পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পরিবার-পরিজনদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১৫০-[১৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) কোন এক যুদ্ধের উদ্দেশে একদল সৈন্য পাঠান এবং উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ)-কে তাদের নেতা মনোনীত করলেন। তখন কিছু লোক উসামার নেতৃত্ব সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতে লাগল। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, তোমরা আজ উসামার নেতৃত্ব সম্পর্কে বিরূপ সমালোচনা করছে, ইতোপূর্বে তোমরা তো তার পিতার [অর্থাৎ যায়দ ইবনু হারিসাহ্ (রাঃ)-এর] নেতৃত্ব সম্পর্কেও বিরূপ সমালোচনা করেছিলে। আল্লাহর শপথ! তিনি (যায়দ) নিশ্চয় নেতৃত্বের যোগ্য ছিলেন এবং তিনি আমার সবচেয়ে প্রিয় লোকেদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আর তার পরে (তাঁর পুত্র) উসামাহ্ আমার সর্বাধিক প্রিয় লোকেদের মাঝে একজন। (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিম-এর এক বর্ণনার মধ্যে অনুরূপ বর্ণিত হওয়ার পর হাদীসটির শেষাংশে বলা হয়েছে, তার নেতৃত্ব মেনে নেয়ার জন্য আমি তোমাদেরকে নাসীহত করছি। কেননা সে (উসামাহ্) তোমাদের মাঝে একজন সৎ লোক।
الفصل الاول (بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ)
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ بَعْثًا وَأَمَّرَ عَلَيْهِمْ أُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ فَطَعَنَ بَعْضُ النَّاسِ فِي إِمَارَتِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنْ كُنْتُمْ تَطْعَنُونَ فِي إِمَارَتِهِ فَقَدْ كُنْتُمْ تَطْعَنُونَ فِي إِمَارَةِ أَبِيهِ مِنْ قَبْلُ وَأَيْمُ اللَّهِ إِنْ كَانَ لَخَلِيقًا لِلْإِمَارَةِ وَإِنْ كَانَ لَمِنْ أَحَبِّ النَّاسِ إِلَيَّ وَإِنَّ هَذَا لَمِنْ أَحَبِّ النَّاسِ إِلَيَّ بَعْدَهُ» مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ نَحْوُهُ وَفِي آخِره: «أوصيكم بِهِ فَإِنَّهُ من صالحيكم» متفق علیہ ، رواہ البخاری (3730) و مسلم (63 / 2426 و الروایۃ الثانیۃ : 64 / 2426)، (6264 و 6265) ۔ (مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ بَعْثًا) এটা সেই দল যে দলটি নবী (সা.)- মৃত্যুর পূর্বে অসুস্থ হয়ে গেলে তাদের প্রস্তুত করতে আদেশ দেন আর আবূ বাকর (রাঃ) এ কাজটি বাস্তবায়ন করেন নবী (সা.)-এর মৃত্যুর পর।
(فَقَدْ كُنْتُمْ تَطْعَنُونَ فِي إِمَارَةِ أَبِيهِ مِنْ قَبْلُ) এখানে মুতা’ যুদ্ধে উসামাহ্ (রাঃ)-এর পিতা যায়দ ইবনু হারিসাহ্-এর নেতত্বের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
উক্ত হাদীসে যে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয় সেগুলো নিম্নরূপ, (১) আযাদকৃত দাসের নেতৃত্ব বৈধ, (২) বড়দের ওপর ছোট ব্যক্তির নেতৃত্ব বৈধ, (৩) সাধারণ ব্যক্তির নেতৃত্ব শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির ওপর বৈধ। কেননা উসামাহ (রাঃ)-এর সৈন্যের অধীনে আবূ বাকর (রাঃ) ও ‘উমার (রাঃ) ছিলেন। (ফাতহুল বারী হা, ৩৭৩০)।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উসামাহ্ (রাঃ)-এর নেতত্বের ক্ষেত্রে সমালোচনা করার একটি কারণ রয়েছে আর সেটা হলো জাহিলী যুগের অভ্যাস।
ইমাম তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যারা উভয়ের নেতত্বের ব্যাপারে সমালোচনা করেছিল। তারা কারণ হিসেবে তুলে ধরেন যে, তারা উভয়ে দাস ছিল। আর আরবরা মনে করত কোন দাস নেতা হতে পারে না, আর তারা দাসে অনুসরণ করা হতে সম্পূর্ণভাবে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখত। যখন আল্লাহ ইসলাম নিয়ে আসলেন তখন এ সমস্ত মিথ্যা প্রাচীরগুলো সরিয়ে দিলেন।
নবী (সা.) যায়দ ইবনু হারিসাহ-এর নেতত্বে অনেক যুদ্ধ প্রেরণ করেন। তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় সৈন্যবাহিনী ছিল মুতার যুদ্ধে। এ সমস্ত যুদ্ধে তার অধীনে অনেক বড় মর্যাদাপূর্ণ সাহাবী ছিলেন। তাদের মধ্য হতে জা'ফার ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) যিনি সকল দিক হতে শ্রেষ্ঠ ছিলেন এবং নবী (সা.) -এর নিকটবর্তী হওয়ার দিক থেকেও। এরপর উসামাহ (রাঃ)-এর নেতত্বে সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন। তার অধীনেও অনেক মর্যাদাপূর্ণ সাহাবী ছিলেন। এসব কিছু করার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো কেউ যেন আনুগত্যের হাত গুটিয়ে না রাখে এবং জাহিলী যুগের ভ্রান্ত অভ্যাস পরিত্যাগ করে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)