পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৩৩-[২৫] ’আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি ইরশাদ করেছেনঃ তিনটি জিনিস কিয়ামতের দিন আল্লাহর ’আরশের নীচে থাকবে। (১) কুরআন, এ কুরআন বান্দাদের (পক্ষে বিপক্ষে) আর্জি পেশ করবে। এর যাহের ও বাতেন দু’দিক রয়েছে। (২) আমানাত ও (৩) আত্মীয়তার বন্ধন। (এ তিনটি জিনিসের প্রত্যেকে ফরিয়াদ করবে, হে আল্লাহ! যে আমাকে রক্ষা করেছে তুমি [আল্লাহ] তাকে রক্ষা করো। যে আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে আল্লাহ তাকে ছিন্ন করো।) (ইমাম বাগাবী: শারহুস্ সুন্নাহ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ثَلَاثَةٌ تَحْتَ الْعَرْشِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْقُرْآنُ يُحَاجُّ الْعِبَادَ لَهُ ظَهْرٌ وَبَطْنٌ وَالْأَمَانَةُ وَالرَّحِمُ تُنَادِي: أَلَا مَنْ وَصَلَنِي وَصَلَهُ اللَّهُ وَمَنْ قَطَعَنِي قَطَعَهُ اللَّهُ . رَوَاهُ فِي شرح السّنة
ব্যাখ্যা: কিয়ামতের দিন তিনটি জিনিসের বিশেষ আকৃতি অবয়ব হবে এবং তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে। এরা আল্লাহর কাছে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। এর প্রথমটি হলো আল কুরআন। যে ব্যক্তি কুরআনের সীমারেখা মেনে চলবে কুরআন তার পক্ষে সুপারিশ করবে, ফলে তার নাজাতের ব্যবস্থা হবে। এটা না হলে কুরআন তার বিপক্ষে সুপারিশ করবে, ফলে তা তার ধ্বংসের কারণ হবে।
যেমনভাবে অন্য হাদীসে এসেছে, القران حجة لك او عليك
অর্থাৎ- আল কুরআন হয় তোমার পক্ষে দলীল হবে আর না হয় তোমার বিপক্ষে। এই কুরআনের বাহির এবং ভিতর দু’টি দিক আছে। কেউ বলেন, এর অর্থ হলো শব্দ এবং অর্থ। কেউ বলেছেন, বাহির হলো এর তিলাওয়াত এবং ভিতর হলো তার সূক্ষ্ম চিন্তা ও গবেষণা। কেউ আবার বলেছেন, বাহির হলো প্রত্যেক বালিগ ব্যক্তিই এর বিধান মোতাবেক ‘আমলে বাধ্য এবং তার ওপর ঈমান আনতে বাধ্য। আর ভিতর হলো স্তর ভেদে মানুষ তার অর্থ অনুধাবন করে থাকে। কুরআন পাঠ করে কেউ স্বাভাবিক জ্ঞান অর্জন করে থাকে কেউ মধ্যম কেউবা আবার গভীর জ্ঞান হাসিল করে থাকে; এটাই হলো তার বাহির ও ভিতরের দৃষ্টান্ত।
দ্বিতীয়টি হলো আমানাত। আল্লাহর প্রত্যেক হক-ই হলো আমানাত। অথবা তা এমন একটি বিষয় যা পালন করা আবশ্যক।
আল্লাহ তা‘আলার কথায় যার ব্যাখ্যা এসেছে, إِنَّا عَرَضْنَا الْأَمَانَةَ
‘‘আমি আমানাত পেশ করছি।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৭২)
নিশ্চয়ই এটা আল্লাহর হক, অবশ্য পালনীয়।
তৃতীয়টি হলো রেহম বা বাচ্চাদান (জরায়ু) উদ্দেশ্য হলো আত্মীয়তার সম্পর্ক। রেহম বা আত্মীয়তার সম্পর্ক কিয়ামতের দিন চিৎকার করে বলবে, অথবা আমানাত এবং রেহম উভয়েই চিৎকার করে বলবে, অথবা কুরআন আমানাত এবং রেহম সকলেই চিৎকার করে বলবে। কিন্তু কুরআন ও আমানাতের কথা স্বতন্ত্রভাবে বলা হয়েছে। সুতরাং এই রেহম আল্লাহ তা‘আলার নিকট চিৎকার করে বলবে, এটাই শক্তিশালী মত। সে বলবে যে আমার সম্পর্ক রক্ষা করেছে আল্লাহ তার সাথে সম্পর্ক রক্ষা করুন, আর যে আমার সাথে (আত্মীয়তার) সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তার সাথে (রহমাতের) সম্পর্ক ছিন্ন করুন।
আর যদি ঐ চিৎকার ও ঘোষণা কুরআন, আমানাত এবং রেহম তিনটি জিনিসের-ই হয়ে থাকে তাও হতে পারে, প্রত্যেকের হক আদায়ের দায়িত্ব রয়েছে, যে তা আদায় করবে সে তা আদায়কারীর দু‘আ লাভ করবে, যে আদায় করবে না সে বদ্দু‘আ পাবে।
এখানে আল কুরআনকে আগে আনা হয়েছে এজন্য যে, কুরআন হলো আল্লাহর হক আর আল্লাহর হক সবচেয়ে বড় এবং অগ্রণীয়।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৩৪-[২৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন পাঠকারীকে কিয়ামতের দিন বলা হবে, পাঠ করতে থাকো আর উপরে উঠতে থাকো। (অক্ষরে অক্ষরে ও শব্দে শব্দে) সুস্পষ্টভাবে পাঠ করতে থাকো, যেভাবে দুনিয়াতে স্পষ্টভাবে পাঠ করতে। কারণ তোমার স্থান (মর্যাদা) হবে যা তুমি পাঠ করবে শেষ আয়াত পর্যন্ত (আয়াত পাঠের তুলনাগত দিক থেকে)। (আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ: اقْرَأْ وَارَتْقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَة تقرؤها . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: এ কথা কিয়ামতের দিন বলা হবে। সাহিবুল কুরআন বলতে কুরআনের তিলাওয়াতকারী। ‘উপরে উঠতে থাকো’ এর অর্থ জান্নাতের উচ্চ স্তরে। ঐ সময় যে যত আয়াত তিলাওয়াত করতে পারবে সে জান্নাতের ততঊর্ধ্ব স্তরে উঠতে পারবে এবং সেখানেই তার ঠিকানা হবে।
ইবনু মিরদুওয়াই, বায়হাক্বী প্রমুখ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই জান্নাতের স্তর কুরআনের আয়াতের সংখ্যা পরিমাণ।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৩৫-[২৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে পেটে কুরআনের কিছু নেই তা শূন্য (ধ্বংসপ্রাপ্ত) ঘরের মতো। (তিরমিযী ও দারিমী; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি সহীহ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الَّذِي لَيْسَ فِي جَوْفِهِ شَيْءٌ مِنَ الْقُرْآنِ كَالْبَيْتِ الْخَرِبِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ. وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ صَحِيح
ব্যাখ্যা: যার পেটে কুরআনের কিছু নেই, এখানে পেট মানে অন্তর। একে তুলনা করা হয়েছে বিধ্বস্ত বাড়ি বা একটি ধ্বংসস্তুপের সাথে। কারণ কলব বা অন্তরের ইমারত হলো ঈমান ও তিলাওয়াতুল কুরআন। এর অঙ্গশয্যা হলো কুরআনের মধ্যে চিন্তা গবেষণা করা।
অন্তরে যখন কুরআন থাকবে তা হবে ঐ অন্তরের কাঠামো গঠক এবং কুরআনের পরিমাণ অনুযায়ী সৌন্দর্য বর্ধনকারী। কুরআন যত বেশি থাকবে অন্তর তত সুশোভিত হবে। একজন মুসলিমের জন্য যা দরকার ন্যূনতম পরিমাণের এতটুকু কুরআন যদি তার অন্তরে না থাকে তাহলে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, মহব্বত, ধ্যান-ধারণা ইত্যাদি শূন্য হয়ে সে যেন একটি বিধ্বস্ত ইমারতের ন্যায় হয়ে যায়।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৩৬-[২৮] আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, যাকে আমার জিকির ও আমার কাছে কিছু চাওয়া হতে কুরআন বিরত রেখেছে, আমি তাকে প্রার্থনাকারীদের চেয়ে বেশি দান করব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, কেননা আল্লাহর কালামের শ্রেষ্ঠত্ব অন্য সব কালামের উপর; যেমন আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব তাঁর সৃষ্টির উপর। (তিরমিযী, দারিমী ও বায়হাক্বী- শু’আবূল ঈমানে। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও গরীব।)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَقُولُ الرَّبُّ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: مَنْ شَغَلَهُ الْقُرْآنُ عَنْ ذِكْرِي وَمَسْأَلَتِي أَعْطَيْتُهُ أَفْضَلَ مَا أُعْطِي السَّائِلِينَ. وَفَضْلُ كَلَامِ اللَّهِ عَلَى سَائِرِ الْكَلَامِ كَفَضْلِ اللَّهِ عَلَى خَلْقِهِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যা: কুরআন তিলাওয়াতে ব্যস্ত থাক কারণে যে অন্যান্য জিকির-আযাকার করতে পারে না, নিজের ইচ্ছাপূরণের জন্য দু‘আ করতে পারে না, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ঐ সুমহান কিতাবের মর্যাদার কারণে প্রার্থনাকারীর চেয়ে অধিক দিয়ে দেন। এমনকি সে যা কল্পনাও করেনি তাও তাকে দিয়ে দেন। সে যেন আল্লাহর এ বাণীর হকদার হয়ে যায়, (من كان لله كان الله له) যে আল্লাহর জন্য হয় আল্লাহও তার জন্য হয়ে যান। ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসে দলীল পাওয়া যায় যে, যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াতে ও গবেষণায় ব্যস্ত থাকে তার পুরস্কার সবেচেয়ে বেশি এবং বড়। কেননা আল্লাহর কালাম হলো সবার উপরে এবং সর্বশ্রেষ্ঠ। সুতরাং তার পাঠকারীর সাওয়াব ও মর্যাদাও হবে সবার উপরে এবং সর্বশ্রেষ্ঠ।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৩৭-[২৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের কোন একটি অক্ষরও পাঠ করবে, সে নেকী পাবে। আর নেকী হচ্ছে ’আমলের দশ গুণ। আমি বলছি না যে,(الٓمٓ) ’আলিফ লাম মীম’ একটি অক্ষর। বরং ’আলিফ’ একটি অক্ষর, ’লাম’ একটি অক্ষর ও ’মীম’ একটি অক্ষর। (তাই আলিফ, লাম ও মীম বললেই ত্রিশটি নেকী পাবে)। (তিরমিযী, দারিমী। আর ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। কিন্তু সানাদের দিক দিয়ে গরীব।)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا لَا أَقُولُ: آلم حَرْفٌ. أَلْفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيب إِسْنَادًا
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের উদ্দেশিত ব্যাখ্যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই করে দিয়েছেন, সুতরাং এর অতিরিক্ত ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৩৮-[৩০] হারিস আ’ওয়ার (রহঃ) বলেন, আমি (একদিন কূফার) মসজিদে বসা লোকজনের কাছে গেলাম। দেখলাম, লোকেরা আজে-বাজে কথায় ব্যস্ত। এরপর আমি ’আলী (রাঃ) এর কাছে গিয়ে এ খবর বললাম। তিনি বললেন, তারা এমন করছে? আমি জবাব দিলাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, (তবে) শুনো, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, সাবধান! শীঘ্রই পৃথিবীতে কলহ-ফাসাদ আরম্ভ হবে। আমি [’আলী] বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এ থেকে বাঁচার উপায় কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহর কিতাব, এতে তোমাদের আগের ও পরের খবর রয়েছে। তোমাদের ভিতরে বিতর্কের মীমাংসার পদ্ধতিও রয়েছে। সত্য মিথ্যার পার্থক্যও আছে। এটা কোন অর্থহীন কিতাব নয়। যে অহংকারী ব্যক্তি এ কুরআন ত্যাগ করবে, আল্লাহ তা’আলা তার অহংকার চূর্ণ-বিচূর্ণ করবেন। যে ব্যক্তি এর বাইরে হিদায়াত সন্ধান করবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে পথভ্রষ্ট করবেন। এ কুরআন হলো আল্লাহর মজবুত রশি। জিকির ও সত্য সরল পথ।
কুরআন অবলম্বন করে কোন প্রবৃত্তি বিপথগামী হয় না। এর দ্বারা যবানের কষ্ট হয় না। এর দ্বারা প্রজ্ঞাবানগণ বিতৃষ্ণ হয় না। এ কুরআন বার বার পাঠ করায় পুরাতন হয় না। এ কুরআনের বিস্ময়কর তথ্য অশেষ। কুরআন শুনে স্থির থাকতে পারেনি জিনেরা। এমনকি তারা এ কুরআন শুনে বলে উঠেছিল, ’’শুনেছি আমরা এমন এক বিস্ময়কর কুরআন। যা সন্ধান দেয় সত্য পথের। অতএব ঈমান এনেছি আমরা এর উপর।’’ যে ব্যক্তি কুরআনের কথা সত্য বলে, যে এর উপর ’আমল করে, সে পুরস্কার পাবে। যে এর দ্বারা বিচার-ফায়সালা করে, ন্যায়বিচার করে, যে (মানুষকে) এর দিকে ডাকে, সে সত্য সরল পথের দিকেই ডাকে। (তাই এরূপ কুরআন ছেড়ে তারা কেন অন্য আলোচনায় বিভোর হচ্ছে?)। (তিরমিযী ও দারিমী। কিন্তু ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এ হাদীসের সানাদ মাজহূল [অপরিচিত]। আর হারিস আল আ’ওয়ার-এর ব্যাপারে বিতর্ক রয়েছে।)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنِ الْحَارِثِ الْأَعْوَرِ قَالَ: مَرَرْتُ فِي الْمَسْجِدِ فَإِذَا النَّاسُ يَخُوضُونَ فِي الْأَحَادِيثِ فَدَخَلْتُ عَلَى عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَأَخْبَرْتُهُ قَالَ: أَوَقَدْ فَعَلُوهَا؟ قلت نعم قَالَ: أما إِنِّي قَدْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُول: «أَلا إِنَّهَا سَتَكُون فتْنَة» . فَقلت مَا الْمَخْرَجُ مِنْهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «كتاب الله فِيهِ نبأ مَا كَانَ قبلكُمْ وَخبر مَا بعدكم وَحكم مَا بَيْنكُم وَهُوَ الْفَصْلُ لَيْسَ بِالْهَزْلِ مَنْ تَرَكَهُ مِنْ جَبَّارٍ قَصَمَهُ اللَّهُ وَمَنِ ابْتَغَى الْهُدَى فِي غَيْرِهِ أَضَلَّهُ اللَّهُ وَهُوَ حَبْلُ اللَّهِ الْمَتِينُ وَهُوَ الذِّكْرُ الْحَكِيمُ وَهُوَ الصِّرَاطُ الْمُسْتَقِيمُ هُوَ الَّذِي لَا تَزِيغُ بِهِ الْأَهْوَاءُ وَلَا تَلْتَبِسُ بِهِ الْأَلْسِنَةُ وَلَا يَشْبَعُ مِنْهُ الْعُلَمَاءُ وَلَا يَخْلِقُ على كَثْرَةِ الرَّدِّ وَلَا يَنْقَضِي عَجَائِبُهُ هُوَ الَّذِي لَمْ تَنْتَهِ الْجِنُّ إِذْ سَمِعَتْهُ حَتَّى قَالُوا (إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا يَهْدِي إِلَى الرُّشْدِ فَآمَنا بِهِ)
مَنْ قَالَ بِهِ صَدَقَ وَمَنْ عَمِلَ بِهِ أُجِرَ وَمَنْ حَكَمَ بِهِ عَدَلَ وَمَنْ دَعَا إِلَيْهِ هُدِيَ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ إِسْنَادُهُ مَجْهُولٌ وَفِي الْحَارِث مقَال
ব্যাখ্যা: এ ঘটনাটি কূফার একটি মসজিদে ঘটেছিল। লোকেরা মসজিদে কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আযকার ইত্যাদির পরিবর্তে অহেতুক কথাবার্তা কিস্সা-কাহিনীতে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। এ খবর খলীফাতুল মুসলিমীন ‘আলী (রাঃ) কে জানালে তিনি এ নিন্দনীয় কাজে বিস্ময় প্রকাশ করেন। অতঃপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস শুনালেন; নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শীঘ্র পৃথিবীতে বিপর্যয় শুরু হবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিপর্যয় থেকে বাঁচারও পন্থা বলে দিয়েছেন আর তা হলো আল্লাহর কিতাব আল কুরআনুল কারীম, অর্থাৎ- কুরআনুল কারীমকে আঁকড়ে ধরলে সকল ফিতনা ও বিপর্যয় থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। এতে যেমন রয়েছে পূর্ব জাতির নানা ঘটনাবহুল জীবন চিত্র ঠিক তেমনি রয়েছে পরবর্তী সত্য ভবিষ্যদ্বাণী, অর্থাৎ- কিয়ামতের শর্ত বা আলামত; তার ভয়াবহ দৃশ্য ইত্যাদি।
ইসলাম ও শারী‘আতের সকল ভিত্তি মূল হলো এই কুরআন। সত্যমিথ্যার প্রভেদকারী, এতে কোন মিথ্যা অহেতুক অনর্থক কথা নেই। অহংকারবশে যদি কেউ এ কুরআনের উপর ঈমান ও ‘আমল ত্যাগ করে তাহলে আল্লাহ তার গর্দান মটকিয়ে তাকে ধ্বংস করে দিবেন।
আল্লাহর মারিফাত অর্জনে আল কুরআন হলো অতীব মজবুত রশ্মি, প্রজ্ঞাপূর্ণ নাসীহাত এবং সরল সঠিক পথ। এ পথ অবলম্বন করলে কেউ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। অনারবী ভাষা-ভাষীর জন্যও এর পাঠ-পঠন কষ্টকর নয়। এর তথ্যসমূহ অতীব বিস্ময়কর। জিনেরা এ কুরআনের তিলাওয়াত শুনে বিস্ময়াভিভূত হয়ে ঈমান আনয়ন করেছে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৩৯-[৩১] মু’আয আল জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং এর মধ্যে তাঁর হুকুম-আহকামের উপর ’আমল করে, তার মাতাপিতাকে কিয়ামতের দিন একটি মুকুট পরানো হবে। এ মুকুটের কিরণ দুনিয়ার সূর্যের কিরণ হতেও উজ্জ্বল হবে, যদি এ সূর্য তোমাদের মধ্যে থাকত (তবে উপলব্ধি করতে পারতে)। যে ব্যক্তি এ কুরআনের উপর ’আমল করে তার ব্যাপারে এখন তোমাদের কী ধারণা? (আহমদ, আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَن معَاذ الْجُهَنِيّ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ وَعَمِلَ بِمَا فِيهِ أُلْبِسَ وَالِدَاهُ تَاجًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ضَوْءُهُ أَحْسَنُ مِنْ ضَوْءِ الشَّمْسِ فِي بُيُوتِ الدُّنْيَا لَوْ كَانَتْ فِيكُمْ فَمَا ظَنُّكُمْ بِالَّذِي عَمِلَ بِهَذَا؟» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: কুরআন তিলাওয়াতকারী এবং তার ওপর ‘আমলকারীর পিতা-মাতাকে সূর্যের চেয়ে উজ্জ্বল তাজ পরানো হবে।
এই উজ্জ্বলতা দৃষ্টিবিষাদী এবং তাপ বিচ্ছুরিত হবে না। বরং এ তাজ হবে অতি মূল্যবান অলংকারখচিত এক দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য শোভিত আলোকপিন্ডর ন্যায়।
তাহলে ঐ কুরআনের বিধান মোতাবেক ‘আমলকারী সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কি? এখানে এ প্রশ্নবোধক ما ‘মা’ শব্দটি تحير الظان বা ধারণাকে হতবুদ্ধি করে ফেলানো অর্থে ব্যবহার হয়েছে। এর অর্থ তুমি ধারণাও করতে পারবে না যে, তাকে কি পুরস্কার দেয়া হবে। কোন চোখ তা দেখেনি, কোন কান তা শুনেনি এবং কোন অন্তর তা অনুধাবন করেনি। সুতরাং তার পুরস্কার দেখে তুমি হতবুদ্ধি হয়ে যাবে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৪০-[৩২] ’উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কুরআন কারীমকে যদি চামড়ায় মুড়িয়ে রেখে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় তাহলে তা পুড়বে না। (দারিমী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَوْ جُعِلَ الْقُرْآنُ فِي إِهَابٍ ثُمَّ أُلْقِيَ فِي النَّار مَا احْتَرَقَ» . رَوَاهُ الدَّارمِيّ
ব্যাখ্যা: চামড়া কাঁচা পাকা উভয়ই হতে পারে। তবে ‘আল্লামা তুরবিশ্তী দাবাগাতবিহীন চামড়ার কথা উল্লেখ করেছেন। কুরআনুল কারীমকে কোন চামড়ায় মুড়িয়ে অথবা পেচিয়ে আগুনে ফেললে ঐ চামড়া মোটেও পুড়বে না। এটা কুরআনুল কারীমের মহা বারাকাত এবং মু‘জিযা।
কেউ কেউ বলেছেন, এটা রসূলের যুগের বিশেষ মু‘জিযা ঐ সময় কেউ মাসহাফকে চামড়ায় তুলে আগুনে দিলে তা জ্বলতো না।
কেউ বলেছেন এর অর্থ হলো যার অন্তরে কুরআনুল কারীম থাকবে আগুন তাকে জ্বালাবে না। আহমাদ ইবনু হাম্বল, আবূ ‘উবায়দ প্রমুখ মনীষী থেকে অনুরূপ হেকায়েত বর্ণিত আছে। কেউ কেউ বলেছেন, এটা উপমা ধরে নেয়া, আসলে আল কুরআনের মহান মর্যাদা বর্ণনা করার একটি পদ্ধতি মাত্র যাতে মুবালাগা বা বর্ণনাধিক্যতা থাকে।
‘আল্লামা তুরবিশ্তী (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হলো যদি একটি চামড়ায় কুরআনুল কারীম রাখার কারণে কুরআনুল কারীমের সংস্পর্শের বারাকাত চামড়ায় আগুন স্পর্শ করতে না পারে তাহলে কুরআনুল কারীমের হাফেয এবং সর্বদা তার তিলাওয়াতকারী মু’মিনের অবস্থা কি হতে পারে। এটাই বুঝানো উদ্দেশ্য। এখানে আগুন দ্বারা ঐ আগুন উদ্দেশ্য যা সূরা আল হুমাযাহ্’য় বর্ণিত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৪১-[৩৩] ’আলী ইবনু আবূ ত্বলিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে ও একে মুখস্থ করে, এর হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম মেনে চলে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তার পরিবারের এমন দশ ব্যক্তির জন্য তার সুপারিশ কবূল করবেন, যাদের প্রত্যেকেরই নিশ্চিত ছিল জাহান্নাম। (আহমদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও দারিমী। কিন্তু ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এ হাদীসটি গরীব। এর একজন বর্ণনাকারী হাফস ইবনু সুলায়মান হাদীস বর্ণনায় দুর্বল।)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ فَاسْتَظْهَرَهُ فَأَحَلَّ حَلَالَهُ وَحَرَّمَ حَرَامَهُ أَدْخَلَهُ اللَّهُ بِهِ الْجَنَّةَ وَشَفَّعَهُ فِي عَشَرَةٍ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ كُلِّهِمْ قَدْ وَجَبَتْ لَهُ النَّارُ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيب وَحَفْص بن سُلَيْمَان الرَّاوِي لَيْسَ هُوَ بِالْقَوِيِّ يَضْعُفُ فِي الْحَدِيثِ
ব্যাখ্যা: যে কুরআন পড়ে এবং মুখস্থ রাখে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তার দ্বারা দীনের শক্তি ও সাহায্য অনুসন্ধান করে এবং কুরআনের নিষেধাজ্ঞাসমূহ থেকে বিরত থাকার শক্তি কামনা করে। তার হালালকেই প্রকৃত হালাল জ্ঞান করে এবং তার হারামকে নির্দ্বিধায় হারাম মনে করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে প্রথম পর্যায়েই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তিনি এমন দশজনকে সুপারিশ করবেন যাদের ওপর জাহান্নাম আবশ্যক হয়ে গিয়েছিল। দশজনকে বলতে কোন কাফির মুশরিক বেদীন নন, বরং মুসলিম যিনি অতি গুনাহের কারণে জাহান্নামের অধিবাসী হয়েছিলেন।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস তাদের কথাকে রদ করে যারা ধারণা করে থাকে যে, শাফা‘আত হবে শুধু মর্যাদা সমুন্নত করার জন্য; মানুষের পাপের বোঝা অপসারণের জন্য নয়। এই ভিত্তিতে তারা এটাও বলে থাকে যে, মুরতাকিবে কাবায়ির দ্বারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হয় তার ক্ষমার কোন সম্ভাবনাই নেই। জাহান্নাম যার ওপর ওয়াজিব হয়েছিল এমন ব্যক্তিকে সুপারিশ করবে। এই ওয়াজিব বলতে এখানে সিদ্ধান্ত হওয়া, অর্থাৎ- যার জন্য জাহান্নামের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৪২-[৩৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার উবাই ইবনু কা’বকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি সালাতে কিভাবে কুরআন পড়ো? উত্তরে উবাই ইবনু কা’ব রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সূরা আল ফাতিহাহ্ পড়ে শুনালেন। (তাঁর পড়া শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহর কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন! এর মতো কোন সূরা তাওরাত, ইঞ্জীল, যাবূর বা ফুরকান-এ (কুরআনের অন্য কোন সূরাতেও) নাযিল হয়নি। এ সূরা হলো সাব্’উল মাসানী (পুনরাবৃত্ত সাতটি আয়াত) ও মহান কুরআন। এটি আমাকেই দেয়া হয়েছে। (তিরমিযী। তিনি বলেন, এ হাদীসটি হাসান ও সহীহ। দারিমী বর্ণনা করেছেন, এর মতো কোন সূরা নাযিল করা হয়নি। তাঁর বর্ণনায় হাদীসের শেষের দিক ও উপরের বর্ণিত উবাই-এর ঘটনা বর্ণিত হয়নি।)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم قَالَ لِأُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ: «كَيْفَ تَقْرَأُ فِي الصَّلَاةِ؟» فَقَرَأَ أُمَّ الْقُرْآنِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا أنزلت فِي التَّوْرَاة وَلَا فِي الْإِنْجِيل وَلَا فِي الزبُور وَلَا فِي الْفرْقَان مِثْلُهَا وَإِنَّهَا سَبْعٌ مِنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْآنُ الْعَظِيمُ الَّذِي أُعْطِيتُهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَرَوَى الدَّارِمِيُّ مِنْ قَوْلِهِ: «مَا أُنْزِلَتْ» وَلَمْ يَذْكُرْ أُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ. وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ
ব্যাখ্যা: সূরা আল ফাতিহাকে উম্মুল কুরআন বলা হয়েছে এজন্য যে, পূর্ণ কুরআনুল কারীমে যা রয়েছে সূরা ফাতিহার মধ্যে মৌলিকভাবে তা বিধৃত হয়েছে। অথবা উম্মুন অর্থ আসলুন, এটা আসলু কাওয়ায়িদুল কুরআন, এর উপরই আহকামুল ঈমান পরাক্রমশীল।
প্রশ্ন করা হয়েছিল মুত্বলাক কুরআন পাঠের উপর তিনি জওয়াব দিলেন সূরা আল ফাতিহাহ্ পাঠ করে আর তা এজন্য যে, এটি একটি জামি' সূরা এবং এটি আল কুরআনের মূল ভিত্তি। এর সমতুল্য কোন সূরা তাওরাত, যাবূর, ইঞ্জীলে তো নেই-ই এমনকি কুরআনের বাকী অংশেও নেই। কোন নাবীকেই এর সমতুল্য কোন সূরা দেয়া হয়নি। এ হলো সাব্‘উল মাসানী বা পুনঃপঠিত সপ্ত আয়াত এবং কুরআনে ‘আযীম বা মহা কুরআন।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৪৩-[৩৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন শিক্ষা করো ও পড়তে থাকো। যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে এবং কুরআন নিয়ে রাতে সালাতে দাঁড়ায় তার দৃষ্টান্ত মিশক ভর্তি থলির মতো যা চারদিকে সুগন্ধি ছড়ায়। যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করে তা পেটে নিয়ে রাতে ঘুমায়, তার দৃষ্টান্ত ওই মিশকপূর্ণ থলির মতো যার মুখ ঢাকনি দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। (তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَعَلَّمُوا الْقُرْآنَ فَاقْرَءُوهُ فَإِن مثل الْقُرْآن لمن تعلم وَقَامَ بِهِ كَمثل جراب محشو مسكا يفوح رِيحُهُ كُلَّ مَكَانٍ وَمَثَلُ مَنْ تَعَلَّمَهُ فَرَقَدَ وَهُوَ فِي جَوْفِهِ كَمَثَلِ جِرَابٍ أُوكِئَ عَلَى مسك» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: তোমরা কুরআন শিক্ষা কর, এ নির্দেশ কুরআনের শব্দ এবং অর্থ উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। আবূ মুহাম্মাদ আল জুওয়াইনী (রহঃ) বলেন, কুরআন শিক্ষা করা এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়া ফারযে কিফায়াহ্। যাতে কোথাও কুরআন শিক্ষা এবং তিলাওয়াত বন্ধ হয়ে না যায় এবং তা পরিবর্তন ও বিকৃত সাধন না হয়। ‘আল্লামা যুরকানী (রহঃ) বলেন, যদি কোন শহর অথবা গ্রামে এমন একজন মানুষও না থাকে যিনি কুরআন তিলাওয়াত করবেন তাহলে সমস্ত শহর ও গ্রামের মানুষই গুনাহগার হবে।
হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘোষণাঃ ‘‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর’’, এ নির্দেশ সার্বজনীন। সুতরাং সকল উম্মাত এর অন্তর্ভুক্ত; তারা যেখানেই থাকুক পর্যায়ক্রমে কুরআন শিক্ষা করবে। যাতে কেউ কুরআন বিকৃত করতে না পারে; কেউ যদি বিকৃত করতে চেষ্টা করে তাতে বাধা দিবে।
কুরআন শিক্ষার সাথে সাথে সর্বদা তা তিলাওয়াত বা পাঠের নির্দেশ এসেছে।
কুরআন শিক্ষাকারী, তার তিলাওয়াতকারী এবং তা নিয়ে তাহাজ্জুদে দন্ডায়মানকারী, অর্থাৎ- তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়ে কুরআন তিলাওয়াতকারীর দৃষ্টান্ত হলো মিসক ভর্তি থলির ন্যায়। এ থলির মুখ খোলা, সুতরাং তার সুগন্ধ মালিক নিজেও উপকৃত ও প্রীত হয় অপরেও উপকৃত হয়। পক্ষান্তরে যে কুরআন শিক্ষা করেছে বটে কিন্তু সে তা কোন সময় তিলাওয়াত করে না এবং তা দিয়ে তাহাজ্জুদও পড়ে না তার দৃষ্টান্ত হলো মুখ বন্ধ মিসকের থলির ন্যায়। যার (বদ্ধ) সুগন্ধি কেউই পায় না এবং তা দ্বারা উপকৃতও হয় না।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৪৪-[৩৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে সূরা হা-মীম ’’আল মু’মিন..... ইলায়হিল মাসীর’’ পর্যন্ত ও আয়াতুল কুরসী পড়বে, তাকে এর বারাকাতে সন্ধ্যা পর্যন্ত হিফাযাতে রাখা হবে। আর যে ব্যক্তি তা সন্ধ্যায় পড়বে তাকে সকাল পর্যন্ত নিরাপদ রাখা হবে- (তিরমিযী ও দারিমী। কিন্তু ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি গরীব।)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَرَأَ (حم)
الْمُؤْمِنَ إِلَى (إِلَيْهِ الْمَصِيرُ)
وَآيَةَ الْكُرْسِيِّ حِينَ يُصْبِحُ حُفِظَ بِهِمَا حَتَّى يُمْسِيَ. وَمَنْ قَرَأَ بِهِمَا حِينَ يُمْسِي حُفِظَ بهما حَتَّى يصبح . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ والدرامي وَقَالَ التِّرْمِذِيّ هَذَا حَدِيث غَرِيب
ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি সকাল বেলা সূরা হা-মীম অর্থাৎ- সূরা মু’মিন এর শুরু থেকে ইলায়হিল মাসীর পর্যন্ত তিলাওয়াত করবে এর সাথে আয়াতুল কুরসী, সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সকল প্রকার অনিষ্টতা থেকে নিরাপদে থাকবে। অনুরূপ সন্ধ্যায় পাঠ করলে সারারাত সে নিরাপদে থাকবে। এটা হলো এ আয়াতের মহা বারাকাতের জন্য।
দারিমীর বর্ণনায় এ কথাও আছে, সে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত এবং সন্ধা থেকে সারা রাত কোন অপছন্দনীয় বিষয় দেখবে না। বিপদ মুসীবাত দুঃখ-বেদনা ইত্যাদি থেকে সে নিরাপদে থাকবে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৪৫-[৩৭] নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করার দু’ হাজার বছর আগে আল্লাহ তা’আলা একটি কিতাব লিখেছেন। এ কিতাব হতে পরবর্তীতে দু’টি আয়াত নাযিল করেছেন যা দ্বারা সূরা আল বাকারাহ্ শেষ করেছেন। কোন ঘরে তা তিন রাত পড়া হবে, অথচ এরপরও এ ঘরের কাছে শয়তান যাবে, এমনটা হতে পারে না। (তিরমিযী ও দারিমী। কিন্তু ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি গরীব।)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ كتب كتابا قبل أَن يخلق السَّمَوَات وَالْأَرْضَ بِأَلْفَيْ عَامٍ أَنْزَلَ مِنْهُ آيَتَيْنِ خَتَمَ بِهِمَا سُورَةَ الْبَقَرَةِ وَلَا تُقْرَآنِ فِي دَارٍ ثَلَاثَ لَيَالٍ فَيَقْرَبَهَا الشَّيْطَانُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيب
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছানুযায়ী তাকদীর বা সৃষ্টির সকল নির্ধারিত বিষয় আসমান এবং জমিন সৃষ্টির দু’ হাজার বছর পূর্বেই লাওহে মাহফূযে লিখে রেখেছেন। দু’ হাজার বছর এ কথাটি হলো দীর্ঘ সময়ের প্রতি ইঙ্গিত মাত্র।
এজন্য মুহাদ্দিসীনগণ এটাকে মুসলিমে বর্ণিত ‘‘আল্লাহ তা‘আলা আসমান জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে তাকদীর বা সৃষ্টির নির্ধারিত বিষয় লিখে রেখেছেন’’, এ হাদীসকে ঐ কথার বিরোধী মনে করেন না। কেননা মূল তাকদীর আল্লাহ তা‘আলা পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বেই লাওহে মাহফূযে লিখে রেখেছেন। অতঃপর আসমান জমিন সৃষ্টির দুই হাজার বছর পূর্বে (আল্লাহ তা‘আলা) মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) নির্দেশ করেন, তারা তা খণ্ড খণ্ড বা আলাদা আলাদাভাবে লিপিবদ্ধ করে ফেলেন।
অথবা তাকদীর আল্লাহ তা‘আলা একবারেই লিখে ফেলেননি বরং পর্যায়ক্রমে লিখতে লিখতে কোনটি পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে কোনটা দুই হাজার বছর পূর্বে লিখেছেন, সুতরাং দুই হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধ নেই।
কেউ বলেছেন, এখানে الكتابة লিখা الاظهار প্রকাশ অর্থে ব্যবহার হয়েছে।
অতএব, পরস্পর বিরোধপূর্ণ দু’ হাদীসের সমন্বয়ী অর্থ হলো আল্লাহ তা‘আলা আসমান জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বেই তাকদীর লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন, অতঃপর আসমান জমিন সৃষ্টির দু’ হাজার বছর পূর্বে তা এক শ্রেণীর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)’র নিকট اظهار বা প্রকাশ করেছেন। অত্র হাদীসে সেটাই বলা হয়েছে।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, সম্ভবতঃ এর সার কথা এই যে, পৃথিবীতে যা কিছু হবে তা আসমান জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বেই লাওহে মাহফূযে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। লাওহে মাহফূযে পবিত্র কুরআনুল কারীমের লিপিবদ্ধও এর অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা কিছু মালাক (ফেরেশতা) এবং অন্যান্য কিছু সৃষ্টি করলেন, এরপর আসমান জমিন সৃষ্টির দুই হাজার বছর পূর্বে তাদের নিকট কুরআনুল কারীমের লিখনী প্রকাশ করলেন।
লাওহে মাহফূযে লিখিত বা রক্ষিত পবিত্র কুরআনুল কারীম থেকে আল্লাহ তা‘আলা দু’টি আয়াত নাযিল করেছেন। এ দু’টি আয়াত হলো সূরা আল বাকারাহ্’র শেষ দু’টি আয়াত। কোন ঘরে বা বাড়িতে যদি এ দু’টি আয়াত একাধারে তিনদিন তিলাওয়াত করা হয় এবং এর সাথে অতীব মহিমান্বিত সূরা আল ফাতিহাহ্ পাঠ করা হয় তাহলে সেখানে শয়তান প্রবেশ করতে পারে না।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৪৬-[৩৮] আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরা আল কাহাফ-এর প্রথম দিকের তিনটি আয়াত পড়বে, তাকে দাজ্জালের ফিতনা হতে নিরাপদ রাখা হবে। (তিরমিযী। তিনি বলেন, এ হাদীসটি হাসান ও সহীহ।)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَن أبي الدَّرْدَاء قَالَ ك قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَرَأَ ثَلَاثَ آيَاتٍ مِنْ أَوَّلِ الْكَهْفِ عُصِمَ مِنْ فِتْنَةِ الدَّجَّالِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের ব্যাখ্যা ফাযায়িলুল কুরআন অধ্যায়ে করা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৪৭-[৩৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক জিনিসের ’কলব’ (হৃদয়) আছে। কুরআনের ’কলব’ হলো, ’সূরা ইয়াসীন’। যে ব্যক্তি এ সূরা একবার পড়বে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য একবার পড়ার কারণে দশবার কুরআন পড়ার সাওয়াব লিখবেন। (তিরমিযী, দারিমী। ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটিকে গরীব বলেছেন।)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ لِكُلِّ شَيْءٍ قَلْبًا وَقَلْبُ الْقُرْآنِ (يس)
وَمَنْ قَرَأَ (يس)
كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِقِرَاءَتِهَا قِرَاءَةَ الْقُرْآنِ عَشْرَ مَرَّاتٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيب
ব্যাখ্যা: সূরা ইয়াসীন কুরআনের কলব বা হৃদপিন্ড এর অর্থ হলো কুরআনের মাজ্জা বা সারবস্ত্ত। সূরাটি ছোট হওয়া সত্ত্বেও এতে রয়েছে আল্লাহ তা‘আলার সুস্পষ্ট দলীল, যুক্তি নিদর্শন, সুরক্ষিত জ্ঞানভাণ্ডার, সূক্ষ্ম ও গুরুতর অর্থ, শ্রেষ্ঠ ওয়া‘দাসমূহ এবং পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।
ইমাম গাযালী (রহঃ) বলেন, হাশর-নাশরের স্বীকৃতির উপর ঈমানের বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হয়, এ সূরায় এটা পূর্ণমাত্রায় রয়েছে। এ কারণেই এ সূরাকে কুরআনের কলব বলা হয়েছে।
ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী এটিকে একটি উত্তম ব্যাখ্যা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি স্বীয় লুম্‘আত গ্রন্থে বলেন, কোন বস্ত্তর কলব হলো তার মাখন সদৃশ, সুতরাং সূরাটি আকারে ছোট হলেও তা আল কুরআনের পূর্ণ মাকাসিদ বা উদ্দেশাবলীর ক্ষেত্রে মাখন সদৃশ। আল্লাহর হাতেই এ ক্ষমতা এবং তারই ইচ্ছা, তিনি যে বস্ত্ততে ইচ্ছা বিশেষ মর্যাদা ও বিশেষত্ব দান করে থাকেন। যেমন লায়লাতুল কদরকে সকল সময়ের উপর বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। এমনভাবেই আল্লাহ তা‘আলা সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াতের অতিরিক্ত বা বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৪৮-[৪০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আসমান ও জমিন সৃষ্টির এক হাজার বছর পূর্বে সূরা ত্ব-হা- ও সূরা ইয়াসীন পাঠ করলেন। মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) (ফেরেশতাগণ) তা শুনে বললেন, ধন্য সে জাতি যাদের ওপর এ সূরা নাযিল হবে। ধন্য সে পেট যে এ সূরা ধারণ করবে। ধন্য সে মুখ (জিহ্বা), যে তা উচ্চারণ করবে। (দারিমী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَرَأَ (طه)
و (يس)
قبل أَن يخلق السَّمَوَات وَالْأَرْضَ بِأَلْفِ عَامٍ فَلَمَّا سَمِعَتِ الْمَلَائِكَةُ الْقُرْآنَ قَالَتْ طُوبَى لِأُمَّةٍ يَنْزِلُ هَذَا عَلَيْهَا وَطُوبَى لِأَجْوَافٍ تَحْمِلُ هَذَا وَطُوبَى لِأَلْسِنَةٍ تَتَكَلَّمُ بِهَذَا» . رَوَاهُ الدَّارمِيّ
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলা সূরা ত্ব-হা- এবং ইয়াসীন পাঠ করলেন।
মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলে, এর অর্থ হলো তিনি এর কিরাআতকে প্রকাশ করলেন এবং তা তিলাওয়াতের সাওয়াব বর্ণনা করলেন।
ইবনুল মালিক (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হলো আল্লাহ তা‘আলা মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)’র সূরা দু’টি বুঝালেন এবং তাদের অন্তরে তার অর্থ ইলহাম করলেন।
ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হলো এ সূরা দ্বয়ের মর্যাদা জানানোর জন্য কতিপয় মালাককে (ফেরেশতাকে) বাকী অন্য সকল মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)’র নিকট পাঠ করে শুনানোর জন্য আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ করলেন। অথবা এর প্রকাশ্য অর্থের উপর রাখার সম্ভাবনাও রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা এ দু’টি সূরার সম্মান ও মর্যাদার কারণে স্বীয় কালামকে কালামে নাফসী হিসেবে শুনিয়েছেন। শুনানোর এই পদ্ধতিকেই কিরাআত বলে অভিহিত করা হয়েছে। যেমন কালামে নাফসীকেই প্রকৃত কুরআন বলে নামকরণ করা হয়।
শায়খুল হাদীস ‘আল্লামা মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসের তা‘বীল করে প্রকাশ্য অর্থ থেকে ঐ রূপক অর্থের দিকে ফিরিয়ে নেয়ার কোনই প্রয়োজন নেই বরং প্রকাশ্য অর্থের উপর রাখাই নির্ধারিত।
সূরা ত্ব-হা- এবং সূরা ইয়াসীন নিঃসন্দেহে কুরআনের অংশ, আর কুরআন আল্লাহর কালাম, তা মাখলূক বা সৃষ্ট নয়। আল্লাহ তা‘আলা সর্বদাই মুতাকাল্লিম বা কালাম কারী, যখন তিনি চান এবং যেভাবে চান, তবে কোন বস্ত্তই তার তুল্য নয়। কালামে নাফসী দ্বারা তিনি শুনিয়েছেন মর্মে কারীর ঐ তা‘বীল দলীলবিহীন কথা। না তা কুরআনে আছে, না হাদীসে আছে, এমনকি কোন সাহাবীর কথায়ও নেই, সুতরাং হাদীসের প্রকাশ্য অর্থ গ্রহণ করাই সঠিক এবং সুনির্ধারিত।
‘‘মালায়িকাহ্ যখন কুরআন পাঠ শুনতে পেল’’, হাদীসের এ বাক্য থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, আসমান জমিন সৃষ্টির অনেক আগেই আল্লাহ তা‘আলা মালাক সৃষ্টি করেছেন।
কেউ কেউ বলেছেন, কুরআন দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মাসদার, অর্থাৎ- কিরাআত, আহলে ‘আরবগণ বলে থাকে (قرأت الكتاب قراءة وقرآناً)। কেউ বলেছেন, তার উদ্দেশ্য হলো আল কুরআন, অর্থাৎ- স্বয়ং কালাম মাসদার নয়। যেখানে কুরআন শব্দ উল্লেখ হয় এর দ্বারা উদ্দেশ্য হয় নাফসুল কালাম বা স্বয়ং কালাম। উদ্দেশ্য হলো তার দ্বারা কথা বলা এবং তার কিরাআত পাঠ করা। এই ভিত্তিতেই ত্ব-হা এবং ইয়াসীন সূরা দ্বয়ের মর্যাদা ও সম্মান প্রতিষ্ঠা বা প্রমাণের জন্য কুরআনকে ঐ দু’টি সূরার উপর ইতলাক করেছেন।
কেউ কেউ বলেছেন, এটা মূলত মূলকে অংশের উপর ইতলাক করা হয়েছে। কেননা আল কুরআনের আলোচ্য বিষয়ের পরিমাণ পূর্ণ এবং অংশের সমভিব্যাহারেই সম্পাদিত।
কেউ বলেছেন, আল কুরআন পূর্ণটাই উদ্দেশ্য কিন্তু মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) যখন সূরা ত্ব-হা- এবং ইয়াসীন শুনলো তখন এর মর্যাদা দেখে তারা বলল, (طُوبٰى) ধন্য সে জাতি যাদের নিকট এটা নাযিল হবে এবং ধন্য ঐ যে তা স্বীয় বক্ষে ধারণ করবে, অর্থাৎ- মুখস্থ করবে এবং ধন্য ঐ মুখ যে তা পাঠ করবে। طُوبٰى ‘তূবা’ শব্দের অর্থ الراحة আনন্দ, প্রশান্তি, অবকাশ। এখানে সুসংবাদ, ধন্য অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
কেউ কেউ বলেছেন, طُوبٰى হলো জান্নাতের একটি বৃক্ষ জান্নাতে অবস্থিত প্রত্যেক বাড়ির সামনেই এ বৃক্ষটি থাকবে, তা হবে ডাল-পালা পত্র-পল্লবে সুশোভিত।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৪৯-[৪১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাতে সূরা ’হা-মীম’ আদ্ দুখা-ন পড়ে। তার সকাল এভাবে হয় যে সত্তর হাজার মালাক (ফেরেশতা) আল্লাহর নিকট তার জন্য মাগফিরাত চাইতে থাকেন। (তিরমিযী। তিনি বলেন, এ হাদীসটি গরীব। একজন বর্ণনাকারী ’আমর ইবনু আবূ খাস্’আম য’ঈফ। ইমাম বুখারী বলেছেন, ’আমর একজন মুনকার রাবী।)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَرَأَ (حم)
الدُّخَانِ فِي لَيْلَةٍ أَصْبَحَ يَسْتَغْفِرُ لَهُ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيث غَرِيب وَعمر بن أبي خَثْعَمٍ الرَّاوِي يُضَعَّفُ وَقَالَ مُحَمَّدٌ يَعْنِي الْبُخَارِيَّ هُوَ مُنكر الحَدِيث
ব্যাখ্যা: রাতে সূরা দুখান পড়ার এই ফাযীলাত যে কোন রাতেই হতে পারে তবে আযহার গ্রন্থে বলা হয়েছে, রাত বলতে তা মুবহাম বা অস্পষ্ট যে কোন রাতও হতে পারে, বিশেষ কোন রাতও হতে পারে। তবে সামনের হাদীসের বর্ণনা মোতাবেক জুমার রাত হওয়া সুস্পষ্ট।
লুম্‘আত গ্রন্থকার বলেন, প্রথম হাদীসে রাতের নির্দিষ্টতা অস্পষ্ট কিন্তু দ্বিতীয় হাদীসে রাতের নির্দিষ্টতা সুস্পষ্ট। তাই নির্দিষ্ট রাত উল্লেখ সম্বলিত হাদীসের ভিত্তিতে জুমার রাতে পড়াই উত্তম, যাতে হাদীসের বিশেষ ফাযীলাত নিশ্চিতভাবে অর্জিত হয়।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৫০-[৪২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমার রাতে সূরা ’হা-মীম আদ্ দুখা-ন’ পড়বে তাকে মাফ করে দেয়া হবে। (তিরমিযী। তিনি বলেছেন, এ হাদীসটি গরীব। এর রাবী আবূল মিকদাম হিশাম কে দুর্বল বলা হয়েছে।)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَرَأَ (حم)
الدُّخَانِ فِي لَيْلَةِ الْجُمْعَةِ غُفِرَ لَهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَهِشَام أَبُو الْمِقْدَام الرَّاوِي يضعف
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৫১-[৪৩] ’ইরবায্ ইবনু সারিয়াহ্ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শয়নের আগে ’মুসাব্বিহাত’ পাঠ করতেন। তিনি বলতেন, ঐ আয়াতসমূহের মধ্যে এমন একটি আয়াত রয়েছে যা হাজারটি আয়াতের চেয়েও উত্তম। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنِ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقْرَأُ الْمُسَبِّحَاتِ قَبْلَ أَنْ يَرْقُدَ يَقُولُ: «إِنَّ فِيهِنَّ آيَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ آيَةٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৫২-[৪৪] দারিমী মুরসাল হাদীস হিসেবে খালিদ ইবনু মা’দান (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান গরীব।[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَرَوَاهُ الدَّارِمِيُّ عَنْ
خَالِدِ بْنِ مَعْدَانَ مُرْسَلًا
وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যা: মুসাব্বাহাত ঐ সমস্ত সূরাগুলোকে বলা হয় যার শুরুতে সাব্বাহা লিল্লা-হ অথবা ইউসাব্বিহূ লিল্লা-হ শব্দ ব্যবহার হয়েছে অথবা সুবহা-না শব্দ ব্যবহার হয়েছে অথবা এর দ্বারা গঠিত ‘আমর বা আদেশবাচক শব্দ ব্যবহার হয়েছে। এ জাতীয় সূরাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সূরা ইসরা-, সূরা হাদীদ, সূরা হাশর, সূরা সফ, সূরা জুমাহ্, সূরা তাগাবুন ও সূরা আ‘লা-।
এ সূরাগুলোর মধ্যে এমন একটি আয়াত রয়েছে যা হাজার আয়াত অপেক্ষাও উত্তম, সে আয়াত কোনটি? এ নিয়ে মনীষীদের বিভিন্ন বক্তব্য রয়েছে।
কেউ বলেছেন, সেই ফাযীলাতপূর্ণ আয়াতটি হলো, ...لَوْ أَنْزَلْنَا هٰذَا الْقُرْآنَ এ আয়াতটি আল্লাহ তা‘আলার ইসমে আ‘যম এর ন্যায়, যা অন্যান্য নামের উপর বিশেষ মর্যাদা রাখে।
হাফেয ইমাদুদ্দীন ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন, সে আয়াতটি হলো,
﴿هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمٌ﴾
মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেন, ওটা ঐ আয়াত যার শুরুতে আত্ তাসবীহ রয়েছে।
‘আল্লামা ত্বীবী বলেন, এ আয়াতটি লায়লাতুল কদরের ন্যায় এবং জুমার দিনে দু‘আ কবূল হওয়ার মোক্ষম মুহূর্তের ন্যায় গোপন রাখা হয়েছে, যাতে করে মানুষ তা পাওয়ার আশায় সবই তিলাওয়াত করে ফেলে।