৫৪৮২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৮২-[১৯] ফাত্বিমাহ্ বিনতু কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে সালাতের জন্য ঘোষণা দিতে শুনতে পেলাম। সালাত শেষ করে তিনি (সা.) মিম্বারে উপবিষ্ট হলেন এবং মুচকি হেসে বললেন, প্রত্যেক লোক নিজ নিজ সালাতের স্থানে বসে থাক। অতঃপর বললেন, তোমরা কি জান, আমি তোমাদেরকে কেন একত্রিত করেছি? সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জানেন। তিনি (সা.) বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদেরকে কিছু দেয়ার জন্য বা কোন ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য সমবেত করিনি; তোমাদেরকে একত্রিত করেছি বরং তামীম আদ্ দারী-এর বর্ণিত একটি ঘটনা শুনানোর জন্যই। তামীম আদ দারী ছিলেন একজন খ্রিস্টান, তিনি (আমার নিকট) এসে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তিনি আমাকে এমন একটি ঘটনা শুনিয়েছেন, এটা ঐ কথারই সাথে মিল রাখে যা আমি তোমাদেরকে মাসীহে দাজ্জাল সম্পর্কে বলেছিলাম। তিনি বলেছেন, একবার তিনি ’লাম ও জুযাম’ গোত্রের ত্রিশজন লোকের সঙ্গে একটি সামুদ্রিক নৌকায় সফরে বের হয়েছিলেন। সাগরের ঢেউ তাদেরকে দীর্ঘ একমাস পর্যন্ত এদিক সেদিক ঘুরাতে ঘুরাতে পরিশেষে একদিন সূর্যাস্তের সময় একটি দ্বীপের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন এবং সেখানে তারা এমন একটি জানোয়ার দেখতে পেলেন যার সমস্ত দেহ বড় বড় পশমে ঢাকা। অধিক পশমের কারণে তার অগ্র-পশ্চাৎ কিছুই নির্ণয় করা যায়নি। তখন তারা তাকে লক্ষ্য করে বললেন, তোর অকল্যাণ হোক! তুই কে? সে বলল, আমি ’জাসসাসাহ্ (অর্থাৎ গুপ্ত সংবাদ অন্বেষণকারিণী)। তোমাদের তথ্যাদি শুনার ও জানার প্রত্যাশী।

তামীম আদ দারী বলেন, উক্ত জন্তুর কাছে লোকটির কথা শুনে তার প্রতি আমাদের অন্তরে ভয় সঞ্চার হলো যে, তা জিন হতে পারে। তখন আমরা দ্রুত সেখানে গেলাম এবং গির্জায় প্রবেশ করে সেখানে এমন একটি প্রকাণ্ড দেহবিশিষ্ট মানুষ দেখতে পেলাম যা ইতোপূর্বে আমরা আর কখনো দেখতে পাইনি। সে ছিল খুব মজবুত করে বাঁধা অবস্থায়, তার হাত ঘাড়ের সাথে এবং হাঁটুদ্বয় নিচের উভয় গিটের সাথে লৌহশিকল দিয়ে একত্রে বাঁধা ছিল। আমরা তাকে বললাম, তোর অকল্যাণ হোক! তুই কে? সে বলল, নিশ্চয় তোমরা আমার সম্পর্কে জানতে পারবে, তবে তোমরা আগে আমাকে বল দেখি তোমরা কে? তারা বললেন, আমরা ’আরবের লোক। আমরা সমুদ্রে একটি নৌকায় আরোহী ছিলাম দীর্ঘ একমাস সাগরের তরঙ্গ আমাদেরকে এদিক-সেদিক ঘুরিয়ে এখানে এনে পৌঁছিয়েছে। অতঃপর আমরা এ দ্বীপে প্রবেশ করার পর সারা দেহ ঘন লোমে আবৃত এমন একটি জন্তুর সাথে আমাদের দেখা হলো। সে বলল, আমি ’জাসসাসাহ্।
সে আমাদেরকে এ গির্জায় আসতে বলায় আমরা দ্রুত তোমার কাছে এসে উপস্থিত হয়েছি।

সে বলল, আচ্ছা তোমরা আমাকে বল দেখি! বায়সান এলাকার খেজুর বাগানে ফল আসে কি? (বায়সান হিজাযের একটি জায়গার নাম) আমরা বললাম, হ্যা, আসে। সে বলল, সেই বাগানের গাছে অদূর ভবিষ্যতে ফল ধরবে না। অতঃপর সে বলল, আচ্ছা বল দেখি! ’তবারিয়্যাহ্’-এর নদীতে কি পানি আছে? আমরা বললাম, হ্যা, তাতে প্রচুর পরিমাণে পানি আছে। সে বলল, অচিরেই তার পানি শুকিয়ে যাবে। এবার সে প্রশ্ন করল, আচ্ছা বল দেখি! ’যোগার’ ঝরনার পানি আছে কি? আর তথাকার অধিবাসীগণ কি উক্ত ঝরনার পানি দ্বারা তাদের ক্ষেত-খামারে চাষাবাদ করে। অতঃপর সে প্রশ্ন করল, আচ্ছা বল দেখি! উম্মিদের নবীর সংবাদ কী? আমরা বললাম, তিনি মক্কাহ থেকে হিজরত করে বর্তমান ইয়াসরিব (মদীনায় অবস্থান করছেন। সে প্রশ্ন করল, বল দেখি! ’আরবরা কি তার সাথে লড়াই করেছিল? আমরা বললাম, হ্যা, করেছে। সে প্রশ্ন করল, তিনি (সে নবী) তাদের সাথে কি আচরণ করেছেন? এর উত্তরে আমরা বললাম যে, তার আশেপাশের ’আরবদের ওপরে তিনি জয়ী হয়েছেন এবং তারা তাঁর আনুগত্য স্বীকার করেছে। এতদশ্রবণে সে বলল, তোমরা জেনে রাখ! তার আনুগত্য করাই তাদের পক্ষে কল্যাণজনক হয়েছে।

আচ্ছা এখন আমি আমার অবস্থা বর্ণনা করছি আমি মাসীহে দাজ্জাল, অদূর ভবিষ্যতে আমাকে বের হওয়ার অনুমতি প্রদান করা হবে। আমি বের হয়ে জমিনে বিচরণ করব। মক্কাহ্-মদীনাহ্ ছাড়া এমন কোন জনপদ বাকি থাকবে না, চল্লিশ দিনের মধ্যে যেখানে আমি প্রবেশ করব না। সেই দু স্থানে প্রবেশ করা আমার ওপরে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যখনই আমি তার একটিতে প্রবেশ করতে চাইব, তখন নাঙ্গা তরবারি হাতে মালাক (ফেরেশতা) এসে আমাকে প্রবেশ করা হতে বাধা প্রদান করবে। মূলত তার প্রত্যেক প্রবেশ পথে মালাক পাহারারত রয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, এ পর্যন্ত বর্ণনা করে রাসূলুল্লাহ (সা.) - নিজ লাঠি দ্বারা মিম্বারে টোকা দিয়ে বললেন, এটা ত্বায়বাহ্, এটা ত্বায়বাহ্, এটা ত্বায়বাহ্ (মদীনাহ্)। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, বল দেখি! এর আগে আমি কি তোমাদেরকে এ হাদীস বর্ণনা করিনি? লোকেরা বলল, জী হ্যা। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, দাজ্জাল সিরিয়ার কোন এক দরিয়ায় অথবা ইয়ামানের কোন এক দরিয়ায় আছে। পরে বললেন, না, বরং সে পূর্বদিক হতে আগমন করবে। এ বলে তিনি (সা.) হাত দ্বারা পূর্বদিকে ইঙ্গিত করলেন। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَن فَاطِمَة بنت قيس قَالَتْ: سَمِعْتُ مُنَادِي رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا قَضَى صَلَاتَهُ جَلَسَ عَلَى الْمِنْبَرِ وَهُوَ يَضْحَكُ فَقَالَ: «لِيَلْزَمْ كُلُّ إِنْسَانٍ مُصَلَّاهُ» . ثُمَّ قَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ لِمَ جَمَعْتُكُمْ؟» . قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: إِنِّي وَاللَّهِ مَا جَمَعْتُكُمْ لِرَغْبَةٍ وَلَا لِرَهْبَةٍ وَلَكِنْ جَمَعْتُكُمْ لِأَنَّ تَمِيمًا الدَّارِيَّ كَانَ رَجُلًا نَصْرَانِيًّا فَجَاءَ فَبَايَعَ وَأَسْلَمَ وَحَدَّثَنِي حَدِيثًا وَافَقَ الَّذِي كُنْتُ أُحَدِّثُكُمْ بِهِ عَنِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ حَدَّثَنِي أَنَّهُ رَكِبَ فِي سَفِينَةٍ بَحْرِيَّةٍ مَعَ ثَلَاثِينَ رَجُلًا مِنْ لَخْمٍ وَجُذَامَ فَلَعِبَ بِهِمُ الْمَوْجُ شَهْرًا فِي الْبَحْر فأرفؤُوا إِلَى جَزِيرَةٍ حِينَ تَغْرُبُ الشَّمْسُ فَجَلَسُوا فِي أقرب سفينة فَدَخَلُوا الْجَزِيرَةَ فَلَقِيَتْهُمْ دَابَّةٌ أَهْلَبُ كَثِيرُ الشَّعَرِ لَا يَدْرُونَ مَا قُبُلُهُ مِنْ دُبُرِهِ مِنْ كَثْرَةِ الشَّعَرِ قَالُوا: وَيْلَكِ مَا أَنْتِ؟ قَالَتْ: أَنَا الْجَسَّاسَةُ قَالُوا: وَمَا الْجَسَّاسَةُ؟ قَالَتْ: أَيُّهَا الْقَوْمُ انْطَلِقُوا إِلَى هَذَا الرَّجُلِ فِي الدَّيْرِ فَإِنَّهُ إِلَى خَبَرِكُمْ بِالْأَشْوَاقِ قَالَ: لَمَّا سَمَّتْ لَنَا رَجُلًا فَرِقْنَا مِنْهَا أَنْ تَكُونَ شَيْطَانَةً قَالَ: فَانْطَلَقْنَا سِرَاعًا حَتَّى دَخَلْنَا الدَّيْرَ فَإِذَا فِيهِ أعظمُ إِنسان مَا رَأَيْنَاهُ قطُّ خَلْقاً وأشَدُّهُ وَثَاقاً مجموعةٌ يَده إِلَى عُنُقِهِ مَا بَيْنَ رُكْبَتَيْهِ إِلَى كَعْبَيْهِ بِالْحَدِيدِ. قُلْنَا: وَيْلَكَ مَا أَنْتَ؟ قَالَ: قَدْ قَدَرْتُمْ عَلَى خَبَرِي فَأَخْبِرُونِي مَا أَنْتُمْ؟ قَالُوا: نَحن أُناس من العربِ ركبنَا فِي سفينةٍ بحريّة فلعِبَ بِنَا الْبَحْر شهرا فَدَخَلْنَا الجزيرة فَلَقِيَتْنَا دَابَّةٌ أَهْلَبُ فَقَالَتْ: أَنَا الْجَسَّاسَةُ اعْمِدُوا إِلَى هَذَا فِي الدَّيْرِ فَأَقْبَلْنَا إِلَيْكَ سِرَاعًا وَفَزِعْنَا مِنْهَا وَلَمْ نَأْمَنْ أَنْ تَكُونَ شَيْطَانَةً فَقَالَ: أَخْبِرُونِي عَنْ نَخْلِ بَيْسَانَ قُلْنَا: عَنْ أَيِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ؟ قَالَ: أَسْأَلُكُمْ عَنْ نَخْلِهَا هَلْ تُثْمِرُ؟ قُلْنَا: نَعَمْ. قَالَ: أَمَا إِنَّهَا تُوشِكُ أَنْ لَا تُثْمِرَ. قَالَ: أَخْبِرُونِي عَنْ بُحَيْرَةِ الطَّبَرِيَّةِ قُلْنَا: عَنْ أَيِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ؟ قَالَ: هَلْ فِيهَا مَاءٌ؟ قُلْنَا هِيَ كَثِيرَةُ الْمَاءِ. قَالَ: أَمَا إِنَّ مَاءَهَا يُوشِكُ أَنْ يَذْهَبَ. قَالَ: أَخْبِرُونِي عَنْ عَيْنِ زُغَرَ. قَالُوا: وَعَنْ أَيِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ؟ قَالَ: هَلْ فِي الْعَيْنِ مَاءٌ؟ وَهَلْ يَزْرَعُ أَهْلُهَا بِمَاءِ الْعَيْنِ؟ قُلْنَا لَهُ: نعم هِيَ كَثِيرَة المَاء وَأَهله يَزْرَعُونَ مِنْ مَائِهَا. قَالَ: أَخْبِرُونِي عَنْ نَبِيِّ الْأُمِّيِّينَ مَا فَعَلَ؟ قُلْنَا: قَدْ خَرَجَ مِنْ مَكَّةَ وَنَزَلَ يَثْرِبَ. قَالَ: أَقَاتَلَهُ الْعَرَبُ؟ قُلْنَا: نَعَمْ. قَالَ: كَيْفَ صَنَعَ بِهِمْ؟ فَأَخْبَرْنَاهُ أَنَّهُ قَدْ ظَهَرَ عَلَى مَنْ يَلِيهِ مِنَ الْعَرَبِ وأطاعوهُ. قَالَ لَهُم: قد كانَ ذلكَ؟ قُلْنَا: نعم. قَالَ: أَمَا إِنَّ ذَلِكَ خَيْرٌ لَهُمْ أَنْ يُطِيعُوهُ وَإِنِّي مُخْبِرُكُمْ عَنِّي: إِنِّي أَنَا الْمَسِيحُ الدَّجَّالُ وَإِنِّي يُوشِكُ أَنْ يُؤْذَنَ لِي فِي الْخُرُوجِ فَأَخْرُجَ فَأَسِيرَ فِي الْأَرْضِ فَلَا أَدَعُ قَرْيَةً إِلَّا هَبَطْتُهَا فِي أَرْبَعِينَ لَيْلَةً غَيْرَ مَكَّةَ وَطَيْبَةَ هُمَا مُحَرَّمَتَانِ عَلَيَّ كِلْتَاهُمَا كُلَّمَا أَرَدْتُ أَنْ أَدْخُلَ وَاحِدَةً أَوْ وَاحِدًا مِنْهُمَا استقبلَني ملَكٌ بيدهِ السيفُ صَلْتًا يَصُدُّنِي عَنْهَا وَإِنَّ عَلَى كُلِّ نَقْبٍ مِنْهَا مَلَائِكَةً يَحْرُسُونَهَا. قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَطَعَنَ بِمِخْصَرَتِهِ فِي الْمِنْبَرِ -: «هَذِه طَيْبَةُ هَذِهِ طَيْبَةُ هَذِهِ طَيْبَةُ» يَعْنِي الْمَدِينَةَ «أَلَا هَلْ كُنْتُ حَدَّثْتُكُمْ؟» فَقَالَ النَّاسُ: نَعَمْ فَإِنَّهُ أَعْجَبَنِي حَدِيثُ تَمِيمٍ أَنَّهُ وَافَقَ الَّذِي كُنْتُ أُحَدِّثُكُمْ عَنْهُ وَعَنِ الْمَدِينَةِ وَمَكَّةَ. أَلَا إِنه فِي بَحر الشَّأمِ أَو بحرِ اليمنِ لَا بل من قبل الْمشرق ماهو من قبل الْمشرق ماهو من قبل الْمشرق ماهو وَأَوْمَأَ بِيَدِهِ إِلَى الْمشرق. رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (119 / 2942)، (7386) ۔
(صَحِيح)

وعن فاطمة بنت قيس قالت: سمعت منادي رسول الله صلى الله عليه وسلم فلما قضى صلاته جلس على المنبر وهو يضحك فقال: «ليلزم كل انسان مصلاه» . ثم قال: «هل تدرون لم جمعتكم؟» . قالوا: الله ورسوله اعلم. قال: اني والله ما جمعتكم لرغبة ولا لرهبة ولكن جمعتكم لان تميما الداري كان رجلا نصرانيا فجاء فبايع واسلم وحدثني حديثا وافق الذي كنت احدثكم به عن المسيح الدجال حدثني انه ركب في سفينة بحرية مع ثلاثين رجلا من لخم وجذام فلعب بهم الموج شهرا في البحر فارفووا الى جزيرة حين تغرب الشمس فجلسوا في اقرب سفينة فدخلوا الجزيرة فلقيتهم دابة اهلب كثير الشعر لا يدرون ما قبله من دبره من كثرة الشعر قالوا: ويلك ما انت؟ قالت: انا الجساسة قالوا: وما الجساسة؟ قالت: ايها القوم انطلقوا الى هذا الرجل في الدير فانه الى خبركم بالاشواق قال: لما سمت لنا رجلا فرقنا منها ان تكون شيطانة قال: فانطلقنا سراعا حتى دخلنا الدير فاذا فيه اعظم انسان ما رايناه قط خلقا واشده وثاقا مجموعة يده الى عنقه ما بين ركبتيه الى كعبيه بالحديد. قلنا: ويلك ما انت؟ قال: قد قدرتم على خبري فاخبروني ما انتم؟ قالوا: نحن اناس من العرب ركبنا في سفينة بحرية فلعب بنا البحر شهرا فدخلنا الجزيرة فلقيتنا دابة اهلب فقالت: انا الجساسة اعمدوا الى هذا في الدير فاقبلنا اليك سراعا وفزعنا منها ولم نامن ان تكون شيطانة فقال: اخبروني عن نخل بيسان قلنا: عن اي شانها تستخبر؟ قال: اسالكم عن نخلها هل تثمر؟ قلنا: نعم. قال: اما انها توشك ان لا تثمر. قال: اخبروني عن بحيرة الطبرية قلنا: عن اي شانها تستخبر؟ قال: هل فيها ماء؟ قلنا هي كثيرة الماء. قال: اما ان ماءها يوشك ان يذهب. قال: اخبروني عن عين زغر. قالوا: وعن اي شانها تستخبر؟ قال: هل في العين ماء؟ وهل يزرع اهلها بماء العين؟ قلنا له: نعم هي كثيرة الماء واهله يزرعون من ماىها. قال: اخبروني عن نبي الاميين ما فعل؟ قلنا: قد خرج من مكة ونزل يثرب. قال: اقاتله العرب؟ قلنا: نعم. قال: كيف صنع بهم؟ فاخبرناه انه قد ظهر على من يليه من العرب واطاعوه. قال لهم: قد كان ذلك؟ قلنا: نعم. قال: اما ان ذلك خير لهم ان يطيعوه واني مخبركم عني: اني انا المسيح الدجال واني يوشك ان يوذن لي في الخروج فاخرج فاسير في الارض فلا ادع قرية الا هبطتها في اربعين ليلة غير مكة وطيبة هما محرمتان علي كلتاهما كلما اردت ان ادخل واحدة او واحدا منهما استقبلني ملك بيده السيف صلتا يصدني عنها وان على كل نقب منها ملاىكة يحرسونها. قال رسول الله صلى الله عليه وسلم - وطعن بمخصرته في المنبر -: «هذه طيبة هذه طيبة هذه طيبة» يعني المدينة «الا هل كنت حدثتكم؟» فقال الناس: نعم فانه اعجبني حديث تميم انه وافق الذي كنت احدثكم عنه وعن المدينة ومكة. الا انه في بحر الشام او بحر اليمن لا بل من قبل المشرق ماهو من قبل المشرق ماهو من قبل المشرق ماهو واوما بيده الى المشرق. رواه مسلم رواہ مسلم (119 / 2942)، (7386) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: (جَلَسَ عَلَى الْمِنْبَرِ) তিনি (সা.) মিম্বার তথা কাষ্ঠ দ্বারা নির্মিত আসনের উপর বসলেন। তিরমিযীর বর্ণনায় আছে, (صعد المنبر) তিনি (সা.) মিম্বারে চড়লেন। এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে উপদেশ দাতার মিম্বারে বসে উপদেশ দেয়া জায়িয। কিন্তু জুমু'আর সালাতে অবশ্যই দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিতে হবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২২৫৩)।

(لِأَنَّ تَمِيمًا الدَّارِيَّ كَانَ رَجُلًا نَصْرَانِيًّا فَجَاءَ فَبَايَعَ وَأَسْلَمَ) কেননা তামিম আদ্ দারী একজন খ্রিষ্টান লোক ছিলেন, সে এসে আমার কাছে মুসলিম হয়েছে এবং আমাকে হাদীস শুনিয়েছেন আর তা অনুকল হয়েছে সেই হাদীসের যা আমি তোমাদেরকে মাসিহে দাজ্জাল সম্পর্কে বর্ণনা করেছিলাম। এটা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সেই হাদীসের বাস্তব নমুনা যা তিনি বলেছেন, (رُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ إِلِى مَنْ هُوَ أَفْقَهُ مِنْهُ) ‘অনেক জ্ঞানবহনকারী জ্ঞান-শিক্ষা দাতার চেয়ে বেশি জানেন। এখান থেকে জানা যায় যে, বড়রা ছোটদের থেকে হাদীস বর্ণনা করতে পারেন। যেহেতু নবী (সা.) বলেছেন, (كَلِمَةُ الْحِكْمَةُ ضَالَّةُ الْمُؤْمِنِ فَحَيْثُ وَجَدَهَا فَهُوَ أَحَقُّ بِهَا) “প্রজ্ঞাময় কথা মু'মিনের হারানোর সম্পদ, সে যেখানেই তা পাবে অধিক হকদার হবে’- (তিরমিযী হা, ২৬৮৭ [হাদিসটি য’ঈফ-হাদিসবিডি এডমিন])।

আর ‘আলী (রাঃ) বলেন, (انْظُرْإِلَى مَاقَالَ، وَلَاتَنْظُرْ إِلَى مَنْ قَالَ) ‘কি বলেছে তা দেখ, কে বলেছে তার দিকে দেখো না।' (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(أَنَا الْجَسَّاسَةُ) আমি একজন গুপ্তচর। ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তাকে (جَسَّاسَ) বা গোয়েন্দা নামকরণ কারণ হলো সে দাজ্জাল সম্পর্কে সংবাদ অনুসন্ধান করত। আর ‘আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল ‘আস থেকে বর্ণিত হয়েছে সে ছিল পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত দাব্বাতুল আরয। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা, ২২৫৩)
 
‘আওনুল মা'বুদ গ্রন্থে (جَسَّاسَ) বা গোয়েন্দা সম্পর্কে বলা হয়েছে, সে একজন লম্বা চুলবিশিষ্ট মহিলা। তাহলে উভয় বর্ণনার মাঝে সমন্বয় হতে পারে এভাবে, হয়তো দাজ্জালের গোয়েন্দা ছিল দু’জন। একজন দাব্বাতুল আরয আর অপরজন মহিলা। অথবা সম্ভবত গোয়েন্দাটি ছিল একজন শয়তান। সে কখনো দাব্বার আকৃতি ধারণ করত আবার কখনো মহিলার আকৃতি ধারণ করত। আর শয়তান তো বিভিন্ন রূপধারণ করার ক্ষমতা রাখেই। ('আওনুল মা'বূদ ৭ম খণ্ড, হা, ৪৩১৭)

(قُلْنَا: وَيْلَكَ مَا أَنْتَ؟) আমরা বললাম, তোমার ধ্বংস হোক তুমি কে? এখানে সাহাবীগণ আশ্চর্য হয়ে (مَنْ) এর স্থলে (مَا) বলে ফেলেছেন। যেহেতু সে একজন ব্যক্তি ছিল তাই তার পরিচয় ও তার অবস্থা জানার জন্যই তারা তাকে সম্মোধন করে প্রশ্ন করেছিল। আরবী ভাষায় কখনো (مَا) অব্যয়টি (مَنْ) অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন পবিত্র কুরআনে এসেছে, (وَ السَّمَآءِ وَ مَا بَنٰهَا) “শপথ আসমানের আর সেটা যিনি বানিয়েছেন তাঁর”(সূরা আশ শামস্ ৯১: ৫)। আর আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সম্ভবত তারা তাদের ধারণা বহির্ভূত আশ্চর্যজনক প্রাণীকে দেখে তার অবস্থা জানার জন্য (مَنْ أَنْتَ) এর স্থলে (مَا أَنْتَ) বলে ফেলেছে।

(فَأَخْبِرُونِي مَا أَنْتُمْ؟) তোমরা আমাকে বল, তোমরা কে? এখানে দাজ্জাল ও তাদের মতো করেই প্রতি উত্তর করল। কেননা সেও অনুমান করতে পারেনি এই স্থানে মানুষ কোথা থেকে এলো। তাই তাদের পরিচয় জানতে জিজ্ঞেস করল, (أَخْبِرُونِي مَا أَنْتُمْ؟) বল তোমরা কে? আর তোমাদেরকে আমি যেসব প্রশ্ন করব তার উত্তর দাও। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।

 (أَلَا إِنه فِي بَحر الشَّأمِ أَو بحرِ اليمنِ) “সাবধান! নিশ্চয় সে (দাজ্জাল) সিরিয়ার পার্শ্বের সাগরে অথবা ইয়ামানের সাগরের পার্শ্বে অবস্থান করছে।” তিনি (তামীম আদ দারী-এর কথা অনুযায়ী) স্পষ্ট করে তার অবস্থান বর্ণনা করেননি। এতে কোন কল্যাণ থাকতে পারে। যেহেতু ‘আরবগণ সে সময় এই দুই সাগরেই গমন করত। মূলত সাগর একটাই যা আরব উপদ্বীপের পাশ দিয়ে দীর্ঘভাবে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর তিনি উক্ত মত দুটিকে বাতিল করে সঠিক মতামত পেশ করে হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিলেন যে, সে পূর্বদিক থেকে আবির্ভূত হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)