পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০০১-[১৭] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আমাকে সমস্ত নবীগণের ওপর শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী করেছেন অথবা বলেন, আমার উম্মাতকে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী করেছেন অন্য সকল উম্মাতের ওপরে এবং আমাদের জন্য গনীমাতের মাল হালাল করেছেন। (তিরমিযী)[1]
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ اللَّهَ فَضَّلَنِي عَلَى الْأَنْبِيَاءِ أَوْ قَالَ: فَضَّلَ أُمَّتِي عَلَى الْأُمَمِ وأحلَّ لنا الْغَنَائِم . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সকল নাবী ও রসূলের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব মর্যাদা দান করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আদম (আঃ) এবং তাঁর পরে যত নাবী ও রসূল রয়েছেন কিয়ামতের দিন তারা সকলেই আমার পতাকাতলে সমবেত হবেন।’’ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজা খুলবেন।
রাবী বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয় তো এ কথাও বলেছেন, আমার উম্মাতকে সকল উম্মাতের ওপর মর্যাদা দেয়া হয়েছে। সেটা এভাবে যে, আল্লাহর বাণী: ‘‘তোমরাই হলো শ্রেষ্ঠ উম্মাত’’- (সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১১০)। কেউ কেউ বলেছেন, এ উম্মাতের শ্রেষ্ঠত্ব (মুহাম্মাদ) শ্রেষ্ঠ রসূলের কারণে।
পূর্বে কোনো জাতির জন্য গনীমাতের মাল ভক্ষণ করা বৈধ ছিল না। উম্মাতে মুহাম্মাদীর জন্য এটা হালাল করা হয়েছে, এটা এ উম্মাতের বিশেষত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে হয়েছে।
পূর্বের এক হাদীসে উল্লেখ হয়েছে, আমাদের দুর্বলতা এবং অক্ষমতার কারণেই আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য গনীমাতের মাল বৈধ করে দিয়েছেন। উভয় হাদীসের দ্বন্দ্ব সমাধানে বলা হয়েছে, উম্মাতের শ্রেষ্ঠত্ব এবং বিশেষত্ব তাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতার কারণেই, সুতরাং এ শ্রেষ্ঠত্বের কারণে গনীমাতের মালও গ্রহণ তার জন্য বৈধ করা হয়েছে। অতএব দুই বর্ণনায় কোনো বিরোধ নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৫৫৩)
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০০২-[১৮] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিন তথা হুনায়ন-এর যুদ্ধের দিন ঘোষণা করেন, যে কেউ কোনো কাফিরকে হত্যা করবে সে নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সমস্ত মালের অধিকারী হবে। (বর্ণনাকারী বলেন) আবূ ত্বলহাহ্ সেদিন একাই বিশজন কাফিরকে হত্যা করেছেন এবং তিনি তাদের সমস্ত মাল-সামানের অধিকারী হয়েছেন বা তাদের সমস্ত মাল গ্রহণ করেছেন। (দারিমী)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم: يَوْمئِذٍ يَوْمَ حُنَيْنٍ: «مَنْ قَتَلَ كَافِرًا فَلَهُ سَلَبُهُ» فَقَتَلَ أَبُو طَلْحَةَ يَوْمَئِذٍ عِشْرِينَ رَجُلًا وَأَخَذَ أسلابهم. رَوَاهُ الدَّارمِيّ
ব্যাখ্যা: আবূ ত্বলহাহ্ হলো আনাস (রাঃ)-এর মা উম্মু সুলায়ম-এর স্বামী। তিনি হুনায়নের যুদ্ধে বিশজন কাফিরকে হত্যা করেছিলেন, ফলে তিনি বিশজনের পরিত্যক্ত সম্পদই পেয়েছিলেন। এটা তার গনীমাতের অংশ ছাড়াই অর্জিত হয়েছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭১৫)
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০০৩-[১৯] ’আওফ ইবনু মালিক আল আশজা’ঈ ও খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেনঃ হত্যাকৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সমস্ত মালের অধিকারী হবে হত্যাকারী মুজাহিদ এবং উক্ত মাল-সামান হতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক-পঞ্চমাংশ বের করেননি। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيِّ وَخَالِدِ بْنِ الْوَلِيدِ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَضَى فِي السَّلَبِ لِلْقَاتِلِ. وَلَمْ يُخَمِّسِ السَلَب. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: যুদ্ধে শত্রুপক্ষ থেকে অর্জিত সম্পদই গনীমাত। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘোষণা ‘‘নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ হত্যাকারী পাবে’’ মোতাবেক তিনি কোনো নিহত ব্যক্তির সম্পদকে (হত্যাকারীর হাতে সমর্পণ না করে) সাধারণ গনীমাতের মালের অন্তর্ভুক্ত করেননি, আর তা পঞ্চম অংশে ভাগ না করে সর্বসাকূল্য হত্যাকারীকে দিয়ে দিয়েছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭১৮)
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০০৪-[২০] ’আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বদরের যুদ্ধের দিন আবূ জাহাল-এর তরবারি পুরস্কার স্বরূপ দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনিই (ইবনু মাস্’ঊদ) আবূ জাহাল-কে হত্যা করেছেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: نَفَّلَنِي رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ بَدْرٍ سَيْفَ أَبِي جَهْلٍ وَكَانَ قَتَلَهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: গনীমাতের সুনির্ধারিত অংশ ছাড়াই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ জাহাল-এর তরবারিখানা ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ -কে প্রদান করেন। এটা তাকে দেন নফল বা অতিরিক্ত হিসেবে। বদরের যুদ্ধে দুই আনসারী ছেলে মা‘আয ও মু‘আওয়ায আবূ জাহিলকে আঘাত করে অশ্বপৃষ্ঠ থেকে ভূপাতিত করেন, অতঃপর ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ তার শিরোচ্ছেদ করেন। বিস্তারিত বিবরণ ৪০২৮ নং হাদীসে দেখুন। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭১৯)
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০০৫-[২১] আবুল লাহম-এর আযাদকৃত গোলাম ’উমায়র (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার মুনীবের সাথে খায়বার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমার মালিকগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আমার ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করে অনুমতি নিয়েছেন এবং আমি যে গোলাম এটাও তাঁকে জানিয়েছেন। অতঃপর আমাকে মুজাহিদদের সঙ্গে থাকার নির্দেশ দিলেন। পরে আমাকে আমার তরবারি ঝুলিয়ে দেয়া হলো। কিন্তু আমার (শারীরিক গঠন খাটো হওয়ার কারণে) তরবারি হিঁচড়ে টেনে চলতাম। তিনি আমাকে ঘরের (তৈজসপত্র জাতীয়) কিছু মাল দেয়ার হুকুম করলেন। বর্ণনাকারী (’উমায়র ) বলেন, আমি ঝাড়-ফুঁকের মাধ্যমে কিছু চিকিৎসা করতাম এবং তা দ্বারা পাগল-মাতালের ঝাড়-ফুঁক করতাম। সুতরাং আমি ঝাড়-ফুঁকের সেই মন্ত্রগুলো (দু’আগুলো) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পড়ে শুনালে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার কিছু বাদ দেয়ার আর কিয়দংশ পাঠের অনুমতি দিয়েছেন। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ; অবশ্য আবূ দাঊদে [বর্ণনা শেষ হয়েছে الْمَتَاعِ] শব্দের নিকট] সেখানে ’মন্ত্রের’ কথাটি উল্লেখ নেই। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عُمَيْرٍ مَوْلَى آبِي اللَّحْمِ قَالَ: شَهِدْتُ خَيْبَر مَعَ ساداتي فَكَلَّمُوا فِي رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَلَّمُوهُ أَنِّي مَمْلُوكٌ فَأَمَرَنِي فَقُلِّدْتُ سَيْفًا فَإِذَا أَنَا أَجُرُّهُ فَأَمَرَ لِي بِشَيْءٍ مِنْ خُرْثِيِّ الْمَتَاعِ وَعَرَضْتُ عَلَيْهِ رُقْيَةً كَنْتُ أَرْقِي بِهَا الْمَجَانِينَ فَأَمَرَنِي بِطَرْحِ بَعْضِهَا وَحَبْسِ بَعْضِهَا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ إِلَّا أَنَّ رِوَايَتَهُ انتهتْ عِنْد قَوْله: الْمَتَاع
ব্যাখ্যা: কৃতদাস বা গোলাম যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করলে তার জন্য গনীমাতের নির্ধারিত হিস্যা বা অংশ নেই, তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কিছু দিতেন। আবূ লাহম-এর গোলাম ‘উমায়র-কেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের যুদ্ধলব্ধ মাল থেকে কিছু দিয়েছেন।
কুরআন-হাদীসের বাক্য দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করা বৈধ। কুরআন ও সহীহ হাদীসের বাইরে বিকৃত অর্থ অথবা দুর্বোধ্য বাক্য দ্বারা ঝাড় ফুঁক করা বৈধ নয়।
‘উমায়র কিছু বাক্য দ্বারা জিনে ধরা পাগলকে ঝাড়-ফুঁক করে চিকিৎসা করতেন। ঐ বাক্যগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পেশ করলে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপত্তিকর শব্দ বা বাক্যাংশ বাদ দিতে বলেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭২৭; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৫৫৭)
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০০৬-[২২] মুজাম্মা’ ইবনু জারিয়াহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার সন্ধিতে যেসব সাহাবী উপস্থিত ছিলেন, খায়বার যুদ্ধের মালে গনীমাত তাদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ১৮ (আঠারো) ভাগে বণ্টন করেন। সৈন্য সংখ্যা ছিল পনেরশ’। তন্মধ্যে অশ্বারোহী ছিলেন তিনশত’। অতএব অশ্বারোহীদেরকে দু’ভাগে এবং পদাতিকগণকে একভাগ হিসেবে প্রদান করেন। (আবূ দাঊদ)[1]
ইমাম আবূ দাঊদ বলেনঃ ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ)-এর এ হাদীসটি অধিক গ্রহণযোগ্য। এ হাদীস বর্ণনাকারী ভুলক্রমে অশ্বারোহী সৈন্যের সংখ্যা তিনশ’ বলেছেন, অথচ তারা ছিলেন মাত্র দু’শ।
وَعَن محمع بن جاريةَ قَالَ: قُسِمَتْ خَيْبَرُ عَلَى أَهْلِ الْحُدَيْبِيَةِ فَقَسَمَهَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَمَانِيَةَ عَشَرَ سَهْمًا وَكَانَ الْجَيْشُ أَلْفًا وَخَمْسَمِائَةٍ فِيهِمْ ثَلَاثُمِائَةِ فَارِسٍ فَأُعْطِيَ الْفَارِسُ سَهْمَيْنِ وَالرَّاجِلُ سَهْمًا رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَقَالَ: حَدِيثُ ابْنِ عُمَرَ أصح فَالْعَمَل عَلَيْهِ وَأَتَى الْوَهْمُ فِي حَدِيثِ مُجَمِّعٍ أَنَّهُ قَالَ: أَنَّهُ قَالَ: ثَلَاثُمِائَةِ فَارِسٍ وَإِنَّمَا كَانُوا مِائَتَيْ فَارس
ব্যাখ্যা: প্রথম অনুচ্ছেদে উল্লেখিত বুখারী-মুসলিমের সহীহ হাদীস ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার থেকে বর্ণিত হয়েছে (হাদীস নং ৩৯৮৭) অত্র হাদীসের খেলাফ। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) ও হানাফীগণ ছাড়া সকলেই উক্ত সহীহ হাদীসের পক্ষে ঘোড় সওয়ারদের জন্য তিন ভাগ এবং পদাতিকদের এক ভাগ বা এক অংশ বলে মনে করেন।
মুজাম্মা‘ বিন জারিয়াহ্ কর্তৃক বর্ণিত অত্র হাদীসটি আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) ও তার অনুসারীদের পক্ষে প্রামাণ্য দলীল। কিন্তু হাদীসটি দুর্বল। ইমাম আবূ দাঊদ হাদীসটি বর্ণনা করে নিজেই বলেছেন, ‘‘ইবনু উমার-এর হাদীসটি অধিক সহীহ, আর অধিকাংশ ইমামের ‘আমলও তদনুযায়ী। পক্ষান্তরে মুজাম্মা‘-এর বর্ণিত হাদীসটির মধ্যে ভুল আছে, কেননা তিনি বলেছেন, অশ্বারোহী সৈন্য ছিলেন তিনশত, অথচ তারা ছিলেন মাত্র দুইশত। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭৩৩)
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০০৭-[২৩] হাবীব ইবনু মাসলামাহ্ আল ফিহরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কোনো এক যুদ্ধে উপস্থিত ছিলাম। যারা যাওয়ার পথে যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়েছে, তাদেরকে গনীমাতের এক-চতুর্থাংশ এবং যারা ফেরার পথে যুদ্ধ করে, তাদেরকে এক-তৃতীয়াংশ নফল স্বরূপ প্রদান করেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن حبيب بن مسلَمةَ الفِهْريِّ قَالَ شَهِدْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نفل الرّبع فِي البدأة وَالثلث فِي الرجمة. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনুল মালিক (রহঃ) বলেনঃ মুজাহিদরা অভিযানে বের হওয়ার পরে যদি কোনো অগ্রদলে মূলদল পৌঁছার আগেই শত্রু বাহিনীর মুখোমুখি হয়ে পড়ে এবং যুদ্ধে বিজয়ী হয় তাহলে তাদের জন্য গনীমাতের এক-চতুর্থাংশ রয়েছে (নফল বা অতিরিক্ত হিসেবে)। আর অন্য সকল সৈন্যের জন্য রয়েছে চার ভাগের তিন ভাগ, যাতে তারাও সাধারণ সৈনিক হিসেবে অংশ পাবে। আর যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে মূল সৈন্য দলের কোনো ক্ষুদ্র অংশ যদি শত্রুর মোকাবিলা করে বিজয় অর্জন করে তাহলে তারা গনীমাতের সাধারণ অংশের সাথে সাথে অতিরিক্ত কষ্টের কারণে অতিরিক্ত এক-তৃতীয়াংশ লাভ করবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, ৫২৫ পৃঃ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭৪৬)
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০০৮-[২৪] উক্ত রাবী [হাবীব ইবনু মাসলামাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধলব্ধ মালের এক-পঞ্চমাংশ বের করার পর অবশিষ্ট এক-চতুর্থাংশ এবং যুদ্ধ হতে ফেরার সময় এক-পঞ্চমাংশ বের করার পর এক-তৃতীয়াংশ নফল স্বরূপ প্রদান করেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُنَفِّلُ الرُّبُعَ بَعْدَ الْخُمُسِ وَالثُّلُثَ بَعْدَ الْخُمُسِ إِذَا قَفَلَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি পূর্বের হাদীসটির ব্যাখ্যা স্বরূপ, অর্থাৎ পূর্বদল ও পশ্চাৎদল যারা মূলবাহিনী ছাড়াই যুদ্ধে বিজয়ী হবে তারা গনীমাতের পঞ্চমাংশতের সাধারণ অংশের সাথে সাথে অতিরিক্ত হিসেবে আরো এক-চতুর্থাংশ এবং এক-তৃতীয়াংশ লাভ করবে। ইবনুল মালিকও এমনটিই বলেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, ৫২৫ পৃঃ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭৪৬)
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০০৯-[২৫] আবুল জুওয়াইরিয়্যাহ্ আল জারমী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর শাসনামলে রোমকদের সাথে যুদ্ধে স্বর্ণমুদ্রা ভর্তি লালবর্ণের একটি কলস লাভ করি। তখন আমাদের সেনাপতি ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের একজন বানী সুলায়ম গোত্রীয় মা’ন ইবনু ইয়াযীদ। অতএব আমি উক্ত মুদ্রার কলসটি তাঁর নিকট নিয়ে এলাম। তখন তিনি উক্ত মুদ্রাগুলো সমস্ত মুসলিমদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন এবং তাদের প্রত্যেককে যে পরিমাণ দিলেন আমাকেও সে পরিমাণই দিলেন। অতঃপর বললেনঃ আমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এমনটি বলতে না শুনতাম যে, ’’খুমুস (এক-পঞ্চমাংশ) বের করার পরই নফল দিতে হয়, তবে আমি তোমাকে তা হতে অবশ্যই নফল স্বরূপ দিতাম’’। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي الْجُوَيْرِيَّةِ الْجَرْمِيِّ قَالَ: أَصَبْتُ بِأَرْضِ الرُّومِ جَرَّةً حَمْرَاءَ فِيهَا دَنَانِيرُ فِي إِمْرَةِ مُعَاوِيَةَ وَعَلَيْنَا رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَنِي سُلَيْمٍ يُقَالُ لَهُ: مَعْنُ بْنُ يَزِيدَ فَأَتَيْتُهُ بِهَا فَقَسَمَهَا بَيْنَ الْمُسْلِمِينَ وَأَعْطَانِي مِنْهَا مِثْلَ مَا أَعْطَى رَجُلًا مِنْهُمْ ثُمَّ قَالَ: لَوْلَا أَنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا نَفَلَ إِلَّا بَعْدَ الْخُمُسِ» لَأَعْطَيْتُكَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে মা‘ন ইবনু ইয়াযীদ আবূ জুওয়াইরিয়্যাহ্ আল্ জারমী-কে অন্য সকলের মতো অংশ দিয়েছেন। যদিও তিনি এককভাবে উক্ত কলস পেয়েছেন। মা‘ন ইবনু ইয়াযীদ বণ্টনের পর বললেন যে, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি ‘‘এক-পঞ্চমাংশতের পর নফল বা অতিরিক্ত হিসেবে দেয়া হয়’’ তথা- তিনি বুঝাতে চাইলেন নফল বা অতিরিক্ত পঞ্চমাংশত থেকে হয়ে থাকে, তন্মধ্যে চারটি অংশ যোদ্ধাদের মাঝে যথানিয়মে বণ্টিত হয়। আর বাকী এক অংশ থেকে ইমাম বা রাষ্ট্রপ্রধান চাইলে অতিরিক্তি হিসেবে কাউকে দিতে পারেন। আর তা হয়ে থাকে যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ। তবে যে সম্পদ ফাই হিসেবে অর্জিত হয় তাতে কোনো নফল থাকে না। তাই তো মা‘ন ইবনু ইয়াযীদ আবূ জুয়াইরিয়্যাহ্-কে ফাই হিসেবে অর্জিত সম্পদ সকলের মতো অংশ দিয়েছেন, অতিরিক্ত কিছুই দেননি।
আর আমাদের কতিপয় ব্যাখ্যাকার বলেন যে, হাদীসের বর্ণনাকারী মনে করেন, পাঁচ ভাগ করার পরে এক পঞ্চমাংশত থেকে নফল বা অতিরিক্ত হিসেবে দেয়া হয়ে থাকে। আর তা ইমামের ইখতিয়ারে থাকে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭৫০)
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০১০-[২৬] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খায়বার জয় করেছেন, তখন আমরা (হাবশাহ্ হতে) আগমন করেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খায়বারের গনীমাত হতে আমাদেরকেও দিয়েছেন। অথবা (আবূ মূসা ) বলেছেনঃ উক্ত গনীমাত হতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকেও দিয়েছেন। তবে যারা খায়বার যুদ্ধে উপস্থিত ছিল না আমাদের ব্যতীত এমন আর কাউকেও গনীমাত হতে অংশ দেননি। অবশ্য যারা যুদ্ধের সময় তাঁর সাথে অংশগ্রহণ করেছিল শুধু তাদেরকে দিয়েছেন। এছাড়া অনুপস্থিতদের মধ্যে যারা আমাদের নৌকায় ছিলেন, অর্থাৎ- জা’ফার ইবনু আবূ ত্বালিব এবং তাঁর সহযোদ্ধা মুজাহিদদের সাথে গনীমাতের অংশ প্রদান করেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن أبي مُوسَى الأشعريِّ قَالَ: قَدِمْنَا فَوَافَقْنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ افْتَتَحَ خَيْبَرَ فَأَسْهَمَ لَنَا أَوْ قَالَ: فَأَعْطَانَا مِنْهَا وَمَا قَسَمَ لِأَحَدٍ غَابَ عَنْ فَتْحِ خَيْبَرَ مِنْهَا شَيْئًا إِلَّا لمَنْ شهِدَ معَه إِلَّا أَصْحَابَ سَفِينَتِنَا جَعْفَرًا وَأَصْحَابَهُ أَسْهَمَ لَهُمْ مَعَهم. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: খায়বার বিজয়ে যারা অংশগ্রহণ করেননি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের গনীমাতের অংশ প্রদান করেননি। তবে হাবাশাহ্ হিজরত থেকে সদ্য ফেরা দলটিকে অংশ প্রদান করা হয়েছিল। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন জা‘ফার ইবনু আবূ ত্বালিব, বর্ণনাকারী আবূ মূসা আল আশ্‘আরীও তাদের একজন ছিলেন। তারা নৌকা যোগে লোহিত সাগর পারি দিয়ে মদীনায় পৌঁছলেন। এদেরকে আসহাবুস্ সাফীনাহ্ বলা হয়। তারা যখন ফিরে আসেন তখনই খায়বার বিজয় হচ্ছিল, কিন্তু যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সুযোগ তাদের হয়নি। তথাপি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী যোদ্ধাদের সাথে তাদেরও গনীমাতের অংশ প্রদান করেন।
মক্কায় কাফিরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কতিপয় মুসলিম আল্লাহর রসূলের অনুমতিক্রমে আফ্রিকা মহাদেশের হাবাশায় হিজরত করেন। এদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নির্দেশক্রমে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন এবং একটি ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়া পত্তন করেন। দীর্ঘদিন নির্বাসন জীবনের পর হাবাশায় হিজরতকারী দলটি যখন ইসলামের শৌর্যবীর্যের এবং একের পর এক বিজয়ের খবর পেলেন তখন তারা মদীনায় ফিরে এলেন। ঘটনাক্রমে এই সময়েই খায়বার বিজয় চলছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের আগমনে ভীষণ খুশী হয়ে পড়েন এবং (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে) খায়বার বিজয়ে অংশগ্রহণকারীদের সাথে তাদেরকেও গনীমাতের অংশ প্রদান করেন।
কাযী ‘ইয়ায (রহঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের গনীমাতের অংশ দেন এজন্য যে, তারা গনীমাতের উপর পূর্ণ কর্তৃত্ব অর্জনের পূর্বেই সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। এটা ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর একটি মতও বটে। তিনি বলেন, কেউ যদি যুদ্ধ শেষে গনীমাত বণ্টনের পূর্বে শরীক হয় তাহলে সেও গনীমাতের অংশ পাবে। ইবনু ত্বীন (রহঃ) বলেছেন, যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সৈন্যদের অনুমতিক্রমেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের গনীমাত প্রদান করেছিলেন। ‘আল্লামা খত্ত্বাবী-এর মত হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিজের জন্য নির্ধারিত এক-পঞ্চমাংশত থেকে তাদের দিয়েছিলেন।
এটাও সম্ভব যে, সর্বসাকুল্য গনীমাত থেকে বণ্টন ছাড়াই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কিছু দিয়েছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড হাঃ ২৭২২)
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০১১-[২৭] ইয়াযীদ ইবনু খালিদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জনৈক সাহাবী খায়বারের যুদ্ধের দিন মৃত্যুবরণ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তোমাদের সহযোদ্ধার জানাযা আদায় করে নাও। এ নির্দেশ শুনে উপস্থিত লোকজনের মুখমণ্ডল বিবর্ণ আকার ধারণ করল। এমতাবস্থায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের এ সঙ্গী আল্লাহর পথে (গনীমাতের মাল) খিয়ানাত করেছে। (বর্ণনাকারী বলেন) অতঃপর আমরা তার আসবাবপত্র তল্লাশি করলাম, তখন তাতে ইয়াহূদীদের একটি হার পেলাম, যার মূল্য দুই দিরহামের মূল্যমানও ছিল না। (মালিক, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
وَعَنْ يَزِيدَ بْنِ خَالِدٍ: أَنِّ رَجُلًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُوُفِّيَ يَوْمَ خَيْبَرَ فَذَكَرُوا لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «صَلُّوا عَلَى صَاحِبِكُمْ» فَتَغَيَّرَتْ وُجُوهُ النَّاسِ لِذَلِكَ فَقَالَ: «إِنَّ صَاحِبَكُمْ غَلَّ فِي سَبِيلِ اللَّهِ» فَفَتَّشْنَا مَتَاعَهُ فَوَجَدْنَا خَرَزًا مِنْ خَرَزِ يَهُودَ لَا يُسَاوِي دِرْهَمَيْنِ. رَوَاهُ مَالك وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসে বর্ণিত মৃত ব্যক্তির নাম সঠিকভাবে জানা যায়নি। তার মৃত্যু সংবাদ যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানানো হলো তখন তিনি উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে তার জানাযার সালাত আদায়ের জন্য নির্দেশ করলেন, নিজে জানাযা আদায় করলেন না। মূল কারণ না জেনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অস্বীকৃতিতে সাহাবীগণ ভীত হয়ে গেলো, ফলে তাদের চেহারা বিবর্ণ হয়ে উঠলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মানসিক অবস্থা উপলদ্ধি করতে পেরে বললেন, তোমাদের এ সাথী তো আল্লাহর রাস্তায় গনীমাতের মাল খিয়ানাত করেছে।
এই খিয়ানাতের কারণে তার জানাযার সালাত আদায় করতে আল্লাহর রসূল বিরত হয়েছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭০৭)
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০১২-[২৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই গনীমাতের মাল লাভ করতেন তখন বিলাল (রাঃ)-কে সকলের উদ্দেশে ঘোষণা করার জন্য নির্দেশ করতেন, আর লোকেরা তাদের স্ব-স্ব গনীমাত নিয়ে জমা করতো। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সমস্ত মাল হতে (বায়তুল মালের) এক-পঞ্চমাংশ বের করতেন এবং অবশিষ্টগুলো লোকেদের মধ্যে বণ্টন করে দিতেন। একদিন এক ব্যক্তি খুমুস (এক-পঞ্চমাংশ) বের করার এবং সমস্ত মাল বণ্টন করে দেয়ার পর পশমের একটি লাগাম নিয়ে এসে বললঃ হে আল্লাহর রসূল! এটাও কি গনীমাতের মাল বলে বিবেচ্য হবে, যা আমি পেয়েছিলাম। তার কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ বিলাল যে ইতোঃপূর্বে তিনবার ঘোষণা করেছিল, তখন এটা আনলে না কেন? সে বিভিন্ন (দুর্বল) ওযর পেশ করল। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যাও! তুমি এটা নিয়ে যাও, কিয়ামতের দিন এ রশি নিয়েই তুমি উপস্থিত হবে। আমি তোমার নিকট হতে এটা গ্রহণ করব না। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن عبدِ الله بنِ عَمْروٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَصَابَ غَنِيمَةً أَمَرَ بِلَالًا فَنَادَى فِي النَّاسِ فَيَجِيئُونَ بِغَنَائِمِهِمْ فَيُخَمِّسُهُ وَيُقَسِّمُهُ فَجَاءَ رَجُلٌ يَوْمًا بَعْدَ ذَلِكَ بِزِمَامٍ مِنْ شَعَرٍ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذَا فِيمَا كُنَّا أَصَبْنَاهُ مِنَ الْغَنِيمَةِ قَالَ: «أَسْمَعْتَ بِلَالًا نَادَى ثَلَاثًا؟» قَالَ: نَعَمْ قَالَ: «فَمَا مَنَعَكَ أَنْ تَجِيءَ بِهِ؟» فَاعْتَذَرَ قَالَ: «كُنْ أَنْتَ تَجِيءُ بِهِ يومَ القيامةِ فلنْ أقبلَه عَنْك» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: লোকটি বিলম্বে গনীমাতের সম্পদ জমা দিতে আসলে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গ্রহণ করলেন না, এর কারণ হলো তার নিকটের ঐ বস্তুটি সমগ্র মুজাহিদের অর্জিত গনীমাতের একটি অংশ এবং ওটাতে রয়েছে তাদের সকলের অংশ ওটা ছাড়াই সমগ্র গনীমাতের মাল বণ্টন হয়ে গেছে, এখন ঐ একটি বস্তু কিভাবে বণ্টন করবেন? তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এখন ওটা তোমার হাতেই থাক, কিয়ামতের দিন তুমি নিজে ওর জওয়াবদিহী করবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; আফ্লাতুল কায়সার অনূদিত মিশকাত ৮ম খন্ড, ১০১ পৃঃ)
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০১৩-[২৯] ’আমর ইবনু শু’আয়ব তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবূ বকর ও ’উমার (রাঃ) গনীমাতে খিয়ানাতকারীর সমস্ত মাল জ্বালিয়ে দেন এবং তাকে প্রহার করেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ حَرَّقُوا مَتَاعَ الْغَالِّ وضربوه. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: কারো মালের মধ্যে খিয়ানাতের মাল পাওয়া গেলে ইমাম সমীচীন মনে করলে তার খিয়ানাতের মাল জ্বালিয়ে দিতে পারেন। অবশ্যই এটা বিশেষ অবস্থায়।
কতিপয় আহলে ‘ইলম তথা বিদ্বান যেমন হাসান বাসরী (রহঃ) এ মত পোষণ করেছেন যে, তার সম্পদ জ্বালিয়ে দেয়া হবে। তবে যদি ঐ খিয়ানাতের সম্পদের মধ্যে জীব-জন্তু অথবা কুরআনের নুসখা থাকে তাহলে তা জ্বালানো যাবে না। আহমাদ, ইসহক প্রমুখ ইমাম ও ফাকীহ বলেন, কোনো সম্পদই পোড়ানো যাবে না; কেননা এগুলো গনীমাতের মাল, যাতে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সৈনিকদের অংশ রয়েছে। তাদের অংশ তাদের হাতে ফেরত দেয়া উচিত। সে যদি ওটা নষ্ট করে তবে জরিমানা দিতে হবে। তবে ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ এবং আবূ হানীফাহ্-এর সাথীদের মত হলো এ হাদীস ধমকি ও শাসনমূলক, ওয়াজিব হিসেবে নয়।
ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস ছাড়া এতদসম্পর্কীয় অন্য হাদীস এসেছে, যেখানে জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ নেই। শারহেস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থে রয়েছে, মাতানের দিক থেকে অর্থাৎ মূল বক্তব্যে হাদীসটি গরীব।
হাফিয শামসুদ্দীন ইবনুল কইয়িম (রহঃ) বলেন, এ হাদীসের ইল্লাত বা ত্রুটি হলো এটি যুহায়র ইবনু মুহাম্মাদ ‘আমর ইবনু শু‘আয়ব থেকে বর্ণনা করেছেন; এ যুহায়র হলো য‘ঈফ। ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) বলেন, যুহায়র মাজহূল বা অপরিচিত ব্যক্তি। সুতরাং হাদীসটি সানাদের দিক থেকেও য‘ঈফ। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭১২)
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০১৪-[৩০] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি খিয়ানাতকারীর বিষয়াদি গোপন করে, সেও তার অনুরূপ (অপরাধী)। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ يَكْتُمُ غَالًّا فَإِنَّهُ مِثْلُهُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: রাষ্ট্রীয় সম্পদ কাউকে খিয়ানাত করতে দেখলে তার উচিত আমীর কিংবা ইমাম বা দায়িত্বশীলদের নিকট প্রকাশ করা। যদি তা না করে তবে পাপের ক্ষেত্রে সেও খিয়ানাতকারীর অংশীদার হবে। ‘আল্লামা মুনযিরী এ হাদীসের উপর নিরবতা অবলম্বন করেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭১৩)
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০১৫-[৩১] আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমাতের মাল বণ্টনের পূর্বে কেনা-বেচা করতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَن شري الْمغنم حَتَّى تقسم. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: কাযী ‘ইয়ায (রহঃ) বলেনঃ গনীমাতের মাল বণ্টনের আগে বিক্রয় নিষেধ, এর কারণ হলো ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য মালিকানা সত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে হয়, গনীমাতের সম্পদ বণ্টনের আগে যেহেতু মালিকানাই প্রতিষ্ঠিত হয় না, সুতরাং তা কিভাবে বিক্রয় শুদ্ধ হবে? ইবনুল মালিক (রহঃ) বলেন, এমনকি কেউ যদি গনীমাতের বণ্টনের আগে তার অংশ বিক্রয় করে তবু- ঐ ক্রয় বিক্রয় শুদ্ধ হবে না। কেননা বণ্টনের পূর্ব পর্যন্ত তার অংশ মাজহূল বা অজ্ঞাত থাকে। অজ্ঞাত বস্তুর ক্রয়-বিক্রয়ও শুদ্ধ হয় না। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৫৬৩)
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০১৬-[৩২] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গনীমাতের মাল বণ্টনের পূর্বে (কিয়দংশও) বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। (দারিমী)[1]
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: نَهْيٌ أَنْ تُبَاعَ السِّهَامُ حَتَّى تُقْسَمَ. رَوَاهُ الدَّارمِيّ
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০১৭-[৩৩] খাওলাহ্ বিনতু কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ অবশ্যই এ (যুদ্ধলব্ধ) মাল দুনিয়াতে মোহনীয় ও আকর্ষণীয়। তবে যে ব্যক্তি তা ন্যায়সঙ্গতভাবে অর্জন করে তাতে তার বরকত হয়। আবার এমন অনেক লোকও আছে, যে আল্লাহ ও তাঁর রসূল-এর সম্পদের যথোপযুক্ত ব্যবহার করে না তথা খিয়ানাত করে, তার জন্য কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই। (তিরমিযী)[1]
وَعَن خولةَ بنتِ قيسٍ: قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ هَذِهِ الْمَالَ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ فَمَنْ أَصَابَهُ بِحَقِّهِ بُورِكَ لَهُ فِيهِ وَرُبَّ متخوض فَمَا شَاءَتْ بِهِ نَفْسُهُ مِنْ مَالِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ لَيْسَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَّا النَّارُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: দুনিয়ার মাল-ধনকে সুমিষ্ট, শ্যামল, চাক-চিক্যময় বস্তুর সাথে তুলনা করা হয়েছে। সবুজ-শ্যামল বস্তু মানুষের কাছে আকর্ষণীয় ও লোভনীয় হয় ঠিক তদ্রূপ দুনিয়ার মাল-সম্পদও লোভনীয় বস্তু। মিষ্টি যেমন মানুষের কাছে লোভনীয় সুস্বাদু, দুনিয়ার সম্পদও তাই। ‘আরবেরা নি‘আমাতসমূহকে সবুজ বস্তু বলে থাকে। অথবা এটা দ্রুত হাত থেকে চলে যাওয়ার কারণে একে خَضِرَةٌ ‘সবুজ’ বলা হয়েছে। কষ্টক্লেশে সৎ পথে তা উপার্জন করলে আল্লাহ তাতে বরকত দান করেন। পক্ষান্তরে অন্যায়ভাবে উপার্জন করলে (যেমন গনীমাতের সম্পদ যথেচ্ছা গ্রহণ) ও তা ব্যয় করলে বা তসরূপ করলে কিয়ামতের দিন তার পরিণতি হবে জাহান্নামের আগুন। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৩৭৪)
ইমাম গাযালী (রহঃ) বলেনঃ দুনিয়ার সম্পদ হলো ঐ স্বর্গের ন্যায় যার মুখে রয়েছে বিষাক্ত জৈব-লালা এবং উপকারী প্রতিষেধক লালা। একজন সচেতন ব্যক্তি তার অনিষ্টতা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে এবং তাকে এড়িয়ে চলবে, আর ওটাতে যে উপকারী প্রতিষেধক রয়েছে তা কিভাবে সংগ্রহ করা যায় সেটা জানবে। পক্ষান্তরে একজন নির্বোধ ব্যক্তি তার ক্ষতির মুখোমুখিই হবে শুধু।
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০১৮-[৩৪] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদর যুদ্ধের দিন যুলফাকার নামক তরবারি নিজের জন্য গনীমাত হতে নফল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। (আহমাদ, ইবনু মাজাহ্)[1]
ইমাম তিরমিযী অতিরিক্ত এটাও বর্ণনা করেছেন যে, এটা হলো সেই তরবারি যা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উহুদ যুদ্ধের দিন স্বপ্নে দেখেছেন।
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَنَفَّلَ سيفَه ذَا الفَقارِ يومَ بدْرٍ رَوَاهُ أَحْمد وَابْن مَاجَهْ وَزَادَ التِّرْمِذِيُّ وَهُوَ الَّذِي رَأَى فِيهِ الرُّؤْيَا يَوْم أحد
ব্যাখ্যা: (ذُوْا الْفَقَارِ) যুলফাকার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরবারির নাম। ذُوْ অর্থ : বিশিষ্ট, অধিকারী, فَقَارِ মেরুদণ্ড। মেরুদণ্ড যেমন ছোট ছোট জোড়া হাড়ের দ্বারা গঠিত হয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঐ তরবারিখানা মেরুদণ্ডের হাড়ের ন্যায় জোড়া চিহ্ন বিশিষ্ট ছিল। এর জন্য তার নাম রাখা হয়েছিল ‘যুলফাকার।’ বাংলা কবিতায় তাকে যুলফাকারও বলা হয়েছে।
কথিত আছে, এটা ‘আস ইবনু মুনাবিবহ্-এর তরবারি ছিল, সে বদর যুদ্ধে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসে কাফির অবস্থায় ‘আলীর হাতে নিহত হয়, অতঃপর তার ঐ তরবারিখানা গনীমাতের মাল হিসেবে জমা হয় এবং নফল হিসেবে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এক সময় এটা ‘আলী -এর হাতে তুলে দেন। ‘আলী এই তরবারি নিয়ে উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং এর পূর্ণ হক আদায় করেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বপ্নের ঘটনা যা আহমাদ, হায়সামী প্রমুখ বর্ণনা করেছেন তা সহীহ নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৫৬১)
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০১৯-[৩৫] রুওয়াইফি’ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন মুসলিমদের গনীমাতে প্রাপ্ত সওয়ারীর উপরে আরোহণ না করে, এমনকি আরোহণ করে একেবারে দুর্বল ও অচল করে, পরে তা ফেরত দেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন মুসলিমদের গনীমাতের মাল থেকে পোশাক পরিধান না করে, এমনকি পোশাক পরে একেবারে পুরাতন ও জীর্ণ করে, পরে তা ফেরত দেয়। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن رويفع بْنِ ثَابِتٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يَرْكَبْ دَابَّةً مِنْ فَيْءِ الْمُسْلِمِينَ حَتَّى إِذَا أَعْجَفَهَا رَدَّهَا فِيهِ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يَلْبَسْ ثَوْبًا مِنْ فَيْءِ الْمُسلمين حَتَّى إِذا أخلقه ردهَا فِيهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: এখানে الْفَيْء দ্বারা গনীমাত উদ্দেশ্য। আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসে বিশ্বাসী মু’মিনের জন্য বৈধ নয় যে, সে প্রয়োজন ছাড়া গনীমাতের সম্পদ কোনো উট অথবা ঘোড়া নিয়ে নিবে, আর তাতে আরোহণ করে করে দুর্বল কৃশকায় করে ফেলবে, অতঃপর ফেরত দিবে। অনুরূপ গনীমাতের সম্পদ থেকে কোনো পরিধেয় বস্ত্র নিয়ে পরিধান করে তা পুরাতন করে ফেরতও দিবে না। মানবিক প্রয়োজনে এগুলো ব্যবহারের দরকার হলে তবে তা বিধিমত ব্যবহার করবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, ৫৩৩ পৃঃ)
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০২০-[৩৬] মুহাম্মাদ ইবনু আবুল মুজালিদ (রহঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে আপনারা কি খাদ্যজাত দ্রব্যের এক-পঞ্চমাংশ বায়তুল মালে (সরকারী কোষাগারে) জমা করতেন? তারা বললেনঃ খায়বার যুদ্ধে আমরা খাদ্যদ্রব্য লাভ করি, অতঃপর লোকেরা এসে যার যার প্রয়োজন অনুপাতে নিয়ে যেত। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي الْمُجَالِدِ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى قَالَ: قُلْتُ: هَلْ كُنْتُمْ تُخَمِّسُونَ الطَّعَامَ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: أَصَبْنَا طَعَامًا يَوْمَ خَيْبَرَ فَكَانَ الرَّجُلُ يَجِيءُ فَيَأْخُذُ مِنْهُ مقدارَ مَا يكفيهِ ثمَّ ينْصَرف. وَرَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের ব্যাখ্যা সামনে আসছে। নিজের খাদ্য চাহিদা বা ক্ষুধা মিটানো পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করা বৈধ।