পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬১৯৬-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমার হাতে যেন এক টুকরা রেশমি কাপড়। আমি জান্নাতের মাঝে যে কোথাও যেতে ইচ্ছা করি, তখনই ঐ কাপড় খণ্ডটি আমাকে সেখানে উড়িয়ে নিয়ে যায়। অতঃপর আমি এই স্বপ্নের কথা হাফসার কাছে বললাম, তখন হাফসাহ (রাঃ) তা নবী (সা.) -এর কাছে বললে তিনি উত্তরে বললেন, তোমার ভাই অথবা বলেছেন, ’আবদুল্লাহ একজন সৎ লোক। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

عَن عبد الله بن عمر قَالَ: رَأَيْتُ فِي الْمَنَامِ كَأَنَّ فِي يَدِي سراقَة مِنْ حَرِيرٍ لَا أَهْوِي بِهَا إِلَى مَكَانٍ فِي الْجَنَّةِ إِلَّا طَارَتْ بِي إِلَيْهِ فَقَصَصْتُهَا عَلَى حَفْصَةَ فَقَصَّتْهَا حَفْصَةُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «إِنَّ أَخَاكِ رَجُلٌ صَالِحٌ - أَوْ إِنَّ عَبْدَ اللَّهِ رَجُلٌ صَالح -» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (7015) و مسلم (139 / 2478)، (6369) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

عن عبد الله بن عمر قال: رايت في المنام كان في يدي سراقة من حرير لا اهوي بها الى مكان في الجنة الا طارت بي اليه فقصصتها على حفصة فقصتها حفصة على رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: «ان اخاك رجل صالح - او ان عبد الله رجل صالح -» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (7015) و مسلم (139 / 2478)، (6369) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-এর বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) সম্পর্কে বলেন যে, তিনি ছোট অবস্থায় তার পিতার সাথে মক্কাতেই ইসলাম গ্রহণ করেন। খন্দক যুদ্ধের পর থেকে সব যুদ্ধেই তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি একজন আল্লাহভীরু, জ্ঞানী, দুনিয়াত্যাগী এবং অনেক সতর্কবান লোক ছিলেন।
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ তাঁর সম্পর্কে বলেন, আমাদের প্রত্যেকেরই দুনিয়ার প্রতি কিছু না কিছু ঝোঁক ছিল কিন্তু ‘উমার এবং তার ছেলে আবদুল্লাহ ব্যতীত। তাদের দুনিয়ার প্রতি কোন ঝোঁক ছিল না।
নাফি (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইবনু উমার (রাঃ) মৃত্যুবরণ করতে না করতেই এক হাজারের বেশি মানুষকে আযাদ করে দেন। তাঁর জন্ম হয়েছিল রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ওয়াহী আসার এক বছর পূর্বে। আর তার মৃত্যু হয়েছে ৭৩ হিজরীতে ইবনু যুবায়রকে হত্যা করার ৩ মাস অথবা ৬ মাস পর।
তিনি ওয়াসিয়্যাত করেছিলেন যেন তাকে হিল্লা এলাকায় দাফন করা হয়। কিন্তু হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফএর কারণে তা সম্ভব হয়নি। তাই তাকে যে তুয়ায় মুহাজিরদের কবরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তার থেকে অনেক মানুষ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
(لَا أَهْوِي بِهَا إِلَى مَكَانٍ فِي الْجَنَّةِ إِلَّا طَارَتْ بِي إِلَيْهِ) অর্থাৎ জান্নাতের যে স্থানেই আমি যেতে ইচ্ছা করি সেখানে তা আমাকে জড়িয়ে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, যেন সেই রেশমের টুকরাটি তার জন্য পাখির ডানার মতো হয়েছিল।
মাসাবীহের ব্যাখ্যাকারী বলেন, তাঁর স্বপ্নটি এভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, তাঁর হাতের রেশমের টুকরাটি হলো তার সৎ ‘আমল। আর সেই টুকরাটির সাদা হওয়া প্রমাণ করে যে, তিনি তাঁর প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে মুক্ত।
এছাড়াও মাসাবীহ গ্রন্থে হাদীসটি এভাবে আছে যে, (سَرَقَةً مِنْ حَرِ يرٍ بَيْضَاءَ) অর্থাৎ সাদা রেশমের টুকরা এখান থেকেও স্বপ্নের ব্যাখ্যাটি নেয়া যেতে পারে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬১৯৭-[২] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, গাম্ভীর্য, চালচলন এবং পথ চলার ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে অধিকতর সদৃশ ছিলেন ইবনু উম্মু আবদ গৃহ হতে বের হওয়ার পর আবার গৃহে প্রত্যাবর্তন করা অবধি। তবে যখন তিনি গৃহের অভ্যন্তরে একাকী থাকতেন, তখন কি অবস্থায় থাকতেন, তা আমাদের জানা নেই। (বুখারী)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

وَعَن حذيفةَ قَالَ: إِنَّ أَشْبَهَ النَّاسِ دَلًّا وَسَمْتًا وَهَدْيًا بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَابْنُ أم عبدٍ مِنْ حِينِ يَخْرُجُ مِنْ بَيْتِهِ إِلَى أَنْ يرجع إِلَيْهِ لَا تَدْرِي مَا يصنع أَهله إِذا خلا. رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (6097) ۔
(صَحِيح)

وعن حذيفة قال: ان اشبه الناس دلا وسمتا وهديا برسول الله صلى الله عليه وسلم لابن ام عبد من حين يخرج من بيته الى ان يرجع اليه لا تدري ما يصنع اهله اذا خلا. رواه البخاري رواہ البخاری (6097) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসের উল্লেখিত কিছু শব্দের ব্যাখ্যা (دَلَّا) এ শব্দ দ্বারা বুঝানো হয়েছে, কথাবার্তা ও চালচলনের ক্ষেত্রে উত্তমতা অবলম্বন করা।
(سَمْتًا) এ শব্দ দ্বারা বুঝানো হয়েছে, দীনের বিষয়গুলো সুন্দরভাবে পালন করা। আবার কখনো এই শব্দটি বিভিন্ন বিষয়ে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করাকেও বুঝায়।
(هَدْيًا) এ শব্দটি বুঝায় দীনের ক্ষেত্রে এবং কোন কল্যাণের বিষয়ে গাম্ভীর্যতা ও প্রশান্তি অবলম্বন করা।  উক্ত হাদীসে (ابْنُ أم عبدٍ) দ্বারা আবদুল্লাহ ইবনু মাস্'উদ (রাঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। উক্ত হাদীসে ইবনু মাস্'উদ (রাঃ)-এর মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে হুযায়ফাহ্ (রাঃ) কর্তৃক তার ব্যাপারে এই সাক্ষ্য দেয়ার মাধ্যমে যে, উল্লেখিত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে সবচেয়ে বেশি তিনি সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন।
আবূ উবায়দ গরীবুল হাদীসে বর্ণনা করে যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্'উদ (রাঃ)-এর ছাত্ররা তার চালচলন, গাম্ভীর্যতার সাথেও সাদৃশ্য রাখত, হুযায়ফাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস যেন তাদেরকে এই বিষয়ে উৎসাহিত করত। ইমাম বুখারী (রহিমাহুল্লাহ) আদাবুল মুফরাদে যায়দ ইবনু ওয়াহব-এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাউদ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, তোমরা যেন শেষ যামানায় উত্তম চাল-চলন কর্তৃক ‘আমল থেকে উত্তম রাখ। এসব হাদীসের মাধ্যমেও ইবনু মাস্'উদ (রাঃ)-এর মর্যাদা প্রকাশ পায়।
অন্য হাদীসে বলা হয়েছে যে, ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন। আর ‘উমার-এর সাথে সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন তার ছেলে আবদুল্লাহ ইবনু উমার। বাহ্যিকভাবে এখানে উভয় হাদীসের মধ্যে সংঘর্ষ দেখা যাচ্ছে।
হাদীস দুটির মাঝে দাউদী সমন্বয় সাধন করেছেন এভাবে যে, ইবনু মাসউদ (রাঃ) চাল-চলনের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন। আর ‘উমার অন্য দীন মানার বিষয়ে দৃঢ় হওয়ার ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন। অথবা, এটিও হতে পারে যে, হুযায়ফাহ্ (রাঃ) ইবনু মা'উদ (রাঃ) সম্পর্কে এ কথা বলেছেন ‘উমার (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর। (ফাতহুল বারী ১০ম খণ্ড, ৫৭৪ পৃ., হা, ৬০৯৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬১৯৮-[৩] আবূ মূসা আল আশ’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ও আমার ভাই ইয়ামান হতে (মদীনায়) আগমন করে বেশ কিছুদিন বাস করলাম। আমরা এটাই মনে করতাম যে, ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) নবী (সা.) -এর পরিবারেই একজন সদস্য। কেননা আমরা তাঁকে এবং তাঁর মাতাকে নবী (সা.) - এর গৃহে যাতায়াত করতে প্রায়ই দেখতাম। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

وَعَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: قَدِمْتُ أَنَا وَأَخِي مِنَ الْيَمَنِ فَمَكَثْنَا حِينًا مَا نَرَى إِلَّا أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِمَا نُرَى مِنْ دُخُولِهِ وَدُخُولِ أُمِّهِ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3763) و مسلم (110 / 2460)، (6326) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي موسى الاشعري قال: قدمت انا واخي من اليمن فمكثنا حينا ما نرى الا ان عبد الله بن مسعود رجل من اهل بيت النبي صلى الله عليه وسلم لما نرى من دخوله ودخول امه على النبي صلى الله عليه وسلم. متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (3763) و مسلم (110 / 2460)، (6326) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা ইবনু মাস'উদ (রাঃ) সম্পর্কে বলেন, তার কুনিয়াত ছিল আবূ ‘আবদুর রহমান। তিনি নবুওয়াতের প্রাথমিক যুগে ‘উমার (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণ করার কিছু আগেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তখনও রাসূলুল্লাহ (সা.) দারুল আরকামে প্রবেশ করেননি।
কেউ কেউ বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে তিনি হলেন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার কাছে সফরে মিসওয়াক, জুতা ও উযূর পান রাখতেন। তিনি হাবশায় হিজরত করেছিলেন। তিনি বদরের যুদ্ধে এবং তার পরে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার ব্যাপারে জান্নাতের সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, আমি আমার উম্মতের প্রতি সেই বিষয়ে সন্তুষ্ট যে বিষয়ে ইবনু মাসউদ (ابْنُ أُمِّ عَبْدٍ) সন্তুষ্ট। আর আমি আমার উম্মতের জন্য সেই বিষয়ে অসন্তুষ্ট যেই বিষয়ে ইবনু মা'সঊদ (ابْنُ أُمِّ عَبْدٍ) অসন্তুষ্ট।
ইবনু মাঊদ (রাঃ) ছিলেন, ক্ষীণকায় এবং খাটো। তিনি কুফায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং “উমার (রাঃ)-এর খিলাফতকালে ও ‘উসমান (রাঃ)-এর খিলাফতকালের প্রথম দিকে বায়তুল মালের দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তিনি মদীনায় থাকতেন এবং সেখানেই ৩২ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৬০ বছরের কিছু বেশি। তাকে বাক্বী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আবূ বাকর, “উমার, উসমান ও ‘আলী (রাঃ)-সহ তাদের পরবর্তী অনেক সাহাবী এবং তাবি'ঈ তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, চার খলীফার পর সাহাবীদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বড় ফক্বীহ ছিলেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
তুহফাতুল আহওয়াযীতে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনু মাস্'উদ (রাঃ) ও তার মা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে বেশি বেশি যাতায়াত করাটা প্রমাণ করে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে তাদের অনেক ভালো একটা সম্পর্কে ছিল। যা তাদের জন্য মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের পরিচায়ক। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৯ম খণ্ড, ৩১১ পৃ., হা. ৩৮১৮)
শারহুন নাবাবী গ্রন্থে বলা হয়েছে, এ হাদীস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, “ইলম অন্বেষণের জন্য সফর করা এবং এক স্থান থেকে আরেক স্থানে গমন করা মুস্তাহাব। (শারহুন নাবাবী ১৬ খণ্ড, ১৪ পৃ., হা, ২৪৬০)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬১৯৯-[৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমরা চার লোকের কাছে কুরআন অধ্যয়ন কর- ১. আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ, ২. আবূ হুযায়ফাহ’র স্বাধীন দাস সালিম, ৩. উবাই ইবনু কা’ব ও ৪. মু’আয ইবনু জাবাল । (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: استقرؤوا الْقُرْآنَ مِنْ أَرْبَعَةٍ: مِنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ وَسَالِمٍ مَوْلَى أَبِي حُذَيْفَةَ وَأُبَيِّ بْنِ كَعْب ومعاذ بن جبل . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3706) و مسلم (117 / 2464)، (6335) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن عبد الله بن عمرو ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: استقرووا القران من اربعة: من عبد الله بن مسعود وسالم مولى ابي حذيفة وابي بن كعب ومعاذ بن جبل . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (3706) و مسلم (117 / 2464)، (6335) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন যে, ‘আলিমগণ বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এই চারজনের থেকে বিশেষভাবে কুরআন শিখতে বললেন, তার কারণ হলো চারজন বেশি স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন। আর যেভাবে কথা শুনতেন সেভাবই হুবহু শব্দ ঠিক রেখে অন্যের কাছে পৌছাতে পারতেন। যদিও কুরআনের অর্থ বুঝার ক্ষেত্রে অনেকেই তাদের থেকে অধিক পারদর্শী ছিলেন। কিন্তু কুরআন শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে তারা চারজনই ছিলেন বেশি দক্ষ।
আরেকটি কারণ হলো যে, তারা চারজন সর্বদা সরাসরি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মুখ থেকে শুনতেন। কিন্তু অন্যরা মাঝে মধ্যে একে অপরের থেকে শুনেও মুখস্থ করে নিতেন। এছাড়াও তারা নিজেদেরকে অবসর করে রাখতেন যেন অন্যরা তাদের থেকে কুরআন শিক্ষা করতে পারে। অথবা এটিও একটি কারণ হতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) জানিয়ে দিতে চেয়েছেন যে, তাঁর মৃত্যুর পর যেন কুরআন শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে এই চারজনকে আগে রাখা হয়। কারণ তারা অন্যদের তুলনায় ভালোভাবে কুরআন পড়তে পারে। (শারহুন নাবাবী ১৬শ খণ্ড, ১৮ পৃ., হা. ২৪৬২)

মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা সালিম সম্পর্কে বলেন যে, তিনি হলেন আবূ হুযায়ফাহ্ ইবনু 'উতবাহ্ ইবনু রবী'আহ্-এর আযাদকৃত দাস সালিম ইবনু মা'কাল। তিনি পারস্যের অধিবাসী আযাদকৃত দাসদের মধ্যে অনেক সম্মানিত ও বড় মাপের সাহাবী ছিলেন। তিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার থেকে সাবিত ইবনু কায়স এবং ইবনু উমার ছাড়াও অনেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬২০০-[৫] ’আলকামাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার সিরিয়া গেলাম এবং (সেখানকার মসজিদে) দু রাকআত সালাত আদায় করলাম। অতঃপর আমি দুআ করলাম, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে একজন সৎ সাথি জুটিয়ে দাও। তারপর আমি একদল লোকের কাছে এসে বসলাম। সহসা দেখলাম, একজন বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি এসে আমার পাশেই বসলেন। আমি লোকেদেরকে প্রশ্ন করলাম, ইনি কে? তারা বলল, ইনি আবূদ দারদা (রাঃ)। তখন আমি বললাম, আমি আল্লাহ তা’আলার কাছে একজন সৎ সাথি মিলিয়ে দেয়ার জন্য দু’আ করেছিলাম। আল্লাহ তা’আলা আপনাকে আমার জন্য মিলিয়ে দিয়েছেন। তখন তিনি প্রশ্ন করলেন, তুমি কে? বললাম, আমি কূফার অধিবাসী। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কি ইবনু উম্মু ’আবদ (অর্থাৎ ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’উদ) নেই? যিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জুতা, বালিশ ও উযূর পাত্র বহনকারী ছিলেন এবং তোমাদের মধ্যে কি ঐ লোক নেই? নবী (সা.) -এর মুখের দু’আয় আল্লাহ তা’আলা যে লোকটিকে শয়তান হতে পানাহ দিয়েছেন, অর্থাৎ ’আম্মার (ইবনু ইয়াসীর) (রাঃ)। আর তোমাদের মাঝে কি ঐ লোক নেই? যিনি ছাড়া [নবী (সা.) -এর] গোপন তথ্যাদি আর কেউই জানে না অর্থাৎ হুযায়ফাহ্ (রাঃ)। (বুখারী)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

وَعَن علقمةَ قَالَ: قَدِمْتُ الشَّامَ فَصَلَّيْتُ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ قُلْتُ: اللَّهُمَّ يَسِّرْ لِي جَلِيسًا صَالِحًا فَأَتَيْتُ قَوْمًا فَجَلَسْتُ إِلَيْهِمْ فَإِذَا شَيْخٌ قَدْ جَاءَ حَتَّى جَلَسَ إِلَى جَنْبِي قُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالُوا: أَبُو الدَّرْدَاءِ. قُلْتُ: إِنِّي دَعَوْتُ اللَّهَ أَنْ يُيَسِّرَ لِي جَلِيسًا صَالِحًا فَيَسَّرَكَ لِي فَقَالَ: مَنْ أَنْتَ؟ قُلْتُ: مِنْ أَهْلِ الْكُوفَةِ. قَالَ: أَو لَيْسَ عنْدكُمْ ابْن أمِّ عبد صَاحب النَّعْلَيْنِ وَالْوِسَادَةِ وَالْمَطْهَرَةِ وَفِيكُمُ الَّذِي أَجَارَهُ اللَّهُ مِنَ الشَّيْطَانِ عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِ؟ يَعْنِي عَمَّارًا أَوْ لَيْسَ فِيكُمْ صَاحِبُ السِّرِّ الَّذِي لَا يعلمُه غيرُه؟ يَعْنِي حُذَيْفَة. رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (3742) ۔
(صَحِيح)

وعن علقمة قال: قدمت الشام فصليت ركعتين ثم قلت: اللهم يسر لي جليسا صالحا فاتيت قوما فجلست اليهم فاذا شيخ قد جاء حتى جلس الى جنبي قلت: من هذا؟ قالوا: ابو الدرداء. قلت: اني دعوت الله ان ييسر لي جليسا صالحا فيسرك لي فقال: من انت؟ قلت: من اهل الكوفة. قال: او ليس عندكم ابن ام عبد صاحب النعلين والوسادة والمطهرة وفيكم الذي اجاره الله من الشيطان على لسان نبيه؟ يعني عمارا او ليس فيكم صاحب السر الذي لا يعلمه غيره؟ يعني حذيفة. رواه البخاري رواہ البخاری (3742) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে আবূ দারদা (রাঃ) বললেন, (أَو لَيْسَ عنْدكُمْ ابْن أمِّ عبد) অর্থাৎ তোমাদের কাছে কি ইবনু উম্মু আবদ তথা ইবনু মাস'উদ নেই? এই প্রশ্ন দ্বারা আবূ দারদার উদ্দেশ্য হলো তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, তারা ‘ইলম অন্বেষণ করার জন্য এসেছেন। তাই তিনি তাদেরকে বলে দিলেন যে, তাদের কাছেই তো এমন বড় বড় জ্ঞানী ব্যক্তিরা আছেন যাদেরকে ছাড়া অন্য কারো কাছে যাওয়ার প্রয়োজন। নেই।
উক্ত হাদীস থেকে এটিও বুঝা যায় যে, মুহাদ্দিসের একটি আদব হলো যে, তারা নিজের শহরের শায়খদের কাছে সব জ্ঞান না শিখে অন্য শহরে যায় না। (ফাতহুল বারী ৭ম খণ্ড, ১০৫ পৃ., হা. ৩৭৪২)
কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ)-এর সাথে বিভিন্ন গুণাবলি যুক্ত করে বুঝানো হয়েছে যে, তিনি সবসময় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সেবা করতেন। বিভিন্ন বৈঠকে তার সাথে যেতেন এবং তার জুতা নিয়ে যেতেন এবং তার জুতা নিয়ে রাখতেন। আবার যখন বৈঠক শেষে রাসূলুল্লাহ (সা.) এই উঠে পড়তেন তখন তিনি তাঁর জুতা নিয়ে তাঁকে দিতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন একা থাকতেন তখনও তিনি তাঁর সাথে থাকতেন। যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘুমাতে ইচ্ছা করতেন তখন তিনি তার বিছানা, বালিশ ঠিক করে দিতেন। তাঁর উযূর সময় উযূর পানি এনে দিতেন। মোটকথা হলো, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে এত অধিক সময় থেকেছেন যে, তাতে ধারণা হয়, তিনি অবশ্যই তার থেকে অনেক জ্ঞান শিখেছেন। অতএব শারী'আতের জ্ঞান শিখার জন্য তাঁর আর অন্য কারো কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা ‘আম্মার (রাঃ) সম্পর্কে বলেন, তিনি হলেন মাখযুম গোত্রের আযাদকৃত দাস ‘আম্মার ইবনু ইয়াসার আল ‘আব্বাসী। তিনি নুবুওয়্যাতের প্রাথমিক যুগেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন ঐ সকল দুর্বল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে ইসলাম গ্রহণ করার কারণে মক্কায় অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। এমনকি মুশরিকরা তাকে আগুনে পুড়িয়েছে। সে সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন এবং তার শরীরে হাত বুলিয়ে বললেন, হে আগুন! তুমি ‘আম্মার-এর জন্য ঠাণ্ডা এবং শান্তিদায়ক হয়ে যাও যেমন ইব্রাহীম (আঃ)-এর জন্য হয়েছিলে। তিনি প্রথম হিজরতকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বদর সহ অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার নাম দিয়েছিলেন আত্ তায়্যিবুল মুতায়্যিব। তিনি ৩৭ হিজরীতে ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর দলে থেকে সিফফীনের যুদ্ধে নিহত হন।
মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৯৩ বছর। তার থেকে ‘আলী ইবনু আব্বাস (রাঃ) ছাড়াও আরো অনেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
মিরকাতল মাফাতীহ প্রণেতা হুযায়ফাহ (রাঃ) সম্পর্কে বলেন, তিনি হলেন ইয়ামানের অধিবাসী। তার নাম হলো হুসায়ল। আর ইয়ামান হলো তার লকব এবং তার কুনিয়াত হলো হুযায়ফাহ্ আবূ আবদুল্লাহ আল ‘আব্বাসী।
তুহফাতুল আহওয়াযীতে বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) তার কাছে মুনাফিকদের বিষয়ে বিভিন্ন গোপন কথা এবং এই উম্মতের মাঝে ভবিষ্যতে যা ঘটবে সে বিষয়ে অনেক গোপন কথা বলতেন।
তিনি মাদায়িনে ৩৫/৩৬ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। সেখানেই তার কবর রয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
তুহফাতুল আহওয়াযীতে ‘আম্মার-এর মর্যাদা সম্পর্কে আরো হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন- ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে মারফু সূত্রে বর্ণিত। ‘আম্মারকে যদি দুটি বিষয়ে স্বাধীনতা দেয়া হয় তাহলে সে দুটির থেকে সঠিক বিষয়টি গ্রহণ করে। (তুহফাতুল আহওযায়ী ৯ম খণ্ড, ৩১৪ পৃ., হা. ৩৮২৩)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আলকামাহ (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬২০১-[৬] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমাকে জান্নাত দেখানো হয় (মিরাজে অথবা স্বপ্নে,) সেখানে আমি আবূ ত্বলহাহ্-এর স্ত্রীকে দেখলাম এবং আমার সামনে কারো (চলার) পায়ের খসখস শব্দ শুনতে পাই, লক্ষ্য করে দেখি তিনি বিলাল। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أُرِيْتُ الْجَنَّةَ فَرَأَيْتُ امْرَأَةَ أَبِي طَلْحَةَ وَسَمِعْتُ خَشْخَشَةً أَمَامِي فَإِذَا بِلَالٌ» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (106 / 2457)، (6321) ۔
(صَحِيح)

وعن جابر ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «اريت الجنة فرايت امراة ابي طلحة وسمعت خشخشة امامي فاذا بلال» . رواه مسلم رواہ مسلم (106 / 2457)، (6321) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা বলেন, আবূ ত্বলহার স্ত্রীর হলেন, উম্মু সুলায়ম (রাঃ) প্রথমে তাকে বিবাহ করেছিলেন আনাস ইবনু মালিক-এর পিতা মালিক ইবনু নাযর। তার মাধ্যমেই আনাস (রাঃ)-এর জন্ম হয়। কিন্তু তার স্বামী মুশরিক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তারপর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর আবূ তুলহাহ তাকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ হলো আবূ ত্বলহাহ্ তখনও মুশরিক ছিলেন। উম্মু সুলায়ম (রাঃ) তাকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিলেন। সেই দাওয়াতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। তারপর উম্মু সুলায়ম (রাঃ) তাকে বললেন, আমি আপনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হব কিন্তু কোন মোহর নিব না। আপনার ইসলাম গ্রহণ করাটাই হলো আমার জন্য মোহর। তারপর আবূ ত্বলহাহ্ তাকে বিবাহ করেন।
উম্মু সুলায়ম থেকে অনেক মানুষ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) তার সামনে বিলাল (রাঃ)-এর পায়ের/জুতার আওয়াজ শুনতে পেলেন। বিলাল (রাঃ) হলেন আবূ বাকর (রাঃ)-এর আযাদকৃত দাস ইবনু রবাহ। নুবুওয়্যাতের প্রথম যুগেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। মক্কায় তিনিই প্রথম তার ইসলামের কথা প্রকাশ করেন। তিনি ঐ সকল ব্যক্তিদের অন্যতম ছিলেন, যাদেরকে ইসলাম গ্রহণ করার কারণে মক্কায় অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে সবচেয়ে বেশি যে কষ্ট দিতো সে হলো তার মুনীব উমাইয়্যাহ ইবনু খলফ আল জুমাহী আর আল্লাহর কি ইচ্ছা বদর যুদ্ধে বিলাল (রাঃ) নিজে তাকে হত্যা করেন। বিলাল (রাঃ) ২০ হিজরীতে দামেস্কে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে বাবে সগীরে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৬৩ বছর।

জাবির (রাঃ) বলেন, ‘উমার (রাঃ) বলতেন। আবূ বাকর (রাঃ) আমাদের নেতা তিনি আমাদের আরেক নেতা বিলাল (রাঃ)-কে আযাদ করেছেন।
ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর মুসনাদে বর্ণনা করেন যে, সর্বপ্রথম তাদের ইসলাম গ্রহণ করার কথা প্রকাশ করেছিলেন সাতজন। তারা হলেন রাসূলুল্লাহ (সা.), আবূ বাকর, ‘আম্মার তার মা সুমাইয়া, সুহায়ব, বিলাল এবং মিক্বদাদ।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে আল্লাহ মুশরিকদের কষ্টের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন তার চাচা আবূ তালিব-এর মাধ্যমে। আবূ বাকর (রাঃ)-কে আল্লাহ মুশরিকদের কষ্টের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন তার সম্প্রদায়ের মাধ্যমে। কিন্তু বাকীদের ওপর মুশরিকরা চালিয়েছে অমানুষিক নির্যাতন আর পৈশাচিক তাণ্ডবের স্টিম রোলার। পাশাপাশি তাদের কাউকে মরুভূমির উত্তপ্ত বালুর প্রচণ্ড রোদে বেঁধে রেখেছে। অসহ্য নির্যাতনের কারণে তারা তাদের কথা অনুযায়ী কাজ করেছেন, কিন্তু বিলাল (রাঃ) ব্যতীত। তিনি আল্লাহর জন্য নিজেকে তুচ্ছ করে দিয়েছিলেন। অতঃপর মুশরিকরা তাকে নিয়ে মক্কার উচ্ছৃঙ্খল ছেলেদের হাতে তুলে দিয়েছিল। তারা তাকে মক্কার পথে পথে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে চলত তখন তিনি শুধু বলতেন ‘আহাদ আহাদ' তথা আল্লাহ এক আল্লাহ এক। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬২০২-[৭] সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা ছয়জন নবী (সা.) -এর কাছে বসা ছিলাম। তখন মুশরিকরা নবী (সা.) -কে বলল, এ সমস্ত লোকেদেরকে সরিয়ে দিন, যাতে তারা আমাদের ওপর সাহসী না হয়ে পড়ে। সা’দ বলেন, সে ছয়জনের মধ্যে ছিলাম আমি, ইবনু মাস’উদ, হুযায়ল গোত্রের এক লোক, বিলাল ও আরো দু’জন যাদের নাম আমি বলতে চাই না। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মনে তাই উদ্ভব হয়, যা উদ্ভব করতে আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছা হয়েছে। এ সম্পর্ক নবী (সা.) মনে মনে চিন্তা করতে লাগলেন, ঠিক এমন সময় আল্লাহ তা’আলা অবতীর্ণ করলেন, “সে সকল লোকেদেরকে বিতাড়িত করবেন না, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সকাল-সন্ধ্যা তাদের প্রভুকে আহ্বান করে। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

وَعَن سعد قَالَ: كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سِتَّةَ نَفَرٍ فَقَالَ الْمُشْرِكُونَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم: اطرد هَؤُلَاءِ لَا يجترؤون عَلَيْنَا. قَالَ: وَكُنْتُ أَنَا وَابْنُ مَسْعُودٍ وَرَجُلٌ مِنْ هُذَيْلٍ وَبِلَالٌ وَرَجُلَانِ لَسْتُ أُسَمِّيهِمَا فَوَقَعَ فِي نَفْسِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَقَعَ فَحَدَّثَ نَفْسَهُ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: [وَلَا تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ] . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (46 / 2413)، (6241) ۔
(صَحِيح)

وعن سعد قال: كنا مع النبي صلى الله عليه وسلم ستة نفر فقال المشركون للنبي صلى الله عليه وسلم: اطرد هولاء لا يجتروون علينا. قال: وكنت انا وابن مسعود ورجل من هذيل وبلال ورجلان لست اسميهما فوقع في نفس رسول الله صلى الله عليه وسلم ما شاء الله ان يقع فحدث نفسه فانزل الله تعالى: [ولا تطرد الذين يدعون ربهم بالغداة والعشي يريدون وجهه] . رواه مسلم رواہ مسلم (46 / 2413)، (6241) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে ছয়জন ব্যক্তির কথা বলা হলেও শুধু চারজনের নাম তাতে উল্লেখ করা হয়েছে। আর দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, আর দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়নি। সেই দুজনের নাম উল্লেখ না করার পিছনে মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা দু'টি কারণ উল্লেখ করেছেন। যথা
১) উক্ত হাদীসের রাবী কথা বলার সময় সেই দুই ব্যক্তির নাম উল্লেখ করার মাঝে কোন কল্যাণ মনে করেননি। তাই তিনি তাদের নাম বলেননি।
২) তিনি হয়তো তাদের নাম বলতে ভুলে গিয়েছিলেন।
আযহার গ্রন্থের লেখক বলেন, তাদের দুজনের নাম হলো খাব্বাব ও ‘আম্মার (রাঃ)।
মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা খব্বাব (রাঃ) সম্পর্কে বলেন, তিনি হলেন খব্বাব ইবনুল আরত। তার কুনিয়াত হলো আবূ আবদুল্লাহ আত্ তামিমী। তিনি জাহিলী যুগে বন্দী হয়েছিলেন। অতঃপর খুযা গোত্রের এক মহিলা তাকে ক্রয় করে আযাদ করে দেয়। নবী (সা.) -এর দারুল আরক্বামে প্রবেশ করার পূর্বেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ঐ সকল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে ইসলাম গ্রহণ করার কারণে অনেক কষ্ট দেয়া হয়েছে। তিনি কুফায় বসবাস করেছেন এবং সেখানেই ৩৭ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তার থেকে অনেকেই হাদীস বর্ণনা করেছেন।
মুশরিকরা যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে ঐ প্রস্তাব করল তখন তিনি মনে মনে ভাবলেন যে, বাহ্যিকভাবে তাদেরকে এখানে উঠিয়ে দিবেন যখন সেই নেতারা আসবে তখন তাদের সম্মানার্থে যেন এরা এখান থেকে উঠে যায় কারণ তিনি ভেবেছিলেন যে, তারা হয়তো তার কাছে এসে কথা শুনে ইসলাম গ্রহণ করবে। কিন্তু আল্লাহ তা পছন্দ করেননি। তাই তিনি আয়াত নাযিল করে জানিয়ে দেন যে, আপনি তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়েন না।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে যে, মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলল, যদি আপনি এদেরকে আপনার নিকট থেকে তাড়িয়ে দেন তাহলে আমরা আপনার সাথে বসে কথা বলব। তখন নবী (সা.) বললেন, আমি মুমিনদেরকে তাড়িয়ে দিতে পারি না।
তারপর তারা বলল, তাহলে আমরা যখন আপনার কাছে আসব তখন আপনি তাদেরকে আপনার  নিকট থেকে উঠিয়ে দিবেন। তখন নবী (সা.) বললেন, হ্যাঁ। এই আশায় যে, তারা হয়তো ঈমান আনবে। তারপরেই আল্লাহ এই আয়াত নাযিল করার মাধ্যমে তাঁকে জানিয়ে দিলেন যে, তিনি যেন এরূপ না করেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬২০৩-[৮] আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) তাঁকে লক্ষ্য করে বলেছেন, হে আবূ মূসা! দাউদ এর কণ্ঠস্বর তোমাকে দান করা হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

وَعَنْ أَبِي مُوسَى أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهُ: «يَا أَبَا مُوسَى لَقَدْ أُعْطِيْتَ مِزْمَارًا مِنْ مَزَامِيرِ آل دَاوُد» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (5048) و مسلم (235 / 793)، (1852) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي موسى ان النبي صلى الله عليه وسلم قال له: «يا ابا موسى لقد اعطيت مزمارا من مزامير ال داود» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (5048) و مسلم (235 / 793)، (1852) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আবূ মুসা (রাঃ)-কে এমন সুন্দর কণ্ঠস্বর দেয়া হয়েছে যা কিছুটা দাউদ (আঃ)-এর কণ্ঠস্বরের সাথে সাদৃশ্য রাখে। এখানে দাউদ পরিবার দ্বারা স্বয়ং দাউদ (আঃ)-কে উদ্দেশ্য। যেহেতু এমন কোন প্রসিদ্ধতা নেই যে, দাউদ (আঃ)-এর পরিবারের কণ্ঠস্বর সুন্দর ছিল।
মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা আবূ মূসা (রাঃ) সম্পর্কে বলেন, তিনি হলেন আবদুল্লাহ ইবনু কায়স আল আশআরী। তিনি মক্কায় ইসলাম গ্রহণ করে হাবাশায় হিজরত করেছিলেন। তারপর জাহাজের লোকেদের সাথে তিনি মদীনায় চলেন আসেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) খায়বারে ছিলেন।
‘উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) তাঁর শাসনকালে ২০ হিজরীতে তাকে বাসরার গভর্নর নিযুক্ত করেন। অতঃপর আবূ মূসা (রাঃ) আহওয়ায অঞ্চল বিজয় করেন। তারপর ‘উসমান (রাঃ)-এর খিলাফতকালের প্রাথমিক যুগ পর্যন্ত তিনি বাসরার গভর্নর হিসেবেই থেকে যান। অতঃপর তাকে সেখান থেকে কুফায় এনে গভর্নর বানানো হয়। 'উসমান (রাঃ)-এর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তিনি এই দায়িত্ব পালন করে তারপর তিনি মক্কায় চলে আসেন এবং ৫২ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করা পর্যন্ত তিনি সেখানেই থেকে যান। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬২০৪-[৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সময়ে এ চার ব্যক্তি পূর্ণ কুরআন মাজীদ মুখস্থ করেছিলেন- উবাই ইবনু কা’ব, মু’আয ইবনু জাবাল, যায়দ ইবনু সাবিত ও আবূ যায়দ। আনাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হলো, আবূ যায়দ কে? তিনি বললেন, আমার এক চাচা। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

وَعَن أنس قَالَ: جَمَعَ الْقُرْآنَ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْبَعَةٌ: أُبَيُّ بْنِ كَعْبٍ وَمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ وَزَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ وَأَبُو زَيْدٍ قِيلَ لِأَنَسٍ: مَنْ أَبُو زَيْدٍ؟ قَالَ: أحد عمومتي. مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3810) و مسلم (119 / 2460)، (6340) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن انس قال: جمع القران على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم اربعة: ابي بن كعب ومعاذ بن جبل وزيد بن ثابت وابو زيد قيل لانس: من ابو زيد؟ قال: احد عمومتي. متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (3810) و مسلم (119 / 2460)، (6340) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: হাদীসে উল্লেখিত চারজন ব্যক্তি দ্বারা আনাস (রাঃ) খাযরাজ গোত্রের চারজন ব্যক্তিকে বুঝিয়েছেন। যেহেতু মুহাজিরদের মাঝেও অনেকে কুরআন জমা করেছিলেন। কুরআন জমা করার বিষয়টি শুধু এই চারজনের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
ফাতহুল বারীতে আবূ যায়দ-এর নামের ব্যাপারে কিছুটা মতানৈক্য উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- ‘আলী ইবনু মাদীনী বলেন, তার নাম হলো আওস। ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন বলেন, তার নাম হলো, সাবিত ইবনু যায়দ। আরো কেউ কেউ বলেন, তার নাম হলো সা'দ ইবনু উবায়দ ইবনু নুমান। ইমাম তবারানী (রহিমাহুল্লাহ) এই নামকেই বেশি সঠিক হিসেবে তার শায়খ আবূ বাকর ইবনু সদাক্বাহ থেকে উল্লেখ করেছেন। আবূ যায়দকেও কারী বলা হত। তিনি কাদিসিয়্যাতে ছিলেন এবং সেখানেই শাহাদাত বরণ করেন। তিনি ছিলেন ‘উমায়র ইবনু সা'দ-এর পিতা। ওয়াকিদী বলেন, তার নাম ছিল কায়স ইবনু সাকান। (ফাতহুল বারী ৭ম খণ্ড, ১৪৬ পৃ., হা. ৩৮১০)
মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা বলেন, উক্ত হাদীসের সারকথা হলো রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশায় যারা পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করেছেন তাদের মধ্য থেকে চারজন হলেন আনসার সাহাবী।
শারহুন নাবাবী গ্রন্থে মাযিরী বলেন, এই হাদীসকে কেন্দ্র করে কিছু নাস্তিক বলে থাকে যে, কুরআন তাওয়াতুর সূত্রে বর্ণিত হয়নি। তাদের এ কথার উত্তর দু’ভাবে দেয়া হয়ে থাকে।
এমন কোন বর্ণনা নেই যেখানে বলা হয়েছে যে, এই চারজন ছাড়া আর কেউ কুরআন জমা করেননি। বরং এমন অনেক বর্ণনা পাওয়া যায় যেখানে বলা হয়েছে যে, অনেক সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে কুরআন মুখস্থ করে জমা করেছেন। মাযিরী নিজেই তাদের মধ্য থেকে ১৫ জনের কথা উল্লেখ করেছেন। যারা মুখস্থ করার মাধ্যমে কুরআন জমা করেছিলেন। এছাড়াও সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ইয়ামামার যুদ্ধের দিন সত্তর জন হাফিয শাহাদাত বরণ করেন। আর ইয়ামামার যুদ্ধ তো রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মৃত্যুর কিছুদিন পরেই ঘটেছে।
তাহলে নিশ্চিত এটা বলা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর যুগেও অনেক হাফিয সাহাবী ছিলেন। তাদের মধ্য থেকে কিছু হাফিয সাহাবী ইমামার যুদ্ধে মারা গেছেন।
এছাড়া এ হাদীসে কুরআন জমাকারীদের মধ্যে আবূ বাকর ‘উমার, উসমান ও ‘আলী (রাঃ)-কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অথচ তারা সর্বপ্রকার কল্যাণের প্রতি ব্যাপক আগ্রহী ছিলেন। অতএব, এটা কিভাবে ধারণা করা যায় যে, এত আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও তারা কুরআন মুখস্থ করেননি।
এমনকি বর্তমানেও বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার মানুষ কুরআন মুখস্থ করে আসছে। অতএব কুরআন তাওয়াতুর সূত্রে বর্ণিত হয়নি এমন দাবী একেবারেই ভ্রান্ত এবং অবান্তর।
দুই, যদি ধরেও নেয়া হয় যে, শুধুমাত্র এই চারজনই কুরআন মুখস্থ করে জমা করেছেন। তারপরেও এটি তাওয়াতুর সূত্রের পরিপন্থী নয়। কারণ তাওয়াতুর সূত্র হওয়ার জন্য এটি শর্ত নয় যে, প্রত্যেক স্তরে সকলে সকলের থেকে বর্ণনা করতে হবে। বরং প্রত্যেক স্তরে তাওয়াতুর সংখ্যক রাবী থাকলেই তা তাওয়াতুর হিসেবে গণ্য হবে। আর তাওয়াতুর সূত্র বা সনদ হওয়ার জন্য শর্ত হলো প্রত্যেক স্তরে তিনের অধিক রাবী থাকতে হবে। এখানে তো তিনের অধিক হিসেবে চারজন আছেই। অতএব, তাওয়াতুর হওয়ার ক্ষেত্রে কোন সন্দেহ নেই। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৬শ খণ্ড, ১৮-১৯ পৃ., হা. ২৪২৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬২০৫-[১০] খব্বাব ইবনুল আরত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে হিজরত করেছি, অতএব আমাদের পুরস্কার আল্লাহর কাছে সাব্যস্ত হয়েছে। তবে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁদের পুরস্কারের কিছুই ভোগ না করে (দুনিয়া হতে) চলে গেছেন। মুসআব ইবনু উমায়র (রাঃ) তাঁদের অন্যতম। তিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদ হলে তাকে কাফন দেয়ার জন্য একটি চাদর ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। যখন ঐ চাদরটি দিয়ে আমরা তার মাথা ঢাকতাম তখন তাঁর উভয় পা বের হয়ে পড়ত, আবার যখন পা দুটি ঢাকতাম তখন তার মাথা বের হয়ে পড়ত। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, চাদর দ্বারা তার মাথাটি ঢেকে দাও এবং পা দুটির উপর কিছু ইযখির ঘাস রাখ, আর আমাদের মাঝে কেউ এমনও রয়েছেন, যার ফল পেকেছে এবং তিনি তা আহরণ করছেন। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

وَعَن خبّاب بن الأرتِّ قَالَ: هَاجَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبْتَغِي وَجْهَ اللَّهِ تَعَالَى فَوَقَعَ أَجْرُنَا عَلَى اللَّهِ فَمِنَّا مَنْ مَضَى لَمْ يَأْكُلْ مَنْ أَجْرِهِ شَيْئًا مِنْهُمْ: مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ قُتِلَ يَوْمَ أُحُدٍ فَلَمْ يُوجَدْ لَهُ مَا يُكَفَّنُ فِيهِ إِلَّا نَمِرَةٌ فَكُنَّا إِذَا غطينا بهَا رَأْسَهُ خَرَجَتْ رِجْلَاهُ وَإِذَا غَطَّيْنَا رِجْلَيْهِ خَرَجَ رَأْسُهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «غطوا بهَا رَأسه وَاجْعَلُوا على رجلَيْهِ الْإِذْخِرِ» . وَمِنَّا مَنْ أَيْنَعَتْ لَهُ ثَمَرَتُهُ فَهُوَ يهدبها. مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ، رواہ البخاری (3898) و مسلم (44 / 940)، (2177) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن خباب بن الارت قال: هاجرنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم نبتغي وجه الله تعالى فوقع اجرنا على الله فمنا من مضى لم ياكل من اجره شيىا منهم: مصعب بن عمير قتل يوم احد فلم يوجد له ما يكفن فيه الا نمرة فكنا اذا غطينا بها راسه خرجت رجلاه واذا غطينا رجليه خرج راسه فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «غطوا بها راسه واجعلوا على رجليه الاذخر» . ومنا من اينعت له ثمرته فهو يهدبها. متفق عليه متفق علیہ، رواہ البخاری (3898) و مسلم (44 / 940)، (2177) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসের রাবী বলেন, আমরা তাঁর সাথে হিজরত করেছি। এতে আমাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের প্রতিদান সাব্যস্ত হয়েছে। তবে আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা দুনিয়ার কোন ফল ভোগ করতে পারেনি। আবার অনেক সাহাবী দুনিয়ার ফলও ভোগ করেছেন। যারা ইসলামের বিজয়কাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন তারা বিভিন্ন সময় গনীমতের মাল পেয়েছেন এবং তারা স্বাচ্ছন্দময় জীবন কাটিয়েছেন। কিন্তু যারা বিজয়ের আগেই মারা গেছেন তাঁরা দুনিয়ার কোন ফলই ভোগ করতে পারেননি। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মু'আব ইবনু 'উমায়র। যিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন।
এ হাদীসের মাধ্যমে মুসআব ইবনু উমায়র (রাঃ)-এর মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে। কারণ তিনি দুনিয়াতে কোন প্রতিদান লাভ করেননি, এজন্য তার সব প্রতিদান আখিরাতের জন্য অবশিষ্ট আছে। এ বিষয়ে মুসলিমের একটি হাদীস রয়েছে। আর সেটি হলো, যে কোন গাজী আল্লাহর পথে জিহাদ করে যদি গনীমাতের সম্পদ পায় তাহলে সে তার আখিরাতের প্রতিদানের দুই-ততীয়াংশ দুনিয়াতে পেয়ে গেল। আর এক-ততীয়াংশ তার জন্য আখিরাতে অবশিষ্ট থাকল।

মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা মু'আব ইবনু উমায়র (রাঃ) সম্পর্কে বলেন, মুস্'আব কুরশী ‘আবদারী অনেক মর্যাদাবান ও বড় মাপের সাহাবী ছিলেন। নবী (সা.) দারুল আরক্বামে প্রবেশ করার পর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি প্রথমেই হাবশায় হিজরত করেন। তারপর তিনি আবার মক্কায় ফিরে আসেন কুরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য এবং ইসলাম শিখানোর জন্য দ্বিতীয় ‘আকাবার পরে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে মদীনায় পাঠান। তবে কেউ কেউ বলেন, প্রথম আকাবার বায়'আতের পরেই রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে মদীনায় পাঠান। সেখানে তিনি আনসারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। এতে দুই একজন করে ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করে। এভাবে তাদের মাঝে ইসলাম প্রসার লাভ করে।
এক সময় সে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে পত্র লিখে অনুমতি চাইলেন যে, তিনি সেখানে মুসলিমদেরকে একত্রিত করতে চান। তখনি রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে অনুমতি দিলেন। হিজরতের পূর্বে তিনিই প্রথম জুমু'আর সালাতের জন্য মদীনায় লোকদেরকে একত্রিত করেন। দ্বিতীয় ‘আকাবায় সত্তরজন মুসলিমদের সাথে তিনি নবী (সা.)-এর কাছে আগমন করেন। তারপর মক্কায় কিছুকাল অবস্থান করেন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়, (رِجَالٌ صَدَقُوۡا مَا عَاهَدُوا اللّٰهَ عَلَیۡهِ ۚ) “তারা এমন লোক যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণ করে।”  (সূরাহ্ আল আহযাব ৩৩: ২৩)
ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে জাহিলী যুগে তিনি খুব আরাম-আয়েশে ও স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপন করতেন। কিন্তু ইসলাম গ্রহণ করার পরে তিনি একেবারে দুনিয়াত্যাগী হয়ে যান এবং সকল আরাম-আয়েশ ত্যাগ করেন। তিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। অবশেষে উহুদ যুদ্ধে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬২০৬-[১১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, সা’দ ইবনু মু’আয-এর মৃত্যুতে ’আরশ কেঁপে উঠে।
অপর এক বর্ণনাতে আছে, সা’দ ইবনু মু’আয-এর মৃত্যুতে রহমানের ’আরশ কেঁপে উঠেছিল। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «اهْتَزَّ الْعَرْشُ لِمَوْتِ سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ» وَفِي رِوَايَةٍ: «اهْتَزَّ عَرْشُ الرَّحْمَنِ لِمَوْتِ سَعْدِ بن معَاذ» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3803) و مسلم (124 / 2466)، (6346) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن جابر قال: سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول: «اهتز العرش لموت سعد بن معاذ» وفي رواية: «اهتز عرش الرحمن لموت سعد بن معاذ» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (3803) و مسلم (124 / 2466)، (6346) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে, (اهْتَزَّ الْعَرْشُ لِمَوْتِ سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ) অর্থাৎ সা'দ ইবনু মু'আয-এর মৃত্যুর কারণে রহমানের ‘আরশ কেঁপে উঠেছে।
এ বিষয়টির ব্যাখ্যা নিয়ে ‘আলিমদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। কিছু ‘আলিম বলেন, সা'দ-এর রূহের আগমনের খুশিতে রহমানের ‘আরশ বাস্তবিকভাবেই কেঁপে উঠেছে। শারহুন নাবাবী গ্রন্থকার বলেন, এটিই হলো উত্তম কথা।
মাযিরী বলেন, এই মতের পক্ষে অনেকেই বলেন যে, এ বিষয়টি জ্ঞান দিয়েও বুঝা সম্ভব। কারণ ‘আরশের একটি অবয়ব আছে। যার কারণে নড়াচড়া করা তার পক্ষে সম্ভব। কিন্তু শুধুমাত্র এটি বলার দ্বারা সা'দ-এর মর্যাদা প্রকাশ পায় না যে, রহমানের ‘আরশ নড়ে উঠেছে। বরং সা’দ-এর মর্যাদা তখনই প্রকাশ পাবে। যখন বলা হবে যে, 'আরশের নড়াচড়াকে আল্লাহ মালায়িকার (ফেরেশতাদের) জন্য সা'দ-এর মৃত্যুর আলামত বানিয়েছেন।
কিছু ‘আলিম বলেন, রহমানের ‘আরশ বাস্তবিকভাবে কেঁপে উঠেনি। বরং হাদীসের এই কথা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে, আরশের বাসিন্দারা তথা ‘আরশ বহনকারী মালাক (ফেরেশতা) এবং অন্যান্য মালায়িকা কেঁপে উঠেছেন। এই বাক্যের মধ্যে (مُضَاف) তথা উহ্য রাখা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, জানাযার খাট কেঁপে উঠেছে।
পরের এ ব্যাখ্যাগুলো সবই বাতিল। কারণ ইমাম মুসলিম তাঁর কিতাবে যে স্পষ্ট বর্ণনাগুলো এনেছেন, সেগুলো প্রমাণ করে যে, প্রকৃতপক্ষেই রহমানের ‘আরশ কেঁপে উঠেছে। অতএব যারা এ ব্যাখ্যাগুলো দিয়েছেন তাদের কাছে হয়তো মুসলিমের বর্ণনাগুলো পৌছায়নি। প্রকৃত বিষয়ে আল্লাহই অধিক অবগত (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৭ম খণ্ড, ১৪১ পৃ., হা. ৩৮০৩; শারহুন নাবাবী ১৬শ খণ্ড, ২১ পৃ. হা. ২৪৬৭)

মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা সা'দ ইবনু মু'আয সম্পর্কে বলেন, তিনি হলেন সা'দ ইবনু মু'আয আল আনসারী আল আশহাল আল আওসী। প্রথম ‘আকাবা ও দ্বিতীয় ‘আকাবার মাঝের সময়ে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তার ইসলাম গ্রহণ করার কারণে ‘আবদুল আশহাল গোত্রও ইসলাম গ্রহণ করে। আনসারদের মধ্য থেকে সর্বপ্রথম তার বাড়ির লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার নাম দিয়েছিলেন (سَيِّدُ الْأَنْصَرِ) - তথা আনসারদের নেতা।
তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের মাঝে নম্র-ভদ্র ও অনুসরণীয় ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ছিলেন সম্মানিত মর্যাদাবান ও বড় মাপের একজন সাহাবী। বদর ও উহুদ যুদ্ধে তিনি দৃঢ়তার সাথে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর পাশে ছিলেন। খন্দক যুদ্ধের সময় তার চোখের কোণে তীর লাগলে তিনি আহত হয়ে পড়েন। কিন্তু সেখান থেকে রক্ত পড়া আর বন্ধ হয়নি। যার ফলে এক মাস পর ৫ম হিজরীর যুল ক'আদাহ্ মাসে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৩৭ বছর। তাকে বাক্বী কবরস্থানে দাফন করা হয়। অনেক সাহাবী তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬২০৭-[১২] বারা’ (ইবনু ’আযিব) (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে উপহারস্বরূপ রেশমি পোশাক পেশ করা হলো। তখন সাহাবীগণ তা স্পর্শ করে তার কোমলতায় আশ্চর্যবোধ করতে লাগলেন। তখন তিনি (সা.) বললেন, তোমরা তার কোমলতা দেখে আশ্চর্য হচ্ছ? অথচ সা’দ ইবনু মু’আয-এর রুমাল যা জান্নাতে তিনি প্রাপ্ত হয়েছেন, এর চেয়ে অধিক উত্তম এবং আরো অনেক কোমল। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

وَعَنِ الْبَرَاءِ قَالَ: أُهْدِيَتْ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حُلَّةُ حَرِيرٍ فَجَعَلَ أَصْحَابُهُ يَمَسُّونَهَا وَيَتَعَجَّبُونَ مِنْ لِينِهَا فَقَالَ: «أَتَعْجَبُونَ مِنْ لِينِ هَذِهِ؟ لَمَنَادِيلُ سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ فِي الجنَّةِ خيرٌ مِنْهَا وألين» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3802) و مسلم (126 / 2468)، (6348) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن البراء قال: اهديت لرسول الله صلى الله عليه وسلم حلة حرير فجعل اصحابه يمسونها ويتعجبون من لينها فقال: «اتعجبون من لين هذه؟ لمناديل سعد بن معاذ في الجنة خير منها والين» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (3802) و مسلم (126 / 2468)، (6348) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, জান্নাতে সা'দ যে রুমাল দিয়ে হাত মুছে তা এই মোলায়েম ও সুন্দর কাপড় থেকে অনেক উত্তম। এখানে বুঝানো হয়েছে যে, দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম বস্তুও জান্নাতের সর্বনিম্ন বস্তুর সমান হতে পারে না।
খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে রুমালের দ্বারা উপমা দেয়া হয়েছে। কারণ রুমাল হচ্ছে সবচেয়ে নিম্নমানের কাপড়। যা দিয়ে মানুষ হাত মুছে এবং ধুলাবালি ও ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে থাকে। অতএব, জান্নাতের সবচেয়ে নিম্নমানের কাপড়ই যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে উৎকৃষ্ট মানের কাপড়ের কি অবস্থা হবে।
‘আলিমগণ বলেন, এ হাদীসের মাধ্যমে জান্নাতে সা’দ-এর মর্যাদার প্রতি ইশারা করা হয়েছে। আর এটিও প্রমাণিত হয়েছে যে, সা'দ জান্নাতী। (মিরকাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৬শ খণ্ড, ২২ পৃ., হা. ২৪৬৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬২০৮-[১৩] উম্মু সুলায়ম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন তিনি (রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট এসে) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার সেবক আনাস-এর জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করুন। তখন তিনি (সা.) এভাবে দু’আ করলেন, “হে আল্লাহ! তার সম্পদ ও সন্তান বাড়িয়ে দাও। আর তুমি তাকে যা কিছু দান করেছ তাতে বরকত প্রদান কর।” আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমার ধন-সম্পদ প্রচুর এবং আমার সন্তান-সন্ততির সংখ্যা আজ প্রায় একশত অতিক্রম করেছে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

وَعَنْ أُمِّ سُلَيْمٍ أَنَّهَا قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَسٌ خَادِمُكَ ادْعُ اللَّهَ لَهُ قَالَ: «اللهمَّ أَكثر مَاله وَولده وَبَارك فِيمَا أَعْطيته» قَالَ أنس: فو الله إِنَّ مَالِي لَكَثِيرٌ وَإِنَّ وَلَدِي وَوَلَدَ وَلَدِي لَيَتَعَادُّونَ عَلَى نَحْوِ الْمِائَةِ الْيَوْمَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (6334) و مسلم (143 / 2481)، (6376) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ام سليم انها قالت: يا رسول الله انس خادمك ادع الله له قال: «اللهم اكثر ماله وولده وبارك فيما اعطيته» قال انس: فو الله ان مالي لكثير وان ولدي وولد ولدي ليتعادون على نحو الماىة اليوم. متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (6334) و مسلم (143 / 2481)، (6376) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর ‘শামায়িল' গ্রন্থের ব্যাখ্যায় বলেন, হাদীস বর্ণনা করার সময় পর্যন্ত আনাস (রাঃ) -এর দুই একজন কম ১২৫ জন সন্তান ও নাতি-নাতনি হয়েছিল আর আনাস (রাঃ)-এর জমিনে বছরে দুবার ফল দিতো।
ইবনু আবদুল বার (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আনাস (রাঃ)-এর ১০০ জন সন্তান ছিল, এটিই অধিক বিশুদ্ধ মত। আবার কেউ কেউ বলেন, তার সন্তান ছিল ৮০ জন। তাদের মধ্য থেকে ৭৮ জন হলো পুরুষ আর দু’জন হলো নারী। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর জন্য ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির ব্যাপারে দু'আ করার সাথে সাথে বরকতেরও দু'আ করেছেন। অতএব, এখান থেকে বুঝা যায় যে, দু'আর অন্যতম একটি আদব হলো কারো জন্য কোন কিছু বৃদ্ধি হওয়ার দু'আ করলে সাথে বরকতেরও দু'আ করা। কারণ হলো উক্ত বিষয়ের মধ্যে বরকত থাকলেই কেবল তা টিকে থাকবে এবং তাতে কোন ক্ষতি ও বিপদ সাধিত হবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৬শ খণ্ড, ৩৫ পৃ., হা, ২৪৮০)

মিক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা আনাস (রাঃ) সম্পর্কে বলেন, তিনি হলেন, আনাস ইবনু মালিক ইবনু নাবীর আল- খাযরামী। তাঁর কুনিয়াত হলো আবু হামযাহ্। রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন হিজরত করে মাদীনায় আসেন, তখন তার বয়স ছিল দশ বছর। উমার (রাঃ)-এর শাসন আমলে দীন শিক্ষা দেয়ার জন্য তিনি বাসরায় গিয়ে ছিলেন, বাসরায় মৃত্যুবরণকারী সাহাবীদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বশেষ। যিনি ৯১ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর। আবার কেউ কেউ বলেন, ৯৯ বছর। তার থেকে অনেক মানুষ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু সুলায়ম (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬২০৯-[১৪] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) ছাড়া ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী কোন লোকের জন্য আমি নবী (সা.) -কে বলতে শুনিনি “নিশ্চয় সে জান্নাতবাসী’। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ قَالَ: مَا سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لِأَحَدٍ يَمْشِي عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ «إِنَّهُ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ» إِلَّا لِعَبْدِ اللَّهِ بن سَلام. مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3812) و مسلم (147 / 2483)، (6380) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن سعد بن ابي وقاص قال: ما سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول لاحد يمشي على وجه الارض «انه من اهل الجنة» الا لعبد الله بن سلام. متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (3812) و مسلم (147 / 2483)، (6380) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা : এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসটি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ঐ হাদীসের সাথে কোন বিরোধ নেই যেখানে বলা হয়েছে আবূ বাকর জান্নাতী, ‘উমার জান্নাতী তথা এদেরকে নিয়ে সব মিলিয়ে দশজন জান্নাতী। কেননা সা'দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) এর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক জান্নাতী হওয়ার সুসংবাদ দিলেও অন্যদের ব্যাপারে তিনি তা নিষেধ করেননি।
এ প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছে এই কারণে যে, যেহেতু সা'দ (রাঃ) বলেছেন, আমি এমন কারো ব্যাপারে নবী (সা.) -কে বলতে শুনিনি যে, সে জান্নাতী আর এখনো সে ভূপৃষ্ঠে বিচরণ করছে ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) ব্যতীত।
তিনি তার এ কথাটি এভাবে বর্ণনা করেছেন, তার বিভিন্ন কারণ হতে পারে। যেমন- যখন সা'দ (রাঃ) এই হাদীস বর্ণনা করেন তখন শুধুমাত্র তিনি ছাড়া জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সকল সাহাবী মৃত্যুবরণ করেছেন। তাই তিনি বিশেষভাবে ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম-এর কথা এভাবে বিশেষ করে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়াও আরবী ভাষার অন্যতম একটি নিয়ম হলো যে, যখন কোন ‘হ্যা-বাচক এবং ‘না’-বাচক কথা একসাথে আসে তখন ‘হ্যা’-বাচক কথাই প্রাধান্য পায়। অতএব এটিই গ্রহণযোগ্য কথা যে, তিনি শুধুমাত্র ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম-এর কথা এভাবে বর্ণনা করলেও অন্যদের ব্যাপারে জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেননি। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৭ম খণ্ড, ১৪৮ পৃ., হা. ৩৮১২)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬২১০-[১৫] কায়স ইবনু উবাদ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি মদীনায় মসজিদে বসা ছিলাম। এমন সময় এক লোক মসজিদে প্রবেশ করলেন, যার মুখমণ্ডলে নম্রতার ছাপ। (তাকে দেখে) লোকেরা বলে উঠল, এ লোকটি জান্নাতী। (আগন্তুক) লোকটি সংক্ষিপ্তভাবে দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন, অতঃপর মসজিদ হতে বের হলেন। (বর্ণনকারী কায়স বলেন,) আমিও তার পিছনে পিছনে চলে বললাম, আপনি যখন মসজিদে প্রবেশ করেছিলেন, তখন লোকেরা বলেছিল, এ লোক জান্নাতী। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! কোন লোকের পক্ষে এমন কথা বলা উচিত নয়, যা সে জানে না। আসল ব্যাপারটি আমি তোমাকে পুরোপুরি বলছি, লোকেরা আমার সম্পর্কে এমন ধারণা কেন করে।
নবী (সা.) -এর সময়ে আমি একটি স্বপ্ন দেখেছিলাম এবং তা নবী (সা.) -এর কাছে বর্ণনা করলাম। আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি যেন একটি বাগানের মাঝে। এই বলে তিনি ঐ বাগানের বিশালতা ও তার সবুজ-শ্যামল শোভা-দৃশ্যের কথা উল্লেখ করলেন। অতঃপর বললেন, বাগানের মধ্যভাগে ছিল লোহার একটি খুঁটি। খুঁটিটির নিম্নাংশ মাটিতে এবং তার উপরের অংশ আকাশ পর্যন্ত। সে খুঁটিটির উপরের প্রান্তে রয়েছে একটি হাতল। আমাকে বলা হলো, এ খুঁটিতে আরোহণ কর আর আমি আরোহন করতে লাগলাম। অবশেষে খুঁটিটির উপরের প্রান্তে পৌছে আমি হাতলটি ধরে ফেললাম। তখন আমাকে বলা হলো, শক্তভাবে ধরে রাখ। অতঃপর ঐ কড়াটি আমার হাতে ধরা অবস্থায় আমি ঘুম হতে জেগে উঠলাম।
তারপর আমি নবী (সা.) -এর কাছে এ স্বপ্নের কথা উল্লেখ করলে তিনি (তার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে) বললেন, ঐ বাগানটি হলো ’ইসলাম’, ঐ খুঁটিটি হলো ইসলামের খুঁটি, আর ঐ হাতলটি হলো ইসলামের সুদৃঢ় কড়া। অতএব তুমি মৃত্যু অবধি ইসলামের উপর অটল থাকবে। (রাবী বলেন,) আর ঐ লোকটি ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

وَعَنْ قَيْسِ بْنِ عُبَادٍ قَالَ: كُنْتُ جَالِسًا فِي مَسْجِدِ الْمَدِينَةِ فَدَخَلَ رَجُلٌ عَلَى وَجْهِهِ أَثَرُ الْخُشُوعِ فَقَالُوا: هَذَا رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ تَجَوَّزَ فِيهِمَا ثُمَّ خَرَجَ وَتَبِعْتُهُ فَقُلْتُ: إِنَّكَ حِينَ دَخَلْتَ الْمَسْجِدَ قَالُوا: هَذَا رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ. قَالَ: وَاللَّهِ مَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ أَنْ يَقُولَ مَا لَا يَعْلَمُ فَسَأُحَدِّثُكَ لِمَ ذَاكَ؟ رَأَيْتُ رُؤْيَا عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَصَصْتُهَا عَلَيْهِ وَرَأَيْتُ كَأَنِّي فِي رَوْضَةٍ - ذَكَرَ مِنْ سَعَتِهَا وَخُضْرَتِهَا - وَسَطَهَا عَمُودٌ مِنْ حَدِيدٍ أَسْفَلُهُ فِي الْأَرْضِ وَأَعْلَاهُ فِي السَّمَاءِ فِي أَعْلَاهُ عُرْوَةٌ فَقِيلَ لِيَ: ارْقَهْ. فَقُلْتُ: لَا أَسْتَطِيعُ فَأَتَانِي مِنْصَفٌ فَرَفَعَ ثِيَابِي مِنْ خَلْفِي فرقِيتُ حَتَّى كُنْتُ فِي أَعْلَاهُ فَأَخَذْتُ بِالْعُرْوَةِ فَقِيلَ: اسْتَمْسِكْ فَاسْتَيْقَظْتُ وَإِنَّهَا لَفِي يَدِي فَقَصَصْتُهَا عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «تِلْكَ الرَّوْضَةُ الْإِسْلَامُ وَذَلِكَ الْعَمُودُ عَمُودُ الْإِسْلَامِ وَتِلْكَ العروة الْعُرْوَةُ الْوُثْقَى فَأَنْتَ عَلَى الْإِسْلَامِ حَتَّى تَمُوتَ وَذَاكَ الرَّجُلُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلَامٍ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3813) و مسلم (148 / 2484)، (6381) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن قيس بن عباد قال: كنت جالسا في مسجد المدينة فدخل رجل على وجهه اثر الخشوع فقالوا: هذا رجل من اهل الجنة فصلى ركعتين تجوز فيهما ثم خرج وتبعته فقلت: انك حين دخلت المسجد قالوا: هذا رجل من اهل الجنة. قال: والله ما ينبغي لاحد ان يقول ما لا يعلم فساحدثك لم ذاك؟ رايت رويا على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم فقصصتها عليه ورايت كاني في روضة - ذكر من سعتها وخضرتها - وسطها عمود من حديد اسفله في الارض واعلاه في السماء في اعلاه عروة فقيل لي: ارقه. فقلت: لا استطيع فاتاني منصف فرفع ثيابي من خلفي فرقيت حتى كنت في اعلاه فاخذت بالعروة فقيل: استمسك فاستيقظت وانها لفي يدي فقصصتها على النبي صلى الله عليه وسلم فقال: «تلك الروضة الاسلام وذلك العمود عمود الاسلام وتلك العروة العروة الوثقى فانت على الاسلام حتى تموت وذاك الرجل عبد الله بن سلام» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (3813) و مسلم (148 / 2484)، (6381) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, 'আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) তাদের কথাকে অস্বীকার করেছেন, এই কারণে যে, তারা তার জান্নাতী হওয়ার বিষয়টি অকাট্যভাবে বলছিল। আর হতে পারে যে, সা'দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস-এর হাদীসটি তখনো তিনি শুনেননি। যে হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনু সালাম জান্নাতী।
অথবা এটিও হতে পারে যে, তিনি নিজের প্রশংসা শুনতে চাননি। তাই বিনয়ের সাথেই এ বিষয়টি কায়স ইবনু 'উবাদ-এর সাথে বর্ণনা করেছেন।
হাদীসে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) ঘুম থেকে জেগে উঠলেন তখনও তা তার হাতেই ছিল। এই কথাটির ব্যাখ্যা হতে পারে এভাবে যে, যদি সরাসরি ধরে নেয়া হয় যে, তা তার হাতে তখনও ছিল। তাহলে এটিও হতে পারে। কারণ আল্লাহর কাছে অসম্ভব কিছু নেই। কিন্তু এটি একটি অভ্যাস পরিপন্থী বিষয় হয়ে যায়। তাই এক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাখ্যাকারী বলেছেন, তিনি যখন ঘুম থেকে জেগে উঠলেন তখন দেখেন তার হাত মুষ্টিবদ্ধই আছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহঃ শারহুন নাবাবী ১৬শ খণ্ড, ৩৮ পৃ., হা. ২৪৮৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬২১১-[১৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাবিত ইবনু কায়স ইবনু শাম্মাস (রাঃ) ছিলেন আনসারদের মুখপাত্র। যখন আল্লাহর বাণী, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কণ্ঠস্বরকে নবীর কণ্ঠস্বরের উপরের উঁচু করো না”- (সূরাহ্ আল হুজুরাত ৪৯ : ২); অবতীর্ণ হলো, তখন সাবিত (রাঃ) স্বীয় গৃহের মধ্যে বসে রইলেন এবং নবী (সা.)-এর কাছে যাওয়া-আসা বন্ধ করে দিলেন। নবী (সা.) সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ) কে সাবিত সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন, সাবিত-এর কি হয়েছে, সে কি অসুস্থ? অতঃপর সা’দ তাঁর কাছে আসলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কথাটিও তাঁর কাছে বললেন। উত্তরে সাবিত বললেন, এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে, আর তোমরা জান যে, তোমাদের মধ্যে আমার কণ্ঠস্বর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আওয়াজ হতে উঁচু। অতএব আমি তো জাহান্নামী হয়ে গিয়েছি। অতঃপর সা’দ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে সাবিত-এর অনুপস্থিতির ব্যাপারটি জানালে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আরে না, সে তো জান্নাতী। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

عَن أَنَسٍ قَالَ: كَانَ ثَابِتُ بْنُ قَيْسِ بْنِ شماس خطيب الْأَنْصَار فَلَمَّا نزلت هَذِه الْآيَة: [يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوق صَوت النَّبِي] إِلَى آخِرِ الْآيَةِ جَلَسَ ثَابِتٌ فِي بَيْتِهِ وَاحْتَبَسَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَأَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَعْدَ بْنَ مُعَاذٍ فَقَالَ: «مَا شَأْنُ ثَابِتٍ أَيَشْتَكِي؟» فَأَتَاهُ سَعْدٌ فَذَكَرَ لَهُ قَوْلُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ ثَابِتٌ: أُنْزِلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ وَلَقَدْ عَلِمْتُمْ أَنِّي مِنْ أَرْفَعِكُمْ صَوْتًا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَنَا مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَذَكَرَ ذَلِكَ سَعْدٌ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَلْ هُوَ من أهل الْجنَّة» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (188 ، 187 / 219)، (314 و 315) ۔
(صَحِيح)

عن انس قال: كان ثابت بن قيس بن شماس خطيب الانصار فلما نزلت هذه الاية: [يا ايها الذين امنوا لا ترفعوا اصواتكم فوق صوت النبي] الى اخر الاية جلس ثابت في بيته واحتبس عن النبي صلى الله عليه وسلم فسال النبي صلى الله عليه وسلم سعد بن معاذ فقال: «ما شان ثابت ايشتكي؟» فاتاه سعد فذكر له قول رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال ثابت: انزلت هذه الاية ولقد علمتم اني من ارفعكم صوتا على رسول الله صلى الله عليه وسلم فانا من اهل النار فذكر ذلك سعد للنبي صلى الله عليه وسلم. فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «بل هو من اهل الجنة» . رواه مسلم رواہ مسلم (188 ، 187 / 219)، (314 و 315) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে যে, কায়স ইবনু শাম্মাস ছিলেন আনসারদের বক্তা, তার মানে হলো তিনি ছিলেন কথাবার্তায় বিশুদ্ধভাষী। যেমন কবীরা তাদের কবিতায় বিশুদ্ধভাষী হয়ে থাকে। তিনি ছিলেন খাযরাজ গোত্রের লোক। রাসূলুল্লাহ (সা.) সাক্ষী দিয়েছেন যে, তিনি হলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং আনসারদের খত্বীব। ১২শ হিজরীতে ইয়ামামায় মুসায়লামাতুল কাযযাব-এর সাথে যুদ্ধ করার সময় তিনি শহীদ হন। তার থেকে আনাস ইবনু মালিক ছাড়াও আরো অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন।
এ হাদীসকে কেন্দ্র করে একটি প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, আর তা হলো হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর কায়স ইবনু শাম্মাস-কে কয়েকদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তার মাজলিসে দেখতে পেলেন না, তাই তিনি সা'দ ইবনু মু'আয-কে জিজ্ঞেস করলেন। সে কি অসুস্থ? এখন কথা হলো সা'দ ইবনু মু'আয (রাঃ) মারা গেছেন ৫ম হিজরীতে। আর সূরাহ্ আল হুজুরাত-এর প্রথম দিকের আয়াত নাযিল হয়েছে ৯ম হিজরীতে। তাহলে এটি কিভাবে সম্ভব?
উত্তর হলো, সূরাহ্ আল হুজুরত-এর প্রথম আয়াত (لَا تُقَدِّمُوۡا بَیۡنَ یَدَیِ) নাযিল হয়েছে ৯ম হিজরীতে। কিন্তু দ্বিতীয় এ আয়াত- (یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَرۡفَعُوۡۤا اَصۡوَاتَکُمۡ فَوۡقَ صَوۡتِ النَّبِیِّ) নাযিল হয়েছে অনেক আগেই।
রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে জান্নাতী হিসেবে জানিয়ে দিয়েছেন। আর এটির প্রতিফলন দেখা গেছে ইয়ামামার যুদ্ধে। কারণ তিনি সেখানে শহীদ হয়েছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬২১২-[১৭] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী (সা.)-এর নিকট বসা ছিলাম, ঠিক এমন সময় সূরাহ্ আল জুমু’আহ্ অবতীর্ণ হলো। (উক্ত সূরার মধ্যে) যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় (وَّ اٰخَرِیۡنَ مِنۡهُمۡ لَمَّا یَلۡحَقُوۡا بِهِمۡ) “আর তাদের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয়নি”- (সূরাহ আল জুমু’আহ্ ৬২: ৩)। তখন লোকেরা প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? বর্ণনাকারী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] বলেন, সে সময় আমাদের মাঝে সালমান ফারসী (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, তখন নবী (সা.) সালমান ফারসী (রাঃ)-এর দেহে হাত রেখে বললেন, যদি ঈমান ধ্রুব তারকার কাছেও থাকে, এ সকল লোকেদের কতিপয় লোক নিশ্চয় তথা হতে তাকে অর্জন করবে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كُنَّا جُلُوسًا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ نَزَلَتْ سُورَةُ الْجُمُعَةِ فَلَمَّا نَزَلَتْ [وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يلْحقُوا بهم] قَالُوا: مَنْ هَؤُلَاءِ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: وَفِينَا سَلْمَانُ الْفَارِسِيُّ قَالَ: فَوَضَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَهُ عَلَى سَلْمَانَ ثُمَّ قَالَ: «لَوْ كَانَ الْإِيمَانُ عِنْدَ الثُّرَيَّا لَنَالَهُ رجالٌ من هَؤُلَاءِ» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (4897) و مسلم (231 / 2546)، (6498) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي هريرة قال: كنا جلوسا عند النبي صلى الله عليه وسلم اذ نزلت سورة الجمعة فلما نزلت [واخرين منهم لما يلحقوا بهم] قالوا: من هولاء يا رسول الله؟ قال: وفينا سلمان الفارسي قال: فوضع النبي صلى الله عليه وسلم يده على سلمان ثم قال: «لو كان الايمان عند الثريا لناله رجال من هولاء» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (4897) و مسلم (231 / 2546)، (6498) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: হাদীসে বলা হয়েছে, (وَّ اٰخَرِیۡنَ مِنۡهُمۡ لَمَّا یَلۡحَقُوۡا بِهِمۡ) অর্থাৎ তাদের মধ্য থেকে আরো কিছু লোক যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয়নি। তিনি বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তা'আলা নবী (সা.)-কে এক উম্মী জাতির কাছে পাঠিয়েছেন। যারা এখনো তার সাথে বিদ্যমান আছে। এছাড়া আরো উম্মী জাতি আছে যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয়নি। তবে অচিরেই তারা তাদের সাথে মিলিত হবে। আর তারা আসবে সাহাবীদের পরে।
মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা সালমান আল ফারসী সম্পর্ক বলেন, তাঁর কুনিয়াত হলো আবূ ‘আবদুল্লাহ, তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আযাদকৃত দাস। তিনি পারস্যের রামহুরমুয-এর বাসিন্দা। আবার কেউ কেউ বলেন, তিনি ইস্পাহানের হাই নামক একটি এলাকার বাসিন্দা। সঠিক ধর্মের অনুসন্ধানে তিনি অনেক সফর করেছেন। খৃষ্ট ধর্মের অনুসন্ধানে প্রথমে তিনি ফাদ্দানে সফর করেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন কিতাব পড়েন এবং এই অনুসন্ধানের পথে অনেক কষ্ট সহ্য করেন।
ঘটনাক্রমে একদল ‘আরব তাকে ধরে নিয়ে ইয়াহূদীদের কাছে বিক্রয় করে দেয়। তারপর সে ইয়াহূদী মালিক থেকে মুক্তি লাভ করার জন্য কিতাবাত চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার এই চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার এই চুক্তিতে অর্থ প্রদানে সহায়তা করেন। কেউ কেউ বলেন, সালমান আল ফারসী অন্য দশজন মালিকের হাত বদল হয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সান্নিধ্যে এসেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মদীনায় আগমন করেন তখন সে ইসলাম গ্রহণ করে। সালমান আল ফারসী নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন। কেউ তাকে কিছু দান করলে তা সদাক্বাহ করে দিতেন। তিনি অনেক সম্মানিত ও মর্যাদাবান সাহাবী ছিলেন। বিভিন্ন হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও তার প্রশংসা করেছেন। তিনি হলেন এমন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত যাদের প্রতি জান্নাত অধিক আগ্রহী হয়ে আছে। প্রকৃতপক্ষে কোন মতই সহীহ নয়। আসল কথা হচ্ছে, মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৮০ বছর। (দেখুন- সিয়ারু আ'লামীন নুবালাহ্) তার থেকে আবূ হুরায়রাহ ও আনাস (রাঃ) ছাড়াও আরো অনেক সাহাবী হাদীস বর্ণনা করেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
শারহুন নাবাবী গ্রন্থকার বলেন, এ হাদীসের মাধ্যমে সালমান আল ফারসী (রাঃ) -এর ব্যাপক ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে।
অতএব, তিনি ছিলেন অনেক মর্যাবান ও সম্মানিত সাহাবী। যিনি সত্য ধর্মের জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন এবং সর্বশেষে সঠিক ধর্ম ইসলামকে খুঁজে পেয়েছেন। (শারহুন নাবাবী ১৬শ খণ্ড, ৮৬ পৃ., হা. ২৫৪৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬২১৩-[১৮] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) (দু’আয়) বললেন, হে আল্লাহ! তোমার নগণ্য এই বান্দা আবূ হুরায়রাকে এবং তার মাতাকে সকল ঈমানদারদের জন্য প্রিয়তর বানিয়ে দাও। আর সকল ঈমানদারদেরকেও এদের কাছে প্রিয়তর বানিয়ে দাও।’ (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اللَّهُمَّ حَبِّبْ عُبَيْدَكَ هَذَا» يَعْنِي أَبَا هُرَيْرَةَ «وَأُمَّهُ إِلَى عِبَادِكَ الْمُؤْمِنِينَ وَحَبِّبْ إِليهم الْمُؤمنِينَ» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (158 / 2491)، (6396) ۔
(صَحِيح)

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اللهم حبب عبيدك هذا» يعني ابا هريرة «وامه الى عبادك المومنين وحبب اليهم المومنين» . رواه مسلم رواہ مسلم (158 / 2491)، (6396) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে দু'আ করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করেছেন। অথচ তারা হলেন দু’জন। ১) আবূ হুরায়রাহ্, ২) তার মা।
মিরুক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা এর উত্তরে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করেছেন হয়তো এদিক লক্ষ্য করে যে, দুআর মধ্যে যেন তাদের পরিবার ও সন্তান-সন্ততি সবাই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬২১৪-[১৯] ’আয়িয ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন আবূ সুফইয়ান (রাঃ), সালমান, সুহায়ব ও বিলাল (রাঃ) প্রমুখের সামনে দিয়ে অতিক্রম করলেন। এ সময় তাঁরা বললেন, আল্লাহর তলোয়ার কি এখনো আল্লাহর এ শত্রুর ঘাড়টি উড়িয়ে দেইনি? তখন আবূ (রাঃ) সিদ্দীক বললেন, তোমরা কি কুরায়শদের দলপতি এবং তাদের নেতা সম্পর্কে এরূপ উক্তি করছ? অতঃপর তিনি নবী (সা.) -এর কাছে এসে তাঁকেও অবগত করলেন। তাঁর কথা শুনে নবী (সা.) বললেন, হে আবূ বকর! তুমি সম্ভবত তাদের মনে দুঃখ দিয়েছ। তাদের মনে যদি তুমি দুঃখ দিয়ে থাক, তাহলে নিশ্চয় তুমি তোমার প্রভুকে অসন্তুষ্ট করেছ। এ কথা শুনে আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) সালমান ও তাঁর সঙ্গীদের কাছে এসে বললেন, হে আমার ভাইসব! আমি তোমাদের মনে ব্যথা দিয়েছি। জবাবে তারা বললেন, হে আমাদের ভাই! আমাদের মনে কোন দুঃখ-ব্যথা নেই। আল্লাহ তা’আলা আপনাকে ক্ষমা করুন। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

وَعَن عَائِذ بن عَمْرو أَن أَبَا سُفْيَان أَتَى عَلَى سَلْمَانَ وَصُهَيْبٍ وَبِلَالٍ فِي نَفَرٍ فَقَالُوا: مَا أَخَذَتْ سُيُوفُ اللَّهِ مِنْ عُنُقِ عَدُوِّ اللَّهِ مَأْخَذَهَا. فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: أَتَقُولُونَ هَذَا لِشَيْخِ قُرَيْشٍ وَسَيِّدِهِمْ؟ فَأَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَهُ فَقَالَ: يَا أَبَا بَكْرٍ لَعَلَّكَ أَغْضَبْتَهُمْ لَئِنْ كُنْتَ أَغْضَبْتَهُمْ لَقَدْ أَغْضَبْتَ رَبَّكَ فَأَتَاهُمْ فَقَالَ: يَا إِخْوَتَاهْ أَغْضَبْتُكُمْ قَالُوا: لَا يَغْفِرُ اللَّهُ لَكَ يَا أَخِي. رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (170 / 2504)، (6412) ۔
(صَحِيح)

وعن عاىذ بن عمرو ان ابا سفيان اتى على سلمان وصهيب وبلال في نفر فقالوا: ما اخذت سيوف الله من عنق عدو الله ماخذها. فقال ابو بكر: اتقولون هذا لشيخ قريش وسيدهم؟ فاتى النبي صلى الله عليه وسلم فاخبره فقال: يا ابا بكر لعلك اغضبتهم لىن كنت اغضبتهم لقد اغضبت ربك فاتاهم فقال: يا اخوتاه اغضبتكم قالوا: لا يغفر الله لك يا اخي. رواه مسلم رواہ مسلم (170 / 2504)، (6412) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আবূ সুফইয়ান সে সময় কাফির অবস্থায় হুদনাহ নামক জায়গায় এসেছিল। আর তা ছিল হুদায়বিয়াহ্ সন্ধির পরে।
হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) আবূ বাকর (রাঃ)-কে বললেন, তুমি যদি তাদেরকে রাগান্বিত করে থাকো তাহলে তুমি তোমার প্রতিপালককে রাগান্বিত করেছ।
এ কথা বলার কারণ হলো, যেহেতু তারা মু'মিন এবং আল্লাহকে ভালোবাসে আর আল্লাহও তাদেরকে ভালোবাসেন। তাই তাদেরকে রাগান্বিত করলে আল্লাহকে রাগান্বিত করা হবে।
তাছাড়াও এদিক থেকে তুমি কাফিরের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছ।
মিরকাতুল মাফাতীহ প্রণেতা সুহায়ব (রাঃ) সম্পর্কে বলেন, তিনি হলেন আবদুল্লাহ ইবনু জাদ'আন আত্ তা'মিমী (রাঃ)-এর আযাদকৃত দাস সুহায়ব ইবনু সিনান। তার কুনিয়াত হলো আবূ ইয়াহইয়া। আর বাড়ি ছিল টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মাঝে মুসল এলাকায়। রোমের লোকেরা আকষ্মিক তাদের এলাকায় আক্রমণ করে এবং ছোট অবস্থায় তাকে বন্দি করে নিয়ে যায়, তখন তিনি রোমেই লালিত-পালিত হন। তারপর কালব নামক এক ব্যক্তি তাকে ক্রয় করে মক্কায় নিয়ে আসেন। আবদুল্লাহ ইবনু জাদ'আন তাকে ক্রয় করে আযাদ করে দেন। তারপর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি তার সাথেই থেকে যান।
কেউ কেউ বলে থাকেন যে, তিনি রোমে বড় হয়েছেন। যখন তিনি বুঝতে শিখলেন তখন সেখান থেকে পালিয়ে মক্কায় চলে আসেন। তারপর তিনি আবদুল্লাহ ইবনু জাদ’আন-এর সাথে মৈত্রি চুক্তিতে আবদ্ধ হন। তিনি মক্কায় নুবুওয়্যাতের প্রথম দিকেই ইসলাম গ্রহণ করেন।
কেউ কেউ বলেন, তিনি এবং ‘আম্মার ইবনু ইয়াসীর একই দিনে ইসলাম গ্রহণ করেন। যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) দারুল আরক্বামে ছিলেন। তিনি ছিলেন ঐ সকল লোকেদের অন্যতম ইসলাম গ্রহণ করার কারণে যাদের সহ্য করতে হয়েছে অমানুষিক নির্যাতন। তিনি ৮০ হিজরীতে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। তার থেকে অনেক লোক হাদীস বর্ণনা। করেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
শারহুন্ নাবাবী গ্রন্থে কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি এভাবে দু'আ করতে নিষেধ করেছেন। যেমন, তারা বলেছেন (لا يغفر الله لك) অর্থাৎ না, আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন।
বরং আবূ বাকর (রাঃ) শিখিয়েছেন যে, তোমরা এভাবে বল (عَافَاكَ اللهُ) অথবা (رَحِمَكَ اللهُ) ইত্যাদি। তিনি এখানে বুঝিয়েছেন যে, তোমরা দু'আ করার ক্ষেত্রে নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার করো না। (শারহুন নাবাবী ১৬শ খণ্ড, ৫৬ পৃ., হা. ২৫০৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়েয ইবনে আমর (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬২১৫-[২০] আনাস (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন, আনসারদের প্রতি ভালোবাসা ঈমানের লক্ষণ, আর আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ মুনাফিক্বীর (কপটতার) আলমত। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

وَعَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «آيَةُ الْإِيمَانِ حُبُّ الْأَنْصَارِ وَآيَةُ النِّفَاقِ بُغْضُ الْأَنْصَارِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3784) و مسلم (128 / 74)، (235) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن انس عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «اية الايمان حب الانصار واية النفاق بغض الانصار» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (3784) و مسلم (128 / 74)، (235) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনুত তীন বলেন, আনসারদের ভলোবাসার অর্থ হলো সকল আনসারকে ভালোবাসা। অতএব, কেউ যদি কিছু আনসারকে ভালোবাসে আর কিছুকে ভালো না বাসে তাহলে সে আনসারদের ভালোবাসে বলে গণ্য হবে না। এছাড়াও কুরআনে আনসারদের বিভিন্নভাবে প্রশংসা করা হয়েছে। সাথে সাথে তাদের সন্তানদেরকে, তাদের মিত্রদেরকে ও অভিভাবকদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে।
এই স্তরে তাদের পৌছার কারণ হলো যে, তারা নবী (সা.)-কে আশ্রয় দিয়েছে এবং সহযোগিতা করেছে। এজন্য তারা তাদের ধন-সম্পদ ও ঘর-বাড়ি মুহাজিরদের সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছে এবং মদীনাকে মুসলিমদের জন্য স্বদেশ ও আশ্রয়স্থল বানিয়েছে। আর এটিই ছিল অন্যান্য আরব ও অনারবদের শত্রুতার কারণ। যেহেতু তারা অমুসলিম ছিল তাই তারা আনসারদের কাজ পছন্দ করেনি। অতএব যারা আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ রাখবে এবং তাদের সাথে শত্রুতা করবে, তারাও তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না। এজন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) সতর্ক করে বলেছেন, ঈমানের আলামত হলো আনসারদেরকে ভালোবাসা আর নিফাকের আলামত হলো আনসারাদের ঘৃণা করা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »