পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৩০-[৩৫] ইবনু মাসউদ (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: আমার পরে তোমরা আমার সাহাবীদের মধ্য হতে এ দু’জনের- আবূ বকর ও ’উমার-এর অনুকরণ করো। আম্মার-এর চরিত্র অবলম্বন করো এবং ইবনু উম্মু ’আবদ-এর (ইবনু মাস্উদ-এর) নির্দেশ দৃঢ়তার সাথে মেনে চলে। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: اقْتَدُوا بِاللَّذَيْنِ مِنْ بَعْدِي مِنْ أَصْحَابِي: أَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ وَاهْتَدُوا بِهَدْيِ عمّارٍ وَتَمَسَّكُوا بِعَهْدِ ابْنِ أُمِّ عَبْدٍ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (3663)
ব্যাখ্যা: (وَاهْتَدُوا بِهَدْيِ عمّارٍ) অর্থাৎ ‘আম্মার ইবনু ইয়াসীর (রাঃ) (الهَدْى) ‘হা’ বর্ণে যবরসহ এবং ‘দাল’ বর্ণে সুকূন যোগে অর্থ চরিত্র, পদ্ধতি। অর্থাৎ তোমরা তার চরিত্র গ্রহণ কর ও তার পথকে মনোনীত করো। মনে হয় যেন (إقتداء) শব্দটি (إهتداء) থেকে বেশি ব্যাপক। যেহেতু (إقتداء)-এর সাথে (فول) এবং (فعل) তথা কথা ও কর্ম উভয় যুক্ত থাকে। পক্ষান্তরে (إهتداء) শুধু (فعل) (কাজ) এর সাথে যুক্ত। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩৮১১)
এ বাক্যে আমাদের সর্দার আমীরুল মু'মিনীন আলী (রাঃ)-এর খিলাফত সত্য ও সঠিক হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনু মা'ঊদ (রাঃ)-এর উপনাম হলো ইবনু উম্মু আবদ। তাঁদের যুগ থেকে উদ্দেশ্য হলো তাদের খিলাফতকাল। এ কারণে তার উদ্দেশ্য হলো তাদের খিলাফতকাল। এ কারণে তারা আমাদের নেতা আবূ বাকর (রাঃ)-এর খিলাফতের সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং তার ওপর এ দলীল পেশ করেন যে, আমরা তাঁকে পিছনে ফেলে রাখতে পারি না। যাকে স্বয়ং রাসূল (সা.) আমাদের দীনের কাজে অর্থাৎ সালাতে অগ্রগামী করেছেন। আমরা কি তাদের দুনিয়ার জন্য পছন্দ করব না? (মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৭৩)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৩১-[৩৬] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুসলিমদের সাথে পরামর্শ ছাড়া যদি আমি কাউকে আমীর বানাতাম তাহলে ইবনু উম্মু ’আবদ-কে লোকেদের ওপর আমীর নিযুক্ত করতাম। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ كُنْتُ مُؤَمِّرًا مِنْ غَيْرِ مَشُورَةٍ لَأَمَّرْتُ عَلَيْهِمُ ابْنَ أُمِّ عَبْدٍ» رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3808) و ابن ماجہ (137) * فیہ الحارث الاعور : ضعیف و ابو اسحاق السبیعی مدلس و عنعن ۔
(واه)
ব্যাখ্যা: (فَوُفِّقْتَ) আপনাকে আমাদের সাথে মিলানো হয়েছে। যেমন বলা হয়: (أتانا لتيفاق الهلال وميفاقه) অর্থাৎ সে আমাদের নিকট এসেছে যখন নতুন চাঁদ উদিত হয়েছে। এর আগে নয়, না পরেও। যেন সেটা মিলিত হওয়ার একটি বাস্তব কেন্দ্রকে বুঝাচ্ছে। (لَوْ كُنْتُ مُؤَمِّرًا) অর্থাৎ কাউকে আমীর নিযুক্ত করা।
(مِنْ غَيْرِ مَشُورَةٍ) তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসটি যে সনদেই বর্ণনা হোক না কেন তা এভাবে তা'বীল করা দরকার যে, অবশ্য রাসূল (সা.) তাকে নির্দিষ্ট সৈন্যদলের আমীর নিয়োগ করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। অথবা তাঁর জীবদ্দশায় কোন কাজের খলীফাহ্ বানিয়েছিলেন আর এ হাদীসকে খুলাফায়ে রাশিদার ওপর ধরা ঠিক হবে না। যা নবী (সা.)-এর ওফাতের পর প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। কারণ তা কুরায়শ বংশের সাথে নির্দিষ্ট যেমনটি রাসূল (সা.) হাদীসে বর্ণনা করেন। আর আমাদের সর্দার আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) কুরায়শ বংশের অন্তর্ভুক্ত নন।
সে কারণে খিলাফতে রাশিদাকে কুরায়শ বংশের সাথে সম্পৃক্ত করা ছাড়া অন্য কারো সাথে যুক্ত করা ঠিক হবে না। যেমন আমরা আলোচনা করলাম। তবে তাঁর “ইলম ও ‘আমলের কারণে একটা অন্যতম মর্যাদা রয়েছে। রয়েছে অগ্রাধিকার পাওয়ার একটা বড় অংশ। আবার তিনি অধিক শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩৮২১, মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৭৩-২৭৪)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৩২-[৩৭] খায়সামাহ্ ইবনু আবূ সাবরাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি মদীনায় এসে আল্লাহর কাছে এই বলে দু’আ করলাম, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে একজন সৎ সাথি জুটিয়ে দাও। এরপর আল্লাহ তা’আলা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে আমার ভাগ্যে জুটিয়ে দিয়েছেন। আমি তার কাছে বসলাম। অতঃপর আমি বললাম, আমি আল্লাহর কাছে একজন সৎ সাথি জুটিয়ে দেয়ার জন্য দু’আ করছিলাম। ফলে তিনি আপনাকেই আমার ভাগ্যে জুটিয়ে দিয়েছেন। তখন তিনি [আবূ হুরায়রাহ (রাঃ)] আমাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কোথাকার লোক? বললাম, আমি কূফার অধিবাসী। আমি কল্যাণের আকাক্ষী। অতএব তার অন্বেষণে কূফা হতে এসেছি। তখন (আমার কথার জবাবে) আবূ হুরায়রাহ্ বললেন, তোমাদের মধ্যে কি নেই সা’দ ইবনু মালিক- যার দু’আ আল্লাহ তা’আলার কাছে গ্রহণযোগ্য। আর ইবনু মাস’উদ, যিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উযূর পানি-পাত্র ও জুতা বহনকারী। আর হুযায়ফাহ, যিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর গোপন তথ্যের অভিজ্ঞ। আর ’আম্মার (ইবনু ইয়াসির) যাঁকে নবী (সা.)-এর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা শয়তান হতে আশ্রয় দিয়েছেন। আর সালমান (ফারিসী), যিনি উভয় কিতাব অর্থাৎ ইঞ্জীল ও কুরআনের উপর ঈমান আনয়নকারী। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْ خَيْثَمَةَ بْنِ أَبِي سَبْرَةَ قَالَ: أَتَيْتُ الْمَدِينَةَ فَسَأَلْتُ اللَّهَ أَنْ يُيَسِّرَ لِي جَلِيسًا صَالِحًا فَيَسَّرَ لِي أَبَا هُرَيْرَةَ فَجَلَسْتُ إِلَيْهِ فَقُلْتُ: إِنِّي سَأَلْتُ اللَّهَ أَنْ يُيَسِّرَ لِي جَلِيسًا صَالِحًا فَوُفِّقْتَ لِي فَقَالَ: مِنْ أَيْنَ أَنْتَ؟ قُلْتُ: مِنْ أَهْلِ الْكُوفَةِ جِئْتُ أَلْتَمِسُ الْخَيْرَ وَأَطْلُبُهُ. فَقَالَ: أَلَيْسَ فِيكُمْ سَعْدُ بْنُ مَالِكٍ مُجَابُ الدَّعْوَةِ؟ وَابْنُ مَسْعُودٍ صَاحِبُ طَهُورِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَعْلَيْهِ؟ وَحُذَيْفَةُ صَاحِبُ سِرِّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ وَعَمَّارٌ الَّذِي أَجَارَهُ اللَّهُ مِنَ الشَّيْطَانِ عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ وَسَلْمَانُ صَاحِبُ الْكِتَابَيْنِ؟ يَعْنِي الْإِنْجِيلَ وَالْقُرْآنَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
سندہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3811) * قتادۃ مدلس و عنعن و للحدیث شواھد معنویۃ
ব্যাখ্যা: (جَلِيسًا صَالِحًا) এমন বৈঠক যা বসার জন্য উপযুক্ত এবং তা থেকে উপকৃত হওয়া যায়।
(أَلْتَمِسُ الْخَيْرَ) অর্থাৎ আমলের সাথে সম্পৃক্ত ইলম। আমলযুক্ত ‘ইলম থেকে উদ্দেশ্য প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা। যে সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
(یُّؤۡتِی الۡحِکۡمَۃَ مَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ مَنۡ یُّؤۡتَ الۡحِکۡمَۃَ فَقَدۡ اُوۡتِیَ خَیۡرًا کَثِیۡرًا ؕ) “যাকে ইচ্ছে তিনি হিকমাত দান করেন এবং যে ব্যক্তি এ জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়, নিঃসন্দেহে সে মহাসম্পদ প্রাপ্ত হয়..."- (সূরাহ আল বাক্বারাহ ২: ২৬৯)।
কখনো বলা হয়, এ হিকমাতের চাইতে অধিক কল্যাণকর কিছুই নেই। অথবা বলা হয়, এছাড়া কোন কল্যাণ নেই।
(صَاحِبُ طَهُورِ) অর্থাৎ যার মাধ্যমে পবিত্রতা লাভ করা যায়। কারণ তিনি নবী (সা.)-কে এবং তাঁর জুতাদ্বয়কে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা করতেন। অনুরূপভাবে তিনি তাঁর বালিশ ইত্যাদির সাথি ছিলেন। যাতে প্রমাণিত হয় তাঁর পূর্ণ খিদমাতের ও একেবারে কাছের ব্যক্তির। হুযায়ফাহ্ (রাঃ) ছিলেন রাসূল (সা.)-এর রহস্যবিদ। কারণ রাসূল (সা.) তাকে স্বীয় ওফাতের পর উম্মতের মাঝে ঘটিতব্য বিষয়সমূহ ও মুনাফিকদের বিভিন্ন অবস্থা সম্পর্কে অবগত করেছিলেন। আর তিনি সেগুলোকে তার ও রাসূল (সা.) -এর মাঝে গোপন রাখতেন।
(عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِ) ইবনু তীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বাণী:
(وَيْحَ عَمَّارٍيَدْعُوهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ وَيَدْعُونَهُ إِلَى النَّارِ) ‘আম্মার (রাঃ)-এর বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, তিনি তাদেরকে আহ্বান করছেন জান্নাতের পথে আর তারা তাঁকে ডাকে জাহান্নামের পথে।
হাফিয (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ ব্যাখ্যা সম্ভাবনার বাইরে নয়। হয়তো এ থেকে উদ্দেশ্য ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর মারফু হাদীসটিও হতে পারে। যেমন নবী (সা.) বলেন, (مَاخُيِّرَعَمَّارٌبَيْنَ أَمْرَيْنِ إِلَّا اخْتَارَأَرْشَدَهُمَا) ‘আম্মার (রাঃ) দুটি বিষয়ের মধ্যে অধিক সঠিকটাকে বেছে নিতেন। মুসনাদে আহমাদে ইবনু মাস'উদ (রাঃ)-এর হাদীসে রয়েছে, ‘আম্মার (রাঃ) -এর দুটি বিষয়ের মধ্যে উত্তমটাকে বেছে নেয়ার প্রবণতা থাকা দাবী করে যে, তাকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করা হয়েছে। ইবনু সা'দ-এর “তবাকাত”-এ হাসান সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আম্মার (রাঃ) বলেন, আমরা এক জায়গায় উপনীত হলাম এবং পানি পানের জন্য মশক ও বালতি নিয়ে গেলাম। নবী (সা.) বললেন, শীঘ্রই তোমাকে একজন লোক পানি থেকে বাধা প্রদান করবে।
অতঃপর যখন আমি পানির নিকটে চলে এসেছি হঠাৎ একজন কালো লোক এসে পড়ল, যেন সে একজন শাবক। আমি তাকে আছাড় দিলাম। অতঃপর তিনি হাদীসটি বর্ণনা করলেন। এ হাদীসে রয়েছে, (ذَاكَ الشَّيْطَانُ) “ওটা শয়তান”। হয়তো ইবনু মাস্'উদ (রাঃ) এ ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। আবার রক্ষা করার দ্বারা ইঙ্গিত তার ঈমানের উপর অবিচল থাকার প্রতি হতে পারে। যখন তাকে মুশরিকরা কুফরী কথা বলার জন্য বাধ্য করেছিল। এ প্রসঙ্গেই নাযিল হয়, (...اِلَّا مَنۡ اُکۡرِهَ وَ قَلۡبُهٗ مُطۡمَئِنٌّۢ بِالۡاِیۡمَانِ..) “...কুফরীর জন্য স্বীয় হৃদয় খুলে দিলে তার ওপর আল্লাহর গযব পতিত হবে...”- (সূরা আন নাহল ১৬ : ১০৬)। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা, ৩৮১১)
(صَاحِبُ الْكِتَابَيْنِ) অর্থাৎ, ইঞ্জীল ও কুরআনের ধারক বা এটা এভাবে যে, তারা কুরআন নাযিল হওয়ার পূর্বে ইঞ্জীল পড়েছে ও তার উপর ঈমান এনেছে এবং সে মতো ‘আমল করেছে। অতঃপর কুরআনের উপর ঈমান এনেছে রসূলের বরকতপূর্ণ খিদমাতে হাযির হয়ে। সালমান ফারসী (রাঃ) -এর বয়স ছিল ৮৬ বছর। তাঁর উপাধি ছিল সালমান আল খায়র। (মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৭৪)
তিনি স্বহস্তে খেজুর পাতার কাজ করে জীবিকা উপার্জন করে খেতেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৩৩-[৩৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আবূ বকর একজন খুবই উত্তম লোক, ’উমার খুব উত্তম লোক, আবূ উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ খুবই উত্তম লোক, উসায়দ ইবনু হুযায়র খুবই উত্তম লোক, সাবিত ইবনু কায়স ইবনু শাম্মাস খুবই উত্তম লোক, মু’আয ইবনু জাবাল খুবই উত্তম লোক এবং মু’আয ইবনু আমর ইবনুল জুমূহ খুবই উত্তম লোক। (তিরমিযী এবং তিনি বলেছেন, হাদীসটি গরীব)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نِعْمَ الرَّجُلُ أَبُو بَكْرٍ نِعْمَ الرَّجُلُ عُمَرُ نِعْمَ الرَّجُلُ أَبُو عُبَيْدَةَ بْنُ الْجَرَّاحِ نِعْمَ الرَّجُلُ أُسَيْدُ بْنُ حُضَيْرٍ نِعْمَ الرَّجُلُ ثَابِتُ بْنُ قَيْسِ بْنِ شَمَّاسٍ نِعْمَ الرَّجُلُ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ نِعْمَ الرَّجُلُ مُعَاذُ بْنُ عَمْرِو بْنِ الْجَمُوحِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
اسنادہ صحیح ، رواہ الترمذی (3795) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: সম্ভবত এসব বড় বড় মুহাজির ও আনসারগণ (রাঃ) এক মাজলিসে সমবেত হলে তাঁদের প্রত্যেকের সাথে প্রশংসা ও সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অথবা কোন অনুষ্ঠানে এভাবে তাদের আলোচনা করা হয়েছে। আবূ উবায়দাহ্ ইবনু জাররাহ উত্তম ব্যক্তি ছিলেন। তিনি এমন ব্যক্তি যার হাত ধরে নবী (সা.) বলেন, এ হচ্ছে উম্মতের আমানাতদার। এ হাদীস আশারায়ে মুবাশশিরাদের ফাযীলাতের অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে। উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাঃ) আওস বংশের একজন আনসারী ব্যক্তি ছিলেন।
তিনি এমন সবল সাহাবীদের গণ্য ছিলেন যারা ‘আকাবাহ, বদরসহ পরবর্তী সকল জিহাদে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর কাছ থেকে সাহাবীদের একটি দল হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি ৩০ হিজরী সনে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন এবং জান্নাতুল বাকীতে কবরস্থ হন। সাবিত ইবনু কায়স ও মু'আয ইবনু জাবাল-এর আলোচনা পূর্বে হয়েছে আর মু'আয ইবনু ‘আমর খাযরাজ গোত্রের আনসারী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ও ‘আকাবাহ ও বদর যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন। পরপারে পাড়ি জমান উসমান -এর যুগে। (মিশকাতুল মাসাবীহ- মুম্বাই ছাপা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৭৫)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৩৪-[৩৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তিন লোকের জন্য জান্নাত উদগ্রীব রয়েছে- ’আলী, ’আম্মার ও সালমান (রাঃ)। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم: «إِنَّ الْجَنَّةَ تَشْتَاقُ إِلَى ثَلَاثَةٍ عَلِيٍّ وَعَمَّارٍ وسلمان» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3797 وقال : حسن غریب) * فیہ الحسن البصری مدلس مشھور و عنعن
ব্যাখ্যা: (إِنَّ الْجَنَّةَ تَشْتَاقُ إِلَى ثَلَاثَةٍ) -এর মমার্থ হলো যে, তারা অবশ্যই জান্নাতী। এখানে এতে জোরদার করে বলা হয়েছে। কেউ বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে, জান্নাতের অধিবাসীরা তিনটি জিনিসের প্রতি খুব আগ্রহী হবে। [এক] (حوارى) (সঙ্গী-সাথি), [দুই] চাকর, [তিন] মালাক (ফেরেশতা), যেমনটি (اللمعات) -এ বর্ণিত হয়েছে। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ তিনজনের প্রতি জান্নাতের আগ্রহের উদাহরণ হলো, সা'দ ইবনু মা'আরিয (রাঃ) এর মৃত্যুতে আল্লাহর ‘আরশ কেঁপে উঠার মতো। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩৮০৯)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৩৫-[৪০] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ’আম্মার (রাঃ) নবী (সা.) -এর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তখন তিনি (সা.) বললেন, তাঁকে অনুমতি দাও। পূত-পবিত্র লোকটি মুবারক হোক। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: اسْتَأْذَنَ عَمَّارٌ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «ائْذَنُوا لَهُ مَرْحَبًا بِالطَّيِّبِ الْمُطَيَّبِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
حسن ، رواہ الترمذی (3798 وقال : حسن صحیح) ۔
(حَسَنٌ)
ব্যাখ্যা: (مَرْحَبًا بِالطَّيِّبِ الْمُطَيَّبِ) বলা হয়ে থাকে (مَرْحَبًابه) (তাকে খোশ আমদেদ) অর্থাৎ সে খোলা ময়দান ও অবকাশ পেয়েছে। এর দ্বারা পরোক্ষভাবে প্রফুল্লতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
(طَيِّبِ الْمُطَيَّبِ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো (الطاهر) ও (الطهر) অর্থাৎ পবিত্র ও পবিত্রকারী। এখানে পূর্ণাঙ্গতা প্রকাশ করা হয়েছে। যেমন বলা হয়- (ظل طليل) (ছায়া ও ছায়াময়) (اللمعات)-তে বলা হয়েছে যে, হয়তো বিষয়টি এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, মণি এমনিতে সুরভি ছড়ায়।
আবার তাকে শারী'আত পরিমার্জিত ও সুবাসিত কাজ করলে তা যেন (نور على النور) অর্থাৎ আলোকজ্যোতিতে পরিণত হয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩৮১০)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৩৬-[৪১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ’আম্মার -কে যখন দুটি কাজের যে কোন একটি করার ইচ্ছাধীন করা হয়েছে, তখন তিনি উভয়ের মধ্যে মজবুতটিকে গ্রহণ করেছেন। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا خُيِّرَ عَمَّارٌ بَيْنَ أمرينِ إِلا اخْتَار أرشدهما» رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ضعیف ، رواہ الترمذی (3799) [و ابن ماجہ (148) و الحاکم (3 / 388 ح 5665) و احمد (6 / 113)] * فیہ حبیب بن ابی ثابت مدلس و عنعن و للحدیث شاھد عند احمد (1 / 389 ، 445) و الحاکم (3 / 388 ح 5664) من حدیث سالم بن ابی الجعد عن ابن مسعود رضی اللہ عنہ بہ و سندہ منقطع وقال علی بن المدینی :’’ سالم ابن ابی الجعد : لم یلق ابن مسعود ‘‘ فالحدیث ضعیف من جمیع الطریقین
ব্যাখ্যা: (مَا خُيِّرَ عَمَّارٌ) অর্থাৎ ‘আম্মার-কে বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দেয়া হয়নি। কিন্তু তিনি দুটির মধ্যে যোগ্যতর অধিক সঠিক ও হকের কাছাকাছি যা সেটাই গ্রহণ করতেন। কোন কোন সূত্রে (أسرهما) রয়েছে। অধিক কঠিনকে পছন্দ করতে না। কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা তাঁর বিবেচনায়।
অতএব (مَا اخْتِيرَ عَمَّارٌبَيْنَ أَمْرَيْنِ إِلَّا اخْتَارَ أَيْسَرَهُمَا) এ বর্ণনাটি তার বিপরীত নয়। কারণ এটা অন্যের দৃষ্টিতে। এসব বর্ণনাগুলো একত্রিত করলে যেটা ফুটে উঠে তা হলো এই যে, তিনি যেটার প্রধান্য প্রকাশিত হত তার মধ্যে অধিক সঠিক ও যোগ্য বিষয়টিকে মনোনীত করতেন। এছাড়া দুটোর মধ্যে অধিক সহজটিকে পছন্দ করতেন। কেউ বলেন, এ হাদীসে এ কথার দলীল পাওয়া যায় যে, ‘আলী (রাঃ) তাঁর খিলাফতে সঠিক বুঝের উপর ছিলেন। পক্ষান্তরে মু'আরিয়াহ্ (রাঃ) ইজতিহাদে ভুল করেছিলেন। তিনি সঠিক বুঝের উপর ছিলেন না। কারণ ‘আম্মার (রাঃ) ‘আলী (রাঃ)-এর সম্মতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। তাই তিনি তাঁর সাথে সিফফীনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শাহাদাত বরণ করেন। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩৮১১)
সবসময় সালাফে সালিহীনদের এ নিয়ম জারি ছিল যে, তারা নিজের জন্য সংরক্ষিত বিষয়কে গ্রহণ করতেন এবং অন্যকে এমন পথের দিশা দিতেন যা তার নিকটে অধিক সহজ ও সোজা হয়। এজন্য যে, নবী (সা.) বর্ণনা করেন, তোমাদেরকে সহজ সরল করার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। প্রেরণ করা হয়নি কঠিন ও সংকীর্ণতায় ফেলে দেয়ার জন্য। (মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৭৬)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৩৭-[৪২] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ)-এর জানাযাহ্ উঠানো হলো, তখন মুনাফিকরা তিরস্কারের ভঙ্গিতে উক্তি করল, কতই হালকা তার লাশ। তাদের এই মন্তব্য ছিল বানূ কুরায়যার ব্যাপারে তাঁর ফায়সালার কারনে। অতঃপর নবী (সা.) -এর কাছে এ কথাটা পৌছলে তিনি বললেন, প্রকৃত বিষয় হলো মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তার লাশ বহন করছিলেন। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: لَمَّا حُمِلَتْ جِنَازَةُ سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ قَالَ الْمُنَافِقُونَ: مَا أَخَفَّ جِنَازَتَهُ وَذَلِكَ لِحُكْمِهِ فِي بَنِي قُرَيْظَةَ فَبَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «إِنَّ الْمَلَائِكَة كَانَت تحمله» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
صحیح ، رواہ الترمذی (3849 وقال : حسن صحیح) و اصلہ فی صحیح مسلم (2467) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (لَمَّا حُمِلَتْ جِنَازَةُ سَعْدِ) অর্থাৎ যখন মানুষেরা তার জানাযাকে বহন করছিল তখন তাঁকে হালকা পেয়েছিল। (مَاأخَفَّ) এখানে (مَا) আশ্চর্যের অর্থে ব্যবহার হয়েছে। বানূ কুরায়যাহ্ ‘হালকা’ তাকে তুচ্ছ ও হেয়জ্ঞান করার জন্য বলেছিল। কারণ তিনি তাদের ব্যাপারে ফায়সালা দিয়েছিলেন যে, বানূ কুরায়যাহ্’র যোদ্ধাদের হত্যা করতে হবে ও তাদের সন্তানদের বন্দি করতে হবে। সে কারণে মুনাফিকরা তার ফয়সালাকে যুলমবশত বা শত্রুতাবশত বলে আখ্যা দেয়। অথচ রাসূল (সা.) তার সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাদ (রাঃ)-এর জানাযাহ্ হালকা সম্পর্কে মুনাফিকদের মন্তব্য যখন রাসূল (সা.) শুনলেন, তখন তিনি বললেন যে, তার জানাযাকে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) বহন করছে, তাই মানুষের নিকটে হালকা হয়েছে।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মুনাফিকরা তাদের মন্দ মন্তব্যের মাধ্যমে তাকে অপমান ও হেয়জ্ঞান করতে চেয়েছে। ফলে রাসূল (সা.) তার জবাবে বলেন যে, তার বড় শান ও মর্যাদার ব্যাপারটি হালকা হওয়ার ঘটনার সাথে যুক্ত। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩৮৬১)
বানু কুরায়যাহ মদীনার নিকটের ইয়াহুদী ছিল। নবী (সা.)-এর সাথে তাদের সন্ধি ছিল। হিজরী সালের ৫ম বছরে যখন খন্দক যুদ্ধ সংঘটিত হয় তখন বানূ কুরায়যাহ্ রাসূল (সা.) -এর সন্ধি-চুক্তিকে ভঙ্গ করে কাফিরদের সাথে যোগ দেয়। যখন মুশরিকরা মক্কায় ফিরে গেল তখন নবী (সা.) বানূ কুরায়যাহ্-কে পনের দিন ঘেরাও করে রাখলেন। তারা সঙ্কীর্ণতায় পড়ে প্রস্তাব পাঠাল যে, আমরা দুর্গ থেকে নেমে এসে আমাদের সর্দার সা'দ ইবনু মুআয-এর ফায়সালা মেনে নিব। তখন সা'দ (রাঃ) সিদ্ধান্ত দিলেন, তাদের যোদ্ধাদেরকে হত্যা করা হবে এবং শিশু ও নারীদেরকে দাস-দাসী হিসেবে রাখা হবে। নবী (সা.) বললেন, হে সাদ! তুমি আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী হুকুম ফায়সালা করেছ। তবে যেসব মুনাফিক ইয়াহূদীদের ভাইস্বরূপ ছিল তারা সা'দ (রাঃ)-এর সমালোচনা করত। (মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৭৬)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৩৮-[৪৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, আবূ যার (রাঃ)-এর তুলনায় সত্যবাদী আর কাউকে নীল আকাশ ছায়া দান করেনি এবং ধুলা-ধূসর জমিনও তার পিঠে বহন করেনি। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٌو قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَا أَظَلَّتِ الْخَضْرَاءُ وَلَا أَقَلَّتِ الْغَبْرَاءُ أَصْدَقَ مِنْ أبي ذَر» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
حسن ، رواہ الترمذی (3801 وقال : حسن غریب) ۔
(حسن)
ব্যাখ্যা: (الْخَضْرَاءُ)-এর দ্বারা উদ্দেশ্য আকাশ। (الْغَبْرَاءُ) থেকে উদ্দেশ্য হলো জমিন। (أَصْدَقَ مِنْ أبي ذَر) -শব্দটি (أَقَلَّتِ) এর (مَفْعُولُ) (কর্ম) এবং উহ্য (أَحَد)-এর সিফাত।
এভাবে সীমাবদ্ধ করার মাধ্যমে তার প্রতি তাগিদ ও অধিক সত্যবাদিতার কথায় বলা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি চূড়ান্ত সত্যবাদিতার আসনে অধিষ্ঠিত। তবে তিনি সাধারণভাবে অন্য সবার চাইতে সত্যবাদী নন। কারণ তাঁর ব্যাপারে এভাবে বলা ঠিক নয় যে, আবূ যার (রাঃ) আবূ বাকর (রাঃ)-এর চাইতে অধিক সত্যবাদী। তিনি হলেন, নবী (সা.)-এর পরে উম্মতের মধ্যে অধিক সত্যবাদী ও উত্তম। আর নবী (সা.) ছিলেন আবূ বাকর (রাঃ) অন্যদের চাইতে সত্যবাদী (যেমনটি সাহাবীগণ বর্ণনা করেন)।
কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নিশ্চয় রাসূল (সা.) এবং সমস্ত নবী (আঃ) গন বিধানগতভাবে পূর্ব বিষয়ের বাহিরে। আর আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) স্বীয় অধিক সত্যবাদিতার কারণে সিদ্দীক উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। এ ব্যাপারটি এটি বাঁধা দেয় না যে, আর কেউ স্বীয় কথায় সত্যবাদিতার গুণে বিভূষিত হোক।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তোমাদের মধ্যে বড় পাঠক হলো- আবূ যার (রাঃ) বড় বিচারক হলেন ‘আলী (রাঃ)। আর অবশ্যই (مَفْضُول) (যার ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে) এর মধ্যে এমন বস্তু উপস্থিত থাকা দরকার যা শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির মধ্যে রয়েছে। অথবা সে এবং সর্বাধিক শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ব্যক্তি গুণসমূহের মধ্যে কোন গুণে সমানভাবে শরীক হবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩৮১৩)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৩৯-[৪৪] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আবূ যার -এর তুলনায় সত্যভাষী ও ওয়া’দা পূরণকারী নীল আকাশ কারো উপর ছায়া দান করেনি এবং ধুলাবালির জমিন তার পিঠে বহন করেনি। দুনিয়াবিমুখীতায় তিনি হলেন ’ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ)-এর সদৃশ। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَظَلَّتِ الْخَضْرَاءُ وَلَا أَقَلَّتِ الْغَبْرَاءُ مِنْ ذِي لَهْجَةٍ أَصْدَقَ وَلَا أَوْفَى مِنْ أَبِي ذَرٍّ شِبْهِ عِيسَى بن مَرْيَم» يَعْنِي فِي الزّهْد. فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ كَالْحَاسِدِ: يَا رَسُولَ الله أفتعرف ذَلِك لَهُ؟ قَالَ: «نعم فَاعْرِفُوهُ لَهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَقَالَ: حَدِيث حسن غَرِيب
اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (3802) ۔
(حسن)
ব্যাখ্যা: (ذِي لَهْجَةٍ) অর্থাৎ- এর অর্থ জিহ্বা। কেউ বলেন, এর অর্থ জিহ্বার কিনারা। অর্থ উচ্চারণে সক্ষম ব্যক্তি।
কেউ বলেন, (اللِّسَانِ) হলো যা বলা হয়। অর্থাৎ যিনি কথা বলতে পারেন।
(أصْدَقَ وَلَا أَوْفَى) অধিক সত্যবাদী, ওয়া'দা ও প্রতিশ্রুতির কথায়।
(شِبْهِ عِيسَى بن مَرْيَم) জের সহকারে (بَدَلٌ) হবে। অর্থাৎ তার সদৃশ। সাদৃশ্য ধারণ করা সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, (مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى تواضع عيسى بن مَرْيَمَ فَلْيَنْظُرْ إِنِى ذَرٍّ) “ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) এর নম্বতা দেখে যে খুশি হতে চায়, সে যেন আবূ যার (রাঃ) -এর দিকে লক্ষ্য করে- (ইবনু আবী শায়রাহ ৬/৩৮৮: সহীহ হাদীস), (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩৮১৪)।
কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: তুলনা হলো নম্রতা, বিনয়ীতার দিক থেকে। বর্ণনাকারীর কথা (يَعْنِي فِي الزّهْد) থেকে এ দিক ফুটে উঠে যে, তিনি হাদীসটি উপলব্ধি করতে পারেননি। অথচ (مُتَوَاصِع) (নম্রতা) ও (زَاهِدًا) (দুনিয়াবিমুখ) এর মধ্যে কোন বৈপরীত্য নেই। বরং (زُهْدُ) তথা সংসার ত্যাগী চেতনার জন্য বিনয় নম্রতা ওয়াজিব। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৪০-[৪৫] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। যখন তাঁর মৃত্যুর সময় কাছাকাছি হয়ে আসলো, তখন তিনি (উপস্থিত লোকেদের উদ্দেশে) বললেন, এ চারজনের কাছ হতে (কুরআন, সুন্নাহ অথবা হালাল হারাম সম্পৰ্কীয়) ইলম অর্জন কর। তারা হলেন, ’উওয়াইমির- যার কুনিয়াত আবূ দারদা, সালমান ফারিসী, ইবনু মাস্’উদ ও ’আবদুল্লাহ ইবনু সালাম। এই ’আবদুল্লাহ ইবনু সালাম প্রথমে ছিলেন ইয়াহূদী, পরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, ’আবদুল্লাহ ইবনু সালাম সম্পর্কে তিনি বলেছেন, তিনি জান্নাতে দশজনের দশম লোক। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ لَمَّا حَضَرَهُ الْمَوْتُ قَالَ: الْتَمِسُوا الْعِلْمَ عِنْدَ أَرْبَعَةٍ: عِنْدَ عُوَيْمِرٍ أَبِي الدَّرْدَاءِ وَعِنْدَ سَلْمَانَ وَعِنْدَ ابْنِ مَسْعُودٍ وَعِنْدَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلَامٍ الَّذِي كَانَ يَهُودِيّا فَأسلم فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّهُ عَاشِرُ عَشَرَةٍ فِي الْجَنَّةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ صحیح ، رواہ الترمذی (3804 وقال : حسن صحیح) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (الْتَمِسُوا الْعِلْمَ) অর্থাৎ- “ইলম সন্ধান কর। ‘ইলম থেকে উদ্দেশ্য কিতাব ও সুন্নাহর ‘ইলম। অথবা হালাল-হারামের জ্ঞান এটাই বেশি সঠিক যেমনটি নবী (সা.) -এর বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়।
(عند اربعة رهط) ছোট দল, (الرهط) বলা হয় দশের কম সংখ্যক পুরুষের দলকে। তাতে কোন মহিলা থাকে না।
(الَّذِي كَانَ يَهُودِيّا فَأسلم) এটা পার্থক্যকরণের গুণস্বরূপ। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা ‘আবদুল্লাহর (صِفَةٌ مُمَيِّزَةٌ) তথা বিশেষ গুণসূচক নয়। এটা এজন্য যে, যাতে তার নামের সাথে অন্য কারো নাম মিশে না যায়। তবে জ্ঞান অনুসন্ধানের উপদেশে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। কারণ তিনি দুই কিতাব তথা কুরআন ও তাওরাতের উভয়ের উপর ঈমান এনেছেন ও ‘আমল করেছেন।
(عَاشِرُ عَشَرَةٍ فِي الْجَنَّةِ) অর্থাৎ- আশারায়ে মুবাশশিরার ন্যায়। যেমন আবূ ইউসুফ ও আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) আশারায়ে মুবাশশিরার মধ্যকার নন। যেমনটি মীরাক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা আবার ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ)-এরও মত।
সাইয়্যিদ জামালুদ্দীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ এটাও হতে পারে যে, পরে নয়টি সাহাবী (রাঃ) এর দল জান্নাতে প্রবেশ করে।
কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এতে এ বিষয়টি ধরা যায় যে, তিনি কোন কোন আশারায়ে মুবাশশারার অগ্রগামী। এ সম্ভাবনার বাইরে নয় যে, হয়তো তিনি আশারায়ে মুবাশশারাহ্ ছাড়া যারা ইসলাম কবুল করেছে অথবা ইয়াহূদীদের মধ্য থেকে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে দশম। এভাবে আশারায় মুবাশশারার পরে উনিশজন সাহাবী জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত হন। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩৮১৬, মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৭৭)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৪১-[৪৬] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবায়ি কিরামগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি (আপনার জীবদ্দশায় কাউকে) একজন খলীফাহ্ নিযুক্ত করতেন। তিনি (সা.) বললেন, আমি যদি কাউকে তোমাদের ওপর খলীফাহ্ নিযুক্ত করি আর তোমরা তার বিরুদ্ধাচরণ কর, তাহলে তোমরা শাস্তি ভোগ করবে। হুযায়ফাহ্ তোমাদেরকে যা বলে, তা সত্য মনে করো এবং আবদুল্লাহ (ইবনু মাউদ) যা কিছু তোমাদেরকে পড়ায় তোমরা তা পড়। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ: قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ لَوِ اسْتَخْلَفْتَ؟ قَالَ: «إِنِ اسْتَخْلَفْتُ عَلَيْكُمْ فَعَصَيْتُمُوهُ عُذِّبْتُمْ وَلَكِنْ مَا حَدَّثَكُمْ حُذَيْفَةُ فَصَدِّقُوهُ وَمَا أقرأكم عبد الله فاقرؤوه» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3812 وقال : حسن) * فیہ ابو الیقظان عثمان بن عمیر : ضعیف و شریک القاضی مدلس و عنعن ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (لَوِ اسْتَخْلَفْتَ) ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (لَوِ) হরফটি আকাঙ্ক্ষা অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ (ليتنا) (যদি আমাদের জন্য হত)। অথবা (امْتِنَاعِيَّة) বিরত থাকা অর্থে ব্যবহৃত। যেন নবী (সা.) বলেছেন যে, গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী হলো, তোমরা আমার নিকট খলীফাহ্ নির্বাচনের আবেদন করো না। কারণ তা তোমাদের সম্মতি ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে। এর জবাব উহ্য রয়েছে। যথা- (لَكَانَ خَيْرًا)
(عُذِّبْتُمْ) التَّعْذِيبِ মাসদার থেকে মাজহূলের সীগাহ। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (عُذِّبْتُمْ) হচ্ছে শর্তের জবাব। তখন জবাব হবে (فَعَصَيْتُمُوهُ)। তবে প্রথম নীতি ঠিক হবে যেমনটি দ্বিতীয়টি দাবী করে। আর তা হলো খলীফাহ্ নির্বাচন করাটা গুনাহের কারণ হবে। এর অর্থ হলো, খলীফাহ্ নির্বাচনের পরে গুনাহ হয়ে গেলে সেটা শাস্তির কারণ হবে। (وَلَكِنْ مَا حَدَّثَكُمْ حُذَيْفَةُ فَصَدِّقُوهُ وَمَا أقرأكم عبد الله فاقرؤوه) অর্থাৎ, জ্ঞানগর্ভ নীতি। কারণ তিনি জবাব দানে অধিক অভিজ্ঞ ছিলেন। যেন এ কথা বলা যে, আমার খলীফাহ্ নির্বাচনের বিষয়টি তোমাদেরকে চিন্তায় না ফেলে। অতএব এটা ছাড়ো। তবে তোমাদেরকে যেন কিতাব ও সুন্নাতের প্রতি আমল চিন্তিত করে। অতএব এ দুটোকে মজবুতভাবে ধারণ কর। আর বিশেষভাবে হুযায়ফাহ্ (রাঃ) উল্লেখ করেছেন, কারণ তিনি রাসূল (সা.) -এর সহস্যবিদ এবং দুনিয়াবী ফিতনাহ্ থেকে ভীতি প্রদর্শনকারী। আবদুল্লাহ ইবনু মা'উদ (রাঃ) হলেন পরকালের অবস্থা সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শনকারী।
কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অধিক স্পষ্ট ব্যাপার হলো, এটা পূর্বের অর্থের সংশোধনী। যার অর্থ এ রকম (مَا أَسْتَخْلِفُ عَلَيْكُمْ أَحَدًا وَلَكِنْ إِلَخْ)। এখানে উক্ত দু’জন সাহাবীকে বিশেষভাবে উল্লেখের কারণ হলো তাঁরা দু’জন আবূ বাকর (রাঃ)-এর খিলাফতের সাক্ষী। এতে খিলাফতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, ইবাদাতের প্রতি নয়। যাতে করে শাস্তি ওয়াজিবকারী গুনাহ দ্বিতীয়টির সাথে সাব্যস্ত না হয়। যা প্রথমটির বিপরীত। কারণ সেটা ইজতিহাদের অবকাশ বাকী রাখে। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩৮২৪, মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৭৭)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৪২-[৪৭] উক্ত রাবী [হুযায়ফাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখনই কোন ফিতনাহ্ মানুষের মাঝে দেখা দেয়, তখন আমি সকলের ব্যাপারে ভয় করি যে, সে তাতে লিপ্ত হতে পারে, একমাত্র মুহাম্মাদ ইবন মাসলামাহ্ ছাড়া। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, (হে মাসলামাহ্!) ফিতনাহ তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْهُ قَالَ: مَا أَحَدٌ مِنَ النَّاسِ تُدْرِكُهُ الْفِتْنَةُ إِلَّا أَنَا أَخَافُهَا عَلَيْهِ إِلَّا مُحَمَّدُ بْنُ مِسْلَمَةَ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا تَضُرُّكَ الْفِتْنَةُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
سندہ ضعیف ، رواہ ابوداؤد (4663) * ھشام بن حسان مدلس و عنعن ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (تُدْرِكُهُ الْفِتْنَةُ) অর্থাৎ দুনিয়াবী মুসীবাত। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ বলতে মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ আল আনসারী খাযরাজী ছিলেন। তাবুক ছাড়া অন্যান্য সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কেউ কেউ বলেন, তাবুক যুদ্ধের বছর নবী (সা.) তাকে খলীফাহ্ বানিয়েছিলেন। তিনি বিশিষ্ট সাহাবীদের অন্যতম ছিলেন। মদীনায় বিখ্যাত সাহাবী মু'আব ইবনু উমায়র -এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। রাসূল (সা.) - এর নির্দেশ থাকার কারণে ফিতনার সময় তিনি নির্জনতাকে পছন্দ করতেন এবং ফিতনার অনিষ্টতা ও ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৭৮)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৪৩-[৪৮] ’আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী (সা.) (অসময়ে) যুবায়র (রাঃ)-এর গৃহে বাতি জ্বলতে দেখলেন। তখন তিনি (সা.) বললেন, হে ’আয়িশাহ্! আমার মনে হয়, আসমা প্রসব করেছে। অতএব আমি তার নাম না রাখা অবধি তোমরা তার নাম রাখবে না। অতঃপর তিনি তার নাম রাখলেন ’আবদুল্লাহ এবং একটি খুরমা চিবিয়ে নিজ হাতে তার মুখের তালুতে লাগিয়ে দিলেন। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى فِي بَيْتِ الزُّبَيْرِ مِصْبَاحًا فَقَالَ: «يَا عَائِشَة ماأرى أَسْمَاءَ إِلَّا قَدْ نُفِسَتْ وَلَا تُسَمُّوهُ حَتَّى أُسَمِّيَهُ» فَسَمَّاهُ عَبْدَ اللَّهِ وَحَنَّكَهُ بِتَمْرَةٍ بِيَدِهِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3826 وقال : حسن غریب) * فیہ عبداللہ بن مؤمل : ضعیف ، و حدیث مسلم (2146) ھو المحفوظ
ব্যাখ্যা: (رَأَى فِي بَيْتِ الزُّبَيْرِ) অর্থাৎ যুবায়র ইবনু আওয়াম (রাঃ)। আসমা’ (রাঃ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এর বোন এবং যুবায়র (রাঃ)-এর স্ত্রী। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩৮৩৮)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৪৪-[৪৯] ’আবদুর রহমান ইবনু আবূ ’আমীরাহ্ (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। [নবী (সা.)] মু’আবিয়াহ্ -এর জন্য এভাবে দু’আ করেছেন- ’হে আল্লাহ! তুমি তাকে সঠিক পথপ্রদর্শনকারী, সত্য পথের অনুসারী কর এবং তার কর্তৃক মানুষদেরকে হিদায়াত কর।’ (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي عَمِيرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ لِمُعَاوِيَةَ: «اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ هَادِيًا مَهْدِيًّا وَاهْدِ بِهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ صحیح ، رواہ الترمذی (3842 وقال : حسن غریب) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যাঃ (عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ لِمُعَاوِيَةَ) এখানে সাধারণভাবে স্পষ্ট মনে উদয় হয় যে, তিনি হলেন মু'আবিয়াহ্ ইবনু আবূ সুফইয়ান। এছাড়া মু'আবিয়াহ্ ইবনুল হাকাম, মু'আবিয়াহ্ ইবনু জাহিমাহ্ ও অন্যতম সাহাবী (রাঃ) ছিলেন। যেমনটি সম্মানিত লেখক তার রিজালশাস্ত্রে উল্লেখ করেন।
(اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ هَادِيًا) অর্থাৎ মানুষের পথপ্রদর্শক অথবা কল্যাণের পথনির্দেশক।
(وَاهْدِ بِهِ) অর্থাৎ মু'আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর মাধ্যমে মানুষকে হিদায়াত দান করুন। এতে (الْهِدَايَةِ) শব্দটি যে (مُتَعَدَّي) সে অর্থের তাগিদ রয়েছে। জেনে রাখ! (الْهِدَايَةِ) শব্দটি শুধু পথপ্রদর্শন অর্থে অথবা এমন নির্দেশনা অর্থে ব্যবহার হয় যা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছিয়ে দেয়।
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল আল বুখারী (রহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেন, (فَهَدَيْنَاهُمْ) অর্থ –( دَلَلْنَاهُمْ عَلَى الْخَيْرِ وَالشَّرِّ) অর্থাৎ কল্যাণ এবং অকল্যাণের পথ দেখালাম। যেমন- আল্লাহ তা'আলার বাণী: (وَ هَدَیۡنٰهُ النَّجۡدَیۡنِ) “আর আমি তাকে (পাপ ও পুণ্যের) দুটো পথ দেখিয়েছি”- (সূরা আল বালাদ ৯০: ১০)।
আর (الْهَدْي) (পথপ্রদর্শন) অর্থে ব্যবহার হয় তা (إِرْشَادِ) (সৌভাগ্যবান করা) অর্থে ব্যবহার হয়েছে। সে অর্থে মহান আল্লাহর বাণী: (اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ هَدَی اللّٰهُ فَبِهُدٰىهُمُ اقۡتَدِهۡ) “ওরা হলো তারা যাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত দান করেছিলেন, তুমি তাদের পথ অনুসরণ কর...”- (সূরাহ্ আল আ'আম ৬: ৯০)।
আরো কেউ বলেন, (الْهِدَايَةِ) শব্দের আভিধানিক অর্থ (الدَّلَالَةُ) (পথ প্রদর্শন)। যখন কাউকে পথ দেখানো হয় তখন বলা হয় (هَدَاهُ فِي الدِّينِ يَهْدِ يهِ هِدَايَةً) الْإرْشَادِ এর আসল অর্থে ব্যবহারের জন্য (الْهَدْي) -কে উল্লেখ করা হয়। সে কারণ হ্যাঁ-বোধক ও না-বোধক উভয় জায়িয। আল্লাহ তা'আলা বলেন, (اِنَّکَ لَا تَهۡدِیۡ مَنۡ اَحۡبَبۡتَ) “তুমি যাকে ভালোবাস তাকে সৎপথ দেখাতে পারবে না...”- (সূরাহ আল কাসাস ২৮: ৫৬)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, (وَ اِنَّکَ لَتَهۡدِیۡۤ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ)“...তুমি নিশ্চিতই (মানুষদেরকে) সঠিক পথের দিকে নির্দেশ করছ”- (সূরা আশ শূরা- ৪২: ৫২)।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যদি রাসূল (সা.) -এর বাণী: (هَادِيًا)-কে প্রথম অর্থে ধরা হয়, তাহলে (مَهْدِيَّا) তার পূর্ণাঙ্গতা হিসেবে ধরতে হবে। কারণ তিনি পথপ্রদর্শক হতে পারেন, কিন্তু সুপথপ্রাপ্ত করতে পারেন না। আর (وَاهْدِ بِهِ)-কে তার পূর্ণতা হিসেবে গণ্য হবে। যেহেতু যার পথপ্রদর্শনে সফলতা পাওয়া যায় তাকে প্রত্যেকে অনুসরণ করে পূর্ণাঙ্গতাকে সুসম্পন্ন করে। তবে যখন দ্বিতীয় অর্থে ধরা হয়, তখন (مَهْدِيَّا) -কে তাগিদ হিসেবে ধরা হবে। আর (اهْدِبِهِ) হবে তার পরিপূর্ণতাস্বরূপ, অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গতায় পরিপূর্ণ। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, রাসূল (সা.) -এর দু'আ কবুলযোগ্য। অবস্থা যখন এই তখন তার ব্যাপারে কিভাবে সন্দেহ পোষণ করা যায়? আর যে ব্যক্তি (الْهِدَايَةِ) -এর আরো অর্থ বের করতে চাইবে তার জন্য অদৃশ্য খুলে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেখানে তার জন্য যথেষ্ট কিছু রয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৪৫-[৫০] ’উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করেছে। অপরদিকে ’আমর ইবনুল আস ঈমান এনেছে। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, এ হাদীসটি গরীব উপরন্তু তার সনদটিও সুদৃঢ় নয়]
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَسْلَمَ النَّاسُ وآمن عَمْرو بنُ الْعَاصِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وقا ل: هَذَا حَدِيث غَرِيب وَلَيْسَ إِسْنَاده بِالْقَوِيّ
اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (3844) و للحدیث شاھد ۔
(حسن لشاهده)
ব্যাখ্যা: (أَسْلَمَ النَّاسُ) এতে মক্কাবাসীদের নিকট থেকে মুসলিমদের বিজয়ের সময় ও প্রথাগত রীতির পরিচয় ফুটে উঠেছে। আর ইবনুল আস (রাঃ)- মক্কা বিজয়ের এক বছর অথবা দুই বছর পূর্বে স্বেচ্ছায় মদীনায় হিজরত করে অনুপ্রাণিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর বাণী দ্বারা এ কথা জানাতে চেয়েছেন যে, মক্কাবাসীরা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে বাধ্য হয়ে ভয়ে ইসলাম কবুল করেছে। আর ‘আমর (রাঃ) আগ্রহ নিয়েই ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) ও অন্যরা বলেন, এর কারণ ইসলামে এ সম্ভাবনা আছে যে, তাকে অপছন্দবশত উত্তপ্ত করে তুলবে। তবে ঈমানের ব্যাপারটা স্বেচ্ছায় ও উৎসাহ ছাড়া হতে পারে না। ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আগ্রহের সাথে ঈমান গ্রহণকে ‘আমর (রাঃ)-এর সাথে বিশেষভাবে বলার কারণ হলো যখন নাজাশী হাবাশায় নবী (সা.)-এর নুবুওয়্যাতকে স্বীকার করেছিলেন তখন ঈমান ‘আমর (রাঃ)-এর হৃদয়ে জায়গা গ্রহণ করে। অতঃপর কারো ডাক ছাড়াই তিনি বিশ্বাস করে রসূলের উদ্দেশে গমন করেন। আর তৎক্ষণাৎ মদীনায় তাড়াতাড়ি পৌছে ঈমান আনেন। রাসূল (সা.) তাঁকে একদল সাহাবীর আমীর নিযুক্ত করেন। এসব সাহাবীদের মধ্যে আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) ও উমার ফারূক (রাঃ) অন্যতম।
এটা এজন্য করেছিলেন যে, ‘আমর (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের পূর্বে নবীর প্রতি শত্রুতা পোষণ ও সাহাবীদের বিনাশ সাধনে চরমে পৌছে ছিলেন। যখন তিনি ঈমান আনলেন তখন নবী (সা.) তাঁর অন্তর থেকে পূর্ববর্তী বশ্যতা দূর করার ইচ্ছা পোষণ করলেন। যাতে সে এসব দিক থেকে নিরাপদ থাকে এবং আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ না হয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩৮৫৬)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৪৬-[৫১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনি (সা.) বললেন, হে জাবির! কি ব্যাপার? তোমাকে আমি চিন্তাযুক্ত দেখছি? আমি বললাম, আমার পিতা শহীদ হয়েছেন এবং রেখে গেছেন পরিবার-পরিজন ও ঋণ। তখন তিনি (সা.) বললেন, আমি কি তোমাকে এ সুসংবাদ দেব না যে, আল্লাহ তা’আলা তোমার পিতার সাথে কি আচরণ করেছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, আল্লাহ তা’আলা এ অবধি যার সাথেই কথাবার্তা বলেছেন, তা পর্দার আড়াল হতে বলেছেন, কিন্তু তিনি তোমার পিতাকে জীবিত করেছেন এবং আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, হে আমার বান্দা! তোমার মনে যা ইচ্ছা আমার কাছে চাও, আমি তোমাকে তা প্রদান করব। তোমার পিতা বললেন, হে প্রভু! আমাকে জীবিত করে দিন, যাতে আমি দ্বিতীয়বার আপনার পথে শহীদ হই। আল্লাহ তাবারাক ওয়া তা’আলা বললেন, আমার এ বিধান পূর্বেই সাব্যস্ত রয়েছে যে, একবার মৃত্যুর পর কোন লোক আবার দুনিয়াতে ফিরে আসবে না। অতঃপর কুরআনের এ আয়াত অবতীর্ণ হয়- “যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছে, তোমরা তাঁদেরকে মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত।” (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: لَقِيَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «يَا جَابِرُ مَا لي أَرَاك منكسراً» قلت يَا رَسُول الله اسْتشْهد أبي قتل يَوْم أحد وَتَرَكَ عِيَالًا وَدَيْنًا قَالَ أَفَلَا أُبَشِّرُكَ بِمَا لَقِي الله بِهِ أَبَاك قَالَ قُلْتُ بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَا كَلَّمَ اللَّهُ أَحَدًا قَطُّ إِلَّا مِنْ وَرَاءِ حجاب وَأَحْيَا أَبَاك فَكَلمهُ كفاحا فَقَالَ يَا عَبْدِي تَمَنَّ عَلَيَّ أُعْطِكَ قَالَ يَا رَبِّ تُحْيِينِي فَأُقْتَلُ فِيكَ ثَانِيَةً قَالَ الرَّبُّ عز وَجل إِنَّه قد سبق مني أَنهم إِلَيْهَا لَا يرجعُونَ قَالَ وأنزلت هَذِهِ الْآيَةِ [وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا] الْآيَة. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (3010) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (كفاحا) ‘কাফ বর্ণে যেরসহ। অর্থাৎ সামনাসামনি, উভয়ের মাঝে কোন পর্দা বা কোন দূত ছাড়াই। (تَمَنَّ عَلَيَّ أُعْطِكَ) বাহ্যিক দিক থেকে (مفعول) (কর্ম) টি (عام) হরফ করাতে বা প্রসঙ্গ উহ্য করা। অতএব এখানে এ জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে যে, প্রতিশ্রুতির ব্যাপকতা জীবিতকরণকে শামিল করে। আর তিনি তো ওয়াদার ব্যতিক্রম করেন না। তাই তাকে যে জীবিত করবেন না- এটা কিভাবে হতে পারে? এ জটিলতার সমাধান এভাবে সম্ভব যে, স্বাভাবিক প্রতিশ্রুতির বিরোধিতা ব্যাপকতার বাইরের বিষয়। কারণ স্বভাবত রীতিই হলো বৈশিষ্ট্যতার একটি পদ্ধতি। যেমনটি নীতি নির্ধারকগণ বলে থাকেন।
(تُحْيِينِي) এর মাধ্যমে চূড়ান্ত আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া প্রসঙ্গ দাবী করে এখানে (احينى) হোক। অর্থাৎ পৃথিবীতে আবার আমাকে জীবিত করুন। পক্ষান্তরে শহীদরা তো জীবিতদের মতো কথা বলে। তাহলে কিভাবে তারা পুনঃজীবিত হতে চাইবে? এটা তো পুনরুক্তি মাত্র। (হাশিয়ায়ে সিনদী, ইবনু মাজাহ, “জামিউল কুতুবুত তিস্'আহ্” এ্যাপ, হা. ১৯০)
(لايرجعون) তারা দুনিয়ায় এভাবে পুনরায় প্রত্যাবর্তিত হবে না যে, সেখানে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকবে ও আল্লাহর ইবাদাত বন্দেগী উত্তমরূপে সম্পাদন করবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৪৭-[৫২] উক্ত রাবী [জাবির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার জন্য পঁচিশবার ক্ষমা প্রার্থনার দু’আ করেছেন। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
وَعنهُ قا ل: اسْتَغْفَرَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خمْسا وَعشْرين مرّة. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3852 وقال : حسن غریب صحیح) * فیہ ابو الزبیر مدلس و عنعن و اخرج مسلم (ح 715 بعد ح 1599) من حدیث ابی الزبیر بغیر ھذا اللفظ وھو الصحیح المحفوظ ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (اسْتَغْفَرَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خمْسا وَعشْرين مرّة) সম্ভবত এ ক্ষমা প্রার্থনা এক মাজলিসে অথবা একাধিক মাজলিসে হতে পারে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কোন এক সফরে রাসূল (সা.) -এর সাথে ছিলেন। এক রাতে রাসূল (সা.) তাকে বললেন, তোমার পানি বহনকারী উটটি বিক্রি করো। উটটি পানি বহনের কাজে যুক্ত থাকায় দুর্বল হয়ে পড়েছিল। অতঃপর রাসূল (সা.) তার গায়ে আঘাত করলে তা অভূতপূর্ব দ্রুতগামী হয়ে গেল। রাসূল (সা.) তার কাছে উটটি কিনতে চাইলে, তিনি রসূলের নিকট এ শর্তে বিক্রি করলেন যে, তাকে মদীনায় পৌছে দিতে হবে। আবূন নাযর (রাঃ)-এর সূত্রে ইবনু মাজাহতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) বলেন: তুমি কি তোমার পানি বহনকারী উটটি বিক্রি করবে? আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন। মুসনাদে আহমাদ-এর বর্ণনায় সুলায়মান বলেন, আমি জানি না যে, তিনি (সা.) তাকে কতবার (والله يغفرلك) বলেছিলেন।
নাসায়ী’র বর্ণনায় রয়েছে, জাবির (রাঃ) বলেন, উট বিক্রির রাত্রিতে রাসূল (সা.) আমার জন্য পঁচিশবার ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। জাবির (রাঃ)-এর উপনাম আবূ আবদুল্লাহ। তিনি সালিম গোত্রের আনসারী ব্যক্তি ছিলেন। তাকে অধিক হাদীস বর্ণনাকারীদের মধ্যে গণ্য করা হয়। বদর যুদ্ধসহ পরবর্তী সকল যুদ্ধে রসূলের সাথে তিনি অংশগ্রহণ করেন। তাঁর যুদ্ধ সংখ্যা ১৮টি, তাঁর পিতা বদরযুদ্ধে নিহত হন এবং একাধিক মেয়ে রেখে যান, যাদের দেখা-শোনা ও ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তিনি নিজে বহন করতেন। এ কারণে রাসূলুল্লাহ (সা.) তার প্রতি সদয় হন ও অনুগ্রহ করেন। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা, ৩৮৬৪, মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩২৬)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৪৮-[৫৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: অনেক লোক এমনও আছে, যার মাথার কেশ এলোমেলো, ধুলাবালি জড়িত, দু’খানা পুরাতন কাপড় পরিহিত, যার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয় না, যদি সে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে কোন বিষয়ে শপথ করে, আল্লাহ তা’আলা তার শপথ পূরণ করেন। এ সকল লোকের মধ্য হতে বারা ইবনু মালিক হলেন অন্যতম। (তিরমিযী ও বায়হাক্বীর “দালায়িলুন নুবুওয়্যাহ্")
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَمْ مِنْ أَشْعَثَ أَغْبَرَ ذِي طِمْرَيْنِ لَا يَؤُبَّهُ لَهُ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللَّهِ لَأَبَرَّهُ مِنْهُمُ الْبَرَاءُ بْنُ مَالِكٍ» رواء التِّرْمِذِيّ وَالْبَيْهَقِيّ فِي دَلَائِل النُّبُوَّة
اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (3854 وقال : حسن غریب) و البیھقی فی دلائل النبوۃ (6 / 368) [و صححہ الحاکم (3 / 292) و وافقہ الذھبی)] ۔
(حسن)
ব্যাখ্যা: (لَوْ أَقْسَمَ) অর্থাৎ কসম করে যে, আল্লাহ এটা করব। তখন আল্লাহ তাকে কসমে সত্যবাদী করে দেন। আর তার কাজ করার ব্যবস্থা করেন। অথবা সে নিজের কোন কাজে কসম করে বলে যে, এরূপ কিছু করবে। তখন আল্লাহ তা'আলা তার কাজের উপরে প্রস্তুত করে দেন এবং তাকে সে কাজ সম্পাদন করার তাওফীক দান করেন। আমাদের সরদার বারা ইবনু মালিক উভয়ে এক মাতা ও পিতার সন্তান ছিলেন। ছিলেন বিশিষ্ট সাহাবীদের অন্যতম। উহুদের যুদ্ধে বীরত্বের সাথে মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে আবির্ভূত হন। উহুদ যুদ্ধের পর সমস্ত যুদ্ধে শরীক ছিলেন। তিনি অত্যন্ত শক্তিশালী ও সাহসী ছিলেন। মুশরিকদের সাথে মোকাবিলা করার সময় তারা একযোগে তাকে মারলে তিনি অন্য কারো সাথে শরীক হওয়া ছাড়াই তাদের মারের সঠিক জবাব দেন। ইয়ামামার যুদ্ধে তার তুমুল যুদ্ধের চিত্র ফুটে উঠে। তিনি শাহাদাত বরণ করেন হিজরী বিশ সালে। (মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৮০)
কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: তিনি কঠিন সাহসীদের অন্যতম ছিলেন। কারো সাথে যুক্ত না হয়েও একশত দ্বন্দ্ব যোদ্ধাকে হত্যা করেছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৪৯-[৫৪] আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: সাবধান! আমার বিশেষ আস্থাভাজন, যাঁদের ওপর আমি নির্ভর করে থাকি, তাঁরা হলেন আমার আহলে বায়ত। আর আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হলেন আনসারগণ। অতএব তাঁদের অন্যায়কে তোমরা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে এবং তাঁদের ভালো কাজকে সাদরে গ্রহণ করবে। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, হাদীসটি হাসান]
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلَا إِنَّ عَيْبَتِيَ الَّتِي آوِي إِلَيْهَا أَهْلُ بَيْتِي وَإِنَّ كَرِشِيَ الأنصارُ فاعفوا عَن مسيئهم واقبلوا من مُحْسِنِهِمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3904) * فیہ عطیۃ العوفی : ضعیف مشھور مع التدلیس القبیح ۔
(ضَعِيف)