পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১৩৫-[১] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন (ندْعُ أبناءنا وأبناءكم) “আসো আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রগণকে ও তোমাদের পুত্রগণকে”- (সূরাহ আ-লি ইমরান ৩: ৬১); আয়াত অবতীর্ণ হলো, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ’আলী, ফাতিমা ও হাসান এবং হুসায়ন (রাঃ)-কে আহ্বান করে বললেন, হে আল্লাহ! এরা সকলে আমার আহলে বায়ত। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)
عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ قَالَ: لَمَّا نزلت هَذِه الْآيَة [ندْعُ أبناءنا وأبناءكم] دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلِيًّا وَفَاطِمَةَ وَحَسَنًا وَحُسَيْنًا فَقَالَ: «اللَّهُمَّ هَؤُلَاءِ أهل بَيْتِي» رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (32 / 2404)، (6220) ۔
(صَحِيح)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১৩৬-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন সকালে নবী (সা.)- একখানা কালো রঙের পশমি নকশী কম্বল গায়ে দিয়ে বের হলেন। এমন সময় হাসান ইবনু ’আলী সেখানে আসলেন, তিনি (সা.) তাঁকে কম্বলের ভিতরে ঢুকিয়ে নিলেন। তারপর হুসায়ন আসলেন, তাঁকেও হাসান-এর সাথে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। তারপর ’আলী আসলেন, তাঁকেও তার ভিতরে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন- “হে আমার আহলে বায়ত! আল্লাহ তা’আলা তোমাদের গুনাহের অপবিত্রতা হতে সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চান”- (সূরা আল আহযাব ৩৩: ৩৩)। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَدَاةً وَعَلَيْهِ مِرْطٌ مُرَحَّلٌ مِنْ شَعْرٍ أَسْوَدَ فَجَاءَ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ فَأَدْخَلَهُ ثُمَّ جَاءَ الْحُسَيْنُ فَدَخَلَ مَعَهُ ثُمَّ جَاءَتْ فَاطِمَةُ فَأَدْخَلَهَا ثُمَّ جَاءَ عَلَيٌّ فَأَدْخَلَهُ ثُمَّ قَالَ: [إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أهل الْبَيْت وَيُطَهِّركُمْ تَطْهِيرا] رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (61 / 2424)، (6261) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: ইমাম আযহারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (رجْسَ) 'রিযসা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো প্রত্যেক ঘৃণিত কাজ। কেউ কেউ বলেন, অন্তরের সন্দেহ। এর শাব্দিক অর্থ নোংরা কাজ, পঙ্কিলতা। এভাবে পাপকর্ম বা পাপের পঙ্কিলতাকে বুঝানো হয়েছে।
অনেকে বলেন, এর অর্থ শান্তি। (শারহুন নাবাবী হা. ২৪২৫)
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (ذَنْبٌ) শব্দের ভাষার অলঙ্কার করে (رِجْسٌ) শব্দ বলা হয়েছে।
মুল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নবী (সা.) -এর স্ত্রীগণ আহলে বায়তের মধ্যে শামিল হবেন আল্লাহর এই বাণীর মাধ্যমে। তিনি বলেন, (یٰنِسَآءَ النَّبِیِّ لَسۡتُنَّ کَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَآءِ) “হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য কোন স্ত্রীদের মতো নও..”- (সূরা আল আহযাব ৩৩: ৩২)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১৩৭-[৩] বারা’ ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ছেলে ইবরাহীম (রাঃ) যখন মৃত্যুবরণ করলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, নিশ্চয় তার জন্য জান্নাতে একজন ধাত্রী রয়েছে। (বুখারী)
الفصل الاول (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)
وَعَن الْبَراء قَالَ: لَمَّا تُوُفِّيَ إِبْرَاهِيمُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ لَهُ مُرْضِعًا فِي الْجنَّة» رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (1382) ۔
(صَحِيح)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১৩৮-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী (সা.) -এর স্ত্রীগণ তাঁর কাছে বসা ছিলাম। এমন সময় ফাতিমা আসলেন। তাঁর চলার ভঙ্গি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর চলার ভঙ্গির সাথে পরিষ্কার মিল ছিল। তিনি (সা.) তাঁকে দেখে বললেন, হে আমার কন্যা! তোমার আগমন মুবারক হোক। অতঃপর তিনি (সা.) তাঁকে নিজের কাছে বসালেন, তারপর চুপে চুপে তাকে কিছু বললেন। এতে ফাতিমাহ্ (রাঃ) ভীষণভাবে কাঁদতে লাগলেন। অতঃপর যখন তার অস্থিরতা দেখলেন, তখন তিনি (সা.) আবার তার কানে চুপে চুপে কিছু বললেন, এবার তিনি হাসতে লাগলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন সেখান থেকে উঠে গেলেন, তখন আমি ফাতিমাকে প্রশ্ন করলাম, রাসূলুল্লাহ (সা.) চুপে চুপে তোমার সাথে কি কথা বলেছেন? উত্তরে ফাতিমাহ্ (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর গোপনীয়তা ফাস করতে চাই না। রাসূলুল্লাহ (সা.)- এর ওফাতের পর আমি ফাতিমাহ্-কে বললাম, তোমার ওপর আমার যে অধিকার রয়েছে, তার প্রেক্ষিতে আমি তোমাকে কসম দিয়ে বলছি, সে রহস্য সম্পর্কে তুমি আমাকে অবশ্যই অবহিত করবে।
ফাতিমাহ্ (রাঃ) বললেন, এখন সে কথাটি প্রকাশ করতে কোন আপত্তি নেই। প্রথমবার যখন তিনি চুপি চুপি আমাকে কিছু কথা বললেন, তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন, জিবরীল (আঃ) প্রতি বছর (রমযানে) একবার পুরো কুরআন মাজীদকে আমার কাছ থেকে শুনতেন, আমাকে শুনাতেন, কিন্তু এ বছর তিনি তা দু’বার দাওর করেছেন। তাতে আমি ধারণা করি যে, আমার ওফাতের সময় নিকটবর্তী হয়ে গেছে। অতএব আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্যধারণ কর। আমি তোমার জন্য শ্রেয় অগ্রযাত্রী। এ কথা শুনে আমি কাঁদতে লাগলাম। অতঃপর যখন তিনি (সা.) আমাকে অস্থির দেখলেন তখন চুপে চুপে বললেন, হে ফাতিমাহ্! তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি হবে জান্নাতের নারীকুলের নেতা অথবা মু’মিন নারীদের নেত্রী? অপর এক বর্ণনাতে আছে, তিনি (সা.) চুপে চুপে আমাকে এ খবরটি দিয়েছেন যে, এই অসুখেই তিনি মৃত্যুবরণ করবেন। তখন আমি কাঁদতে লাগলাম। তারপর (দ্বিতীয়বার) তিনি চুপে চুপে আমাকে এ সংবাদটি দিলেন যে, তাঁর পরিজনদের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম তাঁর পশ্চাদগামী হব, তখন আমি হেসে ফেললাম। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)
وَعَنْ عَائِشَةَ: قَالَتْ: كُنَّا - أَزْوَاجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - عِنْدَهُ. فَأَقْبَلَتْ فَاطِمَةُ مَا تَخْفَى مِشْيَتُهَا مِنْ مِشْيَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا رَآهَا قَالَ: «مَرْحَبًا بِابْنَتِي» ثُمَّ أَجْلَسَهَا ثُمَّ سَارَّهَا فَبَكَتْ بُكَاءً شَدِيدًا فَلَمَّا رَأَى حُزْنَهَا سَارَّهَا الثَّانِيَةَ فَإِذَا هِيَ تَضْحَكُ فَلَمَّا قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَأَلْتُهَا عَمَّا سَارَّكِ؟ قَالَتْ: مَا كُنْتُ لِأُفْشِيَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سِرَّهُ فَلَمَّا تُوُفِّيَ قُلْتُ: عَزَمْتُ عَلَيْكِ بِمَا لي عَلَيْك مِنَ الْحَقِّ لِمَا أَخْبَرْتِنِي. قَالَتْ: أَمَّا الْآنَ فَنَعَمْ أَمَّا حِينَ سَارَّ بِي فِي الْأَمْرِ الأوَّل فإِنه أَخْبرنِي: «إِنَّ جِبْرِيل كَانَ يُعَارضهُ بِالْقُرْآنِ كل سنة مرّة وَإنَّهُ قد عَارَضَنِي بِهِ الْعَامَ مَرَّتَيْنِ وَلَا أَرَى الْأَجَلَ إِلَّا قَدِ اقْتَرَبَ فَاتَّقِي اللَّهَ وَاصْبِرِي فَإِنِّي نعم السّلف أَنا لَك» فَلَمَّا رَأَى جَزَعِي سَارَّنِيَ الثَّانِيَةَ قَالَ: «يَا فَاطِمَةُ أَلَا تَرْضِينَ أَنْ تَكُونِي سَيِّدَةَ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ أَوْ نِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ؟» وَفِي رِوَايَةٍ: فَسَارَّنِي فَأَخْبَرَنِي أَنَّهُ يُقْبَضُ فِي وَجَعِهِ فَبَكَيْتُ ثُمَّ سَارَّنِي فَأَخْبَرَنِي أَنِّي أَوَّلُ أَهْلِ بَيْتِهِ أتبعه فَضَحكت. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6285 ۔ 6286 و الروایۃ الثانیۃ : 3626) و مسلم (98 / 2450 و الروایۃ الثانیۃ : 97 / 2450)، (6313) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (سَأَلْتُهَا عَمَّا سَارَّكِ؟) আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তাঁর জিজ্ঞাসার প্রকৃত প্রকাশভঙ্গি ছিল, “আমি তোমার কাছে একমাত্র সেই বিষয়ে জানতে চাচ্ছি, যে বিষয়টি নবী (সা.) তোমার কাছে গোপনে বলেছিলেন।
উক্ত হাদীসের বাহ্যিকটা এটা প্রমাণ করে যে, ফাতিমাহ্ (রাঃ) সকল মহিলাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বা মহিলা, এমনকি খাদীজাহ্, ‘আয়িশাহ্, মারইয়াম ও আসিয়াহ (রাঃ) থেকেও। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
হাফিয ইবনু বাত্বল (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, কারো গোপন কথা প্রকাশ করা উচিত নয়। যদি গোপনকারী ব্যক্তির ক্ষতি হওয়ার ভয় থাকে। ফাতিমাহ (রাঃ) যদি নবী (সা.) -এর গোপন কথা তাঁর স্ত্রীদের কাছে বলে দিতেন তাহলে তাদের চিন্তা আরো কঠিন থেকে কঠিনতর হত। তিনি (সা.) যদি বলে দিতেন যে, তিনি মুমিন মহিলাদের নেত্রী হবেন। তাহলে তাদের এ বিষয়টি মেনে নিতে কষ্ট হত। তাদের মৃত্যুর পর যখন তিনি এ আশঙ্কা হতে মুক্ত হলেন তখন তিনি উক্ত বিষয়টি বলে দিলেন। (ফাতহুল বারী হা. ৬২৮৫ ও ৬২৮৬)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১৩৯-[৫] মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ফাতিমা আমার (দেহেরই) একটি টুকরা, যে তাকে ক্রোধান্বিত করবে, সে নিশ্চয় আমাকে ক্রোধান্বিত করবে।
অপর এক বর্ণনায় আছে, সে যা ঘৃণা করে আমি তা ঘৃণা করি এবং তাকে যা কষ্ট দেয়, আমাকেও তা কষ্ট দেয়। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)
وَعَن المِسور بْنِ مَخْرَمَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «فَاطِمَةُ بَضْعَةٌ مِنِّي فَمَنْ أَغْضَبَهَا أَغْضَبَنِي» وَفِي رِوَايَةٍ: «يُرِيبُنِي مَا أَرَابَهَا وَيُؤْذِينِي مَا آذاها» . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3767 و الروایۃ الثانیۃ : 5230) و مسلم (93 / 2449)، (6307) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (بَضْعَةٌ مِنِّي) কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ হলো গোশতের টুকরা। ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নবী (সা.)-এর গোশতের টুকরার চেয়ে কেউ অধিক উত্তম হতে পারে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী হা, ৩৭৬৭)
(فَمَنْ أَغْضَبَهَا أَغْضَبَنِي) সুহায়ল (রহিমাহুল্লাহ) উক্ত বাক্য হতে দলীল গ্রহণ করেছেন, যে ব্যক্তি ফাতিমাহ (রাঃ)-কে গালি দিবে সে ব্যক্তি কাফির, কেননা যে ব্যক্তি ফাতিমা (রাঃ)-কে গালি দিল সে যেন নবী (সা.) -কে গালি দিল। আর যে ব্যক্তি নবী (সা.)-কে গালি দিল সে কাফির।
‘আলিমগণ বলেন, এ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয়, নবী (সা.)-কে সকল অবস্থায় ও মুহূর্তে কষ্ট দেয়া হারাম। এখানে আরো স্পষ্ট হয় যে, আল্লাহর নবীর মেয়ে ও আল্লাহর শত্রুর মেয়ে একত্রে বিবাহ করা হারাম।
উক্ত হাদীসে নবী (সা.)-এর দুটি মু'জিযাহ্ প্রকাশ পেয়েছে, (১) নবী (সা.) -এর মৃত্যুর পর ফাতিমাহ্ (রাঃ)-এর কিছুকাল জীবিত থাকা। (২) তাঁর পরিবার হতে সর্বপ্রথম ফাতিমা (রাঃ) তার সাথে সাক্ষাত লাভ। (শারহুন নাবাবী হা, ২৪৪৯)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১৪০-[৬] যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) - মক্কাহ্ ও মদীনার মাঝামাঝি ’খুম নামক জলাশয়ের কাছে দাঁড়িয়ে আমাদেরকে ভাষণ দান করলেন। প্রথমে আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করলেন, এরপর ওয়াজ ও নাসীহত করলেন, অতঃপর বললেন, এটা (আম্মা বা’দ) সাবধান! হে লোকসকল! নিশ্চয় আমি একজন মানুষই, শীঘ্রই আমার কাছে আল্লাহর দূত (মালাকুল মাওত) আসবে, তখন আমি আমার রবের আহ্বানে সাড়া দেব। আমি তোমাদের মাঝে দুটি মূল্যবান সম্পদ রেখে যাচ্ছি। তন্মধ্যে প্রথমটি হলো, আল্লাহর কিতাব’, এর মধ্যে রয়েছে হিদায়াত ও জ্যোতি। অতএব, তোমরা আল্লাহর কিতাবকে খুব শক্তভাবে আঁকড়ে ধর এবং দৃঢ়তার সাথে তার বিধি-বিধান মেনে চল। (বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর কিতাবের নির্দেশাবলী শক্তভাবে মেনে চলার জন্য অনুপ্রাণিত করলেন। এরপর তিনি বললেন, (দ্বিতীয়টি হলো) আমার আহলে বায়ত সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে আল্লাহর পক্ষ হতে বিশেষ নসীহত করছি। অপর এক বর্ণনাতে আছে, আল্লাহর কিতাব হলো আল্লাহর রশি। যে লোক তার আনুগত্য করবে, সে হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত হবে। আর যে তাকে পরিত্যাগ করবে, সে পথভ্রষ্ট, গোমরাহ হয়ে যাবে। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)
وَعَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ: قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا فِينَا خَطِيبًا بِمَاءٍ يُدْعَى: خُمًّا بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَوَعَظَ وَذَكَّرَ ثُمَّ قَالَ: أمَّا بعدُ أَلا أيُّها النَّاس فَإِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ يُوشِكُ أَنْ يَأْتِيَنِي رَسُولُ رَبِّي فَأُجِيبَ وَأَنَا تَارِكٌ فِيكُمُ الثَّقَلَيْنِ: أَوَّلُهُمَا كِتَابُ اللَّهِ فِيهِ الْهُدَى وَالنُّورُ فَخُذُوا بِكِتَابِ اللَّهِ وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ فَحَثَّ عَلَى كِتَابِ اللَّهِ وَرَغَّبَ فِيهِ ثُمَّ قَالَ: «وَأَهْلُ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمُ اللَّهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمُ اللَّهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي» وَفِي رِوَايَة: «كتاب الله عز وَجل هُوَ حَبْلُ اللَّهِ مَنِ اتَّبَعَهُ كَانَ عَلَى الْهُدَى وَمَنْ تَرَكَهُ كَانَ عَلَى الضَّلَالَةِ» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (36 / 2408)، (6225) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (أَنَا تَارِكٌ فِيكُمُ الثَّقَلَيْنِ) এখানে দুটি ভারী জিনিসের কথা বলা হয়েছে: (১) আল্লাহর কিতাব, (২) তার পরিবারবর্গ। এ দুটিকে ভারী বলার কারণে হলো, উভয়ের প্রতি আমল করা ও অনুসরণ করা খুবই কঠিন। ফায়িক গ্রন্থকার বলেন, ভারী জিনিস হলো ঐ পণ্য সামগ্রী যা বহন করা হয় চতুষ্পদ জন্তুর উপর। মানুষ ও জিন্কে ভারী বলা হয়, কারণ জমিনের উপর এরাই সবচেয়ে ভারী জিনিস।
শারহুস সুন্নাহ গ্রন্থে বলা হয়েছে: আল্লাহর কিতাব ও আহলে বায়তকে ভারী বলার কারণে হলো, এ দু’টি গ্রহণ ও এর প্রতি দায়িত্ব পালন করা খুব কঠিন। অথবা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অধিক কষ্ট ছাড়া পালন করা সম্ভব হয় না।
(أُذَكِّرُكُمُ اللَّهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي) আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আহলে বায়তের মর্যাদার প্রতি আমি তোমাদের সতর্ক করছি। আর আমি তোমাদের বলছি, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাদের কোন কষ্ট দিও না, আর তাদের মান-সম্মান সংরক্ষণ কর।
যায়দ (রাঃ)-কে আহলে বায়ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় নবী (সা.) -এর স্ত্রীগণ কি আহলে বায়তের অন্তর্ভুক্ত নয়? উত্তরে তিনি বলেন, হ্যাঁ। কিন্তু পরবর্তীতে যাদের ওপর সদাক্বার মাল হারাম করা হয়েছিল তাদেরকে আহলে বায়ত বলে গণ্য করা হত। তাকে বলা হলো তারা কারা? তিনি বললেন, তারা হলেন (১) ‘আলী (রাঃ) (২) জা'ফার (রাঃ) (৩) “উকায়ল (রাঃ) ও (৪) ‘আব্বাস (রাঃ) -এর পরিবারবর্গ। তাকে বলা হলো, তাদের সকলের ওপর কি সদাক্বার মাল হারাম করা হয়েছিল? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
শারহে মুসলিমে বলা হয়েছে, নবী (সা.) তাদের, সম্মান করতে বলেছেন এবং তাদের অধিকারের ব্যাপারে উপদেশ দিয়েছেন।
ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আহলে বায়ত হলো শুধু বানী হাশিম। অনেকে বলেন, বানূ হাশিম ও বানূ মুত্তালিব।
(كتاب الله عز وَجل هُوَ حَبْلُ اللَّهِ) মহান আল্লাহর কিতাব হলো আল্লাহর রশি’ এ বাক্য দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর অঙ্গীকার।
কেউ কেউ বলেন, এমন একটি যা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সঠিক পথের দিকে পৌছে দেয়। অনেকে বলেন, আল্লাহর আলো, যার দ্বারা সঠিক পথের দিশা পাওয়া যায়। (শারহুন নাবাবী হা. ২৪০৮)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১৪১-[৭] ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি যখনই ’আবদুল্লাহ ইবনু জাফরকে সালাম করতেন, তখন (এভাবে) বলতেন, হে দুই ডানাবিশিষ্ট লোকের পুত্র! আসসালামু আলাইকা। (বুখারী)
الفصل الاول (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)
وَعَن ابْن عمر أَنَّهُ كَانَ إِذَا سَلَّمَ عَلَى ابْنِ جَعْفَرٍ قَالَ: السَّلَام عَلَيْك يَا ابْن ذِي الجناحين. رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (3709) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (ذِي الجناحين) কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নবী (সা.) জাফার (রাঃ)-কে জান্নাতে মালায়িকার (ফেরেশতাদের) সাথে উড়তে দেখেছেন। যার দরুন তাকে “যুল যানাহায়ন” বা (দুই ডানাওয়ালা) উপাধিত ভূষিত করেছেন। এ কারণে তার নামকরণ করা হয়েছে তয়্যার (যে অধিক উড়ে)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১৪২-[৮] বারা’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সা.) -কে দেখেছি যে, তিনি হাসান ইবনু ’আলীকে স্বীয় কাঁধের উপর রেখে বলছেন, হে আল্লাহ! আমি একে ভালোবাসি, আপনিও তাকে ভালোবাসুন। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)
وَعَنِ الْبَرَاءِ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ عَلَى عَاتِقِهِ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أُحِبُّهُ فَأَحِبَّهُ» مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3749) و مسلم (58 / 2422)، (6258) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১৪৩-[৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন দিনের একাংশে আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে বের হলাম। অবশেষে তিনি (সা.) ফাতিমা (রাঃ) -এর গৃহের কাছে এসে বললেন, খোকা এখানে আছে কি? খোকা এখানে আছে কি? অর্থাৎ ’হাসান। অনতিবিলম্বে তিনি দৌড়িয়ে এসে গলা জড়িয়ে ধরলেন একে অন্যের। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে আল্লাহ! আমি তাকে ভালোবাসি, তুমিও তাকে ভালোবাসো। আর যে তাকে ভালোবাসবে তুমি তাকেও ভালোবাসো। (বুখারী ও মুসলিম)।
الفصل الاول (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: خَرَجْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي طَائِفَةٍ مِنَ النَّهَارِ حَتَّى أَتَى خِبَاءَ فَاطِمَةَ فَقَالَ: «أَثَمَّ لُكَعُ؟ أَثَمَّ لُكَعُ؟» يَعْنِي حَسَنًا فَلَمْ يَلْبَثْ أَنْ جَاءَ يَسْعَى حَتَّى اعْتَنَقَ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا صَاحِبَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أُحِبُّهُ فَأَحِبَّهُ وَأَحِبَّ مَنْ يُحِبُّهُ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (2122) و مسلم (57 / 2421)، (6257) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (أَثَمَّ لُكَعُ؟ أَثَمَّ لُكَعُ؟) নিহায়াহ্ গ্রন্থে বলা হয়েছে, (لُكَعُ) (লুকা') শব্দ দ্বারা আরবগণ দাসকে বুঝাতেন। পরবর্তীতে নির্বোধ ও তুচ্ছ বিষয়কে বুঝাতে লুকা ব্যবহার করা হয় এবং কখনো কখনো ছোট শিশুকে নির্দেশ করে। যদি উক্ত শব্দ কোন বড় জিনিসের প্রতি ব্যবহার করা হয়, তাহলে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হবে স্বল্প জ্ঞানী ও নির্বোধ। ইমাম কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ছোটদের আদর ও স্নেহ করা। ইমাম ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: এ হাদীস প্রমাণ করে যে, “মুআনাকা” করা বা ঘাড়ের সাথে ঘাড় মিলানো বৈধ।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মুআনাকা করার ক্ষেত্রে ছোটদের স্পর্শ করা ও তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করা বৈধ। ছোট শিশু ও অন্যান্যদের সাথে বিনয় নম্র ব্যবহার করা মুস্তাহাব।
(اللَّهُمَّ إِنِّي أُحِبُّهُ فَأَحِبَّهُ وَأَحِبَّ مَنْ يُحِبُّهُ) “হে আল্লাহ! আমি তাকে ভালোবাসি, তুমিও তাকে ভালোবাসো আর যে তাকে ভালোবাসবে তুমি তাকেও ভালোবাসো।”
মিরকাতুল মাফাতীহ প্রণেতা এ কথার ব্যাখ্যায় বলেন, এর অর্থ হলো: হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে তার প্রেমিক ও বন্ধু বানাও। আমাদের তার শত্রু ও দুশমন বানিও না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১৪৪-[১০] আবূ বকরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে এমন অবস্থায় মিম্বারের উপর দেখলাম যে, তাঁর পাশে রয়েছেন হাসান ইবনু ’আলী। আর নবী (সা.) কখনো লোকেদের প্রতি তাকাচ্ছেন, আবার কখনো হাসানের দিকে তাকিয়ে বলছেন, আমার এ পুত্র নেতা এবং সম্ভবত আল্লাহ তা’আলা এর দ্বারা মুসলিমদের দু’টি বিরোধমান বড় দলের মধ্যে সমঝোতা করিয়ে দেবেন। (বুখারী)
الفصل الاول (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)
وَعَن أبي بكرَة قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمِنْبَرِ وَالْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ إِلَى جَنْبِهِ وَهُوَ يُقْبِلُ عَلَى النَّاسِ مَرَّةً وَعَلَيْهِ أُخْرَى وَيَقُولُ: «إِنَّ ابْنِي هَذَا سَيِّدٌ وَلَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يُصْلِحَ بِهِ بَيْنَ فِئَتَيْنِ عَظِيمَتَيْنِ مِنَ الْمُسْلِمِينَ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (2704) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (إِنَّ ابْنِي هَذَا سَيِّدٌ) ইমাম তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাসান (রাঃ)-কে নবী (সা.) যে সাইয়িদ বা নেতা নামে নামকরণ করেছেন তা তার মর্যাদা ও সম্মানের জন্য যথেষ্ট। তিনি বড় দুটি দলের গুণ বর্ণনা করেছেন, কেননা মুসলিমরা সেদিন দু'টি দলে বিভক্ত হবে, একটি দল হাসান (রাঃ)-এর পক্ষে থাকবে। অপরটি মু'আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর পক্ষে থাকবে। আর সেদিন হাসান (রাঃ) এ দায়িত্বের সবচেয়ে হকদার হবে।
শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থে বলা হয়েছে, এ হাদীস প্রমাণ করে ঐ দু'টি দলের একটি দলও ফিতনার সময় কথা ও কর্মের মাধ্যমে ইসলাম হতে বের হয়ে যায়নি। কেননা একটি দল বিপদগ্রস্ত ও অন্যটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও নবী (সা.) সকলকে মুসলিম বলে সম্বোধন করেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১৪৫-(১১) আবদুর রহমান ইবনু আবূ নু’ম (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যখন জনৈক (ইরাকী) লোক মুহরিম সম্পর্কে তাঁকে প্রশ্ন করল। শুবাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমার ধারণা, মাছি মারলে (কি হবে) তিনি উত্তরে বললেন, যে ’ইরাকবাসী রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর দৌহিত্রকে হত্যা করেছে, আমাকে তারা মাছি সম্পর্কে প্রশ্ন করছে? অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এরা দু’জন (হাসান ও হুসায়ন) দুনিয়াতে আমার দুটি সুগন্ধি ফুলবিশেষ। (বুখারী)
الفصل الاول (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي نُعْمٍ قَالَ: سمعتُ عبدَ اللَّهِ بن عُمَرَ وَسَأَلَهُ رَجُلٌ عَنِ الْمُحْرِمِ قَالَ شُعْبَةُ أَحْسَبُهُ يَقْتُلُ الذُّبَابَ؟ قَالَ: أَهْلُ الْعِرَاقِ يَسْأَلُونِي عَنِ الذُّبَابِ وَقَدْ قَتَلُوا ابْنَ بِنْتُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هُمَا رَيْحَانَّيَّ مِنَ الدُّنْيَا» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (3753) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (يَسْأَلُونِي عَنِ الذُّبَابِ) এই জিজ্ঞাসার ভাবার্থ হলো, তারা বা ‘ইরাকবাসী তাদের চরিত্রে পূর্ণ “তাক্বওয়া” প্রকাশ করছে অথচ এর চেয়ে শত বড় কাণ্ড ঘটিয়েছে সেদিকে তারা বেখবর রয়েছে।
‘দাখায়ির' গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, হাসান ও হুসায়ন (রাঃ) নবী (সা.)-এর সুঘ্রাণ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এটা এক প্রকারের রিযক যা তাকে দান করা হয়েছিল দুনিয়াতে।
কেউ কেউ বলেন, তারা উভয়ে নবী (সা.) -এর জান্নাতী সুঘ্রাণ ছিল দুনিয়াতে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
জারীর ইবন হাযম (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইবনু উমার (রাঃ)-এর মশার রক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যা কাপড়ে লেগে যায়। অপরদিকে হাদীসে এসেছে, মাছি হত্যা। এর সমাধান হলো প্রশ্ন প্রকৃতপক্ষে দুই বিষয়েই করা হয়েছিল। (ফাতহুল বারী হা. ৩৭৫৩)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১৪৬-[১২] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.)-এর সাথে ’আলী তনয় হাসান (রাঃ) হতে আকৃতিতে অধিক সাদৃশ্য আর কারো ছিল না। বর্ণনাকারী আনাস (রাঃ) হুসায়ন (রাঃ) সম্পর্কেও বলেছেন যে, তিনি সকলের মাঝে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে অধিক সাদৃশ্য ছিলেন। (বুখারী)
الفصل الاول (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: لَمْ يَكُنْ أَحَدٌ أَشْبَهَ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الْحَسَنِ بن عليّ وَقَالَ فِي الْحسن أَيْضًا: كَانَ أَشْبَهَهُمْ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
رواہ البخاری (3752 ، 3748) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (كَانَ أَشْبَهَهُمْ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) হুসায়ন (রাঃ) নবী (সা.) -এর সাথে সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্য ছিল আহলে বায়তদের মধ্য হতে। তাঁকে যিয়াদ-এর ছেলে ‘উবায়দুল্লাহ ৬১ হিজরীতে ইয়াযীদ ইবনু মু'আবিয়াহ্ খিলাফতকালে হত্যা করে। উক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা যায়: (১) হুসায়ন (রাঃ)-এর মর্যাদা। (২) নবী (সা.) -এর সাথে হুসায়ন (রাঃ)-এর মিল। (ফাতহুল বারী হা. ৩৭৪৭)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১৪৭-[১৩] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) আমাকে একদিন তার বুকের সাথে জড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহ! একে হিকমাত শিক্ষা দান করুন। অপর এক বর্ণনায় আছে, একে কিতাব (কুরআন)-এর জ্ঞান দান করুন। (বুখারী)
الفصل الاول (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)
وَعَن ابْن عَبَّاس قَالَ: ضَمَّنِي النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى صَدْرِهِ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ عَلِّمْهُ الْحِكْمَةَ» وَفِي رِوَايَة: «علمه الْكتاب» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (3756) ۔
(صَحِيح)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১৪৮-[১৪] উক্ত রাবী [ইবনু আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী (সা.) টয়লেটে প্রবেশ করলেন। এ সময় তাঁর জন্য আমি উযূর পানি রেখে দিলাম। অতঃপর তিনি (সা.) বাইরে এসে জিজ্ঞেস করলেন, এ পানি এখানে কে রেখেছে? তাঁকে অবহিত করা হলো তখন তিনি (সা.) দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! তাকে দীনের জ্ঞান দান কর। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)
وَعَنْهُ قَالَ: إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ الْخَلَاءَ فَوَضَعْتُ لَهُ وَضُوءًا فَلَمَّا خَرَجَ قَالَ: «مَنْ وَضَعَ هَذَا؟» فَأُخْبِرَ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ فقهه فِي الدّين» . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (143) و مسلم (138 / 2477)، (6368) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১৪৯-[১৫] উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) তাঁকে এবং হাসান (রাঃ)-কে একত্রে কোলে রেখে বলতেন, হে আল্লাহ! আমি এ দু’জনকে ভালোবাসি, আপনিও এদেরকে ভালোবাসুন।
অপর এক বর্ণনাতে আছে, উসামাহ্ (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে নিয়ে তাঁর এক উরুতে (রানে) বসাতেন এবং হাসান ইবনু ’আলী (রাঃ)-কে অপর রানের উপর বসাতেন, অতঃপর দুজনকে একত্রে মিলিয়ে দু’আ করতেন, হে আল্লাহ! আপনি এদের প্রতি রহম করুন, আমিও এদের প্রতি অনুগ্রহশীল। (বুখারী)
الفصل الاول (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)
وَعَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ كَانَ يَأْخُذُهُ وَالْحَسَنَ فَيَقُولُ: «اللَّهُمَّ أَحِبَّهُمَا فَإِنِّي أُحبُّهما» وَفِي رِوَايَةٍ: قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْخُذُنِي فَيُقْعِدُنِي عَلَى فَخِذِهِ وَيُقْعِدُ الْحَسَنَ بْنَ عَلِيٍّ عَلَى فَخِذِهِ الْأُخْرَى ثُمَّ يَضُمُّهُمَا ثُمَّ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ ارْحَمْهُمَا فَإِنِّي أرحمُهما» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (3735) و الروایۃ الثانیۃ ، رواھا البخاری (6003) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (اللَّهُمَّ ارْحَمْهُمَا فَإِنِّي أرحمُهما) হাদীস হতে অনুধাবন করা যায়, নবী (সা.) একমাত্র আল্লাহর জন্য ও আল্লাহর উদ্দেশে ভালোবাসতেন। এ কারণে আল্লাহর ভালোবাসা তাঁর ভালোবাসার সাথে যুক্ত করেছেন। এ হাদীসে আরো হাসান (রাঃ) ও উসামাহ্ (রাঃ) -এর মহা মর্যাদা প্রকাশ পেয়েছে। (ফাতহুল বারী হা. ৩৭৩৫, মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
তাদের উভয়ের প্রতি পরিপূর্ণ দয়া করুন এমন দয়া যা উভয়কে অমুখাপেক্ষী রাখবে অন্যদের দয়া থেকে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১৫০-[১৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) কোন এক যুদ্ধের উদ্দেশে একদল সৈন্য পাঠান এবং উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ)-কে তাদের নেতা মনোনীত করলেন। তখন কিছু লোক উসামার নেতৃত্ব সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতে লাগল। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, তোমরা আজ উসামার নেতৃত্ব সম্পর্কে বিরূপ সমালোচনা করছে, ইতোপূর্বে তোমরা তো তার পিতার [অর্থাৎ যায়দ ইবনু হারিসাহ্ (রাঃ)-এর] নেতৃত্ব সম্পর্কেও বিরূপ সমালোচনা করেছিলে। আল্লাহর শপথ! তিনি (যায়দ) নিশ্চয় নেতৃত্বের যোগ্য ছিলেন এবং তিনি আমার সবচেয়ে প্রিয় লোকেদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আর তার পরে (তাঁর পুত্র) উসামাহ্ আমার সর্বাধিক প্রিয় লোকেদের মাঝে একজন। (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিম-এর এক বর্ণনার মধ্যে অনুরূপ বর্ণিত হওয়ার পর হাদীসটির শেষাংশে বলা হয়েছে, তার নেতৃত্ব মেনে নেয়ার জন্য আমি তোমাদেরকে নাসীহত করছি। কেননা সে (উসামাহ্) তোমাদের মাঝে একজন সৎ লোক।
الفصل الاول (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ بَعْثًا وَأَمَّرَ عَلَيْهِمْ أُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ فَطَعَنَ بَعْضُ النَّاسِ فِي إِمَارَتِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنْ كُنْتُمْ تَطْعَنُونَ فِي إِمَارَتِهِ فَقَدْ كُنْتُمْ تَطْعَنُونَ فِي إِمَارَةِ أَبِيهِ مِنْ قَبْلُ وَأَيْمُ اللَّهِ إِنْ كَانَ لَخَلِيقًا لِلْإِمَارَةِ وَإِنْ كَانَ لَمِنْ أَحَبِّ النَّاسِ إِلَيَّ وَإِنَّ هَذَا لَمِنْ أَحَبِّ النَّاسِ إِلَيَّ بَعْدَهُ» مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ نَحْوُهُ وَفِي آخِره: «أوصيكم بِهِ فَإِنَّهُ من صالحيكم»
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3730) و مسلم (63 / 2426 و الروایۃ الثانیۃ : 64 / 2426)، (6264 و 6265) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ بَعْثًا) এটা সেই দল যে দলটি নবী (সা.)- মৃত্যুর পূর্বে অসুস্থ হয়ে গেলে তাদের প্রস্তুত করতে আদেশ দেন আর আবূ বাকর (রাঃ) এ কাজটি বাস্তবায়ন করেন নবী (সা.)-এর মৃত্যুর পর।
(فَقَدْ كُنْتُمْ تَطْعَنُونَ فِي إِمَارَةِ أَبِيهِ مِنْ قَبْلُ) এখানে মুতা’ যুদ্ধে উসামাহ্ (রাঃ)-এর পিতা যায়দ ইবনু হারিসাহ্-এর নেতত্বের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
উক্ত হাদীসে যে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয় সেগুলো নিম্নরূপ, (১) আযাদকৃত দাসের নেতৃত্ব বৈধ, (২) বড়দের ওপর ছোট ব্যক্তির নেতৃত্ব বৈধ, (৩) সাধারণ ব্যক্তির নেতৃত্ব শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির ওপর বৈধ। কেননা উসামাহ (রাঃ)-এর সৈন্যের অধীনে আবূ বাকর (রাঃ) ও ‘উমার (রাঃ) ছিলেন। (ফাতহুল বারী হা, ৩৭৩০)।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উসামাহ্ (রাঃ)-এর নেতত্বের ক্ষেত্রে সমালোচনা করার একটি কারণ রয়েছে আর সেটা হলো জাহিলী যুগের অভ্যাস।
ইমাম তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যারা উভয়ের নেতত্বের ব্যাপারে সমালোচনা করেছিল। তারা কারণ হিসেবে তুলে ধরেন যে, তারা উভয়ে দাস ছিল। আর আরবরা মনে করত কোন দাস নেতা হতে পারে না, আর তারা দাসে অনুসরণ করা হতে সম্পূর্ণভাবে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখত। যখন আল্লাহ ইসলাম নিয়ে আসলেন তখন এ সমস্ত মিথ্যা প্রাচীরগুলো সরিয়ে দিলেন।
নবী (সা.) যায়দ ইবনু হারিসাহ-এর নেতত্বে অনেক যুদ্ধ প্রেরণ করেন। তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় সৈন্যবাহিনী ছিল মুতার যুদ্ধে। এ সমস্ত যুদ্ধে তার অধীনে অনেক বড় মর্যাদাপূর্ণ সাহাবী ছিলেন। তাদের মধ্য হতে জা'ফার ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) যিনি সকল দিক হতে শ্রেষ্ঠ ছিলেন এবং নবী (সা.) -এর নিকটবর্তী হওয়ার দিক থেকেও। এরপর উসামাহ (রাঃ)-এর নেতত্বে সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন। তার অধীনেও অনেক মর্যাদাপূর্ণ সাহাবী ছিলেন। এসব কিছু করার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো কেউ যেন আনুগত্যের হাত গুটিয়ে না রাখে এবং জাহিলী যুগের ভ্রান্ত অভ্যাস পরিত্যাগ করে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১৫১-[১৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যায়দ ইবনু হারিসাহ্ (রাঃ) ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বাধীন দাস। আমরা তাকে যায়দ ইবনু মুহাম্মাদ (অর্থাৎ মুহাম্মাদ -এর পুত্র) বলে ডাকতাম। অতঃপর যখন কুরআনের এ আয়াত (أُدعوهم لِآبَائِهِمْ) “তাদেরকে তাদের প্রকৃত বাপের পরিচয়ে ডাকো”- (সূরা আল আহযাব ৩৩: ৫); অবতীর্ণ হয়, তখন আমরা যায়দ ইবনু মুহাম্মাদ বলা হতে ক্ষান্ত হয়েছি। (বুখারী ও মুসলিম)
বারা’ কর্তৃক বর্ণিত হাদীস, নবী (সা.) ’আলী (রাঃ)-কে বলেছেন, (أَنْتَ مِنِّي) (হে ’আলী!) তুমি আমার হতে, এটা শিশুর বয়ঃপ্রাপ্তি ও তার প্রতিপালন’ অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে।
الفصل الاول (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)
وَعَنْهُ قَالَ: إِنَّ زَيْدٍ بْنِ حَارِثَةَ مَوْلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا كُنَّا نَدْعُوهُ إِلَّا زَيْدَ بْنَ مُحَمَّدٍ حَتَّى نزل الْقُرْآن [أُدعوهم لِآبَائِهِمْ] مُتَّفق عَلَيْهِ وَذكر حَدِيث الْبَراء قَالَ لعليّ: «أَنْتَ مِنِّي» فِي «بَابِ بُلُوغِ الصَّغِيرِ وَحَضَانَتِهِ»
متفق علیہ ، رواہ البخاری (4782) و مسلم (62 / 2425)، (6262) 0 حدیث البراء تقدم (3377) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)