পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৬৪-[১] হুযায়ফাহ্ ইবনু আসীদ আল গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা পরস্পরে কথাবার্তা বলছিলাম, এমন সময় নবী (সা.) - আমাদের কাছে উপস্থিত হয়ে প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি সম্পর্কে আলোচনা করছ? তারা বললেন, আমরা কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছি। সে সময় তিনি (সা.) বললেন, তোমরা দশটি নিদর্শন না দেখা পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে না। আর তা হলো- ১. ধোয়া, ২. দাজ্জাল, ৩. চতুষ্পদ জন্তু, ৪. পশ্চিমাকাশ হতে সূর্য উদিত হওয়া, ৫. ঈসা ইবনু মারইয়াম আলায়হিস-এর (আকাশ হতে) অবতরণ, ৬. ইয়াজুজ ও মাজুজ আগমন, ৭,৮,৯, তিনটি ভূমিধস, পূর্বাঞ্চলে, পশ্চিমাঞ্চলে এবং আরব উপদ্বীপে; ১০. সর্বশেষে ইয়ামান হতে এমন এক অগ্নি বের হবে যা মানুষদেরকে তাড়িয়ে একটি সমবেত হওয়ার স্থান (সিরিয়ার) দিকে নিয়ে যাবে। অপর এক বর্ণনায় আছে, ’আদান (এডেন)-এর অভ্যন্তর থেকে আগুন বের হবে, যা মানুষদেরকে সমবেত হওয়ার স্থানের দিকে তাড়িয়ে নেবে এবং অন্য এক রিওয়ায়াতে দশম লক্ষণ সম্পর্কে বলা হয়েছে। এমন এক বাতাস প্রবাহিত হবে যা মানুষদেরকে (কাফিরদেরকে) সাগরে নিক্ষেপ করবে। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

عَن حذيفةَ بن أسيد الْغِفَارِيّ قَالَ: اطَّلَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْنَا وَنَحْنُ نَتَذَاكَرُ. فَقَالَ: «مَا تَذْكُرُونَ؟» . قَالُوا: نَذْكُرُ السَّاعَةَ. قَالَ: إِنَّهَا لَنْ تَقُومَ حَتَّى تَرَوْا قَبْلَهَا عَشْرَ آيَاتٍ فَذَكَرَ الدُّخَانَ وَالدَّجَّالَ وَالدَّابَّةَ وَطُلُوعَ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا وَنُزُولَ عِيسَى بْنِ مَرْيَمَ وَيَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ وَثَلَاثَةَ خُسُوفٍ: خَسْفٌ بِالْمَشْرِقِ وَخَسْفٌ بِالْمَغْرِبِ وَخَسْفٌ بِجَزِيرَةِ الْعَرَبِ وَآخِرُ ذَلِكَ نَارٌ تَخْرُجُ مِنَ الْيَمَنِ تَطْرُدُ النَّاسَ إِلَى مَحْشَرِهِمْ . وَفِي رِوَايَةٍ: «نَارٌ تَخْرُجُ مِنْ قَعْرِ عَدَنَ تَسُوقُ النَّاسَ إِلَى الْمَحْشَرِ» . وَفِي رِوَايَةٍ فِي الْعَاشِرَةِ «وَرِيحٌ تُلْقِي النَّاسَ فِي الْبَحْر» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (39 / 2901 ، 40 / 2901)، (7285 و 7286) ۔
(صَحِيح)

عن حذيفة بن اسيد الغفاري قال: اطلع النبي صلى الله عليه وسلم علينا ونحن نتذاكر. فقال: «ما تذكرون؟» . قالوا: نذكر الساعة. قال: انها لن تقوم حتى تروا قبلها عشر ايات فذكر الدخان والدجال والدابة وطلوع الشمس من مغربها ونزول عيسى بن مريم وياجوج وماجوج وثلاثة خسوف: خسف بالمشرق وخسف بالمغرب وخسف بجزيرة العرب واخر ذلك نار تخرج من اليمن تطرد الناس الى محشرهم . وفي رواية: «نار تخرج من قعر عدن تسوق الناس الى المحشر» . وفي رواية في العاشرة «وريح تلقي الناس في البحر» . رواه مسلم رواہ مسلم (39 / 2901 ، 40 / 2901)، (7285 و 7286) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: (لَنْ تَقُومَ حَتَّى تَرَوْا قَبْلَهَا عَشْرَ آيَاتٍ) “তা ততক্ষণ পর্যন্ত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ তোমরা দশটি নিদর্শন না দেখবে।”
(فَذَكَرَ الدُّخَانَ) অতঃপর তিনি (সা.) ধোঁয়ার কথা বললেন। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, পবিত্র কুরআনে সূরা দুখানে এর বর্ণনা হয়েছে- “যখন আকাশ ধোয়ার ছেয়ে যাবে”- (সূরাহ আদ দুখা-ন ৪:১০)। আর এটা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর যুগে প্রকাশ পেয়েছিল।
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন- ধোঁয়া বলতে সেই অবস্থাকে বুঝানো হয়েছে যা দ্বারা কুরায়শরা আক্রান্ত হয়েছিল। কুরায়শরা দুর্ভিক্ষের কারণে তাদের মাঝে ও আকাশের মাঝে বাতাসকে ধোঁয়ার মতো দেখতে পেয়েছিল। ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর মতকে অনেকেই সমর্থন করেছেন। কিন্তু হুযায়ফাহ (রাঃ), বলেন- এটা হবে বাস্তব ধোঁয়া। কেননা নবী (সাঃ)-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এটা পূর্ব থেকে পশ্চিম দিগন্ত ছেয়ে যাবে এবং ৪০ দিন অবস্থান করবে। মু'মিনগণ এর দ্বারা সর্দিতে আক্রান্ত হবে আর কাফিরগণ মাতাল হয়ে যাবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এই ধোয়া এখনো প্রকাশ পায়নি, কিয়ামতের পূর্বের প্রকাশ পাবে। অথবা উভয় সাহাবীর মতের সমন্বয়ে বলা যেতে পারে। এখানে দু' ধরনের ধোয়ার সম্ভাবনাই রয়েছে। (শারহুন নাবাবী ১৮/২৯০১)

(دَّابَّةَ) (দাব্বাহ্) বা জন্তু বলতে যা বুঝায় তা হলো পবিত্র কুরআনের ভাষায় (اَخۡرَجۡنَا لَهُمۡ دَآبَّۃً مِّنَ الۡاَرۡضِ تُکَلِّمُهُمۡ) “যখন প্রতিশ্রুত (কিয়ামত) সমাগত হবে, তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি জীব নির্গত করব। সে মানুষের সাথে কথা বলবে।” (সূরা আন্ নামল ২৭: ৮২)
মুফাসসিরগণ বলেন, এটা হবে বিরাট এক জীব যা সাফা পাহাড়ের ফাটল থেকে বের হবে। ইবনুল মালিক বলেন, দাব্বা বা বড় জন্তুটি তিনবার প্রকাশ পাবে- ইমাম মাহদীর সময়ে, এরপর ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর সময়ে, অতঃপর সূর্য পশ্চিমাকাশে উদয়ের পর।

(وَنُزُولَ عِيسَى بْنِ مَرْيَمَ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَاسَّلَمُ) এবং ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর অবতরণ। এখানে ইমাম মাহদীর কথা বলা হয়নি। মূলত ঈসা আলাইহিস সালাম ইমাম মাহদীর একই সময় অবতীর্ণ হবেন। ইমাম ত্ববারানী আওস ইবনু আওস থেকে মারফু সূত্রে উল্লেখ করেন, ‘ঈসা আলাইহিস সালাম দামিশকের একটি সাদা মিনারায় অবতরণ করবেন। ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইবনু মারইয়াম সিরিয়ার ‘লুদ' নামক স্থানে প্রবেশ করে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। এরপর ইয়াজুজ ও মাজুজ বের হবে। হাদীসে ধারাবাহিকভাবে নিদর্শনগুলো উল্লেখ না করে সাধারণভাবে একত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত প্রথম নিদর্শন হবে ধোয়া, এরপর ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর অবতরণ, এরপর ইয়াজুজ মাজুজ, অতঃপর দাব্বাহ্ বা ভূমি থেকে একটি বিরাট জন্তুর আত্মপ্রকাশ, সর্বশেষে সূর্য পশ্চিমাকাশে উদিত হওয়া। কেননা ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর সময়ে মানুষ ইসলামে প্রবেশ করবে। যদি দাজ্জাল ও ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর পূর্বে সূর্য পশ্চিমাকাশে উদিত হয় তাহলে তো ঈমান কবুলই হবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(وَثَلَاثَةَ خُسُوفٍ) এবং তিনটি ভূমিধস হবে। একটি প্রাচ্যে, একটি প্রাশ্চাত্যে এবং একটি আরব উপদ্বীপে।
(وَآخِرُ ذَلِكَ نَارٌ تَخْرُجُ مِنَ الْيَمَنِ) এবং সর্বশেষ নিদর্শন হবে ইয়ামান দেশ থেকে আগুন বের হবে। আর মানুষকে হাশরের ময়দানের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। বুখারীর বর্ণনায় এসেছে, হিজায থেকে দুটি আগুন বের হবে। দুদিক থেকে মানুষকে এক জায়গায় একত্রিত করবে। অথবা আগুনের সূচনা হবে ইয়ামানে
এবং শেষ হবে হিজাযে গিয়ে। অপর এক বর্ণনায়, দশম নিদর্শন আগুনের পরিবর্তে বাতাস বলা হয়েছে। অর্থাৎ- অগ্নি মিশ্রিত প্রচণ্ড বাতাস কাফিরদেরকে সাগরে নিয়ে ফেলবে। আর তা হবে কাফির ও পাপীদের একত্রিত হওয়ার স্থান। আর তখন সাগর আগুনে পরিণত হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, (وَ اِذَا الۡبِحَارُ سُجِّرَتۡ) “যখন সমুদ্রগুলোকে প্রজ্বলিত করে উত্তাল করা হবে।” (সূরা আত্ তাকভীর ৮১: ৬)।
এর বিপরীত হবে মু'মিনদের আগুন। মূলত আগুন মু'মিনদের ভীতির কারণ হবে এবং চাবুকের ন্যায় তাদেরকে তাড়িয়ে হাশরের দিকে তাড়িয়ে নিবে। আল্লাহই এ ব্যাপারে অধিক জানেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৬৫-[২] আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ছয়টি লক্ষণ প্রকাশ হওয়ার পূর্বে ভালো ’আমল অর্জনে তৎপর হও। ১. ধোঁয়া, ২. দাজ্জাল, ৩. দাব্বাতুল আরয (মৃত্তিকাগর্ভ হতে বহির্ভূত জন্তু), ৪, পশ্চিমাকাশ হতে সূর্য উদিত হওয়া, ৫. সর্বগ্রাসী ফিতনাহ্ ও ৬. তোমাদের ব্যক্তিবিশেষের ওপর আরোপিত ফিতনাহ্। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَادِرُوا بِالْأَعْمَالِ سِتًّا. الدُّخَانَ وَالدَّجَّالَ وَدَابَّةَ الْأَرْضِ وَطُلُوعَ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا وَأَمْرَ الْعَامَّةِ وَخُوَيْصَّةَ أَحَدِكُمْ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

رواہ مسلم (129 / 2947)، (7397) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «بادروا بالاعمال ستا. الدخان والدجال ودابة الارض وطلوع الشمس من مغربها وامر العامة وخويصة احدكم» . رواه مسلم رواہ مسلم (129 / 2947)، (7397) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: (بَادِرُوا بِالْأَعْمَالِ سِتًّا) অর্থাৎ কিয়ামতের ছয়টি আলামত প্রকাশ হওয়ার পূর্বে দ্রুত নেক ‘আমলগুলো সম্পাদন কর। কেননা এগুলো প্রকাশ পেলে তোমরা ব্যস্ত হয়ে পড়বে, ফলে আমল করা কঠিন হয়ে যাবে। অথবা এরপর ‘আমল করলেও কোন মূল্যায়ন হবে না ও তা কবুল হবে না।

(وَأَمْرَ الْعَامَّةِ) তথা তোমাদের নিকট নেতৃত্বের ফিতনাহ্ আসার পূর্বেই যা তোমাদেরকে নেক ‘আমল করা থেকে ব্যস্ত রাখবে।
(وَخُوَيْصَّةَ أَحَدِكُمْ) তোমাদের কারো নিকট মৃত্যুর মতো ঘটনা এসে পড়বে পূর্বেই যা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট। অথবা মানুষের, যা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট। অথবা মানুষের জানমাল এবং এতদসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা মানুষকে নেক আমল করা থেকে ব্যস্ত রাখে। শব্দটি তাসগীর বা ছোট করে উপস্থাপন করার কারণ হলো এটি এর পরবর্তী পুনঃরুত্থান, হাশর, হিসাব ইত্যাদির তুলনায় ছোট।

‘আল্লামাহ্ ক্বাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তাদেরকে এই নিদর্শনগুলো প্রকাশ হওয়ার পূর্বেই নেক ‘আমল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, কেননা যখন এগুলো প্রকাশ পাবে তখন তাদেরকে অস্থির করে তুলবে। এবং কর্ম-বিমুখ করবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ, ইবনু মাজাহ ৩/৪০৫৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৬৬-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের নিদর্শনসমূহরে মাঝে প্রথম প্রকাশ পাবে এ দু’টি, একটি পশ্চিমাকাল হতে সূর্য উদিত হওয়া এবং অপরটি চাশতের সময় মানুষের সামনে ’দাব্বাতুল আরয’ বের হওয়া। এ দুটির মধ্যে যেটা প্রথমে প্রকাশ পাবে, অপরটি তার পরপরই খুবই নিকটবর্তী সময়ে আবির্ভূত হবে। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٌو قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ أَوَّلَ الْآيَاتِ خُرُوجًا طُلُوعُ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا وَخُرُوجُ الدَّابَّةِ عَلَى النَّاسِ ضُحًى وَأَيُّهُمَا مَا كَانَتْ قَبْلَ صَاحِبَتِهَا فَالْأُخْرَى على أَثَرهَا قَرِيبا» رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (118 / 2941)، (7383) ۔
(صَحِيح)

وعن عبد الله بن عمرو قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «ان اول الايات خروجا طلوع الشمس من مغربها وخروج الدابة على الناس ضحى وايهما ما كانت قبل صاحبتها فالاخرى على اثرها قريبا» رواه مسلم رواہ مسلم (118 / 2941)، (7383) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: (إِنَّ أَوَّلَ الْآيَاتِ خُرُوجًا طُلُوعُ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا) “কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হলো: সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়া। আল্লামাহ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) এ হাদীসের মর্মার্থ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন যদি বলা হয় সূর্য-পশ্চিম দিগন্তে উদিত হওয়া প্রথম নিদর্শন নয় বরং এর পূর্বে ধোয়া ও দাজ্জালের আবির্ভাব হবে। তাহলে এর উত্তর হলো, হয়তো এটি কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার একটি নিদর্শন। অথবা এ নিদর্শন কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার অস্তিত্বকে সাব্যস্তকারী একটি নিদর্শন। প্রথম পর্যায়ে প্রকাশ পাবে ধোঁয়া এবং দাজ্জালের আবির্ভাব আর দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রকাশ পাবে সূর্য পশ্চিম দিগন্তে উদিত হওয়া। ভূমিকম্প আগুন বের হয়ে মানুষকে হাশরের ময়দানের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া। এ হাদীসে প্রথম নিদর্শন হিসেবে সূর্য পশ্চিম দিগন্তে উদয়ের কথা বলা হয়েছে তা মূলত দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রথম হিসেবে। কেননা বায়হাক্বীর বর্ণনার এসেছে, প্রথমে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে, এরপর ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর অবতরণ হবে, এরপর ইয়াজুজ মাজুজ ও দাব্বাতুল আরয। এর পরবর্তীতে সূর্য পশ্চিম দিগন্তে উদিত হবে। যদি এটাই প্রথম নিদর্শন হয় তাহলে ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর অবতরণের পর কাফিরদের ঈমান আনাতে কোন কাজ হবে না। কেননা সূর্য পশ্চিম দিগন্তে উদিত হলে তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে আর আমলও কবুল হবে না, যারা ইতোপূর্বে ঈমান আনেনি।

(وَخُرُوجُ الدَّابَّةِ) এবং ভূগর্ভ থেকে বিরাট একটি জন্তু মানুষের নিকট পূর্বাহ্নে বের হওয়া।
ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীসে (واو) অব্যয়টি সাধারণভাবে একত্রিত করার জন্য এসেছে। ধারাবাহিকতা বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়নি। (واو) বর্ণটি (او) অথবা বুঝাবে। হাদীসে বর্ণিত (أَيُّهُمَا) দুটির যে কোন একটি প্রকাশ পেলে অপরটি তার পরেই প্রকাশ পাবে। কথার দ্বারা তাই প্রমাণিত হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৬৭-[৪] আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তিনটি নিদর্শন যখন প্রকাশ পাবে তখন আর কারো ঈমান ও আমল তার কোন কাজে আসবে না, যদি তার পূর্বে ঈমান এনে না থাকে অথবা ঈমানের সাথে আমল সঞ্চয় না করে থাকে। আর তা হলো পশ্চিমাকাশ থেকে সূর্য উদিত হওয়া, দাজ্জালের আবির্ভাব এবং ’দাব্বাতুল আরয বের হওয়া। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ثَلَاثٌ إِذَا خَرَجْنَ (لَا يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا) طُلُوعُ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا وَالدَّجَّالُ وَدَابَّةُ الْأَرْضِ» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (249 / 158)، (398) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ثلاث اذا خرجن (لا ينفع نفسا ايمانها لم تكن امنت من قبل او كسبت في ايمانها خيرا) طلوع الشمس من مغربها والدجال ودابة الارض» . رواه مسلم رواہ مسلم (249 / 158)، (398) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: ثَلَاثٌ إِذَا خَرَجْنَ (لَا يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ) তিনটি নিদর্শন প্রকাশ পেলে যারা ইতোপূর্বে ঈমান আনেনি অথবা ঈমান অনুযায়ী আমল করেনি, তাদের ‘আমল কোনই কাজে আসবে না। নিদর্শন তিনটি হলো: সূর্য পশ্চিম দিগন্তে উদিত হওয়া দাজ্জাল এবং দাব্বাতুল আরয বা ভূগর্ভ থেকে বেরিয়া আসা বিরাট প্রাণী।
এ হাদীসে সূর্য পশ্চিম দিগন্তে উদিত হওয়ার কথা আগে বলা হয়েছে যদিও তা অন্যান্য নিদর্শনের পরে আসার কথা। কেননা তাওবাহ্ কবুল না হওয়ার ব্যাপারটি এর সাথে সংশ্লিষ্ট। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(لَا يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا) এর ব্যাখ্যায় ‘আওনুল মা'বুদ গ্রন্থে বলা হয়েছে, মু'তাযিলাগণ এই আয়াত দ্বারা দলীল গ্রহণ করে থাকেন যে, ঈমানের সাথে আমলের কোন সম্পর্ক নেই। এমনকি আমল করলেও তার দ্বারা উপকৃত হবে না। এর জবাব হচ্ছে, ব্যক্তি তার ‘আমল দ্বারা অবশ্যই উপকৃত হবে। কিন্তু যদি কোন কাফির কিয়ামতের উক্ত লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর ঈমান আনে অথবা কোন ফাসিক বা পাপী ব্যক্তি অন্যায় কাজ থেকে তাওবাহ করে, নেক আমল করতে থাকে তাহলে এই ‘আমল কোনই কাজে আসবে না।
‘আল্লামাহ্ শাওকানী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর 'ফাতহুল ক্বদীর’ গ্রন্থে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। সত্য উন্মোচনের জন্য তা পাঠকের পড়া উচিত। ('আওনুল মা'বুদ ৭/৪৩৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৬৮-[৫] আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি কি জান, তা কোথায় যাচ্ছে? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রসূলই সর্বাধিক অবগত। তিনি (সা.) বললেন, তা আল্লাহর আরশের নিচে গিয়ে সাজদায় রত হয় এবং (পূর্বাকাশে উদিত হওয়ার) অনুমতি প্রার্থনা করবে অথচ তাকে অনুমতি দেয়া হবে না এবং তাকে বলা হবে, তুমি যেদিক থেকে এসেছ সেদিকেই ফিরে যাও। অতঃপর তা পশ্চিমাকাশ হতে উদিত হবে। এদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে আল্লাহ তা’আলার এ বাণী দ্বারা-(وَ الشَّمۡسُ تَجۡرِیۡ لِمُسۡتَقَرٍّ لَّهَا)“সূর্য তার গন্তব্যস্থলের দিকে চলে যায়”- (সূরাহ্ ইয়াসীন ৩৬: ৩৮)। ’ তিনি বলেন, গন্তব্যস্থল হলো ’আরশের নীচ। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ غربت الشَّمْس: «أَيْن تذْهب؟» . قُلْتُ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: فَإِنَّهَا تَذْهَبُ حَتَّى تَسْجُدَ تَحْتَ الْعَرْشِ فَتَسْتَأْذِنُ فَيُؤْذَنُ لَهَا وَيُوشِكُ أَنْ تَسْجُدَ وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا وَتَسْتَأْذِنُ فَلَا يُؤْذَنُ لَهَا وَيُقَالُ لَهَا: ارْجِعِي مِنْ حَيْثُ جِئْتِ فَتَطْلُعُ مِنْ مَغْرِبِهَا فَذَلِكَ قَوْلُهُ تَعَالَى (والشمسُ تجْرِي لمستقرّ لَهَا) قَالَ: «مستقرها تَحت الْعَرْش» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3199) و مسلم (251 ، 250 / 159)، (401 و 402 و 399) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

وعن ابي ذر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم حين غربت الشمس: «اين تذهب؟» . قلت: الله ورسوله اعلم. قال: فانها تذهب حتى تسجد تحت العرش فتستاذن فيوذن لها ويوشك ان تسجد ولا يقبل منها وتستاذن فلا يوذن لها ويقال لها: ارجعي من حيث جىت فتطلع من مغربها فذلك قوله تعالى (والشمس تجري لمستقر لها) قال: «مستقرها تحت العرش» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (3199) و مسلم (251 ، 250 / 159)، (401 و 402 و 399) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (فَإِنَّهَا تَذْهَبُ حَتَّى تَسْجُدَ تَحْتَ الْعَرْشِ) সূর্যাস্তের সময় ‘আরশের নীচে যায় এবং পুনরায় উদিত হওয়ার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে। ইবনু বাত্তল বলেন, সূর্যের অনুমতি প্রার্থনার অর্থ হলো, আল্লাহ তা'আলা তাতে জীবন দান করেন এবং সে কথা বলে। আর আল্লাহ তা'আলা জড় ও মৃত প্রাণীকে কথা বলাতে সক্ষম। আবার কেউ কেউ বলেন, সূর্যের দিকে অনুমতি প্রার্থনা করার বিষয়টি রূপক অর্থে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ সূর্য নয় বরং তার জন্য ধার্যকৃত মালাক (ফেরেশতা) অনুমতি প্রার্থনা করে। আল্লামাহ্ কুসতুলানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সূর্য তার অভ্যাস অনুযায়ী পূর্বদিক থেকে উদিত হওয়ার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে। ফলে তাকে অনুমতি দেয়া হয় এবং সে অনুযায়ী পূর্বদিক থেকে প্রকাশ পায়। আল্লামা হাফিয বলেন, হাদীসে ‘আরশের নিচে কথার অর্থ হলো, যখন তা আরশের ঠিক নিচে চলে আসে। আর এটা আল্লাহ তা'আলার এই বাণীর বিরোধী নয়।
(وَجَدَهَا تَغۡرُبُ فِیۡ عَیۡنٍ حَمِئَۃٍ) “তখন তিনি সূর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন।”(সূরা আল কাহফ ১৮: ৮৬) এর মর্ম হচ্ছে সূর্যাস্তের সময় দৃষ্টির শেষ সীমা অতিক্রম করা। আর ‘আর আরশের নীচে সাজদাহ্ তখনই হয় যখন তা অস্ত যায়।

[فَذَلِكَ قَوْلُهُ تَعَالَى (والشمسُ تجْرِي لمستقرّ لَهَا)] অচিরেই এমন একদিন আসবে যখন সূর্য সাজদা করবে কিন্তু তা গৃহীত হবে না এবং পুনরায় উদিত হওয়ার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করবে কিন্তু তাকে অনুমতি দেয়া হবে না। আর তাকে বলা হবে, তুমি যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও। অতঃপর পশ্চিমদিক থেকে উদিত হবে। আর এ অর্থেই আল্লাহ তা'আলা বলেন, (وَ الشَّمۡسُ تَجۡرِیۡ لِمُسۡتَقَرٍّ لَّهَا)“সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে।” (সূরাহ্ ইয়াসীন ৩৬: ৩৮)
হাফিয বলেন, এ হাদীসটি তাদের মতামতকে খণ্ডন করে যারা ধারণা করে যে, (مُسْتَقَرُّهَا) এর মর্ম হলো সূর্যের উচ্চতা যেখানে গিয়ে শেষ হয়। আর যার কারণে বছরের দিনটি সবচেয়ে বড় হয়। অথবা দুনিয়া ধ্বংসের নির্দেশ আসার আগ পর্যন্ত। হাফিয বলেন, হাদীসের বাহ্যিক উদ্দেশ্য হলো, প্রতিদিনে ও রাতে সাজদার সময় স্থির থাকা। আর যাকে (جرعى) বা চলমান বলে।
‘আল্লামাহ্ খত্তাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সম্ভবত এর অর্থ হচ্ছে, তা ‘আরশের নীচে এমনভাবে স্থির থাকে যা আমাদের জ্ঞান পরিবেষ্টন করতে পারে না। তিনি কতিপয় মুফাসসির থেকে আরো বর্ণনা করে বলেন, এর অর্থ হচ্ছে সূর্য তার জন্য নির্ধারিত সময় পর্যন্ত আবর্তমান অর্থাৎ পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার আগ পর্যন্ত।
আবার কেউ কেউ বলেন, আবর্তন অর্থ হচ্ছে সূর্য যত দূর পর্যন্ত উপরে উঠে গ্রীষ্মের সবচেয়ে বড় দিনে। এরপর নীচে নামতে থাকে শীতের সর্বনিম্ন ছোট দিন আসা পর্যন্ত। যা বছরের সবচেয়ে ছোট দিন হিসেবে গণ্য হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৬/২১৮৬)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৬৯-[৬] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, আদম (আঃ)-এর সৃষ্টি থেকে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত দাজ্জালের ফিতনাহ্ অপেক্ষা কোন ফিতনাহ বৃহত্তর নয়। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَا بَيْنَ خَلْقِ آدَمَ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ أَمْرٌ أكبر من الدَّجَّال» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (127 ، 126 / 2946)، (7395 و 7396) ۔
(صَحِيح)

وعن عمران بن حصين قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «ما بين خلق ادم الى قيام الساعة امر اكبر من الدجال» . رواه مسلم رواہ مسلم (127 ، 126 / 2946)، (7395 و 7396) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: (مَا بَيْنَ خَلْقِ آدَمَ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ أَمْرٌ أكبر من الدَّجَّال) আদম (আঃ) সৃষ্টির পর থেকে কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে বড় আর কোন ফিতনাহ্ এবং বড় কষ্টদায়ক কোন কিছু নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৭০-[৭] ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলার পরিচিতি তোমাদের নিকট নিশ্চয় গোপন নয়। নিশ্চয় আল্লাহ কানা নন, কিন্তু দাজ্জালের ডান চোখ কানা হবে। তার এই চোখটি হবে ফোলা আঙ্গুরের মতো। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَن عَبْدُ اللَّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ لَا يَخْفَى عَلَيْكُمْ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى لَيْسَ بِأَعْوَرَ وَإِنَّ الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ أَعْوَرُ عَيْنِ الْيُمْنَى كَأَنَّ عَيْنَهُ عنبة طافية» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (7407) و مسلم (100 / 169)، (7361) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

وعن عبد الله قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان الله لا يخفى عليكم ان الله تعالى ليس باعور وان المسيح الدجال اعور عين اليمنى كان عينه عنبة طافية» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (7407) و مسلم (100 / 169)، (7361) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (أَعْوَرُ عَيْنِ الْيُمْنَى) দাজ্জালের ডান চক্ষু ত্রুটিযুক্ত, যেন তা একটি আঙ্গুরের দানার মতো উপরের দিকে উঠানো রয়েছে। অথবা চোখের জ্যোতি হারিয়ে গেছে। এ হাদীসে (أَعْوَرُ عَيْنِ الْيُمْنَى) বলা হয়েছে। আবার অন্য বর্ণনায় (أَعْوَرَ الْعَيْنِ الْيُسْرَى) বলা হয়েছে। ইমাম মুসলিম উভয় বর্ণনাকে তার সহীহ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। মূলকথা হলো দাজ্জালের উভয় চক্ষু ত্রুটিযুক্ত। একচোখের জ্যোতি নেই আর অন্য চোখের ত্রুটি রয়েছে। এটা কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ)-এর সর্বশেষ কথা। (শারহুন নাবাবী ২/২৭৩)

ইবনু মাজাহ গ্রন্থে বলা হয়েছে, দাজ্জালের বাম চক্ষু ত্রুটিযুক্ত, তার মাথার চুল কোকড়ানো। তার কাছে জান্নাত ও জাহান্নাম থাকবে। তার জাহান্নাম মূলত জান্নাত আর জান্নাতটি জাহান্নাম। ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) ফতহুল বারী গ্রন্থে এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন: এই ভিন্নতা দর্শক ও প্রদর্শনকারীর ভিন্নতার আলোকে হবে। হয়তো দাজ্জাল একজন জাদুকর হিসেবে কোন কিছুকে বিপরীত আকৃতিতে পেশ করে দেখাবে। নতুবা আল্লাহ তা'আলা দাজ্জালের নিয়ন্ত্রিত জান্নাতের ভিতরে জাহান্নাম এবং জাহান্নামের ভিতরে জান্নাত লুকিয়ে রাখবেন। এটিই অগ্রাধিকার যোগ্য। অথবা জান্নাত দ্বারা নি'আমাত ও রহমতকে রূপকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে আর জাহান্নাম দ্বারা কষ্ট ও পরীক্ষাকে বুঝানো হয়েছে। যে তার আনুগত্য করবে সে তাকে জান্নাত দ্বারা পুরস্কৃত করবে। প্রকৃতপক্ষে পরকালে এটা তাকে জাহান্নামে ধাবিত করবে। এমনিভাবে এর বিপরীতটা হবে বিপরীত। অথবা এটাও সম্ভাবনা রয়েছে যে, দাজ্জালের ফিতনায় পড়ে দর্শক অস্থির হয়ে আগুনকে জান্নাত মনে করবে অথবা এর বিপরীত। (ইবনু মাজাহ ৩/৪০৭১)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৭১-[৮] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: এমন কোন নবী গত হননি যিনি তাঁর উম্মাতকে কানা মিথ্যাবাদী (দাজ্জাল) সম্পর্কে সতর্ক করেননি। তোমরা জেনে রাখ! সে (দাজ্জাল) নিশ্চয় কানা হবে। আর তোমরা এটাও নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে, তোমাদের প্রভু (আল্লাহ) কানা নন। তার (দাজ্জালের) চক্ষুদ্বয়ের মধ্যস্থলে লিখে থাকবে (ك ف ر) (অর্থাৎ কাফির)। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا أَنْذَرَ أُمَّتَهُ الْأَعْوَرَ الْكَذَّابَ أَلَا إِنَّهُ أَعْوَرُ وَإِنَّ رَبَّكُمْ لَيْسَ بِأَعْوَرَ مَكْتُوبٌ بَيْنَ عَيْنَيْهِ: ك ف ر . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (7131) و مسلم (101 / 2933)، (7363) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

وعن انس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ما من نبي الا انذر امته الاعور الكذاب الا انه اعور وان ربكم ليس باعور مكتوب بين عينيه: ك ف ر . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (7131) و مسلم (101 / 2933)، (7363) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (مَا مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا أَنْذَرَ أُمَّتَهُ الْأَعْوَرَ الْكَذَّابَ) প্রত্যেক নবীই তার উম্মাতকে মিথ্যাবাদী জ্যোতিহীন চোখ বিশিষ্ট (দাজ্জাল) সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) ফাতহুল বারী গ্রন্থে উল্লেখ করেন (لَمْ يَكُنْ نَبِيٌ بِعْد نُوح إلَّا وَقَدْ أَنْذَرَ قَوْمه الدَّجَّال) “নূহ আলায়হিস সালাম-এর পর এমন কোন নবী আসেননি যারা তার জাতিকে দাজ্জাল থেকে সতর্ক করেননি। অর্থাৎ সবাই দাজ্জাল সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক করেছেন।” মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে, (لَقَدْ أَنْجَرَهُ نُوح أُمَّته وَالنَّبِيُّونَ مِنْ بَعْده) নূহ আলায়হিস সালাম তার জাতিকে (দাজ্জাল) থেকে সতর্ক করেছেন এবং তার পরবর্তী সকল নবীই।
অতএব এখানে প্রশ্ন হতে পারে, নূহ আলাইহিস সালাম কিভাবে তার জাতিকে দাজ্জাল সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করেছেন অথচ একাধিক হাদীস থেকে জানা যায় যে, সে কতিপয় নিদর্শনের পরে আবির্ভূত হবে এবং ঈসা আলায়হিস চতুর্থ আসমান থেকে অবতরণ করে তাকে হত্যা করবে এবং শারী'আতে মুহাম্মাদীয়া অনুযায়ী দেশ শাসন করবেন। এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে: নূহ আলাইহিস সালাম এবং তার পরবর্তী নবীগণের নিকট দাজ্জালের আবির্ভাবের সময় জানা ছিল না তথাপি তারা তাদের জাতিকে তার ফিতনাহ থেকে বাঁচার জন্য সতর্ক করেছেন, এর প্রমাণ হচ্ছে রসূল -এর বাণী যা একাধিক সনদে বর্ণিত হয়েছে: (إِنْ يَخْرُج وَأأنَافِيكُمْ فَأَنَا حَخِيجه) “যদি আমি তোমাদের নিকট বর্তমান থাকা অবস্থায় সে প্রকাশ পায় তাহলে আমি তাকে পরাজিত করব।" এ হাদীস থেকে জানা যায় তার এ কথাটি ছিল তখনকার জন্য প্রযোজ্য যখন দাজ্জালের আগমনের সময় এবং তার নিদর্শন তার নিকট অস্পষ্ট ছিল। ফলে সম্ভাবনা ছিল যে, সে তার জীবদ্দশাতেই আসতে পারে। পরবর্তীতে তিনি তার আগমনের সময় সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছেন তাই তিনি এ ব্যাপারে সংবাদ দিয়েছেন। এভাবে সমস্ত হাদীসের মাঝে সমন্বয় হয়ে গেল। ('আওনুল মা'বুদ ৭/৪৩০৮)।

(أَلَا إِنَّهُ أَعْوَرُ وَإِنَّ رَبَّكُمْ لَيْسَ بِأَعْوَرَ) “সাবধান, নিশ্চয় সে ত্রুটিপূর্ণ চক্ষুবিশিষ্ট আর তোমাদের প্রতিপালক ত্রুটিপূর্ণ চক্ষুবিশিষ্ট নন।”
দাজ্জালের মধ্যে অনেকগুলো নিদর্শন থাকা সত্ত্বেও শুধু এটিকে উল্লেখ করেই ক্ষ্যান্ত হয়েছে এর কারণ হলো এ বৈশিষ্ট্যটি জ্ঞানী এবং সাধারণ মানুষ সকলেই অনুভব করতে পারে। এমনকি যারা যুক্তি প্রমাণ বুঝে তারাও। যদি সে সৃষ্টিগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ইলাহ দাবী করে তাহলে বুঝতে হবে নিশ্চয় সে মিথ্যাবাদী। ('আওনুল মা'বূদ ৭/৪৩০৮)
মিরকাতুল মাফাতীহ গ্রন্থকার বলেন, (وَإِنَّ رَبَّكُمْ لَيْسَ بِأَعْوَرَ) তথা তোমাদের রব সত্তাগত ও গুণগত দিক থেকে ত্রুটিমুক্ত। নবী (সা.) এই কথাকে সাধারণ মানুষের বিবেক অনুযায়ী বোধগম্য হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। যেহেতু তিনি বলেছেন-(كَلِّمِ النَّاسَ  عَلَى قَدْرِ عُقُولِهِمْ) অর্থাৎ তুমি মানুষের সাথে কথা বল তার বিবেক অনুপাতে। পবিত্র কুরআনে ও এ নীতি অবলম্বন করা হয়েছে,
(اِنَّ الَّذِیۡنَ تَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ عِبَادٌ اَمۡثَالُکُمۡ فَادۡعُوۡهُمۡ فَلۡیَسۡتَجِیۡبُوۡا لَکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۱۹۴﴾ اَلَهُمۡ اَرۡجُلٌ یَّمۡشُوۡنَ بِهَاۤ ۫ اَمۡ لَهُمۡ اَیۡدٍ یَّبۡطِشُوۡنَ بِهَاۤ ۫ اَمۡ لَهُمۡ اَعۡیُنٌ یُّبۡصِرُوۡنَ بِهَاۤ ۫ اَمۡ لَهُمۡ اٰذَانٌ یَّسۡمَعُوۡنَ بِهَا ؕ قُلِ ادۡعُوۡا شُرَکَآءَکُمۡ ثُمَّ کِیۡدُوۡنِ فَلَا تُنۡظِرُوۡنِ ﴿۱۹۵﴾) “আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাক তারা তোমাদের মতোই বান্দা। (ঠিক আছে) তাদেরকে ডাকতে থাক, তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক তাহলে তারা তোমাদের ডাকে সাড়া দিক।
তাদের কি পা আছে যা দিয়ে তারা চলাফেরা করে? তাদের কি হাত আছে যা দিয়ে তারা ধরে? তাদের কি চোখ আছে যা দিয়ে তারা দেখে? তাদের কি কান আছে যা দিয়ে তারা শোনে? বল, তোমরা যাদেরকে আল্লাহর শরীক করছ তাদেরকে আহ্বান কর, আর আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর এবং আমাকে অবকাশ দিও না।" (সূরা আল আ'রাফ ৭: ১৯৪-১৯৫)
এ এই আয়াতদ্বয় দ্বারা আল্লাহ বুঝতে চেয়েছেন কাফিরদের মূর্তিগুলো খুবই অসহায়; তাদের হাত, পা, চোখ, কান কিছুই নেই। অতএব কি করে এগুলো মা'বুদ হওয়ার যোগ্যতা রাখে? এর অর্থ এই নয় যে, যদি তাদের এই অঙ্গগুলো থাকত, তাহলে তারা মা'বুদ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করত। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৪৫৭১)

(مَكْتُوبٌ بَيْنَ عَيْنَيْهِ: ك ف ر) তার দুই চোখের মাঝে তথা কপালে লেখা থাকবে কাফির। এ থেকে বুঝা যায় যে, সে মানুষকে কুফরীর দিকে ডাকবে, হিদায়াতের দিকে নয়। অতএব পরিহার করা উচিত। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে এই উম্মতের জন্য একটি বিরাট নি'আমাত যে, তিনি তার দু’ চোখের মাঝে কাফির কথাটি লিখে দিয়েছেন।
ইমাম নববী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, দাজ্জাল একজন মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটা স্পষ্ট দলীল, যা দেখে প্রত্যেকে চিনে নিতে পারবে। শুধু দেহের বর্ণনা দিয়েই শেষ করা হয়নি, কেননা অনেক বিবেক তা দেখেও বুঝতে পারবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৪৫৭১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৭২-[৯] আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি কি তোমাদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে একটি কথা বলব না? সে কথাটি অতীতের কোন নবীই তার সম্প্রদায়কে বলেননি। আর তা হলো, নিশ্চয় সে (দাজ্জাল) হবে কানা। সে জান্নাত ও জাহান্নামের সাদৃশ্য সাথে নিয়ে আসবে। তখন সে যা বলবে জান্নাত, প্রকৃতপক্ষে তা হবে জাহান্নাম। তার সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে সাবধান করছি যেমন নূহ আলাইহিস তাঁর সম্প্রদায়কে তার সম্পর্কে সাবধান করেছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِلَّا أحدثكُم حَدِيثا عَن الدَّجَّال ماحدث بِهِ نبيٌّ قومَه؟ : إِنَّه أعوَرُ وإِنَّه يَجِيءُ مَعَهُ بِمِثْلِ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ فَالَّتِي يَقُولُ: إِنَّهَا الْجَنَّةُ هِيَ النَّارُ وَإِنِّي أُنْذِرُكُمْ كَمَا أنذر بِهِ نوح قومه . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3338) و مسلم (109 / 2936)، (7372) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: الا احدثكم حديثا عن الدجال ماحدث به نبي قومه؟ : انه اعور وانه يجيء معه بمثل الجنة والنار فالتي يقول: انها الجنة هي النار واني انذركم كما انذر به نوح قومه . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (3338) و مسلم (109 / 2936)، (7372) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (إِنَّه أعوَرُ وإِنَّه يَجِيءُ مَعَهُ بِمِثْلِ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ) সে তার সাথে জান্নাত ও জাহান্নাম সদৃশ জিনিস নিয়ে মানুষের নিকট আগমন করবে। যা আল্লাহ তা'আলা মু'মিন ব্যক্তির জন্য আসল অবস্থায় রূপান্তর করে দেখাবেন। সে যেটাকে জান্নাত বলবে বস্তুত সেটাই হবে জাহান্নামের আগুন। আর যেটাকে আগুন বলবে সেটা হবে জান্নাত”। হাদীসের ভাষ্যকার বলেন, যে তার জান্নাতে প্রবেশ করবে সে জাহান্নামের অধিবাসী হবে। কেননা সে তাকে বিশ্বাস করেছে। অনুরূপভাবে যে তার আনুগত্য করবে না সে তাকে আগুনে নিক্ষেপ করবে, মূলত সেই জান্নাতের অধিকারী হবে, কেননা সে তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এই সমস্ত হাদীস দাজ্জাল অস্তিত্বের সত্যতার জন্য হকপন্থী মতবাদীদের দলীল। সে এমন এক ব্যক্তি, যার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা তার বান্দাদেরকে পরীক্ষা করবেন। আর আল্লাহ তাআলা তাকে আল্লাহর জন্য নির্ধারিত ক্ষমতাবলীর অধিকারী করবেন। যেমন- মৃত্যুকে জীবিত করা, দুনিয়ার প্রাচুর্যতার ধনভাণ্ডার তার হাতে ন্যাস্ত থাকবে, আকাশকে হুকুম করা মাত্রই বৃষ্টি বর্ষিত হবে এবং তরু তাজাও শস্যে ভরে উঠবে। আর আল্লাহ তা'আলা সকল মানুষকে তাকে হত্যা করতে অপারগ করবেন। শুধুমাত্র ‘ঈসা আলায়হিস সালাম তাকে হত্যা করবেন এবং সঠিক দীন প্রতিষ্ঠা করবেন। তার গঠন অনেক বড় যা জ্ঞানীদের বিবেককে হয়রান করে তুলে। সে এত দ্রুত পুরা দুনিয়া প্রদক্ষিণ করবে যে, তার কৃতকর্মে দুর্বল ঈমানের অধিকারীগণ চিন্তা-ভাবনার সুযোগ না পেয়ে তাকে বিশ্বাস করে ফেলবে। এজন্য সকল নবীই তাদের কওমকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। আর সঠিক বুঝের অধিকারীগণ তার ধোকায় পতিত হবে না ও তাকে বিশ্বাস করবে না।

(وَإِنِّي أُنْذِرُكُمْ كَمَا أنذر بِهِ نوح قومه) আর আমি তোমাদেরকে সতর্ক করছি যেমনভাবে নূহ আলায়হিস সালাম তার সম্প্রদায়কে সতর্ক করেছিলেন। যদি প্রশ্ন করা হয় নবী (সা.) উক্ত হাদীসে নূহ আলায়হিস সালাম-কে নির্দিষ্ট করে কেন উল্লেখ করলেন? তাহলে এর উত্তর হলো, যেহেতু নূহ আলায়হিস সালাম প্রসিদ্ধ নবীদের মধ্যে একজন অগ্রগামী নবী যার কথা আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে এভাবে উল্লেখ করেছেন (شَرَعَ لَکُمۡ مِّنَ الدِّیۡنِ مَا وَصّٰی بِهٖ نُوۡحًا) “তিনি তোমাদের জন্য দীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারিত করেছেন যার আদেশ দিয়েছিলেন নুহ আলাইহিস সালাম-কে”- (সূরা আশ শূরা- ৪২: ১৩)।
উক্ত আয়াতে নূহ আলায়হিস সালাম-কে প্রথমে উল্লেখ করার কারণ হলো, তিনি সকল বিজ্ঞ রসূলগণের মধ্যে আগমনের দিক থেকে প্রথম ছিলেন। অন্যথায় মর্যাদার দিক থেকে নবী (সা.) হলেন সর্বাগ্রে। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করেন (وَ اِذۡ اَخَذۡنَا مِنَ النَّبِیّٖنَ مِیۡثَاقَهُمۡ وَ مِنۡکَ وَ مِنۡ نُّوۡحٍ وَّ اِبۡرٰهِیۡمَ وَ مُوۡسٰی وَ عِیۡسَی ابۡنِ مَرۡیَمَ) “আমি পয়গম্বরগণের কাছ থেকে, তোমার কাছ থেকে এবং নূহ, ইবরাহীম, মূসা ও মারইয়াম তনয় ‘ঈসার কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম”- (সূরা আল আহযাব ৩৩: ৭)। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৪৫৭২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৭৩-[১০] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: দাজ্জাল নিজের সাথে পানি ও আগুন নিয়ে বের হবে। মানুষ দৃশ্যত যা পানি ধারণা করবে, মূলত তা হবে জ্বলন্ত আগুন। আর মানুষ যা আগুন ধারণা করবে, বাস্তবে তা হবে ঠাণ্ডা মিষ্টি পানি। অতএব তোমাদের যে কেউ সেই দাজ্জালের যুগ পাবে, সে যেন যা আগুন দেখতে পায় তাতে প্রবেশ করে। কেননা তা হবে সুস্বাদু মিষ্ট পানি। (বুখারী ও মুসলিম)

সহীহ মুসলিমে এতে আরো অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, দাজ্জাল হবে মুদিত চক্ষুবিশিষ্ট। তার চক্ষুর উপর নখ পরিমাণ মোটা চামড়া থাকবে, চক্ষুদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে লেখা থাকবে কাফির। প্রত্যেক শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মুমিন তা পড়তে পারবে।

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَنْ حُذَيْفَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الدَّجَّالَ يَخْرُجُ وَإِنَّ مَعَهُ مَاءً وَنَارًا فَأَمَّا الَّذِي يَرَاهُ النَّاسُ مَاءً فَنَارٌ تَحْرِقُ وَأَمَّا الَّذِي يَرَاهُ النَّاسُ نَارًا فَمَاءٌ بَارِدٌ عَذْبٌ فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ مِنْكُمْ فَلْيَقَعْ فِي الَّذِي يَرَاهُ نَارًا فَإِنَّهُ مَاءٌ عَذْبٌ طَيِّبٌ» . مُتَّفق عَلَيْهِ. وَزَاد مُسلم: «إِن الدجالَ ممسوحُ العينِ عَلَيْهَا ظفرةٌ غليظةٌ مَكْتُوب بَين عَيْنَيْهِ كَافِر يَقْرَؤُهُ كل مُؤمن كاتبٌ وَغير كَاتب»

متفق علیہ ، رواہ البخاری (7131) و مسلم (102 ۔ 105 / 2934)، (7367 و 7368) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

وعن حذيفة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «ان الدجال يخرج وان معه ماء ونارا فاما الذي يراه الناس ماء فنار تحرق واما الذي يراه الناس نارا فماء بارد عذب فمن ادرك ذلك منكم فليقع في الذي يراه نارا فانه ماء عذب طيب» . متفق عليه. وزاد مسلم: «ان الدجال ممسوح العين عليها ظفرة غليظة مكتوب بين عينيه كافر يقروه كل مومن كاتب وغير كاتب» متفق علیہ ، رواہ البخاری (7131) و مسلم (102 ۔ 105 / 2934)، (7367 و 7368) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (إِنَّ الدَّجَّالَ يَخْرُجُ وَإِنَّ مَعَهُ مَاءً وَنَارً)“দাজ্জাল বের হবে এবং তার সাথে থাকবে পানি এবং আগুন।” (مَاءً) পানি বলতে বুঝানো হয়েছে পানি থেকে উৎপন্ন নি'আমাত সামগ্রী।
পূর্বের হাদীসে বাহ্যিকভাবে যাকে জান্নাত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। যারা তার অনুসরণ করবে তারা তাই চাবে। আর (نَارًا) আগুন বলতে বুঝানো হয়েছে, যা মূলত শাস্তি ও কষ্টের কারণ হবে এবং এর দ্বারা সে তার অবাধ্যদেরকে ভয় দেখাবে।
(فَأَمَّا الَّذِي يَرَاهُ النَّاسُ مَاءً فَنَارٌ تَحْرِقُ وَأَمَّا الَّذِي يَرَاهُ النَّاسُ نَارًا فَمَاءٌ بَارِدٌ عَذْبٌ) অর্থাৎ মানুষ যাকে পানি হিসেবে দেখবে তা হবে দগ্ধকারী আগুন আর যাকে আগুন হিসেবে দেখবে মূলত সেটাই হবে সুপেয় পানি। এর অর্থ হলো আল্লাহ তা'আলা দাজ্জালের আগুনকে সুপেয় ঠাণ্ডা পানিতে রূপান্তরিত করবেন তাদের জন্য যারা তাকে অবিশ্বাস ও ঘৃণা প্রকাশ করবে। যেভাবে আল্লাহ তা'আলা ইবরাহীমের জন্য নমরূদের আগুনকে শীতল ও আরামদায়ক করে দিয়েছিলেন। আর দাজ্জালের সত্যতার প্রমাণের জন্য যা দিয়েছেন তা দগ্ধকারী আগুনে পরিণত করবেন। মূলকথা হলো, সে ফিতনাহ প্রসার করার জন্য যা কিছুই প্রকাশ করবে তা বাস্তব নয় বরং তা ধারণা ও ধাধা, যেমনটি যাদুকররা করে থাকে। আর আল্লাহ সেগুলোকে বাস্তব আগুন ও পানিতে পরিণত করতে সক্ষম। যেহেতু তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
অতএব তোমাদের মধ্যে যারা দাজ্জাল ও তার কার্যাবলী দেখবে তারা যেন তার আগুনকেই গ্রহণ করে এবং তাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে সাব্যস্ত করে। তার আগুনকে কোন পরোয়া না করে, কেননা তার আগুন মূলত সুপেয় পানি হবে অথবা আল্লাহ তা পানিতে রূপান্তরিত করে দিবেন।
সহীহ মুসলিম-এর বর্ণনায় আছে, (الدَّجَّالُ مَمْسُو حُ الْعَيْنِ) অর্থাৎ দাজ্জালের একচক্ষু কপালের ন্যায় সমান থাকবে, তাতে চোখের কোন চিহ্ন থাকবে না। তার উপর মোটা মাংসখণ্ড বা চামড়া দিয়ে ঢাকা থাকবে। আর তার দুই চোখের মাঝে (كَافِرٌ) লেখা থাকবে। যা প্রত্যেক মু'মিন ব্যক্তি পড়তে পারবে। সে শিক্ষিত হোক বা না হোক। সহীহ মুসলিমে মু'মিন এর পরিবর্তে মুসলিম কথা উল্লেখ আছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৫৪৭৩, ফাতহুল বারী ১৩/৭১৩০)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৭৪-[১১] উক্ত রাবী [হুযায়ফাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: দাজ্জালের বাম চোখ কানা, মাথার কেশ অত্যধিক। তার সঙ্গে থাকবে তার জান্নাত ও জাহান্নাম। বাস্তবে তার জাহান্নাম হবে জান্নাত এবং জান্নাত হবে জাহান্নাম। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الدَّجَّالُ أَعْوَرُ الْعَيْنِ الْيُسْرَى جُفَالُ الشَّعَرِ مَعَهُ جَنَّتُهُ وَنَارُهُ فَنَارُهُ جِنَّةٌ وَجَنَّتُهُ نارٌ» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (104 / 2934)، (7366) ۔
(صَحِيح)

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الدجال اعور العين اليسرى جفال الشعر معه جنته وناره فناره جنة وجنته نار» . رواه مسلم رواہ مسلم (104 / 2934)، (7366) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: (لدَّجَّالُ أَعْوَرُ الْعَيْنِ الْيُسْرَى) দাজ্জালের বাম চক্ষু ত্রুটিযুক্ত। অন্য বর্ণনায় আছে, (أَعُوَرُالْعَيْنِ الْيُمْنَى) তার ডান চক্ষু ত্রুটিপূর্ণ। আবার বলা হয়েছে, (مَمْسُو حُ إِحْدَى عَيْنَيْهِ)  তার দুটি চোখের একটি কপালের ন্যায় সমান থাকবে। এ সমস্ত বর্ণনার সমন্বয়ে বলা যায়, মূলত তার একচোখ নেই আর অপর চোখ ত্রুটিপূর্ণ। তাই বলা যায়, তার উভয় চোখই ত্রুটিপূর্ণ। অথবা বলা যায়, তার চোখের ত্রুটি বিভিন্ন লোকের নিকট বিভিন্নভাবে প্রকাশ পাবে। কোন কোন লোক দেখবে তার বাম চক্ষু ত্রুটিপূর্ণ, আবার কোন লোক দেখবে তার ডান চক্ষু ত্রুটিপূর্ণ যা দ্বারা প্রমাণিত হবে সে ত্রুটিপূর্ণ এবং তার দাবীতে একজন মিথ্যাবাদী ব্যক্তি। ভাষ্যকার বলেন, এখানে সম্ভাবনা রয়েছে বর্ণনাকারী হয়তো ভুলে গেছেন। যার কারণে বর্ণনার ভিন্নতা হয়েছে।
(جُفَالُ الشَّعَرِ) তার মাথায় ঘন চুল থাকবে। আর তার কাছে জান্নাত ও জাহান্নামের আগুন থাকবে। তার আগুন হবে মূলত জান্নাত আর জান্নাত হবে আগুন। (মিকাতুল মাফাতীহ ৫৪৭৪, শারহুন নাবাবী ১৮/২৯৩৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৭৫-[১২] নাওয়াস ইবনু সাম’আন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) দাজ্জালের আলোচনাকালে বললেন, যদি তার আগমন ঘটে আর আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকি, তখন তোমাদের মধ্যে আমিই তার সাথে দলীল-প্রমাণে বিজয়ী হব। আর আমি যদি বিদ্যমান না থাকি এবং তার আগমন ঘটে, তখন তোমাদের প্রত্যেক লোকই সরাসরি দলীল-প্রমাণে তার মোকাবিলা করবে। তখন প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আমার পরিবর্তে আল্লাহ তা’আলাই হবেন সাহায্যকারী। সে হবে, একজন জোয়ান, মাথার চুল কোঁকড়ানো, ফোলা চক্ষুবিশিষ্ট। আমি তাকে (ইয়াহূদী) আবদুল উযযা ইবনু কত্বান-এর সাথে তুলনা করতে পারি। অতএব যে কেউ তাকে পাবে, সে যেন তার সামনে সূরাহ্ আল কাহফ-এর শুরুর আয়াতগুলো পাঠ করে।

অপর এক বর্ণনা আছে যে, সে যেন তার সামনে সূরা কাহফ-এর প্রথমাংশ হতে পাঠ করে। কেননা এ আয়াতগুলো তোমাদেরকে দাজ্জালের ফিতনাহ্ হতে নিরাপদে রাখবে। সে সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী পথ দিয়ে বের হবে এবং চলার পথে ডানে ও বামে (’র অঞ্চলসমূহ) ক্ষতিকর ফাসাদ সৃষ্টি করবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা (ঈমান ও আক্বীদায়) দীনের উপর দৃঢ় থাকবে। আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে কতদিন জমিনে অবস্থান করবে? তিনি (সা.) বললেন, চল্লিশ দিন। তবে তখনকার একদিন হবে এক বছরের সমান এবং একদিন হবে এক মাসের সমান আর একদিন হবে এক সপ্তাহের সমান। আর অন্যান্য দিনগুলো হবে তোমাদের স্বাভাবিক দিনগুলোর মতো। আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আচ্ছা বলুন তো, সেই একদিন, যা এক বছরের সমান হবে। আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! জমিনে তার চলার গতি কি পরিমাণ দ্রুত হবে? তিনি (সা.) বললেন, সে মেঘের মতো, যার পিছনে প্রবল বাতাস রয়েছে। অতঃপর সে কোন এক সম্প্রদায়ের কাছে আসবে এবং তাদেরকে (তার অনুসরণে) আহ্বান করবে। অতএব লোকেরা তার প্রতি ঈমান আনবে। তখন সে আকাশকে নির্দেশ করবে, ফলে জমিন (ঘাস ফসলাদি) উৎপাদন করবে। লোকেদের গবাদিপশু সন্ধ্যায় যখন ফিরবে, তখন উচ্চ কুঁজবিশিষ্ট এবং দুধে ওলান ভর্তি (অবস্থায়) কোমর টেনে ফিরবে। অতঃপর সে (দাজ্জাল) অপরদিকে আহ্বান করবে, কিন্তু তারা তার দাবি অস্বীকার করবে। তখন সে তাদের নিকট থেকে ফিরে আসবে। অতএব সে কওমের লোকেরা মহাদুর্ভিক্ষে নিপতিত হবে। ফলে তাদের হাতে ধন-সম্পদ কিছুই থাকবে না। অতঃপর সে (দাজ্জাল) একটি অনাবাদ পতিত জায়গা অতিক্রম করবে এবং তাকে লক্ষ্য করে বলবে, তোমার ভিতরে যে সমস্ত রয়েছে তা বের করে দাও। অতঃপর উক্ত ধন-সম্পদ এমনিভাবে তাদের পেছনে ছুটতে থাকবে, যেমনিভাবে মৌমাছির দল তাদের সরদার মৌমাছির পিছনে ছুটে চলে।

অতঃপর দাজ্জাল যৌবনে পূর্ণাঙ্গ এক যুবককে তার প্রতি আহ্বান করবে, (কিন্তু তার প্রতি অস্বীকারের দরুন) দাজ্জাল তাকে তরবারির আঘাতে দ্বি-খণ্ডিত করে ফেলবে এবং উভয় খণ্ডকে এত দূরে দূরে নিক্ষেপ করবে যে, একটি নিক্ষিপ্ত তীরের দূরত্ব পরিমাণ তাদের মধ্যে ব্যবধান হবে। অতঃপর সে উভয় খণ্ডকে নিজের কাছে ডাকবে, ফলে ঐ যুবক জীবিত হয়ে তার সামনে উপস্থিত হবে, তখন তার মুখমণ্ডল হাস্যোজ্জল হয়ে উঠবে। যখন সে এ সকল কাণ্ডে লিপ্ত, ঠিক এমনি সময়ে আল্লাহ তা’আলা হঠাৎ ’ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) কে (আকাশ হতে) পাঠাবেন এবং তিনি দামিশকের পূর্ব প্রান্তের শ্বেত মিনারা হতে হলুদ রঙের দু’টি কাপড় পরিহিত অবস্থায় দুজন মালাকের (ফেরেশতার) পাখায় হাত রেখে অবতরণ করবেন।
তিনি যখন মাথা নিচু করবেন তখন ফোটা ফোটা ঘর্ম ঝরবে, আর যখন মাথা উঁচু করবেন তখন তা স্বচ্ছ মুক্তার মতো ঝরতে থাকবে। যে কোন কাফির তার শ্বাস-বায়ু তাঁর দৃষ্টির প্রান্তসীমা পর্যন্ত পৌছে যাবে। এ অবস্থায় তিনি দাজ্জালকে অনুসন্ধান করতে থাকবেন। অবশেষে তিনি তাকে (বায়তুল মাক্বদিসের) ’লুদ্দ’ নামক দরজার কাছে পেয়ে তাকে হত্যা করবেন। অতঃপর এমন একটি সম্প্রদায় ’ঈসা (আঃ)-এর কাছে আসবে যাদেরকে আল্লাহ তা’আলা দাজ্জালের ফিতনাহ হতে নিরাপদে রেখেছিলেন। তখন তিনি তাদের মুখমণ্ডলে হাত ফিরাবেন এবং জান্নাতে তাদের জন্য কি পরিমাণ সুউচ্চ মর্যাদা রয়েছে সে সুসংবাদও প্রদান করবেন। এদিকে তিনি এ সমস্ত কাজে লিপ্ত থাকতেই আল্লাহ তা’আলা ’ঈসা আলায়হিস সালাম-এর নিকট এ সংবাদ পাঠাবেন যে, আমি আমার এমন কিছু সংখ্যক বান্দা সৃষ্টি করে রেখেছি, যাদের মোকাবিলা করার ক্ষমতা কারো নেই। অতএব তুমি আমার বান্দাদেরকে ’তুর’ পর্বতে নিয়ে সংরক্ষণ (একত্রিত) কর। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা ইয়াজুজ ও মাজুজকে পাঠাবেন। তারা প্রত্যেক উঁচু জায়গা থেকে নিচে জমিনে নেমে দ্রুত বিচরণ করতে থাকবে এবং তাদের প্রথম দল ’ত্ববারিয়্যাহ’ নদী (সিরিয়ার একটি নদী) অতিক্রম করবে এবং তারা এটার সবটুকু পানি পান করে ফেলবে। ফলে তাদের সর্বশেষ দল সে স্থান অতিক্রম করার সময় বলবে, হয়তো কোন সময় এখানে পানি ছিল। অতঃপর তার সামনে অগ্রসর হয়ে ’খমার’ নামক পাহাড় পর্যন্ত পৌছবে। এটা বায়তুল মাক্বদিসের নিকটে অবস্থিত পাহাড়। এখানে পৌঁছে তারা বলবে, জামিনে যারা বসবাস করত, ইতোমধ্যে আমরা নিশ্চিত সকলকে হত্যা করে ফেলেছি! এই বলে তারা আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করবে।
আর আল্লাহ তা’আলা তাদের তীরগুলোকে রুক্তমাখা অবস্থায় তাদের দিকে ফিরিয়ে দেবেন। এ সময়। আল্লাহর নবী (ঈসা আলায়হিস সালাম) ও তার সঙ্গীগণকে তূর পর্বতে মারাত্মক দুরাবস্থায় অবরোধ করা হবে। অর্থাৎ তারা ভীষণ খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হবেন। এমনকি তাদের কারো জন্য একটি গরুর মাথা এ যুগের একশত দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) অপেক্ষা বেশি মূল্যবান হবে। এই চরম অবস্থায় আল্লাহ নবী ’ঈসা আলায়হিস্ সালাম এবং তার সঙ্গীগণ আল্লাহর দিকে রুজু হবেন (এবং ইয়াজুজ ও মাজুজ-এর ধ্বংসের জন্য দু’আ করবেন) অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাদের ঘাড়ের উপর বিষাক্ত কীটের ’আযাব অবতীর্ণ করবেন। (এটা উট, বকরির নাকের মধ্যে জন্মে) ফলে তারা মুহূর্তের মধ্যে সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহর নবী ’ঈসা (আঃ) ও তার সঙ্গীগণ পর্বত থেকে নিচে জমিনে অবতরণ করবেন। কিন্তু ইয়াজুজ ও মাজুজ-এর মরদেহের চর্বি ও দুর্গন্ধ হতে মুক্ত, এমন একবিঘত জমিনও খালি পাবেন না। তখন আল্লাহ তা’আলার কাছে ফরিয়াদ করবেন

অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বখতী উটের ঘাড়ের মতো লম্বা লম্বা ঘাড়বিশিষ্ট পাখির ঝাঁক পাঠাবেন। পাখির দল তাদের মরদেহসমূহকে তুলে নেবে এবং যেখানে আল্লাহ ইচ্ছা সেখানে নিয়ে নিক্ষেপ করবে। অবশ্য অন্য এক রিওয়ায়াতে আছে, তাদেরকে ’নহবল’ নামক স্থানে নিয়ে ফেলে দিবে এবং মুসলিমগণ তাদের ধনুক, তীর এবং তীর রাখার কোষসমূহ সাত বছর পর্যন্ত লাকড়িস্বরূপ জ্বালাতে থাকবে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা ব্যাপক বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। যার কারণে জনবসতির কোন একটি অংশ, চাই তা মাটির ঘর হোক কিংবা পশমের হোক বাদ থাকবে না, ধৌত করে পরিষ্কার করে দিবে। অবশেষে তা আয়নার মতো পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে। তারপর জমিনকে বলা হবে, তোমার ফল-ফলাদি বের করে দাও এবং তোমার কল্যাণ ও বরকত ফিরিয়ে আনো। ফলে সে সময় এক দল লোক একটি ডালিম পরিতৃপ্ত হয়ে খাবে এবং তার খোসা দ্বারা লোকেরা ছায়া লাভ করবে। আর দুগ্ধের মধ্যে বরকত দান করা হবে। এমনকি একটি উষ্ট্রীর দুধ একদল লোকের জন্য যথেষ্ট হবে এবং একটি গাভীর দুধ এক সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে এবং একটি বকরির দুধ একটি পরিবারের লোকের জন্য যথেষ্ট হবে। ঠিক এমনি সময়ে হঠাৎ একদিন আল্লাহ তা’আলা একটি সিগ্ধ বাতাস প্রবাহিত করবেন। তা তাদের বগল স্পর্শ করবে এবং উক্ত বায়ু প্রতিটি মু’মিন মুসলিমের আত্মা কবয করবে, অতঃপর কেবলমাত্র পাপী ও মন্দ লোকেরাই অবশিষ্ট থাকবে, আর তারা গাধার মতো পরস্পর দ্বন্দ্ব-কলহে লিপ্ত হয়ে পড়বে, তখন তাদের ওপরেই কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে। (মুসলিম; তবে রিওয়ায়াতের দ্বিতীয়াংশ অর্থাৎ (تَطْرَ بِاْلنَّهْبَلِ) হতে (سَبْعَ سِبِيْن) পর্যন্ত তিরমিযী বর্ণনা করেছেন)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَن النوَّاس بن سمْعَان قَالَ: ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الدَّجَّالَ فَقَالَ: «إِنْ يَخْرُجْ وَأَنَا فِيكُمْ فَأَنَا حَجِيجُهُ دُونَكُمْ وَإِنْ يَخْرُجْ وَلَسْتُ فِيكُمْ فَامْرُؤٌ حَجِيجُ نَفْسِهِ وَاللَّهُ خَلِيفَتِي عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ إِنَّهُ شَابٌّ قَطَطٌ عَيْنُهُ طَافِيَةٌ كَأَنِّي أُشَبِّهُهُ بِعَبْدِ الْعُزَّى بْنِ قَطَنٍ فَمَنْ أَدْرَكَهُ مِنْكُمْ فَلْيَقْرَأْ عَلَيْهِ فَوَاتِحَ سُورَةِ الْكَهْفِ» . وَفِي رِوَايَةٍ «فَلْيَقْرَأْ عَلَيْهِ بِفَوَاتِحِ سُورَةِ الْكَهْفِ فَإِنَّهَا جوارُكم من فتنته إِنَّه خَارج خلة بِي الشَّامِ وَالْعِرَاقِ فَعَاثَ يَمِينًا وَعَاثَ شِمَالًا يَا عِبَادَ اللَّهِ فَاثْبُتُوا» . قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا لَبْثُهُ فِي الْأَرْضِ؟ قَالَ: «أَرْبَعُونَ يَوْمًا يَوْمٌ كَسَنَةٍ وَيَوْمٌ كَشَهْرٍ وَيَوْمٌ كَجُمُعَةٍ وَسَائِرُ أَيَّامِهِ كَأَيَّامِكُمْ» . قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ فَذَلِكَ الْيَوْمُ الَّذِي كَسَنَةٍ أَتَكْفِينَا فِيهِ صَلَاةُ يَوْمٍ. قَالَ: «لَا اقْدُرُوا لَهُ قَدَرَه» . قُلْنَا: يَا رسولَ اللَّهِ وَمَا إِسْرَاعُهُ فِي الْأَرْضِ؟ قَالَ: كَالْغَيْثِ اسْتَدْبَرَتْهُ الرِّيحُ فَيَأْتِي عَلَى الْقَوْمِ فَيَدْعُوهُمْ فَيُؤْمِنُونَ بِهِ فَيَأْمُرُ السَّمَاءَ فَتُمْطِرُ وَالْأَرْضَ فَتُنْبِتُ فَتَرُوحُ عَلَيْهِمْ سَارِحَتُهُمْ أَطْوَلَ مَا كَانَتْ ذُرًى وَأَسْبَغَهُ ضُرُوعًا وَأَمَدَّهُ خَوَاصِرَ ثُمَّ يَأْتِي الْقَوْمَ فَيَدْعُوهُمْ فَيَرُدُّونَ عَلَيْهِ قَوْله فَيَنْصَرِف عَنْهُم فيصبحون مملحين لَيْسَ بِأَيْدِيهِمْ شَيْءٌ مِنْ أَمْوَالِهِمْ وَيَمُرُّ بِالْخَرِبَةِ فَيَقُولُ لَهَا: أَخْرِجِي كُنُوزَكِ فَتَتْبَعُهُ كُنُوزُهَا كَيَعَاسِيبِ النَّحْلِ ثُمَّ يَدْعُو رَجُلًا مُمْتَلِئًا شَبَابًا فَيَضْرِبُهُ بِالسَّيْفِ فَيَقْطَعُهُ جَزْلَتَيْنِ رَمْيَةَ الْغَرَضِ ثُمَّ يَدْعُوهُ فَيُقْبِلُ وَيَتَهَلَّلُ وَجْهُهُ يَضْحَكُ فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ بَعَثَ اللَّهُ الْمَسِيحَ بْنَ مَرْيَمَ فَيَنْزِلُ عِنْد المنارة الْبَيْضَاء شرقيّ دمشق بَين مهروذتين وَاضِعًا كَفَّيْهِ عَلَى أَجْنِحَةِ مَلَكَيْنِ إِذَا طَأْطَأَ رَأسه قطر وَإِذا رَفعه تحدرمنه مثل جُمان كَاللُّؤْلُؤِ فَلَا يحل لكافرٍ يَجِدَ مِنْ رِيحِ نَفَسِهِ إِلَّا مَاتَ وَنَفَسُهُ يَنْتَهِي حَيْثُ يَنْتَهِي طَرْفُهُ فَيَطْلُبُهُ حَتَّى يُدْرِكَهُ بِبَاب لُدٍّ فيقتُلُه ثمَّ يَأْتِي عِيسَى إِلى قَوْمٌ قَدْ عَصَمَهُمُ اللَّهُ مِنْهُ فَيَمْسَحُ عَنْ وُجُوهِهِمْ وَيُحَدِّثُهُمْ بِدَرَجَاتِهِمْ فِي الْجَنَّةِ فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ أَوْحَى اللَّهُ إِلَى عِيسَى: أَنِّي قَدْ أَخْرَجْتُ عِبَادًا لِي لَا يَدَانِ لِأَحَدٍ بِقِتَالِهِمْ فَحَرِّزْ عِبَادِيَ إِلَى الطُّورِ وَيَبْعَثُ اللَّهُ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ (وَهُمْ مِنْ كُلِّ حَدَبٍ يَنْسِلُونَ) فَيَمُرُّ أَوَائِلُهُمْ عَلَى بُحَيْرَةِ طَبَرِيَّةَ فَيَشْرَبُونَ مَا فِيهَا ويمر آخِرهم وَيَقُول: لَقَدْ كَانَ بِهَذِهِ مَرَّةً مَاءٌ ثُمَّ يَسِيرُونَ حَتَّى يَنْتَهُوا إِلَى جَبَلِ الْخَمَرِ وَهُوَ جَبَلُ بَيْتِ الْمَقْدِسِ فَيَقُولُونَ لَقَدْ قَتَلْنَا مَنْ فِي الْأَرْضِ هَلُمَّ فَلْنَقْتُلْ مَنْ فِي السَّمَاءِ فَيَرْمُونَ بِنُشَّابِهِمْ إِلَى السَّمَاءِ فَيَرُدُّ اللَّهُ عَلَيْهِمْ نُشَّابَهُمْ مَخْضُوبَةً دَمًا وَيُحْصَرُ نَبِيُّ اللَّهِ وَأَصْحَابُهُ حَتَّى يَكُونَ رَأْسُ الثَّوْرِ لِأَحَدِهِمْ خَيْرًا مِنْ مِائَةِ دِينَارٍ لِأَحَدِكُمُ الْيَوْمَ فَيَرْغَبُ نَبِيُّ اللَّهِ عِيسَى وَأَصْحَابُهُ فَيُرْسِلُ اللَّهُ عَلَيْهِمُ النَّغَفَ فِي رِقَابِهِمْ فَيُصْبِحُونَ فَرْسَى كَمَوْتِ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ ثُمَّ يَهْبِطُ نَبِيُّ اللَّهِ عِيسَى وَأَصْحَابُهُ إِلَى الْأَرْضِ فَلَا يَجِدُونَ فِي الْأَرْضِ مَوْضِعَ شِبْرٍ إِلَّا مَلَأَهُ زَهَمُهُمْ وَنَتْنُهُمْ فَيَرْغَبُ نَبِيُّ اللَّهِ عِيسَى وَأَصْحَابُهُ إِلَى اللَّهِ فَيُرْسِلُ اللَّهُ طَيْرًا كَأَعْنَاقِ الْبُخْتِ فَتَحْمِلُهُمْ فَتَطْرَحُهُمْ حَيْثُ شَاءَ اللَّهُ «. وَفِي رِوَايَةٍ» تَطْرَحُهُمْ بِالنَّهْبَلِ وَيَسْتَوْقِدُ الْمُسْلِمُونَ مِنْ قِسِيِّهِمْ وَنُشَّابِهِمْ وَجِعَابِهِمْ سَبْعَ سِنِينَ ثُمَّ يُرْسِلُ اللَّهُ مَطَرًا لَا يَكُنُّ مِنْهُ بَيْتُ مَدَرٍ وَلَا وَبَرٍ فَيَغْسِلُ الْأَرْضَ حَتَّى يَتْرُكَهَا كَالزَّلَفَةِ ثُمَّ يُقَالُ لِلْأَرْضِ: أَنْبِتِي ثَمَرَتَكِ وَرُدِّي بَرَكَتَكِ فَيَوْمَئِذٍ تَأْكُلُ الْعِصَابَةُ مِنَ الرُّمَّانَةِ وَيَسْتَظِلُّونَ بِقِحْفِهَا وَيُبَارَكُ فِي الرِّسْلِ حَتَّى إِنَّ اللِّقْحَةَ مِنَ الْإِبِلِ لَتَكْفِي الْفِئَامَ مِنَ النَّاسِ وَاللِّقْحَةَ مِنَ الْبَقَرِ لَتَكْفِي الْقَبِيلَةَ مِنَ النَّاسِ وَاللِّقْحَةَ مِنَ الْغَنَمِ لَتَكْفِي الْفَخْذَ مِنَ النَّاسِ فَبَيْنَا هُمْ كَذَلِكَ إِذْ بَعَثَ اللَّهُ رِيحًا طَيِّبَةً فَتَأْخُذُهُمْ تَحْتَ آبَاطِهِمْ فَتَقْبِضُ رُوحَ كُلِّ مؤمنٍ وكلِّ مسلمٍ وَيَبْقَى شِرَارُ النَّاسِ يَتَهَارَجُونَ فِيهَا تَهَارُجَ الْحُمُرِ فَعَلَيْهِمْ تَقُومُ السَّاعَةُ رَوَاهُ مُسْلِمٌ إِلَّا الرِّوَايَةَ الثَّانِيَةَ وَهِيَ قَوْلُهُ: تَطْرَحُهُمْ بِالنَّهْبَلِ إِلَى قَوْلِهِ: سبع سِنِين . رَوَاهَا التِّرْمِذِيّ

رواہ مسلم (111 ، 110 / 2937)، (7373 و 7374) و الترمذی (2240 وقال : غریب حسن صحیح) ۔
(صَحِيح)

وعن النواس بن سمعان قال: ذكر رسول الله صلى الله عليه وسلم الدجال فقال: «ان يخرج وانا فيكم فانا حجيجه دونكم وان يخرج ولست فيكم فامرو حجيج نفسه والله خليفتي على كل مسلم انه شاب قطط عينه طافية كاني اشبهه بعبد العزى بن قطن فمن ادركه منكم فليقرا عليه فواتح سورة الكهف» . وفي رواية «فليقرا عليه بفواتح سورة الكهف فانها جواركم من فتنته انه خارج خلة بي الشام والعراق فعاث يمينا وعاث شمالا يا عباد الله فاثبتوا» . قلنا: يا رسول الله وما لبثه في الارض؟ قال: «اربعون يوما يوم كسنة ويوم كشهر ويوم كجمعة وساىر ايامه كايامكم» . قلنا: يا رسول الله فذلك اليوم الذي كسنة اتكفينا فيه صلاة يوم. قال: «لا اقدروا له قدره» . قلنا: يا رسول الله وما اسراعه في الارض؟ قال: كالغيث استدبرته الريح فياتي على القوم فيدعوهم فيومنون به فيامر السماء فتمطر والارض فتنبت فتروح عليهم سارحتهم اطول ما كانت ذرى واسبغه ضروعا وامده خواصر ثم ياتي القوم فيدعوهم فيردون عليه قوله فينصرف عنهم فيصبحون مملحين ليس بايديهم شيء من اموالهم ويمر بالخربة فيقول لها: اخرجي كنوزك فتتبعه كنوزها كيعاسيب النحل ثم يدعو رجلا ممتلىا شبابا فيضربه بالسيف فيقطعه جزلتين رمية الغرض ثم يدعوه فيقبل ويتهلل وجهه يضحك فبينما هو كذلك اذ بعث الله المسيح بن مريم فينزل عند المنارة البيضاء شرقي دمشق بين مهروذتين واضعا كفيه على اجنحة ملكين اذا طاطا راسه قطر واذا رفعه تحدرمنه مثل جمان كاللولو فلا يحل لكافر يجد من ريح نفسه الا مات ونفسه ينتهي حيث ينتهي طرفه فيطلبه حتى يدركه بباب لد فيقتله ثم ياتي عيسى الى قوم قد عصمهم الله منه فيمسح عن وجوههم ويحدثهم بدرجاتهم في الجنة فبينما هو كذلك اذ اوحى الله الى عيسى: اني قد اخرجت عبادا لي لا يدان لاحد بقتالهم فحرز عبادي الى الطور ويبعث الله ياجوج وماجوج (وهم من كل حدب ينسلون) فيمر اواىلهم على بحيرة طبرية فيشربون ما فيها ويمر اخرهم ويقول: لقد كان بهذه مرة ماء ثم يسيرون حتى ينتهوا الى جبل الخمر وهو جبل بيت المقدس فيقولون لقد قتلنا من في الارض هلم فلنقتل من في السماء فيرمون بنشابهم الى السماء فيرد الله عليهم نشابهم مخضوبة دما ويحصر نبي الله واصحابه حتى يكون راس الثور لاحدهم خيرا من ماىة دينار لاحدكم اليوم فيرغب نبي الله عيسى واصحابه فيرسل الله عليهم النغف في رقابهم فيصبحون فرسى كموت نفس واحدة ثم يهبط نبي الله عيسى واصحابه الى الارض فلا يجدون في الارض موضع شبر الا ملاه زهمهم ونتنهم فيرغب نبي الله عيسى واصحابه الى الله فيرسل الله طيرا كاعناق البخت فتحملهم فتطرحهم حيث شاء الله «. وفي رواية» تطرحهم بالنهبل ويستوقد المسلمون من قسيهم ونشابهم وجعابهم سبع سنين ثم يرسل الله مطرا لا يكن منه بيت مدر ولا وبر فيغسل الارض حتى يتركها كالزلفة ثم يقال للارض: انبتي ثمرتك وردي بركتك فيومىذ تاكل العصابة من الرمانة ويستظلون بقحفها ويبارك في الرسل حتى ان اللقحة من الابل لتكفي الفىام من الناس واللقحة من البقر لتكفي القبيلة من الناس واللقحة من الغنم لتكفي الفخذ من الناس فبينا هم كذلك اذ بعث الله ريحا طيبة فتاخذهم تحت اباطهم فتقبض روح كل مومن وكل مسلم ويبقى شرار الناس يتهارجون فيها تهارج الحمر فعليهم تقوم الساعة رواه مسلم الا الرواية الثانية وهي قوله: تطرحهم بالنهبل الى قوله: سبع سنين . رواها الترمذي رواہ مسلم (111 ، 110 / 2937)، (7373 و 7374) و الترمذی (2240 وقال : غریب حسن صحیح) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: (ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الدَّجَّالَ) রাসূলুল্লাহ (সা.) দাজ্জালের কথা আলোচনা করলেন অর্থাৎ তার আবির্ভাব তার সমস্ত কর্মকাণ্ড এবং তার মাধ্যমে মানুষকে পরীক্ষায় ফেলার ব্যাপারে আলোচনা করলেন।
(إِنْ يَخْرُجْ وَأَنَا فِيكُمْ فَأَنَا حَجِيجُهُ) যদি সে বের হয় আর আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকি তাহলে আমি দলীল প্রমাণের মাধ্যমে তাকে প্রতিহত করব।
(دُونَكُمْ) তোমাদের সম্মুখে থাকব এবং তোমাদের পক্ষ থেকে প্রতিহত করব। আমি তোমাদের নেতৃত্ব দিব ও তোমাদের সামনে থাকব। এখানে শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, নবী (সা.) দাজ্জালের সাথে বিজিত হওয়ার জন্য তার উম্মতের মধ্যে কোন ব্যক্তির সাহায্যের প্রয়োজন নেই।
(وَإِنْ يَخْرُجْ وَلَسْتُ فِيكُمْ فَامْرُؤٌ حَجِيجُ نَفْسِهِ) আর যদি সে বের হয় এবং আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান না থাকি তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তি তার সাথে দলীল প্রমাণের সাহায্যে ঝগড়া ও বিতর্ক করে তাকে পরাজিত করবে। আল্লামাহ্ মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ আর অনিষ্ট থেকে নিজেকে দলীল প্রমাণের মাধ্যমে প্রতিহত করবে। এটা সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে যদি সে দলীল শুনে। অন্যথা এর অর্থ হবে প্রত্যেকেই নিজের ওপর থেকে তার অনিষ্টকে প্রতিহত করবে তাকে মিথ্যাবাদী প্রমাণিত করে এবং তার দেয়া ‘আযাবকে গ্রহণ করার মাধ্যমে।

(وَاللَّهُ خَلِيفَتِي عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ) অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা প্রত্যেক মুসলিমের অভিভাবক এবং তার হিফাযাতকারী। তিনি তাকে তার বিরুদ্ধে সাহায্য করবেন ও তার অনিষ্টকে প্রতিহত করবেন। এটা একটি স্পষ্ট দলীল যে, আল্লাহর মুমিন বান্দা সর্বদা বিজয় লাভ করবে যদিও তার সাথে কোন নবী অথবা ইমাম না থাকে। এর মাধ্যমে শী'আদের ইমাম আগমনের ধারণাকে খণ্ডন করা হয়েছে।

(فَمَنْ أَدْرَكَهُ مِنْكُمْ فَلْيَقْرَأْ عَلَيْهِ فَوَاتِحَ سُورَةِ الْكَهْفِ) যদি তোমাদের মধ্যে কেউ তাকে পেয়ে যায় তাহলে সে যেন সূরাহ্ আল কাহফ-এর শুরু থেকে কিছু অংশ পাঠ করে তাহলে তা তোমাদেরকে তার ফিতনা থেকে হিফাযত করবে। আবূ দাউদ ও সহীহ মুসলিমে মারফু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি প্রথম থেকে দশটি আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জাল থেকে নিরাপদে থাকবে। তবে নাসায়ীতে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি সূরাহ্ আল কাহফ-এর শেষ দশ আয়াত পাঠ করবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদে থাকবে। তিরমিযীর এক বর্ণনায় আছে, যে সূরাহ আল কাহফ-এর শুরু থেকে তিনটি আয়াত পাঠ করবে সে দাজ্জালের ফিনাহ থেকে বেঁচে থাকবে। অতএব হাদীসগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা যায় এভাবে:
১) যে দশটি আয়ত পাঠ করল, সে তিনটির ‘আমলও করে ফেলল।
২) অথবা দশটি আয়াতের হাদীস মুখস্থের ক্ষেত্রে এবং তিনটির হাদীস পাঠ করার ক্ষেত্রে। অতএব যে দশটি আয়াত মুখস্থ করবে এবং তিনটি পাঠ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনাহ থেকে বাঁচবে।
৩) অথবা যারা দশটি আয়াত মুখস্থ করবে তারা দাজ্জালের সাক্ষাৎ হলে তার ফিতনাহ্ থেকে বাঁচবে আর যারা তিনটি আয়াত পাঠ করবে তারা তার ফিতনাহ থেকে বাঁচবে যদিও তার সাক্ষাৎ না হয়।
৪) অথবা মুখস্থ করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, না দেখে পাঠ করা আর বাঁচার অর্থ হলো দাজ্জালের ফিতনাহ থেকে রক্ষা পাওয়া।

(لْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا لَبْثُهُ فِي الْأَرْضِ؟) আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল ! সে পৃথিবীতে কতদিন অবস্থান করবে? তিনি (সা.) বললেন, ৪০ দিন যার ১ দিন হবে ১ বছরের মতো দীর্ঘ অথবা চিন্তাভাবনার ব্যাপকতার জন্য ১ দিন ১ বছর মনে হবে এবং ১ দিন মাসের মতো এবং ১ দিন জুমু'আর মতো এবং অন্যান্য দিনগুলো তোমাদের দিনের মতোই হবে। ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর মর্ম হচ্ছে প্রথম দিনটি মুমিনদের চিন্তার ব্যাপকতা ও কঠিন বিপদাপদের জন্য এক বছর মনে হবে। দ্বিতীয় দিনটি তার চক্রান্ত ও সমস্যাগুলো আগের তুলনায় সহজ হওয়ায় মাসের মতো মনে হবে এবং তৃতীয় দিনটি জুমু'আর দিনের মতো দীর্ঘ মনে হওয়ার কারণ হলো সত্য দিন দিন প্রকাশিত হবে এবং মিথ্যার প্রভাব কমতে থাকবে।

আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যে দিনটি বছরের মতো দীর্ঘ হবে তাতে কি শুধু একদিনের সালাতই আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি (সা.) বললেন, না, বরং তোমরা এর সময় নির্ধারণ করে নাও। ‘আল্লামাহ্ ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) কতিপয় ভাষ্যকার থেকে এর মর্ম বর্ণনা করে বলেন, যে দিনটি বছরের সমান দীর্ঘ হবে সে দিনটিকে প্রতিদিনের সময় অনুযায়ী ভাগ করে সালাত আদায় করবে। ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীসের মর্ম হচ্ছে প্রতিদিন সূর্য উদয়ের পর যুহর পর্যন্ত যতটুকু সময় হয় সেই পরিমাণ সময় অতিক্রম করলে যুহরের সালাত আদায় করবে। এরপর যতটুকু সময় অতিক্রম করলে আসরের সময় হয় ততটুকু সময় পরে ‘আসরের সালাত আদায় করবে। এরপর মাগরিব ‘ইশা ফজর এভাবে ঐ দিন শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়ভাগ করে সালাত আদায় করবে। তাহলেই ১ বছর সমপরিমাণ দীর্ঘ দিনের সকল ফরয সালাতসমূহ যথাসময়ে আদায় হয়ে যাবে। এমনিভাবে দ্বিতীয় যে দিনটি মাসের মত হবে এবং তৃতীয় যে দিনটি জুমু'আর মতো হবে তা প্রথম দিনটির মতো সময়ানুযায়ী সালাত আদায় করবে।

(فَيَنْزِلُ عِنْد المنارة الْبَيْضَاء شرقيّ دمشق) অতঃপর ‘ঈসা আলায়হিস সালাম দামিশকের পূর্বদিকে সাদা মিনার থেকে নেমে আসবেন। আল্লামাহ সুয়ুত্বী ইবনু মাজার বর্ণনার টীকায় বলেন, আল্লামাহ ইবনু কাসীর ভিন্ন সূত্রে বলেন যে, তিনি ‘ঈসা আলায়হিস সালাম বায়তুল মাক্বদিস মাসজিদে অবতরণ করবেন। উভয় বর্ণনায় সমন্বয় হচ্ছে, বায়তুল মাক্বদিস দামিস্ক শহরের অন্তর্গত, অতএব এটাই সঠিক মত। অতঃপর ‘ঈসা আলায়হিস সালাম বাবে লুদ্দ নামক স্থানে দাজ্জালকে ধরে হত্যা করে ফেলবেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, আওনুল মা'বূদ ৭ম খণ্ড, হা, ৪৩১৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৭৬-[১৩] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: এমন সময় দাজ্জালের আগমন ঘটবে যখন একজন মর্দে মুসলিম তার সামনে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হবে। তখন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত একদল লোক অর্থাৎ দাজ্জালের বাহিনীর সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটবে। তারা প্রশ্ন করবে, তুমি কোথায় যেতে ইচ্ছা করছ? সে বলবে, ঐ ব্যক্তির নিকট যেতে চাই যে বের হয়েছে। তিনি (সা.) বলেন, তখন তারা লোকটিকে বলবে, তুমি কি আমাদের রবের (দাজ্জালের) প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করনি? সে বলবে, আমাদের প্রকৃত রব তো অজানা নন। তখন তারা বলবে, এ লোকটিকে হত্যা করে ফেল। তখন তারা পরস্পর বলবে, তোমাদের রব (দাজ্জালের) কি এই বলে নিষেধ করেনি যে, তার সামনে উপস্থিত না করা ছাড়া যেন কাউকে তোমরা হত্যা না কর? তখন তারা লোকটিকে দাজ্জালের কাছে নিয়ে আসবে। যখন সে মর্দে মুমিন দাজ্জালকে দেখবে, তখনই সে লোকেদেরকে উদ্দেশ্য করে বলবে, হে লোকসকল! এই তো সেই দাজ্জাল, যার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) এ বলেছিলেন। তিনি (সা.) বলেন, এ কথা শুনে দাজ্জাল ঐ লোকটিকে মারাত্মক সাজা দেয়ার নির্দেশ করে বলবে, এটাকে শক্ত করে ধর এবং তার মাথায় জোরে আঘাত কর। তখন লোকটিকে এমনভাবে প্রহার করা হবে যে, তার পিঠ ও পেট চ্যাপ্টা হয়ে যাবে। তিনি (সা.) বলেন, তখন দাজ্জাল বলবে, তুমি কি এখনো আমার প্রতি ঈমান আনবে না? উত্তরে লোকটি বলবে, ’তুমিই তো মিথ্যুক মাসীহ! এবার দাজ্জাল লোটিকে করাত দ্বারা কর্তনের নির্দেশ দিবে। তখন সে মর্দে মু’মিনের মাথা হতে কর্তিত হবে, এমনকি তার পদদ্বয় পর্যন্ত দ্বিখণ্ডিত করা হবে। অতঃপর দাজ্জাল সে খণ্ডিত দুই টুকরার মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাবে তারপর সে উক্ত খণ্ডকে লক্ষ্য করে বলবে, “তুমি দাঁড়িয়ে যাও’। এবার লোকটি জীবিত হয়ে সোজাভাবে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর দাজ্জাল তাকে বলবে, এখন কি তুমি আমার প্রতি ঈমান আনবে? উত্তরে সেই মর্দে মুমিন বলবে, এখন তো আমার বিশ্বাসের দৃঢ়তাই বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি (সা.) বলেন, অতঃপর সে মর্দে মু’মিন লোকেদেরকে আহ্বান করে বলবে, হে লোক সকল! তোমরা জেনে রাখ! এ দাজ্জাল এ যাবৎ আমার সাথে যা কিছু করেছে, আমার পরে আর কোন মানুষের সাথে তা করতে সক্ষম হবে না। তিনি (সা.) বলেন, এবার দাজ্জাল তাকে আবার যবাহ করতে উদ্যত হবে। কিন্তু লোকটির গর্দান ও বুকের মধ্যবর্তী স্থান তামায় পরিণত করে দেয়া হবে, ফলে সে তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না। তিনি (সা.) বলেন, এবার দাজ্জাল তার হাত পা বেঁধে ফেলবে এবং তাকে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবে। উপস্থিত লোকেরা ধারণা করবে, দাজ্জাল তাকে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে, অথচ প্রকৃতপক্ষে তাকে জান্নাতের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ মর্দে মু’মিনই হবে রাব্বুল আলামীনের কাছে সবচেয়ে বড় শহীদ ব্যক্তি। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَخْرُجُ الدَّجَّالُ فَيَتَوَّجُهُ قِبَلَهُ رَجُلٌ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فَيَلْقَاهُ الْمَسَالِحُ مَسَالِحُ الدَّجَّالِ. فَيَقُولُونَ لَهُ: أَيْنَ تَعْمِدُ؟ فَيَقُولُ: أَعْمِدُ إِلَى هَذَا الَّذِي خَرَجَ. قَالَ: فَيَقُولُونَ لَهُ: أَو مَا تبَارك وَتَعَالَى ؤمن بِرَبِّنَا؟ فَيَقُولُ: مَا بِرَبِّنَا خَفَاءٌ. فَيَقُولُونَ: اقْتُلُوهُ. فَيَقُولُ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ: أَلَيْسَ قَدْ نَهَاكُمْ رَبُّكُمْ أَنْ تَقْتُلُوا أَحَدًا دُونَهُ . قَالَ: فَيَنْطَلِقُونَ بِهِ إِلَى الدَّجَّالِ فَإِذَا رَآهُ الْمُؤْمِنُ قَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ هَذَا الدَّجَّالُ الَّذِي ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ . قَالَ: فَيَأْمُرُ الدَّجَّال بِهِ فَيُشَبَّحُ. فَيَقُولُ: خُذُوهُ وَشُجُّوهُ فَيُوسَعُ ظَهْرُهُ وَبَطْنُهُ ضَرْبًا . قَالَ: فَيَقُول: أَوَ مَا تُؤْمِنُ بِي؟ قَالَ: فَيَقُولُ: أَنْتَ الْمَسِيحُ الْكَذَّابُ . قَالَ: «فيؤْمر بِهِ فَيْؤشَرُ بالمنشارِ مِنْ مَفْرِقِهِ حَتَى يُفَرَّقَ بَيْنَ رِجْلَيْهِ» . قَالَ: ثُمَّ يَمْشِي الدَّجَّالُ بَيْنَ الْقِطْعَتَيْنِ ثُمَّ يَقُولُ لَهُ: أتؤمنُ بِي؟ فَيَقُول: مَا ازْدَدْتُ إِلَّا بَصِيرَةً . قَالَ: ثُمَّ يَقُولُ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّهُ لَا يَفْعَلُ بَعْدِي بِأَحَدٍ مِنَ النَّاسِ . قَالَ: «فَيَأْخُذُهُ الدَّجَّالُ لِيَذْبَحَهُ فَيُجْعَلُ مَا بَيْنَ رَقَبَتِهِ إِلَى تَرْقُوَتِهِ نُحَاسًا فَلَا يَسْتَطِيع إِليه سَبِيلا» قَالَ: «فَيَأْخذهُ بِيَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ فَيَقْذِفُ بِهِ فَيَحْسِبُ النَّاسُ أَنَّمَا قَذَفَهُ إِلَى النَّارِ وَإِنَّمَا أُلْقِيَ فِي الْجَنَّةُ» فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَذَا أَعْظَمُ النَّاسِ شَهَادَةً عِنْدَ رَبِّ الْعَالَمِينَ» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (113 / 2938)، (7377) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي سعيد الخدري قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يخرج الدجال فيتوجه قبله رجل من المومنين فيلقاه المسالح مسالح الدجال. فيقولون له: اين تعمد؟ فيقول: اعمد الى هذا الذي خرج. قال: فيقولون له: او ما تبارك وتعالى ومن بربنا؟ فيقول: ما بربنا خفاء. فيقولون: اقتلوه. فيقول بعضهم لبعض: اليس قد نهاكم ربكم ان تقتلوا احدا دونه . قال: فينطلقون به الى الدجال فاذا راه المومن قال: يا ايها الناس هذا الدجال الذي ذكر رسول الله صلى الله عليه وسلم . قال: فيامر الدجال به فيشبح. فيقول: خذوه وشجوه فيوسع ظهره وبطنه ضربا . قال: فيقول: او ما تومن بي؟ قال: فيقول: انت المسيح الكذاب . قال: «فيومر به فيوشر بالمنشار من مفرقه حتى يفرق بين رجليه» . قال: ثم يمشي الدجال بين القطعتين ثم يقول له: اتومن بي؟ فيقول: ما ازددت الا بصيرة . قال: ثم يقول: يا ايها الناس انه لا يفعل بعدي باحد من الناس . قال: «فياخذه الدجال ليذبحه فيجعل ما بين رقبته الى ترقوته نحاسا فلا يستطيع اليه سبيلا» قال: «فياخذه بيديه ورجليه فيقذف به فيحسب الناس انما قذفه الى النار وانما القي في الجنة» فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «هذا اعظم الناس شهادة عند رب العالمين» . رواه مسلم رواہ مسلم (113 / 2938)، (7377) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: (فَيَلْقَاهُ الْمَسَالِحُ) অতঃপর তার সাথে সাক্ষাৎ করবে একদল অস্ত্রধারী যুবক যারা সীমান্ত পাহারায় নিয়োজিত। তারা হবে দাজ্জালের সৈনিক।
(مَا بِرَبِّنَا خَفَاءٌ) অর্থাৎ সে তোমাদের ও আমাদের কারো সত্যিকার রব নয়। অথবা হে মু'মিন। সম্প্রদায়! সে তোমাদের রব্ নয়। এখানে অব্যয়টি না-বোধক অর্থাৎ তিনি ব্যতীত আমাদের নিকট আমাদের রবের কোন এমন গুণাবলি গোপন নেই, যেন আমরা তাকে বাদ দিয়ে তার নিকট যাব ও তার ওপর নির্ভর করব। সে রব না হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো সে মাখলুক। আর কোন মাখলুকের মধ্যে রুবুবিয়্যাহ্ অথবা উলুহিয়্যার গুণ থাকতে পারে না। তাছাড়া সে হচ্ছে ত্রুটিযুক্ত এক চোখ অন্ধ আর আমাদের রবের কোন ত্রুটি নেই।
(فَيَأْخذهُ بِيَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ فَيَقْذِفُ بِهِ فَيَحْسِبُ النَّاسُ) অতঃপর দাজ্জাল তার উভয় হাত এবং পা ধরে ছুঁড়ে ফেলে দিবে তখন মানুষেরা ধারণা করবে তাকে জাহান্নামে ফেলে দিয়েছে। মূলত তাকে জান্নাতে ফেলা হবে। ভাষ্যকার বলেন, হয়তো তাকে দুনিয়ার কোন উদ্যানে ফেলা হবে। অথবা তাকে দাজ্জালের নিকট সংরক্ষিত জাহান্নামেই ফেলা হবে কিন্তু আল্লাহ সেটাকে জান্নাতে রূপান্তর করে দিবেন। যেমনভাবে অতীতে ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-এর জন্য আগুনকে শীতল ও নিরাপদ শান্তিদায়ক করে দিয়েছিলেন। যেটাই ধরা হোক না কেন, উল্লেখিত প্রথমবার ছাড়া তার হাতে আর মৃত্যু সংঘটিত হবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ হা. ৫৪৭৬, শারহুন নাবাবী ১৮/২৯৩৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৭৭-[১৪] উম্মু শারীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: লোকেরা দাজ্জালের (ফিতনাহ থেকে পলায়ন করবে, এমনকি পাহাড়-পর্বতসমূহে গিয়ে আশ্রয় নেবে। উম্মু শারীক (রাঃ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! তখন ’আরব (মুজাহিদীনগণ) কোথায় থাকবেন? তিনি (সা.) বললেন, সংখ্যায় তারা খুবই কম হবে। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَن أمّ شريكٍ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيَفِرَّنَّ النَّاسُ مِنَ الدَّجَّالِ حَتَّى يَلْحَقُوا بِالْجِبَالِ» قَالَتْ أُمُّ شَرِيكٍ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ فَأَيْنَ الْعَرَبُ يَوْمَئِذٍ؟ قَالَ: «هُمْ قَلِيلٌ» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (125 / 2945)، (7393) ۔
(صَحِيح)

وعن ام شريك قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ليفرن الناس من الدجال حتى يلحقوا بالجبال» قالت ام شريك: قلت: يا رسول الله فاين العرب يومىذ؟ قال: «هم قليل» . رواه مسلم رواہ مسلم (125 / 2945)، (7393) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: (لَيَفِرَّنَّ النَّاسُ مِنَ الدَّجَّالِ) মানুষেরা তথা মু'মিনগণ দাজ্জালের ভয়ে পালিয়ে পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করবে। বর্ণনাকারী উম্মু শারীক (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তখন আল্লাহর পথে জিহাদকারী ‘আরবগণ কোথায় থাকবে? নবী (সা.) উত্তরে বললেন, তখন ‘আরবগণ সংখ্যায় খুব কম থাকবে আর তারা তার সাথে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ হা. ৫৪৭৭, শারহু নাবাবী হা. ২৯৪৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু শারীক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৭৮-[১৫] আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: ইস্ফাহানের সত্তর হাজার ইয়াহূদী দাজ্জালের অনুসরণ করবে। তাদের মাথা থাকবে চাদরে ঢাকা। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَنْ أَنَسٍ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أصفَهانَ سبعونَ ألفا عَلَيْهِم طيالسة» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (124 / 2944)، (7392) ۔
(صَحِيح)

وعن انس عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «يتبع الدجال من يهود اصفهان سبعون الفا عليهم طيالسة» . رواه مسلم رواہ مسلم (124 / 2944)، (7392) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: (يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أصفَهانَ) ইস্ফাহান নগরীর ৭০ হাজার লোক দাজ্জালের অনুসরণ করবে যাদের পোশাক হবে তায়লাস নামক বিশেষ কাপড়ের। অন্য বর্ণনাতে তাদের সংখ্যা হবে নব্বই হাজার। কিন্তু প্রথমোক্ত বর্ণনাই সঠিক। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৮শ খণ্ড, হা. ২৯৪৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৭৯-[১৬] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ’দাজ্জাল অবশ্যই আগমন করবে। কিন্তু তার প্রতি মদীনায় গিরিপথে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। অবশ্য সে মদীনার পার্শ্ববর্তী একটি লবণাক্ত বালুকাময় এলাকায় অবতরণ করবে। তখন তার কাছে একজন পুণ্যবান ব্যক্তি। অথবা (বলেছেন) পুণ্যবান লোকেদের মধ্য থেকে সর্বোত্তম ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে বলবেন, ’আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমিই সেই দাজ্জাল যার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন। তখন দাজ্জাল (উপস্থিত লোকেদেরকে) বলবে, দেখ! যদি আমি এ লোকটিকে হত্যা করে আবার তাকে জীবিত করি, তবে কি তোমরা আমার ব্যাপারে (আল্লাহ হওয়া সম্পর্কে) সন্দেহ পোষণ করবে? লোকেরা বলবে, না। তখন সে তাকে হত্যা করবে, অতঃপর তাকে আবার জীবিত করবে। তখন সেই লোকটি বলবে, আল্লাহর শপথ! আমি তোমার সম্পর্কে এখন পূর্বের চেয়েও বেশি সন্দেহমুক্ত। আবার দাজ্জাল তাকে হত্যা করতে চাইবে, কিন্তু তাকে লোকটির উপর সেই ক্ষমতা দেয়া হবে না। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَأْتِي الدَّجَّالُ وَهُوَ مُحَرَّمٌ عَلَيْهِ أَنْ يَدْخُلَ نِقَابَ الْمَدِينَةِ فَيَنْزِلُ بَعْضَ السِّبَاخِ الَّتِي تَلِي الْمَدِينَةَ فَيَخْرُجُ إِلَيْهِ رَجُلٌ وَهُوَ خَيْرُ النَّاسِ أَوْ مِنْ خِيَارِ النَّاسِ فَيَقُولُ: أَشْهَدُ أَنَّكَ الدَّجَّالُ الَّذِي حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدِيثَهُ فَيَقُولُ الدَّجَّالُ: أَرَأَيْتُمْ إِنْ قَتَلْتُ هَذَا ثُمَّ أَحْيَيْتُهُ هَلْ تَشُكُّونَ فِي الْأَمْرِ؟ فَيَقُولُونَ: لَا فَيَقْتُلُهُ ثُمَّ يُحْيِيهِ فَيَقُولُ: وَاللَّهِ مَا كُنْتُ فِيكَ أَشَدَّ بَصِيرَةً مِنِّي الْيَوْمَ فَيُرِيدُ الدَّجَّالُ أَنْ يَقْتُلَهُ فَلَا يُسَلَّطُ عَلَيْهِ . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (1882) و مسلم (112 / 2938)، (7375) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي سعيد الخدري قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ياتي الدجال وهو محرم عليه ان يدخل نقاب المدينة فينزل بعض السباخ التي تلي المدينة فيخرج اليه رجل وهو خير الناس او من خيار الناس فيقول: اشهد انك الدجال الذي حدثنا رسول الله صلى الله عليه وسلم حديثه فيقول الدجال: ارايتم ان قتلت هذا ثم احييته هل تشكون في الامر؟ فيقولون: لا فيقتله ثم يحييه فيقول: والله ما كنت فيك اشد بصيرة مني اليوم فيريد الدجال ان يقتله فلا يسلط عليه . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (1882) و مسلم (112 / 2938)، (7375) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (يَأْتِي الدَّجَّالُ وَهُوَ مُحَرَّمٌ عَلَيْهِ) দাজ্জাল মদীনার দিকে আগমন করবে। কিন্তু তার জন্য মদীনায় প্রবেশ করা হারাম করা হয়েছে। ফলে সে মদীনার নিকটবর্তী সিরিয়া পথে মরুভূমিতে অবতরণ করবে যেখানে লবণাক্ততার কারণে কোন ধরনের ঘাস জন্মাবে না। অতঃপর তার দিকে একজন মহান ব্যক্তি এগিয়ে যাবে। সম্ভবত তিনি খিযির (আঃ)। তাকে দেখামাত্রই বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় তুমি দাজ্জাল। যে ব্যাপারে নবী (সা.) আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তখন দাজ্জাল তার পাশের লোকজনকে লক্ষ্য করে বলবে, যদি আমি মেরে পুনরায় জীবিত করি তাহলে কি তোমরা আমার ব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহ প্রকাশ করবে তথা আমি যে ইলাহ সে ব্যাপারে? তারা বলবে, না, আমরা সন্দেহ করব না।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, দাজ্জালের কথা যদি আমি তাকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করি তাহলে তোমরা কি আমার ব্যাপারে সন্দেহ করবে? তারা উত্তর দিবে, না। এখানেই সমস্যা রয়েছে। কেননা দাজ্জাল যা প্রকাশ করবে তাতে তার প্রভুত্বের প্রমাণ করবে না। যেহেতু তার সৃষ্টিগত ত্রুটি রয়েছে। সে হবে এক চোখ বিশিষ্ট কানা। আর আমাদের প্রভু ত্রুটিমুক্ত। এটাই প্রমাণ করে যে, সে একজন মিথ্যাবাদী। সে মিথ্যুক হওয়ার আরেকটি প্রমাণ হলো তার কপালে ‘কাফির' লিখা থাকবে। তাহলে এর উত্তর কয়েকভাবে দেয়া যেতে পারে:
১) সম্ভবত তারা তার ভয়েই স্বীকারোক্ত করবে তার প্রতি বিশ্বাসী হয়ে নয়।
২) এটাও সম্ভাবনা রাখে যে, তারা মূলত সত্যই বলেছিল, আমরা তোমাদের মিথ্যাবাদিতায় কোন সন্দেহ করি না, কেননা যদি কেউ তার মিথ্যাবাদী ও কাফির হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করবে সেও কাফির হয়ে যাবে। অতএব তারা তার ভয়ে বিষয়টি একটি পেঁচিয়ে বলেছিল, আমরা তোমার ব্যাপারে কোনই সন্দেহ করি না।
৩) এটাও সম্ভাবনা রাখে যে, যারা বলেছিল, আমরা তোমরা ব্যাপারে সন্দেহ করি না তারা ছিল ইয়াহূদী ও অন্যান্য হতভাগা কাফির।

(فَيَقُولُ: وَاللَّهِ مَا كُنْتُ فِيكَ أَشَدَّ بَصِيرَةً مِنِّي الْيَوْمَ) অতঃপর ঐ মুসলিম ব্যক্তি বলবে, আল্লাহর কসম, আজ তুমি মিথ্যাবাদী হওয়ার ধারণা আমার মধ্যে আরো বেড়ে গেল। এরপর তিনি লোকজনকে উদ্দেশ্য করে বলবে, হে লোক সকল! এ লোকই হচ্ছে মাসীহ দাজ্জাল তোমরা তাকে বিশ্বাস করবে না। যে তার আনুগত্য করবে সে জাহান্নামী হবে আর যে তাকে অমান্য করবে সে জান্নাতে যাবে।
ইবনুত তীন দাউদী থেকে বর্ণনা করে বলেন, এ কথা বলার সাথে সাথে দাজ্জাল মাটিতে মিশে যাবে যেমন লবণ পানিতে মিশে যায়।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা'বূদ ৭ম খণ্ড, হা, ৭১৩২; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২২৪২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৮০-[১৭] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাঃ) বলেছেন: মাসীহে দাজ্জাল পূর্বদিক থেকে আগমন করে মদীনাহ্ মুনাওয়ারায় প্রবেশ করতে চাইবে। এমনকি সে উহুদ পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত পৌছে যাবে। অতঃপর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তার চেহারা (গতি) সিরিয়ার দিকে ঘুরিয়ে দেবেন এবং সেখানেই সে (ঈসা আলায়হিস সালাম-এর হাতে) ধ্বংস হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَأْتِي الْمَسِيحُ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ هِمَّتُهُ الْمَدِينَةُ حَتَّى يَنْزِلَ دُبُرَ أُحُدٍ ثُمَّ تَصْرِفُ الْمَلَائِكَةُ وَجْهَهُ قِبَلَ الشامِ وهنالك يهلِكُ» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (لم اجدہ) و مسلم (486 / 1380)، (3351) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي هريرة عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «ياتي المسيح من قبل المشرق همته المدينة حتى ينزل دبر احد ثم تصرف الملاىكة وجهه قبل الشام وهنالك يهلك» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (لم اجدہ) و مسلم (486 / 1380)، (3351) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (يَأْتِي الْمَسِيحُ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ) তথা দাজ্জাল পূর্বদিকে তথা সিরিয়ার দিক থেকে মদীনাহ অভিমুখে আসতে থাকবে। যখন উহুদ পাহাড়ের পিছন দিকে অবস্থান নিবে তখন মালাক (ফেরেশতা) তার মুখকে সিরিয়ার দিকে ফিরিয়ে দিবে। সামনের দিকে আর অগ্রসর হতে পারবে না। এটাই প্রমাণ করে যে, সে রব হওয়ার অক্ষম। কেননা সে অপারগ হয়ে পিছনের দিকে ফিরে যাবে। মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না। মক্কায় তো পারবেই না। আর সে সিরিয়াতে ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর হাতে নিহত হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২২৪৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৮১-[১৮] আবূ বকরাহ্ (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: দাজ্জালের কোন ধরনের ভয়ভীতি মদীনার অভ্যন্তরে প্রবেশ করবে না। (সে সময়) মদীনার সাতটি প্রবেশদ্বার থাকবে এবং প্রত্যেক দ্বারে দু’ দু’জন মালাক (ফেরেশতা) (পাহারা দেয়ার জন্য) নিয়োজিত থাকবেন। (বুখারী)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَنْ أَبِي بَكْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَدْخُلُ الْمَدِينَةَ رُعْبُ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ لَهَا يَوْمَئِذٍ سَبْعَةُ أَبْوَابٍ عَلَى كُلِّ بَابٍ مَلَكَانِ» رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (1879) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي بكرة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «لا يدخل المدينة رعب المسيح الدجال لها يومىذ سبعة ابواب على كل باب ملكان» رواه البخاري رواہ البخاری (1879) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: (لَا يَدْخُلُ الْمَدِينَةَ رُعْبُ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ) মদীনায় দাজ্জালের ভীতি প্রবেশ করতে পারবে না। কেননা মদীনার চতুর্দিকে সাতটি দুর্গ থাকবে। প্রতিটি ফটকের দুর্গের দরজায় দু’জন করে মালাক থাকবে এবং সেখান দিয়ে দাজ্জালের প্রবেশকে প্রতিহত করবে। আবূ নু'আয়ম ফিতান অধ্যায়ে নবী (সা.) এ থেকে বর্ণনা করেন, দাজ্জাল মদীনার পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বিশাল এক সৃষ্টিকে দেখে তাকে জিজ্ঞেস করবে, তুমি কে? তিনি বলবেন, আমি জিবরীল,  আল্লাহ তা'আলা আমাকে পাঠিয়েছেন তার রসূলের মদীনার সম্মানকে রক্ষা করার জন্য। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ বাকরা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৮২-[১৯] ফাত্বিমাহ্ বিনতু কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে সালাতের জন্য ঘোষণা দিতে শুনতে পেলাম। সালাত শেষ করে তিনি (সা.) মিম্বারে উপবিষ্ট হলেন এবং মুচকি হেসে বললেন, প্রত্যেক লোক নিজ নিজ সালাতের স্থানে বসে থাক। অতঃপর বললেন, তোমরা কি জান, আমি তোমাদেরকে কেন একত্রিত করেছি? সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জানেন। তিনি (সা.) বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদেরকে কিছু দেয়ার জন্য বা কোন ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য সমবেত করিনি; তোমাদেরকে একত্রিত করেছি বরং তামীম আদ্ দারী-এর বর্ণিত একটি ঘটনা শুনানোর জন্যই। তামীম আদ দারী ছিলেন একজন খ্রিস্টান, তিনি (আমার নিকট) এসে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তিনি আমাকে এমন একটি ঘটনা শুনিয়েছেন, এটা ঐ কথারই সাথে মিল রাখে যা আমি তোমাদেরকে মাসীহে দাজ্জাল সম্পর্কে বলেছিলাম। তিনি বলেছেন, একবার তিনি ’লাম ও জুযাম’ গোত্রের ত্রিশজন লোকের সঙ্গে একটি সামুদ্রিক নৌকায় সফরে বের হয়েছিলেন। সাগরের ঢেউ তাদেরকে দীর্ঘ একমাস পর্যন্ত এদিক সেদিক ঘুরাতে ঘুরাতে পরিশেষে একদিন সূর্যাস্তের সময় একটি দ্বীপের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন এবং সেখানে তারা এমন একটি জানোয়ার দেখতে পেলেন যার সমস্ত দেহ বড় বড় পশমে ঢাকা। অধিক পশমের কারণে তার অগ্র-পশ্চাৎ কিছুই নির্ণয় করা যায়নি। তখন তারা তাকে লক্ষ্য করে বললেন, তোর অকল্যাণ হোক! তুই কে? সে বলল, আমি ’জাসসাসাহ্ (অর্থাৎ গুপ্ত সংবাদ অন্বেষণকারিণী)। তোমাদের তথ্যাদি শুনার ও জানার প্রত্যাশী।

তামীম আদ দারী বলেন, উক্ত জন্তুর কাছে লোকটির কথা শুনে তার প্রতি আমাদের অন্তরে ভয় সঞ্চার হলো যে, তা জিন হতে পারে। তখন আমরা দ্রুত সেখানে গেলাম এবং গির্জায় প্রবেশ করে সেখানে এমন একটি প্রকাণ্ড দেহবিশিষ্ট মানুষ দেখতে পেলাম যা ইতোপূর্বে আমরা আর কখনো দেখতে পাইনি। সে ছিল খুব মজবুত করে বাঁধা অবস্থায়, তার হাত ঘাড়ের সাথে এবং হাঁটুদ্বয় নিচের উভয় গিটের সাথে লৌহশিকল দিয়ে একত্রে বাঁধা ছিল। আমরা তাকে বললাম, তোর অকল্যাণ হোক! তুই কে? সে বলল, নিশ্চয় তোমরা আমার সম্পর্কে জানতে পারবে, তবে তোমরা আগে আমাকে বল দেখি তোমরা কে? তারা বললেন, আমরা ’আরবের লোক। আমরা সমুদ্রে একটি নৌকায় আরোহী ছিলাম দীর্ঘ একমাস সাগরের তরঙ্গ আমাদেরকে এদিক-সেদিক ঘুরিয়ে এখানে এনে পৌঁছিয়েছে। অতঃপর আমরা এ দ্বীপে প্রবেশ করার পর সারা দেহ ঘন লোমে আবৃত এমন একটি জন্তুর সাথে আমাদের দেখা হলো। সে বলল, আমি ’জাসসাসাহ্।
সে আমাদেরকে এ গির্জায় আসতে বলায় আমরা দ্রুত তোমার কাছে এসে উপস্থিত হয়েছি।

সে বলল, আচ্ছা তোমরা আমাকে বল দেখি! বায়সান এলাকার খেজুর বাগানে ফল আসে কি? (বায়সান হিজাযের একটি জায়গার নাম) আমরা বললাম, হ্যা, আসে। সে বলল, সেই বাগানের গাছে অদূর ভবিষ্যতে ফল ধরবে না। অতঃপর সে বলল, আচ্ছা বল দেখি! ’তবারিয়্যাহ্’-এর নদীতে কি পানি আছে? আমরা বললাম, হ্যা, তাতে প্রচুর পরিমাণে পানি আছে। সে বলল, অচিরেই তার পানি শুকিয়ে যাবে। এবার সে প্রশ্ন করল, আচ্ছা বল দেখি! ’যোগার’ ঝরনার পানি আছে কি? আর তথাকার অধিবাসীগণ কি উক্ত ঝরনার পানি দ্বারা তাদের ক্ষেত-খামারে চাষাবাদ করে। অতঃপর সে প্রশ্ন করল, আচ্ছা বল দেখি! উম্মিদের নবীর সংবাদ কী? আমরা বললাম, তিনি মক্কাহ থেকে হিজরত করে বর্তমান ইয়াসরিব (মদীনায় অবস্থান করছেন। সে প্রশ্ন করল, বল দেখি! ’আরবরা কি তার সাথে লড়াই করেছিল? আমরা বললাম, হ্যা, করেছে। সে প্রশ্ন করল, তিনি (সে নবী) তাদের সাথে কি আচরণ করেছেন? এর উত্তরে আমরা বললাম যে, তার আশেপাশের ’আরবদের ওপরে তিনি জয়ী হয়েছেন এবং তারা তাঁর আনুগত্য স্বীকার করেছে। এতদশ্রবণে সে বলল, তোমরা জেনে রাখ! তার আনুগত্য করাই তাদের পক্ষে কল্যাণজনক হয়েছে।

আচ্ছা এখন আমি আমার অবস্থা বর্ণনা করছি আমি মাসীহে দাজ্জাল, অদূর ভবিষ্যতে আমাকে বের হওয়ার অনুমতি প্রদান করা হবে। আমি বের হয়ে জমিনে বিচরণ করব। মক্কাহ্-মদীনাহ্ ছাড়া এমন কোন জনপদ বাকি থাকবে না, চল্লিশ দিনের মধ্যে যেখানে আমি প্রবেশ করব না। সেই দু স্থানে প্রবেশ করা আমার ওপরে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যখনই আমি তার একটিতে প্রবেশ করতে চাইব, তখন নাঙ্গা তরবারি হাতে মালাক (ফেরেশতা) এসে আমাকে প্রবেশ করা হতে বাধা প্রদান করবে। মূলত তার প্রত্যেক প্রবেশ পথে মালাক পাহারারত রয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, এ পর্যন্ত বর্ণনা করে রাসূলুল্লাহ (সা.) - নিজ লাঠি দ্বারা মিম্বারে টোকা দিয়ে বললেন, এটা ত্বায়বাহ্, এটা ত্বায়বাহ্, এটা ত্বায়বাহ্ (মদীনাহ্)। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, বল দেখি! এর আগে আমি কি তোমাদেরকে এ হাদীস বর্ণনা করিনি? লোকেরা বলল, জী হ্যা। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, দাজ্জাল সিরিয়ার কোন এক দরিয়ায় অথবা ইয়ামানের কোন এক দরিয়ায় আছে। পরে বললেন, না, বরং সে পূর্বদিক হতে আগমন করবে। এ বলে তিনি (সা.) হাত দ্বারা পূর্বদিকে ইঙ্গিত করলেন। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَن فَاطِمَة بنت قيس قَالَتْ: سَمِعْتُ مُنَادِي رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا قَضَى صَلَاتَهُ جَلَسَ عَلَى الْمِنْبَرِ وَهُوَ يَضْحَكُ فَقَالَ: «لِيَلْزَمْ كُلُّ إِنْسَانٍ مُصَلَّاهُ» . ثُمَّ قَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ لِمَ جَمَعْتُكُمْ؟» . قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: إِنِّي وَاللَّهِ مَا جَمَعْتُكُمْ لِرَغْبَةٍ وَلَا لِرَهْبَةٍ وَلَكِنْ جَمَعْتُكُمْ لِأَنَّ تَمِيمًا الدَّارِيَّ كَانَ رَجُلًا نَصْرَانِيًّا فَجَاءَ فَبَايَعَ وَأَسْلَمَ وَحَدَّثَنِي حَدِيثًا وَافَقَ الَّذِي كُنْتُ أُحَدِّثُكُمْ بِهِ عَنِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ حَدَّثَنِي أَنَّهُ رَكِبَ فِي سَفِينَةٍ بَحْرِيَّةٍ مَعَ ثَلَاثِينَ رَجُلًا مِنْ لَخْمٍ وَجُذَامَ فَلَعِبَ بِهِمُ الْمَوْجُ شَهْرًا فِي الْبَحْر فأرفؤُوا إِلَى جَزِيرَةٍ حِينَ تَغْرُبُ الشَّمْسُ فَجَلَسُوا فِي أقرب سفينة فَدَخَلُوا الْجَزِيرَةَ فَلَقِيَتْهُمْ دَابَّةٌ أَهْلَبُ كَثِيرُ الشَّعَرِ لَا يَدْرُونَ مَا قُبُلُهُ مِنْ دُبُرِهِ مِنْ كَثْرَةِ الشَّعَرِ قَالُوا: وَيْلَكِ مَا أَنْتِ؟ قَالَتْ: أَنَا الْجَسَّاسَةُ قَالُوا: وَمَا الْجَسَّاسَةُ؟ قَالَتْ: أَيُّهَا الْقَوْمُ انْطَلِقُوا إِلَى هَذَا الرَّجُلِ فِي الدَّيْرِ فَإِنَّهُ إِلَى خَبَرِكُمْ بِالْأَشْوَاقِ قَالَ: لَمَّا سَمَّتْ لَنَا رَجُلًا فَرِقْنَا مِنْهَا أَنْ تَكُونَ شَيْطَانَةً قَالَ: فَانْطَلَقْنَا سِرَاعًا حَتَّى دَخَلْنَا الدَّيْرَ فَإِذَا فِيهِ أعظمُ إِنسان مَا رَأَيْنَاهُ قطُّ خَلْقاً وأشَدُّهُ وَثَاقاً مجموعةٌ يَده إِلَى عُنُقِهِ مَا بَيْنَ رُكْبَتَيْهِ إِلَى كَعْبَيْهِ بِالْحَدِيدِ. قُلْنَا: وَيْلَكَ مَا أَنْتَ؟ قَالَ: قَدْ قَدَرْتُمْ عَلَى خَبَرِي فَأَخْبِرُونِي مَا أَنْتُمْ؟ قَالُوا: نَحن أُناس من العربِ ركبنَا فِي سفينةٍ بحريّة فلعِبَ بِنَا الْبَحْر شهرا فَدَخَلْنَا الجزيرة فَلَقِيَتْنَا دَابَّةٌ أَهْلَبُ فَقَالَتْ: أَنَا الْجَسَّاسَةُ اعْمِدُوا إِلَى هَذَا فِي الدَّيْرِ فَأَقْبَلْنَا إِلَيْكَ سِرَاعًا وَفَزِعْنَا مِنْهَا وَلَمْ نَأْمَنْ أَنْ تَكُونَ شَيْطَانَةً فَقَالَ: أَخْبِرُونِي عَنْ نَخْلِ بَيْسَانَ قُلْنَا: عَنْ أَيِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ؟ قَالَ: أَسْأَلُكُمْ عَنْ نَخْلِهَا هَلْ تُثْمِرُ؟ قُلْنَا: نَعَمْ. قَالَ: أَمَا إِنَّهَا تُوشِكُ أَنْ لَا تُثْمِرَ. قَالَ: أَخْبِرُونِي عَنْ بُحَيْرَةِ الطَّبَرِيَّةِ قُلْنَا: عَنْ أَيِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ؟ قَالَ: هَلْ فِيهَا مَاءٌ؟ قُلْنَا هِيَ كَثِيرَةُ الْمَاءِ. قَالَ: أَمَا إِنَّ مَاءَهَا يُوشِكُ أَنْ يَذْهَبَ. قَالَ: أَخْبِرُونِي عَنْ عَيْنِ زُغَرَ. قَالُوا: وَعَنْ أَيِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ؟ قَالَ: هَلْ فِي الْعَيْنِ مَاءٌ؟ وَهَلْ يَزْرَعُ أَهْلُهَا بِمَاءِ الْعَيْنِ؟ قُلْنَا لَهُ: نعم هِيَ كَثِيرَة المَاء وَأَهله يَزْرَعُونَ مِنْ مَائِهَا. قَالَ: أَخْبِرُونِي عَنْ نَبِيِّ الْأُمِّيِّينَ مَا فَعَلَ؟ قُلْنَا: قَدْ خَرَجَ مِنْ مَكَّةَ وَنَزَلَ يَثْرِبَ. قَالَ: أَقَاتَلَهُ الْعَرَبُ؟ قُلْنَا: نَعَمْ. قَالَ: كَيْفَ صَنَعَ بِهِمْ؟ فَأَخْبَرْنَاهُ أَنَّهُ قَدْ ظَهَرَ عَلَى مَنْ يَلِيهِ مِنَ الْعَرَبِ وأطاعوهُ. قَالَ لَهُم: قد كانَ ذلكَ؟ قُلْنَا: نعم. قَالَ: أَمَا إِنَّ ذَلِكَ خَيْرٌ لَهُمْ أَنْ يُطِيعُوهُ وَإِنِّي مُخْبِرُكُمْ عَنِّي: إِنِّي أَنَا الْمَسِيحُ الدَّجَّالُ وَإِنِّي يُوشِكُ أَنْ يُؤْذَنَ لِي فِي الْخُرُوجِ فَأَخْرُجَ فَأَسِيرَ فِي الْأَرْضِ فَلَا أَدَعُ قَرْيَةً إِلَّا هَبَطْتُهَا فِي أَرْبَعِينَ لَيْلَةً غَيْرَ مَكَّةَ وَطَيْبَةَ هُمَا مُحَرَّمَتَانِ عَلَيَّ كِلْتَاهُمَا كُلَّمَا أَرَدْتُ أَنْ أَدْخُلَ وَاحِدَةً أَوْ وَاحِدًا مِنْهُمَا استقبلَني ملَكٌ بيدهِ السيفُ صَلْتًا يَصُدُّنِي عَنْهَا وَإِنَّ عَلَى كُلِّ نَقْبٍ مِنْهَا مَلَائِكَةً يَحْرُسُونَهَا. قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَطَعَنَ بِمِخْصَرَتِهِ فِي الْمِنْبَرِ -: «هَذِه طَيْبَةُ هَذِهِ طَيْبَةُ هَذِهِ طَيْبَةُ» يَعْنِي الْمَدِينَةَ «أَلَا هَلْ كُنْتُ حَدَّثْتُكُمْ؟» فَقَالَ النَّاسُ: نَعَمْ فَإِنَّهُ أَعْجَبَنِي حَدِيثُ تَمِيمٍ أَنَّهُ وَافَقَ الَّذِي كُنْتُ أُحَدِّثُكُمْ عَنْهُ وَعَنِ الْمَدِينَةِ وَمَكَّةَ. أَلَا إِنه فِي بَحر الشَّأمِ أَو بحرِ اليمنِ لَا بل من قبل الْمشرق ماهو من قبل الْمشرق ماهو من قبل الْمشرق ماهو وَأَوْمَأَ بِيَدِهِ إِلَى الْمشرق. رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (119 / 2942)، (7386) ۔
(صَحِيح)

وعن فاطمة بنت قيس قالت: سمعت منادي رسول الله صلى الله عليه وسلم فلما قضى صلاته جلس على المنبر وهو يضحك فقال: «ليلزم كل انسان مصلاه» . ثم قال: «هل تدرون لم جمعتكم؟» . قالوا: الله ورسوله اعلم. قال: اني والله ما جمعتكم لرغبة ولا لرهبة ولكن جمعتكم لان تميما الداري كان رجلا نصرانيا فجاء فبايع واسلم وحدثني حديثا وافق الذي كنت احدثكم به عن المسيح الدجال حدثني انه ركب في سفينة بحرية مع ثلاثين رجلا من لخم وجذام فلعب بهم الموج شهرا في البحر فارفووا الى جزيرة حين تغرب الشمس فجلسوا في اقرب سفينة فدخلوا الجزيرة فلقيتهم دابة اهلب كثير الشعر لا يدرون ما قبله من دبره من كثرة الشعر قالوا: ويلك ما انت؟ قالت: انا الجساسة قالوا: وما الجساسة؟ قالت: ايها القوم انطلقوا الى هذا الرجل في الدير فانه الى خبركم بالاشواق قال: لما سمت لنا رجلا فرقنا منها ان تكون شيطانة قال: فانطلقنا سراعا حتى دخلنا الدير فاذا فيه اعظم انسان ما رايناه قط خلقا واشده وثاقا مجموعة يده الى عنقه ما بين ركبتيه الى كعبيه بالحديد. قلنا: ويلك ما انت؟ قال: قد قدرتم على خبري فاخبروني ما انتم؟ قالوا: نحن اناس من العرب ركبنا في سفينة بحرية فلعب بنا البحر شهرا فدخلنا الجزيرة فلقيتنا دابة اهلب فقالت: انا الجساسة اعمدوا الى هذا في الدير فاقبلنا اليك سراعا وفزعنا منها ولم نامن ان تكون شيطانة فقال: اخبروني عن نخل بيسان قلنا: عن اي شانها تستخبر؟ قال: اسالكم عن نخلها هل تثمر؟ قلنا: نعم. قال: اما انها توشك ان لا تثمر. قال: اخبروني عن بحيرة الطبرية قلنا: عن اي شانها تستخبر؟ قال: هل فيها ماء؟ قلنا هي كثيرة الماء. قال: اما ان ماءها يوشك ان يذهب. قال: اخبروني عن عين زغر. قالوا: وعن اي شانها تستخبر؟ قال: هل في العين ماء؟ وهل يزرع اهلها بماء العين؟ قلنا له: نعم هي كثيرة الماء واهله يزرعون من ماىها. قال: اخبروني عن نبي الاميين ما فعل؟ قلنا: قد خرج من مكة ونزل يثرب. قال: اقاتله العرب؟ قلنا: نعم. قال: كيف صنع بهم؟ فاخبرناه انه قد ظهر على من يليه من العرب واطاعوه. قال لهم: قد كان ذلك؟ قلنا: نعم. قال: اما ان ذلك خير لهم ان يطيعوه واني مخبركم عني: اني انا المسيح الدجال واني يوشك ان يوذن لي في الخروج فاخرج فاسير في الارض فلا ادع قرية الا هبطتها في اربعين ليلة غير مكة وطيبة هما محرمتان علي كلتاهما كلما اردت ان ادخل واحدة او واحدا منهما استقبلني ملك بيده السيف صلتا يصدني عنها وان على كل نقب منها ملاىكة يحرسونها. قال رسول الله صلى الله عليه وسلم - وطعن بمخصرته في المنبر -: «هذه طيبة هذه طيبة هذه طيبة» يعني المدينة «الا هل كنت حدثتكم؟» فقال الناس: نعم فانه اعجبني حديث تميم انه وافق الذي كنت احدثكم عنه وعن المدينة ومكة. الا انه في بحر الشام او بحر اليمن لا بل من قبل المشرق ماهو من قبل المشرق ماهو من قبل المشرق ماهو واوما بيده الى المشرق. رواه مسلم رواہ مسلم (119 / 2942)، (7386) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: (جَلَسَ عَلَى الْمِنْبَرِ) তিনি (সা.) মিম্বার তথা কাষ্ঠ দ্বারা নির্মিত আসনের উপর বসলেন। তিরমিযীর বর্ণনায় আছে, (صعد المنبر) তিনি (সা.) মিম্বারে চড়লেন। এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে উপদেশ দাতার মিম্বারে বসে উপদেশ দেয়া জায়িয। কিন্তু জুমু'আর সালাতে অবশ্যই দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিতে হবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২২৫৩)।

(لِأَنَّ تَمِيمًا الدَّارِيَّ كَانَ رَجُلًا نَصْرَانِيًّا فَجَاءَ فَبَايَعَ وَأَسْلَمَ) কেননা তামিম আদ্ দারী একজন খ্রিষ্টান লোক ছিলেন, সে এসে আমার কাছে মুসলিম হয়েছে এবং আমাকে হাদীস শুনিয়েছেন আর তা অনুকল হয়েছে সেই হাদীসের যা আমি তোমাদেরকে মাসিহে দাজ্জাল সম্পর্কে বর্ণনা করেছিলাম। এটা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সেই হাদীসের বাস্তব নমুনা যা তিনি বলেছেন, (رُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ إِلِى مَنْ هُوَ أَفْقَهُ مِنْهُ) ‘অনেক জ্ঞানবহনকারী জ্ঞান-শিক্ষা দাতার চেয়ে বেশি জানেন। এখান থেকে জানা যায় যে, বড়রা ছোটদের থেকে হাদীস বর্ণনা করতে পারেন। যেহেতু নবী (সা.) বলেছেন, (كَلِمَةُ الْحِكْمَةُ ضَالَّةُ الْمُؤْمِنِ فَحَيْثُ وَجَدَهَا فَهُوَ أَحَقُّ بِهَا) “প্রজ্ঞাময় কথা মু'মিনের হারানোর সম্পদ, সে যেখানেই তা পাবে অধিক হকদার হবে’- (তিরমিযী হা, ২৬৮৭ [হাদিসটি য’ঈফ-হাদিসবিডি এডমিন])।

আর ‘আলী (রাঃ) বলেন, (انْظُرْإِلَى مَاقَالَ، وَلَاتَنْظُرْ إِلَى مَنْ قَالَ) ‘কি বলেছে তা দেখ, কে বলেছে তার দিকে দেখো না।' (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(أَنَا الْجَسَّاسَةُ) আমি একজন গুপ্তচর। ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তাকে (جَسَّاسَ) বা গোয়েন্দা নামকরণ কারণ হলো সে দাজ্জাল সম্পর্কে সংবাদ অনুসন্ধান করত। আর ‘আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল ‘আস থেকে বর্ণিত হয়েছে সে ছিল পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত দাব্বাতুল আরয। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা, ২২৫৩)
 
‘আওনুল মা'বুদ গ্রন্থে (جَسَّاسَ) বা গোয়েন্দা সম্পর্কে বলা হয়েছে, সে একজন লম্বা চুলবিশিষ্ট মহিলা। তাহলে উভয় বর্ণনার মাঝে সমন্বয় হতে পারে এভাবে, হয়তো দাজ্জালের গোয়েন্দা ছিল দু’জন। একজন দাব্বাতুল আরয আর অপরজন মহিলা। অথবা সম্ভবত গোয়েন্দাটি ছিল একজন শয়তান। সে কখনো দাব্বার আকৃতি ধারণ করত আবার কখনো মহিলার আকৃতি ধারণ করত। আর শয়তান তো বিভিন্ন রূপধারণ করার ক্ষমতা রাখেই। ('আওনুল মা'বূদ ৭ম খণ্ড, হা, ৪৩১৭)

(قُلْنَا: وَيْلَكَ مَا أَنْتَ؟) আমরা বললাম, তোমার ধ্বংস হোক তুমি কে? এখানে সাহাবীগণ আশ্চর্য হয়ে (مَنْ) এর স্থলে (مَا) বলে ফেলেছেন। যেহেতু সে একজন ব্যক্তি ছিল তাই তার পরিচয় ও তার অবস্থা জানার জন্যই তারা তাকে সম্মোধন করে প্রশ্ন করেছিল। আরবী ভাষায় কখনো (مَا) অব্যয়টি (مَنْ) অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন পবিত্র কুরআনে এসেছে, (وَ السَّمَآءِ وَ مَا بَنٰهَا) “শপথ আসমানের আর সেটা যিনি বানিয়েছেন তাঁর”(সূরা আশ শামস্ ৯১: ৫)। আর আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সম্ভবত তারা তাদের ধারণা বহির্ভূত আশ্চর্যজনক প্রাণীকে দেখে তার অবস্থা জানার জন্য (مَنْ أَنْتَ) এর স্থলে (مَا أَنْتَ) বলে ফেলেছে।

(فَأَخْبِرُونِي مَا أَنْتُمْ؟) তোমরা আমাকে বল, তোমরা কে? এখানে দাজ্জাল ও তাদের মতো করেই প্রতি উত্তর করল। কেননা সেও অনুমান করতে পারেনি এই স্থানে মানুষ কোথা থেকে এলো। তাই তাদের পরিচয় জানতে জিজ্ঞেস করল, (أَخْبِرُونِي مَا أَنْتُمْ؟) বল তোমরা কে? আর তোমাদেরকে আমি যেসব প্রশ্ন করব তার উত্তর দাও। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।

 (أَلَا إِنه فِي بَحر الشَّأمِ أَو بحرِ اليمنِ) “সাবধান! নিশ্চয় সে (দাজ্জাল) সিরিয়ার পার্শ্বের সাগরে অথবা ইয়ামানের সাগরের পার্শ্বে অবস্থান করছে।” তিনি (তামীম আদ দারী-এর কথা অনুযায়ী) স্পষ্ট করে তার অবস্থান বর্ণনা করেননি। এতে কোন কল্যাণ থাকতে পারে। যেহেতু ‘আরবগণ সে সময় এই দুই সাগরেই গমন করত। মূলত সাগর একটাই যা আরব উপদ্বীপের পাশ দিয়ে দীর্ঘভাবে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর তিনি উক্ত মত দুটিকে বাতিল করে সঠিক মতামত পেশ করে হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিলেন যে, সে পূর্বদিক থেকে আবির্ভূত হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৮৩-[২০] ’আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) এই বললেন, আমি আজ রাত্রে (স্বপ্নে) দেখেছি যে, আমি কা’বার কাছে উপস্থিত। সেখানে আমি গৌরবর্ণের এক লোককে দেখতে পেলাম। যিনি তোমার দেখা গৌরবর্ণের সর্বাপেক্ষা সুন্দর লোকদের অন্যতম। তার দীর্ঘ চুল ছিল, যা তোমার দেখা সর্বাপেক্ষা সুন্দর বাবরি চুলের অন্যতম ছিল। যেগুলোকে সে আঁচড়িয়ে গোছগাছ করে রেখেছিল উক্ত চুল থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরে পড়ছিল। তিনি দুই ব্যক্তির কাঁধের উপর ভর করে কা’বা ঘরের তাওয়াফ করছিলেন। আমি প্রশ্ন করলাম, এ লোকটি কে? উত্তরে (ফেরেশতাগণ) বললেন, ইনি মাসীহ ইবনু মারইয়াম। অতঃপর আমি আরেক লোককে দেখলাম, যার কেশ ছিল সম্পূর্ণ কোঁকড়ানো, জটবাঁধা। আর তার ডান চোখ ছিল কানা, দেখতে যেন চক্ষুটি ফোলা আঙ্গুরের মতো। লোকেদের মধ্যে (ইয়াহূদী) ইবনু কতান-এর সাথে যার বাহুলাংশে সাদৃশ্য বা মিল রয়েছে। সেও দুই লোকের কাঁধে ভর করে কা’বা ঘর ত্বাওয়াফ করছে। আমি প্রশ্ন করলাম, এ লোকটি কে? উত্তরে তারা বললেন, এটা মাসীহে দাজ্জাল। (বুখারী ও মুসলিম)

অপর এক বর্ণনাতে তিনি দাজ্জালের বর্ণনায় বলেছেন, সে লাল বর্ণের, মোটা দেহ, মাথার চুল কোঁকড়ানো, ডান চক্ষু কানা, মানুষের মাঝে ইবনু কতানই তার কাছাকাছি সাদৃশ্য। আর আবূ হুরায়রাহ (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস (لَا تَقُومُ السَّاعَةُ) “মহাযুদ্ধ অধ্যায়"-এ বর্ণিত হয়েছে। আর ইবনু ’উমার (রাঃ)-এর হাদীস (قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي النَّاس) শীঘ্রই (بْن الصياد) -এর ঘটনায় বর্ণনা করব- ইনশা-আল্ল-হ!

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: رَأَيْتُنِي اللَّيْلَةَ عِنْدَ الْكَعْبَةِ فَرَأَيْتُ رَجُلًا آدَمَ كَأَحْسَنِ مَا أَنْتَ رَاءٍ مِنْ أُدْمِ الرِّجَالِ لَهُ لِمَّةٌ كَأَحْسَنِ مَا أَنْتَ رَاءٍ مِنَ اللِّمَمِ قد رجَّلَها فَهِيَ تقطر مَاء متكأ عَلَى عَوَاتِقِ رَجُلَيْنِ يَطُوفُ بِالْبَيْتِ فَسَأَلْتُ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالُوا: هَذَا الْمَسِيح بن مَرْيَمَ قَالَ: ثُمَّ إِذَا أَنَا بَرْجُلٍ جَعْدٍ قَطَطٍ أَعْوَرِ الْعَيْنِ الْيُمْنَى كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ كَأَشْبَهِ مَنْ رَأَيْتُ مِنَ النَّاسِ بِابْنِ قَطَنٍ وَاضِعًا يَدَيْهِ عَلَى مَنْكِبَيْ رَجُلَيْنِ يَطُوفُ بِالْبَيْتِ فَسَأَلْتُ مَنْ هَذَا؟ فَقَالُوا: هَذَا الْمَسِيحُ الدَّجَّالُ . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ: قَالَ فِي الدَّجَّالِ: «رَجُلٌ أَحْمَرُ جَسِيمٌ جَعْدُ الرَّأْسِ أَعْوَرُ عَيْنِ الْيُمْنَى أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا ابْنُ قَطَنٍ» وَذَكَرَ حَدِيثَ أَبِي هُرَيْرَةَ: «لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا» فِي «بَابِ الْمَلَاحِمِ» وَسَنَذْكُرُ حَدِيثَ ابْنِ عُمَرَ: قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي النَّاس فِي «بَاب قصَّة ابْن الصياد» إِن شَاءَ الله تَعَالَى

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3440 و الروایۃ الثانیۃ : 2441) و مسلم (274 ، 273 / 169، (425) و الروایۃ الثانیۃ : 277 / 171)، (426) 0 حدیث ابن عمر : قام رسول اللہ صلی اللہ علیہ و آلہ وسلم فی الناس یاتی (5494) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن عبد الله بن عمر ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: رايتني الليلة عند الكعبة فرايت رجلا ادم كاحسن ما انت راء من ادم الرجال له لمة كاحسن ما انت راء من اللمم قد رجلها فهي تقطر ماء متكا على عواتق رجلين يطوف بالبيت فسالت: من هذا؟ فقالوا: هذا المسيح بن مريم قال: ثم اذا انا برجل جعد قطط اعور العين اليمنى كان عينه عنبة طافية كاشبه من رايت من الناس بابن قطن واضعا يديه على منكبي رجلين يطوف بالبيت فسالت من هذا؟ فقالوا: هذا المسيح الدجال . متفق عليه. وفي رواية: قال في الدجال: «رجل احمر جسيم جعد الراس اعور عين اليمنى اقرب الناس به شبها ابن قطن» وذكر حديث ابي هريرة: «لا تقوم الساعة حتى تطلع الشمس من مغربها» في «باب الملاحم» وسنذكر حديث ابن عمر: قام رسول الله صلى الله عليه وسلم في الناس في «باب قصة ابن الصياد» ان شاء الله تعالى متفق علیہ ، رواہ البخاری (3440 و الروایۃ الثانیۃ : 2441) و مسلم (274 ، 273 / 169، (425) و الروایۃ الثانیۃ : 277 / 171)، (426) 0 حدیث ابن عمر : قام رسول اللہ صلی اللہ علیہ و آلہ وسلم فی الناس یاتی (5494) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (رَأَيْتُنِي اللَّيْلَةَ عِنْدَ الْكَعْبَةِ) আমি গতরাতে আমাকে কা'বা ঘরের পার্শ্বে দেখেছি। নবীদের স্বপ্ন সত্য। তাদের স্বপ্নে দেখা বাস্তবে দেখার মতই, আমি বাদামী রঙের সুন্দর গঠনের একজন মানুষকে দেখেছি, যার চুলগুলো কানের লতি অতিক্রম করেছে। তার চুল ছিল পরিপাটি ও ঝলমলে, মনে হয় যেন পানি ঝরে পড়ছে। দু’জন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে কা'বা ঘরের ত্বাওয়াফ করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম ইনি কে? তাওয়াফকারীগণ অথবা ফেরেশতাগণ উত্তর দিল, তিনি হচ্ছেন মারইয়াম আলায়হিস সালাম-এর পুত্র ঈসা মাসীহ।
নবী (সা.) বলেন, এরপর আমি ঘন কোকড়ানো চুলবিশিষ্ট ডান চোখ ত্রুটিযুক্ত, আলোহীন, আঙ্গুরের মত ফোলা উপরে উঠানো লোককে দেখলাম যে, ইবনু কতান নামক ইয়াহুদীর মতো সাদৃশ্য রাখে। সে দু’জন লোকের কাঁধে হাত রেখে বায়তুল্লাহর ত্বাওয়াফ করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে কে? মালাক (ফেরেশতা) অথবা তাওরাফকারীগণ উত্তর দিলেন, সে হচ্ছে মাসীহুদ দাজ্জাল।
‘আল্লামাহ্ তুরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, দাজ্জালকে মাসীহ বলার কারণ হলো সে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত তাই। আর ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-কে মাসীহ বলা হয় যেহেতু তার হাতের স্পর্শে কুষ্ঠরোগী ভালো হয়ে যেত অথবা তিনি তার মায়ের পেট থেকে তেল মালিশের মাধ্যমে বেরিয়ে আসেন তাই। দাজ্জালকে মাসীহ বলার আরেকটি কারণ হলো তার একচোখ মুছে ফেলা হয়েছিল সে কিছুই দেখতে পেত না অথবা সে অল্প কিছুদিনের মধ্যে পুরো দুনিয়া প্রদক্ষিণ করার ক্ষমতা রাখবে। শুধু মক্কাহ্ ও মদীনাহ্ ছাড়া সেজন্য। আর দাজ্জালকে মাসীহু দাজ্জাল নামকরণের মাধ্যমে ‘ঈসা আলায়হিস সালাম থেকে আলাদা করা হয়েছে। মূলত মাসীহ হলেন ‘ঈসা আলায়হিস্ সালাম। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২০ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে