পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৫৪-[১৩] ’আমর ইবনু শু’আয়ব তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, আমার নিকট ধন-সম্পদ আছে এবং আমার পিতা দারিদ্র্যতার দরুন আমার ধন-সম্পদের মুখাপেক্ষী। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি এবং তোমার ধন-সম্পদ তোমার পিতার। তোমাদের সন্তান-সন্ততিগণ তোমাদের উত্তম রিযক। সুতরাং তোমরা সন্তানের উপার্জন খাও। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ: أَنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنَّ لِي مَالًا وَإِنَّ وَالِدِي يَحْتَاجُ إِلَى مَالِي قَالَ: «أَنْتَ وَمَالُكَ لِوَالِدِكَ إِنَّ أَوْلَادَكُمْ مِنْ أَطْيَبِ كَسْبِكُمْ كُلُوا مِنْ كَسْبِ أَوْلَادِكُمْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ ماجة
ব্যাখ্যা: (أَنْتَ وَمَالُكَ لِوَالِدِكَ) ‘‘তুমি এবং তোমার মাল তোমার পিতার।’’ হাদীসের মর্ম হলো, পিতা যদি ছেলের মালের মুখাপেক্ষী হয় তবে ছেলের জন্য জরুরী হলো পিতার খোরাক ও চলার পরিমাণ খরচ নিতে পিতাকে বাধা না দেয়া। কেননা ছেলের ওপর তা আদায় করা ওয়াজিব। তাই পিতা নিজেই যদি এই পরিমাণ নিয়ে নেন তবে বাধা দেয়ার কিছু নেই। ছেলের যদি মাল না থাকে তবে তাকে পিতার জন্য উপার্জন করা ওয়াজিব। এটাকেই বলা হয়েছে ‘তুমি এবং তোমার মাল তোমার পিতার’। অর্থাৎ মাল থাকলে পিতা ঐ মাল থেকে নিবে, আর মাল না থাকলে তুমি পিতার জন্য উপার্জন করবে।
হাদীসের পরবর্তী অংশ পূর্ববর্তী অংশের অর্থকে স্পষ্ট করে দিয়েছে। অর্থাৎ ‘‘তোমাদের সন্তান তোমাদের কামাইয়ের সর্বোত্তম পন্থা, তোমরা তাদের কামাই থেকে খাও’’ এই অংশ প্রথম অংশের ব্যাখ্যা স্বরূপ।
হাদীস থেকে সন্তানের ওপর পিতার খোরাকের দায়িত্বের মাসআলাটি বের হয়। সন্তান তার মাল থেকে বা উপার্জন করে পিতার খোরাক বহন করবে। মাল থাকাবস্থায় খোরাক দিতে অবহেলা করলে পিতার জন্য তা নিয়ে নেয়া বৈধ রয়েছে।
তবে এই হাদীস থেকে পিতা তার ছেলের মালের মালিক হয়ে যাওয়া এবং এবং তার ইচ্ছামত ব্যয় করার অধিকার ফুকাহায়ে কিরামের কেউই দেন না। কেননা সবাই নিজ নিজ মালের মালিক। নির্ধারিত শারী‘আত পন্থা ছাড়া কেউ অন্যের মালের মালিক হয় না। তাই পিতাও ছেলের মালের মালিক হবে না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৫২৭)
বর্ণিত হাদীসে ছেলের মালে পিতার একটি ন্যায়সঙ্গত অধিকার দেয়া হয়েছে। পিতাকে ছেলের মালের মালিক বানিয়ে দেয়া হয়নি।
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৫৫-[১৪] উক্ত রাবী (’আমর ইবনু শু’আয়ব) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, আমি একজন হতদরিদ্র মানুষ, আমার সহায়-সম্বল নেই, কিন্তু আমার তত্ত্বাবধানে একজন (সম্পদশালী) ইয়াতীম আছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি অপব্যয়ী না হয়ে, মিতব্যয়ী হয়ে, পুঁজি না করে তোমার প্রতিপালিত ইয়াতীমের ধন-সম্পদ হতে খেতে পার। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعنهُ وَعَن أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ: أَنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنِّي فَقِيرٌ لَيْسَ لِي شَيْءٌ وَلِي يَتِيمٌ فَقَالَ: «كُلْ مِنْ مَالِ يَتِيمِكَ غَيْرَ مُسْرِفٍ وَلَا مُبَادِرٍ وَلَا مُتَأَثِّلٍ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَه
ব্যাখ্যা: ইয়াতীম হলো যে নাবালক শিশুর পিতা নেই। ইয়াতীম বাচ্চার লালন পালন যদি এমন কারো দায়িত্বে আসে যে নিজে দরিদ্র, তবে সে তার দেখাশুনা করছে হিসেবে ইয়াতীমের মাল থেকে ভক্ষণ করতে পারবে। তবে এই ব্যক্তির জন্য ইয়াতীমের মাল থেকে ভক্ষণ করতে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
এক. (غَيْرَ مُسْرِفٍ) অপচয় করবে না অর্থাৎ প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবে না, বরং দরিদ্র ব্যক্তি সাধারণত যে খাবার খায় সেই খাবার খাবে।
দুই. (وَلَا مُبَادِرٍ) অর্থাৎ খেতে দ্রুত করবে না। খেতে দ্রুত করার দু’টি অর্থ উল্লেখ করা হয়।
এক. প্রয়োজনের আগে আগে খাওয়া। অর্থাৎ দরিদ্রের ইয়াতীমের মাল থেকে খাওয়ার বৈধতা হচ্ছে একান্ত প্রয়োজন পড়লে। তাই প্রয়োজন পড়ার আগেই খেয়ে নেয়া ঠিক নয়। আরেকটি অর্থ হলো: ইয়াতীম বালেগ হওয়ার পূর্বেই তার মাল তড়িঘড়ি করে খেয়ে শেষ করে দেয়া, যাতে করে বালেগ হয়ে সে আর কোনো মালের দাবী করতে না পারে। কুরআনের আলোকে এই অর্থটি অগ্রগণ্য। যেহেতু কুরআনে বলা হয়েছে- ‘‘ইয়াতীমের মাল প্রয়োজনাতিরিক্ত খরচ করো না বা তারা বড় হয়ে যাবে মনে করে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলো না।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৬)
তিন. (وَلَا مُتَأَثِّلٍ) এই বাক্যেরও দু’টি অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে।
[এক] ইয়াতীমের মাল কাজে না লাগিয়ে তার মূল মাল খেয়ে নেয়া। [দুই] ইয়াতীমের মালকে নিজের মালের সাথে মিশিয়ে এটাকে ব্যবসার মূলধন বানিয়ে ব্যবসা করা, যাতে ইয়াতীম বড় হলে এই মাল চাইতে না পারে। দ্বিতীয় অর্থটা অনেকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কারণ কুরআনে ইয়াতীমের মাল ভক্ষণের দু’টি শর্ত দেয়া হয়েছে। তাই দ্বিতীয় অর্থ গ্রহণ করলে দুই শর্তই থাকে এবং এটি কুরআনের আয়াতের তাফসীরের ন্যায় হয়ে যায়। প্রথম অর্থটির কথা কুরআনে উল্লেখ নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৫৬-[১৫] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাণ-ওষ্ঠাগতপ্রায় অবস্থায় বারবার বলছিলেন, তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হও এবং অধীনস্থ দাস-দাসীগণের হক আদায় কর। (বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান)[1]
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ فِي مَرَضِهِ: «الصَّلَاةَ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان
ব্যাখ্যা: (وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ) শাব্দিক অর্থঃ আর তোমাদের ডান হাত যার মালিক। ডান হাত যার মালিক বলতে কেউ কেউ মনে করেছেন এখানে যাকাতের কথা বলা হয়েছে। কেননা কুরআনে যেখানেই সালাতের কথা এসেছে সেখানেই যাকাতের কথা এসেছে। তাই রসূল তার মৃত্যুশয্যায় সালাত ও যাকাতের প্রতি যত্নবান হতে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে কুরআন ও হাদীসে এ বাক্যটি ব্যবহার করে, অর্থাৎ ‘তোমাদের ডান হাত যার মালিক’ বলে দাসকেই বুঝানো হয়েছে এবং দাস বুঝাতে এই বাক্যের ব্যবহার কুরআনের একাধিক জায়গায় করা হয়েছে। তাই হাদীসের বাহযত অর্থ এটাই যে, তোমরা সালাত ও তোমাদের দাসদের প্রতি যত্নবান হবে। অর্থাৎ মালিক হিসেবে তোমাদের ওপর যতটুকু দায়িতব রয়েছে তা আদায় করবে। স্বাভাবিক তাদের সাথে একজন স্বাধীন মানুষের মতো আচরণ করা হয় না। তাই মহান আদর্শ মানব হিসেবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মৃত্যশয্যায়ও এই ওয়াসিয়্যাত করতে ভুলেননি।
আজ যারা মুসলিমদেরকে মানবতার শিক্ষা দেয়, এসব হাদীস থেকে তাদের যেমন শিক্ষা নেয়া উচিত তেমনি মুসলিমদের যারা নিজের রসূল ব্যতীত অন্যকে মানবতার শিক্ষক মনে করে তাদেরও শিক্ষা নেয়া উচিত। তবে আফসোস যে, আমরা আজ রসূলের আদর্শ থেকে এতই দূরে সরেছি যে, কাফিররা আমাদের পূর্ব পুরুষ থেকে মানবতা শিখে আজ তারা আমাদের জন্য মানবতা, সহমর্মিতার আদর্শ হয়ে গেছে। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝা এবং রসূলের আদর্শে আদর্শিত হওয়ার তাওফীক দিন। আমীন। (সম্পাদক)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৫৭-[১৬] আর আহমাদ ও আবূ দাঊদ (রহঃ) ’আলী হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।[1]
وَرَوَى أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ عَنْ عَلِيٍّ نَحْوَهُ
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৫৮-[১৭] আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অধীনস্থ দাস-দাসীদের সাথে অসদাচরণকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ سَيِّئُ الْمَلَكَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: (سَيِّئُ الْمَلَكَةِ) বলা হয় যে তার অধীনস্থ দাস বা দাসীর সাথে মন্দ আচরণ করে। দাস দাসীর সাথে মন্দ আচরণ তার চরিত্র খারাপ- এ কথা প্রমাণ করে। কারণ ভালো চরিত্রের অধিকারী দাস বা দাসীর সাথে মন্দ আচরণ করতে পারে না। আর মন্দ চরিত্র নিন্দনীয় যা অপমান ও জাহান্নামে প্রবেশের কারণ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
অনেক মানুষ পাহাড় পরিমাণ নেক ‘আমল নিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তাকে জাহান্নামে যেতে হবে। কেননা বিচারের মাঠেই তার সব আ‘মাল শেষ হয়ে যাবে। যাদের সাথে সে দুর্ব্যবহার বা মন্দ আচরণ করেছে বিচারের মাঠে সব নেক আ‘মাল তাদেরকে দিয়ে শেষ হয়ে গেলে শেষ পর্যন্ত অন্যের গুনাহ নিজের আ‘মালনামায় বহন করে তাকে জাহান্নামে যাওয়ার কথা হাদীসে এসেছে। (মুসনাদে আহমাদ হাঃ ৮০১৬, সহীহ ইবনু হিব্বান হাঃ ৪৪১১)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৫৯-[১৮] রাফি’ ইবনু মাকীস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অধীনস্থ দাস-দাসীদের সাথে সদ্ব্যবহার করা কল্যাণকর ও বরকতময় এবং অসদাচরণকারী কল্যাণ ও বারাকাতের প্রতিবন্ধক। (আবূ দাঊদ)[1]
মিশকাত গ্রন্থকার বলেন, মাসাবীহ গ্রন্থ ছাড়া অন্য কোনো হাদীসের এ অতিরিক্ত বর্ণনাটুকু আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি, ’দান-সাদাকা অপমৃত্যু দূরীভূত করে এবং সৎকাজ আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করে’।
وَعَنْ رَافِعِ بْنِ مَكِيثٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «حُسْنُ الْمَلَكَةِ يُمْنٌ وَسُوءُ الْخُلُقِ شُؤْمٌ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَلَمْ أَرَ فِي غَيْرِ الْمَصَابِيحِ مَا زَادَ عَلَيْهِ فيهِ منْ قولِهِ: «والصَّدَقةُ تمنَعُ مِيتةَ السُّوءِ والبِرُّ زيادةٌ فِي العُمُرِ»
ব্যাখ্যা: (حُسْنُ الْمَلَكَةِ يُمْنٌ) ‘‘দাস-দাসীর সাথে ভালো আচরণ বরকত।’’ অর্থাৎ দাস দাসীর মন্দ আচরণ যেমন ধ্বংস ও অশুভের কারণ ঠিক এর বিপরীত তাদের সাথে ভালো আচরণ করা কল্যাণ ও বারাকাতের কারণ। যখন কেউ তার দাস-দাসীর ভালো আচরণ করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে কল্যাণ ও বরকত দান করবেন। এছাড়া মালিক যখন তার অধীনস্থের সাথে ভালো আচরণ করবে তখন তারা তাদের মালিকের সাথে ভালো আচরণ এবং মালিকের হক পুরো আদায় করবে। তখন মালিকের মনে অনাবিল শান্তি বয়ে আনবে। কল্যাণ ও বরকত বলতে এটাও হতে পারে।
(وَسُوْءُ الْخُلُقِ شُؤْمٌ) ‘‘মন্দ আচরণ অশুভের কারণ।’’ (يمن)-এর বিপরীত হলো (شؤم) অর্থাৎ ভালো আচরণ যেমন বরকত ও কল্যাণ নিয়ে আসে, এর বিপরীত মন্দ আচরণ অকল্যাণ ও অনিষ্টতা নিয়ে আসে। কেননা অধিনস্থের সাথে মন্দ আচরণ পরস্পর হিংসা, ঘৃণা, জিদ, ঝগড়া ও হঠকারিতা সৃষ্টি করে যার প্রভাব মালিকের জান ও মাল উভয়ে পড়বে। তখন কেবল ক্ষতি হতে থাকা তার মনে অশান্তির কারণ হবে। এটা হলো তার অকল্যাণ ও অশুভ পরিণাম। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫১৫৪)
(وَالصَّدَقةُ تَمْنَعُ مِيْتَةَ السُّوْءِ) ‘‘সাদাকা মন্দ মৃত্যুকে বাধা দেয়।’’ মন্দ মৃত্যু বলতে দুর্ঘটনার কবলে হঠাৎ মৃত্যুকে বুঝানো হয়ে থাকে। কেননা মানুষের জীবনের দৈনন্দিন কোনো না কোনোভাবে গুনাহ সংঘটিত হয়ে যায়। মৃত্যু কাছে দেখলে, অসুস্থ হয়ে পড়লে মানুষ সাধারণত তার গুনাহ থেকে সকাতরে আল্লাহ তা‘আলার কাছে ক্ষমা চায়। এই তাওবাহ্ তার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া হতে পারে। কিন্তু হঠাৎ করে মারা গেলে সে তাওবাহ্ করার সুযোগ পায় না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
তাই হঠাৎ মৃত্যুকে মন্দ মৃত্যু বলা হয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হঠাৎ মৃত্যু থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
(وَالْبِرُّ زِيَادَةٌ فِى الْعُمُرِ) ‘‘কল্যাণকর্ম বয়স বৃদ্ধির কারণ।’’ কল্যাণ কর্ম করলে আল্লাহর ‘ইবাদাত অথবা তার সৃষ্টির প্রতি দয়া ও ভালো আচরণ হতে পারে। কুরআন ও হাদীস দ্বারা এ কথাটি অকাট্যভাবে প্রমাণিত একটি বিষয় হলো, সবার বয়স নির্ধারিত। নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে কারো মৃত্যু হবে না। তাই এ জাতীয় হাদীসের অর্থা ‘উলামায়ে কিরাম এই নেন যে, বয়স বৃদ্ধি বলতে তার বয়সের মাঝে বরকত দেয়া বুঝানো হয়েছে। যে ব্যক্তি সৎকর্ম করবে আল্লাহ তা‘আলা তার বয়সকে বরকতময় করে তুলবেন। আল্লাহ অধিক ভালো জানেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৬০-[১৯] আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন তার খাদিম (চাকর-বাকর)-কে মারধর করে, আর ঐ সময়ে সে যদি আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে, তখন তোমরা হাত সরিয়ে নাও। (তিরমিযী ও বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান)[1]
ইমাম বায়হাক্বী’র বর্ণনায় ’হাত সরানোর’ পরিবর্তে ’তাত্থেকে বিরত থাক’ রয়েছে।
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا ضَرَبَ أَحَدُكُمْ خَادِمَهُ فَذَكَرَ اللَّهَ فَارْفَعُوا أَيْدِيَكُمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ لَكِنْ عِنْدَهُ «فَلْيُمْسِكْ» بدل «فارفعوا أَيْدِيكُم»
ব্যাখ্যা: (فَارْفَعُوا أَيْدِيَكُمْ) তোমরা তোমাদের হাত তুলে নাও, অর্থাৎ প্রহার বন্ধ করে দাও। কোনো বর্ণনায় এসেছে, (فَلْيُمْسِكْ) অর্থাৎ সে যেন বিরত হয়ে যায়।
হাদীসের মর্ম হলো: কেউ তার গোলামকে যদি শিক্ষা দানের জন্য প্রহার করে এবং তার প্রহার করা অবস্থায় গোলাম আল্লাহর নাম নেয়, তখন আল্লাহর নামের সম্মানার্থে তাকে প্রহার বন্ধ করে দিবে। এই হুকুম হচ্ছে আদাব বা শিষ্টাচার শিক্ষা দিতে তাকে যখন ন্যায়সঙ্গত হালকা শাস্তি দিবে। অন্যায় শাস্তি দেয়া, প্রচণ্ড প্রহার করা কোনোক্রমেই জায়িয নয়। এমন অত্যাচার তো এমনিতেই বন্ধ করতে হবে। উপরে একাধিক হাদীসে আমরা বিষয়টি দেখে এসেছি। তবে গোলাম যদি কোনো অন্যায় করে যার কারণে তার ওপর শারী‘আত নির্ধারিত দণ্ডবিধি কায়িম করা হচ্ছে, এমতাবস্থায় সে আল্লাহর নাম নিলে প্রহার বন্ধ করতে হবে না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৪৯)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৬১-[২০] আবূ আইয়ূব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মা ও তার সন্তান-সন্ততির মাঝে বিচ্ছেদ ঘটায়, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামত দিবসে তার ও তার পরিবার-পরিজনদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাবেন। (তিরমিযী ও দারিমী)[1]
وَعَن أبي أيوبَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ وَالِدَةٍ وَوَلَدِهَا فَرَّقَ اللَّهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَحِبَّتِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ والدارمي
ব্যাখ্যা: (مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ وَالِدَةٍ وَوَلَدِهَا) ‘‘যে ব্যক্তি মা ও তার সন্তানের মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করল...।’’ মা ও সন্তানের মাঝে বিচ্ছেদ, যেমন কারো দাসীর সঙ্গে তার মেয়ে রয়েছে, লোকটি মাকে রেখে মেয়েকে বিক্রি করে দিল অথবা কাউকে হাদিয়া হিসেবে দিয়ে দিল ইত্যাদি। অথবা মেয়েকে রেখে মাকে বিক্রি করে দিল। মোটকথা, যে কোনোভাবে মেয়েকে মার কাছ থেকে পৃথক করে দিল, তবে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আলা তার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিবেন। কিয়ামত দিবসে আল্লাহর অনুমতিতে অনেক সময় নিজের প্রিয় মানুষের সুপারিশ কাজে আসে। আবার দুনিয়ায় নিজের যে প্রিয় মানুষ রয়েছে তার সাথে জান্নাতে থাকলে মানুষ আনন্দবোধ করবে দেখে আল্লাহ এই ব্যবস্থাও করবেন। কিন্তু যে ব্যক্তি দুনিয়ায় আরেকজনের রক্ত সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটাবে কিয়ামত দিবসে সে নিজের প্রিয়জনের সুপারিশ পাওয়া বা প্রিয়জনের সাথে জান্নাতে থাকার আনন্দ হতে বঞ্চিত হবে।
‘আল্লামা মুনাবী বলেনঃ বেচাকেনা ইত্যাদির মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটানো ইমাম শাফি‘ঈ-এর মতে সন্তান বুঝদার হওয়ার পূর্বে হারাম। সন্তানের মাঝে বুঝ ও ভালো-মন্দের পার্থক্য এসে গেলে মাকে রেখে সন্তান বা সন্তানকে রেখে মাকে বিক্রয় করা জায়িয। আর ইমাম আবূ হানীফাহ্-এর মতে সন্তানের বালেগ বা বালেগা হওয়ার পূর্বে এমন কাজ করা হারাম। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৫৬৬)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৬২-[২১] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দু’টি দাস দান করেন, যারা ছিল একে অপরের ভাই। আমি তন্মধ্যে একজনকে বিক্রি করে দিলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার অপর দাসটি কোথায়? আমি তাঁকে এতদসম্পর্কে জানালে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে নির্দেশ করলেন, তাকে ফেরত নাও, তাকে ফেরত নাও। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: وَهَبَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غلامين أَخَوَيْنِ فَبعث أَحدهمَا فَقَالَ لي رَسُول صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا عَلِيُّ مَا فَعَلَ غُلَامُكَ؟» فَأَخْبَرْتُهُ. فَقَالَ: «رُدُّهُ رُدُّهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: উপরের হাদীসে মা ও সন্তানের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানোর আলোচনা করা হয়েছে। বর্ণিত হাদীসে দুই ভাইয়ের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানোর কথা বলা হয়েছে। তাই মা ও সন্তান ও আপন ভাইদের মাঝে বিক্রি ইত্যাদির মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটানো হারাম হওয়ার বেলায় কোনো মতানৈক্য নেই। কেননা বিষয়টি হাদীসে স্পষ্ট। এছাড়া অন্যান্য রক্ত সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটানো যাবে কিনা- এ নিয়ে ‘আলিমদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। মা এবং সন্তান ও ভাইদের ওপর ক্বিয়াস করে অনেকে মনে করেন, অন্যদের মাঝেও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা হারাম। যেমন পিতা ও সন্তানের বিচ্ছিন্নতার বিষয়টি ভাইদের বিচ্ছিন্নতার চেয়ে অসুবিধাজনক। এটা হচ্ছে হানাফী ‘আলিমদের মত। অপরদিকে অন্যান্য ‘আলিমদের মতে বিক্রির মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতা হারাম কেবল মা ও সন্তান এবং ভাইদের সাথে। অন্যদের বেলায় হারাম নয়। অন্যদেরকে এর উপর ক্বিয়াস করাকে তারা যুক্তিসঙ্গত মনে করেন না। কেননা বিচ্ছিন্নতার কষ্ট সবার ক্ষেত্রে সমান নয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১২৮৪)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৬৩-[২২] উক্ত রাবী [’আলী (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি এক দাসী ও তার সন্তানের মাঝে (একজনকে বিক্রির মাধ্যমে) বিচ্ছেদ ঘটালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করলেন এবং বিক্রয় প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিলেন। (আবূ দাঊদ হাদীসটি মুনক্বতি’ [বিচ্ছিন্ন] সানাদে বর্ণনা করেছেন)[1]
وَعَنْهُ أَنَّهُ فَرَّقَ بَيْنَ جَارِيَةٍ وَوَلَدِهَا فَنَهَاهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ ذَلِكَ فردَّ البَيعَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد مُنْقَطِعًا
ব্যাখ্যা : এ হাদীসটিও ‘আলী থেকে বর্ণিত। এ হাদীসেও আমরা দেখছি যে, বিক্রির মাধ্যমে আলি মা ও তার সন্তানের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টির কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বিক্রয় প্রত্যাখ্যান করেন। তাই দাসী ও তার অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানকে বিক্রি করতে হলে একজনের কাছেই উভয়কে এক সাথে বিক্রি করতে হবে। একজনকে রেখে অপরজনকে বিক্রি করে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করায় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বিক্রয় প্রত্যাখ্যান করেন।
খত্ত্বাবী বলেনঃ ছোট সন্তান ও তার মায়ের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা জায়িয না হওয়ার ব্যাপারে ‘আলিমদের মাঝে কোনো দ্বিমত নেই। তবে সন্তানের ছোট হওয়ার সীমা যার ভিতর বিচ্ছিন্নতা জায়িয নেই- এ নিয়ে ‘আলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে।
ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-ও তাঁর অনুসারীদের মতে এই সীমা হচ্ছে বালেগ হওয়া। অর্থাৎ সন্তান বালেগ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিক্রয় বা অন্য কিছুর মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতা ঘটানো জায়িয নেই। বালেগ হওয়ার পর বিচ্ছিন্ন করা না-জায়িয নয়।
ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেনঃ এর সীমা সাত বা আট বছর। আট বছর পার হয়ে গেলে বিচ্ছিন্নতা জায়িয। ইমাম আওযা‘ঈ বলেনঃ যখন সন্তান তার প্রয়োজনে মায়ের মুখাপেক্ষী হবে না তখন বিচ্ছিন্ন করা যাবে। ইমাম মালিক (রহঃ)-এর সন্তানের বুঝ আসা পর্যন্ত এর সীমা। ইমাম আহমাদ (রহঃ)-এর মতে কোনো অবস্থায়ই মা ও সন্তানের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা জায়িয নয়, যদিও সে বড় হয়ে বালেগ হয়ে যায়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৯৩)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৬৪-[২৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার মধ্যে তিনটি গুণ বিদ্যমান রয়েছে আল্লাহ তা’আলা তার মৃত্যু সহজ করে দেবেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন- অসহায়-দুর্বলের সাথে সদাচরণ, পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও দাস-দাসীর প্রতি উত্তম ব্যবহার। (তিরমিযী; তিনি হাদীসটিকে গরীব বলেছেন)[1]
وَعَنْ جَابِرٌ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ يَسَّرَ اللَّهُ حَتْفَهُ وَأَدْخَلَهُ جَنَّتَهُ: رِفْقٌ بِالضَّعِيفِ وَشَفَقَةٌ عَلَى الْوَالِدَيْنِ وَإِحْسَانٌ إِلَى الْمَمْلُوكِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যা: (يَسَّرَ اللّٰهُ حَتْفَه) ‘আরবী ‘হাত্ফুন’ শব্দের অর্থ ধ্বংস। কারো স্বাভাবিক মৃত্যু হলে ‘আরবরা বলে থাকেন (ماتَ حَتْفَ أنفِه) অর্থাৎ সে স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে। পূর্বেকার মানুষের ধারণা ছিল, কেউ কোনো ধরনের আঘাতপ্রাপ্ত, এ্যাকসিডেন্ট ইত্যাদির মাধ্যমে মারা গেলে যে স্থান ক্ষত সেদিকেই তার শেষ নিঃশ্বাস বের হয়। আর যে স্বাভাবিক মারা যায় তার শেষ নিঃশ্বাস নাক দিয়ে বের হয়। এ থেকে স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটলে তারা (ماتَ حَتْفَ أنفِه) বাক্য ব্যবহার করে থাকেন। তাই হাদীসের বাক্যের অর্থ হচ্ছে : যার মাঝে বর্ণিত তিন গুণ থাকবে আল্লাহ তা‘আলা তার মৃত সহজ করে দিবেন এবং সাকারাত তথা মৃত্যুর পূর্ব যন্ত্রণা দূর করে দিবেন। সেই তিনটি গুণ হলো-
(رِفْقٌ بِالضَّعِيفِ) দুর্বলের সাথে নরম ব্যবহার। দুর্বল বলতে শারীরিক দুর্বল, অবস্থার দিক থেকে দুর্বল, জ্ঞানের দিক থেকে দুর্বল হতে পারে। মোটকথা, যে কোনো ধরনের দুর্বলের সাথে নরম আচরণ করা।
(شَفَقَةٌ عَلَى الْوَالِدَيْنِ) পিতা-মাতার ওপর দয়াশীল হওয়া। অর্থাৎ পিতা-মাতার প্রতি দয়া, তাদের যত্ন, তাদের প্রতি মমতা ও তাদের মর্যাদা ইত্যাদির খেয়াল রাখা।
(إِحْسَانٌ إِلَى الْمَمْلُوكِ) দাসের প্রতি করুণা। অর্থাৎ মালিকের ওপর দাসের প্রতি যে জরুরী দায়িত্ব রয়েছে তা আদায়ের সাথে সাথে তার প্রতি অতিরিক্ত কল্যাণ পৌঁছানো। এর মাঝে মালিকের জন্যও কল্যাণ ও বরকত নিহিত রয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৬৫-[২৪] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আলী (রাঃ)-কে একটি গোলাম দান করে বললেন, একে প্রহার করো না। কেননা, আল্লাহ আমাকে সালাত আদায়কারীকে প্রহার করতে নিষেধ করেছেন, আর আমি তাকে সালাত আদায় করতে দেখেছি। (এটা মাসাবীহ-এর বাক্য)[1]
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم وَهَبَ لِعَلِيٍّ غُلَامًا فَقَالَ: «لَا تَضْرِبْهُ فَإِنِّي نُهِيتُ عَنْ ضَرْبِ أَهْلِ الصَّلَاةِ وَقَدْ رَأَيْتُهُ يُصَلِّي» . هَذَا لفظ المصابيح
ব্যাখ্যা: (فَإِنِّىْ نُهِيتُ) ‘আমাকে নিষেধ করা হয়েছে।’ অর্থাৎ আমার প্রতিপালক আমাকে সালাত আদায়কারী দাসকে মারতে নিষেধ করেছেন।
সালাত আদায়কারী গোলামকে প্রহার নিষেধ অর্থাৎ শারী‘আত হাদ্দ তথা দণ্ডবিধি জাতীয় কোনো অপরাধ ছাড়া অন্য কোনো সাধারণ অপরাধের কারণে প্রহার নিষেধ। তবে সে যদি এমন কোনো দোষ করে যার কারণে তার ওপর শারী‘আত দণ্ডের শাস্তি অনিবার্য হয় তবে তা প্রয়োগ করতে হবে।
(وَقَدْ رَأَيْتُه يُصَلِّىْ) অর্থাৎ আর আমি তাকে সালাত আদায় করতে দেখেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার উদ্দেশ্য এই হতে পারে যে, শিষ্টাচারের জন্য এমন গোলামকে প্রহার করার প্রয়োজন হবে না; কেননা সে সালাত আদায়ের মাধ্যমে তার প্রকৃত মালিকের সাথে করণীয় দাসত্বের শিষ্টাচার বজায় রাখছে, আর সালাত মানুষকে অশ্লীল ও আপত্তিকর কাজ থেকে বাধা প্রদান করে, অতএব তাকে আপত্তিকর কাজের জন্য প্রহারের প্রয়োজন হবে না। এছাড়া সে যখন তার প্রকৃত মালিকে হক আদায় করছে তখন অন্য কিছুতে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে গেলে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা উচিত।
‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ সালাত আদায়কারী সাধারণত এমন কোনো কাজ করে না যার দ্বারা সে প্রহৃত হওয়ার উপযুক্ত হয়; কেননা সালাত অশ্লীল ও আপত্তিকর কাজ থেকে বাধা প্রদান করে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৬৬-[২৫] আর দারাকুত্বনী’র ’মুজতাবা’ গ্রন্থে আছে যে, ’উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিষেধ করেছেন সালাত আদায়কারীকে প্রহার করা হতে।[1]
وَفِي «الْمُجْتَبَى» لِلدَّارَقُطْنِيِّ: أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: نَهَانَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ ضَرْبِ الْمُصَلِّينَ
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৬৭-[২৬] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! গোলামকে তার অপরাধের জন্য কতবার আমরা ক্ষমা করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিশ্চুপ রইলেন। সে ব্যক্তি পুনরায় জিজ্ঞেস করল, (এবারও) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিশ্চুপ রইলেন। তৃতীয়বার প্রশ্নের জবাবে বললেন, তাকে ক্ষমা কর, প্রত্যহ ৭০ বার (অপরাধ করলেও) মাফ করে দাও। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ كم نَعْفُو عَنِ الْخَادِمِ؟ فَسَكَتَ ثُمَّ أَعَادَ عَلَيْهِ الْكَلَامَ فصمتَ فلمَّا كانتِ الثَّالثةُ قَالَ: «اعفُوا عَنْهُ كُلَّ يَوْمٍ سَبْعِينَ مَرَّةً» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (فَصَمَتَ) صمت এবং سَكَتَ একই অর্থ। অর্থাৎ চুপ থাকেন। দুইবার প্রশ্ন করার পরও চুপ থাকার কারণ হিসেবে বলা হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনের প্রশ্ন অপছন্দ করেন; কেননা ক্ষমা করা সর্বদাই ভালো কাজ। যত বেশি ক্ষমা করবে তত বেশি প্রতিদান পাবে। অতএব এখানে নির্ধারিত সংখ্যার প্রশ্নের কোনো প্রয়োজন নেই। অথবা এও হতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিতে ওয়াহীর অপেক্ষা করেন। আল্লাহই ভালো জানেন।
(كُلَّ يَوْمٍ سَبْعِينَ مَرَّةً) প্রতিদিন সত্তরবার হলেও। অর্থাৎ প্রতিদিন সত্তরবার ক্ষমা করার প্রয়োজন পড়লেও ক্ষমা কর। সত্তরবার উল্লেখ করে আধিক্য বুঝানো উদ্দেশ্য। নির্ধারিত সত্তর সংখ্যা উদ্দেশ্য নয়। বরং উদ্দেশ্য হলো বেশি বেশি ক্ষমা কর, যত বেশি পারো ক্ষমা কর। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫১৫৫)
প্রত্যেক ভাষাতেই এমন ব্যবহার রয়েছে। অর্থাৎ সংখ্যা বলে নির্ধারিত সংখ্যা উদ্দেশ্য না করে অধিক বুঝানো হয়ে থাকে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৬৮-[২৭] আর তিরমিযী (রহঃ) ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।[1]
وَرَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৬৯-[২৮] আবূ যার্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের অধীনস্থ দাস-দাসীকে নিজেরা যা খাবে, তাকেও তাই খাওয়াবে; নিজেরা যা পরিধান করবে, তাকেও তাই পরিধান করাবে। আর যারা তোমাদের (অধীনস্থ) উপযোগী বা মানানসই নয়, তাদের বিক্রি করে দাও এবং তোমরা আল্লাহর বান্দাকে কষ্ট দিও না। (আহমাদ, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ لَاءَمَكُمْ مِنْ مَمْلُوكِيكُمْ فَأَطْعِمُوهُ مِمَّا تَأْكُلُونَ وَاكْسُوهُ مِمَّا تَكْسُونَ وَمَنْ لَا يُلَائِمُكُمْ مِنْهُمْ فَبِيعُوهُ وَلَا تُعَذِّبُوا خَلَقَ اللَّهِ» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (لَاءَمَكُمْ) ‘আরবী শব্দ (المُلاءَمَةُ) থেকে নির্গত। যার অর্থ উপযোগী হওয়া, খাপ খাওয়া, সন্ধি হওয়া ইত্যাদি। হাদীসের অর্থ হলো, যে গোলামের সাথে তোমাদের খাপ খায় তথা বনিবনা হয় তাকে নিজে যা খাও খাওয়ায়, নিজে যা পরিধান করো তাকে পরিধান করাও। অর্থাৎ তাকে সাথে রাখো এবং তার সাথে কোনো বৈষম্য আচরণ করো না। তবে ইতোপূর্বে এই মর্মের হাদীসের আলোচনায় আমরা জেনেছি যে, মালিকের সাদৃশ্য হুবহু খাবার ও পরিধেয় বস্তু গোলামকে দেয়ার হুকুমটি মুস্তাহাব পর্যায়ের। তবে গোলামকে তার জন্য প্রচলিত মানের খাবার ও পরিধেয় বস্তু অবশ্যই দিতে হবে। এতে কৃপণ করা যাবে না।
(وَمَنْ لَا يُلَائِمُكُمْ مِنْهُمْ فَبِيْعُوْهُ) আর গোলামের মধ্যে যে তোমাদের উপযোগী না হয় তাকে বিক্রি করে দাও। অর্থাৎ গোলামের সাথে বনিবনা না হলে তাকে প্রহার করবে না, বরং বিক্রি করে দিবে; কেননা আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টিকে কষ্ট দেয়া জায়িয নয়। বনিবনা না হওয়ার কারণে অনেক সময় অযথা তাকে কষ্ট দিতে পার যা তোমার গুনাহের কারণ হবে। পরবর্তীতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টিকে কষ্ট না দেয়ার বিষয়টি ব্যাপক আকারে নির্দেশ দিয়ে বলেন, (وَلَا تُعَذِّبُوْا خَلَقَ اللّٰهِ) আল্লাহর সৃষ্টিকে কষ্ট দিয়ো না। অর্থাৎ আল্লাহর তা‘আলার কোনো সৃষ্টিকেই কষ্ট দেয়া যাবে না। আল্লাহর দাসকে কষ্ট দিয়ো না বলে সাধারণভাবে আল্লাহর সৃষ্টির কষ্ট না দেয়ার কথার বলার মাঝে দু’টি ফায়েদা রয়েছে। (এক) গোলামকে যেমন কষ্ট দেয়া জায়িয নেই তেমনি আল্লাহর কোনো সৃষ্টিকেই অন্যায় কষ্ট দেয়া জায়িয নেই। গোলামকে কষ্ট না দেয়ার কথা বলতে গিয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য সৃষ্টির কথাও ঢুকিয়ে দিলেন। (দুই) যে কোনো সৃষ্টির কষ্ট দেয়ার কথা নিষেধ করলে গোলামের কষ্ট দেয়ার নিষেধাজ্ঞা আরো দৃঢ় হয়। কেননা যে কোন সৃষ্টিকে কষ্ট দেয়া যেখানে নিষেধ, সেখানে গোলাম সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ, সেই তুলনায় তাকে কষ্ট আরো বেশি খারাপ ও নিষেধের আওতায় পড়বে। মোটকথা, ব্যাপকভাবে বলে গোলামকে কষ্ট দেয়ার নিষেধাজ্ঞা দৃঢ় করা উদ্দেশ্য। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীর খোরপোষ ও দাস-দাসীর অধিকার
৩৩৭০-[২৯] সাহল ইবনু হানযালিয়্যাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি উটের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে দেখতে পেলেন যে, তার পিঠ পেটের সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা এ জাতীয় বাকশক্তিহীন পশুদের (সওয়ারীদের) ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা এদের উপর আরোহণ এবং অবতরণ সর্বাবস্থায় সুস্থ ও সবল রাখ। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن سهلِ بنِ الحَنظلِيَّةِ قَالَ: مَرَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِبَعِيرٍ قَدْ لَحِقَ ظَهْرُهُ بِبَطْنِهِ فَقَالَ: «اتَّقُوا اللَّهَ فِي هَذِهِ الْبَهَائِمِ الْمُعْجَمَةِ فَارْكَبُوهَا صَالِحَة واترُكوها صَالِحَة» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসে উটকে কষ্ট দেয়া নিষেধাজ্ঞার অধীনে অন্য সৃষ্টিকে কষ্ট না দেয়ার বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছিল। বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্টভাবে অন্য সৃষ্টি যেমন প্রাণীকে কষ্টের নিষেধের ব্যাপারটি বর্ণনা করেন।
(قَدْ لَحِقَ ظَهْرُه بِبَطْنِه) পিঠ পেটের সাথে মিলে গেছে। অর্থাৎ উটকে যথাযথ খাবার না দেয়ার কারণে তার পেট খালি হয়ে পিটের সাথে মিলে গেছে। উটের এই অবস্থা দেখে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
(اتَّقُوا اللّٰهَ فِىْ هٰذِهِ الْبَهَائِمِ الْمُعْجَمَةِ) কথা বলতে পারে না এই চতুষ্পদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর। অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় করে এদের সাথে ভালো আচরণ কর। এদের যত্ন নাও।
الْبَهَائِمِ শব্দটি بَهِيْمِةٌ শব্দের বহুবচন। অহিংস্র চতুষ্পদ প্রাণীকে ‘আরবীতে ‘বাহীমাতুন’ বলা হয়।
الْمُعْجَمَةِ শব্দের অর্থ বোবা, যে কথা বলতে পারে না। অর্থাৎ সে মালিকের কাছে তার ক্ষুধা, পিপাসা ইত্যাদির কথা তুলে ধরতে পারে না। তাই তার মালিককেই তার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীসটির দলীল হলো, মালিকের জন্য প্রাণীর ঘাস ইত্যাদি খাবারের ব্যবস্থা করা ওয়াজিব। শাবক মালিককে এর উপর বাধ্য করতে পারে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(فَارْكَبُوْهَا صَالِحَةً) তার উপর আরোহণ কর সে উপযুক্ত থাকা অবস্থায়। অর্থাৎ প্রাণীর উপর চড়তে বা আরোহণ করতে হলে দেখ সে তোমাকে বহন করার ক্ষমতা রাখে কিনা। তোমাকে নিয়ে চলার ক্ষমতা রাখে কিনা। প্রাণী সেই ক্ষমতা না রাখলে তার উপর চড়া বা অতিরিক্ত বোঝা যা সে বহনের ক্ষমতা রাখে না তা চাপানো জায়িয নয়।
(وَاتْرُكُوْهَا صَالِحَةً) তাকে ছেড়ে দাও উপযুক্ত থাকা অবস্থায়। অর্থাৎ প্রাণীর উপর আরোহণ করলে বা বোঝা চাপালে সে ক্লান্ত হয়ে অক্ষম হওয়ার পূর্বে আরোহণ ত্যাগ করো এবং বোঝা নামিয়ে নাও। প্রাণী ক্লান্ত হয়ে নুয়ে পড়লে বা চলতে অক্ষম হলে তা তাকে কষ্ট দেয়ার অন্তর্ভুক্ত। তাই এ প্রাণী এই কঠিন পরিস্থিতিতে পৌঁছার পূর্বে আরোহণ ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অর্থাৎ আরোহণ করা এবং না করা সর্বাবস্থায় সুস্থ ও সবল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।