পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৪৭-[১] জারীর ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করে না, আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করেন না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ
عَن جَرِيرِ بْنِ عَبْدُ اللَّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَرْحَمُ اللَّهُ مَنْ لَا يَرْحَمُ النَّاسَ» . مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ দয়া বা রহমত আল্লাহ তা‘আলাই তার বান্দাদের অন্তকরণে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের মধ্যে দয়াশীলদেরকেই দয়া করেন। ইবনু বাত্ত্বল (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ অধ্যায়ের উদ্দেশ্য হলো রহমত দয়ার বিষয়টিকে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা, এটা আল্লাহ তা‘আলার সত্ত্বাগত গুণাবলীর অন্তর্গত। সুতরাং রহমান হচ্ছে আল্লাহর একটি গুণ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ যাকে দয়া করবেন তাকে তিনি সেই গুণটি দান করবেন এবং তাকে তার দয়ার ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। তিনি আরো বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলার সব নামের মূলকথা একটা নামকে কেন্দ্র করেই, আর সে নামটি হলো ‘‘আল্লাহ’’, যদিও প্রতিটি নামে ভিন্ন ভিন্ন গুণ রয়েছে। ইবনু ত্বীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘‘রহমান এবং রহীম’’ এ দু’টি শব্দ রহমত মূল ধাতু থেকে গৃহীত। কেউ কেউ বলেন, এ দু’টি শব্দ স্বতন্ত্রভাবেই দু’টি নাম।
ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ জামহূর ‘উলামায়ে কিরাম বলেন, ‘‘রহমান’’ নামটি ‘রহমত’ থেকে গৃহীত আরবী ব্যকরণ অনুপাতে মুবালাগাহ্ বা আধিক্যতার অর্থবাচক শব্দ। এর অর্থ এমন দয়া প্রদর্শনকারী যার কোন জুড়ি নেই। এজন্য আরবী ব্যকরণ অনুপাতে এ শব্দের কোন দ্বিবচন ও বহুবচন নেই। ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) আরো বলেনঃ অতএব ‘রহমান’ হলেন এমন নাম যার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা সমগ্র সৃষ্টিজীবকে রহমত করে থাকেন। অপরদিকে ‘‘রহীম’’ অর্থ যে নামের মাধ্যমে আল্লাহ কেবলমাত্র মু’মিনদের দয়া করে থাকেন, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَكَانَ بِالْمُؤْمِنِينَ رَحِيمًا অর্থাৎ ‘‘আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি সর্বদাই দয়াশীল’’- (সূরাহ্ আল আহযাব ৩৩ : ৪৩)। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, ‘রহমান’ ও ‘রহীম’ এ দু’টি নাম অত্যন্ত দয়ার্দ্র নাম, এর একটির চাইতে আরেকটি দ্বারা বেশী দয়ার কথা বুঝায়। (ফাতহুল বারী ১৩শ খন্ড, হাঃ ৭৩৭৬)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৪৮-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন এক বেদুঈন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সমীপে উপস্থিত হয়ে বলল, তোমরা কি শিশুদের চুম্বন করো? আমরা তো শিশুদের চুম্বন করি না। এটা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি আল্লাহ তা’আলা তোমার অন্তর থেকে স্নেহ-মমতা বের করে নেন, তবে আমি কি পারব তা তোমার অন্তরে পুনঃপ্রবেশ করাতে? (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ
وَعَن عائشةَ قَالَتْ: جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: أَتُقَبِّلُونَ الصِّبْيَانَ؟ فَمَا نُقَبِّلُهُمْ. فَقَالَ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «أوَ أملكُ لَكَ أَنْ نَزَعَ اللَّهُ مِنْ قَلْبِكَ الرَّحْمَةَ» . مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসে গ্রাম্য লোকটি হলো আকরা; কেউ বলেছেন, ‘কায়স ইবনু ‘আসিম আত্ তামিমী। এ মর্মে আবুল ফারাজ আল-আসবাহানী একটি হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। যার শব্দ এরূপ :
عن أَبِىْ هريرة أن قيس بن عاصم دخل على النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কায়স ইবনু ‘আসিম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলেন..... এভাবে তৎপরবর্তী ঘটনার বিবরণ দিলেন।
এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিশুদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রমাণ মেলে, সে যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি শিশুদের পেলে আদর করেন আর আমার এতগুলো সন্তান আমার একটুও আদর করতে ইচ্ছে হয় না। তার এহেন অদ্ভূত কথায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার অন্তর থেকে আল্লাহ দয়া ভালোবাসা ছিনিয়ে নিলে আমি তা কিভাবে ফিরিয়ে দিব? ঠিক এমনই একটি ঘটনার কথা জানা যায় ‘উয়াইনার ঘটনায়। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৯৯৮)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৪৯-[৩] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ সিদ্দিকা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈকা মহিলা আমার কাছে এলো। তার সাথে তার দু’ কন্যা ছিল। সে আমার কাছে কিছু ভিক্ষা চাইল। তখন আমার কাছে একটি মাত্র খেজুর ছাড়া কিছুই ছিল না। আমি সেটাই তাকে দিয়ে দিলাম। সে খেজুরটিকে তার দু’ কন্যার মধ্যে ভাগ করে দিলো, তা থেকে নিজে তিনি কিছুই খেলো না। অতঃপর সে উঠে চলে গেল। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করলেন, আমি ঘটনাটি তাঁর কাছে বললাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যে ব্যক্তি এ কন্যাদের দ্বারা পরীক্ষিত হবে এবং সে কন্যাদের সাথে উত্তম আচরণ করবে, তবে এ কন্যারাই তার জন্য জাহান্নামের আগুনের মাঝে অন্তরায় হবে (অর্থাৎ- তাকে জাহান্নামের প্রতিবন্ধক হবে)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ
وَعَنْهَا قَالَتْ: جَاءَتْنِي امْرَأَةٌ وَمَعَهَا ابْنَتَانِ لَهَا تَسْأَلُنِي فَلَمْ تَجِدْ عِنْدِي غَيْرَ تَمْرَةٍ وَاحِدَةٍ فَأَعْطَيْتُهَا إِيَّاهَا فَقَسَمَتْهَا بَيْنَ ابْنَتَيْهَا وَلَمْ تَأْكُلْ مِنْهَا ثُمَّ قَامَتْ فَخَرَجَتْ. فَدَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَدَّثْتُهُ فَقَالَ: «مَنِ ابْتُلِيَ مِنْ هَذِهِ الْبَنَاتِ بِشَيْءٍ فَأَحْسَنَ إِلَيْهِنَّ كُنَّ لَهُ سِتْرًا مِنَ النَّارِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ অপর এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি তাকে তিনটি খেজুর দিলেন। তিনটির ভিতরে তার দুই কন্যাকে একটি একটি করে দিয়ে দিলেন। তৃতীয় খেজুরটি মুখে নিলেন তিনি খাওয়ার জন্য, কিন্তু তার দুই কন্যা ঐ খেজুরটিও খেতে চাইলে তিনি সে ঐ খেজুরটিও ভাগ করে তাদেরকে দিয়ে দিলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, ব্যক্তিকে দু’টি কন্যা দ্বারা পরীক্ষা করা হবে। এখানে পরীক্ষা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তাদের লালন পালনের ব্যয়ভার ইত্যাদি বিষয়গুলো। এখানে অনেকগুলো হাদীসের বর্ণনা এসেছে, যে কন্যা সন্তানের প্রতি ইহসান করবে ভালো ব্যবহার করবে। অপর বর্ণনায় এসেছে, যে দু’টি কন্যা সন্তানকে লালন পালন করবে। উম্মু সালামাহ্-এর হাদীসে, যে ব্যক্তি দু’টি কন্যা অথবা দু’টি বোন অথবা দু’জন নিকটাত্মীয় মেয়ের প্রতি খরচ করবে।
ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীস এসেছে, তাদেরকে সুন্দরভাবে আদব শিখাবে। জাবির -এর হাদীস এসেছে, তাদেরকে আশ্রয় দিবে, তাদের প্রতি রহম করবে, তাদেরকে লালন পালন করবে। ত্ববারী একটু বেশি বর্ণনা করে বলেছেন, তাদেরকে বিবাহ দিবে। ‘আদাবুল মুফরাদ’-এর একটি বর্ণনা আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী থেকে এভাবে এসেছে যে, তাদের ভালো সাথী দিয়ে দিবে এবং তাদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করবে। এগুলো সব হচ্ছে ‘ইহসান’ শব্দের অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে এসেছে, এ সাওয়াব সেও পাবে যে একজন মেয়ের প্রতিও এ রকম ইহসান করবে।
ইবনু বাত্ত্বল (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অত্র হাদীসে গরীব মানুষ কারো কাছে চাইতে পারবে এটার প্রমাণ পাওয়া যায় এবং চাইলে দিতে হবে এটারও প্রমাণ পাওয়া যায়, যেহেতু ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) একটি খেজুর পেয়েছিলেন সে একটি খেজুরই তাকে দান করেছিলেন। আর শিক্ষণীয় যে কম বলে তাকে তুচ্ছ মনে করে দান করা থেকে বিরত থাকা উচিত নয় বরং কম থাকলে কম দিবে বেশি থাকলে বেশি দিবে। এ হাদীস থেকে আরো বুঝা যায় যে, কল্যাণকর কাজ উল্লেখ করা জায়িয যদি সেটা অহংকার বা খোঁটা দেয়া উদ্দেশ্য না হয়ে থাকে। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) ইবনু বাত্ত্বল-এর অনুসারী হয়ে বলেনঃ এখানে কন্যা সন্তানদের লালন পালনের বিষয়টিকে পরীক্ষা শব্দ দ্বারা উল্লেখ্য করার কারণ হলো মানুষ কন্যা সন্তানদের অপছন্দ করেন, তাই এটাকে পরীক্ষা শব্দ দ্বারা উল্লেখ্য করা হয়েছে। কন্যা সন্তানদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাত্মক গুরুত্বারোপ করেছেন এবং তাদের ক্ষেত্রে দায়িত্বকে অবহেলা করা কোনভাবেই উচিত নয়, এটা ইসলামী আইন দ্বারা সাব্যস্ত। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৯৯৫)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৫০-[৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দু’টো কন্যাকে বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করবে, সে ব্যক্তি ও আমি কিয়ামতের দিন এভাবে একত্রিত হব, যেমন এ দু’টো অঙ্গুলি। এ বলে তিনি নিজের দু’টো আঙ্গুল একত্রে মিলালেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتَّى تَبْلُغَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَا وَهُوَ هَكَذَا» وضمَّ أصابعَه. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটি নারী এবং কন্যা শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণ, তাদেরকে লালন পালনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ রক্ষণাবেক্ষণের মানে হচ্ছে তাদের ভরণ-পোষণ, তাদের লালন-পালন ইত্যাদি ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন। "عال" ‘আল’-এর ব্যাখ্যায় ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘আল’ এটা ‘আওন’ থেকে গৃহীত, যার অর্থ হচ্ছে নিকট। কন্যা সন্তানদের লালন পালনের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তারা এবং আমি জান্নাতে খুব কাছাকাছি থাকব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কনিষ্ঠা এবং মধ্যমা অঙ্গুলিকে এক সাথে করে দেখালেন, এ দু’টি আঙ্গুল যেমন পাশাপাশি এ রকম অবস্থানে আমরা থাকব। (শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ ২৬৩১)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৫১-[৫] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিধবা ও নিঃস্বদের জন্য উপার্জনকারী আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গকারীর মতো। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এটাও বলেছেন যে, বিধবা ও নিঃস্বদের জন্য উপার্জনকারী রাতজাগা ’ইবাদাতকারীর মতো, যে অলসতা করে না এবং ঐ সায়িমের (রোযাদারের) মতো যে কক্ষনো সওম ভঙ্গ করে না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «السَّاعِي عَلَى الْأَرْمَلَةِ وَالْمِسْكِينِ كَالسَّاعِي فِي سَبِيلِ اللَّهِ» وَأَحْسَبُهُ قَالَ: «كَالْقَائِمِ لَا يَفْتُرُ وَكَالصَّائِمِ لَا يفْطر» . مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ বিধবা এবং মিসকীনদের লালন পালনের বিষয়ে অত্র হাদীসে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। হাদীসের শব্দ ‘সাঈ’ এর অর্থ হলো উপার্জন, বিধবা মিসকীন এবং ইয়াতীমের ভরণ-পোষণের জন্য উপার্জন। বিধবা হলো যার স্বামী মারা গিয়েছেন। ব্যাখ্যাকারীগণ বলেছেন, স্বামী মারা যাওয়া শর্ত নয়, যে নারীর স্বামী নেই সেই হচ্ছে বিধবা। কেউ বলেছেন, যার স্বামীর সাথে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে সেও বিধবা।
ইবনু কুতায়বাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ ধরনের মহিলাকে হাদীসের ভাষায় বা ‘আরবী ভাষায় আরবেলা বলা হয়। ‘আরবেলা’ শব্দের অর্থ আরমেলা অর্থ হলো দারিদ্র্যতা এবং স্বামী হারানোর কারণে নিজে ভরণ পোষণে সক্ষমতা হারিয়ে কষ্টে জীবন যাপন কর। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬০০৭)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৫২-[৬] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি এবং ইয়াতীমের লালন-পালনকারী, সে ইয়াতীম নিজের হোক বা অন্য কারো হোক জান্নাতে এরূপ হবো, এ কথা বলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলি দ্বারা ইঙ্গিত করলেন। তখন দু’ অঙ্গুলির মধ্যে সামান্য ব্যবধান ছিল। (বুখারী)[1]
بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ
وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ لَهُ وَلِغَيْرِهِ فِي الْجَنَّةِ هَكَذَا» وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى وفرَّجَ بَينهمَا شَيْئا. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসে ইয়াতীমদের প্রতি সদাচারণের কথা বলা হয়েছে। ‘কাফিলুল ইয়াতীম’ শব্দের অর্থ হলো ইয়াতীমের দায়ভার গ্রহণকারী ও তার কল্যাণকারী। নিজের অধীনে থাকা ইয়াতীম হোক বা অপর কারো অধীনে থাকা ইয়াতীম হোক। অধীনে থাকা ইয়াতীম কথাটির অর্থ হলো সে ঐ ইয়াতীমের দাদা অথবা চাচা অথবা বড় ভাই অথবা নিকটাত্মীয়। অথবা এমন হতে পারে যে, সন্তানের পিতা মারা গেলেন আর তার মাতা তার লালন পালনের পুরা দায়িত্ব নিলেন, এগুলো সবই ইয়াতীম পালনের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম বাযযার আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন,
من كفل يتيما ذا قرابة أو لا قرابة له যে কেউ কোন ইয়াতীম লালন পালন করবে, সে তার নিকটাত্মীয় হোক বা না হোক সে উক্ত হাদীসে বর্ণিত সাওয়াব পাবে।
ইবনু বাত্ত্বল (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ইয়াতীমের লালন-পালনের অফুরন্ত সাওয়াবের এ হাদীসটি যার কানে পৌঁছবে সে যেন এর উপর ‘আমল করে যাতে করে সে জান্নাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বন্ধু হতে পারে। আর আখিরাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বন্ধু হওয়া বড়ই সৌভাগ্যের বিষয়। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬০০৫)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৫৩-[৭] নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি ঈমানদারদেরকে তাদের পারস্পরিক সহানুভূতি, বন্ধুত্ব ও দয়ার ক্ষেত্রে একটি দেহের মতো দেখবে। দেহের কোন একটি অঙ্গ যদি ব্যথা পায়, তবে শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এর কারণে জাগরণ ও জ্বরের মাধ্যমে ঐ ব্যথার অংশীদার হয়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ
وَعَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَرَى الْمُؤْمِنِينَ فِي تراحُمِهم وتوادِّهم وتعاطفِهم كمثلِ الجسدِ إِذا اشْتَكَى عضوا تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الْجَسَدِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসে মু’মিনদেরকে পরস্পর পরস্পরের সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে। এ হাদীস এবং তার পূর্ববর্তী কিছু হাদীস মু’মিন মুসলিমদের পরস্পর পরস্পরের উপর দয়াশীল এবং ভালো ও জনকল্যাণমূলক কাজে একে অপরের সহযোগী হতে বলেছে। এ হাদীস থেকে আরো বুঝা যায় কাউকে কোন বিষয় বুঝাতে নিকট অর্থবোধক কোন শব্দ দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন ভালো এতে খুব তাড়াতাড়ি বিষয়টি বুঝে আসে। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬০১১)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৫৪-[৮] উক্ত রাবী [নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সকল মু’মিন এক অখন্ড ব্যক্তির মতো। যদি এদের কোন একজনের চক্ষু ব্যথা হয়, তবে তাদের সর্বাঙ্গ ব্যথিত হয়, আর যদি তার মাথা ব্যথা হয়, তখন তাদের সারা শরীর ব্যথিত হয়। (মুসলিম)[1]
بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمُؤْمِنُونَ كَرَجُلٍ وَاحِدٍ إِنِ اشْتَكَى عَيْنُهُ اشْتَكَى كُلُّهُ وَإِنِ اشْتَكَى رَأْسُهُ اشْتَكَى كُله» . رَوَاهُ مُسلم
পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৫৫-[৯] আবূ মূসা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্য প্রাচীর বা ইমারতের মতো, যার একাংশ অপরাংশকে সুদৃঢ় করে। এটা বলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক হাতের অঙ্গুলি অপর হাতের অঙ্গুলির মধ্যে প্রবেশ করালেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ
وَعَنْ أَبِي مُوسَى عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْمُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا» ثُمَّ شَبكَ بَين أَصَابِعه. مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসে বলা হয়েছে যে, মু’মিনরা একে অপরের সহযোগী। একে অপরের জন্য তারা নিবেদিত প্রাণ। ইবনু বাত্ত্বল (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ মু’মিনরা যে একে অপরের সহযোগী এটা হচ্ছে আখিরাতের কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে। তদ্রূপভাবে দুনিয়ার বৈধ কর্মকাণ্ডেও মু’মিনরা একে অপরের সহযোগী হবে। ‘‘আল্ল-হু ফী আওনিল ‘আবদী মাদামাল ‘আব্দু ফী আওনী আখী’’ অর্থাৎ বান্দার সাহায্যে আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন ততক্ষণ থাকে যতক্ষণ সে অপর ভাইয়ের সহযোগিতা করে। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, ‘‘তোমরা একে অপরের সহযোগী হও সৎ কর্মে আর কল্যাণকর কাজে অপরদিকে অকল্যাণকর কাজ এবং অসৎ কাজে একে অপরের সহযোগিতা কর না।’’ (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬০২৬)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৫৬-[১০] উক্ত [আবূ মূসা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, যখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কোন ভিক্ষুক বা অভাবী লোক আসত, তখন তিনি সাহাবায়ি কিরামকে বলতেন, তোমরা সুপারিশ করো, তাহলে তোমাদের সুপারিশের সাওয়াব দেয়া হবে। আল্লাহ তা’আলা যে আদেশ জারি করতে চান, তা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জবানিতে জারি করেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ
وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ كَانَ إِذَا أَتَاهُ السَّائِلُ أَوْ صَاحِبُ الْحَاجَةِ قَالَ: «اشْفَعُوا فَلْتُؤْجَرُوا وَيَقْضِي اللَّهُ عَلَى لِسَان رَسُوله مَا شَاءَ» . مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীস থেকে বুঝা যায় কোন মুসলিম ভাই যদি বিভিন্ন বৈধ কর্মকাণ্ডের তার সাথীদের সুপারিশের প্রয়োজনবোধ করে থাকেন তাহলে তার জন্য সুপারিশ করা মুস্তাহাব। সে সুপারিশটা বাদশাহর নিকটে হোক অথবা মন্ত্রী অথবা সচিবের কাছে হোক। কোন ভাই যদি কোন প্রকার সুপারিশের দাবি করে, আর যার কাছে দাবি করবে সে যদি ঐ সুপারিশ করার অধিকার বা সক্ষমতা রাখে তাহলে সে সুপারিশ করবে। চাই বাদশাহর জুলুম থেকে পরিত্রাণ পাওয়া অথবা শাস্তি মার্জনা করা অথবা নিঃস্ব মানুষের দান-দখিনা ইত্যাদি বিষয় হোক। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি তার উপরে হাদ্দ ফরয হয়েছে, আর সে সুপারিশ চাচ্ছে যে, আপনি রাষ্ট্রপতির কাছে আমার জন্য একটু সুপারিশ করুন যেন আমার ওপরে তিনি হাদ্দ প্রতিষ্ঠা না করেন। অনুরূপ কোন বাতিল, অবান্তর বিষয়কে লাভ করার জন্য সুপারিশ কামনা করা অথবা অন্যের কোন প্রাপ্যকে বাতিলের জন্য সুপারিশ করা বা চাওয়া সম্পূর্ণভাবে হারাম; এ থেকে বেঁচে থাকা খুবই জরুরী। (শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ ২৬২৭)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৫৭-[১১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অত্যাচারী হোক বা অত্যাচারিত হোক তোমার মুসলিম ভাইকে সাহায্য করো। জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর রসূল! আমি তো অত্যাচারিতকে সাহায্য করব, অত্যাচারীকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাকে অত্যাচার থেকে নিবৃত্ত করো, এটাই অত্যাচারীর প্রতি তোমার সাহায্য। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «انْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُومًا» . فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنْصُرُهُ مَظْلُومًا فَكَيْفَ أَنْصُرُهُ ظَالِمًا؟ قَالَ: «تَمنعهُ من الظُّلم فَذَاك نصرك إِيَّاه» . مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ কেউ যদি জুলুম করে তাহলে যালিমকে কখনো সহযোগিতা করা ঠিক নয়। অন্যভাবে এর অর্থ হলো তাকে বাধা দাও, অর্থাৎ যালিমকে তার জুলুম থেকে নিবৃত্ত কর। অতএব যালিম যেন নিজেও জুলুম থেকে বিরত এবং মাযলূমও তার জুলুম থেকে বাঁচতে পারে। (ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৯৫২)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৫৮-[১২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিম মুসলিমের ভাই। কোন মুসলিম না কোন মুসলিমের ওপর জুলুম করবে, না তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে। যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ভাইয়ের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তা’আলা তার অভাব মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ভাইয়ের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তার দুঃখ-কষ্ট লাঘব করবেন। যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইয়ের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يُسْلِمُهُ وَمَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللَّهُ فِي حَاجَتِهِ وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটি মানবাধিকার রক্ষায় একটি মাইলফলক। হাদীসের প্রথম অংশে যে এক মুসলিমকে আরেক মুসলিম ভাই হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে এটা হলো উখুওয়াতুল ইসলাম বা ইসলামী ভ্রাতৃত্ব। অর্থাৎ এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই। এখানে উল্লেখ্য যে, ভাই কখনো ভাই-এর ওপরে জুলুম করবে না, অর্থাৎ মুসলিম ভাই মুসলিম ভাই-এর উপরে জুলুম করা হারাম।
তাকে কষ্টও দিবে না বরং তাকে সহযোগিতা করবে, সাহায্য করবে এবং তার পক্ষ হয়ে সব ধরনের বিপদাপদে তার সহযোগী হবে। এই সহযোগী হওয়াটা মাঝে মাঝে বাধ্যতামূলক হয়ে যায় মাঝে মাঝে তা কাঙিক্ষত হয়ে থাকে। ইমাম ত্ববারানী সালিম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, একজন মুসলিম আরেকজন মুসলিমকে বিপদগ্রস্ত দেখে চলে যাবে না, বরং তার সহযোগী হবে। ইমাম মুসলিম আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, একজন মুসলিম আরেকজন মুসলিমকে ক্ষুদ্র জ্ঞান করবে না। হাদীসের আরেক অংশ হলো, আল্লাহ রববুল ‘আলামীন তখন বান্দাকে সাহায্য করেন যখন সে তার ভাইকে সাহায্য করে। আর যে কোন মুসলিম ভাই-এর দুনিয়া ও আখিরাতের কোন বিপদে সাহায্য করবে আল্লাহ রববুল ‘আলামীন তাকে সাহায্য করবেন।
অত্র হাদীসে মুসলিম ভাইয়ের দোষ গোপন করতে বলা হয়েছে, এটি একটি শর্তসাপেক্ষ বিষয়; তা যদি প্রকাশ করার চাইতে গোপন করা উত্তম হয়ে থাকে তাহলে গোপন, আর যদি প্রকাশ করা উত্তম হয় তাহলে প্রকাশ করবে। এক্ষেত্রে আমরা দেখি ইমামগণ যে রাবীদের সমালোচনা করেছেন এটা হারাম গীবতের মধ্যে শামিল নয়, কারণ এখানে তার দোষ না বললে সমস্ত মুসলিম এক চরম ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাবে। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ৪৯৫৮)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৫৯-[১৩] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক মুসলিম অপর মুসলিমের (দীনী) ভাই। মুসলিম ব্যক্তি অপর মুসলিমের ওপর অবিচার করবে না, তাকে অপদস্থ করবে না এবং অবজ্ঞা করবে না। আল্লাহভীতি এখানে! এ কথা বলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের বক্ষের দিকে তিনবার ইঙ্গিত করে বললেনঃ একজন মানুষের জন্য এতটুকু অন্যায়ই যথেষ্ট যে, সে নিজের মুসলিম ভাইকে হেয় জ্ঞান করবে। মুসলিমের জন্য অপর মুসলিমের রক্ত, ধন-সম্পদ ও মান-সম্মান হারাম। (মুসলিম)[1]
بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ
وَعَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يَخْذُلُهُ وَلَا يَحْقِرُهُ التَّقْوَى هَهُنَا» . وَيُشِير إِلَى صَدره ثَلَاث مرار بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ: دَمُهُ ومالهُ وَعرضه . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটি মুসলিমদের পরস্পর পরস্পরের প্রতি আচরণ কেমন হবে তার বিবরণ পেশ করেছে। হাদীসের শব্দ (لَا يَخْذُلُهٗ) এর অর্থ তাকে বর্জন করবে না, তুচ্ছ মনে করবে না, লাঞ্ছিত করবে না, অবজ্ঞা করবে না। আরো একটু বিস্তারিত বললে হবে ‘‘কোন মুসলিম কোন যালিমের জুলুম থেকে বাঁচার জন্য অপর কোন মুসলিমের নিকট সহযোগিতার আবেদন জানালে তাকে ঐ অবস্থায় ফেলে রাখবে না বরং যথাসাধ্য তাকে জুলুমের হাত থেকে বাঁচানো এবং তার সহযোগিতায় হাত প্রসারিত করা দায়িত্ব।’’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বুকের দিকে ইশারা করে বললেন, তাকওয়া এখানে, তাকওয়া এখানে, তাকওয়া এখানে।
অন্য হাদীসে এসেছে, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের শরীরের দিকে দেখেন না, দেখেন তোমাদের অন্তরের দিকে। প্রথমটির অর্থ হলো বাহ্যিক ‘আমল দ্বারা তাকওয়া অর্জন হয় না। যতক্ষণ পর্যন্ত অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি না হয়। এ হাদীসটির মৌলিক অর্থ হলো অন্তরের অবস্থায় আল্লাহর নিকট বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কেউ কেউ এ হাদীস দ্বারা দলীল দিয়ে বলেছেন, ‘আক্ল জ্ঞান কলবে থাকে মাথায় নয়। (শারহে মুসলিম ১৬শ খন্ড, হাঃ ২৫৬৪)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৬০-[১৪] ’ইয়ায ইবনু হিমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন প্রকার লোক জান্নাতবাসী। যথা- ১. দেশের শাসক- যিনি সুবিচারক ও দাতা, যাকে ভালো ও সৎ কাজ করার যোগ্যতা দান করা হয়েছে, ২. যিনি সকলের প্রতি অনুগ্রহকারী- নিকটাত্মীয় ও মুসলিমদের প্রতি কোমলপ্রাণ এবং ৩. যিনি নিষিদ্ধ বস্তু এবং ভিক্ষাবৃত্তি থেকে আত্মরক্ষাকারী- সন্তান-সন্ততি সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলার ওপর ভরসাকারী।
পাঁচ প্রকার লোক জাহান্নামবাসী। যথা- ১. দুর্বল জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি,- যে নিজের স্থুল বুদ্ধির কারণে নিজেকে কুকর্ম থেকে ফেরাতে পারে না। আর এ ব্যক্তি তোমাদের অধীনস্থ চাকর-বকরদেরই একজন। সে স্ত্রীও চায় না, হালাল মালেরও পরোয়া করে না। অর্থাৎ- নিজে ব্যভিচারে লিপ্ত থাকার কারণে স্ত্রীর প্রয়োজনবোধ করে না। হারাম মাল উপার্জনেই সন্তুষ্ট। হারাম হোক আর হালাল হোক, তার পেট ভরলেই সে যথেষ্ট মনে করে। ২. এমন খিয়ানাতকারী- যার লালসা গোপন ব্যাপার নয়, তুচ্ছ ব্যাপার হলেও সে অসাধুতা অবলম্বন করে। ৩. সে ব্যক্তি- যে তোমাকে তোমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের মধ্যে ধোঁকায় ফেলার জন্য সকাল-সন্ধ্যা চিন্তামগ্ন থাকে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), ৪. কৃপণ ও মিথ্যাবাদী এবং ৫. দুশ্চরিত্র ও অশ্লীল বাক্যালাপকারীর কথা বর্ণনা করেছেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ
وَعَنْ
عِيَاضِ بْنِ حِمَارٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَهْلُ الْجَنَّةِ ثَلَاثَةٌ: ذُو سُلْطَانٍ مُقْسِطٌ متصدِّقٌ موفق وَرجل رَحِيم رَفِيق الْقلب لكلَّ ذِي قربى وَمُسْلِمٍ وَعَفِيفٌ مُتَعَفِّفٌ ذُو عِيَالٍ. وَأَهْلُ النَّارِ خَمْسَةٌ: الضَّعِيفُ الَّذِي لَا زَبْرَ لَهُ الَّذِينَ هم فِيكُمْ تَبَعٌ لَا يَبْغُونَ أَهْلًا وَلَا مَالًا وَالْخَائِنُ الَّذِي لَا يَخْفَى لَهُ طَمَعٌ وَإِنْ دَقَّ إِلَّا خَانَهُ وَرَجُلٌ لَا يُصْبِحُ وَلَا يُمْسِي إِلَّا وَهُوَ يُخَادِعُكَ عَنْ أَهْلِكَ وَمَالِكَ وَذَكَرَ الْبُخْلَ أَوِ الْكَذِبَ وَالشِّنْظِيرُ الْفَحَّاشُ . رَوَاهُ مُسلم
পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৬১-[১৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে মহান সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত (পরিপূর্ণ) ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না সে নিজের (মুসলিম) ভাইয়ের জন্য সে জিনিস পছন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا يُؤمن أحد حَتَّى يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ لا يؤمن ‘তারা ঈমানদার হতে পারবে না’ যারা ঈমানের দাবী করে অর্থাৎ নিজেদেরকে মু’মিন বলে পরিচয় দেয়। হাফিয ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘তারা ঈমানদার হতে পারবে না।’ এ কথার অর্থ হলো পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না।
لا يبلغ عبد حقيقة الإيمان অর্থাৎ ‘‘কোন মু’মিন ঈমানের হাকীকাতে পৌঁছতে পারবে না’’, এখানে হাকীকাতে ঈমান অর্থ পূর্ণ ঈমান। এর দ্বারা প্রমাণিত যে, ঈমানের অনেক স্তর রয়েছে। হাদীসটিতে বলা হয়েছে মুসলিমের জন্য তাই ভালোবাসতে হবে যা নিজের জন্য ভালোবাসী, সেটা যত প্রকার কল্যাণ আছে সবই, তা পার্থিব হোক অথবা পারলৌকিক হোক। এর মধ্যে থেকে হারাম বিষয়গুলো বাদ যাবে। (ফাতহুল বারী ১ম খন্ড, হাঃ ১৩)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৬২-[১৬] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কসম! সে ঈমানদার হবে না, আল্লাহর কসম! সে ঈমানদার হবে না, আল্লাহর কসম! সে ঈমানদার হবে না। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! কে সে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যার প্রতিবেশী তার অনিষ্টতা থেকে নিরাপদ নয়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَاللَّهِ لَا يُؤْمِنُ وَاللَّهِ لَا يُؤْمِنُ وَاللَّهِ لَا يُؤْمِنُ» . قِيلَ: مَنْ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «الَّذِي لَا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ বর্ণিত হাদীসটিতে প্রতিবেশীর হাকের ব্যাপারে চরম গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন (وَاللهِ لَا يُؤْمِنُ وَاللهِ لَا يُؤْمِنُ) আল্লাহর শপথ সে ঈমানদার হতে পারে না। আল্লাহর শপথ সে ঈমানদার হতে পারে না। যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদে থাকে না, কেননা ঈমানের শর্ত হলো কুরআন মেনে চলা অথচ কুরআনে বলা হয়েছে, وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبٰى وَالْجَارِ الْجُنُبِ অর্থাৎ- ‘‘আত্মীয় ও অনাত্মীয় সকল প্রতিবেশীর প্রতি সদাচারণ কর।’’ (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ৩৬)
তাই যারা প্রতিবেশীর প্রতি সদাচারণে ব্যর্থ তারা প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৬৩-[১৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্টতা থেকে নিরাপদ নয়। (মুসলিম)[1]
بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ
وَعَنْ
أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لَا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসের لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لَا يَأْمَنُ جَارُهٗ بَوَائِقَهٗ এখানে بَوَائِقَ শব্দটি بائقة এর বহুবচন, যার অর্থ غائلة অর্থ কষ্টকর কোন জিনিস। (لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ) ‘জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না’, এর অর্থ দু’টি হতে পারে।
১। যারা মুসলিমদের কষ্ট দেয়া হালাল মনে করে তারা কাফির হয়ে যাবে, আর কাফির মূলতই জান্নাতে যেতে পারবে না।
২। মুসলিমদের কষ্ট দেয় এমন ব্যক্তির শাস্তি হলো সে সফলকাম মুসলিমদের সাথে প্রথম সারিতে জান্নাতে যেতে পারবে না, বরং তাকে অনেক অপেক্ষা করতে হবে। তারপর আল্লাহ তাকে শাস্তি দিলে দিতে পারেন আর মাফ করলে তার ইচ্ছা।
আহলুস্ সুন্নাহ্ ওয়াল জামা‘আতের মতামত যে, যারা কাবীরাহ্ গুনাহ করে অথচ তাওহীদের উপর মারা যায় তারা আল্লাহর ইচ্ছায় থাকবে যদি আল্লাহ চান তাদের শাস্তি দিবেন, আর চাইলে তিনি তাদের মাফ করে জান্নাতে দিবেন, অথবা কিছু শাস্তি দিয়ে জান্নাতে দিবেন। (শারহুন নাবাবী ২য় খন্ড, হাঃ ৪৬)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৬৪-[১৮] ’আয়িশাহ্ ও ইবনু ’উমার (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ জিবরীল (আ.) সর্বদা আমাকে প্রতিবেশীর অধিকার পূর্ণ করার উপদেশ দিতে থাকতেন। এমনকি আমার ধারণা হয়েছিল যে, তিনি প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী ঠিক করে দেবেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ
وَعَنْ عَائِشَةَ وَابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا زَالَ جِبْرِيلُ يُوصِينِي بِالْجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ» . مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ প্রতিবেশীর হক ইসলামে একটি বিরাট স্থান করে নিয়েছে, জিবরীল আমীন (আ.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বার বার প্রতিবেশীর হাকের ব্যাপারে উপদেশ দিচ্ছিলেন। এমনকি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনে করলেন জিবরীল এ কথাও বলবেন প্রতিবেশীকেও যেন উত্তরাধিকারী করা হয়। এখানে উত্তরাধিকারী দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে সম্পত্তির ভাগ দেয়া, যেমনটা নিকটাত্মীয়ের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। আর প্রতিবেশী বলতে সব ধরনের প্রতিবেশী অন্তর্ভুক্ত তারা মুসলিম হতে পারে কাফির হতে পারে। আল্লাহর বান্দা হতে পারে, ফাসিক হতে পারে, নিকটাত্মীয় হতে পারে, দূর সম্পর্কের আত্মীয় হতে পারে, ঘরের নিকটবর্তী হতে পারে এবং দূরেও হতে পারে, প্রতিবেশীর কয়েকটি স্তর রয়েছে একেকটি স্তর অন্য স্তর হতে বেশী উন্নত।
সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হলো মুসলিম প্রতিবেশী, তার পরে যিনি বেশী ইসলামের বিধি বিধান মানেন, তারপরে যারা যতটুকু ইসলামের বিধান মানেন সেই অনুপাতে তাদের স্তর বিন্যাস করা হবে। ইয়াহূদীদের সাথেও প্রতিবেশীর সম্পর্ক স্থাপন হতে পারে। ত্ববারানী বর্ণনা করেছেন প্রতিবেশী তিন শ্রেণীর। একজন হলো যার হক রয়েছে অথচ সে মুশরিক, তার শুধু প্রতিবেশীর হক রয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রতিবেশী হলো যার দু’টি হক রয়েছে, তিনি হলেন মুসলিম, তার দু’টি হক হলো একটি প্রতিবেশীর হক আরেকটি ইসলামের হক। আরেক ধরনের প্রতিবেশী হলো, যার তিনটি হক রয়েছে একটি হলো ইসলামের হক, আরেকটি প্রতিবেশীর হক, আরেকটি আত্মীয়ের হক।
ইমাম কুরতুবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘প্রতিবেশী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয় যারা আশেপাশে রয়েছে, আর বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে বাড়ির বা ঘরের লোককেই প্রতিবেশী বলা হয়ে থাকে। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১০৪)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৬৫-[১৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা তিন ব্যক্তি একত্রে থাকবে, তোমাদের দু’জনে পরস্পর অপরজনকে বাদ দিয়ে কানে কানে কথা বলবে না যতক্ষণ না তোমরা জনতার সাথে মিশে যাও। এটা এজন্য যে, এতে অপর ব্যক্তি মনঃক্ষুণ্ণ হবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا كُنْتُمْ ثَلَاثَةً فَلَا يَتَنَاجَى اثْنَانِ دُونَ الْآخَرِ حَتَّى تَخْتَلِطُوا بِالنَّاسِ مِنْ أَجْلِ أَن يحزنهُ» . مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ তিনজন ব্যক্তি এক সাথে থাকলে তার ভিতর থেকে দু’জন একজনকে বাদ দিয়ে কোন গোপন পরামর্শ করবে না। إِذَا كَانُوا أَرْبَعَة যদি তারা চারজন থাকেন। তাহলে কোন অসুবিধা নেই। ইবনু উমার (রাঃ)-এর একটি ‘আমল এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। যখন তিনি কোন ব্যক্তির সাথে গোপন পরামর্শ করতে চাইতেন আর তারা যদি তিনজন থাকত তখন চতুর্থ আরেকজনকে ডেকে নিয়ে আসতেন। তারপর দু’জনকে লক্ষ্য করে বলতেন, তোমরা দু’জন বিশ্রাম নাও, আমি একটু কথা বলি। তাহলে এখানে দেখা যাচ্ছে যে, চারজন হলে অসুবিধা নেই। ইবনু বাত্ত্বল (রহিমাহুল্লাহ) মালিক থেকে বর্ণনা করেছেন, এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন একজনকে বাদ দিয়ে আলাপ করবে এটা নিষিদ্ধ, তাতে সে জামা‘আতের সংখ্যা তিন হোক চার হোক বা ততোধিক হোক। এতে তাদের ভিতরে বিদ্বেষ সৃষ্টি বা সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার কারণ ঘটে যেতে পারে। ইবনু বাত্ত্বল (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কোন জামা‘আত থেকে একজনকে বাদ দিয়ে আলাপচারিতা করবে না।
ইমাম কুরতুবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এক জামা‘আত যদি আরেক জামা‘আতকে বাদ দিয়ে কথাবার্তা বলে সেটা জায়িয হবে কিনা- এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। ইবনু তীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস ফাতিমার ঘটনায় প্রমাণ করে এটা জায়িয আছে। আল্লাহই ভালো জানেন। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬২৯০)
পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৬৬-[২০] তামীম আদ্ দারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার বললেনঃ দীন হলো সহমর্মিতা বা কল্যাণ কামনা। আমরা জিজ্ঞেস করলামঃ কার জন্য সহমর্মিতা? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তা’আলার জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রসূল-এর জন্য, মুসলিমদের নেতার জন্য এবং সর্বসাধারণ মুসলিমের জন্য। (মুসলিম)[1]
بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ
وَعَن
تَمِيم الدَّارِيّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الدِّينُ النَّصِيحَةُ» ثَلَاثًا. قُلْنَا: لِمَنْ؟ قَالَ: «لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যাঃ ইমাম আবূ সুলায়মান আল খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেনঃ ‘নাসীহাত’ শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক আরবী শব্দ, এর অর্থ হচ্ছে যার জন্য উপদেশ দেয়া হবে তার জন্য সর্বময় কল্যাণ কামনা করা। আরবী ভাষাতে এমন কোন শব্দ নেই যে, শব্দটি একক শব্দ হওয়া সত্ত্বেও এত বেশী অর্থবোধক হয়ে থাকে। আল্লাহর জন্য নাসীহাতের অর্থ হলো তার প্রতি ঈমান নিয়ে আসা। তার সাথে অংশীদার স্থাপন না করা এবং তার গুণাগুণে বিকৃত সাধন না করা। আর আল্লাহ রববুল ‘আলামীনকে সকল প্রকার অসম্পূর্ণতা থেকে মুক্ত ঘোষণা করা। তার অনুগত হওয়া, অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা। তার কারণেই কাউকে ভালোবাসা, তার কারণে কারও সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিন্ন করা। (শারহুন নাবাবী ২য় খন্ড, হাঃ ৫৫)