পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৬৮-[২২] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি ’’সত্যবাদী সত্যায়িত’’ তাঁকে বলতে শুনেছি, দুর্ভাগ্যবান ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো অন্তর হতে অনুগ্রহ ও দয়া বের করে দেয়া হয় না। (আহমাদ ও তিরমিযী)[1]
عَن أبي
هُرَيْرَة قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا الْقَاسِمِ الصَّادِقَ الْمَصْدُوقَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا تُنْزَعُ الرَّحْمَةُ إِلاَّ مَن شقي» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজবিজ্ঞানী বুঝতে হবে এ হাদীসটিই তা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। যেখানে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর সৃষ্টির উপর দয়া করতে যে না পারবে সে চরম হতভাগা। সর্বাগ্রে সে দয়া করবে নিজের প্রতি। কারণ যে নিজেকেই দয়া করতে পারে না সে অন্যকে কিভাবে দয়া করবে? মহান আল্লাহ বলেন, إِنْ أَحْسَنْتُمْ أَحْسَنْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ ‘‘তোমরা অপর কাউকে ইহসান করার অর্থ তোমাদের নিজেদের ইহসান করা।’’ (সূরাহ্ ইসরা ১৭ : ৭)
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ মানুষের প্রতি দয়া না করাকে হতভাগ্য বলে চিত্রায়িত করার কারণ হলো সৃষ্টির প্রতি দয়াপরবশ হতে উৎসাহিত করা যা ঈমানের পরিচায়ক। যার ভিতর নম্রতা নেই তার ঈমান নেই আর যার ঈমান নেই, সে নিঃসন্দেহে হতভাগ্য। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯২৩)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৬৯-[২৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি অনুগ্রহ ও অনুকম্পা প্রদর্শনকারীদের প্রতি আল্লাহ রহমানুর রহীম অনুগ্রহ ও দয়া বর্ষণ করেন। সুতরাং তোমরা জমিনের অধিবাসীদের প্রতি দয়া করো, তাহলে আকাশের মালিক তোমাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করবেন। (আবূ দাঊদ ও তিরমিযী)[1]
وَعَنْ عَبْدِ
اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الرَّاحِمُونَ يَرْحَمُهُمُ الرَّحْمَنُ ارْحَمُوا مَنْ فِي الْأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ
ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসে দয়াশীলতার যে কথা বলা হয়েছে তা জমিনের মানব, জীব জানোয়ারের প্রতি অনুগ্রহ করা ও বিপদাপদে সমবেদনা জানানোর কথাটি ব্যাপক রাখা হয়েছে যাতে করে জমিনের সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। এর ভিতরে ভালো, মন্দ, কথা বলতে পারে এমন, পক্ষীকুল, কীটপতঙ্গ সবাই অন্তর্ভুক্ত হবে।
(يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ) যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের দয়া করবেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা। কেউ কেউ বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলেন আসমানে বসবাসকারী মালায়িকাহ্ (ফেরেশতামণ্ডলী), কেননা তারা মু’মিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। যেমন, মহান আল্লাহ বলেনঃ
الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَه يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُونَ بِه# وَيَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَحْمَةً وَعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِينَ تَابُوا وَاتَّبَعُوا سَبِيلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ
অর্থাৎ যারা ‘আরশ বহন করে এবং তাদের আশেপাশে যারা আছে তারা তাদের রবের প্রশংসা তাসবীহ পাঠ করে এবং তার প্রতি ঈমান এনেছে এবং মু’মিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, হে আমাদের রব্! তুমি সব জিনিসকে দয়া ও ‘ইলমের মাধ্যমে বেষ্টন করে আছ। সুতরাং তুমি তাওবাহকারী ও তোমার পথ অনুসারীদের ক্ষমা কর এবং তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা কর। (সূরাহ্ আল মু’মিন/গাফির ৪০ : ৭)
সিরাজুল মুনীর গ্রন্থে এসেছে, اهل السماء তথা আসমানবাসী। এ শব্দ দ্বারা মালায়িকাহ্ উদ্দেশ্য।
(তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯২৪)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৭০-[২৪] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদেরকে অনুগ্রহ করে না, আমাদের বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে না, ভালো কাজের আদেশ করে না এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে না, সে আমাদের দলের নয়। [তিরমিযী; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসটি গরীব।][1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘লায়স ইবনু আবী সুলায়ম’’ নামের একজন য‘ঈফ রাবী। এছাড়াও শরীকও য‘ঈফ। দেখুন- য‘ঈফাহ্ ২১০৮।
وَعَنِ
ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَلَمْ يُوَقِّرْ كَبِيرَنَا وَيَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ
رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যাঃ ইমাম আবূ ‘ঈসা তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। কোন কোন ‘আলিম বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা (لَيْسَ مِنَّا) অর্থ আমাদের শিষ্টাচারের মধ্যে নয়। ‘আলী ইবনুল মাদীনী বলেছেনঃ ইয়াহইয়া ইবনু সা‘ঈদ বলেন, সুফ্ইয়ান সাওরী উক্ত ব্যাখ্যাকে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের মধ্যে নয়’ অর্থ আমাদের ধর্মের নয়। অর্থাৎ যদি কেউ ছোটদের স্নেহ না করে, বড়দের শ্রদ্ধা না করে তাহলে সে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরাই আমাদের ঈমানের পরিচয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯২০)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৭১-[২৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে যুবক কোন বৃদ্ধকে বার্ধক্যের কারণে ইজ্জত-সম্মান করবে, আল্লাহ তা’আলা তার বৃদ্ধাবস্থার জন্য এমন লোককে নিয়োগ করবেন, যে তাকে ইজ্জত-সম্মান করবে। (তিরমিযী)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘ইয়াযীদ ইবনু বায়ান’’ নামের বর্ননাকারী য‘ঈফ। দেখুন- সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ৩০৪।
وَعَنْ
أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَكْرَمَ شَابٌّ شَيْخًا مِنْ أَجْلِ سِنِّهِ إِلَّا قَيَّضَ اللَّهُ لَهُ عِنْد سنه من يُكرمهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৭২-[২৬] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বৃদ্ধ মুসলিমকে ইযযত-সম্মান করা, কুরআন পাঠককে সম্মান করা- যতক্ষণ সে কুরআনের বাক্যের বা অর্থে বাড়াবাড়ি ও বিকৃতিসাধন না করে এবং ন্যায়বিচারক শাসককে সম্মান করা, এ সবকিছুই আল্লাহকে সম্মান করার অংশবিশেষ। (আবূ দাঊদ ও বায়হাক্বী’র ’’শু’আবুল ঈমান’’)[1]
وَعَنْ
أَبِي مُوسَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ إِجْلَالِ الله إكْرامَ ذِي الشَّيبةِ المسلمِ وَحَامِلُ الْقُرْآنِ غَيْرَ الْغَالِي فِيهِ وَلَا الْجَافِي عَنْهُ وَإِكْرَامُ السُّلْطَانِ الْمُقْسِطِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ»
পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৭৩-[২৭] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমদের ঘরের মধ্যে উত্তম ঘর সেটাই, যাতে ইয়াতীম আছে, আর তার সাথে উত্তম আচরণ করা হয় এবং মুসলিমের ঘরের মধ্যে খারাপ ঘর সেটা, যাতে ইয়াতীম আছে, কিন্তু তার সাথে অসদাচরণ করা হয়। (ইবনু মাজাহ)[1]
হাদীসটি ‘‘ইয়াহ্ইয়া ইবনু সুলায়মান’’ নামের বর্ণনাকারী য‘ঈফ। য‘ঈফাহ্ ১৬৩৭।
وَعَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَيْرُ بَيْتٍ فِي الْمُسْلِمِينَ بَيْتٌ فِيهِ يَتِيمٌ يُحْسَنُ إِلَيْهِ وَشَرُّ بَيت فِي المسلمينَ بيتٌ فِي يَتِيم يساء إِلَيْهِ» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৭৪-[২৮] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য কোন ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলাবে, যে চুলের উপর দিয়ে তার হাত বুলাবে, তার প্রতিটি চুলের জন্য একটি করে সাওয়াব লেখা হবে। যে ব্যক্তি কোন বালিকা অথবা ইয়াতীম বালকের সাথে ভালো ব্যবহার করবে, যে তার তত্ত্বাবধানে আছে, আমি এবং সে জান্নাতে এ দু’টোর মতো হবো, যেমনিভাবে এ দু’টো অঙ্গুলি মিলিত হয়ে আছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের দু’ অঙ্গুলি একত্রে মিলালেন। [আহমাদ ও তিরমিযী; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসটি গরীব।][1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘আলী ইবনু ইয়াযীদ’’ নামের বর্ণনাকারী য‘ঈফ। দেখুন- তাহক্বীক মুসনাদে আহমাদ ২২৩৩৮।
بِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ مَسَحَ رَأْسَ يَتِيمٍ لَمْ يمسحه إلالله كَانَ لَهُ بِكُلِّ شَعْرَةٍ تَمُرُّ عَلَيْهَا يَدُهُ حَسَنَاتٌ وَمَنْ أَحْسَنَ إِلَى يَتِيمَةٍ أَوْ يَتِيمٍ عِنْدَهُ كُنْتُ أَنَا وَهُوَ فِي الْجَنَّةِ كَهَاتَيْنِ» وَقرن بِي أُصْبُعَيْهِ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যাঃ (مَنْ مَسَحَ رَأْسَ يَتِيمٍ) ‘যে কোন ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলাবে’; ইয়াতীম হলো পুঃ লিঙ্গ, ইয়াতীমাহ্ হলো স্ত্রী লিঙ্গ। অত্র হাদীসে শুধু ইয়াতীম বলা হয়েছে এর অর্থ এই নয় যে, ইয়াতীমার দিকটি বাদ দেয়া হয়েছে। ইয়াতীমার বিষয়টি আরো বেশী গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত। কারণ মেয়েরা এমনিতেই অবহেলিত জাতি, তারা ইয়াতীম হলে আরো অসহায় হয়ে পরে।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানোর অর্থ হলো তার প্রতি স্নেহশীল হওয়া, তাকে আদর-সোহাগ এবং সমবেদনা জানানো, যাতে সে তার পিতার অভাব খানিকটা হলেও ভুলে যায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৭৫-[২৯] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন ইয়াতীমকে নিজের খাদ্য-পানীয়তে ঠাঁই দেবে, তার জন্য আল্লাহ তা’আলা নিশ্চয় জান্নাত অবধারিত করে দেবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সে এমন কোন পাপ না করে, যা মার্জনা করা হয় না। যে ব্যক্তি তিনটি কন্যা বা তিনটি বোনকে প্রতিপালন করবে, তাদের শিষ্টাচার শেখাবে এবং অনুগ্রহ ও অনুকম্পা প্রদর্শন করবে, যতক্ষণ না আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে পরমুখাপেক্ষিতা হতে মুক্ত করেন, তার জন্য আল্লাহ তা’আলা জান্নাত অবধারিত করেছেন। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর রসূল! দু’ কন্যা বা দু’ বোনের লালন-পালনে কি সাওয়াব হবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ দু’জনের ব্যাপারে একই সাওয়াব মিলবে। যদি কেউ (সাহাবায়ে কিরাম) এক বোন বা কন্যার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেন, তবে তার সম্পর্কেও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাই বলতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা যে ব্যক্তির দু’টো প্রিয় বস্তু নিয়ে গিয়েছেন, তার জন্য জান্নাত অবধারিত রয়েছে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! তার প্রিয় বস্তুদ্বয় কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তার চক্ষুদ্বয়। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘হুসায়ন ইবনু কায়স আবূ আলী আর্ রুহাবী’’ নামের বর্ণনাকারীর উপাধি হান্শ। হাদীস বিশারদগণ তাকে য‘ঈফ বলেছেন। দেখুন- হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৪২৭ পৃঃ।
وَعَنِ ابْنِ
عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ آوَى يَتِيمًا إِلَى طَعَامِهِ وَشَرَابِهِ أَوْجَبَ اللَّهُ لَهُ الْجَنَّةَ أَلْبَتَّةَ إِلَّا أَنْ يَعْمَلَ ذَنْبًا لَا يُغْفَرُ. وَمَنْ عَالَ ثَلَاثَ بَنَاتٍ أَوْ مِثْلَهُنَّ مِنَ الْأَخَوَاتِ فَأَدَّبَهُنَّ وَرَحِمَهُنَّ حَتَّى يُغْنِيَهُنَّ اللَّهُ أَوْجَبَ اللَّهُ لَهُ الْجَنَّةَ» . فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ الله واثنتين؟ قَالَ: «واثنتين» حَتَّى قَالُوا: أَوْ وَاحِدَةً؟ لَقَالَ: وَاحِدَةً «وَمَنْ أَذْهَبَ اللَّهُ بِكَرِيمَتَيْهِ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ» قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا كَرِيمَتَاهُ؟ قَالَ: «عَيْنَاهُ» . رَوَاهُ فِي «شرح السّنة»
ব্যাখ্যাঃ যে মুসলিম কোন ইয়াতীমকে নিজের খাওয়ার সাথী বানাবে আল্লাহ তাকে জান্নাত দিবেন। হ্যাঁ, তবে যদি সে এমন গুনাহ করে থাকে যা ক্ষমার অযোগ্য তাহলে ভিন্ন কথা। এখানে ক্ষমার অযোগ্য পাপ হলো শির্ক। ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটা হলো সৃষ্টির প্রতি জুলুম নির্যাতন চালানো। মিরক্বাত গ্রন্থকার ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ইয়াতীম পালনের দ্বারা মানুষের হক নষ্ট করার পাপ ক্ষমা হবে না। বান্দাদের হক নষ্টের মধ্যে এটাও শামিল যে, কেউ ইয়াতীমের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করবে। মোটকথা হলো যারা ইয়াতীম লালন করবে তাদের আল্লাহর ইচ্ছায় ক্ষমা করে দেয় হবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ৪৯৭৫)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৭৬-[৩০] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার সন্তানকে শিষ্টাচারের একটি কথা শিখানো এক সা’ পরিমাণ খাদ্য দান করার চেয়েও উত্তম। (তিরমিযী)[1]
ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসটি গরীব। এর রাবী ’’নাসিহ’’ হাদীসবিদদের মতে সবল নয়।
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘নাসিহ’’ (ناصح) নামের একজন ব্যক্তি, যে হাদীস বর্ণনায় য‘ঈফ। দেখুন- সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ১৮৮৭।
وَعَنْ جَابِرِ
بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَأَنْ يُؤَدِّبَ الرَّجُلُ وَلَدَهُ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَتَصَدَّقَ بِصَاعٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَنَاصِحٌ الرَّاوِي لَيْسَ عِنْدَ أصحابِ الحَدِيث بِالْقَوِيّ
ব্যাখ্যাঃ لَأَنْ يُؤَدِّبَ الرَّجُلُ وَلَدَهُ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَتَصَدَّقَ بِصَاعٍ ‘কোন ব্যক্তি এক সা' পরিমাণ সাদাকা করবে এর চেয়ে সে তার সন্তানকে আদব শিক্ষা দিবে, এটা উত্তম। ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহিমাহুল্লাহ) এর ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ এখানে একটি আদব বলার কারণ হলো আদব শিক্ষা দেয়ার গুরুত্ব মাহাত্ম্যকে ফুটিয়ে তোলা, সর্বোপরি এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া। কেননা সম্পদ দান এটা ক্ষয় হয়ে গেলেও আদব শিক্ষা দেয়ার বিষয়টি কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে।
‘আল্লামা আল মানবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সন্তানকে আদব শিক্ষা দেয়া সদাকায়ে জারিয়াহ্ তথা চলমান সাওয়াব সংশ্লিষ্ট কাজের অন্তর্ভুক্ত। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৫১)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৭৭-[৩১] আইয়ূব ইবনু মূসা (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর পিতামহ থেকে বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন পিতা তার সন্তানকে শিষ্টাচারের চেয়ে শ্রেয় কোন বস্তু দান করে না। [তিরমিযী, বায়হাক্বী’র ’’শু’আবুল ঈমানে’’ বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমার মতে এটা মুরসাল হাদীস।][1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ দু’টি : ১. ‘আমির ইবনু সলিহ আল খয্যায (الخزاز) য‘ঈফ। ২. মুরসাল- বিস্তারিত দেখুন- সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ১১২১।
وَعَنْ أَيُّوبَ
بْنِ مُوسَى عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا نَحَلَ وَالِدٌ وَلَدَهُ مِنْ نُحْلٍ أَفْضَلَ مِنْ أَدَبٍ حَسَنٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ» وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا عِنْدِي حَدِيث مُرْسل
ব্যাখ্যাঃ مَا نَحَلَ وَالِدٌ وَلَدَهُ مِنْ نُحْلٍ أَفْضَلَ مِنْ أَدَبٍ حَسَنٍ : পিতা কর্তৃক সন্তানকে দেয়া সবচেয়ে বড় উপঢৌকন হলো আদব শিক্ষা দেয়া। নিহায়াহ্ গ্রন্থে এসেছে, النحل অর্থ العطية তথা দান الهبة তথা কোন বিনিময় না চেয়ে নিঃশর্ত ও নিঃস্বার্থ দান, অকৃত্রিম ভালোবাসা।
(أَفْضَلَ مِنْ أَدَبٍ حَسَنٍ) শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়াই উত্তম। আদব শিক্ষা দিতে গিয়ে পিতা তার সন্তানকে ধমক দিতে বা প্রহারও করতে পারে, এগুলোই হচ্ছে আদব শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়ার নিয়ম, কেননা শিষ্টাচার বান্দাকে পূর্ণ বান্দা হতে সহায়তা করে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৫২)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৭৮-[৩২] ’আওফ ইবনু মালিক আশজা’ঈ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ও বিবর্ণ গন্ডদ্বয়বিশিষ্টা মহিলা কিয়ামতের দিন এরূপ হব। ইয়াযীদ ইবনু যুরাই (রহিমাহুল্লাহ) নিজের মধ্যমা ও তর্জনী অঙ্গুলির প্রতি ইঙ্গিত করলেন। আর বিবর্ণ গালবিশিষ্ট মহিলার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে মহিলা নিজের স্বামী হারিয়েছে (মৃত্যু বা ত্বলাকের (তালাক) কারণে), যার জাঁকজমক ও রূপ রয়েছে; কিন্তু ইয়াতীম সন্তানদের লালন-পালনের উদ্দেশে নিজেকে বন্দি করে রেখেছে, তার ইয়াতীম সন্তানের বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে পৃথক হওয়া বা মৃত্যুবরণ পর্যন্ত। (আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘আন্ নুহাস (النهاس) ইবনু কহাম (قهم)’’ নামের বর্ণনাকারী য‘ঈফ। দেখুন- সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ১১২২।
وَعَن عَوْف
بن مَالك الْأَشْجَعِيّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنَا وَامْرَأَةٌ سَفْعَاءُ الْخَدَّيْنِ كَهَاتَيْنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . وَأَوْمَأَ يَزِيدُ بْنُ ذُرَيْعٍ إِلَى الْوُسْطَى وَالسَّبَّابَةِ «امْرَأَةٌ آمَتْ مِنْ زَوْجِهَا ذَاتُ مَنْصِبٍ وجمالٍ حبَستْ نفسهاعلى يتاماها حَتَّى بانوا أوماتوا» رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৭৯-[৩৩] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার একটি কন্যা আছে অথচ সে তাকে জিবন্ত প্রোথিত করেনি, তাকে হেয় প্রতিপন্ন করেনি, তার উপর তার পুত্রদের অগ্রাধিকার দেয়নি, তাকে আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ এর সনদে ‘‘ইবনু জারির’’ নামের একজন বর্ণনাকারী আছে। ইমাম যাহাবী (রহিমাহুল্লাহ) তার ব্যাপারে বলেন, তাকে চেনা যায় না। দেখুন- হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৪২৯ পৃঃ।
وَعَنِ
ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَانَتْ لَهُ أُنْثَى فَلَمْ يَئِدْهَا وَلَمْ يُهِنْهَا وَلَمْ يُؤْثِرْ وَلَدَهُ عَلَيْهَا - يَعْنِي الذُّكُورَ - أَدْخَلَهُ اللَّهُ الْجَنَّةَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (مَنْ كَانَتْ لَهٗ أُنْثٰى) যার নারী সন্তান আছে, নারী সন্তান বলতে নিজের মেয়ে অথবা বোন বুঝানো হয়েছে। (لَمْ يَئِدْهَا) সে তাকে প্রোথিত করল না, প্রোথিত অর্থ (কন্যা সন্তানদেরকে) জিবন্ত কবরস্থ করা। সেকালে ‘আরবরা কন্যাদেরকে জীবিত কবর দেয়ার মতো জঘন্য কর্মে লিপ্ত ছিল। এটাকে ইসলাম চরমভাবে হারাম করেছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫১৩৭)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৮০-[৩৪] আনাস (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির সম্মুখে তার কোন মুসলিম ভাইয়ের পরোক্ষ নিন্দা করা হয়, আর সে তার সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে, অতঃপর সে তার সাহায্য করল, আল্লাহ তা’আলা তাকে ইহকাল ও পরকালে সাহায্য করবেন। আর যদি সাহায্য না করে, অথচ সে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে, আল্লাহ তা’আলা এজন্য তাকে ইহকাল ও পরকালে পাকড়াও করবেন। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘আবান’’ নামের বর্ণনাকারী মাতরূক। দেখুন- হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৪২৯, সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ১৮৮৮।
وَعَنْ أَنَسٍ
عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنِ اغْتِيبَ عِنْدَهُ أَخُوهُ الْمُسْلِمُ وَهُوَ يَقْدِرُ على نصرِه فنصرَه نصرَه اللَّهُ فِي الدِّينَا وَالْآخِرَةِ. فَإِنْ لَمْ يَنْصُرْهُ وَهُوَ يَقْدِرُ عَلَى نَصْرِهِ أَدْرَكَهُ اللَّهُ بِهِ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ» . رَوَاهُ فِي «شرح السّنة»
পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৮১-[৩৫] আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার মাংস খাওয়া থেকে অন্যকে প্রতিহত করবে, আল্লাহ তা’আলার ওপর হক এই যে, তিনি তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেবেন। (বায়হাক্বী’র ’’শু’আবুল ঈমানে’’ বর্ণনা করেছেন।)[1]
وَعَن أسماءَ
بنت يزِيد قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ ذَبَّ عَنْ لَحْمِ أَخِيهِ بِالْمَغِيبَةِ كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ يُعْتِقَهُ مِنَ النَّارِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي «شعب الْإِيمَان»
ব্যাখ্যাঃ (مَنْ ذَبَّ عَنْ لَحْمِ أَخِيهِ) যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের গীবত প্রতিহত করবে সকলের জানা আছে গীবত একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তার মৃত ভাই-এর গোশত ভক্ষণকারী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। অত্র হাদীসে গীবত থেকে পূর্ণভাবে বিরত থাকার প্রতি নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
(كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ) অর্থাৎ আল্লাহর জন্য দায়িত্ব হয়ে যায় তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করা। হতে পারে প্রথম পর্যায়েই তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন অথবা অন্যান্য অপরাধের শাস্তি ভোগ করার পর। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৮২-[৩৬] আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, যে মুসলিম তার অপর মুসলিম ভাইয়ের মান-সম্মান বিনষ্ট করা থেকে অন্যকে বিরত রাখে, আল্লাহ তা’আলার ওপর তার হক এই যে, তিনি কিয়ামতের দিন তার ওপর থেকে জাহান্নামের আগুন বিদূরিত করবেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেনঃ ...وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِيْنَ ’’...আর আমাদের ওপর বিশ্বাসীদের সাহায্য করা কর্তব্য’’- (সূরাহ্ আর্ রূম ৩০ : ৪৭)। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ এর সনদে আছে ‘‘লায়স ও শাহ্র ইবনু হাওশাব’’ নামে দু’জন য‘ঈফ রাবী। দেখুন- হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৪৩০ পৃঃ।
وَعَنْ أَبِي
الدَّرْدَاءِ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَرُدُّ عَنْ عِرْضِ أَخِيهِ إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ يَرُدَّ عَنْهُ نَارَ جَهَنَّمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . ثُمَّ تَلَا هَذِهِ الْآيَةَ: (وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نصر الْمُؤمنِينَ)
رَوَاهُ فِي «شرح السّنة»
ব্যাখ্যাঃ আবূ বকর নাহশালী তিনি কুফার বাসিন্দা ছিলেন, রাবী হিসেবে সত্যবাদী, তবে কেউ কেউ তাকে মুরজিয়া হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
مَنْ رَدَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيهِ যে তার ভাইয়ের ইয্যত রক্ষা করে, অর্থাৎ তার ভাইয়ের কোন দোষত্রুটি গোপন রাখে। অথবা তাকে কেউ অসম্মানিত করতে চাইলে তা প্রতিহত করে।
رَدَّ اللهُ عَنْ وَجْهِهِ النَّارَ আল্লাহ তার চেহারাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন। আল মানবী বলেনঃ এখানে চেহারা বলে শুধু চেহারাই উদ্দেশ্য নয় চেহারাকে বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ হলো চেহারায় ‘আযাবের তীব্রতা অনেক বেশী টের পাওয়া যায় এবং তা লাঞ্ছনা-গঞ্জনার জন্য সর্বাধিক কার্যকরী।
(তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৩১)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৮৩-[৩৭] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে মুসলিম তার কোন মুসলিম ভাইকে এমন সাহায্যস্থল হতে পরিত্যাগ করবে, যেখানে সে অসম্মানিত হচ্ছে অথবা তার ইযযতহানি করা হচ্ছে, আল্লাহ তা’আলা এমন জায়গায় তার সাহায্য পরিত্যাগ করবেন, যেখানে সে নিজেকে সাহায্য করা পছন্দ করবে। আর যে মুসলিম তার কোন মুসলিম ভাইকে এমন স্থানে সাহায্য করবে, যেখানে সে অসম্মানিত হচ্ছে বা তার মানহানি করা হচ্ছে, আল্লাহ তা’আলা এমন স্থানে তাকে সাহায্য করবেন, যেখানে সে নিজেকে সাহায্য করা পছন্দ বা প্রত্যাশা করবে। (আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, ‘‘ইয়াহ্ইয়া ইবনু সুলায়মান ইবনু যায়দ ও ইসমা‘ঈল ইবনু বাশীর’’ নামের দু’ ব্যক্তিই মাজহূল। দেখুন- য‘ঈফাহ্ ৬৮৭১, হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৪৩১ পৃঃ।
وَعَنْ جَابِرٌ
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا مِنِ امْرِئٍ مُسْلِمٍ يَخْذُلُ امْرَأً مُسْلِمًا فِي مَوْضِعٍ يُنْتَهَكُ فِيهِ حُرْمَتُهُ وَيُنْتَقَصُ فِيهِ مِنْ عِرْضِهِ إِلَّا خَذَلَهُ اللَّهُ تَعَالَى فِي مَوْطِنٍ يُحِبُّ فِيهِ نُصْرَتَهُ وَمَا مِنِ امْرِئٍ مُسْلِمٍ يَنْصُرُ مُسْلِمًا فِي مَوْضِعٍ يُنْتَقَصُ فِيهِ عرضه وينتهك فِيهِ حُرْمَتِهِ إِلَّا نَصَرَهُ اللَّهُ فِي مَوْطِنٍ يُحِبُّ فِيهِ نصرته» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (مَا مِنِ امْرِئٍ مُسْلِمٍ يَخْذُلُ) কোন মুসলিম যদি অপর কোন মুসলিমকে লাঞ্ছিত করে তাহলে আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করবেন। হাদীসটির অর্থ হলো যে ব্যক্তি অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের অপমানজনক কিছু করবে আল্লাহও তাকে অপমান করবেন। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৮৪-[৩৮] ’উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের ত্রুটি দেখে, অতঃপর সেটা গোপন করে, তার সাওয়াব তার সমান হবে, যে জীবন্ত প্রোথিত কোন কন্যাকে বাঁচালো। [আহমাদ ও তিরমিযী; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) একে সহীহ হাদীস বলেছেন।][1]
হাদীসটির সানাদ য‘ঈফ হওয়ার কারণে হাদীসটি য‘ঈফ। এর সনদে ‘উকবার মুক্তদাস ‘‘আবুল হায়সাম’’ নামের বর্ণনাকারীকে চেনা যায় না। যেমনটি ইমাম যাহাবী বর্ণনা করেছেন। হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৪৩০ পৃঃ, য‘ঈফাহ্ ১২৬৫।
وَعَنْ
عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ رَأَى عَوْرَةً فَسَتَرَهَا كَانَ كَمَنْ أَحْيَا مؤودة» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ وَصَححهُ
ব্যাখ্যাঃ ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের কোন ত্রুটি দেখবে অথবা অসম্মানজনক কোন কাজ দেখবে আর সেটা সে গোপন করে রাখবে যেন সে তাকে জীবিত করল। অর্থাৎ এ গোপন করে রাখার সাওয়াবটা এত বেশী যেন কাউকে সে জীবিত করার সওয়াব পেয়ে গেল। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা রব্বুল ‘আলামীন বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি একটি আত্মাকে জীবিত করল যেন সে সারা পৃথিবীর মানুষকে জীবিত করল’’- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫ : ৩২)। তবে যদি প্রকাশ করে দেয়াটা উত্তম হয় সেক্ষেত্রে প্রকাশ করে দেয়াটাও জরুরী হয়ে বসতে পারে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৮৫-[৩৯] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা প্রত্যেকেই তোমাদের মুসলিম ভাইয়ের আয়না স্বরূপ। যদি কেউ খারাপ কিছু তার মধ্যে দেখে, সে যেন সেটা তার থেকে দূর করে। (তিরমিযী)[1]
আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) এ হাদীসটি য’ঈফ বলেছেন। তিরমিযী ও আবূ দাঊদ-এর অপর বর্ণনায় আছে যে, মুসলিম মুসলিমের আয়না স্বরূপ। মুসলিম মুসলিমের ভাই। যা তাকে ধ্বংস করবে, এমন বস্তু সে তার থেকে সরিয়ে দেয় এবং তার অনুপস্থিতিতে তার অধিকার সংরক্ষণ করে।)
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘ইয়াহ্ইয়া’’ নামের বর্ণনাকারী মাতরূক। দেখুন- য‘ঈফাহ্ ১৮৮৯, হাদীসটির বাকী অংশটুকু তথা আবূ দাঊদের বর্ণনাটি হাসান। আবূ দাঊদ ৪৯১৮, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৯২৬, সহীহুল জামি‘উস্ সগীর ৬৬৫৬, শু‘আবুল ঈমান ৭৬৪৪, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ২১১৪।
وَعَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَحَدَكُمْ مِرْآةُ أَخِيهِ فَإِنْ رَأَى بِهِ أَذًى فَلْيُمِطْ عَنْهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَضَعَّفَهُ. وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ وَلِأَبِي دَاوُدَ: «الْمُؤْمِنُ مِرْآةُ الْمُؤْمِنِ وَالْمُؤْمِنُ أَخُو الْمُؤْمِنِ يَكُفُّ عَنْهُ ضَيْعَتَهُ وَيَحُوطُهُ مِنْ وَرَائِهِ»
ব্যাখ্যাঃ (الْمُؤْمِنُ مِرْآةُ الْمُؤْمِنِ) ‘‘এক মু’মিন আর এক মু’মিনের জন্য আয়না স্বরূপ’’, কথাটির অর্থ হলো মু’মিন তার অপর ভাইয়ের ভালো-মন্দ উভয় দিকই স্বচক্ষে অবলোকন করে থাকেন। তিনি তার মন্দ বিষয়গুলো লোক সমাজে প্রকাশ না করে শুধরিয়ে দিবেন যেমন আয়নাতে আমরা আমাদের চেহারায় ময়লা লাগলে তা পরিষ্কার করে থাকি। অনেক সময় নিজের দোষ নিজে অনুধাবন করা যায় না; কেউ ধরিয়ে দিলে ঠিকই বুঝতে পারা যায়।
(يَكُفُّ عَنْهُ ضَيْعَتَهٗ) তার পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে তাকে রক্ষা করবে। অর্থাৎ তার সম্পত্তি নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে তাকে সাবধান করবে, হতে পারে মান-সম্ভ্রম ইত্যাদি অর্থাৎ তার মু’মিন ভাই কোন দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিনা এটা তিনি লক্ষ্য করবেন।
(يَحُوطُهٗ مِنْ وَرَائِه) তার চোখের আড়ালে থেকে তাকে সুরক্ষা দিতে স্বচেষ্ট হবে। অর্থাৎ তাকে হিফাযাতের আপ্রাণ চেষ্টায় লিপ্ত থাকবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯১০)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৮৬-[৪০] মু’আয ইবনু আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে মুনাফিকের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তার জন্য এমন একজন মালাক (ফেরেশতা) পাঠাবেন, যে তার দেহ জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে এমন বিষয়ে অপবাদ দেবে, যার দ্বারা সে তাকে কলঙ্কিত করতে চায়, আল্লাহ তা’আলা তাকে জাহান্নামের সেতুর উপর বন্দি করবেন, যতক্ষণ না সে কথিত অপবাদ থেকে বের হয়ে আসে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن معَاذ بن
أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ حَمَى مُؤْمِنًا مِنْ مُنَافِقٍ بَعَثَ اللَّهُ مَلَكًا يَحْمِي لَحْمَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ وَمَنْ رَمَى مُسْلِمًا بِشَيْءٍ يُرِيدُ بِهِ شَيْنَهُ حَبْسَهُ اللَّهُ عَلَى جِسْرِ جَهَنَّمَ حَتَّى يَخْرُجَ مِمَّا قَالَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (مَنْ حَمٰى) যে হিফাযাত করবে।
অত্র হাদীসে মুনাফিকের কথা উল্লেখ হওয়ার কারণ হলো, তারা কারো দোষ-ত্রুটি সামনে বলে না, বরং যার দোষ-ত্রুটি আছে তার কাছে তার ভালো গুণ বলে, আর অপরের কাছে দোষ-ত্রুটি বলে বেড়ায়, অথচ উচিত ছিল যার দোষ তার সামনে বলে দেয়া যাতে সে সংশোধিত হতে পারে।
অত্র হাদীসের শিক্ষা হলো আমরা কারো দোষ দেখলে যার দোষ তাকেই বলবো, আর মুসলিম ভাইকে অপরের অনিষ্টতা হতে রক্ষা করব, এতে পরস্পর সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সাথে জীবন যাপন করতে পারব। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮৭৫)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৮৭-[৪১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার নিকট সে ব্যক্তি উত্তম বন্ধু, যে তার নিজের বন্ধুর কাছে উত্তম এবং আল্লাহ তা’আলার নিকট উত্তম প্রতিবেশী সে ব্যক্তি, যে তার নিজের প্রতিবেশীর কাছে উত্তম। [তিরমিযী ও দারিমী; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসটি হাসান গরীব।][1]
وَعَنْ
عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَيْرُ الْأَصْحَابِ عِنْدَ اللَّهِ خَيْرُهُمْ لِصَاحِبِهِ وَخَيْرُ الْجِيرَانِ عِنْدَ اللَّهِ خَيْرُهُمْ لِجَارِهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ