পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৫৯২-[২৭] সাওবান (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: আমার হাওয ’আদান থেকে বালকা’র ’উম্মানের মধ্যবর্তী দূরত্ব পরিমাণ হবে। তার পানি দুগ্ধ অপেক্ষা সাদা ও মধুর চেয়ে মিষ্টি এবং তার পানপাত্রের সংখ্যা আকাশের নক্ষত্রের মতো অগণিত। যে তা থেকে এক ঢোক পান করবে, সে আর কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। উক্ত হাওযের কাছে সর্বপ্রথম ঐ সকল গরীব মুহাজিরীনগণ আসবে, যাদের মাথার চুল অগোছালো, পরনের কাপড়-চোপড় ময়লা, সম্ভ্রান্ত পরিবারের মহিলাগণকে যাদের সাথে বিবাহ দেয়া হয় না এবং তাদের জন্য (গৃহের) দরজা খোলা হয় না। [আহমাদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ এবং ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীসটি গরীব]
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
عَن ثَوْبَانَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «حَوْضِي مِنْ عَدَنٍ إِلَى عُمَّانَ الْبَلْقَاءِ مَاؤُهُ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ وَأَحْلَى مِنَ الْعَسَلِ وَأَكْوَابُهُ عَدَدُ نُجُومِ السَّمَاءِ مَنْ شَرِبَ مِنْهُ شَرْبَةً لَمْ يَظْمَأْ بَعْدَهَا أَبَدًا أَوَّلُ النَّاسِ وُروداً فقراءُ المهاجرينَ الشُّعثُ رؤوساً الدُّنْسُ ثِيَابًا الَّذِينَ لَا يَنْكِحُونَ الْمُتَنَعِّمَاتِ وَلَا يُفْتَحُ لَهُمُ السُّدَدُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ. وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
سندہ ضعیف ، رواہ احمد (5 / 275 ح 22725) و الترمذی (2444) و ابن ماجہ (4303) * السند منقطع ، العباس بن سالم لم یسمعہ من ابی سلام ، انظر سنن ابن ماجہ (4303) و احادیث مسلم (2301)، (5990) و ابن حبان (الموارد : 2601) وغیرھما تغنی عنہ
ব্যাখ্যা: কিয়ামতের দিন প্রত্যেক নবীর একটা করে হাওয হবে। অত্র হাদীসে নবী (সা.) -এর হাওযের পরিধি ও অন্যান্য কতিপয় গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে। নবী (সা.) বলেছেন, আমার হাওয এডেন (আদন) থেকে বালকার আম্মান-এর মধ্যবর্তী দূরত্ব পরিমাণ হবে। ‘আদন (এডেন) হলো ইয়ামানের সীমান্তে ভারত সাগর সংলগ্ন একটি স্থান। আম্মান হলো সিরিয়ার বালকা শহরের একটি স্থান। এখানে হাওযে কাওসারের প্রশস্ততা চিহ্নিত করার জন্য দু'টি স্থানের কথা বলা হয়েছে। অন্য হাদীসে, আয়লাহ্ থেকে সন্’আ পর্যন্ত। আবার হারিসার হাদীসে সন্'আ থেকে মদীনার দূরত্বের কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন বর্ণনার দ্বারা কেবল হাওযে কাওসারের দীর্ঘতা অথবা প্রশস্ততা বুঝানোই উদ্দেশ্য, হুবহু সীমা বর্ণনা উদ্দেশ্য নয়। আল্লাহর রাসূল প্রত্যেক ব্যক্তিকে সহজভাবে বুঝানোর জন্য তার পরিচিত জায়গার নাম উচ্চারণ করেছেন।
হাদীসের বাণী, “তার পানি দুধের চেয়েও অধিক সাদা” এতে ইশারা রয়েছে যে, সাদা সবচেয়ে পছন্দনীয় রং। অবশ্য কেউ কেউ স্বভাবগতভাবে হলুদকে প্রিয় মনে করে থাকে।
‘তা মধুর চেয়েও মিষ্টি, এর অর্থ মধুর চেয়েও সুস্বাদু। এছাড়াও এতে রয়েছে বান্দার জন্য আরোগ্য বিধান।
‘তার পানপাত্রসমূহ আকাশের নক্ষত্রসম', এ বাক্যে (أَكْوَابُ) শব্দটি (كُوْبٌ)-এর বহুবচন, অর্থ পেয়ালা, গ্লাস, পানপাত্র। এটা এমন হবে যার কোন হাতল এবং নল হবে না।
উম্মতে মুহাম্মাদী (সা.) - (সুন্নাতের অনুসারীরা) নবীজীর হাতে এখান থেকে এক পেয়ালা করে পানি পান করবে। যে এক পেয়ালা পান করবে সে জান্নাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আর পিপাসার্ত হবে না।
এ পানি পানকারীদের মর্যাদার স্তর হবে। সর্বপ্রথম স্তরের পানকারী হবে ঐ গরীব মুহাজির সাহাবীগণ যাদের চুলগুলো ছিল এলোমেলো উষ্কখুশকো, পরনে ছিল ময়লাযুক্ত পুরাতন ও ছিন্ন বস্ত্র, হতদরিদ্রতার কারণে কোন সম্পদশালী সম্ভ্রান্ত লোক তাদের কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে চাইত না, তারা কোন বাড়ীতে গিয়ে ডাক দিলে তাদের জন্য বন্ধ দরজাও খোলা হত না। এরা সর্বপ্রথম হাওযে কাওসারের পানি এজন্য পান করবে যে, তারাই হলো বাহ্যিক এবং আত্মিকভাবে প্রকৃত পিপাসিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারা দুনিয়াতে অধিক ক্ষুধার্ত থাকবে আখিরাতে তারাই হবে অধিক পরিতৃপ্ত। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
(کُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا هَنِیۡٓـئًۢا بِمَاۤ اَسۡلَفۡتُمۡ فِی الۡاَیَّامِ الۡخَالِیَۃِ)
“(নির্দেশ হবে যে,) তোমরা সানন্দে খাও এবং পান কর ঐ সমস্ত কাজের বিনিময়ে যা তোমরা বিগত দিনে প্রতিদানের আশায় করেছিলে।” (সূরা আল হাককাহ্ ৬৯: ২৪)।
মুহাজির হলো যারা মক্কাহ্ থেকে মদীনায় হিজরত করেছিলেন। হাদীসে বর্ণিত মুহাজির দ্বারা উদ্দেশ্য তারাই, যদিও বাড়ী-ঘর বা মাতৃভূমি থেকে যারাই হিজরত করেছে তারাই মুহাজির নামের অন্তর্ভুক্ত। মুহাজিরগণ আল্লাহর জন্য স্বীয় আবাসভূমি ত্যাগ করেছেন, প্রাচুর্যতার উপর দারিদ্রতাকে বেছে নিয়েছেন, প্রসিদ্ধির চেয়ে নিজের দুর্বলতাকে, সম্মান-খ্যাতি ও ধন-সম্পদ আহরণের চেয়ে দুনিয়াবিরাগীকে পছন্দ করে নিয়েছেন আর আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষে “ইলম ও ‘আমলেই নিমগ্ন থেকেছেন। ফলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা পুরস্কারকে অগ্রণী করবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা, ২৪৪৪)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৫৯৩-[২৮] যায়দ ইবনু আরকম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে কোন এক সফরে ছিলাম। এক মনযিলে আমরা অবস্থান করলাম। তখন তিনি (সা.) উপস্থিত লোকেদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, হাওযে কাওসারে যে সকল লোক উপস্থিত হবে, তোমাদের সংখ্যা তাদের লক্ষ ভাগের এক ভাগও নয়। লোকেরা যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ)-কে প্রশ্ন করল, সেদিন আপনাদের সংখ্যা কত ছিল? তিনি বললেন, সাতশত অথবা আটশত। (আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَزَلْنَا منزلا فَقَالَ: «مَا أَنْتُمْ جُزْءٌ مِنْ مِائَةِ أَلْفِ جُزْءٍ مِمَّنْ يَرِدُ عَلَى الْحَوْضِ» . قِيلَ: كَمْ كُنْتُمْ يَوْمَئِذٍ؟ قَالَ: سَبْعَمِائَةٍ أَوْ ثَمَانِمِائَةٍ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
اسنادہ صحیح ، رواہ ابوداؤد (4746) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে কোন্ সফরের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে তা উল্লেখ নেই। এ সফরের প্রত্যেকেই সাহাবী ছিলেন এবং তাদের সংখ্যা ছিল সাত থেকে আটশত। এরা কিয়ামতের দিন সবাই রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নিকট হাওযে কাওসারের পাড়ে উপনীত হবেন। এ কয়জন সাহাবী হাওযের পাড়ে উপনীত জনসংখ্যার লক্ষ ভাগের একভাগও নয়। এখানে নির্দিষ্ট সংখ্যা উদ্দেশ্য নয়, বরং আধিক্যতাই উদ্দেশ্য। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা.) - এর বেশি উম্মত হাওযের পানি পান করবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, 'আওনুল মা'বুদ ৮ম খণ্ড, ১৪৮ পৃ., হা, ৪৭৩৩)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৫৯৪-[২৯] সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতে প্রত্যেক নবীর এক একটি হাওয হবে এবং নবীগণ নিজেদের হাওয নিয়ে গর্ব করবেন যে, কার হাওযে আগমনকারীর সংখ্য বেশি। কিন্তু আমি আশা করি যে, আমার হাওযে আগমনকারীর সংখ্যা হবে তাদের সকলের চেয়ে বেশি। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, হাদীসটি গরীব]
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَن سَمُرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ لِكُلِّ نَبِيٍّ حَوْضًا وَإِنَّهُمْ لَيَتَبَاهَوْنَ أَيُّهُمْ أَكْثَرُ وَارِدَةً وَإِنِّي لَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَكْثَرَهُمْ وَارِدَةً» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيب
ضعیف ، رواہ الترمذی (2443) * سعید بن بشیر : ضعیف و قتادۃ مدلس و عنعن
ব্যাখ্যা: প্রত্যেক নবীর পৃথক পৃথক হাওয হবে এবং তাদের উম্মাতেরা সেখান থেকে পান করবেন। নবীগণ নিজ নিজ উম্মাতের আধিক্যতা নিয়ে গর্ব করবেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি আশা করি হাওযের কিনারায় অধিকাংশ লোক হব আমরা।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এ আশা ব্যক্ত করেন ঐ সময় যখন তার জান্নাতী উম্মাতের সংখ্যা জানা ছিল না। কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহর জান্নাতী উম্মাতের সংখ্যা হবে আশি কাতার আর অন্যান্য সকল নবীর জান্নাতী উম্মাতের সংখ্যা হবে চল্লিশ কাতার। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৩৪৭ পৃ., হা, ২৪৪৩)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৫৯৫-[৩০] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সা.) -এর নিকটে আবেদন করলাম, কিয়ামতের দিন আপনি অনুগ্রহপূর্বক আমার জন্য বিশেষভাবে শাফা’আত করবেন। তিনি (সা.) বললেন, আচ্ছা আমি তা করব। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে কোথায় অনুসন্ধান করব? তিনি (সা.) বললেন, সর্বপ্রথম তুমি আমাকে পুলসিরাতের উপর অনুসন্ধান করবে। বললাম, যদি আমি আপনাকে পুলসিরাতের সাক্ষাৎ না পাই? তিনি (সা.) বললেন, তখন তুমি আমাকে মীযানের (’আমলনামা ওযনের) কাছে খোঁজ করে বললাম, যদি আমি আপনাকে মীযানের কাছেও সাক্ষাৎ না পাই? তিনি (সা.) বললেন, তখন তুমি আমাকে হাওযে কাওসারের কাছে অনুসন্ধান করব। স্মরণ রাখ, আমি এ তিন জায়গা থেকে অনুপস্থিত থাকব না। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, হাদীসটি গরীব।]
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَن أنس قا ل سَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَشْفَعَ لِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَقَالَ: «أَنَا فَاعِلٌ» . قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَأَيْنَ أَطْلُبُكَ؟ قَالَ اطْلُبْنِي أَوَّلَ مَا تَطْلُبُنِي عَلَى الصِّرَاطِ . قُلْتُ فَإِنْ لَمْ أَلْقَكَ عَلَى الصِّرَاطِ؟ قَالَ: «فَاطْلُبْنِي عِنْدَ الْمِيزَانِ» قُلْتُ فَإِنْ لَمْ أَلْقَكَ عِنْدَ الْمِيزَانِ؟ قَالَ: «فَاطْلُبْنِي عِنْدَ الْحَوْضِ فَإِنِّي لَا أُخطىءُ هَذِه الثلاثَ المواطن» رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وقا لهَذَا حَدِيث غَرِيب
اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (2433) ۔
(إِسْنَاده جيد)
ব্যাখ্যা: কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর শাফা'আত হবে দু’ প্রকার। ১) শাফা'আতে আম্মাহ্ বা সাধারণ শাফা'আত। ২) শাফা'আতে খসসাহ বা বিশেষ শাফা'আত।
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নিকট শাফা'আতে খসসাহ বা বিশেষ শাফা'আতের আবেদন করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে শাফা'আতের স্বীকৃতি দিলে তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেদিন আমি আপনাকে কোথায় সন্ধান করব?
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ হলো যে সকল স্থানে আপনার শাফা'আতের মুখাপেক্ষী হব আর সেই সকল ঘাঁটি পাড়ি দিতে আপনার শাফা'আত তলব করব, সে সময় আপনাকে কোথায় খুঁজে পাব? রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে তিনটি স্থানে সন্ধান করার কথা বললেন।
হিসাব-নিকাশের পর্বের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে ‘আয়িশাহ্ এ কর্তৃক বর্ণিত হাদীস, “(হে আল্লাহর রাসূল!) কিয়ামতের দিন আপনি আপনার পরিবার-পরিজনকে স্মরণ করবেন কি? জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, জেনে রেখ (হে ‘আয়িশাহ!) তিনটি জায়গা এমন হবে যেখানে কেউ কাউকে স্মরণ করবে না...।” উভয় হাদীসের মধ্যে বিরোধ পরিলক্ষিত হচ্ছে, এর সমন্বয় কিভাবে হবে?
‘আল্লামাহ্ মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ‘আয়িশার প্রশ্নের জওয়াবে যা বলেছিলেন তা এজন্য যে, সে যেন রসূলের স্ত্রী হওয়ার উপর ভরসা করে বসে না থাকেন। আর আনাস-কে রাসূলুল্লাহ (সা.) যে উত্তর দিয়েছিলেন তা এজন্য যে, সে যেন নিরাশ হয়ে না যায়।
প্রশ্ন হতে পারে যে, রসূলের খাদিম হওয়ার কারণে আনাস (রাঃ) -ও তো ভরসা করে বসে থাকতে পারে? অনুরূপভাবে নিরাশ না হওয়ার বিষয়টি আয়িশার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে? উত্তরে বলা যায় যে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) -এর হাদীসটি অনুপস্থিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, আর আনাস (রাঃ)-এর হাদীসটি উপস্থিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অর্থাৎ কোন অনুপস্থিত ব্যক্তিকে কেউ স্মরণ করবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৩৩৪ পৃ., হা. ২৪৩৩)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৫৯৬-[৩১] ইবনু মা’ঊদ (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: একদিন তাকে প্রশ্ন করা হলো, (আল্লাহর ওয়াদাকৃত) মাকামে মাহমূদ কী? তিনি (সা.) বললেন, তা এমন একদিন আল্লাহ তা’আলা তাঁর কুরসীতে অবতরণ করবেন যেদিন তা এমনভাবে কড়মড় করবে, যেমন ঠাসাঠাসির কারণে কড়মড় করে থাকে চামড়ার তৈরি নতুন গদি। কুরসীর প্রশস্ততা হবে আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী দূরত্বের পরিমাণ। অতঃপর তোমাদেরকে কাপড়হীন, খালি পায়ে ও খতনাবিহীন অবস্থায় উপস্থিত করা হবে। সেদিন যাদেরকে পোশাক পরিধান করানো হবে, তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম লোক হবেন ইবরাহীম আলায়হিস সালাম। আল্লাহ তা’আলা মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাদের)-কে আদেশ দেবেন আমার বন্ধু ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে তোমরা পোশাক পরিয়ে দাও। তখন জান্নাতের কোমল রেশমি ধবধবে সাদা দু’খানা কাপড় আনা হবে এবং তা তাকে পরানো হবে। অতঃপর আমাকে পোশাক পরিধান করানো হবে। তারপর আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ডান পার্শ্বে এমন এক স্থানে দণ্ডায়মান হব, যা দেখে পূর্বের ও পরের (সমস্ত মানুষ) আমার প্রতি ঈর্ষা পোষণ। করবে। (দারিমী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قا ل: قيل لَهُ مَا الْمقَام الْمَحْمُود؟ قا ل: ذَلِكَ يَوْمَ يَنْزِلُ اللَّهُ تَعَالَى عَلَى كُرْسِيِّهِ فَيَئِطُّ كَمَا يئطُّ الرحلُ الْجَدِيد من تضايقه بِهِ وَهُوَ كَسَعَةِ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَيُجَاءُ بِكُمْ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا فَيَكُونُ أَوَّلُ مَنْ يُكْسَى إِبراهيم يَقُول الله تَعَالَى: أُكسوا خليلي بِرَيْطَتَيْنِ بَيْضَاوَيْنِ مِنْ رِيَاطِ الْجَنَّةِ ثُمَّ أُكْسَى عَلَى أَثَرِهِ ثُمَّ أَقُومُ عَنْ يَمِينِ اللَّهِ مقَاما يغبطني الْأَولونَ وَالْآخرُونَ . رَوَاهُ الدَّارمِيّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الدارمی (2 / 325 ح 2803 ، نسخۃ محققۃ : 2842) * فیہ عثمان بن عمیر : ضعیف ۔
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা'আলা তার রাসূল (সা.) -কে বলেন, “অচিরেই আপনার রব আপনাকে মাকামে মাহমূদে পৌছে দিবেন।” (সূরাহ্ ইসরা/বানী ইসরাঈল ১৭: ৭৯)
মাকামে মাহমূদ অর্থ প্রশংসিত স্থান, এখানে আল্লাহ তার রাসূলকে পৌছানোর ওয়াদা করেছেন। এই মাকাম রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর জন্য নির্দিষ্ট, অন্য কোন পয়গম্বরের জন্য নয়। সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, এ হচ্ছে শাফা'আতে কুবরার মাকাম।
(يَنْزِلُ اللَّهُ تَعَالَى عَلَى كُرْسِيِّهِ) আল্লাহ তা'আলা সেদিন কুরসীতে অবতরণ করবেন’-এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সম্ভবত এটি বিচার ফায়সালার দিন ন্যায়বিচারের জন্য হুকুম প্রদানের প্রতি ইঙ্গিত। কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ হলো আল্লাহ তা'আলা তার রসূলের প্রতি স্থগিতকৃত শাফা'আতের ঘোষণা পেশ করা যা তার সৃষ্টির প্রতি বড় ধরনের প্রত্যক্ষ অনুগ্রহ। অথবা এটা আল্লাহ তা'আলার রাজত্ব ও বিচার ফায়সালার ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বহিঃপ্রকাশ। কেউ বলেছেন, এর অর্থ হলো আল্লাহ তা'আলা তার বড়ত্ব গুণের তাজাল্লি সেদিন প্রকাশ করবেন এবং কিবরিয়্যার গুণে সেই প্রতিশ্রুত দিবসে আগমন করবেন।
কুরসীর বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, (وَهُوَ كَسَعَةِ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ) তার প্রশস্ততা আসমান জমিনের মধ্যবর্তী স্থানের প্রশস্ততার সমান। এটা পবিত্র কুরআনের ঐ আয়াতের দিকে ইশারা যেখানে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, (وَسِعَ کُرۡسِیُّهُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ...) “তার কুরসীখানা আসমানসমূহ এবং জমিনব্যাপী পরিব্যপ্ত....।” (সূরা আল বাকারাহ ২ : ২৫৫)।
কিন্তু অন্য হাদীসে এসেছে, আসমানের তুলনায় জমিন হলো উন্মুক্ত বিশাল মাঠের মধ্যে একটি আংটিতুল্য। অর্থাৎ বিশাল মাঠের তুলনায় একটি আংটি যেমন অতীব ক্ষুদ্র তেমনি বিশাল আকাশের তুলনায় জমিন হলো অতীব ক্ষুদ্র বস্তু। অনুরূপ প্রতিটি আসমান তার উপরের আসমানের সমভিব্যাহারে সপ্ত স্তর এবং জমিনসমূহ কুরসীর নিকট বিশাল মাঠের মধ্যে একটি আংটিতুল্য।
কিয়ামতের দিন সবাই উলঙ্গ হয়ে উঠবে, সেদিন সর্বপ্রথম ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে জান্নাতের নরম মসৃণ ধবধবে সাদা মিহি রেশমীর দুখানি কাপড় এনে পরানো হবে। ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-এর পরে মুহাম্মাদ (সা.) -কে কাপড় পরানো হবে। ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-এর এই মর্যাদা কেন? হাদীসে তার উল্লেখ পাওয়া যায় না, তবে ইবনু হাজার ‘আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) স্বীয় ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে বলেন, ইবরাহীম (আঃ)-এর এই বিশেষত্ব এজন্য যে, তাকে যখন (নমরূদ-এর) আগুনে ফেলানো হয়েছিল তখন তাকে উলঙ্গ করে ফেলানো হয়েছিল। কেউ বলেছেন, তিনিই সর্বপ্রথম পায়জামা পরিধান করেছিলেন এজন্য তাকে কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম কাপড় পরানো হবে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বাণী: (شُمَّ أَقُوْمُ عَنْ يَمِينِ اللَّهِ مَقَامًا) অতঃপর আমি আল্লাহ তা'আলার ডান পাশে এমন একটি মাকামে (স্থানে) দাঁড়াব যা দেখে আমার প্রতি আগের ও পরের লোকেরা (নবীরা) ঈর্ষা পোষণ করবেন অর্থাৎ তারা তা কামনা করবেন। এটাই হলো সেই মাক্বামে মাহমূদ যা আল্লাহ তা'আলার ডানপার্শ্বে অবস্থিত।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীস সকল সৃষ্টির উপর এমনকি পূর্বাপর জিন ইনসান ও মালাকের (ফেরেশতার) ওপর রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ। কোন মহান বাদশাহ যখন রাজ্যের প্রজা সাধারণের জন্য সম্মানের কোন প্যান্ডেল সাজান এবং সেখানে প্রজাদের সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের আসন নির্ধারণ করেন সেটা বাদশাহর আসনের ডান পাশেই করে থাকেন। অতএব মহান আল্লাহর বিচার আসনের ডানপাশেই মাকামে মাহমূদে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর অবস্থান এবং আসন স্থাপন করা হবে। এটা সৃষ্টির সর্বোচ্চ সম্মান। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৫৯৭-[৩২] মুগীরাহ্ ইবনু শু’বাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন পুলসিরাতের উপর মু’মিনদের পরিচিতি বা প্রতীক হবে ’রব্বি সাল্লিম, সাল্লিম’। (অর্থাৎ- হে রব! আমাকে নিরাপদে রাখ, আমাকে নিরাপদে রাখ) [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব।]
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَن الْمُغيرَة بن شُعْبَة قا ل: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شِعَارُ الْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى الصِّرَاطِ: رَبِّ سَلِّمْ سَلِّمْ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيب
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2432) * عبد الرحمن بن اسحاق الکوفی : ضعیف ضعفہ الجمھور و فیہ علۃ أخری و حدیث البخاری (7437) و مسلم (195)، (482) یغنی عنہ ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (شِعَارُ) শব্দের অর্থ চিহ্ন, প্রতীক, আলামত, নিদর্শন, যে চিহ্ন দ্বারা তাকে চেনা যায়। কিয়ামতের দিন প্রত্যেক উম্মত তাদের রাসূলগণের সাথে উঠবেন, উম্মতে মুহাম্মাদীও তাদের রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) -এর সাথে উঠবেন, কিন্তু এদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও নিদর্শন হবে এই যে, তারা পুলসিরাতের পাড়ে বলতে থাকবে, রব্বী সাল্লিম সাল্লিম- “হে রব! শান্তি দাও শান্তি দাও।
“রব্বী সাল্লিম-সাল্লিম” এ বাক্যটি হবে নবীদের কিন্তু উম্মতে মুহাম্মাদীর বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে তারাও এই দু'আ বলতে থাকবে। ইমাম ত্ববারানী (রহিমাহুল্লাহ) ইবনু উমার থেকে বর্ণনা করেন, উম্মাতে মুহাম্মাদীকে যখন পুলসিরাতের কিনারায় উপনীত করা হবে তখন তাদের চিহ্ন হবে যে, তারা বলবে, (يَالَا إلَهَ إِلَّا أَنْتَ) “হে মহান সত্তা। তুমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। দ্বিবিধ হাদীসের সমন্বয় সাধনে বলা যায়, এ হাদীসটিতে উম্মতে মুহাম্মাদীর বিশেষত্ব উল্লেখ করা হয়েছে আর পূর্বের হাদীসটিতে পূর্বতন সকল উম্মাতের বিশেষত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। আরো প্রকাশ থাকে যে, উম্মতের কথা, ‘রব্বি সাল্লিম সাল্লিম, এটা এ উম্মাতের নেককার ‘উলামাহ, শুহাদা প্রমুখ কামিল মু'মিনদের বিশেষত্ব, যারা আম্বিয়াগণের পরে। শাফা'আতের অধিকার ও মর্যাদা লাভ করে ধন্য হবেন।
ইবনু মারদুবিয়া ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে মারফূ’ভাবে বর্ণনা করেছেন। “মুমিনদের কিয়ামতের দিন বিশেষ বৈশিষ্ট্য হবে যে, তারা কবর থেকে (لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ) বলেতে বলতে উঠবে।” (জামি আস্ সগীর হা. ৪৮৮৬)
সিরাজী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে এও বর্ণনা করেছেন, কিয়ামতের অন্ধকারে মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হবে: (لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ) “আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মা'বুদ নেই।” (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, জামি আস্ সগীর হা. ৪৮৮৭, তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৩৩৩ পৃ., হা, ২৪৩২)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৫৯৮-[৩৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন: আমার উম্মতের কবীরা গুনাহকারীগণ বিশেষভাবে আমার শাফা’আত লাভ করবে (অন্য উম্মতেরা শাফা’আত লাভ করতে পারবে না)। (তিরমিযী ও আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قا ل: «شَفَاعَتِي لِأَهْلِ الْكَبَائِرِ مِنْ أُمَّتِي» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد
صحیح ، رواہ الترمذی (2435 وقال : حسن صحیح غریب) و ابوداؤد (4739) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: কবীরা গুনাহগারদের ক্ষমার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর শাফা'আত হলো খাস, এটা অন্য কোন উম্মতের জন্য হবে না। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ হলো কবীরা গুনাহের কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মুক্তির জন্য আমার শাফা'আত একমাত্র বিশেষায়িত।
কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আহলুস্ সুন্নাহ্ ওয়াল জামা'আতের মাযহাব বা মত হলো কুরআনুল কারীমের সরীহ বা স্পষ্ট আয়াত দ্বারা গুনাহগারদের জন্য শাফা'আত প্রমাণিত। যেমন আল্লাহর বাণী: (یَوۡمَئِذٍ لَّا تَنۡفَعُ الشَّفَاعَۃُ اِلَّا مَنۡ اَذِنَ لَهُ الرَّحۡمٰنُ وَ رَضِیَ لَهٗ قَوۡلًا) “সেদিন সুপারিশ কারো কাজে আসবে না, কিন্তু দয়াময় (আল্লাহ) যাকে অনুমতি দিবেন এবং তার কথার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন।” (সূরাহ্ ত্ব-হা- ২০: ১০৯)
এছাড়া মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা কিয়ামাতের শাফা'আত প্রমাণিত। এটা সালাফে সালিহীন এবং তৎপরবর্তী আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াস জামা'আতের সর্ববাদী সম্মত মত। কিন্তু খারিজী সম্প্রদায় এবং কতিপয় মু'তাযিলা আহলে কাবায়িরদের জন্য শাফা'আত বৈধ হওয়া এবং গ্রহণ হওয়াকে অস্বীকার করে থাকে, ফলে তাদের চিরস্থায়ী জাহান্নামী বলে মনে করে।
যেমন মহান আল্লাহর বাণী: (فَمَا تَنۡفَعُهُمۡ شَفَاعَۃُ الشّٰفِعِیۡنَ) অতএব সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোন কাজে আসবে না।” (সূরাহ্ আল মুদ্দাসসির ৭৪ : ৪৮)
মহান আল্লাহ আরো বলেন, (.... مَا لِلظّٰلِمِیۡنَ مِنۡ حَمِیۡمٍ وَّ لَا شَفِیۡعٍ یُّطَاعُ) “...সেদিন যালিমদের কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না এবং এমন কোন সুপারিশকারীও থাকবে না যার কথা গ্রহণ হয়।” (সূরাহ আল মু'মিন ৪০ : ১৮)
মু'তাযিলা ও খারিজীদের ধারণা ও প্রদত্ত দু’টি দলীলের জওয়াবে আমরা বলব যে, উক্ত আয়াতদ্বয় কাফিরদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, আর যুলুম দ্বারা উদ্দেশ্য হলো শিরক। তারা শাফা'আতের তাবীল বা ব্যাখ্যায় বলে থাকে যে, শাফা'আত হবে জান্নাতীদের মর্যাদা বাড়ানোর জন্য (কবীরা গুনাহগারদের মুক্তির জন্য নয়) তাদের এ ব্যাখ্যা বাতিল বা অগ্রহণযোগ্য। কবীরা গুনাহগার জাহান্নামীদের জন্য শাফা'আত গ্রহণের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তির ভূরিভূরি হাদীস কিতাবে বিদ্যমান রয়েছে। বক্ষমাণ হাদীসটি এর প্রামাণ্য দলীল।
শাফা'আত পাঁচ প্রকার:
* প্রথম প্রকার শাফাআত যা আমাদের নবীর জন্য খাস বা বিশেষিত; সেটা হলো হাশরের মাঠের দুঃসহ অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে দ্রুত হিসাবের ব্যবস্থার জন্য শাফা'আত।
* দ্বিতীয় প্রকার হলো এক শ্রেণির মানুষকে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশের জন্য শাফা'আত। এটাও আমাদের নবীর মাধ্যমে সম্পাদিত হবে।
* তৃতীয় প্রকার হলো ঐ সম্প্রদায়ের জন্য শাফা'আত যাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে যাবে। তাদের জন্য আমাদের নবী (সা.) শাফা'আত করবেন এবং আল্লাহ তা'আলা অন্য যাদের চান সেও শাফা'আত করবেন।
* চতুর্থ প্রকার তাদের জন্য শাফা'আত যারা গুনাহের কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। তাদের জন্য আমাদের নবী শাফা'আত করবেন, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) শাফা'আত করবেন ঐ সকল গুনাহগারদের মুমিন ভাইয়েরা শাফা'আত করবেন। এরপর যারা “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ” পাঠ করেছে আল্লাহ তা'আলা স্বয়ং নিজে তাদের বের করবেন।
* পঞ্চম প্রকার শাফাআত হলো জান্নাতীদের জান্নাতের মধ্যে মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শাফা'আত, অবশ্য এ শাফা'আতকে খারিজী ও মুতাযিলীগণ অস্বীকার করে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা, ২৪৩৫)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৫৯৯-[৩৪] আর ইবনু মাজাহ জাবির (রাঃ) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَرَوَاهُ ابْن مَاجَه عَن جَابر
صحیح ، رواہ ابن ماجہ (4310) ۔
(صَحِيح)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৬০০-[৩৫] ’আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার প্রভুর কাছে থেকে একজন আগমনকারী (ফেরেশতা) আসলেন এবং তিনি (আল্লাহর পক্ষ হতে) আমাকে এ দুয়ের মধ্যে একটির ইচ্ছা স্বাধীনতা প্রদান করলেন, হয়তো আমার উম্মতের অর্ধেক সংখ্যা জান্নাতের সুযোগ গ্রহণ করুক অথবা আমি শাফা’আতের অধিকার গ্রহণ করি? অতঃপর আমি শাফা’আত গ্রহণ করলাম। অতএব তা ঐ সকল লোকের জন্য, যারা আল্লাহর সাথে অংশীস্থাপন না করে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের জন্য আমার শাফা’আত কার্যকারী হবে। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتَانِي آتٍ مِنْ عِنْدِ رَبِّي فَخَيَّرَنِي بَيْنَ أَنْ يُدْخِلَ نِصْفَ أُمَّتِي الْجَنَّةَ وَبَيْنَ الشَّفَاعَةِ فَاخْتَرْتُ الشَّفَاعَةَ وَهِيَ لِمَنْ مَاتَ لَا يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
حسن ، رواہ الترمذی (2441) و ابن ماجہ (4317) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: যে আগন্তুক রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসেছিলেন তিনি বড় মানের একজন মালাক (ফেরেশতা)। হাদীসে এই মালাক (ফেরেশতা)’র নাম উল্লেখ নেই, তবে প্রকাশ থাকে যে, তিনি জিবরীল হবেন না।
হাদীসের শব্দ (خَيَّرَنِي) তিনি আমাকে ইখতিয়ার দিলেন, এ ক্রিয়াবাচক শব্দের কর্তা আল্লাহ অথবা মালাক উভয়ই হতে পারে। তবে কর্তা মালাক হওয়া মাজায বা রূপকার্থে।
হাদীসের ভাষা আমার অর্ধেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করাবেন', এ উম্মত হলো উম্মতে ইজাবত অর্থাৎ যারা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর দাওয়াত কবুল করেছেন এবং শিরক থেকে আত্মরক্ষা করেছেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) এটা গ্রহণ না করে শাফা'আতের সুযোগ ইখতিয়ার করেছেন, কারণ এর পরিসর ব্যাপক এবং দীর্ঘসূত্রী। একজন মু'মিন ব্যক্তিও জাহান্নামে থাকা পর্যন্ত আল্লাহর রসূলের শাফা'আত চলবে। এ শাফা'আতের ফলে আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্যদানকারী উম্মাতের কেউ আর জাহান্নামে অবশিষ্ট থাকবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৪৪১, সুনানু ইবনু মাজাহ ৩য় খণ্ড, হা. ৪৩১১, ইন্টারনেট)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৬০১-[৩৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূল জা’আ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) - কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের জন্য এক লোকের সুপারিশে বানী তামীম গোত্রের লোক সংখ্যা অপেক্ষা অধিক মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিযী, দারিমী ও ইবনু মাজাহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَن عبدِ الله بن أبي الجَدعاءِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «يَدْخُلُ الْجَنَّةَ بِشَفَاعَةِ رَجُلٍ مِنْ أُمَّتِي أَكْثَرُ مِنْ بَنِي تَمِيمٍ» رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ والدارمي وَابْن مَاجَه
اسنادہ صحیح ، رواہ الترمذی (2438 وقال : حسن صحیح غریب) و الدارمی (2 / 328 ح 2811 ، و ابن ماجہ (4316) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: বানু তামীম ‘আরবের প্রসিদ্ধ একটি গোত্রের নাম যাদের সংখ্যা ছিল অনেক। রাসুলুল্লাহ (সা.) শাফা'আতের সংখ্যাধিকতা বুঝানোর জন্য উক্ত গোত্রের নাম উল্লেখ করেছেন। উপরোক্ত হাদীসে তিনি বলেছেন যে, আমার উম্মতের এক ব্যক্তির সুপারিশে বানূ তামীম গোত্রের লোকেদের চেয়ে আরো অনেক বেশি লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে। কতিপয় ‘আলিম বলেন যে, রাসূল (সা.) আমার উম্মতের এক ব্যক্তি দ্বারা ‘উসমান (রাঃ) -কে বুঝিয়েছেন। আবার অনেকে বলেন যে, তিনি এর দ্বারা উয়াইস কারনীকে বুঝিয়েছেন।
তবে ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ ক্ষেত্রে সারকথা হলো যদি নির্দিষ্টকরণে কোন দলীল থেকে থাকে তাহলে নির্দিষ্ট ব্যক্তিই উদ্দেশ্য হবে। অন্যথায় আমরা বলব, এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনই ভালো জানেন। (তুহফাতুল আহওয়াজী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৪৩৮)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৬০২-[৩৭] আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার উম্মতের কোন লোকের এমন হবে যে, বিরাট একটি দলের সুপারিশ করবে, কেউ একটি গোত্রের জন্য সুপারিশ করবে। আবার কেউ নিজ আত্মীয়-স্বজনের জন্য সুপরিশ করবে, আবার কেউ একটি লোকের জন্য সুপারিশ করবে। সবশেষে আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ مِنْ أُمَّتِي مَنْ يَشْفَعُ لِلْقَبِيلَةِ وَمِنْهُمْ مَنْ يَشْفَعُ لِلْعُصْبَةِ وَمِنْهُمْ مَنْ يَشْفَعُ لِلرَّجُلِ حَتَّى يَدْخُلُوا الْجَنَّةَ» رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2440 وقال : حسن) * عطیۃ العوفی ضعیف ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, কিয়ামতের মাঠে যারা সুপারিশ করবে তাঁরা হলেন, ১) প্রকৃত ‘আলিমগণ, ২) প্রকৃত শহীদগণ, ৩) সৎব্যক্তিগণ। ইমাম জাওহারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত হাদীসে উল্লেখিত (فِئَامِ) শব্দটি (الْجَمَاعَةُ مِنَ انَّاسِ) অর্থাৎ একদল মানুষকে বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয়েছে। মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, প্রাধান্য মত অনুযায়ী (فِئَامِ) শব্দটি (قَبَائِلُ) অর্থাৎ একটি গোত্রকে বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয়। আর (عُصْبَةِ) শব্দটি দশ থেকে চল্লিশ পর্যন্ত সংখ্যা বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ২৪৪০)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৬০৩-[৩৮] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ আমাকে এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি আমার উম্মতের চার লক্ষ লোককে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করুন। তখন তিনি বললেন, এই পরিমাণ- এই বলে তিনি উভয় হাত একত্রিত করে অঞ্জলি একসাথে করলেন। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করুন। এবারও রাসূল (সা.) ঐ রকম অঞ্জলি একত্র করে দেখিয়ে বললেন, আরো এই পরিমাণ। তখন ’উমার (রাঃ) বললেন, হে আবূ বকর! আমাদেরকে নিজ নিজ অবস্থায় থাকতে দিন। (অর্থাৎ আমাদেরকে ’আমল করতে দাও) তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, হে ’উমার! এতে তোমার কি ক্ষতি যদি আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেন?
জবাবে ’উমার (রাঃ) বললেন, যদি মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তবে তাঁর সকল সৃষ্ট মাখলুকূকে তিনি এক অঞ্জলিতেই জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারেন। এ কথা শুনে তখন নবী (সা.) বললেন, “উমার সত্যিই বলেছে। (শারহুস্ সুন্নাহ্)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ وعَدَني أَن يدْخل الجنةَ من أُمتي أربعمائةِ أَلْفٍ بِلَا حِسَابٍ» . فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ زِدْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ وَهَكَذَا فَحَثَا بِكَفَّيْهِ وَجَمَعَهُمَا فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: زِدْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ: وَهَكَذَا فَقَالَ عُمَرُ دَعْنَا يَا أبكر. فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: وَمَا عَلَيْكَ أَنْ يُدْخِلَنَا اللَّهُ كُلَّنَا الْجَنَّةَ؟ فَقَالَ عُمَرُ: إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِنْ شَاءَ أَنْ يُدْخِلَ خَلْقَهُ الْجَنَّةَ بِكَفٍّ وَاحِدٍ فَعَلَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَدَقَ عُمَرُ» رَوَاهُ فِي شرح السّنة
اسنادہ ضعیف ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (15 / 163 ح 4335) [و احمد (3 / 165 ح 12725)] * قتادۃ مدلس و عنعن و للحدیث طرق ضعیفۃ عند البزار (کشف الاستار : 3547 ، 3545) و ابی یعلی (3783) وغیرھما
ব্যাখ্যা: আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইচ্ছা করলে জিন-ইনসান, নেককার ও বদকার মুমিন সকলকে একবারেই জান্নাতে প্রবশে করাতে পারেন। কিন্তু আমল ব্যতীত আল্লাহর অনুগ্রহের আশা বসে থাকা মুমিনের কাজ নয় ‘উমার (রাঃ)-এর উক্তির উদ্দেশ্য এটাই যে, আমাদের কর্তব্য আমরা পালন করে যাব আর আল্লাহ তাঁর দয়ার মাধ্যমে যে ব্যবহার করবেন তাতে খুশি থাকব। (মিরক্বাতুর মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৬০৪-[৩৯] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জাহান্নামীগণ কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়াবে, তখন জান্নাতী এক ব্যক্তি তাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে। এ সময় জাহান্নামীদের সারি থেকে এক ব্যক্তি বলবে, হে অমুক! তুমি কি আমাকে চিনতে পারনি? আমি সেই লোক যে একদিন তোমাকে পান করিয়েছিলাম। আর একজন বলবে, আমি সেই লোক যে একদিন তোমাকে উযূর জন্য পানি দিয়েছিলাম। তখন সে জান্নাতী লোক তার জন্য সুপারিশ করবে এবং জান্নাতে নিয়ে যাবে। (ইবনু মাজাহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يُصَفُّ أَهْلَ النَّارِ فَيَمُرُّ بِهِمُ الرَّجُلُ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيَقُولُ الرَّجُلُ مِنْهُمْ: يَا فُلَانُ أَمَا تَعْرِفُنِي؟ أَنَا الَّذِي سَقَيْتُكَ شَرْبَةً. وَقَالَ بَعْضُهُمْ: أَنَا الَّذِي وَهَبْتُ لَكَ وَضُوءًا فَيَشْفَعُ لَهُ فَيُدْخِلُهُ الْجَنَّةَ . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَه
اسنادہ ضعیف ، رواہ ابن ماجہ (3685) * یزید الرقاشی : ضعیف ، و الاعمش مدلس و عنعن ۔
(ضَعِيفٌ)
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে জাহান্নামীগণ দ্বারা গুনাহগার মুমিনদেরকে বুঝানো হয়েছে, আর তাদের মধ্যে যারা পুণ্যবান নেক লোকদের খিদমাত বা সহযোগিতা করেছে, তাদের জন্য কিয়ামতের দিন উক্ত নেককার ব্যক্তিরা শাফা'আত করার অধিকার পাবে। ফলে তাদের সুপারিশের ফলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মিরক্বাতুর মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৬০৫-[৪০] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জাহান্নামীদের মধ্যে থেকে দুই ব্যক্তি খুব শোর-চিৎকার করতে থাকবে। তাদের চিৎকার শুনে মহান রব মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাদের)-কে বলবেন, এ ব্যক্তিদ্বয়কে জাহান্নাম থেকে বের করে আন। যখন তাদেরকে উপস্থিত করা হবে আল্লাহ তা’আলা। প্রশ্ন করবেন, কি কারণে তোমরা দুজন এত বিলাপ-চিৎকার করছ? তারা বলবে, আমরা এরূপ করেছি যাতে আপনি আমাদের প্রতি দয়া করেন। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমাদের উভয়ের প্রতি আমার দয়া এই যে, জাহান্নামের যে স্থানে তোমরা অবস্থানরত ছিলে এখন সেখানে চলে যাও এবং সে স্থানেই তোমরা নিজেদেরকে স্বেচ্ছায় নিক্ষেপ কর। এ আদেশ শুনে উভয়ের একজন স্বেচ্ছায় নিজেকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। তখন আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামের আগুনকে তার জন্য ঠাণ্ডা ও আরামদায়ক করে দেবেন। কিন্তু দ্বিতীয় ব্যক্তিটি দাঁড়িয়ে থাকবে, সে নিজেকে তাতে নিক্ষেপ করবে না। তখন প্রভু তাকে বলবেন, যেভাবে তোমার সাথি নিজেকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে, কিসে তোমাকে ঐভাবে নিক্ষেপ করা হতে বিরত রাখল? তখন সে বলবে, হে আমার রব! আমি আশা রাখি যে, যে জায়গা থেকে তুমি একবার আমাকে বের করেছ, আবার সেখানে তুমি আমাকে ফেরত পাঠাবে না, অতঃপর রাব্বুল আলামীন বলবেন, তুমি যে আশা পোষণ। করেছ, তা পূরণ করা হলো। তখন আল্লাহ তা’আলা তার বিশেষ দয়ায় দু’জনকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ رَجُلَيْنِ مِمَّنْ دَخَلَ النَّارَ اشْتَدَّ صِيَاحُهُمَا فَقَالَ الرَّبُّ تَعَالَى: أَخْرِجُوهُمَا. فَقَالَ لَهُمَا: لِأَيِّ شَيْءٍ اشْتَدَّ صِيَاحُكُمَا؟ قَالَا: فَعَلْنَا ذَلِكَ لِتَرْحَمَنَا. قَالَ: فَإِنَّ رَحْمَتِي لَكُمَا أَنْ تَنْطَلِقَا فَتُلْقِيَا أَنْفُسَكُمَا حَيْثُ كُنْتُمَا مِنَ النَّارِ فَيُلْقِي أَحَدُهُمَا نَفْسَهُ فَيَجْعَلُهَا اللَّهُ بَرْدًا وَسَلَامًا وَيَقُومُ الْآخَرُ فَلَا يُلْقِي نَفْسَهُ فَيَقُولُ لَهُ الرَّبُّ تَعَالَى: مَا مَنَعَكَ أَنْ تُلْقِيَ نَفْسَكَ كَمَا أَلْقَى صَاحِبُكَ؟ فَيَقُولُ: رَبِّ إِنِّي لَأَرْجُو أَنْ لَا تُعِيدَنِي فِيهَا بَعْدَ مَا أَخْرَجْتَنِي مِنْهَا. فَيَقُولُ لَهُ الرَّبُّ تَعَالَى: لَكَ رَجَاؤُكَ. فَيُدْخَلَانِ جَمِيعًا الْجَنَّةَ بِرَحْمَةِ اللَّهِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2599 وقال : ضعیف الخ) * رشدین و الافریقی ضعیفان ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: তোমাদের উভয়ের প্রতি আমার অনুগ্রহ এই যে, তোমরা জাহান্নামে চলে যাও। ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যদি বলা হয় যে, স্বেচ্ছায় জাহান্নামে যাওয়া এবং নিজেদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করা এটাকে কিভাবে অনুগ্রহের অর্থে ব্যবহার করা হল? উত্তর হচ্ছে, এ ঘোষণা মূলত (سَبَبِ) কে (مُسَبِّبِ) এর উপর প্রয়োগ করার সাথে সম্পৃক্ত।
সুস্পষ্টভাবে ব্যাপারটা এভাবে বলা যায় যে, এখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আনুগত্য করাটাই মূল বিষয়। তাঁর আদেশ মেনে নিজেকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করাই হচ্ছে অনুগ্রহ লাভের অন্যতম উপায়।
(فَيَجْعَلُهَا اللَّهُ بَرْدًا وَسَلَامًا) আল্লাহ তা'আলা তার জন্য জাহান্নামের আগুনকে আরামদায়ক ও শীতল করে দিবেন যেমনটি করে দিয়েছিলেন ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-এর জন্য।
(لَكَ رَجَاؤُكَ) তুমি যা আশা পোষণ করেছ যা পূরণ করা হল। বান্দা আল্লাহর প্রতি ভালো আশা পোষণ করা তাঁর অনুগ্রহ ও দয়া অর্জনের ক্ষেত্রে খুবই প্রভাব রাখে। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা, ২৫৯৯)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৬০৬-[৪১] ইবনু মাস’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এই বলেছেন: সকল মানুষ জাহান্নামে উপস্থিত হবে এবং আমলের অনুপাতে মুক্তি পাবে। তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম লোক সকলের আগে বিদ্যুতের গতিতে কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে, কেউ উটের গতিতে, কেউ মানুষের দৌড়ের গতিতে, অতঃপর পায়ে হাঁটার গতিতে। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَرِدُ النَّاسُ النَّارَ ثمَّ يصدون مِنْهَا بِأَعْمَالِهِمْ فَأَوَّلُهُمْ كَلَمْحِ الْبَرْقِ ثُمَّ كَالرِّيحِ ثُمَّ كَحُضْرِ الْفَرَسِ ثُمَّ كَالرَّاكِبِ فِي رَحْلِهِ ثُمَّ كَشَدِّ الرَّجُلِ ثُمَّ كَمَشْيِهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ
اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (3159 وقال : حسن) و الدارمی (2 / 329 ح 2813) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, সকল মানুষ (পুলসিরাত অতিক্রমের সময়) জাহান্নামে উপস্থিত হবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনুল মাজীদে বলেছেন, (وَ اِنۡ مِّنۡکُمۡ اِلَّا وَارِدُهَا...) “তোমাদের প্রত্যেককেই পুলসিরাত অতিক্রম করতে হবে"- (সূরা মারইয়াম ১৯: ৭১)। উক্ত আয়াতের মাঝে (الْوُرُودُ) শব্দের অর্থ নিয়ে সালাফগণ মতবিরোধ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, এর দ্বারা হলো (الرَّخُولُ) (প্রবেশ করা) তারা এর সমর্থনে জাবির (রাঃ) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত হাদীসকে নিয়ে এসেছেন যে, “রাসূল (সা.) বলেন, (الْوُرُودُ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো (الرَّخُولُ) ভালো ও খারাপ সকলেই তাতে প্রবেশ করবে কিন্তু মু'মিনদের জন্য তা শীতল ও আরামদায়ক হবে। আবার কেউ কেউ বলেছেন যে, (الْوُرُودُ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো (اَلْمُمَرُّ عَلَيْهَا) “প্রত্যেকেই পুলসিরাত অতিক্রম করতে হবে”। মুহাদ্দিসগণ বলেন, প্রত্যেকের ‘আমল অনুপাতে পুরসিরাত অতিক্রমের ধরণ বিভিন্ন প্রকারের হবে। যার নেক আমল তুলনামূলক ভালো, তার গতিবেগও হবে তুলনামূলক দ্রুত। পক্ষান্তরে যার আমল তুলনামূলক মন্দ, তার গতিবেগও হবে ধীর। হাদীসে বলা হয়েছে, কেউ বিদ্যুতের গতিতে অতিক্রম করবে আবার কেউ প্রচণ্ড বাতাসের বেগে, কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে; কেউ উটের গতিতে, কেউ মানুষের দৌড়ের গতিতে, কেউ পায়ে হাঁটা ব্যক্তির গতিতে অতিক্রম করবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা, ৩১৫৯)