৩২৫০

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত

৩২৫০-[১৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে নারীরা স্বেচ্ছায় নিজেদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য উৎসর্গ করত (প্রকাশ করত), আমি তাদেরকে নিকৃষ্ট মনে করতাম এবং (মনে মনে) বলতাম, কোনো নারী কি এতটা নির্লজ্জ হতে পারে (কোনো পুরুষের নিকট স্বেচ্ছায় নিজেকে উৎসর্গ করবে)? অতঃপর যখন আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করলেন, অর্থাৎ- ’’তুমি তাদের যাকে ইচ্ছে সরিয়ে রাখতে পার, আর যাকে ইচ্ছে তোমার কাছে আশ্রয় দিতে পার। আর তুমি যাকে আলাদা ক’রে রেখেছ তাকে কামনা করলে তোমার কোনো অপরাধ নেই...’’- (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৫১)। তখন আমি তাঁকে বললাম- আমি তো দেখি আপনার প্রভু আপনার কামনা-বাসনা পূরণে সর্বদা তৎপর। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে ’মহিলাদের সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় কর’ বর্ধিতাকারে বিদায় হজে/হজ্জের ঘটনায় বর্ণনা করেন।

بَابُ عِشْرَةِ النِّسَاءِ وَمَا لِكُلِّ وَاحِدَةِ مِّنَ الْحُقُوْقِ

وَعَن عَائِشَة قَالَت: كنت أغار من اللَّاتِي وَهَبْنَ أَنْفُسَهُنَّ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: أَتَهَبُ الْمَرْأَةُ نَفْسَهَا؟ فَلَمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: (تُرْجِي مَنْ تَشَاءُ مِنْهُنَّ وَتُؤْوِي إِلَيْكَ مَنْ تَشَاءُ وَمَنِ ابْتَغَيْتَ مِمَّنْ عَزَلْتَ فَلَا جنَاح عَلَيْك)
قُلْتُ: مَا أَرَى رَبَّكَ إِلَّا يُسَارِعُ فِي هَوَاكَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَحَدِيثُ جَابِرٍ: «اتَّقُوا اللَّهَ فِي النِّسَاء» وَذكر فِي «قصَّة حجَّة الْوَدَاع»

وعن عاىشة قالت: كنت اغار من اللاتي وهبن انفسهن لرسول الله صلى الله عليه وسلم فقلت: اتهب المراة نفسها؟ فلما انزل الله تعالى: (ترجي من تشاء منهن وتووي اليك من تشاء ومن ابتغيت ممن عزلت فلا جناح عليك) قلت: ما ارى ربك الا يسارع في هواك. متفق عليه. وحديث جابر: «اتقوا الله في النساء» وذكر في «قصة حجة الوداع»

ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কথা (كُنْتُ أَغَارُ) এর অর্থ হলো أَعِيبُ عَلَيْهِنَّ ‘আমি তাদের দোষ মনে করতাম’, যাতে মহিলারা নিজেকে অপরের জন্য হেবা করে না দেয়। এটা নারী জাতির স্বভাবজাত একটা লজ্জাষ্কর বিষয় তবে এই হেবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য লজ্জাজনক নয় তো বটেই, বরং তা প্রশংসনীয়। কোনো মহিলা তার স্বীয় সত্তাকে নাবীর জন্য হেবা করে দিলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইচ্ছা করলে গ্রহণ করতে পারেন অথবা নাও করতে পারেন, এটা তার এখতিয়ার। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যখন এ আয়াত নাযিল করলেনঃ অর্থাৎ- ‘‘আপনি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা দূরে রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা কাছে রাখতে পারেন। আপনি যাকে দূরে রেখেছেন তাকে কামনা করলে তাতে আপনার কোনো দোষ নেই...।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৫১)

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি যা চান আল্লাহ তা দ্রুতই দিয়ে দেন।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ ঐ আয়াতের ভাবার্থ হলো, হে নাবী! অপরের জন্য যা সীমাবদ্ধ আপনার জন্য তা উন্মুক্ত এবং প্রশস্ত, এটাই আপনার জন্য কল্যাণ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য যে সকল নারী নিজকে হেবা বা উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন তারা হলেন : মায়মূনাহ্ (রাঃ); কেউ কেউ বলেছেন, উম্মু শরীক (রাঃ)। কেউ কেউ যায়নাব বিনতু খুযায়মাহ্ -এর নাম বলেছেন, কেউ খাওলাহ্ বিনতে হাকিম-এর নাম। এ হাদীসের দ্বারা যা প্রকাশ পায় তা হলো উৎসর্গের ঘটনা একদল স্ত্রী দ্বারাই সংঘটিত হয়েছিল। আর এটা সূরা আল আহযাব-এর ৫০ নং আয়াতে বর্ণিত আয়াতের পরিপন্থী নয়; আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ অর্থাৎ- ‘‘কোনো মু’মিনাহ্ নারী যদি নিজকে নাবীর জন্য হেবা করে দেয়.....।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৫০)

এখানে নাকিরা বা অনির্দিষ্ট শব্দ কখনো উমূম বা ব্যাপক অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। সুতরাং হেবাকারী কোনো একজন নির্দিষ্ট স্ত্রীই এমনটি নয় বরং একাধিক স্ত্রী হতে পারেন।
হাদীস শেষে জাবির -এর কথা- (اتَّقُوا اللّٰهَ فِى النِّسَاءِ) ‘‘নারী জাতির ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো’’, এর অর্থ হলোঃ তাদের অধিকার তাদের বিশেষত্বের প্রতি খেয়াল করবে এবং তাদের দুর্বলতা ও দায়বদ্ধতার বিষয়টিও খেয়াল রাখবে।’’ (ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৮৮; শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৬৪; মির্কবাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح)