৫৫৯৬

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা

৫৫৯৬-[৩১] ইবনু মা’ঊদ (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: একদিন তাকে প্রশ্ন করা হলো, (আল্লাহর ওয়াদাকৃত) মাকামে মাহমূদ কী? তিনি (সা.) বললেন, তা এমন একদিন আল্লাহ তা’আলা তাঁর কুরসীতে অবতরণ করবেন যেদিন তা এমনভাবে কড়মড় করবে, যেমন ঠাসাঠাসির কারণে কড়মড় করে থাকে চামড়ার তৈরি নতুন গদি। কুরসীর প্রশস্ততা হবে আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী দূরত্বের পরিমাণ। অতঃপর তোমাদেরকে কাপড়হীন, খালি পায়ে ও খতনাবিহীন অবস্থায় উপস্থিত করা হবে। সেদিন যাদেরকে পোশাক পরিধান করানো হবে, তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম লোক হবেন ইবরাহীম আলায়হিস সালাম। আল্লাহ তা’আলা মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাদের)-কে আদেশ দেবেন আমার বন্ধু ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে তোমরা পোশাক পরিয়ে দাও। তখন জান্নাতের কোমল রেশমি ধবধবে সাদা দু’খানা কাপড় আনা হবে এবং তা তাকে পরানো হবে। অতঃপর আমাকে পোশাক পরিধান করানো হবে। তারপর আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ডান পার্শ্বে এমন এক স্থানে দণ্ডায়মান হব, যা দেখে পূর্বের ও পরের (সমস্ত মানুষ) আমার প্রতি ঈর্ষা পোষণ। করবে। (দারিমী)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قا ل: قيل لَهُ مَا الْمقَام الْمَحْمُود؟ قا ل: ذَلِكَ يَوْمَ يَنْزِلُ اللَّهُ تَعَالَى عَلَى كُرْسِيِّهِ فَيَئِطُّ كَمَا يئطُّ الرحلُ الْجَدِيد من تضايقه بِهِ وَهُوَ كَسَعَةِ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَيُجَاءُ بِكُمْ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا فَيَكُونُ أَوَّلُ مَنْ يُكْسَى إِبراهيم يَقُول الله تَعَالَى: أُكسوا خليلي بِرَيْطَتَيْنِ بَيْضَاوَيْنِ مِنْ رِيَاطِ الْجَنَّةِ ثُمَّ أُكْسَى عَلَى أَثَرِهِ ثُمَّ أَقُومُ عَنْ يَمِينِ اللَّهِ مقَاما يغبطني الْأَولونَ وَالْآخرُونَ . رَوَاهُ الدَّارمِيّ

اسنادہ ضعیف ، رواہ الدارمی (2 / 325 ح 2803 ، نسخۃ محققۃ : 2842) * فیہ عثمان بن عمیر : ضعیف ۔

وعن ابن مسعود عن النبي صلى الله عليه وسلم قا ل: قيل له ما المقام المحمود؟ قا ل: ذلك يوم ينزل الله تعالى على كرسيه فيىط كما يىط الرحل الجديد من تضايقه به وهو كسعة ما بين السماء والارض ويجاء بكم حفاة عراة غرلا فيكون اول من يكسى ابراهيم يقول الله تعالى: اكسوا خليلي بريطتين بيضاوين من رياط الجنة ثم اكسى على اثره ثم اقوم عن يمين الله مقاما يغبطني الاولون والاخرون . رواه الدارمي اسنادہ ضعیف ، رواہ الدارمی (2 / 325 ح 2803 ، نسخۃ محققۃ : 2842) * فیہ عثمان بن عمیر : ضعیف ۔

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা'আলা তার রাসূল (সা.) -কে বলেন, “অচিরেই আপনার রব আপনাকে মাকামে মাহমূদে পৌছে দিবেন।” (সূরাহ্ ইসরা/বানী ইসরাঈল ১৭: ৭৯)
মাকামে মাহমূদ অর্থ প্রশংসিত স্থান, এখানে আল্লাহ তার রাসূলকে পৌছানোর ওয়াদা করেছেন। এই মাকাম রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর জন্য নির্দিষ্ট, অন্য কোন পয়গম্বরের জন্য নয়। সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, এ হচ্ছে শাফা'আতে কুবরার মাকাম।
(يَنْزِلُ اللَّهُ تَعَالَى عَلَى كُرْسِيِّهِ) আল্লাহ তা'আলা সেদিন কুরসীতে অবতরণ করবেন’-এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সম্ভবত এটি বিচার ফায়সালার দিন ন্যায়বিচারের জন্য হুকুম প্রদানের প্রতি ইঙ্গিত। কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ হলো আল্লাহ তা'আলা তার রসূলের প্রতি স্থগিতকৃত শাফা'আতের ঘোষণা পেশ করা যা তার সৃষ্টির প্রতি বড় ধরনের প্রত্যক্ষ অনুগ্রহ। অথবা এটা আল্লাহ তা'আলার রাজত্ব ও বিচার ফায়সালার ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বহিঃপ্রকাশ। কেউ বলেছেন, এর অর্থ হলো আল্লাহ তা'আলা তার বড়ত্ব গুণের তাজাল্লি সেদিন প্রকাশ করবেন এবং কিবরিয়্যার গুণে সেই প্রতিশ্রুত দিবসে আগমন করবেন।
কুরসীর বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, (وَهُوَ كَسَعَةِ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ) তার প্রশস্ততা আসমান জমিনের মধ্যবর্তী স্থানের প্রশস্ততার সমান। এটা পবিত্র কুরআনের ঐ আয়াতের দিকে ইশারা যেখানে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, (وَسِعَ کُرۡسِیُّهُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ...) “তার কুরসীখানা আসমানসমূহ এবং জমিনব্যাপী পরিব্যপ্ত....।” (সূরা আল বাকারাহ ২ : ২৫৫)।
কিন্তু অন্য হাদীসে এসেছে, আসমানের তুলনায় জমিন হলো উন্মুক্ত বিশাল মাঠের মধ্যে একটি আংটিতুল্য। অর্থাৎ বিশাল মাঠের তুলনায় একটি আংটি যেমন অতীব ক্ষুদ্র তেমনি বিশাল আকাশের তুলনায় জমিন হলো অতীব ক্ষুদ্র বস্তু। অনুরূপ প্রতিটি আসমান তার উপরের আসমানের সমভিব্যাহারে সপ্ত স্তর এবং জমিনসমূহ কুরসীর নিকট বিশাল মাঠের মধ্যে একটি আংটিতুল্য।
কিয়ামতের দিন সবাই উলঙ্গ হয়ে উঠবে, সেদিন সর্বপ্রথম ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে জান্নাতের নরম মসৃণ ধবধবে সাদা মিহি রেশমীর দুখানি কাপড় এনে পরানো হবে। ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-এর পরে মুহাম্মাদ (সা.) -কে কাপড় পরানো হবে। ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-এর এই মর্যাদা কেন? হাদীসে তার উল্লেখ পাওয়া যায় না, তবে ইবনু হাজার ‘আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) স্বীয় ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে বলেন, ইবরাহীম (আঃ)-এর এই বিশেষত্ব এজন্য যে, তাকে যখন (নমরূদ-এর) আগুনে ফেলানো হয়েছিল তখন তাকে উলঙ্গ করে ফেলানো হয়েছিল। কেউ বলেছেন, তিনিই সর্বপ্রথম পায়জামা পরিধান করেছিলেন এজন্য তাকে কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম কাপড় পরানো হবে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বাণী: (شُمَّ أَقُوْمُ عَنْ يَمِينِ اللَّهِ مَقَامًا) অতঃপর আমি আল্লাহ তা'আলার ডান পাশে এমন একটি মাকামে (স্থানে) দাঁড়াব যা দেখে আমার প্রতি আগের ও পরের লোকেরা (নবীরা) ঈর্ষা পোষণ করবেন অর্থাৎ তারা তা কামনা করবেন। এটাই হলো সেই মাক্বামে মাহমূদ যা আল্লাহ তা'আলার ডানপার্শ্বে অবস্থিত।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীস সকল সৃষ্টির উপর এমনকি পূর্বাপর জিন ইনসান ও মালাকের (ফেরেশতার) ওপর রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ। কোন মহান বাদশাহ যখন রাজ্যের প্রজা সাধারণের জন্য সম্মানের কোন প্যান্ডেল সাজান এবং সেখানে প্রজাদের সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের আসন নির্ধারণ করেন সেটা বাদশাহর আসনের ডান পাশেই করে থাকেন। অতএব মহান আল্লাহর বিচার আসনের ডানপাশেই মাকামে মাহমূদে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর অবস্থান এবং আসন স্থাপন করা হবে। এটা সৃষ্টির সর্বোচ্চ সম্মান। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)