পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

الإمارة শব্দটির অর্থ আমিরের পদ গ্রহণ করা বা চিহ্ন ইত্যাদি। القضاء দ্বারা এখানে উদ্দেশ্য শার্’ঈ আদালত।


৩৬৬১-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহ তা’আলার আনুগত্য করল। আর যে আমার অবাধ্যতা করল, সে আল্লাহ তা’আলার অবাধ্যতা করল। আর যে আমীরের (নেতার) আনুগত্য করল, সে আমারই আনুগত্য করল। যে আমীরের অবাধ্যতা করল, সে আমারই অবাধ্যতা করল। প্রকৃতপক্ষে ইমাম (নেতা) হলেন ঢাল স্বরূপ। তার পিছন থেকে যুদ্ধ করা হয়, তার দ্বারা (শত্রুদের কবল থেকে) নিরাপত্তা পাওয়া যায়। সুতরাং শাসক যদি আল্লাহর প্রতি ভয়প্রদর্শন পূর্বক প্রশাসন চালায় এবং ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা করে, তাহলে এর বিনিময়ে সে সাওয়াব (প্রতিদান) পাবে। কিন্তু সে যদি এর বিপরীত কর্ম সম্পাদন করে, তাহলে তার গুনাহও তার ওপর কার্যকর হবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَطَاعَنِي فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللَّهَ وَمَنْ يُطِعِ الْأَمِيرَ فَقَدْ أَطَاعَنِي وَمَنْ يَعْصِ الْأَمِيرَ فَقَدْ عَصَانِي وَإِنَّمَا الْإِمَامُ جُنَّةٌ يُقَاتَلُ مِنْ وَرَائِهِ وَيُتَّقَى بِهِ فَإِنْ أَمَرَ بِتَقْوَى اللَّهِ وَعَدَلَ فَإِنَّ لَهُ بِذَلِكَ أَجْرًا وَإِنْ قالَ بغَيرِه فَإِن عَلَيْهِ مِنْهُ»

عن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من اطاعني فقد اطاع الله ومن عصاني فقد عصى الله ومن يطع الامير فقد اطاعني ومن يعص الامير فقد عصاني وانما الامام جنة يقاتل من وراىه ويتقى به فان امر بتقوى الله وعدل فان له بذلك اجرا وان قال بغيره فان عليه منه»

ব্যাখ্যা: (مَنْ أَطَاعَنِىْ فَقَدْ أَطَاعَ اللّٰهَ) এর ব্যাখ্যায় কুরআনের সূরা আন্ নিসায় ৮০নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, আয়াতের অর্থ: ‘‘যে ব্যক্তি রসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহর হুকুম মান্য করবে।’’

(وَمَنْ عَصَانِىْ فَقَدْ عَصَى اللّٰهَ) অত্র হাদীস প্রমাণ করে নেতৃত্ব ও প্রতিনিধিত্বের উপর। বলা হয় : ‘আরবের কুরায়শ এবং ঐ সময়ের লোকজনের নেতৃত্ব সম্পর্কে জানা ছিল না। তাদের গোত্রের নেতাদের দীন ছিল না। অতঃপর যখন ইসলাম আগমন করে তাদের মাঝে (নেতা বা খলীফা) নিযুক্ত করা হয়, তাদের মাঝের লোকেরা অস্বীকার করে। কেউ কেউ হুকুম মান্য করতে অস্বীকার করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেনঃ নিশ্চয় তাদের আনুগত্য করা আবশ্যক তারা যেন আনুগত্য করে যে ব্যক্তিকে তাদের শাসক বানানো হয়।

‘‘ইমাম হলেন ঢাল স্বরূপ।’’ ইমাম নববী (রহঃ) বলেছেনঃ যুদ্ধক্ষেত্রে ঢালের মাধ্যমে দুশমনদের আক্রমণ থেকে মুসলিমদের কষ্ট থেকে রক্ষা করবেন। মানুষকে নিষেধ করবেন কতককে কতকের সাথে যুদ্ধ করা থেকে। ইসলামের ভিতরের অংশকে রক্ষা করবে। ইমামুল মুসলিমীন জনগণকে কাফিরদের সাথে লড়াই করা, ক্রোধ, হিংসা, বিশৃঙ্খলা, হামলা, আক্রমণ থেকে রক্ষা করবেন।

ইবনু তীন (রহঃ) বলেছেনঃ নিশ্চয় তিনি খত্ত্বাবী (রহঃ)-এর কথা গ্রহণ করেছেন: ইবনু ‘উমার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের একটি দলকে বলেছেনঃ তোমরা কি জান না? নিশ্চয় যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর আল্লাহর আনুগত্য করাই আমার আনুগত্য করা। তারা বলেছেনঃ হ্যাঁ, আমরা সাক্ষ্য প্রদান করি। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করবে সে যেন শাসকগণেরও অনুসরণ করে।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেছেনঃ অত্র হাদীসে সকল অবস্থায় শ্রবণ করা ও আনুগত্য করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে ইসলাম এবং মুসলিমদের কালিমাকে একত্রিত করার জন্য। কেননা এর বিপরীত হলো দীন ও দুনিয়ায় তাদের অবস্থার বিশৃঙ্খলা ঘটানো। সকল ক্ষেত্রে অবাধ্যতার আনুগত্য থেকে নিষেধ করা হয়েছে। (ফাতহুল বারী ১৩ খন্ড, হাঃ ৩৬৬১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৬৬২-[২] উম্মুল হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোনো বিকলাঙ্গ কুৎসিত গোলামকেও তোমাদের শাসক (নেতা) নিযুক্ত করা হয়। আর সে আল্লাহ তা’আলার কিতাব অনুযায়ী তোমাদেরকে পরিচালিত করে, তাহলে অবশ্যই তোমরা তার কথা শুনবে এবং তার আনুগত্য করবে। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أُمِّ الْحُصَيْنِ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنْ أُمِّرَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ مُجَدَّعٌ يَقُودُكُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ فَاسْمَعُوا لَهُ وَأَطيعُوا» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ام الحصين قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان امر عليكم عبد مجدع يقودكم بكتاب الله فاسمعوا له واطيعوا» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: যদি কোনো কান কাটা, নাক কাটা লোককে তোমাদের আমির হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। সে যদি তোমাদরেকে আল্লাহর কিতাবের ও রসূলের নির্দেশ দেয় তোমরা তাকে মেনে নিবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সে তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাবের ও রসূলের নিয়ম অনুযায়ী নির্দেশ দেয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

* ইমাম সিন্দী (রহঃ) বলেছেনঃ যদি কোনো দাসকে খলীফা বা আমির হিসেবে নিযুক্ত করা হয় তাহলে তাকে প্রত্যাখ্যান করা যাবে না এবং এটা বলা যাবে না যে, সে আমিরের জন্য উপযুক্ত না। আমিরের আনুগত্য তখন করবে না, যখন সে আল্লাহ তা‘আলার হুকুমের বিপরীত নির্দেশ দেয়। (নাসায়ী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ৪২০৩)

* ‘উলামাগণ হাদীসের অর্থ করেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা (শাসকগণ) ইসলামকে আঁকড়ে ধরে থাকবে এবং আল্লাহর কিতাবের দিকে আহবান করবে যে কোনো অবস্থাতেই হোক, চাই ব্যক্তিগত, দীনগত, চারিত্রিকগত পার্থক্য হোক না কেন তাদের আনুগত্য করা আবশ্যক যদি তাদের ওপর আল্লাহর অবাধ্যতা প্রকাশ না পায়।

এখানে একটি প্রশ্ন: কিভাবে দাসের নির্দেশ মেনে নিবে শ্রবণ ও আনুগত্য করার জন্য?

এই প্রশ্নের উত্তরে দু’টি উদ্দেশ্য হতে পারে : (১) উদ্দেশ্য এটা হতে পারে যে, কোনো আমির বা শাসক একজন গোলামকে কোনো একটি এলাকার শাসক বা নায়েব হিসেবে নিযুক্ত করবে অস্থায়ীভাবে কিছু সময়ের জন্য। নিশ্চয় সে দাস, শাসক না।

২) উদ্দেশ্য এটা হতে পারে যে, যদি কোনো মুসলিম দাস বলপ্রয়োগ করে শাসন ক্ষমতার কর্তৃত্ব লাভ করে, তাঁর নির্দেশ বাস্তবায়ন করা এবং আনুগত্য করা ওয়াজিব। তার অবাধ্যতা করা জায়িয নেই। (শারহে মুসলিম ৯ম খন্ড, হাঃ ১২৯৮- ৩১১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৬৬৩-[৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা শুনো এবং আনুগত্য করো, যদিও তোমাদের ওপর হাবশী গোলাম শাসক নিযুক্ত করা হয়, যার মাথা কিসমিসের ন্যায়। (বুখারী)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «اسْمَعُوا وَأَطِيعُوا وَإِنِ اسْتُعْمِلَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ حَبَشِيٌّ كَأَنَّ رَأْسَهُ زَبِيبَةٌ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن انس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «اسمعوا واطيعوا وان استعمل عليكم عبد حبشي كان راسه زبيبة» . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: শাসক বা নেতার কথা, তাঁর আদেশ ও নিষেধসমূহ শ্রবণ করবে যতক্ষণ পর্যন্ত তা আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের কথার বিপরীত না হয়।

* ইমাম খত্ত্বাবী (রহঃ) বলেছেনঃ এখানে এমন একটি উদাহরণ পেশ করা হয়েছে বাস্তবে যার অস্তিত্ব নেই।

* ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেছেনঃ কোনো দেশের শাসক যদি দাস হয় তার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো মাথার সাথে সাদৃশ্য তথা কিসমিসের মতো ছোট। অথবা শাসকের মাথার চুলগুলো এলোমেলো, কুকড়ানো কিসমিসের গঠনের অবস্থার মতো, অথবা কালো বর্ণের হয়।

* এখানে আরো আধিক্যতা বুঝানো হয়েছে শাসকের আনুগত্য করা তুচ্ছ বা নিম্নমানের ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও।

* আশরাফ (রহঃ) বলেছেনঃ তোমরা তার কথা শ্রবণ কর এবং আনুগত্য কর যদিও সে নিম্নশ্রেণীর ব্যক্তি হয়। বুখারী, আহমাদ, নাসায়ী এটাই বর্ণনা করেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৬৬৪-[৪] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক মুসলিমের (তার শাসনকর্তার নির্দেশ) শোনা এবং আনুগত্য করা অপরিহার্য; তার মনঃপূত হোক বা না হোক, যতক্ষণ না তাকে গুনাহের দিকে নির্দেশ করে। কিন্তু যদি তাকে গুনাহের কাজের নির্দেশ দেয়া হয়, তখন তা শোনা ও আনুগত্য করা কর্তব্য নয়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «السَّمعُ والطاعةُ على المرءِ المسلمِ فِيمَا أحب وأكره مَا لَمْ يُؤْمَرْ بِمَعْصِيَةٍ فَإِذَا أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ»

وعن ابن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «السمع والطاعة على المرء المسلم فيما احب واكره ما لم يومر بمعصية فاذا امر بمعصية فلا سمع ولا طاعة»

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসটি সীমাবদ্ধ করেছে পূর্বের দু’টি ব্যাপকতার হাদীস থেকে এবং নির্দেশ করেছে শ্রবণ ও আনুগত্য করার জন্য যদিও হাবশী গোলাম হয়। ধৈর্য ধারণ করা যখন শাসকের মাঝে অপছন্দনীয় জিনিস পাওয়া যাবে। ধমক দেয়া হয়েছে দল বা জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াকে।

শাসক যখন পাপের কাজে নির্দেশ করবে তখন তাঁর কথা আনুগত্য করা যাবে না এবং শ্রবণ করা যাবে না। বরং অবাধ্যতার কাজ শ্রবণ করা হারাম। হাদীসে বর্ণিত রয়েছে মু‘আয বর্ণনা করেছেন : ঐ ব্যক্তির আনুগত্য করা যাবে না যার মধ্যে আল্লাহর আনুগত্য নেই। (মুসনাদে আহমাদ)

* সার-সংক্ষেপ: ইজমা রয়েছে যখন শাসক/নেতা কুফরী কাজ করবে তখন তাকে পদস্খলন করা। যে ব্যক্তি এটা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এরূপ মুসলিমের ওপর তা করা ওয়াজিব। যে ব্যক্তি তা করতে সক্ষম তার জন্য সাওয়াব রয়েছে। যে ব্যক্তি সক্ষম থাকা সত্ত্বেও নরম কথা বলে তার ওপর পাপ রয়েছে। যে ব্যক্তি শাসককে পদস্খলন করতে অক্ষম তার ওপর ওয়াজিব ঐ রাষ্ট্র থেকে হিজরত করা। (ফাতহুল বারী ১৩ খন্ড, হাঃ ৭১৪৪)

* মুত্বহির (রহঃ) বলেছেনঃ শাসকের কথা শ্রবণ করা এবং তার আনুগত্য করা ওয়াজিব প্রতিটি মুসলিমের ওপরে চাই নির্দেশটি স্বভাবগত অনুযায়ী হোক বা তার অনুযায়ী না হোক, অবাধ্যতার ক্ষেত্রে তার আনুগত্য করবে না। যদি শাসক অবাধ্যতার নির্দেশ করে তাহলে তার আনুগত্য জায়িয নেই। কিন্তু তার জন্য বৈধ হবে না শাসকের সাথে লড়াই বা বিদ্রোহ করা।

* সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাকারক ইমাম নববী (রহঃ) বলেছেনঃ জুমহূর, আহলুস্ সুন্নাহ, ফাকীহগণ, মুহাদ্দিসগণের মধ্য থেকে বলেছেনঃ পাপ, অত্যাচার অধিকার আদায় না করা, বখাটে শাসক হওয়ার জন্য, নেতাকে বরখাস্ত বা পদস্খলন করবে না। এগুলোর কারণে তার আনুগত্য থেকে বের হওয়া জায়িয নেই বরং ওয়াজিব হলো শাসককে উপদেশ দেয়া এবং তাকে ভয় দেখানো। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, ১৭০৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৬৬৫-[৫] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নাফরমানির ক্ষেত্রে আনুগত্য নেই। আনুগত্য শুধু সৎকর্মের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةٍ إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوف»

وعن علي رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا طاعة في معصية انما الطاعة في المعروف»

ব্যাখ্যা: আমীরের নাম কেউ কেউ বলেছেনঃ ‘আব্দুল্লাহ বিন হুযাফাহ্। আমীরের আনুগত্য করতে হবে ভালো কাজে অবাধ্যতার কাজে নয়। আর আমীর এই কাজটি করেছিল, বলা হয়: পরীক্ষা করার জন্য। বলা হয়: কৌতুক করে। বলা হয়: নিশ্চয় এ লোকটি ‘আবদুল্লাহ বিন হুযাফাহ্ দুর্বল শ্রেণীর লোক। যদি তারা আগুনে প্রবেশ করত তাহলে তারা কিয়ামত পর্যন্ত আগুনের মাঝে থাকত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা (সংবাদ/জ্ঞান) ওয়াহীর মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন। সুতরাং শাসকের আনুগত্য করতে হবে ভালো কাজে, পাপের বা অন্যায়ের কাজে নয়। (শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৮৪০-৩৯)

* আবূ দাঊদের-এ ব্যাখ্যা গ্রন্থে ‘আওনুল মা‘বূদে শাসকের নাম নিয়ে মতভেদ রয়েছে : বলা হয়, ‘আব্দুল্লাহ বিন হুযাফাহ্, বলা হয় ‘আলকামাহ্ বিন মুজ্জায।

* খত্ত্বাবী (রহঃ) বলেছেনঃ অত্র হাদীসটি এটা প্রমাণ করে যে, ভালো কাজ ছাড়া শাসকের আনুগত্য করা ওয়াজিব না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬২২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৬৬৬-[৬] ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বায়’আত করেছিলাম যে, আমরা শুনব ও আনুগত্য করব যদিও তা কষ্টে, আরামে, সুখে ও দুঃখে হয়। আমাদের ওপর কাউকে প্রাধান্য দিলে আমরা ধৈর্যধারণ করব। আমরা ক্ষমতাশীল ব্যক্তির বিরোধিতা করব না। আমরা হাকের উপর থাকব, যেখানেই থাকি না কেন। আল্লাহর পথে আমরা কোনো নিন্দাকারীর নিন্দাকে মোটেও পরোয়া করব না।

অপর এক বর্ণনাতে আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের থেকে বায়’আত নিলেন যে, আমরা ক্ষমতাশীল শাসকের বিরুদ্ধাচরণ করব না। তবে তোমরা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারো, যদি তাকে প্রকাশ্য কুফরীতে নিমজ্জিত হতে দেখো। আর সে ব্যাপারে তোমাদের নিকট আল্লাহর কুরআন (ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস)-এর ভিত্তিতে কোনো দলীল প্রমাণ বিদ্যমান থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ: بَايَعْنَا رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِي الْعُسْرِ وَالْيُسْرِ وَالْمَنْشَطِ وَالْمَكْرَهِ وَعَلَى أَثَرَةٍ عَلَيْنَا وَعَلَى أَنْ لَا نُنَازِعَ الْأَمْرَ أَهْلَهُ وَعَلَى أَنْ نَقُولَ بِالْحَقِّ أَيْنَمَا كُنَّا لَا نَخَافُ فِي اللَّهِ لَوْمَةَ لَائِمٍ. وَفِي رِوَايَةٍ: وَعَلَى أَنْ لَا نُنَازِعَ الْأَمْرَ أَهْلَهُ إِلَّا أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنَ اللَّهِ فِيهِ بُرْهَانٌ

وعن عبادة بن الصامت قال: بايعنا رسول الله صلى الله عليه وسلم على السمع والطاعة في العسر واليسر والمنشط والمكره وعلى اثرة علينا وعلى ان لا ننازع الامر اهله وعلى ان نقول بالحق اينما كنا لا نخاف في الله لومة لاىم. وفي رواية: وعلى ان لا ننازع الامر اهله الا ان تروا كفرا بواحا عندكم من الله فيه برهان

ব্যাখ্যা: কাযী (রহঃ) বলেছেনঃ আমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছি শ্রবণ করার উপর কষ্ট এবং (স্বচ্ছলতার শাস্তি) সময়ে দুঃখ এবং শান্তির পর্যায়ে। তাদের বায়‘আত করার কারণে সাওয়াব, প্রতিদান ও শাফা‘আত রয়েছে কিয়ামতের দিন।

‘‘আমাদের ওপর কাউকে প্রাধান্য দিলে আমরা সবর করব’’ এই উক্তিটির অর্থ নিয়ে বিভিন্ন মনীষীদের বাণী:

* আযহার (রহঃ) বলেছেনঃ নিশ্চয় এর অর্থ হলো তাদের নিজেদের ওপরে আমীরকে অগ্রাধিকার দিয়ে তারা ধৈর্য ধারণ করবে।

বিদায়াহ্ ওয়ান্ নিহায়াতে বলা হয়েছে: তোমাদের ওপর প্রাধান্য দিবে। অর্থাৎ তোমাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিবে ‘ফাই’-এর মাল থেকে তাদের অংশ প্রদান করার মাধ্যমে।

* ইমাম নববী (রহঃ) বলেছেনঃ প্রাধান্য, অগ্রাধিকার দিবে দুনিয়াবী বিষয়ে। অর্থাৎ যদি তারা পৃথিবীতে তোমাদের ওপর শাসক হিসেবে নির্দিষ্ট হয় তাহলে তোমরা তাদের কথা শ্রবণ ও মান্য কর। তোমাদের অধিকার তাদেরকে (প্রদান/মিলিত) কর না।

আমরা নেতৃত্ব কামনা করি না, আমরা আমাদের নেতা বরখাস্ত করব না, আমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করব না।

* ইমাম নববী (রহঃ) বলেছেনঃ আমরা ভালো কাজের নির্দেশ করব, মন্দ অপছন্দনীয় কাজ থেকে নিষেধ করব। প্রত্যেক সময়ে এবং স্থানে ছোট ও বড়দের ওপর আমরা কারো সাথে নরম কথা বলব না, আমরা কাউকে ভয় করব না, কারো তিরস্কারের প্রতি আমরা দৃষ্টিপাত করব না।

অত্র হাদীসে ‘কুফর’ (الكفر) দ্বারা উদ্দেশ্য পাপ। অর্থ হবে তোমরা শাসকের সাথে ঝগড়া বা তর্কে লিপ্ত হয়ো না তাদের নেতৃত্বের বিষয়ে এবং তাদের থেকে তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিও না। তবে যখন তোমরা তাদের মাঝে অপছন্দনীয় কোনো কিছু দেখবে নিশ্চতভাবে ইসলামের মূল ভিত্তি হতে যখন তাদেরকে এ অবস্থায় পাবে তখন তোমরা তাদেরকে অস্বীকার করবে এবং হক প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করবে, তোমরা যেখানেই থাক না কেন তাদের আনুগত্য থেকে বের হওয়া এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করা হারাম সকল মুসলিমদের ঐকমত্যে।

* কাযী (রহঃ) বলেছেনঃ যদি আমীরের মাধ্যমে কুফরীর কাজ হয়ে যায় বা শারী‘আতের পরিবর্তন হয়ে যায় অথবা বিদ্‘আত সংঘটিত হয়ে যায় তখন তাঁর আনুগত্য থেকে মুক্ত হবে। এমতাবস্থায় মুসিলমদের ওপর ওয়াজিব ঐ শাসক থেকে বিরত থেকে ন্যায়পরায়ণ শাসক বানানো যদি তাদের পক্ষে সম্ভব হয়। আর যদি সম্ভব না হয় তাহলে মুসলিমগণ ঐ রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রে চলে যাবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৬৬৭-[৭] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বায়’আত করতাম মান্য করা ও আনুগত্যের উপর, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে বলতেন, যা তোমাদের সাধ্যের মধ্যে হয়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: كُنَّا إِذَا بَايَعْنَا رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ يَقُولُ لَنَا: «فِيمَا اسْتَطَعْتُمْ»

وعن ابن عمر رضي الله عنهما قال: كنا اذا بايعنا رسول الله صلى الله عليه وسلم على السمع والطاعة يقول لنا: «فيما استطعتم»

ব্যাখ্যা: ইমাম নববী (রহঃ) বলেছেনঃ মুসলিমের সকল নুসখায় বর্ণিত হয়েছে যে, তোমরা সাধ্যমত বায়‘আত কর কথা বলার উদ্দেশে। অর্থাৎ তোমরা সাধ্য অনুযায়ী তাদেরকে শিক্ষা দান করবে। এটা পরিপূর্ণ অনুগ্রহ, সহানুভূতি ও দয়া করা উম্মাতের ওপর। এ কারণেই যে, তাদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্য। তাদের মধ্যকার কেউ বলবে : যা তোমার সাধ্যে রয়েছে, যাতে করে এটা বায়‘আতের ‘আম্ বিষয়ের উপর প্রবেশ না করে যা তার সাধ্যে নেই। (শারহে মুসলিম ১৩ খন্ড, ৩৬৬৭)

* সম্ভাবনা রয়েছে বুখারীর নুসখায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার মাঝে শর্তযুক্ত করা হয়েছে অবস্থার আধিক্যতার উপরে শ্রবণ করার ও আনুগত্যের উপরে উম্মাতের অনুগ্রহ করার জন্যে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৬৬৮-[৮] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তি যদি তার আমীরকে অনৈতিক কোনো কিছু করতে দেখে, তাহলে সে যেন ধৈর্যধারণ করে। কেননা যে কেউ ইসলামী জামা’আত থেকে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে যায় এবং এ অবস্থায় মারা যায়, সে জাহিলিয়্যাত যুগের ন্যায় মৃত্যুবরণ করল। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «من رأى أميره يَكْرَهُهُ فَلْيَصْبِرْ فَإِنَّهُ لَيْسَ أَحَدٌ يُفَارِقُ الْجَمَاعَةَ شبْرًا فَيَمُوت إِلَّا مَاتَ ميتَة جَاهِلِيَّة»

وعن ابن عباس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من راى اميره يكرهه فليصبر فانه ليس احد يفارق الجماعة شبرا فيموت الا مات ميتة جاهلية»

ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি আমীর ও শাসকের আনুগত্য থেকে নিজেকে বিরত রাখে, মুসলিমদের দল থেকে বের হয়ে যায়। এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে মৃত্যু হবে জাহিলিয়্যাতের উপর মৃত্যুবরণ করা। কেননা জাহিলী যুগের মানুষেরা দীন সম্পর্কে ছিল মূর্খ, অজ্ঞ। এজন্য তারা তাদের সরদার ও গোত্রপতিদের আনুগত্য করত। তারা তাদের আমীর বা শাসকের নির্দেশকে অবজ্ঞা করত। তারা প্রকাশ্যভাবে ইমামের বিরোধিতায় লিপ্ত হত।

আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, ইসলামের মজবুত সংগঠন থাকা এবং তার অধীনে মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ থাকার গুরুত্ব অপরিসীম।

অত্র হাদীসে শর্তযুক্ত করা হয়েছে যা মুতালাকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে পূর্বের দু’টি হাদীসে শাসকের নির্দেশ মান্য করা ও শ্রবণ করা যদিও হাবশী গোলাম হয়। আর ধৈর্যধারণ করা ঐ সমস্ত বিষয়ে যার মাঝে শাসকের অপছন্দনীয় কাজ রয়েছে। ভীতিপ্রদর্শন করা হয়েছে জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। (ফাতহুল বারী ১৩ খন্ড, হাঃ ৭১৪৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৬৬৯-[৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমীরের (শাসকের) আনুগত্যের অবাধ্য হলো এবং মুসলিম জামা’আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল, এমতাবস্থায় সে মারা গেলে তার মৃত্যু জাহিলিয়্যাত যুগের উপর হবে। আর যে ব্যক্তি এমন পতাকার নিচে যুদ্ধ করে যার হক বা বাতিল হওয়া সম্পর্কে অজানা; বরং সে যেন দলীয় ক্রোধের বশীভূত হয়ে অথবা দলীয় স্বার্থ রক্ষায় লোকেদেরকে আহবান করে কিংবা দলীয় প্রেরণায় মদদ জোগায়। এমতাবস্থায় সে মারা গেলে জাহিলিয়্যাতের উপরই মৃত্যুবরণ করবে। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মাতের বিরুদ্ধে তরবারি উত্তোলন করল এবং ভালো-মন্দ সকলকে নির্বিচারে আক্রমণ করতে লাগল। এমনকি তাত্থেকে আমার উম্মাতের কোনো মু’মিনেরও পরোয়া করল না এবং আশ্রিত তথা নিরাপত্তায় অধিকারী ব্যক্তির সাথে যে অঙ্গীকার রয়েছে, তার চুক্তিও পূরণ করল না, সে আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং তার সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ خَرَجَ مِنَ الطَّاعَةِ وَفَارَقَ الْجَمَاعَةَ فَمَاتَ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً وَمَنْ قَاتَلَ تَحْتَ رَايَةٍ عِمِّيَّةٍ يَغْضَبُ لِعَصَبِيَّةٍ أَوْ يَدْعُو لِعَصَبِيَّةٍ أَوْ يَنْصُرُ عَصَبِيَّةً فَقُتِلَ فَقِتْلَةٌ جَاهِلِيَّةٌ وَمَنْ خَرَجَ عَلَى أُمَّتِي بِسَيْفِهِ يَضْرِبُ بَرَّهَا وَفَاجِرَهَا وَلَا يَتَحَاشَى مِنْ مُؤْمِنِهَا وَلَا يَفِي لِذِي عَهْدٍ عَهْدَهُ فَلَيْسَ مِنِّي وَلَسْتُ مِنْهُ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «من خرج من الطاعة وفارق الجماعة فمات مات ميتة جاهلية ومن قاتل تحت راية عمية يغضب لعصبية او يدعو لعصبية او ينصر عصبية فقتل فقتلة جاهلية ومن خرج على امتي بسيفه يضرب برها وفاجرها ولا يتحاشى من مومنها ولا يفي لذي عهد عهده فليس مني ولست منه» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তির লড়াই করা, যুদ্ধ হওয়া, লোকেদেরকে তার সাহায্যের জন্য আহবান করা অথবা কাউকে সাহায্য করা আল্লাহর বাণীকে বুলন্দ করা ও দীনের ঝান্ডাকে উঁচু করার জন্য ছিল না। বরং সে বংশীয় প্রেরণায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে জুলুমের সহায়তা করেছে ও অন্যায়ের পক্ষাবলম্বন করেছে। এমতাবস্থায় সে নিহত হলে সে জাহিলিয়্যাতের উপরই নিহত হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সে আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।

অত্র হাদীসের মাধ্যমে যে সমস্ত বিধি-বিধান প্রমাণিত হয় তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো:

মুযহির (রহঃ) বলেছেনঃ তারা (শাসকগণ) তোমাদের জন্য দু‘আ করবে যখন তোমরা মৃত্যুবরণ করবে। আর তোমরা (জনগণ) তাদের জন্য দু‘আ করবে যখন তারা মৃত্যুবরণ করবে। যাদের আদেশ পালন এবং পছন্দ করতে।

ত্বীবী (রহঃ) বলেছেনঃ এটা দ্বারা সম্ভবত প্রথমটি উদ্দেশ্য, অর্থাৎ তোমরা তাদেরকে ভালোবাসবে এবং তারাও তোমাদেরকে ভালোবাসবে যতদিন পর্যন্ত জীবিত থাকবে। অতঃপর যখন মৃত্যু আসবে কেউ কারো জন্য আল্লাহর রহমাত প্রার্থনা করতে কল্যাণকর। আর শাসক যদি নিকৃষ্ট হয় তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না, তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে না, তাদের সাথে যুদ্ধ করবে না যতদিন পর্যন্ত তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে।

যদি কারে মাঝে আল্লাহ তা‘আলার নাফরমানির কোনো কিছু দেখা যায়, তাহলে সেই নাফরমানির কাজটি ঘৃণার সাথে অপছন্দ করা উচিত। এই মর্মে মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন,

فَإِنْ عَصَوْكَ فَقُلْ إِنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تَعْمَلُون

‘‘যদি তারা আপনার অবাধ্যতা করে তবে বলে দিন তোমরা যা কর তা থেকে আমি মুক্ত।’’ (সূরা আশ্ শু‘আরা ২৬ : ২১৬)

অর্থাৎ শাসকের মাঝে অপছন্দনীয় কোনো কিছু দেখা গেলে অন্তর দ্বারা ঘৃণা করবে যদি হাত দ্বারা বাধা দেয়া সম্ভব না হয়। তার আনুগত্য থেকে বের হওয়া বৈধ না। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৩৬৭০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৬৭০-[১০] ’আওফ ইবনু মালিক আল আশজা’ঈ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে ঐ শাসকই সর্বোত্তম, যাদের তোমরা ভালোবাসো এবং তারা তোমাদের ভালোবাসে। তোমরা তাদের জন্য দু’আ করো এবং তারাও তোমাদের জন্য দু’আ করে। আর তোমাদের মধ্যে ঐ শাসকই সর্বনিকৃষ্ট, যাদের প্রতি তোমরা ক্রোধান্বিত হও এবং তারাও তোমাদের প্রতি ক্রোধ ও শত্রুতা পোষণ করে। আর তাদের প্রতি তোমরা অভিসম্পাত করো এবং তারাও তোমাদের প্রতি অভিসম্পাত করে। রাবী বলেন, তখন আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! এমতাবস্থায় কি আমরা তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করব না (তবুও কি বায়’আতের উপর থাকব)? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মাঝে সালাত প্রতিষ্ঠা করে। (পুনরায় বললেনঃ) না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মাঝে সালাত প্রতিষ্ঠা করে। সাবধান! যে ব্যক্তিকে তোমাদের প্রতি শাসক নিযুক্ত করা হয় আর তার মধ্যে যদি আল্লাহ তা’আলার নাফরমানি পরিলক্ষেত হয়, তাহলে তার সে নাফরমানির কাজটি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সাথে অপছন্দ কর, কিন্তু তার আনুগত্য থেকে পিছপা হবে না। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيِّ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «خِيَارُ أئمتكم الَّذين يحبونهم وَيُحِبُّونَكُمْ وَتُصَلُّونَ عَلَيْهِمْ وَيُصَلُّونَ عَلَيْكُمْ وَشِرَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِي تبغضونهم ويبغضونكم وتلعنوهم ويلعنوكم» قَالَ: قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَفَلَا نُنَابِذُهُمْ عِنْدَ ذَلِكَ؟ قَالَ: «لَا مَا أَقَامُوا فِيكُمُ الصَّلَاةَ لَا مَا أَقَامُوا فِيكُمُ الصَّلَاةَ أَلَا مَنْ وُلِّيَ عَلَيْهِ وَالٍ فَرَآهُ يَأْتِي شَيْئًا مِنْ مَعْصِيَةِ اللَّهِ فَلْيَكْرَهْ مَا يَأْتِي مِنْ مَعْصِيَةِ اللَّهِ وَلَا يَنْزِعَنَّ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن عوف بن مالك الاشجعي عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «خيار اىمتكم الذين يحبونهم ويحبونكم وتصلون عليهم ويصلون عليكم وشرار اىمتكم الذي تبغضونهم ويبغضونكم وتلعنوهم ويلعنوكم» قال: قلنا: يا رسول الله افلا ننابذهم عند ذلك؟ قال: «لا ما اقاموا فيكم الصلاة لا ما اقاموا فيكم الصلاة الا من ولي عليه وال فراه ياتي شيىا من معصية الله فليكره ما ياتي من معصية الله ولا ينزعن يدا من طاعة» . رواه مسلم

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আউফ ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৬৭১-[১১] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের ওপর এমন শাসকবর্গ নিযুক্ত হবে যারা ভালো-মন্দ উভয় প্রকারের কাজ করতে দেখতে পাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি তার অসৎ কাজের প্রতিবাদ করল, সে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেল। আর যে ব্যক্তি অন্তর থেকে ঘৃণা করল, সেও নিরাপদ হয়ে গেল। কিন্তু যে ব্যক্তি উক্ত কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ করল ও শাসকের আনুগত্য করল, তখন সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, এমতাবস্থায় কি আমরা তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করব না? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সালাত কায়িম করে। না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সালাত কায়িম করে। রাবী বলেন, প্রতিবাদ ও মন্দ জানার অর্থ হলো, যে ব্যক্তি অন্তর দিয়ে তা ঘৃণা করে ও অগ্রাহ্য করে। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَكُونُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ تَعْرِفُونَ وَتُنْكِرُونَ فَمَنْ أَنْكَرَ فَقْدَ بَرِئَ وَمَنْ كَرِهَ فَقَدْ سَلِمَ وَلَكِنْ مَنْ رَضِيَ وَتَابَعَ» قَالُوا: أَفَلَا نُقَاتِلُهُمْ؟ قَالَ: «لَا مَا صَلَّوْا لَا مَا صَلَّوْا» أَيْ: مَنْ كَرِهَ بِقَلْبِهِ وَأنكر بِقَلْبِه. رَوَاهُ مُسلم

وعن ام سلمة قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «يكون عليكم امراء تعرفون وتنكرون فمن انكر فقد برى ومن كره فقد سلم ولكن من رضي وتابع» قالوا: افلا نقاتلهم؟ قال: «لا ما صلوا لا ما صلوا» اي: من كره بقلبه وانكر بقلبه. رواه مسلم

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীস দ্বারা শাসকের মাঝে দু’টি গুণের বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। ১) তোমরা শাসকদের কিছু কর্মকে পছন্দ করবে। ২) তোমরা কিছু কর্মকে অপছন্দ করবে। অর্থাৎ তার কিছু কাজ হবে পছন্দনীয়, আর কিছু কর্ম হবে অপছন্দনীয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২২৬৫; মিরকাতুল মাফাতীহ)

উল্লেখিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েব সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন। ইমাম কাযী (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী :

(يَكُونُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ تَعْرِفُونَ وَتُنْكِرُونَ) উক্ত হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাসকের দু’টি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ তিনি উম্মাতকে জানিয়েছেন যে, অচিরেই তোমাদের ওপর কতিপয় শাসক আসবে যাদের কিছু কাজকে তোমরা ভালো মনে করবে আর কিছু কাজকে খারাপ মনে করবে। তিনি এর দ্বারা উদ্দেশ্য নিয়েছেন যে, তাদের কিছু কর্ম সুন্দর হবে আর এর দ্বারা কিছু কর্ম খারাপ হবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী: (فَمَنْ أَنْكَرَ فَقْدَ بَرِئَ) অর্থাৎ যে ব্যক্তি তাদের মন্দ কাজগুলোকে প্রতিহত করল স্বীয় জিহবার মাধ্যমে সে নিফাক্বী থেকে মুক্ত হলো। আর যে ব্যক্তি তা করতে সক্ষম নয় যদি সে মনে মনে ঘৃণা করে তাহলে সে গুনাহের ক্ষেত্রে তাদের সাথে অংশীদারিত্ব হওয়া থেকে নিরাপদ থাকবে।

(وَلٰكِنْ مَنْ رَضِىَ وَتَابَعَ) অর্থ হলো যে ব্যক্তি সন্তুষ্টচিত্তে তাদের কর্মে রাজি থাকবে এবং তাদের খারাপ ‘আমলের অনুসারী হবে তাহলে সে গুনাহ ও শাস্তির হকদার হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

(أَفَلَا نُقَاتِلُهُمْ؟) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম শাসকগণ নিজেরা সালাত আদায় করবে বা মানুষের মাঝে সালাত প্রতিষ্ঠা করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র জুলুম ও ফাসিক্বীর কারণে বিদ্রোহ করা যাবে না। তবে যদি তারা ইসলামের মৌলিক বিষয়ের পরিবর্তন সাধন করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা বৈধ। (শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৮৫৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু সালামাহ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৬৭২-[১২] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেনঃ শীঘ্রই তোমরা আমার পরে স্বজনপ্রীতি এবং এমন সব কাজ দেখবে যা তোমরা পছন্দ করবে না। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! তখন আমাদের করণীয় কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তখন তোমরা তাদের হক আদায় করো। আর তোমাদের হক আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ بَعْدِي أَثَرَةً وَأُمُورًا تُنْكِرُونَهَا» قَالُوا: فَمَا تَأْمُرُنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «أَدُّوا إِلَيْهِم حَقهم وسلوا الله حقكم»

وعن عبد الله بن مسعود قال: قال لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم: «انكم سترون بعدي اثرة وامورا تنكرونها» قالوا: فما تامرنا يا رسول الله؟ قال: «ادوا اليهم حقهم وسلوا الله حقكم»

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে, বান্দার হক আদায় করার জন্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে সাহায্য চাইতে হবে।

ত্বীবী (রহঃ) বলেছেনঃ তোমরা জনগণের শাসকের সাথে যুদ্ধ করবে না তোমাদের অধিকার আদায় করার জন্য। তাদের একচেটিয়া ক্ষমতা গ্রহণ করাকে তোমরা যথেষ্ট মনে করো না। বরং তোমরা তাদের অধিকার পূর্ণ কর। শ্রবণ করা, আনুগত্য করা, দীনের হক আদায় করার মাধ্যমে, তোমরা আল্লাহর নিকট অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। তিনি তোমাদের হক পৌঁছে দিবেন গনীমাতের মাল এবং ফাই-এর মাল প্রদান করার মাধ্যমে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২১৯০)

উল্লেখিত হাদীসের মাধ্যমে উৎসাহিত করা হয়েছে শাসকের কথার আনুগত্য করা এবং শ্রবণ করা। যদিও শাসক জুলুমকারী ও অন্যায়কারী হয়। তার অধিকার আদায় করবে আনুগত্য করার মাধ্যমে তার আনুগত্য থেকে বের হবে না বরং বিনয়ী হয়ে প্রার্থনা করবে আল্লাহ তা‘আলার নিকট কষ্ট দূর হওয়া, তার অনিষ্ট প্রতিহত করা এবং সংশোধন করা শাসকের মাঝে। (শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৮৪৩)

শাসকের স্বৈরাচারী বা একচেটিয়া ক্ষমতা গ্রহণ করা সম্পর্কে অনেকগুলো হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার মধ্য থেকে প্রসিদ্ধ একটি হাদীস বর্ণনা করা হলো যা আল জামি‘ আস্ সগীরে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার পরে অচিরেই তোমরা একচেটিয়া/স্বজনপ্রীতি শাসকের সাক্ষাৎ পাবে। সুতরাং তোমরা ধৈর্য ধারণ কর যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা আমার সাথে সাক্ষাৎ না কর আগামীকাল (কিয়ামতের দিন) হাওযের নিকটে। [আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী ও নাসায়ী] (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৬৭৩-[১৩] ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন সালামাহ্ ইবনু ইয়াযীদ আল জু’ফী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর নবী! আপনি আমাদেরকে এ ব্যাপারে কি নির্দেশ দেন, যদি আমাদের ওপর এমন শাসক চেপে বসে যারা আমাদের থেকে স্বীয় হক আদায় করে নেয়। অথচ তারা আমাদের প্রতি হক আদায় করে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাদের আদেশ মান্য করো এবং আনুগত্য করো। কেননা তাদের কর্তব্য তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করা। আর তোমাদের কর্তব্য তোমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করা। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ: سَأَلَ سَلَمَةُ بْنُ يَزِيدَ الْجُعْفِيُّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ قَامَتْ عَلَيْنَا أُمَرَاءُ يَسْأَلُونَا حَقَّهُمْ وَيَمْنَعُونَا حَقَّنَا فَمَا تَأْمُرُنَا؟ قَالَ: «اسْمَعُوا وَأَطِيعُوا فَإِنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوا وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن واىل بن حجر قال: سال سلمة بن يزيد الجعفي رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: يا نبي الله ارايت ان قامت علينا امراء يسالونا حقهم ويمنعونا حقنا فما تامرنا؟ قال: «اسمعوا واطيعوا فانما عليهم ما حملوا وعليكم ما حملتم» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাষ্ট্রনায়ক বা শাসক ও সাধারণ মানুষ সকলের জন্য কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে তা বাস্তবায়ন বা পালন করা অপরিহার্য। শাসকের দায়িত্ব সাধারণ জনগণের ওপর ইনসাফ কায়িম করা, গনীমাতের মাল প্রদান করা ইত্যাদি। আর জনগণের দায়িত্ব হলো শাসকের কথা শ্রবণ করা এবং কথার আনুগত্য করা, বিপদের সময় ধৈর্য ধারণ করা, শাসকের কাজে সহায়তা করা। সুতরাং উভয়ের জন্য জরুরী হলো তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করা ও সীমালঙ্ঘন না করা।

এই মর্মে মহান আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ করেন : বলুন, আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তবে তার ওপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে সে দায়ী এবং তোমাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্য তোমরা দায়ী। তোমরা যদি তাঁর আনুগত্য কর তবে সৎ পথ পাবে। রসূলদের দায়িত্ব তো কেবল সুস্পষ্টরূপে পৌঁছে দেয়া।

উপরে উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, শাসকের ওপর আল্লাহ তা‘আলা যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা প্রতিষ্ঠা (বাস্তবায়ন) করা জরুরী। যেমন জনগণের মাঝে সমতা সৃষ্টি করা, আদল প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি যখন তারা এটা কায়িম করবে না তখন তাদের ওপর পাপ হবে। আর তোমাদের যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যেমন কথা শোনা, আনুগত্য করা, অধিকার আদায় করা। যখন তোমরা এটা সম্পাদন করবে তখন তোমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা সাওয়াব প্রদান করবেন। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২১৯৯; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৬৭৪-[১৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইমাম বা শাসকের আনুগত্য থেকে দূরে সরে গেল, কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তার কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকবে না। আর যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে যে, তার ঘাড়ে কোনো বায়’আত নেই, সে জাহিলিয়্যাতের ন্যায় মৃত্যুবরণ করবে। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: «مَنْ خَلَعَ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ لَقِيَ اللَّهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا حُجَّةَ لَهُ. وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِي عُنُقِهِ بَيْعَةٌ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً» . رَوَاهُ مُسلم

وعن عبد الله بن عمر قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «من خلع يدا من طاعة لقي الله يوم القيامة ولا حجة له. ومن مات وليس في عنقه بيعة مات ميتة جاهلية» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসে বায়‘আত ভঙ্গ করার ভয়াবহতা বর্ণনা করা হয়েছে। ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ হাত রাখার অর্থ হচ্ছে অঙ্গীকার করা বা বায়‘আত নবায়ন করা। সাধারণতঃ মানুষ হাতের উপর হাত রাখার মাধ্যমে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার অবস্থাকে বুঝে। আর হাত সরানোর মাধ্যমে বায়‘আত ভঙ্গ করার অর্থ নেয়া এর মাধ্যমে তিনি উদ্দেশ্য নিয়েছেন ঐ ব্যক্তিকে যে বায়‘আত ভঙ্গ করে এবং নিজেকে ইমামের অনুগত্য থেকে মুক্ত করে নেয়। এমন ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কিয়ামতের দিন সাক্ষাৎ করবে গুনাগাহগার অবস্থায় তার কোনো ওযর তিনি গ্রহণ করবেন না।

(مَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِىْ عُنُقِه بَيْعَةٌ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে ব্যক্তি মুসলিমদের স্বীকৃত ইমামের বায়‘আত থেকে বের হয়ে যাবে তার জাহিলী মৃত্যু হবে। কিন্তু প্রচলিত ইমামদের বায়‘আত থেকে যে বের হবে তার কোনো দোষ হবে না। (শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৮৫১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৬৭৫-[১৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বনী ইসরাঈল-এর নবীগণ তাদের ওপর শাসন পরিচালনা করতেন, যখন একজন নবী ইন্তেকাল করতেন তখন অপর আরেকজন নবী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতেন। কিন্তু আমার পরে আর কোনো নবী নেই, তবে অনেক খলীফা হবেন। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেনঃ তখন আমাদের প্রতি করণীয় দিক-নির্দেশনা দিন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ প্রথমজনের বায়’আত পূর্ণ করো, অতঃপর তাদের হক আদায় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা শাসিতদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন, তাদের ব্যাপারে যাদের ওপর শাসক নিযুক্ত করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «كَانَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ تَسُوسُهُمُ الْأَنْبِيَاءُ كُلَّمَا هَلَكَ نَبِيُّ خَلَفَهُ نبيٌّ وإِنَّه لَا نبيَّ بعدِي وسيكون حلفاء فَيَكْثُرُونَ» قَالُوا: فَمَا تَأْمُرُنَا؟ قَالَ: «فُوا بَيْعَةَ الْأَوَّلِ فَالْأَوَّلِ أَعْطُوهُمْ حَقَّهُمْ فَإِنَّ اللَّهَ سَائِلُهُمْ عَمَّا استرعاهم»

وعن ابي هريرة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «كانت بنو اسراىيل تسوسهم الانبياء كلما هلك نبي خلفه نبي وانه لا نبي بعدي وسيكون حلفاء فيكثرون» قالوا: فما تامرنا؟ قال: «فوا بيعة الاول فالاول اعطوهم حقهم فان الله ساىلهم عما استرعاهم»

ব্যাখ্যা: প্রথমজনের পর প্রথমজনের বায়‘আত পূর্ণ কর। অর্থাৎ ঐ শাসকের বা আমীরের আনুগত্য কর যে প্রথমে আমীর হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। এরপর ঐ আমীরের আনুগত্য কর, যে তারপর নিযুক্ত হয়েছেন।

সারকথা, একজনের পর আরেকজন ধারাবাহিকভাবে যে আমীর নিযুক্ত হন অনুরূপভাবে তোমরাও ধারাবাহিকভাবে এক আমীরের পর অপর আমীরের আনুগত্য কর। অবশ্য যদি একই সময় দু’ ব্যক্তি আমীর হওয়ার দাবী করে তাহলে তোমরা ঐ ব্যক্তির বায়‘আত পূর্ণ কর যিনি প্রথমে নিযুক্ত হয়েছেন।

তোমাদের ওপর তাদের যে হক ও অধিকার রয়েছে তা তোমরা আদায় কর। যদিও তারা তোমাদের হক আদায় না করে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। তখন তাদের থেকে জনগণের হক আদায় করে নেয়া হবে। যদি তারা হক আদায় করতে সক্ষম না হয়, তাহলে তাদেরকে কঠিন শাস্তির মুখাপেক্ষী হতে হবে।

উল্লেখিত হাদীসে বলা হয়েছে, যখন বানী ইসরাঈলের কোনো ফাসাদ প্রকাশ পেত তখন আল্লাহ রববুল ‘আলামীন একজন নাবী তাদের মাঝে প্রেরণ করতেন। ঐ নাবী মৃত্যুবরণ করলে অন্য একজন নাবী প্রেরণ করতেন, তিনি তাদের সকল বিষয় দেখা শোনা করতেন এবং তারা তাওরাতের যা পরিবর্তন করেছে তা ঠিক করে দিতেন।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ চাই তারা দ্বিতীয়জনের নিকট চুক্তিবদ্ধ হোক, প্রথমজনের চুক্তিবদ্ধতা জেনে বা না জেনে। চাই তারা একই শহরে হোক বা একাধিক শহরে হোক, চাই তারা খলীফার শহরে হোক বা দূরে হোক- এটাই সঠিক মত যা জুমহূর ‘আলিমগণ বলেছেন। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৪৫৫; শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৮৪২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৬৭৬-[১৬] আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন দু’ খলীফার বায়’আত করা হয়, তখন তাদের দ্বিতীয়জনকে হত্যা করে ফেলো। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا بُويِعَ لِخَلِيفَتَيْنِ فاقتُلوا الآخِرَ منهُما» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي سعيد قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اذا بويع لخليفتين فاقتلوا الاخر منهما» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসের মাধ্যমে বুঝা যায় বা জানা যায় যে, একটি রাষ্ট্রে একই সময়ে দু’ জন খলীফা বা শাসকের নিকট বায়‘আত করা বৈধ না। যদি কোনো রাষ্ট্রে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি খলীফা দাবী করে তা নিয়ে মুহাদ্দিসের নিকট মতভেদ রয়েছে।

* কাযী (রহঃ) বলেছেনঃ এখানে ‘হত্যা করা’ দ্বারা উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে লড়াই করা।

বলা হয়: অপরজনের বায়‘আতকে বাতিল করা এবং তার নির্দেশকে দুর্বল করা।

* ইমাম হারামায়ন (রহঃ) তার ‘‘ইরশাদ’’ গ্রন্থে বলেছেনঃ আমাদের সঙ্গীগণ বলেছেন, দু’জন ব্যক্তির নিকটে চুক্তি করা, বায়‘আত সম্পাদন করা জায়িয নেই।

উল্লেখিত হাদীসে বলা হয়েছে, যখন দু’জন খলীফা বায়‘আত গ্রহণ করবে তখন প্রথমজনের বায়‘আত সঠিক হিসেবে গণ্য হবে। আর দ্বিতীয়জনকে হত্যা করতে হবে।

ইমাম কাযী (রহঃ) বলেনঃ উল্লেখিত হাদীসে (اقْتُلُوا) শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য লড়াই করা, কেননা এর মাধ্যমে চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছা যায়।

কেউ কেউ বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য অপরজনের বায়‘আত বাতিল করে দিবে।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ «أَهْلِ الْبَغْيِ» সীমালঙ্ঘনকারীর সাথে যুদ্ধ করবে কোনো প্রকার অঙ্গীকার ভঙ্গ ছাড়াই। কেননা তারা এমন ব্যক্তির সাথে যুদ্ধ করছে যে, ইমামের সাথে যুদ্ধ করাকে আবশ্যক করে নিয়েছে। মুহাদ্দিসগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, একই যুগে দু’ ব্যক্তির হাতে বায়‘আত নেয়া বৈধ নয়। (শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৮৫৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৬৭৭-[১৭] ’আরফাজাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ নিঃসন্দেহে শীঘ্রই কলহ-বিবাদ ও বিশৃঙ্খলার উদ্ভব হবে। সুতরাং উম্মাতের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত থাকার পরও যে ব্যক্তি বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়, তাকে তরবারির আঘাতে হত্যা করে ফেলো, সে যে কেউ হোক না কেন। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ عَرْفَجَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّهُ سَيَكُونُ هَنَاتٌ وَهَنَاتٌ فَمَنْ أَرَادَ أَنْ يُفَرِّقَ أَمْرَ هَذِهِ الْأُمَّةِ وَهِيَ جَمِيعٌ فَاضْرِبُوهُ بِالسَّيْفِ كَائِنًا مَنْ كانَ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن عرفجة قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «انه سيكون هنات وهنات فمن اراد ان يفرق امر هذه الامة وهي جميع فاضربوه بالسيف كاىنا من كان» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: অচিরেই মুসলিমদের মাঝে জমিনের উপরে ফিতনা-ফাসাদ, হাঙ্গামা, শত্রুতা প্রকাশ পাবে। মানুষ ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অনুসন্ধানকামী হবে। নিশ্চয় প্রথমে যে ইমাম, খলীফার বায়‘আত গ্রহণ করা হয়েছে নেতৃত্ব তার নিকটেই থাকবে, তারা মুসলিমদের ঐক্য বিনষ্ট করা ও ফাটল সৃষ্টি করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(كَائِنًا مَنْ كانَ) ‘‘চাই সে যে কেউ হোক না কেন?’’

* ইমাম নাসায়ী ইবনু হিব্বান বর্ণনা করেছেন : ‘আর্ফাজাহ্ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় অচিরেই ফাসাদণ্ডহাঙ্গামা সৃষ্টি হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি দেখবে জামা‘আতের ঐক্য বিচ্ছিন্ন করতে অথবা উম্মাতের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত থাকার পরও পার্থক্য করতে চায়। সে যে কেউ হোক না কেন তাকে হত্যা করবে। কেননা আল্লাহর ক্ষমতা, শক্তি জামা‘আতের ঐক্যতার উপরে রয়েছে। কেননা শায়ত্বন জামা‘আতের ঐক্য বিনষ্টকারীর সাথে দৌড়ায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

উল্লেখিত হাদীসে هَنَاتٌ শব্দের অর্থ হলো অনিষ্ট বা খারাপী কিংবা বিশৃঙ্খলা। এর দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ সকল ফিতনাহ্ ফাসাদ যা মানুষের নিকট ধারাবাহিকভাবে আসবে।

উক্ত হাদীসের গোপন অর্থ হচ্ছে অচিরেই পৃথিবীতে বিভিন্ন ফিতনা-ফাসাদ প্রকাশ পাবে নেতৃত্বের লোভে, প্রত্যেক দিক থেকে ঐ সময় ইমাম হিসেবে গণ্য হবে ঐ ব্যক্তি, যার বায়‘আত প্রথমে সংঘটিত হয়েছে। মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থায় যে ব্যক্তি মুসলিম উম্মাহর মাঝে ফাটল সৃষ্টি করে ইসলাম তার গর্দান উড়িয়ে দেয়ার জন্য আদেশ করেছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (كَائِنًا مَنْ كانَ) এর অর্থ হচ্ছে সে ব্যক্তির আমার বংশধর হোক বা অন্য কেউ হোক সর্বাবস্থায় খিলাফাতের হকদার হবে প্রথমজন। (শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৮৫২; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৪৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৬৭৮-[১৮] উক্ত রাবী [’আরফাজাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ একজন ন্যায়সঙ্গতভাবে নির্বাচিত ব্যক্তির অধীনে তোমরা ঐক্যবদ্ধ থাকা অবস্থায় যদি কেউ তোমাদের ঐক্য ও সংহতির মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়। সুতরাং তোমরা তাকে হত্যা করে ফেলো। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ أَتَاكُمْ وَأَمْرُكُمْ جَمِيعٌ عَلَى رَجُلٍ وَاحِدٍ يُرِيدُ أَنْ يَشُقَّ عَصَاكُمْ أوْ يُفرِّقَ جماعتكم فَاقْتُلُوهُ» . رَوَاهُ مُسلم

وعنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «من اتاكم وامركم جميع على رجل واحد يريد ان يشق عصاكم او يفرق جماعتكم فاقتلوه» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, যে ব্যক্তি শাসক বা খলীফার বিরুদ্ধাচরণকারী ও রাষ্ট্রদ্রোহী হবে তাকে হত্যা করা হবে। অথাব ইচ্ছা করবে মুসলিমদের কথার মাঝে, ঐক্যতার মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করতে। বরং এটা থেকে নিষেধ করতে। অতঃপর যদি এটা থেকে বিরত না থাকে তাহলে হত্যা করবে। যদি মন্দের দিকে ধাবিত হয় তাহলে তাকে হত্যা করবে। (শারহে মুসলিম ১২ খন্ড, হাঃ ১৮৫২-৬০)

‘আল বিদায়াহ্ ওয়ান নিহায়াহ্’ গ্রন্থাকার বলেছেনঃ তখনই লাঠি ভাঙ্গবে যখন জামা‘আতে বিচ্ছেদ ঘটবে।

‘‘সে তোমাদের লাঠি ভাঙ্গতে চায়’’ এর দ্বারা উপমা দেয়া হয়েছে যে, মুসলিমদের ঐক্যের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করা বুঝানো হয়েছে। একটি লাঠির সাথে তুলনা করার মাধ্যমে। তাদের কোনো বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করা একটি লাঠির মতো যখনই তাদের মাঝে মতপার্থক্য ঘটবে তখনই তাদের লাঠি ভাঙ্গবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৬৭৯-[১৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি খলীফার (ইমামের) বায়’আত করল, স্বীয় হাতে হাত দিয়ে আনুগত্যের অঙ্গীকারাবদ্ধ হলো এবং অন্তর দিয়ে সে বায়’আতের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করল। সে যেন পরিপূর্ণরূপে তার আনুগত্য করে। তথাপিও যদি কেউ এসে (খিলাফাতের দাবি করে) প্রথম ইমামের বিপক্ষে অবস্থান নেয়, তাহলে তোমরা তার গর্দান ভেঙ্গে দাও। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «من بَايَعَ إِمَامًا فَأَعْطَاهُ صَفْقَةَ يَدِهِ وَثَمَرَةَ قَلْبِهِ فَلْيُطِعْهُ إِنِ اسْتَطَاعَ فَإِنْ جَاءَ آخَرُ يُنَازِعُهُ فاضربوا عنق الآخر» . رَوَاهُ مُسلم

وعن عبد الله بن عمرو قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من بايع اماما فاعطاه صفقة يده وثمرة قلبه فليطعه ان استطاع فان جاء اخر ينازعه فاضربوا عنق الاخر» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসে বায়‘আতের গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী صَفْقَةَ يَدِه

নিহায়াহ্ গ্রন্থে এসেছে الصَفْقَةَ শব্দের অর্থ হচ্ছে হাতে হাত মারা। কেননা দু’জন চুক্তিবদ্ধকারী শপথ বা বায়‘আতের সময়ে একে অপরের হাতে হাত রেখে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়। কেউ কেউ বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সম্পদ বা সন্তানাদিসহ বায়‘আত বুঝানো হয়েছে।

ثَمَرَةَ قَلْبِه এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো একনিষ্ঠভাবে সন্তুষ্টিচিত্তে ইমামের আনুগত্য করা। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৬৮০-[২০] ’আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেনঃ নেতৃত্ব বা পদাধিকার প্রত্যাশা করো না। কেননা তোমার চাওয়ার কারণে যদি তা দেয়া হয়, তাহলে তা তোমার ওপর ন্যস্ত করা হবে। আর যদি তা তোমাকে চাওয়া ব্যতীত দেয়া হয়, তবে তুমি এ ব্যাপারে সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَسْأَلِ الْإِمَارَةَ فَإِنَّكَ إِنْ أُعْطِيتَهَا عَنْ مَسْأَلَةٍ وُكِلْتَ إِلَيْهَا وَإِنْ أُعْطِيتَهَا عنْ غيرِ مَسْأَلَة أعنت عَلَيْهَا»

وعن عبد الرحمن بن سمرة قال: قال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا تسال الامارة فانك ان اعطيتها عن مسالة وكلت اليها وان اعطيتها عن غير مسالة اعنت عليها»

ব্যাখ্যা: নেতৃত্ব বা পদ চাওয়া সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ করেন : ‘‘ইউসুফ (আঃ) বললেন, আমাকে দেশের ধনভাণ্ডারের উপর কর্তৃত্ব প্রদান করুন। আমি বিশ্বস্ত রক্ষক ও সুবিজ্ঞ।’’ (সূরা ইউসুফ ১২ : ৫৫)

হাদীসের উপকারিতা: ১. নেতৃত্বের পদ চেয়ে নেয়া অপছন্দনীয় চাই তা প্রশাসন হোক বা বিচার হোক ইত্যাদি। ২. বর্ণনা করা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি নেতৃত্ব চেয়ে নেয় তার নিকটে আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য থাকে না। এজন্যই ঐ কাজ তার জন্য যথেষ্ট না। সুতরাং উচিত নেতৃত্ব না চাওয়া। এ সম্পর্কে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমরা গভর্নর নিযুক্ত করি না, যে অনুসন্ধান করে বা আগ্রহ প্রকাশ করে। (শারহে মুসলিম ১১ খন্ড, হাঃ ১৬৫২-১৯)

হাদীসের সারমর্ম: যে ব্যক্তি নেতৃত্ব চেয়ে নেয়। অতঃপর চাওয়ার কারণে প্রদান করা হয়। তাহলে আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য উঠিয়ে নেয়া হয়। তাঁর আগ্রহের কারণে অবহিত হওয়া যায়, নিশ্চয় নেতৃত্ব চেয়ে নেয়া মাকরূহ বা অপছন্দনীয়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৯২৭)

কিছু শর্তের সাথে পদ ও নেতৃত্ব চেয়ে নেয়া জায়িয আছে। যেমন কোনো ক্ষমতা নেতৃত্ব ও মর্যাদার লোভ না থাকা, বরং ন্যায় ইনসাফের সাথে সঠিক পদ্ধতিতে হক আদায় করার উদ্দেশ্য থাকা। এটাই উদ্দেশ্য ছিল ইউসুফ (আঃ) এবং খুলাফায়ে রাশিদীনগণের। (ফাতহুল বারী ১৩শ খন্ড, হাঃ ৩৬৮০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »