পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মদের বর্ণনা ও মধ্যপায়ীকে ভীতিপ্রদর্শন করা
৩৬৫০-[১৭] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন এমন প্রত্যেক জিনিস যা নেশা উদ্রেক (আনয়ন) করে এবং জ্ঞান-বুদ্ধি বিলোপ করে দেয়। (আবূ দাঊদ)[1]
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ كُلِّ مُسْكِرٍ ومقتر. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: নিহায়াহ্ গ্রন্থে বলা হয়েছে, اَلْمُقْتِرٍ হলো যা পান করলে শরীরকে অবসাদগ্রস্ত করে ফেলে। ত্বীবী বলেনঃ এটা থেকে দলীল প্রমাণ করা যাবে ভাঙ, হাসিস অন্যান্য বস্তু যা বিবেকশূন্য করে তোলে তা হারাম। কারণ হলো তা বিবেককে লোপ করে দেয় আর বর্ণনা হয়ে থাকে যে, একজন প্রভাবশালী লোক মিসরের কায়রোতে আসলো আর হাসিস হারাম হওয়ার ব্যাপারে সে দলীল চাইল। আর এজন্য ‘উলামাগণের সমাবেশ হলো সেখানে তদানিন্তন যুগের ‘উলামাগণ আসলেন। যায়নুদ্দীন ‘ইরাক্বী এ হাদীস দ্বারা দলীল সাব্যস্ত করলেন উপস্থিত ‘উলামাহ্ সবাই আশ্চর্য হলেন। আর ‘ইরাক্বী ও ইবনু তায়মিয়্যাহ্ বলেনঃ ইজমা হয়েছেন যে হাসিস হারাম আর যে এটাকে হালাল মনে করবে সে কাফির।
ইবনু তাইমিয়্যাহ্ বলেনঃ হাসিসের সর্বপ্রথম আবিষ্কার হয় হিজরীর ষষ্ঠ শতকের শেষের দিকে যখন তাতার সাম্রাজ্যের প্রকাশ পায়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৬৫০)
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মদের বর্ণনা ও মধ্যপায়ীকে ভীতিপ্রদর্শন করা
৩৬৫১-[১৮] দায়লাম আল হিম্ইয়ারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমরা শীতপ্রধান দেশে বসবাস করি। সেখানে আমরা কঠোর পরিশ্রমের কাজ করি এবং গম দ্বারা মদ প্রস্তুত করি। তাই তা পান করে আমরা আমাদের শরীরে শক্তি সঞ্চয় করি এবং শীত হতে আত্মরক্ষা করি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা-কি নেশা উদ্রেক করে? আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তা থেকে বিরত থাকো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, (নিয়মিত আহারের দরুন) মানুষ তা ছাড়তে পারবে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যদি তারা তা ছাড়তে না পারে, তাহলে তাদের সাথে যুদ্ধ কর। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ دَيْلَمٍ الْحِمْيَرِيِّ قَالَ: قُلْتُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا بِأَرْضٍ بَارِدَةٍ وَنُعَالِجُ فِيهَا عَمَلًا شَدِيدًا وَإِنَّا نَتَّخِذُ شَرَابًا مِنْ هَذَا الْقَمْحِ نَتَقَوَّى بِهِ عَلَى أَعْمَالِنَا وَعَلَى بَرْدِ بِلَادِنَا قَالَ: «هَلْ يُسْكِرُ؟» قُلْتُ: نَعَمْ قَالَ: «فَاجْتَنِبُوهُ» قُلْتُ: إِنَّ النَّاسَ غَيْرُ تَارِكِيهِ قَالَ: «إِنْ لَمْ يَتْرُكُوهُ فقاتلوهم» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মদের বর্ণনা ও মধ্যপায়ীকে ভীতিপ্রদর্শন করা
৩৬৫২-[১৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ, জুয়া, কূবাহ্ (দাবা) ও গুবায়রা (গম হতে প্রস্তুতকৃত মদ) থেকে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেনঃ নেশা আনয়নকারী প্রত্যেক জিনিসই হারাম। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو: أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَالْكُوبَةِ وَالْغُبَيْرَاءِ وَقَالَ: «كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: নিহায়াহ্ গ্রন্থে বলা হয়েছে, পাশা বা দাবা খেলা অথবা তবলা ও সারিন্দা ইত্যাদি বাজানো হারাম। আর الْغُبَيْرَاءِ ‘গুবায়রা’ হলো এক প্রকার মদ যা হাবশার লোকেরা ভুট্টা থেকে তৈরি করে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মদের বর্ণনা ও মধ্যপায়ীকে ভীতিপ্রদর্শন করা
৩৬৫৩-[২০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, জুয়ারি, অনুগ্রহ করে খোঁটাদানকারী ও সর্বদা মদ্যপায়ী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (দারিমী)[1]
وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَاقٌّ وَلَا قَمَّارٌ وَلَا مَنَّانٌ وَلَا مُدْمِنُ خَمْرٍ» . رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ: «وَلَا وَلَدَ زِنْيَةٍ» بَدَلَ «قمار»
ব্যাখ্যা: الْمَنَّان তথা অনুগ্রহ করে খোঁটাদানকারী।
ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ মানুষকে খোটা দেয়ার উদ্দেশে যে দান করে এবং যাকে দান করে তার ওপর গর্ব অহংকার করে এটা একটি ঘৃণিত কাজ। আর খোটা সৎকর্মকে নষ্ট করে আর এর মাধ্যমে আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট হয় যেমন আল্লাহর বাণী: لَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ ‘‘তাদের জন্য অশেষ পুরস্কার’’- (সূরা ফুস্সিলাত ৪১ : ৮)। ‘জারজ সন্তান জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ অর্থ সে যদি তার পিতা-মাতার ন্যায় এই কাজে লিপ্ত হয়। এ শব্দের দ্বারা ইঙ্গিত করা সে হারাম বীর্যে সে সন্তান জন্ম লাভ করে সেও সাধারণত হারাম কাজে লিপ্ত থাকে অথবা স্বয়ং ব্যভিচারীকে জারজ সন্তান বলা হয়েছে যেন তার কুকর্মের দ্বারা প্রমাণ করছে সে এই পদার্থ থেকে জন্মেছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মদের বর্ণনা ও মধ্যপায়ীকে ভীতিপ্রদর্শন করা
৩৬৫৪-[২১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা আমাকে সমগ্র দুনিয়াবাসীর জন্য রহমত এবং পথ-প্রদর্শক হিসেবে প্রেরণ করেছেন। আমার সে মহান প্রভু আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন- সকল প্রকার বাদ্যযন্ত্র, দেব-দেবীর মূর্তি ও শূলি ক্রুশ এবং জাহিলী যুগের রসম-রেওয়াজ মূলোৎপাটন করার। আর আমার মহান প্রতিপালক তাঁর ক্ষমতার কসম করে বলেছেনঃ আমার যে কোনো বান্দা এক ঢোক মদ পান করবে, আমি তাকে অবশ্যই অনুরূপ জাহান্নামীদের পুঁজ পান করাব। আর যে ব্যক্তি আমার ভয়ে ভীত হয়ে তা পান করা বর্জন করবে, আমি নিশ্চয় তাকে আমার কূপ থেকে (জান্নাতের সুপেয়) পান করাব। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى بَعَثَنِي رَحْمَة للعالمينَ وهُدىً لِلْعَالِمِينَ وَأَمَرَنِي رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ بِمَحْقِ الْمَعَازِفِ وَالْمَزَامِيرِ وَالْأَوْثَانِ وَالصُّلُبِ وَأَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ وَحَلَفَ رَبِّي عزَّ وجلَّ: بعِزَّتي لَا يشربُ عبدٌ منْ عَبِيدِي جرعة خَمْرٍ إِلَّا سَقَيْتُهُ مِنَ الصَّدِيدِ مِثْلَهَا وَلَا يَتْرُكُهَا مِنْ مَخَافَتِي إِلَّا سَقَيْتُهُ مِنْ حِيَاضِ الْقُدس . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: (أَمْرُ الْجَاهِلِيَّةِ) জাহিলী যুগের রসম-রেওয়াজ বলতে নিহায়াহ্ করা তথা মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে জোরে জোরে কাঁদা এবং খানার আয়োজন করা। পাপ কাজের জন্য সাহসিকতা প্রকাশ করা, উত্তেজিত করা এবং বংশ নিয়ে গর্ব করা।
ত্বীবী বলেনঃ স্বতন্ত্রভাবে মদের বিষয়টি উল্লেখ করার কারণ হলো। তা হলো «أُمُّ الْخَبَائِثِ» তথা পাপ কাজ সংঘটিত হওয়ার মূল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মদের বর্ণনা ও মধ্যপায়ীকে ভীতিপ্রদর্শন করা
৩৬৫৫-[২২] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন শ্রেণীর লোকের জন্য আল্লাহ তা’আলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। সর্বদা মদ্যপায়ী, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং দাইয়ূস (পাপাচারী কাজে পরিবারকে বাধা দেয় না)। (আহমাদ ও নাসায়ী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ثَلَاثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِمُ الْجَنَّةَ: مُدْمِنُ الْخَمْرِ وَالْعَاقُّ وَالدَّيُّوثُ الَّذِي يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخَبَثَ . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالنَّسَائِيّ
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মদের বর্ণনা ও মধ্যপায়ীকে ভীতিপ্রদর্শন করা
৩৬৫৬-[২৩] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন শ্রেণীর ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না- সর্বদা মদ্যপায়ী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী এবং জাদু-টোনায় আস্থাভাজনকারী। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ أَبِي مُوسَى
الْأَشْعَرِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ثَلَاثَةٌ لَا تَدْخُلُ الجنَّةَ: مُدْمنُ الخمرِ وقاطِعُ الرَّحِم ومصدق السحر رَوَاهُ أَحْمد
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মদের বর্ণনা ও মধ্যপায়ীকে ভীতিপ্রদর্শন করা
৩৬৫৭-[২৪] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক মদ্যপায়ী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, সে মূর্তিপূজক হিসেবে আল্লাহ তা’আলার নিকট উপস্থিত হবে। (আহমাদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مُدْمِنُ الْخَمْرِ إِنْ مَاتَ لقيَ اللَّهَ كعابِدِ وثن» . رَوَاهُ أَحْمد
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মদের বর্ণনা ও মধ্যপায়ীকে ভীতিপ্রদর্শন করা
৩৬৫৮-[২৫] আর ইবনু মাজাহ্ হাদীসটি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন।[1]
وروى ابْن مَاجَه عَن أبي هُرَيْرَة
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মদের বর্ণনা ও মধ্যপায়ীকে ভীতিপ্রদর্শন করা
৩৬৫৯-[২৬] আর বায়হাক্বী শু’আবুল ঈমান-এ বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ ইবনু ’উবায়দুল্লাহ (রহঃ) হতে, তিনি তার পিতা হতে। আর ইমাম বায়হাক্বী বলেন, ইমাম বুখারী তাঁর ’তা-রীখ’ (ইতিহাস) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, মুহাম্মাদ ইবনু ’আবদুল্লাহ থেকে, আর তিনি তার পিতা থেকে।[1]
وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ» عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عبيد الله عَن أَبِيه. قَالَ: ذَكَرَ الْبُخَارِيُّ فِي التَّارِيخِ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عبد الله عَن أَبِيه
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মদের বর্ণনা ও মধ্যপায়ীকে ভীতিপ্রদর্শন করা
৩৬৬০-[২৭] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলতেন, আমি (পরোয়া করি না) মদ পান করি অথবা আল্লাহ তা’আলার পরিবর্তে দেব-দেবীদের পূজা করি- এ দু’টির মাঝে কোনো পার্থক্য করি না। (নাসায়ী)[1]
وَعَنْ أَبِي مُوسَى أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ: مَا أُبالي شرِبتُ الخمرَ أَو عبدْتُ هذهِ السَّارِيةَ دونَ اللَّهِ. رَوَاهُ النَّسَائِيّ