পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৪৮-[৪০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আসমান ও জমিন সৃষ্টির এক হাজার বছর পূর্বে সূরা ত্ব-হা- ও সূরা ইয়াসীন পাঠ করলেন। মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) (ফেরেশতাগণ) তা শুনে বললেন, ধন্য সে জাতি যাদের ওপর এ সূরা নাযিল হবে। ধন্য সে পেট যে এ সূরা ধারণ করবে। ধন্য সে মুখ (জিহ্বা), যে তা উচ্চারণ করবে। (দারিমী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَرَأَ (طه)
و (يس)
قبل أَن يخلق السَّمَوَات وَالْأَرْضَ بِأَلْفِ عَامٍ فَلَمَّا سَمِعَتِ الْمَلَائِكَةُ الْقُرْآنَ قَالَتْ طُوبَى لِأُمَّةٍ يَنْزِلُ هَذَا عَلَيْهَا وَطُوبَى لِأَجْوَافٍ تَحْمِلُ هَذَا وَطُوبَى لِأَلْسِنَةٍ تَتَكَلَّمُ بِهَذَا» . رَوَاهُ الدَّارمِيّ
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলা সূরা ত্ব-হা- এবং ইয়াসীন পাঠ করলেন।
মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলে, এর অর্থ হলো তিনি এর কিরাআতকে প্রকাশ করলেন এবং তা তিলাওয়াতের সাওয়াব বর্ণনা করলেন।
ইবনুল মালিক (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হলো আল্লাহ তা‘আলা মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)’র সূরা দু’টি বুঝালেন এবং তাদের অন্তরে তার অর্থ ইলহাম করলেন।
ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হলো এ সূরা দ্বয়ের মর্যাদা জানানোর জন্য কতিপয় মালাককে (ফেরেশতাকে) বাকী অন্য সকল মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)’র নিকট পাঠ করে শুনানোর জন্য আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ করলেন। অথবা এর প্রকাশ্য অর্থের উপর রাখার সম্ভাবনাও রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা এ দু’টি সূরার সম্মান ও মর্যাদার কারণে স্বীয় কালামকে কালামে নাফসী হিসেবে শুনিয়েছেন। শুনানোর এই পদ্ধতিকেই কিরাআত বলে অভিহিত করা হয়েছে। যেমন কালামে নাফসীকেই প্রকৃত কুরআন বলে নামকরণ করা হয়।
শায়খুল হাদীস ‘আল্লামা মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসের তা‘বীল করে প্রকাশ্য অর্থ থেকে ঐ রূপক অর্থের দিকে ফিরিয়ে নেয়ার কোনই প্রয়োজন নেই বরং প্রকাশ্য অর্থের উপর রাখাই নির্ধারিত।
সূরা ত্ব-হা- এবং সূরা ইয়াসীন নিঃসন্দেহে কুরআনের অংশ, আর কুরআন আল্লাহর কালাম, তা মাখলূক বা সৃষ্ট নয়। আল্লাহ তা‘আলা সর্বদাই মুতাকাল্লিম বা কালাম কারী, যখন তিনি চান এবং যেভাবে চান, তবে কোন বস্ত্তই তার তুল্য নয়। কালামে নাফসী দ্বারা তিনি শুনিয়েছেন মর্মে কারীর ঐ তা‘বীল দলীলবিহীন কথা। না তা কুরআনে আছে, না হাদীসে আছে, এমনকি কোন সাহাবীর কথায়ও নেই, সুতরাং হাদীসের প্রকাশ্য অর্থ গ্রহণ করাই সঠিক এবং সুনির্ধারিত।
‘‘মালায়িকাহ্ যখন কুরআন পাঠ শুনতে পেল’’, হাদীসের এ বাক্য থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, আসমান জমিন সৃষ্টির অনেক আগেই আল্লাহ তা‘আলা মালাক সৃষ্টি করেছেন।
কেউ কেউ বলেছেন, কুরআন দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মাসদার, অর্থাৎ- কিরাআত, আহলে ‘আরবগণ বলে থাকে (قرأت الكتاب قراءة وقرآناً)। কেউ বলেছেন, তার উদ্দেশ্য হলো আল কুরআন, অর্থাৎ- স্বয়ং কালাম মাসদার নয়। যেখানে কুরআন শব্দ উল্লেখ হয় এর দ্বারা উদ্দেশ্য হয় নাফসুল কালাম বা স্বয়ং কালাম। উদ্দেশ্য হলো তার দ্বারা কথা বলা এবং তার কিরাআত পাঠ করা। এই ভিত্তিতেই ত্ব-হা এবং ইয়াসীন সূরা দ্বয়ের মর্যাদা ও সম্মান প্রতিষ্ঠা বা প্রমাণের জন্য কুরআনকে ঐ দু’টি সূরার উপর ইতলাক করেছেন।
কেউ কেউ বলেছেন, এটা মূলত মূলকে অংশের উপর ইতলাক করা হয়েছে। কেননা আল কুরআনের আলোচ্য বিষয়ের পরিমাণ পূর্ণ এবং অংশের সমভিব্যাহারেই সম্পাদিত।
কেউ বলেছেন, আল কুরআন পূর্ণটাই উদ্দেশ্য কিন্তু মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) যখন সূরা ত্ব-হা- এবং ইয়াসীন শুনলো তখন এর মর্যাদা দেখে তারা বলল, (طُوبٰى) ধন্য সে জাতি যাদের নিকট এটা নাযিল হবে এবং ধন্য ঐ যে তা স্বীয় বক্ষে ধারণ করবে, অর্থাৎ- মুখস্থ করবে এবং ধন্য ঐ মুখ যে তা পাঠ করবে। طُوبٰى ‘তূবা’ শব্দের অর্থ الراحة আনন্দ, প্রশান্তি, অবকাশ। এখানে সুসংবাদ, ধন্য অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
কেউ কেউ বলেছেন, طُوبٰى হলো জান্নাতের একটি বৃক্ষ জান্নাতে অবস্থিত প্রত্যেক বাড়ির সামনেই এ বৃক্ষটি থাকবে, তা হবে ডাল-পালা পত্র-পল্লবে সুশোভিত।