পরিচ্ছেদঃ ৩৮. ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ)-এর মর্যাদা
৩৮১১। খাঈসামাহ্ ইবনু আবূ সাবরাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি মদীনায় এসে আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করলাম যে, তিনি যেন আমাকে একজন সৎকর্মপরায়ণ সঙ্গী জুটিয়ে দেন। অতএব তিনি আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ)-কে আমার ভাগ্যে জুটিয়ে দিলেন। তার পাশে বসে আমি তাকে বললাম, আমি আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করেছিলাম যে, তিনি যেন আমাকে একজন সৎকসর্মপরায়ণ সঙ্গী মিলিয়ে দেন। অতএব আপনি আমার জন্য সহজলভ্য হয়েছেন। তিনি (আমাকে) প্রশ্ন করেন, তুমি এসেছ কোথা হতে? আমি বললাম, আমি কুফার অধিবাসী। আমি মঙ্গলের সন্ধানে এসেছি এবং তাই খোজ করছি।
তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কি সাদ ইবনু মালিক (রাযিঃ), যার দুআ কবুল হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উযূর পানি ও জুতা বহনকারী ইবনু মাসউদ (রাযিঃ), রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গোপন তথ্যের খাজাঞ্চী হুযাইফাহ্ (রাযিঃ), আম্মার (রাযিঃ) যাকে আল্লাহ তার নবীর ভাষায় শাইতানের আক্রমণ হতে নিরাপত্তা দান করেছেন এবং দুই কিতাবধারী সালমান (রাযিঃ) প্রমুখ সাহাবীগণ বিদ্যমান নেই? কাতাদাহ (রাহঃ) বলেন, দুই কিতাব হল ইনজীল ও কুরআন।
সহীহঃ বুখারী (৩৭৪২, ৩৭৪৩) হুযাইফাহ হতে, এ হাদীসদ্বয়ে সালমানের উল্লেখ নেই।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। খাঈসামাহ হলেন আবদুর রহমান ইবনু আবী সাবরার পুত্র। তাকে তার দাদার সঙ্গে সম্পর্কিত করা হয়েছে।
حَدَّثَنَا الْجَرَّاحُ بْنُ مَخْلَدٍ الْبَصْرِيُّ، حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ هِشَامٍ، حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ خَيْثَمَةَ بْنِ أَبِي سَبْرَةَ، قَالَ أَتَيْتُ الْمَدِينَةَ فَسَأَلْتُ اللَّهَ أَنْ يُيَسِّرَ لِي جَلِيسًا صَالِحًا فَيَسَّرَ لِي أَبَا هُرَيْرَةَ فَجَلَسْتُ إِلَيْهِ فَقُلْتُ لَهُ إِنِّي سَأَلْتُ اللَّهَ أَنْ يُيَسِّرَ لِي جَلِيسًا صَالِحًا فَوُفِّقْتَ لِي . فَقَالَ لِي مِنْ أَيْنَ أَنْتَ قُلْتُ مِنْ أَهْلِ الْكُوفَةِ جِئْتُ أَلْتَمِسُ الْخَيْرَ وَأَطْلُبُهُ . قَالَ أَلَيْسَ فِيكُمْ سَعْدُ بْنُ مَالِكٍ مُجَابُ الدَّعْوَةِ وَابْنُ مَسْعُودٍ صَاحِبُ طَهُورِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَنَعْلَيْهِ وَحُذَيْفَةُ صَاحِبُ سِرِّ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَعَمَّارٌ الَّذِي أَجَارَهُ اللَّهُ مِنَ الشَّيْطَانِ عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِ وَسَلْمَانُ صَاحِبُ الْكِتَابَيْنِ . قَالَ قَتَادَةُ وَالْكِتَابَانِ الإِنْجِيلُ وَالْفُرْقَانُ . قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ . وَخَيْثَمَةُ هُوَ ابْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي سَبْرَةَ إِنَّمَا نُسِبَ إِلَى جَدِّهِ .
Narrated Khaithamah bin Abi Sabrah:
"I came to Al-Madinah, so I asked Allah to make it easy for me to sit with one who is righteous. He made Abu Hurairah accessible to me, so I sat with him and said to him: 'Indeed, I asked Allah to make it easy for me to sit with who is righteous, and it is to you that I was guided.' So he said to me: 'From where are you?' I said: 'From the people of Al-Kufah, I came to search out good and to seek it.' So he said: 'Is there not among you Sa'd bin Malik whose supplication is answered, Ibn Mas'ud, the one who used to carry the water for purification and the sandals of the Messenger of Allah (ﷺ), and Hudhaifah, the keeper of the secrets of the Messenger of Allah (ﷺ), and 'Ammar whom Allah has guarded from Shaitan upon the tongue of His Prophet, and Salman the companion of the Two Books?'"
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২৩২-[৩৭] খায়সামাহ্ ইবনু আবূ সাবরাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি মদীনায় এসে আল্লাহর কাছে এই বলে দু’আ করলাম, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে একজন সৎ সাথি জুটিয়ে দাও। এরপর আল্লাহ তা’আলা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে আমার ভাগ্যে জুটিয়ে দিয়েছেন। আমি তার কাছে বসলাম। অতঃপর আমি বললাম, আমি আল্লাহর কাছে একজন সৎ সাথি জুটিয়ে দেয়ার জন্য দু’আ করছিলাম। ফলে তিনি আপনাকেই আমার ভাগ্যে জুটিয়ে দিয়েছেন। তখন তিনি [আবূ হুরায়রাহ (রাঃ)] আমাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কোথাকার লোক? বললাম, আমি কূফার অধিবাসী। আমি কল্যাণের আকাক্ষী। অতএব তার অন্বেষণে কূফা হতে এসেছি। তখন (আমার কথার জবাবে) আবূ হুরায়রাহ্ বললেন, তোমাদের মধ্যে কি নেই সা’দ ইবনু মালিক- যার দু’আ আল্লাহ তা’আলার কাছে গ্রহণযোগ্য। আর ইবনু মাস’উদ, যিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উযূর পানি-পাত্র ও জুতা বহনকারী। আর হুযায়ফাহ, যিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর গোপন তথ্যের অভিজ্ঞ। আর ’আম্মার (ইবনু ইয়াসির) যাঁকে নবী (সা.)-এর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা শয়তান হতে আশ্রয় দিয়েছেন। আর সালমান (ফারিসী), যিনি উভয় কিতাব অর্থাৎ ইঞ্জীল ও কুরআনের উপর ঈমান আনয়নকারী। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْ خَيْثَمَةَ بْنِ أَبِي سَبْرَةَ قَالَ: أَتَيْتُ الْمَدِينَةَ فَسَأَلْتُ اللَّهَ أَنْ يُيَسِّرَ لِي جَلِيسًا صَالِحًا فَيَسَّرَ لِي أَبَا هُرَيْرَةَ فَجَلَسْتُ إِلَيْهِ فَقُلْتُ: إِنِّي سَأَلْتُ اللَّهَ أَنْ يُيَسِّرَ لِي جَلِيسًا صَالِحًا فَوُفِّقْتَ لِي فَقَالَ: مِنْ أَيْنَ أَنْتَ؟ قُلْتُ: مِنْ أَهْلِ الْكُوفَةِ جِئْتُ أَلْتَمِسُ الْخَيْرَ وَأَطْلُبُهُ. فَقَالَ: أَلَيْسَ فِيكُمْ سَعْدُ بْنُ مَالِكٍ مُجَابُ الدَّعْوَةِ؟ وَابْنُ مَسْعُودٍ صَاحِبُ طَهُورِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَعْلَيْهِ؟ وَحُذَيْفَةُ صَاحِبُ سِرِّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ وَعَمَّارٌ الَّذِي أَجَارَهُ اللَّهُ مِنَ الشَّيْطَانِ عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ وَسَلْمَانُ صَاحِبُ الْكِتَابَيْنِ؟ يَعْنِي الْإِنْجِيلَ وَالْقُرْآنَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
سندہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3811) * قتادۃ مدلس و عنعن و للحدیث شواھد معنویۃ
ব্যাখ্যা: (جَلِيسًا صَالِحًا) এমন বৈঠক যা বসার জন্য উপযুক্ত এবং তা থেকে উপকৃত হওয়া যায়।
(أَلْتَمِسُ الْخَيْرَ) অর্থাৎ আমলের সাথে সম্পৃক্ত ইলম। আমলযুক্ত ‘ইলম থেকে উদ্দেশ্য প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা। যে সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
(یُّؤۡتِی الۡحِکۡمَۃَ مَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ مَنۡ یُّؤۡتَ الۡحِکۡمَۃَ فَقَدۡ اُوۡتِیَ خَیۡرًا کَثِیۡرًا ؕ) “যাকে ইচ্ছে তিনি হিকমাত দান করেন এবং যে ব্যক্তি এ জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়, নিঃসন্দেহে সে মহাসম্পদ প্রাপ্ত হয়..."- (সূরাহ আল বাক্বারাহ ২: ২৬৯)।
কখনো বলা হয়, এ হিকমাতের চাইতে অধিক কল্যাণকর কিছুই নেই। অথবা বলা হয়, এছাড়া কোন কল্যাণ নেই।
(صَاحِبُ طَهُورِ) অর্থাৎ যার মাধ্যমে পবিত্রতা লাভ করা যায়। কারণ তিনি নবী (সা.)-কে এবং তাঁর জুতাদ্বয়কে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা করতেন। অনুরূপভাবে তিনি তাঁর বালিশ ইত্যাদির সাথি ছিলেন। যাতে প্রমাণিত হয় তাঁর পূর্ণ খিদমাতের ও একেবারে কাছের ব্যক্তির। হুযায়ফাহ্ (রাঃ) ছিলেন রাসূল (সা.)-এর রহস্যবিদ। কারণ রাসূল (সা.) তাকে স্বীয় ওফাতের পর উম্মতের মাঝে ঘটিতব্য বিষয়সমূহ ও মুনাফিকদের বিভিন্ন অবস্থা সম্পর্কে অবগত করেছিলেন। আর তিনি সেগুলোকে তার ও রাসূল (সা.) -এর মাঝে গোপন রাখতেন।
(عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِ) ইবনু তীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বাণী:
(وَيْحَ عَمَّارٍيَدْعُوهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ وَيَدْعُونَهُ إِلَى النَّارِ) ‘আম্মার (রাঃ)-এর বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, তিনি তাদেরকে আহ্বান করছেন জান্নাতের পথে আর তারা তাঁকে ডাকে জাহান্নামের পথে।
হাফিয (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ ব্যাখ্যা সম্ভাবনার বাইরে নয়। হয়তো এ থেকে উদ্দেশ্য ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর মারফু হাদীসটিও হতে পারে। যেমন নবী (সা.) বলেন, (مَاخُيِّرَعَمَّارٌبَيْنَ أَمْرَيْنِ إِلَّا اخْتَارَأَرْشَدَهُمَا) ‘আম্মার (রাঃ) দুটি বিষয়ের মধ্যে অধিক সঠিকটাকে বেছে নিতেন। মুসনাদে আহমাদে ইবনু মাস'উদ (রাঃ)-এর হাদীসে রয়েছে, ‘আম্মার (রাঃ) -এর দুটি বিষয়ের মধ্যে উত্তমটাকে বেছে নেয়ার প্রবণতা থাকা দাবী করে যে, তাকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করা হয়েছে। ইবনু সা'দ-এর “তবাকাত”-এ হাসান সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আম্মার (রাঃ) বলেন, আমরা এক জায়গায় উপনীত হলাম এবং পানি পানের জন্য মশক ও বালতি নিয়ে গেলাম। নবী (সা.) বললেন, শীঘ্রই তোমাকে একজন লোক পানি থেকে বাধা প্রদান করবে।
অতঃপর যখন আমি পানির নিকটে চলে এসেছি হঠাৎ একজন কালো লোক এসে পড়ল, যেন সে একজন শাবক। আমি তাকে আছাড় দিলাম। অতঃপর তিনি হাদীসটি বর্ণনা করলেন। এ হাদীসে রয়েছে, (ذَاكَ الشَّيْطَانُ) “ওটা শয়তান”। হয়তো ইবনু মাস্'উদ (রাঃ) এ ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। আবার রক্ষা করার দ্বারা ইঙ্গিত তার ঈমানের উপর অবিচল থাকার প্রতি হতে পারে। যখন তাকে মুশরিকরা কুফরী কথা বলার জন্য বাধ্য করেছিল। এ প্রসঙ্গেই নাযিল হয়, (...اِلَّا مَنۡ اُکۡرِهَ وَ قَلۡبُهٗ مُطۡمَئِنٌّۢ بِالۡاِیۡمَانِ..) “...কুফরীর জন্য স্বীয় হৃদয় খুলে দিলে তার ওপর আল্লাহর গযব পতিত হবে...”- (সূরা আন নাহল ১৬ : ১০৬)। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা, ৩৮১১)
(صَاحِبُ الْكِتَابَيْنِ) অর্থাৎ, ইঞ্জীল ও কুরআনের ধারক বা এটা এভাবে যে, তারা কুরআন নাযিল হওয়ার পূর্বে ইঞ্জীল পড়েছে ও তার উপর ঈমান এনেছে এবং সে মতো ‘আমল করেছে। অতঃপর কুরআনের উপর ঈমান এনেছে রসূলের বরকতপূর্ণ খিদমাতে হাযির হয়ে। সালমান ফারসী (রাঃ) -এর বয়স ছিল ৮৬ বছর। তাঁর উপাধি ছিল সালমান আল খায়র। (মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৭৪)
তিনি স্বহস্তে খেজুর পাতার কাজ করে জীবিকা উপার্জন করে খেতেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)