পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৯০-[৪৪] ’আবদুর রহমান ইবনু আবূ কুরাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ করলেন। সাহাবায়ে কিরাম তাঁর উযূর পানি স্বীয় শরীরে মর্দন করতে লাগলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে বললেনঃ কিসে তোমাদেরকে এ কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করল? সাহাবায়ে কিরাম বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূল-এর ভালোবাসা। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যার আন্তরিক বাসনা যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে ভালোবাসবে অথবা আল্লাহ ও তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ভালোবাসবেন, সে যেন যখন কথা বলে সত্য বলে, যখন তার কাছে গচ্ছিত রাখা হয় সে তা যথারীতি ফেরত দেয় এবং যার প্রতিবেশী আছে, সে প্রতিবেশীর সাথে প্রতিবেশীসুলভ উত্তম আচরণ করে।[1]
عَنْ
عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي قُرَادٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ يَوْمًا فَجَعَلَ أَصْحَابُهُ يَتَمَسَّحُونَ بِوَضُوئِهِ فَقَالَ لَهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا يَحْمِلُكُمْ عَلَى هَذَا؟» قَالُوا: حَبُّ اللَّهِ وَرَسُولِهِ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَرَّهُ أَنْ يحب الله وَرَسُوله أويحبه اللَّهُ وَرَسُولُهُ فَلْيُصَدِّقْ حَدِيثَهُ إِذَا حَدَّثَ وَلْيُؤَدِّ أَمَانَتَهُ إِذَا أُؤْتُمِنَ وَلِيُحْسِنَ جِوَارَ مَنْ جَاوَرَهُ»
পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৯১-[৪৫] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, সে ব্যক্তি পূর্ণ মু’মিন নয়, যে উদরপূর্তি করে খায় অথচ তার পাশেই তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে। [উপরের হাদীস দু’টি ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) ’’শু’আবুল ঈমানে’’ বর্ণনা করেছেন।][1]
وَعَنِ
ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالَّذِي يَشْبَعُ وَجَارُهُ جَائِع إِلَى جنبه» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي «شعب الْإِيمَان»
পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৯২-[৪৬] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল : হে আল্লাহর রসূল! অমুক মহিলা সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে যে, সে বেশি বেশি সালাত আদায় করে, সওম পালন করে এবং দান-দক্ষিণায় খুব প্রসিদ্ধি লাভ করেছে; কিন্তু নিজের মুখ দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে জাহান্নামে যাবে। লোকটি জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর রসূল! অমুক মহিলা, যার সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে যে, সে কম সওম পালন করে, কম দান-দক্ষিণা করে এবং কম সালাত আদায় করে। সে শুধু কয়েক টুকরো পনির আল্লাহর রাস্তায় দান করে; কিন্তু নিজের কথার দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে জান্নাতে যাবে। (আহমাদ ও বায়হাক্বী’র ’’শু’আবুল ঈমানে’’)[1]
وَعَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ فُلَانَةً تُذْكَرُ مِنْ كَثْرَةِ صَلَاتِهَا وَصِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا غَيْرَ أَنَّهَا تُؤْذِي جِيرَانَهَا بِلِسَانِهَا. قَالَ: «هِيَ فِي النَّارِ» . قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ فَإِنَّ فُلَانَةً تُذْكَرُ قِلَّةَ صِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا وَصَلَاتِهَا وَإِنَّهَا تَصَدَّقُ بِالْأَثْوَارِ مِنَ الْأَقِطِ وَلَا تؤذي جِيرَانَهَا. قَالَ: «هِيَ فِي الْجَنَّةِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالْبَيْهَقِيّ فِي «شعب الْإِيمَان»
পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৯৩-[৪৭] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপবিষ্ট কতিপয় সাহাবীর নিকট এসে দাঁড়িয়ে বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে অবহিত করব না তোমাদের মধ্যে কে ভালো লোক এবং কে খারাপ লোক? রাবী বলেনঃ এটা শুনে সাহাবায়ে কিরাম চুপ রইলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি তিনবার বললেন। তখন এক ব্যক্তি বলল : জ্বী হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের ভালো লোকেদেরকে খারাপ লোক থেকে পৃথক করে দেখিয়ে দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের মধ্যে ভালো সে ব্যক্তি, যার ভালো কাজের আশা করা যায় এবং যার মন্দ থেকে নিরাপত্তা আশা করা যায়। আর তোমাদের মধ্যে খারাপ সে ব্যক্তি, যার ভালো কাজের আশা করা যায় না, যার অনিষ্টতা থেকে নিরাপত্তার আশা করা যায় না।[তিরমিযী ও বায়হাক্বী’র ’’শু’আবুল ঈমানে’’; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ।][1]
وَعَنْهُ
قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَفَ عَلَى نَاسٍ جُلُوسٍ فَقَالَ: «أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِخَيْرِكُمْ مِنْ شَرِّكُمْ؟» . قَالَ: فَسَكَتُوا فَقَالَ ذَلِكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ. فَقَالَ رَجُلٌ: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ أَخْبِرْنَا بِخَيْرِنَا مِنْ شَرِّنَا. فَقَالَ: «خَيْرُكُمْ مَنْ يُرْجَى خَيْرُهُ وَيُؤْمَنُ شَرُّهُ وَشَرُّكُمْ مَنْ لَا يُرْجَى خَيْرُهُ وَلَا يُؤْمَنُ شَرُّهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ» وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيث حسن صَحِيح
ব্যাখ্যাঃ (قَالَ: خَيْرُكُمْ مَنْ يُرْجٰى خَيْرُهٗ) তোমাদের মধ্যে উত্তম সে যার কাছ থেকে ভালো আশা করা যায়। সামাজিক জীবনে আমরা সমাজে এমন কিছু মানুষ পাই যাদেরকে সবাই ভালো মানুষ হিসেবে জানেন এবং সর্বদা তাদের নিকট থেকে আমরা ভালো এবং কল্যাণমূলক কাজ পেয়ে থাকি, হাদীসটিতে তাদের কথাই বলা হয়েছে।
(وَيُؤْمَنُ شَرُّهٗ) অন্য এক শ্রেণীর মানুষ রয়েছে, যাদের অনিষ্ট থেকে জনসাধারণ নিরাপদে থাকতে চায়। ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সমাজের সর্বনিকৃষ্ট মানুষের কথা হলো, যাদের কাছ থেকে কোন কল্যাণ আশা করা যায় না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২২৬৩)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৯৪-[৪৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা তোমাদের মধ্যে তোমাদের চরিত্র বণ্টন করেছেন, যেভাবে তোমাদের রিজিক বণ্টন করেছেন। আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তিকে দুনিয়া দান করেন, যাকে প্রিয়জন মনে করেন এবং ঐ ব্যক্তিকেও দান করেন, যাকে প্রিয়জন মনে করেন না। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা যাকে ভালোবেসেছেন, তাকে ছাড়া অন্য কাউকে দীন দান করেন না। অতএব যাকে আল্লাহ তা’আলা দীন দান করেন, তাকে তিনি ভালোবেসেছেন। যার হাতে আমার প্রাণ, সে সত্তার কসম, বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম হতে পারে না, যতক্ষণ না তার অন্তর ও মুখ (রসনা) মুসলিম হবে এবং কোন ব্যক্তি ঐ সময় পর্যন্ত মু’মিন হতে পারে না, যতক্ষণ না তার প্রতিবেশী তার অনিষ্টতা থেকে নিরাপদ হবে।[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘আস্ সববাহ ইবনু মুহাম্মাদ’’ নামে একজন য‘ঈফ রাবী আছে। তাহক্বীক মুসনাদে ৩৬৭২।
وَعَنِ ابْنِ
مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَسَمَ بَيْنَكُمْ أَخْلَاقَكُمْ كَمَا قَسَمَ بَيْنَكُمْ أَرْزَاقَكُمْ إِن الله يُعْطِي الدُّنْيَا مَنْ يُحِبُّ وَمَنْ لَا يُحِبُّ وَلَا يُعْطِي الدِّينَ إِلَّا مَنْ أَحَبَّ فَمَنْ أَعْطَاهُ اللَّهُ الدِّينَ فَقَدْ أَحَبَّهُ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا يُسْلِمُ عَبْدٌ حَتَّى يُسْلِمَ قَلْبُهُ وَلِسَانُهُ وَلَا يُؤْمِنُ حَتَّى يَأْمَنَ جَارُهُ بَوَائِقَهُ»
ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসে মানুষের তাকদীরে যা নির্ধারিত সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘আমি তাদের জীবন উপকরণকে তাদের মাঝে বণ্টন করে দিয়েছি।’’ (সূরাহ্ আয্ যুখরুফ ৪৩ : ৩২)
আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন দুনিয়াবী রিজিক দান করেন যাকে তিনি ভালোবাসেন, যেমন- নবীগণ, ওলী আউলিয়াগণ; যেমন- সুলায়মান (আ.) এবং ‘উসমান (রাঃ)-এর দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা যেতে পারে। আর যাকে তিনি ভালো না বাসেন তাকেও তিনি দুনিয়া দান করেন, যেমন- ফির‘আওন, হামান। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ বলেছেনঃ ‘‘তোমার প্রতিপালকের দান থেকে আমি এদেরকে আর ওদেরকে সকলকেই সাহায্য করে থাকি, তোমার প্রতিপালকের দান তো বন্ধ হওয়ার নয়’’- (সূরাহ্ ইসরা ১৭ : ২০)। তবে আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন যাকে ভালোবাসেন না তাকে কখনো দীনের জ্ঞানের দেন না। আর যাকে আল্লাহ রববুল ‘আলামীন দীন দিয়েছেন তাকে ভালোবেসেছেন। দীনের বিষয়গুলো নিঃসন্দেহে দুনিয়ার চেয়ে উত্তম। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৯৫-[৪৯] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিম প্রেম-প্রীতি ও ভালোবাসার কেন্দ্রস্থল। তার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই, যে ব্যক্তি অন্যকে ভালোবাসে না এবং অন্য মুসলিমও তার প্রতি ভালোবাসার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে না। [হাদীসদ্বয় ইমাম আহমাদ ও বায়হাক্বী’র (রহিমাহুল্লাহ) ’’শু’আবুল ঈমানে’’ বর্ণনা করেছেন।][1]
وَعَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْمُؤْمِنُ مَأْلَفٌ وَلَا خَيْرَ فِيمَنْ لَا يَأْلَفُ وَلَا يُؤْلَفُ» رَوَاهُمَا أَحْمد وَالْبَيْهَقِيّ فِي «شعب الْإِيمَان»
ব্যাখ্যাঃ মু’মিন ভালোবাসার কেন্দ্র, সুতরাং তারা পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসবে, এটা কল্যাণের নিদর্শন। যার মধ্যে কল্যাণ নেই, সেই ভালোবাসা পরিহার করে থাকে। এটাই হচ্ছে কুরআন এবং হাদীসের দা‘ওয়াত এবং আহবান। আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন বলেছেনঃ ‘‘তোমরা সকলে শক্তভাবে সম্মিলিতভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধর এবং বিচ্ছিন্ন হয়ো না আর আল্লাহর পক্ষ থেকে নি‘আমাতের শুকরিয়া আদায় কর। যখন তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু ছিলে, অতঃপর আল্লাহ রববুল ‘আলামীন তোমাদের ভিতরে তোমাদের অন্তরে ভালোবাসা স্থাপন করেছেন। পরক্ষণে তোমরা একে অপরের ভাই হয়ে গেছ আল্লাহর নি‘আমাতের কারণে’’- (সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১০২)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৯৬-[৫০] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার উম্মাতের কারো অভাব পূরণ করল এবং তাকে সন্তুষ্ট করল, তাহলে সে আমাকে সন্তুষ্ট করল। যে ব্যক্তি আমাকে সন্তুষ্ট করল, সে আল্লাহ তা’আলাকে সন্তুষ্ট করল। যে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করল, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।[1]
হাদীসটি জাল হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘ইয়াহইয়া ইবনু যাহদাম’’ অর্থাৎ ইবনু হারিস একজন মিথ্যুক। বিস্তারিত- য‘ঈফাহ্ ৬৮৫৭।
وَعَنْ
أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَضَى لِأَحَدٍ مِنْ أُمَّتِي حَاجَةً يُرِيدُ أَنْ يَسُرَّهُ بِهَا فَقَدْ سَرَّنِي وَمَنْ سَرَّنِي فَقَدْ سَرَّ اللَّهَ وَمَنْ سرَّ الله أدخلهُ الله الْجنَّة»
পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৯৭-[৫১] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন অত্যাচারিত ব্যক্তির ফরিয়াদ শুনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য তিহাত্তরটি মাগফিরাত অবধারিত করবেন। তন্মধ্যে একটি এই যে, এতে তার পার্থিব সকল কাজের সংশোধনের দায়-দায়িত্ব গ্রহণ। আর বাহাত্তরটি হলো, কিয়ামতের দিন তার মর্যাদা বৃদ্ধির উপকরণ দান করা।[1]
হাদীসটি জাল হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘যিয়াদ ইবনু আবী হাস্সান’’ নামে একজন বর্ণনাকারী আছে। যে আনাস থেকে জাল হাদীস তৈরি করত। বিস্তারিত- য‘ঈফাহ্ ৬২১, য‘ঈফুল জামি‘ ৫৪৫৬।
وَعَنْهُ
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَغَاثَ مَلْهُوفًا كَتَبَ اللَّهُ لَهُ ثَلَاثًا وَسَبْعِينَ مَغْفِرَةً وَاحِدَةٌ فِيهَا صَلَاحُ أَمْرِهِ كُلِّهِ وَثِنْتَانِ وَسَبْعُونَ لَهُ دَرَجَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَة»
ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসের তিহাত্তর সংখ্যা নিয়ে ‘উলামায়ে কিরাম বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। কেউ বলেছেন, এখানে তিহাত্তর উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্য হলো বেশী বেশী সাওয়াব দান। এ তিহাত্তরটির প্রথমটি হলো তার দুনিয়ার সব কিছু সুখের হওয়া, আর বাহাত্তরটি ক্বিয়ামাতে দেয়া হবে। এখানে বুঝা যায় যে, একটি রহমতই দুনিয়ার সব পাপ ক্ষমার ও কল্যাণের জন্য যথেষ্ট আর বাকিগুলো সব কিয়ামতের জন্য অবশিষ্ট থাকবে। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ গুনাহ মোচনকারী যত ‘আমল রয়েছে সব যখন একত্রিত হবে তখন একটি ‘আমলের মাধ্যমে সমস্ত সগীরাহ্ গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, আর পরেরগুলো দিয়ে কাবীরাহ্ গুনাহকে হালকা করা হবে। এরপর যতগুলো আসবে সবগুলো অর্থ হবে তার মর্যাদা বৃদ্ধি। ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ)-ও এ কথা বলেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৯৮-[৫২], ৪৯৯৯-[৫৩] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] ও ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সকল সৃষ্টি আল্লাহ তা’আলার পরিবারের সদস্যবিশেষ। সৃষ্টজীবের মধ্যে আল্লাহ তা’আলার কাছে সবচেয়ে প্রিয় সেই, যে তার পরিবার-পরিজনের প্রতি অনুগ্রহ করে। [ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) উপরিউক্ত তিনটি হাদীস শু’আবুল ঈমানে বর্ণনা করেছেন।][1]
হাদীস জাল হওয়ার কারণ, এর সনদে বর্ণিত ‘‘ইউসুফ’’ নামের বর্ণনাকারী মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত। বিস্তারিত- সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ১৯০০।
وَعنهُ وَعَن عبد الله قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْخَلْقُ عِيَالُ اللَّهِ فَأَحَبُّ الْخَلْقِ إِلَى اللَّهِ مَنْ أَحْسَنَ إِلَى عِيَالِهِ» . رَوَى الْبَيْهَقِيُّ الْأَحَادِيثَ الثَّلَاثَةَ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ»
ব্যাখ্যাঃ (الْخَلْقُ عِيَالُ اللهِ) ‘‘সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহ তা‘আলার পরিবারের সদস্যবিশেষ’’ সমগ্র সৃষ্টির রিজিক ও পরিচালনা আল্লাহই করেন। আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত عيال ‘ইয়াল’ শব্দটি অন্য কারো জন্য ব্যবহৃত হলে তা হবে রূপক অর্থজ্ঞাপক। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا অর্থাৎ ‘‘সমগ্র সৃষ্টিজীবের রিজিক আল্লাহর নিকট যিনি জানেন কোথায় তারা বসবাস করবে আর কোথায় মৃত্যুবরণ করবে...।’’ (সূরাহ্ হূদ ১১ : ৬)
(فَأَحَبُّ الْخَلْقِ إِلَى اللهِ مَنْ أَحْسَنَ إِلٰى عِيَالِه) ‘‘আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তি সবচেয়ে প্রিয় যে তার পরিবারের প্রতি বেশী দয়াশীল’’। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, خَيْرُ النَّاسِ أَنْفَعُهُمْ لِلنَّاسِ অর্থাৎ মানুষের মধ্যে সেই সর্বোত্তম যে মানুষের বেশী উপকার করে থাকেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৯৯-[৫৩] দেখুন পূর্বের হাদীস।
وَعنهُ وَعَن عبد الله قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْخَلْقُ عِيَالُ اللَّهِ فَأَحَبُّ الْخَلْقِ إِلَى اللَّهِ مَنْ أَحْسَنَ إِلَى عِيَالِهِ» . رَوَى الْبَيْهَقِيُّ الْأَحَادِيثَ الثَّلَاثَةَ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ»
পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৫০০০-[৫৪] ’উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম আল্লাহ তা’আলার আদালতে যে মামলার বিচার হবে, তা হলো দুই প্রতিবেশীর ঝগড়ার মামলা। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ عُقْبَةَ
بْنِ عَامِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَوَّلُ خَصْمَيْنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ جَارَانِ» . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যাঃ أَوَّلُ خَصْمَيْنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ جَارَانِ ‘‘কিয়ামত দিবসে সর্বপ্রথম প্রতিবেশীদের মধ্যেকার বিবাদের বিচার হবে।’’ ইমাম সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কোন বর্ণনায় এসেছে, أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ صِلَاتُهٗ অর্থাৎ সর্বপ্রথম বান্দার সালাতের হিসাব হবে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, أَوَّلُ مَا بَيْنَ النَّاسِ الدَّمُ অর্থাৎ সর্বপ্রথম মানুষের মাঝে রক্ত তথা হত্যাযজ্ঞের বিচার হবে। উক্ত বর্ণনাগুলো পরস্পর বিপরীতমুখী মনে হলেও আসলে তা নয়, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম হুক্কুল্লাহ তথা বান্দা ও আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মধ্যে সালাতের হিসাব নেয়া হবে। যেহেতু সালাত হচ্ছে হুক্কুল্লাহর মধ্যে সর্বোত্তম ‘ইবাদাত। হুক্কুল ইবাদের ক্ষেত্রে প্রতিবেশীর হক অগ্রণী, তাই সে বিচার আগে হবে। আর বান্দার হকসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম হত্যাকা--র বিচার হবে, কেননা এটা হচ্ছে সর্ববৃহৎ পাপ। অতএব উক্ত বর্ণনাগুলোর মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৫০০১-[৫৫] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বললেনঃ জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিজের কঠিন হৃদয় সম্পর্কে অভিযোগ করল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে প্রতিকার হিসেবে বললেন যে, ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলাও এবং নিঃস্বদেরকে খাদ্য খাওয়াও। (আহমাদ)[1]
وَعَن أبي
هُرَيْرَة أَنَّ رَجُلًا شَكَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَسْوَةَ قَلْبِهِ فَقَالَ: «امْسَحْ رَأْسَ الْيَتِيم وَأطْعم الْمِسْكِين» . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যাঃ মানুষের অন্তর কোন কারণবশতঃ কঠিন হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়, তাই সেই অন্তরকে নরম করতে হলে কিছু কর্মসূচী হাতে নিতে হয়। এ পরিস্থিতিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানোর কথা এবং মিসকীনকে খাদ্যদানের কথা বলেছেন। মহান আল্লাহ বলেনঃ أَوْ إِطْعَامٌ فِي يَوْمٍ ذِي مَسْغَبَةٍ يَتِيمًا ذَا مَقْرَبَةٍ أَوْ مِسْكِينًا ذَا مَتْرَبَةٍ ‘‘দুর্ভিক্ষর দিনে ইয়াতীমকে খাদ্য খাওয়ানো এবং নিকটাত্মীয়কে ও মিসকীনকে খাদ্য খাওয়ানোতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি মেলে।’’ (সূরাহ্ আল বালাদ ৯০ : ১৪-১৬)
অহংকার থেকে বাঁচতে হলে বিনয়ী হতে হবে, কৃপণতা থেকে বাঁচতে হলে উদার হতে হবে, আর অন্তরকে নরম করতে হলে ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলাতে হবে এবং তাদের আদর-স্নেহ দিতে হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৫০০২-[৫৬] সুরাকাহ্ ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাদেরকে উত্তম সাদাকা সম্পর্কে অবহিত করব না? এটা তোমার ঐ কন্যার প্রতি সাদাকা করা, যাকে তোমার দিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে, আর তুমি ছাড়া তার উপার্জনশীল অন্য কেউ নেই। (ইবনু মাজাহ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদের বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত তবে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে আর তা হল- সুরাকাহ্ ও তার আগের বর্ণনাকারী মূসা তার পিতা থেকে। দেখুন- য‘ঈফাহ্ ৪৮২২।
وَعَن
سراقَة بْنِ مَالِكٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى أَفْضَلِ الصَّدَقَةِ؟ ابْنَتُكَ مَرْدُودَةً إِلَيْكَ لَيْسَ لَهَا كَاسِبٌ غَيْرُكَ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ