৩২৪৮

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত

৩২৪৮-[১১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিণীগণের সাথে এক মাসের ঈলা (পৃথক থাকার কসম) করেছিলেন। কেননা সওয়ারী হতে পড়ে গিয়ে যখন তাঁর (বাম) পা মচকে যায় তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উঁচু কোঠায় ঊনত্রিশ দিন অবস্থান করেছিলেন। অতঃপর নেমে আসলে লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি এক মাসের ঈলা করেছিলেন (অথচ ঊনত্রিশ দিনেই নীচে নেমে আসলেন)? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (চন্দ্র) মাস কখনও ঊনত্রিশ দিনেও হয়। (বুখারী)[1]

بَابُ عِشْرَةِ النِّسَاءِ وَمَا لِكُلِّ وَاحِدَةِ مِّنَ الْحُقُوْقِ

وَعَن أنس قَالَ: آلى رَسُول الله مِنْ نِسَائِهِ شَهْرًا وَكَانَتِ انْفَكَّتْ رِجْلُهُ فَأَقَامَ فِي مَشْرُبَةٍ تِسْعًا وَعِشْرِينَ لَيْلَةً ثُمَّ نَزَلَ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ آلَيْتَ شَهْرًا فَقَالَ: «إِنَّ الشَّهْرَ يَكُونُ تِسْعًا وَعِشْرِينَ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

وعن انس قال: الى رسول الله من نساىه شهرا وكانت انفكت رجله فاقام في مشربة تسعا وعشرين ليلة ثم نزل فقالوا: يا رسول الله اليت شهرا فقال: «ان الشهر يكون تسعا وعشرين» . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের সাথে ‘ঈলা’ করেছিলেন। ‘ঈলা’ শব্দটি ‘আরবী মাসদার বা শব্দমূল اِيْلَاءٌ থেকে اٰلٰى অতীতকালের ক্রিয়ারূপে ব্যবহৃত হয়েছে। ‘ঈলা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ শপথ করা, কসম করা। পরিভাষায় স্ত্রীর নিকট দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য বা সহবাস গমন না করার শপথ করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘোড়া কিংবা খচ্চরের পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে পায়ে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ আঘাতে তাঁর পায়ের জোড়া খুলে যায়। চলতে ফিরতে না পারায় তিনি একটি দ্বিতল ভবনে বিশ্রামের জন্য অবস্থান করেছিলেন। এই সময় তিনি তার স্ত্রীদের সাথে ঈলা করেছিলেন। কেউ কেউ বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রসিদ্ধ ঈলার ঘটনা এটি নয়।

রাবীর বর্ণনা (انْفَكَّتْ رِجْلُه) অর্থাৎ তার পায়ের জোড়া খুলে গিয়েছিল। এখানে انْفَكَّتْ এর অর্থ اِنْفَرَجَتْ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, অর্থাৎ পায়ের গিরার জোড়া থেকে হাড় খুলে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ انفكاك হলো অবষণ্ণতা ও দুর্বলতার একটি প্রকার, আর الخلع শব্দের অর্থ হলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের এক অংশ থেকে অন্য অংশ সরে যাওয়া, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ দ্বিতল কক্ষে ঊনত্রিশ দিন অবস্থানের পর যখন সেখান থেকে অবতরণ করেন, অর্থাৎ ঈলার মেয়াদ শেষ হলে তিনি স্ত্রীদের নিকট গমন করলেন। তখন লোকেরা তাকে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি তো ঈলা করেছিলেন এক মাসের জন্য? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উত্তরে বললেন, মাস কখনো কখনো ঊনত্রিশ দিনেও হয়। সম্ভবতঃ ঐ মাসটি ঊনত্রিশ দিনেই হয়েছিল, তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঊনত্রিশ দিনে তার ঈলার মেয়াদ সমাপ্ত করেছিলেন। শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থকার বলেন, যদি কেউ মাসের কথা উল্লেখ করে বলে আমি আল্লাহর ওয়াস্তে অমুক অমুক মাস সওম পালন করবো, এখন ঐ মাসগুলোর মধ্যে যদি ২৯ দিনের অপূর্ণাঙ্গ মাস এসে যায় তাহলে তার ৩০ পুরতে আরেকটি সিয়াম পালন করতে হবে না। কিন্তু সে যদি মাসের নাম নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না করে বলে আমি আল্লাহর ওয়াস্তে একমাস সিয়াম পালন করবো, তাহলে তাকে ত্রিশটি সিয়ামই পালন করতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘হে নাবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের বলে দিন।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ২৮)

এ আয়াতের প্রেক্ষিতে ‘আল্লামা বাগাভী (রহঃ) বলেনঃ নাবী পত্নীগণ দুনিয়ার আরাম-আয়েশের সামগ্রী এবং জীবন নির্বাহের উপরকরণাদির বরাদ্দ বাড়িয়ে দিতে আবেদন জানালেন। আর স্ত্রীদের কতিপয় কতিপয়ের উপর গায়রাত বা আত্মমর্যাদা প্রকাশ করে নাবীকে কষ্ট দিলেন, এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বর্জন করলেন এবং এক মাস তাদের নিকট গমন না করার শপথ করলেন, তিনি এ সময় তার সাহাবীদের নিকটও বের হননি। লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো, তার কি হয়েছে? তারা এও বলতে লাগলেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীদের তালাক দিয়েছেন। ‘উমার তখন বললেন, আমি অবশ্যই তার আসল ঘটনাটা তোমাদের জানাবো। তিনি বলেন, অতঃপর আমি তখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গমন করে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি আপনার স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি মুসলিমদের এই মাত্র মসজিদের মধ্যে বলতে শুনে আসলাম, তারা বলছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের তালাক দিয়েছেন। আপনি আমাকে অনুমতি দিন আমি তাদের বলে আসি যে, তিনি তাঁর স্ত্রীদের তালাক দেননি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, ইচ্ছা করলে যেতে পারো। ‘উমার বলেন, অতঃপর আমি গিয়ে মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা দিলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের তালাক দেননি। এ সময় আল্লাহ ‘খিয়ারাতের’ আয়াত নাযিল করেন। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৯১১; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح)