাচাল)। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে তালাক দিয়ে দাও। আমি বললাম, কিন্তু ঐ স্ত্রীর ঘরে আমার সন্তান রয়েছে এবং সে আমার দীর্ঘ দিনের দাম্পত্য সঙ্গীনী। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে তাকে নাসীহাত কর। যদি সে তোমার উপদেশে ভালো হয়ে যায় তবে ভালো। কিন্তু স্ত্রীকে ক্রীতদাসীর ন্যায় মারবে না। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ لَقِيطِ بْنِ صَبِرَةَ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لِي امْرَأَةً فِي لِسَانِهَا شَيْءٌ يَعْنِي الْبَذَاءَ قَالَ: «طَلِّقْهَا» . قُلْتُ: إِنَّ لِي مِنْهَا وَلَدًا وَلَهَا صُحْبَةٌ قَالَ: «فَمُرْهَا» يَقُولُ عِظْهَا «فَإِنْ يَكُ فِيهَا خَيْرٌ فَسَتَقْبَلُ وَلَا تَضْرِبَنَّ ظَعِينَتَكَ ضَرْبَكَ أُمَيَّتَكَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: এখানে ‘‘লাক্বীত্ব ইবনু সবিরাহ্’’ নাম এসেছে, কিন্তু أَسْمَاءِ الْمُصَنَّفِ লেখকদের নাম বা রচয়িতাদের নামের মধ্যে ‘‘লাক্বীত্ব ইবনু ‘আমির ইবনু সবিরাহ্’’ রয়েছে। ইনি প্রসিদ্ধ সাহাবী, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তার স্ত্রীর সম্পর্কে অভিযোগ করেন যে, সে গাল-মন্দ এবং অশ্লীল কথা বলে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘তুমি তাকে তালাক দিয়ে দাও, অর্থাৎ তুমি যদি তার কথায় ধৈর্য ধারণ করতে না পারো তবে তাকে তালাক দিয়ে দাও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ নির্দেশ আবশ্যক হিসেবে বিবেচিত হবে না বরং ইবাহাত বা বৈধতার অর্থে ব্যবহৃত হবে। লোকটি বললেন, তার সাথে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক এবং তার থেকে আমার সন্তানও রয়েছে, কিভাবে আমি এই দীর্ঘ ভালোবাসার অবসান ঘটিয়ে তাকে তালাক দেই। এতে আমার সন্তানের জীবনও হয়ে যেতে পারে বিপন্ন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তাহলে তুমি তাকে ভালো উপদেশ দাও, অর্থাৎ ভালো ব্যবহারের নাসীহাত করো, তার মধ্যে যদি সামান্য কল্যাণও থাকে তাহলে সে তোমার উপদেশ কবুল করবে এবং তার ঐ মন্দ অভ্যাস ত্যাগ করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাসীহাতের কথা এজন্য বলেছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা তা নির্দেশ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘তোমরা স্ত্রীদের নাসীহাত করো।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৩৪)
সেকালে মানুষ দাস-দাসীদের নির্দয়ভাবে প্রহার করতো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে বললেনঃ তুমি তোমার স্বাধীনা স্ত্রীকে ঐরূপ দাস-দাসীর মতো প্রহার করো না। অর্থাৎ সে যদি নাসীহাত কবুল নাই করে, তবে আল কুরআনের অনুমোদিত প্রহারটুকু যেন দয়ার্দ্রতার সাথে হয় এবং হালকা ও মৃদু প্রহার হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২১৪২)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৬১-[২৪] আয়াস ইবনু ’আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ তা’আলার বান্দীগণকে (স্ত্রীগণকে ক্রীতদাসীর ন্যায়) মেরো না। অতঃপর ’উমার এসে বললেন, (আপনার নিষেধাজ্ঞার দরুন) স্বামীদের ওপর রমণীদের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে (প্রয়োজনসাপেক্ষে) মারার অনুমতি দিলেন। এমতাবস্থায় রমণীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণীগণের নিকট পুনঃপুন এসে স্বামীদের (অত্যাচারের) ব্যাপারে অভিযোগ করতে লাগল। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শুনে রাখ! আমার পরিবার-পরিজনের নিকট স্ত্রীগণ স্বামীদের অভিযোগ নিয়ে পুনঃপুন আসছে যে, তোমাদের মধ্যে (যারা স্ত্রীদেরকে এরূপে কষ্ট দেয়) তারা কোনক্রমেই ভালো মানুষ নয়। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[1]
وَعَنْ إِيَاسِ بْنِ عَبْدُ اللَّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «لَا تَضْرِبُوا إِمَاءِ اللَّهِ» فَجَاءَ عُمَرُ إِلَى رَسُولِ الله فَقَالَ: ذَئِرْنَ النِّسَاءُ عَلَى أَزْوَاجِهِنَّ فَرَخَّصَ فِي ضَرْبِهِنَّ فَأَطَافَ بَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نِسَاءٌ كَثِيرٌ يَشْكُونَ أَزْوَاجَهُنَّ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَقَدْ طَافَ بِآلِ مُحَمَّدٍ نِسَاءٌ كَثِيرٌ يَشْكُونَ أَزْوَاجَهُنَّ لَيْسَ أُولَئِكَ بِخِيَارِكُمْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَه والدارمي
ব্যাখ্যা: জাহিলী যুগের নারীদেরকে তাদের স্বামীরা অমানসিকভাবে প্রহার করতো। ইসলাম এসে এই কর্ম বন্ধ করে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছে। ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে স্ত্রীকে প্রহার করতেই হলে তা যৎসামান্য, এরপরও বলা হয়েছে এটা কোনো ভদ্রচিত কাজ নয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘তোমরা আল্লাহর বান্দীদের অর্থাৎ তোমাদের স্ত্রীদের প্রহার করো না।’’ তোমরা যেমন আল্লাহর বান্দা তারাও তেমনি আল্লাহর বান্দি। উভয়ের আদি পিতা আদম (আঃ) ও আদি মাতা হাওয়া (আঃ)। সুতরাং তাদের প্রতি সদাচারী হও। এতে নারীরা আস্কারা পেয়ে কিছুটা বাড়াবাড়ি শুরু করলে ‘উমার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে অভিযোগ করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার নিষেধাজ্ঞায় স্ত্রীদের স্পর্ধা বেড়ে গেছে, তখন তিনি আবার প্রয়োজনে তাদের প্রহারের অনুমতি প্রদান করলেন। কয়েক দিনের মধ্যে নারীরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের নিকট এসে অভিযোগ দিতে শুরু করলেন যে, তাদের স্বামীরা তাদের প্রহার করে। ফলে আল্লাহর রসূল এক যুগান্তকারী কথা বলে দিলেন যে, ‘‘যারা স্ত্রীকে প্রহার করে তারা কখনো ভালো মানুষ নয়।’’ অর্থাৎ ভদ্র ও সম্ভ্রান্ত মানুষের স্বভাব ও চরিত্র এটা নয় যে, কথায় কথায় স্ত্রীকে ধরে প্রহার করবে।
এটা অতীব ঘৃণিত ও ছোট লোকের কাজ। ইতিপূর্বে আলোচনা হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের প্রহারের যে অনুমতি দিয়েছিলেন সেটাও কুরআনের নির্দেশক্রমেই। কিন্তু মানুষ প্রয়োজনে জায়িয বিষয় নিয়ে অতীব বাড়াবাড়ি করে থাকে। এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, স্ত্রীকে মারা বৈধ কিন্তু তা কোনো ক্রমেই ভদ্রচিত কাজ নয়, সুতরাং তাকে না মেরে তার খারাপ আচরণ চরিত্রের উপর ধৈর্যধারণ করা এবং তাকে ক্ষমা করাই সবচেয়ে উত্তম এবং অধিকতর সুন্দর। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৭২)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৬২-[২৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে, মালিকের বিরুদ্ধে কর্মচারীকে প্ররোচিত করে, ঐ ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيْسَ مِنَّا مَنْ خَبَّبَ امْرَأَةً عَلَى زَوْجِهَا أَوْ عَبْدًا عَلَى سَيّده» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা ও মধুর সম্পর্ক আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং নিজে সৃষ্টি করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গীনীদের সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকো এবং তিনি তোমাদের (স্বামী-স্ত্রী) পরস্পরের মধ্যে সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করে দিয়েছেন।’’ (সূরা আর্ রূম ৩০ : ২০)
স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের সম্প্রীতি ও মুহববাত এটা আল্লাহ তা‘আলার দেয়া অনুগ্রহ, এই সম্প্রীতি বিনষ্ট করা বা বিনষ্টের চেষ্টা করা ঘৃণিত কাজ।
তথাপি এক শ্রেণীর লোক এই ঘৃণিত কাজে লিপ্ত থাকে। তারা স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর কাছে প্রতারণা করে মিথ্যা বানোয়াট বা ভিত্তিহীন কিছু বলে তাদের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি করে থাকে, অনুরূপ মালিকের বিরুদ্ধে গোলামকে কিছু উষ্কানীমূলক কথা বলে সম্প্রীতির অবনতি ঘটিয়ে থাকে। এরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শের উপরে নেই, তারা তার অনুসারী নয় এবং দলভুক্ত নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৬৩-[২৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সচ্চরিত্রের অধিকারী ও পরিবার-পরিজনের সাথে সদ্ব্যবহারকারী প্রকৃত মু’মিনগণের অন্তর্ভুক্ত। (তিরমিযী)[1]
وَعَن عَائِشَة رَضِي الله عَنهُ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِنَّ مِنْ أَكْمَلِ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا وألطفهم بأَهْله» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা : একজন মানুষকে পূর্ণ মু’মিন হতে হলে তাকে অবশ্যই উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্য থেকে ঐ ব্যক্তি আমার কাছে অধিক প্রিয় যার চরিত্র অধিক ভালো।
নাওয়াস ইবনু সাম্‘আন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নেকী এবং গুনাহের ব্যাপারে প্রশ্ন করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বলেন, নেকী বা সাওয়াব হলো উত্তম চরিত্র...।
অন্য হাদীসে এসেছে, কিয়ামতের দিন উত্তম চরিত্র হবে সবচেয়ে ওযনদার ‘আমল। এজন্যই অত্র হাদীসে বলা হয়েছে, পরিপূর্ণ মু’মিন হলো ঐ ব্যক্তি যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।
মু’মিনের আরেকটি গুণ হলো সে হবে সহানুভূতিশীল, দয়ার্দ্র, কোমল ও বিনয়ী। বিশেষ করে তার পরিবার পরিজনের প্রতি অনুগ্রহশীল ও বিনয়ী হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবারের প্রতি ছিলেন অধিক সহানুভূতিশীল। আল্লাহ বলেনঃ ‘‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শের নমুনা’’- (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ২১)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৬৪-[২৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রকৃত সচ্চরিত্রবান ব্যক্তিই সর্বোত্তম মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত। আর তোমাদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম। (তিরমিযী)[1]
ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ হাদীস। আবূ দাঊদ ’সর্বোত্তম ব্যবহার’ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا وَخِيَارُكُمْ خِيَارُكُمْ لِنِسَائِهِمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَرَوَاهُ أَبُو دَاوُد إِلَى قَوْله «خلقا»
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসের ব্যাখ্যা পূর্বের হাদীসের ব্যাখ্যার অনুরূপ। তবে এখানে অতিরিক্ত বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে, তার স্ত্রীর কাছে উত্তম’। এর কারণ হলো একজন স্বামীকে তার স্ত্রী যত নিকট থেকে জানতে পারে এবং তার বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সকল বিষয় যত কিছু জানতে পারে সৃষ্টির মধ্যে পৃথিবীর কেউ এত জানতে পারে না। সুতরাং স্বামীর ভালো হওয়ার সেই সাক্ষ্য প্রকৃতপক্ষেই একজন মানুষের জন্য ভালো হওয়ার সাক্ষ্য ও প্রামাণ্য দলীল। অনুরূপভাবে বিপরীত অর্থাৎ স্ত্রী ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর সাক্ষ্যকে ধরা যেতে পারে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
[এখানে আরেকটি কথা জানা থাকা প্রয়োজন, তা হলো এই যে, স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই দীনের পূর্ণ অনুসারী হতে হবে, অন্যথায় দীন শারী‘আতের ধার ধারে না কিন্তু স্ত্রী স্বামীকে ভালো বললেই সে ভালো বলে বিবেচিত হবে না।] (সম্পাদক)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৬৫-[২৮] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূক বা হুনায়নের যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তনকালে তাঁর ঘরে (প্রবেশের সময়) পর্দা ঝুলানো দেখতে পেলেন, আর বাতাসে পর্দা দুলতে থাকায় পর্দার অপরদিক দিয়ে ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর খেলনাগুলো দৃষ্টিগোচর হলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, হে ’আয়িশাহ্! এগুলো কী? ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, আমার কন্যাগণ (খেলনা)। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খেলনাগুলোর মাঝে কাপড়ের দুই ডানাবিশিষ্ট ঘোড়া দেখতে পেয়ে বললেন, এগুলোর মধ্যখানে যা দেখছি, তা কী? ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, ঘোড়া। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তার উপরে ঐ দু’টি কী? আমি বললাম, দু’টি ডানা। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (বিস্ময়াভিভূত হয়ে) বললেন, ঘোড়ারও কি আবার দু’টি ডানা হয়? ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, আপনি কি শুনেননি সুলায়মান (আঃ)-এর ঘোড়ার অনেকগুলো ডানা ছিল। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, এটা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এত বেশি হেসে উঠলেন যে, আমি তাঁর মাড়ির দাঁতগুলো পর্যন্ত দেখতে পেলাম। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ غَزْوَة تَبُوك أَو حنين وَفِي سَهْوَتِهَا سِتْرٌ فَهَبَّتْ رِيحٌ فَكَشَفَتْ نَاحِيَةَ السِّتْرِ عَنْ بَنَاتٍ لِعَائِشَةَ لُعَبٍ فَقَالَ: «مَا هَذَا يَا عَائِشَةُ؟» قَالَتْ: بَنَاتِي وَرَأَى بَيْنَهُنَّ فَرَسًا لَهُ جَنَاحَانِ مِنْ رِقَاعٍ فَقَالَ: «مَا هَذَا الَّذِي أَرَى وَسْطَهُنَّ؟» قَالَتْ: فَرَسٌ قَالَ: «وَمَا الَّذِي عَلَيْهِ؟» قَالَتْ: جَنَاحَانِ قَالَ: «فَرَسٌ لَهُ جَنَاحَانِ؟» قَالَتْ: أَمَا سَمِعْتَ أَنَّ لِسُلَيْمَانَ خَيْلًا لَهَا أَجْنِحَةٌ؟ قَالَتْ: فَضَحِكَ حَتَّى رَأَيْتُ نَوَاجِذَهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: তাবূক মদীনাহ্ ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী একটি স্থান যা বর্তমান সৌদী ‘আরবের উত্তর পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত একটি শহর। মদীনাহ্ থেকে তার দূরত্ব ৭৭৮ কিঃ মিঃ।
নবম হিজরীর রজব মাসে এ অভিযান প্রেরিত হয়। এ যুদ্ধকে (غَزْوَةُ الْعُسْرَةِ) কষ্টের যুদ্ধ নামেও অভিহিত করা হয়।
হুনায়ন একটি উপত্যকা যা আরবের বিখ্যাত যিলমাযের নিকটবর্তী একটি এলাকা। কেউ কেউ বলেছেন, হুনায়ন হলো মক্কা থেকে তিন রাতের দূরত্বে ত্বায়িফের নিকটবর্তী একটি জলাভূমি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূকের যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে না হুনায়নের যুদ্ধ থেকে ফিরে দেখেছিলেন, তা বর্ণনাকারীর সন্দেহ থাকায় ‘অথবা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর ঘরে তার খেলনার সামগ্রী দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করেন, এগুলো কি? তিনি বলেন, এগুলো আমার (খেলার) কন্যা। এই খেলনার মধ্যে কাপড় বা নেকড়া দ্বারা তৈরি পাখা বিশিষ্ট একটি ঘোড়াও ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঘোড়ার আবার পাখা হয় নাকি? উত্তরে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, আপনি কি শোনেননি নাবী সুলায়মান (আঃ)-এর ঘোড়ার অনেকগুলো পাখা ছিল? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা শুনে খুব হাসলেন, এমনকি হাসির কারণে তার মাড়ীর শেষ দু’টি দাঁত প্রকাশ হয়ে গেলো।
বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী দ্বারা খেলা করা ‘আরব মেয়েদের প্রাচীন ঐতিহ্য। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ছোটকালে ‘আরব ঐতিহ্যের ভিত্তিতেই নানা জাতীয় খেলনা দিয়ে অন্যান্য মেয়েদের সাথে খেলাধূলা করতেন যা বিভিন্ন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। বয়স হলেও হয় তো ঐ সমস্ত খেলনা সামগ্রী তার ঘরে রয়েই গিয়েছিল যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখেছিলেন। যেমন আজকালও অনেকে শিশুকালের খেলনা সামগ্রী শোকেইসে সংরক্ষণ করে রেখে থাকে।
ইবনুল মালিক বলেনঃ প্রাণীর প্রতিকৃতি দ্বারা খেলার প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অস্বীকৃতি না থাকা এবং তার ঘরে ঐ খেলনা অবশিষ্ট থাকা প্রমাণ করে যে, এ ঘটনা তা হারাম হওয়ার পূর্বের ঘটনা। (মিরকাতুল মাফাতীহ)