পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকার্য এবং সাক্ষ্যদান
৩৭৬৯-[১২] ’আমর ইবনু শু’আয়ব তাঁর পিতা হতে, তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাক্ষ্য-প্রমাণ বাদীকেই পেশ করতে হবে। আর বিবাদীর ওপর বর্তাবে কসম। (তিরমিযী)[1]
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْبَيِّنَةُ عَلَى الْمُدَّعِي وَالْيَمِينُ عَلَى الْمُدَّعَى عَلَيْهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসটিতে বলা হয়েছে, মামলা বাদী-বিবাদী যদি কোনো একটি জিনিসের দাবীদার হয় তাহলে বাদীর দলীল পেশ করতে হবে তার স্বপক্ষে আর বিবাদী তার স্বপক্ষে কসম করবে, তবে কসামার ক্ষেত্র ব্যতীত। কসামাহ্ হলো কোনো গ্রামের আঙ্গিনায় যদি একটি লাশ পাওয়া যায় কিন্তু হত্যাকারী শনাক্ত হয়নি তাহলে ঐ গ্রামের বাসিন্দারাই আসামী হবে এবং তারা তাদের পক্ষে ৫০টি কসম খাবে তাদের নির্দোষ প্রমাণের উদ্দেশে, এ ধরনের বিচার পদ্ধতিকে কসামাহ্ বলে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকার্য এবং সাক্ষ্যদান
৩৭৭০-[১৩] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন দু’ ব্যক্তি উত্তরাধিকার সম্পর্কীয় ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়ে সাক্ষী ব্যতীত শুধু প্রাপ্যের দাবী নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসেছিল।এমতাবস্থায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমি যদি তোমাদের কাউকে তার ভাইয়ের হক (তোমাদের একজনের মিথ্যার বলার দরুন) প্রদান করি, তখন আমার সে ফায়সালা দোষী ব্যক্তির জন্য হবে জাহান্নামের একখন্ড আগুন। এ কথা শুনে তারা উভয়েই বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার অংশটি আমার সঙ্গীকে দিয়ে দিন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না; বরং তোমরা উভয়ে (সমানভাবে) ভাগ-বণ্টন করে নাও। আর ভাগ-বণ্টনের মধ্যে হক পন্থা অবলম্বন করবে এবং পরস্পরের মধ্যে লটারী করে নিবে। অতঃপর তোমরা একে অপরকে ঐ অংশ থেকে ক্ষমা করে দিবে।
অপর এক বর্ণনাতে আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদের মাঝে এ ফায়সালা স্বীয় জ্ঞান-বুদ্ধির দ্বারা করছি। এ ব্যাপারে আমার নিকট কোনো ওয়াহী অবতীর্ণ হয়নি। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فِي رَجُلَيْنِ اخْتَصَمَا إِلَيْهِ فِي مَوَارِيثَ لَمْ تَكُنْ لَهُمَا بَيِّنَةٌ إِلَّا دَعْوَاهُمَا فَقَالَ: «مَنْ قَضَيْتُ لَهُ بِشَيْءٍ مِنْ حَقِّ أَخِيهِ فَإِنَّمَا أَقْطَعُ لَهُ قِطْعَةً مِنَ النَّارِ» . فَقَالَ الرَّجُلَانِ: كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ حَقِّي هَذَا لِصَاحِبِي فَقَالَ: «لَا وَلَكِنِ اذْهَبَا فَاقْتَسِمَا وَتَوَخَّيَا الْحَقَّ ثُمَّ اسْتَهِمَا ثُمَّ لْيُحَلِّلْ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْكُمَا صَاحِبَهُ» . وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ: «إِنَّمَا أَقْضِي بَيْنَكُمَا برأيي فِيمَا لم يُنزَلْ عليَّ فِيهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে কুক্ষিগত করার উপর অত্যন্ত নরম ভাষায় কড়া হুশিয়ারী দেয়া হয়েছে।
হাদীস থেকে শিক্ষা:
(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েব তথা অদৃশ্যের জ্ঞান রাখতেন না। যদি রাখতেন তাহলে তিনি তা দিয়েই ফায়সালা করতে পারতেন।
(২) অন্যের হক মেরে খাওয়া চরম ঘৃণ্যতম কাজ যা পরিহার ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই।
(৩) বিচারপতি বাহ্যিক সাক্ষী আচার-অনুষ্ঠান থেকেই ফায়সালা করবেন। ভিতরকার খবরাখবর সে জানতে পারে না এবং তা সম্ভবও নয়।
(৪) সাহাবীদের আদর্শের অন্যতম হলো তারা জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়াকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন।
(৫) সাহাবীদের তাকওয়া। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৬১৬; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকার্য এবং সাক্ষ্যদান
৩৭৭১-[১৪] জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, দু’ ব্যক্তি একটি পশুর ব্যাপারে স্বীয় দাবী পেশ করল। অতঃপর তারা উভয়েই স্বীয় দাবীর সমর্থনে সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করে বলল, ষাঁড় দ্বারা প্রজনন করিয়ে বাচ্চা লাভ করেছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পশুটি তার জন্য ফায়সালা করলেন, যার তত্ত্বাবধানে ছিল। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
وَعَن جابرِ بن عبدِ الله: أَنَّ رَجُلَيْنِ تَدَاعَيَا دَابَّةً فَأَقَامَ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا الْبَيِّنَةَ أَنَّهَا دَابَّتُهُ نَتَجَهَا فَقَضَى بِهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلَّذِي فِي يدِهِ. رَوَاهُ فِي «شرح السّنة»
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে পাওয়া যাচ্ছে, দু’জন লোক একটি জন্তুর দাবী করছে এবং দু’জনের দলীল আছে কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিচারের সময় যার হাতে জন্তুটি ছিল তারপক্ষে রায় দিলেন, তাই এসব ক্ষেত্রে এভাবেই বিচারকার্য সমাধা করতে হয়। এক্ষেত্রে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) যে মতামত দিয়েছিলেন তা হলো, যে জিনিস নিয়ে বাদী-বিবাদীর মাঝে মতবিরোধ দেখা যাবে তা দু’ভাগ করে দু’জনকে দিয়ে দিতে হবে।
ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর কথাটি ব্যখ্যা করলে এরূপ দাঁড়ায় যে, জন্তুটিকে দু’ভাগ করতে হবে এবং তা দু’জনের মাঝে বণ্টন করতে হবে। এটা সর্বদা সম্ভব নাও হতে পারে, এজন্য জন্তুটি বিক্রয় করে তার মূল্য দু’জনকে দেয়া যেতে পারে। অথবা ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর কথাটিকে এভাবে নেয়া যেতে পারে যে, যা কিছু দু’ভাগ করার পর্যায়ভুক্ত তাতে যদি দু’জন দাবীদার থাকে তাহলে ভাগ করে দু’জনকে দিয়ে দিতে হবে।
এ হাদীস থেকে আরো বুঝা যায় যে, যার হাতে জন্তুটি থাকবে তার প্রমাণকে অন্যের তুলনায় প্রাধান্য দিতে হবে এবং এটাই সাধারণ নিয়ম। শারহুস্ সুন্নাহ্-তে বলা হয়েছে, ‘উলামায়ে কিরাম বলেন, যখন দু’জন ব্যক্তি একটি বিষয়ের দাবীদার হবে আর দু’জনেরই প্রমাণ থাকবে যার জন্য তারা বিচার দায়ের করেছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকার্য এবং সাক্ষ্যদান
৩৭৭২-[১৫] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে দু’ ব্যক্তি একটি উট দাবী করল এবং তারা উভয়েই দু’জন করে সাক্ষ্য-প্রমাণও পেশ করল। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটটিকে তাদের উভয়ের মাঝে আধা-আধি করে ভাগ করে দিলেন। (আবূ দাঊদ)[1]
আবূ দাঊদ-এর অপর বর্ণনায় এবং নাসায়ী ও ইবনু মাজাহতে আছে, দু’ ব্যক্তি একটি উটের দাবী করল, অথচ তাদের কারো কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। এমতাবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটটি তাদের উভয়ের জন্য সাব্যস্ত করলেন।
وَعَن أبي مُوسَى الأشعريِّ: أَنَّ رَجُلَيْنِ ادَّعَيَا بَعِيرًا عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَعَثَ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا شَاهِدَيْنَ فَقَسَّمَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَهُمَا نِصْفَيْنِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ وَلِلنَّسَائِيِّ وَابْنِ مَاجَهْ: أَنَّ رَجُلَيْنِ ادَّعَيَا بَعِيرًا لَيْسَتْ لِوَاحِدٍ مِنْهُمَا بَيِّنَةٌ فَجَعَلَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَهُمَا
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসটিতে বলা হয়েছে, একই জিনিসের যদি দুই দাবীদার থাকে দু’জনেরই প্রমাণ থাকে- এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হলো ঐ জিনিসটি উভয়ের মাঝে সমভাবে বণ্টিত হবে। ইবনুল মালিক (রহঃ) অত্র হাদীসের বিশ্লেষণে বলেছেন।
অত্র হাদীসটি প্রমাণ করছে, দু’জন ব্যক্তি যদি একটি জিনিসের দাবীদার হয় একজনেরও কোনো প্রমাণ না থাকে অথবা উভয়েরই প্রমাণ থাকে আর জিনিসটি উভয়েই ধরে রেখেছে অথবা কেউ ধরে রাখেনি তাহলে এমন পরিস্থিতিতে জিনিসটি সমভাগে দু’জনের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ)-সহ অনেকেই এ অভিমত পেশ করেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকার্য এবং সাক্ষ্যদান
৩৭৭৩-[১৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ দু’ ব্যক্তি একটি পশুর ব্যাপারে পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হলো, কিন্তু তাদের কারো নিকট কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। এমতাবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কসম করার মাধ্যমে লটারী করে নাও। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্)[1]
وَعَن أبي هريرةَ أنَّ رجُلينِ اختَصما فِي دَابَّة وَلَيْسَ لَهما بَيِّنَةٌ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «استهِما على اليَمينِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وابنُ مَاجَه
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকার্য এবং সাক্ষ্যদান
৩৭৭৪-[১৭] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক কসমকারীকে বললেনঃ তুমি সে আল্লাহর নামে কসম করো যিনি ব্যতীত সত্যিকারে কোনো মা’বূদ নেই এবং তোমার ওপর তার কোনো হক নেই (বাদীর কোনো হক নেই)। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِرَجُلٍ حَلَّفَهُ: «احْلِفْ بِاللَّهِ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ مَاله عِنْدَكَ شَيْءٌ» يُعْنَى لِلْمُدَّعِي. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকার্য এবং সাক্ষ্যদান
৩৭৭৫-[১৮] আশ্’আস ইবনু কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার ও এক ইয়াহূদীর যৌথ মালিকানায় একটি জমি ছিল। কিন্তু সে (এক সময়) আমার মালিকানাকে অস্বীকার করায় আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অভিযোগ পেশ করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ তোমার নিকট এর কোনো দলীল-প্রমাণাদি আছে কি? আমি বললাম, না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইয়াহূদীকে বললেনঃ তুমি কসম করে বলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম : হে আল্লাহর রসূল! সে তো এখন কসম করে আমার সম্পদ দখলে নিয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেনঃ ’’যারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ও তার নামে কসম করে নগণ্যমূল্যে বিক্রি করে’’- (সূরা আ-লি ’ইমরান ৩ : ৭৭) আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্)[1]
وَعَن الأشعثِ بنِ قيسٍ قَالَ: كَانَ بَيْنِي وَبَيْنَ رَجُلٍ مِنَ الْيَهُودِ أرضٌ فحَجَدني فَقَدَّمْتُهُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَلَكَ بَيِّنَةٌ؟» قُلْتُ: لَا قَالَ لِلْيَهُودِيِّ: «احْلِفْ» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِذَنْ يَحْلِفَ وَيَذْهَبَ بِمَالِي فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: (إِنَّ الَّذِينَ يشترونَ بعهدِ اللَّهِ وأَيمانِهِم ثمنا قَلِيلا)
الْآيَة. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা : অত্র হাদীসের বর্ণনাকারী সাহাবীর নাম আশ্‘আস বিন কয়স বিন মা‘দীকারাব তার উপনাম আবূ মুহাম্মাদ আল্ কিনদী। তিনি কিনদাহ্ গোত্রের নেতা হয়ে স্বদল বলে নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসেছিলেন। এটা ছিল ১০ হিজরীর ঘটনা, তিনি জাহিলী যুগে তার জাতির সর্দার ছিলেন, তার জাতি তাকে খুব শ্রদ্ধা করতো তার কথা মেনে চলতো। ইসলাম গ্রহণের পরও তিনি সম্মানিত ছিলেন মাঝে একবার মুরতাদ হয়ে যান। পরে আবার ইসলামে ফিরে আসেন।
আবূ বাকর -এর শাসনামলে ‘উলামায়ে কিরাম বলেন, ইমাম শাফি‘ঈ তাকে সাহাবী বলেছেন। আমাদের নিকট সহীহ মতানুসারে তিনি তাবি‘ঈ যেহেতু তার সাহাবীত্ব মুরতাদ হওয়ার কারণে বাতিল হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, আমার মাঝে আর অপর এক ইয়াহূদীর মাঝে একখন্ড জমি নিয়ে বিবাদ চলছিল আমি বিষয়টি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার কি কোনো দলীল প্রমাণ আছে? আমি বললাম, না, তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদীকে তার স্বপক্ষে শপথ করতে বললেন। এ হাদীসের অংশ থেকে বুঝা যায়, বিচারকার্যে শপথ অমুসলিমদের জন্যও হতে পারে, শপথের বিষয়টি শুধু মুসলিমদের জন্য নির্দিষ্ট নয়। তবে এক্ষেত্রে যদি সে মিথ্যা শপথ করে মুসলিমের মাল-সম্পদ হরণ করে তাহলে এর জন্য তাকে কঠিন পরিণতি বহন করতে হবে। মহান আল্লাহ সূরা আ-লি ‘ইমরান-এর ৭৭নং আয়াতে বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় যারা সামান্য কিছু লাভের আশায় মিথ্যা শপথ করবে তাদের জন্য আখিরাতে কোনো অংশ নেই, আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, কিয়ামতের দিন তাদেরকে পবিত্র করবেন না, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’’ (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৬১৮; তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৯৯৬; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকার্য এবং সাক্ষ্যদান
৩৭৭৬-[১৯] উক্ত রাবী [আশ্’আস ইবনু কায়স (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন কিনদাহ্ এবং হাযরা মাওত-এর অধিবাসীর দু’জন লোক ইয়ামানের একটি জমির ব্যাপারে বিবাদে লিপ্ত হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলো। হাযরামী লোকটি বলল, হে আল্লাহর রসূল! জমিটি আমার। এ লোকের পিতা জোরপূর্বক আমার থেকে দখলদারিত্ব নিয়েছে এবং বর্তমানে তা তার তত্ত্বাবধানেই আছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমার নিকট কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ আছে কি? সে বললঃ না। তবে আমি তাকে এরূপ কসম দিব যে, সে কসম করে বলবেঃ আল্লাহর কসম! সে জানে না যে, এ জমি আমার এবং তার পিতা আমার থেকে জোরপূর্বক দখলে নিয়েছে। অতঃপর কিনদী লোকটি কসম করতে উদ্যত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (সাবধান) যে ব্যক্তি (মিথ্যা) কসম করে অপরের ধন-সম্পদ নিজের করায়ত্বে নেয়, সে (কিয়ামতের দিন) হাতকাটা অবস্থায় আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে। অতঃপর কিনদী বলে উঠল, এ জমিন তারই (হাযরামীর)। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْهُ أَنْ رَجُلًا مَنْ كِنْدَةَ وَرَجُلًا مِنْ حَضْرَمَوْتَ اخْتَصَمَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي أَرْضٍ مِنَ الْيَمَنِ فَقَالَ الْحَضْرَمِيُّ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَرْضِي اغْتَصَبَنِيهَا أَبُو هَذَا وَهَى فِي يَدِهِ قَالَ: «هَلْ لَكَ بَيِّنَةٌ؟» قَالَ: لَا وَلَكِنْ أُحَلِّفُهُ وَاللَّهِ مَا يَعْلَمُ أَنَّهَا أَرْضِي اغْتَصَبَنِيهَا أَبُوهُ؟ فَتَهَيَّأَ الْكِنْدِيُّ لِلْيَمِينِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَقْطَعُ أَحَدٌ مَالًا بِيَمِينٍ إِلَّا لَقِيَ اللَّهَ وَهُوَ أَجْذَمُ» فَقَالَ الْكِنْدِيُّ: هِيَ أرضُهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসটি পূর্বের হাদীসের মতই যে হাদীসটি আশ্‘আস বিন কয়স থেকে বর্ণিত। হাদীসটির মর্মকথা হলো কিনদী ও হাযরামাওত-এর দু’জন লোক ইয়ামান থেকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একটি ভূমির ব্যাপারে মামলা নিয়ে আসলো, এমতাবস্থায় জমিটি হাযরামাওত-এর অধীনেই ছিল। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার প্রমাণ কি? সে বললো, আমার কোনো প্রমাণ নেই কিন্তু আমি শপথ খেতে পারবো। পরবর্তীতে যা ঘটার ঘটলো নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এভাবে শপথের মাধ্যমে কেউ যদি অপর মুসলিমের সম্পদ হরণ করে নেয় তাহলে কিয়ামতে সে বরকতশূন্য হয়ে উঠবে। হাদীসটি আমাদের শিক্ষা দেয় যে, আমরা যেন কোনক্রমেই অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে হরণ না করি। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৬১৯; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকার্য এবং সাক্ষ্যদান
৩৭৭৭-[২০] ’আবদুল্লাহ ইবনু উনায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গুনাহের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট গুনাহ হলো- ১. আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করা, ২. মা-বাবার অবাধ্য হওয়া, ৩. মিথ্যা কসম করা। (সাবধান) যখন কোনো কসমকারী নিরুপায় হয়ে আল্লাহর কসম করে এবং তাতে মাছির ডানার পরিমাণও মিথ্যার আশ্রয় নেয়, তখনই তার অন্তরে একটি দাগ পড়ে যায় যা কিয়ামত অবধি থাকবে। (তিরমিযী; আর তিনি বলেনঃ হাদীসটি গরীব)[1]
وَعَن عبدِ اللَّهِ بنِ أُنَيْسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ أَكْبَرِ الْكَبَائِرِ الشِّرْكَ بِاللَّهِ وَعُقُوقَ الْوَالِدَيْنِ وَالْيَمِينَ الْغَمُوسَ وَمَا حَلَفَ حَالِفٌ بِاللَّهِ يَمِينَ صَبْرٍ فَأَدْخَلَ فِيهَا مِثْلَ جَنَاحِ بَعُوضَةٍ إِلَّا جُعِلَتْ نُكْتَةً فِي قَلْبِهِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيب
ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি ইসলামের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিধানের কথা বলেছে, প্রথমত সর্বাধিক বড় গুনাহ শির্ক সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি, তারপর পিতা-মাতার অবাধ্য হতে নিষেধকরণ ও মিথ্যা শপথ থেকে পুরোপুরি বেঁচে থাকার আদেশ। অত্র হাদীসে মিথ্যা শপথের ক্ষেত্রে যে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তা হল মাছির ডানাসম মিথ্যা বলা হলেও তা ঘৃণ্যতম আর যদি পুরা শপথটাই মিথ্যা হয় তাহলে তো আরো মারাত্মক অপরাধ হিসেবে তা বিবেচিত হবে। আর বলা হয়েছে, একটি মাছির সমপরিমাণ মিথ্যা শপথে প্রবেশ করালেও তার শাস্তি হলো কিয়ামত পর্যন্ত তার অন্তরে একটি কালিমা লেগে থাকবে। তাহলে পুরা শপথটাই যদি মিথ্যা হয় তাহলে অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) সহ অন্যান্য বিদ্বানের এটাই সিদ্ধান্ত।
এ ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, মিথ্যা শপথের শাস্তিকে আখিরাতের সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ‘আযাবের তীব্রতা বুঝানোর জন্য। আবার তাকে কবীরা গুনাহের অন্তর্গত করা হয়েছে যাতে মানুষ তা অবহেলা না করে, আবার কোনো কোনো হাদীসে মিথ্যা সাক্ষীকে শির্কের অন্তর্গত করা হয়েছে এর শাস্তিকে আরো ভয়াবহ করার জন্য। মোট কথা হলো আমাদের মিথ্যা সাক্ষী দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ৩০২০; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকার্য এবং সাক্ষ্যদান
৩৭৭৮-[২১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার এ মিম্বারের নিকট মিথ্যা কসম করল, যদিও তা সবুজ রংয়ের একটি মিসওয়াকের জন্য হয়। সে জাহান্নামের আগুনে তার ঠিকানা অবধারিত করে নিল। অথবা বলেছেনঃ তার জন্য জাহান্নামের আগুন অপরিহার্য হয়ে গেল। (মালিক, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্)[1]
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَحْلِفُ أَحَدٌ عِنْدَ مِنْبَرِي هَذَا عَلَى يَمِينٍ آثِمَةٍ وَلَوْ عَلَى سِوَاكٍ أَخْضَرَ إِلَّا تَبَوَّأَ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ أَوْ وَجَبَتْ لَهُ النَّارُ» . رَوَاهُ مَالِكٌ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: এ হাদীস মিথ্যা শপথের চরম ভয়াবহতা সতর্কবাণী দেয়া হয়েছে। ইবনুল মালিক বলেনঃ মিথ্যা শপথ স্বাভাবিকভাবেই চরম শাস্তির দিকে ধাবিত করে আবার যদি তা নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারের কাছে, তখন পাপ আরো গুরুতর হবে বৈ কি? মিম্বারের কথা উল্লেখ করে মূলত মিম্বারের সম্মান বৃদ্ধি করা হয়েছে আর দ্বিতীয়তঃ এ ধরনের মিথ্যা শপথের চরম ভয়াবহ শাস্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ মিথ্যা শপথের শাস্তি যেভাবেই দেয়া হোক না কেন তা আল্লাহর ক্রোধ ডেকে আনে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
অত্র হাদীস থেকে শিক্ষণীয় বিষয় হলো, মিথ্যা শপথ স্থান কালভেদে তার পাপের স্তর পরিবর্তন হয় বটে তবে সর্বাবস্থায় তার শাস্তি খুবই ভয়াবহ। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩২৪৪; আল মুনতাকা ৭ম খন্ড, হাঃ ১৩৯২; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকার্য এবং সাক্ষ্যদান
৩৭৭৯-[২২] খুরায়ম ইবনু ফাতিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করে দাঁড়িয়ে তিনবার বললেনঃ মিথ্যা সাক্ষ্যদানকে আল্লাহর সাথে শির্ক করার সমতুল্য করা হয়েছে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ ’’মূর্তিপূজার অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাকো এবং মিথ্যা কথা থেকেও বিরত থাকো এমতাবস্থায় যে, বাতিলকে বর্জন করতঃ আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্)[1]
وَعَن خُريمِ بن
فاتكٍ قَالَ: صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةَ الصُّبْحِ فَلَمَّا انْصَرَفَ قَامَ قَائِمًا فَقَالَ: «عُدِلَتْ شَهَادَةُ الزُّورِ بِالْإِشْرَاكِ بِاللَّهِ» ثَلَاثَ مَرَّاتٍ. ثُمَّ قَرَأَ: (فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْأَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِ حُنَفَاءَ لِلَّهِ غَيْرَ مُشْرِكِينَ بهِ)
رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে قَوْلَ الزُّوْرِ তথা মিথ্যা সাক্ষীকে শির্কের সমগোত্রীয় করা হয়েছে অর্থাৎ মিথ্যা সাক্ষী দিলে সেই অপরাধ হয় যা শির্ক করলে হয়।
হাদীসটিতে উল্লেখিত قَوْلَ الزُّوْرِ -এর ব্যাখ্যায় ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ এর অর্থ হচ্ছে সঠিকটা না বলে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া। হাদীসটিতে মিথ্যা সাক্ষীর কঠোর বিরোধিতা করা হয়েছে। এর ভয়াবহতা বর্ণনায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত নিয়ে এসেছেন, মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘‘তোমরা মূর্তিপূজা থেকে বিরত থাক এবং মিথ্যা সাক্ষী প্রদান থেকে বিরত থাক আল্লাহর সাথে শির্ক না করে একনিষ্ঠ হয়ে যাও’’- (সূরা আল হজ্জ/হজ ২২ : ৩০)। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৫৯৬; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকার্য এবং সাক্ষ্যদান
৩৭৮০-[২৩] আর আহমাদ ও তিরমিযী হাদীসটি আয়মান ইবনু খুরায়ম হতে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ইবনু মাজাহ্-এর বর্ণনায় (উপরোল্লিখিত হাদীসে) কুরআনের আয়াতটি পাঠের কথা উল্লেখ নেই।[1]
وَرَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ عَنْ أَيْمَنَ بْنِ خُرَيْمٍ إِلَّا أَنَّ ابْنَ مَاجَهْ لَمْ يَذْكُرِ الْقِرَاءَةَ
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকার্য এবং সাক্ষ্যদান
৩৭৮১-[২৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ সকল লোকেদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। যথা- ১. খিয়ানাতকারী পুরুষ ও খিয়ানাতকারিণী নারী, ২. শারী’আতের বিধান অনুযায়ী দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি, ৩. শত্রু, যদিও তার মুসলিম ভাই হয়, ৪. সে গোলাম, যে তার মুক্তকারীকে অস্বীকার করে, ৫. বংশ পরিবর্তনকারী, যে স্বীয় বংশসূত্র গোপন করে অন্য বংশের দাবী করে, ৬. পরিবারভুক্ত গোলাম বা চাকর, যে ঐ পরিবারের উপর নির্ভরশীল। (তিরমিযী; আর তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব। আর এ হাদীসের অপর রাবী ইয়াযীদ ইবনু যিয়াদ আদ্ দিমাশক্বী মুনকারুল হাদীস)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَجُوزُ شَهَادَةُ خَائِنٍ وَلَا خَائِنَةٍ وَلَا مَجْلُودٍ حَدًّا وَلَا ذِي غِمْرٍ عَلَى أَخِيهِ وَلَا ظَنِينٍ فِي وَلَاءٍ وَلَا قَرَابَةٍ وَلَا الْقَانِعِ مَعَ أَهْلِ الْبَيْتِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حديثٌ غريبٌ ويزيدُ بن زيادٍ الدِّمَشْقِي الرَّاوِي مُنكر الحَدِيث
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসটিতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে তাদের কথা যাদের সাক্ষী গ্রহণীয় নয় তারা হলো আমানাতের খিয়ানাতকারী পুরুষ অথবা মহিলা এবং যাকে যিনার হাদ্দ লাগানো হয়েছে এবং এমন জনের সাক্ষী যে, তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিচ্ছে যার সাথে তার আগে থেকেই শত্রুতা চলে আসছে ; আর ঐ সমস্ত লোকের সাক্ষী গ্রহণ করা হবে না, যারা সমাজে খিয়ানাতকারী হিসেবে চিহ্নিত। এক্ষেত্রে কেউ কেউ বলেছেন, যদি দীনের হুকুম-আহকামে কিছু একটা ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে থাকে তাহলে কোনো অসুবিধা নেই; তবে মানুষের মাল-সম্পদে খিয়ানাত করলে তার সাক্ষী গ্রহণ করা হবে না ; তবে সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করে ‘উলামায়ে কিরাম বলেছেন যে, কোনো খিয়ানাতকারীরই সাক্ষী গ্রহণীয় নয়।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের খিয়ানাত করো না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানতও খিয়ানাত করো না।’’ (সূরা আল আনফাল ৮ : ২৭)
(وَلَا مَجْلُوْدٍ) এর ব্যাখ্যায় ‘উলামায়ে কিরাম বলেন, যেমন ইমাম ইবনুল মালিক বলেনঃ এ ব্যক্তি হলো সে যে তার স্ত্রীর প্রতি যিনার অপবাদ দিয়েছে এবং ৪ জন সাক্ষী উপস্থিত করতে পারেনি। তার সাক্ষীও গ্রহণীয় নয়। ইমাম ইবনুল মালিক-এর সাথে একমত হয়ে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-ও একই কথা বলেছেন বরং ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) আরো একটু বেশী করে বললেন, সে তাওবাহ্ করলেও তার সাক্ষী গ্রহণ করা হবে না। মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘‘আর যারা সত্বী সাধী নারীকে যিনার অপবাদ দিল, অতঃপর চারজন সাক্ষী আনতে ব্যর্থ হলে তাদের ৮০ বেত্রাঘাত কর এবং তাদের সাক্ষী কখনোই গ্রহণ করিও না।’’ (সূরা আন্ নূর ২৪ : ৪)
তাই অত্র আয়াত থেকেও বুঝা যায়, তার সাক্ষী কখনোই গ্রহণ করা যাবে না যদিও তাওবাহ্ করে। তবে এর ব্যতিক্রম মতামত ও ‘উলামায়ে কিরাম পোষণ করেছেন এবং তারা বলেছেন, তাওবাহ্ করলে তার সাক্ষী গ্রহণ করা হবে। যেহেতু সূরা আন্ নূর-এর ৫ নং আয়াতেই তা উল্লেখ আছে, মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘‘তবে যারা তাওবাহ্ করলো তারা ব্যতীত। (সূরা আন্ নূর ২৪ : ৫)
সাক্ষী দিতে গিয়ে কোনো প্রকার স্বজন-প্রীতির আশ্রয় নেয়া বৈধ হবে না। কোনো কোনো রিওয়ায়াতে এমনও আছে যারা অধিক ভুল করে তাদেরও সাক্ষী গ্রহণ হবে না। [আল্লাহই ভালো জানেন] (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২২৯৮; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকার্য এবং সাক্ষ্যদান
৩৭৮২-[২৫] ’আমর ইবনু শু’আয়ব তাঁর পিতা হতে, তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ খিয়ানাতকারী পুরুষ ও খিয়ানাতকারিণী নারীর সাক্ষ্য কবুলযোগ্য নয়। ব্যভিচারী পুরুষ ও ব্যভিচারিণী নারীর সাক্ষ্যও কবুলযোগ্য নয় (গ্রহণ করা হবে না)। আর শত্রুর সাক্ষ্যদান বৈধ নয়, যদিও সে তার মুসলিম ভাই হয়। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমন ব্যক্তির সাক্ষ্যকেও অগ্রহণযোগ্য বলেছেন, যে কোনো পরিবারের গোলাম বা চাকর। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تَجُوزُ شَهَادَةُ خَائِنٍ وَلَا خَائِنَةٍ وَلَا زَانٍ وَلَا زَانِيَةٍ وَلَا ذِي غِمْرٍ عَلَى أَخِيهِ» . وَرَدَّ شَهَادَةَ الْقَانِعِ لِأَهْلِ الْبَيَتْ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসটিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে তাদের কথা বিচারকার্যে যাদের সাক্ষী গ্রহণীয় নয়।
(ক) খিয়ানাতকারী মহিলা-পুরুষ।
(খ) যিনাকারী পুরুষ-মহিলা।
(গ) এমন লোকের সাক্ষী এমন কারো সম্পর্কে যার সাথে তার আগে থেকেই শত্রুতা ছিল।
অত্র হাদীসের শিক্ষা হলো সাক্ষী প্রদানের বিষয়টি খুব গুরুত্বের দাবীদার, সুতরাং যে কেউ সাক্ষী দান করতে পারবে না, এটাই বাস্তবতার দাবী। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৫৯৮; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকার্য এবং সাক্ষ্যদান
৩৭৮৩-[২৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শহরের অধিবাসীর পক্ষে গ্রাম্য লোকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تَجُوزُ شَهَادَةُ بَدَوِيٍّ عَلَى صَاحِبِ قَرْيَةٍ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَه
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে বলা হয়েছে, শহরের লোকেরা গ্রামের লোকের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে পারবে না। এর কারণ বিশ্লেষণে ‘উলামায়ে কিরাম বলেন, এর কারণ হলো শহরের লোকেরা গ্রামের লোক ও গ্রাম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণার অভাব এবং তার ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কে পরিষ্কার ধ্যান-ধারণা না থাকা। এমনটি মতামত ব্যক্ত করেছেন ‘আল্লামা খত্ত্বাবী, ইবনুল মালিকসহ অনেকেই। ‘আল্লামা তূরিবিশ্তী-এর আরো একটি কারণ বলেছেন তা হলো সাক্ষী চাওয়ার সময় তাকে শহর থেকে নিয়ে আসা সম্ভব নাও হতে পারে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৫৯৯; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকার্য এবং সাক্ষ্যদান
৩৭৮৪-[২৭] ’আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’জন লোকের মাঝে বিচার করলেন। কিন্তু সে ব্যক্তির বিপক্ষে রায় হয়েছে, সে চলে যাওয়ার প্রাক্কালে বলল, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম সাহায্যকারী। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা অচেতন মূর্খকে তিরস্কার করেন। তোমাকে সচেতন ও সজাগ হওয়া উচিত। এরপরও যদি তোমার ওপর কোনো বিপদ-মুসীবাত এসে পড়ে তাহলে ’’হাসবিয়াল্লা-হু ওয়া নি’মাল ওয়াকীল’’ (আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম সাহায্যকারী) বলো। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَضَى بَيْنَ رَجُلَيْنِ فَقَالَ الْمَقْضِيُّ عَلَيْهِ لَمَّا أَدْبَرَ: حَسْبِيَ اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَلُومُ عَلَى الْعَجْزِ وَلَكِنْ عَلَيْكَ بِالْكَيْسِ فَإِذَا غَلَبَكَ أَمْرٌ فَقُلْ: حَسْبِيَ اللَّهُ ونِعْمَ الوكيلُ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকার্য এবং সাক্ষ্যদান
৩৭৮৫-[২৮] বাহয ইবনু হাকীম (রহঃ) তাঁর পিতা হতে, তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপবাদের অভিযোগের দণ্ড স্বরূপ এক ব্যক্তিকে বন্দী করেছেন। (আবূ দাঊদ)[1]
আর তিরমিযী ও নাসায়ী অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে, পরে তাকে ছেড়ে দেন।
وَعَنْ بَهْزِ بْنِ حَكِيمٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَبَسَ رَجُلًا فِي تُهْمَةٍ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وزادَ التِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ: ثمَّ خَلّى عَنهُ